আমরা কোথায় কার কাছে যাবো!

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৩/০৬/২০১০ - ৬:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

০৮ সালের শীতকালীন নির্বাচনী উতসবের এভারেস্ট বিজয়ের পর মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা এত পরিমিত এবং পরিণত রাজনীতিকের মত কথাবার্তা বলছিলেন যে আমরা প্রায় ভাবতে শুরু করেছিলাম উনি আসলেই পরিবর্তনে আগ্রহী।

পরিবর্তন মানে একটু সভ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যা জনগণকে তাদের প্রতিদিনের জীবনে অযথা হয়রানি করবে না।আব্দুল মাল মুহিত, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মতিয়া চৌধুরীকে দেখে আশা জাগছিলো, হাসিনার সঙ্গে কিছু সৎ মানুষ আছেন যারা রাজনীতিকে জনসেবা ভাবেন ব্যবসা ভাবেন না।

সারা দেশে আওয়ামী লীগের টেন্ডার সন্ত্রাসী আর ছাত্রলীগের শিক্ষাবিনাশী কাজ দেখে ভেবেছি, আশরাফুল ওবায়দুল কাদের এদের ধীরে ধীরে সামলাবেন।অন্তত হাওয়া ভবনের মত কোন প্রশ্রয়দাতাতো নেই।সে সব অতি আশাবাদ ছিল, হয়তবা।

অনাবাসী যারা, যারা বাংলাদেশের দরিদ্র অর্থনীতিতে ভাগ না বসিয়ে রেমিট্যান্স পাঠায়, তাদের কাছে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল, এরা ক্ষমতায় থাকলে দেশটাকে অসাম্প্রদায়িক বলে বিদেশী বন্ধুদের কাছে একটু বড় গলা করা যায়।ফেসবুক বন্ধের খবর বিদেশী মিডিয়ায় আসার পর তাদের সংগে যাতে দেখা না হয়, যাতে কোন অপ্রিয় সত্য মুষড়ে না দেয়, এরকম একটা টম এন্ড জেরী চলছে তাদের। আরিফ কিংবা রডিনের কথা জানতে চাইলে বলতে হয় আমাদের সরকার কিংবা তদীয় পুলিশ খানিকটা মাইকেল জ্যাকসন, চাইল্ড মলেস্টিং এর বিকারগ্রস্ত।

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুতে তরুণরা উজ্জীবিত হয়েছে, এইবার হয়ত আমরা সভ্যতায় পদার্পণ করবো।বাঙালী আশাবাদী বলেই তারা শ্যামলীর বস্তিবাসী রমিজার স্বামীর মত নির্লোভ, বঙ্গবন্ধুর ভক্ত হতদরিদ্র হাসমত আলী এতিম শেখ হাসিনার জন্য এক টুকরো জমি কিনেছিলেন।যারা রাজনৈতিক বিবেচনায় ঢাকা শহরের জমিজমা দখল করে তাপানুকূল জীবনের দম্ভে সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকেন, তাদের জন্য কালের কন্ঠের রমিজা উপাখ্যান একটি জুতোর বাড়ি, যদিও গন্ডারের ঘুম ভাঙাতে এই জুতো প্রায় অকার্যকর।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় বিতর্কিত লোকজন ঢুকে পড়ায় এই বিচারে সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি চোখে পড়েছে।এটা দক্ষতার অভাবে বা ব্যক্তি বিশেষের অসততার কারণে ঘটলেও তরুণদের জন্য তা আশা ভঙ্গের বেদনা নিয়ে এসেছে এরই মাঝে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারণায় একটি পোস্টারে সহনীয় বাজার দরের অঙ্গীকার করেছিল।বিদ্যুত,পানি,গ্যাস সংকট মোকাবেলায় এখন আলাদীনের চেরাগের অপেক্ষায়।বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছেই।

নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষানীতি দিয়েছেন, মাল মুহিত অর্থনীতির মেরামতের কাজ করছেন, মতিয়া চৌধুরী কৃষিতে বাম্পার ফলন দিয়েছেন, আর বাকিরা কি করে সময় কাটাচ্ছেন, নানান টিভি চ্যানেলে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে। যেন বাজে কথা বলার জন্য আমরা ওদের বেতন দিই।

খালেদা জিয়া যেহেতু জানেন, বিএনপির আর নিজে থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই তাই ব্যাপারটা আওয়ামী লীগের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।হরতাল করলে ভোট কমবে, কিন্তু তার দলেওতো উস্কানি দাতা আছেন যারা কুবুদ্ধি দিতে ওস্তাদ।কথা বলার মুখ ম্যাডামের নেই, কারণ আওয়ামী শাসনামলে বেগুনবাড়ীর বে আইনী দালান ধসে শ্রমজীবীমানুষের মৃত্যু হলেও তিনি জানেন এসব বিএনপি আওয়ামী যৌথ দুর্নীতি পৃষ্ঠপোষকতার ফলাফল।অসহায় মানুষ জীবন দিয়ে সে সত্যের উদঘাটন করে চলেছে।

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক কাজ আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রীর কাছে তার মন্ত্রণালয়ের কাজের চেয়ে বেশী জরুরী; তাই চ্যানেল ওয়ান এবং আমার দেশ বন্ধ করে নিজেদের স্যাডিজম বশত আজ খলনায়ককে সাংবাদিকতার নায়ক বানিয়ে ফেললেন, এগুলো রেসলিং এর মত সেট গেম যেন, আমজনতার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই এই বর্বর কুস্তি দেখে হাততালি দেবে!

দেশ চালানোর যোগ্যতা আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কারো যে নেই সেটা গত বিশ বছরে প্রমাণিত। বামদল বা জাতীয় পার্টি বা অন্য দল উপদল গুলো ক্ষমতা বৃক্ষে পরগাছার মত। ধর্মব্যবসায়ী দলগুলোকে তরুণ প্রজন্ম একবিংশে আর দেখতে চায় না।জলপাই শাসনকে যে কোন আধুনিক মানুষ ঘৃণা করে।

তাহলে আমরা কোথায় কার কাছে যাবো!অনেকবার ভেবেছি, কী এসে যায় এসবে আর, তার চেয়ে ঢাকার নব্য এলিটদের মত নির্লিপ্ত হয়ে যাই।ট্রাফিক জ্যামে টিন্টেড গ্লাসের বাইরে বুভুক্ষু মানুষের দিকে না তাকিয়ে সেল ফোনে শূয়োরের মত ঘ্যোঁত ঘ্যোত করতে করতে এগিয়ে যাই,কিন্তু বিজয় সরণিতে ঠিক আমার ছেলের বয়েসী এক শিশুকে বৃষ্টিতে ভিজে পপকর্ণ বিক্রী করতে দেখে নিজের ছেলে নিয়ে আর আদিখ্যেতা করতে রুচিতে বাধে।

আমরা তো আর রাজবংশে জন্মাইনি বা ক্যানিবাল নই যে নিজের দেশের অনাহারী শিশুদের ট্রাফিক জ্যামে ঘাস ফুলের মত মাড়িয়ে গিয়ে সেনানিবাস বা গণভবনে বসে চিকেন ব্রোস্ট খাবো।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

তাহলে আমরা কোথায় কার কাছে যাবো!অনেকবার ভেবেছি, কী এসে যায় এসবে আর, তার চেয়ে ঢাকার নব্য এলিটদের মত নির্লিপ্ত হয়ে যাই।ট্রাফিক জ্যামে টিন্টেড গ্লাসের বাইরে বুভুক্ষু মানুষের দিকে না তাকিয়ে সেল ফোনে শূয়োরের মত ঘ্যোঁত ঘ্যোত করতে করতে এগিয়ে যাই,কিন্তু বিজয় সরণিতে ঠিক আমার ছেলের বয়েসী এক শিশুকে বৃষ্টিতে ভিজে পপকর্ণ বিক্রী করতে দেখে নিজের ছেলে নিয়ে আর আদিখ্যেতা করতে রুচিতে বাধে।
আমরা তো আর রাজবংশে জন্মাইনি বা ক্যানিবাল নই যে নিজের দেশের অনাহারী শিশুদের ট্রাফিক জ্যামে ঘাস ফুলের মত মাড়িয়ে গিয়ে সেনানিবাস বা গণভবনে বসে চিকেন ব্রোস্ট খাবো।

আপনার কথাগুলো সত্যিই ভাবিয়ে তোলে আমাকে। একটা কথা ভাবছি, এইসব রাজনীতিবিদদের নিকট কি আশা করা যায়? যারা প্রযুক্তি, মিডিয়া কিংবা কলমকে ভয় পায় তাদের জন্য খুব আফসোস হচ্ছে। ভুল পথে এগোচ্ছে এই সরকার। হয়তো এর মাশুল দিতে হবে একদিন।

তরুণদের নিকট জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি ফেসবুক। অথচ দু'একজন তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষ এর পরামর্শে বন্ধ করা হলো ফেসবুক। এভাবে আর যাই হোক ডিজিটাল বাংলাদেশ কিংবা প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায় না।

সাদ আব্দুল ওয়ালী
তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক

নিবন্ধন নাম: ওয়ালীসার্চ
ই-মেইল:

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

আপনাকে ভাবনার উস্কানি দিতে পেরে আমিও খুশী।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আমরা কার কাছে যাবো, এই প্রশ্নটা আমাদের তরুণদের অনেকেরই। ভোটের সময় আমরা বেছে নেয়ার তেমন কাউকে খুঁজে না পেয়ে মন্দের ভালোকে বেছে নিই। এটাও আমাদের ব্যর্থতা।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

তরুণরাই প্রথমবারের মত না ভোট দিয়েছে। সেটা একটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন, অসাধারন লেখা। ভালো লাগলো। এটাকে একটা সত্য ভাষন বলা যায়। রাজনীতিবিদদের জন্য প্রেসক্রিপশনও বলতে পারি। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা গ্রামের গরীব রোগীদের মত, ব্যথার যন্ত্রণায় যখন কাতর হয়, তখন ডাক্তারের কাছে যায়, দুয়েক বেলা মেডিসিন সেবন করে, ব্যথা কমে গেলে আর মেডিসিন সেবন করেনা। ঔষধের শিশি ঘরের কোন কোণে পড়ে থাকে।

কামরুজ্জামান স্বাধীন।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

থার্ড আই এর ছবি

কোট করলে পুরো লেখা আবার মন্তব্যের পাতায় নিয়ে আসতে হয়, তখন লেখার চেয়ে মন্তব্যনা আবার বড়ো হয়ে যায় এই ভয়ে উদ্ধৃতি জুড়ে দিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকে লেখায় পাঁচ তারা দিয়েই প্রতিক্রিয়া জানালাম।

আসলেই আমাদের বিকল্প নেই। মার্কা দেখেই ভোট দেয়াই আমাদের রীতিতে পরিনত হয়েছে। তাই আমরা বার বার আমদের শেষ আশ্রয়স্থলটির কাছে গিয়েও অসহায়ত্ব বরণ করে নেই।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ঐকান্তিক তারাহীন হলেও ক্ষতি নেই। তোমার লেখা ভালো হচ্ছে। আজকাল বানান সচেতনতা কম দেখছি, আগে এরকম ছিল না। মাইকেলের মত আশার ছলনে ভুলি, বাংলাটাকে অবহেলা কোরো না। ভাল থেকো।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

একটু তেলতেলে শোনালেও আপনার মত বুদ্ধিদীপ্ত মানুষদের কেন রাজনীতিতে আসতে পারছেন না সেটা ভেবে ভেবে আমি কোন কুল কিনারা পাইনা।

অসাধারন লেখা। চলুক

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

রাজনীতিতেই আছি। নির্বাচনে হেরেছি, জনগণের আমাকে ভোট দেবার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখনও প্রত্যন্ত গ্রামের ভোট ব্যাংকগুলো মার্কার দালালদের দখলে। ভোটাররা পদ্মা নদীর মাঝির হোসেন আলীদের কথার বাইরে ভোট দিতে পারেনি। আমি যদি ফিরে নাও যাই, যে পাঁচশো একজন তরুণ আমাকে ভোট দিয়েছিল তারা কমপিউটার শিখেছে, আমাকে মেইল করে। হয়ত ওদেরই দুজন দুই মার্কা থেকে দাঁড়িয়ে যাবে। আমাকে বোধহয় লাগবে না। লাগলে ছুটি নিয়ে যাবো। সেজন্যই শিক্ষকতায় এসেছি যাতে একটা মুক্তজীবন থাকে। তবে আপনাদেরও যেতে হবে একসময়। টাকা জমান, বৌবাচ্চার জন্য ভবিষ্যত খানিকটা সহজ করে তারপর শেকড়ে ফিরে যান। গান্ধীজী বঙ্গবন্ধু তাজুদ্দীনেরাতো তাও ভাবেন নি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

মূলত পাঠক এর ছবি

একেই বলে টিনা ফ্যাক্টর: TINA: There Is No Alternative. নির্বাচনের সময় ভারতীয় টিভিতে খুব শোনা যায় এর কথা।

আমার নিজের ধারণা, এই ফ্যাক্টরেরও একটা সর্বোচ্চ সহ্যশক্তি আছে। তারপর ভেঙে পড়ে। তখন যে ভবঘুরে রাস্তায় ঘোরে তাকেই রাজবাড়ির হাতি তুলে নিয়ে রাজা করে। দেশের লোকের কপাল ভালো থাকলে সে ভবঘুরে একেবারে গয়ংগচ্ছ হয় না, আর কপাল খারাপ হলে নতুন রাবণ গজায়।

ঘুরেফিরে সেই কপালের নামই হয় গোপাল।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

রাবণই হয়। কপালকে আদর করে গোপাল বলেই ডাকি ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আমরা কার কাছে যাবো? - যেটা আমি প্রায়ই বলে এসেছি, আমাদের নিজেদের কাছে যেতে হবে। নিজেদের দায়দায়িত্ব তিনশোজন বাটপার, হাজারখানেক সন্ত্রাসী আর লাখখানেক নেড়ী কুকুরের কাছে দিয়ে দিলে আর চলবে না।

হ্যাঁ, একদিনে সেটা হবে না। দশকের পর দশক চলে যেতে পারে। তবে সেই দশকগুলো পার হতে হবে উপলব্ধি আর জাগরণে। যে ভাষায় বললেন "যেন বাজে কথা বলার জন্য আমরা ওদের বেতন দিই" - সে ভাষাকে আমজনতার রপ্ত করতে শিখতে হবে। এই বোধ অর্জন করতে হবে যে সরকারের এ-ক-মা-ত্র কাজ জনগণের সেবা করা। আর সরকারী চাকুরে, পাহারাদার, গণপ্রতিনিধি, এরা জনগণের চাকর। কিন্তু এরাই আজ মহাদানবে পরিণত হয়েছে, আর সরকার নামক সেবাব্যবস্থা এখন সেবা করছে কেবল সেই মহাদানবদের।

হয়ত, সরকার নামক একটি একক সেবা সংগঠনকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়ে ফেলেছি আমরা। ফলে অতিক্ষমতাবান যে কাঠামোটি তৈরী হয়েছে, সেই কাঠামোতে থেকে তার পক্ষে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন - জনগণের সেবা করা আর সম্ভব হচ্ছে না।

আমরা এভাবে চিন্তা করি না। আমরা মানুষ এখনো মধ্যযুগের অতিসরলীকরণ চিন্তায় বাঁধা পড়ে আছি। নিজের সমস্যার স্বরূপ আমরা বুঝতে পারি না। পচে গলে যাওয়া কাঠামো ভেঙ্গে মাথার উপর পড়ার আগ পর্যন্ত সেই কাঠামোর বাইরে চিন্তায় করতে পারি না। ফলে আমরা ভাবি একটা সীমানার ভিতরের সকল মানুষের প্রায় সকল দায়দায়িত্বের ভারসম্পন্ন সরকার একটা তো থাকারই কথা। তার তো কিছু মহাদানব, বাটপার, পাহারাদার আর নেড়ী কুত্তা থাকারই কথা। তার হাতে তো মাঝে মাঝে collateral damage এর মত অত্যাচার নিগ্রহ ঘটবারই কথা। এর মাঝে যে সরকার দয়া দাক্ষিণ্য করে মাঝে মাঝে বাজেট পাশ করে, রাস্তা তৈরী করে, সার বন্টন করে, এগুলো তো আমাদের ভাগ্য।

কিন্তু, এই ব্যবস্থাটা কিন্তু আমাদের সাহায্য করতে পারছে না। সরকার ঠিক কোন সেবাটি আমাদের করছে, যেটা সরকার ছাড়া অন্য কোনো প্রকার কাঠামো বা সংগঠনের পক্ষে কার্যকরভাবে দেয়া সম্ভব না? আরো কয়েকদশক যাবে কেবল এটা উপলব্ধিতে যে, এই কাঠামোতে থেকে কেবল একটি ভালো দল আর কয়েকটি ভালো নেতা আমাদের সমস্যাগুলোর প্রকৃত সমাধান দিতে পারবে না। সমাধান কাঠামোর পরিবর্তনে।

যেভাবে অতীতের রাজাদের একচ্ছত্র ক্ষমতা ধীরে ধীরে খর্বিত হয়েছে, সেই ধারা ভবিষ্যতেও বহমান থাকবে। মানুষ তার নিজের গায়ের মাপে সরকার ব্যবস্থাকে কেঁটে-ছেটে নিবে। সেটা বহু দশকের মামলা। এবং সেটা কেবল বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সকল সমাজের জন্যই প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন পড়বে সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আরো শিক্ষিত হয়ে ওঠা, মধ্যবিত্তের সাথে দূরত্ব আরো কমিয়ে আনা - যেখানে বিভিন্ন যোগাযোগ বা গণমাধ্যম উপর্যুপরি সাহায্য করে যাচ্ছে এবং যাবে।

ঘাতে-প্রতিঘাতে এই দানবদের যখন তাদের প্রকৃত ভূমিকা বুঝিয়ে দেবার ভাষা মানুষ অর্জন করবে, তখন মানুষ পারবে তার নিজের কাছে যেতে।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

আপনার মত আমিও আশাবাদী। সামনেবার ই-ভোটিং করানো সম্ভব। স্কুল গুলোতে কম্পুটার পৌঁছে গেছে। শিক্ষক আছে, অন্তত কাগুদের চেয়ে ভাল। কিছু বয়স্ক ইভোটিং কর্মশালা করলেই চলে। তরুণ ভোটাররা মোবাইল ফোন থেকে নিজেরাই তথ্যপ্রযুক্তির প্রাথমিক পাঠ পেয়ে যাবে। এগুলো হবেই কেউ না চাইলেও।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সিরাত এর ছবি

থোরু ঘরানার লিবারটারিয়ান/এ্যানার্কিজমের কথা মনে পড়ে গেল (আইন রান্ড ঘরানার না আবার)। ভাল লাগলো মন্তব্যটা।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

দেশ চালানোর যোগ্যতা আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কারো যে নেই সেটা গত বিশ বছরে প্রমাণিত।

এইটাই মোদ্দা কথা, আর কার কাছে যাবো? জানি না মন খারাপ, চিন্তা করলে কেমন হতাশ লাগে, যতদিন না নতুন কেউ আগায় আসতেছেন ততদিন ভরসা নাই, বলা যায় না, নতুন যিনি আসবেন, তিনি হয়ত ২ ম্যাডামকে বেন্চমার্ক ধরে দুর্নীতি শুরু করবেন।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

আপনি নিজের কথাই ধরেন। সৎ জীবন যাপন করেও রাজনীতিকদের চেয়ে ভালো জীবন আপনি পাবেন। চল্লিশের মধ্যেই পৃথিবীর সব আশ্চর্য দেখে ফেললে, আপনার বেঞ্চমার্ক, আলগোর বা ইয়শকা ফিশার হবেন। আপা ম্যাডাম আপনার মডেল হতে পারবেন না কখনই।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আপা ম্যাডাম আপনার মডেল হতে পারবেন না কখনই।

হাসি, কিছুই বলা যায় না, দেখা যাবে ক্ষমতা পেলে আমিও ম্যাডামদের তিনবেলা তেল মালিশ করব। তবে আলগোর বা চেনিকে বেন্চমার্ক করলে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হবে কিনা জানি না ইয়ে, মানে...

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

চেনি তো আফাদের চেয়েও ভয়ংকর।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

তাহলেই বুঝেন, এই সৎ সম্ভাবনাময় জীবন থেকে যদি চেনির চ্যালা হয়ে বের হই, তাহলে আপাদেরও খবর আছে
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

কাকুল কায়েশ এর ছবি

যারা অ্যাকটিভলি পলিটিক্স করে, ওদেরকে বাদ দিলেও আমরা বাকী জনগনেরা আসলে সবসময় একটা মোরাল সাপোর্ট দিয়ে আসছি এদেরকে! এই মোরাল সাপোর্টের ভিত্তি সম্ভবত ওই 'মন্দের ভাল' কন্সেপটি! আর রাজনীতিকরা সেটারই ফায়দা তুলছে গত বিশ-ত্রিশ বছর ধরে!
আমি আজকে থেকে ঠিক করেছি আর কখনো এদেরকে একবিন্দুও মোরাল সাপোর্ট দিব না!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

তাসনীম এর ছবি

একদম আমার মনের ভেতরের কথাগুলো লিখে দিয়ছেন। আসলেই আমরা কোথায় কার কাছে যাবো?

++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আমরা কোথাও, কারো কাছে যেতে আগ্রহী নই...

পরেরবারে 'না ভোট' দিতেই আগ্রহ...

_________________________________________

সেরিওজা

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

না জয়যুক্ত হোক।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

রিম সাবরিনা এর ছবি

অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নঃ আপনি কি বাংলাদেশ বেতারে "ওয়ার্ল্ড মিউজিক" এ ছিলেন এককালে?

আজাদ [অতিথি] এর ছবি

...ধারাল লেখা। আশা জাগানিয়া।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই রাজনীতিতে আমরা নিজেরাই কি যুক্ত হতে পারি না, আমরা যারা দেশ নিয়ে ভাবি, কষ্ট পাই, মুষড়ে পড়ি, আবার ভাবি, তারা যদি এগিয়ে এসে দেশকে সঠিক পথে না চালাই, তবে আপা-ম্যাডামের দল আমাদের শুষেই যাবে।কিন্তু আমরা কেন যারা খারাপ তাদের নিজেরাই নির্বাচিত করি,তারপর হা-হুতাশ করি, শুধু ব্লগের পাতায় ঝড় তুলি, বুঝিনা। লেখকের লেখায় মন ভারাক্রান্ত হয়েই এসব লিখলাম, লেখককে ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমনের ইচ্ছায় নয়।

কষ্টে আছি >>>আইজুদ্দিন<<<

অতিথি লেখক এর ছবি

এই রাজনীতিতে আমরা নিজেরাই কি যুক্ত হতে পারি না, আমরা যারা দেশ নিয়ে ভাবি, কষ্ট পাই, মুষড়ে পড়ি, আবার ভাবি, তারা যদি এগিয়ে এসে দেশকে সঠিক পথে না চালাই, তবে আপা-ম্যাডামের দল আমাদের শুষেই যাবে।কিন্তু আমরা কেন যারা খারাপ তাদের নিজেরাই নির্বাচিত করি,তারপর হা-হুতাশ করি, শুধু ব্লগের পাতায় ঝড় তুলি, বুঝিনা। লেখকের লেখায় মন ভারাক্রান্ত হয়েই এসব লিখলাম, লেখককে ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমনের ইচ্ছায় নয়।

কষ্টে আছি >>>আইজুদ্দিন<<<

অতিথি লেখক এর ছবি

এই রাজনীতিতে আমরা নিজেরাই কি যুক্ত হতে পারি না, আমরা যারা দেশ নিয়ে ভাবি, কষ্ট পাই, মুষড়ে পড়ি, আবার ভাবি, তারা যদি এগিয়ে এসে দেশকে সঠিক পথে না চালাই, তবে আপা-ম্যাডামের দল আমাদের শুষেই যাবে।কিন্তু আমরা কেন যারা খারাপ তাদের নিজেরাই নির্বাচিত করি,তারপর হা-হুতাশ করি, শুধু ব্লগের পাতায় ঝড় তুলি, বুঝিনা। লেখকের লেখায় মন ভারাক্রান্ত হয়েই এসব লিখলাম, লেখককে ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমনের ইচ্ছায় নয়।

কষ্টে আছি >>>আইজুদ্দিন<<<

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মাঝে মাঝেই যখন এইসব ভাবি, চরম হতাশ লাগে। কোনো সমাধানই নাই! অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই চোখে ভাসে না। আমার নানী একটা কথা বলতেন, "মিয়া সাবের তিন পুত। যেইটা ভালো সেইটাও গাছে উইঠা মুতে!"

বাঁটে পড়ছি আমরা, বাংলাদেশ নামক উষ্ট পৃষ্ঠের ব-দ্বীপের হোপলেস মানুষেরা।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

আমি কোথাও যাবো না। সামনেরবার কাউকে ভোট দেবার ভুলটাও করবোনা। না জয়যুক্ত হোক!

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

নীল তারা  [অতিথি] এর ছবি

এই চিন্তাটাই গতবার ভোট দেবার সময় করছিলাম৷ কিন্তু আসলেই কোথায় যাব ভেবে করতে পারি নি৷

পরিবর্তনশীল এর ছবি

চলুক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

লেখা তো সেই-রকম...

কিন্তু, মাসকাওয়াথ ভাই - অপুষ্ট, রুগ্ন, বারবার হোঁচট খেয়ে চলা আমাদের গত দুই দশকের গণতন্ত্রের প্রাপ্তি কি একেবারেই নেই?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।