মুসলমান-মুসলমান ভাই ভাই

মাসুদ সজীব এর ছবি
লিখেছেন মাসুদ সজীব (তারিখ: শুক্র, ০৬/০৩/২০১৫ - ৪:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই শুনে আসছি মুসলমান-মুসলমান, ভাই-ভাই...! আসলে কি তাই? দুটো ভিন দেশের মুসলমান কি কোন কালে ভাই-ভাই ছিলো কিংবা আজ ও কি আছে?

চরম সত্যি হলো দুটো ভিনদেশের মুসলমান-মুসলমান কোনদিনও ভাই-ভাই ছিলো না। বাস্তবতা বলে সারা বিশ্বে এক মুসলমান অন্য মুসলমানের সাথে যে আচরণ করে তা সভ্য দেশের অন্য ধর্মের মানুষরা, মুসলমান দের সাথে কোনদিনও করে না। আপনি হুংকার দিয়ে লেখককে নাস্তিক বলতে পারেন, এমনকি আপনার মুসলমানুভূতি আঘাত পেয়েছে বলে ৫৭ ধারায় মামলাও ঠুকে দিতে পারেন, কিন্তু এটাই সত্যি। আর এই সত্যির পক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমাণটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একাত্তরে। একাত্তরে পাকিস্থানের মুসলমান ভাইরা লাখ লাখ বাঙালি মুসলমান ভাইদের মেরেছে। তো তখন কি মুসলমান-মুসলমান ভাই ভাই ছিলো না? আপনি বলবেন সেটি যুদ্ধ ছিলো, যুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ বিবেচনার বিষয় না। কোন তর্কে না গিয়ে মেনে নিলাম সেটা যুদ্ধ ছিলো। কিন্তু অন্য আরব মুসলমান রাষ্ট্রগুলো কি করেছিলো ভাই সম্পর্কিত বাঙালি মুসলমান বাঁচাতে? কেউ কি এগিয়ে এসেছিলো? আসে নি। হ্যাঁ এগিয়ে এসেছিলো জর্জ হ্যারিসন, এগিয়ে এসেছিলো রবিশঙ্কর, যারা মুসলমান ছিলো না। তারা প্রমাণ করেছে মানুষের ধর্ম একটাই, আর সেটি হলো মানবতা।

একাত্তর অনেক পুরানো স্মৃতি, গোল্ডফিশ বাঙালির তা মনে থাকার কথা না, আর নব্য হেট পলিটিক্স নিরপেক্ষদের তত্ত্ব যুদ্ধের সাথে ধর্ম মেশাবেন না, খেলার সাথে রাজনীতি মিশাবেন না, এমন কু-যুক্তির ত্যানা প্যাঁচানোর সাথেও তর্কে গেলাম না। বর্তমান দিয়ে দেখি বিষয়টা কতটুকু সত্য। ভাগ্য সন্ধানে লক্ষ লক্ষ বাঙালি মুসলমান আরব রাষ্ট্রগুলোতে যুগ যুগ ধরে কাজ করছে, কাজ করছে ইউরোপ আমেরিকাতে ও। আসুন দেখি আরব রাষ্ট্রে ভাইদের সাথে কেমন আছে বাঙালি মুসলমান-রা আর কেমন আছে ইউরোপ-আমেরিকায় শত্রু ইহুদি-খ্রিষ্টান-নাসারাদের সাথে। আরব রাষ্ট্রের মুসলমানরা বাঙালি মুসলমানদের ডাকে মেসকিন (ভিখারি) বলে, আপনার বিশ্বাস না হলে আরব রাষ্ট্র ফেরত বাঙালিদের জিজ্ঞেস করুণ। আমার পরিচিত কম হলেও ১৫-২০ জন থাকে আরব রাষ্ট্রে। তাদের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। আরব্য বর্বর মুসলমানরা বাঙালি মুসলমানকে কোন সম্মান তো দূরের কথা মানুষও মনে করে না। মনে করে টাকায় কেনা গোলাম। যেমন ইচ্ছে তেমন খাটাবে। দুটো উদাহারণ দেই।

ঘটনা এক: আমরা এক কলেজ বন্ধু কলেজ পাশ দেওয়ার আগেই সৌদি আরব পাড়ি জমায়। সেখানে গিয়ে নানান হয়রানির শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত এক আরব ব্যবসায়ীর গাড়ির ড্রাইভারের চাকরি পায়। বছরের পর বছর একই বেতনে চাকরি করেছে সে, শুধু তাই নয় কোন মাসেই ঠিক মতো সঠিক সময়ে তার বেতন দেয়নি তার মসুলমান ভাইটি। রাত চারটায় তাকে ডেকে নিয়েছে, দুপুর দুটোয় ঘুমের সময় তাকে ডেকে তুলেছে দিনের পর দিন। বাজার সদাই করা, ঘরবাড়ি পর্যন্ত পরিষ্কার করার কাজও তাকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো নামাজ পড়তে দাঁড়িয়েছে যখন তখন বলেছে ’তোকে নামাজ পড়তে কে বলেছে’ ?

ঘটনা দুই: এক পরিচিত মামা কাতার গেলো। বছর খানিক যেতেই কাতার সরকার ’আকামা (রেসিডেন্স পারমিট)’ খরচ তিন-চারগুন বাড়িয়ে দিলো, ফলাফল আকামার টাকা জোগাড় করতে না পেরে আকামা করতে ব্যর্থ। হয়ে গেলো অবৈধ, কিছুদিন জেল খেটে অবশেষে সব হারিয়ে দেশে ফেরত। মুসলমান ভাই হিসেবে সেখানে কোন ছাড় দেওয়া হয়নি।

আরব রাষ্ট্রগুলোতে বাঙালি মুসলমান কর্মীর সাথে কেমন অমানবিক আচরন করে চাইলে অসংখ্য উদাহারণ দেওয়া যাবে। অনেকেই হয়তো সেসব রাষ্ট্রে অর্থ আয় করে কিন্তু দু-একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া কোন আরব রাষ্ট্রেই বাঙালি মুসলমানরা আরবের মুসলমানদের কাছে ভাইয়ের সম্মান দূরের কথা মানুষের মূল্য’ই পায় না। তাই আরববের মুসলমান আর বাঙালি মুসলমানের সম্পর্ক কোনদিন বন্ধুত্বের হয় নি, হয়েছে গোলাম আর মুনিবের।

এবার আসি ইউরোপ-আমেরিকায় মানুষকে কিভাবে বিচার করা হয় সেটা একটু দেখে নেই। একটা উদাহারণ দেই। আমার বোন-ভাগ্নি থাকে আমেরিকায়। ওরা জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক। ৯/১১ এর পরে আমার ভাগ্নি তার ক্লাসে একদিন বর্ণবাদী আচরণের শিকার হলো। ঘটনাটি ছিলো এমন, ক্লাসে একমাত্র সে হিজাব পরে যেত। ফলে সহজেই সবাই বুঝতো ও মুসলমান। একদিন তার ক্লাসের এক শিক্ষক বলেছিলো ’আমেরিকায় যে হারে মুসলমান বাড়ছে তাতে কিছুদিন পর আমাদের কে মেরে তারা আমেরিকা দখল করে নিবে’। শিক্ষকের এমন কথার পর ক্লাসের সকল শিক্ষার্থী তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ও কিছু বলে কি না। বয়স অনেক কম (১১ বৎসর) হওয়ায় সে কিছু বলতে পারেনি কিন্তু প্রচন্ড অপমানিত হয়েছিলো। সে প্রতিবাদ করতে পারেনি কারণ তখন মুসলমান-খ্রিষ্টান-ইহুদি এগুলোর ভালো-খারাপ বুঝতে শিখেনি। বাসায় এসে সে প্রচন্ড মন খারাপ করে, এবং আব্বুকে বলে আচ্ছা আব্বু ’মুসলমানরা কি খুব খারাপ?’ দুলাভাই প্রথমে তার মতো করে বুঝিয়েছেন, যে সকল মুসলমান খারাপ না। কিছু মুসলমান খারাপ, যেমন খারাপ সব ধর্মেই থাকে। অল্প কিছু খারাপের জন্যে একটা ধর্মের সকল মানুষকে খারাপ বলা যায় না। তার পরের দিন দুলাভাই সে স্কুলে গিয়েছিলেন, স্কুল প্রধানের কাছে বিচার দিয়েছেন ঘটনার। প্রধান শিক্ষক ভাগ্নি কে ডেকে ক্ষমা চেয়েছেন এবং ওই শিক্ষক কে চাকরিচ্যুত করেছেন।

এমন ঘটনা কি কোনদিন কোন আরব রাষ্ট্রে কল্পনা করা যায়? কিংবা বাংলাদেশে?

আপনি দশ-পনের-বিশ যতই বছর-ই থাকুন না কেন, ঐ দেশের সব নিয়ম কানুন যতই মেনে চলুন না কেন, আরব রাষ্ট্রে কোন দিনও বিন্দুমাত্র নাগরিক সুবিধা আপনি পাবেন না, ঐ রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব তো কোন দিন’ই নয়। অপরদিকে ইউরোপ-আমেরিকায় একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে নিয়ম মেনে বৈধ ভাবে বসবাস করলে নাগিরকত্ব পায় যে কোন ধর্মের, যে কোন দেশের মানুষ। নাগরিক না হয়েও গ্রীন কার্ড থাকলেই আপনি কম খরচে পড়ালেখার সুবিধা পাবেন, স্বাস্থ্য সেবা পাবেন, গাড়ি লোন পাবেন, এমনকি মা হওয়ার সময় আপনার গর্ভে শিশুর জন্যেও ওরা আপনার খাদ্য সামগ্রীতে ছাড় দিবে। এগুলো দিতে তারা কোনদিন ধর্ম আর মানচিত্র বিচার করে না। মানুষে মানুষে কোন বৈষম্য থাকতে পারে না, অথচ আরব মুসলমানরা তা মানে না, কোনদিন মানে নি। সেটা কেমন? যেমন কোন বাঙালি কোনদিন আরবের নারী কিংবা পুরুষকে বিয়ে করতে না। প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ালে গর্দান থাকে না। অন্যদিকে কত বাঙালি মুসলমান ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে সে দেশের নাগরিক বিয়ে করে নাগরিকত্ব নিয়েছে তার কোন হিসেব নেই। বিষয়টা শুধু নাগরিক হওয়ার না, মানুষে মানুষে সম্পর্ক হতে যে ধর্ম-রাষ্ট ভিত্তিক ব্যবধানের দেয়াল হতে পারে না সেটার ও।

শুধু বাঙালি নয়, কোন আরব রাষ্ট্রই অন্য দেশের মুসলমানদের তাদের ভাই মনে করে না। মায়ানমারে যখন মুসলমানদের পুড়িয়ে মারা হলো তখন কোন আরব রাষ্ট্রই সহায়তার কোন হাত বাড়িয়ে দেয়নি। মুসলমান রাষ্ট্র ইরাক আক্রমনের সময়ও সব আরব রাষ্ট্র মুখে তালা দিয়েছিলো। সিরিয়া-লিবিয়া সহ মধ্য প্রাচ্যের সবগুলো রাষ্ট্রে আমেরিকা-ইসরায়েলের দাদাগিরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন তথাকথিত পবিত্র দেশ সৌদি আরব। মুসলমান রাষ্ট্রগুলোতে মুসলমানদের দুটো পক্ষ শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষে মারা যায়, তখন বুঝতে বাকি থাকে না মুসলমান-মুসলমান কত টা ভাই-ভাই আর কতটা শত্রু সম্পর্কে আবদ্ধ। চোখের সামনে এতসব জ্বলন্ত উদাহারণ থাকার পরও যারা মুসলমান-মুসলমান ভাই ভাই বলে দাবি করেন তাদের চেয়ে বড় রামছাগল আর নেই। এদের দেখেই বোধহয় রবি ঠাকুর বলেছিলেন “সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি’। এখন হয়তো রামছাগলের সংখা সাত কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু সেই কথার সত্যতা এতটুকু ও বদলায় নি।


মন্তব্য

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

সত্যি,

ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই শুনে আসছি মুসলমান-মুসলমান, ভাই-ভাই...! আসলে কি তাই? দুটো ভিন দেশের মুসলমান কি কোন কালে ভাই-ভাই ছিলো কিংবা আজ ও কি আছে?

কিন্তু শুধু ভিন দেশে বলছেন কেন? নিজ দেশেও কি আমরা ভাই, ভাই?

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

মাসুদ সজীব এর ছবি

নিজ দেশে ভাই ভাই না হলেও দেশের মানুষ বলে আলাদা একটা টান থাকে, দেশের ভেতর নিজে শহরের মানুষ হলে আমরা অনেক জায়গায় ছাড় দেই, আন্তরিকতা একটু বেশি দেখাই। কিন্তু দেশের ভেতর ধর্ম দিয়ে মানুষ ভাগ করি না। ধর্ম দিয়ে মানুষকে ভাগ করাটাই সমস্যার। এমন ধর্ম দিয়ে ভারত বর্ষ ভাগ করার জন্যেই পশ্চিম পাকিস্থান নামক একটা বর্বর, অসভ্য, অমানুষে ভরা দেশের সাথে আমাদের ২৪ বছর কাটাতে হয়েছিলো।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

নিজ দেশে ভাই ভাই না হলেও দেশের মানুষ বলে আলাদা একটা টান থাকে, দেশের ভেতর নিজে শহরের মানুষ হলে আমরা অনেক জায়গায় ছাড় দেই, আন্তরিকতা একটু বেশি দেখাই।

ভাল লাগলো।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, চল সবাই মক্কায় যায়। সেই দেশে গেলে গরীব দেশের মুসলমানদের কি অবস্থা হয় সেটা সবারই জানা আছে। আরব দেশের মুসলমানদের কাছে আমরা হলাম মিসকিন। ইউরোপের উন্নত দেশেও যে আরব মুসলিমরা আছে, তাদের কাছে আমরা নীচু জাতীর মিসকিন। আরব দেশে ভাল পোস্টে চাকরীতে সাদা চামড়া কে যে বেত্ন দিবে, আমাদের দিবে তাদের ৩ ভাগের ১ ভাগ, বাকি সুযোগ সুবিধাও কম, সাদারা বছরে ৩ বার দেশে যাওয়া আসা করতে পারে, আমাদের দিবে ১ বার। গত বছর আরব দেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ঠিক হওয়ার পরে বেতন আর সুযোগ সুবিধা যখন দেখলাম সাদাদের চেয়ে ৩ ভাগেরও কম, তখন আর যেতে মন চায়? মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, এই কথা শুধু শুনতে পাওইয়া যায় মসজিদে নামাজের সময়ে, কিন্তু বাকি সময়ে কোন সম্পর্ক নাই।

সাজ্জাদূর রহমান

মাসুদ সজীব এর ছবি

এই কথা শুধু শুনতে পাওইয়া যায় মসজিদে নামাজের সময়ে, কিন্তু বাকি সময়ে কোন সম্পর্ক নাই।

চলুক চলুক সহমত।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ময়ুখ কিরীটি এর ছবি

পোষ্টটা পড়ে অনেক মজা পেয়েছি.....মনে মন অনেক আগেই এ বিষয়টা ভেবেছি এবং অনেকটাই আপনার সাথে একমত আমি.....বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবাই যদি এভাবেই বুঝতে শিখত তাহলে শিরোনামের কথাগুলো বলার আগে দু'বার ভাবত মন খারাপ
আর আরব কাহিনি পড়তে পড়তে তো ঘেন্না ধরে গেছে.....বহি:স্থ কর্মকান্ড দুয়েকটা দেখেই যতই পাক-পবিত্র মনে করি ভিতরে ভিতরে জাতিটা ততটাই জঘন্য!! কিছু বলার নাই এদের নীতি আর চলন-বলন নিয়ে ইয়ে, মানে...

লেখাটার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে হাসি

মাসুদ সজীব এর ছবি

পড়া এবং নিজের চিন্তা আর অনুভূতির কথা প্রকাশের জন্যে আপনাকেও ধন্যবাদ হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

এক লহমা এর ছবি

মূল্যবান লেখা। এই লেখার ফলে রাতারাতি বড় কিছু পরিবর্ত্তন এসে যাবে না অবশ্যই। কিন্তু এই রকম লেখাগুলিই একসময় বেশীরভাগ লোকের কাছে আসল ছবিটা তুলে ধরবে আশা করি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাসুদ সজীব এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ দাদা হাসি , ভালোথাকুন সবসময়।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

মুসল্মান-মুসলমান ভাই-ভাই - কারবালার যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই বক্তব্যের অসারতা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

বেশ কিছুদিন যাবত একটা কথা চলছেঃ পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামভীতি। এই কথার বাস্তবতা নিয়ে আমি কিছুটা সন্দিহান। পশ্চিমা বিশ্ব যদি মুসলমানদের প্রতি এতই শত্রুভাবাপন্ন হয়ে থাকে, তাহলে এসব দেশে মুসলমানদের সংখ্যা (এবং অভিবাসন) ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির কারণ কী? টুইন টাওয়ার আর পেন্টাগন যদি মুস্লিম-প্রধান দেশে থাকতো, আর অমুসলমানরা যদি সেই দেশে যেয়ে সেগুলি ধ্বংস করতো, তাহলে তো আমার মনে হয় না সেই দেশের অমুস্লিম জনগোষ্ঠী জীবিত থাকত। কিন্তু আমেরিকায় কয়টা মুসলমানকে দেশছাড়া করা হয়েছে? এই সপ্তাহেই নিউইয়র্ক সিটির মেয়র ছুটির ক্যালেন্ডারে ঈদকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আরব সন্ত্রাসীরা যখন শারলি এবদোর কার্টুনিস্টদের খুন করলো, তখন কিন্তু মুসলমানদের সমর্থনে পশ্চিমা বিশ্বের অমুসলিমরাই এগিয়ে এসেছে। নোয়াম চমস্কির মত বুদ্ধিজীবি কলাম লিখে দাবী করেছেন যে এই হত্যা হল আরব বিশ্বে পশ্চিমা আগ্রাসনের ফল। কিন্তু যেটা কেউ মাথায় রাখেনি সেটা হল সন্ত্রাসীরা কি দাবী করেছে যে তারা পশ্চিমা আগ্রাসনের প্রতিবাদে কার্টুনিস্টদের হত্যা করেছে। সন্ত্রাসীরা তো দাবী করেছে যে তারা ইসলাম এবং রসূলের অপমানের বদলা নিতে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। মুসলমানদের নিজেদের কর্মকাণ্ডের ফলে যদি পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ ইসলামের প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাস পোষণ করে (কেউ কিন্তু দাবী করে না যে পশ্চিমা বিশ্বে হিন্দুভীতি বা বৌদ্ধভীতি আছে), তাহলে তো তাদেরকে খুব একটা দোষ দেয়া যায় না।

Emran

অতিথি লেখক এর ছবি

পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামোফোবিয়া বেশ ভালোভাবেই আছে, যদিও ইউরোপ বনাম আমেরিকায় এর চেহারা ভিন্ন। আপনার প্রশ্গুলোয় একে একে আসি:

১।.....এসব দেশে মুসলমানদের সংখ্যা (এবং অভিবাসন) ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির কারণ কী?

ইউরোপে আভিবাসী আসে মূলত তাদের অতীত-কলোনী দেশগুলো থেকে, যেমন ইংল্যান্ডে উপমহাদেশ থেকে আর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে, ফ্রান্সে মূলত আফ্রিকার দেশগুলো থেকে, আবার জার্মানীতে বিশাল টার্কিশ পপুলেশন রয়েছে। উন্নত দেশগুলো তাদের নিজেদের স্বার্থেই অভিবাসী নিয়ে থেকে, আবার যেসব দেশ থেকে অভিবাসীরা আসে দেশের অধিকাংশই মুসলিমপ্রধান, এবং এদের জনগণের একটা বড় অংশই অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কারণে অভিবাসনে ইচ্ছুক। ফলে দুয়ে দুয়ে চার।

আমেরিকায় মুসলিম পপুলেশন এখনো অনেক কম, ইউরোপের তুলনায়। ফ্রান্সে যেমন মুসলিম ১০ ভাগের মত, আমেরিকায় সেখানে মাত্র এক ভাগ। এই এক ভাগের একটা বড় অংশ আরবীয়, আর বাকী আফ্রিকান বা এশিয় মুসলিম। আগের মত কারণেই আমেরিকাতে মুসলিম বাড়ছে, তবে ধীরে।

২। ......টুইন টাওয়ার আর পেন্টাগন .... আমেরিকায় কয়টা মুসলমানকে দেশছাড়া করা হয়েছে?

টুইন টাওয়ার আর পেন্টাগন ঘটনার পেছনে কোনো রাষ্ট্র বা কোনো জাতি দায়ী নয়, বরং রাষ্ট্রের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা উগ্রবাদীরা দায়ী, এদের জন্য কেন মুসলিমদের দেশছাড়া করা হবে? হ্যাঁ, ২য় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা সরাসরি জাপান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তখন সব আমেরিকান-জাপানিজকে একঘরে করা হয়েছিল সরকারীভাবেই, কিন্তউ এখানে তো দৃশ্যপট তো সেরকম না!

তবে নাইন ইলেভেনের পর আমেরিকায় আর ইউরোপে মুসলিমদের জীবন বেশ কঠিন করে তুলেছে।

৩।এই সপ্তাহেই নিউইয়র্ক সিটির মেয়র ছুটির ক্যালেন্ডারে ঈদকে অন্তর্ভুক্ত ......... নোয়াম চমস্কি ..............

এগুলো একটা দিক, কিন্তু ইসলামোফোবিয়া ছড়িয়ে আছে এর থেকে অনেক বেশী। অনেকদিন ধরেই নোয়াম চমস্কির বিভিন্ন মতামত আমেরিকার মেইনস্ট্রীমের প্রতিনিধিত্ব করে না। আমেরিকার সর্বাধিক জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেল ফক্স নিউজে কী পরিমাণ ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানো হয়, সেটা আপনি তাদের নিউজ সপ্তাহখানেক ফলো করলেই পরিষ্কার দেখহতে পাবেন। নেটে বা ইউটিউব খুজুন, পুরো উইকেন্ড নষ্ট করেও দেখে শেষ করতে পারবেননা। আর নিউইয়রক একটা শিক্ষিত, মাল্টিকালচারল শহর, এটা মোটেও সারা আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করে না। আজ থেকে ৭০ বছর আগে, এখনকার ইসলামের মত তখন সবচেয়ে "ঘৃণিত" ধর্ম ছিলো ইহুদী ধর্ম আর ইহুদীদের লোকজন দেখতো নিচু চোখে, সেই তখনো নিউয়র্কে ইহুদীরা তুলনামূলক অনেক ভালো ছিলেন, তার মানে এই নয় যে সারা আমেরিকায় বা সারা ইউরোপে(!) তখন একই অবস্থা ছিলো।

----যান্ত্রিক বাঙালি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি বলেছিলাম, " টুইন টাওয়ার আর পেন্টাগন যদি মুস্লিম-প্রধান দেশে থাকতো, আর অমুসলমানরা যদি সেই দেশে যেয়ে সেগুলি ধ্বংস করতো, তাহলে তো আমার মনে হয় না সেই দেশের অমুস্লিম জনগোষ্ঠী জীবিত থাকত। কিন্তু আমেরিকায় কয়টা মুসলমানকে দেশছাড়া করা হয়েছে?"

উত্তরে আপনি বললেন,

টুইন টাওয়ার আর পেন্টাগন ঘটনার পেছনে কোনো রাষ্ট্র বা কোনো জাতি দায়ী নয়, বরং রাষ্ট্রের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা উগ্রবাদীরা দায়ী, এদের জন্য কেন মুসলিমদের দেশছাড়া করা হবে?

বাবরী মসজিদ ভাঙ্গা অথবা মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের ঝালটা কিন্তু আমরা মুসলমানরা মেটাই আমাদের দেশের হিন্দু-বৌদ্ধদের ওপর অত্যাচার করে। আমেরিকায় ৯/১১, লন্ডনে টিউব বম্বিং, মাদ্রিদে ট্রেন বম্বিং, বোস্টন ম্যারাথনে হত্যা, শারলি এবদো হত্যা - এসব ঘটনার পরে কি আমেরিকা/যুক্তরাজ্য/স্পেন/ফ্রান্সে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়েছিল? পশ্চিমা বিশ্ব যদি এতই ইসলামবিদ্বেষী হয়ে থাকে, তাহলে তো বলতে হয় তাদের ইসলামবিদ্বেষ একটা নির্বিষ ঢোঁড়া সাপ; এটাকে এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

ইউরোপে আভিবাসী আসে মূলত তাদের অতীত-কলোনী দেশগুলো থেকে, যেমন ইংল্যান্ডে উপমহাদেশ থেকে আর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে, ফ্রান্সে মূলত আফ্রিকার দেশগুলো থেকে, আবার জার্মানীতে বিশাল টার্কিশ পপুলেশন রয়েছে। উন্নত দেশগুলো তাদের নিজেদের স্বার্থেই অভিবাসী নিয়ে থেকে, আবার যেসব দেশ থেকে অভিবাসীরা আসে দেশের অধিকাংশই মুসলিমপ্রধান, এবং এদের জনগণের একটা বড় অংশই অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কারণে অভিবাসনে ইচ্ছুক। ফলে দুয়ে দুয়ে চার।

আপনার দাবী অনুযায়ী ইউরোপে "মুসলিমদের জীবন বেশ কঠিন" বেশ কঠিন হয়ে গেছে। তো যেখানে জীবন কঠিন, সেখানে যেতে চাওয়ার কারণ কী? অর্থনীতি একটা কারণ হতে পারে, "অন্যান্য" কারণগুলি কী? আর কিভাবে "মুসলিমদের জীবন বেশ কঠিন" হয়ে গেছে, সেটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হত। এমন কোন আইন কি করা হয়েছে, যার বলে মুসলমানরা ভোট দিতে পারে না, সরকারী চাকুরি/সামরিক বাহিনীতে যোগদান করতে পারে না, নিজস্ব (আইনসিদ্ধ) ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে না, সম্পত্তি ক্রয় করতে পারে না, রাষ্ট্রের ভেতরে অবাধে যাতায়াত করতে পারে না, এবং/অথবা বিবাদ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের দ্বারস্থ হতে পারে না? বৈষম্যের সুনির্দিষ্ট, সিস্টেমেটিক উদাহরণ না দিলে কেবল "মুসলিমদের জীবন বেশ কঠিন" হয়ে গেছে, এধরণের বক্তব্যের সঙ্গে ফক্স নিউজের প্রোপাগান্ডার তেমন কোন পার্থক্য থাকে না।

নেটে বা ইউটিউব খুজুন, পুরো উইকেন্ড নষ্ট করেও দেখে শেষ করতে পারবেননা।

নেটে বা ইউটিউবে খুঁজলে প্রচুর জিহাদী ভিডিওও পাওয়া যায়, যেগুলি "পুরো উইকেন্ড নষ্ট করেও দেখে শেষ করতে" পারব না। আর এসব জিহাদী ভিডিওর মূল বক্তব্য হল কিভাবে ইউরপ-আমেরিকার জাহেলি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে ইসলামী সমাজব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। এসব ভিডিও দেখে কেউ যদি এখন ইসলামভীতিতে ভোগে, তাকে তো খুব একটা দোষ দেয়া যাবে না।

নিউইয়রক একটা শিক্ষিত, মাল্টিকালচারল শহর

নিউ ইয়র্ক শিক্ষিত বা মাল্টিকালচারাল শহর প্রায় ৩০০ বছর ধরে, ২০১৫ সালে হয়ে হঠাৎ করে এটা মাল্টিকালচারাল হয়ে যায়নি। আর নিউইয়র্ক আমেরিকার প্রথম বা একমাত্র শহর না, যেখানে ঈদের দিন স্কুল বন্ধ থাকে; অন্যান্য শহরগুলি হলঃ বারলিংটন (ভারমনট), কেমব্রিজ (ম্যাসাচুসেটস), ডিয়ারবর্ণ (মিশিগান), স্ককি (ইলিনয়), ট্রেনটন এবং প্যাটারসন (নিউ জার্সি)। আসল কথা হল, ভোটের রাজনীতিতে এসব শহরের রাজনীতিবিদরা যদি মনে করতেন ঈদের দিন স্কুল বন্ধ রাখলে তাদের ভোট কমে যাবে, তারা কোনদিনই এধরণের সিদ্ধান্ত নিতেন না। আর নিউইয়র্কের রাজনীতিবিদদের মাথাব্যথা আরও বেশী হওয়ার কথা, কারণ ৯/১১-র ধ্বংসযজ্ঞ নিউইয়র্কেই হয়েছিল। সেখানে যখন এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তখন সেটা "নিউইয়র্ক ব্যতিক্রম" - এই যুক্তিকে কিছুটা হাল্কা করে দেয়।

আজ থেকে ৭০ বছর আগে, এখনকার ইসলামের মত তখন সবচেয়ে "ঘৃণিত" ধর্ম ছিলো ইহুদী ধর্ম আর ইহুদীদের লোকজন দেখতো নিচু চোখে, সেই তখনো নিউয়র্কে ইহুদীরা তুলনামূলক অনেক ভালো ছিলেন, তার মানে এই নয় যে সারা আমেরিকায় বা সারা ইউরোপে(!) তখন একই অবস্থা ছিলো।

১৮শ শতকের এনলাইটেনমেনটের ফলে পশ্চিম ইউরোপীয় সমাজে যে উদারীকরণ শুরু হয়, তার সবচেয়ে বড় বেনেফিশিয়ারি ছিল ইহুদিরা। আপনি যদি কেবল জার্মানির কথাও ধরেন, নাজি পার্টি যখন ক্ষমতায় আসে, সেই সময় ইহুদীরা ছিল শিক্ষা এবং অর্থনীতিতে জার্মানির সবচেয়ে অগ্রসর জনগোষ্ঠী। ১৯২০র দশকের মহামন্দার কালে ইহুদীদের অর্থনৈতিক সাফল্যকে নাজি পার্টি সুকৌশলে ইহুদীদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা হিসেবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এধরণের কোন প্রোপাগান্ডা তো দেখা যায় না; যা দেখা যায়, তা হল "মুসলমানরা সন্ত্রাসী অথবা সন্ত্রাসের প্রতি সহানুভূতিশীল" - এ ধরণের একটা প্রচার। এই প্রচারের ফলে সকল মুসলমান যেমন সন্ত্রাসী অথবা সন্ত্রাসের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে যায় না, তেমনি পশ্চিমা বিশ্বের বৃহত্তর সমাজ-জনগনও ইসলামবিদ্বেষী হয়ে যায় না।

দ্বিতীয়তঃ আপনি ৭০ বছর পিছনে যেতে বললেন; ৭০ বছর পিছিয়ে গেলে পৌঁছাই ১৯৪৫ সালে। ধরে নিচ্ছি, আপনি ২য় বিশ্বযুদ্ধকালীন জার্মানির কথা বলছেন। ১৯৩৩-১৯৪৫ সালে জার্মানিতে ইহুদীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ছিল আইনসিদ্ধ; বর্তমানকালে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যদি সমতুল্য আইনসিদ্ধ বৈষম্যের দৃষ্টান্ত না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে তো বলতে পারি পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামবিদ্বেষের দাবী অতিরঞ্জিত।

Emran

মাসুদ সজীব এর ছবি

চলুক চলুক

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কথা দিয়েই শুরু করি

"বেশ কিছুদিন যাবত একটা কথা চলছেঃ পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামভীতি। এই কথার বাস্তবতা নিয়ে আমি কিছুটা সন্দিহান।"

আপনার সন্দেহ দূর করতেই আমার মন্তব্য। আপনি মুসলিমবিদ্বেষ/ইসলামভীতি বলতে যদি শুধু খুন-খারাবি অথবা বৈষম্যমূলক আইন বুঝে থাকেন, তাহলে সেটা আপনার নিজস্ব ব্যাখ্যা। আইন এবং খুন খারাবি না করেও লোকের মনে ইসলামভীতি আর মুসলিমবিদ্বেষ থাকতে পারে, সেটা স্পষ্টতই বোঝা যায় বেশ কিছু জিনিস দিয়ে:

১। সেদেশের মিডিয়ায় মুসলিমদের কীভাবে ট্রীট করা হয়
২। সাধারণ জনগণ মুসলিমদের সম্বন্ধে কী ভাবে

আমি আমেরিকায় বেশ কয়েকবছর কাটিয়েছি, সেখানকার মিডিয়া নিয়ে এখনও খোঁজখবর রাখি, জেনে রাখুন, ফক্স নিউজ এদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেল, এই চ্যানেলের চরম এন্টি-মুসলিম প্রপাগন্ডা নিয়ে সেদেশের অন্যান্য মিডিয়াগুলোও সরব। এখানে রেফারেন্স দিচ্ছিনা, আপনি আপনার পরিচিত কোন আমেরিকা-প্রবাসীর কাছে জানার চেষ্টা করুন, হুবহু একই উত্তর পাবেন, নিশ্চিন্ত থাকুন। অথবা গুগল করুন, সেটাও না পারলে আমার সময় নষ্ট করে লিংক বের করে দেব, কী আর করা।

এখন আসি সাধারণ জনগণের ভাবনায়। আমেরিকায় মুসলিমদের সম্বন্ধে নেগেটিভ ধারণা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। ইউরোপেও এতা ক্রমবর্ধমান

প্রথম বিশ্বের দেশগুলোয় মানবিধাকারের অবস্থা তুলনামূলক ভালো, সেটার সাথে বাবরী মসজিদ নিয়ে বা অন্য হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় শ' পাঁচেক মানুষ মেরে ফেলার তুলনা হয়না। এসব দেশে ইসলামভীতির বাহ্যিক ফলাফল বিভিন্ন রেসিজম (কর্মক্ষেত্রে বা বাইরে, মূল লেখাতেও এর উদাহরণ আছে), বা টুকটাক কিছু ভায়োলেন্ট ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, আপাতত।

আর আমেরিকার আপনি বাকী যে কয়েকটা শহরের উদাহরণ দিলেন, তাদের মধ্যে চোখ কাড়লো ডিয়ারবর্নের নাম। ডেট্রয়েটের কাছের ডিয়ারবর্ন হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে আরবীয়দের সবচেয়ে বড় আবাসস্থল। আবারো বলছি, আপনার কয়েকটা উদাহরন সারা আমেরিকার মতামত প্রতিফলন করেনা, সেটা বুঝতে হলে মিডিয়া বা জরিপের সাহায্য নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

----যান্ত্রিক বাঙালি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আমেরিকায় বেশ কয়েকবছর কাটিয়েছি, সেখানকার মিডিয়া নিয়ে এখনও খোঁজখবর রাখি

আমেরিকায় বেশ কয়েক বছর আমিও কাটিয়েছি; ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে আমেরিকার একাধিক কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। যেটা আমার চোখে পড়েছিল, সেটা হল মুসলিম শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি। ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষের দাবীর পাশাপাশি কলেজ ক্যাম্পাসে মুসলমানদের ব্যাপক এবং প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড একটু বেমানান লাগে আর কি!

জেনে রাখুন, ফক্স নিউজ এদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেল, এই চ্যানেলের চরম এন্টি-মুসলিম প্রপাগন্ডা নিয়ে সেদেশের অন্যান্য মিডিয়াগুলোও সরব।

ফক্স নিউজ কেবল মুসলমানদের নিয়েই প্রোপাগান্ডা করে না; ফক্স নিউজ অশ্বেতাঙ্গ/সমকামী/নিম্নবিত্ত ইত্যাদি অনেককে নিয়েই প্রোপাগান্ডা করে। ২০১১ সালে যখন "অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট" আন্দোলন চলছিল, ফক্স নিউজ তখন তাদেরকে নিয়েও হাসিঠাট্টা-প্রোপাগান্ডা করেছিল। সুতরাং ফক্সের প্রোপাগান্ডা দিয়ে আসলে তেমন কিছু প্রমাণিত হয় না।

ইউরোপে ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতি আপনি পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপের যে লিঙ্ক দিলেন, সেটা ২০০৮ সালের। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১৪ সালের জরিপ তো দেখাচ্ছে কিছুটা ভিন্ন চিত্রঃ ২০০৮ সালে স্পেনের ৫২% লোক মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করত; ২০১৪ সালে এই হার ৪৬%। ২০০৮ সালে জার্মানির ৫০% লোক মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করত; ২০১৪ সালে এই হার ৩৩%। ২০০৮ সালে ফ্রান্সের ৩৮% লোক মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করত; ২০১৪ সালে এই হার ২৭%। তবে যুক্তরাজ্য [২৩% (২০০৮) - ২৬% (২০১৪)] এবং পোল্যান্ডে [৪৬% (২০০৮) - ৫০% (২০১৪)] এই হার বৃদ্ধি পেয়েছে। পিউয়ের এই জরিপ থেকে আমরা আরও দেখতে পাচ্ছি যে নেতিবাচক মনোভাবের ক্রমবর্ধমান ধারা কেবল মুসলমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; এটা ইহুদী এবং রোমা জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ যারা মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে, তারা সাধারনভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে।
আমেরিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায় নাস্তিক এবং মুস্লিমদের প্রতি আমেরিকানরা একই রকম নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে! সুতরাং ইউরোপের মতো আমেরিকাতেও ধর্মবিদ্বেষের পরিস্থিতি খুব সরল না। তবে (মুসলিমপ্রধান দেশগুলিতে) মুসলমানরা খৃষ্টান/ইহুদী/ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে ঠিক কেমন ধারণা পোষণ করে, সে ব্যাপারেও একটা জরিপ হওয়া উচিৎ।

ইসলামভীতির সঙ্গে বর্ণবাদ/ বর্ণবৈষম্যকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক না। বর্ণ বৈষম্যের ব্যাপারে জাতিসংঘের সংজ্ঞা হলঃ "racial discrimination" shall mean any distinction, exclusion, restriction or preference based on race, colour, descent, or national or ethnic origin which has the purpose or effect of nullifying or impairing the recognition, enjoyment or exercise, on an equal footing, of human rights and fundamental freedoms in the political, economic, social, cultural or any other field of public life." এই সংজ্ঞায় কোথাও ধর্মের কথা বলা হয়নি। পৃথিবীতে স্বর্ণকেশ-নীলচক্ষু-বিশিষ্ট শ্বেতাঙ্গ মুসলমানও যেমন আছে, তেমনই কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানও আছে। আর মূল লেখায় যে বর্ণবাদী শিক্ষকের কথা বলা হয়েছে, সেই শিক্ষককে কিন্তু বরখাস্ত করা হয়েছিল। মূল লেখক মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মুসলমানদের "বর্ণবাদের" দৃষ্টান্তও দিয়েছেন; সেই বর্ণবাদী আচরণের ভিকটিমরা কোন প্রতিকার পাননি। আর "টুকটাক কিছু ভায়োলেন্ট ঘটনার মধ্যেই" যে ইসলামভীতি আপাতত সীমাবদ্ধ, সেই ভায়লেন্স কি মুসলমানদের বিরুদ্ধে সিস্টেমিক? যদি সিস্টেমিক হয়ে না থাকে, তা হলে এ ধরণের ভায়লেন্সের জন্য আমি ইসলাম- অথবা মুসলিমবিদ্বেষকে দায়ী করতে রাজী নই। আপনি করতে চাইলে সেটা আপনার স্বাধীনতা।

আমি কিন্তু ডিয়ারবর্ন সহ ৬টা শহরের নাম দিয়েছিলাম; বাকী ৫টার কি অবস্থা?

শেষ কথা হল, পরধর্মবিদ্বেষ সেমিটিক ধর্মগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করলে উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপ মুসলমানদের জন্য নিরাপদতম আবাসস্থল। এই অঞ্চলের দেশগুলি মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, এবং এই কারণেই তারা (কাল্পনিক/বাস্তব) ইসলামবিদ্বেষকে সীমা ছাড়াতে দেবে না। সীমা ছাড়িয়ে গেলেও তার আইনি প্রতিকারের সুযোগ মুসলমানদের আছে (আপনি আইনি ব্যবস্থায় বিশ্বাস না করলে সেটা আলাদা কথা)।

Emran

এক লহমা এর ছবি

"শেষ কথা হল, পরধর্মবিদ্বেষ সেমিটিক ধর্মগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করলে উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপ মুসলমানদের জন্য নিরাপদতম আবাসস্থল। এই অঞ্চলের দেশগুলি মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, এবং এই কারণেই তারা (কাল্পনিক/বাস্তব) ইসলামবিদ্বেষকে সীমা ছাড়াতে দেবে না। সীমা ছাড়িয়ে গেলেও তার আইনি প্রতিকারের সুযোগ মুসলমানদের আছে (আপনি আইনি ব্যবস্থায় বিশ্বাস না করলে সেটা আলাদা কথা)।" - চলুক চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

আআপনার কথাগুলো শুনতে চমৎকার, বেশিরভাগ কথাতেই একমত, তবে কিনা মূল প্রসঙ্গের থেকে অনেক দূরে (পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামভীতি আছে কি নেই) আপনার কলেজের অভিজ্ঞতা বা কয়েকটি শহরে ঈদের ছুটি ঘোষণা করা এগুলো এনেকডোটাল এভিডেন্স। আমাদের দেশেও দূর্গাপূজার সময় ভার্সিটিগুলোয় চমৎকার উৎসব হয়, সেটা দেখে বাংলাদেশে হিন্দু-বিদ্বেষ নেই--- সেটা ভেবে বসলে মুশকিল। ঠিক তেমনি, নাস্তিক ভীতি আছে এর মানে যে ইসলাম নিয়ে ভীতি নেই, এমনও নয়, ফক্স নিউজ ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে বায়াসড বলে যে তারা মুসলিম বায়াসও করেনা, সেটাও কোনো যুক্তি হয় না। পাশ্চাত্য মুসলিমদের জন্য নিরাপদ কি অনিরাপদ, খুন খারাবী কতটুকু, সেটা আরো বিস্তারিত প্রসঙ্গ, পাশ্চাত্যে ইসলামভীতি আছে কি নেই, সেটুকুই আমার কথা, সেটুকু এই ব্লগের পাঠকরা বুঝতে পারলেই আমার মন্তব্য সার্থক।

---যান্ত্রিক বাঙালি

মাসুদ সজীব এর ছবি

আমাদের দেশে বড় কোন কারণ ছাড়াই বেশিভাগ সহি মুসলমান হিন্দুদের সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা পোষন করে। অন্যদিকে সারাবিশ্বে মুসলমানদের নানা সংগঠন (অবশ্যই সহি নয়) আইএস, তালেবান, লস্করই তৈয়ব, বোকাহারাম রা সারা বিশ্বে দিনের পর দিন যেভাবে নিরাপরাধ মানুষ মারছে। ততে মুসলমানদের সম্পর্কে শুধু নেগেটিভ নয় বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। নেগেটিভ ধারনা পোষন করা এক বিষয় আর বিদ্বেষমূলক আচরণ আরেক বিষয়। একটি বিষয় আমরা সবাই কমবেশি জানি প্রতিটি ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি নেগেটিভ ধারণা পোষন করে।

নাফিজ যখন সন্ত্রাসী আক্রমনের পরিকল্পনায় আমেরিকায় ধরা খেলো তখন কি আমেরিকান বাঙালি মুসলমানরা, ইহুদি-খ্রিষ্টানদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলো? ১/১১র পরে? কখনও হয়নি। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয়েছে, ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গনে বাংলাদেশে কত মন্দির ভেঙ্গেছে, কত মানুষ মেরেছে হিসেব নেই। জনগন নেগেটিভ ধারনা পোষন করলে কিংবা বিদ্বেষমূলক আচরণ করলে রাষ্ট্র/প্রতিষ্ঠান ও সেইরকম করে কিনা সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকা সহ ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো তা করে না। যেমন উল্লেখ করেছি আমার একেবারে কাছের মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে।

মূল বিষয় হলো আমরা যাদের ভাই জেনে আসছি তারা কি ভাই ‍সুলভ আচরণ করে কিনা। না, করে না, সেই সব দেশের মানুষ যেমন মনে করে না, তেমনি সেই সব রাষ্ট্রও করে না। এটাই লেখার মূল বিষয়। ভাই-ভাই নামক বোগাস তত্ত্ব থেকে যত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসা যাবে ততই মঙ্গল।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কলেজের অভিজ্ঞতা বা কয়েকটি শহরে ঈদের ছুটি ঘোষণা করা এগুলো এনেকডোটাল এভিডেন্স।

মানলাম। আমি একাধিকবার সিস্টেমেটিক এভিডেন্স চেয়েছি, এখন পর্যন্ত পাইনি।

নাস্তিক ভীতি আছে এর মানে যে ইসলাম নিয়ে ভীতি নেই, এমনও নয়, ফক্স নিউজ ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে বায়াসড বলে যে তারা মুসলিম বায়াসও করেনা, সেটাও কোনো যুক্তি হয় না।

আপনার এই কথার উল্টো যুক্তিও দেয়া যায়। ফক্সের প্রোপাগান্ডা ডেমোক্রেট/লিবারেল/মুসলিম/অশ্বেতাঙ্গ/নাস্তিক/সমকামী/pro-choice এদের ব্যাপারে কোন বাছবিচার করে না। এদিক থেকে ফক্সের সঙ্গে বাংলাদেশের ইঙ্কিলাব/আমার দেশ/বাঁশের কেল্লার কোন মৌলিক পার্থক্য নেই। ইঙ্কিলাব/আমার দেশ/বাঁশের কেল্লা পড়ে যে কেউ মনে করতে পারে বাংলাদেশ ধর্মীয়/জাতিগত/বুদ্ধিবৃত্তিক সংখ্যালঘুদের জন্য বিপদজনক জায়গা (সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে এই ভাবনা খুব একটা অমূলক না অবশ্য)।

পাশ্চাত্যে ইসলামভীতি আছে কি নেই, সেটুকুই আমার কথা

এই প্রশ্ন আমারও। এবং আমার মতে পাশ্চাত্যে ইসলামভীতির গভীরতা এবং ব্যাপ্তি অন্যান্য সংখ্যালঘু (ধর্মীয়/জাতিগত/বর্ণগত/লৈঙ্গিক) এবং/অথবা বিদেশিভীতির (xenophobia) গভীরতা এবং ব্যাপ্তির তুলনায় কমও না, বেশীও না। এমনকি পশ্চিম ইউরোপের অপেক্ষাকৃত বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী-সম্বলিত তিনটি দেশে মুসলমানদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের ক্রমহ্রাসমান ধারা জরিপে উঠে এসেছে। পাশ্চাত্যের ইসলামবিদ্বেষের অতিরঞ্জনেই আমার আপত্তি।

পাশ্চাত্য মুসলিমদের জন্য নিরাপদ কি অনিরাপদ, খুন খারাবী কতটুকু, সেটা আরো বিস্তারিত প্রসঙ্গ

ভীতি আর নিরাপত্তা একই মুদ্রার দুই পিঠ। তবে এই ব্যাপারে আর কথা না বাড়াই। ভাল থাকবেন।

Emran

দিগন্ত এর ছবি

"ভীতি আর নিরাপত্তা একই মুদ্রার দুই পিঠ।" - এইটা কি সত্যি? দেশে ল এন্ড অর্ডার বলে বস্তু থাকলে দুই এক নয়, না থাকলে দুইই এক। পশ্চিমে বিদ্বেষ থাকলে মানুষ আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বা অন্ততপক্ষে আইন মেনে চলার চেষ্টা করে। তাই ভীতি থেকে নিরাপত্তা সমস্যা আসে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আয়নামতি এর ছবি

ইমরান ভাই আপনি এত সুন্দর মন্তব্য করেন, পোস্ট লিখেন না কেন রে??

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি নিজেকে একজন reactive স্পীকার মনে করি; এই জন্যই পোস্টের চেয়ে মন্তব্য লিখতে আমি ভালু পাই! চোখ টিপি

Emran

হিমু এর ছবি

নিবন্ধন করে মন্তব্য করুন, মডারেটরদের ওপর চাপ কমান।

ধ্রুব আলম এর ছবি

চলুক

এক লহমা এর ছবি

চলুক চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই- এটা একটা মিথ। এটা রাজনৈতিক ইসলাম এবং তার সম্প্রসারণের সবচেয়ে চালু হাতিয়ার।

লেখাটা কেন যেন খুব ভালো লাগেনি। কোথায় যেন সুর কাটা লাগলো। নাকি আমিই অ-সুর হয়ে আছি?

স্বয়ম

মাসুদ সজীব এর ছবি

ভালোলাগে নি সরাসরি বলার জন্যে ধন্যবাদ হাসি । সবার কাছে একটা লেখা ভালোলাগবে এমনটা আশা করি না। তবে কোথায় সুর টা কাটা লাগলো সেটা উল্লেখ করলে পরের লেখাগুলো তে লেখক হিসেবে আরো যত্নবান হতে পারতাম। ভালোথাকুন, শুভেচ্ছা।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগেনি কথাটা অত সরলভাবে বলা না। প্রত্যাশা বেশি ছিল। তথ্যগুলো আরেকটু গুছিয়ে দিলে কি প্রত্যাশা মতো হতো কিনা ভাবছি। আরেকবার পড়লাম।

মন্তব্য-প্রতি মন্তব্যে জমে উঠেছে। বিশেষত Emran- এর মন্তব্যে পোস্টটা ঋদ্ধ হলো।

স্বয়ম

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ, অবশ্যই ভাই। এত্ত পেঁচানির কি আছে? ছহীহ ইসলামী মিথলজি কইতাছে হাবিল-কাবিল
আছিল দুনিয়ার পেত্থম ভাই। এক্করে ছহীহ ভাই, সেই ট্রাডিশনডাই টিক্যা গ্যাছে আর কি। চোখ টিপি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

সব কথা এক মন্তব্যে কইয়া দিলা! ওঁয়া ওঁয়া

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ, অবসরে হালাল ইন্ডিয়ান খানা খাইতে খাইতে হালাল ইন্ডিয়ান শান্তিটিভিতে একমাত্র হালাল টিভিতারকা দ্য জোকারের স্ট্যান্ডাপ কমেডি দেখতে দেখতে ছহীহ রেফারেঞ্ছ দেয়া শিখ্যা গেছি। এই রেফারেঞ্ছের বিরুদ্ধে কেউ কিছু কইলেই ব্লাস্ফেমি... হি হি হি শয়তানী হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

বাস্তব সম্মত চমত্কার একটি লেখা। খুব ভালো লাগল।
চলুক চলুক
কুন্ঠিত পান্থ

মাসুদ সজীব এর ছবি

মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

হাসিব এর ছবি

এই বিষয়ে লিখতে গেলে দুইভাবে লেখা সম্ভব। প্রথমত মুসলমানরা যে ভাই ভাই ভাবে বা বলে সেই চিন্তাটা সঠিক কিনা। দ্বিতীয়ত, প্রথম অংশের উত্তর না বোধক হলেও মুসলমানরা আদতে ভাই ভাই ভাবে কিনা একে অপরকে। সহজ করে বললে কোন প্যান ইসলামিক কমরেডশীপের অস্তিত্ব আছে কিনা। প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা আসলে আমরা জানি। আপনার লেখাটা প্রথম দিকটা নিয়ে। দ্বিতীয় প্রশ্নটা আসলে একটু বেশি ইন্টারেস্টিং। কারা আসলে ভাই ভাই ভাবছে, কারা আসলে ভাই ভাই ভাবনাটা দুরে সরিয়ে রাখছে এবং এর কারণগুলো কী কী হতে পারে সেটার স্টাডি করাটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং বিষয় মনে হয়।

মাসুদ সজীব এর ছবি

হুম, আমি প্রথম বিষয়টা নিয়েই শুধু লিখতে চেয়েছি। এই প্রচলিত মিথ টা যে সম্পূর্ণ মিথ্যে সেটি আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয় বিষয়টা ইন্টারেষ্টিং, কারা এই মিথ টা কে এখনো জীবিত রেখেছে আর কারা কারা সেটি কে আসমানী কিতাবের মতো অপরিবর্তনীয় মনে করে বংশ পরম্পরায় টিকিয়ে রেখেছে। সেটা নিয়ে লেখতে হলে আরো বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত বোধহয় দরকার পড়বে। আশা করি অন্য কেউ লিখবে, আপনি ও চাইলে পারেন কিন্তু হাসিব ভাই চিন্তিত

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মন মাঝি এর ছবি

"মুসলমান-মুসলমান ভাই ভাই" কথাটা আসলে একটা এ্যাস্পিরেশনাল ও মোটিভেশনাল স্টেটমেন্ট এবং সেই হিসেবেই ব্যবহৃত বা উদ্দিষ্ট, ফ্যাকচুয়াল স্টেটমেন্ট হিসেবে না। অর্থাৎ, এটা যে সর্বজনীন বাস্তবতা না তা এই উচ্চারণটার এ্যাস্পিরেশনাল চরিত্রের মাধ্যমে ইনহেরেন্টলিই স্বীকার করে নেয়া হচ্ছে। সুতরাং এই বক্তব্যের ভিত্তিতে এর বাস্তব সত্যতা নিয়ে বিতর্কের খুব একটা অবকাশ বা প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

****************************************

মেঘলা মানুষ এর ছবি

প্রাসঙ্গিক একটা সত্য গল্প মনে পড়ল।

৯০ এর দশকে এক সিনিয়র বড় ভাই মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন অফিসের ট‌্যুরে। কিছু সময় পেয়ে উনি একটা সাইট সিয়িং প্যাকেজ কিনে একটা বাসে ওঠেন। বাসের ট্যুরিস্ট গাইড সবার সাথে পরিচিত হতে গিয়ে কে কোন দেশের সেটা জিজ্ঞেস করছিল। ঐ বড়ভাই তার দেশ 'বাংলাদেশ' বলার পরই বাসের এক কোণা থেকে আওয়াজ আসে যে, সে এই মিসকিনের সাথে এক বাসে উঠবে না। বাংলাদেশে সব বস্তি, বস্তির লোক হয়ে তুমি এই বাসে কি কর?

ঐ লোক কোথাকার ছিল ধরতে পেরেছেন নিশ্চয়ই! তবে, তাকে চরম মৌখিক ধোলাই দিয়েছিল হাজেরানে মজলিস, সাদা চামড়ার অমুসলিমরাই। দেঁতো হাসি

মাসুদ সজীব এর ছবি

সব জায়গায় অভিজ্ঞতা কম বেশি এমনি তারপরও থেমে নেই এই প্রচার। এটি আসলে বাঙালির ইতিহাসকে না জানার আইলসেমী আর ধর্মান্ধ মনোভাবের জন্যেই হচ্ছে।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

১) সাক্ষী দা আপনার ২৮ নাম্বারের কমেন্ট পড়ে তৃপ্তিতে ঢেকুর তুললাম, সবকিছুর সার পাওয়া গেল ।

২)লেখকের লেখার চাইতে কমেন্টের মাধ্যমে লেখার বিষয়বস্তু যেভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে সেটাই ভাল লেগেছে ।আমার মতে সংখ্যলঘুদের আক্রমন করতে , তাদের মেয়েদের বা সম্পত্তি দখল করতেই এই ভাই-ভাই খেলা খুব ভাল ভাবে কাজে লাগে । তাছাড়া তেমন ভাবে এই থিউরির প্রয়োগ তো দেখি না আমাদের দেশে।এখনো আমার গ্রামে দেখি ছোট বেলা থেকে বাচ্চাদের শেখানো হয় হাবিল কাবিলের বোগাস গল্প, বিভিন্ন প্রবাদ বাক্য যেমন “তেতুল হয় না মিষ্টি , হিন্দু হয় না ইস্টি”(এটাও হিন্দুরাও ব্যবহার করে, তবে বাচ্চাদের শেখাতে দেখিনি)ইত্যাদি ইত্যাদি ।মূল ব্যপার হচ্ছে সংকীর্নতার ব্যপারটা ছোটবেলাতেই ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মগজে । যা বাবা , অমুসলিমদের সবকিছু গনিমতের মাল!

-----------------
রাধাকান্ত

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আগেই কইছিলামঃ
ভাই-ভাই সম্পর্ক-১
ভাই-ভাই সম্পর্ক-২
হ্যাশমারানিরা যথারীতি নীরব। পরিবারগুলো ধৈর্য ধরার শক্তি পাক, আর মানুষগুলো বেঁচে থাকুক, এটুকুই আশা।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মেঘলা মানুষ এর ছবি

রেগে টং

রানা মেহের এর ছবি

১৯৭১ এ মুসলমান 'ভাইয়েরা' আমাদের যা দিয়েছে
আর অন্যান্য মুসলমান ভাইয়েরা যেভাবে দর্শকের ভূমিকা রেখেছে
তারপরেও মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই ধরনের ধারনায় যারা বিশ্বাস করে
তাদের দেখে দুঃখ পাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।