ফিরিঙ্গী

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: রবি, ২১/০৪/২০১৩ - ১২:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৫২৭ বা ১৫২৮ সালের কোন এক ঝড়ের রাত। বঙ্গোপসাগর।

উথাল পাথাল অবস্থা, মট করে জাহাজের মাস্তুল উড়ে গেল এক ঝটকায়। এত বড় জাহাজ নড়ছে যেন কাগজের নৌকা। কাপ্তেন আলফন্সো আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা যে যেরকম পারে শক্ত কিছু ধরে আছে আর বিড়বিড় করে হা ঈশ্বর হা ঈশ্বর করছে। ক্লান্ত হুয়ান হঠাৎ হাত ফসকে ছিটকে উড়ে পড়ে গেলো সাগরে, চোখের নিমিষে কালো পানি যেন গিলে নিল তাকে। জাহাজের সকলে ভয়ার্ত স্বরে সকলে আউড়ে চলেছে এম নম দো পায় দো ফিলিও দো এস্পিরিতো সান্তো...

ভোরবেলা শান্ত সাগরে জাহাজের কঙ্কালে বসে সকলে যখন ঝিমুচ্ছিল, একজন আচমকা চিৎকার দিয়ে ওঠে ঐযে নৌকা! এরপর পালের ময়লা সাদা কাপড় পেঁচিয়ে তারা লাফঝাঁপ দিয়ে যেরকম দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করছিল তার তেমন দরকার ছিলনা, নৌকায় বসা রতন মাঝি অনেক দূর থেকেই ঠাহর করার চেষ্টা করছিল ঘটনা কি। কাদের জাহাজ, সাইজে তো বেশ বড় দেখা যায়। আশপাশের তল্লাটের কেউ নয় মনে হচ্ছে। সাথে অস্ত্রপাতি কিরকম কে জানে, বেশি কাছে গেলে কল্লা ঘ্যাচাং করার সমূহ সম্ভাবনা। সে ঘাড় ফিরিয়ে হাঁক দিলো এই তালেইব্যা, খামোশ খায়া থাক। ফিরিঙ্গী মনে হয়, এগুলিরে কত্তার কাছে নিয়া বেইচা দিম। কথা কম কইস, যা কওয়ার আমি কমু।

নৌকা কাছে আসতেই পর্তুগীজের দল ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে কাছিয়ে আসলো। গুটিসুটি পাকিয়ে কোনায় তালেব হাঁ করে তাদের দিকে তাকিয়ে ভাবল মাগোরে কি বিরাট দামড়া একেকটা, এত লম্বা মানুষ হয়! তারা অবশ্য উঠেই নেতিয়ে পড়ল নৌকায়, আর দুর্বল গলায় বলতে লাগল সাটগাও সাটগাও। মিষ্টি করে মাথা ঝাঁকিয়ে রতন মাঝি ইশারা দিল বাকিদের নাও ছাড়ার জন্য। সাটগাওয়ের গুষ্টি মারি, তোদের নিয়া যাব চকরিয়ায় কত্তার কাছে, কত্তার ফিরিঙ্গী অত্যাধিক পছন্দ। ভালো দাম পাওয়া যাবে। আজকে দিনটা ঠিক আছে।

ফিরিঙ্গীওলা নৌকা ঘাটে ভিড়ার খবর পেয়ে চকরিয়ার সর্দার খুদাবক্স নগদে সিপাই পাঠালেন তাদের বেঁধে আনার জন্য। আচমকা ছোরাছুরি বল্লমের সামনে দুর্বল শরীরের পর্তুগীজদের মাথা তুলে দাঁড়ানোর কোন উপায় রইল না, তবে তারা বুঝার চেষ্টা করছিল জায়গাটা চট্টগ্রাম কিনা। ঝোপজঙ্গল দেখে মনে হচ্ছে চট্টগ্রাম না, হারামজাদা নৌকার মাঝি তাদের কোন চিপায় এনে ফেলল কেজানে। ভালো বিপদে পড়া গেল।

বিকেলে কাপ্তেন আলফন্সো কে ডেকে পাঠালেন খুদাবক্স।দোভাষী মারফত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নিলেন তারা কারা এবং কেন। পর্তুগীজ, আচ্ছা এই কথা। সাথে মালকড়ি কিরকম? আলফন্সো উত্তর দিলেন তেমন কিছু নেই, জাহাজের কানা ভেঙ্গে মালপত্র সাপ্লাই সবই হাওয়া। চোয়াল শক্ত করে খুদাবক্স বললেন তবে রে শালা ফিরিঙ্গী, মালকড়িই যদি নাই তাহলে তোর সাথে পকপক করছি কেন। তিনি হুকুম দিলেন এদের সিপাইদের সাথে লড়তে পাঠানো হোক। আর খবর ছড়িয়ে দেয়া হল এদের কেউ ছাড়িয়ে নিতে হলে পয়সাওলা লোকেরা যেন খুদাবক্সকে জানায়। মূল্য “সঠিক” হলে এদের তার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হবে।

কিছুদিন পরের কথা। রাতে সিপাইদের সাথে খাবারের সময় পর্তুগীজদের একজনের কাছে এক বেঁটে করে লোক এসে ফিসফিস করে বলল আইস বন্ধু কথা আছে। গোয়া ফিরত যেতে চাও?

হায় গোয়া। চট্টগ্রাম যেতে পারলেই এরা বেঁচে যায়, আর সেখানে গোয়া! অবশ্যই, কিন্তু ঘটনা কি?

জানা গেল ঘটনা সহজ। কাছেই নাকি ভিড়ে আছে এক পর্তুগীজ নৌজাহাজ, এখান থেকে বেশি দূর নয়। তারা গোয়া যাচ্ছে বা গোয়া থেকে আসছে কিছু একটা। গভীর রাতে ব্যারাকের ডাইনে যে চিপা আছে সেইখান দিয়ে নাকি একটু এগুলেই নদী। সেই নদী গিয়ে মিশেছে সাগরে, যেতে মোটেই দেরি হবে না। সেই বেঁটে লোক বলল তার সাথে আরো তিনজন যাবে, নৌকা রেডিই আছে। ভোরের ঠিক আগে শিয়াল ডাকলে আস্তে করে যেন তারা বেরিয়ে আসে।

যথাসময়ে শিয়ালের ডাক শোনা গেল, পা টিপে টিপে বেরিয়ে ব্যারাকের চিপা দিয়ে বেরিয়ে পর্তুগীজের দল দিল পাঁই পাঁই ছুট।অন্ধকারে ঠাহর করা মুশকিল, কিন্তু একটু খুঁজতেই নৌকা দেখা গেল। যথাসম্ভব নিঃশব্দে ছেড়ে দিল সেই নৌকা।

কিছুদূর এগোতেই এক খাড়া বাঁক, আর সেইখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এক সশস্ত্র হিন্দু তান্ত্রিকের দল। ফিরিঙ্গী কয়টা পালাবে এই খবর আগের রাতে পেয়ে তাদের অস্থিরতার অন্ত ছিলনা। সেই গত অমাবস্যার আগে তারা দেবীর কাছে শপথ করেছিল যে এক লাল টুকটুকে ফিরিঙ্গী তারা মা কে বলি দেবে, এই তার সুবর্ণ সুযোগ। অপ্রস্তুত ফিরিঙ্গী নৌকায় আচমকা রে রে শব্দে খাঁড়া নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল তারা, তবে দুমদাম কোপ দিলনা কাউকেই। সকলকে জীবিত দরকার, বিশেষত লাল্টু ফিরিঙ্গীকে। মাকে আবার বলা হয়েছে সবচেয়ে ডাগর চেহারার ফিরিঙ্গী বলি দেয়া হবে, সেই কথা তো রাখতেই হবে। তাই একজনকে নৌকায় রেখে বাকীদের বেঁধে আবার খুদাবক্সের লোকের কাছে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হল।

কাপ্তেন আলফন্সোর ভাতিজা গঞ্জালেজ ভয়ার্ত মুখে দেখল সকলকে অন্য নৌকায় বেঁধে তোলা হচ্ছে কিন্তু তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে এই নৌকায়। চিৎকার করে সে কাঁদতে থাকল আর চাচাকে আকুল হয়ে ডেকে বলল বাঁচাও বাঁচাও। এই চিৎকারে বিরক্ত হয়ে দশাসই তান্ত্রিক এক রামচড় কষিয়ে বলল চুপ! ভয়ে সে চোখ বুঁজল, আর বিষ্ময়ের সাথে লক্ষ্য করল তার দুই চোখ জুড়ে গভীর ঘুম আসছে।

ঘুম ভেঙ্গে গঞ্জালেজ নিজেকে আবিষ্কার করল হাত পা বাঁধা অবস্থায়। দাস হিসেবে এখন কোথায় চালান করে দেবে কে জানে। কিন্তু এত আওয়াজ কেন? এত লোকই বা কেন? মাথা উঁচিয়ে তাকাতেই সে দেখে এক লম্বা টেকো লোক খাঁড়া উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে। ভয়ে আধমরা হয়ে চিৎকার দেবার আগেই গঞ্জালেজের গলায় নেমে এল ঝাটকা।

দেহ থেকে আলাদা মাথা গড়িয়ে গেল অল্প।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অ্যাঁ
চলুক

সুবোধ অবোধ

সত্যপীর এর ছবি

কি ডরাইলেন?

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

উহু,টাশকি খাইছি!!
খাইছে

সুবোধ অবোধ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্পটার যে ব্যাপারটা ভালো লেগেছে সেটা হচ্ছে টেবিলের অন্য পাশ থেকে দেখার প্রচেষ্টা। ঔপনিবেশিক প্রভুদের রচিত সাহিত্যে মিথ্যা বর্ণনা আর "আমি কলা খাই না"র চাপে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী দমবন্ধ হয়ে মারা যায়। ঔপনিবেশিক ভৃত্যদের রচিত সাহিত্যে ক্ষোভ আর বীর বন্দনায় কিছু সত্য চাপা পড়ে যায়। উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ, অত্যাচার, বিদ্রোহ, বিশ্বাসঘাতকতা, জয়-পরাজয়, পাততাড়ি গুটানো এই সব কিছুতে সত্য ইতিহাসকে বিকৃত না করে, কাউকে আকাশে তুলে বা কাউকে পাতালে না নামিয়ে মানবিক গল্প রচনা করা সম্ভব। বোধগম্য কারণে এই পথে কেউ সহসা হাঁটতে চান না।

অট-১: ১৫২৭-২৮ এর চট্টগ্রামে পর্তুগীজ সেটেলমেন্ট নিয়ে লেখা যথেষ্ট কঠিন কাজ হবার কথা। বইয়ের গন্ধমাদন ঘাঁটলে যে সামান্য কিছু পাওয়া যায় সেগুলোর ওপর আস্থা আনা মুশকিল। এই ব্যাপারে চার্চগুলো ঘাঁটাঘাটি করলে হয়তো সামান্য কিছু তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

অট-২: আমি এতোদিন জানতাম Juan = হুয়ান। কিন্তু এই নামধারী এক স্পেনিয়ার্ড জানালেন উচ্চারণটা হবে "খ্বোয়ান"। রেডিওতে একটা বাতচিতেও শুনলাম "খ্বোয়ান"ই উচ্চারণ করছে। অবশ্য পর্তুগীজরা কী উচ্চারণ করে তা জানি না। আরো বড় ধাক্কা খেয়েছি Allende = আইয়েন্দে এটা সঠিক না শুনে। এটা নাকি "আযেন্দে" হবে। "কিন্তু আমরা তো রেডিও-টিভিতে এমনটাই শুনতে পাই" বললে প্রাগুক্ত খ্বোয়ান একটা গালি সহযোগে বললেন, "........ আমেরিকানরা তোমাদেরকে এ'সব ভুলভাল উচ্চারণ শেখাচ্ছে"।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

"খ্বোয়ানই ঠিক, জোসে যেমন আসলে হোসে না, বরং "খ্বোসে

সত্যপীর এর ছবি

এইখানে ৫৯ পৃষ্ঠায় দেখবেন পাণ্ডবদা এরকম গল্প আছে একটা। আলফন্সো দ্য মেলো ঝড়ের কবলে পড়ে আর জেলের দল চক্রান্ত করে তাদের চিটাগং এর বদলে চকরিয়া নিয়ে যায়। সেখানে লোকাল সর্দার খুদাবক্স খাঁ (পর্তুগীজরা লিখে গেছে Codovascam) তাদের আটকে রাখে আর পয়সা চায়। Sore বলে একটা শহরে (কোন জায়গা ধরতে পারি নাই, সাগর থেকে আট লীগ দূরে বলা আছে) থেকে তারা পালাতে চেষ্টা করে আর ধরা খেয়ে যায়। আলফন্সোর ভাতিজা গঞ্জালেজ দ্য মেলোর কল্লা নামিয়ে দেয় তান্ত্রিকেরা, বাকীদের ফিরত পাঠানো হয়। পরে এক সওদাগর খাজা শিহাবুদ্দিন (কৈতেছে পারসীক, আর্মানিও হৈতারে) তাদের মুক্ত করে দেয়।

আমাদের অফিসের Juan তো নিজেরে হুয়ানই বলে। আবার জিজ্ঞেস করতে হইব।

সংযোজনঃ ভাইবা দেখলাম Sore মানে চর হইতেও পারে।

..................................................................
#Banshibir.

রামগরুড় এর ছবি

এই কাহিনীটা গল্পের শেষে ফুটনোটে দিয়া দেন। চরম লেখা উত্তম জাঝা!

-- রামগরুড়

সত্যপীর এর ছবি

ফুটনোটের কথা মাথায় আসেনাই, পরে এরকম লিখলে মাথায় রাখব বস।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

খাজা শিহাব উদ দীনের আল্টিমেটলি হরমুজে পালানোর ধান্দা থেকে বোঝা যাচ্ছে সে পারসী। তাছাড়া একজন আর্মানী জাহাজ বানিয়ে সমূদ্রে দুষ্টুমি করার কথা না। হরমুজ প্রনালী, বন্দর আব্বাস এলাকার লোকজনের সাথে খাজা সাহেবের চরিত্রের মিলও অনেক।

দূরত্বের ব্যাপারে পিয়ের দ্য হট বা ডি ব্যারোজ ভুল করেছেন। ৮ লীগে প্রায় ৩৯ কিলোমিটার হয়। ঐ অঞ্চলে সমূদ্র তীর থেকে নদী ধরে ৩৯ কিলোমিটার গেলে চকোরিয়া ছেড়ে বান্দরবান এলাকায় পৌঁছে যাবার কথা। তাছাড়া সমূদ্র থেকে ৩৯ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ী নদীর কোর্সে কোন চর হওয়া সম্ভব না। ম্যাপ দেখলে মনে হয় জায়গাটা চিড়িঙ্গা হতে পারে।

লিঙ্কটার জন্য ধন্যবাদ। এই বইগুলো পড়তে ভয় হয়। কারণ, এতে এক রেফারেন্স থেকে আরেক রেফারেন্সের অনন্ত জালে জড়িয়ে পড়তে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রামগরুড় এর ছবি

চলুক

-- রামগরুড়

অন্যকেউ এর ছবি

চলুক চলুক

অট২-এ আইসসালা! অ্যাঁ

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে, একেবারে ছিমছাম, মেদহীন, প্রত্যুত্তরের মতন। তবে এতে নিজেদের অর্থাৎ ভারতবর্ষের ‘অসভ্য জনপদ’ বিষয়ক যে বহুল প্রচার তার খ-ন হয় না। এখানে একটা কথা বলা জরুরী মনে হচ্ছে, ভারতবর্ষে দাসপ্রথা বা দাস কেনা-বেচার বিষয়টা এনরকম ছিল না। যতটুকু তথ্য পেয়েছি তাতে বিষ্মিত হলেও সত্য যে, এই অঞ্চলে বরং দাসপ্রথাকে কিছুটা হীন চোখেই দেখা হতো। তবে এ নিয়ে বিতর্ক আছে। দাসত্ব এখানে বৃহৎ পরিসরে ছিল, অর্থাৎ একেবারে জাতিগতভাবে। যেমন, ব্রাহ্মনের নিচে ক্ষত্রিয়, তার নিচে বৈশ্য বা শূদ্র এই ধারাবাহিকতায়্ সংহিতা অনুসারে (নাম উল্লেখ করতে পারছি না, দুর্বল স্মৃতির কারণে) দাস রাখাটা অপরাধ না হলেও অনুৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কেউ যদি স্বেচ্ছা দাসত্ব নেয়, তাহলে তার উপরেই তার মুক্তি নির্ভর করবে। দাসের সন্তান দাস হবে না। দাস কেনাবেচা করা যাবে না। এরকম। যা হোক স্মৃতির উপর বেশি নির্ভর করা ঠিক ন্।া লেখা ভালো লেগেছে।

স্বয়ম

সত্যপীর এর ছবি

আপনার মন্তব্য চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল কোন কারণে, দুঃখিত। ইন্টারেস্টিং মন্তব্য। ভারতবর্ষ অসভ্য জনপদ এই যুক্তি খন্ডন করার তেমন দরকার দেখিনা, সভ্যতা আপেক্ষিক ব্যাপার।

আপনি বলেছেন স্বেচ্ছা দাসত্বের কথা, এইটা কিরকম? স্বেচ্ছায় দাস হবার বিষয়টা কি ঠিক বুঝলাম না। কিছু জানা থাকলে জানায়েন। আর দাস কেনাবেচা করা যাবেনা এই কথা যদি কেতাবে লেখাও থাকে তাতে কি যায় আসে বলেন, দাস ব্যবসা রমরমিয়ে চলত এখানে। দাসের সন্তান দাসই হত। তাদের জীবনও হত অকল্পনীয় রকমের করুণ।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বেচ্ছা দাসত্বের বিষয়টা আমি পেয়েছি, মার্কস এর ভারতবর্ষের ইতিহাস বই থেকে। সেখানে সংহিতা ও তার সমসাময়িক বই থেকে উদাহরণ দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছা দাসত্ব বলতে, আমাদের এখনকার দিনের বাঁধা কাজের লোক বলতে যা বুঝায় তার একটা প্রাক্তন ও যন্ত্রনাদায়ক রূপ যারা পেটের দায়ে সম্পদশালীদেও ভৃত্যে পরিণত হতো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। এই অঞ্চলের সামন্তধারা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার এবং এখন পর্যন্ত তা রয়ে যাওয়ারা কার্যকারণ সম্ভবত এই ধারণাটার উপরেই। বেশ আগে পড়া বলে খুব বেশি উল্লেখ করতে পারছি না। তবে এটা নিশ্চিত যে এই অঞ্চলের দাসপ্রথা পশ্চিম থেকে ভিন্নতর ছিল। কিছুটা উদারতাও ছিল সম্ভবত। এটা আমার ধারণা। যুক্তি হচ্ছে, তা না হলে পশ্চিমের মতোই এখানে বিদ্রোহের মতো কেরই বা ইতিহাসের ধারামতোই সামন্ত এবং মহাজনি ভেঙে পড়তো। শিল্পায়ন একটা কারণ হিসেবে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু আমাদের স্মরণে রাখা জরুরি যে, শিল্পায়ন আর ভ’মিদাসপ্রথা একইসাথে ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে এগোয়। আমরা এটা প্রত্যক্ষ করেছি। এই অঞ্চলে আমরা এটা দেখতে পাই না। যা হোক এটা ভিন্ন আলোচনা।

স্বয়ম

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গল্প রচনার ভঙ্গি আর বর্ণনা ভালো লাগছে।
অভিজিৎ সেন এর মৌসুমী সমুদ্রের উপকূলে বইতে এই অঞ্চলে পর্তুগীজ জলদস্যুদের তাণ্ডবের ভালো বর্ণনা পড়েছিলাম কিছুদিন আগে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সত্যপীর এর ছবি

পড়া হয়নাই বইটা. আপনেরা একেকটা অভিশাপ, খালি বইয়ের কথা তুইলা মনটা খারাপ করে দেন মন খারাপ

..................................................................
#Banshibir.

কিষান এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

সত্যপীর এর ছবি

পপ্পনের থেকে চানাচুর মজা চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

একটু বেশী মাত্রায় অনু সাইজের হয়ে গেছে, পড়া শুরু করতে না করতেই শেষ। হুয়ান(খ্বোয়ান) আর গঞ্জালেসের জন্য সামান্য দুঃখ পেলাম।

আব্দুল্লাহ এ.এম.

সত্যপীর এর ছবি

অণু মানেই যন্ত্রণা শয়তানী হাসি

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

গল্পটা পড়তে গিয়ে আর পরে ষষ্ঠ পাণ্ডবের মন্তব্য পড়েও কেন জানি নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা মনে পড়ে গেল। দক্ষিনবঙ্গের বঙ্গোপসাগর নিকটবর্তী অঞ্চলকে পটভূমি করে স্প্যানিশ বা পর্তুগিজদের নিয়ে নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়েরও দুএকটা দুর্দান্ত উপন্যাস আছে।

গল্পটা বেড়ে হয়েছে! চলুক

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

আমাদের উপমহাদেশ নিয়ে মারাত্মক সব গল্প হয়. শক্ত গল্পকার হইলে লিখা ফাটাইতাম একবারে.

মোগল আমল নিয়া গল্প লিখার শখ. মামুরা এমন জটিল একেকটা ক্যারেক্টার আছিল যে গল্পে ফুটায় তোলা অসম্ভব কঠিন.

..................................................................
#Banshibir.

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
ইন্টারেস্টিং

সত্যপীর এর ছবি

অত্যন্ত.

..................................................................
#Banshibir.

সাইদ এর ছবি

পর্তুগালে জুয়ানরে হুয়ান বলে।

সত্যপীর এর ছবি

তাইলে ঠিকই আছে.

..................................................................
#Banshibir.

অন্যকেউ এর ছবি

সিরাম ইন্টারেস্টিঙ! চলুক চলুক চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

সত্যপীর এর ছবি

পুরাই!

..................................................................
#Banshibir.

স্যাম এর ছবি

অনেকদিন পর আজ পড়ার মুডে আছি - তাই একটু ছোট মনে হল খাইছে

সত্যপীর এর ছবি

আবার পড়েন খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

তুলিরেখা এর ছবি

দারুণ লেখা। তবে শুরু করতে না করতেই ফুরাইয়া গেল! মন খারাপ
পরেরটা একটু বড়সড় লেখা দিয়েন। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সত্যপীর এর ছবি

ঠিকাছে একদিস্তা কাগজ কিনা আনি তাইলে দোকান থেকে। কালি কলম মন লিখব তিনজন। দ্য থ্রি রাইটার্স।

..................................................................
#Banshibir.

তুলিরেখা এর ছবি

হাসি
থ্রি রাইটার্স অন আ বোট ? হাসি

আপনার কালিকলমমন পড়ে মনে পড়ে গেল বহুকাল আগের কলিকাতা পুস্তকমেলার স্মৃতি, তখন আমরা নেহাত ছোটো, কালেজের ছেলেপিলে, নিজেরা কোনো রোজগার সেভাবে করি না কেউ, সামান্য ছুটকাছাটকা টুউশানি ছাড়া। তাও আবার সেইসব টুইশনির মাইনেও মাঝে মাঝে দেয় না ছাত্রবাড়ীর লোকেরা। মন খারাপ
তো, সেই বইমেলায় "তুলিকলম" নামের এক প্রকাশনা সংস্থা স্টল দিয়েছিল। আমার এক বন্ধু কইল, "তুলি চল ওদের স্টলে যাই। তুই বলবি "এই যে আমি তুলি আর এই যে এর নাম কলম, এইবারে আমাদের ফ্রী তে বই দিন, কারণ আমাদের নামেই তো আপনাদের সবকিছু ।" হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সত্যপীর এর ছবি

হো হো হো

..................................................................
#Banshibir.

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

সবার মতই কই, আরেট্টু জমতে পারত, যদিও অনুগল্প কইছেন, সাইজের হিসাবে কইতেছি না, মনে হইল আরেট্টু জমতে পারত সব কিছু মিলাই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সত্যপীর এর ছবি

একদিন ঠিক জমায়া ফাডায়ালাম।

..................................................................
#Banshibir.

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হেহে হেইডা জানি দেইক্কাই না কইলাম দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সত্যপীর এর ছবি

খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগল

সত্যপীর এর ছবি

চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

ভাল্লাগছে

সত্যপীর এর ছবি

দেঁতো হাসি

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ সাবলিল হাসি

---
পিনাক পাণি

সত্যপীর এর ছবি

চিন্তিত

..................................................................
#Banshibir.

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

সত্যপীর এর ছবি

চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

ঊর্ণনাভ  এর ছবি

আপনার লেখা ইতিহাস বা ঐতিহাসিক গল্পগুলো পড়তে ভালু পাই। একদিন সময় কইরা আপনার এই ধরণের সব লেখা পইড়া ফেলবো ঠিক করছি।

সত্যপীর এর ছবি

ধইন্যবাদ ধইন্যবাদ। পইড়া কিছুমিছু কৈয়া যায়েন।

..................................................................
#Banshibir.

দিগন্ত এর ছবি

প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগ থেকে কিছু টুকরো গল্প সামনে আনার জন্য ধন্যবাদ। চোর-ডাকাত-জলদস্যু সব চিরকালই ছিল, আছেও। তবে সেই আমলে ইউরোপীয় জলদস্যুদের কাছে এই গুটিকয় তান্ত্রিক ছিল নেহাতই চুনোপুঁটি।
অন্য প্রশ্ন - ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এই তান্ত্রিকদের সাথে কি সন্ন্যাসী বিদ্রোহের কোনো সম্পর্ক আছে?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এটা কী বললেন! সন্ন্যাসী বিদ্রোহ তো পলাশীর যুদ্ধের পরের ঘটনা। আর এটা তো আরো আড়াইশো বছর আগের ঘটনা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

সময় আলাদা হলেও এই তান্ত্রিক-গোষ্ঠীই সেখানেও লিডারশিপ নিয়েছিল, তাই না?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সত্যপীর এর ছবি

দস্যু হার্মাদ নিয়া রগরগে গল্প ছাড়ার ধান্দা করতেছি।

আপনার ২য় প্রশ্নের উত্তর আমি নিশ্চিত না। বিদ্রোহের আড়াইশো বছর আগের চট্টগ্রামের তান্ত্রিকের কথা হইতেছে, এরা পরে উত্তর পশ্চিমে ছড়ায় গেছিল কিনা আমার জানা নাই। বিদ্রোহ চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসছিল কিনা সেইটাও আমি নিশ্চিত না, আমি যে অল্প কয়টা বইয়ে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের কথা পড়েছি তাতে চিটাগং এ কোম্পানির সাথে তান্ত্রিকের মারামারির কথা ছিল না। ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চট্টগ্রামের তান্ত্রিকদের সাথে আড়াইশো বছর পরের বিদ্রোহী সন্ন্যাসীদের কোন সম্পর্ক নাই। সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সন্ন্যাসীরা মূলত ভিক্ষান্নজীবী ছিলেন, কাপালিক নন্‌। ধর্মীয় স্কুলিং-এ তারা ভিন্ন ভিন্ন স্কুলের। আর জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশনের পার্থ্যকের কথা তো আপনি বললেনই। ভিক্ষা করা বা তোলা তুলতে বাধা দেওয়া থেকে ব্রিটিশদের সাথে হিন্দু সন্ন্যাসী (কথাটা যদিও ঠিক হলো না) এবং মুসলমান ফকির (এই কথাটাও ঠিক হলো না) গোষ্ঠীগুলোর সাথে ব্রিটিশদের ঠোকাঠুকিটা লাগে। ওয়ারেন হেস্টিংস, কর্নওয়ালিস, ওয়েলেসলীদের প্রাথমিক পর্যায়ের অমানুষিক অত্যাচার, ব্যাপক লুণ্ঠন, জোরজুলুমের ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের কিছু মানুষও এই বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়েন। এখানে ফকির ও সন্ন্যাসীদের মধ্যকার সম্মিলনের কারণটা অস্তিত্ত্বের লড়াইতে টিকে থাকার জন্য স্ট্র্যাটেজিক মিত্রতা। এতে 'ধর্মীয় সম্প্রীতির অভূতপূর্ব নিদর্শন' জাতীয় মহিমা আরোপ করার ভিত্তি নাই। মুসলিম গ্রুপটার কিছুটা সামরিক ওরিয়েন্টেশন থাকলেও হিন্দু গ্রুপটার তা ছিলো না। আবার হিন্দু গ্রুপটা দলে ভারী এবং তাদের জনভিত্তি সবল ছিল। তবে প্রায় ৭৫ বছর ধরে এই বিদ্রোহ চলতে থাকায়, পরে গ্রুপগুলোর চরিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। সেসব ভিন্ন গল্প, এখানে প্রাসঙ্গিক নয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

আপনি সঠিক, বিষয়টা পরিষ্কার হল। ধন্যবাদ।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

Arindam এর ছবি

ভালো লাগল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।