ফাঁসুড়ে - শেষ পর্ব

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: রবি, ০৭/০৭/২০১৩ - ১০:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(দ্বিতীয় পর্বের পর)

ছোট বেগম নূরে জান্নাতের আজকে মহা আনন্দের দিন। নবাব আসাফউদ্দৌলা তশরীফ রাখছেন আজ রাতে, বলে দিয়েছেন রাতে খাবেন। সারাদিন পাকশালায় নিজ হাতে তদারকি করে বেগম নবাবের জন্য তৈয়ার করেছেন সাদা পুলাউ, কোর্মা, শামী কাবাব, বটি কাবাব, ঘুটা কাবাব, শিক কাবাব, রুমালি রোটি, দম পোখত, মাংসের কালিয়া, শীরমল আর জর্দা। বরফের কুঁচি মিশ্রিত ফলের রস বানানো হয়েছে তিনরকম। নবাব খেয়ে কেমন তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন ভেবেই নূরে জান্নাতের খুশীতে দাঁত বের হয়ে যাচ্ছে।

এই উপলক্ষ্যে বেগম ঠিক করেছেন ঢাকা থেকে আনানো আবরোয়ান মখমলের জামা পরবেন। আব অর্থাৎ পানি, রোয়ান মানে প্রবাহিত হওয়া। আবরোয়ান মখমল অর্থাৎ কিনা প্রবাহিত পানির মত মখমল, ব্যাপক স্বচ্ছ কাপড় কিনা তাই এই নাম। পানিতে ভাসিয়ে রাখলে এই কাপড় পানি থেকে আলাদা করা শক্ত। হেরেমের পানওয়ালি গুলজার বেগম বলছিল এই আবরোয়ান পরে আওরঙ্গজেবের এক মেয়ে তার সামনে গেলে বাদশা নাকি তাকে তেড়ে মারতে আসেন, আর বকাবকি করেন বেয়াদব মেয়ে তোর জামা কোথায়! মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিয়েছিল, কিন্তু আব্বাজান আমি যে সাত পরত আবরোয়ান পরলাম!

নবাব অবশ্য স্বচ্ছ জামা ভেদ করে বের হওয়া নূরে জান্নাতের শরীর দেখে রেগে যাবেন না, মুচকি হেসে বেগম ভাবল। একটু গড়িয়ে নেওয়া যাক, সারাদিন বেশ ধকল গেছে। বেগম বিছানায় উঠে একটু চোখ বুঁজলেন। দুইটি চাকরানী এসে নবাবের জন্য জালায় সুরা ভরে রেখে গেল।

নবাব যখন মহলের ভিতরে নূরে জান্নাতের কক্ষে প্রবেশ করলেন ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। বউকে দেখে দরাজ হেসে এগিয়ে আসতে আসতে নবাব বললেন, আহা এই যে আমার নূরে জান্নাত। বেহেশতের আলো। বেগম, আমি যদি মরার পরে গিয়ে বেহেশতের আলো দেখি তাহলে বুঝতে হবে আমাকে জাহান্নামের একবারে কোনায় রাখা হয়েছে। মধ্য জাহান্নাম থেকে কি বেহেশত দেখা যায় বল?

শিউরে উঠে বেগম নবাবকে জড়িয়ে ধরে বললেন, নাউজুবিল্লাহ! আপনি জাহান্নামে যাবেন কেন? আমি সারাদিন আপনার সুখের জন্য দোয়া করি আল্লাহ নিশ্চয়ই দেখছেন।

হা হা করে হেসে বেগমের পিঠে ও নিতম্বে হাত বুলাতে বুলাতে নবাব বললেন, তাই কর বুঝি সারাদিন? আচ্ছা বেশ বেশ। কাছে এসো দেখি, একটু দেখে নেই আমার বেগমকে।

লজ্জা পেয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বেগম বললেন, আরে একি! খাবার দেয়া হবে যে এখন। খাবারটা খেয়ে নিন, আপনার সব পছন্দের খানা পাকানো হয়েছে আজ।

দুইহাতে বেগমকে বিছানায় আধাশোয়া করে নবাব বেগমের জামা ঢিলে করতে করতে বললেন, সেই ফিরিঙ্গির কথা খেয়াল আছে?

কে?

সে যে এক ফিরিঙ্গির কথা জিজ্ঞেস করছিলে আমাকে গত মাসে। আঁকিয়ে ছোকরা।

ও হ্যাঁ হ্যাঁ। সে তো চলে গেছে শুনলাম।

বাহ, তিক্ত হেসে নবাব বললেন, সব খবরই তো রাখো দেখছি।

এইবার ভয় পেল ছোট বেগম। ব্যাপার কি, ফিরিঙ্গি নিয়ে কথা হচ্ছে কেন? এখন তো সোহাগের সময়। বেগম মৃদু কন্ঠে বললেন, তানহা বলছিল সবাইকে তাই শুনলাম। আলাদা করে তো খোঁজ নেইনি। দরকারই বা কি।

আচমকা ঠাস করে একটা শক্ত চড় কষালেন নবাব বেগমকে। তারপর তার গলা টিপে হিসহিস করে বললেন, নষ্টার নষ্টা, তুই দিনরাত ফিরিঙ্গির স্বপ্নে জামা ভেজাস সেই খবর আমি জানি না মনে করেছিস? আস্ত মহলের লোকে জানে তুই প্রতিদিন কেমন ফিরিঙ্গির কথা জনে জনে জিজ্ঞেস করে বেড়াতি। তোর সাধের ফিরিঙ্গি কোথায় এখন? কোথায়? ফিরিঙ্গিকে যেরকম খতম করেছি সেরকম তোকেও মেরে পানিয়ে ভাসিয়ে দিব আমি আর বেচাল দেখলে, মনে থাকে যেন।

তারপরে গভীর আক্রোশে বেগমের ভেতর সর্বশক্তি দিয়ে প্রবেশ করলেন নবাব আসাফউদ্দৌলা। বেগমের চাপা আর্তনাদের শব্দ মহলের সুদূরতম প্রান্তের মানুষটিও যেন শুনতে পেল, তারপর দীর্ঘ নীরবতা। শুধু হাতির দাঁতের কাজ করা পালঙ্ক কেঁপে কেঁপে ওঠার আওয়াজ ভেসে আসতে থাকল অল্প।

এদিকে একই সময়ে ঝিলমগড়ের মাঠে আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে বসে খাচ্ছিল মতিলাল আর ফিরিঙ্গি চার্লস। সারাদিন গরুর গাড়ি চালিয়ে এসেছে মতিলাল, পেছনে চার্লস বসে বসে বাইরে তাকিয়ে ছিল। ফিরিঙ্গিটা গাড়ল আছে, ভাবে মতিলাল। একটু পরে পরে খালি বলে শুক্রিয়া শুক্রিয়া। কারণ ছাড়াই। ফিরিঙ্গি এক আজব চীজ।

খাবার শেষ করে বাটিঘটি নিয়ে মতিলাল কুয়ার পাশে গেল। বেশ বড় কুয়া, নুড়ি ছেড়ে দিলে বেশ অনেকক্ষণ পরে আওয়াজ পাওয়া যায়। গভীর কুয়াই তার প্রয়োজন। ঘষে ঘষে বাটি ধুতে ধুতে মতিলাল ভাবছিল কিভাবে ফাঁস নেওয়া যায়। ফাঁস তো নিলেই হলনা, মা কে খুশি রাখতে হবে। সবকিছুরই নিয়ম আছে। ঠিক কি পন্থা নেওয়া যায়?

ব্যাটা তাগড়া আছে, ভাবল মতিলাল। যদি ভাষা বুঝতোও সেই ক্ষেত্রেও আচমকা পেছন থেকে ফাঁস নেওয়া বুরবকের মত কাজ হত। তাগড়া লোক সামলাতে আরো দুই জন লাগবে হাত আর পা চেপে ধরে রাখতে। এর ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁক পদ্ধতি কাজে লাগানো গেলে ভাল হত। এই পদ্ধতি অবশ্য সে কখনো ব্যবহার করেনি, রামা সিং এর দলের কাছে শোনা। একজন অসুস্থ হবার ভান করে, আর সকলে ব্যাপক ঝাড়ফুঁক করা শুরু করে তার উপর। মহা সমারোহে পানি ফুটানো হয় রাতের বেলা, আর নির্দেশ দেয়া হয় যেন সকলে আকাশের দিকে তাকিয়ে পঞ্চান্নটা তারা গোণে। পথিকের দল বোকার মত উপরে তাকিয়ে তারা গোণে আর তখনই ফাঁস দেওয়া হয়। উপরে তাকিয়ে থাকা মানুষের গলা ফাঁস মারার জন্য বড় আরাম।

কিন্তু এই ফিরিঙ্গির বাচ্চা তো তার কথাই বুঝবে না। একে মারার উপায় কি? ঘুমের মধ্যে মারা যায় অবশ্য। মা বড়ই নারাজ হবেন, ভাবতে গিয়ে হেসে ফেলল মতিলাল। ফিরিঙ্গি মারবে শুনে মা তো নিশ্চয়ই এমনিতেই রেগে টং হয়ে আছে, আর মায়ের রাগকে ভয় করে কি ফায়দা?

হঠাৎ এই কথাটা তার বুকে অনেক বল এনে দিল। তাইতো, মায়ের রাগকে আর ভয় কি? সে তো পাপই করছে, পাপ করতে নিয়ম মানার কি প্রয়োজন? গলা টিপে মারলেই হয়!

মুখে পানি দিয়ে ভালোমত মুখ মুছে মতিলাল আরেকটু ভাবল। গলা টিপে সে কখনো হত্যা করেনি, এই ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। ফাঁসই নিতে হবে। ভাবতে ভাবতে ঘটিবাটি নিয়ে আবার গরুর গাড়ির কাছে ফিরে গেল মতিলাল। দেখল ফিরিঙ্গি তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সেও একটু হাসল। তারপরে বড় কড়াইটা নিয়ে পেছনে জঙ্গলে গেল। ফিরিঙ্গি তাকে দেখতে পাচ্ছে না, সে হাতে মাথা রেখে শুয়ে আছে। মতিলাল ঠিক করল কড়াই দিয়ে ফিরিঙ্গির মাথায় শক্ত বাড়ি দিয়ে অজ্ঞান করে তারপরে ফাঁস নিবে। কড়াইটা শক্ত করে ধরে এগোতেই সে দেখল ফিরিঙ্গি উঠে বসেছে, উপরের দিকে চেয়ে হাঁ করে তাকিয়ে দেখছে আকাশ।

দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল মতিলাল, কড়াই নয়। পেছন থেকেই এখন চমৎকার ফাঁস নেওয়া যাবে। পা টিপে টিপে এগোতেই একটা শেয়াল ডেকে উঠল।

অবিশ্বাসে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল মতিলালের। কালীমা শুভ সংকেত দিচ্ছেন? নিজের ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারলনা সে, মা কি তবে তার পাশেই আছেন? অভয় দিচ্ছেন? সে তো মোটেই সংকেতের জন্য অপেক্ষা করছিল না এইবার। যে মাকে চটিয়েছে সেই মা কি আর তাকে অভয়সংকেত দেবেন, ভেবেছিল মতিলাল। কিন্তু শেয়ালের ডাক তো ঠিকই শোনা গেল। মা কুপিত হননি তাহলে!

মৃদু আত্মবিশ্বাসের হাসি হেসে মতিলাল পা টিপে টিপে নিঃশব্দে পিছন থেকে হলদে রুমাল দিয়ে দিল টান। রুমাল আগে থেকেই একটু ভিজিয়ে নেয়া, আর প্যাঁচানো। রুমাল ভালোভাবে এঁটে বসে এইভাবে। সর্বশক্তি দিয়ে মতিলাল দুই হাতে টান দিল, চার্লস নেতিয়ে পড়ছিল ধীরে ধীরে। বাঁধন অল্প আলগা করে আবার প্রচণ্ড টান দিল মতিলাল, এইবার আস্তে আস্তে গড়িয়ে পড়ে গেল ফিরিঙ্গি চার্লস। ফাঁসুড়ে মতিলালের বুক তখন হাপরের মত ওঠানামা করছে।

খতম!

ধীরেসুস্থে গরুর গাড়ি গিয়ে ঝোলা থেকে হাতুড়ি নিয়ে আসল মতিলাল, হাঁটু কনুই বুকের হাড় এগুলি ভেঙে দিতে হবে। হাড্ডিওলা শরীরের জন্য বড় গর্ত খোদা লাগে কিম্বা বড় কুয়া প্রয়োজন। সে গোর দেবেনা, গাঁইতি নেই। হাড্ডি ভেঙে শরীরটা তুলে নিয়ে কুয়ায় ফেলে দেবে। ফিরিঙ্গির পকেট থেকে পয়সাকড়ি বের করল মতিলাল। দুইটা মোহর, একদলা কাগজ আর একটা আংটি। আংটি আর মোহর আলাদা করে রেখে হাড্ডি ভাঙতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল মতিলাল। আর নিম্নস্বরে জপতে লাগল মন্ত্র।

…...................................................................................................

কিছুদিন পরের কথা। মতিলাল খবর পেল দূর্গাপুরে রথের মেলা বসছে। তার হাতে কাজকর্মও নেই তেমন, বসে বসে খায় নবাবের দরবারে। ভাবল মেলায় যাওয়া যাক, একটা নয়া পাগড়ি কিনতে হবে। আলিগড়ের পাগড়িগুলা জানি কেমন কেমন, বেশী চকচকে। বাজে একদম।

সকাল সকাল রওনা দিল মতিলাল দূর্গাপুরের দিকে। ঝোলা থেকে গুড় বের করে খেতে খেতে চণ্ডীপুরের জঙ্গলের পাশে মাঠ দিয়ে হাঁটার সময় দেখল একটা কুয়া। থেমে একটু পানি খেয়ে নিল সে, তারপর আবার হাঁটা। চমৎকার মৃদুমন্দ বাতাস দিচ্ছে, রোদ মোটেই ক্যাটকেটে নয়। মহানন্দে হাঁটতে লাগল মতিলাল।

এমন সময় আচমকা দুই পায়ের ফাঁকে পাথর বাঁধা রুমাল বেজে ধড়াম করে মাটিতে পড়ে গেল মতিলাল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলনা সে সেই রুমালে জড়ানো পা দেখে, এইরকম পায়ে রুমাল মারার কায়দা দশ গাঁয়ে একজনই জানে। দীর্ঘ দেহের একটা ছায়া তার কাছে এগিয়ে আসছে টের পেল মতিলাল, সেইদিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত স্বরে মতিলাল অস্ফুটে বলল, বাপজান!

পিতা মাখনলাল হাত মুঠি করে চাপা গলায় হিসহিসিয়ে উঠল, তুই ফিরিঙ্গি মারছস মতি?

ঢোঁক গিলে মতিলাল দেখল এগিয়ে আসছে আরো কয়জন। তার ভাই চুনিলাল, জ্যাঠা মাধো, নাসির, হাতেম। হাতজোড় করে পিতাকে বলল মতিলাল, বাপজান আমি মারতে চাইনাই। আমারে দিয়া মারাইছে বাপজান। নবাব আমারে মাইরা ফালাইত বাপজান মাইরা ফালাইত।

মরলি না ক্যান হারামজাদা, শক্ত হাতে মতিলালের হাত পিছমোড়া করে ধরে হাঁটুর পিছনে লাথি দিয়ে শুইয়ে মাখনলাল বলল, সারা তল্লাটের লোক আমার কাছে আসে তালিম নিতে আর আমারই পোলা কিনা ফিরিঙ্গি মারে। হারামজাদা তুই জানোস তুই কার পোলা?

ব্যাথায় একটু কেঁপে উঠল মতিলাল। তার হাত শক্ত করে ধরা এই দুইটা শক্ত হাতই তাকে একদিন শক্ত করে অন্যের হাত ধরা শিখিয়েছিল। এই হাতের শক্তি কি তার অজানা? সে জানে মৃত্যু নিশ্চিত, তবু কাতর গলায় বলল, বাপজান। বাপজান। আমি মারতে চাইনাই বাপজান। মাপ কইরা দেও বাপজান। বাপজান।

তুই ফিরিঙ্গি মারছস মতি, পিতার গাঢ় গলায় যেন কান্নার সুর, ফিরিঙ্গি মারলে মা কুপিত হন। ফিরিঙ্গি মারছস রে তুই। ক্যান আমার দল ছাইড়া গেলি?

টপ করে গরম একফোঁটা অশ্রু মতিলালের হাতে পড়েছে টের পেল সে। দুর্ধর্ষ ঠগীসর্দার মাখনলালের চোখেও পানি আসে তাহলে? কি আশ্চর্য একটা দিন!

ঝাপসা চোখে অন্যদিকে চোখ ফেরাল মতিলাল। আকাশে সাদা মেঘের ছায়া, চমৎকার বাতাস দিচ্ছে। দূরে উড়ছে একটা চিল। গাছের পাতা নড়ছে অল্প অল্প। একটু দূরে অবাক হয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে একটা কাঠবেড়ালি। এরকম কত দিনে এভাবেই শিকারকে শুইয়ে তার গলায় ফাঁস দিয়েছে মতি, নিজে ফাঁস খেতে খেতে ভাবল।

মরে যেতে এইরকম লাগে নাকি?


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

ধুর মিয়া। পয়লা প্যারাতেই শিক কাবাব, রুমালি রোটি, দম পোখত। আইসা পড়ো বেইবে...
তার পরে বরফের কুঁচি মিশ্রিত ফলের রস, তাও আবার তিনরকম! চিন্তিত
এই লেখা তৈলে আর ক্যামনে পড়বাম? (রোগাপটকা) পাঠক বলে কি আর খাদক নই? ধইরা ঠুয়া দিয়া দিমু...

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সত্যপীর এর ছবি

হ রে ম্যাডাম নবাবের পাল্লায় পড়লে আর রোগাপটকা থাকার উপায় নাই, আটার বস্তা বানায় ছাড়ব দুই দিনেই মন খারাপ

..................................................................
#Banshibir.

অন্যকেউ এর ছবি

আপা পড়েছে মোগলের সাথে,
তবু দুঃখ, সেই খানা আজ নেই পাতে... ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

শেষ হয়ে গেল? মন খারাপ

(আচ্ছা, ঘুটা কাবাবটা কি বস্তু? চিন্তিত )

সত্যপীর এর ছবি

সবই শেষ হয়া যায়। লাইফ ইজ ফুল অফ ফিনিশেস।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

এক দমে তিন পর্ব পড়ে উঠলাম...এন্ডিংটা খুব ভাল লাগল...সবাই একরম পারে না।চালিয়ে যান... চলুক

- সিফাত উল কবির

সত্যপীর এর ছবি

ধন্যবাদ সিফাত। এন্ডিং আমার ঠিক করা ছিল, প্রথম পর্ব লেখার সময়ই আমি জানতাম এন্ডিং কি হবে। নবাব চার্লস নবাবের বউ এগুলি লিখতে লিখতে আসা। এই আর কি।

ভাল থাকুন।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
গল্প জুড়ে লেখকের যে নৈর্বক্তিক ভাবে এগিয়ে চলা এবং পরিণতিতেও সেটাকেই বজায় রাখা এ ব্যাপারটা ভাল লেগেছে। কিন্তু গল্পটায় যেন কতকগুলো সম্ভাবনা ঠিক কি ভাবে গুছিয়ে ওঠা যাবে সেটা স্থির করতে না পেরে আলগা থেকে শেষ হয়ে গেল। চলুক, লেখা চলুক। আস্তে আস্তে আরো দক্ষ গল্প পাওয়ার আশা আছে।
- একলহমা

সত্যপীর এর ছবি

এত দক্ষ গল্প দিয়া করবেন কি? দক্ষযজ্ঞ লাইগা যাইব শেষে খাইছে

গল্পটা লিখে আমি ব্যাপক আরাম পেয়েছি। লেখকের আরাম আর পাঠকের আরাম এক কথা নয়, পাঠকের আরাম ধরতে আমার আরও সময় লাগবে মনে হচ্ছে। দেখা যাক হাসি

..................................................................
#Banshibir.

অন্যকেউ এর ছবি

চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

অন্যকেউ এর ছবি

পীরসাব, বাপের ছোট চরিত্রটারেই সেইরকম বানাইছেন। জম্পেশ! লেখা -গুড়- হয়েছে নেন। দেঁতো হাসি

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

সত্যপীর এর ছবি

দশ গেরাম কাঁপানো ঠগীসর্দার বইলা কথা চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

কল্যাণ এর ছবি

খুব ভাল্লাগছে।
তারাতাড়ি শেষ হয়ে গেছে, এইটা ঠিক হয় নাই রেগে টং
ঘুটা কাবাবটা যে আপনার বানানো তাতে কোন সন্দো নাই।
পরের গল্প দেন তাত্তাড়ি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

সত্যপীর এর ছবি

কইলেই হইল ঘুটা কাবাব আমার বানানো? এই দ্যাখেন

..................................................................
#Banshibir.

আলতাইর এর ছবি

এই শীরমল, দম-পোখত... এরা কি বস্তু? সারা জীবন খালি নামই হুইন্না আইলাম। খাওনের বেলায় তো স্টার হোটেল এর কাচ্চি'র উপরে কিছু জুটে না ইয়ে, মানে...

পায়ের মইদ্দে ফাঁস আটকায়া দেওনের খেলা দেখসিলাম ছোটবেলায়। এক ত্থুথুরা বুড়া...চোখেও দেখে না, কানেও ভালো শুনে না...ওই লোক দেখলাম ফট কইরা ৮-১০ ফুটের মত দুর থেকে মানুষের পা আটকায়ে দিতে পারে। বয়সকালে নাকি এইরকম ফাঁসে প্যাঁচায়া ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিতে পারতো...শুনা কথা।

গফ শ্যাষ হইয়া গ্যালো...বিরাট আফসুসের ইমো

সত্যপীর এর ছবি

শীরমল দমপোখত এগুলির থেকে স্টারের কাচ্চি বহুত উপরের জিনিস। আপনেই জিতছেন চাল্লু

পায়ে ফাঁস দেওয়া অনেক প্র্যাকটিসের ব্যাপার, সব ঠগীদলে এরকম এক্সপার্ট থাকত না।

..................................................................
#Banshibir.

চরম উদাস এর ছবি

দারুণ। শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম, তিনটা একসাথে পড়লাম। আপনার গল্পে বর্ণনার কাজ দারুণ চলুক

সত্যপীর এর ছবি

গল্প লেখা ব্যাপক ঝামিলা। অং বং অনুবাদই সোজা খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

কড়িকাঠুরে  এর ছবি

মতিকণ্ঠে ফাঁস দিলেন ক্যা? রেগে টং

সত্যপীর এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি হাততালি

..................................................................
#Banshibir.

আলতাইর এর ছবি

গুল্লি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভাল লাগলো পড়ে। আপনি আরো বেশী করে গল্প লিখুন।
-------------
মিলন

সত্যপীর এর ছবি

নিশ্চয়ই লিখব মিলন। লিখে একবারে ফাটিয়ে ফেলব খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

প্রথম থেকে আবার সবগুলো পড়লাম। জোশ। ছোটছোট ঘটনাগুলোকে সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। আর সূক্ষ বর্ণনাগুলোর তো জবাব নেই! তবে কাহিনিটাতে কী যেন বাদ পড়ে গেলো মনে হচ্ছে। কয়েকটা সুতো যেন আলগা হয়ে ঝুলছে এখনো --- আমার বোঝার ভুল নাকি?

সত্যপীর এর ছবি

সুতা জোড়া দেওয়ার চেষ্টা দিসি বস। তবে দুই চাইরটা সুতা ঝুলার সম্ভাবনা তো থাকেই। থাকুক যেরকম আছে, পরে একদিন আঝুলা সুতাওলা একখান গল্প লিখুম। গাইতে গাইতে গায়েন। সিং অ্যান্ড সিং আন্টিল ইউ বিকাম এ সিঙ্গার খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

আলতাইর এর ছবি

তাইলে বাথরুমে ঢুইকা যান। গান-আইডিয়া-প্লট সব যাকে বলে মার-মার করে তেড়ে আসবে দেঁতো হাসি

মনি শামিম এর ছবি

প্রত্যেকটি গল্প পড়লাম। শেষ পর্বে মন্তব্য করছি। আপনার কাহিনীর বয়ান খুবই চিত্তাকর্ষক। ইতিহাস নিয়ে আপনার আগ্রহ খুব অনুকরণীয়। বলতে দ্বিধা নেই, আপনার লেখা পড়ে ইতিহাসের প্রতি হারিয়ে ফেলা আগ্রহ আবার নতুন করে জাগরুক হয়েছে আমার ভেতর। তাঁর অন্যতম কারন আপনার লেখার প্রসাদগুণ। আপনি এই লেখালেখিগুলি ছেড়ে দেবেন না সত্যপীর। আমাদের জন্য তা হবে বেদম আঘাতের মতন। ধন্যবাদ।

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

তানিম এহসান এর ছবি

ঘ্যাচাং!

সত্যপীর এর ছবি

ঘুটা কাবাব নিয়া ব্যাপক হল্লা মাচানি হৈছে দেখা যায়। তোফা তোফা। ঘুটা কাবাবের কথা আমি পড়সিলাম লখনৌ ক্যুইজিন নিয়া একটা লেখায়, Ghutwa kabab. কিমা দিয়া বানানো কাবাব যতদূর মনে পড়ে। বুইড়া বয়সে নবাবগোর দাঁতদুত থাকতনা কিন্তু খালি খাই খাই করত, তাই কিমা দিয়া বানানো নরম কাবাব তৈয়ার হইত এদের জন্য।

..................................................................
#Banshibir.

আলতাইর এর ছবি

কি কন!!! এত্ত এত্ত ক্যালশিয়াম যুক্ত খাঁটি দুধ খায়াও দাঁতের অবস্থা এডমন্ড দান্তে??

সত্যপীর এর ছবি

প্রশংসার বন্যায় ভাসায় দিলেন একবারে, ব্যাপক লজ্জিত হইলাম। কি খাবেন কন মনি ভাই?

..................................................................
#Banshibir.

স্যাম এর ছবি

খাইতে চাইলেই কিন্তু লিঙ্ক ধরাইয়া দিবে মনি ভাই শয়তানী হাসি

স্যাম এর ছবি

হুট করে শেষ হয়ে গেল! অন্তত আরেকটা পর্ব থাকত!! আপনার গল্প বলা আমি সহ অনেকেরই প্রিয়, সেই তুলনায় খুব বেশি চাই নাই।

সত্যপীর এর ছবি

গল্প আর কত বড় হইব? আমি ভাবসিলাম দুই পর্বে খতম করি দিব সেইখানে তিন কিস্তি টানতে হইল ইয়ে, মানে...

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ভালো হাততালি , তিনটা পর্ব একসাথে পড়লাম, এই ভর দুপুর বেলা এত রকম খাওয়ার বর্ণনা-ক্ষুধা লেগে গেল।আরও গল্পের অপেক্ষায় পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম
ইসরাত

সত্যপীর এর ছবি

ধন্যবাদ ইসরাত হাসি

..................................................................
#Banshibir.

তানিম এহসান এর ছবি

আপনার গদ্যরীতি’র ভক্ত আমি, আগেও বলেছি কয়েকবার। গল্প লিখতে থাকুন মশাই জোরেশোরে।

ইয়ে, ঘুটা কাবাব জিনিস’টা কি বস্তু? চিন্তিত

সত্যপীর এর ছবি

উপরে উত্তর দেওয়ার পরে দেখি আপনে দিসেন কমেন্ট ঘ্যাচাং কইরা, খালি আমার উত্তরটা ঝুলতেসে চিন্তিত

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

"লেখকের আরাম আর পাঠকের আরাম এক কথা নয়, পাঠকের আরাম ধরতে আমার আরও সময় লাগবে মনে হচ্ছে।"

কথাটা ভালো লাগলো...আর লেখার জন্য চলুক

- রূপালি রাজপুত্র

সত্যপীর এর ছবি

সচল হয়া হইসে মহা মুস্কিল, আবজাব যাই লিখি ছাপা হয়ে যায়। তাই লেখার সময় মান নিয়ে তেমন চিন্তা করিনা, লিখে যাই আমার মত। তারপর দুইবার পড়ে বানান চেক করে পাব্লিশ করে দেই। আসলে এক বসায় না লিখে ধীরে ধীরে লিখলে মনে হয় লেখা ভাল হবে। ব্যাপক ধৈর্যের ব্যাপার ইয়ে, মানে...

ভালো থাকেন রাজপুত্র মশাই চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

ROWSHON ARA JAHAN এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

সত্যপীর এর ছবি

অ্যাঁ

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

খাসা হ‌ইছে!!
হাততালি

-------------------------
সুবোধ অবোধ
-----------------------

সত্যপীর এর ছবি

কৈতেছেন?

..................................................................
#Banshibir.

নিরীহ মানুষ  এর ছবি

শেষ ফাসটা পিতাকে দিয়ে না দিলে হত না , তাই বলে পিতা পুত্রকে …..এটা গফ ইউক আর যাই হউক মানেতে একটু !

সত্যপীর এর ছবি

ডরাইলেন?

..................................................................
#Banshibir.

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ডরাইলেই ডর!! চোখ টিপি

নিরীহ মানুষ    এর ছবি

দেঁতো হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

গল্প ভালো লেগেছে। তবে কাহিনির মাঝের নানা রেশমীসুতার নকশা দেখে মনে করেছিলাম বড়গল্প বা উপন্যাসের দিকে যাচ্ছে। হাসি
আবরোয়াঁ নিয়ে বহুদিনের প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেলাম, ধন্যবাদ তার জন্য। "মহাস্থবির জাতক" বইটাতে ছিল আবরোয়াঁর মশারির কথা, আমি ভেবেছিলাম হয়তো লেখক বানিয়ে বানিয়ে লিখেছেন, এখন দেখি সত্যি ওই জিনিস ছিল!
মসলিন বলে যে কাপড় হতো, সাধারণ মসলিন না, সেই কিংবদন্তীসম কাপড়, সেই যে লোকে বলে বিরাট কাপড় নাকি ভাঁজ করে দেশলাই বাক্সের মতন ছোটো আয়তনে নিয়ে যাওয়া যেতো, সেই জিনিস ও প্রায়স্বচ্ছ হতো, তাই না? সত্যি কি ওরকম কাপড় বুনতে পারতো মানুষ?

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সত্যপীর এর ছবি

বড়গল্প বা উপন্যাস লেখার মত ধৈর্য বা ক্ষেমতা কোনটাই নাই আপাতত। গল্পই থাকুক। বড়গল্প করা যেত সত্য, বিশেষ করে নবাব সায়েবের কাণ্ডকারখানা নিয়ে আগানো যেত। থাকুক।

ঢাকার মসলিন নিয়ে এই বইটা পড়ে দেখতে পারেন, ঢাকার শিল্প চ্যাপ্টার। খুবই ইন্টারেস্টিং।

..................................................................
#Banshibir.

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, তিন পর্বই পড়েছি। ভালই লেগেছে। চলুক

সত্যপীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

..................................................................
#Banshibir.

শিশিরকণা এর ছবি

এক বসায় তিন পর্ব পড়লাম। ফাঁসের খেলা শিখতে মন চায়। গল্প পড়ে অনেক আরাম পাইছি। এক্কেরে আবরোয়ান কোয়ালিটির লেখা হইছে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সত্যপীর এর ছবি

সাব্বাস. আরাম লাগা দিয়া কথা. শুইনা আমিও আরাম পাইলাম চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

Emran  এর ছবি

আপনার এই গল্প পড়ে এখন "দ্য ডিসিভারস" ছবিটা দেখতে ইচ্ছা করছে!

সত্যপীর এর ছবি

আমি দেখি নাই. আইএমডিবিতে রিভিউ পড়লাম, ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে. নামিয়ে দেখতে হবে.

..................................................................
#Banshibir.

Emran  এর ছবি

দেখার পর পারলে কষ্ট কইরে এইটার একটা রিভিউ দিয়েন পীরসাহেব। আপ্নের রিভিউ মনে হয় পড়তে মজাই লাগবে।

সত্যপীর এর ছবি

মুভি রিভিউ তো আমি পারিনা ভাই, সবাইকে দিয়ে কি আর সব হয়? আপনি লিখুন না...অপেক্ষায় নাজির.

..................................................................
#Banshibir.

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সচলায়তন না থাকলে কতো অসম্ভব ভালো লেখকের লেখা কখনো পড়া হতোনা!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সত্যপীর এর ছবি

আরে নাহ. ঝড়ে বক মরে সত্যপীরের কেরামতি বাড়ে হাসি

..................................................................
#Banshibir.

রাত-প্রহরী এর ছবি

এমন অনেক ইতিহাস জড়ানো, সামাজিক সংস্কৃতির ছোঁয়া দেয়া, খাবার-দাবারের বিশদ লোভনীয় বর্ণনা সহ, টানটান উত্তেজনার ধারাবাহিক গল্প লেখার জন্য আপনি শত বছর বেঁচে থাকুন পীরসাহেব।
আপনাকে নবাবী সেলাম। গুরু গুরু

-------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

সত্যপীর এর ছবি

শত বছর বেঁচে থাকব কোন দু:খে? বাদ দেন. গল্প ভালো লাগসে এইটাই আসল কথা দেঁতো হাসি

আরো কয়টা গল্প লিখার ধান্দা করতেসি, পড়ার আগাম আমন্ত্রণ রইলো রাত প্রহরী.

..................................................................
#Banshibir.

রাত-প্রহরী এর ছবি

পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকলাম। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

আয়নামতি এর ছবি

গল্পের শেষটা কিন্তু জটিল হইছে! আমি ভাবছিলাম যে কোনভাবেই হোক হিন্দি সিনেমার মত ছোট বেগম আর ফিরিঙ্গির মধুরেনুসমপয়েৎ দেখায়ে ছাড়বেন। তেমনটা হয়নি সেজন্য উত্তম জাঝা!
আরো লেখুন।

সত্যপীর এর ছবি

মনমেজাজের উপর মনে করেন এন্ডিং ডিপেন্ড করে. মন মধুর থাকলে দিতাম পিয়ার মুহব্বত করায়া...কিন্তু কোনো কারণে মেজাজ ছিল বিলা, দিলাম ফাঁস খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি
- একলহমা

নীড় সন্ধানী এর ছবি

অনেকদিন পর গল্প পড়ার সময় পেলাম। চমৎকার তিনপর্ব একসাথে গিললাম।
লেখকের মন মেজাজ খারাপ ছিল বলে বেরহম সমাপনী? চাল্লু

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সত্যপীর এর ছবি

হ পুরাই।

..................................................................
#Banshibir.

গবেট গব্লিন এর ছবি

খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছিলাম 'ফাঁসুড়ে' সিরিজ। শেষ হয়ে গেল!!! আপনার নতুন লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

সত্যপীর এর ছবি

মোগল কামানবন্দুক নিয়ে লেখার ধান্দা করতেছি চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সিরিজ খুব আগ্রহ নিয়ে পড়া হয় না। এটা পড়লাম। মুগ্ধ হলাম।
এমন লেখা আরো চাই

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সত্যপীর এর ছবি

ইয়োরোপের মধ্যযুগ নিয়ে অসাধারণ সব নাটক সিনেমা দেখা যায় হিস্ট্রি চ্যানেল বা ন্যাট জিওতে, ওগুলি দেখি আর ভাবি আমাদের দেশের অতীত নিয়ে কি দুর্দান্ত সব গল্প হয়। সেইজন্য আস্তে আস্তে গল্প লিখছি নজরুল ভাই, অনুবাদ তো অনেক হল। বোর না হওয়া পর্যন্ত কিছুদিন গল্প চলুক।

..................................................................
#Banshibir.

ধুসর জলছবি এর ছবি

এরকম গল্প আরও চাই পীর সাহেব। চলুক চলুক চলুক

সত্যপীর এর ছবি

একশোবার!

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

ওক্কে, ১০০টা গল্পের প্রতিশ্রুতি দিলেন কিন্তু, মনে রাইখেন! ছাড়ান-কাটান নাই! গুনা আরম্ভ করলাম। ১, ২.... দেঁতো হাসি

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

লিচ্চয় লিচ্চয়. দুই তিনটা লেখা আধাফিনিশ বইসা আসে, ওগুলি বাদ্দিয়া গল্পই লিখতেছি বস. একটা নতুন গল্পে হাত দিসি "তসবিঘর" চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

দেরিতে পড়লাম দেখে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। তিন পর্বই একসাথে পড়তে পারলাম। আশা করেছিলাম একটা বড় গল্প পড়তে যাচ্ছি। শুরু হতেই যেন শেষ হয়ে গেল। পীরের ধৈর্র অভাবই কারণ সম্ভবত। কিন্তু পাঠক তা মানবে কেন? উপন্যাসের গুণসম্পন্ন সাবলীলতায় বেশ আগাচ্ছিলাম।
সত্যপীরের কাছে বড় লোখায় (উপন্যাস, বড়গল্প) হাত দেয়ার অনুরোধ রইল। অনন্তকাল অপেক্ষা সইবে না।

স্বয়ম

সত্যপীর এর ছবি

দৌড়ানোর আগে হাঁটতে শেখা জরুরি, আপাতত হাঁটা শিখতেছি বস চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

জোরে জোরে হাটেন!

****************************************

আশালতা এর ছবি

দারুণ লাগলো। চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

সত্যপীর এর ছবি

চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

পীর ছাহেব,

এটা আপনার সচল বার্তার কন্টিনিউয়েশন - ঐতিহাসিক ফিকশন সম্পর্কে আমার ধারণা কি সে বিষয়ে। বার্তায় না দিয়ে 'ফাঁসুড়ে'-তেই দিলাম আপনার কথা মত।

আশা করি 'লাল কেল্লা' ইতিমধ্যে ফতেহ্‌ করতে পেরেছেন। ফতে হয়ে থাকলে এবং যথেষ্ট ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই একটা রিভিউ দিয়েন এখানে!

যে জিনিষটা বলতে চেয়েছিলাম। আপনার গল্পগুলির মধ্যে ইতিহাসের সেটিং-এ গল্প লিখতে গিয়ে সেটাকে তথ্যভারাক্রান্ত না করে বরং একটা ঐতিহাসিক বা ইতিহাসগন্ধী আবহ সৃষ্টির লক্ষণ দেখেছি। এটা আমার খুব ভাল লেগেছে।

আমার অতি ক্ষুদ্র জ্ঞানে যেটা বুঝি, ঐতিহাসিক ফিকশনের (গল্প/উপন্যাস) ক্ষেত্রে দুই ধরণের লক্ষ্য থাকতে পারেঃ কোন ঐতিহাসিক সেটিং-এ (ইতিহাসের কোন সুনির্দিষ্ট স্থান ও সময়ের প্রেক্ষাপটে) মূলত গল্প বলা, অথবা ইতিহাসের ঐ পর্বটাকেই টার্গেট করা এবং গল্পের মাধ্যমে একভাবে ইতিহাসকেই চিত্রায়িত করা। তবে আমার মতে সাহিত্য/ফিকশনের ক্ষেত্রে গল্পটাই আসল, ইতিহাস না - লক্ষ্য যাই হোক না কেনঃ গল্প বা ইতিহাস।

একধরণের ঐতিহাসিক ঔপন্যাসিক আছেন যারা পাতার পর পাতা বা প্যারার পর প্যারা ভরে ফেলেন ঐতিহাসিক তথ্য বা বিবরণী দিয়ে। সরাসরি, কিম্বা মিউনিসিপাল্টির ময়লা ফেলার ট্রাকের মত ইতিহাসের প্রায় কপি-পেস্ট বিবরণ বহন করে উপন্যাসের দায় চোকাতে কোনমতে কয়েকটা চরিত্র খাড়া করে। এটা কিন্তু আসলে লেখক হিসেবে তাদের দূর্বলতা। তথ্য বা বিবরণীই যদি পড়তে হয় (তা যে বেশ বা ছদ্মবেশেই হোক) তাহলে তো আসল ইতিহাসের বইই আছে। ইতিহাসের ইন্টারপ্রিটেশন পড়তে হলে আছে প্রবন্ধের বই। আমার ধারণা উঁচুমাপের কাহিনিকার কিন্তু সেই সমস্ত তথ্য ইত্যাদি ঘেটে তাঁর নির্যাসটুকু নিয়ে সেটা দিয়ে আবহ নির্মান করেন, চরিত্র ও ঘটনা/কাহিনিবিন্যাসকে অনুপ্রাণিত করেন। কিন্তু ইতিহাসের লেকচার দেন না বা কপি-পেস্ট করেন না। তথ্যের ব্যবহারও থাকতে পারে, কিন্তু তা লেকচারধর্মী বা বিবরনধর্মী না - ঠিক যতটুকু আবহ-চরিত্র-ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রয়োজনে সেটা আসে এবং এসবের সাথে সিম্‌লেসলি ও প্রাণবন্তভাবে মিশে যায়। পাঠক টেরই পায় না যে সে তথ্য, বিবরণ বা বিশ্লেষন গলধকরণ করছে। টের পাইলেই শ্যাষ - গল্প বা উপন্যাস প্রবন্ধের বই হয়ে যায়। আসলে তা-ও হয় না - না-ঘরকা না-ঘাটকা টাইপের একটা বকচ্ছপ বা ঘোড়ার ডিম হয়ে যায় সেটা। অর্থাৎ কিছুই হয় না। কাহিনিকারের ফোকাস আসলে থাকবে সেই জায়গায় এবং যে জায়গাটা নিয়ে তিনি আসলে কাজ করবেন এবং প্রাণসঞ্চার করবেন, সেটা হচ্ছে যা ইতিহাসের বইতে পাওয়া যায় না, বা অন্তত স্পষ্ট করে পাওয়া যায় না। সেই জায়গা যেখানে কল্পনার অবকাশ আছে, যে জায়গাটা কল্পনা-অনুভূতি-উপলব্ধি কিম্বা রসবোধ ইত্যাদির গভীরতায়, গাঢ়তায়, তীব্রতায় বা প্রাখর্যে শুন্যস্থানটা ভরিয়ে দেয়া যায়। বাস্তব চরিত্র হলে, তার মনের ভিতরের ছবি এমন একটা জায়গা হতে পারে - সেইসাথে হয়তো ইতিহাসের অন্তর্ভূক্ত ঘটনাবলীর সাথে বিরোধী বা অসমঞ্জস নয় এমন - কিন্তু কাল্পনিক ঘটনাবলী। ইতিহাসের আসল ঘটনার ভিতরেও অনেক ফাঁকফোকর থাকে। কাল্পনিক চরিত্র হলে তো লেখক তুলণামূলক ভাবে আরও বেশি স্বাধীণ। তবে কোন কিছুই আরোপিত মনে হলে চলবে না, বরং মনে হতে হবে যেন ইতিহাস কিম্বা কোন ঐতিহাসিক কালপর্বের হৃদয় থেকেই উঠে আসলো - যা কিনা অন্য কোন স্থান বা সময় থেকে উঠে আসতে পারত না, অন্তত ঐভাবে না।। এখানেই লেখকের কৃতিত্ব। মোদ্দা কথা হচ্ছে, ঐতিহাসিক উপন্যাস আমার কাছে ইতিহাসের শুন্যস্থানের একটা ভিশনারি ভরাট-প্রক্রিয়া - ইতিহাসের নামে তার সাহিত্যিক চর্বিত-চর্বন নয়। শেষের কাজটার জন্য প্রকৃত ইতিহাসবিদ, রাজনীতি-তাত্ত্বিক প্রবন্ধকার, এবং খবরের কাগজের বিশেষ দিবসের বিশেষ সংখ্যার লেখক-সাংবাদিকরা আছেন।

আপনি একমত হবেন কিনা জানি না, তবে আমার মতে বিখ্যাত অথচ থার্ডক্লাস, ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাসের এমন একটা উদাহরণ হচ্ছে - সুনীলের 'প্রথম আলো'। এই বইটা বোধহয় সচলের সবাই পড়েছেন। আপনিও সম্ভবত পড়েছেন। পড়ে থাকলেই ভাল - আমার মতামতগুলি মিলিয়ে দেখতে পারবেন। দ্বিমত বা আমার ভুল থাকলে জানাতে পারবেন। দুঃসাহস ভরে প্রায় সিকি-শতাব্দী (?) আগে পড়া প্রায় ভুলে যাওয়া এই বইটার একটা সংক্ষিপ্ত রিভিউ/ক্রিটিক দিচ্ছি এখানে স্রেফ ধুসর হয়ে যাওয়া স্মৃতি হাতড়িয়ে।।

সুনীলের 'প্রথম আলো' দুইখণ্ডের বিশাল এক ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস। তুলনাহীণ একটা বিষয় ও বিশাল প্যানোরামিক ব্যাকগ্রাউণ্ডকে ভর করে তুলণাহীনভাবে ব্যর্থ ও বাজে একটা বই। পড়া শেষ করা মাত্র কি পড়েছি ভুলে গেছি। পাতার পর পাতা ভরা হয়েছে ইতিহাস দিয়ে - অগভীর অনুভূতির, উপলব্ধিহীণ, সাহিত্যিক লক্ষ্যহীণ রিপোর্টারসুলভ তরল গদ্যে। অনেক সময় মনে হয়েছে পত্রিকার রিপোর্ট পড়ছি। কিন্তু উপন্যাস তো পত্রিকা না!

বহু-বহু বছর আগে পড়েছি (প্রথম প্রকাশের পরপরই), তাই মূল কাহিনির এখন আর প্রায় কিছুই মনে নেই, শুধু মনে আছে পড়ে কতটুকু হতাশ হয়েছিলাম সেই অনুভূতিটা। বিষয়বস্তু বা পটভূমি ছিল বোধহয় অনেক বাঙালি ঐতিহাসিক যাকে 'বঙ্গীয় রেনেসাঁ' বলে আখ্যায়িত করেন, এই অঞ্চলের ইতিহাসের সেই সময়টা - ঊনবিংশ শতাব্দীর কোন এক পর্যায় থেকে বিশ শতকের প্রথমাংশ। এই সময় বাংলায় এবং পুরো ভারতবর্ষে সর্বতোভাবে একটা নবজাগরণের সময় - ধর্ম/রাজনীতি/সাহিত্য/শিল্প/জ্ঞানচর্চা/সভ্যতা/জাতীয় আত্নোপলব্ধি - সমস্ত ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব, অতুলণীয়, রোমাঞ্চকর ও বর্ণবহুল (ইতিহাস্প্রেমীদের জন্য) সব ঘটনার ঘনঘটা, কত অনন্য-অসাধারণ সব পাইওনিয়ারিং প্রতিভা আর বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্বদের আবির্ভাব। এই বিশাল ক্যানভাসটাকেই যদ্দুর মনে পড়ে সুনীল ধরবার আস্পদ্দা দেখিয়েছিলেন। বাংলা উপন্যাসে এত বড় ক্যানভাসের একক উপন্যাস বোধহয় তাঁর আগে কেউ চেষ্টা করেননি। সব চরিত্রের নাম মনে পড়ছে না আজ আর, তবে দ্বারকানাথ-দেবেন্দ্রনাথ-রবীন্দ্রনাথ-জগদীশ চন্দ্র-নেতাজী-গান্ধী থেকে শুরু করে সেকালের আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য সমস্ত বা অনেক রথী-মহারথীরাই মনে হয় চরিত্র হিসেবে এসেছেন তার এই বইয়ে। রবীন্দ্রনাথ ও জগদীশ বাদে আর ঠিক কে-কে ছিলেন তা এতদিন পরে আর স্পষ্ট মনে পড়ছে না অবশ্য। বিশাল সাইজের বই, বিশাল প্যানোরামিক পটভূমি এবং এরকম বিষয় নিয়ে বাংলা ভাষায় সম্ভবত পাইওনিয়ারিং উপন্যাস। পড়া শুরু করার সময় তাই প্রচুর আশা ছিল এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার, ভিন্ন একটা যুগ নিয়ে একটা সাহিত্যিক ঘুর্ণিঝড়ের মধ্যে পড়ার বা প্রবল রসাবর্তের মধ্যে ডুবে যাওয়ার। একটা মহাকাব্যিক না হোক, অন্তত মহাকায় tour de force-এর অভিজ্ঞতা লাভ করার। নিদেনপক্ষে সাহিতিক টাইমমেশিনে সেযুগের প্রাণের গভীরে তার নাড়ির স্পন্দন কান পেতে শুনে আসার, গভীর ভাবে অনুভব করে আসার। কিন্তু পড়া শেষ করে মনে হয়েছে নতুন ধরণের বিষয়বস্তু নিয়ে স্রেফ পেটমোটা ম্যামথ-সাইজের একটা ঐতিহাসিক তক্‌মাধারী উপন্যাস লেখার কৃতিত্ত্ব বাগাবার জন্য, সরাসরি ইতিহাসের বই থেকে পাতার পর পাতা টুকলিফাই বা কপি-পেস্ট করে দিয়ে দেয়া হয়েছে - স্রেফ কয়েকটা কৃত্রিম, জোর করে আরোপিত একমাত্রিক নিষ্প্রাণ কাষ্ঠপুতুলের মত চরিত্রের ছদ্মাবরণে, বা আগে বলা শহরের ময়লা ফেলার দায়-চোকানো "মিউনিসিপাল্টির ময়লা ফেলার ট্রাকের" মত ঐতিহাসিক উপন্যাসের দায়-চোকানো ট্রাক-চরিত্র দিয়ে। ঐসব ঐতিহাসিক একটা চরিত্রও প্রাণ পায় নি। মনে হয়েছে স্রেফ জোর করে জুড়ে দিয়ে পৃষ্ঠা ভরানো হয়েছে। আর মূল কাহিনির লক্ষ্যও ঐ চরিত্রগুলি আসলে ছিল না, বা ঐ চরিত্রগুলি নিয়ে কোন সমৃদ্ধ, অর্থপূর্ণ, 'ঐতিহাসিক শুন্যস্থান'-ভরাটকারী উল্লেখযোগ্য কাহিনি গড়ে উঠেনি - যদিও এর পিছনে বইয়ের একটা বড় অংশ ব্যয় করা হয়েছে। যদ্দুর মনে পড়ে, এই উপন্যাসে কাহিনির দুটো স্ট্র্যাণ্ড বা ধারা ছিল - একটা বাস্তব ঐতিহাসিক চরিত্রদেরকে ভিত্তি করে, আরেকটা কাল্পনিক চরিত্র ভিত্তিক। দুই ধারাতেই উপন্যাসটা চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ। কাল্পনিক ধারায় যদ্দুর মনে পড়ে -- ছিল এক ভোদাই টাইপের কাল্পনিক নায়কের এক কাল্পনিক বাইজির প্রেমে পড়া, বিরহ ও পূণর্মিলন নিয়ে এক মেলোড্রামা। দুর্বল চরিত্রের দুনিয়া ঘোরা কিন্তু দুনিয়াদারীতে ব্যর্থ এক প্রেমিক, আর কড়া ব্যক্তিত্ত্ববান প্রতিষ্ঠিত বাইজি নায়িকা যাকে কিশোরী-কালে নায়ক অপমানজনক ভাবে প্রত্যাখ্যান করে কিন্তু অনেক ঘা খেয়ে সব কিছুতে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘদিন পরে আবার ফিরে আসে তার কাছে প্রায় ভিখারির মত। শ্রীকান্ত-রাজলক্ষী প্রায়। এটাও জমে নাই। এটা বহু পুরাতন ও বস্তাপচা-ক্লিশে হয়ে প্রায় গন্ধ-ছুটা শরৎচন্দ্রীয় কোন কাহিনির যাত্রাপালার ঢঙে অতি সস্তা-সেন্টিমেন্টাল ও মেলোড্রামাটিক রিমেক বলে মনে হয়। হয়তো হুমায়ুনীয় রিমেকও বলা যেতে পারে। শরচ্চন্দ্রের রিমেক করলেও এত অসম্ভব বাজে বা ইংরেজিতে যাকে বলে - cornymawkish - হওয়া সম্ভব না বোধহয়। এই বস্তাপচা কাহিনিকে অপ্রাসঙ্গিক ভাবে ইতিহাসের কপি-পেস্ট মার্কা থান ইট বানানোর বা তার মধ্যে পাঞ্চ করে দেয়ার কোন দরকার ছিল না। কলকাতার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটা বিশেষ কালপর্বের একটা বিশেষ দিক এখানে দেখানোর চেষ্টা রয়েছে বটে, কিন্তু ইতিহাসের বাস্তব চরিত্রের বেলায় যেমন লেখকের কল্পনা ফুটেনি - কাল্পনিক চরিত্রের বেলাতেও একই দূর্বলতা স্পষ্ট। ইতিহাসের আমেজটা এখানেও ফুটেনি ঠিকমত - ফোটানোর চেষ্টা করতে গিয়ে উনি যা করেছেন তাতে বরং লেখক যে এজন্যে অনেক বইপত্তর ঘাটাঘাটি করেছেন, গবেষনা করেছেন - একথা স্পষ্ট হয়ে যায়। এই জিনিষটা স্পষ্ট হওয়া বা লেখায় (ফিকশনে) ধরা পড়া আমার চোখে - ব্যর্থতাই! নিদারুন ব্যর্থতা।

এর চেয়ে হুমায়ূনীয় স্টাইলে একটা প্যান্‌প্যানে চটি বই লিখলেই হত। cornymawkish (ক্লিক করে অভিধানে মানে দেখে নিয়েন বাংলাটা না জানলে, ভাল বাংলা পাচ্ছিনা)। এত বড় থান-ইটের কোন দরকার ছিল না। ঐতিহাসিক উপন্যাসের মনে হয় নিজেকে জাস্টিফাই করার প্রয়োজন আছে। এই উপন্যাসের বাস্তব চরিত্র ও ঘটনাগুলি এখানে দেয়ার কোন দরকারই ছিল না, কারন এর প্রায় সবই মনে হয় ইতিহাসের বইতে পাওয়া যায়। সেসবেরই নতুন বোতলে পুরনো মদের মত রি-ব্র্যান্ডেড কিন্তু প্রায় হুবহু চর্বিত-চর্বন, লেখক যদ্দুর মনে পড়ে নতুনত্ব কিছুই আনতে পারেননি তার মধ্যে, পারেননি কোন উল্লেখযোগ্য শুন্যস্থান সপ্রাণ ভাবে ভরাট করতে। বইটা তাই ঐ কাল্পনিক চরিত্রগুলির গল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারত। তাতে বইটা অ-নে-ক ছোট হয়ে যেত, স্বল্প-ধৈর্যের কিম্বা গরীব পাঠক উভয়ের জন্যই অ-নে-ক জন্য সুবিধা হত। এটারো একটা মূল্য আছে। তবে সেক্ষেত্রেও আমার মনে হয় 'ঐতিহাসিক উপন্যাস' তক্‌মা না দিয়ে বা 'প্রথম আলো' নাম না দিয়ে, এর নাম 'এক সতী-লক্ষী বাইজির প্রেমকথা' বা 'এক মক্ষীরাণী বাইজির গোপন ব্যাথা' - এই টাইপের কোন নাম দিলে বোধহয় ভাল হত।

সুনীলের 'পূর্ব-পশ্চিম' সম্পর্কেও আমার কমবেশি একইরকম মতামত।

তাহলে আমার মনোমত বা প্রিয় ঐতিহাসিক উপন্যাসের উদাহরণ কোনগুলি? বিশ্বসাহিত্যে কিছু আছে, তবে সেগুলি সবারই মনে হয় কমবেশি জানা বা পড়া। তাই বাংলায় আমার প্রিয় দুয়েকটা বই বা লেখকের নাম দেই (খুব বেশি পড়ি নাই, তাই বেশি বলতে পারব না)। প্রমথনাথ বিশী আছেন এর মধ্যে। বিশী খানিকটা 'হিন্দু জাতীয়তাবাদী' ভাবধারায় আক্রান্ত। অনেকের কাছে সাম্প্রদায়িক বা মুসলিম-বিদ্বেষী মনে হলেও হতে পারে। এখানে একটু ধাক্কা খেতে হয়। কিন্তু গল্প বলায় কোন মার নেই!

বঙ্কিম আছেন। এনার সম্পর্কে আর কিছু বলাই বাহুল্য!

আরও বেশ কয়েকজন আছেন যারা মূলত ২য় বিশ্বযুদ্ধ-কালীন বা তার পরবর্তী ভাঙ্গনের কাহিনি লিখেছেন। এর মধ্যে বিমল করের 'দেওয়াল' আছে। তবে এগুলিকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা যায় কিনা নিশ্চিত না। একটা বইয়ের কথা মনে পড়ছে - সাহেব বিবি গোলাম। জমিদারি যুগের কাহিনি।

আছেন সতীনাথ ভাদুড়ি। এই মুহূর্তে তার 'জাগরী'-র কথা মনে পড়ছে। অতুলনীয় একটা বই। ২য় বিশ্বযুদ্ধকালীণ একটা রাজনীতি করা পরিবারের কাহিনি। আছে বাণী বসুর 'মৈত্রেয়ী জাতক'। গৌতম বুদ্ধের যুগের কাহিনি। তবে এই বইটার অতি সাবধানে লুকিয়ে রাখা আধুনিক পলিটিকাল এজেন্ডা ও মেসেজটা আমার মোটেই পছন্দ হয়নি। বিশেষ করে সেটা প্রায় শেষের আগ পর্যন্ত লুকিয়ে রাখার অপপ্রয়াসটা, যা অসততার লক্ষণ বলেই মনে হয়েছে। সেইসাথে সুপ্রাচীণ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে প্রচণ্ড আযৌক্তিক ও অবাস্তবও। কিন্তু এই উপন্যাসও কাহিনিকথনে ও চরিত্রচিত্রনে অসাধারণ! কপি-পেস্ট নাই, 'শুন্যস্থান পূরণে' অতুলনীয়। এই বইয়ের পিছনেও প্রচুর গবেষনা আছে, কিন্তু সুনীলেরটার মত ফট্‌ করে তা ধরা পড়ে না বা কপিপেস্ট মনে হয়না। গবেষণা এখানে প্রাণ পায়। সবচেয়ে বড় কথা অসসাধারণ কাহিনি দুর্দান্ত ভাবে বলা হয়েছে। পিরিয়ড!

আছে মহাশ্বেতা দেবীর 'আঁধারমানিক'। প্রায় পিচ্চি একখান ইতিহাস-ভিত্তিক উপন্যাস। ইতিহাস নিয়ে সুনীলের মত এত বাগাড়াম্বরের কিছুই পাবেন না এতে, অথচ পাতায়-পাতায় অবধারিত ভাবে মনে হবে কোন এক ভিন্‌ জগতে ডুবে আছেন। অসচেতনেই অনায়াসে ঢুকে যাবেন ইতিহাসের ইষৎ রহস্যময়, ছায়ামেদুর, দূরবর্তী ও খানিকটা exotic জগতে। অথচ কিছুই কৃত্রিম বা আরোপিত মনে হবে না। নিষ্প্রাণ মনে হবে না। পড়ার সময় মনে হবে আপনি ওখানেই, ঐ দুনিয়াতেই আছেন। ঐ চরিত্রগুলিও অনেক বাস্তব ও সপ্রাণ, যেন আসল মানুষ। ধরাছোঁয়ার মধ্যে - নাগালের মধ্যে থাকা প্রায়-চেনা উষ্ণ রক্তমাংসের মানুষ। কিন্তু সেটা এজন্যে না যে তারা আসলেই আপনার চেনা এবং এই যুগের মানুষের কপিপেস্ট দেখছেন, বরং আপনি আসলে এত সফল ভাবে ঐ সময় ও স্থানে চলে গেছেন যে সেজন্যেই আপনার ঐ ফ্রেইমওয়ার্কের মধ্যে ওরকম মনে হবে। ইতিহাসের লেকচার (বা লেকচারের উপন্যাসায়ন!) না শুনেও ইতিহাস সম্পর্কে এমনিতেই অনেক কিছু জেনে যাবেন নিজের অজ্ঞাতসারেই, কারন আপনি লেকচার শুনছেন না - নিজেই ওখানে মনশ্চক্ষে ভ্রমণ করছেন, কাহিনিটা রি-লিভ করছেন। প্রায় সাবলাইমিনাল আবহ বা আমেজ কাকে বলে অনুভব করবেন।

সবশেষে বাংলাদেশের লেখক শওকত আলীর 'প্রদোষে প্রাকৃতজন'। যদ্দুর মনে পড়ে - প্রায় হুমায়ুনীয় ধাঁচের চিকনা বই। উনার অন্যান্য অনেক বই কোয়ালিটিতেও প্রায় হুমায়ুন লেভেলের। কিন্তু এই বইটা দুর্দান্ত। যদ্দুর মনে পড়ে বাংলায় পাল রাজত্বের (প্রায় ১০০০ বছর আগে?) সময়কার পটভূমিতে এই কাহিনি। ছোট্ট বই, ইতিহাস নিয়ে বেশি কথা বলার জায়গাই নাই। অথচ ঐ "আবহ" বা "আমেজ" যে কি অপূর্ব ভাবে ফুটে উঠেছে না পড়লে বুঝা যাবে না! এজন্যে তাকে ইতিহাসের তথ্যে বইটা ভরে ফেলতে হয়নি বা একে থান-ইট বানাতে হয়নি সুনীলের মত। এটাও অনেক আগে পড়া তাই বেশি কিছু মনে নেই, কিন্তু অসম্ভব তৃপ্তি পেয়েছিলাম সেটা মনে আছে।

ব্যস্‌ - এখানেই শেষ! আপাতত আর কিছু মাথায় আসছে না। দেঁতো হাসি

****************************************

কেউ একজন এর ছবি

ভাই কি কমেন্ট লিখলেন এইটা! সা্যালুট।

সত্যপীর এর ছবি

উরে খাইছে, কর্ছেন কি?!

পুরাটা দুইবার পড়লাম। একে একে আসি। ইতিহাসনির্ভর গল্পের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ সঠিক, আমার মূল লক্ষ্য গল্প বলা মানুষকে ইতিহাস শেখানো নয়। ইতিহাস শেখানোর বিষয়ও নয়, এইটা কি আর বিজ্ঞান? ইতিহাস হইল পুরানো দিনের গল্প। আমি প্রচুর ঐতিহাসিক এবং ইতিহাসভিত্তিক গল্প উপন্যাস পড়েছি, সেগুলি পড়ে আমার কখনোই মনে হয়নাই যে আমি কোনদিন গল্প লিখব। আমি গল্প লেখা ধরেছি টিভি দেখে। আমার প্রিয় টিভি সিরিজ রোম, অথবা গেম অফ থ্রোনস, বা টিউডর্স। কোনটা অসম্ভব ভালো লেগেছে, কোনটা তেমন ভালো লাগেনাই। কিন্তু যে জিনিষটা ফ্যাসিনেটিং সেটা হল, পুরোন দিনের সেটিংস এ গল্প বলার কৌশল। ভাইকিংস এর একের পর এক পর্ব দেখে আমার মনে হয়েছে মোগল কি মারাঠা বাহিনী নিয়ে এরকম গল্প লেখা যায়না? এইচবিওর রোম এর মত দিল্লি (এমনকি ঢাকা) নিয়েও কাঁপিয়ে দেওয়া গল্প লেখা যায়।

সেই থেকে শুরু। এ সং অফ আইস অ্যান্ড ফায়ার লেখার ক্ষমতা আমার নাই, কিন্তু ঠগী কি এলিফ্যান্ট এক্সিকিউশন নিয়ে গল্প তো আমি লিখতেই পারি? গল্প লেখা খুব কঠিন কাজ, অনেকগুলি লেখা আধা খেঁচড়া হয়ে পড়ে আছে কেবল গল্প জমাট বাঁধে নাই দেখে। দিনের শেষে আমার লক্ষ্য একটা গল্প বলা, অষ্টাদশ শতকের ঠগীর গল্প না লিখে বর্তমানের মলম পার্টি নিয়েও লিখতে পারতাম। সেটাও গল্প হত। ভালো গল্প না হলে সেটা ইতিহাসভিত্তিক না মহাকাশভিত্তিক তাতে কিছু যায় আসে না।

লালকেল্লা প্রায় শেষ। অসাধারন ডিটেল এর কাজ, প্রথম শ্রেনীর ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস। ভদ্রলোক কিরকম পড়াশুনা করেছেন এই একটা বই নামাতে ভাবলে আশচর্য হতে হয়। লেখকের কি কোন ব্যক্তিগত বায়াস আছে? আছে। দুর্বল মোগল শাসকদের চরিত্রায়নের পাশাপাশি তিনি ইংরেজ বাহিনীর একটু বেশিই প্রশংসা করে ফেলেছেন, বোঝাই যায় তিনি ছিলেন ইংরেজের উপর মহা ইম্প্রেসড। ইংরেজের কোন দুর্বলতা উঠে আসেনি এইটাই ছিল আমার চোখে দেখা বইটার একমাত্র দুর্বলতা। তবে এও মনে রাখতে হবে বিশীর ছিল বায়াস, তিনি ইতিহাস বিকৃতি করেছেন বলে আমার আদৌ মনে হয়নি। রেটিং হিসেবে বইটি দশে সোয়া পনেরো পাবার যোগ্য।

এইবার প্রথম আলো প্রসংগ। আমি অত্যন্ত দিলদরিয়া পাঠক, আমার সাধারণত সবই ভালো লাগে। মিলন ফিলন ছাড়া। প্রথম আলো আমার খুব ভালো লেগেছিল, অনেকদিন আগের পড়া। পড়ে আমি কিছু শিখিনাই ঠিক, শিখতে চাইওনি। এতে পাতার পর পাতা তথ্য ছিল সেটা আমারও মনে পড়ছে, তবে তেমন খারাপ লাগেনি। সুনীল হুমায়ুন নন, তথ্য ধুম করে লেখার সাথে আনরিলেটেডভাবে জোড়া দেওয়া হয়নি প্রথম আলোয়। প্রথম আলোকে আমি দশে অবশ্যই সাড়ে বারো দেব।

জাগরী আঁধারমানিক বা প্রদোশে প্রাকৃতজন পড়িনাই, আপনার বর্ণনা শুনে লোভ হচ্ছে। আপনি ভাই আমাকে ফতুর করে ছাড়বেন বইয়ের নাম দিয়ে দিয়ে মন খারাপ

সবশেষে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করলামনা, বড়ই থাকেন। সচলের আগে আমি কোথাও কখনো লিখিনি এবং সচল না থাকলে কোনদিন লেখাও হতনা সম্ভবত। সচলে যতদিন আপনি এবং আপনারা লিখবেন ততদিন লিখে যাব, লেখা এক অসম্ভব আনন্দের কাজ।

পরের গল্পের খসড়া শেষ। দিচ্ছি সচলে দ্রুত।

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

"প্রথম আলো"-র ব্যাপারে যে আপনার এবং বেশির ভাগ পাঠকেরই আমার সাথে দ্বিমত থাকবে এটা আমি আন্দাজ করতে পারি। এটা জনপ্রিয় একটা বই। তার মানে হচ্ছে বহু লোকেরই এটা ভাল লেগেছে। এবং এর মধ্যে তাদের ভাল লাগার মত অনেক কিছু ছিল বলেই এটা ভাল লেগেছে নিশ্চয়ই, এমনি-এমনি তো আর না! আর আমিও এটা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত একমাত্র আমি ছাড়া আর কাউরে খারাপ বলতে তেমন একটা শুনি নাই আসলে। এক্ষেত্রে আমার মতটাই আসলে eccentric... খাইছে

বিশীর মনে হয় আরও কিছু চমৎকার ইতিহাস-ভিত্তিক উপন্যাস আছে, তবে নাম মনে পড়ছে না এই মুহূর্তে।

লিখবেন তো বটেই, সচল যখন হয়েছেন তখন সচল আপনাকে থাকতেই হবে সচল নিজে থাকুক বা নাই থাকুক। সচলের সব সচলরাই সচল কোনদিন অচল হয়ে গেলেও সচল থাকবেন এই আশা করি।

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

মনে পড়লে বলবেন, খুঁজে দেখব। তবে বেশী করে ইতিহাসভিত্তিক বই পড়লে ইদানিং ভয় লাগে, যাই লিখতে যাই মনে হয় আরো একটু পড়াশোনা করা উচিৎ ছিল ইয়ে, মানে...

..................................................................
#Banshibir.

তুলিরেখা এর ছবি

ইতিহাসভিত্তিক গল্প উপন্যাসের কথা হচ্ছে দেখে আমি একটা উপন্যাসের কথা বলতে চাই, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "সেই সময়"। প্রথম পড়েছিলাম ক্লাস ইলেভেনে। তারপর আরো অনেকবার। ব্যক্তিগত রুচিতে এটা আমার কাছে লেখকের শ্রেষ্ঠ কাজ বলে মনে হয়। অসাধারণ এক কাহিনী, লেখক একেবারে জাদুকরের মতন পাঠকের মনকে সোজাসুজি ঐ সময়ে ঐ স্থানে নিয়ে গিয়ে বুঁদ করে রাখেন। আসলে কী হয়েছিল, কী ইতিহাস কী বৃত্তান্ত সব ঠিক কিনা কোনো খোঁজ নিই নি, দরকারও পড়ে নি, কারণ আমি কাহিনীটা উপভোগ করেছি হাড়েমজ্জায়রসে। একেবারে ঐ চরিত্রগুলো, ঐ গঙ্গানারায়ণ, নবীনকুমার, বিন্দুবাসিনী কুসুমকুমারী যদুপতি মধুসূদন গৌরদাস---কেউ কাল্পনিক কেউ ইতিহাসের--কিছু এসে যায় নি, চরিত্রগুলো মূর্ত হয়ে এসেছিল আমার কাছে, বিশাল ঐ কাহিনী একেবারে টেনে রেখেছিল। আমার মনে হয় সফল উপন্যাস বা গল্পের এইটা একটা শর্ত।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মন মাঝি এর ছবি

পড়েছি। 'সেই সময়' আসলেই দারুন উপভোগ্য বই। সুনীল এক জায়গায় লিখেছিলেন - এই উপন্যাসটা নাকি তিনি মজা করে লিখে ফেলেছিলেন - ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস লেখার ব্যাপারে মোটেই সিরিয়াস ছিলেন না তখন। তাই এর জনপ্রিয়তায় তিনি প্রথম খুব অবাক হয়েছিলেন। -- আমার মনে হয় এই জন্যই বইটা এত উপভোগ্য হয়েছে। মজায় লেখা বই পড়তেও মজা হয়েছে। পরে উনি এর জনপ্রিয়তা দেখে সিরিয়াস হয়ে 'মাথা বেন্ধে' যখন ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখা আরম্ভ করলেন, তখনই মান পড়ে গেল (আমার ব্যক্তিগত মতে)। কারন তখন তার মনের মধ্যে 'মজা'-র চেয়ে সি-রি-য়া-স গবেষণা চলিতেছে -- ঐ-তি-হা-সি-ক উপন্যাস লিখিতে হইবে যে! অ্যাঁ

****************************************

তুলিরেখা এর ছবি

"সেই সময়" এর অনেক পরে "প্রথম আলো" উপন্যাসটা পড়েছি। মনে হলো যেন "সেই সময়" ছিল খাঁটি দুধে বাসমতী চাল দিয়ে ঠিকঠাক মিষ্টি দিয়ে কাজুকিসমিস দি্যে তৈরী দারুণ সুন্দর পায়েস, আর "প্রথম আলো" যেন মিষ্টিছাড়া পাতলা দুধে মোটা চাল দেওয়া পায়েস নামের দুধভাত। মন খারাপ
ঠিক বলেছেন, " প্রথম আলো" যেন ফরমায়েশী কাজ, চাপে পড়ে যেন লেখক প্রাণপণে পাতার পর পাতা এখান ওখান থেকে রসদ আনিয়ে কাহিনি হিসাবে লিখে যাবার চেষ্টা করছেন, আর সেই সময় যেন নিজের মনের আনন্দে ফ্রী স্পিরিটে লিখে যাওয়া লেখকের সত্যিকারের ভালোবাসার কাজ। দেখবেন, "সেই সময়" এ মধুসূদন, গৌরদাস, গঙ্গানারায়ণ এদের পড়াশুনো চিন্তাভাবনার কথাও যেমন আসছে, বিদ্যাসাগর এর সমাজসংস্কার এর গল্প আসছে, ব্রাহ্মসমাজের কথা উঠছে, তেমন নিচুতলার যারা, বড়লোক বাড়ীর ভৃত্য, দুলাল, থাকোমণি--এদের কথাও একেবারে স্মুদ ফ্লোতে আসছে, কোথাও সুর কাটে নি,সবাইকার জীবনসংগ্রাম একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠছে, কোথাও কোনো গুরুগিরি মরালিটি নেই লেখকের, একেবারে নিরাসক্ত অনুরাগীর মতন লিখে গেছেন। এইটা "প্রথম আলো"তে দেখতে পাই নি, ওখানে যেন লেখক একেবারে বেছে বেছে উঁচুতলার কাহিনীই শুধু, মানে আদর্শগত দিক দিয়ে যারা প্রভাবশালী তাদের গল্পই বলবার চেষ্টা করেছেন। ফলে একেবারে পায়েস এর নামে দুধভাত হয়ে গেছে।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

শীরমলটা কী?

র.নাহিয়েন

সত্যপীর এর ছবি

এইযে শীরমল।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, পীরভাই!

র.নাহিয়েন

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, পীরভাই!

র.নাহিয়েন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।