ধূম সওদাগর - প্রথম পর্ব

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: শনি, ১৩/০৫/২০১৭ - ৮:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মার্কিন ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল হর্নক্লিফ গম্ভীর স্বরে বললেন, হাঁ যা ঘটেছে তা অতি দুঃখজনক। আটারলি ডিস্যাপয়েন্টিং অ্যান্ড কোয়াইট আনফরচুনেট ইন্ডিড। এই ভারতীয় ছেলেটি চমৎকার রাঁধে, সে যে আচমকা ঢিল ছুঁড়ে মানুষ মেরে ফেলবে তা ভাবা যায়নি।

পাশে দাঁড়ানো লম্বা জামা পরিহিত চীনে প্রশাসক চাওলুং সরু চোখে তাকিয়ে রইলেন, কিছু বললেন না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হর্নক্লিফ বললেন, আমরা আমেরিকান। স্থানীয় আইনের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। এই ছেলের বিচার কি করবেন আপনারাই স্থির করুন।

লালুর মুখ এতক্ষণ বাঁধা ছিল। চাওলুং এর চোখের ইশারায় পাশে দাঁড়ানো চীনে পেয়াদা মুখের কাপড় খুলে শক্ত করে তার হাত পিছমোড়া করে পেঁচিয়ে ধরল, আর সেই ফাঁকে গলা ফাটিয়ে লালু বিশুদ্ধ ইংরেজীতে বলল আই অ্যাম ইনোসেন্ট। আমি কিছু করিনি। আই ওয়াজ নট ইভেন অন ডেক, আমি তো নিচে ফেটে যাওয়া আফিমের বাক্স সারাই করছিলাম।

ক্যাপ্টেন হর্নক্লিফ আর তার মার্কিন সহ অফিসারগণ কিঞ্চিৎ থতমত খেয়ে গেলেন। এই ভারতীয় চাকর বেশ ইংরেজী বলতে পারে দেখছি। অল্প কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর চাওলুং হর্নক্লিফের দিকে তাকিয়ে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে সন্দিগ্ধ স্বরে বললেন, হি সে ওপিয়াম? য়ু হ্যাভ ওপিয়াম?

… … …

১৮ ঘন্টা আগের কথা।

দক্ষিণ চীনে লিন্টিন দ্বীপের কাছে নদীতে ভাসমান ওলন্দাজ জাহাজ রাইন্সবার্গ এর ডেক।

বিকেল।

হাঁকডাক শুনে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে এসে ক্যাপ্টেন হর্নক্লিফ বললেন, হোয়াটস দ্যা ম্যাটার? চেঁচামেচি কিসের?

বন্ধু কেইলেব ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে বলল, ইয়োর ইডিয়ট ব্রাদার ডিড ইট এগেইন। আই টোল্ড ইউ রিপিটেডলি ওকে বাটাভিয়ায় রেখে আসি, আমাদের সাথে চায়না আনার হাঙ্গাম করার প্রয়োজন নেই। কথা তো শুনলেনা। এখন দেখো ঢিল দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে কার।

এক কোণায় ক্যাপ্টেনের ভাই রাসেল বসা। চোয়াল শক্ত করে সে নিচে তাকিয়ে আছে। নদীতে কে ডাক ছেড়ে কাঁদছে, ক্যাপ্টেন একটু এগিয়ে গেলেন সেদিকে। দেখলেন অদূরে পানির উপর একটা ছোট ডিঙ্গি নৌকায় এক নারী আধাশোয়া হয়ে বসা, তাকে ঘিরে দুই তিনজন মানুষ। এক বৃদ্ধা ডুকরে কাঁদছে। ডিঙ্গির পাশে আরেকটা ছোট নৌকা, তার উপরে এক তরুণ বসা। নীল জামা। মাথায় টুপি। সে স্থিরদৃষ্টিতে রাইন্সবার্গের দিকে তাকিয়ে আছে। অল্পদূরে দ্বীপে লোকের জটলা।

ক্যাপ্টেনের পাশে এসে দাঁড়াল কেইলেব। সে বলল, ঐ নৌকার মহিলা ডামপ্লিং বিক্রি করতে এসেছিল। রাসেল দড়ি নামিয়ে দেয় আর দুই বাক্স ডামপ্লিং নেয়। তারপর টাকা দড়ি দিয়ে বেঁধে দেবার বদলে পাথরের সাথে বেঁধে মহিলার দিকে ছুঁড়ে মারে। আর পাথর গিয়ে লাগে সোজা তার মাথায়।

বেটি আমাকে ঠকিয়েছে, গর্জন করে উঠল রাসেল, একটা বাক্সের মধ্যে কেবল দুইটা ডামপ্লিং আর কিছু হার্বস। বদমাইশ চাইনিজ।

তুমি কি তবে মাথা লক্ষ্য করেই পাথর মেরেছিলে?

রাসেল চুপ করে রইল, কিছু বলল না। কেইলেব ক্যাপ্টেনকে এক ধারে সরিয়ে নিচু গলায় বলল, সমস্যা গভীর স্যাম। অতি গভীর। এরা এখন এই সুযোগে উঠে জাহাজ তল্লাশ করতে চাইবে। রাসেলকেও ধরে নিয়ে যেতে চাইবে আবার আফিমও বাজেয়াপ্ত করবে। রাতের আঁধারে পয়সা দেবার কি প্রয়োজন যদি ফ্রি ফ্রি বাজেয়াপ্তই করা যায় মাল? হুঁশিয়ার স্যাম, চাইনিজগুলো পাক্কা শয়তান এখানে। আস্তে করে জাহাজ ঘুরিয়ে ম্যাকাও চলে যাবে নাকি? পরে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে আবার ফিরে আসা যাবে পার্ল রিভার ডেল্টায়।

রাসেলকে ধরে নিয়ে যাক, কিন্তু জাহাজ তল্লাশ হত দেব না। মালবিক্রির পাইপয়সা আমার প্রয়োজন, ধারে নিয়ে এসেছি ডাচ জাহাজ এ তোমার অজানা নয়।

ফ্যাকাশে হেসে কেইলেব বলল, রাসেলকে ধরে নিয়ে যাক বললে হবে? লেডি হিউজ অ্যাফেয়ারের কথা ভুললে চলবে না। স্যাভেজেস, দীজ চাইনিজ। আমি একমত, তল্লাশ করতে দেয়া চলবে না আর রাসেলকেও ধরতে দেয়া যাবেনা। তাই বলছিলাম, ম্যাকাও চলে যাই বরং। পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হোক।

মাল না বিক্রি করে?

হ্যাঁ। মাসখানেক পরে আসব।

না বড় দেরি হয়ে যাবে। আজ রাতে মাল চালান করা যায় না?

চিন্তিত মুখে কেইলেব বলল, না। এরা চোখ রাখবে রাতে আমাদের জাহাজে। আজকে রাতে হবে না।

সাইমন এসে খটাস বুটে স্যালুট ঠুকল। তারপর বলল, ক্যাপ্টেন।

কী?

নিচে ওপিয়াম চেস্টে ফাটল ধরেছে কিছু। পুরো ভাঙেনি, কিন্তু ওঠানামা করার সময় ভেঙে যেতে পারে। মেরামত করার জন্য কিছু অতিরিক্ত লোক চাই।

চিন্তিত স্বরে ক্যাপ্টেন হর্নক্লিফ বললেন, কিচেন থেকে নিয়ে নাও।

… … …

আজ মঙ্গলবার। সল্টেড পর্ক ডে। বাবুর্চি জন্সন মই বেয়ে নামতে গিয়ে মাজা ভেঙেছেন, তাই রান্না কে চালাবে সেইটা লালু বুঝতে পারছিল না। তবে বেশি কথা বলা তার স্বভাব নয়, সে তার মত মাংস বের করে রান্নার জন্য প্রস্তুত করতে লাগল। মটরশুঁটিও বের করতে হবে পরে, তবে সেজন্য সিঙ্গাপুরি ছেলেটা আছে।

শুকরের মাংস লালুর প্রিয় খাদ্য। দেশে যখন বড় হচ্ছিল তখন তারা খেতে পেতনা তেমন, ডাল ভাত শাক আলুভর্তাই ছিল মোটামুটি প্রতিদিনের খাবার। কেবল মা মাঝে মাঝে লরেন্স সাহেবের বাংলোয় নিয়ে গেলে মাংস পাওয়া যেত। ভিনেগার দিয়ে রান্না করা মাংস, গোয়ার আধা ফিরিঙ্গী এক ছোকরা ছিল লরেন্স সাহেবের কুক।

লরেন্স সাহেবের কথা মনে হতে নিজের অজান্তেই চোয়ালটা একটু শক্ত হয়ে গেল লালুর। মন ফেরাতে সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল সিঙ্গাপুরি ছেলেটাকে পাওয়া যায় কিনা। দশ বারো বছরের ছেলে, ইংরেজি বোঝেনা ভালোমত। কুক জন্সন হাতের ইশারায় তাকে দিয়ে কাটাকুটি করায়। অবশ্য লালুও বেশি কথা বলেনা, জন্সনের ধারণা সেও ইংরেজিতে কাঁচা। কিন্তু সেকথা সত্য নয়, লরেন্স সাহেব তাদের দুই ভাইকে মন দিয়ে ইংরেজি শিখিয়েছেন। লরেন্স সাহেবের প্রকৃত পরিচয় জানার আগে তার বাংলোতে উৎসাহ নিয়েই যেত লালু।

হাতে রামের পাত্র নিয়ে চ্যান বাহাদুর ঢুকল। বলল, শুনেছিস নাকি কাণ্ড?

লালু নিস্পৃহ ধরণের মানুষ, আশপাশের ঘটনা নিয়ে সে সাধারণত কৌতূহলী নয়। মাথা অল্প করে নাড়াল সে। শোনেনি। চ্যান বাহাদুর বলল, কাপ্তানসায়েবের ভাই ঢিল মেরে এক বেটির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। চীনেরা এখন জটলা পাকাচ্ছে গেঞ্জাম করার জন্য।

খটাখট বুটের শব্দ তুলে পাঁচ গোরা সিপাই এসে কিচেনে ঢুকল। লালু আর চ্যান বাহাদুর দুইজনেই সটান খাড়িয়ে গেল তাদের উপস্থিতিতে। অফিসার সাইমন এসে বলল, লিসেন হারি আপ উইথ দ্য ফুড। ইউ অল আর নিডেড ইন স্টোরেজ বি ডাউন্সটেয়ার্স। রিপোর্ট টু মি ইন থার্টি মিনিটস।

চ্যান বাহাদুর চিৎকার করে বলল স্যার ইয়েস স্যার!

কিছুক্ষণ পরে দৌড়ে দৌড়ে চ্যান বাহাদুর আর লালু নিচে স্টোরেজে দৌড়ল। তিনটে সরু বড় রুম পরপর। রুমগুলোর বাইরে ওলন্দাজ ভাষায় কি হিবিজিবি লেখা। স্টোরেজ বি মাঝখানের কক্ষ। প্রথম কক্ষটায় দরজা নেই, সার সার বাক্স ডাঁই করে রাখা। মূলত জিনসেং আর ফার। চন্দনের চালান কোণায় আলাদা করে রাখা। মাঝের কক্ষে সামনে টিন আর খরগোশের চামড়ার বাক্স, পেছনে সার সার আফিম। এই কক্ষের সমস্ত বাক্স প্রায় একই রকম দেখতে, ধাঁ করে তাকালে বাক্সগুলোর পার্থক্য বোঝা মুশকিল।

পেছনে কক্ষের ছাদের বীমের একটা অংশ ভেঙে পড়েছে আর বেশ কিছু বাক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেখতে পেল তারা। গোরা সিপাই আলফ্রেড বলল, ব্রিং ব্রুম, কোয়াইট এ বিট অফ ডেব্রি ইন দ্যা কর্ণার। ক্লিন ইট আপ। তারপর পেরেক হাতুড়ি আছে নিয়ে এই দিকের বাক্সগুলো সারাই করতে আরম্ভ কর।

মাথা নেড়ে দুইজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল কাজে।

ঘন্টাখানেক পরে কক্ষের বাইরে এসে দাঁড়াল কেইলেব এবং ক্যাপ্টেন হর্নক্লিফ। দূরে দাঁড়িয়ে তারা সকলের কাজ দেখতে লাগল। কেইলেব গলা নামিয়ে বলল, ঐ দুটো ছেলে ভারতীয়। কিচেনে কাজ করে। এদের একজনকে ধরিয়ে দেয়া যায়। বামের ছেলেটি চ্যান। অতিরিক্ত কথা বলে। একে গছিয়ে দিলে এ চীনেদের কানের পোকা নড়িয়ে দেবে রাসেলের নাম করে। পাশের ছেলেটি লালু। ইংরেজি তেমন পারেনা, ইয়েস নো গুড মর্নিং পর্যন্ত তার দৌড়। একে ধরিয়ে দিলে হয়।

হর্নক্লিফ বললেন, ইয়েস নো গুড মর্নিং? আচ্ছা। একেবারেই ইংরেজি জানেনা এরকম কেউ নেই? বেন যে বলছিল এক সিঙ্গাপুরি ছোকরাও আছে কিচেনে?

আশ্চর্য হয়ে কেইলেব ক্যাপ্টেনের দিকে তাকিয়ে বলল, সিঙ্গাপুরি? ক্যাপ্টেন তোমার কি মাথা খারাপ? চীনেরা তো তার কথা বুঝতে পারার কথা, সে ইংরেজি পারে কিনা তাতে কি এসে যায়।

আচ্ছা। সেও বটে।

তো...কি করব? লালুকে অ্যারেস্ট করব?

হুঁ কর। আর চীনে অফিসারকে খবর পাঠাও সকালে এসে তারা আসামী ধরে নিয়ে যেতে পারে।

কেইলেবের ইশারায় তিন পেয়াদা গিয়ে লালুকে পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলল দ্রুত, আর মুখে লম্বা রুমাল বেঁধে দিল। তারপর চ্যাংদোলা করে তাকে ডেকে নিয়ে যেতে থাকল। চ্যান বাহাদুর ঘটনার আকস্মিকতায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বুঝতে পারল না কি হচ্ছে। সে কি একটা বলতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তেই পেছনের এক সিপাই তার মাথায় শক্ত ডাণ্ডার বাড়ি দিয়ে বসিয়ে দিল। মাথায় হাত দিয়ে “আঁক” বলে বসে পড়ল চ্যান।

উপরে নিয়ে লালুকে বেঁধে রাখা হল ডেকের প্রান্তে। মুখ বাঁধা, অভুক্ত। অন্ধকার নেমে এসেছে ততক্ষণে। শীতল নদীর বাতাসে পাতলা জামা পরা লালু কেঁপে উঠতে লাগল অল্প অল্প।

… … …

পরদিন সকাল।

স্থানীয় প্রশাসক চাওলুং তিন সঙ্গী নিয়ে উঠেছেন জাহাজ রাইন্সবার্গের ডেকে। আগের দিন ছুঁড়ে মারা পাথরে আঘাতপ্রাপ্ত নারী মারা গিয়েছে। অভিযোগ তাই অত্যন্ত গুরুতর। জাওলুং ক্যাপ্টেনের দিকে চেয়ে বললেন, হু কিল হার? দিস বয়? ওয়াট হ্যাপেন্ড?

মার্কিন ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল হর্নক্লিফ গম্ভীর স্বরে বললেন, হাঁ যা ঘটেছে তা অতি দুঃখজনক। আটারলি ডিস্যাপয়েন্টিং অ্যান্ড কোয়াইট আনফরচুনেট ইন্ডিড। এই ভারতীয় ছেলেটি চমৎকার রাঁধে, সে যে আচমকা ঢিল ছুঁড়ে মানুষ মেরে ফেলবে তা ভাবা যায়নি।

চাওলুং সরু চোখে তাকিয়ে রইলেন, কিছু বললেন না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হর্নক্লিফ বললেন, আমরা আমেরিকান। স্থানীয় আইনের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। এই ছেলের বিচার কি করবেন আপনারাই স্থির করুন।

লালুর মুখ এতক্ষণ বাঁধা ছিল। চাওলুং এর চোখের ইশারায় পাশে দাঁড়ানো চীনে পেয়াদা মুখের কাপড় খুলে শক্ত করে তার হাত পিছমোড়া করে পেঁচিয়ে ধরল, আর সেই ফাঁকে গলা ফাটিয়ে লালু বিশুদ্ধ ইংরেজীতে বলল আই অ্যাম ইনোসেন্ট। আমি কিছু করিনি। আই ওয়াজ নট ইভেন অন ডেক, আমি তো নিচে ফেটে যাওয়া আফিমের বাক্স সারাই করছিলাম।

ক্যাপ্টেন হর্নক্লিফ আর তার মার্কিন সহ অফিসারগণ কিঞ্চিৎ থতমত খেয়ে গেলেন। লালু ছেলেটি বেশ ইংরেজী বলতে পারে দেখছি। অল্প কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর জাওলুং হর্নক্লিফের দিকে তাকিয়ে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে সন্দিগ্ধ স্বরে বললেন, হি সে ওপিয়াম? য়ু হ্যাভ ওপিয়াম?

ক্যাপ্টেন স্নিগ্ধ হেসে বললেন নো নো। নো ওপিয়াম। দিস বয় ওয়াজ রেইজড ইন অ্যান ইন্ডিয়ান ওপিয়াম ফ্যাক্টরি। হি থিঙ্কস অল চেস্টস আর ওপিয়াম চেস্টস। টাই হিস মাউথ অ্যাগেইন। উই হ্যাভ নো ওপিয়াম, ওনলি ফাইন হাওয়াইয়ান স্যান্ডালউড, কোয়ালিটি জিন্সেং অ্যান্ড ওয়ান্ডারফুল ফার কোটস।

ওয়ান্দাফুল ফা কোটস?

ওয়ান্ডারফুল ফার কোটস। পারহ্যাপস ইউ অ্যান্ড ইয়োর কো-অফিশিয়ালস উড লাইক সাম?

হলদে দাঁত বের করে চাওলুং বললেন, ফা কোটস। ওকে। হেঁ হেঁ।

ক্যাপ্টেন হেঁকে বললেন এই এদের দুটো করে ফারের কোট দাও।

লালুর মুখ ফের বেঁধে তাকে মইয়ে করে নামিয়ে নেয়া হল। চাওলুং এবং তার তিন সঙ্গীর জন্য উপহার দেয়া হল চারটে কারুকাজখচিত বাক্স। বাক্সের ভেতর চন্দন, ফার কোট, হাতর দাঁতের কাজ করা কলমদান ইত্যাদি উপহার। চীনে অফিসারেরা মহা খুশি হয়ে জাহাজ থেকে নেমে গেল আর কোন প্রশ্ন না করে।

লালু আকুল হয়ে কিছু বলার চেষ্টা করল কিন্তু রুমাল এমন শক্ত করে বাঁধা যে গোঁ গোঁ আওয়াজ ছাড়া কিছুই বেরুল না। সে ক্লান্ত হয়ে আশপাশ খেয়াল করতে লাগল। তার নৌকায় সে আর দুই পেয়াদা, সামনের নৌকা বড়। তাতে চীনে প্রশাসক চাওলুং এবং বাকিরা। ঘাড় ঘুরিয়ে লালু লক্ষ্য করল পেছন পেছন একটু দূরত্ব রেখে আরেকটা ডিঙ্গি তাদের অনুসরণ করছে। তার উপর এক তরুণ বসা। নীল জামা। মাথায় টুপি। স্থিরদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে।

নৌকা ভিড়ল পার্শ্ববর্তী এক দ্বীপে। তাকে বাঁশ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দ্বীপের এক পাশে নিয়ে যাওয়া হল। সকলে চীনা ভাষায় তাকে কি বলছে। মুখ বাঁধা থাকায় সে কিছুই বলতে পারল না। সে কাজ চালানোর মত অল্প চীনাভাষা জানে।

একটা বাঁশের বড় খাঁচায় তাকে ঢোকানো হল। পাশে একটা বাটিতে ময়লা পানি, আর একটা নোংরা কাঁথা। হাত আর মুখের বাঁধন খুলে দিয়ে চীনে পেয়াদা বাইরে গিয়ে বসল। সারারাতের ক্লান্তি কাটিয়ে লালু ডুকরে কেদে ওঠার চেষ্টা করল, কিন্তু তার গলা দিয়ে ফ্যাঁসফ্যাঁসে আওয়াজ ছাড়া কিছু বেরুল না। ঢকঢক করে পানিটা খেয়ে কাঁথা জড়িয়ে সে দুর্বলভাবে শুয়ে পড়ল।

দুপুরের কড়া রোদ কেটে গেলে সে ঘুম থেকে উঠে পড়ল। দেখল বাইরে পেয়াদা নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে। পাশে একটা ছোট পাত্রে এক মুঠো সাদা ভাত। পেটে দানা পড়েনি গতরাত থেকে। হাপুস হুপুস করে ভাতটা গলাধঃকরণ করল সে, তারপর বাঁশে হেলান দিয়ে ভাবতে বসল। এ কি ফ্যারে পড়ল সে। পাথর মারল ক্যাপ্টেনের ভাই রাসেল, আর ধরা খেল কিনা সে। এখন হত্যার অপরাধে এরা তো তাকে ঝুলিয়ে দেবে মনে হচ্ছে। পালানো যায় কিভাবে?

আরেকটু ভাবল সে। পালানো দরকার। একবার পালাতে পারলে সে কোনভাবে অবশ্যই ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল হর্নক্লিফ আর তার স্যাঙাৎ কেইলেব জেমসকে খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি দেবে। সে তারা ক্যান্টন বাটাভিয়া টার্কি রোড আইল্যান্ড যেখানেই থাকুক। পাদ্রী লরেন্স তার হাত থেকে ছাড়া পায়নি, এরাও পাবেনা।

কিন্তু পালানো যায় কিভাবে?

বহুদিন পরে প্রার্থনায় বসল সে। সানডে চার্চে মা আওড়াতেন তাদের দুই ভাইয়ের সাথে এই প্রার্থনা। আই বিলীভ ইন গড। দ্য ফাদার অলমাইটি, ক্রিয়েটর অফ হেভেন অ্যান্ড আর্থ, অ্যান্ড ইন জিসাস ক্রাইস্ট, হিজ ওনলি সান, আওয়ার লর্ড…

… … …

রাত।

কাঁথা জড়িয়ে বসে লালু খেয়াল করল দূরে ঝোপের আড়ালে কেউ আছে। ধীরে এগিয়ে আসছে এদিকে। গার্ড পেয়াদা বসে বসে ঘাস চাবাচ্ছে, তার সেদিকে খেয়ালই নেই। লালু শ্বাস আটকে দেখতে লাগল ঘটনা। কে আসে?

আচমকা ঝোপের আড়াল থেকে উড়ে এসে পেয়াদাকে তিন কোপে শুইয়ে দিল আগন্তুক। বুড়ো পেয়াদা সটান কাত হয়ে পড়ে গেল কিছু বোঝার আগেই। আগন্তুক কাছে এগিয়ে এসে বাঁশের খাঁচার বাইরে এসে ভাঙা ইংরেজিতে বলল, হেই। বয়। য়ু নো হোয়াইত ম্যান হু কিল মাই মাদার?

লালু খেয়াল করে বুঝল এ সেই নীল জামা পরা তরুণ, যে তাদের ডিঙি সকালে অনুসরণ করছিল। সে এগিয়ে এসে বলল, ইয়েস। আই নো হিম। রাসেল হর্নক্লিফ।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে তরুণটি বলল, মাই নেম লাও বাঙ। য়ু ফাইন মি রাসেল, আই ফ্রি য়ু।

লালু বলল, ইয়েস। ওপেন দ্য কেইজ, অ্যান্ড আই উইল ফাইন্ড ইউ রাসেল।

মাথা পিছিয়ে নিয়ে লাও বাঙ একটু হাসল।

(পরের পর্বে সমাপ্য)


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

এসেছে, এসেছে, ধূম কাহিনী এসে গেছে! হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সত্যপীর এর ছবি

আসতেই হবে।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

জটিল হচ্ছে ভাই, জটিল। তবে এ ধরনের ধারাবাহিক গল্পের সমস্যা একটাই, টেনশানে ফেলে দিলেন। খুব বেশী অপেক্ষায় রাখবে না যেন।
-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী।

সত্যপীর এর ছবি

সপ্তা দুই তিনের মধ্যে শেষ পর্ব আসার কথা। চা খাইতেছি আপাতত।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

সময়কালটা কখন? একটু হিন্টস না দিলে পাঠক পরিবেশ-পরিস্থিতি কল্পনা করবে কীভাবে?

জায়গাগুলোর নাম যদি রোমানাইজ আকারে রাখেন তাহলে 'লিন টিন আইল্যান্ড' ঠিক আছে, নয়তো আসল নাম 'নেঈ লিঙ দিঙ দাও' বলতে হবে। গল্পে জটিল ক্যান্টনিজ নাম থাকলে অবশ্য পাঠক হোঁচট খাবেন।

মানুষের নামের ক্ষেত্রে যদি একই কনভেনশন অনুসরণ করেন তাহলে রোমান উচ্চারণে 'জাও লুঙ' ঠিক আছে, সেক্ষেত্রে 'লাও বাঙ' হয়ে যাবে 'লাও পেঙ'। আর যদি 'লাও পেঙ' করতে না চান তাহলে 'জাও লুঙ' কে 'চাও লুঙ' করতে হয়। বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

"এক বৃদ্ধা ডুকরে চিৎকার করে কাঁদছে" - এই বাক্যটা ঠিক লাগছে না। হয় ডুকরে কাঁদবে অথবা চিৎকার করে কাঁদবে।

ভারতীয়র নাম 'চ্যান বাহাদুর', কেমন যেন লাগছে। লালু'র ইতিহাস যা জানা যাচ্ছে এবং যা আঁচ করা যাচ্ছে তাতে তার নাম রোমান বা ট্রাডিশনাল কোন্‌কানী কিছু হলে লাগসই হতো।

রাইন্সবার্গ জাহাজের মালসামান - ১। জিনসেং (সম্ভাব্য উৎসঃ কোরীয় উপদ্বীপ), ২। ফার (সম্ভাব্য উৎসঃ মাঞ্চুরিয়া/কোরীয় উপদ্বীপ/সাইবেরিয়া), ৩। চন্দন (সম্ভাব্য উৎসঃ ভারত/ইন্দোনেশিয়া/হাওয়াই), ৪। খরগোশের চামড়া (সম্ভাব্য উৎসঃ অস্ট্রেলিয়া), ৫। আফিম (সম্ভাব্য উৎসঃ ভারত)। চিন্তায় পড়ে গেলাম হর্নক্লিফ ব্যাটা কোন বন্দর থেকে এতো বাজার করলো! সবচে' লাগসই বাজার হচ্ছে ভারত (৩, ৫) + সিঙ্গাপুর (৩, ৪, ৫) + হঙ কঙ (১, ২)। বোঝা যাচ্ছে হর্নক্লিফ শক্ত পাল্লার মানুষ। এতগুলো বাজার থেকে সওদা করা, এতোটা পথ মালবোঝাই জাহাজ নিয়ে যাওয়া বিশেষত মালাক্কান, ফিলিপিনো আর ক্যান্টনীজ জলদস্যুদের বাড়ীঘরের ভেতর দিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট বুকের পাটা লাগবে। গল্পে এমন চরিত্র থাকা ভালো লক্ষণ। পরের পর্বগুলোতে বেশ ড্রামা-অ্যাকশান-সাসপেন্স আশা করা যাচ্ছে।

সিরিজ চলুক দুর্বার গতিতে।

সত্যপীর এর ছবি

শেষ থেকে শুরু করি।

রাইন্সবার্গ ধার করা ওলন্দাজ জাহাজ, সমস্ত মাল হর্নক্লিফ একা কেনেনি। তবে সে দুঁদে ক্যাপ্টেন ঠিকই। তার মূল জাহাজ ঝড়ের কবলে পড়েছিল বা পাইরেট নিয়ে গেছে, কিছু একটা। তারপর কিভাবে কিভাবে বাটাভিয়া থেকে সে ক্রেডিটে ওলন্দাজ জাহাজ নিয়ে এসেছে আফিম চোরাচালান করে পয়সা বানাতে। হর্নক্লিফের বিতং এই গল্পে খোলাসা হবে না, ভবিষ্যতে এই সিরিজের কোন গল্পে খোলাসা হতে পারে। আপাতত যা বুঝছি সে বাটাভিয়া থেকে এসেছে, কিছু মাল বাটাভিয়া থেকে কেনা হতে পারে। হর্নক্লিফ এই সিরিজের রিপিট ক্যারেক্টার, লালু/লাও বাঙ এর মত।

চ্যান বাহাদুর ঠিক আছে। মূল নাম চন্দ্রপাল, ইংরেজ/মার্কিন ডাকে চ্যান (খেয়াল করে দেখবেন কোন মার্কিনের জবানে চ্যান বাহাদুর নেই, কেবল চ্যান), লালু ইত্যাদি নন গোরার কাছে সে নিজের নাম বলে চ্যান বাহাদুর। এই বাচাল ছোকরাকে নিয়ে কি করব ঠিক করিনি, এ ও রিপিট ক্যারেক্টার হতে পারে। এ লালুর দেশের লোক, ল্যাংটাকালের বন্ধু।

লালুর রোমান নাম আছে। সেই নাম পাদ্রী লরেন্সের দেয়া। লরেন্স বিষয়ক একটা ঘাপলা আছে লালুর জীবনে, সেইটে ভবিষ্যতে আরো খোলাসা হবে। যাই হোক, মা তাকে লালু ডাকে তাই সকলকে সে লালু পরিচয় দেয়। লালুর রোমান নামের প্রয়োজন ভবিষ্যতে পড়লে দেখা যাবে, সে নিজের রোমান নামের বিরাট পাঙ্খা নয় এইটে হল মূল কথা।।

"ডুকরে কাঁদছে" ঠিক করে দিলাম। ধন্যবাদ।

চাও লুং করে দিলাম। নামের কনভেনশন চ/জ এবং প/ব এর বিষয়টা বিষদ খুলে বলেন (অথবা লিঙ্কু দেন, খাইটা খাই)। আবারো ধন্যবাদ।

লেডি হিউজ অ্যাফেয়ারের কথা উল্লেখ আছে সুতরাং ১৭৮৪ এর পরের কথা। ১৮০০/১৮১০ হবে মনে করেন। আফিম যুদ্ধ এখনো আসেনাই।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথমে একটা অন্য কথা বলে নেই। উপরে ইকরাম ফরিদ চৌধুরীর জিজ্ঞাসার যা জবাব দিলেন তাতে আপনার মতলব সুবিধার মনে হচ্ছে না। বাংলা ভাষায় এমন পটভূমি ও কাহিনীর (সময়কালসুদ্ধ) কোন গল্প/উপন্যাস পড়েছি বলে মনে পড়েনা। এমন ইন্টারন্যশনাল ক্রাইম/পাইরেট/স্পাই/স্মাগলিং থ্রিলারের তো প্রশ্নই ওঠেনা। সুতরাং ব্লগে লেখা প্রকাশের লিমিটেশনগুলো মাথায় নিয়ে এমন সম্ভাবনাময় কাহিনীটিকে দয়া করে চেপেচুপে আংটির বাক্সে ঢুকানোর চেষ্টা করবেন না। লেখাকে তার স্বাভাবিক গতিতে বয়ে যেতে দিন। আকার আর পরিণতি সে নিজেই ঠিক করুক।

হর্নক্লিফঃ মার্কিন সওদাগরি জাহাজের কাপ্তান। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর বা ভারত মহাসাগরে তাইফুন/সাইক্লোন বা জলদস্যুদের কবলে পড়লো। ওলন্দাজ শুয়োরগুলোর সহযোগিতায় বাতাভিয়ায় পৌঁছে কী কৌশলে রাইন্সবার্গ ধার করলো। তার সাথে আর দশটা জোচ্চোর-বাটপার সওদাগরদের মালসামান নিয়ে চুহাই-কুয়াঙচৌ-এর বাজারে বিক্রির ধান্দা করলো এবং সাথে কিছু আফিম পাচার করে হারানো জাহাজের ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করলো। এর কিচ্ছা যেটুকু বললেন তাতে সে নিজেই তো চার/পাঁচ অধ্যায়ের দাবি রাখে।

চ্যানঃ নামের ব্যাখ্যা ঠিক আছে। একে খুব তাড়াতাড়ি মারা বা গাপ করা মনে হয় ঠিক হবে না। কারণ, এমন গল্পে এমন চরিত্র আবশ্যক। এর পরিণতি কী হবে সেটা আপনার বিবেচনা।

লালুঃ ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কিছু হিন্টস তো আগেই দিয়েছেন। ফ্ল্যাশব্যাক বা আলাদা অধ্যায় হিসেবে পুরনো গল্প আসতে পারে। সেখানেও অনেক ‘হিস্টোরি’ থাকবে বলে আশা করছি।

লেডি হিউজেসঃ ঘটনার গতিপ্রকৃতিতে এর কথা মনে হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে আমার আশঙ্কা সঠিক। ২০১২ সালে কেরালার উপকূলে ইতালীয় জাহাজ Enrica Lexie’র ঘটনার কথা মনে আছে? সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কতো উঁচু গলা মিঁউ মিঁউতে পালটে গেলো!

হাডসন্স বে কোম্পানীঃ ওহ্‌! এই গল্প যে সময়ের বললেন সেটা স্যার জর্জ সিম্পসনের আমলের আগের। তার মানে তখন হাডসন্সদের ব্যবসার স্বর্ণযুগ আর নর্থওয়েস্ট কোম্পানীর সাথে মারামারির কঠিন সময়। হাডসন্সদের পক্ষে বাতাভিয়া কেন, অ্যান্টার্টিকাতেও ফার পাঠানো সম্ভব। গণ্ডেরিরাম বাটপারিয়া যেমন ‘ঘই’-এর ব্যবসা করতে গিয়ে বিস্তর সাপ মেরেছিল, হাডসন্সরা তেমন তাদের সাড়ে তিনশ’ বছরের ব্যবসায় কত কোটি লোমশ প্রাণী যে মেরেছে তার ইয়ত্ত্বা নেই। আফসোস্‌ সেই আমলে ব্রিজিত বার্দো’রা ছিল না।

চছজঝঞঃ ইংলিশে লেখা চাইনিজ নামের উচ্চারণের ক্ষেত্রে কয়েকটা হাতুড়ে পদ্ধতি বলি।

নামের শুরুতে যদি c, q, z, zh থাকে তাহলে সেটার উচ্চারণ সাধারণত ‘চ’ হবে। যেমন, cixi = চিশি, qingdao = চিঙদাও, zuhai = চুহাই, zheng = চেঙ। বলতে পারেন, Hangzhou = হাঙচোও কেন? এখানে zh তো নামের মাঝখানে। আসলে নামটা Hang Zhou (হাঙ চোও)। চীনা নামগুলো রেলগাড়ীর মতো লম্বা না, সিলেবল অনুযায়ী আলাদা আলাদা।

নামের শুরুতে যদি ch থাকে তাহলে সেটার উচ্চারণ সাধারণত ‘ছ’ হবে। যেমন chen = ছ্যান।

নামের শুরুতে যদি x থাকে তাহলে সেটার উচ্চারণ সাধারণত ‘শ’ হবে। যেমন xian = শিয়ান।

নামের শুরুতে যদি p থাকে তাহলে সেটার উচ্চারণ সাধারণত ‘ব’ হবে। যেমন Lin Piao = লিন বিয়াও।

এসবের ব্যতিক্রম বা উলটো ঘটনা যে নেই তা নয়। তবে সেসব বিস্তারিত জানতে গেলে আপনাকে ভাষাটা শিখতে হবে। এই বয়সে ভাষা শিক্ষার স্কুলে গিয়ে চার/পাঁচ বছর পাঠ নেবেন নাকি একটা চাইনিজ বান্ধবী জোটাবেন সেটা আপনার বিবেচনা।

হিমু এর ছবি

সুতরাং ব্লগে লেখা প্রকাশের লিমিটেশনগুলো মাথায় নিয়ে এমন সম্ভাবনাময় কাহিনীটিকে দয়া করে চেপেচুপে আংটির বাক্সে ঢুকানোর চেষ্টা করবেন না।

সহমত।

সত্যপীর এর ছবি

জীবন কঠিন। এই গপ বেশি লম্বা হবে না তবে ভবিষ্যতে লালু/লাও বাঙ সিরিজের আরও গপ আসবে। ভয় নায়। দিব্যচক্ষে দেখতেছি দুই ধূম ব্যাপারী মোজাম্বিক থেকে ফরমোসা ঘুরে বেড়াইতেছে। গপস আর কামিং।

..................................................................
#Banshibir.

সত্যপীর এর ছবি

শেষ থেকে শুরু করি। চছজঝঞ শিখলাম। ব্যাপক বৈতরণী। আমি সাধারণত চৈনিক নাম একটা চৈনিক বানানে বের করি, তারপর সেইটা গুগল ট্রান্সলেটে বাজায় শুনি কি কয়। চ বর্গীয় মেথড থিকা সহজতর। ভবিষ্যতে দুই মেথডই টেরাই করে নামধাম দিবনে। ভুলভাল হইলে কয়েন নগদে পরিবর্তন।

বান্ধবী মেথডে এক চিমটি উৎসাহ উদ্দীপনা এবং একবুক হতাশা নিয়ে না ভোট দিলাম। বুড়া হাড়। ওল্ড বোন্স।

হাডসন্স বেঃ আইজ্ঞা হ। লাখে লাখে মরে প্রাণী কাতারে কাতার। বে কোম্পানী হর্নক্লিফের দেশের বাড়ি নিউপোর্ট রোড আইল্যান্ডের অতি কাছে। এই সিরিজের গল্পে (এই গল্পে না কিন্তু) বে কোম্পানীর লোকও আইসতে পারে দূর ভবিষ্যতে।

লালু ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদিঃ হাঁ ভাই। সকলই আসিবে, তবে হয়তো এই গল্পে না। লালুর হিস্টোরি অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ, সে বড় হয়েছে গাজীপুর আফিম ফ্যাক্টরিতে। তার ফ্ল্যাশব্যাক মানেই ভারতীয় উপমহাদেশে আফিম উতপাদন/প্রস্তুতকরণের গল্প। সেই গল্প অবশ্যই আসিবে। লালু ইংরাজের বদলে মার্কিন জাহাজে কেন সেইটাও বিরাট ইতিহাস। কলিকাতা বন্দরে হুলিয়া জারি আছে।

চ্যানঃ অন পপুলার ডিমান্ড তারে রাইখা দিব ভাবতেছি।

হর্নক্লিফঃ আইজ্ঞা হ। সে আমার অ্যান্টিহিরু। সেও সিরিজে থাকব, ভায় নায়। তার একটা ইংরেজ কাউন্টারপার্ট ও লাগব ভবিষ্যতে।

গল্পের আয়তন ও আংটির বাক্স থিউরিঃ বিবিধ আংটির বাক্স মিলে বড় বাক্স হয়। সমস্যা নাই। এইটাকে উপন্যাস বানানো যদি সম্ভব হইত আমি অবশ্যই বানাতাম। কিন্তু আমার সময় নাই। তাই দশ পর্বের উপন্যাসের বদলে দশটা ছোটগল্প লিখব। সিরিয়ালি না পড়লেও ক্ষতি নাই, কেবল কয়টা ইস্টার এগ মিস যাইব এই আর কি। ক্যাটেগরি দেখেন দিছি লালু/লাও-বাঙ। সেই ক্যাটাগরিতে ভবিষ্যতে আরও গপ আসবে। দরিয়ার জীবন কঠিন। লাইফ ইন দীজ ট্রেচারাস সীজ এট সেটেরা এট সেটেরা।

সংযোজনঃ Enrica Lexie'র ঘটনা জানা ছিল না। ইন্টারেস্টিং লাগল। বছর দশেক পরে সমস্ত পেন্ডিং গপ শেষ করার পরে ভাবতেছি সাইন্স ফিকশনে হাত দিমু। প্লটঃ মার্কিন রাশান জার্মান জাপানি চাইর নভোচারী মঙ্গলগ্রহে গেছে। জার্মান নারী, তাকে ভালুবেসে জাপানি আর মার্কিন ডুয়েল লড়ল রাশানের নভোপিস্তল দিয়া।
মার্কিন পাইল অক্কা। এখন মঙ্গলগ্রহে ঘটিত অপরাধ মীমাংসা হইব কার হাইকুর্টে? একটি সামাজিক অ্যাকশনধর্মী সাইন্স ফিকশন।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

পেন্ডিং গল্প আসলে একটা অনিঃশেষ ভাণ্ডার। দশ কেন, দশ সহস্র বছরেও সেটা শেষ হবার নয়। ধরুন, আপনি সাধারণত যে সময় কালের ওপর গল্প লেখেন সে সময়কার উত্তর, উত্তর-পশ্চিম আর পূর্ব ভারতের গল্পের বাইরে বাংলা, উত্তর-পূর্ব ভারত, দক্ষিণ ভারত আর দক্ষিণ হিমালয়ান এলাকার গল্প যদি লিখতে নেন তাহলে হাজার হাজার গল্প হবে। আর সময়কাল যদি একটু এপাশে ওপাশে বাড়ান তাহলে হাজারকে হাজার দিয়ে গুণ করতে হবে। নিম্নবর্গের মানুষের প্রেক্ষিত থেকে এই গল্পগুলো আসলেই লেখা দরকার।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আপনের নামধাম জানতে মন চায়।

সত্যপীর এর ছবি

আমার উপর নাই ভুবনের ভার, এত সহস্র গপের চিন্তা আমার নাই। আমি মোগল এবং ঔপনিবেশিক ভারতে গ্যাঁট হয়ে বসছি। মেলা উপাদান সেইখানে। আর আফিম নিয়া গপ তো আসবেই। তদুপরি আমার মেয়ে জিরাফের ভক্ত, তাকে চীনে বাংলার জিরাফের গল্প শুনানোর পরে সে বলছে আরও জিরাফের গল্প বলতে। অতএব অদূর/দূর ভবিষ্যতে জিরাফের গল্প লিখতে হবে হোয়াইট ফ্যাং স্টাইলে।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

ভুবনের ভার কারও নয়। তবে লোকে সেধে বা নিজের ইচ্ছায় অনেক ভার নেয়। যেমন, আপনি স্বেচ্ছায় আপনার পছন্দের সময়কালের গল্প লেখার ভার নিয়েছেন। গল্পের প্লট কোথা থেকে, কখন যে আসে তা কে বলতে পারে! তাই পেন্ডিং গল্পের ভাণ্ডার কখনো শেষ হয় না। এক মুঘলদের ৩৩১ বছরের শাসনামল নিয়ে ৩৩,১০,০০০ গল্প গল্পকারের মাথায় ঘাই মারবে। যাকগে, নির্ভার হয়ে গল্প লিখে যান তাহলে আমরা খুশিত।

এক ভারতীয় মহারাজার নাকি বিচিত্র পশুপাখীর শখ ছিল। একবার সে আফ্রিকা থেকে চিতা আর আরব দেশ থেকে উট আমদানী করার আদেশ দিয়েছিল। জাহাজে কী করে যেন চিতা আর উটনী'র ভাব ভালোবাসা হয়ে যায়। ব্যাস! কয়েক মাস পরে জাহাজ যখন ভারতের বন্দরে ভিড়ল তখন দেখা গেল চিতা-উটনী দম্পতির সাথে তাদের একটা বাচ্চাও আছে যেটা উটের মতো উঁচু, লম্বা আর চিতার মতো গায়ের রঙ, ফোঁটা। এই বাচ্চাই হচ্ছে জিরাফ। বাপের সোয়াহিলি আর মায়ের আরবী ভাষা তার মাথায় গিটঠু খেয়ে যাওয়ায় সে আর ঠিকঠাক মতো কথা বলতে শেখেনি। লণ্ঠন উৎসবের দিন চীনারা ফানুস উড়িয়েছিল। জিরাফ গলা বাড়িয়ে সেটা দেখতে পেয়ে হিমালয় টপকে চীন রওনা দেয়। পথে হিমালয়ের তুষারকে আইসক্রীম মনে করে একগাদা খেয়ে ফেলে ঠাণ্ডা লাগিয়ে ফেলে। শেষে ইয়েতিরা আরগালির লোম দিয়ে বানানো বড় মাফলার পরিয়ে তাকে ইয়াকের দুধের মাখন মেশানো গরম তিব্বতী 'পো চা' খাইয়ে সুস্থ করে তোলে। জিরাফ তো সুস্থ হয়ে আবার দৌড় দিল ফানুসের পিছু পিছু। এদিকে হয়েছে কি আরেক কাণ্ড! ...............
ভাতিজীর জন্য জিরাফের গল্পের অভাব হবে নাকি!

সত্যপীর এর ছবি

আরে দারুণ জিরাফের গল্প হইছে হাততালি । বারোয়ারি গল্প লেখা দরকার দেখতেছি এই জিরাফের অ্যাডভেঞ্চার নিয়া। এক প্যারা আপনে এক প্যারা আমি। টানতে টানতে রবার ব্যান্ড।

..................................................................
#Banshibir.

সত্যপীর এর ছবি

২। ফার (সম্ভাব্য উৎসঃ মাঞ্চুরিয়া/কোরীয় উপদ্বীপ/সাইবেরিয়া),

হর্নক্লিফের ফারের ঘোরতর সম্ভাব্য উৎস ক্যানাডা। হাডসন্স বে কোম্পানী।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

সেই হাডসন্স বে কোম্পানি দেখি এখনো ধুমায়া ব্যবসা করতেছে, স্টকের দামও দেখি উর্ধ্বগতি --
http://www3.hbc.com/

সত্যপীর এর ছবি

অবশ্যই হাডসন্স বে ধুমায় ব্যবসা করতেছে, এই সেদিনও মলে গিয়া তাদের লিফটে চড়লাম আর মুচকি মুচকি হেসে মনে মনে কইলাম তুমি কেন ঘষো আমি তাহা জানি। হাডসন্স বে ব্যবসা করতেছে, অরিজিনিয়াল ধূম সওদাগর জার্ডিন অ্যান্ড ম্যাথিসন ব্যবসা করতেছে, ধূম সওদাগরের মহাজন হংকং সাংহাই ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন এইচেসবিসি ব্যবসা করতেছে। বিশ্বের পয়লা নম্বুরি ড্রাগলর্ড কুইন ভিক্টোরিয়া কিম্বা ধূম সওদাগর ওয়ারেন ডিলানোর নাতি মার্কিন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের কত নামধাম। সকলে আছে তো ভালই হাসি

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

জার্ডিনরা জাহাজের ব্যবসার দালালীও করে (শিপিং এজেন্ট)। খোদ ঢাকাতে তাদের অফিস আর রমরমা ব্যবসা আছে। এইচএসবিসি তো ব্যাংকের ব্যাংক! সারা দুনিয়া জুড়ে তার টেকাটুকা ইধারউধার করার কারবার আছে। সাথে তেজারতি কারবার তো আছেই।

নানা নামে, নানা আকারে, নানা রকমের ধূমের ব্যবসা নানা সরকারেরা করে যাচ্ছেই যাচ্ছেই যাচ্ছেই।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এরকম 'কটঠিন' লেভেলের অতিথি খুব কমই পেয়েছি আমরা সচলে। বেশিরভাগ নাম ছাড়া অতিথিই এসে উল্টাপাল্টা বলে কেটে পড়ে, অথবা "কিন্তু/ তবে" বলে ত্যানা প্যাঁচায়। আজকের অতিথি চমৎকার সব ফ‌্যাক্ট বললেন, উনার জ্ঞানের লেভেল দেখে টাশকি খাবার উপক্রম। এমন অতিথির বিচরণ হোক সচলে সবসময়।

মন মাঝি এর ছবি

শুরু হোক এবার উমাধুমা

ধূম-ধাড়াক্কা!!!! গুল্লি

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

কথা সত্য। কী আছে জীবনে।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর একটা গল্প, সুপাঠ্য।

----মোখলেস হোসেন

সত্যপীর এর ছবি

..................................................................
#Banshibir.

মাহবুব লীলেন এর ছবি

একটা কথা হইল? পরের পর্বটাই না হয় আগে ছাপাইতেন

সত্যপীর এর ছবি

আপনে পরের পর্বের কমেন্টটাই না হয় এইখানে দিতেন...

..................................................................
#Banshibir.

সোহেল ইমাম এর ছবি

চমৎকার, আরো চলুক। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সত্যপীর এর ছবি

ধূমায়িত পর্ব আসতেছে।

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

লক্ষণীয় যে হর্নক্লিফের জাহাজে নাট্মেগ বা জায়ফল নাই। সম্ভবত সে তার মালামাল চীনে বিক্রি করবে, ইউরোপে নয়, এই জন্য। কিন্তু কিছুকাল আগেই ওলন্দাজরা বাটাভিয়ার বান্দায় এমন কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে যে, তার সাথে হয়ত লালুর একটা সুদূর যোগাযোগ আছে। এই কাহিনীতে বান্দা থেকে রিলেভেন্ট একটা চরিত্র আমদানি করলে মন্দ হয় না।

আরবরা অত্যন্ত চড়া দামে ভেনিসের সওদাগরদের কাছে জায়ফল বেচত, আর ভেনিসবাসী তা আরও চড়া দরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে নিয়ে বেচত। পোলাউ রান্নার জন্য নয়, জায়ফল তখন ইউরোপে নানা আজগুবি কাজের জন্য ব্যবহার করা হত যাই হোক। অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে সপ্তদশ শতকে জায়ফলের একমাত্র উৎপাদন স্থল বান্দায় পৌঁছতে এবং তার নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে সক্ষম হয় ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এতদিন জায়ফলের যে একচেটিয়া ব্যবসা আরবরা করেছে, এখন থেকে সেই রকম একচেটিয়া কারবার করবে তারা। কিন্তু বান্দার স্থানীয় জনগণ ডাচদের এই হাউস পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন সারা পৃথিবীতে শুধু বান্দার কয়েকটি দ্বিপেই জায়ফলের চাষ হত, এরা জায়ফলের চাষ প্রনালী কঠোরভাবে গোপন রাখতো। ডাচদের তারা সাফ জানিয়ে দেয়, আমাদের জায়ফল আমরা ইচ্ছা হলে তোমাদের কাছে বেচব, ইচ্ছা হলে অন্যদের কাছেও বেচব। পোষাইলে নেও, না পোষাইলে রাস্তা দেখ। ডাচরা চাপ দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু কোন লাভ হয় না। অবশেষে তারা ভয়ানক এক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। পাইকারি গণহত্যা চালিয়ে বান্দা দীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপের প্রায় সমূদয় মানুষকে হত্যা করে। সামান্য কিছু মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তাদের কাছ থেকে জায়ফল চাষের কায়দা শিখে নেয়ার জন্য। তারপর হলান্ড থেকে সুপারভাইজার এবং বাংলা থেকে পর্তুগীজদের ধরা বাঙালি দাসদের কিনে নিয়ে আসে বান্দা দীপপুঞ্জে। পরবর্তী দুশো বছর শুধু এরাই জায়ফল চাষ করত।

সত্যপীর এর ছবি

ধরছেন ঠিক, হর্নক্লিফের টার্গেট চীনে বেচাকেনা করা অতএব বাটাভিয়া জাভাদ্বীপের মাল নাই।

বান্দার কাহিনী দেখি অতি ভয়ানক। হ গল্পে বান্দা হতে পলায়িত এক চরিত্র হাজির করলে মন্দ হয়না, যে কিনা ব্যাপক ওলন্দাজবিরুধী। কিম্বা আপনিও একটা ট্রাই নিয়া দেখেন গপ নামাতে। একবার হাত সড়গড় হয়ে আসলে ইতিহাসভিত্তিক গপ লেখার নেশা আপনাকেও পেয়ে ধরবে গ্যারান্টি।

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আমি তো আপনের গল্পের নেশায় বুঁদ হয়ে আছি, নিজে লিখতে গেলে সেই নেশা ছুটে যাবে। উপরে অতিথি ভাই কিংবা বোন কিন্তু সঠিক পরামর্শই দিয়েছে। একটু পরিকল্পনা করে লিখলে অনায়াসে এগুলো বই হিসেবে নামানো সম্ভব, আর আমার মনে হয় এগুলো পাঠক সমাদৃত হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই গল্পের কাছাকাছি সময়ে ব্রিটিশরা সেন্ট ভিনসেন্ট আর গ্রেনাডাতে জায়ফলের চাষ শুরু করে দিয়েছে। গ্রেনাডা জায়ফল উৎপাদনে দুনিয়াতে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। ঐসব জায়গায় চাষাবাদের জন্যও ভারত থেকে প্রচুর দাস নেয়া হতো। স্যার বিদিয়াধর সূরজপ্রসাদ'রা তো আর আকাশ থেকে পড়েননি, তাদের দাদা-পরদাদা বা তারও আগের পুরুষকে ভারত থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমেরিকাতে যখন দাস প্রথা উচ্ছেদ করা হয়ে গেছে ব্রিটিশরা তার বহু পরেও কাজ দেবার নাম করে বা স্রেফ ধরে নিয়ে ভারত থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে ভারতীয় দাসের ব্যবসা করেছে।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

জয়ফলের পেছনে এত ঘটনা কে জানতো? আর খাবো না পোলাওতে।

সত্যপীর এর ছবি

জায়ফল আজকের দুনিয়ায় অত খারাবি না বলেই ধারণা করি। পারলে পাম অয়েল বন্ধ করেন, যদি পাম অয়েল খাওয়ার অভ্যাস থাকে। ইন্দোনেশিয়া উজাড় কইরা দিতেছে পাম অয়েল বানানোর জন্য।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

ঐ যে বলে না 'আমার নাতিপুতিসুদ্ধা ঠ্যাঙ্গের উপ্রে ঠ্যাঙ্গ তুইল্লা খাইবো'! ইন্দোনেশিয়ার অবস্থা হচ্ছে অমন, রোজগারের চেষ্টা না করে ভিটেমাটিসুদ্ধ বেচে খাওয়ার সংস্কৃতি। ইন্দোনেশিয়াতে প্রাকৃতিক সম্পদ কী নেই!! তেল-গ্যাস-কয়লা-লোহা-বক্সাইট, কাঠ আর অন্যান্য বনজ সম্পদ, উর্বর মাটি, সমুদ্রভরা সম্পদ, পর্যটকদের চোখ উলটে দেবার মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া কি ইহজন্মে এসব সম্পদ কাজে লাগিয়ে পণ্য তৈরি করে বাকি দুনিয়ায় বেচেছে? নাকি এসব সম্পদকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে? খনি-বন-ভূমি বিদেশী লুটেরাদের হাতে তুলে দিয়ে নিজেরা (সামরিক শাসক, সামন্ত প্রভু, ওয়ারলর্ড আর রাজনৈতিক নেতারা) আমোদ আয়েশে লিপ্ত থেকেছে। এদিকে দেশের সাধারণ মানুষ দুর্ভিক্ষে মরেছে, গৃহকর্মী-মজুর-যৌনকর্মী-দাসশ্রমিক হয়ে অন্য দেশে গেছে। গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার আগাগোড়ায় দুর্নীতি এমন রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছেছে যে লোকে ঘুষ-কমিশন-লুটকে আর দুর্নীতি বলে বিশেষ মনে করে না। বোর্নিও/কালীমন্থন যে বিশাল, সমৃদ্ধ দ্বীপ অমন দেশে গোটা দুনিয়াতে খুব কম আছে। এখানে ব্রুনেই তেল আর গ্যাস তুলে সুলতানের দামী গাড়ীর বহর যোগাচ্ছে। হিন্টারল্যান্ড সাবাহ্‌ আর সারওয়াক মেইনল্যান্ড মালয়েশিয়ার শিল্পায়ণের কাঁচামাল যুগিয়ে যাচ্ছে। আর কালীমন্থন ঝেড়েপুঁছে বিক্রি করে সুমাত্রান-জাভানীজরা ফূর্তি করছে, দক্ষিণ আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদের মদদ জুগিয়ে যাচ্ছে।

আয়নামতি এর ছবি

চলুক চলুক চলুক
বেহরমের মত জায়গা মত ব্রেক কষেন! ধমাধম ধূম টু চলে আসুক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।