বড় বড় শব্দযুক্ত গল্প

মুখফোড় এর ছবি
লিখেছেন মুখফোড় (তারিখ: রবি, ২৩/১১/২০০৮ - ১০:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি প্রকৃতিপ্রেমিক। প্রায়ই পার্কে বসিয়া পাখি দেখি। ছোট পাখি, মাঝারি পাখি, বড় পাখি।

আমার পার্শ্বে যখন বৃদ্ধ ভদ্রলোকটি আসিয়া বসিলেন, তখন তাঁহার বিদঘুটে প্রশ্নের জবাবে এই উত্তরই দিয়াছিলাম।

বৃদ্ধ শুধাইয়াছিলেন, "ইয়ং ম্যান, আপনি এই পার্কে নিরালায় বসিয়া কী সন্ধান করিতেছেন?"

আমি উত্তরটি দিয়া ঠোঁটে একটি মৃদুমন্দ হাসির দোলা ফুটাইয়া তুলিয়াছিলাম। যুগের সাথে তাল মিলাইয়া আমি চলি না, এবং তাহা লইয়া আমি গর্বিত। আমার বয়সী যুবারা যেইখানে অবসরে আড্ডা মারে, গুলতানি দেয়, নারী লইয়া ফূর্তি লোটে, কিংবা ব্লগ নামক এক অলীক স্থানে রাজাউজির বধ করে, আমি সেইখানে পার্কে বসিয়া প্রকৃতির রংরূপরস উপভোগ করি।

বৃদ্ধ আমার জবাব শুনিয়া হাসিয়া ফেলিলেন। বলিলেন, "আপনি প্রকৃতিরসিক, প্রকৃত রসিকও বটেন। আমিও এককালে এই কর্ম করিতাম। পাখি দেখিতাম।"

আমি শুধাইলাম, "এখন দেখেন না?"

বৃদ্ধ কহিলেন, "এখন আর দেখিয়া কী হইবে? আমার কী আর সংবিধান সমুন্নত হয়?"

পাখির সহিত সংবিধানের সম্যক সম্পর্ক নির্ধারণ করিতে না পারিয়া বোকার মতো কহিলাম, "মানে?"

বৃদ্ধ চক্ষু টিপিয়া কহিলেন, "দেখুন ঐ ছোট্ট পাখিটির দিকে?" বলিয়া অঙ্গুলি নির্দেশ করিলেন দূরে একটি যুগলের দিকে। তাহারা ঘাসের উপর গাছের ছায়ায় বসিয়া নিরিবিলি প্রেমালাপে মগ্ন। মেয়েটি কিশোরী, তাহার বক্ষ তেমন প্রস্ফূটিত নহে।

বৃদ্ধ একে একে মাঝারি ও বড় পাখিও সনাক্ত করিলেন। তাঁহার ইঙ্গিত বুঝিয়া আমার কর্ণমূল আরক্ত হইলো। বুঢ়া তো অতিশয় ফাজিল প্রকৃতির। গুরুজনসুলভ সুশীল নহে।

বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, "তাছাড়া দ্রবমূল্য চড়চড় করিয়া বাড়িয়া গিয়াছে। সংবিধান সমুন্নত হইলেও দামে পোষাইতো না।"

আমি এইবার "সংবিধান সমুন্নত" হইবার ব্যাপারে আবছা একটা আন্দাজ করিতে পারি।

বৃদ্ধ বকিয়া চলেন। "এককালে আমিও আপনার মতোই পার্কে আসিয়া পাখি দেখিতাম। নির্বাচন করিতাম। দরদাম করিয়া পোষাইলে অধিবেশন বসাইতাম। তখন আমি আরো শক্তপোক্ত ছিলাম, প্রায়ই পাখিরা অনুনয় বিনয় করিতো অধিবেশন মুলতুবি রাখিতে। আমি শুনিতাম না। কড়ি ব্যয় করিয়া অধিবেশন বসাইতেছি, মুলতুবি আবার কী? একেবারে উভয় পক্ষের উন্নয়নের জোয়ার বহাইয়া তারপর ক্ষান্ত দিতাম। কী সব দিন গিয়াছে!"

আমি বাকরুদ্ধ হইয়া পড়িলাম বৃদ্ধের স্পর্ধায়।

তিনি স্বপ্নালু চোখে বলিলেন, "তখন আমার সংবিধান ঘন ঘন সমুন্নত হইতো। তাহার পর বয়স হইলো। সংবিধান মাঝে মাঝে লঙ্ঘন হইতে লাগিলো। বাধ্য হইয়া খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক মিশাইতে হইতো।"

আমি ভাবিলাম, হতভাগাটার গালে প্রকান্ড এক কীল মারিলে কেমন হয়?

বৃদ্ধ লম্পটটি বকিতেই লাগিলেন, "ইদানীং আসি অভ্যাসের টানে। মাঝে মাঝে সমবয়সী বন্ধুবান্ধব আসিয়া আব্দার ধরে। বলে আপনি বাছাই করিয়া দিন। অভিজ্ঞ মানুষ আপনি। আপনিই আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আমি রাগ করি, বলি খবরদার বাজে কথা বলিবেন না, তাহারা হাসে।"

আমি ছটফট করিতে লাগিলাম। ব্যাটা লুচ্চা।

বৃদ্ধ মৃদু হাসিয়া কহিলেন, "প্রার্থীর মান অবশ্য ইদানীং বাড়িয়াছে। তাহাদের আসনও আগের তুলনায় উন্নত। তবে তাহাদের সহিত তাল মিলাইতে গেলে এখন এই বয়সে আমার সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।"

আমি রাগের চোটে উঠিয়া পড়িয়া কহিলাম, "আপনার লজ্জা হওয়া উচিৎ ...!"

বৃদ্ধটি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, "এই হইলো আপনাদের দোষ। নিজেরা নোংরায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত হইয়া অপরকে নোংরা বলিয়া গালাগালি করেন।"

আমি কী আর বলিবো, চলিয়া আসিলাম পার্ক হইতে।


মন্তব্য

আলমগীর এর ছবি

সংবিধান নিয়া তো চিন্তায় ফালাইয়া দিলেন।
লেখাটা আসলেই বড় বড় শব্দভর্তি।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সংবিধান সমুন্নত রাখায় সচেষ্ট থাকুন।

দ্রোহী এর ছবি

এইটা আমার সবচে প্রিয় গল্প। হাসি


কী ব্লগার? ডরাইলা?

তারেক এর ছবি

ভয়াবহ অবস্থা দেখি ! হা হা হা
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

হিমু এর ছবি

আমাদের নিরীহ ভালোমানুষ পিপিদার নিক নিয়ে এইরূপ ছিনিমিনিক্রীড়ার বিরুদ্ধে জানাই তীব্র পেতিবাদ।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সৌরভ এর ছবি

দিন যায়। কিন্তুক মুখার পুরানো গল্প তো দেখি পুরানো হয় না। নতুন কনটেক্সটেও দিব্যি খাটে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সংবিধান সমুন্নত রাখুন
ঈমান শক্ত রাখুন
জয় আমাদের সুনিশ্চিত...

লেখায় জাঝা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বাই হুকিং অর বাই কুকিং সংবিধান সমুন্নত রাখিতে হইবেক।
কিন্তু গল্পের বুড়া কি তার 'সমবয়সী' বন্ধুবান্ধবদের থেকে সংবিধানের প্রতি কম যত্নশীল?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বাই হুক অর বাই সেফটিপিন- সংবিধান সমুন্নত রাখতেই হবে! হো হো হো
দুর্দান্ত লাগল লেখাটা। অসাধারণ! চলুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সংবিধান সমুন্নত থাকবেই... এনশাল্লাহ!

সবজান্তা এর ছবি

বেশ ! কামাল হোসেন তাহলে একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ হো হো হো


অলমিতি বিস্তারেণ

স্পর্শ এর ছবি

ঈশ্বর আমাদের সংবিধান সমুন্নত রাখার তৌফিক দান করুণ।
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ধুসর গোধূলি এর ছবি
কর্ণজয় এর ছবি

darun * 10

রেজওয়ান এর ছবি
রেজওয়ান এর ছবি
প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমার জন্য লেখাটা কঠিন হইয়া গেল। কেহ কি ব্যাখ্যা করিবেন?

ধুসর গোধূলি এর ছবি
রানা মেহের এর ছবি

জটিল লেখা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তানবীরা এর ছবি

"এই হইলো আপনাদের দোষ। নিজেরা নোংরায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত হইয়া অপরকে নোংরা বলিয়া গালাগালি করেন।"

কিছু বলার নাই

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সাইফ এর ছবি

তিনি স্বপ্নালু চোখে বলিলেন, "তখন আমার সংবিধান ঘন ঘন সমুন্নত হইতো। তাহার পর বয়স হইলো। সংবিধান মাঝে মাঝে লঙ্ঘন হইতে লাগিলো। বাধ্য হইয়া খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক মিশাইতে হইতো।"

গুল্লি, পুরা গুল্লি, ১ বন্দুক ২ গুলি হাতে দেশবাসী ঝাপাইয়া পড়ুন সংবিধান "খাড়া" করতে।

বোহেমিয়ান এর ছবি

সেই রকম!! সংবিধান নিয়া আপাতত কিছু কমু না!!
__________________________
হৃদয় আমার সুকান্তময়
আচরণে নাজরুলিক !
নাম বলি বোহেমিয়ান
অদ্ভুতুড়ে ভাবগতিক !

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

পদ্মজা এর ছবি

অহরহ শোনা সংবিধান বিশেষজ্ঞদের নাম মনে পড়তেই, হাস্তেহাস্তেগড়াগোড়ি। হাসি

মনজুর এলাহী এর ছবি

সংবিধান সম্মুন্নত থাকুক। প্রয়োজনে রাসায়নিকের সরবরাহ উপযুক্ত প্রকারে করা হইবেক।

অসাধারণ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।