পাঠকের কাঠগড়ায় ব্লগার মোরশেদ ভাই

জ্বিনের বাদশা এর ছবি
লিখেছেন জ্বিনের বাদশা (তারিখ: সোম, ০৯/০৩/২০০৯ - ১০:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শমন শেকল ডানাশমন শেকল ডানা
হাসান মোরশেদ, সব্যসাচী লেখক, তবে তাঁকে আমি "ব্লগার" নামেই ডাকতে চাই। কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার -- এসব পরিচয়ে হয়তো একসময় বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে তিনি সুপরিচিত হবেন, তবে আপাততঃ সচলায়তনের অঙ্গনে কিছুটা গায়ের জোরে হলেও আমি মোরশেদ ভাইকে "ব্লগার" বলে ডেকে আত্মতৃপ্তি পেতে চাই ;)।

কবিতা বলুন, গল্প বলুন আর অনুবাদই বলুন, এক অনন্য মাদকতার স্বাদ পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। ট্রেনে বা রিক্সায় বসে ল্যাপটপ বা মোবাইল স্ক্রীনে সচলের পাতায় হাসান মোরশেদের লেখা পড়তে পড়তে নিজের অজান্তেই আপনি চলে যাবেন গুনগুন সুরে বিজিএম বাজতে থাকা কোন নিরিবিলি রেঁস্তোরায় অথবা নিজের ড্রয়িংরূমে একান্ত নিজের মতো করে চাওয়া কোন পরিবেশে, হাতের নাগালে অনুভব করবেন পানপাত্রের উপস্থিতি -- মোরশেদ ভাইর লেখাগুলো এরকমই, প্রত্যেকটি লেখাই যেন একেকটি পানপর্ব। ব্যক্তিগতভাবে আমি মোরশেদ ভাইর কবিতার অনুবাদ আর ছোটগল্পগুলোর ভীষন ভক্ত একথাটা জানিয়ে রাখার লোভটা সামলাতে পারছিনা।

এবারের বইমেলায় এসেছে হাসান মোরশেদের আলোচিত উপন্যাস, "শমন শেকল ডানা"। আলোচিত যেজন্য তা আমরা সবাই মোটামুটি জানি, তাও পাঠকদের কেউ যদি না জেনে থাকেন সেজন্য সংক্ষেপে বলে রাখি, বইটি প্রকাশিত হবার কথা ছিলো গত বছরের বইমেলায়। কিন্তু সরকারী চোখরাঙানো থেকে শুরু করে নির্যাতন পর্যন্ত যে কোন কিছুর শিকার বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট যে কেউই হতে পারেন বলে একটি আশংকা তৈরী হবার কারণে বইটি সেবার প্রকাশিত হতে পারেনি। একই সাথে এবার প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আরেকটি বই, অনুবাদ, "দানবের রূপরেখা" (অরুন্ধতি রায়ের সাক্ষাৎকার)।

পাঠকেরা একই সাথে "শমন শেকল ডানা" আর "দানবের রূপরেখা"র ভেতরের কথাগুলো নিয়ে লেখকের সাথে যেমন কথা বলতে চাইবেন, তেমনি হয়ত গতবছর এদের একটির প্রকাশের পেছনের বাঁধাগুলো নিয়েও নিশ্চয়ই কথা বলতে চাইবেন। আবার বইদুটো লেখার পেছনে লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি নিয়েও নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন। এসব মিলিয়েই আজকের আয়োজন।

পাঠকের কাঠগড়ায় ব্লগার মোরশেদ ভাইকে আহবান জানাই।

_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/_/

এই সিরিজের আগের পোস্ট:
১. পাঠকের কাঠগড়ায় বিপ্লব রহমান

২. পাঠকের কাঠগড়ায় কবি সুমন সুপান্থ

৩. পাঠকের কাঠগড়ায় মুজিব মেহদী

৪. পাঠকের কাঠগড়ায় সামরান হুদা, আমাদের শ্যাজাদি


মন্তব্য

রেনেট এর ছবি

গত বছর, সচল ব্যান হওয়ার আগে আগে মোরশেদ ভাইয়ের একটা অডিও সাক্ষাতকার নেয়ার পরিকল্পনা হচ্ছিল। পরে ব্যান ঝামেলায় চাপা পরে যায় বিষয়টি...
যাহোক, সচলে বেশ অনেকদিন হলেও মোরশেদ ভাইয়ের লেখা নিয়মিত পড়ছি অল্প কিছুদিন হল (আগে ভাবতাম সিনিয়র লেখক, নিশ্চয়ই ভারী ভারী লেখা লিখেন, তাই ভয়েই ঢুকতাম না হাসি )। তবে, অল্প কদিনে অল্প কটি লেখা পড়ে যা উপলব্ধি হল, তা হল, আমি একটা আস্ত গাধা। এতদিন উনার লেখা পড়িনি।
যাহোক, আমার প্রশ্ন হলো, মোরশেদ ভাই এত কম কম লিখেন কেন?
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ওক্কে, রেনেট কে দিয়েই কাঠগড়ার জবানবন্দী শুরু হোক তবে ।

কেনো কম লিখি?
কারন লিখতেই হবে,নিয়মিত লিখে পাঠকের চোখের সামনে থাকতেই হবে, চর্চা রাখার জন্য দিনে অন্ততঃ দু ঘন্টা একটা কিছু লিখতেই হবে- এরকম কোন বাধ্যবাধকতায় আমি নিজেকে জড়াইনি ।

লেখালেখি আমার নিজের সাথে নিজের একটা খেলা । কোন প্রস্তুতির মধ্যে আমি থাকিনা । লালন ফকির তার গানগুলোকে মাছের পোনার ঝাঁকের সাথে তুলনা করেছিলেন- যখন আসে তারা ঝাঁকে ঝাঁকে আসে ।

তো আমি ঐ বোধ, ঐ তাড়নার জন্য অপেক্ষা করি । নিজ থেকে যখন আসে, ধরা দেয় সেটা উপভোগ করি ।

এখনো হয়তো ঐ তাড়নাটুকু ফুরিয়ে যায়নি, তাই মাঝে মাঝে লিখি । একদিন ঐটা ফুরিয়ে যাবে । আমি আর লিখবোনা । নিজেকে বাধ্য করতে আমার ভাল্লাগেনা ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফারুক হাসান এর ছবি

হাসান মোরশেদ, আপনার গল্পগুলোয় একটা ঠান্ডা আমেজ থাকে, তাপমাত্রা তেমনটা উঠে না কখনোই। মনে হয় কোথায়ো আগুন জ্বলছে, কিন্তু পাঠক হিসেবে তার আঁচ আমি চোখে মুখে পাই না, মনে হয় কেউ আমাকে গল্প বলে জানিয়ে দিয়ে গেল যে কোথায়ো আগুন লেগেছে। আপনি কি এই অভিমতের সাথে একমত?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আন্তন চেখভ- বলা হয় যার কোটের পকেট থেকে সোভিয়েত স্বর্নযুগের অনেক কথাসাহিত্যিক বের হয়ে এসেছেন- তার একটা কথা আছে এরকম যে- লেখক ডাক্তারদের মতো সমস্যার সমাধানে প্রেসক্রিপশন লিখবেননা বড়জোর চিত্রকরের মতো ঘটনার ছবি আঁকবেন ।

আমি নিজে যখন পাঠক তখন খুব উচ্চকিত কিংবা একেবারে ঠাসবুনোটের লেখা, যেখানে পাঠক হিসেবে আমার নিজস্ব বিনির্মানের জায়গা অবশিষ্ট নেই, লেখক সব বলে দিয়েছেন- তেমন লেখা আমাকে টানেনা । আমার কিছুটা শূন্যতা ভালো লাগে, যে শূন্যতা পাঠক তার পাঠকালীন ইমাজিনেশন দিয়ে পূর্ন করবেন ।

হতে পারে অবচেতনভাবেই এই সতর্কতাটুকু কাজ করে যখন আমি নিজে লিখছি । আগুন লেগেছে কোথাও, জানিয়ে গেলাম । শিখা তার কমলা না নীল সেটা পাঠক আপনি নিজেই রচনা করুন না?

আপনার অভিমতের সাথে আমি দ্বিমত নই । তবে সচেতনভাবে লেখাকে কোন ফর্ম বা শেইপ দেইনা । হতে পারে আমার পাঠক ও লেখক স্বত্বার নিজস্ব বোঝাপড়া এটা ।

অনেক ধন্যবাদ ফা.হা ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কীর্তিনাশা এর ছবি

আমি এক অলস পাঠক। একটা বই সময় নিয়ে আস্তে ধীরে মাঝখানে বিরাম দিয়ে পড়াটাই আমার অভ্যাস বা বদ-অভ্যাস। কিন্তু 'শমন শেকল ডানা' যখন পড়া শুরু করলাম - প্রথম পরিচ্ছেদ থেকেই আমি কেমন একটা মাদকতাময় আবহে ঢুকে গেলাম। বইটা মোটামুটি বল চলে এক নিঃশ্বাসে মানে এক বসায় পড়ে ফেললাম বা পড়তে বাধ্য হলাম।

এখন মোরশেদ ভাই, আমার প্রশ্ন হচ্ছে - এই যে মাদকতাময় আবহ, এটা কি আপনার ইচ্ছাকৃত সৃষ্টি মানে সচেতন ভাবেই এটা আপনি তৈরী করেছেন? না কি আপনার লেখনীর বৈশিষ্টই এটা - পাঠককে ধরে রাখে একদম শেষ পর্যন্ত ?

সর্বশেষে একটা কথা না বললেই নয় - এই একটা উপন্যাস পড়েই (শমন শেকল ডানা) আমি আপনার ভক্ত হয়ে গেলাম। গুরু গুরু

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি ও ভীষন অলস লেখক @ কীর্তিনাশা হাসি

লেখার মাদকতা? আমি ঠিক জানিনা । এক্সপ্লিসিটলি ওরকম ভাবিনা । যেরকম ভালো লাগে ওরকম লিখে যাই ।

তবে আগের মন্তব্যে যেমন বলেছি, আমি যখন পাঠক তখন এমন লেখাই টানে আমাকে -পাঠকালীন সময়ে যা হ্যামারিং করবে, পাঠশেষে ও যার রেশ থাকবে ।

শমন শেকল ডানা ভালো লেগেছে- জেনে ভাল্লাগলো ।
কৃতজ্ঞতা ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

"শমন শেকল ডানা" বইটি কি হাতে পেয়েছেন? পেয়ে থাকলে অনুভূতিটা আমাদের জানান।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মহাদেশ পেরিয়ে শমন শেকল ডানা- যুক্তরাজ্যের সীমানায় ঢুকেছে । তবে এখনো আমার হাতে আসেনি ।
অনুভূতি ? জানাবো হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কানন আহসান  এর ছবি

হাসান ভাই, আপনার জন্য কয়েকটি প্রশ্নঃ-
১। কোন কথা সাহিত্যিকদের লেখা আপনাকে প্রভাবিত করে? বাংলা এবং আন্তর্জাতিক দু ক্ষেত্রেই?
২। মুলধারার পত্রিকাগুলোতে লিখেননা কেনো? কোন আদর্শগত অবস্থান?
৩। আপনার লেখালেখিতে পাঠকফোরাম,বন্ধুসভা, আপনাদের কাগজ ' সহবাস' এসবের অবদান কতোটুকু?
৪। আপনার পরবর্তী উপন্যাসের পটভূমি নিয়ে কি ভাবছেন?
৫।আপনার প্রায় সকল লেখাই উত্তম পুরুষে । কোন কোন সমালোচক উত্তম পুরুষে লেখাকে একটু হীনজ্ঞান করেন । আপনার মতামত কি?

ধন্যবাদ ।

কানন আহসান

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কানন আহসান

১। প্রভাবিত- নাহ। কারো লেখায় আমার লেখা প্রভাবিত হয় সেরকম মনে করিনা । কারন আমি আমার লেখা লিখে যাই,আমার মতো ।
তবে হ্যাঁ, ভালো লাগার কথা যদি জানতে চান- বাংলা ভাষার পাঠক হিসেবে আমি মুগ্ধ সৈয়দ শামসুল হক এর । তার কবিতা কিংবা নাটক নয়, গদ্যের কথা বলছি । শব্দ চয়ন ও বাক্য নির্মান, গদ্যের অসম্ভব শক্তি- টের পাওয়া যায় হকে । শক্তিশালী গদ্য আমাদের এখানে অনেকেই নির্মান করেন । কিন্তু অনেকের শক্তিশালী গদ্যে 'মেকিং' টা বেশী মনে হয় । কিন্তু সৈয়দ হকের গদ্য একই সাথে শক্তিশালী এবং সুন্দর । মেকিং এর চেয়ে সহজাত উৎকর্ষ অনেক বেশী । 'খেলারাম খেলে যা'-সুক্ষ অনুভূতির পাঠকের কাছে অশ্লীল ঠেকতে পারে কিন্তু আমার কাছে মাষ্টার পিস মনে হয় । আরেকটা ছোট উপন্যাস আছে তার , মাত্র ৫০ পৃষ্ঠার । 'জনক ও কালো কফি' । সম্ভবতঃ ১৯৬১ তে লেখা । ৪৮ বছর আগে লেখা উপন্যাসের ভাষা কি দুর্দান্ত স্মার্ট । এই ২০০৯ এ ও আমাদের অনেকের গদ্যে সেই স্মার্টনেস নেই ।

আর বাংলাভাষার বাইরে ' আলবেয়ার কাম্যু' । কাম্যুর ছিপছিপে উপন্যাস ও টানটান গল্পগুলো সমস্ত আয়োজন তুচ্ছ করে পাঠককে ফিরিয়ে আনে ব্যক্তিগত নির্জনতায় । কাম্যু পাঠ যেনো একেবারেই একাকী যাত্রা । নেশা ধরানো অদ্ভূত নির্মোহতা । 'আউটসাইডার/ দ্যা স্ট্রেঞ্জার ', 'দ্যা প্লেগ' অনেকের পড়া । 'দ্যা ফল' আমার খুব প্রিয় । সম্প্রতি পড়ছি ' এ হ্যাপি ডেথ' ।

২। মুলধারার পত্রিকায় না লেখার পেছনে আদর্শগত কিছু নেই (অবশ্য ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত ইত্যাদি বাদে) । না লেখার মুল কারন যোগাযোগহীনতা । যখন যোগাযোগ ছিলো তখন লিখেছি । প্রথম আলো'র প্রথম দিকে সম্ভবতঃ '৯৯ এর শুরুতে আমার গল্প প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্য সাময়িকীতে । সাজ্জাদ শরীফ তখন সম্পাদক ছিলেন । এর পর পরই প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে চলে আসা । মাঝখানে বছর তিনেক দেশে থাকলে ও মুলধারার পত্রিকায় লেখা ছাপানোর জন্য যে যোগাযোগ মেইন্টেইন করতে হয়, আমার সেটা করা হয়নি ।
এ ছাড়া আমার ভাবনাতে ও কিছু পরিবর্তন এসেছে । আমার লেখা ছাপাযোগ্য কিনা সেটা অন্য কেউ সিদ্ধান্ত নেবেন- এটা আমার অহংবোধকে আহত করে ।
বরং আমি ওয়েবমিডিয়াতে লিখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এখন ।

৩। অনেক । ছোট করে বলা সম্ভব নয় । কোনদিন হয়তো বিস্তারিত বলার সময় আসবে ।

৪। কিছুই ভাবছিনা আপাততঃ । অপেক্ষায় আছি কখন 'ভাবনা' এসে ধরা দেয় হাসি

৫। যারা এমন বলেন তারা তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চা করেন । কিন্তু কতোটুকু জেনে বলেন- আমি সন্দিহান । তালিকা দীর্ঘ করবোনা । আমি যে দুজনের কথা প্রথমে বলেছি- সৈয়দ হক ও আলবেয়ার কাম্যু- দুজনেরই অনেকগুলো সৃষ্টি উত্তম পুরুষে ।
হেমিংওয়ের 'দ্যা সান অলসো রাইজেস' কিংবা স্কট ফিজগ্যারাল্ড এর 'দ্যা গ্রেট গাটসবাই' তাহলে সাহিত্য মানে হীন?

আপনার প্রশ্নগুলো ভালো লাগলো । আমার উত্তরে কোন আপত্তি থাকলে জানাবেন

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কানন আহসান  এর ছবি

ধৈর্য্য ধরে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আপনাকে ও ধন্যবাদ । কোন আপত্তি নেই । সৈয়দ হক ও কামু বিষয়ে আপনার সাথে একমত ।

সবজান্তা এর ছবি

আমার মাথায় একটা প্রশ্ন রয়েছে, যে'টা আসলে আদৌ প্রশ্ন কিনা সেইটা নিয়েই সন্দিহান, তবু করি।

আপনার গল্প বলার ভঙ্গিমাটা আমি লক্ষ্য করেছি, খুব সরল বর্ণনা কোথাও নেই। খানিকটা কাব্যময়, তবে অবশ্যই অত্যন্ত প্রাঞ্জল এবং আকর্ষনীয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, গল্প বলার এই ভঙ্গিমাটি (আদৌ যদি এ'টা ভঙ্গিমা হয়ে থাকে ) কি আপনি সচেতনভাবেই বেছে নিয়েছেন ?

পরবর্তী উপন্যাস বের করার পরিকল্পনা কবে ?

দানবের রূপরেখা কি কোন একটি একক বইয়ের অনুবাদ নাকি বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত সাক্ষাৎকারের অনুবাদ ?

এ ধরনের অনুবাদ ভবিষ্যতে করার পরিকল্পনা আছে ?

----------------------------------------------------------

শমন শেকল ডানা অসাধারণ লেগেছে। আপনাকে মেইল করেই ভালোলাগাটুকু জানাবো ভেবেছিলাম, সময়াভাবে (!!) করা হয় নি।
আরো লেখা খুব দ্রুত পড়ার আশায় থাকলাম......


অলমিতি বিস্তারেণ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

১। গল্প বলার এই ভঙ্গিমা(আদৌ যদি এটি কোন স্বতন্ত্র ভঙ্গিমা হয়ে থাকে) সচেতনভাবে গ্রহন করেছি- তা নয় । এরকম লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি । তাই লিখি ।
পরে হয়তো অন্য কোনভাবে লিখতে ভালো লাগলে,সেভাবেই লিখবো ।

২। কোন পরিকল্পনা নেই আপাততঃ

৩। অরুন্ধতী রায় গত দশবছর থেকে ভারত ও ভারতের বাইরে অনেকগুলো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন । এরকম নির্বাচিত ১৪ টি সাক্ষাৎকার নিয়ে পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ' The Shape of The Beast' । মার্চ ২০০৮ এ ।
'দানবের রূপরেখা' ,' The Shape of The Beast' এর অনুবাদ ।

প্রধানতঃ টুটল ভাইয়ের আগ্রহ ও তাড়ায় এই কাজে হাত দেয়া ।

৪। ধন্যবাদ । পাঠোত্তর প্রতিক্রিয়া যদি জানান অবশ্যই ভালো লাগবে ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কারুবাসনা এর ছবি

ট্রেনে বা রিক্সায় বসে ল্যাপটপ বা মোবাইল স্ক্রীনে সচলের পাতায় হাসান মোরশেদের লেখা পড়তে পড়তে নিজের অজান্তেই আপনি চলে যাবেন গুনগুন সুরে বিজিএম বাজতে থাকা কোন নিরিবিলি রেঁস্তোরায় অথবা নিজের ড্রয়িংরূমে একান্ত নিজের মতো করে চাওয়া কোন পরিবেশে, হাতের নাগালে অনুভব করবেন পানপাত্রের উপস্থিতি -- মোরশেদ ভাইর লেখাগুলো এরকমই, প্রত্যেকটি লেখাই যেন একেকটি পানপর্ব।

- এটা নিন্দা করা হলো না? বিলাসমুগ্ধ যে ব্যাপারটা বলা হচ্ছে সেটা কতটা ঠিক?

আমার প্রশ্ন-
১) যতি চিহ্ন কি আপনার কাছে একটি শব্দ?
২) অবক্ষয়, চ্যুত, স্থানান্তর এগুলি কীভাবে দেখেন ইমেজ না ডকুমেন্টেশনের মত সোজা সাপটা?
৩) আমার মনে হয়েছে আপনি সরলতা বা জটিলতায় বিভাজিত নন। অনেক বেশি ম্যাথমেটিক্যাল। এবং মৌলিক নন, যৌগিক। এটা কি সহজাত?


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

না হয় একটু নিন্দাই করলাম চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

নিন্দা-প্রশংসা পাশ কাটিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে সচেষ্ট হই বরং:-

১। যতিচিহ্ণ যদি কোন অর্থ প্রকাশ করে তাহলে শব্দ নয় কেনো?
২। ক্ষয়,চ্যুতি, স্থানান্তর- গল্প ধারন করে । সেই গল্পসমুহ অবশ্যই বাইনারী নয় ।
৩। আপনার মনে হওয়া আরেকটু বিশ্লেষিত হলে বুঝতে সহজ হতো । যদি যৌগিক হই, তাহলে কোন কোন মৌলের সংযোগ?
মৌলিক কিংবা যৌগিক যাই হই- আরোপিত নই । আরোপিত না হলেই তা সহজাত বলে গৃহীত হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত আপনার উপর ছেড়ে দিলাম।

ধন্যবাদ সুমেরু'দা ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মোরশেদ ভাইয়ের কাছে আমার প্রশ্নঃ

আপনার লেখায়, বিশেষ করে গল্পে, এক ধরণের হতাশা দেখা যায়। অধিকাংশ চরিত্র কিংবা সময় এক রকম বিষণ্ণতায় ঘিরে থাকে, যাতে ভর করে ফেলে আসা দিন-জীবন। পাঠের শেষে ফেলে রাখা শুন্যতাটুকুয় মনে হয়, গল্পের নায়কের (নাকি লেখকের?) নস্টালজিয়া কিংবা ব্যক্তিগত বোধ যা প্রকাশ পায়, তাতে আশাবাদী হওয়ার কিছু থাকে না।
ঐসব গল্পের/চরিত্রের স্রষ্টা হিসেবে আপনার কী মনে হয় - জীবনের পুরোটাই নৈরাশ্যের, নাকি আশাবাদী হওয়ার সময় আসলেই পেরিয়ে গেছে?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রিয় শিমুল,
গল্পে আমি আমার বায়োগ্রাফি লিখিনা আবার গদ্য আঁকড়ে মুলতঃ আমি আমাকেই লিখি । এই আমি অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো ব্যক্তি আমি নই । আমার বেড়ে উঠা সময়ের, আমার যাপিত জীবনের এক্স, ওয়াই, জেড । এই আমার কিংবা আমাদের জীবনে উৎসব আছে, কিন্তু উৎসব শেষের ক্লান্তিটুকু ও আছে । উৎসবের উল্লাসটুকু সম্মিলিত কিন্তু উৎসব শেষের ক্লান্তিটুকু বড় ব্যক্তিগত রকম একাকী ও নির্জন ।

ব্যক্তির এই নির্জনতাটুকু নির্মোহভাবে লিখতে পারলে ভালো লাগে আমার- আশা কিংবা নিরাশা নয় ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

উত্তরটা খুবই পছন্দ হইছে। চলুক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমার ১ম প্রশ্ন:

আপনার লেখায় কাব্যভাব প্রবল। পেশাগত পরিচয় বা মানুষ হিসেবে পরিচয়ের বাইরে আপনি নিজেকে কী পরিচয় দিতে পছন্দ করবেন-- কবি না গল্পকার?

আমার ২য় প্রশ্ন:

লেখক বা সাহিত্যিকের জীবনে রাজনীতির প্রভাব কতটা? (ব্রড প্রশ্ন, তবুও করলাম)। রাজনীতির প্রভাব নিশ্চই আছে, তাহলে সেই প্রভাব লেখাকে কতটা বা কিভাবে প্রভাবিত করে?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রথম উত্তরঃ
কবি? কভি নেহি হাসি ।আমাকে দিয়ে কবিতা হয়না । অন্য কোথাও একবার লিখেছিলাম- কবিতা আমার কাছে প্রথম প্রেমের স্মৃতির মতো । ভুলে যাওয়া যাবেনা কোনদিন, কপালের কাটা দাগের মতো থেকে যাবে অথচ তার সাথে ঘর সংসার হয়ে উঠবেনা ।
নাহ, কবিতা লেখার চেয়ে কবিতা পাঠে আমার আনন্দ তীব্র । আর বাংলা ভাষার এই দিক এতো সমৃদ্ধ যে এই মহাসমুদ্রে এক ফোঁটা শিশির দেয়ার ক্ষমতা ও আমার নেই ।

দ্বিতীয় উত্তরঃ
লেখক বা সাহিত্যিক কেনো কোন মানুষই কি কোনভাবে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত? রাজনীতি লেখাকে কতোটা বা কিভাবে প্রভাবিত করে সেটা বোধ করি লেখকের বিবেচনাবোধ, সময় এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ।

গোর্কির 'মা' পলিটিক্যাল প্রোপাগাণ্ডা হয়েও চমৎকার সাহিত্য ।
আবার আমাদের '৭০ দশকের কিংবা পশ্চিম বাংলার 'হাঙ্গার জেনারেশন' এর কারো কারো কবিতা শেষ পর্যন্ত পলিটিক্যাল ইশতেহারই হয়েছে, কবিতা নয় ।
রাজনীতি কাউকে কাউকে লেখক হয়ে উঠার প্রেরনা যুগিয়েছে আবার অতি রাজনীতি কোন কোন লেখককে খুন করেছে । মায়াকোভস্কি, পাস্তারনেক, আন্না আখমাতোভা এরকম আরো অনেক লেখক সরাসরি পলিটিক্যাল এফেক্টেড ছিলেন ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

একজন লেখককে যদি বলা হয় শীর্ষ প্রশাসক এর দায়িত্ব পালন করতে , আর সেই
লেখক আপনি হন- প্রথমে কোন কাজ টি আপনি করবেন ?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পুরোটাই নির্ভর করবে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ প্রশাসন পরিচালনা করতে হবে ।

আমি ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্র ছিলাম , পেশাগতভাবে ও ব্যবসায় প্রশাসনে জড়িত ছিলাম, আছি । ( আমাদের আনোয়ার সাদাত শিমুল ও ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর পড়ছে) লেখালেখির সাথে এর কোন বিরোধ নেই । লেখক মানেই ঢিলেঢালা, সহজ, সরল, সুবোধ- এই ধারনাটা মনে হয় যতোটা থিওরিটিক্যাল ততোটা প্র্যাক্টিক্যাল না ।

যারা লেখালেখি করেন তাদের পর্যবেক্ষন ও অনুধাবনের ক্ষমতা থাকে(থাকা উচিত আর কি ) বলে, এটি বরং প্রশাসনিক কাজে সহায়ক হতে পারে ।

আপনার এই ব্যতিক্রমী প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ কবি ফকির ইলিয়াস হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

s-s এর ছবি

ঊরিব্বাপস্ ! সবাই দেখি ভারী ভারী প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে বসে আছেন! আমি সেই দাবীতেই দু'টি হালকা প্রশ্ন করতে চাই :শয়তানী হাসি

১। প্রথম চুমু কাকে খেয়েছিলেন, কত বছর বয়সে? সেটি কি আপনার কবিতার কোনো প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে?
২।সিলেটের ছেলে হিসেবে সাতকড়া নামক অসহ্য ফলটি খেতে আপনার কেমন লাগে?
হাসি

আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ঊরিব্বাপস্ ! আপনার দাবীকৃত হালকা(!) প্রশ্নের উত্তর যে বেজায় ভারী ।
ঠিকাছে তাও চেষ্টা করিঃ

১। কোনবেলার চুমু খাওয়ার কথা জানতে চান? ছোটবেলা না বড় বেলা? ছোটবেলার হলে উত্তর হলো- জানিনা । মা,খালা, বোন যাদের কোলে কোলে বড় হয়েছি তাদের কাউকে । বয়স তখন উনিশ ঘন্টা, উনিশ দিন, উনিশ মাস- যে কোন একটা হতে পারে ।

আর বড় বেলার হলে উত্তর হলো- এক বালিকাকে । বয়স তখন ঊনিশ বছর ।
অবশ্য চুমু প্রার্থনার তাৎক্ষনিক ফলাফল ছিলো প্রত্যাখান আর প্রত্যাখানের পরিনতিতে সেই বালিকা আমার সন্তানের জননী চোখ টিপি

২।
ওহে অসিলেটি বালিকা- সাতকড়া কোন ফল নয় । ইহা এক প্রকার সব্জী বিশেষ । সাতকড়া সহযোগে গরুর মাংস ভূনা- এর স্বাদ প্রথম চুমুর মতোই । না পারা যায় বলা, না পারা যায় ভুলা ।

পরজন্মে আপনি সিলেটি হয়ে এই 'অসহ্য ফল(!)' টি র রস আস্বাদন করুন হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ঝরাপাতা এর ছবি

হাসান মোরশেদের লেখার মাঝে যে কাব্যময়তা খেলা করে সে বিষয়ে জানার ইচ্ছে ছিলো। যা হোক সেটা সবজান্তার করা প্রশ্নের উত্তর থেকে পেয়ে গেলাম। আমি একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই।

হাসান মোরশেদকে আমরা গল্পকার হিসেবেই জানি (পা.ফো, বন্ধু সভা এবং ব্লগ)। তার অসাধারণ সব ছোট গল্প বুননে, ভিন্নতায়, বহুরৈখিক ছাপ রেখে যায় পাঠক মানসে। গল্প থেকে উপন্যাসে হাত দেয়ার সময়কার কথা জানতে চাইছি। এটা কি হঠাৎ করে? নাকি অনেকদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে তারপর উপন্যাস লেখার চেষ্টা করেছেন? ছোটগল্প লেখার অভ্যস্ততা বা আয়াস এক্ষেত্রে কি সহায়ক হয়েছে? নাকি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে?

হাসান মোরশেদের গল্প কিংবা উপন্যাস সবসময় মূল চরিত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি পার্শ্ব চরিত্রকে উপেক্ষা করেন (নিজস্ব মত) হয়তো সচেতনভাবেই। যেমন "শমন শেকল ডানা"-তে আমাদের পাঠকের কৌতূহলের মূলে থাকা একটা চরিত্র টুপুর কিন্তু সেই চরিত্রের গভীরতা নেই। একটা উপন্যাসের সামগ্রিক বিস্তৃতি এবং পাঠক মনে একটা সময়ের চরিত্রগুলোকে চিত্রিত করার ক্ষেত্রে এই সংক্ষেপন কিংবা অবহেলার কারণ কি?


নিজের ফুলদানীতে যারা পৃথিবীর সব ফুলকে আঁটাতে চায় তারা মুদি; কবি নয়। কবির কাজ ফুল ফুটিয়ে যাওয়া তার চলার পথে পথে। সে ফুল কাকে গন্ধ দিলো, কার খোঁপায় বা ফুলদানীতে উঠলো তা দেখা তার কাজ নয়।
___________________________ [বুদ্ধদেব গুহ]


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রিয় ঝরাপাতা,
শমন শেকল ডানা- অনেকেই উপন্যাস বলছেন । বলার সুবিধার্থে আমি নিজে ও বলছি উপন্যাস । কিন্তু আমার নিজের বিবেচনায় এটা ঠিক উপন্যাস নয় । উপন্যাসের মধ্যে যে বিস্তৃতি, বৈচিত্র ও বহুমুখীতা থাকার কথা- এর মধ্যে তা নেই ।
ফ্ল্যাপে লিখেছি - 'একটি একরৈখিক ডকুফিকশন' । পুরোপুরি ডকুমেন্টারী নয়, আবার স্রেফ ফিকশন ও নয় ।

হ্যাঁ- আমি যে দৈর্ঘ্যের গল্প লিখি, এটি তার চেয়ে বিস্তৃত নিঃসন্দেহে । না এর জন্য কোন প্রস্তুতি ছিলোনা । ২০০৭ এর আগষ্ট-অক্টোবর এই একটা দুঃসময় যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সেনাশাসনের বিরোধীতা করলো, ছাত্র-শিক্ষকদের উপর সেনানির্যাতন শুরু হলো, এর আগে চলেশ রিচিলকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো, আমাদের খুব কাছের মানুষ আহমেদ নূর পঙ্গউ করা হলো- সেই সময়টাতে একটা ঘোরের মধ্যে এই লেখাটার জন্ম । কোন প্রস্তুতি কিংবা পরিকল্পনা ছিলোনা ।

সেবার প্রকাশ না হওয়ায় পুরো একটা বছর হাতে ছিলো সম্পাদনা করার, সংশোধন-সংযোজনের । দরকার ও ছিলো । কিন্তু ইচ্ছে করে আর হাত দেইনি । মনে হলো থাক- যেহেতু একটা সময়কে লিখতে চেয়েছি, লেখার সময়ের অস্থির, সিদ্ধান্তহীন, পরিনতিহীন পরিস্থিতির ছাপটা ও থাক ।

চরিত্র সংক্ষেপন কিংবা অবহেলার ও কোন কারন নেই । শমন শেকল ডানা সহ অন্য সব গল্প ও লিখি মুলতঃ আমি আমার নিজস্ব কিছু বলার জন্য। ঐ বলার প্রয়োজনেই এক একটা চরিত্র নির্মান । সে কারনেই হয়তো কোন কোন একটি চরিত্রের তুলনায় পার্শ্বচরিত্রগুলো অনুল্লেখ্য রয়ে যায় ।

কি জানি? আমি আসলে ঠিক জানিনা হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আজকাল এর ছবি

গুরু, আপনার লেখা পড়ি পাঠক ফোরাম থেকে । কী একখান আগুন গল্প লিখছিলেন, ঐ যে - এক কবিরে অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় র‌্যাব ধরে নিয়ে গেল । সেই পাঠক ফোরাম থেকে অনেক সম্ভবনাময় লেখকের উঠার কথা ছিল । কেবল সুমন্ত আসলাম আলপিনের হাত ধরে এখন জনপ্রিয় লেখক । বাকীদের মধ্যে পাপড়ি আপার উপন্যাস, জেবতিক ভাইর উপন্যাস আসছে গত বছর । আপনার আসলো এইবার । কিন্তু আপনারা যেমন লিখতেন, অনেক বেশি সম্ভবনা ছিল -এক ঝাঁক নতুন লেখকের আগমনের । নাম মনে পড়তেছে - মঈনুল এইচ সিরাজী, শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস, রানা মেহের, সুমাইয়া ইসলাম সুমী, সিপার আনোয়ার......। সেটা হয় নাই ,বন্ধুসভাও সাহিত্যের বদলে মানববন্ধন-গাছ লাগান আন্দোলনে ব্যস্ত বেশি । পত্রিকার পাঠক পাতাকে ভিত্তি করে লেখালেখির যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সেটা হারিয়ে গেল একেবারে । সাহিত্য পাতার সম্পাদকের চেয়ারে বসে লিটিল ম্যাগের বিগত বিপ্লবী ,যারা আজীজিয় চক্করের বাইরে চোখ মেলে তাকায় না । এই একরকম সম্ভবনা নষ্ট হওয়ার বিষয়কে আপনি কীভাবে দেখেন ? পাঠক ফোরাম-বন্ধুসভার লেখক কিংবা এ সময়ের ব্লগার হিসাবে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি আছে কি?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আরে আজকাল যে!
আমি ও তো আপনাকে চিনি ব্লগিং এর সেই প্রস্তরযুগ থেকে হাসি
পাঠকফোরাম-বন্ধুসভার মহীরুহ হবার সম্ভাবনা ছিলো, শেষে বনসাই হয়েছে । ব্যতিক্রম কিছু নয়, অধিকাংশ সম্ভাবনার পরিনতি তো তাই ।

তবে আমার ব্যক্তিগত ভাবনা হলো- লেখালেখি ঠিক শো-বিজ নয় । শেষপর্যন্ত কে টিকে থাকবে, কে থাকবেনা সময় সেটা নির্ধারন করবে । আজকে খুব জনপ্রিয় কোন লেখক ও সময়ের বিচারে তুচ্ছ হয়ে যেতে পারেন ।
আর লেখালেখির জন্য সংঘবদ্ধতা জরুরী কিছু নয় । এটা একেবারেই নিজস্ব যাত্রা ।

আপনি পুরনো মানুষ । মাঝে মাঝে আমাদেরকে স্মরন করবেন । ভালো লাগবে ।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

রেনেটের কেন কম লিখেন প্রশ্নের জবাবে একটা অংশে বলেছেন,

তো আমি ঐ বোধ, ঐ তাড়নার জন্য অপেক্ষা করি । নিজ থেকে যখন আসে, ধরা দেয় সেটা উপভোগ করি ।

একজন "হতে চাই লেখক" চোখ টিপি হিসেবে আমি জানতে চাই এই তাড়নার আগমনের সময়ের সাথে যখন নিজের দৈনন্দিন কাজের (যেমন ধরুন চাকুরীর) স্কেজ্যুলে সংঘর্ষ হয়, তখন কিভাবে ব্যালান্স করেন? ছুটি নেন?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কারুবাসনা এর ছবি

হ্যাঁ , হ্যাঁ মোরশেদ ভাই, আপনি তো ছুটিতেই থাকেন মনে হয়। এটা কি ঠিক?


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।