বেইজিং ডাক্

মুস্তাফিজ এর ছবি
লিখেছেন মুস্তাফিজ (তারিখ: মঙ্গল, ২৩/১২/২০০৮ - ৩:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoচীনে বেড়াতে যাবেন আর দুটো জিনিষ দেখবেন না তা হতে পারেনা। এই দুটো জিনিষের প্রথমটা অবশ্যই বেইজিং ডাক্‌ (যা আগে ছিল পিকিং ডাক্‌) আর দ্বিতীয় গ্রেট ওয়াল। প্রথমটা খাবার দ্বিতীয়টা দর্শনীয় স্থান। চর্বিদার ‘বেইজিং ডাক্’ বেইজিং এর সচাইতে সুস্বাদু খাবার শুনেছি যদিও এই চর্বির কারনে কারো কাছে এটার আবেদন নাও থাকতে পারে।‌

‘বেইজিং ডাক্’ এর ইতিহাস ও খুব মজার। যতদূর জানি ‘ইয়াং রেনেগুয়ান’ নামে এক চাইনীজকে এই ব্যবসার গুরু বলা হয় যার শুরুটা প্রায় ১৭০ বছর আগে কিওয়ানমেনে। কিওয়ানমেন, বেইজিং এর ভেতরেই, তিয়েনামেন চত্বরের দক্ষিন পাশে যেদিক দিয়ে ভুলে যাওয়া পরিত্যাক্ত শহরে (Forbidden City) ঢোকার রাস্তা সেখানে। কিওয়ানমেন মানে সদর দরজা, ১৪১৯ সালে তৈরী এ দরজা প্রায় ৪২ মিটার উঁচু, উপরে তীরন্দাজদের বসার জায়গা, বেইজিং এর সবচাইতে উঁচু দরোজা বলা হয় এটাকে। ১৯৪৯ সালে কমুনিস্টরা প্রথম এর দখল নেয় এবং ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এখানে এক গ্যারিসন সৈন্য থাকতো। তো সেই ‘ইয়াং রেনেগুয়ান’ হাঁস পালতেন এর আশেপাশেই, বিশেষ যত্ন নিতেন এদের যাতে মাংস সুস্বাদু লাগে খেতে। এই ভদ্রলোকই প্রথম আধুনিক ‘বেইজিং ডাক্’ তৈরীর রেসিপির প্রচলন করেন যদিও ইউয়ান রাজত্বের (১২০৬) সময়কাল থেকেই ভাজা হাঁসের মাংসের প্রচলন চিনের এলিট সম্প্রদায়ের মাঝে দেখা যায়। টেলিভিশনে একবার ‘বেইজিং ডাক্’ তৈরী প্রনালী দেখেছিলাম। হাঁস বাছা থেকে টেবিলে নিয়ে আসা পর্যন্ত এদের মাননিয়ন্ত্রনের পদ্ধতি দেখে মাথা খারাপ হবার যোগাড়।

আমাদের সুন্দরী গাইড গড়পড়তা চীনাদের চাইতে লম্বা, টাইট জীন্স আর সাদা ফতুয়াতে ঠিক চাইনীজ মনে হয়না, বিদেশীদের সাথে উঠাপড়া আছে এমন চাইনীজদের একটা ইংরাজী নাম থাকে, ওর নাম ছিল লুসি। লুসি যখন এসব বৃত্তান্ত শোনাচ্ছিলো মনযোগ দিয়ে শুনছিলাম, ওর বক্তৃতা শেষ হলে জানালাম আমরা কুয়াংজু রেষ্টুরেন্টে যেতে চাই, শুনে খুশী হয়ে বললো তোমাদের ওখানেই ‘বেইজিং ডাক্’ খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছি আমি।

এই কুয়াংজু রেষ্টুরেন্ট তৈরী করেছিলেন ইয়াং রেনেগুয়ান, ১৩০ বছর আগে। বর্তমানে এর অনেকগুলো শাখা চীনে আছে, শুনেছি হংকং আর মেলবোর্নেও আছে।

একটা বড় গোল টেবিলে যেয়ে বসেছি আমরা, টেবিলের মাঝখানে কাঁচ, তা আবার ঘোরানো যায়। প্রথমেই ছোট কাপে চিনি ছাড়া চা পাতার গরম পানি দেয়া হলো, এর পর বাবুর্চি নিয়ে এলো ‘বেইজিং ডাক্’, খয়েরী লাল রংয়ের তেল চকচকে চামড়া সহ ভাজা হাঁস। যেই সেই ভাজা নয়, শুধুমাত্র ফল গাছের কাঠের গোলাপী আগুনের আঁচে ভাজা। মুচমুচে নরম মাংস, খেতে হয় সাদা রুটী দিয়ে সসে ডুবিয়ে।


মন্তব্য

কীর্তিনাশা এর ছবি

বেইজিং ডাক্ খাইতে মঞ্চায়!!

একজন ফটোগ্রাফারের পোস্টে একটা মাত্র ছবি!!! রেগে টং

তিব্র প্রতিবাদ জানাই!!

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মুস্তাফিজ এর ছবি

অনেক আগের কথা, আরবের লোকেরা তখন গুহায় বাস করতো আর আমিও তখন ছবি তুলতামনা।

...........................
Every Picture Tells a Story

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

ঢাকায় পিকিং ডাকের ব্যবস্থা আছে কি?

---------------------------------------------------------

আমরা যারা শিখিনি চাষবাস,ফসলের গীত
গুলালিতে পাখি হত্যা

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মুস্তাফিজ এর ছবি

আছে মনে হয়, কিন্তু ঐটা খাইলে সাথে ফ্লাজিল টেব্লেট খেয়ে নিবেন

...........................
Every Picture Tells a Story

দুর্দান্ত এর ছবি

পিকিং গিয়ে পিকিং হাঁস খাওয়ার অভিজ্ণ্তা হয়নি। 'ডু ইট য়োর্সেল্ফ" নীতিতে একবার নিজেই বানিয়েছিলাম। আসল জিনিসের স্বাদ জানা না থাকায়, নিজেরটাকেই অসাধারন মনে হয়েছে।

মুস্তাফিজ এর ছবি

আপনার হাঁসের রঙ তো সুন্দর লাগতাছে।

আমি অবশ্য বানানো দেখেছি। গলা কাটার পর ওখানে অদ্ভুত দক্ষতায় এক ফুঁ দিয়ে যেভাবে বেলুনের মত চামড়া মাংশ থেকে ছুটিয়ে ফুলিয়ে দেয়, অসাধারন।

...........................
Every Picture Tells a Story

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

লেখাটা শরু যেমন হুট করে (প্রথমে সম্ভবত চীন শব্দটা বাদ পড়ে গেছে)
তেমনি হুট করেই শেষ... খাবার আসলো বুঝলাম... কিন্তু খাওয়াভিজ্ঞতা কই?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মুস্তাফিজ এর ছবি

ধন্যবাদ বাদ পড়াটা দেখিয়ে দেবার জন্য। ঠিক করলাম।

...........................
Every Picture Tells a Story

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মুস্তাফিজ ভাই,
ছবিটার সাইজের কারণে পেজ দেখতে ভালো লাগছেনা। টেক্সট এরিয়ার বাইরে চলে গেছে।

সমাধান: আপনি ছবির ইউআরএল টা লেখার যে স্থানে ছবিটা বসাতে চান সেখানে পেস্ট করুন। তারপর ইউআরএল সিলেক্ট করুন। তারপর উপরের বাটনগুলো থেকে "ছবি" নামক বাটনে একটা ক্লিক দিন। ব্যস হয়ে গেলো। এই দেখুন

[img=auto] http://img364.imageshack.us/img364/4420/duck1ty5.jpg[img]

উপরের কোডটা কপি পেস্ট করে আপনার পোস্টে দিন। এর পর [img=auto] আর http এর মধ্যের গ্যাপটা মুছে দিন। কাজ হবে।

মুস্তাফিজ এর ছবি

ধন্যবাদ।

...........................
Every Picture Tells a Story

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

হঠাৎ করেই লেখাটা যেন শেষ হয়ে গেল। আরো জানতে ইচ্ছা করছিল...
অতৃপ্তি থাকল মনে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এর পরে তো খাওয়া শুরু হবে। তারপরে বিল পরিশোধ করে বাসায় চলে আসা দেঁতো হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

তা অবশ্য ঠিকই বললেন, পিপি'দা... হাসি

নিবিড় এর ছবি

লেখা টা পড়েই কেন জানি ক্ষুধা লেগে গেল । দেঁতো হাসি

মুস্তাফিজ এর ছবি

রাত হইসে, খাওয়া দাওয়া করেন

...........................
Every Picture Tells a Story

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বেজিং ডাকের উপর পোস্ট, তাও আবার মুস্তাফিজ ভাইয়ের, অথচ বেজিং ডাকের ছবি নেই! মানতে পারছিনা। ইতিহাস যা বলেছেন দরকারী, কিন্তু আপনার গল্পটা কই? এটা কিন্তু ঠিক হলনা। আমরাতো একই সাথে আপনার ছবির আর লেখার ভক্ত।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মুস্তাফিজ এর ছবি

গল্পটা আপনার জন্য তোলা থাকলো। আর সিরিয়াসলী ছবি তুলছি বেইজিং থেকে ঘুরে আসার পর।

...........................
Every Picture Tells a Story

স্পর্শ(অফলাইন) এর ছবি

খাইতে মন চায়! মন খারাপ

গৌতম এর ছবি

দিলেন তো ঝামেলা বাধিয়ে। এখন যে হাঁসের মাংস খেতে ইচ্ছে করছে! কই পাই?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নির্বাক এর ছবি

আজ দুপুরে লাঞ্চ করেছি হাঁসের মাংস দিয়ে, তবে সেটা রান্না। কিন্তু বর্ণনা যা দিলেন তাতে ভাজা হাঁস খেতে ইচ্ছা করছে, কোথায় পাই?!
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!

_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!

মুস্তাফিজ এর ছবি

আপাতত দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান।

...........................
Every Picture Tells a Story

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- চামড়া শুদ্ধা মাংস দেখলেই মাথা মোচর দিয়ে ওঠে। এখানে পিকিং ডাকের একটা ইমপ্রোভাইজড ভার্সন পাওয়া যায়, 'পাংকো'। ঐটা খাই চাইনিজ খাইতে ইচ্ছা করলে। কুড়কুড়ামুড়মুড়া লাগে।

টাইট জিন্স আর ফতুয়া'র লুসিরে দেখতে মঞ্চায়। চোখ টিপি

ফরবিডেন সিটি কি আসলে পরিত্যক্ত শহর নাকি মানেটা অন্য? চিন্তিত
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মুস্তাফিজ এর ছবি

auto
বাম থেকে ৪ নম্বর

ফরবিডেন সিটি নিয়া লেখব

...........................
Every Picture Tells a Story

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অমিত আহমেদ এর ছবি

দারুন লাগলো পড়তে। পিকিং ডাক (হালের বেইজিং ডাক) আমার কাছে দুর্দান্ত লাগে।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

মুস্তাফিজ এর ছবি

যতটুকু নামডাক শুনেছি সে তুলনায় স্বাদ মোটামুটি, আমাদের তো আবার ঝাল খাবার অভ্যাস। তবে ঐ জিনিষটাই যদি কেউ একটু দেশী ছোঁয়া দিয়ে রান্না করতে পারে... উমম্‌ আমাদের জন্য অসাধারন।

...........................
Every Picture Tells a Story

রায়হান আবীর এর ছবি

খিদা লাগছে মন খারাপ

=============================

অতিথি লেখক এর ছবি

মুস্তাফিজ লিখেছেন:
আছে মনে হয়, কিন্তু ঐটা খাইলে সাথে ফ্লাজিল টেব্লেট খেয়ে নিবেন

ক্যান??খেতে খুব খারাপ নাকি ইয়ে, মানে......আমিতো আপনার লেখা পড়ে বেইজিং ডাক্ খাওয়ার কথা ভাবতেছিলাম!!
---------------------
উদ্ভ্রান্ত পথিক

মুস্তাফিজ এর ছবি

খেতে খারাপনা, অবশ্যই ভালো। কিন্তু মনে রাখবেন ঢাকায় হয়ত মাসে দুমাসে ১টা ডাক্‌ বিক্রি হয়, সমস্যাটা ওখানে।

...........................
Every Picture Tells a Story

দময়ন্তী এর ছবি

আমি ভারতে খেয়েছি এটা ৷ মন্দ লাগে নি ৷
----------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

খাইতে মঞ্চায়।
তবে এই দেশে আমি যা খেয়েছি, সেটাও অসাধারণ। শুধু লবণ আর টক কাঁচা আপেল (আর কোনও উপকরণ নেই) দিয়ে রান্না করা হাঁস! অবিশ্বাস্য সেই স্বাদ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।