আল মাহমুদনামা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: শুক্র, ১২/০৬/২০১৫ - ৭:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আল মাহমুদ বিষয়ে কিছুদিন পর পরই বিতর্ক ওঠে। মজার কথা হলো দুই পক্ষের কেউই তাকে মানুষ মনে করেন না। একদল তার যাবতীয় ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, আদর্শগত অবস্থান অর্থাৎ রক্ত মাংসের মানুষটাকে ভুলে আল মাহমুদকে বিবেচনা করতে চান শুধু কবি হিসেবে। আরেকদল তাকে যুদ্ধাপরাধী এবং মৌলবাদী শক্তি জামায়াতে ইসলামীর ঝাণ্ডা বহনকারী বিবেচনায় আক্ষরিক অর্থেই 'অমানুষ' মনে করেন।

আল মাহমুদের যে কবিতা আর সাহিত্যকর্ম নিয়ে তার পক্ষের লোকেরা লড়াই করেন, প্রাক্তন কবি আল মাহমুদ নিজেই তা প্রকারান্তরে অস্বীকার করে এখন। নেহায়েত পুরোপুরি অস্বীকার করলে তার কবি পরিচয়টাই বিলুপ্ত হয়ে যায়, বিক্রির আর কিছু থাকে না; তাই বাণিজ্যিক কারণেই সেই কবিতাগুলো অস্বীকার করাটা তার পক্ষে সহজ না, কারণ সেই কবিতাগুলোই এখনো তার কবি পরিচয়টা টিকিয়ে রেখেছে।

মুক্তিযুদ্ধের আগের কবি আল মাহমুদ আর মুক্তিযুদ্ধের পরের কবি আল মাহমুদের কবিতা পড়লেই তার পরিবর্তনটা স্পষ্ট হয়ে যায়। ‘লোক লোকান্তর’, ‘কালের কলস’, ‘সোনালী কাবিন’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের কবি আল মাহমুদের কবিতার রূপ রস গন্ধ বদলে যেতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালের কাব্যগ্রন্থগুলোতে। ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’ দিয়ে যার শুরু।
যে কবি সোনালী কাবিনে লেখে:

আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন,
পরম স্বস্তির মন্ত্রে গেয়ে ওঠো শ্রেণীর উচ্ছেদ,
এমন প্রেমের বাক্য সাহসিনী করো উচ্চারণ
যেন না ঢুকতে পারে লোকধর্মে আর ভেদাভেদ।

সেই আল মাহমুদই ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’য় লেখে:

মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে
মনে হয় রক্তই সমাধান
বারুদই অন্তিম তৃপ্তি
আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জিহাদ জিহাদ বলে জেগে উঠি

এই বিবর্তনটা কি শুধু কবিতায়? নাকি ব্যক্তি চেতনায়? একদা বামপন্থী বলে পরিচিত কবি আল মাহমুদ পাক্ষিক ‘সাপ্তাহিক’ পত্রিকার এক সাক্ষাতকারে বলে “ডানপন্থী বা বামপন্থী এসব আমি ঠিক বুঝি না। লেখক হিসেবে আমি মার্চ করেছিলাম। লেখক হিসেবেই আমার একটা পরিণতি হয়েছে। লেখকের একটা পরিণতি হয়। সে এক দিকে যায়। আমি বিশ্বাসের দিকে গিয়েছি। ঈমান-আক্বিদা এসবের কথা বলেছি। আমি মনে করি এটা ভালোই হয়েছে। ধর্মের প্রতি বিশ্বাস রাখি আমি। আমি যখন ধার্মিক, বিশ্বাসী তখন আমার লেখায় তার প্রভাব তো পড়বেই”।
আল মাহমুদের ধর্ম বিশ্বাস আর ধর্মচর্চা নিয়ে আমার কিছু বলার নাই, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু কবিতার বিবর্তন আর সাক্ষাৎকারে বলা কথায় এটুকু পরিষ্কার বোঝা যায় যে কবি হিসেবে সোনালী কাবিন আমলে তার যে যাত্রা শুরু হয়েছিলো, সেই যাত্রা পরিণতি পেয়েছে বর্তমানে এসে। এই পরিণতিপ্রাপ্ত বোধটাই আল মাহমুদ ধারণ করে, সোনালী কাবিন অতীত।
সমস্যা হলো আল মাহমুদ ভক্তরা এখনো কুমিরছানার মতো সোনালী কাবিনটাকেই বার বার সামনে এনে রাখেন। পরিণতিপ্রাপ্ত আল মাহমুদের কবিতা কি কখনো তারা রেফারেন্স হিসেবে সামনে আনেন? অন্তত আমার নজরে আসেনি।

আল মাহমুদের অনুসারীরা একসময় তাকে মুক্তিযোদ্ধা কবি দাবি করতেন। তাদের দাবি ছিলো আল মাহমুদই একমাত্র কবি যে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে। সেই দাবি যে ভুল তা প্রমাণ করে গেছেন আরিফ জেবতিক, নতুন করে সেদিকে না যাই।

আল মাহমুদ বিষয়ে আরেকটা প্রচার খুব বেশি। মুক্তিযুদ্ধপরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকার তার উপর অনেক জুলুম নির্যাতন করেছে, বিনা বিচারে জেল খাটিয়েছে, এজন্যই এককালের ‘মুক্তিযোদ্ধা কবি’ ক্রমশ ঝুঁকে পড়তে থাকে জামায়াতে ইসলামীর দিকে। কী হাস্যকর।

তাহলে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী আল মাহমুদের কার্যক্রমগুলোতে একটু নজর রাখা যাক।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত রাষ্ট্রীয় চার-নীতির পক্ষে প্রচার চালানোর জন্য ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকাটির পুনঃপ্রকাশ শুরু হয়। এই শর্তেই বঙ্গবন্ধু রব-সিরাজদের হাতে পত্রিকাটির দায়িত্ব দেন। সম্পাদক তোহা খান। বঙ্গবন্ধুর এই পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবেই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী আল মাহমুদের ক্যারিয়ার শুরু। পরবর্তীতে রব-জলিলের নেতৃত্বে জাসদ গঠিত হলে গণকণ্ঠ জাসদের মুখপাত্র হয়ে যায়। তোহা খান, নির্মলেন্দু গুণ চাকরি ছেড়ে দেন। কিন্তু আল মাহমুদ রয়ে যায়, হয়ে যায় সম্পাদক। রব-জলিল তখন তার নেতা।
নির্মলেন্দু গুণের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়:

মনে পড়ে, ১৯৭৩ বা ৭৪ সালে চট্টগ্রামে আমরা কবিতা পড়তে গিয়েছিলাম। শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দিন এবং আমি। রাতে চট্টগ্রাম পোর্টের ডাক্তার কামালের বাসায় আমাদের নৈশভোজের ব্যবস্থা ছিল। সঙ্গে ছিল সুরা। এক পর্যায়ে শামসুর রাহমানের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে আল মাহমুদের তুমুল তর্ক বেঁধে যায়। শামসুর রাহমান তর্কপটু মানুষ ছিলেন না। তাই শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী তখন শামসুর রাহমানের পক্ষ হয়ে আল মাহমুদের আক্রমণের জবাব দিতে উঠে দাঁড়ান। আল মাহমুদ যে রব-জলিলের খুঁটির জোরেই আজকাল এমন নর্তন-কুর্দন করছে দেবুদা ঐ কথাটা খুবই জোরের সঙ্গে উত্থাপন করলেন, কারও ভুলে যাবার কথা নয় ঐ নয়নমনোহর দৃশ্যটি, আল মাহমুদ তড়াক করে উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে একটি সোফার ওপর লম্ফ দিয়ে উঠে দাঁড়ান। তারপর, মুহূর্তমাত্র বিলম্ব না করে, শতকরা একশ’ভাগ সাফল্যের সঙ্গে, পুরোপুরি সামরিক কায়দায় তাঁর তখনকার প্রিয় দুই নেতা রব-জলিলের উদ্দেশে স্যালুট নিবেদন করে বলেন... ‘সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন সব ব্যাটাই রব-জলিলের নামে এইভাবে স্যালুট দেবে’।

কিন্তু সেদিন খুব বেশি দূরে থাকেনি যেদিন আল মাহমুদ নিজেই রব-জলিলের নাম ভুলে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেয়। ক্রমাগত রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার কারনে একসময় তাকে জেলে যেতে হয়। কিন্তু মুক্তির পরদিনই বঙ্গবন্ধু নিজে আল মাহমুদকে ডেকে নিয়ে চাকরি দেন।

আমি জেল থেকে বেরিয়ে রাতটা শুধু কাটিয়েছি। সকালবেলা আমার বাড়িতে টেলিফোন আসে। ওনার সেক্রেটারি টেলিফোন করে বলেছেন, শেখ সাহেব আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি যেন সেখানে চলে যাই। আমি গিয়েছি। তিনি আমাকে একটা চাকরির অফার দিয়েছেন। আমি তাকে বলেছি যে, আমি আমার পেশায় (সাংবাদিকতা) থাকতে চাই। কিন্তু তিনি সেটা করতে দেননি। তিনি আমাকে শিল্পকলা একাডেমীতে জয়েন করতে বলেছেন। আমি অনেক চিন্তা করে সেটা করেছি। এটাও তো একটা ঋণ। তিনি যেখানে তার বিরোধীদের সহ্যই করতেন না একদম, সেখানে আমার মতো একজন কবিকে তিনি একটা সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করলেন, এটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগে। আমি মনে করি, এটা একটা ঋণই বটে।

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু নিজে ডেকে নিয়ে আল মাহমুদকে শিল্পকলা একাডেমীর উপপরিচালক পদে চাকরি দেন। পরে পরিচালক পদেও চাকরি হয়। প্রচুর সমালোচনা সত্ত্বেও নিজ দায়িত্বে বঙ্গবন্ধু তাকে চাকরি দেন। আল মাহমুদের অনুসারীরা তার প্রতি বাকশাল সরকারের জেল জুলুমের কথাই শুধু বলে। কিন্তু আল মাহমুদ নিজে সেই অবস্থান থেকে সরে গেছে বহু আগে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখে ফেলেছে গোটা একটা উপন্যাস ‘কাবিলের বোন’। আর বঙ্গবন্ধুর গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিজে যোগ দিয়েছে বাকশালে। বলা প্রয়োজন শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণরা কিন্তু বাকশালে যোগ দেন নাই; আল মাহমুদ দিছে। জাসদ, সমাজতন্ত্র, রব-জলিল ভুলে যেতে আল মাহমুদের সময় লাগেনি একটুও।

এই যে চোখ পল্টি দেওয়া, ভোল পাল্টে ফেলা... এটাই আল মাহমুদ। এই আল মাহমুদটাই সত্যি।

এটা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আল মাহমুদ যখন সব ভুলে জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায় মাঠে নামে।

একবার উনি (জিয়া) আমাকে ডেকে পাঠান এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে আলাপ করেন। আমাকে জাসাসের সভাপতি হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সেই সময় প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী আমাকে খুব উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এটা আমার মনে আছে খুবই যে, তিনি বলেছিলেন ‘এটা আপনাকে করতে হবে’। আমি করেছিলাম। জিয়াউর রহমানের সঙ্গেও আমার বহু বিনিময় হয়েছে। কথাবার্তা হয়েছে। আমি তাকে অত্যন্ত দেশপ্রেমিক এক মহৎ হৃদয়ের মানুষ মনে করি। রাষ্ট্রনায়কসুলভ সব গুণই তার ছিল।

অতঃপর গঠিত হয় জাসাস, আল মাহমুদ যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় আল মাহমুদ সুখে থাকে। লোকটা পল্টিবাজ হলেও একেবারে অকৃতজ্ঞ না, জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করতেও নিজের সাহিত্য প্রতিভা ব্যবহার করে। ‘তৃষিত জলধি’ নামে একটা গল্প লেখে জিয়ার নামে। আল মাহমুদই সম্ভবত একমাত্র কবি, বঙ্গবন্ধু আর জিয়া দুজনকে নিয়েই যার কবিতা সমাদৃত হয়েছে। অবশ্য জিয়া, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, জাসাস ইত্যাদি থেকে চোখ ওল্টাতেও সময় লাগে না আল মাহমুদের।

এরশাদ ক্ষমতায় আসে। সমস্যা হলো এরশাদ নিজেই কবি। শোনা যায় এরশাদের নামে তখন কবিতা লিখে দিতো অনেক প্রথিতযশা কবিই। সেই দলে আল মাহমুদ ছিলো কি না তা নিশ্চিত করে বলার উপায় নাই তারা নিজেরা স্বীকার না করা পর্যন্ত। তবে এরশাদ যে কবিতার সম্মেলন ডেকেছিলো, দেশের বরেণ্য সব কবিরা তার বিপক্ষে থাকলেও আল মাহমুদ এরশাদের কবলেই ছিলো। এরশাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্কের কথা আল মাহমুদ সবসময়ই স্বীকার করেছে।

এইসব নানাবিধ পল্টিবাজির পর আল মাহমুদ অবশেষে থিতু হয় জামায়াতে ইসলামীতে এসে। ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে যুদ্ধাপরাধী মৌলবাদী শক্তির হয়ে এখন আল মাহমুদের লড়াই চলছে। বিবর্তনের এই বিস্তারিত চিত্র খুব সুন্দরভাবে গুছিয়ে লেখা আছে হাসিব মাহমুদের এই পোস্টে

এক সোনালী কাবিন বিক্রি করে কবি পরিচিতি পাওয়া আল মাহমুদের মুক্তিযুদ্ধপরবর্তীকালের এই সুদীর্ঘ সময়ে কোনো উল্লেখযোগ্য কবিতা নেই। আছে দলবাজি, পল্টিবাজি। আছে যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী আর মৌলবাদী শক্তি জামায়াতে ইসলামীর হয়ে ল্যাদানোর ইতিহাস।

এই পচে গলে যাওয়া লোকটাকে আমরা এখনো কবি হিসেবে মাথায় তুলে রাখতে চাই!

আল মাহমুদের সোনালী কাবিন থেকেই উদ্ধৃত করি:

কোনো সামন্তের নামে কোনদিন রচিনি শোলোক
শোষকের খাড়া ঝোলে এই নগ্ন মস্তকের ‘পরে।
পূর্ব পুরুষেরা কবে ছিলো কোন সম্রাটের দাস
বিবেক বিক্রয় করে বানাতেন বাক্যের খোয়াড়,
সেই অপবাদে আজও ফুঁসে ওঠে বঙ্গের বাতাস।
মুখ ঢাকে আলাওল রোসাঙ্গের অশ্বের সোয়ার।
এর চেয়ে ভালো নয় হয়ে যাওয়া দরিদ্র বাউল?

বিবেক বিক্রয় করে বাক্যের খোঁয়াড় বানিয়ে পাহাড় গড়ে তোলা বর্তমানের আল মাহমুদ কি এই কবিতা এখনো বিশ্বাস করবে নাকি অস্বীকার করবে?

পুনশ্চ: একবার এক সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো দীর্ঘদিন শিল্পকলা একাডেমির দায়িত্বে থেকে তার উল্লেখযোগ্য অবদান কী? আল মাহমুদের উত্তর ছিলো সেখানে সে শুধু চাকরি করতে গেছে, কোনো অবদান রাখতে যায়নি।

পুন পুনশ্চ: জামাত তোষণের অপরাধে হুমায়ুন আজাদ তাঁর সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের নির্বাচিত কবিতা’ বইতে আল মাহমুদের কবিতা বর্জন করেছিলেন।


মন্তব্য

ইয়ামেন এর ছবি

নজু ভাইয়ের হোম রান। যদিও আল মাহমুদ সমর্থকরা যারা বাকস্বাধীনতার কথা বলে কিন্তু দ্বিমতপোষণকারীদের মেচিউরিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইন্ডাইরেক্টলি তাদের টুটি চেপে ধরে, তাদের ফ্যাসিবাদ বলে তকমা দিয়ে দেয় অকপটে, তাদের কাছে এইসব লেখার কোন মানে আছে বলে মনে হয় না।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এইসব লিখে আসলে কোনো লাভ নাই। আল মাহমুদকে ঘৃণা করার জন্য এতোকিছু জানার আসলে কোনো প্রয়োজন নাই। কিন্তু সমস্যা হইলো ঘৃণার রাজনীতি জিনিসটা নাকি ভালো না। কী আর করা মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

এইসব লিখে আসলে কোনো লাভ নাই।

আপনার মুখ থেকে এ ধরণের কথা শুনলে ভয় করে। এক একটা গবেষণাধর্মী ব্লগ পোস্টের পেছনে আপনি যে শ্রম দেন, আপনার সমকক্ষ খুব কম লেখকই আছেন, বাংলা ব্লগস্ফিয়ারে। প্রত্যক্ষ লাভ-লোকসান বিচার করতে করতে একদিন যদি আপনারা এমন লিখা বন্ধ করে দেন, পিনাকিদের জমানায় সত্য তুলে ধরবে কারা? আমরা কাদের লিখা পড়বো?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনামা পাঠক, আপনার মন্তব্যটা আমাকে প্রাণ জোগায়। আমি হতাশ কখনো হই না। প্রত্যক্ষ লাভ লোকসানের বিচারেও কিছু করি না। যা করি বা চেষ্টা করি তা প্রাণের দাবীতে, ভালোবাসা থেকে। যতদিন বেঁচে থাকবো, চেষ্টা করবো সত্য প্রতিষ্ঠার...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুবোধ অবোধ এর ছবি
নীড় সন্ধানী এর ছবি

'কবিতার সাথে রাজনীতি মেশাবেন না' - প্রগতিশীল আল-মাহমুদপন্থীদের এই বাণী আমি আশির দশক থেকে শুনে বড় হয়েছি। এই দলভুক্ত লোকেরা মুক্তিযুদ্ধেও বিশ্বাস করে, আল-মাহমুদেও করে। এরা জামাতকে ঘৃণা করে, কিন্তু আলমাহমুদকে ভালোবাসে। জাসদ দলটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মননে বিষ্ঠা প্রসব করেছে, আল-মাহমুদ সমর্থক গোষ্ঠী তাদের অন্যতম। বাংলাদেশে বাম থেকে ১৮০ ডিগ্রী ডানদিকে মোড় নেয়া শিক্ষিত শ্রেণীর ৯০%ই জাসদ প্রসবিত এবং আল মাহমুদ তাদের পাইওনিয়ার। এই বিতর্ক আরো দীর্ঘসময় চলবে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জাসদ বিষয়ে আস্ত একটা সিরিজ লিখতে হবে। লিখবো কখনো।

আর রাজনীতি এমন একটা জিনিস; যার সঙ্গে কবিতা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি কিছুই মেশানো যাবে না... রাজনীতি জুড়ে শুধু শান্তি আর বাক স্বাধীনতা থাকবে। যেখানে চোরের চুরি করার স্বাধীনতা থাকবে, বাটপারের বাটপারি করার স্বাধীনতা থাকবে কিন্তু সেগুলোর প্রতিবাদ করার অধিকার আপনার থাকবে না। প্রতিবাদ করলেই বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার ইত্যাদি ব্যাপার স্যাপার চলে আসবে। হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত

স্বয়ম

স্যাম এর ছবি

দুর্দান্ত!
অজানা অনেক কিছু জানা গেল এই লেখা আর সাথে জুড়ে দেয়া লিঙ্কগুলো থেকে।

শিল্প/সাহিত্যের নামে এরকম জামাতবান্ধব পল্টিবাজকে 'অপরিহার্য' করার চেষ্টা বোধগম্য নয়।
এ প্রসঙ্গে অনলাইনে জনপ্রিয় স্বস্তিবাক্য মনে হয় "ভাগ্য ভাল গোলাম আজম কবি ছিলনা"।

ইয়ামেন এর ছবি

তাতে কি হয়েছে? অধ্যাপক তো ছিলেন! খেলা আর সাহিত্যের পর এখন থেকে 'একাডেমিয়া এবং রাজনীতি' না মেশানোও প্রানের দাবী হওয়া উচিৎ! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

রাজনীতির সঙ্গে সবকিছুই মেশানো যাবে, যদি সেই রাজনীতির সঙ্গে পাকিস্তান বা জামাতের সংযোগ না থাকে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কায়কাউসের দুধভাই বলে কি সে কবি না?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হিমু এর ছবি

বোয়ালমামুদ চট্টগ্রামের বিখ্যাত বইয়ের দোকান বাতিঘরে আলো বিলাচ্ছেন দেক্লুম।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সেই নিয়েই তো এতো কেচ্চা... শুক্কুরবারের একটা দিন কোথায় আরামে আয়েশে কাটাবো একটু। তা না করে সারাদিন বাল মাহমুদ নিয়ে কাটালাম মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এক লহমা এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি আহা রে! না হয় কয়বার পাল্টিই খেয়েছে, শেষে ত নিজের জায়গাটা ঠিক চিনেছে আর ঠিক জামাটাও পড়েছে! আসলে মুস্কিল ত ওই লোকের ভক্তবৃন্দের - তারা তার মুখোশ বদলানোর সাথে তাল রাখতে পারে না! হো হো হো

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভক্তবৃন্দের জন্য মায়াই লাগে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুবোধ অবোধ এর ছবি
সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

হো হো হো ইমো দিয়ে বোঝানো যাবে না ভাই, কি হাসি যে হাসতেছি------------------পেট ব্যথা করতেছে------------

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

বাল মাহমুদ

----------আর কোনো লেখাই পড়তে পারছি না, গেলাম--- হো হো হো

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এইটা নতুন শুনলেন? এ তো বহুত পুরান

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নিটোল এর ছবি

দরকারি লেখা। নতুন প্রজন্মের কমবয়সী পাঠকদের মাঝে এই তথ্যগুলো ছড়িয়ে সত্যিকারের আল মাহমুদের চেহারা তুলে ধরা জরুরী।

_________________
[খোমাখাতা]

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সত্যিকারের আল মাহমুদের চেহারা সোনালী রঙের চোখ টিপি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক আমি তো এতকিছু জানতাম না তবু আল মাহমুদ নামটা শুনলেই কেমন লাগতো, সেই ঘিনঘিনে ভাবটা বেড়ে গেল। ভালো কিছু তথ্য জানলাম আপনার লেখা আর লিংকগুলো থেকে।

দেবদ্যুতি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আল মাহমুদ একজন জামাতী, এই তথ্যের বাইরে আর খুব বেশি তথ্যের প্রয়োজন হয় না। তবু মানুষ তার নানাবিধ পরিচয় দিয়ে তাকে জায়েজ করার চেষ্টা করে। তাই কিছু তথ্য রেখে দিলাম। কোনকালে দুইটা কবিতা লিখছিলো সেটা দিয়ে একটা লোক সারাজীবন ভক্তি পেয়ে গেলো, সাতখুন মাফ হয়ে গেলো। লোকটার কপাল।

ছোটবেলায় পড়েছিলাম 'দুর্জন বিদ্বান হইলেও সঙ্গ পরিত্যাজ্য'।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

খেলার সাথে পলিটিকস মেশাতে মেশাতে বড় হয়েছি বলেই বোধহয় পোস্টটা বেশ লাগল। ইদানীং অনেক পত্রিকাতেই নতুন করে আল-মাহমুদ বন্দনা শুরু হয়েছে। ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ ও প্রথম আলোর বিশাল ফিচার আমার চোখে পড়েছে। এই নব উদ্যমের কারণ কি কেউ জানেন?

পুনশ্চঃ তাওয়া গরম থাকতেই অধ্যাপক আনু মুহম্মদের এমন একটা কাট-পিস করে ফেলা দরকার।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দৈনিক পত্রিকাগুলোর সাহিত্য সাময়িকীর আল মাহমুদ বন্দনা আজকে নতুন না, পুরনো। তারা নিজেরাও জানে গত প্রায় ৫০ বছরে এই ব্যক্তি ভালো কোনো কবিতা লিখতে পারে নাই। কিন্তু ঐ যে আল মাহমুদ দেশের সেরা কবি এই তকমা জুটে গেছে। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে পহেলা বৈশাখ সব দিবসেই তার দু'লাইন কবিতার জন্য সম্পাদকদের দৌড় শুরু হয় মগবাজারের দিকে। শামসুর রাহমানের মৃত্যুর পর ব্যাপারটা আরো বাড়ছে।

আনু মুহম্মদ বিষয়ক তাওয়া গরমই থাকবে। দেশে তেল নাই গ্যাস নাই বাঘ নাই ইত্যাদি। আস্তে ধীরে হবেনে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

না নজু ভাই। কবিতার কথা বলিনি (সেটা সবসময়ই ছিল)। আল মাহমুদের ওপরে বিশাল ফিচার (কেবলই গুনমুগ্ধ অতীতের) কিংবা সাক্ষাৎকারের (তাও হোমওয়ার্ক বিহীন) কথা বলেছিলাম। এই জিনিসটা গত ২/১ বছর ধরে গণহারে দেখতে পাচ্ছি যা আগে ছিল না। এই ফিচার বা সাক্ষাৎকারগুলোকে দায়মুক্তি দিতে গেলে অধ্যাপক আনু মুহম্মদকেও দিতে হয়।

তাত্তারি লেখেন, তাপ্পর 'আনু-বার্গম্যান-বিবৃতি রক্ষা বিষয়ক জাতীয় কমিটি' গঠন কইরা আহবায়ক হুমু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আনুর চেয়ে ভানু ভালো চোখ টিপি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কল্যাণ এর ছবি

অণুও ভাল খাইছে

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

রানা মেহের এর ছবি

আল মাহমুদ সম্পর্কে তার ভক্তকুলের যে কথা সবচেয়ে বেশি শোনা যায় তার একটা হলো তাকে ফেলে দিলেও তার কবিতাকে ফেলতে পারিনা, তার ভাল কাজকে অস্বীকার করা যায়না।

এখন সমস্যা হচ্ছে তারা এই অমৃতমন্থন করতে গিয়ে গরলকে ক্ষমা করে দেন। তাদের প্রতিক্রিয়া অনেকটা হলো আল মাহমুদের নামে সবই বৈধ। আল মাহমুদের কবিতা পড়া আর আল মাহমুদকে প্রমোট করা যে আলাদা জিনিস এতেই একমত হতে পারেন না।
প্রসঙ্গত বলে রাখি একজন জামাতি কবি জীবনানন্দ থেকে ভাল লিখলেও আমার কিছু যায় আসেনা, কিন্তু কেউ যদি তার কবিতা পড়তে চান তাকে কিছু করার সাধ্য আমার নেই। কিন্তু তার ভক্তের কাছে কবি আল মাহমুদ, ব্যক্তি আল মাহমুদ, জামাতি আল মাহমুদ সবই সমান। এই লোকের বিরুদ্ধে কিছুই বলা যাবেনা।

লজ্জ্বা লাগে ভাবতে সাহিত্যের নামে আমরা এত অন্ধ হয়ে যাই, এর মধ্যে জামাত দেখিনা। এই লোক যেমন ঘাস খেয়ে জামাত করেনা তেমনি জামাতও কাব্যপ্রেমে অন্ধ হয়ে তাকে মাথায় তুলে রাখেনা। এই একটা লোককে দিয়ে জামাতের যতটা পাপশুদ্ধি হয়, জামাতের যতটা রিক্রুট হয়, জামাত যতটা মূল্ধারায় আসতে পারে বিশটা নিবেদিত জামাতের কর্মী দিয়েও অতটা হয়না।

আমাদের কবি এবং কাব্যপ্রেমী বন্ধুরা ভুলে যান, পাকিস্তানের খেলা কিংবা কাপড় ভালোবেসে যেমন পক্ষান্তরে পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রকেই লেভারেজ দেয়া হয়, আল মাহমুদের কাজও সেটা। জামাতকে কবিতার মোড়কে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা।

আমরা মেহেরুন্নেসা নামের এক কবির কথা ভুলে গেছি। জামাত ১৯৭১ সালে হত্যা করেছিল তাকে, নিষ্ঠুরতম উপায়ে। এই কবি বেঁচে থাকলে হয়তো সোনালী কাবিন থেকেও ভালো কাব্য লিখতে পারতেন। আল মাহমুদের দল তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি। এই যে কবিতার প্রতি ভালোবাসা, কবিতাবিষয়ক মুক্তবুদ্ধির চর্চা, সাহিত্যের স্বাধীনতা নিয়ে বড় বড় কথা বলে আমরা আল মাহমুদ আর জামাতকে বৈধ করতে চাই, এই আল মাহমুদই এমন একটা দলের মুখপত্র যেই দল সুযোগ পেলে মেহেরুন্নেসার মতো প্রতিটা কবির দেহকে ক্ষতবিক্ষত করতে এক সেকেন্ডের জন্য দ্বিধাগ্রস্ত হবেনা।

একটা পরিনত বয়স্ক, মুক্তিযুদ্ধ জানা দলকে এইসব বাচ্চাদের ধারাপাত শোনাতে ক্লান্ত লাগে, অসহায় লাগে। তারা ক্লান্ত হয়না। তারা জামাত দেখেনা। সাহিত্য দেখে। এই ক্লান্তিকর যাত্রা হয়তো কোনদিন শেষ হবেনা। ৫০ বছর পর জামাত বলবে দেখ আমাদের দলে যুদ্ধাপরাধী নেই, রগ কাটার মতো কেউ নেই, শুধু কবিতা আছে; সোনালী কবিতা।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মন্তব্যটা এতোটাই অসাধারণ হয়েছে, আর একটু গুছিয়ে পোস্ট দিয়ে দিতে পারেন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গুরু গুরু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

কল্যাণ এর ছবি

গুরু গুরু

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

ধ্রুব আলম এর ছবি

এ বিষয়ে একটা লেখা দেবো ভাবছিলাম, এখন ভাবছি মেটাব্লগিং হয়ে যাবে নাকি। আল মাহমুদ বিষয়ক সামান্য কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে এবং এ নিয়ে ফেসবুকে কিছু গ্রুপে বেশ তিক্ত আলোচনা হয়েছে আমার।

শান্ত এর ছবি

আপনার অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করলাম।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

শেহাব এর ছবি

চলুক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাসুদ সজীব এর ছবি

নাজু ভাই, যারা নানান তত্ত্ব দিয়ে কবি আল মাহমুদ এবং ব্যাক্তি আল মাহমুদে আলাদা করে এবং বলে ব্যাক্তি আল মাহমুদ বাতিল হলেও ’কবি’ আল মাহমুদ কে বাতিল করা যায় না তার কর্মের জন্যে ঠিক এরাই কিন্তু বঙ্কিম কে বাতিল করে সাম্প্রদায়িক বলে। অথচ আল মাহমুদ কে কোনদিন সাম্প্রদায়িক কবি বলে না। স্বাধীনতার পরে আল মাহমুদের কোন কাব্যগ্রন্থ মানুষকে আলোড়িত করেছে, দাগ কেটেছে জানতে চাই? আল মাহমুদের চেয়ে ঢের ভালো লিখেও রফিক আজাদ-শহীদ কাদেরী-আবুল হাসান-মহাদেব সাহারা পরিচিত কিংবা সম্মান কোনটাই পায়নি। কারণ তারা কেউই সাহিত্যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি টা কে ব্যবহার করেনি বলে। অথচ মাহমুদ ভক্তরা বলে সাহিত্যের সাথে রাজনীতি মিশাবেন না হো হো হো !

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আল মাহমুদের ভক্তরা খুব ভালো। তারা ময়লার স্তুপের মধ্যে একটা বকুল ফুল খুঁজে বের করে সেই গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ভুলে যেতে পারেন যাবতীয় দুর্গন্ধ। আমি অতোটা পারি না মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নৈষাদ এর ছবি

তৈরী করা ‘মিথ’ ভেঙ্গে দেয়া দুর্দান্ত লেখা...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আল মাহমুদের বিবর্তন জাসদ > বাকশাল > বিএনপি > জাতীয় পার্টি > জামায়াত -এভাবে হয়েছে বলে আমি মনে করি না। আমার এমন মনে না করার পক্ষে তথ্য দিচ্ছি।

১। ১৯৮৩ সাল, সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। বাংলার পাঠ্য বইয়ে সানাউল্লাহ্‌ নুরীর 'দারুচিনি দ্বীপের দেশে' নামে ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের এক গল্প আছে, আবার আল মাহমুদের লেখা 'নারকেলের ঐ পাতার ফাঁকে হঠাৎ দেখি কাল/ ডাবের মতো চাঁদ উঠেছে ঠাণ্ডা গোলগাল' কবিতাও আছে। তমদ্দুন একাডেমী নামের এক প্রতিষ্ঠান নজরুল-ফর্‌রুখ জয়ন্তী আয়োজন করেছে, সেখানে এই দুই লেখক হচ্ছে অতিথি। সেই অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলাম পাঠ্যপুস্তকের গল্প-কবিতার লেখকদ্বয়কে বাস্তবে দেখার জন্য। বেশ কয়েক বছর পরে জানতে পারি তমদ্দুন একাডেমী হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট।

২। 'সংগ্রাম' জামায়াতের মুখপত্র সেটা সবাই জানেন। আল মাহমুদের আত্মজীবনী 'যেভাবে বেড়ে উঠি' আর্লি এইটিজে সংগ্রামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে।

৩। একবার এক সাক্ষাতকারে আল মাহমুদ বলেছিল, কারাগারে থাকার সময়ই বিভিন্ন বইপুস্তক পড়ে সে ইসলামী ভাবাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আমার ধারণা, ঐ সময় আল মাহমুদ যুদ্ধাপরাধের দায়ে কারান্তরীণ জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সংস্পর্শে আসে এবং তাদের দলভূক্ত হয়। কারাগার থেকে বেরিয়ে সে সরাসরি জামায়াতে (বা তৎকালীন ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ) যোগ না দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভেক ধরে জামায়াতের হয়ে কাজ করে গেছে। খোদ জামায়াত সকল বিএনপি আমল এবং জাতীয় পার্টি আমলে সরকারের দুধকলা খেয়েই ছিল। বস্তুত আল মাহমুদ এখনো সরাসরি জামায়াতের সদস্য নয়। ১৯৭৪ অনওয়ার্ড আল মাহমুদ জামায়াতের পেইড এজেন্ট মাত্র।

আল মাহমুদের কবিতার দোহাই দিয়ে যারা সাফাই গায় তাদের ব্যাপারে কয়েকটা পর্যবেক্ষণ।

১। তারা আল মাহমুদের 'বখতিয়ারের ঘোড়া', 'আরব্য রজনীর রাজহাঁস' বা 'মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো' থেকে কোন উদাহরণ টানে না। কারণ, তারাও জানে এসব কাব্যগ্রন্থ থেকে উদাহরণ টানলে তাদের জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাবে।

২। যারা আল মাহমুদের পাঁক ঘেঁটে অমৃত তুলে আনতে আগ্রহী তারা একই কাজ কি ফররুখ আহমদের জন্য করে? ফররুখ আহমদ তো আল মাহমুদের তুলনায় ঢেড় উচ্চ মানের সাহিত্যিক, ঢেড় versatile। একই কাজ কি তারা জামায়াতের পেইড কবি মতিউর রহমান মল্লিক, মাসুদ আলী, রুহুল আমীন খান ইত্যাদিদের জন্য করে? জামায়াতের এইসব পেইড কবিদেরও তো ছিটেফোঁটা ভালো লেখা আছে।

যারা এটার সাথে ওটা না মিশিয়ে থাকতে চায় তারা সেটা থাকতেই পারে। মেহেরজানের এক অ্যাপোলজিস্ট একবার আমাকে রাস্তায় পেয়ে আমাকে আর সচলায়তনকে এক চোট গালাগালি করে বললো, "উভয়ের মন থেকে ঘটনাটির স্মৃতি মুছে ফেলে যুদ্ধ ও সংঘাতের বাইরের জমিনে তাদের নিয়ে যেতে পারলে। অর্থাৎ অভিজ্ঞতাটা এবং ইতিহাসটাকে নাই করে দিলে, সেই শূণ্য সময়, সেই ফাঁকা স্পেসে তাদের মিলবার একটা সুযোগ থাকলেও থাকতে পারে। এবং সেই ভালবাসার সাক্ষি হতে হলে দর্শকদেরও সব ভুলে যেতে হয়, চলে যেতে হয় ইতিহাস, ভূমি, মানুষ আর স্মৃতির বাইরের সেই শূণ্যস্থানে।" আমি এবং সচলায়তনের লোকজনরা নাকি এই ব্যাখ্যা বোঝার মতো ম্যাচিওরড না। তা হতেই পারে, আমি যে অপরিণত চিন্তার মানুষ সেটা আমার লেখা পড়লেই বোঝা যায়, সচলায়তনের লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো আমার মতো অপরিণত চিন্তার। সবার তো আর সবকিছু করার সামর্থ্য থাকে না। চোখের সামনে গণহত্যা-ধর্ষণ দেখে বা তার বাস্তব ইতিহাস পড়ে-শুনে-জেনেও কারো কারো পক্ষে হয়তো সব অস্বীকার করে অমন মহাশূন্যে গিয়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা থাকে। অমন ক্ষমতা আমার নেই, চাইও না। আমি বরং অপরিণত চিন্তার মানুষই থেকে যাই।

১৯৭১ সালে স্বেচ্ছায় কেউ মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে আর কেউ স্বেচ্ছায় রাজাকার হয়েছে। ২০১৫ সালে এসে আপনি কোন পক্ষে যাবেন সেটাও আপনার অভিরুচি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুবোধ অবোধ এর ছবি
হাসিব এর ছবি

ভ্রমনে আছি। বাসায় ফিরে কমেন্টটা টুকে নেব যায়গামতো।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

নয়া দিগন্তে তার আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছিল ধারাবাহিকভাবে "বিচূর্ন আয়নায় কবির মুখ"
না জেনেই পড়া শুরু করেছিলাম। এখন বুঝি, সেই লেখাগুলি ছিল ভান এবং ভ্রান্তিতে ভরপুর।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আল মাহমুদের পুরোটাতেই ভণ্ডামি। জামাতের মতাদর্শই সে ধারন করে। বিএনপি, জাসদ, বাকশাল, জাতীয় পার্টি এগুলা হলো তার ধান্দাবাজী

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

কল্যাণ এর ছবি

এই সব আল বাল টাল মাহমুদের থেকে ক্ষতিকর হল বাল মাহমুদের বিচি মুখে নিয়ে বসে থাকা হারামিগুলা। এরা নিজেরাতো বিক্রি হয়ই, পচনধরাতেও কাজ করে যায়। এদের নিয়ে কথা বলতে গেলে মুখ সামলে রাখা যায় না।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

সুবোধ অবোধ এর ছবি

দারুণ। হাততালি
হাসিব ভাইয়ের লেখাটা আগেই পড়া ছিলো। এইটা পড়লাম। এখন জেবতিক ভাইয়েরটা পড়তে হবে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নজমুল আলবাব এর ছবি

প্রথম মন্তব্যের জবাবে নজুভাই বল্ল, ঘৃনা করার জন্য এতকিছু জানার দরকার নাই। সেটাই আসল কথা। একটা লোক দেদারছে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। জামায়াতকে নিয়ে কাব্য রচনা করছে। সে প্রকাশ্যে মৌলবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এরপরে আর কী বাকি থাকে এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য?

কামারুর পোলারা তাদের বাপ দুনিয়ার সেরা পলিটিশিয়ান, ভালা মানুষ, ইমানদার বলে বলে মাতম তুলে বাপরে কবরস্থ করছে। গোলামের পোলাও তার মরহুম আব্বাজানের মতো বেহেস্তী বস্তু আর দুইটা নাই বলে ঘেউ ঘেউ করে। এইটাই নিয়ম। পুত্র-কন্যারা একটু চেচাবেই। চেচাতে থাকুক।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয় চোখ টিপি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আনু-আল হক এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা। আল মাহমুদের সোনালী কাবিন জমানার কবিতা এতো শক্তিশালী যে, তাকে একবাক্যে উড়ায়া দেয়া কঠিন, বিশেষত তাদের সামনে, যারা (১) তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক পল্টিবাজির খোঁজ রাখে না; (২) মুক্তিযুদ্ধের সময়কার তার অবদান নিয়ে পরিষ্কার ইতিহাস জানে না এবং (৩) তার বখতিয়ারের ঘোড়া জামানার কবিতা পড়ে নাই।

এই লেখায় জোর করে (যুক্তি ছাড়া) আল মাহমুদকে বর্জন করা হয় নাই। তাছাড়া, আরিফ জেবতিক এবং হাসিব মাহমুদের দুটো রেফারেন্স লেখাটিকে আরো শক্তিমান করেছে। এক কথায়, আল মাহমুদের পর্যালোচনায় এটি একটি অসাধারণ সংযোজন। ধন্যবাদ নজু ভাই।

----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সামনে সোনালী কাবিনের আল মাহমুদও থাকলো, বখতিয়ারের ঘোড়ার আল মাহমুদও থাকলো। কথিত মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদও থাকলো, জামাতী আল মাহমুদও থাকলো। বেছে নেওয়ার দায়িত্ব যার যার নিজের হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বাদুর পাগল  এর ছবি

উনি তো দেখি পল্টিবাজীতে মওদুদ আঙ্কেলকেও ফেইল করায় দিলেন ! খাইছে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মওদুদ তারে গুরু মানতে পারে চোখ টিপি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যদি আমার ভুল না হয় ২০০৮ এ বিডিনিউজে রাজু আলাউদ্দিন আল মাহমুদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেখানে ৭১ এ জামাতের ভূমিকা নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলছিলো- ' ৭১ এর ভুলের জন্য জামাত অনেক খেসারত দিয়েছে ইতিমধ্যে'
- কি খেসারত?
-তাদের অনেক লোক হত্যা করা হয়েছে
-কিন্তু তারা যে অনেক লোক হত্যা করেছে, অনেক ধর্ষন?
এই প্রশ্নে শুরু হয় তার মকারী। এই সব প্রশ্ন তাকে করা যাবেনা, সে রাজনীতি করেনা, সে একজন কবি, কবিকে এইসব রাজনীতিতে টেনে আনা ঠিকনা!

আল মাহমুদ বা এই জাতীয় লোকদের নিয়ে আমি কোন বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় করতে রাজী না। আমার যুক্তি একেবারে সহজ।
আমি যদি জানি এবং মানি জামাতে ইসলামী গনহত্যার অংশীদার এবং সবকিছু মিলিয়ে একটা অপরাধী সংগঠন তাহলে যে বা যারা যে কোন প্রকারে জামাতে ইসলামীকে সমর্থন করবে বা প্রতিরোধে নিস্ক্রিয় থাকবে তারা ও সেই অপরাধের শামিল।
সে এখন কবি না দার্শনিক না বিজ্ঞানী না জুতার কারিগর- তাতে কিচ্ছু যায় আসেনা। একটা গনহত্যাকারী দলকে যে সমর্থন করে সে ও ক্রিমিনাল। এই ক্রিমিনালকে 'গ্রে এরিয়া' 'বুদ্ধিবৃত্তিক ব্লা ব্লা ব্লা' ইত্যাদি বলে যারা ছাড় দেয়/ দিতে চায়- তাদেরকে ও আমি সমগোত্রীয় বলে মনে করি।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গ্রে এরিয়ায় থাকা লোকজন খুব বিপজ্জনক। এরা বেহেস্তে বসে দ্রাক্ষারস খেতে খেতে দোযখের আগুনে কাবাব পুড়িয়ে খেতে আগ্রহী। এরা জামাতী বুদ্ধিজীবীদেরকেও প্রশ্রয় দিতে চায় আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবেও নিজের নাম লেখাতে চায়। কঠিন পরিস্থিতি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুবোধ অবোধ এর ছবি

সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ-

রাজু: আপনি জামায়াতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন কিনা?

মাহমুদ: জামায়াতের রাজনীতি কী — সেটা আমার কাছে প্রথম ব্যাখ্যা করতে হবে। তাহলে আমি বুঝতে পারবো আমি সমর্থক কিনা। জামায়াতে ইসলাম ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী শরিয়ত প্রচলনের জন্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। আমি একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, আমি একজন কবি। কোথাও যদি তাদের সাথে আমার মিল হয় সেটা তো ভালো কথা আমি মনে করি, অসুবিধা কী? এবং তারা যদি সে-কারণে আমাকে খানিকটা পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তাহলে সেটা আমার লভ্য; এটাকে বলি না যে এটা দোষনীয়। যেহেতু তারা আদর্শগতভাবে আমার কবিতা বা আমাকে সমর্থন দেয় তাহলে এটা দোষণীয় মনে করি না। এ কারণে আমাকে রাজনীতি করতে হবে বা রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে — এটা জরুরী না।

রাজু: না, কিন্তু ওদের রাজনীতিতে আপনি বিশ্বাস করেন কিনা?

মাহমুদ: আমি ইসলামে বিশ্বাস করি। জামায়াতে ইসলাম দেশের নানান ঘটনায় নানা রকম রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালায়, এটার সাথে ইসলামের সম্পর্ক থাকতেও পারে। নিশ্চয় থাকবে, কারণ তারা তো ইসলামী দলই।

রাজু: এটা কোন ইসলাম? কারণ হচ্ছে, সেভেনটি ওয়ানে ওরা যখন স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করলো তখনও কিন্তু তারা বলছে যে ইসলাম রক্ষা হলো তাদের মূল দায়িত্ব। সেখানেও কিন্তু তারা ‘ইসলাম’কে ব্যবহার করছে।

মাহমুদ: জামায়াতে ইসলাম ইসলামের স্বার্থেই কোনো এক সময়ে মানে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ছিলো শেখ মুজিবের বা আওয়ামী লীগের অপজিট দল।

রাজু: এখানে আমি একটু বলি: সেভেনটি ওয়ানে ওদের ভূমিকা কেবল আওয়ামী লীগের, শেখ মুজিবের বিপক্ষে নয়, ওটা প্রকারান্তরে গোটা জাতির স্বার্থের বিপক্ষে চলে গেছে।

মাহমুদ: এটা আমি… ঠিক… সম্পূর্ণভাবে সঠিক মনে করি না।

রাজু: যদি এটা সঠিক না হয় তাহলে সেভেনটি ওয়ানের যে-অর্জন সেটা কি আওয়ামী লীগের অর্জন নাকি এই জাতির অর্জন?

মাহমুদ: মনে রাখতে হবে যে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

রাজু: সে-জন্যেই তো আপনি এর উত্তর দেবেন।

মাহমুদ: তখনকার জামায়াতে ইসলামীর — আমার যেটা ধারণা; আমি কিন্তু রাজনীতির লোক নই আগেই বলে নিচ্ছি। আমার ধারণা যেটা পাকিস্তানের যে-ঐক্য, যে ভাব-কল্পনা — এটার অনুসারী ছিলো তারা, সেটা তারা রক্ষা করতে চেয়েছে। এবং সেই জন্যে শেখ মুজিবের রাজনীতির বিরোধিতা করেছে। এবং বিরোধিতার পরিণাম তারা ভোগ করেছে।

রাজু: কী পরিণাম ভোগ করেছে? আমি তো কোনো পরিণাম দেখি না।

মাহমুদ: তাদের অসংখ্য লোক মারা গেছে।

রাজু: আর তারা যে অসংখ্য লোক হত্যা করছে, অসংখ্য নারীকে ধর্ষণে সহযোগিতা করছে, অনেক লুটপাট করছে…

মাহমুদ: এ বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন না করাই ভালো…

রাজু: আপনি মুক্তিযোদ্ধা, ফলে আপনি এসব বিষয়ে বলতে পারেন।

মাহমুদ: এ ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন না করাই ভালো।

রাজু: আপনি বলতে অনাগ্রহী কেন?

মাহমুদ: অনাগ্রহী না, আমি যে-বিষয়টা কম জানি সেটা বলতে চাই না। এটা একটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড…

রাজু: না আপনি কম জানেন — এই ব্যাপারটা ঠিক না।

মাহমুদ: একজন কবির কী সম্পর্ক… এখন কথা হলো আমি একজন কবি মাত্র।

রাজু: একজন কবির সাথে রাজনীতির সম্পর্ক তো হয়।

মাহমুদ: না, আমার সাথে রাজনীতির সম্পর্ক তেমন ঘটেনি। আমি আরাম কেদারায় বসে রাজনীতির চর্চা করি না। আমি কাব্যচর্চা করি, কবিতা নিয়েই কথা বলতে চাই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জামাতের টাকায় ভাত খেতে পারবে, জামাতের হয়ে গুনগান গাইতে পারবে, কিন্তু যেই ৭১ এ জামাতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে অমনি উনি কবি সেজে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবেন। বাটপারি আর কারে কয়

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মেঘলা মানুষ এর ছবি

পুরোই অ্যাডমিরাল আলাদিন। অপ্রিয় প্রশ্নের বেলায় কানে শুনতে পাবে না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জাতে মাতাল তালে ঠিক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কল্যাণ এর ছবি

১০০%। এইটা একেবারে বাইনারি, ১ অথবা ০। অবস্থান বিষয়ে এইখানে যাদেরই একাধিক বাক্য প্রয়োজন হয় কানের নিচে রাম থাবড় দিয়ে মুন্ডু ঘুরায়া দেয়া দরকার একেবারে।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, গবেষণাধর্মী পোস্টটার জন্য। এরপর কবি আল মাহমুদের পক্ষে কেউ সাক্ষী দিতে আসলেই এই পোস্টটার লিংক মুখের উপর ছুঁড়ে দেব।

-সতীর্থ আহসান

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নাশতারান এর ছবি

এই লেখাটার দরকার ছিলো। লেখার জন্য ধন্যবাদ।
লিখতে পারা, গাইতে পারা, বাজাতে পারা, আঁকতে পারা এগুলো হলো মানুষের একেকটা শৈলী, স্কিল। এগুলো ছাড়াও মানুষ হয়ে ওঠা সম্ভব। সেখানে একজন ব্যক্তির বিশেষ কিছু পারেন বলে মানুষ হিসেবে তার অধঃপতন কেন উপেক্ষা করতে হবে সেটা আমার বোধগম্য নয়। এমন কিছু কবিতাবোদ্ধা নই বলে কবিতা বিষয়ক সমালোচনায় যাবো না। কবি, আঁকিয়ে, গাইয়ে, বাজিয়ে যা-ই বলেন না কেন, গুণের কারণে মানুষকে আমরা একটু বেশিই প্রশ্রয় দিই বলে মনে হয় আমার। অনেকটা পড়ালেখায় ভালো বলে দস্যি ছেলের শাস্তি মওকুফ করার মতো একটা ব্যাপার। এই অন্যায় প্রশ্রয়ের চর্চার কারণেই হয়ত কারো কারো কাছে দেশের থেকে কবিতা বড় হয়ে ওঠে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যদি দানব কখনো হয় গো মানুষ...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অভিজিৎ সরকার এর ছবি

হুমায়ুন আজাদের একটা কথা মনে পড়ে, কবির কাজই হচ্ছে রহস্যীকরণ। কবির কবিতা থেকে রহস্যের বাতাবরণ সরিয়ে সৌন্দর্য খোঁজাটাই পাঠকের কাজ। সেই সৌন্দর্যসুধা ভোগ করতে গিয়ে আল মাহমুদীয় টোপে দৃষ্টিভঙ্গি আমূল পালটে গেলে মুশকিল। আমার মতে, ব্যক্তি আল মাহমুদের চেয়ে কবি আল মাহমুদই বেশি ভীতিকর, বেশি বিপজ্জনক। যেমনটা হাসিব মাহমুদের পোস্টে দেখা যায়, এঁরা তাঁদের কবি পরিচয় ব্যবহার করে অস্ত্র এবং ঢাল দুইভাবেই।
পোস্টের জন্যে ধন্যবাদ - অনেক জিনিস খুঁজছিলাম, যেগুলো একসাথে পেয়ে গেলাম।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জামাত কেন আল মাহমুদকে এতো তেল পানি দেয়? কবি হিসেবে তার স্বীকৃতি আছে বলেই। পুরনো মরচে পরা কবি পরিচয়টাই জামাত ব্যবহার করে, আর আমরাই আল মাহমুদ সেরা কবি বলে সেই পরিচয়ে প্রতিনিয়ত জৈবসার দেই

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

লাভ নাইক্কা এইসব লিখে। পাকিস্তান টিম সাপুট করার ব্যাফারে অনেক লোকজনকে বুঝানো যায়, কিন্তু আল মাহমুদ কেন জানি নিরাময় অযোগ্য।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আসলেই লাভ নাই। তবু লিখে রাখি, কেউ কেউ তো জানবে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আয়নামতি এর ছবি

দারুণ এই বাটপারনামার জন্য উত্তম জাঝা!
কত্ত বড় ফাজিল লোক, জায়গা মতো বলে 'মনে রাখতে হবে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা' আবার মুক্তিযুদ্ধে
জামাতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে বলে, 'মনে রাখতে হবে আমি একজন কবি'। এমন কথা আমি অন্য কারো মুখে শুনেছি/পড়েছি বলে মনে পড়ে না

আমাদের অদম্য আগ্রহে শুরু হয়েছিল বাঙালি মুসলমানের প্রথম সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ

ধর্ম দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে বিভক্ত করার মতো নষ্টামির জন্য এই লোককে উষ্টা দেয়া দরকার। একে নিয়ে কারা এখনো মুগ্ধ তাদের দেখতে ইচ্ছা করছে!
---------
আসাদ চৌধুরীও কী এই লোকের দলে নাকি? তার কবিতা ভালো পাই। মন খারাপ
ফরিদা পারভীনের প্রাক্তন স্বামী আবু জাফর আল মাহমুদের মত হিট সিকার না মনে হয়। সে তো তার গানগুলোকেই অস্বীকার করে এখন। আমি কী ঠিক জানি ভাই? ব্লগে না আসা হলে অনেক কিছু অজানাই থেকে যেতো। বিশেষ করে সচলের মত লেখক ফোরামে। কতো চুলচেরা বিশ্লেষণ হয় লেখায়, মন্তব্যে। সাক্ষী সত্যানন্দের সাথে সহমত, অনুনামাও আসুক জলদি। আমার জানার পরিধি বাড়ছে দিনদিন। সেজন্য আপনিসহ সচলের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

লোকটা একটা সলিড ভণ্ড। সমস্যা হলো কবিতার দোহাই দিয়ে একটা ভণ্ড লোক পার পেয়ে যাচ্ছে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আসাদ চৌধুরী আবার কিছু করেছেন নাকি? জানি না তো! ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নিভৃতি এর ছবি

ধন্যবাদ। খুব পরিষ্কার করে লেখার জন্য
অনেক কিছু জানা হোল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনিকেত এর ছবি

বস, খালি এই লেখাটার জন্যে আপনারে মাথায় তুলে রাখা উচিত !!
স্যালুট!!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

কে কী ভাবল, কে কী বলল, তাতে কিস্যু যায়-আসৈ না; পেচ্ছাব করি শালার কবিতায়।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

কল্যাণ এর ছবি

চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

কল্যাণ এর ছবি

মন্তব্য লাফ্যাং

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

কল্যাণ এর ছবি

নজু ভাই খুব ভাল লিখেছেন।

আর এমনই দুর্ভাগ্য আমাদের যে এতদিন পরেও এই জিনিস বারবার চিৎকার করে বলা লাগতেছে!

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অতিথি লেখক এর ছবি

পোস্টে নির্মলেন্দু গুণ এর স্মৃতিচারণ রয়েছে দেখলাম। এ প্রসঙ্গে কিছু তথ্য শেয়ার করি-

কবি নির্মলেন্দু গুণ মিলনের উদারতায় এক মঞ্চে আনার জন্য কিছু কবির নাম উল্লেখ করে, বর্জন চিন্তা রহিত করার জন্য পুনর্বিবেচনার আহবান জানিয়েছেন। ... তিনি কবি সৈয়দ আলী আহসান, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দিন প্রমুখকে একই মঞ্চে টেনে এনে ঐক্য বন্ধনের প্রস্তাব রেখেছেন।

প্রবন্ধ সঙ্কলন:- জামাতের মসজিদ টার্গেট ও বাউরী বাতাস, লেখক- গোলাম কিবরিয়া পিনু, প্রকাশকাল- ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫।

উক্ত গ্রন্থের 'কবিদের মঞ্চ, কিছু বিবেচনা' শীর্ষক প্রবন্ধে আক্ষেপ করে প্রবন্ধকার লিখেছেন-

নিজেদের মধ্যে মোটামুটি দর্শনগত মিল আছে, একই ধারায় পথ চলার ঐতিহ্য রয়েছে, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে উত্থিত বিবেচনা প্রায় কাছাকাছি, মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য প্রসঙ্গে ভাবনায় ফারাক কম, তাঁদের মধ্যে বিভেদ যদি থাকে বা মঞ্চ পার্থক্য থাকে, তবে তা কমিয়ে আনা যায়। তাতে যুক্তিযুক্ত উদারতা থাকে।

যেমন কবি শামসুর রাহমান কবি রফিক আজাদের পঞ্চাশতম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে তাঁর বাড়িতে যেতে পারেন। কিন্তু কবি শামসুর রাহমান যদি কবি আল মাহমুদের জন্মদিনে জামাত নিয়ন্ত্রিত মগবাজারের কোন বাসায় গিয়ে শুভেচ্ছা জানান, তা কোন যুক্তিতে আমরা সমর্থন করবো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।