পুরোনো ইটের সৌকর্য ঘেরা আধুনিক দালান

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৩/২০১১ - ৬:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বহুদিন বাদে আমরা আবার বসলাম কবিতার আড্ডায়। নিত্যদিনের ব্যস্ততা ঠেলে এই ধরণের আড্ডায় সচরাচর বসা হয় না আমাদের। কিন্তু একবার বসলে সময়ের তশতরীতে চুমুক দিয়ে আমরা আকণ্ঠ শুষে নেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মধুরতম আলাপনে কেটে যায় প্রহরের পর প্রহর। মৃন্ময় স্বপ্নেরা একদল সবুজ শিশুর বন্ধনহীন আনন্দ ছড়িয়ে ছুটোছুটি করে আমাদের চোখের ভেতরের মধু-কুপি ঘাসের চত্ত্বরে।

কথা হচ্ছিল কবিতার শব্দ নিয়ে। কবিতা যে শুধু সুন্দরতম শব্দাবলীর সুন্দরতম বিন্যাস নয়, শব্দোত্তর আরো কিছু, সেকথা জানা ছিল আমাদের। তবুও তো শব্দচয়ন কবিতার এক অত্যুজ্জ্বল দিক। কখনো কখনো বয়সী জরাগ্রস্ত শব্দও কবির মায়াবী জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় সাপের মতো খোলস পাল্টিয়ে নোতুন হয়ে উঠতে পারে। প্রসঙ্গত আমাদের আলোচনায় আবির্ভূত হন কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। মনীষার মিনারের শীর্ষদেশে এই কবি দেখেছিলেন ঝকঝকে বন্ধ্যাত্বের গম্বুজ। প্রতিদিন শব্দ খুঁজে ফিরেছিলেন প্রকৃতির ছায়ানিবিড় চত্ত্বর এড়িয়ে নিজস্ব আত্মার উৎসে। আমাদের হাতে ছিল তাঁর কাব্যসমগ্র, আর ছিল দু’টি কবিতার বই, 'অর্কেস্ট্রা'‘সংবর্ত'‘সংবর্ত' হাতে নিই, আমাদের দৃষ্টি আটকে যায় মুখবন্ধের সাহসী উচ্চারণে। সুধীন বলেছেন,

“আমিও মানি যে কবিতার মুখ্য উপাদান শব্দ; এবং উপস্থিত রচনাসমুহ শব্দপ্রয়োগের পরীক্ষারূপে বিবেচ্য। ছন্দে শৈথিল্যে প্রশ্রয় না দিয়ে, লঘু-গুরু, দেশি-বিদেশি, এমনকি পারিভাষিক শব্দও আচরণীয় কিনা, সে অনুসন্ধানও হয়তো কোনো কোনো কবিতায় রয়েছে; এবং শব্দ ও ছন্দ উভয়ই যেহেতু পরজীবী, তাই বর্তমান শব্দবিন্যাস ও ছন্দ-ব্যবহারের ভূমিকা লেখকের ভাবনা-বেদনা যার বহিরাশ্রয় আবার ইদানীন্তন ঘটনা-ঘটন।”
[মুখবন্ধ, ‘সংবর্ত', সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]

এটুকু পড়েই আমরা বুঝতে পারি, তাঁর কাব্যের আলোচনায় আমাদের বসতে হবে আরো বেশি সমঝদার হয়ে, বুদ্ধিশালী হয়ে। তাহলে হয়তো আমরা একটি অপরূপ কারূখচিত প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পাবো, অভিভূত হবো তাঁর পরিশীলিত প্রকরণ ও মনোরম বিন্যাসের শোভা দেখে।

আমরা এবার কল্পনার টাইম মেশিন চেপে অবতরণ করি সেই নিদাঘ সময়ের পোড়ো জমিনে। উনিশ শতক যখন সুখদ আমেজ ভেঙে বেরিয়ে এসে প্রবেশ করেছে যুদ্ধের নান্দীরোলের ভেতর। চারিদিকে ক্ষুধা ও মোহরের যুগল উল্লম্ফন। যুদ্ধ থেমে এলে তারপর সেই নিরালম্ব শনির সময়। আরও নির্বোধ যুদ্ধ, আরও বেহিসেবী মৃত্যু, আরো উদ্দেশ্যবিহীন বিনষ্টি, আরো সৃজনবিমুখ ধ্বংস। প্রকৃতি পাতাশূন্য, মানবতা অস্তাচলে, দ্বিধা টলমল বিশ্বাসের দূর্গে চূড়ান্ত ধ্বস। এই দুই যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়টাতেই আমাদের আলোচিত কবি আবির্ভূত হন সীমাহীন নিরাশা, অবিশ্বাস, অপ্রেম, বিনষ্টি ও নাস্তির বহ্ন্যুৎসবে বিদগ্ধ হয়ে। তিনি নৈরাশ্যবাদের আত্মার সন্তান।

এলিয়ট বলেছিলেন,

“কিছু কবির সমগ্র কবিতা পাঠযোগ্য, আর কিছু কবির সমগ্র রচনাবলী পড়বার দরকার হয়না। প্রসঙ্গে ও বক্তব্যে যে-কবি বার-বার নিজেকে অতিক্রম করে এসে নতুন দিগন্তের দরজা খুলে দিয়েছেন, নিরন্তর বিবর্তনে যিনি পুর্ণাঙ্গ, তাঁরই সমগ্র রচনাবলী দাবি করে পাঠকের অভিনিবেশ, সূচাগ্রপরিমান দাবি কেউ ছাড়ে না। পক্ষান্তরে, যে-কবি একই ভাবনা-বেদনায় আসীন সারাজীবন, একই প্রকাশভঙ্গীর একনিষ্ঠ সেবক, তাঁর রচনার অংশই কাব্যমোদির অপরূপ উত্তেজনার স্বাদ মেটাতে পারে।”

আব্দুল মান্নান সৈয়দের বিবেচনায়,

“সুধীন্দ্রনাথ দত্ত শেষোক্ত শ্রেণীর কবি। প্রসঙ্গ, প্রকরণ ও বিন্যাস-যার কথাই ভাবি না কেন, নব নব গন্তব্যে পৌঁছুনর উচ্চাশা কবির নেই। নেই রাবীন্দ্রিক শতবিচিত্রতা, একই কথা প্রায় একই ভঙ্গিতে তিনি বিভিন্ন কাব্যকোরাসে বলেছেন। একই কথা, কিন্তু দ্বিতীয় রহিত। অর্থাৎ সহজীবি কবিদের থেকে একেবারে আলাদা। তাঁর প্রকাশরীতি ও অভিজ্ঞতার পরিধি ছোট, ছোট কিন্তু গভীর, আর নিখুঁত নিটোল, নিজস্ব ও সমস্ত সুন্দর”।
['সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, কালো সূর্যের নিচে বহ্ন্যুৎসব', আব্দুল মান্নান সৈয়দ]

আলোচনার তশতরীতে রাখা কবির কাব্যসমগ্রে সব মিলিয়ে মাত্র একশ’ তিরিশটি কবিতা। তাই আমরা বরং এলিয়টের উপদেশ ভুলে অনায়াসে সবটুকুই পড়ে ফেলতে পারি। আর তাছাড়া তো আমরা তাঁর নিপুণ কারুকাজের দিকেই বেশী মনযোগী হতে চাই। সন্ধান করতে চাই তাঁর শব্দচয়নের গুহ্যত্ব ও ছন্দ ব্যবহারের মুনশিয়ানাকে। তিনি কতবড় কবি সে বিবেচনা বরং হোক অন্য সময়ে, অন্য কোনখানে।

সুধীনে খুঁজে পাই প্যাশান ও যুক্তির অপূর্ব অন্বয়। সেই কাব্যভাষায় খুঁজে পাই যুক্তির গ্রন্থিল পেশী, সুগঠিত কিন্তু সুডৌল। তবু গদ্যের সাথে এই কাব্যভাষার পার্থক্য বিস্তর। প্রকরণের আগা-পাশ-তলায় নিবিষ্ট যত্নের ছাপ। শব্দের সন্ধানে তিনি চলে গেছেন প্রাক-রাবীন্দ্রিক কালে, তারও আগে মধুসূদনেও হয়তোবা। ‘রূপদক্ষের হাতে পড়লে পুরোনো শব্দও কাব্যে বাঁধ সাধে না’, আমাদের এমনটাই মনে করিয়ে দেয় নিচের চরণগুলি, যেখানে খুঁজে পাই দীপ্তি ও ধ্বনির অপরূপ অন্বয়:

কক্ষের সংযত সজ্জা, হেমন্তের পক্ব পত্র-সম,
আস্বচ্ছ বসন তব, দরদের বলি শুভ্র ভালে,
ভিন্ন ভিন্ন অবয়ব মনে আছে; শুধু নিরুপম
অখণ্ড আননখানি সীমাশূন্য শূন্যে যে লুকালে।
[বিকলতা,'অর্কেস্ট্রা', সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]

আমরা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করি, পক্ব, পত্র-সম, তব, ভালে, আনন এইসব পুরোনো শব্দেরা কি দারুণ খোলনলচে পাল্টে আবির্ভূত হয়েছে রমণীয় রেশমি বসনে।

কিন্তু তার
বভ্রু কেশে অস্তগত সবিতার উত্তরাধিকার,
সংহত শরীরে
দ্রাক্ষার সিতাংশু কান্তি, নীলাঞ্জন চোখের গভীরে
তাচ্ছিল্যের দামিনীবিলাস;
গ্যেটে, হ্যেন্ডার্লিন, রিল্কে, টমাস মানের উপন্যাস
দেওয়ালের খোপে খোপে, বাখের সোনাটা
ক্লাভিয়েরে, শতায়ু ওকের পাটা
তেজস্ক্রিয় উৎকোণ পটলে;
বায়ব্য অঞ্চলে
রক্ষিত মঙ্গলদ্বীপ, অনাদি নগরী
মালা জপে, কাটায় শর্বরী
স্বপ্নাবিষ্ট সভ্যতার নিশ্চিন্ত শিয়রে।
[সংবর্ত, ‘সংবর্ত', সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]

বক্ষ্যমাণ কাব্যাংশে আমরা আবিষ্কার করি একটি নিখুঁত ক্রাফটম্যানশীপ, একটি আধুনিক রূপকল্প, একটি আঁটসাঁট বাঁধুনি, একটি ছন্দোবদ্ধ বহতা। কিন্তু দেখুন, কত পুরোনো শব্দের ঝাঁক এর পরতে পরতে! এ যেন প্রাগৈতিহাসিক পুরাকীর্তি থেকে ইট খুলে নিয়ে এসে বনেদি আধুনিক স্থাপত্য রচনা। শব্দ ব্যবহারে প্রাত্যহিক না হয়ে এই কবি প্রাক-রাবীন্দ্রিক শব্দচয়নে ফিরে যান। মধুসূদন সূচিত বাংলা কবিতার মননশীলতার ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। মাইকেলের অবলম্বন ছিলো মহাকাব্য আর সুধীনের গীতিকবিতা। তবে মাইকেল ও সুধীন্দ্রনাথ দু’জনেই অনেকখানি নিয়মবদ্ধ। তাই ধূর্জটিপ্রসাদ মন্তব্য করেন,

“সুধীনের রচনাতে যে নিয়ম পাই সেটাও প্রায় দুর্নিবার। একধারে চরাচর বিশ্ব, অন্যধারে ছন্দ। একধারে কসমস, অন্যধারে ক্রাফট। রচনাকে সে পারফেক্ট করতে চায়’।

স্বরবৃত্ত নয়, অক্ষরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ততেই আত্মস্বভাবী স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পেয়েছেন সুধীন্দ্রনাথ। অক্ষরবৃত্ত সহায়ক হয়েছে তাঁর গাম্ভীর্য ও পৌরুষের প্রকাশে আর মাত্রাবৃত্ত দিয়েছে জীবনরসিকতার ও জীবনসম্ভোগের সাক্ষ্য। সমসাময়িক কবিদের মধ্যে বোধকরি সুধীন্দ্রনাথ একমাত্র কবি যিনি কোন গদ্য কবিতা লিখেন নি। বিশুদ্ধ চিন্তাকে কাব্যে রূপান্তরের অভিপ্রায়েই কি তাঁর এমন ঋজু পথ চলা? কিন্তু তিনি তো গদ্যছন্দের প্রয়োজনীয়তা মেনে নিয়েছিলেন। হয়তো সমসাময়িক কবিদের জন্য গদ্যছন্দকে তিনি আদর্শ বলে মনে করেন নি। অক্ষরবৃত্তের শোষণশক্তির অনন্য উদাহরণ খুঁজে পাই তাঁর কবিতায়। অক্ষরবৃত্তের সমান মাপের স্তবক গঠন করে শিলা-সদৃশ কবিতা রচনা করেছেন তিনি। সনেট রচনায় দেখিয়েছেন বিস্ময়কর সংহতি। আঠার মাত্রার মুক্তক অক্ষরবৃত্তের সুস্থির প্রয়োগ ঘটেছে ৮+১০ চালে। পর্ব-বিভাজনের চেনা রূপ ভেঙে দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন, ফলে ছন্দ হয়েছে প্রবহমান। তাঁর একটি আশ্চর্য কবিতার মিল-বিন্যাস নিয়ে কথা বলি।

[অন্তর্মিল]
উত্তীর্ণ পঞ্চাশ বনবাস প্রাচ্য প্রাজ্ঞদের মতে
অতঃপর অনিবারণীয়; এবং বিজ্ঞানবলে
পশ্চিম যদিও আয়ুর সামান্য সীমা বাড়িয়েছে
ইদানীং তবু সেখানেই মৃত্যুভয় যৌবনের
প্রভু, বার্ধক্যের আত্মপহারক। অশ্রুত তাড়ক...

[অন্তমিল]
অবশ্য আমার
পক্ষে সংগত যে নয় অনুতাপ, সে-কথা স্বীকার
করি; কারন যদি মগ্ন শৈলে আমার মাতাল
নৌকা বানচাল হয়ে বর্তমানে বিশিষ্ট কঙ্কাল
অপ্রাপ্ত সৎকার শব পচে পচে অস্থিসার যেন
তথাপি সেকালে নিরুদ্দেশ যাত্রার সংজ্ঞায় হেন...

[অমিল]
ভেলা
আমি ভাসিয়েছিলুম একদা তাদেরই মতো, আজ
এটুকুই আমার পরম পরিচয়। আমাকেও
লক্ষ্যভেদী নিষাদের উল্বন উল্লাস উদাসীন
নদীর উজানে দিয়েছিল অব্যাহতি মাল্লাদের
গুণটানা থেকে...

[অন্তমিল]
কিন্তু গত শতকেও উল্লিখিত ত্রাসের সন্ধান
পায়নি স্বয়ং র্যাঁ বো, সার্বজন্য রসের নিপান
মৃগতৃষ্ণানিবারণে অসমর্থ বলে, সে যদিও
ছুটেছিল জনশূন্য পূর্ব আফ্রিকায়, পরকীয়...

[জটিল অন্তমিল]
উপরন্তু, দেবযানি শর্মিষ্ঠার কলহকলাপে
আমার অদ্বৈতসিদ্ধি পন্ড হয়ে থাক বা না থাক,
অকাল জরায় আমি অবরুদ্ধ নই শুক্রশাপে;
অজাত পুরুষ, সঙ্গে ব্যতিহার্য নয় দুর্বিপাক
অর্থাৎ প্রকট বলে সম্ভোগের নও বঞ্চনা,
পঞ্চাশে পা না দিতেই, অন্তর্যামী নৈমিষে নির্বাক:
এবং রটায় বটে মাঝে মাঝে আজও উদ্ভাবনা
পরিপূর্ণ মহাশূন্য ভস্মীভুত জ্যোতিষ্কের প্রেতে,
প্রাক্তন অভ্যাস দোষে ভুলে যায়, মৌনের মন্ত্রণা
উন্নীত অমর কাব্যে কাগজের সুকুমার শ্বেতে
[যযাতি, ‘সংবর্ত', সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]

একই কবিতার ভেতরে নানারকম মিলের কুশলী খেলা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারি না। প্রতিটি স্তবকে ২২ টি করে পঙক্তি। প্রতিটি পঙক্তিতেই ১৮ মাত্রার অক্ষরবৃত্তের নাচন। বড়ই মনোহর।

কবি জীবনের পরিণত বয়সে একই কুশলতা তাঁকে ঘিরে ছিল নিত্যই। ‘উপস্থাপন’ কবিতাটি দিয়ে সেদিনের মতো আলোচনা শেষ হয় আমাদের। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে ১৮ মাত্রার অক্ষরবৃত্তে সজ্জিত।

আমি ক্ষণবাদী; অর্থাৎ আমার মতে হয়ে যায় (১৮)
নিমেষে তামাদি আমাদের ইন্দ্রিয়প্রত্যক্ষ, তথা (১৮)
তাতে যার জের, সে-সংসারও। অথচ সময় ভূত (১৮)
থেকে ভবিষ্যতে ধাবমান নয়। এবং যদি বা (১৮)
তার সাক্ষ্য থাকে অন্ত্র কি নাড়ীতে, তবু সে নিভৃতে...(১৮)

আমরা কবিতার লুকোনো মিলগুলি খুঁজে বের করি। বিস্ময়ে দেখি, অন্তমিলের কৌশলে কবিতাটি মুক্তক অক্ষরবৃত্তের রূপবতী সাজে অনন্যা হয়ে উঠেছে।

আমি ক্ষণবাদী;
অর্থাৎ আমার মতে হয়ে যায় নিমেষে তামাদি
আমাদের
ইন্দ্রিয়প্রত্যক্ষ, তথা তাতে যার জের,
সে-সংসারও। অথচ সময়
ভূত থেকে ভবিষ্যতে ধাবমান নয়।
এবং যদি বা তার সাক্ষ্য থাকে অন্ত্র কি নাড়ীতে,
তবু সে নিভৃতে...

এমন অদ্ভুত প্রকৌশল বাংলা কবিতায় বিরল বলে মনে হয়। আমরা সাব্যস্ত করি, সুধীন তাঁর সময়ে নিজস্ব বলার ভঙ্গিমায়, শব্দচয়নে ও কাব্যে ধ্রুপদী গুণারোপে ক্রমেই অপ্রতিরোধ্যভাবে স্বকীয় হয়ে উঠেছেন। তাই তিনি পৃথক অধ্যয়ন ও অনুসন্ধানের দাবী রাখেন। উড়ে যাওয়া পাখির ফেলে যাওয়া পালকের মতো ভবিষ্যতের কাব্যপ্রয়াসে যুক্ত হবার কিছু সম্ভাবনাও বুঝি রেখে যান চুপি চুপি।

আজ আমাদের একান্ত নির্জন মুহূর্তগুলো নিরন্তর খুন হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বাসের চাতালে পচনের গন্ধ টের পাচ্ছি। সহজ সামাজিক সম্পর্কগুলো ক্রমশ হয়ে যাচ্ছে জটিল থেকে জটিলতর। কর্পোরেট বেনিয়াদের তাজে বিম্বিত হতে দেখছি মনীষার মেকী হীরে। দিকে দিকে চলছে দখল ও দূষণের অপ্রতিরোধ্য মচ্ছব। আমাদের ভিটেয় ঘোড়ার বিষ্টা, ঘরময় উল্লুকের বমি, নোনাজলে ডুবে গেছে যাবতীয় পাললিক ভূমি। ফিরে কি এলো এলিয়টের ‘পোড়ো-জমি’? এই নিদাঘ সময় ও যুগ-যন্ত্রণাকে বক্ষে ধারণ করতে হলে কেমন হবে কবিতার শব্দমালা, কোন বিন্যাসেই বা ফুটবে একালের শব্দফুল, কোন সুরে বাজবে তাঁর ছন্দের নূপুর। এসব ভাবতে ভাবতে আমাদের দৃষ্টি হারিয়ে যায় অনন্ত ছায়াপথ পেরিয়ে অচেনা কোন কৃষ্ণবিবরে।

আসন্ন প্রলয়
মৃত্যুভয়
নিতান্তই তুচ্ছ তার কাছে।
সর্বস্ব ঘুচিয়ে যারা ব্যবচ্ছিন্ন দেহে আজ বাঁচে
একমাত্র মুমূর্ষাই তাদের নির্ভার।
[উজ্জীবন, ‘সংবর্ত', সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]

পাদটীকাঃ
এই রচনার অনেকাংশ আব্দুল মান্নান সৈয়দের ‘সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কালো সূর্যের নিচে বহ্ন্যুতসব’ থেকে সচলায়তনের জিজ্ঞাসু পড়ুয়াদের জন্য ভিন্ন সুরে পরিবেশিত হয়েছে। আব্দুল মান্নান সৈয়দের নিরলস শ্রমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আবদুল মান্নান সৈয়দের সমালোচনাগুলো আসলেই চমৎকার।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

যথার্থ বলেছেন। কবিদের কাব্যবিবেচনায় তিনি অপরিসীম নিষ্ঠা ও ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছেন। যেখানে অনেক কাব্য সমালোচক কবিদের মাংস কৃমি খুঁটে খুঁটে দূর্গন্ধই ছড়িয়েছেন, সেখানে নিজ বিবেচনার প্রতি সৎ থেকে অনেক উপেক্ষিত কবির কাব্যপ্রচেষ্টার ভেতরের সোনালি সুরভী সন্ধানের প্রচেষ্টায় তিনি ব্রতী ছিলেন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

খাইছে!!! অ্যাঁ আমি আর কবিতা লইয়া কোথাও ফাল পাড়ুমনা ইয়ে, মানে...

এত্ত এত্ত ডাইমেনশন আর এতদিন শুধু যায়-খায় মিলাইয়া গেলাম পড়ার সময় ওঁয়া ওঁয়া

অতীত

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সুবর্ণ অতীত,
কুছ পরোয়া নেহি। আমরা তো প্রতিমুহূর্তেই শেখার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছি। চোখ বন্ধ করে থাকলাম কি পিছিয়ে পড়লাম। তবে 'ডাইমেনশন'-এর অবতারণা যদি কাব্যরস সৃষ্টির সহায়ক না হয়ে পরিপন্থী হয়, তবে নির্দ্বিধায় কবুল করি, সেটি পরিত্যাজ্য। কন্ঠহার যদি শোভা না বাড়িয়ে গলার বেড়ীতে পরিনত নয় তবে পরিহিতা রমণী কি রমণীয় হবেন?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

চমৎকার লাগলো বস!

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

রাধিকার মন চিনে কৃষ্ণের বাঁশীর সুর।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সম্ভবতঃ সত্যজিত রায় বলেছিলেন যে, "শৈল্পিক ছবি দেখার জন্য দর্শকের নূন্যতম শিল্পজ্ঞান থাকতে হবে"। একইভাবে একটা কবিতা বোঝার জন্য কবিতার পাঠকেরও নূন্যতম কাব্যজ্ঞান থাকা প্রয়োজন। ছন্দ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে ছন্দের জাদু; রস সম্পর্কে জানা না থাকলে কাব্যরসের মজা - এগুলো পাওয়া সম্ভব না। সমস্যা হচ্ছে কবিতার পাঠকদের খুব কম অংশ এই কষ্টটা করতে চান। অথচ এই পরিশ্রমটুকু করলে সেটা তাকে বহু বহু গুণ বেশি ফিরিয়ে দেবে। কবিতার টেকনিক্যাল বিষয়গুলো সহজবোধ্য করে লেখা গেলে অনেকেই এই বিষয়ে আগ্রহী হবেন।

কাব্যকৌশল বিদ্যার বিচারে এই লেখাটি প্রাথমিক পর্যায়ের নয়, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কোনো ভাবেই প্রাথমিক বা মাধ্যমিকের বিষয় নয়। প্রাথমিকের জন্য বরং সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত জুতসই। এর জন্য এই লেখাটির গুরুত্ব কমে গেল এমন ভাবাটা বাতুলতা মাত্র। আগ্রহী পাঠকের উচিত লেখাটির প্রিন্ট আউট নিয়ে সংরক্ষণ করা। যেন মাঝে মাঝে এটা পড়ে নিজের অগ্রগতিটা মেপে নেয়া যায়।

কবি'র কাছে আবেদন, তিনি যেন এই প্রচেষ্টাটা অব্যাহত রাখেন। ছন্দ-মাত্রা-রস-শব্দ প্রকরণ নিয়ে আমরা পড়তে চাই। সেখানে বিভিন্ন কবির কর্ম থেকে উদাহরণ আসুক পদে পদে, যেন আম-পাঠক সহজে তার গভীরে প্রবেশ করতে পারে। কাব্যবিদ্যা'র বিদ্যালয়ের যাত্রা শুভ হোক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

পাণ্ডব দা,
অত্যন্ত সহৃদয় মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

সমস্যা হচ্ছে কবিতার পাঠকদের খুব কম অংশ এই কষ্টটা করতে চান। অথচ এই পরিশ্রমটুকু করলে সেটা তাকে বহু বহু গুণ বেশি ফিরিয়ে দেবে।

এমনিতেই কবিতার ব্লগে পাঠকের হিট সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তার উপর আবার কবিতার ক্লাশ। জানিনা পড়ুয়া ক'জন পাওয়া যাবে। তবে উদ্ধৃত কথাগুলোর উপর বিশ্বাস রাখলে পাঠকের যে লাভ বই ক্ষতি হবে না সে বিষয়ে আপনার সাথে আমি সহমত।

কবিতার টেকনিক্যাল বিষয়গুলো সহজবোধ্য করে লেখা গেলে অনেকেই এই বিষয়ে আগ্রহী হবেন।

এ বিষয়ে এই জায়গায় আপনার মন্তব্যের পিঠে প্রতিমন্তব্য করেছিলাম। হয়ত আপনার নজর এড়িয়ে গেছে। তাই পুনরুল্লেখ করলাম।
আপনার মন্তব্য,

কবি, এই আলোচনাটা দরকারী - অন্ততঃ কবিতার পাঠকদের কাছে। এখানে যা বললেন সেগুলোকেই একটু বিস্তারিতভাবে, উদাহরণসহ লিখে পোস্ট করে দিন সচলের পাতায়। আলোচনাটা সেখানে চলুক। তাতে আমাদের জানার পরিধি বাড়বে, জানার মধ্যে থাকা ভুল দূর হবে।

আমার প্রতিমন্তব্য,

এরকম একটা পোস্ট দেবার কথা একবার চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু পরমুহূর্তেই সাত-পাঁচ ভেবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। এখন ভাবছি, কেতাবী আলোচনায় না গিয়ে এই বিষয়গুলিকে লঘু আদলে ফুটিয়ে তোলা যায় কি না।

হয়ত একটা ধুম আড্ডার ছবি আঁকা হলো। তাতে কতগুলো চরিত্রের সংলাপের মধ্যদিয়ে উঠে আসলো বিষয়গুলো। হালকা রসিকতাও থাকলো কিছু। কিন্তু আমার তো ষষ্ঠপাণ্ডব, হিমু, নজরুল, তিথীডোর, তাসনীম, অনিন্দ্য, কৌস্তুভ (আরো অনেকেই এই তালিকায় আছেন, তালিকা দীর্ঘ হবে বলে তাদের নাম অনুচ্চারিত থাকলো) এইসব সচল কিম্বা হালের মেঘদূত নামের অচলটির মতো গদ্য লেখার মুগ্ধ করা শৈলী নেই, নেই কুশলী প্লটবিন্যাসের ক্ষমতাও। তাই এমন আলোচনার ছবি তুলে ধরতে আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আসুন না, কয়েকজন মিলেই লেখা যাক। টেকনিক্যাল বিষয়গুলির দায়িত্ব না হয় আমিই নেব।

আশাকরি আপনার ও সংশ্লিষ্ট অন্য সবার অভিমত পাবো।

কাব্যকৌশল বিদ্যার বিচারে এই লেখাটি প্রাথমিক পর্যায়ের নয়, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কোনো ভাবেই প্রাথমিক বা মাধ্যমিকের বিষয় নয়। প্রাথমিকের জন্য বরং সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত জুতসই। এর জন্য এই লেখাটির গুরুত্ব কমে গেল এমন ভাবাটা বাতুলতা মাত্র। আগ্রহী পাঠকের উচিত লেখাটির প্রিন্ট আউট নিয়ে সংরক্ষণ করা। যেন মাঝে মাঝে এটা পড়ে নিজের অগ্রগতিটা মেপে নেয়া যায়।

আমি বলি কি, আগ্রহী পাঠকের উচিত শুদ্ধস্বর প্রকাশিত 'আব্দুল মান্নান সৈয়দের ‘সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কালো সূর্যের নিচে বহ্ন্যুৎসব’ বইটিই কিনে ফেলা। প্রিয় পাঠক যে আমাকে ঐ প্রকাশনীর গুপ্ত এজেন্ট ভেবে বসবেন না সে বিশ্বাস আমার আছে।

কবি'র কাছে আবেদন, তিনি যেন এই প্রচেষ্টাটা অব্যাহত রাখেন। ছন্দ-মাত্রা-রস-শব্দ প্রকরণ নিয়ে আমরা পড়তে চাই। সেখানে বিভিন্ন কবির কর্ম থেকে উদাহরণ আসুক পদে পদে, যেন আম-পাঠক সহজে তার গভীরে প্রবেশ করতে পারে। কাব্যবিদ্যা'র বিদ্যালয়ের যাত্রা শুভ হোক।

এই প্রেরণা আমাকে ল্যাজারাসের মতো নবজন্ম দেয়। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো। তবে মিষ্টির ভেতরে তেতো ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দেবার জন্য আপনাদের সবার পরামর্শ প্রয়োজন হবে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কবি'র কাছে আবেদন, তিনি যেন এই প্রচেষ্টাটা অব্যাহত রাখেন। ছন্দ-মাত্রা-রস-শব্দ প্রকরণ নিয়ে আমরা পড়তে চাই। সেখানে বিভিন্ন কবির কর্ম থেকে উদাহরণ আসুক পদে পদে, যেন আম-পাঠক সহজে তার গভীরে প্রবেশ করতে পারে। কাব্যবিদ্যা'র বিদ্যালয়ের যাত্রা শুভ হোক।---সহমত

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ, চেষ্টা রাখবো। আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনার আলোচনাটি পড়লে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে ইচ্ছা করে। তাদের উদ্দেশ্যে, যারা আমাদের মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে বাঁধাধরা কিছু কবিতার প্রাণহীন চর্বিতচর্বণ ভাব-ব্যাখ্যা নামকরণের সার্থকতা কবির মনোভাব ইত্যাদি মুখস্থ করে যেতে বাধ্য করত। হই হই করে বিক্রি হওয়া সেসব ব্যাখ্যাবইতে আবার অন্যান্য নামী কবিদের কবিতাংশের উল্লেখ ঢুকিয়ে পচা মাংসের ঝোলে কাজুবাদাম বাটা দিয়ে রগরগে করার মত প্রচেষ্টা থাকত, কিন্তু সব সুবোধ ছাত্রদেরই উত্তরে সেই একই স্তবকের 'সুচিন্তিত' ব্যবহার পুরো প্রক্রিয়াটার মেকিত্ব'কে বেপর্দা করে দিত।

যাক, সেই পাষণ্ডদের কথা ছাড়ি। আপনার আড্ডায় আসি। একটা কথা আমি বরাবরই বলে থাকি, যে আধুনিক কবিতা বোঝার মত অভিজ্ঞ পাঠক আমি নই। তবে আপনি এমন নিয়মিত আলাপচারিতা জারি রাখলে অন্তত কিছু শেখার আশা রাখি। পাণ্ডবদার সঙ্গে প্রচণ্ড সহমত।

প্রায় সারাজীবন আমি এক ভাবেই কবিতা পড়ে এসেছি, তা হল (অজ্ঞানে) মাত্রাবৃত্ত ছন্দে। অনেক কবিতা অন্য লোকে পড়ে ছন্দের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতেন কিন্তু আমি ধরতে পারতাম না। তারপর সচলে একাধিক জন কবিতার ক্লাস বইটির পরামর্শ দেওয়ায় সেটা পড়ে বুঝতে শুরু করেছি অক্ষরবৃত্ত। স্বরবৃত্ত ছন্দ নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা আছে আমার। আপনি বা অন্য কেউ একটা আলোচনা দিলে ভালো হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

কৌস্তুভ ভাই,
দীর্ঘ ও সুবিন্যস্ত মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

আপনার আলোচনাটি পড়লে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে ইচ্ছা করে।

সেরেছে, আমি আবার হূকুমের আসামী হবো না তো!

আপনি এমন নিয়মিত আলাপচারিতা জারি রাখলে অন্তত কিছু শেখার আশা রাখি।

আমরা সবাই প্রতিমুহূর্তে একে অপরের কাছ থেকে শিখি। যাক গে সে কথা। হালকা মেজাজে কাব্যের আলাপচারিতা জারি রাখতে হলে আপনার রসবোধের কাছে হাত পাততে হবে আমার। মাধুকরি চাইবো, আশাকরি দুয়ারে দাঁড়ানো বৈরাগীকে ফিরিয়ে দেবেন না।

তারপর সচলে একাধিক জন কবিতার ক্লাস বইটির পরামর্শ দেওয়ায় সেটা পড়ে বুঝতে শুরু করেছি অক্ষরবৃত্ত।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর এই বইটি যখন আমার হাতে এসেছিল তখন ক্লাশ সেভেনে পড়ি। এমন লঘু মেজাজে, সহজিয়া ভঙ্গিমায় ও বিচিত্র উদাহরণে ছন্দের আলোচনা আর কোন বইয়ে পড়িনি এ পর্যন্ত। অবশ্য এ আকাট মূর্খের বিদ্যেরই বা দৌড় কতটুকু?
এখনো মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে বইটি পাওয়া যায়।

স্বরবৃত্ত ছন্দ নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা আছে আমার। আপনি বা অন্য কেউ একটা আলোচনা দিলে ভালো হয়।

প্রতিমন্তব্যে কিংবা ইমেলে অস্পষ্টতাগুলো জানান। খেটে খুটে ঘেঁটে একটি আলোচনা দেবার চেষ্টা নিই।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তাসনীম এর ছবি

লেখাটা প্রিয়তে নিয়েছি। সময় নিয়ে পড়তে হবে, দিনের কাজের মাঝে সবকিছুতেই হুড়াহুড়ি। তবে যেটুকু পড়েছি তাতে পাণ্ডবের সাথে সহমত জানাচ্ছি। চালু থাকুক কবিতালয় (কবিতা + বিদ্যালয়)।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বস্‌, "গদ্য লেখার মুগ্ধ করা শৈলী নেই, নেই কুশলী প্লটবিন্যাসের ক্ষমতাও"- এ'ধরনের কথা ছাড়ুন। আপনি লিখতে-পোস্ট করতে শুরু করুন, দেখবেন সেখানে আলোচনাটা ঠিকই শুরু হয়ে যাবে। তারপর সেই আলোচনার প্রভাবে মূল পোস্টে যদি সম্পাদনা করতে হয় তাহলে সেটাও করবেন। আমরা হচ্ছি সম্মিলিত শক্তি। আমারদের সম্মিলিত পড়া-শোনা, জ্ঞান-বোধ, প্রচেষ্টা থেকে আউটপুট বের হবে। ব্লগের শ্রেষ্ঠত্ব তো এখানেই!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

পাণ্ডব দা,
জবাব লিখতে দেরী হবার কারণে বিনীত ক্ষমাপ্রার্থী। নিজের মুদ্রাদোষ থেকে বেরিয়ে আশা খুব শক্ত কাজ। তবে ইনশাআল্লাহ, আমি এ বিষয়ে লিখবো, আজ আর কাল হোক।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।