উদ্ভট উটের পিঠে চলা আমরা এবং একজন জাফর ইকবাল

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ২৭/১১/২০১৩ - ১২:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ – কবি শামসুর রহমানের এ কথাটা প্রায়ই সমালোচনার জন্য ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন আড্ডায়, আলোচনায়, টক শোতে দারুণ ব্যবহার হয় এই পদগুলো। কিন্তু আমরা কি আদৌ ভেবে দেখি ‘স্বদেশ’কে উঠের পিঠে চাপাচ্ছে কে? না, প্রসঙ্গের অবতারণা কোন কোন রাজনৈতিক দলকে সমালোচনা করার জন্য করি নি। নয় কোন বড় কর্পোরেট হাউজ, মিডিয়া হাউজ বা অন্য কোন সংগঠনকে আক্রমণ করার জন্য। কথাটা বললাম আমাদের সমালোচনার জন্য। আমাদের বলতে নিতান্তই নিরীহ সাধারণ আমজনতাকে বোঝাচ্ছি। ‘আমাদের’ বলতে তাদের বোঝাচ্ছি যারা পরিবর্তন বলে বলে চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে ফেলে কিন্তু পরিবর্তনের জন্য এগিয়ে যায় না। পরিবর্তন যে এমনি এমনি হওয়া সম্ভব নয়, সেটা বুঝেও যারা না বোঝার ভান করে এবং সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে যদি পরিবর্তনের জন্য কেউ এগিয়ে যায়, তাকে পেছন থেকে ক্রমাগত টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করে।

বুদ্ধিমান পাঠক হয়তো এতক্ষণে বুঝে ফেলেছেন ‘কথার জল’ কোথায় গিয়ে গড়াচ্ছে। হ্যাঁ, প্রসঙ্গটা জাফর ইকবাল স্যারকে নিয়ে। আমার সব সময় মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভাগ্যবান যে তাদের একজন জাফর ইকবাল আছে। কথাটা আবেগ থেকে বলছি না। একেবারে বাস্তবতার নিরিখে বলছি। অনেকে হাসবেন, অনেকে দ্বিমত পোষণ করবেন। তাদের মতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি আমি যৌক্তিক অবস্থান থেকেই কথাটা বলছি।

পৃথিবীর প্রতিটা বড় বড় জাতির সুবর্ণ সময়ের দিকে যদি আমরা তাঁকাই তাহলে দেখতে পাবো কিছু মানুষ উপদেষ্টা বা বুদ্ধিজীবী হিসেবে শাসকদের পাশে ছিলেন। তাঁরা ছিলেন নীতিনির্ধারক। রাষ্ট্রের ভালো মন্দ বিচার করার গুরুভার তাঁদের হাতে থাকতো। খুব বেশি দূর যেতে হবে না। সম্রাট আকবরের রাজসভায় ছিলেন ‘নবরত্ন’ খ্যাত নয়জন উপদেষ্টা। তাঁরা বিভিন্ন সময় আকবরকে কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল – এ বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। রোমান সেনাপতি জুলিয়াস সিজারের পাশে থাকতো ক্যাসিয়াস এবং ট্রেবোনিয়াস যারা যথাক্রমে সিজারের পররাষ্ট্র এবং সেনা উপদেষ্টা ছিলেন। গ্রিক সম্রাট আলেক্সান্ডার নিজেই ছিলেন এরিস্টাটলের ছাত্র। আর এরিস্টাটল ছিলেন প্লেটোর ছাত্র এবং প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের ছাত্র। ফ্রেন্চ সেনাপতি এবং পরবর্তীতে সম্রাট নেপোলিয়নের পাশে থাকতো তার বন্ধু এবং উপদেষ্টা জঁ লান।

উপরের উদাহরণগুলো আমি এজন্য তুলে আনলাম কারণ যত বড় শাসকই হোক না কেন, উপদেষ্টার গুরুত্বকে কেউ উপেক্ষা করে নি কখনও। করা যায়ও না। একটা রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্রকে, একটা সমাজকে ভালো মন্দ বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এই উপদেষ্টা বা বুদ্ধিজীবীদের বিশাল ভূমিকা থাকে। আর এ কথাটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিল বলেই আত্মসমর্পণের মাত্র দুই দিন আগে পাক হানাদার এবং তাদের দোসররা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। তারা চেয়েছিল আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে। তারা চেয়েছিল আমরা স্বাধীন হলেও মাথা তুলে যেন দাঁড়াতে না পারি। তাদের সেই চাওয়ার জ্বলন্ত প্রমাণ আজকের বাংলাদেশ। শওকত ওসমান, আহমেদ শরীফ, আহমদ ছফা, শামসুর রহমান এবং হুমায়ূন আজাদদের পর বাংলার আকাশে আর বুদ্ধিজীবীর দেখা পাওয়া যায় না। মুখের উপর সত্য কথা বলার সৎ সাহস আর কারো মাঝে দেখা যায় না। এখন বুদ্ধিজীবী বলতে আমরা যাদের দেখি তারা আসলে টকশো-জীবী। স্যুট-কোট পরা বুদ্ধিজীবী যারা বিভিন্ন টেলিভিশনে কথা বলে বেড়ায়, বড় বড় সংবাদপত্রে কলাম লেখে। দেশের জন্য চিন্তা করতে করতে তাদের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে – এমন একটা ভাব নিয়ে হঠাৎ হঠাৎ জাতীয় ইস্যুতে নড়ে চড়ে বসে তারা। কিন্তু তাদের দৌড় ঐ পর্যন্তই। (এ কথাগুলো পড়ে কেউ কেউ তেড়ে আসবেন। বলবেন, আমি নিজে কী করছি। একদম সত্য কথা। বসে বসে ব্লগ লিখছি। নিজেকে পাতি বুদ্ধিজীবী প্রমাণ করা চেষ্টা করছি। কিন্তু আসল পরিবর্তন যেটা, সেটা করছি না। অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছি।)

যাইহোক, প্রসঙ্গে ফিরে আসি। এই যে এত এত ছোট-বড়-পাতি বুদ্ধিজীবী, তাদের ভিড়ে একজন মানুষকেই ব্যতিক্রম হিসেবে দেখেছি সব সময়। তিনি জাফর ইকবাল। অসাধারণ বক্তা তিনি নন। ঘনঘন টক শো তে তাঁকে দেখা যায় না (আদৌ দেখা যায় কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে)। আগে জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখতেন। কিন্তু তাঁর কথা বা কলাম নিয়ে ব্যবসা করার পথ বন্ধ করে দিয়ে এখন সবার জন্য সেটা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তবু তিনি যখন কিছু লেখেন বা বলেন, তখন আমরা সেটা নিয়ে চিন্তা করি। তিনি আমাদের ভাবান। তিনি পুরো জাতিকে ভাবান। এই জাফর ইকবালকেই দেখি শিক্ষানীতি প্রণয়নের সময় ডাকা হয়। এই জাফর ইকবালকেই দেখি মহান হাইকোর্ট বিশেষজ্ঞ হিসেবে ডেকে মতামত নেন। এই জাফর ইকবালকেই দেখি দিগন্ত টিভির সাংবাদিককে সরাসরি বলতে তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন না কারণ ঐটা জামাতের টিভি। সত্য কথা বলার এমন সৎ সাহস বর্তমান যুগে আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের আর কারো নেই। সবাই যেখানে ‘এসো মিলে মিশে থাকি’-তে বিশ্বাসী, তখন জাফর ইকবাল তাঁর বিশ্বাস এবং ধ্যানধারণা থেকে এক চুলও নড়তে প্রস্তুত নয়। আর সেজন্য তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে নিয়ে অকথ্য অপপ্রচার চালায় স্বাধীনতা বিরোধীরা। তবু তিনি মাথা নত করেন না। গত ফেব্রুয়ারিতে যখন সব বুদ্ধিজীবী বোঝার চেষ্টা করছিল গনজারণ মঞ্চের সাথে যাবে কি যাবে না, তখন জাফর ইকবাল মঞ্চে এসে সবার সাথে গলা মেলান। স্লোগান দেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান। ‘যাব, নাকি যাব না’ তাঁর মাথায় আসে নি। আমি নিশ্চিত কোন দিন সেটা আসবেও না।

তবে জাফর ইকবাল শুধু কথার মানুষ নয়। তিনি কাজের মানুষও। তিনি ওয়াশিংটন থেকে পিএইচডি করেছেন, ক্যালটেক থেকে পোস্টডক করেছেন। তাঁর জন্য এক অসাধারণ ক্যারিয়ার অপেক্ষা করছিল এ্যামেরিকায়। আমি নিজে এ্যাকাডেমিয়াতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখি। আমি জানি তাঁর ক্যারিয়ারের বিশালতা কত। কত কড়ি কড়ি টাকা আয় করার সুযোগ তিনি ছেড়ে এসেছেন। আমি বিস্মিত হই যখন দেখি সব ছেড়ে মানুষটা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এদেশের ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু করার নেশায় মত্ত হয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত ছিলাম। সেখানে জাফর স্যারকে কায়কোবাদ স্যারকে সাথে নিয়ে খেটে যেতে দেখেছি প্রতি নিয়ত। তাঁদের সেই অবদান খুব কাছ থেকে দেখেছি বলেই জানি সেটার গুরুত্ব কত। গণিত অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষুদে গণিতবিদদের এক অন্য জগতের সন্ধান দিয়েছেন এই জাফর ইকবাল। শিক্ষা একটা জাতির মেরুদণ্ড। জাফর ইকবাল সেই মেরুদণ্ড তৈরির কারিগর।

প্রতিটা মানুষই তার নিজ কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রোডাক্টিভ। জাফর ইকবাল স্যারও তার ব্যতিক্রম নন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের হয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন অনেক বছর। সেখানে তিনি এবং পরবর্তীতে তাঁর ছাত্ররা শিক্ষক হয়েছেন। তাদের অবদানের কারণেই কয়েকদিন পরপরই ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দারুণ কিছু আবিষ্কার করছে। তাদের সাফল্যের কথা আমরা দেশ বিদেশেও শুনতে পাচ্ছি। যখনই আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সাফল্যের সংবাদ পড়ি, তখন বিস্মিত হয়ে ভাবি একটা মানুষ এতবড় ক্যাটালিস্টের ভূমিকা কীভাবে পালন করেন? পরে মনে হয়, এটা সম্ভব হয়েছে কারণ মানুষটা জাফর ইকবাল।

বিদেশী বিশ্বদ্যালয়গুলোতে একটা টার্ম প্রচলিত আছে – প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর। প্রফেসাররা ফান্ড আনেন, পরিকল্পনা করেন কিন্তু কাজ করে মূলত পিএইচডি স্টুডেন্ট এবং পোস্টডকরা। তাহলে প্রফেসারদের ভূমিকা কোথায়? তারা সব কাজকে এক সুতোয় গাঁথেন। ছোট ছোট অনেক কাজকে একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাফর ইকবাল স্যারের ভূমিকা একদম তাই। প্রতিটা ক্ষেত্রেই তিনি মূলত উদ্যোগ নেন। তাঁর পাশে থাকে বাংলাদেশের আরও অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণীরা। তারাই মূলত বিভিন্ন ভালো কাজ এগিয়ে নেন। আর স্যার সবার মাঝে থেকে ছোট ছোট কাজগুলোকে পূর্ণতা দেন। বাস্তবায়ন করেন। আর স্যারকে কখনও অন্যদের অবদান ছোট করতেও দেখি নি। খোদ তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রজেক্ট বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, “কাজ তো ওরাই করে”।

এ যে মানুষটা এত চেষ্টা করে যাচ্ছেন দেশের জন্য, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য – এই মানুষটা প্রতিদান স্বরূপ কী পাচ্ছেন? জামাতের নোংরা প্রচারণা, তথাকথিত সুশীলদের সমালোচনা আর আমাদের মত সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে তির্যক মন্তব্য। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম একটা সংবাদ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি অনেক আগেই দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অটোমেটেড ভর্তি আবেদনের জন্য তৈরি করেছিলেন। এবার চেয়েছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে সাথে নিয়ে কম্বাইন্ড ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবেন। সে বিষয়ে সব কিছু ঠিকও হয়ে গিয়েছিল। এরই মাঝে হঠাৎ তার সমালোচনা শুরু হল তারই বিশ্ববিদ্যালয়ে। অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ভাষায় তার সমালোচনা করলো এমন কিছু মানুষ যারা হয় নির্বোধ এবং জানে না কী নিয়ে কথা বলছে অথবা যে পরিবর্তনগুলো এই মানুষটা আনতে চায়, সেগুলো শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে চায়। ঐ মানুষগুলোর যোগ্যতা নিয়ে কথা বলতে চাই না; তাহলে তাদের গুরুত্ব দেয়া হবে। কিন্তু অবশ্যই যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকদের যারা ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করলো। এরপরই ফেইসবুক সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বয়ে গেলো জাফর ইকবাল স্যারের উপর দিয়ে। একদল তার সমালোচনা করছে সিলেটকে ‘বঞ্চিত’ করার জন্য তো আরেক দল বড় গলায় চিৎকার করছে ‘এখন জাফর ইকবাল কোথায়?’ বলে। হায় স্বদেশ! পরিবর্তনের জন্য আমরা এক কদম এগিয়ে যাই না, কিন্তু যিনি পরিবর্তের চেষ্টা করেন তার পেছনে লাগতেও পিছপা হচ্ছি না। এ কোন অদ্ভুত উটের পিঠে আমরা চেপে বসেছি? সমালোচনা করাই কি আমাদের একমাত্র কাজ এখন? আমরা কি বুঝে-শুনে সমালোচনা করি? সব কিছু দেখে ক্রমেই আস্থা হারিয়ে ফেলছি ‘নিজেদের’ উপর।

যাইহোক, তবুও এতটুকু স্বস্তি যে এখনও একজন জাফর ইকবাল বাংলাদেশের জন্য রয়েছেন। তিনি আবারও তার প্রমাণ দিলেন। তিনি পদত্যাগ করেছেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অপমান মেনে নিয়ে মাথা নিচু করে চলার মানুষ যে তিনি নন, সেটা আবার দেখালেন। এখন দেখার বিষয় সিলেটের মানুষ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা কী করেন। হ্যাঁ, বল এখন আপনাদের কোর্টে। কে সঠিক এবং কোনটা সঠিক – সেটা আপনারই নির্ধারণ করুন। শুধু মনে রাখবেন, আপনাদের ভাগ্য আজ আপনারা লিখতে যাচ্ছেন। আপনারা যেটাই ঠিক করেন না কেন, সেটা ইতিহাসে লেখা থাকবে। ইতিহাস সাক্ষী দিবে ২০১৩ সনে যুদ্ধের ময়দানে একক ভাবে লড়ে যাওয়া একজন বীরকে সিলেট কীভাবে মূল্যায়ন করেছিল।

অপেক্ষায় থাকলাম আপনাদের মূল্যায়ন দেখার।

২৬ নভেম্বর, ২০১৩
গ্লাসগো, যুক্তরাজ্য

সংযোজন

যেভাবে ঘটনাগুলো ঘটেছে...

২৫ নভেম্বর: ক্যাম্পাস লাইভ ২৪-এ প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়,

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় সিলেটি শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ ভাগ কোটা বরাদ্দ এবং অবিলম্বে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে সচেতন সিলেটবাসী। ...সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ার জন্য ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে মূল হোতা আখ্যা দিয়ে কর্ণেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, জাফর ইকবাল বিভিন্ন সময় জাহানার ইমামের নামে হল, ভাস্কর্য ও সিলেটের স্বার্থবিরোধী অনেক কান্ডকীর্তি করে বারবার সিলেটবাসীকে অপদস্থ করেছেন। আপনারা এই ব্যাক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দিলে আমরা আনন্দ মিছিল করব।

২৬ নভেম্বর: বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়,

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক মোহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময়ের পর তাদের বক্তব্য নিয়ে আজ একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা হয়েছে। সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে।” ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ পরে জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এর দুই ঘণ্টা পর আরেক সংবাদে বলা হয়,

শাহজালাল ও যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়সমিন হক।

এরপর জাফর ইকবাল স্যার নিজে একটা খোলা চিঠি লেখেন ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে যা এখান থেকে পড়া যাবে।

সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে বিডিনিউজ২৪-কে বলেছেন,

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। আমরা খবর নিচ্ছি।” ‘পদত্যাগ ঠেকাত হস্তক্ষেপের সুযোগ কম’ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “তবে চেষ্টা করব যেন সবকিছু সুন্দরভাবে করা যায়।”


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ

এখন দেখার বিষয় সিলেটের মানুষ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা কী করেন। হ্যাঁ, বল এখন আপনাদের কোর্টে। কে সঠিক এবং কোনটা সঠিক – সেটা আপনারই নির্ধারণ করুন। শুধু মনে রাখবেন, আপনাদের ভাগ্য আজ আপনারা লিখতে যাচ্ছেন। আপনারা যেটাই ঠিক করেন না কেন, সেটা ইতিহাসে লেখা থাকবে। ইতিহাস সাক্ষী দিবে ২০১৩ সনে যুদ্ধের ময়দানে একক ভাবে লড়ে যাওয়া একজন বীরকে সিলেট কীভাবে মূল্যায়ন করেছিল।

অপেক্ষায় থাকলাম আপনাদের মূল্যায়ন দেখার।

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

লজ্জায় নত হওয়া ছাড়া আর কিছু বলার নেই। মন খারাপ

মাসুদ সজীব

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

আমরা লজ্জায় নত হচ্ছি আর অন্য দিকে ছাগুরা উল্লাস করছে। তাদের কুৎসিত উল্লাস দেখে নিজের কাছে নিজেকেই ছোট লাগছে আজ। জাতিগত ভাবে তারাও বাংলাদেশের পাসপোর্ট ক্যারি করে!

হিমু এর ছবি

সিলেটের বামনেতারাও দেখি ছাগুদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইঙ্গ-ইন্দো-ইসরায়েলী ষড়যন্ত্রকারী সাম্রাজ্যবাদী জাফর ইকবালের সানডে-মানডে-কোলোজে লিপ্ত।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

পুরাই কাঁধে কাঁধ। এমন সহ-অবস্থান বাংলাদেশে বিরল।

''(গতকাল) সন্ধ্যে ৭টায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অপর একটি প্রতিনিধিদল শাবি ভিসির সাথে বৈঠকে মিলিত হন। এ প্রতিনিধিদলে ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি আ.ন.ম শফিকুল হক, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমদ, জেলা ন্যাপ সভাপতি সৈয়দ আব্দুল হান্নান, গণতন্ত্রী পার্টির জেলা সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী, জেলা বারের সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন এডভোকেট, সাম্যবাদী দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক কমরেড ধীরেন সিংহ, সুজন কেন্দ্রীয় সদস্য ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, বাসদ নেতা উজ্জল রায়, ওয়াকার্স পার্টির শফিক আহমদ, আবু জাফর, এডভোকেট সমর বিজয় সী শেখর, সিরাজ আহমদ, ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড সিকান্দর আলী, সৈয়দ হাসান আহমদ। এ প্রতিনিধিদল ভাইস চ্যান্সেলর বরাবরে একটি প্রাদান করেন। স্মারকলিপিতে অন্যান্যের মধ্যে স্বাক্ষর করেন সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি এডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য, জেলা জাসদ সভাপতি আলহাজ্ব কলন্দর আলী, মইনুদ্দীন জালাল এডভোকেট, সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি আহমেদ নূর,সাংবাদিক সংগ্রাম সিংহ, সাংবাদিক চয়ন চৌধুরী, জুবায়ের আহমদ চৌধুরী সুমন, পরিবেশ আন্দোলন নেতা আব্দুল করিম কিম।''

(কপিকৃত)

হিমু এর ছবি

জাফর ইকবাল নতুন কোনো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমমনা সব শিক্ষককে নিয়ে জয়েন করতে পারেন। আমার ধারণা নতুন বিপ্রবিগুলো এ সুযোগ হেলায় হারাবে না। শাবিপ্রবিকে ১০০% সিলেটি কোটায় তুলে দেওয়া হোক। এই ১০০% এর মধ্যে মদিনা মার্কেটের কোটা, পাঠানটোলার কোটা ইত্যাদি আরো নানা কোটা ভাগ করার দাবি জানাচ্ছি।

বহিরাগতদের নিয়ে সিলেটবাসীর বীতস্পৃহা পুরোনো জিনিস, যদিও তাদের গৌরব সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত জনৈক শাহজালাল। আজ যদি শাহজালাল সাহেব সিলেটে ধর্মপ্রচারে আসতেন, উত্তেজিত সচেতন সিলেটবাসী হয়তো তাকে আবাদি বা বেঙ্গলি ডেকে শহরছাড়া করতো।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

জাফর ইকবাল স্যার যদি সমমনা শিক্ষকদের নিয়ে নূতন একটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করেন এবং তাঁকে কাজ করার স্বাধীনতা দেয়া হয়, তাহলে তিনি সেখানেও অসাধারণ সাফল্য দেখাবেন। স্যারকে আমার ফুটবল ক্লাবের ম্যানেজারের মত মনে হয়। সবার মধ্য থেকে ভালোটা বের করে আনার কৌশলটা তিনি খুব ভালো জানেন। উঁনি ছেলেমেয়েদের ইন্সপায়ারও করেন অনেক। অনেককে নিয়ে সংগঠিত হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা আমাকে সব সময় অবাক করে। এই মানুষটার বাংলাদেশকে দেয়ার এখনও অনেক বাকি। আশা করি যেন হিমু ভাই যেটা বললেন, সেটা হয়।

সাইদ এর ছবি

@হিমু চলুক

স্যাম এর ছবি

চলুক

স্পর্শ এর ছবি

চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রোবোট  এর ছবি

২০০৭ থেকে ২০০৯ এ সামুতে ব্লগিং করতাম। সেখানে একটা বিচিত্র ব্যাপার দেখতাম, যখনই ডঃ জাফর ইকবালকে নিয়ে কোন কুতর্ক (দ্বিমত হওয়া ভি্ন্ন ব্যাপার, সেটা হৈলো তর্ক) হত, তখন সাস্টের সব ছাত্র/প্রাক্তন ছাত্র (ডান/বাম, আস্তিক/নাস্তিক) একাট্টা। সবাই ওনার পক্ষে। সবাই একমত উনি শিক্ষক হিসেবে খেটে মরেন এবং ছাত্রদেরকেও ধর্ম, বর্ণ, লিংগ, সিজিপিএ নির্বিশেষে খাটায় মারেন। তারপরও ওনাকে সব ছাত্র মহামানবের মত মানতো। একজন শিক্ষকের জন্য এটা কত দূর্লভ ব্যাপার সেটা আমাদের ইয়েমারানী রাজনীতিবিদরা কি আর বুঝবেন?

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

ঠিক বলেছেন। আমার ধারণা সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছে, তারা আস্তিক হোক অথবা নাস্তিক, লীগ করুক কিম্বা বিম্পি, তাঁকে মানে। এটা তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং দেশ এবং মানুষের প্রতি মমত্ববোধের কারণে। আমাদের 'ইয়েমারানী' রাজনীতিবিদরা এই দুটা গুনের একটাও অর্জন করতে পারেন না। তাদের সেই ইচ্ছাই সম্ভবত নেই। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, যে সময় লাগিয়ে তারা কীভাবে ক্ষমতায় থাকবেন এবং ক্ষমতায় যাবেন - এটা নিয়ে গবেষণা এবং পরে সেটাকে বাস্তবায়ন করেন, সেই সময়টা মানুষের জন্য দিলে ক্ষমতায় তারা এমনিতেই আসতেন। যাক, টপিক অন্য দিকে ঘুরে যেতে পারে। তাই এই আলোচনা আপাতত এখানেই থামালাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

শাবিপ্র'র একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী বললেন, "জাফর স্যার এই ক্যাম্পাসকে কিছুই দেন্নাই খালি কিছু নাস্তিক পয়দা দিয়েছেন!" এইসব শুনে তব্দা খেতে হয়।
এই ক্যাম্পসে জাফর স্যার ও তাদের মত গুটি কয়েক শিক্ষক আছেন বলেই এখনো এই ক্যাম্পাসে কিছুটা হলেও 'বিশ্ববিদ্যালয়'-সুলভ ও 'সাংস্কৃতিক' পরিবেশ বিরাজমান! ইনারা না থাকলে গোড়ামীর থাবায় বিশ্ববিদ্যালয়টি হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবেনা!

যাইহোক, এ বিষয়ে সিলেটের মানুষ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন দেখার অপেক্ষায় থাকলাম আমিও!

- শ্রাবস্তী

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

আমাকে একদিন একজন হঠাৎ করে বলে, "জাফর ইকবাল? সে তো খুব খারাপ মানুষ। সে নাস্তিক।" আমি কিছু সময় ঐ লোকের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসেছিলাম। এরা বোঝেই না অন্য একজন মানুষ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে নিজে কত খারাপ সেটা প্রকাশ করে ফেলে। দেঁতো হাসি

তাসনীম এর ছবি

চলুক

একটু কারেকশনঃ কবিতাটার নাম - উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

আমিও এটাই জানতাম। কিন্তু অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখি 'অদ্ভুত' দিয়ে বহু লিঙ্ক। পরে নিজেকে ভুল ভাবে কারেকশন করে নিয়েছিলাম! এখন ঠিক করে দিচ্ছি।

অগ্নির এর ছবি

সাধারন ছাত্রছাত্রীদের জন্য যে জাফর স্যার কতটুকু চিন্তা করেন তার প্রমাণ অসংখ্যবার পেয়েছি । গণিত অলিম্পিয়াডের কাজে স্যার আর ম্যাডাম কতবার সেই ভাঙা মাইক্রোবাসটায় গাঁদাগাদি করে ভ্রমন করেছেন । চাইলেই তারা নিজেদের জন্য আরো ভালো ব্যবস্থা করতে পারতেন অথচ কখনো নিজেদেরকে সেলিব্রিটি ভাব দেখাননাই । সমন্বিত পরীক্ষা নিলে কি স্যারের দুই পয়সা রোজগার হত ? নাকি বিরাট কোনো লাভ ছিল ?বরং আলাদা পরীক্ষা নিলেই শিক্ষকদের লাভ সেটা সবাই জানে। সমন্বিত পরীক্ষায় লাভটা ছিল পরীক্ষার্থীদের । কত ভোগান্তি হয়রানি টাকাপয়সা বেঁচে যেত । কিন্তু তাতে তো আর মেয়রের লাভের গুড় খাওয়া হয়না । তাই জাফর স্যার খারাপ ।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

ইনফরমেটিক অলিম্পিয়াড আয়োজন করেছিলেন স্যার ২০০৬ সনে। তখন স্যারের ভেন্যু লাগবে। এজন্য ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্ট এগিয়ে এলো আয়োজনে। তখন একটা পুরো দিন স্যারের কাছাকাছি ছিলাম। যখনই স্যারকে দেখেছি, অবাক হয়েছি। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি হাসি দেখে। অদ্ভুত সরল হাসি। এই মানুষটাকে নিয়ে যখন আজেবাজে প্রচারণা অনলাইনে দেখি, তখন ঐ হাসি চোখে ভাসে। সাথে সাথে আমি নিশ্চিত হয়ে যাই ঐ সরল হাসির মানুষ আর যাই করুক ব্যক্তিস্বার্থকে কখনও বড় করে দেখবেন না।

ওমর ফারুক এর ছবি

শাবিপ্রবিকে ১০০% সিলেটি কোটায় তুলে দেওয়া হোক। এই ১০০% এর মধ্যে মদিনা মার্কেটের কোটা, পাঠানটোলার কোটা ইত্যাদি আরো নানা কোটা ভাগ করার দাবি জানাচ্ছি।

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

[পোস্ট লেখা শুরু করেছিলাম, মেটা ব্লগিংয়ে না গিয়ে কমেন্টেই লিখছি]

প্রথমেই, ড. জাফর ইকবাল স্যারের যশোরে মে মাসের সমাবর্তনে দেয়া বক্তৃতার কথার রেশ ধরেই শুরু করি। তাঁর দেয়া সমাবর্তন বক্তৃতা সোস্যাল মিডিয়ার হাত ধরে ছড়িয়ে পরে সব জায়গায়। তখন তাঁর বক্তব্যের বিরোধিতা করতে কাউকে দেখেছি বলে মনে পরে না।

তবে, জাফর স্যার আসল বোমা ফাটান, যখন তিনি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে তিনি তাঁর মতামত তুলে ধরেন।

তখন অনেকেই ঠুনকো অহংবোধে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। বিশেষ করে শীর্ষে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আর অ্যালামনাইরা তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে [si]কম মেধাবি[/si] শিক্ষার্থী দিয়ে সয়লাব হয়ে যাবে বলে আঁতকে ওঠেন। অন্যভাষায় বললে, অনেকেরই '[si]বিশ্ববিদ্যালয়ানুভূতিতে [/si]আঘাত লাগায় তারা সংক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন' এসময়কার একটা ফেসবুকে ব্যাঙ্গার্থে ছড়িয়ে পরা একটা লাইন মনে পড়ে গেল: "জাফর ইকবাল আমাদের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কথা বলার কে! উনি তো আর এইখানে পড়েন নাই"

সিলেটবাসির মত যদি ঢাকাবাসিরা তাডের ঢাকা বিশ্ববিদয়ালয়ে, বুয়েটে, ডিএমসিতে; ময়মনসিংহবাসি যদি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা দাবি করেন তাহলে ঘটনাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

ড. জাফর ইকবালের বিরোধিতা করার একটা কমন কারণ দেখা যায় প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে। তারা এখন দলভারী করার মত একটা কারণ পেয়েছে, তাদের পেছনে এসে অনেকই দাঁড়িয়েছে অনেকে।

যারা সমন্বিত পরীক্ষার বিরোধিতা করছেন, তারা কি আসলে পদ্ধতিটা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন আছেন? সিলেট মেডিক্যাল কলেজে যে বাইরে থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মধ্যমে ভর্তি করা হয়, সেটা নিয়ে তাদের কোন টু'শব্দটি নেই কেন? ডিএমসিতে পরীক্ষা দিতে ঢাকা আসতে, রাজশাহী মেডিক্যাল এ পরীক্ষা দিতে রাজশাহী যেতে তাদের খুব একটা ভালো লাগার কথা না। সুবিধা নেবার সময় নেব, কিন্তু অন্যদের দেব না -এটা খুব একটা ভালো মানসিকতার পরিচায়ক না। আমি ঢালাওভাবে সিলেটের লোকদের খারাপ বলছি না, তবে যারা খারাপদের দলে নন, তাদেরও কিছু একটা করতে হবে। তা না হলে সবার উপরই এর দোষ বর্তায়।

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

সিলেটবাসির মত যদি ঢাকাবাসিরা তাদের ঢাকা বিশ্ববিদয়ালয়ে, বুয়েটে, ডিএমসিতে; ময়মনসিংহবাসি যদি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা দাবি করেন তাহলে ঘটনাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এসব আরও এক্সট্রিম পর্যায়ে গিয়ে পুরো দেশের আঞ্চলিক সুবিধাগুলো কুক্ষিগত করলে দেশের বারোটা বাজতে বাকি থাকবে না। ঢাকা এয়ারপোর্টে ঢাকার বাসিন্দারা সুবিধা দাবি করবে, চট্টগ্রামের লোকেরা বন্দর এ আমদানিকৃত জিনিসে সুবিধা চাইবেন।

এই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটা উদাহরণ টানা যায়। পাবলিক ইউনিভার্সিটি সাধারণত: টিউশন ফির ক্ষেত্রে একটা বিশাল ব্যবধান রাখে স্থানীয় (একই স্টেটের) ছাত্র আর অন্য স্টেটের ছাত্রের জন্য। কারণ, স্টেট (বাংলাদেশের জেনা নিয়ে গঠিত বিভাগের সাথে তুলনীয়) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা দেয়। আর, স্টেটকে টাকা (কর) দেয় স্থানীয় অধিবাসীরাই।

অন্যদিকে, শাবিপ্রবি পরিচালনায় মঞ্জুরি কমিশনের টাকা শুধি সিলেটবাসি সরবরাহ করেন না, পুরো দেশের লোকের টাকায়ই এই বিদ্যালয় পরিচালিত হয়।

কাজেই, যুক্তরাষ্ট্রের মডেল এখানে খাটে না। আর, যুক্তরাষ্ট্র টিউশন ফি নেবার সময় বৈষম্য দেখায়, ভর্তির সময় না। যদিও ইন্ডিয়ান আদিবাসি কিংবা ল্যাটিনো হলে আলাদা খাতির -সেটার কারণ এরা তুলনামূলকভাবে পশ্চাতপদ। সিলেটবাসিরা নিশ্চয়ই নিজেদের সুবিধাবঞ্চিত পশ্চাতপদ বলে দাবি করতে পারেন না।

ড. জাফর ইকবালের বিরোধিতা করার একটা কমন কারণ দেখা যায় প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে। তারা এখন দলভারী করার মত একটা কারণ পেয়েছে, তাদের পেছনে এসে অনেকই দাঁড়িয়েছে অনেকে। সিলেটবাসির সহানুভূতি জয় করার এই মওকা অনেকেই ছাড়তে রাজি না।

যারা সমন্বিত পরীক্ষার বিরোধিতা করছেন, তারা কি আসলে পদ্ধতিটা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন আছেন? সিলেট মেডিক্যাল কলেজে যে বাইরে থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মধ্যমে ভর্তি করা হয়, সেটা নিয়ে তাদের কোন টু'শব্দটি নেই কেন? ডিএমসিতে পরীক্ষা দিতে ঢাকা আসতে, রাজশাহী মেডিক্যাল এ পরীক্ষা দিতে রাজশাহী যেতে তাদের খুব একটা ভালো লাগার কথা না। সুবিধা নেবার সময় নেব, কিন্তু অন্যদের দেব না -এটা খুব একটা ভালো মানসিকতার পরিচায়ক না। আমি ঢালাওভাবে সিলেটের লোকদের বলছি না, তবে তাদেরও কিছু একটা করতে হবে। তা না হলে তাদের উপরও এর দোষ বর্তায়।

"ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কেবল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে ৪৩ হাজার ৮২৯ জন শিক্ষার্থী। আর যশোরের জন্য ৫ হাজার ৮২৫ জন শিক্ষার্থী।

আর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তির আবেদন করেছে- এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬১৩ জন।

এদের মধ্যে ৬ হাজার ৮১৮ জন যশোর কেন্দ্রে বসে শাহজালালে ভর্তি পরীক্ষা দিতে চান। আর সিলেট কেন্দ্রে বসে যশোরের জন্য পরীক্ষা দিতে আগ্রহী ৩ হাজার ২০৩ জন শিক্ষার্থী। "
[সূত্র: বিডিনিউজ২৪]

সবশেষে, আমিও জানতে চাই এই হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে ট্রেন, বাসে, লঞ্চে চড়িয়ে দুবার পরীক্ষা দেবার মাধ্যমে কী ভালো জিনিসটা বেরিয়ে আসবে?

শুভেচ্ছা হাসি

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণ। আমি নিশ্চিত, যারা সমন্বিত পদ্ধতির বিরোধীতা করেছে, তাদের ধরে ধরে জিজ্ঞেস করা হলে ৫%-ও পদ্ধতিটা সম্পর্কে বলতে পারবে না। এটা একটা নূতন ট্রেন্ড। কেউ কিছুর সমালোচনা করলে নাম কামানোর জন্য নাম লেখানো। ওখানে অনেকে গিয়েছে চিলে কান নিয়েছে শুনেই। আপনার বিশ্লেষণটা তাদের পড়া উচিত।

শুভেচ্ছা রইলো।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

মনটা ভীষন খারাপ। কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

ছাগুদের সাথে যখন আওয়ামিলীগ একাত্ন প্রকাশ করে তখন মুক্তমনা মানুষেরা ড. জাফর ইকবাল স্যারের মতো অসহায় বোধ করে, আর তখনি মনে হয় উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ, চলছি আমরা..

মাসুদ সজীব

এক লহমা এর ছবি

চলুক
যথার্থই উদ্ভট!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি হিমু ভাইয়ের সাথে সম্পুর্ন একমত সিলেটিদের শাবিপ্রবি ১০০% কোটা দেয়া হোক সেই সাথে (এটা যদিও বিদ্দ্যেশপুর্ন তবুও বলছি ) বাংলাদেশের সমগ্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের অবাঞ্ছিত করা হোক এবং নিজেদের টাকায় যেন তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় চালায়।
কথায় আছে সব শিয়ালের এক রা বা সব রসুনের এক......... তাই সকল নাম সর্বস দল বা সংগঠনের যত মুর্খ চামচাগুলি একসাথ হয়েছে, যারা নিজেদের উন্নয়ন করার ক্ষমতা নাই তারা আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে মাতব্বরি করতে।
মেঘলা মানুষ যে মেডিক্যাল ভর্তি পরিক্ষার কথা বলছেন খোজ নিয়ে দেখেন এই সকল বেকুবগুলো সেই ব্যাপারে কিছু জানেইনা।
সিলেটিরা বিভিন্ন দেশে (মুলত লন্ডনে) রেস্তোরা ব্যাবসা চালিয়ে নিজ এলাকায় বেহুদা বিলাসবহুল বাড়ি বানানো ছাড়া এমন কিছুই করে নাই যা দেশ তো দূরে থাক তাদের নিজ এলাকার কোন উন্নয়নে কাজে লেগেছে।
সবশেষে আমার এক বন্ধুর কথা বলি যে বুয়েটে চান্স পাওয়া স্বত্তেও শুধু জাফর ইকবাল স্যারের জন্য শাবিপ্রবি তে ভর্তি হয় আর বিদেশে ক্যারিয়ার গড়ার সকল সামর্থ থাকা সত্বেও দেশ ছেড়ে কোথাও যায়ওনি, স্যার এইভাবে শুধু শিক্ষাই দেননি সেই সাথে দেশের জন্য ভালবাসা বা কাজ করার মানসিকতাও তৈরি করেছেন, গড়েছেন মানুষের মত মানুষ।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

ফাহিম হাসান এর ছবি

সিলেটিরা বিভিন্ন দেশে (মুলত লন্ডনে) রেস্তোরা ব্যাবসা চালিয়ে নিজ এলাকায় বেহুদা বিলাসবহুল বাড়ি বানানো ছাড়া এমন কিছুই করে নাই যা দেশ তো দূরে থাক তাদের নিজ এলাকার কোন উন্নয়নে কাজে লেগেছে।

মন্তব্যের এই অংশটা ঢালাও সরলীকরণ। প্রচুর সিলেটি প্রবাসী দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন, করে যাচ্ছেন। সচলায়তনেও সিলেটবাসী ব্লগার আছে যাদেরকে সবসময়ই প্রগতিশীল ভুমিকায় দেখেছি। প্রবাসী সিলেটিদের কথা যদি বলেন তাদের মাঝেও অনেকে দেশে রেমিট্যান্স পাঠান, স্কুল-কলেজ-চ্যারিটিতে ডোনেট করাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেন।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

হেহ! মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী!
হস্তক্ষেপ করে পদত্যাগ ঠেকাতে পারতেন বলে মনে করেন আপনি? মানুষটার সাথে সরাসরি পরিচয় না থাকার পরও বলতে পারি, ওনার অনুভূতি এতো সস্তা নয়।

পঁচন ঠেকাতে আপনার কোন আগ্রহ নেই, কারন গন্ডগোল না থাকলে লাভ ক্ষতির বিষয়টা ঠিক সেভাবে আসে না

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

শাবিপ্রবি থেকে জাফর স্যারকে বাইর কইরা দিয়া শফি হুজুররে সেই পদে অধিষ্ঠিত করে ১০০% সিলেটি কোটা দিয়ে দেওয়ার দাবী জানাইলাম... উলুবনে মুক্তো না থাকাই ভালো

যেইসব বেরাদানে বিশিষ্ট নাগরিকেরা স্যারের বিরুদ্ধে গলা ছেড়ে চিল্লাইছে তাদেরকে পুংগ্রামী শুভেচ্ছা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো বলছেন। হো হো হো হো হো হো

--
কচু পাতা

অতিথি লেখক এর ছবি

অনলাইন নিউজ পেপার গুলোতে আসছে আজকে রাতে জাফর স্যারের ইউনিভার্সিটি কোয়ারটাররের সামনে, মেয়েদের হলের সামনে বোমা/ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। আসলেই [b]উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ [/b]।

--
কচু পাতা

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।