রদ্যাঁর ভাস্কর্য

তারেক অণু's picture
Submitted by tareqanu on Thu, 22/09/2011 - 2:45am
Categories:

P1210849
অগুস্ত রদ্যাঁ- একটি নাম, একজন শিল্পী, একটি প্রতিষ্ঠান, একজন ভাস্কর, একটি শিল্প, কালের গ্রাসকে অগ্রাহ্য করে টিকে থাকা একজন অতিমানব। বর্তমান বিশ্বে ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলা মানেই অগুস্ত রদ্যাঁকে নিয়ে কথা বলা। মনে করা হয় উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ভাস্কর এই ফরাসীই, কিন্তু আসলে সমগ্র শিল্প কলার ইতিহাসে একমাত্র ফ্লোরেন্সের মাইকেল এঞ্জেলো বাদে আর কোন শিল্পীই ভাস্কর হিসেবে চতুর্দিকে এমন সুবাস ছড়ানো সন্মান পান নি। বিশ্বের যে কোন জাদুঘর রদ্যাঁর একটি ভাস্কর্য সংগ্রহে রাখতে পারলেই নিজেকে ধন্য মনে করে, প্যারিসের একাধিক জাদুঘরে রদ্যাঁর ভাস্কর্য আছে, আছে ফ্রান্সের বাহিরেও, কিন্তু তার তৈরি শিল্পকলার মূল সংগ্রহ সবই সন্নিবেশিত আছে প্যারিসের রদ্যাঁ জাদুঘরে। আমাদের আজকের যাত্রা সেদিক পানেই-
P1210832
সীন নদীর তীরে নেপোলিয়নের সমাধিস্তম্ভ লেস ইনভ্যালিদাসের পাশের 79 Rue de Varenne তে অবস্থিত এই বিশ্বখ্যাত জাদুঘর, যার সামনে সারা বছরই লেগে আছে বিশাল লাইন। কোনমতে টিকিট সংগ্রহ করে ঢুকে পড়লাম ভিতরের বাগানে, সামনেই সুরম্য জাদুঘর প্রাসাদ। কিন্তু মূল ফটকে দিয়ে প্রবেশের পরপরই ডানদিকে পার্কের ভিতরে গাছঘেরা সুউচ্চ বেদী স্তম্ভে নিরিবিলিতে একা উপবিষ্ট স্বয়ং দ্য থিংকার!
P1210901
P1210836
খোদ রদ্যাঁর খোদিত সবচেয়ে বিখ্যাত ভাস্কর্য এটি, এর সমমানের খ্যাতিময় ভাস্কর্য হিসেবে ধরা হয় একমাত্র ভেনাস দ্য মিলো আর মাইকেল এঞ্জেলোর ডেভিডকে। সেই জগদ্বিখ্যাত সৃষ্টি থিংকারকে এভাবে খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির মাঝে এমন নিবিড় ভাবে দেখতে পাব তা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করি নি, পরে জানা গেল রদ্যাঁ ছাচে ফেলে যে কয়টি ব্রোঞ্জ আর মার্বেলের থিংকার তৈরি করেছিলেন, এটিই সবচেয়ে বৃহৎ আকৃতির। কি অদ্ভুত সেই ভাস্কর্য, যেন পাথরে খোদাই করে প্রাণ ফোটানো!
P1210837
ইউরোপের বিভিন্ন চিত্রকলার জাদুঘর পরিদর্শনের সৌভাগ্য হওয়ায় নানা শিল্পীর অসংখ্য অতি নিখুঁত, সুন্দর, শৈল্পিক ভাস্কর্য দেখার সৌভাগ্য হয়েছে কিন্তু এমন অনন্যসাধারণ মাস্টারপিস চোখে পড়েনি একটিও, এ যে অদ্বিতীয়, এ যে রদ্যাঁর থিংকার। একজন মানুষ নগ্নগাত্রে বলিষ্ঠ ভাবে বসে আছে, একটি হাত আলতো ভাবে পড়ে আছে হাঁটুর উপরে, অন্যটি থুঁতনিতে স্পর্শ করে কি গভীর ভাবেই না সে চিন্তামগ্ন! চিন্তা এই পৃথিবীর জন্য, এর বাসিন্দাদের জন্য। এ কারণেই রদ্যাঁ এই বিশেষ ভাস্কর্যটি তৈরী করার পর থেকেই এর জনপ্রিয়তা বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শনের প্রতীক হয়ে দাড়ায় দ্য থিংকার। অনেকের মতে মানুষের মনে আশার আলো জাগায় ব্রোঞ্জ-মার্বেলের এই ভাস্কর্য। প্যারিসের অনেক জায়গা ঘুরে অবশেষে তাকে স্থাপন করা হয় বর্তমান স্থানে। মনে করা হয় মহাকবি দান্তের অনুকরণে মূর্তিটি গড়া হয়েছে, কিন্তু এত কিছু জানার পরও বার বার বিস্ময়াভূত হতে হয় নেহাৎ পাথর কুঁদে কি করে এতটা অনুভূতি, এতটা আবেগ বের করা সম্ভব! এতো কেবল সৌন্দর্য নয়, সৌষ্ঠব নয়, এতো নিখাদ চিন্তামগ্ন, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন জ্ঞানী মানুষ।
P1210879
দ্য থিংকারের পাশের বাগিচাতেই রদ্যাঁর আরেক বিখ্যাত কাজ- প্রমাণ আকারের বালজাকের ভাস্কর্য। বিশ্ব নন্দিত এই ফরাসী সাহিত্যিকের অসংখ্য ভাস্কর্য গড়েছেন রদ্যাঁ, এটাই আকারে এটিই সবচেয়ে বড়। সেও আছে প্রকৃতির কোলে- রোদে, ঝড়ে, বৃষ্টিতে থিংকারের মত। এরপর ঢুকে পড়লাম মূল ভবনে এককালে যার পরিচিতি ছিল হোটেল বায়রন নামে। অতি সুসজ্জিত, সুরম্য ভবন, বিশাল কারুকার্যময় ঝাড়বাতি প্রতিটি কক্ষে। সেই সাথে চোখধাঁধানো সিঁড়ি আর জানালার রেলিঙ। ইতিহাসখ্যাত এই স্থাপনাটির সাথে জড়িয়ে আছে ভুবনবিদিত বিশ্বখ্যাত শিল্পীর নাম, অবশেষে অগস্ত্য রদ্যাঁ তার মৃত্যুর পরে সমস্ত সংগ্রহ দিয়ে রদ্যাঁ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে এমন চুক্তিতে এসে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এখানে নিজের কর্মস্থল টিকিয়ে রাখার অধিকার আদায় করেন।
P1210876
P1210878
ভিতরে রদ্যাঁর সারাজীবনের অসংখ্য কাজ, তার সবগুলোর মোটামুটি বর্ণনা দিতে গেলেও হাজার পাতার বই ছাড়িয়ে যাবে, তাই বেছে বেছে অতি বিখ্যাতগুলোর বর্ণনাই কেবল দিয়ে যাচ্ছি। প্রথমেই নজরে আসল ল্য ক্যাথেড্রাল, কনুই-এর সামান্য পর থেকে শুরু হওয়া কেবলমাত্র দুটি হাত আর তার দশটি আঙ্গুল যে কি সুষমামণ্ডিত ভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে তার প্রমাণ ল্য ক্যাথেড্রাল।
P1210850
এরপর আমাদের নজরে আসে হ্যান্ড অফ গড, একটি বিশাল হাত একতাল কাঁদা ছেনে নর ও নারী বানাচ্ছে, তারা দুজন আবার পরস্পরের সাথে নিবিড় আলিঙ্গনাবদ্ধ। কি যে নিখুঁত সে মর্মর পাথরের হাত, শিরা উপশিরা পর্যন্ত স্পষ্ট বোঝা যায়। আর দর্শক যেন দুদিক থেকে অনুপম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সেই জন্য এর কাছেই বসানো আছে বিশালাকার আয়না।
P1210859
P1210856
একই কক্ষের অন্য অংশে আছে রদ্যাঁর তৈরি সবচেয়ে রোমান্টিক ভাস্কর্য দ্য কিস বা চুম্বন। দুই প্রমাণ আকারের জীবন্ত নর-নারী পরস্পরের আলিঙ্গনাবদ্ধ, অধরে অধর মিলিয়ে যাচ্ছে।
P1210863
দান্তের চরিত্র ফ্রান্সেসকা আর পাওলো থেকে মূল ধারণা নেওয়া হলেও অনেকের মতে নারীমূর্তিটির মুখের আদল রদ্যাঁর ছাত্রী ও প্রেমিকা ক্যামিল ক্লোদেলের মুখাবয়ব থেকে নেওয়া।
P1210853
P1210862
উল্লেখ্য রদ্যাঁ জাদুঘরে স্বয়ং রদ্যাঁ বাদে একমাত্র ক্যামিল ক্লোদেলের কাজের সংগ্রহ আছে।
P1210870
একজন খাঁটি শিল্পীর মতই রদ্যাঁ ছিলেন সর্বদাই জীবনের নানান দিক নিয়ে উৎসুক, সারা জীবন তিনি নানা ধরনের জিনিস সংগ্রহে মত্ত ছিলেন, গ্রীক-রোমান সভ্যতার নিদর্শন থেকে সমসাময়িক চিত্রকলা পর্যন্ত। এই জাদুঘরের বিভিন্ন দেয়ালে তার নিজস্ব সংগৃহীত চিত্রকর্মগুলো ঝুলছে, এর মধ্যে রেনোয়া, এডভার্ড মুঙ্ক, ক্লদ মোনের অমূল্য পেইন্টিং বাদেও আছে ভিনসেন্ট ভ্যানগগের তিন তিনটি মাস্টার পীস। এমন আর্টের মূল্য বিচার করা যায় না, কিন্তু অনায়াসে বলা যায় যে কোন সময় নিলামে উঠলে প্রতিটি পেইন্টিংস-এর দাম বাংলা টাকায় এক হাজার কোটি টাকার উপরে হবে!
P1210895
P1210893
P1210885
দুতলার এক কক্ষে দেখা হল ছোট মডেলের দ্য থিংকারের সাথে। কি অবিশ্বাস্য সৃষ্টি, বাহিরের বড়টির মতই তার চোখে মুখে গভীর চিন্তা, প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের ছাপ।
P1210881
P1210883
P1210884
এরপরে নীচতলা-উপরতলার প্রতিটি ঘরে আছে রদ্যাঁর তৈরি অসংখ্য সব নয়নকাড়া, নিখুঁত, যে কোন বিচারে বিশ্বের সেরা ভাস্কর্যের অদ্বিতীয় সংগ্রহশালা। কোনটা মার্বেলের, কোনটা বা ধাতব। কোনটা ফেলে কোনটার বর্ণনা দিব।
P1210898
P1210873
P1210868
P1210871
সেই সাথে আছে তার কিছু আত্ন প্রতিকৃতিও-
P1210886
ঘণ্টা কয়েক মন্ত্রমুগ্ধের মত সেই জাদুময় কক্ষগুলোতে অতিবাহিত করে প্রবেশ করলাম রদ্যাঁ জাদুঘরের অতি বিখ্যাত বাগানের পানে। ঘন সবুজ ঘাসের লন, দুপাশে গাছের সারি, সেই সাথে বাগানের বিভিন্ন জায়গায় নব নব আঙ্গিকের ভাস্কর্য।
P1210912
P1210890
সবার শেষে এসে দাঁড়ালাম রদ্যাঁ অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি নরকের দরজা বা গেট অফ হেল ভাস্কর্যের সামনে। আসলে একটি বিশেষ ভাস্কর্য না বলে নানা ভাস্কর্যের সমাহার বলা উচিত- সুউচ্চ সুবিশাল এক সিংহদরজা, যেন খুললেই দেখা যাবে লেলিহান অগ্নিশিখার দেদীপ্যমান জলন্ত নরক। ইতালীয় মহাকবি দান্তের ডিভাইন কমেডি আর ফরাসী কবি শ্রেষ্ঠ শার্ল ব্যোদলেয়ারের দ্য ফ্লাওয়ার্স অফ দ্য ইভিল কাব্যগ্রন্থ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এই বিশাল কর্মযজ্ঞে মেতে উঠেছিলেন রদ্যাঁ। দরজার উপরে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থানরত চিন্তারত থিংকার, আর্তনাদরত নর-নারীরা, জাদুঘরের ভিতরে দেখা নানা ভাস্কর্যের ক্ষুদে মডেল এখানে স্থান পেয়েছে।
P1210902
P1210903
দৃঢ় চিত্তে বলতে পারি রদ্যাঁর যে কোন একটি সৃষ্টিই যেখানে শিল্পকলার রাজ্যে একজন শিল্পীকে অমর করে রাখার জন্য যথেষ্ট, সেখানে এত মাষ্টারপিস! কেবলই ভক্তিতে মাথা নুইয়ে দেয় অগুস্ত রদ্যাঁর প্রতি, তার শিল্প সাধনার প্রতি।।
P1210914


Comments

উচ্ছলা's picture

আপনার কারনে কত্তকিছু যে দেখা হলো হাসি আর কী প্রানবন্ত করেই না বর্ননা করেন সবকিছু হাসি

আপনি আসলেই একটা Boss-man হাসি

তারেক অণু's picture

আরে না, আমি আপনের মতই মনের মাঝে যাযাবর নিয়ে বাস করা একজন, যে প্রতি সন্ধ্যায় দরিয়ার বুনো স্বাধীন নোনা বাতাসের গন্ধে ফুসফুস ভরিয়ে দৌড়ে চলে আজ কাল পরশুর প্রান্তে।
অশেষ কৃতজ্ঞতা থাকল আপনের উৎসাহের জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

প্রিয়ম's picture

দীর্ঘশ্বাস !!

তারেক অণু's picture

যা বাবা ! থিংকার দেখে আশার আলোর বদলে দীর্ঘশ্বাস !

তাপস শর্মা's picture

এই অনুরে কেউ বাইন্ধ্যা রাখতো পারেনা। কি যে শুরু করছে । ওরে পাগল আমরা সবাই তোকে হিংসে করছি বুঝতে পারছিস নারে হতচ্ছারা। খাইছে

অফবিটঃ কানে কানে কই কেউ শুনবেন না কেমন, এই কথা হল ঐ যে চুমো খাওয়া ফডুডা দেইখ্যা খাইছে পাইছি।

পুনশ্চঃ এই পৃথিবী আপনার ইচ্ছের কাছে উন্মুক্ত বিহঙ্গী হোক।

ত্রিপুরা আপনাকে স্বাগত জানায় অনু

তারেক অণু's picture

নচিকেতার গান মনে করিয়ে দিলেন তাপস দা - প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ, ঘুষ খাওয়া কখনোই নয় !
আসব, নিশ্চয়ই আসব ত্রিপুরাতে। সেই সাথে আসামের দুই জায়গায় যেতে চাচ্ছি অনেক দিন ধরেই, হয়ে যাবে আশা করি।

অতিথি অন্যকেউ's picture

Quote:
এই অনুরে কেউ বাইন্ধ্যা রাখতো পারেনা।

হো হো হো হো হো হো

তারেক অণু's picture
তাপস শর্মা's picture

স্বাগতম । হাসি

মিলু's picture

আমার ভাষার স্টক শেষ। চলুক চলুক চলুক

তারেক অণু's picture
সজল's picture

ছবিতেই যা লাগলো, নিজের চোখে দেখলে না জানি কেমন অনুভূতি হত! টুপি পড়া বালিকা কি ক্যামিলের কাজ? ছবিগুলো কার আঁকা?

[লা ক্যাথেড্রাল ভাস্কর্যে হাত কিন্তু কনুই আর কবজির মাঝামাঝি শুরু হয়েছে, কবজির সামান্য আগে থেকে বুঝাতে চাইছিলেন?]

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

তারেক অণু's picture

না না ঐটা রদ্যার খোদিত। কিন্তু বলা হয়ে থাকে ক্যামিলোর মুখের আদলে গড়া! ছবি একটা মুঙ্ক, আর ২ টা ভ্যান গগের।
টাইপো!

কর্ণজয়'s picture

পৃথিবী কি বিশাল,
তার নিচে মানুষও...

মজার...
থিংকার...
আলাদাভাবে আসলো দুবার

তারেক অণু's picture

ছোট থিংকার অন্য জাদুঘরেও দেখেছি। হেলসিংকিতেও আছে একটা

বন্দনা's picture

রদ্যাঁ নামটার সাথে পরিচিত ছিলাম, আজকে আপনার চোখ দিয়ে তার শিল্পকর্ম দেখলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ অণু ভাই।

তারেক অণু's picture

অনেক অনেক শরতের পাতা ঝরা শুভেচ্ছা

ইস্কান্দর বরকন্দাজ(সাথেই আছি)'s picture

খাইছে

তারেক অণু's picture
শেহাব-'s picture

সামারে স্ট্যানফোর্ড ক্যাম্পাসে রোঁদ্যার ভাস্কর্য দেখেছি। গা শিরশির করছিল!

তারেক অণু's picture

শিরশির করারই তো কথা। আমার তো প্রায়ই অসহ্য ভাললাগায় জ্বর আসার অবস্থা হয়

riti nirobodhi's picture

অসাধারণ একটি পোষ্ট! গুরু গুরু

তারেক অণু's picture

অনেক ধন্যবাদ

ফাহিম হাসান's picture

দারুণ পোস্ট। রঁদ্যা আমার প্রিয় শিল্পীদের একজন।

তারেক অণু's picture
ব্যাঙের ছাতা's picture

এইচএসসির বাংলা বইতে শুধু পড়েছিলাম রঁদ্যা কে নিয়ে, আজ আপনার দৌলতে আর একটু জানলাম।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
অসাধারণ সুন্দর আপনার বর্ণনা।

তারেক অণু's picture

কোন লেখায় উনার কথা ছিল একটু জানাবেন কি ? এই ভাস্কর্যের বর্ণনা কি ভাষায় সম্ভব, এতো অনুভবের ব্যাপার।

কল্যাণF's picture

চলুক পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

তারেক অণু's picture
কল্যাণF's picture

আরে আরে কর কি? আমাকে বিপদে ফেলবা দেখি, তোমার কি পপ্পন নিয়ে গ্যালারীতে বসলে চলবে? তুমি তো দারুন সব লেখা দেবে, পপ্পন এদিক দাও আমরা খাই আর পড়ি। অণু রোডিন'রে সব রঁদ্যা কয় কেন? খাইছে

তারেক অণু's picture

রঁদ্যা বললে অবশ্য তার দেশে কেঊ চিনবে না, বলতে হবে ঘদা! ফ্রেঞ্চ যে !

বুড়া's picture

আমরা সাধারণত চিবুকের ভার যে হাতের তালুতে রাখি, কনুইটা সেই হাঁটুতেই রাখি। ডান হাতে ধরলে ডান হাঁটুতে রাখাই আরামদায়ক। রঁদা symmetry ভাঙ্গবার জন্য বাঁ হাঁটুতে রেখেছেন অথচ ব্যাপারটা অস্বস্তিকর লাগছে না।
Cathedral মূর্তির হাতদুটি কিন্তু দুটি ভিন্ন লোকের, দুটিই ডান হাত।

তারেক অণু's picture

এটাই তো ওস্তাদের ছোঁয়া! বত্তিচেলির ভেনাসের যে দুই হাত সমান লম্বা নয় বা এঞ্জেলোর ডেভিডের মাথা যে দেহের আকৃতির চেয়ে অনেক বড়, এগুলো কিন্তু আমাদের মাথাতেই আসে না সেই বিশুদ্ধ সৌন্দর্যের উৎসের সামনে।

বন্দনা কবীর's picture

নাহ্‌ এবার সত্যি সত্যি-ই ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়ছি মন খারাপ

এখন আপনার ভ্রমন সঙ্গি ঐ ব্যাগপ্যাকটাই হতে ইচ্ছে করছে। আপনার সাথে সাথে ও-ও তো আপনার মত
ঘুরে বেড়াচ্ছে দুনিয়ার এ মাথা ও ওমাথা। নাহ মাথাটাই যাবে অনুদা আপনার পোস্ট দেখে দেখে। ভাল্লাগছেনা আর ঘরে পড়ে থাকতে হাসি

আঁকা-লেখার কথা নাই বা বললাম...

তারেক অণু's picture

আপনার স্নেহমাখা মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপা। সমস্যা নেই, দেশে এলেই ঘোরা যাবে, কি বলেন?

অতিথি অন্যকেউ's picture

আপনার বর্ণনাগুলো এতো অনন্য! হিংসা, আপনার জন্য বিশুদ্ধ হিংসা। গুরু গুরু

(ভাই, একটা অন্তত পোস্ট দেন যেটা ফেসবুকে লাইক না করে থাকতে পারি!)

পোস্টে উত্তম জাঝা!

তারেক অণু's picture

দিচ্ছি, দিচ্ছি, কুন চিন্তা কইরেন না চোখ টিপি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার's picture

থিংকারের সাথে পরিচয় হয়েছিল ক্লাস ওয়ানে 'মাইটি মাউস' দেখতে গিয়ে... সত্যিকারের থিংকার কে কাছ থেকে দেখে ফেলেছেন ভেবে আজকে সত্যিই আপনাকে একটু হিংসা হলো। দ্য হ্যান্ড অফ গড আর দ্য কিস এর ডিটেইলিং দেখে মুগ্ধ হলাম, প্রফেশনাল গ্যালারি ফটোতে না, বরং কারো সচক্ষে দেখে বর্ণনা করা আর নিজেই ক্যামেরায় তোলা ছবিতে তো এর আগে দেখি নাই... অপূর্ব!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তারেক অণু's picture

এই জাদুঘর কিন্তু অনেকের কাছেই প্যারিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য, আর থিংকারের আকর্ষণ অনন্য, যতবারই প্যারিস ছুঁয়ে যাওয়া হয়, মনে হয় ইস, আরেকবার দেখে আসি।

সুমাদ্রি's picture

কামিল ক্লদেল-এর উপর নির্মিত ছবিটি দেখে রোদাঁ'র উপর ভীষণ ক্ষিপ্ত ছিলাম। কিন্তু স্বচক্ষে তাঁর ভাস্কর্যগুলো দেখে এই মহান শিল্পী'র মানবিক ত্রুটিগুলো ভুলে গিয়েছিলাম। ফ্রান্সের অনেক শহরের যাদুঘরেই দেখেছি তাঁর ভাস্কর্যের সামনে উৎসাহীদের ভীড়। আহা! যাওয়া হয়নি আঁভালিদে,ভাগ্যবান বটে আপনি।

তারেক অণু's picture

তবে শুনেছি ভাস্কর শিরোমণি ক্যামিলকে বিয়েই করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার স্ত্রী হয়ে দাঁড়িয়েছিল মূল বাঁধা। ক্যামিলের ভাই পল ক্লদেলও বিশ্বখ্যাত, কিন্তু দার্শনিক হিসেবে।

ধৈবত(অতিথি)'s picture

এখনকার যুগে রদ্যাঁ, মাইকেল্যাঞ্জেলোদের সমান প্রতিভা নিয়ে জন্মালেও ওদের মতো হওয়া সম্ভব নয়। হয়তো ওনারা সে পথ বন্ধ করে দিয়ে গেছেন সব নয়তো যুগটাই কঠিন।

তারেক অণু's picture

কেন নয় !

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী's picture

পড়তে পড়তে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন টিভিতে ডকুমেন্টারি দেখছি! বর্ণনার সাথে মিলিয়ে ছবি। অসাধরণ পোস্ট। পাঁচ তারা।

তারেক অণু's picture

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

আসমা খান, অটোয়া।'s picture

বরাবরের মত চমৎকার লেখা এবং ছবি। পৃথিবীর বিখ্যাত দর্শনীয় ভাষ্কর্য গুলির সাথে পরিচিত হয়ে খুব ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ।

তারেক অণু's picture
রোমেল চৌধুরী's picture

অসাধারণ একটি পোষ্টের জন্য অণুকে ধন্যবাদ।

থিঙ্কারকে প্রথম দেখেছিলাম কবীর চৌধুরীর লেখা ‘রদ্যাঁ’ বইয়ের প্রচ্ছদপটে। প্রথম দেখাতেই অবাক বিস্ময়ে বিস্মিত হয়েছিলাম। সেইসাথে এই ভাবনাও আমাকে ভাবিত করেছিল যে, রদ্যাঁ কেন চিন্তামগ্ন এই মানুষটিকে বলিষ্ঠদেহী ও শক্তসমর্থ করে গড়েছেন। পরে জেনেছি ভাবনার প্রচণ্ডতা শরীরের প্রতিটি মাংসপেশিতে তরঙ্গায়িত ভঙ্গিমায় ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

থিঙ্কার নিয়ে আমার উৎসাহের আরো একটি কারণ ছিলো। তা হল, এই কাজটির সাথে জার্মান কবি রাইনের মারিয়া রিলকের একটি যোগসূত্র আছে। রিলকে আমার অতি প্রিয় কবিদের একজন। বিশ্বের আধুনিক কবিতার সাথে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িয়ে আছেন রিলকে।

কবীর চৌধুরীর লেখায় পাই,

Quote:
রদ্যাঁ যখন ‘নরকের দ্বার’ সৃষ্টির কাজে গভীরভাবে নিমগ্ন, তখন একদিন রিলকে তাঁর স্টুডিওতে এসে হাজির হলেন। অত্যন্ত ব্যস্ত রদ্যাঁ প্রথমে বিরক্ত হলেও অত্যন্ত সংবেদনশীল, অনুভূতিপ্রবণ ও রুচিবান তরুণ রিলকের প্রতি তাঁর ঔদাসীন্য ও বিরক্তি বেশীদিন টিকিয়ে রাখতে পারেন নি। একসময় তিনি রিলকের প্রতি বিশেষ স্নেহশীল হয়ে উঠেন। দু’জনে একদিন নানা বিষয়ে কথা বলছিলেন, হঠাৎ রিলকে বলে উঠলেন, “আচ্ছা, ‘নরকের দ্বার’-এর শীর্ষে যে নগ্ন ব্যক্তিটি বসে আছে তাঁকে নিয়ে আপনি একটা পুর্নাংগ স্বতন্ত্র সৃষ্টি করতে পারেন না?” রদ্যাঁ যখন জানালেন যে মূর্তিটিকে তিনি চিন্তামগ্ন দান্তে হিসেবে পরিকল্পনা করেছেন, কবি দান্তে গভীরভাবে কিছু একটা ভাবছেন, তখন রিলকে প্রথমে বিস্ময় প্রকাশ করেন। ওই রকম পেশীবহুল, অত বলিষ্ঠ? তারপর রিলকে ইঙ্গিত করেন যে চিন্তার মধ্যে ওই জাতীয় বলিষ্ঠতা ফুটিয়ে তুলতে হলে কাজটিকে আরো বড় করে গড়তে হবে। কথাটা রদ্যাঁর মনে ধরে। সত্যিই তো, চিন্তা তো একটা সংগ্রাম। কখন মানুষ চিন্তার মধ্যে ডুবে যায়? যখন সে নিজেকে আবিষ্কার করে সঙ্কটের মুখোমুখি।

এলসনের ভাষায়, ‘দি থিঙ্কার’ হচ্ছে রদ্যাঁর চোখে শিল্পীর প্রতীক, তাঁর নিজের কালে যে একই সঙ্গে বিচারক এবং কারাবন্দী, সেই মানুষের প্রতীক, যার বুদ্ধি আছে কিন্তু যে আবেগ দ্বারা অভিশপ্ত। মানুষ এইভাবে যন্ত্রণার ক্রুশকাঠে ধৃত তার ঈশ্বরকে স্থানচ্যুত করেছে। এখন মৃত্যু তার জন্য যেমন স্বর্গীয় সান্ত্বনা নিয়ে আসে না তেমনি নরকের দাবাগ্নিও আনে না―শুধু অন্তহীন চলা।

অণু ঠিকই বলেছেন, ভাস্কর্যগুলোর শিল্পরস বর্ণনা করতে গেলে হাজার হাজার পাতা ফুরিয়ে যাবে।

পারিতে গেলেও ল্যুভর, আইফেল দেখতেই সময় ফুরিয়ে গিয়েছিলো। সফরসঙ্গীরও শিল্পের উপর তেমন আগ্রহ ছিলো না। তাই এখনও অপূর্ণ হৃদয়েই কালাতিপাত করে যেতে হচ্ছে। কিছুটা হলেও মিটলো তো দুধের স্বাদ ঘোলে, তাই অণুকে কুর্ণিশ!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তারেক অণু's picture

পরের বার যাবেন রোমেল ভাই। খুবই ভাল লাগল আপনের তথ্যপূর্ণ ফিডব্যাক। ছুটি শুরু হয়েছে নাকি?

অতিথি_পদ্মজা's picture

অসাধারণ। একদম গুল্লি

তারেক অণু's picture
জ.ই মানিক's picture

দুর্দান্ত!
চমত্কার বর্ণনা ও চিত্র সমাহার।
ধন্যবাদ ও সাধুবাদ।

তারেক অণু's picture
মৃত্যুময় ঈষৎ's picture

অনেক ক্ষেত্রে লেখকের লেখার মান কখনও কমে যায়, পাঠক মুখ ফিরিয়ে নেয়!!! আপনার ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা কখনই ঘটবে না আমি নিশ্চিত। আমরা পাঠকরা আপনাকে বরণ করে নিতে সদা উৎসুক থাকি। আপনি আমাদের খুব আপনার একজন। আপনার সাথেই আমাদের বিশ্ব ভ্রমণ।

যথারীতি চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

তারেক অণু's picture

আশা করি আপনার প্রত্যাশার মান রাখতে পারব ঈষৎ দা। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

guest_writer's picture

প্রায় প্রতিদিনই সচলায়তনে আপনার পোস্ট দেখি এবং এর প্রায় সবকটিই ভ্রমণবিষয়ক। আপনার পোস্ট দেখে ও পড়ে শুধু অবাকই হই। মন্তব্য করার কোন ভাষা খুঁজে পাইনা।

আপনার পোস্টগুলো ব্যতিক্রমী। অসাধারন।

আজ মনে একটা প্রশ্ন জেগেছে, আপনি কি সত্যিই ঘুমাবার সময় পান !

মন্তব্য : প্রৌঢ়ভাবনা

তারেক অণু's picture

আর বইলেন না, বেশী ছোট থাকতে জেনেছিলাম এডিসন দিনে মাত্র ২ ঘণ্টা ঘুমোতেন নেপোলিয়ন ৩ ঘণ্টা ! নেপোকে কোনদিনই পছন্দ না হলেও অনেক চেষ্টা করেছি একসময় ৪ ঘণ্টার মত ঘুমিয়ে বাকী সময় অন্য কাজ করতে, কিন্তু পারি না ! এখনো গড়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা ঘুমোতে হয় !!!
ভ্রমণছাড়াও অনেক লিখা হয় বিশেষ করে ভিনদেশী চলচ্চিত্র নিয়ে কিন্তু সচলে পোষ্ট করা হয় নি, করব আশাকরি ভবিষ্যতে।

guest_writer's picture

আপনার ঘুমানোর সময়ের আরও একটি ঘন্টা আমাদেরকে দিন। সচলে অনেক অনেক পোষ্ট পাঠান। তাতে আপনার হয়ত কিছু অসুবিধা হবে তবে আমরা অনেক উপকৃত ও কৃতার্থ হব।

ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন।

মন্তব্য : প্রৌঢ়ভাবনা

তারেক অণু's picture

চেষ্টা করে যাচ্ছি। আসলে কম ঘুমিয়ে অন্যান্য কাজ করতে পারলেই আমি খুশী, দেখা যাক। অনেক শুভেচ্ছা রয়ল। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ধৈবত(অতিথি)'s picture

আমিও ঘুমানোর সময় কমানো নিয়ে ম্যালা এক্সপেরিমেন্ট করেছি, এবং বরাবরই ব্যর্থ হয়েছি।

তারেক অণু's picture
অতিথি লেখকঃ অতীত's picture

আমি এইবার নিশ্চিত, তারেক ভাইএর পিছনে কেউ ক্ষ্যাপাটে পাগলা কুত্তা ছাইড়া দিছে...নাইলে এমনে দুনিয়াজুড়ে দুড়াদুড়ি কেমনে কী ইয়ে, মানে... চিন্তিত
কথায় আছে উপরওয়ালা যারে দেয়, এক্কেরে ঝাঁপি খুইলা দেয়। ঝাঁপি খুইলা তো দিছেই...সেইসাথে নিচের আশেপাশে যারা ছিলো বা যাদের থাকার কথা বা সম্ভাবনা ছিলো হগলরে এই তারেক ভাই ল্যাং মাইরা ভাগায়া একাই সব বেদখল করছে রেগে টং রেগে টং রেগে টং

হিংসা করতে করতে হাঁপায় গেছি...এহন উদাস লাগতাছে, আর কিছু কমুনা ওঁয়া ওঁয়া

অতীত

তারেক অণু's picture

আরে না, কই উপরওয়ালা, কই ঝাপি, আর কই কুত্তা।
ও মানিক, কি বাতি জ্বালাইলি ! অতীত ভাইয়ের চরিত্রগুলোর কাউরেই দেহি না চোখ টিপি

সুমন তুরহান's picture

অবশেষে আবারো অত্যধিক অভিভূত অসাধারণ অণু'তে ... চলুক হাসি

-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী

তারেক অণু's picture
সঙ কিংবা সন্ত's picture

সবসময় আপনার লেখাগুলো ভালো লাগে। রদ্যাঁ আমার প্রিয় ভাস্করদের একজন।
মুণাল হকের ভাস্কর্য(!) দেখতে দেখতে পচে যাওয়া চোখ ভীষণ আরাম পেলো রদ্যাঁর ভাস্কর্যের চমকপ্রদ ছবিগুলো দেখে।
বিঃদ্রঃ বালজাকের ভাস্কর্যটা কোথাও দেখলাম না।

তারেক অণু's picture

বালজাকের ভাস্কর্যটার ছবি খুব সুবিধার আসে নি, পরের বার!

স্যাম's picture

চলুক চলুক
আগে পড়ি নাই - অনেক ভাল লাগল ।

তারেক অণু's picture

ইস, ব্যানারটা মিস হয়ে গেল!

অতিথি লেখক's picture

আমারও পড়া ছিল না। অজস্র ভালো লাগা দিয়ে গেলাম অনু দা। উত্তম জাঝা!

অমি_বন্যা

তারেক অণু's picture

শুভেচ্ছা

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.