আমরা তাহলে কেন ট্যাক্স দিব?

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/০৯/২০১১ - ১:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিছুদিন আগেই সচলে আয়কর নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। আমরা অনেকে নানা কারণে সরকারকে ট্যাক্স বা কর দিই না, যদিও কর দেয়াটা নাগরিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এবং কোনো বছরের আয় করযোগ্য না হলেও প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করাটাও এই দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। আয়কর মেলার কারণে অনেক নতুন করদাতা কর দিতে উৎসাহী হচ্ছেন, ঝুটঝামেলা ছাড়া কর দেয়া যাচ্ছে, মানুষের কর বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে ইত্যাদি কথা উল্লেখ করে পোস্টে সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল মানুষের কাছে যেন আয়করের সুফলগুলো দৃশ্যমান করা হয়- কারণ সেটি করা গেলে অনেকে স্বতস্ফূর্তভাবেই কর দিতে এগিয়ে আসবে।

সরকার করের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে- এই ধারণাটা পোক্ত হয়েছিল যখন বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করের আওতায় এনেছিলেন এবং মন্ত্রী-সাংসদদেরও কর দিতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। একটি দেশের সাধারণ মানুষ কর দিবে, অথচ যারা দেশ পরিচালনার নানা স্তরে নিয়োজিত আছেন তাঁরা কর দিবেন না- এটি কোনো সভ্য দেশের রীতি হতে পারে না। ফলে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার এই ঘোষণাটি সত্যিকার অর্থেই করের দিক দিয়ে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু আজকের প্রথম আলোতে এই খবরটি পড়ে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! বাজেট বক্তৃতায় থাকলেও আইন সংশোধন না করার কারণে নাকি প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য এবং সংসদ সদস্যদের এ বছর কর দিতে হবে না।

নিজে চিনি খাওয়ার অভ্যাস ছেড়ে মহানবী এক বালককে চিনি খেতে নিষেধ করেছিলেন- বহুল প্রচলিত এই ঘটনাটি মানুষকে অন্তত এটা শেখায়- যে কাজ আমরা অন্যকে করতে বলি, নিজে যেন আগে সেই কাজটির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি। এটি গেলো একটি দিক। আরেকটি দিক হলো আইন। আইন দেশের সব মানুষের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য, যদি না কোনো বিশেষ কারণে সরকার সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে সেই আইন থেকে অব্যহতি দেয় (এই অব্যহতি দেয়াটাও আইনেরই অংশ)। উদাহরণস্বরূপ (যদি ভুল না শুনে থাকি), দেশে অনেক ধনী কৃষক আছেন যারা আমার মতো চাকুরেদের চেয়ে বহুগুণে আয় করে থাকেন। তাদের বাৎসরিক আয় হিসেব করলে আমাদের মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। কিন্তু সরকার কৃষিখাতে উৎসাহ দেয়ার জন্য কৃষকদের আয়কর দেয়া থেকে রেহাই দিয়েছে। এ থেকে আশা করা হয়, কৃষকরা যে পরিমাণ টাকা কর দিতো, সেই পরিমাণ টাকা হয় তারা কৃষিখাতে বিনিয়োগ করবে, কিংবা সেই টাকাটা তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজে লাগবে কিংবা সরকারের এ ঘোষণার ফলে আরো অনেকে কৃষির প্রতি আকৃষ্ট হবে। নানা ধরনের নিকট এবং দূরবর্তী লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার এ ধরনের কর অবকাশ সুবিধা দিয়ে থাকে।

কিন্তু কোন বিচারে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যদের কর থেকে রেহাই দেয়া হলো? তাঁরা দেশ চালান, আইন তৈরি করেন- সেই আইন অনুযায়ী আমরা কর দিই। যে আইন তাঁরা জনমানুষের জন্য তৈরি করেন, সেই আইন কি তাঁদের নিজেদের জন্য প্রযোজ্য নয়? তাঁরা কি আমাদের চেয়ে কম আয় করেন? মন্ত্রীত্ব কিংবা সংসদ সদস্য থেকে পাওয়া বেতনের পাশাপাশি অনেকেরই নিজস্ব ব্যবসা বা আয়ের উৎস রয়েছে। সেগুলোর জন্যও কি তাঁরা কর দিবেন না? প্রথম আলোর রিপোর্টটিতে মন্ত্রী-সাংসদ কার কী পরিমাণ বেতন, সেই হিসাব দেয়া আছে। দেখুন তো, বাংলাদেশের কজন মানুষ এই পরিমাণ টাকা আয় করে? এর চেয়ে বহুগুণে কম আয় করে যদি তারা কর দিতে পারে কিংবা তাদেরকে কর দেয়ার কথা বলা হয়, তাহলে প্রভূত পরিমাণে আয় করেও মন্ত্রী-সাংসদরা কেন কর দিবেন না? কেন শুধু আমরাই কর দিব? শুধু তো বেতন নয়; বেতনের পাশাপাশি তাঁরা যেসব সুযোগ-সুবিধা (যাতায়াত ভাতা, টেলিফোন বিল ইত্যাদি) পান, সেগুলো হিসাব করলে আয়ের পরিমাণ আরো বহুগুণে বেড়ে যাওয়ার কথা। এসব তো আমাদেরকে নিজের বেতন থেকেই সংস্থান করতে হয়! মন্ত্রী-সাংসদরা কি সুবিধাবঞ্চিত কোনো গ্রুপ যাদেরকে কর থেকে রেহাই দিলে দেশ বিশেষ সুবিধা পাবে? লাখ লাখ টাকা আয় করে মন্ত্রী-সাংসদরা যদি কর না দেন, তাহলে কোন মুখে তাঁরা সাধারণ মানুষদের কর দিতে বলেন? এনবিআর কোন হিসেবে মন্ত্রী-সাংসদদের মতো বড় বড় মানুষদের কর থেকে রেহাই দিল?

আগের লেখাটি লিখেছিলাম এক অর্থে মানুষকে কর দেয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করার জন্য। কিন্তু আজকের এই খবরটি পড়ে আক্ষরিক অর্থেই দমে গেলাম। এই দেশে যে যেভাবে পারছে নিজের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে নিচ্ছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেও মন্ত্রী-সাংসদরা যদি কর থেকে রেহাই পান, তাহলে ন্যূনতম ২০০০ টাকা কর না দিয়ে একজন সাধারণ চাকুরে যদি বউ-বাচ্চা নিয়ে একদিন সেই টাকাটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খরচ করে, তাহলে তাকে কর না দেয়ার অভিযোগে দোষারোপ করার যুক্তি থাকে না।

সময়ে সময়ে আমি আশাবাদী মানুষ- কোনো একজন মন্ত্রী বা সাংসদ সরকার বা এনবিআরের এ অবস্থানের বিপক্ষে অবস্থান নিবেন, সেটি দেখার আশায় আগামী কয়েকটা দিন পত্রিকার পাতায় চোখ রাখব।

***
আপডেট
আমি আশাবাদী ছিলাম, এই সিদ্ধান্ত বদলাবেই। আজ (৩০ সেপ্টেম্বর) ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকার পাতায় দেখলাম যে, এনবিআর জানাচ্ছে- মন্ত্রী-সাংসদদেরও কর দিতে হবে, আইনে যাই থাকুক না কেন। এনবিআরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে এ সম্পর্কিত যাবতীয় নিয়মকানুন যেন সংশোধন করা হয় (যাতে ভবিষ্যতে এ নিয়ে আর কোনো কথা না উঠে), সে ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নিতে এনবিআরকে আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি, যাদেরই আয় নিম্নতম আয়সীমার উপরে, তাদের সবাইকেই আয়করের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি।


মন্তব্য

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে শামসুর রাহমানের একটি কবিতার কটি লাইন মনে পড়ে গেল,

তাজিম শেখোনি তুমি? কেন কুর্ণিশ করছ না আমাকে? জানো, এক্ষুনি তোমার গর্দান নিতে পারি?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

গৌতম এর ছবি

ভয়ের কথা! মন খারাপ

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

gypsy এর ছবি

চলুক

গৌতম এর ছবি

ধন্যবাদ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গৌতম, আমাদের কর ব্যবস্থায় যে অব্যবস্থা আছে এটা সেই অব্যবস্থার আর আমাদের জনপ্রতিনিধিদের মানসিকতার একটি চিত্র। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটি তথ্য দেই। বাংলাদেশে যে পরিমাণ শিশুখাদ্য দরকার দেশে তার ৫০%ও উৎপন্ন হয় না। অথচ শিশুখাদ্যের উপর আমদানী পর্যায়ে শুল্ক-করাদির পরিমাণ প্রায় ৮৯%। সেই একই দেশে এমপি'রা বিনা শুল্কে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল গাড়ি আমদানী করে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

গৌতম এর ছবি

আমি ভেবেছিলাম সরকার এই বিষয়গুলোর প্রতি কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এখন অনেকটাই হতাশ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

তানজিম এর ছবি

ক্ষেপে গিয়ে আবার হতাশার উপর ট্যাক্স না বসালেই হয়!!

গৌতম এর ছবি

তাইলে আমার কাছ থেকে ট্যাক্স নিতে পারবে না, আমি হতাশ হলেও দ্রুত সামলে উঠি। পাণ্ডবদার কমেন্টে হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু অন্যদের কমেন্টে দ্রুতই সামলে উঠেছি। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

 অহর্নিশি এর ছবি

আমরা ট‌্যাক্স দিব কারন আমরা ইনাদের ভোট দিয়ে বিবেকের সাথে যে অন‌্যায় করেছি তার মাশুল দিতে.....
আর কতোবার এরা আমার দেশকে এইভাবে ধর্ষন করবে; আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখবো????????
আমরা কি কোন দিন এদের নর্দমায় নিক্ষেপ করতে পারবো না ??? এই দেশের এতোগুলো শিক্ষিত লোক কি শিখলো যে এখনও এদের চাটুকারিতা করে???

গৌতম এর ছবি

হয়তো একদিন সবকিছুই পাল্টাবে! হতাশ হয়েও তো লাভ নেই।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

তারেক অণু এর ছবি

আমাদের ছাগু রাজনীতিবিদ আর দুর্নীতিবাজ হর্তাকর্তাদের নিয়ে যে কি করা যায় কল্পনাতেও আসে না ! এরা কি সেয়ানা পাগল না ভাবের পাগল ! স্বার্থের বেলায় তো দেখি সবই ব্যাটা এক ভেলাতে। ( ফিনল্যান্ড থেকে লিখছি ভাই, এই দেশটা টানা কয়েকবার বিশ্বের সেরা দুর্নীতিমুক্ত দেশ হয়েছে, সর্বোচ্চ করের পরিমাণ ৬০ % , Nokiaর প্রেসিডেন্ট বা যে কোন উচ্চ আয়ের মানুষকেই ১০০ টাকা উপার্জন করলে ৬০ টাকা কর দিতে হয় রাষ্ট্রকে। কর ছাড়া রাষ্ট্র এগোবে কি করে ! আবার নিম্ন আয়ের মানুষদের কর সেই হিসেবে অনেক কম, আর সেই সাথে যে কোন অপরাধের জরিমানা ( গাড়ী স্পিডিং, কর ফাঁকি) হিসেবে উচ্চ আয়ের মানুষদের জরিমানা নিম্ন আয়ের মানুষদের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশী হয়। আবার সেই টাকাতেই সাধারণ ,মানুষদের বিনামুল্যে উচ্চ শিক্ষা, সুচিকিৎসা, অন্ন, বাসস্থান নিশ্চিত করা হয়)

গৌতম এর ছবি

নিশ্চয়ই আমরা একদিন ফিনল্যান্ডের চেয়েও এগিয়ে যাব, হিংসা ভাই। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমি আশাবাদী মানুষ; কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে দিন দিন হতাশা বাড়ছে। কমনসেন্স জিনিসটা এতো আনকমন কেন এটা মাথায় ঢোকে না। পরে দেখি, কমনসেন্সের অভাবই যেখানে আপেক্ষিক সুযোগের সৃষ্টি করে, সেখানে কমনসেন্স প্রয়োগ করারই হয়তো দরকার নেই। তবে শেষবিচারে ধরাটা এরাও খায়, পাবলিক তো খায়ই।

প্রথমত, দুর্নীতির শুরু হয় আইনেই। আইন সবসময়ই ক্ষমতাসীনের পক্ষে কথা বলে। এরপরে সেই আইনের বাস্তবায়নেও দুর্নীতি হয়।

দ্বিতীয়ত, কর ফাঁকি দেওয়া গেলে ব্যবসায়ে একটা বিরাট সুবিধা পাওয়া যায়। আমাদের অধিকাংশ এমপি মন্ত্রীরই সম্ভবত নামে-বেনামে ব্যবসায় আছে।

তৃতীয়ত, পার্টির মনোনয়ন পেতে একটা বিরাট অংকের টাকা হাসিনা-খালেদার ফান্ডে জমা দিতে হয়। সেটা তো কোনো না কোনোভাবে ম্যানেজ করতে হবে। সুতরাং কর না দেয়া একটা বড়ো সমাধান।

পোস্টে ৫ তারা। রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি আমরা অন্তত নিজেদের কথাটি বলে যাই, নাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

গৌতম এর ছবি

শেষবিচারে ধরাটা আসলে তারা কীভাবে খান বুঝলাম না। ধরা খাওয়ার সমস্ত আয়োজন তো পাবলিকের জন্য!

আমি এখনো আশাবাদী, অগ্রগতি হবেই- এই মুহূর্তে হয়তো থেমে আছে, কোনো একসময় দুর্দান্ত স্পিড পাবে!

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সুইস ব্যাংকে কয়েক হাজার কোটি টাকা রেখে ভাঙ্গা কোমরের জীবনকে কি ধরা খাওয়া বলা যায় না? হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

গৌতম এর ছবি

তা বলে! কিন্তু ব্যতিক্রম দিয়ে যে উদাহরণ টানা যায় না!

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

দ্রোহী এর ছবি

এমন করেন ক্যান? এমনিতেই জনগণকে সুখে-শান্তিতে রাখার কথা ভাবতে ভাবতে আমাদের মন্ত্রী-সাংসদেরা দুঃশ্চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম করে ফেলেন। তাদের উপর করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে আরো দুঃশ্চিন্তায় ফেলতে চান?

গৌতম এর ছবি

ওহো এভাবে তো ভাবি নি! স্যরি স্যরি মন খারাপ

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সরকার চায় 'মানুষ' কর দিক, তাই করমেলা ইত্যাদির আয়োজন। ছা পোষারা মেলায় গিয়ে বিনা ফিতে টিআইএন নিয়ে আসছে। কিছু 'মানুষ' তো উপকৃত হইছে।

তবে বলতে পারেন, করচোরারা তো মেলার ধার দিয়েও হাঁটেনি। জ্বী হাঁটেনি। কারণ তারা মানুষ নয়, অমানুষ।

আর রাজা উজিরগন তো মানুষ নন, সাক্ষাত দেবতা একেকজন! ওনাদের কর আজীবন মওকুফ থাকলেও জগতের কোন সমস্যা হয় না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

গৌতম এর ছবি

আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না- এই কর দিতে গিয়ে একেকজন মানুষের কী পরিমাণ সময় নষ্ট হচ্ছে! তাও যদি তারা একটু মনের সন্তুষ্টি পেতো!

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

পাঠক এর ছবি

গুল্লি

ট্যাক থেকে ট্যাক্স দেবো,
ভরবো তোমার ঝুলি।
তোমার মুখে শুনছি শুধুই
দিন বদলের বুলি।
খাম্বা গেল, শাজা এলো,
আমরা করবো কি?
উলু খাগড়ার প্রাণান্ত বুঝে গিয়েছি।

গৌতম এর ছবি

খাসা ছড়া! ...তবে অবস্থা বদলাবে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নজমুল আলবাব এর ছবি

দেশ নিয়ে আমার আর কোন আশা নাই।

ভয়ংকর মন্দার একটা বছর কাটালাম, তারপরও হাড্ডি বেচে টেক্স দিলাম, আর তেনারা, আমাদের মহান সেবকরা যথারীতি মুক্ত।

রাজনীতিবিদরা কতবড় শুয়রের বাচ্চ একেকটা তার একটা প্রমাণ হলো, সারাবছর কুকুরের মতো এরা মারামারি করে, সংসদে যায় না, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেও একপক্ষ আরেক পক্ষের বিরোধিতা করবে। কিন্তু যেদিন তাদের বেতন-ভাতা বাড়াবার বিল উঠে সংসদে, সেদিন সব কয়টা লেজ নামিয়ে সংসদে যাবে, এবং কোন রকম বিরোধিতা ছাড়াই তাদের বেতন ভাতা বাড়াবার বিলটা পাশ করিয়ে নেবে।

গৌতম এর ছবি

হাড্ডির কেজি কত ছিল? চোখ টিপি

নিরাশ হয়েন না, আপনার মতো মানুষেরা নিরাশ হলে অন্যরা ভরসা পাবে কীভাবে?

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

পাঠক_পদ্মজা এর ছবি

প্রশ্নঃ আমরা কেন ট্যাক্স দেব?
উত্তরঃ
১। আমাদের স্বচ্ছতা বেশি, আয় সীমিত তাই ট্যাক্স দেব। (নেংটার নাই বাটপারের ভয়!) শয়তানী হাসি
২। আমরা তো ট্যাক্স ফাঁকি দিতে পারবো না।
৩। আমরা ভোট দিতে পারি কিন্তু পার্টি ফান্ডে চাঁদা দিতে পারি না। ইয়ে, মানে...
৪। আমরা এখনো আশাবাদী এই ঘূণে খাওয়া দেশটা নিয়ে। চিন্তিত

পদ্মজা

গৌতম এর ছবি

ট্যাক্স দিলে দেশের উন্নতি হবে, তাই ট্যাক্স দিব।

কিন্তু বিষয়টাকে আমরা এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছি যে, এই পরিস্থিতিতে আপনার উত্তরগুলোই সঠিক।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

উচ্ছলা এর ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতির পরতে পরতে বিস্ময়! আমি মুগ্ধ, বিস্মিত হয়ে বলি, "WTF"!

ইনকাম-ট্যাক্স নিয়ে রাজনীতির লেটেস্ট WTF edition সত্যিই মনমুগ্ধকর!

গৌতম এর ছবি

কোনো একজন মন্ত্রী কিংবা সাংসদ এই অবস্থানের বিপক্ষে কণ্ঠ ছাড়বেন, এই WTF-এর জন্য অপেক্ষা করছি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

জাহিদ এর ছবি

ব্লগেস্ফিয়ারে রাজাকার/মুক্তিযোদ্ধা, দালাল, পাকি, ছাগু ইত্যাদি বিশেষনে যত লেখা ছাপা হয় দূর্নীতি নিয়ে তার কি কিছুই হয়? নির্বিষ দু/একটি লেখা পড়ে হা-হুতাশ -এই তো?

সবাইকে একসাথে এসব রাজনীতিবিদদেরকে পরিত্যাগ করা দরকার।

গৌতম এর ছবি

সবাইকে একসাথে এসব রাজনীতিবিদদেরকে পরিত্যাগ করা দরকার।

একমত নই। রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসা দরকার।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

পাঠক_পদ্মজা এর ছবি

রাজনীতি করবে রাজনীতিবিদ'রা, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ'রা নয়।
জনতার করের টাকায় পালিত মন্ত্রী, এমপি'দের তাদের দায়িত্ব বোঝানোর দায়িত্ব জনগণের।

গৌতম এর ছবি

রাজনীতি আর ব্যবসা পরস্পরের পরিপূরক না হলে সম্ভবত অনেক সমস্যা থাকতো না।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

স্বাধীন এর ছবি

এইগুলা আমাদের প্রাপ্য। আমরা নিজেরা রাজনীতি বিমূখ হবো, চাইবো অন্য কেউ এসে আমাদের জন্যে কিছু করে দিক - তাহলে তাদেরকে কিছু দিতে হবে না। এই দুই দলের বাহিরে কি আমরা কোন শক্তিশালী বিকল্প দিতে পেরেছি জনগণকে? সে হিসেবে দোষ তো আমাদের সবারই।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ঠিক, সামষ্টিক অর্থে এটাই সত্যি। মিরাকলের জোরে আমাদের ভাগ্যোন্নয়ন হবে না। এই পোস্ট বা আমাদের মন্তব্য সেই উন্নয়নের চেষ্টার সমুদ্রে বিন্দু বিন্দু জল।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ভুলো মন এর ছবি

মিরাকলের জোরে আমাদের ভাগ্যোন্নয়ন হবে না।

শতভাগ সহমত। কিন্তু পরিণতি নিয়ে আতঙ্কিত। রাজনীতির দুরবস্থায় দেশের মেধাবী লোকজন প্রথম অথবা দ্বিতীয় সুযোগেই বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছেন। বলাই বাহুল্য এদের দেশে ফেরার সম্ভাবনা বড়ই কম, সবার আগে চিন্তা এসে যায় খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা নিয়ে, তার পরের দুঃশ্চিন্তা সার্বিক নিরাপত্তা (যদি নিকটাত্মীয়'র মধ্যে প্রভাবশালী কেউ না থাকে)। দেশে যারা রইলেন তাদের মেধা কম এটা বলাটা অন্যায় হবে, কিন্তু পেটের চিন্তাতেই যদি সারাক্ষন ব্যস্ত থাকতে হয় তবে অপরের কথা ভাববার সুযোগ কোথায়? (ধনীর দুলাল, উচ্চশিক্ষিত কিন্তু সাধারনের দুঃখে কাতর, এমন কাউকে এখনো দেখি নি)

কে হবেন সেই ব্যাক্তি, যাঁর বদলে দেবার সামর্থ্যের পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীকে একতাবদ্ধ করার দক্ষতা থাকবে? এমন কাউকে পাবার সৌভাগ্য কি আমাদের হবে?

গৌতম এর ছবি

তা ঠিক। জনগণ যেমন, শাসক তো তেমন হবেই।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

ওরে বাব্বা, ওনারা কর দিবেন, এত বড় কথা!!!! হাইকোর্ট ডেকে পাঠালো বলে............

মন খারাপ মন খারাপ পরিবর্তন কি কোনদিন হবে না?


_____________________
Give Her Freedom!

কুটুমবাড়ি এর ছবি

খবরে প্রকাশ.. হাইকোর্টের বিচারপতিদেরও কর দিতে হবে না অন্তত আগামী ছ-মাস... মন খারাপ

পরিবর্তন আসলেই হবে না... মন খারাপ :(

গৌতম এর ছবি

ডরে এই বিষয়ে আর কিছু কৈলাম না।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
মুহিত এলো দেশে,
বিদেশ বসে পয়সা কামাই
খাজনা দেবো কিসে?

ভয়ে আছি, রিটারন দাখিল করা হয়নি!

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

গৌতম এর ছবি

দাখিল করে ফেলেন। রোববার পর্যন্ত সময় আছে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

nam nai এর ছবি

আজাইরা পোস্ট হাসি
ট্যাক্স তো আমরাই দিব। এইটা আমাদের অধিকার।
সরকার এইটা নিশ্চিত করলেই আমাদের খুশি হওয়া উচিত।

_________________________
I added cool smileys to this message... if you don't see them go to: http://e.exps.me

গৌতম এর ছবি

আমি মারাত্মক খুশি। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

গৌতম, সরকার তোমার কথা শুনতে পেয়েছে। নইলে বলতাম, আমরা হীরক রাজার দেশে আছি। দেবানন্দকে চিনতে পারলে না তো? (সুদেব)

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অত ক্ষ্যাপার কী আছে?
তুমি করো ইনকাম- তারা করেন সেবা
দুইটার পার্থক্যে একটু ডিফারেন্স করবা না?

তানিম এহসান এর ছবি

’ইনকাম’করি বলে ‘ট্যাক্সো’ দেই, ‘এক্সপেনডিচার’ আর ইনকামের ক্রমাগত মুছে যাওয়া ফারাকের মধ্যে সব শালা ট্যাক্সচোর নগদে আমাদের ট্যাক কাটে আর বিছানা-বালিশে ফরাসি সৌরভ মেখে ঘুমায়। ইতিবাচক চিন্তা করতে পারার উপর ট্যাক্স বসে গেছে ভাই, পথে চলতে দায়, খাদ্যে ভেজাল ..... আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় ‘হিদোল’ বলে যে শুটকি ছিলো গরীবের বেচে থাকার উপায় তার কেজি নাকি এখন ৬০০ টাকার উপর। কেম্নে কি?

পরিবর্তন আসবে আমিও প্রাণপণে বিশ্বাস করতে চাই কিন্তু তাতে আমাদের পঁচে যাওয়া হাড়-মাংস লেগে থাকে কিনা তাই নিয়ে ভাবছি! দেঁতো হাসি

ফাহিম এর ছবি

যায় যদি যাক প্রাণ,
হীরকের রাজা ভগবান ---

এখনও কত প্রাসঙ্গিক!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

গৌতম দা খুব যৌক্তিক একটা বিষয় উপস্থাপন করেছেন এই লেখায়। আর মন্তব্যে-প্রতিমন্তব্যে অনেককিছুই জানা যাচ্ছে আমাদের ভাবনাগুলোর।

কিন্তু আমি নিজে আসলে ধোঁয়াশায় বলা চলে। আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক আর ব্যক্তিগত জীবনে দুর্নীতি এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে এইটা একটা লুপের মতো যার কোনো শেষ মাথা আমি দেখি না, শুধুই একটা আরেকটার সাথে চক্রাকারে সংযুক্ত হয়ে থেকে ব্যাপারটা আরও পেঁচিয়ে রেখেছে। প্রায় অর্ধশতাধিক বছর হয়ে আসছে স্বাধীনতার। এখনও আমরা কোথায়? অথচ প্রায় সমসাময়িক মালেয়শিয়ার অবস্থা দেখুন সবাই। আমরা সিস্টেমের দোষ দেই, হর্তা-কর্তাদের দোষ দেই, সর্বদা একে অন্যকে দোষ দিয়ে সমাধান বের করি। কেউ বলে সিস্টেমের দূর্বলতা, কেউ বলে আমাদের অবহেলা আর উদাসীনতা কিংবা কাপুরুষতা কিংবা স্বার্থপরতা। কিন্তু আসলে এইগুলো সবাই মিলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে একে অন্যের সাথে।

রাজনীতিবিদই সব নয়। আপনি সিস্টেম বলেন, সেটাও সমাজের বা ব্যক্তির দ্বারা তৈরি। সিস্টেম বদলাতে গেলে ব্যক্তি বদলাতে হবে। আবার যেহেতু ব্যক্তি সিস্টেমে আবদ্ধ, সে বদলাতে গেলে সিস্টেম জড়িয়ে ধরবে। আমরা সমস্যা জানি, সমাধানও কই বা আন্দাজ করি, কিন্তু বাস্তবিক প্রয়োগ তো পাচ্ছি না। আশা রাখবো, এর আসলে ভিত্তি কিংবা মেয়াদ আসলে কী? ঠিক আশায় কবে বা কীভাবে বা কত কষ্টের পরে সব বদলাবে? জানে কেউ?

আজ আমরা রাজনীতিবিদকে গালি দেই, কাল আবার তাদেরই মাথায় তুলে আসনে বসিয়ে দেই। দ্বিতীয় কোনো অপশন নাই, এইটা আসলে কোনো অজুহাত না। না থাকলে আপনি নামুন, দেখি কয়জন একত্রিত হতে পারে। তখন দেখবেন আপনার ভাইও স্বার্থ খুজতেসে। আমরা একএকজন এতই আত্মসম্মানবোধবিশিষ্ট নাগরিক যে, দিনেদুপুরে যখন একজন ব্যক্তিকে সবার সামনে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয় তখন কেউ কিছু বলার সাহস পাই না। অথচ সেই ছিনতাইকারী শুধু একটু বাঁধা বা অসহায় অবস্থায় পেয়ে বা পুলিশের হুকুমে গণজোয়ার তুলে নিমেষে নৃশংসভাবে হত্যা করি। আমাদের মূল্যবোধ বলে আদৌ কিছু আছে কিনা সন্দেহ। নৈতিক এবং মানবিক মূল্যবোধ যতদিন না নিজস্ব স্বার্থের চেয়ে বড় হবে ততদিন কোনো সামগ্রিক বা জাতীয় প্রগতি আশা করা বৃথা।

এই দেশের কোনো আশা নাই, এই কথার সাথে এখন মনে হয় আমি একমত। আপনি এমন একটি জায়গা দেখান যেখানে একটু স্বস্তির আবহ পাবো, আছে? না, তা নেই মনে হয়। আমার দেশ আমি গড়বো, এই কার্যকর পদক্ষেপ যতদিন না নিতে পারবো, যুগপৎ ব্যক্তি এবং দলীয় উদ্যোগে ততদিন কোনো ফল দেখবো না আমরা মনে হয়।

শুধু একটা অতি সাধারণ বাস্তব উদাহরণ দেই। নিজেকে নিয়েই (চার-পাঁচ মাস আগের ঘটনা)। আমি ধানমন্ডি থেকে বনানীতে সিএনজিতে যাবো। জিজ্ঞাসা করলাম, কত? সিএনজিওয়ালা কয়, দুইশত টাকা! মুলোমুলি করে দেড়শতে আনলাম। যাওয়ার সময় অনেক বাকবিতন্ডা হলো সিএনজিওয়ালার সাথে। পথে বনানীর এগারো নম্বর রোডে ঢোকার সময় চেকপোস্টে পুলিশ থামালো। কী হিসেবে যাচ্ছি জিজ্ঞেস করলো। সরাসরি বলে দিলাম। পুলিশ ড্রাইভারকে নামিয়ে নিয়ে গেলো। তার আগে আমাকে কিছুটা গরম স্বরে বোঝালো, আমাদের মতো নাগরিকরাই আস্কারা দিয়ে এদের মাথায় তুলছি। পনের-বিশ মিনিট পরে ছেড়ে দিলো।

উপরের ঘটনায় দেখুন
১। সিএনজিওয়ালার মিটারে যাওয়ার নিয়ম। তা সে যাচ্ছে না।
২। যাত্রী কম্প্রোমাইজ করে নিচ্ছে। কোনো অভিযোগ নেই শেষ পর্যন্ত কারণ সিস্টেমে তার কোনো ভরসা নেই। বরং তাতে সময় নষ্ট এমনকি হয়রানিও হতে পারে পুলিশের কাছে গেলে।
৩। মিটারে কেনো যাচ্ছে না?, এটা বলায় ড্রাইভারের যুক্তি, তেলের দাম বেড়েছে আর মালিকের দৈনিক ভাড়াও বেশি।
৪। পুলিশ ধরায় সেই যাত্রীই কিন্তু আবার ফট করে সিএনজিওয়ালার কীর্তি ফাঁস করে দিয়েছে। অথচ সে ক্ষতি মেনেই উঠেছিলো।
৫। পুলিশ অনেক বাণী চিরন্তনী দিলো বটে, কিন্তু সে চা খাওয়ার জন্যে পঞ্চাশ টাকা নিয়েই ছেড়ে দিয়েছে। (পরে ড্রাইভার আমাকে বলেছিলো)

এইখানে সিস্টেমগুলো দেখুন। আমরা অন্যায় করছি, অন্যায় হতে দিচ্ছি, অন্যায় সিস্টেম এড়িয়েও তার মধ্যেই ঘুরাফেরা করতেছি, শুধু নিজে কীভাবে পার পাই ভেবে ভেবে। সমস্যা মিটবে কীভাবে?

যাবার পথে আরেকজনের সাথে হালকা তর্ক হলো। সে জ্যামে আটকে সমানে কখনো দেশ, কখনো নেতা, কখনো পুলিশ, কখনো সিগন্যালের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতেছিলো। অথচ সে লেন ভঙ্গ করে দাঁড়িয়ে আছে আড়াআড়িভাবে বাইকে। আমাকে আবার বলে, আপনি সিএনজি ঠিক করেছেন, সেই এইএনজিওয়ালা আপনারে যদি চিপায় লইয়া যাইয়া মাইরা ফ্যালে তাইলে আপনার দোষ?(সে বোঝাতে চাচ্ছে, যাত্রী সাধারণ মানুষ, আর সিএনজিওয়ালা সরকার)। আমি কইলাম, সিএনজি ঠিক করছে কে? সে বলে, আপনি কীভাবে জানবেন সে কেমন? আমি বললাম, আমরা যাদের ঠিক করতেছি, তাদের সম্বন্ধে আমরা জানি কিনা? তারপরও জোর করে সে বুঝাতে চাইলো, সব সরকার। আমি আসলে শিওর না, সরকারটা কে? আর কোন দলকে আমরা ভরসা করবো? একজন নিজের স্বার্থে বঙ্গবন্ধুকে যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহার করছে, স্বৈরাচারকে নিয়ে জোট বেঁধেছে। আরেকজন সবচেয়ে ঘৃণ্য জামাতকে নিয়ে আবার দেশ রক্ষার বুলি আউলে বেড়াচ্ছে।

আমরা বিচ্ছিন্নভাবে ভালো মানুষ সেজে থাকলে আসলে কোনো লাভ নেই। অ্ন্যের প্রতি মাথাব্যথা না রেখে শুধু নিজেকে, আর নিজের পরিবারকে পালটায় ফেললেও দেখা যাবে আমরা একদিন এগিয়ে গেছি।

আসলে হতাশায় মাথামুথা ঠিক নেই। কোনটা প্রাসঙ্গিক আর কোনটা অপ্রাসঙ্গিক যাচাই না করেই অনেক কথা বলে ফেললাম। কিন্তু আসলে অবস্থা এমন, ভবিষ্যত নিয়ে স্বপ্ন দেখি; কিন্তু স্বপ্নের ভবিষ্যত দেখি না এই দেশকে নিয়ে। লেখায় বা বলায় ভুলচুক হলে ক্ষমাপ্রার্থী।

অতীত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।