হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কিছু বলতে যাওয়া বিপদ। একদল আছেন যারা তাকে দু’চোখে দেখতে পারেন না। যেন তিনি নিষিদ্ধ কোনো গন্দম। আরেকদল কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাকে ছাড় দিলেও জনপ্রিয়তার স্রোতে গা ভাসানো মেনে নিতে পারেন না। তাদের বক্তব্য, তিনি তার ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করছেন না। আর তা না করে বাংলা সাহিত্যকে বঞ্চিত করছেন। হুমায়ূন আহমেদ অবশ্য কারো কথা কানে তুলেন না। নিজের খেয়ালে আছেন তিনি। লিখছেন মনের আনন্দে। সেই আনন্দের শব্দরাজি বই হয়ে বইমেলায় আসে। আর তার ভক্ত পাঠককুল কিনতে ভিড় জমায় বইমেলায়। তাদের ভিড়ে অন্য বইয়ের ক্রেতা-পাঠকদের নাভিশ্বাস উঠে। তারা একটু শান্তিমতো ঘুরে-চেখে যে বই কিনবেন সে জো থাকে না। তা না থাক। আমাদের এ লেখার বিষয়বস্তু হুমায়ূনের এই পাঠকরা। তাদের দিকেই বরং নজর দিই। এই পাঠককুল তাকে কতদিন বাঁচিয়ে রাখবেন- সেদিকে এগিয়ে গিয়ে তার সুলুকসন্ধান করা যাক।
লেখক বেঁচে থাকেন, না তার বই বা সৃজনকর্ম বেঁচে থাকে সে বিতর্কে না গিয়ে বলা যায়, বই বা সৃজনকর্মের মাধ্যমে লেখকরা বেঁচে থাকেন। এই বেঁচে থাকার সীমা-পরিসীমা কতদূর হবে তা অবশ্য বলা মুশকিল। বরং পাঠকরা যতদিন এই বই বা সৃজনকর্ম নেড়ে-চেড়ে দেখছেন, পড়ছেন, রেফারেন্সের কাজে লাগাচ্ছেন, ততদিনই ওই বই আর তার লেখকের বেঁচে থাকা। সে হিসেবে কালের যাত্রায় টিকে থাকা লেখকের সংখ্যা কম। কালের যাত্রায় টিকে আছে এমন কয়েকটি বই যেমন তারাশঙ্করের কবি, মানিকের পুতুল নাচের ইতিকথা, শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসি। এই বইগুলোর বাইরেও তো তাদের আরো অনেক বই আছে। তাদের কয়টির নাম আমরা মনে রেখেছি। তবে কী দাঁড়ালো? সবার সব বই টিকে থাকে না। কিছু কিছু টিকে যায়। শতাব্দীকাল পরের পাঠক পড়ে কিংবা উল্টিয়ে অদ্ভুত ভালোলাগার আবেশে জড়িয়ে যায়।
এখন প্রশ্ন, হুমায়ূন আহমেদের শত শত বই, এর থেকে কি একটা বইও টিকবে না? মহাকালের গর্ভে কি থেকে যাবে না নন্দিত নরকে কিংবা শঙ্খনীল কারাগারের ছাপচিত্র? পাঠক হিসেবে আমার নিজের একটা অভিজ্ঞতা বলি। গেল বছর হেমন্তের বইমেলা থেকে হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠগল্প বইটা কিনি। তখন এক ব্লগবন্ধু বললেন, কোন বালিকাকে দেয়ার জন্য কেনা। তার বলার মধ্যে খানিকটা শ্লেষ মাখানো ছিল। যেন তিনি আর আমাদের পাঠের যোগ্য নন। তো বইটা কিনে কিছু গল্প পড়ে ফেলি। এরমধ্যে ‘জলিল সাহেবের পিটিশন’ গল্পটা মাথায় গেঁথে যায়। এরপর আরো একদিন মাথায় গেঁথে থাকা গল্পটা পড়ি। বুঁদ হয়ে থাকি অনেকক্ষণ। বাংলা সাহিত্যে এরকম কয়টা গল্প লেখা হয়েছে? সে উত্তর খোঁজার আগে আসুন একবার হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা এবং বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তার অন্দরটা একবার দেখে নিই।
সাহিত্যের জনপ্রিয়তা নতুন কিছু নয়। এটা আগেও যেমন ছিল, এখনো আছে। জনপ্রিয়তার বিচারে শরৎচন্দ্রই বাংলা সাহিত্যের প্রথম জনপ্রিয় লেখকের মর্যাদা পেয়ে থাকেন। তিনি জীবিতকালের যেমন জনপ্রিয় ছিলেন, মৃত্যুর এত বছর পরেও তার জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ন আছে। বলে রাখা ভালো আর কয়েক বছর পরেই, ২০১৭ সালে ‘দেবদাস’ এর শতবর্ষ পূর্ণ হবে। আশা করা যায়, তখনো সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে তা বাংলার পাঠকদের কাছে আদরণীয় হয়ে থাকবে। শরৎচন্দ্রের পরে জনপ্রিয় লেখকের তালিকায় ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, বিমল মিত্র, আশাপূর্ণা দেবী, শংকর, যাযাবর, সৈয়দ মুজতবা আলী, সুনীল, শীর্ষেন্দু, হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, কাজী আনোয়ার হোসেন, আনিসুল হক, সুমন্ত আসলাম-সহ আরো অনেকের নাম যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে জনপ্রিয় সাহিত্যের জন্ম হয় হুমায়ূন আহমেদ এবং ইমদাদুল হক মিলনের হাতে। পরে তাদের দলে এসে যোগ দিয়েছেন আনিসুল হক, সুমন্ত আসলামরা।
শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয়তার মূলসূত্র শনাক্ত করতে গিয়ে একালের সাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল তার জনপ্রিয় সাহিত্য, জনপ্রিয়তার সাহিত্য প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘সম্ভবত শরৎচন্দ্রই প্রথম লেখক যিনি বাঙালির আবেগ-আকাঙ্ক্ষার স্থানগুলো সূক্ষ্মভাবে চিহ্নিত করে সেগুলোকে নিপুণ দক্ষতায় ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। একজন মানুষের যেমন কিছু স্পর্শকাতর বিন্দু থাকে, সেসব বিন্দুতে আঘাত পেলে, এমনকি স্পর্শ পেলেও, সে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে- রেগে যায়, স্মৃতিকাতর হয়, উচ্ছ্বসিত হয়, বা চোখ ভিজে ওঠে; তেমনি একটি জাতিরও সেরকম কিছু স্পর্শকাতর আবেগবিন্দু থাকে। সেই আবেগবিন্দুগুলোকে চিনে নেয়া অত্যন্ত দুরূহ বিষয়। শরৎচন্দ্র হচ্ছেন বিশ্বসাহিত্যের সেই বিরলতম লেখক যিনি একটি জাতির তেমনই একটি আবেগবিন্দুকে খুব ভালোভাবে শনাক্ত করেছিলেন আর নিজের করণকৌশলকে সেই বিন্দুর অনুগামী করে তুলেছিলেন। তিনি জেনে ফেলেছিলেন, ঠিক কোন বিন্দুতে টোকা পড়লে বাঙালির চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠে। আর এই জাতির অন্তর্গত পাঠকরা তার লেখায় নিজেদের আবেগবিন্দুকে আবিষ্কার করে বলেই শরৎচন্দ্র এখনো এত বিপুলভাবে পঠিত হন।’ অন্যদিকে বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদের প্রবেশ সিরিয়াস ধারার লেখালিখির মাধ্যমেই। পরে, তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তার লেখার মাঝে পাঠক তাদের নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখে তার লেখা লুফে নিয়েছেন। এই পাঠক বাঙালি মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি। তার আগে আর কেউ বাঙালি মধ্যবিত্তের দুঃখ-দুর্দশা, হাসি-কান্না, প্রাত্যহিকযাপনের চিত্র এমন আন্তরিকতা নিয়ে বয়ান করেননি। বলা যায়, বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের স্পর্শকাতর বিন্দুগুলো হুমায়ূন আহমেদের মতো এত ভালো করে আর কেউ চেনেননি। তিনি মূলত আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের সার্থক রূপকার।
বলা হয়ে থাকে, সাহিত্য বেঁচে থাকে পাঠক-গ্রহণযোগ্যতার মধ্য দিয়ে। দৈনন্দিন জীবনের নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাওয়া এই মধ্যবিত্ত বাঙালি পাঠকরা কি হুমায়ূন আহমেদকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর না আছে কোনো সমালোচক-বুদ্ধিজীবীর কাছে, না আছে হুমায়ূনের পাঠকদের কাছে। তবে তার কালের যাত্রায় হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমালোচক-বুদ্ধিজীবীরা যুক্তি দেখান, তার পাঠকরা একটু অগভীর চিত্তের। তারা জীবনের গভীরে নেমে সাহিত্যের স্বাদ উপভোগ করতে সক্ষম নন। এরা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া, মোটাদাগের ইমোশনের ভক্ত। সেজন্য তারা হুমায়ূন আহমেদের টিকে থাকার পক্ষে শক্ত ভিত্তি হতে পারেন না!
বাংলা উপন্যাস নিয়ে পাঠকদের চৌহদ্দি ছেড়ে একবার বুদ্ধিজীবীদের অন্দরে ঢুকে দেখা যেতে পারে তাদের মন্তব্যের মন্তাজ। সেক্ষেত্রে দেবেশ রায়কে স্মরণ করা যায়। তিনি একবার আক্ষেপ করে বাংলা উপন্যাস নিয়ে বলেছেন, ‘নদীমাতৃক এই বাংলার নদী যে কতভাবে কতরূপে রূপান্তরিত হলো, সে কথা লিখলো না বাংলা উপন্যাস।’ হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসে নদীমাতৃক বাংলার রূপ আসেনি বলেই কি তিনি ফালতু হয়ে যাবেন? তাহলে তো আরো অনেকেই বাদ পড়ে যাবেন। হুমায়ূন মূলত শহুরে জীবনের গল্প বলেন। শহুরে হোক আর যা-ই হোক সেটা তো মানুষেরই গল্প। মানব সম্পর্ককে ব্যাখ্যাতীত মেনে নিয়েই তার গল্প আমাদের পড়তে হয়।
পাঠকের শ্রেণীবিন্যাস ও পাঠক্রমভেদে ভিন্নতা ঘটে। সেজন্য জেমস জয়েসের ‘ইউলিসিস’ কিংবা কমলকুমার মজুমদারের ‘সুহাসিনী পমেটম’ এর মতো জটিল, দুরূহ লেখারও পাঠক যেমন আছে। তেমনি পাঠক আছে হুমায়ূন আহমেদের মধ্যবিত্ত যাপনের ইতিকথা পাঠেরও। এই পাঠকরা সব কালেই থাকবেন। থাকবেন সমালোচকরাও।
মনে পড়ে, একবার ভোরের কাগজ পাঠক ফোরামে ফিচার বিষয়ক কর্মশালা হলো। অনেক কথা বলা হলো সেখানে। ফিচারের বর্ণনাভঙ্গিতে এলো হুমায়ূন আহমেদের ঝরঝরে সুস্বাদু ভাষার কথা- নির্ভার, নির্মেদ, মনোবিশ্লেষকের মতো অকপট, ঝরঝরে, বুদ্ধিদীপ্ত গদ্যের সঙ্গে উইট ও হিউমারের চমৎকার সংমিশ্রণ। জানি না, আগামী দিনের ভাবী লেখক তৈরির কোনো কর্মশালায় তার চমৎকার গদ্যের উদাহরণ টানা হবে কি না! আমরা শেষ করি, হূমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে সমালোচকদের অনেক কথার জবাবে শহীদ কাদরির বক্তব্য দিয়ে। হুমায়ূন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি একবার বলেছিলেন, ‘যে যা-ই বলুক, কিছু এসে যায় না তাতে। হুমায়ূন প্রবেশ করেছেন বাংলা সাহিত্যের অস্তিত্বের মর্মমূলে। ... আমার বিশ্বাস, বাংলা সাহিত্য যতদিন বেঁচে থাকবে, হুমায়ূন আহমেদও বেঁচে থাকবেন ততদিন।’ তবে, শহীদ কাদরি বলছেন বলেই হুমায়ূন আহমেদ অমরত্ব পাবেন, ঘটনা তেমন নয়। বরং ঘটনার নিয়ামক হবেন তার সেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পাঠকরাই। এই পাঠকরা চিরকাল একই থেকে যাবেন, তা তো নয়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের জীবনাচরণে, ভাবনায়, উপলদ্ধিতে হয়তো পরিবর্তন আসবে। সেই পরিবর্তিত সময়ই বলে দেবে হুমায়ূনের অমরতার হালফিল। আর তাই এইসব তর্ক-বিতর্ক রেখে বরং তা ভাবীকালের উপরই ছেড়ে দেয়া ভালো।
নিঃসন্দেহে হুমায়ূন আহমেদ একজন শক্তিমান লেখক, তার কিছু কিছু সৃষ্টি মুগ্ধ হবার মত, বিস্ময়ে হতবাক হবার মত, তিনি ইচ্ছে করলেই অমুক পারতেন , তমুক পারতেন.. এসব কোন কথা নয়, লেখক মনের আনন্দে যা দেবেন তাই শ্রেষ্ঠ সহিত্য, সাহিত্য তো আর বাণিজ্যিক পণ্য নয়, আমি অন্ততঃ তাই বিশ্বাস করি।
চিন্তা ভাবনা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ
______________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ
মন্তব্য
একটা সময়ে এসে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লেখকও ফুরিয়ে যান। বুদ্ধিমান কেউ কেউ ফুরিয়ে যাবার আগেভাগেই লেখালেখির রাশ টেনে ধরতে পারেন। হুমায়ুন আহমেদের ইদানীংকালে লেখা কয়েকটা বই পড়ে মনে হয়েছে বছর পাঁচেক আগেই তার অবসরে যাওয়া উচিৎ ছিলো।
কালের কন্ঠে তার সাম্প্রতিক সিরিজ লেখা পড়ে আমার ধারনা হয়েছে উনি শীর্ষেন্দুর মতো মারফতি লাইন ধরবেন অচিরেই ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হাসিব ভাই কি তার লেখা শেষের কুইজগুলোর কথা বলছেন?
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
আমার মনে হয়, ঘুরে ফিরে হুমায়ূন আহমেদ কতগুলো একই চরিত্র, একই ঘটনাবলী, একই পরিবেশকে ফোকাস করেই লিখতে থাকেন। হয়ত হুমায়ুন আহমেদের পুরোনো লেখাগুলোয় আইডিয়াগুলি টাটকা ছিল, ভিন্নতর ছিল, আর অনেক বেশি যত্ন নিয়ে লেখা ছিল তাই এখনো পুরোনো পাঠকদের ঐ বইগুলির কথাই মাথায় আগে আসে।
এখনতো অসুবিধা নেই, প্রকাশকরাই বই কাটতির ব্যবস্থা করেন, হলুদ হিমু-পাঞ্জাবি পড়িয়ে সেলস-ম্যানদের দাঁড় করিয়ে হিমুর বই বিক্রীর সু-ব্যবস্থা হয় প্রতি বই-মেলায়। কাজেই হুমায়ুন আহমেদকে বইটা কতটা ভাল হল, আগেও ঐ জিনিস লিখে ফেলেছেন কিনা, তা না ভাবলেও চলে। আর পাঠকেরাও বেশ হুজুগেই থাকেন দেখি সবসময়েই।
তা ছাড়া এক জীবনে ১৫০-র উপরে প্রকাশিত বই যদি কারো হয় (!), আইডিয়াগুলির পুনরাবৃত্তি হওয়াই স্বাভাবিক না? তবে এই ব্যাপারটা খেয়াল করছি ইদানিং দেশী-বিদেশী কম-বেশি সব জনপ্রিয় লেখকদের লেখা পড়তে গিয়েই। এমনিতেও মনে হয় কোয়ালিটির থেকে কোয়ান্টিটির জোরই এযুগে বেশি! কাজেই তেমন আর কী-ই বা বলার আছে আমার মত নগন্য পাঠকের?
যাযাবর ব্যাকপ্যাকার
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
দুদিন আগেই তার 'রূপা' বইটা পড়লাম। পড়ার সময়টা উপভোগ করেছি পুরোপুরি। যে এখন হুমায়ুন উপভোগ করতে পারছে না, সে অন্য বই পড়বে। তাইলেই হলো। পাঠকের অভিরুচি নিয়ে ছোটো বেলায় ইংরেজী বইএ পড়া এল এ জি স্ট্রং এর 'রিডিং ফর প্লেজার' প্রবন্ধটাই ডেফিনিটিভ মনে হয় আমার। এবং 'রাইটিং ফর প্লেজার' নামে কোনো একটা প্রবন্ধ ভবিষ্যতে লেখার আশা রাখি।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
রিডিং ফর প্লেজার ভালো প্রবন্ধ । তবে অসম্পুর্ন । লেখা ও লেখনি খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে । মাইন কামফ বা ঐজাতীয় বই মারফত কেউ প্লেজার বিতরন করতে চাইলে আমার দুইখান কথা আছে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কিছু একটা পড়ে সন্তুষ্ট হয়ে পড়া থামিয়ে দিলেই সমস্যা। যে নিজের ম্যাচুরিটি লেভেল অনুযায়ী পড়তেই থাকে, পড়তেই থাকে... সে এক সময় অনেক রকম দৃষ্টিভঙ্গির সাথেই পরিচিত হয়ে যায়। তাকে নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।
আর যেকোনো ধরণের সেন্সরশিপের ব্যাপারেই আমি প্রচন্ড স্কেপটিক।
আমার মতামতটা এমন - কোনটা ভালো কোনটা খারাপ সে শিক্ষা আমি প্রচার করব শিক্ষানবিশদের কাছে। কিন্তু আমার কাছে যেটা খারাপ মনে হয় সেটার গলা টিপে ধরতে যাবো না। আমার শিক্ষার্থীই যেন সেটাকে ডিসকার্ড করার মত ধীশক্তির অধিকারী হয় সেটাই মূল লক্ষ্য।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
শতভাগ সহমত।
এইটাই সবচে' ঠিক কথা ব'লে মনে করি আমিও।
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ঠিক!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
মন্তব্যে লাইক!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
রবিগুরুরও সমালোচকের অভাব ছিল না। কয়জনে তাদের নাম জানে?
সমালোচকদের নিয়ে সবচেয়ে রূঢ় মন্তব্য করেছেন জীবনানন্দ দাশ, তার 'সমারূঢ়' কবিতায়। আমরা আজ দাশবাবুকে মনে রেখেছি। সেইসব সমালোচকরা কোথায় আজ!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
হুমায়ুন আহমেদকে যতটা কাঁটাছেড়া করে হয়েছে ,আতশ কাঁচের নিচে ফেলে যেভাবে ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে ,হলফ করে বলা যায় ,আর কোন লেখকের ক্ষেত্রে তা কখনো হয়নি। জনপ্রিয়তার নিরিখে অন্য সব লেখকের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে থাকায় এটার কারণও বোধ করি অনুমিত। হুমায়ুন আহমেদের প্রতিভা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই ,একথা যেমন সত্য ,তেমনি সেই প্রতিভার খুব একটা স্ফুরণ ধীরে ধীরে ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে ,সেটাও সত্য। এখন সত্যটা তিনি কত তাড়াতাড়ি অনুধবন করতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়।
অদ্রোহ।
আমার নিজের মত হচ্ছে, যতটা না ঈর্ষা, তারচেয়ে বেশি তার প্রতিভার অপব্যবহারের কারণে। তিনি বাংলা সাহিত্যকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারতেন। কিন্তু সে পথে তিনি হাঁটেননি।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
হুমায়ুন আহমেদকে আমি মনে রাখবো...
মনে রাখবো 'রুপা', 'সাদাগাড়ি', 'একটি নীল বোতাম', '১৯৭১' ছোটগল্প গুলোর জন্যে...
মনে রাখবো 'দেবী', 'নিশিথিনী', 'ভয়' উপন্যাসের মিসির আলীর জন্যে...
মনে রাখবো 'ময়ূরাক্ষী', 'দরজার ওপাশে', 'তোমাদের এই নগরে'-র হিমুর খাতিরে...
মনে রাখবো 'তারা তিনজন', 'আগুণের পরশমণি', 'নন্দিত নরকে' উপন্যাসের জন্যে...
মনে রাখবো 'যশোহা বৃক্ষের দেশে' বা 'দেখা না-দেখা' ভ্রমণকাহিনীর জন্যে...
মনে রাখবো অনুদিত 'সম্রাট' বা 'অমানুষ' উপন্যাসের জন্যে...
...এবং 'হলুদ হিমু কালো র্যাব', অথবা 'রোদন ভরা বসন্ত', অথবা 'সানাউল্লাহর মহাবিপদ'- সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁর প্রসবিত এইসমস্ত বালছালকে আমি ভুলে যেতে সাধ্যমত চেষ্টা করব......
_________________________________________
সেরিওজা
ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করার দরকার নাই। সময়ই একদিন ভুলিয়ে দেবে সেসব। আর ১৯৭১, দেবী, নিশিথিনী, রূপা, আগুনের পরশমণি, নন্দিত নরক'রা থেকে যাবে মনের গভীরে।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
সুহানের সাথে অনেকটাই একমত। শামসুর রাহমান একবার তাঁর এক লেখায় বলেছিলেন, রমাপদ রায় তাঁকে একবার বলেছিলেন, হুমায়ুনের কিছু ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যেই নয় শুধু, বিশ্বসাহিত্যে ঠাঁই পাওয়ার যোগ্য। খুব শ্লাঘা বোধ করেছিলাম। এখন অবশ্য সেই হুমায়ুনও নেই, শামসুর তো একেবারেই নেই!
বঙ্কিম ঈশ্বরচন্দ্রের (গুপ্তকবি) মৃত্যুর পর এক লেখায় বলেছিলেন, "এতবড় প্রতিভা কেবল রঙ্গতামাসায় ফুরাইল।" (মোটের ওপর এরকমই)
ভবিষ্যৎ হয়তো হুমায়ুনের জন্যে এরকমই কিছু বরাদ্দ রাখবে। 'মহান অপচয়িত প্রতিভা' উপাধিতে তিনি হবেন খ্যাত। আর, আমরা তাঁর প্রাক্তন ভক্তেরা পাবো হাল্কা কষ্ট। কারণ, প্রতিভার মৃত্যুদর্শন বেদনা দেয়ই।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
কেউ যদি কোনোদিন বাংলা সাহিত্যের নিরপেক্ষ ইতিহাস লিখেন, সেখানে তার নাম থাকা অবধারিত। তাকে ছাড়া বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লিখলে সেটা ইতিহাস হয়তো হবে, তবে সেটার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে বটে!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
ফেরা
অচিনপুর
নন্দিত নরকে
নির্বাসন
আগুনের পরশমণি
নক্ষত্রের রাত
দেবী-নিশিথিনী
জ্বীন কফিল
বৃহন্নলা
হোটেল গ্রেভার ইন/মে ফ্লাওয়ার এবং আরো কিছু আত্মজীবনী টাইপ লেখা
অনেকগুলি ছোটগল্প
হুমায়ূন আহমেদকে সহসা ভুলে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
হুম!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
আমি হুমায়ূন আহমেদ কে মনে রাখবো তার প্রথম দিকের লেখা স্মৃতিকথামূলক বইগুলো আর ছোটদের জন্য লেখা বই গুলোর জন্য।
আরো কয়েকটা বই তাকে ভুলতে দিবেনা,
#এই সব দিনরাত্রি
#কোথাও কেউ নেই
#বহুব্রীহি
#নক্ষত্রের রাত
#কে কথা কয়
[বিষন্ন বাউন্ডুলে]
তার কিছু সায়েন্স ফিকশনও কিন্তু দারুণ!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
হুমায়ূন আহমেদের 'বোতল ভূত' শৈশবে খুব ভালো লেগেছিলো। কৈশোরে ভালো লেগেছিলো 'ওমেগা পয়েন্ট', সায়েন্স ফিকশান। প্রিয়'র তালিকায় আছে মিসির আলী, কিছু ভ্রমণ কাহিনি, কিছু ভৌতিক গল্প। তবে একটা ব্যাপার হলো, হুমায়ূন আহমেদের একটা মাত্র বই আমি নিজের পয়সায় কিনে পড়েছিলাম: জোছনা ও জননীর গল্প। অন্যগুলো এর ওর কাছ থেকে এনে পড়া। কারণ হুমায়ূনের বই সবচেয়ে সহজলভ্য। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। তাই নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করিনি কখনো। তার বইগুলো আমার পড়ার টেবিলে থাকত পরীক্ষার সময়গুলোর জন্য। সিলেবাসের পড়া পড়তে পড়তে মাথা গরম হয়ে গেলে মাথা ঠাণ্ডা করতে এর জুড়ি নেই। বক্তব্যের সাবলীলতা আর সরলতা মাথায় আরাম দেয়। তাই যারা সাহিত্য নিয়ে খুব বেশি ভাবতে চান না, তাদের জন্য হুমায়ূন আহমেদের লেখা অবশ্যই আনন্দদায়ক। তবে কিছুদিন আগে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে শেলফ থেকে তার একটা বই নিয়ে পড়তে বসেছিলাম। বেশিদূর এগোতে পারিনি। হয়ত আমার ভেতরের পাঠকটির মৃত্যু হয়েছে। কিংবা হুমায়ূনের বাঁধা পাঠকদের মৃত্যু হয়েছে। মৃত পাঠকদের জন্য লিখে যদি তিনি আর্থিক আনন্দ পান এবং তাতেই তুষ্ট থাকেন তাতে কার কী বলার থাকে?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আচ্ছা, পাঠকের মৃত্যু বলে কারো কি কোনো লেখা ছিল? আপনার কমেন্ট পড়তে পড়তে আবছা আবছা মনে পড়ে গেল। কিন্তু ঠিক উদ্ধার করা গেল না।
................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
হ্যাঁ, ছিলো। বনফুল-এর লেখা। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলাম। ওই যে ভদ্রলোক ট্রেনযাত্রায় সহযাত্রীর বইটি পড়ছিলেন খুব আগ্রহ নিয়ে। কিন্তু সে যাত্রায় বইটি শেষ করতে পারেননি। এর অনেকদিন পর এক আত্মীয়বাড়িতে বইটি পেয়ে যারপরনাই খুশি হয়ে ওঠেন তিনি। আবারো পড়তে বসেন। কিন্তু অবাক হয়ে আবিষ্কার করেন মোটেও ভালো লাগছে না পড়তে। সময়ের স্রোতে এক পাঠকের মৃত্যু হয়েছে ততদিনে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ধন্যবাদ বুনো। গল্পটা আবার পড়তে হবে। দেখতে হবে, বনফুলের প্রতি মুগ্ধতা কতটুকু আছে অথবা মরে গেছে!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা নিয়ে যথার্থ সমালোচনাটা আজও লেখা হয় নাই। ওনাকে নিয়ে অজস্র কথা হইসে, ওনার পার্ভারশন ও ভাঁড়ামি নিয়ে। আমি পার্সনালি মনে করি উনি আন্ডাররেটেড। আর সাহিত্যের উনি যে ক্ষতি করসেন সেটার ব্যাখ্যা এই : ওষুধের পাওয়ার বেশি হইলেও, সাইডএফেক্টও বেশি হয়। হুমায়ূনের সাইডএফেক্ট নিয়াই কথা বেশি হয় । পাওয়ার নিয়ে হয় না।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ভাঁড়ামি বলেন, পার্ভারশন বলেন, আর তার লেখার পাওয়ার বলেন, সবমিলিয়ে তিনি হুমায়ূন আহমেদ! সবকিছু মিলিয়ে ইতিহাস তাকে মূল্যায়ন করবে।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
একমত। তবে, আমি বিশেষভাবে তার লেখার মূল্যায়নের কথাটা বলসি। তার, মানে ব্যক্তি/ কাল্ট/ ফিনমেননের মূল্যায়ন তো অনেক হইসে, তাই না?
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ব্যক্তি হুমায়ূন মনে হয়, বাজারে ভালো বিকোয়, সেজন্য লেখার বাইরের হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। অনেক খবর তৈরি হয়। ইতিহাস অবশ্য তাকে মনে রাখবে তার সাহিত্যকর্মের জন্য। ব্যাপক প্রতিভা অপচয়ের কথাও মনে রাখবে, আক্ষেপ হিসেবে।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
আমার প্রিয় লেখক-কবি-শিল্পীদের ব্যক্তিগত জীবন আমাকে কখোনোই আকর্ষণ করতে পারে নাই। ছোট থাকতে আগ্রহ থাকত, অনেক আগেই হতাশ হওয়া ছেড়ে দিয়েছি, আমি তাদের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা করাতেই সীমিত থাকি।
যাযাবর ব্যাকপ্যাকার
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
এইরকম বিষয়ে এমন বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ কঠিন ব'লে বোধ হয় আমার। অনেক মাপজোখের বিষয় থাকে। ভালো লেগেছে পরিমিতিবোধের এই পরিছাপ।
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
বলছেন পরিমিতবোধ আছে? আজকাল এইসব বোধ নিয়ে বড় আশংকায় থাকি!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
কী জানি! আমার তো জ্ঞান কম, আমার তো মনে হইলো আছে।
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
অমি দ্বিধান্বিত আবার আশান্বিত ও বটে ..
পান্হ রহমান জনপ্রিয় লেখকদের একটি তালিকা দিয়েছেন যারা শরৎচন্দ্রের পরবর্তী
আমি জানতে আগ্রহী সর্বশেষে উল্লিখিত লেখক প্রসঙ্গে । লেখকের নাম সুমন্ত আসলাম।
পান্হ রহমান কি অনুগ্রহ করে ব্যাক্ষা করবেন কেন তিনি মনে করছেন সুমন্ত আসলামের নাম জনপ্রিয় লেখকের তালিকাভুক্ত থাকা জরুরী ।
জনপ্রিয়তার সংজ্ঞা অনেক রকম হতে পারে। হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন আর আনিসুল হকের টেলিভিশনবাহিত জনপ্রিয়তার সাথে শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয়তার পার্থক্য আছে। আবার বাংলাবাজারের জনপ্রিয়তা অন্যরকম। বাংলাবাজারের জনপ্রিয়তায় কাসেম বিন আবুবক্কার, আকবর হোসেনরা এগিয়ে থাকেন।
আমি সুমন্ত আসলামের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবে এবারের বইমেলায় তার ৮টি বই প্রকাশকে গণনায় ধরেছি। আপনি কোন বিবেচনায় সুমন্ত আসলামকে খারিজ করতে চান, সে বিষয়ে আপনার বক্তব্য জানতে আগ্রহী।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
বই প্রকাশই জনপ্রিয়তার মাপকাঠি এমন বেদবাক্য একেবারেই অন্তসার শৃন্য ।
হ্যা আমি কোন বিবেচনায় খারিজ করতে চাই প্রশ্ন বটে
১) আমি সুমন্ত আসলামের ভোরের কাগজ সাময়িকীতে একটি গল্প এবং পাঠক ফোরামে কিছু ফিচার ভিন্ন আর কিছু পড়িনি । গল্প মান নুন্যতম সাময়িকীতে স্হান পাবার যোগ্য বলে মনে হয়নি যদিও সব লিখাই পাঠকের গ্রহন ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল
২) আপনার লিখায় উঠে এসেছে , পাঠকের আবেগকে নাড়া দেয়া লিখাই জনপ্রিয়তার মাপকাঠি । এক কাজ করুন , একটা জরিপ চালিয়ে দেখুন না কতজন সুমন্ত কে শরৎচন্দ্রের সাথে এক কাতারে বসাতে আগ্রহী ?
৩) লেখকের নৈতিকতাও অনেকের মত আমার কাছে গুরুত্বপৃর্ন । বাউন্ডেলে কাহিনীর ভেতরও কাহিনী থাকে । (আশারাখি কাহিনী জানেন)
একটা পরামর্শ দিই । লিখার সময় পাঠকদের কথা ও স্মরনে রাখবেন ।
পুনশ্চ : আচ্ছা সুমন্ত আসলাম এবার মেলায় কোন পুরষ্কার পেয়েছেন কী? অথবা আগের বছর অথবা আরও আগের কোন বছরে? প্রথম আলো প্রকাশনী থেকে পেয়ে থাকলেও কোন সমস্যা নেই । জনপ্রিয়তার মাপকাঠি বলে কথা ।
একটু জানাবেন প্লীজ ।
আমি আগেই বলেছি, জনপ্রিয়তা মাপার মাপকাঠি অভিন্ন না। বইপ্রকাশ আমি একটা মাপকাঠি ধরে নিয়েছি। সেটা নিয়ে আপনার দ্বিমত থাকতে পারে।
১) হুম! আপনার মতো আমারো সুমন্ত আসলামের লেখা ভালো লাগে না। তবে পাঠকের গ্রহণ-যোগ্যতাই আসল কথা। সে কারণেই হয়তো একটা মেলাতেই তার ৮/১০টা বই প্রকাশ হয়।
২)আমি সুমন্ত আসলামের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবে এবারের বইমেলায় তার ৮টি বই প্রকাশকে গণনায় ধরেছি। কোথাও তার লেখার কথা বলেনি। কাজেই শরৎচন্দ্রের সাথে তার লেখার তুলনা করার অবকাশ নেই। শুধু বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখকদের একটা তালিকা দেয়ার কারণে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৩) লেখকের নৈতিকতা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।
ব্লগে যখন লিখতে এসেছি, তখন পাঠকের কথা মাথায় আছেই। তবে একটা লেখা সব পাঠকের মনমতো হবে, এমন কোনো কথা নেই।
সুমন্ত আসলাম কোনো পুরস্কার পেয়েছেন কি না আমার জানা নেই।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
না পান্থ, নেকস্ট টাইম থেকে লেখার সময় রায়সাহেবের কথা মাথায় রাইখো কইলাম!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
সব নষ্টের মূল উইকিপিডিয়া। এখন আর রাইটাররা 'চমকপ্রদ তথ্য' দিয়ে পার পায় না। আউল ফাউল লোকজনও উইকিপিডিয়া ঘেঁটে ভ্যারিফাই করে ফেলতে পারে, এমনকি আগের থেকে জেনেও রাখতে পারে। সেই সারপ্রাইজ ইলিমেন্টটাই গায়েব হয়ে গেছে।
কিন্তু কেন জানি এখনো হুমায়ূনের লেখা পড়ে আহারে উহুরে করতে ভাল লাগে। এইটাই তো সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য, তাই না?
পি এস, মিলন একটা বিরক্তিকর লেখক, আনিসুল হক কোন লেখক না। আলু পত্রিকায় এদের বিজ্ঞাপনের সাইজ ছাড়া হুমায়ূনের সাথে তুলনা করার মত আর কোন প্যারামিটার নাই।
পাঠকদের দিয়ে 'আহারে, উহুরে' বলানো লেখক কিংবা তার সৃজনকর্মের উদ্দেশ্য কি না, তার বলতে পারছি না। তবে সাহিত্যের উদ্দেশ্য বোধহয় আরো বড় কিছু- জীবনের গভীরে নেমে অনুসন্ধান করা!
দেখুন, হুমায়ূন আহমেদের সাথে মিলন কিংবা আনিসুল হকের লেখার তুলনা করা হয়নি। শুধু জনপ্রিয়তায় একই তালিকাভুক্তির উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
যাহ...কী যে বলেন... ঐটা হলে জার্নাল অফ এপ্লাইড ফিজিক্সের উপ্রে কয়টা সাহিত্যপত্রিকা আছে? জীবনের গভীরে নেমে অনুসন্ধান করার জন্য বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে, তারা এর পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালছে। সাহিত্য আর যাই হোক, গবেষণা না। আনন্দদানের উদ্দেশ্যে এখানে রিসার্চ-রিসার্চ ভাব নেয়া হতে পারে, কিন্তু খালি খালি রিসার্চ কিছুতেই না। আর আনন্দ অনেক ভাবেই হতে পারে। মানুষ তো সিগারেট টেনেও মজা পায়। তামাকের পাতা দিয়ে এর চেয়ে ভাল কাজ করা যেত না? প্রতিভার কী সাংঘাতিক অপচয় চিন্তা করেন...
ঔপন্যাসিক হিসেবে সে কতটা সফল সে আলোচনা বিদগ্ধ বোদ্ধাদের জন্যই রেখে দিলাম। আর রেখেদিলাম সময়ের জন্য।
তবে তার আবিষ্কৃত 'গদ্যরীতি'র শক্তি অস্বীকার করা যাবেনা কোনো ভাবেই। একজন 'অপাঠক'কেও একটা বইয়ের সামনে ঘন্টারপর ঘন্টা ধরে রাখতে পারা যে কোনো বিচারেই প্রশংসনীয়। আর 'সুপাঠক'এর অনুভুতির তন্তুগুলোকেও ভালোই নাড়াতে পারে এই গদ্যরীতি। এর চর্চা হওয়া উচিত।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমি নিজে হুমায়ূনের গদ্যরীতির দারুণ ভক্ত!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
আমাদের এখনকার জনপ্রিয় লেখকরা সবাই যে ১০০-১৫০ বই অনায়াসে লিখে ফেলেন তাদের লেখক জীবনে, আমি মাঝে মাঝে ভাবি, এই বইগুলি আন্তর্জাতিক ভাবে কতটা গ্রহণযোগ্যতা রাখতে পারে?
সম্প্রতি আমার এক আমেরিকান বন্ধু বাংলাদেশ সফর শেষে দেশে ফিরবার সময় তাকে কিনে দিয়েছিলাম হুমায়ূন আহমেদের একালের একটা উপন্যাস। নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির একটা মেয়ে বইটা অনুবাদ করেছে। লরার সেই বই এতটাই ভাল লেগেছে যে সে তারপর থেকে আমাকে ব্যতিব্যাস্ত করে রেখেছে আর কোন অনুবাদ পেলেই আমি যেন তাকে পাঠানোর ব্যাবস্থা করি। আর নিজেই ক্যালিফোর্নিয়াতে খুঁজে বের করেছে আমার প্রিয় উপন্যাসটার অনুবাদ - আগুনের পরশমণি।
পড়তে পড়তে আমাকে মেসেজ করেছে কমপক্ষে তিনবার। জানিয়েছে কতখানি মন ছুঁয়ে গেছে বইটা। আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি, আমাদের দেশের এখনকার জনপ্রিয় লেখকরাও ক্ষমতা রাখেন আন্তর্জাতিক পাঠকদেরকে আকর্ষণ করতে!
যাযাবর ব্যাকপ্যাকার
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
সবকিছু বাদ্দিয়ে উনার 'চোখ' গল্পটার কথা আমার খুব মনে পড়ে।
----------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
'চোখ' গল্পটা পড়া হয়নি। পড়তে হবে!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
"চোখ"-এর কথা আমারও সারাজীবন মনে বেজে থাকবে। এটা নিয়ে তার নিজের স্ক্রিপ্টিংয়ে নাটকও হয়েছিল "নীমফুল" নামে। ওই যে, "সে এক বিরাট ইতিহাস"! তারও বেশ কিছুদিন পরে জনকণ্ঠে একবার যখন সিরিজ ক'রে বড় লেখকদের প্রিয় গল্প ছাপানো হচ্ছিল, তখন সৈয়দ হকের প্রিয় গল্প হিসেবে ছাপা হয়েছিল "চোখ"। আমার তো পড়া এমনিতেই কম; অনেক বেশিই ভালো লেগেছিল ওই অরিজিনাল গল্প ভার্শনটা। তারপরে তো কতো কিছু ঘটলো মানুষের পৃথিবীতে! সে-ও এক বিরাট ইতিহাস বটে!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
হুমায়ূন আহমেদের অনেকগুলি বই আছে, ওপরে নামগুলি কেউ কেউ বলে দিয়েছেন, যেগুলো আমি অনেকদিন পর পর ঘুরে ফিরে পড়ি। বইগুলো টানে। হয়তো একবার পড়লাম, আবার অনেকটা সময় পর কারো সাথে বই নিয়ে গল্প করতে গিয়ে কিংবা কোনো বইয়ের খোঁজে বুকশেল্ফ ঘাঁটতে গিয়ে বা কোনো কারণ ছাড়াই বইগুলির কথা মনে পড়ে যায়, পড়ার তৃষ্ণা জাগে। লেখক হুমায়ূন আহমেদ এই বইগুলির মধ্যেই অন্তত আমার কাছে বেঁচে থাকবেন।
তার নতুন উপন্যাস পড়ার আগ্রহ পাই না। তবে গল্প পড়ি। যখন যেখানে যা পাই।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
হুমায়ুন আহমেদের বর্তমান লেখা নিয়ে একটা কথাই বলার আছে, ফর্মূলা ধরে যে কোন বটতলার লেখকও এরচেয়ে ভাল লিখতে পারবে। কিন্তু এটাই কি হুমায়ুন? বরং একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। হুমায়ুন আহমেদের শতাধিক বই ততদিনে পড়া হয়ে গেছে (সম্ভবত), আমি তখন কলেজে প্রথম বর্ষে, হুমায়ুন আহমেদকে বিনোদন দানকারী লেখক মনে হয়, এর বেশি না। একদিন হাতে এল নন্দিত নরলে, ছোট্ট একটা বই। হালকা চালেই পড়তে শুরু করলাম, যখন শেষ করলাম, আমার এখনো মনে আছে, ঐ সময়কার অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করতে হলেও আমাকে অনেক বড় লেখক হতে হবে। স্তব্ধ করে দেয়ার মত কিছু একটা ছিল, ভয়ংকর বিষণ্নতায় আক্রান্ত করার মত কিছু একটা ছিল, মুগ্ধতা ছিল, অসাধারণ কোন একটা অনুভূতি আবিষ্কারের আনন্দও হয়তো ছিল। বিশ্বসাহিত্যের বড় লেখক যাদের লেখা পড়েছি, এই অধম তাদের সাথে তুলনা করেই সাহস করে বলতে পারে, এই ছোট্ট উপন্যাসটি বিশ্বসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মে স্থান পাওয়া উচিত। এরপরে যখন পড়েছি শঙ্খনীল কারাগার, এইসব দিনরাত্রি, ফেরা, স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছি, হুমায়ুন জনপ্রিয়, কিন্তু জনপ্রিয়তার মাঝেও রকমফের থাকে, সুমন্ত আসলামের মত জনপ্রিয় হওয়া আর হুমায়ুনের মত জনপ্রিয় হবার মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ আছে।
তবে, ভদ্রলোকের এখন থামা উচিত, এক জীবনে তো অনেক হলো, আর কত?
তিনি ফর্মূলা লেখা লেখেন ঠিক আছে। তবে একজন বটতলার লেখক ফর্মূলা অনুসরণ করে তারচেয়ে ভালো লিখবেন বলে মনে হয় না।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
আগুনের পরশমনি অতো ভাল লাগে নি। কিন্তু নন্দিত নরকে খুব ভাল লেগেছে। ছোট গল্প একটাও পড়িনি। টিভি সিরিয়ালে যাওয়ার পর আর কোন লেখা পড়ি নি। ভাল লাগে না।
কিন্তু তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখা বড় কঠিন হবে বলে মনে করি।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
হুম! তাকে বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখা যাবে বটে। তবে সেটা নিরপেক্ষ ইতিহাস হবে না।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
বলেন কি! হুমায়ুন আহমেদের ছোটো গল্প পড়েননি!! দারুণ একটা জিনিশ মিস করেছেন। তার ছোটোগল্পগুলো প্রায়ই মাস্টারপিস হয়।
'পাপ' নামের একটা গল্প মনে এমন দাগ কেটেছিলো। 'গুনিন', 'পিশাচ',... এরকম অনেকগুলো দুর্দান্ত ছোটোগল্প আছে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
একটা লোক যদি কিছু করতে না চায়, তার কাছ থেকে সেটা আশা করে কী ফায়দা?
মানুষ আশাবাদী। তাই!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
হুমায়ুন আহমেদের গদ্যরীতি আসলেই চমৎকার কিন্তু তাঁর অধিকাংশ বইগুলো নয়।
কিছু কিছু বইয়ের কারণেই তিনি আসলে টিকে থাকবেন।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
আমার টিভিহীন বাসায় ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট অবসর বিনোদনের একমাত্র ভরসা। কিন্তু যখন তাতেও বিরক্তি ধরে যায় তখন দরকার পড়ে হুমায়ুনের বই। একদম নির্মল বিনোদনের জন্য এর কোন তুলনা নাই। আমার কাছে তার বইয়ের বিশাল কালেকশন আছে যা থেকে প্রায়ই বাসার অন্যদের ধার দিতে হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাসার একজন পড়তে থাকলে তার হাসির আওয়াজ অন্যদের কানে আসবেই। তারপর আবার সেটার কারন অনুসন্ধান ও সেটা নিয়ে সবার আরেকবার হাসাহাসি চলবেই। হাসি আনন্দের এইসব দিন রাত্রি উপহার দেবার জন্য হুমায়ুনকে অনেক ধন্যবাদ।
এই চমতকার পোষ্টের জন্য পান্থ রহমানকেও অনেক ধন্যবাদ।
অবসর সময় পার করার জন্য তার বই টোটকা হিসেবে ভালোই কাজ দেয়। অন্তত আমার ক্ষেত্রে।
১. "আনন্দ বেদনার কাব্য" হুমায়ুন আহমেদের প্রথম গল্প গ্রন্থ সম্ভবতঃ। এর চেয়ে ভালো গল্প হুমায়ুন আর লেখেন নি। এই বইটা যারা পড়েননি তারা বিরাট মিস করেছেন। স্টুডেন্ড ওয়েজ প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছিল। ২২ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম ১৯৮৬ সালে। একটা গল্পে এমন হিউমার ছিল যে মনে পড়লে এখনো হেসে উঠি। সাহিত্যে সুক্ষ্ণভাবে হাস্যরস প্রকাশের এই ভঙ্গিটা হুমায়ুনের নিজস্ব কীর্তি।
২. নন্দিত নরকে আর শংখনীল কারাগারকে অতিক্রম করতে পারে তেমন বই হুমায়ুনও লিখতে পারবে না আর।
৩. বিটিভি নাটকে হুমায়ুন আহমেদ অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
৪. লেখক যে সেলেব্রেটি হতে পারেন এটা হুমায়ুন আহমেদই প্রথম দেখিয়েছেন।
৫. সাহিত্য পড়তে যারা ভয় পেত তাদেরকে বই পড়ার উৎসাহ দিয়েছে হুমায়ুন আহমেদ
৬. অনেকে হুমায়ুন আহমেদ আর ইমদাদুল হক মিলনকে আবাহনী-মোহামেডনের মতো তুলনা করেন। সেটা আস্ত ভুল। হুমায়ুনের সাথে তুলনাই হয়না মিলনের।
৭. বেলা শেষে হুমায়ুন তার প্রতিভার প্রতি সুবিচার করেননি। তার গত ১০ বছরের বইপত্রগুলো নিছক বাণিজ্য বলে মনে হয়। যে দোষে দোষী পশ্চিমবঙ্গের সুনীল সমরেশরা, সেই পথে হেটেছেন হুমায়ুন।
৮. টাকার খুব অভাব না থাকলে, হুমায়ুনের উচিত এখন লেখালেখি থেকে অবসর নেয়া। চার ফর্মার দশটা বই না লিখে বছরে তিনশো পৃষ্টার একটা বই লিখলে জাতি উপকৃত হতো, বাংলা সাহিত্যও সমৃদ্ধ থাকতো। হাতে পায়ে দুটো দিয়ে কাজ করা যায়, বই লেখা উচিত নয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নীড়ুদা, মোটকু বই লিখলেই যে সেটা সাহিত্য হয়ে উঠবে এমন কথা নেই।
ভাইয়া
এ লেখাটা ভালো লাগলোনা। খুব ভাসা ভাসা মনে হলো। তবে নিবন্ধ সম্পর্কে আমার ধারণা খুব সীমিত। তাই/ ভালো না লাগার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবোনা।
এই যে হুমায়ুন আহমেদ বলেই আমরা সবাই হতাশা প্রকাশ করি অথবা যোগ করি প্রিয় বইয়ের তালিকা সে কিন্তু শুধু হুমায়ুন আহমেদ বলেই।
সুমন্ত আসলামের বই খুব বিরক্ত লাগে। কিন্তু তিনি যে জনপ্রিয়, অস্বীকারের উপায় নেই
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
সমস্যা নাই, রানা ভাইয়া। আগামী দিন হয়তো অন্য কোনো লেখা দিয়ে আপনার মন কাড়তে পারবো।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
পাঠকরা কোনো লেখককে বাঁচিয়ে রাখে না। লেখককে যারা বাঁচিয়ে রাখে, তারা হচ্ছে প্রকাশক আর প্রকাশনা বিপণন ব্যবস্থা। আর কখনো কখনো রাষ্ট্রের শিক্ষাবিভাগ। বন্দে আলি মিয়া কিংবা কায়কোবাদকে যেমন পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বাঁচিয়ে রেখেছে।
রোমেনা আফাজের "বনহুর" বা আবুল কাশেমের "দস্যু বাহরাম" সিরিজ এককালে খুবই জনপ্রিয় ছিলো (তখকার বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে)। আজকে তাঁরা শারীরিকভাবে বেঁচে নেই, বইয়ের মাঝেও নেই। এর কারণ, প্রকাশকদের অবহেলা, বিপণনে অবহেলা। পাঠক তা-ই খায় যা তাকে খাওয়ানো হয়।
পাঠক যদি লেখককে বাঁচিয়ে রাখতো, সতীনাথ ভাদুড়ির নাম আমরা উঠতে বসতে নিতাম, আর রাদুগা-প্রগতি-মিরের বই দিয়ে বাজার ভর্তি থাকতো। অভিজিৎ সেন তো বাংলা ভাষার জীবিত গল্পকারদের মধ্যে অন্যতম, আমরা কি তাঁর নাম শুনি? শুনি না, কারণ তিনি আনন্দবাজার গোষ্ঠীর বিপণন ব্যবস্থার আওতায় নেই। একইভাবে মাহমুদুল হকের নামও মৃত্যুর আগে কাগজে আসে না। তাই পাঠকের ঘাড়ে দায় চাপানোটাই অনুচিত।
প্রকাশক আর বিপণনের কথা ভাবলে বলা যায়, হুমায়ূন আহমেদ তার মৃত্যুর পর মোটামুটি বেশ কয়েক বছর বেঁচে থাকবেন। পাঠকের চোখে কী হিসেবে বাঁচবেন সেটা একটা প্রশ্ন হতে পারে। তবে তার স্থান যদি আনিসুল বা সুমন্ত নেয়, সেটা খুব দুঃখজনক হবে।
হায় রাদুগা!
আহ! রাদুগা আর প্রগতি। ছোটবেলায় কত যে আনন্দের সঙ্গী ছিল!
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
মূলত লেখক কে বাঁচিয়ে রাখে 'বাজার'। এটা বলা যেতে পারে যে, প্রকাশক-বিপণন ব্যবস্থা জুটি প্রচারণা চালিয়ে লেখকের জন্য বাজার তৈরি করে অনেক সময়। উদাহরণ- সুমন্ত আসলাম বা মোহিত কামাল। তারপরও পাঠকের ঝোঁক যেদিকে সেদিকেই তারা বাতাস দেয়। পাঠক চাচ্ছে ক আর তারা ছ'কে নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে বাজার তৈরি করল। এমনটা হবে না। যেমন, এই নব্য জনপ্রিয়রা আসলে পত্রিকায় লিখে একটা পরিচিতি তৈরি করে নিয়েছে আগে। তারপর বাজার সন্ধানীরা তাদের ব্যাকয়াপ দিয়েছে।
এবার আসি লেখক-বইয়ের অমরত্বে। কোনো বই আউট অফ প্রিন্ট হয়ে গেলে। এক সময় হারিয়ে যাবেই। কারো দুর্লভ সংগ্রহে থাকা কোনোভাবেই অমরত্ব/স্থায়িত্ব না। ওদিকে মননশীল বই। বা নতুন লেখকের বই। ছাপা হয় খুবই কম। তাই কদিন পরে হারিয়ে যাওয়া অসম্ভব না।
হুমায়ুন আজাদের কিশোর সমগ্র কিনেছিলাম আমি মনে হয় ২০০৮ এর বইমেলায়। এর পর অন্যদের গিফট করার জন্য হন্যে হয়ে বাজার খুঁজেছি। পাইনি। আউট অফ প্রিন্ট। এই ২০১০ বইমেলায় এসে আবার ওরা রিপ্রিন্ট করল। তখন পেলাম কিছু কপি। আবার কদিন পরে পাওয়া যাবে না হয়তো! বড় লেখকদের বইয়েই এই অবস্থা। তাই দেখা যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত প্রকাশক-বিপণন ব্যবস্থার পছন্দের প্রতি লেখক-পাঠক-বই অনেকটাই নির্ভরশীল।
তবে বাইরে এই জিনিসটা কেটে যেতে শুরু করেছে (আমাজন)। ফিজিক্যাল লিমিটের কারণেই ‘হার্ড বই’ নির্দিষ্টি পরিমানের বেশি উৎপাদন করা যায়না। ওসব বই সংরক্ষণ পরিবেশনের হ্যাপাও কম নয়। আমাজনে তাই ২০ বছরের আউট অফ প্রিন্ট দুর্লভ বইয়েরও ইবুক কিনে ফেলা সম্ভব। এখন তাই পাঠকরুচিই কোনো বইয়ের পরিচলনের বড় নিয়ামক। আমাদের দেশেও ই-বুক মার্কেটটা যত দ্রুত তৈরি হবে তত দ্রুত আমরা ‘বিপণন চক্র’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো। আপাতত মুক্তির এই একটা মাত্র পথই দেখছি খোলা।
অনেকে বলতে পারেন ইবুক পড়বে কয়জন! বা কম্পিউটারই বা ব্যবহার করে কয়জন! হ্যা ইবুক মার্কেট নিশ্চই দুদিনে এক লক্ষ বই বিক্রি হওয়ার মত বড় মার্কেট হবে না। (হুমায়ুন আহমেদ যে মার্কেটটা পাচ্ছেন)। কিন্তু যে লেখকের বই এখন ৫০০ ছাপা হতো আর ১৫০ বিক্রি হতো (কখনো আরো কম)। তাদের জন্য ইবুক মার্কেট অনেক বড় মার্কেটই হয়ে যাবে। আর ব্লগ তো এখন বড় বিজ্ঞাপন। (ইবুক মার্কেটের) ক্রেতা তার প্রিয় লেখককে চিনে নিতে পত্রিকার বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভরশীল নয়। আর এ যুগে পাবলিকলি আভেইলেভল (ফ্রী অথবা রয়ালটিসহ) ডিজিটাইজেশনই আসলে প্রকৃত অমরত্ব! ২০০ বছর পরেও কেউ একটা সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে আপনার বইটা পেয়ে যাবে চোখের পলকে।
সো আমরা আসলে দিনবদলের দারপ্রান্তে আছি। একবার ভাবুন প্রগতি-রাদুগা’রা এযুগের হলে তাদের বই নিশ্চই ইবুক থাকতো। আমাদেরও কিন্তু অতটা ‘হায় প্রগতি হায় হোসেন’ করা লাগত না।
আসেন আমরা সবাই মিলে এই নতুন বাজারই তৈরি করে ফেলি।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হিমু ভাই, তাহলে শহীদুল জহির আর প্রণব ভট্টের ব্যাপারটায় আপনি কি বলবেন? প্রণব ভট্ট জীবিতকালে বিপনন-ব্যবস্থার কারণে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। তার থরথর আবেগে কাঁপা প্রেমের গল্পগুলো হু হু করে বিক্রি হয়ে যেত। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার সাথে সাথে সব শেষ হয়ে গেছে। এখন তাকে কেউ মনে করে না। পাঠক চাহিদা নাই বলে তার বইয়ের কোনো রিপ্রিন্ট কিংবা সমগ্র বের হয় না। অন্যদিকে শহিদুল জহিরের একটা সিলেকটিভ পাঠকগোষ্ঠী ছিল। পরে, এই পাঠকরাই শহিদুল জহিরকে পরিচিত করে তোলে। কোনো বিপণন-ব্যবস্থা আমাকে শহিদুল জহিরের নাম শোনায়নি। শহিদুল জহিরের নাম শুনেছি অন্য একজন পাঠকের কাছ থেকে। তারপর পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। অন্যদের পড়তে দিয়েছি। এভাবে তিনি পাঠক থেকে পাঠকে পৌঁছে গেছেন। আর এই পাঠক চাহিদার কারণেই প্রকাশকরা পরে তাকে লুফে নিয়েছেন। এমনকি তার মারা যাওয়ার পরে, ২০ বছর আগে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাস 'আবু ইব্রাহিমের মৃত্যু' খুঁজে বের করে প্রকাশ করেছে। যদিও তিনি জীবিতকালে বইটি প্রকাশে আগ্রহী ছিলেন না। এটা হয়েছে, কারণ প্রকাশক দেখেছে, শহিদুল জহিরের পাঠক চাহিদা আছে। কাজেই, শুধু বিপণন ব্যবস্থা লেখককে বাঁচিয়ে রাখে ভাবলে ভুল হবে। এতো বছর পরেও সেক্সপিয়র বেঁচে আছেন বিপণন ব্যবস্থার কারণে নয়, তার সৃজন কর্মের আবেদনের কারণেই। আর এই যেমন আপনি সতীনাথ ভাদুরি (তার নাম আগেই জানতাম) এবং অভিজিৎ সেন এর নাম নিলেন, আপনার রেফারেন্সের সূত্রে আমি তাদের পড়ে যদি ভালো লাগে, তাহলে অন্যদের পড়তে বলবো (এখন যেমন সুচরিত চৌধুরির কথা সবাইকে বলি)। এভাবেই হয়তো কোনো বিপণন ব্যবস্থার সাহায্য ছাড়াই তাদের পাঠকগোষ্ঠী তৈরি হবে একদিন। প্রকাশকরা তখন হয়তো তাদের বইয়ের রিপ্রিন্ট, সমগ্র বের করবেন।
এবার আপনার প্রকাশক আর প্রকাশনা বিপণন ব্যবস্থার দিকে তাকাই। বিপণনের দিক দিয়ে দেখলে জিনিসটা আসলে দুইভাবেই হতে পারে। এক, বাজার আছে, সে বাজারের জন্য বই পরিবেশন করা। যেমন: হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহম্মদ জাফর ইকবালের বইয়ের বাজার আছে। তাদের বই ছাপিয়ে বিক্রি করা। দুই, নতুন লেখকের জন্য বাজার তৈরি করা। এই বাজার কীভাবে তৈরি হতে পারে, সেটা প্রকাশক-লেখক মিলে ঠিক করতে পারেন। দু:খজনক হলো, আমাদের দেশের প্রকাশকরা নতুন লেখকদের জন্য বাজার তৈরির পথে হাঁটেন না। এখনও নবীন লেখকরা, তাদের গাঁটের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশ করেন। আমাদের প্রকাশকরা, স্পর্শ কথিত পত্রিকার মাধ্যমে যাদের একটু পাঠক-গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়, তাদের বই প্রকাশে উদ্যোগী হন শুধু। যেমন প্রকাশকরা এখন ব্লগের লেখকদের বই প্রকাশে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কারণ, ব্লগে লেখালিখি করার কারণে তাদের মুষ্টিমেয় হলেও নিজস্ব পাঠক তৈরি হয়েছে। বইমেলায় তাদের বই বিক্রি হচ্ছে।
শহীদুল জহিরের "পুনর্জন্ম" পাঠকের চাপে হয়নি, শক্তিশালী মিডিয়াগোষ্ঠী আলুপেপারের মনোযোগে হয়েছে। শহীদুল জহির মরে গিয়ে বেঁচে গেছেন বলা যেতে পারে।
আপনি শহীদুল জহিরের বই পড়তে উৎসাহী হলেই যে সে বই পড়তে পাবেন, এমন নিশ্চয়তা কে দেবে যদি প্রকাশক এগিয়ে না আসে? দস্যু বাহরাম পড়তে উৎসাহী হলেই কি বাজারে পাবেন? আমাদের মুখ থেকে মুখে ছড়িয়ে পড়া কথার চাপে যে আগ্রহ তৈরি হয়, তাতে কোনো প্রকাশক সাড়া না দিলে যে লাউ সে কদুই থেকে যাবে।
আমার কোন কালেই হুমায়ূন আহমেদ ফ্যাসিনেশন ছিল না। প্রচুর বই পড়েছি, কারণ আমি এমনিতেই বই পড়ি। আর হুমায়ূন আহমেদের বই সহজলভ্য। আমি ভাবতে চেষ্টা করলাম আমার নিজের পছন্দের দু-একটার নাম মনে করতে।
এগুলো মাথায় এল - ফেরা, আগুনের পরশমণি, সৌরভ, নন্দিত নরকে, শংখনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্প।
আর ছোটদের বইগুলির মধ্যে বোতল ভূত, পিপলী বেগম, পুতুল, সূর্যের দিন (এই বইটা আর কোথাও পাই না!) আমার ছেলেবেলার সব রঙীন দিন মনে করিয়ে দেয়।
এই বইগুলি আমার কাছে চিরকাল একই আবেদন রাখবে। এর অধিকাংশই বেশ আগে লেখা বই। টিকে থাকলে আমার মনে হয় এই পুরোনো বইগুলিরই থাকার কথা। প্রকাশকেরা অনেক মুখ্য ভূমিকা রাখেন ঠিকই, উপরে অন্য একটা মন্তব্যে লিখেছি এ সম্পর্কে আমার ধারণা। কিন্তু হিমু ভাইয়ের মন্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত হতে পারছি না। আমি অন্তত আমার পরের প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে যাব এই বইগুলি। কাজেই পাঠকেরাও টিকিয়ে রাখেন লেখকদেরকে।
যাযাবর ব্যাকপ্যাকার
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
সমস্যা আসলে দুটো।
১. বইটা এক প্রজন্ম না-ও টিকতে পারে (না টেকার সম্ভাবনা অনেক)
২. লেখক এখন বইয়ের বাজারে নিজের উপস্থিতি অ্যাসার্ট করছেন সক্রিয় বিপণনের মাধ্যমে। রিজেনারেশন না হলে, শুধু প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হস্তান্তরের ওপর নির্ভর করলে পৃথিবীতে একটা বইও টিকতো না।
বই শুধু মানুষের ঘরে থাকলেই লেখক বেঁচে থাকতে পারবেন না,বা বলা যায়, বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারবেন না। বই বাজারেও থাকতে হবে। যেমন, বলতে পারি, আবুল কাশেম "বেঁচে" নেই, কারণ বাজারে গিয়ে দস্যু বাহরাম কিনতে পাবেন না।
তবে লেখককে আইসিইউতে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে উইকিপিডিয়া।
১. ২. - আপনার সাথে একমত। আমি খানিক আগেই এ ব্যপারে মন্তব্য করলাম উপরে (৪নং)।
পেঙ্গুইন যে এখনো ক্লাসিকস ট্যাগের মাঝে কয়েক শতক আগের বই পুঃনপ্রকাশ করে, তার কারণ ঐ বইগুলি এখনো পাঠককে সমান ভাবে আকৃষ্ট করে, চাহিদা আছে বলেই। আ টেইল অফ টু সিটিস প্রকাশের আজ দেড়শো বছর পরেও আমাকে বিহ্বল করে, লেখনির গাঁথুনির জন্যে নয় শুধু, কাহিনীর জন্যে, চমকের জন্যে, তথ্যের সহজ প্রকাশের জন্যে। অথচ বইয়ের প্রেক্ষাপটটা কিন্তু প্রকাশেরও শত বছর আগের!
যাযাবর ব্যাকপ্যাকার
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
হুমায়ূন আহমদের গল্পে পাঠের আনন্দ আছে। এই আনন্দ পাঠ না থাকলে সাহিত্য হয়ে ওঠা কঠিন।
ধরা যাক, আজর্কার কথা। বুড়ো লোকটা কাফের এককোণে বসে থাকেন। চুপচাপ। কিছু খান না। আর তার পাশে পায়ের ভেতরে মুখ গুঁজে বসে থাকে আজর্কা। এবং একদিন বুড়োটা যখন উঠে দাঁড়ালেন--চলে চাওয়ার জন্য বিব্রত হয়ে আজর্কাকে ডাকতে গিয়ে দেখলেন--আজর্কা ওঠে না। আজর্কা মরে গেছে। এই যে শুরুটা-- লাঞ্ছিত বঞ্ছিত-র পাঠককে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অন্য এক জগতে, পাঠক লেখকের বয়ানে নিজের স্বরটা খুজে পাচ্ছেন--নেল্লির জন্য আতর্নাদ করছে, নায়কটার জন্য বিপন্নবোধ করছে। পুরো লেখাটা যখন পড়া হয়ে যাচ্ছে-- তখন যেন একটি জন্মের অখণ্ড ভ্রমণ সম্ভব হয়ে গেছে মস্তিস্কর মধ্যে। পাঠককে ক্লান্ত হতে হয় না। হুমায়ুনে এই পাঠের আনন্দটা আছে। তবে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও খণ্ডত্বের মধ্যে দিয়ে তার যাত্রাপথকে অখণ্ডের দিকে চালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সেটা কেন, তার উত্তর---তিনি সেচুরেটিড তার ব্যক্তিগত জীবন যাপনে। হয়তো এটা তার মনোজগতে কাজ করছে।
ঈশম যখন একটি লতা খুজে পেল, লতাটি জমিতে লাগিয়ে তরমুজ ফলিয়ে দেখল--তখন কিন্তু ঈশম এই ক্ষেত জমিন ছাড়া আর কিছু স্মৃতির মধ্যে রাখতে পারছে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি--মাটি থেকে গাছ জন্মাচ্ছে, সে গাছ ফল দিচ্ছে--সে গাছের কোন ভেদরেখা নেই, ভালবাসা ফুটে ওঠে ফলে-ফুলে প্রস্ফুটিত হয়ে। ঈশমের কাছে সোনারাও তাই। সোনারা যখন জ্যাঠামশাইকে রেখে চলে যাচ্ছে ইন্ডিয়ায়, তাদের নৌকার পাশে পাশে ঈশম হাটছে, হাঁটতে হাঁটতে চলেছে। অথচ তখন লড়কে লেঙে পাকিস্তান অথবা বন্দে মাতারম ধ্বনিতে দেশবিভাগ খণ্ডত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সবাইকে। কিন্তু ঈশমের এই যাওয়ার মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই। একটি অখণ্ডের জীবনের টানকেই বলে দিচ্ছে। নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে--অভিজ্ঞতার অন্তর্বয়ানটাই হয়ে উঠেছে। এই অভিজ্ঞতা বলে--জীবন শেষ পর্যন্ত শুভর দিকে অন্তর্যাত্রা করে। এটা ধরতে হলে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার অর্ন্তবয়ান ছাড়া অসম্ভব। যারা এর বাইরে বানানো কাহিনী বলতে চান, তা হতে গেলে ঈশমকে পাওয়া যাবে না--আজর্কাকে পাওয়া যাবে না, কুবের সাধু খাঁকে পাওয়া যাবে না। হয়ত অমিত প্রতিভার খণ্ড হিসাবে আনন্দ পাঠ পাওয়া যাবে। আনন্দ পাওয়া অসম্ভব। অমৃত আনন্দস্বরূপ। মন্থন বিনা কি অমৃত মেলে?
এরকম বিষয়ে আমি বলার চেয়ে শুনতেই বেশি আগ্রহী।
যেমন, এই পোস্টের কমেন্টের ঘরই বেশি পুষ্ট...
তবে আমার একটি জিজ্ঞাসা আছে পান্থর কাছে, তা হলো -
হুমায়ূন কি ইচ্ছে করেই ভারী/হাল্কা লেখেন? নাকি সেটা পাঠকের অনভূতি? সংখ্যা বাড়লে তুলনা চলে আসে এবং একটি অন্যটির চেয়ে শ্রেয় মনে হয় বলেই আমার ধারণা। এ প্রেক্ষিতে - এমনটি কি নয় যে হুমায়ূন নিজের মতো করে লিখে গেছেন, লিখছেন। পাঠকরা নিজেদের রুচি, আগ্রহ, ইচ্ছা নিয়ে পড়ছেন - খারিজ করছেন।
দেবী-নিশীথিনী অনেকের মতো আমারও পছন্দের।
কিন্তু কে জানে, হয়তো এ সময়ে লেখা হুমায়ূনের বইগুলো অন্য কোনো পাঠকের মনে একই ভাবে জায়গা করে নিচ্ছে...
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
রেজা ভাই,
আপনার মন্তব্যগুলোর সঙ্গে প্রায়ই এই কবিতা/কাব্যাংশ দেখি। আমার খুব ভালো লেগেছে লাইনগুলো। এটা কি আপনার নিজের লেখা, না কি অন্য কারো কবিতার উদ্ধৃতি? জানতে পারলে লেখকের নামসহ উদ্ধৃত করতে পারব নিজের কোনো লেখায়।
ভালো থাকবেন।
এহসান