বাংলাদেশের যৌনব্যবসা ও যৌনকর্মীরা - যৌনপল্লী

রানা মেহের এর ছবি
লিখেছেন রানা মেহের (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/০৫/২০১৫ - ১২:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যৌনকর্মী ও যৌনব্যবসা কী?

যৌন ব্যবসা যদিও পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশার একটি, যৌনকর্মী শব্দ প্রথম ব্যবহার করেন যৌনকর্মী, লেখক, নির্মাতা ও যৌনকর্মী অধিকারবাদী ক্যারল লেই। তিনি তার ওয়ানউওম্যানশো নাটকে এই শব্দের প্রয়োগ দেখান ১৯৭৮ সালে।
যৌনকর্মী শব্দের উৎস নিয়ে ক্যারল লেই এর লেখা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত সম্পাদিত প্রবন্ধ সংকলনে। ।।

এর পর থেকেই মূলত রিসার্চ, এনজিও ও মানবাধিকার সংগঠনে এই শব্দের বহুল ব্যবহার চালু হয়। মূলত যৌনকর্মী এবং তাদের অধিকার আদায়ে সচেতন ব্যক্তি ও গোষ্ঠির আন্তরিকতায় পেশা হিসেবে সম্মান জানানোর লক্ষ্যে এই শব্দ বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয়।

২০০০ সালে প্রকাশিত ইউকে হোম অফিসের এক রিসার্চে . বলা হয় যৌনকর্মী শব্দটি পতিতাবৃত্তির মতো জটিল, বিতর্কিত ও লৈঙ্গিক বৈষম্য থেকে মুক্ত।

২০০৬ এ এক ইউএস মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে অর্থ, বস্তু ও অন্যান্য লাভের জন্য যৌন সেবা প্রদান ও গ্রহণ করার পারষ্পরিক বিনিময়কে যৌন ব্যবসা বলা হয়।

২০০৯ এ প্রকাশিত UNAID guidance note on HIV/AIDS এ বলা হয় পূর্ণবয়স্ক পুরুষ, নারী, ট্রানজেন্ডার ও ১৮-২৪ বছর বয়েস পর্যন্ত যেকোন লিঙ্গের তরুন নিয়মিত অথবা অনিয়মিতভাবে অর্থ কিংবা অন্য কোন বস্তুর বিনিময়ে যৌন সেবা প্রদান করলে তাকে যৌনকর্মী বলা হবে। এই পেপারে অনানুষ্ঠানিক (Less formal) ও সংগঠিত/প্রাতিষ্ঠানিক (Organised) দুই ধরনের যৌনব্যবসার সাথে জড়িত কর্মীদের যৌনকর্মীর আওতায় আনা হয়।

২০০৫ এ ইউকে থেকে প্রকাশিত গবেষণামূলক এই বইয়ে লেখকদ্বয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত যৌন ব্যবসার একটি লম্বা তালিকা প্রস্তুত করেন। এই তালিকা থেকে তারা যৌন ব্যবসাকে ভাগ করেন দুই ভাগেঃ

ক) প্রত্যোক্ষ (direct) যার মধ্যে আছে গৃহমধ্যস্ত (indoor: ব্রোথেল, হোটেল, আবাসিক, এস্কর্ট) ও বহিরাঙ্গন (outdoor: স্ট্রিটবেইজড) এই দুই ধরণের কার্যক্রম। এই ব্যবসায় সাধারণত ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে সম্মানীর বিনিময়ে যৌন মিলন সংগঠিত হয়।

খ) পরোক্ষ (indirect) এর মধ্যে আছে সাধারণত যৌন মিলন বিহীন কার্যক্রম যেমন পোল ডান্স, স্ট্রিপিং, ফোন ও ইন্টারনেট সেক্স। যৌন মিলন না হলেও এই ব্যবসাও সম্মানী ও মুনাফা নির্ভর।

এই প্রচলিত ও গ্রহনীয় সংজ্ঞা মেনে নিয়ে বলা যায় কোন ব্যাক্তি - পুরুষ এবং নারী যেকোন রকম সম্মানীর বিনিময়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যৌনসেবা প্রদান করলে এই বিনিময় যৌন ব্যবসা এবং সেবা প্রদানকারীকে যৌনকর্মী বলা হয়।

এর বিপক্ষেও কিছু মত আছে। আপাতত সেই ব্যাখায় যাচ্ছিনা।
এই লেখায় শুধুমাত্র যৌনপল্লীর প্রেক্ষাপট এবং সেখানে কর্মরত যৌনকর্মীদের কথা আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে কি যৌনব্যবসা বৈধ?

২০০০ সালে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বাংলাদেশে যৌনব্যবসা আইনত বৈধ।
কিন্তু বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান এই ক্ষেত্রে বিরোধী অবস্থানে আছে।

ক) সংবিধানের ১৮(২)অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে “রাষ্ট্র জুয়া এবং যৌনব্যবসার বিরুদ্ধে কার্যকরী সুরক্ষা প্রদান করিবে” (The State shall adopt effective measures to prevent prostitution and gambling.)

খ) Suppression of Immoral Traffic Act, 1933 - prohibits prostitution of underage girls (girls under the age of 18) and brothel keeping. It is also an offence for third parties to import, export, sell, or hire a woman for prostitution under Oppression of Women and Children (Special Enactment) Act, 1995. Section 290 of the Penal Code of 1860 categorises prostitution under public nuisance and Section 74 of DMP Ordinance, 1976 defines it in the frames of public nuisance as an attempt to attract attention, solicit, or molest in a public place for the purposes of prostitution. [/i]

গ) মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ অনুসারে (দেশের ভেতরে ও বাইরে) ১০ ১১‘‘পতিতাবৃত্তি’’ অর্থ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অথবা অর্থ বা সুবিধা (kind) লেনদেন করিয়া কোন ব্যক্তির যৌন শোষণ বা নিপীড়ন;

(৯) ‘‘পতিতালয়’’ অর্থ পতিতাবৃত্তি পরিচালনার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কোন বাড়ি, স্থান বা স্থাপনা; মানব পাচারের মধ্যে
‘‘শিশু’’ অর্থ আঠার বৎসর বয়স পূর্ণ করে নাই এমন কোন ব্যক্তি;
[/i](নিষিদ্ধ)

ঘ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুসারে ১২

৫৷ (১) যদি কোন ব্যক্তি পতিতাবৃত্তি বা বেআইনী বা নীতিবিগর্হিত কোন কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে কোন নারীকে বিদেশ হইতে আনয়ন করেন বা বিদেশে পাচার বা প্রেরণ করেন অথবা ক্রয় বা বিক্রয় করেন বা কোন নারীকে ভাড়ায় বা অন্য কোনভাবে নির্যাতনের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করেন, বা অনুরূপ কোন উদ্দেশ্যে কোন নারীকে তাহার দখলে, জিম্মায় বা হেফাজতে রাখেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অনধিক বিশ বত্সর কিন্তু অন্যুন দশ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷

(২) যদি কোন নারীকে কোন পতিতার নিকট বা পতিতালয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবস্থাপকের নিকট বিক্রয়, ভাড়া বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা হয়, তাহা হইলে যে ব্যক্তি উক্ত নারীকে অনুরূপভাবে হস্তান্তর করিয়াছেন তিনি, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, উক্ত নারীকে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে বিক্রয় বা হস্তান্তর করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং তিনি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷

(৩) যদি কোন পতিতালয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী বা পতিতালয়ের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কোন ব্যক্তি কোন নারীকে ক্রয় বা ভাড়া করেন বা অন্য কোনভাবে কোন নারীকে দখলে নেন বা জিম্মায় রাখেন, তাহা হইলে তিনি, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, উক্ত নারীকে পতিতা হিসাবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে ক্রয় বা ভাড়া করিয়াছেন বা দখলে বা জিম্মায় রাখিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷

হাইকোর্টের রায়

২০০০ সালে টানবাজার-নিমতলী যৌনপল্লী উচ্ছেদের প্রতিবাদে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর এনফোর্সমেন্ট অফ হিউম্যান রাইটস(BSEHR) ও অন্যান্য এনজিও হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে।

পিটিশনের কারণ হিসেবে পুলিশ ও প্রশাসন কতৃক যৌনকর্মীদেরদের অবৈধভাবে, জোরপূর্বক তাদের বাসস্থান থেকে উৎখাত করা এবং এর প্রেক্ষিতে যৌনবৃত্তিতে নিযুক্ত নারীদের নাগরিক হিসেবে সমান সুযোগ প্রদান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়।

আবেদনকারীরা বর্ণনা করেন ২৪শে জুলাই ১৯৯৯ ভোর রাতে যখন নিমতলী, টানবাজার ও নারায়ণগঞ্জ পল্লীর বাসিন্দারা ঘুমিয়ে ছিলেন তখন পুলিশ জোরপূর্বক তাদের ঘরে প্রবেশ করে কোনভাবে গুছাবার কিংবা তৈরী হবার সুযোগ না দিয়ে শিশুসহ যৌনকর্মীদের শারীরিকভাবে আঘাত করে বাইরে অপেক্ষমান বাসে তুলে দেয় এবং ভবঘুরে আইন ১৯৫০ অনুসারে তাদের কাশিমপুর ভবঘুরে কেন্দ্রে স্থানান্তর করে।

বিবাদীপক্ষ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয় এই পুরো পদ্ধতিতে কোথাও কোন আইন ভঙ্গ হয়নি এবং আইনের নিয়ম মেনেই তাদের ভবঘুরে কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালত বিস্তৃত ব্যাখ্যায় বলেন যৌনপল্লীতে থাকা নারীরা সমাজের সবচেয়ে কম সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার ফলাফল হিসেবে তারা এই পেশায় জড়িত আছেন। পুলিশ ও স্থানীয় দ্বারা যৌনকর্মীদের তাদের আবাস থেকে উৎখাত সংবিধান পরিপন্থী ও অবৈধ। আদালত টানবাজার ও নিমতলী যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া ও আটকে রাখাকেও অবৈধ ঘোষনা করেন।

এই ল্যান্ডমার্ক পিটিশনের রায়ে নারী যৌনকর্মী অনুর্ধ ১৮ বছরের হলে এবং যৌন ব্যবসাই তার আয়ের একমাত্র উৎস প্রমান করতে পারলে তিনি বৈধভাবে যৌনব্যবসায় অংশগ্রহন করতে পারেন। ১৩

যৌনকর্মী নোটারি পাবলিকের সাহায্যে প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এফিডেবিট দিয়ে বৈধ ভাবে কাজ করার জন্য নিবন্ধিত হন। হলফনামা কিংবা এফিডেবিটে তিনি ঘোষনা করেন তার বয়স অনুর্দ্ধ আঠারো এবং জীবনধারনের কোন উপায় না থাকায় কোন মহলের বলপ্রয়োগ ছাড়া স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিয়েছেন।

উল্লেখ্য বাংলাদেশের আইনে পুরুষ এবং ছেলে-মেয়ে উভয় শিশুর যৌনব্যবসা নিষিদ্ধ।

যৌনকর্মী কীভাবে এই ব্যবসার সাথে যুক্ত হন

যৌনব্যবসা একটা সংগঠিত, প্রতিষ্ঠিত ও লাভজনক মুনাফা আনয়নকারী ব্যবসা। এই ব্যবসার প্রসারের লক্ষ্যে মালিকপক্ষের নিযুক্ত চক্র সবসময় কাজ করে যায়।
দালাল/অপহরন সহ বিভিন্ন অসাধু উপায়ে সংগ্রহ করা মেয়েদের চেহারা, বয়স ও আরো কিছু শর্তের ওপর ভিত্তি করে ২০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকায় তাদের বিক্রি করা হয় যৌনপল্লিতে।১৪ ১৫

এই বানিজ্যের মাধ্যমে যে শুধু মালিক, দালাল, যৌনকর্মীর পরিবার অর্থ উপার্জন করেন তা নয়, ব্রোথেল ভিত্তিক জনপদ যেমন পল্লীর সীমানার মধ্যে থাকা দোকান পাট, ফার্মেসি, কাঁচাবাজার এইসব মিলিয়ে এক বিরাট অর্থনৈতিক এলাকা লাভবান হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী দৌলতদিয়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্টানের সংখ্যা প্রায় ৫০০ এর মতো। একই এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩০০০ ক্রেতা অর্থ ব্যয় করেন। এর থেকেই এই ব্যবসার আর্থিক উপযোগীতা বোঝা যায়। তাছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, আইনজীবী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ পরোক্ষভাবে এই পেশার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে সমর্থ হন।

নোবল বিজয়ী মানবাধিকার কর্মী কৈলাশ সাতিয়ার্থির করা সমীক্ষা অনুযায়ী পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে যৌনব্যবসায় ফলে অর্জিত বাৎসরিক আয় প্রায় ৩৪৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশেও একটা বিশাল অংকের অর্থ এই বানিজ্যের সাথে জড়িত।
এই রিপোর্টে বলা হচ্ছে টানবাজার-নিমতলী থেকে বাড়িওয়ালারা প্রতি মাসে ১২ মিলিয়ন টাকা আয় করতেন।

আমি একটা এনজিওর পক্ষ থেকে হোটেল ভিত্তিক যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করেছি। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি তাদের প্রায় সবারই কাহিনী মোটামুটি এক। তাদের এই ব্যবসার আসার কিছু উপায় আলোচনা করা হলো। এই কারণগুলো কিছু নিজের অভিজ্ঞতা এবং কিছু বিভিন্ন সংবাদপত্র, জার্নাল, ইন্টারভিউ থেকে নেয়া। তাই একদম সরাসরি ঘটনা প্রধান না হলে কোন রেফারেন্স এর উল্লেখা করা থেকে বিরত থাকলাম।

ক) প্রেমের নামে প্রতারনা

এতে দালাল কিংবা দালালের দ্বারা নিযুক্ত দালাল গ্রামের সাধারণ মেয়ে, গার্মেন্টস কর্মী, বস্তিবাসী দরিদ্র মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। তারপর কক্সবাজার কিংবা অন্যকোন জায়গায় ঘোরার নাম করে, পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার নামে তার প্রেমিকাকে যৌনপল্লীতে কিংবা দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। সাধারণত অশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত এবং পরিবারের অমতে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া মেয়েরা এর স্বীকার হন।

খ) বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়া

এই ক্ষেত্রেও দালাল প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। পার্থক্য হলো বিয়ে করার ফলে নারীরা বাসা থেকে কিছু টাকা পয়সা উপহার সামগ্রী পান এবং পরিবার সমাজ বিবাহিতা নারী স্বামীর সাথে যাচ্ছে ভেবে নিশ্চিন্তে থাকেন। ফলশ্রুতিতে নারী পরিবারের সাথে কিছুদিন যোগাযোগ না করলেও পরিবার নিশ্চিন্ত থাকে। দালাল তার বিবাহিত স্ত্রী বিক্রয়লভ্য অর্থের পাশাপাশি মেয়ের বাড়ি থেকে দেয়া সম্পদও আত্মসাৎ করেন এবং পরিবার থেকে যোগাযোগ না হওয়ায় নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

প্রসংগত উল্লেখযোগ্য দেশের বাইরে নারী পাচারের জন্য এটা একটা বহুল ব্যবহৃত পন্থা। এশিয়ার নারী পাচারের একটা বড় অংশ যায় নেপাল আর বাংলাদেশ থেকে। অসমর্থিত বেসরকারী সংস্থার সুত্র মতে ভারতের যৌনব্যবসার ২০ শতাংশ নারী বাংলাদেশ থেকে পাচারক্রিত। ভারতের পর আরো দুটো বড় ক্রেতা হলো পাকিস্তান আর আরব আমিরাত। মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাচারের জন্য পাকিস্তান ট্রানজিট হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানে পাচার ও ট্রানজিটের জন্য দালাল ও পাচারক্রিত নারীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক জরুরী।

গ) অপহরন

কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে নারীকে জোরপূর্বক অপহরন করে পতিতাপল্লীতে কিংবা দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক যৌনকর্মী সংগ্রহের জন্য এই পদ্ধতি কার্যকর। আরো দেখা যায় বিবাহিত নারী স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একসময় ঘর থেকে বের হয়ে যান। দালালরা তাদের ধরে নিয়ে আসেন।

ঘ) উন্নত কাজের লোভ দেখিয়ে

স্বল্পশিক্ষিত এবং চাকুরী করে পরিবার চালাতে কিংবা আত্মনির্ভরশীল হতে চাওয়া নারীরা এর স্বীকার হন বেশি। কাছের কোন বন্ধু/বান্ধবীর মাধ্যমে দালালের সাথে পরিচয় হয় তাদের। দালাল এনজিও, ক্ষুদ্র ঋণ, স্কুলে শিক্ষকতা, গার্মেন্টস এবং অন্যান্য চাকুরীর লোভ দেখিয়ে এনে তাদের বিক্রি করে দেয়। পরিবারও বিভিন্ন সময় এদের খপ্পড়ে পড়ে এদের হাতে তুলে দেন পরিবারের নারী সদস্যদের।

ঙ) পরিবার থেকে বিক্রি/যোগদান

দরিদ্র পরিবার সংসার চালাতে অক্ষম হয়ে, লোভের বশে কিংবা কখনো নিরাপত্তার খাতিরে নিজে থেকেই মেয়েকে পতিতাপল্লীতে কিংবা দালালের কাছে বিক্রি করে দেন। এই ঘটনা বেশি ঘটতে দেখা যায় অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে। এক কালীন কিছু টাকা পাবার পাশাপাশি এখানে মেয়ের কাছ থেকে অনিয়মিত অর্থ আসার ব্যবস্থাও থাকে তাই অনেক পরিবার একে লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবারের একজন সদস্য বাকিদের অজ্ঞাতসারে পরিবারের মেয়েকে বিক্রি করে দেন যৌনপল্লীতে। সেই মেয়ে পরে ফেরত গেলেও পরিবার থেকে মেয়েকে গ্রহন করা হয়না।
পরিবারের শারীরিক ভাবে (বোবা, অন্ধ, বধির)ও মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিন্ড্রোম)সন্তানদের কিছু বাবা মা বোঝা মনে করে পতিতাপল্লীতে বিক্রি করে দেন।
অনেক স্বামী বাড়তি আয়ের আশায় স্ত্রীকে এই পেশায় আসতে বাধ্য করেন। অনেক সময় দেখা যায় এরকম পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হলেন স্ত্রী, স্বামী কোন কাজ করেন না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বামী বাধ্য করেন স্ত্রীকে যৌনব্যবাসায় অংশ নিতে। স্ত্রী রাজি না হলে চলে নির্যাতন।

চ) পারিবারিক চক্র

যেসব শিশু পতিতাপল্লী, দালাল কিংবা যৌনকর্মী মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করে, তারা বেশিরভাগই পারিবারিক সুত্রে এই ব্যবসার অংশ হয়ে যায়। পতিতাপল্লীতে জন্ম নেয়া দশ বছরের বালিকাও মায়ের সুত্রে এই ব্যবসায় যোগ দিতে বাধ্য হয় ছেলেরা যোগ দেয় দালাল হিসেবে। গর্ভবতী হলে হবু মায়েরা কামনা করেন তাদের সন্তান হবে মেয়ে যাতে তারা এই পেশায় জড়িত হয়ে মাকে সাহায্য করতে পারে।
খদ্দের আসলে মায়েরা শিশুদের বিছানার নীচে অথবা ঘরের এক কোণায় রেখে তার কাজ করেন। তাই একদম শিশু বয়স থেকেই সন্তানেরা জেনে যায় তাদের ভবিষ্যতে কী নির্ধারিত আছে। সরকারি বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার নিরলস কাজের ফলে কিছু কিছু শিশু পড়াশোনায় অংশ নিতে পারছে এবং বের হয়ে আসতে পারছে এই চক্র থেকে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এই সেবা এবং সুযোগ নিতান্তই সীমিত।
জামালপুর শহরের যৌনপল্লীতে ২০০২ এ একটি বেসরকারী সাহায্য সংস্থা পল্লীর শিশুদের জন্য একটি স্কুল স্থাপন করে। এই সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এর আগে এই পল্লীর শিশুদের বাইরে আসার অনুমতি ছিলনা। শিশুরা বাইরে আসলে স্থানীয় লোকজন তাদের গায়ে থুথু ছিটাতো, পরিনামে এই পল্লীর সিংহভাগ শিশুর নিয়তি ছিল একটু বড় হবার সাথে সাথে যৌন ব্যবসার কোন একটা শাখায় যোগদান করা।
অবস্থা তখন থেকে বিশেষ বদলায়নি বরং নানামুখী মাত্রা পেয়েছে।

ইচ্ছে ছিল এই লেখায় যৌনপল্লীর শিশুদের নিয়ে একটা অধ্যায় রাখবো। কিন্তু তথ্যের ব্যাপকতায় এই বিষয় একটা আলাদা লেখার দাবী রাখে। চেষ্টা করবো এই বিষয়ে একটা পূর্ণাংগ লেখা তৈরী করার।

ছ) স্বেচ্ছায় যোগদান

বিভিন্ন সময় পারিবারিক দুর্ঘটনা, প্রতিকূলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর (স্বামীর এক্সিডেন্ট, বাবার অসুস্থ্যতা-চাকুরী থেকে অবসর, বন্যা-ঝড়), স্বামীর নির্যাতন নানাবিধ কারণে কারণে নারীরা স্বেচ্ছায় বলা উচিত বাধ্য হয়ে এই পেশায় আসেন। পরিবার থাকলে সাধারণ তারা হন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি ও পরিবারের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। যৌনকর্মীরা একে বলেন "স্বেচ্ছায় দাসত্ব" কিংবা "volunteer slavery"। ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা একে চিহ্নিত করেছেন "the choice made by those who have no choice" হিসেবে।

জ) মানব পাচার

বাংলাদেশের যৌন ব্যবসার একটি অন্যতম উপাদান/দিক হলো নারী পাচার। এশিয়ার মধ্যে নারী পাচারের দিক দিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হলো বাংলাদেশ। সেইভ দ্য চিলড্রেনের তথ্যমতে ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ নারীকে বিভিন্ন দেশে, মূলত ভারত, পাকিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করা হয়েছে। ভারতীয় সমাজ কল্যান বোর্ডের তথ্যানুযায়ী ভারতের বিভিন্ন যৌনপল্লীতে কর্মরতদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশ থেকে আগত।
আর্থিক কারণ, ভালো চাকুরীর প্রলোভন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি, অপহরণ বিভিন্ন কারণে নারীরা পাচার নামক এই ভয়ংকর অপরাধের স্বীকার হন।

বাংলাদেশ থেকে মূলত ১৮টি রুটে ভারতে নারী পাচার করা হয়। দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং যশোর-বেনাপোল রুট নারী পাচারের জন্য অন্যতম ব্যবহৃত এরিয়া। দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী ফরিদপুর, নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, কুষ্টিয়া সহ আরো কিছু জেলা পাচারের জন্য জনপ্রিয়। এই নারী পাচারে পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে পুলিশ, ঘাটের মাঝি পর্যন্ত বিভিন্ন সামাজিক শ্রেনী ও পেশার মানুষ জড়িত।

এই পাচারক্রিত নারীর কিছু অংশ একসময় সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগের ফলে দেশে ফেরত আসতে পারেন। কিন্তু দারিদ্র ও সামাজিক অসম্মানের ফল হিসেবে এই ফিরে আসা নারীদের বেশিরভাগ কিংবা একটা বড় সংখ্যার জায়গা হয় দেশের বিভিন্ন যৌনপল্লীতে।

নারী পাচার সম্পর্কে আরো জানতে হলে বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের তথ্যভাণ্ডারে খোঁজ নিতে পারেন। এই অংশের সমস্ত তথ্য এই তথ্যভাণ্ডার থেকে নেয়া হয়েছে।১৬

ব্যবসার স্থান

বাংলাদেশে বর্তমানে ১৪-১৮ টার মতো লাইসেন্সড যৌনপল্লী (রেড লাইট এরিয়া) আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লী১৭ যেখানে প্রায় ১২০০-১৬০০ মেয়ে কর্মরত এবং প্রতিদিন সেখানে ২৫০০-৩০০০ এর মতো ক্রেতা যৌনসেবা নিতে আসেন। আরো কিছু উল্লেখযোগ্য যৌনপল্লী হলো বানিয়াশান্তা, জামালপুর, জয়নালবাড়ি (ফরিদপুর) অন্যান্য। উল্লেখ্য দৌলতদিয়া শুধু বাংলাদেশের নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যৌনপল্লীগুলোর একটি।

এই পল্লীগুলোর পাশাপাশি দেশের সব বড় এবং ব্যস্ত শহর যেমন চট্টগ্রাম, সিলেটে প্রতিষ্ঠিত যৌনপল্লী রয়েছে। এই পল্লীগুলোর অবস্থান সাধারণত ট্রেইন স্টেশন অথবা দৌলতদিয়ার মতো ফেরিঘাটের কাছে।

যৌনপল্লীর বাস/কর্মযোগ্যতা

দৌলতদিয়া এবং আরো কিছু যৌনপল্লী স্বনির্ভর এবং কর্মীদের জীবনধারনের জন্য মোটামুটি সব উপাদান বিদ্যমান। বাজার, দোকান পাট, বিউটি পার্লার, ফার্মেসি, সিনেমা হল, টেইলর মোটামুটি সবই সেখানে আছে। কিছু কিছু জায়গায় এনজিওদের পরিচালনায় প্রাইমারি স্কুলও আছে। যৌনকর্মীরা সাধারণত তাদের পল্লী ছেড়ে শহরে যান না। বিশেষ করে যারা সর্দারনী/বাড়িওয়ালী/মাসীর অধীনে থাকেন যারা তাদের পল্লীর বাইরে যেতে দেয়া হয়না। স্বাধীন যৌনকর্মীরা চলাফেরার দিক দিয়ে অনেকাংশে মুক্ত কিন্তু তারা মূল শহরে স্বাগত নন।
মূল শহরে দেখা গেলে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হবে এরকম হুমকিও পেয়েছেন অনেকে।

তাদের থাকার জায়গা নোংরা, সংকীর্ন এবং অস্বাস্থ্যকর। তাদের জন্য করোগেটেড টিনের খুপড়ি কিংবা কামরা বরাদ্দ হলেও কয়েক জন কর্মী এবং খদ্দের মিলে একটা শৌচাগার ব্যবহার করেন। কামরার আশেপাশে কনডম, মদের - এনার্জি ড্রিংকের বোতল স্তুপাকারে ছড়িয়ে থাকে। পানি নিষ্কাষন এবং পয়নিষ্কাষন ব্যবস্থা খুবই দুর্বল তাই সাধারণ পরিবেশ দুষিত।
আবদ্ধ ও ছোট জায়গায় ধুমপানের ফলে নিশ্বাসের কষ্ট স্বাভাবিক ঘটনা।

যৌনকর্মীদের দৈনন্দিন যাপন

যৌনকর্মীরা দিনে কতজন ক্রেতাকে সেবা প্রদান করেন তা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিকতার ওপর। চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা ভেদে তারা ৪ থেকে ১০ জন ক্রেতা গ্রহণ করেন। যৌনপল্লীতে সাধারণত তিন স্তরের যৌনকর্মী বিদ্যমান।

সবচেয়ে উঁচু স্তরে থাকেন সর্দারনী/মাসী/খালা/মা। কোন কোন গবেষক তাদের বাড়িওয়ালা নামেও অভিহিত করেছেন তবে তারা এই নামে বিশেষ পরিচিত নন। সর্দারনী থাকেন কজন কর্মীর বিশেষত অল্প বয়সী কর্মীর কর্ত্রী কিংবা অভিভাবক হিসেবে। স্বাধীন এবং বয়স হয়ে যাবার পর যথেষ্ট পরিমানে অর্থ এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে সাধারণত প্রাক্তন যৌনকর্মীরা সর্দারনীর পদ ধারন করেন। দালালেরা তার কাছেই মেয়ে বিক্রি করে। মেয়েরা তার কাছে থাকে ‘বন্ধকী’ হিসেবে। কেনার টাকা তিনি তার খরিদক্রিত যৌনকর্মীর কাছ থেকে আদায় করেন কয়েক বছর ধরে আদায় করেন। একেকজন যৌনকর্মীর ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ টাকা তিনি কেটে রাখেন অবস্থাভেদে । খদ্দের নিয়ে আসা দালালের টাকাও কখনো কর্মীকে পরিশোধ করতে হয়। মাঝে মাঝে কর্মীর বয়স বেশি কম হলে পুরো টাকাই চলে যায় সর্দারনীর হাতে। বিনিময়ে মেয়ের জন্য বরাদ্দ থাকে শুধু তিনবেলা খাবার আর কিছু উপহার। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যৌনপল্লীর যোগাযোগ দালাল আর সর্দারনীর মাধ্যমে হয়। সর্দারনীর বিরুদ্ধে তার অধীনস্থ কর্মচারীদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করানোর, শারিরীক-মানসিক নির্যাতন, প্রতিরক্ষা ছাড়া যৌন মিলনে বাধ্য করা সহ অন্যান্য অভিযোগ পাওয়া যায়।

তারপরের স্তরে থাকেন স্বাধীন যৌন কর্মী।
স্বাধীন যৌনকর্মীরা কোন সর্দারনীর অধিনস্থ নন, তার অধিকারে কোন যৌনকর্মী নেই। তিনি পাঁচ, আট, দশ বছরের সেবার বিনিময়ে সর্দারনীর ঋণ মিটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাই যা আয় করেন বাড়িভাড়া, ইউটিলিটি বিল এবং ক্ষেত্রবিশেষে দালালের খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা তিনি নিজের কাছে [url=http://www.theguardian.com/world/2008/jan/09/gender.humantrafficking]রাখতে পারেন
। খদ্দের নেয়া এবং মাঝে মাঝে কাজ না করার বিষয়ে তার স্বাধীনতা থাকে। এমনকি তিনি চাইলে এই পেশা পরিত্যাগও করতে পারেন। যদিও পর্যাপ্ত সমর্থন, কাউন্সেলিং ও প্রশিক্ষনের অভাবে বেশিরভাগ নারীই এই পেশায়ই থাকতে বাধ্য হন।

পদমর্যাদায় সবচেয়ে ছোট পদের নাম হলো ছুকরি
ছুকরি, সর্দারনী/মাসীর অধীনে থাকা নবীন ও ঋণগ্রস্ত যৌনকর্মী। ছুকরির কাজের কোন স্বাধীনতা থাকেনা এবং নিজের আয়ের ওপর তার দাবী থাকে সামান্যই। সর্দারনী চুক্তিভেদে তার আয়ের সিংহভাগ নিজে নিয়ে নেন এবং মাঝে মাঝে বেঁচে যাওয়া টাকা থেকে দালালের পাওনা তাকেই মেটাতে হয়। তারা কড়া নিরাপত্তা বলয়ে থাকেন, পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে দালাল কিংবা পুলিশ ধরে এনে আবার সর্দারনীর কাছেই সোপর্দ করে। খদ্দের নির্বাচন ও সেবা দেবার ব্যাপারে তার কোন স্বাধীনতা নেই। কোন কারণে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে কিংবা অক্ষম হলে তাদের ওপর চলে নির্যাতন, জীবনের ওপর হুমকি। অনেক ক্ষেত্রে তাদের ঋণের আসল পরিমান থেকে অনেক গুণ বেশি টাকা শোধ করতে হয় হিসাব সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞ্রান না থাকার কারণে।
সর্দারনীর আদেশে ছুকরিরা দিনে ১০ কিংবা তার থেকেও [url=USAID Bangladesh. Trafficking of women and children. 2012. www.hawaii.edu/hivandaids/Trafficking%20of%20Women%20and%20Children.pdf.]বেশি খদ্দেরকে [/url]সেবা দিতে বাধ্য হন।

অবস্থাভেদে সাধারণ যৌনকর্মীদের আয় দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো। চেহারা, বয়স, অবস্থান নিয়মিত খদ্দের ভেদে এই আয়ের তারতম্য হয়। বয়স, চেহারা ও যৌন কাজে দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে ক্রেতা ৫০-৫০০ টাকায় যৌনসেবা ক্রয় করেন। ১৮। যদিও এর একটা বড় অংশ চলে যায় ভাড়া, বিল, পোষাক ও সাজের পেছনে। ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য যৌনকর্মীদের অর্থের একটা বড় অংশ পোষাক ও প্রসাধন সামগ্রীর পেছনে খরচ করতে হয়।

নিয়মিত ক্রেতাদের সাথে যৌনকর্মীদের একধরনের প্রেমের সম্পর্ক থাকে। তারা পরিচিত থাকেন বাবু বলে। যৌনকর্মীদের মধ্যে প্রচলিত ধারনা হলো বাবু্র সংসার থাকলেও তিনি তার নিয়মিত সংগী ছাড়া আর কোন কর্মীর কাছ থেকে যৌনসেবা গ্রহন করেন না যেই ধারনা ভুল। বাবু কোন একজন যৌনকর্মীর কাছে নিয়মিত আসতে পারেন কিন্তু তিনি তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নন। আরো দেখা যায় বাবু প্রেমের নাম করে যৌনকর্মীর অর্জিত অর্থ আত্মসাৎ করেন এবং বয়স কিংবা অন্য কোন কারণে কর্মীর উপার্জন কমে গেলে তার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেন।

অনেক কর্মী সন্তান ধারন করেন তাদের বাবুর সাথে। ক্ষেত্রবিশেষে সেই সন্তান বাবার পরিবারে থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ পেলেও যৌনকর্মীর ঠিকানা অপরিবর্তিতই থাকে।

যৌনকর্মীদের জীবনযাপন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আরো জানতে চাইলে বানিয়াশান্তার ওপর একটা লেখা পড়ে দেখতে পারেন।১৯

স্বাস্থ্য বিষয়ক অসচেতনতা এবং অক্ষমতা

যৌনকর্মীদের মাঝে স্বাস্থ্যবিষয়ক অজ্ঞতা, অসচেতনতা এবং অক্ষমতা তাদের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রেখেছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশতো আছেই সাথে আছে আরো কিছু সমস্যা।

যৌনকর্মীদের সমাজে অচ্ছুৎ হিসেবে জ্ঞান করায় তারা প্রাপ্য চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্ছিত হন। হাসপাতাল, ডাক্তারের চেম্বার থেকে অনেক সময় তাদের সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানায় কিংবা সেবা প্রদান করলেও যৌনকর্মীদের ভাষ্যমতে তাদের সাথে 'পশুর মতো' ব্যাবহার করা হয়।২০

যৌনপল্লীতে সাধারণত যান মাঝারি ও নিম্নআয়ের মানুষেরা। সারাজীবন অভাবের সাথে যুদ্ধ করে অপুষ্টিতে ভোগা তাদের কাছে স্বাস্থ্যবান নারী হলো সৌন্দর্যের প্রতীক। তাছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্কদের বয়স্ক দেখানোর জন্য স্বাস্থ্য ভালো দেখানোর দরকার পড়ে।
নিজেদের স্বাস্থ্যবতী দেখানোর জন্য এবং সর্দারনী/মাসীর নির্দেশে যৌনকর্মীরা গ্রহন করেন ওরাডেক্সন১৪ নামের একধরনের স্টেরয়েড যা গরু মোটা তাজাকরনে ব্যবহার করা হয়।

যৌনকর্মীদের ভাষ্যমতে এই স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে তাদের বুক এবং কোমর ভারী দেখায় যা খদ্দেররা পছন্দ করেন। তাদের চাহিদা বাড়ে ফলে বেশি টাকা রোজগার করতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সর্দারনীরা বাধ্য করেন তার অধীনস্থ ছুকরিদের এই বিষাক্ত ঔষধ গ্রহণে। কেউ কেউ নিজেই চাহিদা বাড়ানোর জন্য ঔষধ গ্রহণ করেন। যেভাবেই শুরু হোক না কেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঔষধ ছাড়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ্য করতে না পেরে এতে আস্কত হয়ে যান তারা।

এই ঔষধ বাংলাদেশে অ্যাজমা রোগের জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এবং সীমিত ব্যবহার এর ঝুঁকি সীমিত। কিন্তু যৌনকর্মীরা এর প্রতি আসক্ত হয়ে একে ব্যবহার করেন বছরের পর বছর যা চিরস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দীর্ঘদীন অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে হরমোন সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, চামড়ার সমস্যা, লিভারের প্রদাহ এর মতো মারাত্মক অসুখের জন্ম হতে পারে।
এই ঔষধ বাংলাদেশের সব ফার্মেসিতে সহজলভ্য এবং সস্তা এই ড্রাগটি কেনা যায় কোনরকম প্রেসক্রিপশন ছাড়াই২১

বাংলাদেশের যৌনকর্মীরা বিভিন্ন যৌনরোগের খুব সহজ টার্গেট। অপরিচ্ছন্ন যৌন মিলন ও কনডম ব্যবহারে খদ্দেরের অনাগ্রহের কারণে কর্মীরা খুব সহজেই যৌনাঙ্গে প্রদাহ, ব্যাথা, সিফিলিস, গনোরিয়ার, ক্ল্যামাইডিয়ার সংক্রমনের মতো রোগের স্বীকার হন একের অধিক বার। পপুলেশন কাউন্সিলের রিপোর্ট এপ্রিল ২০১৫ অনুসারে বাংলাদেশে প্রতি তিনজনে একজন যৌনকর্মী যৌনরোগে আক্রান্ত এবং ৪০ শতাংশ কর্মী অল্প বয়সে অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে গর্ভপাত ঘটান।২২ অসুখ চিকিৎসার অযোগ্য পর্যায়ে চলে গেলে কিংবা চিকিৎসা সুলভ না হলে দালালেরা যৌনকর্মীদের পল্লী থেকে বের করে দেন এবং কোন এনজিও আশেপাশে কর্মরত থাকলেএনজিও কর্মীরা তাদের মেরিস্টোপস কিংবা এরকম কোন ক্লিনিকে নিয়ে যায়।
আমার কাজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি কীভাবে যৌনকর্মীরা তাদের খদ্দের কিংবা আশ্রয় হারানোর কিংবা সর্দারনীর ভয়ে প্রানপনে তাদের যৌনরোগ একদম শেষ অবস্থায় যাওয়া পর্যন্ত গোপন রাখেন এবং ভোগ করেন অপরিসীম যন্ত্রনা।

বাংলাদেশের যৌনকর্মীরা এইচ আইভির ঝুঁকির মধ্যে আছেন। সুখখবর হলো বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা যৌনকর্মীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির পন্থা হিসেবে বিনামূল্যে কনডম বিতরন করেন। কিন্তু সেই কনডম ব্যবহারের প্রবনতা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত কম। তাছাড়া ক্রেতা অসন্তুষ্ট হবার ভয়ে অনেক কর্মী কনডম ব্যবহারের ব্যাপারে জোর করা থেকে বিরত থাকেন। এই সমস্যা বেশি ভোগ করে ছুকড়ি শ্রেনীর কর্মীরা। সর্দারনী কিংবা মাসীর অত্যাচারের ভয়ে তারা কোনরকম সুরক্ষা ছাড়াই যৌনমিলনে বাধ্য হন। এমনকী স্বাধীন যৌনকর্মীরাও ক্রেতার সাথে এই নিয়ে খুব বেশি শক্ত অবস্থান ধারন করেন না কারণ তারা মনে করেন বয়স বেড়ে যাবার কারণে এই ক্রেতা তাদের পছন্দ না করে কমবয়সী ছুকড়ির কাছে চলে যাবেন অথবা এক ক্রেতার সাথে বেশি সময় নষ্ট করলে অন্য ক্রেতা হারাবেন।২৩

দেখা যায় অনিয়মিত খদ্দেরদের কনডম ব্যবহার করানোর চেষ্টা করলেও বাবু, যাদের তারা স্বামী/প্রেমিক মনে করেন তাদেরকে নিজেরাই কনডম ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করেন। এতে রোগের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।

এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে হাপানি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপতো আছেই।
সস্তা বিড়ি, সিগারেট, অ্যালকোহলের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার তাদের অসুস্থ্যতা বাড়ায় আর আয়ু কমিয়ে দেয়। দালাল ও খদ্দেররা যৌনকর্মীদের ফেন্সিডিল, হেরোইন, ইয়াভা প্রভৃতি নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহনে বাধ্য করেন যা একসময় পরিনত হয় অভ্যাসে। এছাড়াও তারা নানারকম সহজ কিন্তু ক্ষতিকর দ্রব্য যেমন মাথা ব্যাথার মলম, জুতার কালি, টিকটিকির লেজ গ্রহণ করেন নেশাজাত দ্রব্য হিসেবে।

যৌনকর্মীরা নিজেদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখার কোন সুযোগ পান না। তাই সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের মানসিক অবসাদ, মনোবৈকল্য, স্মতিশক্তির সমস্যায় ভোগেন তারা।
বিভিন্নরকম বিষাদময় অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাবার ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যায় ভয়াবহভাবে। এই পেশা ছাড়া আর কিছু করার যোগ্য মনে করেন না নিজেকে। তাই চাইলেও এই পেশা ছাড়তে পারেন না।

যৌনকর্মীদের মনোদৈহিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে এই গবেষনাপত্রটি খুব কাজে আসবে।২৪

সামাজিক সমস্যা ও নির্যাতন

যৌনকর্মীরা সমাজের অচ্ছুৎ গোত্রগুলোর একটি। প্রতিটা পদক্ষেপে অত্যাচার, বৈষম্য, হয়রানির স্বীকার হতে হয় তাদের। নিগ্রহ, নির্যাতন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনভাবে সমাজের এক কোণে বেঁচে থাকেন তারা। যৌনকর্মীরা সাধারণত কাজ ও জীবনযাপনে ত্রিমুখী সমস্যার মুখোমুখি হন। পল্লীর অন্তর্গত সমস্যা, পল্লীর বাইরে সামাজিক হয়রানি এবং রাষ্ট্রীয়/ধর্মীয় হয়রানি ও বৈষম্য। সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার নিরলস পরিশ্রমের ফলে কিছু কিছু সমস্যার সমাধান হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা এতোই ক্ষুদ্র যে যৌনকর্মীদের সিংহভাগ তাদের পুরো জীবদ্দশায় শুধু সমস্যারই মোকাবেলাই করেন, সমাধানের পথ খুঁজে পান না।

পল্লীর অন্তর্গত সমস্যা

দালাল, সর্দারনীর শারীরিক মানসিক অত্যাচারের পাশাপাশি পল্লীতে রয়েছে আরো নানাবিধ সমস্যা। পল্লীর বাইরে যাবার সুযোগ না থাকায় পন্য নির্বাচন ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। পল্লীর ভেতর থেকেই বেশি দামের নিম্নমানের পন্য কিনতে বাধ্য হন তারা। পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্থানীয় মাস্তান নানাভাবে হেনস্তা করে তাদের। বিনামূল্যে যৌনসেবা গ্রহনের পাশাপাশি তাদের সামাজিক এক্সপোজার ও মিথ্যা মামলার ভয় দেখানো হয়, তারসাথে আছে শারিরীক নির্যাতন, ধর্ষন। স্থানীয় অপরাধীরাও বিনামূল্যে সেবা গ্রহনের পাশাপাশি নানারকম হেনস্তা করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীর কোন শাস্তি হয়না বরং দোষ দেয়া হয় যৌনকর্মীকে।

ক্ষমতাবান ক্রেতা কিংবা কতৃপক্ষের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে অত্যাচার সহ যৌনকর্মীর মৃত্যুও সাধারণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়।

পল্লীর বাইরে সামাজিক হয়রানি

পরিবার নিয়মিত অর্থ গ্রহন করলেও তাদের পরিবারে গ্রহণে অসম্মতি জানায়। এবং যৌনকর্মী বিয়ে করলেও স্বামীর পরিবার তার প্রাক্তন পেশা সম্পর্কে জানার পর তাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে। কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে ডাক পড়েনা তাদের। খুব বেশিদিন আগের কথা নয় যখন যৌনকর্মীরা স্যান্ডেল পড়ে চলাচল করতে পারতেন না।
যৌনপল্লীর কোন যৌনকর্মীর সাধারণ কবরস্থানে কবর হয়না। বড় পল্লী যেমন দৌলতদিয়ায় তাদের জন্য পল্লীতে আলাদা কবরস্থান থাকে। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও একইরকম পার্থক্যের স্বীকার হন।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আলাদা হলেও ফরিদপুরে যৌনকর্মীদের নিয়মিত কবরের দাবী আদায় করেছে দ্য প্রস্টিটিঊট এসোসিয়েশন ফরিদপুর।

বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর আওতায় যৌনকর্মীরাও পড়েন। কিন্তু কোনরকম অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে ৯৯.৯৯ ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের অভিযোগ আমলে নেয়া হয়না উল্টো সামাজিক এক্সপোজারের ভীতি দেখানো হয়।

কোর্টের স্বীকৃতির পরও পেশা হিসেবে কিছুদিন আগেও তাদের আইনগত পরিচয় ছিলনা। তাই ব্যাংকে একাউন্ট খোলা তাদের জন্য ঝামেলার। এমনকি পেশাগত পরিচয় থাকার পরেও সেই পেশার কারণেই বেশিরভাগ ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার স্বাগত নন। টাকা সঞ্চয়ের এই প্রতিবন্ধকতা ও তথ্যে প্রয়োজনীয় প্রবেশাধিকার নেই বলে সরকারী/বেসরকারী বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্প সম্পর্কে তারা অবগত থাকন না।
তাই তাদের কাছে সহজেই পৌছে বিভিন্ন বীমা কোম্পানীর এজেন্টরা। বিভিন্ন ভুল তথ্য দিয়ে বড় প্রিমিয়ামের একাউন্ট খুলিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বীমা কর্মীরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যৌনকর্মীরা লগ্নিক্রিত টাকা এবং তাদের প্রাপ্য বীমার রিটার্ন কিছুই ফেরত পান না।

যৌনকর্মীরা বেশিরভাগ সময়েই কোন বিশেষ দিবস কিংবা উপলক্ষ্য ছাড়া মূল শহরে স্বাগত নন। মূল শহরে দেখা গেলে পুড়িয়ে মারা হবে এরকম হুমকিও পেয়েছেন অনেকে একই সাথে অন্যান্য নির্যাতনের ভয় তো রয়েছেই।

রাজনৈতিক-ধর্মীয় হয়রানী/বৈষম্য

যৌনপল্লীর কর্মীদের কাছে পল্লীই তাদের ঘর। সেখানে তারা নিরাপদ বোধ করেন। ভাসমান কর্মীদের তুলনায় পল্লী নিরাপদ এও সত্য। কিন্তু প্রভাবশালী রাজনৈতিক/ধর্মীয় গোষ্ঠি প্রায়ই সেখানেও খড়্গহস্ত হয়ে দাঁড়ায়। কোর্টের আদেশ থাকার পরেও নৈতিকতা, অপরাধ প্রবনতার ধুঁয়া তুলে কোনরকম পরিকল্পিত পূনর্বাসনের সুযোগ না দিয়ে প্রায়ই যৌনকর্মীদের তাদের পল্লী থেকে উচ্ছেদ করা হয়।

আশির দশকের প্রথম দিকে ঢাকার তিনটি পরিততালয় কুমারটুলি, গঙ্গাজলি ও পাটুয়াটুলি উচ্ছেদ করা হয়।
১৯৯৭ সালের ১২ই মে শপিং কমপ্লেক্স বানানোর জন্য ভেঙ্গে ফেলা হয় ঢাকার কান্দুপট্টি[ যৌনপল্লী।২৫ ২৬
অসমর্থিত সুত্রে জানা যায় স্থানীয় অধিবাসীদের নৈতিক অবক্ষয়ের অযুহাতে তৎকালীন কমিশনারে নেতৃত্বে কান্দুপট্টির প্রায় ১,০০০ এর মতো যৌনকর্মীকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা হয়।

টানবাজার
- বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত যৌনপল্লী নারায়নঞ্জের টানবাজার স্থাপিত হয় ১৮৮৮ সালে। ১৯৯৯ সালের জুলাই পর্যন্ত সেখানে ২৬০০ এর মতো যৌনকর্মী কর্মরত ছিলেন। একই বছর জুলাইয়ে সেখানকার কর্মীদের কাছে নোটিশ যায় দুই সপ্তাহের মধ্যে টানবাজার বন্ধ করে দেয়া হবে। তাদের কাজের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা এবং পূণর্বাসনের প্রস্তাব (সরকারের ভাষায় সুযোগ) রাখা হয় কর্মীদের জন্য। ২০০০ এর মতো কর্মী এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। ৬০০র মতো কর্মী সম্মত হন সরকারের প্রস্তাবে।
নির্দিষ্ট দিন ভোর চারটায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে টানবাজার ধ্বংস করে দিয়ে যায়। যারা পূনর্বাসন প্রকল্পে রাজি হয়েছিলেন তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি ২০০০ ছড়িয়ে পড়েন রাস্তায় ভাসমান পতিতা হয়ে। বলা হয়ে থাকে সরকারের পূনর্বাসন প্রকল্পে নিয়ে যাওয়া যৌনকর্মীরাও কিছুদিন পর হতাশ হয়ে পুরনো পেশায় ফেরত যান।২৭
পূনর্বাসন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২৬৭ জন কর্মীকে সাত হাজার টাকা ও একটি সেলাই মেশিন দেয়া হয়। রিট আবেদনের ফল হিসেবে প্রাথমিক অবস্থায় আশি জনের মতো যৌনকর্মীকে পুলিশের ভাষায় 'অভিভাবকের কাছে' হস্তান্তর করা হয়। যৌনকর্মীদের সংগঠন সংহতি দাবী করে অভিভাবক নাম নিয়ে পুলিশের জ্ঞাতসারেই এইসব যৌনকর্মীরা আবার চলে যায় দালালদের হাতে।
সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া শিকদার টানবাজার পল্লী উচ্ছেদ প্রসঙ্গে বলেন “নারায়ণগঞ্জে যৌন পল্লী উচ্ছেদের পর তারা পুরো নারায়ণগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকায় হোটেল ছাড়াও পুরনো ঢাকায় ঘরে ঘরে ছোট ছোট মিনি ব্রথেল হচ্ছে।”

মাগুরা - ২০০২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা মাগুরা যৌনপল্লীর কর্মীদের বলেন পরের দিন সকাল ১০টার মধ্যে সবাইকে পল্লী ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিছু কর্মী পালিয়ে গেলেও বেশিরভাগ কর্মী পল্লীতেই রয়ে যায়। ২৫শে ডিসেম্বর স্থানীয় লোকজন, সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনীর লোকেরা সম্মিলিতভাবে মাগুরা যৌনপল্লীতে আক্রমন করে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নেয়, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় যৌনকর্মীদের।২৮

যৌনকর্মীর জানান জেলা প্রশাসক নিজে হামলার সময় উপস্থিত ছিলেন এবং মিলিটারি পুরো পল্লী ঘিরে রেখেছিল। সেপ্টেম্বর ২০০২ এ জেলা আদালত সুষ্ঠু পূনর্বাসন পরিকল্পনা ছাড়া মাগুরা যৌনপল্লী উচ্ছদে করা যাবেনা এই মর্মে রুল জারি করার পরও কোন রকম কোন পরিকল্পনা ছাড়াই প্রশাসনের উপস্থিতিতেই মাগুরার যৌনপল্লীর কর্মীদের উচ্ছেদ করা হয়।

মাদারীপুর - হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ২২শে অগাস্ট ২০১৩তে মাদারীপুরের প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো যৌনপল্লী থেকে ইশালে কওমী পরিষদ নামে একটি সংগঠনের নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ যৌনকর্মীকে জোরপূর্বক উৎখাত করা হয়। যৌনকর্মীরা তাদের বাসস্থান ছাড়তে রাজি না হওয়ায় আক্রমনকারীরা প্রায় ৩০ জন কর্মীকে মারধোর করে এবং লুটপাট করে মূল্যবান জিনিসপত্র। ২৯

পুলিশ জানায় এই যৌনপল্লী রেজিস্টার্ড নয় কিন্তু আইন ও শালিশ কেন্দ্রের করা রিট পিটিশনে একই বছরের ২২শে জুলাই আদালত অন্তত এক বছরের জন্য যৌনকর্মীদের কাজ করার অনুমতি দেয়।

যৌনকর্মীরা অভিযোগ করে এই পল্লী শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপিত হওয়ায় এই বিশাল জমির প্রতি অনেক মহলের লোভ ছিল। মূলত এই জমির লোভেই কোন রকম কোন পূনর্বাসন পরিকল্পনা ছাড়াই বিশাল সংখ্যক কর্মীকে ট্রাকে করে শহরের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং বলা হয় ট্রাক ড্রাইভারকে বলা আছে যে তারা যৌনকর্মী তিনি এই তথ্য গোপন রাখবেন। এর মধ্যে অন্তত ৬০ জন মেয়ের ভাগ্যে কী ঘটেছে জানা যায়নি।

কান্দাপাড়া - একইভাবে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে আরেক বৃহত্তর পল্লী ২০০ বছর পুরনো টাংগাইলের কান্দাপাড়া পল্লী ধ্বংস করা হয় প্রশাসন ও ধর্মীয় গোষ্ঠির নির্দেশ ও ছত্রচ্ছায়ায়। স্থানীয় মেয়র শহীদুর রহমান খান মুক্তি এবং মসজিদের ইমামের পরিকল্পনায় রাজনৈতিক ক্যাডারেরা পল্লীর সামনে ড্রামভর্তি পেট্রল নিয়ে হুমকি দেয় যৌনকর্মীরা তৎক্ষণাৎ পল্লী ছেড়ে না দিলে বাচ্চা সহ তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হবে। ক্যাডারেরা পল্লীতে প্রবেশ করে যৌনকর্মীদের নির্যাতন ও ধর্ষন করে। প্রানের ভয়ে কর্মীরা বাধ্য হন তাদের সর্বস্ব রেখে পল্লী ছেড়ে পালিয়ে যেতে। পল্লী ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর স্থানীয়েরা কর্মীদের ফেলে দেয়া যাবতীয় সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে যায়। খুবই অল্পদিনের মধ্যে পল্লী ভেঙ্গে শুরু হয় ভবন নির্মানের কাজ।৩০
২০০৬, ২০১০ ও ২০১৩ তেও কান্দাপাড়া পল্লী ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। যথারীতি এই যৌনকর্মীদের পূণর্বাসনের ব্যাপারেও সরকারের ফলপ্রসূ কোন উদ্যোগ কিংবা পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি।

উৎখাতের কদিন পর বেসরকারী সাহায্য সংস্থা এবং যৌনকর্মী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে কিছু যৌনকর্মী পুনরায় পল্লীতে ফিরে আসার চেষ্টা করলে প্রভাবশালী রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় নেতাদের তৈরী অসামাজিক কার্যকলাপ কমিটি থেকে ঘোষনা করা হয় কোন মানবাধিকার কর্মীকে কান্দাপাড়ায় দেখা গেলে তাকে শারিরীক ভাবে নির্যাতন করা হবে এবং শাস্তির মুখোমুখি হবে ফিরতে চাওয়া যৌনকর্মীরা।

যশোর - পায়াক্ট বাংলাদেশের যশোর ফিল্ড অফিস আয়োজিত এক সভায় যৌনকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠান শক্তি উন্নয়ন সংঘের কর্মীরা অভিযোগ করেন ক্রমাগতভাবে দালাল, পুলিশসহ প্রভাবশালী গোষ্ঠির নানামুখী নির্যাতনে যশোরের যৌনকর্মীরা সমস্যায় আছেন, কেউ কেউ বাধ্য হচ্ছেন পাশে শহরের যৌনপল্লীতে চলে যেতে।

প্রতিটি উচ্ছেদেরই কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে। যেমন আদালতের আদেশ অমান্য করা, প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের পূর্ণসহযোগীতা প্রদান এবং যৌনকর্মীদের প্রতি অসহযোগীতা, ধর্মীয় আবেগের ব্যবহার, যৌনকর্মীদের শারীরিকভাবে নিগৃহীত ও তাদের ধন সম্পদ লুট করা এবং প্রতি ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন জমির লোভ কিংবা রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য সমাজের ক্ষমতাবান মহলেরা যৌনকর্মীদের প্রতি কোনরকম সহানুভূতি না দেখিয়ে তাদেরকে এক অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।

যৌনকর্মীদের সংগঠন

বিভিন্ন সামাজিক, রাষ্ট্রীয় বঞ্চনা ও নির্যাতনের স্বীকার বাংলাদেশের যৌনকর্মীরা সংঘবদ্ধভাবে তাদের জীবন যাত্রা মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। কিছু কিছু সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে

২০০২ সালের ১৮ই জুন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে যৌনকর্মীদের দুই দিনব্যাপি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন যৌনপল্লী, ভাসমান, লিঙ্গান্তরিত যৌনকর্মীরা ছাড়াও অংশ নেয় পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠিত সংগঠন দুর্বার মহিলা সংঘ। মূলত সেই সম্মেলন থেকেই যৌনকর্মীদের অধিকার আদায় এবং কর্মী ও তাদের শিশুদের প্রতি বৈষম্য নির্মুলের প্রতিশ্রুতি নিয়ে জন্ম নেয় যৌনকর্মীদের অন্যতম বড় একটি সংগঠনের হলো সেক্সওয়ার্কার নেটওয়ার্ক অফ বাংলাদেশ (SWNOB) এর।৩১

বাংলাদেশ জুড়ে ২০টির বেশি সংগঠন এই নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত। সেক্সওয়ার্কার নেটওয়ার্ক যৌনকর্মীদের জন্য প্রশিক্ষন, যৌনপল্লীর অবস্থা পর্যবেক্ষন, বিভিন্ন বিশেষায়িত দিবস সহ ইস্যু ভিত্তিক কর্মকান্ড যেমন উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।

জন্মের পর থেকে সেক্সওয়ার্কার নেটওয়ার্ক অফ বাংলাদেশ তাদের লক্ষ্য পুরণের উদ্দ্যেশে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০১১ সাল পর্যন্ত চারটি জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন, প্রস্টিটিউশন এসোসিয়েশন অফ ফরিদপুরকে সহায়তা দানের মাধ্যমে ফরিদপুরের যৌনকর্মীদের জন্য সাধারণ কবরস্থানে কবরের ব্যবস্থা, ২০১০ এ টাঙ্গাইল পল্লী উৎখাত প্রতিহত করা এবং গ্লোবাল এসোসিয়েশন এগেইনেস্ট ট্রাফিক উওম্যান (GAATW) এর সদস্যপদ প্রাপ্তি।

ঢাকার ভেতরের সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উল্কা নারী সংঘ, দুর্জয় নারী সংঘ ও বাঁধন হিজড়া সংঘ। উল্কা ও দুর্জয় নারী সংঘ বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো যৌনকর্মীদের সঙ্গগঠনগুলোর একটি। টানবাজার-নিমতলী পল্লী উচ্ছেদের প্রতিবাদে এই সংগঠন দুটো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে।

ঢাকার বাইরে রয়েছে একতা নারী সংঘ (চট্টগ্রাম), সন্ধি নারী সংঘ (সিলেট), নারী জাগরনী সংঘ (বানিশান্তা), একতা মহিলা সংঘ (বাগেরহাট), দিনের আলো মহিলা হিজড়া সংঘ (রাজশাহী), বান্ধবী নারী সংঘ (মাদারীপুর), মেঘনা নারী কল্যান সংঘ (ফরিদপুর), নারী মুক্তি সংঘ (টাঙ্গাইল) ও অন্যান্য।৩২

২০১৪ এর ডিসেম্বরে দুর্জয় নারী সংঘ ও বাংলাদেশ উইমেন'স হেলথ কোয়ালিশনের যৌথ উদ্যোগে যৌনকর্মীদের আত্মমর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি আদায়কে প্রতিপাদ্য করে যৌনকর্মীদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। সেখানে সেইভ দ্য চিলড্রেনের এইচিআইভি এইডস প্রোগ্রামের প্রবন্ধে বলা হয় দেশে যৌনকর্মীর সংখ্যা ৭৪ হাজার তিনশো এবং এর ৫৪ শতাংস সারা দেশের যৌনপল্লীতে বসবাস করেন।৩৩
যদিও অন্যান্য রিপোর্টে বাংলাদেশে যৌনপেশায় কর্মরত নারীর সংখ্যা দুই লক্ষ বলা হয়েছে।

এই সংগঠনগুলো যৌনকর্মীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে গেলেও সরকার, আইন প্রনয়নকারী সংস্থা ও সামাজিক কাঠামোর গুনগত পরিবর্তনের হার অত্যন্ত ধীরগতির। সেক্সওয়ার্কার এলায়েন্স অফ সাউথ এশিয়ার কর্মী নাতাশা আহমেদের মতে নারীর প্রতি বাংলাদেশের রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী এর একটি কারণ।২০

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যৌনকর্মীদের জীবনের মান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। সরকারের তিনটি মন্ত্রনালয় - সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রনালয় যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করে। সরকারীভাবে তাদের বলা হয় 'সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত নারী' 'সামাজিক প্রতিবন্ধী নারী।

(কিছু অসুবিধার কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রনালয়র কোন তথ্য ও সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ের কিছু তথ্য এখানে দেয়া যাচ্ছেনা। সমস্যার সমাধান হওয়া মাত্র বাকি তথ্য যোগ করা হবে)

বিভিন্ন যৌনপল্লীতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং প্রতারনার মাধ্যমে নিয়োগকৃত মেয়েদের উদ্ধার, তাদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আর্থ সামাজিক পূনর্বাসন এর লক্ষ্যে সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত সামাজিক প্রতিবন্ধী নারী (যৌনকর্মী)দের প্রশিক্ষন ও পূনর্বাসনের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ১৮৪০,৫৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সারা দেশের ছয়টি বিভাগে স্থাপন করা হয় ছয়টি প্রশিক্ষন ও পূনর্বাসন কেন্দ্র।৩৪

যৌনকর্মীদের সাহায্য করার জন্য একই রকম আরো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
আদালত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সরকারীভাবে সত্যায়িত এনজিও দ্বারা উদ্ধারকৃতরা বিনামূল্যে সরকারের এই সেবা গ্রহন করতে পারেন। এই প্রকল্পের আওতায় উদ্ধারকৃত নারীকে শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা প্রদান করে সামাজিক - আর্থিকভাবে পূনর্বাসন করা হয়। শিক্ষার অংশ হিসেবে তাদের সচেতন করা হয় অসামাজিক ও অমানবিক যৌনতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। সম্ভব হলে প্রকৃত অভিভাবক, নিকট আত্মীয় অথবা অন্যকোন বিশ্বাসযোগ্য সমাজ দরদী/সমাজকর্মী কর্তৃক উদ্ধারকৃত যৌনকর্মীর নিরাপত্তা, ভরণ-পোষন, বিবাহ ও আর্থ-সামাজিক পুনর্বাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য মন্ত্রনালয় যথাসাধ্য চেষ্টা করে।৩৫

সামাজিক প্রতিবন্ধী নারীদের প্রশিক্ষন ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের ৬০০টি আসনের মধ্যে মে ২০১৫ পর্যন্ত ১৫০টি আসন পূর্ণ রয়েছে। প্রশিক্ষনের মধ্যে রয়েছে সেলাই, মোমবাতি প্রশিক্ষন, শপিং ব্যাগ তৈরী, ইলেক্ট্রনিক্স, পোল্ট্রি ও সব্জীবাগান সহ মোট ১১টি ভিন্ন ভিন্ন প্রশিক্ষন।
সাধারণ নাগরিকেরা চাইলে সরকারী এই উদ্যোগে যুক্ত হয়ে যৌনকর্মীদের সহায়তা করতে পারেন। যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি দানের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা, শিক্ষা, বৃত্তির মাধ্যমে উন্নয়ন প্রশিক্ষনে সহায়তা, কাউন্সেলিং ও কর্মসংস্থানে সহায়তার মাধ্যমে নাগরিকেরা এগিয়ে আসতে পারেন এই প্রকল্পকে আরো ফলপ্রসূ করে তুলতে।

২০১০ সালে ইলেকশন কমিশন যৌনকর্মকে একটি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষনা করে এখন থেকে যৌনকর্মীরা ভোটার আইডি কার্ডে নিজের পেশা হিসেবে যৌনকর্ম লিখতে পারবেন। কমিশন জানায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পরামর্শে এই উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।
২০০০সালে আদালতের স্বীকৃতির পর ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশের প্রশাসনে যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে গ্রহন করা হয়। এর আগে তারা পেশা হিসেবে 'অন্যান্য' ক্যাটাগরির আওতাভুক্ত ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এবং স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগ ছয়টি ব্যাংকের সাথে আলোচনার মাধ্যমে যৌনকর্মীদের ব্যাংকিং ও ঋন সুবিধার আওতায় আনার জন্য একটি নীতিমালা প্রনয়ন করছে।
দেখা যায় যে যৌনকর্মীরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর প্রশিক্ষন নিলেও ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা তাদের ঋন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পুঁজির অভাবে তার স্বনির্ভর হতে পারেন না এবং ফলাফল হিসেবে বাধ্য হন এই বংশ পরম্পরায় এই পেশায় থেকে যেতে। প্রাথমিকভানে একটি পল্লীর কয়েকজন যৌনকর্মীকে এই কর্মসূচীর আওতায় এনে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এই কর্মসূচীর পরিধি আরো বিস্তৃত করার মাধ্যমে আরো বেশি সংখ্যক যৌনকর্মীকে এই উদ্যোগের আওতায় আনা হবে।৩৬

পরিশিষ্ঠ - এই লেখায় যতটা নির্মোহ, আবেগহীন ভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছি, যৌনকর্মীদের জীবন এর থেকে অনেক বেশি ভয়ংকর। সরকারী বেসরকারী নানারকম সাহায্য তাদের কষ্টকে কিছু লাঘব করতে পারে কিন্তু তাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলাতে পারেনা। যারা এই অশুভ চক্র থেকে বের হয়ে আসতে পারেন, তারাও বয়ে বেড়ান দুঃসহ স্মৃতি। তাদের এই কষ্টের জীবন দেখার দুর্ভাগ্য আমার হয়েছে। আমি জানিনা কীকরে এই অন্যায় পেশা এতদিন টিকে থাকতে পারে। তবে এইটুকু জানি এই অন্যায্য জীবনপ্রথা বন্ধ হবার খুব বেশি সম্ভাবনা অদুর ভবিষ্যতে নেই।

----------------------------------------------------------------
* নারী সপ্তাহের ডেডলাইন রাখার জন্য শুধুমাত্র কাঠামোগত তথ্য দিয়ে অসম্পুর্ন হিসেবে এই লেখা প্রকাশ করেছিলাম ১৪ই মে ২০১৫ তারিখে। ইচ্ছে ছিল পরের দিন কিংবা এক সপ্তাহের মধ্যে লেখা সম্পুর্ন করবো। ব্যস্ততা এবং নানাবিধ নতুন তথ্যের কারণে আজ পহেলা অগাস্ট ২০১৫তে লেখা শেষ করতে পারলাম।

** অমুল্য সব রেফারেন্স দিয়ে সহায়তা করেছেন সচল নজরুল ইসলাম, আয়নামতি। আলাদা করে বলতে হয় সচল তানিম এহসানের কথা, তার দেয়া রেফারেন্সগুলোর অশেষ উপকার বলে বোঝানো যাবেনা।

পাদটীকা


মন্তব্য

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

অনুবাদকের কাজ করতে গিয়ে একবার অনেক যৌনকর্মীর সাক্ষাৎকার নিতে হয়েছিলো। ছেলে-মেয়ে-হিজরা সবারই। এর আগে জানতাম না যে বাংলাদেশে ছেলে আর হিজরা যৌনকর্মী আছে। অভিজ্ঞতা খুবই করুন। এদের গল্পগুলো এতো ভয়াবহ যে অনুবাদ করতে গিয়ে চোখে পানি চলে আসতো। মন খারাপ

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক চলুক

আরও একটি শ্রেণী আছে, আবাসিক-বাসা ভিত্তিক, গত পাঁচ-দশ বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে, চাহিদার সাথে সাথে। আরও বেড়েছে যৌনকাজে ছেলে’দের জড়িত হওয়ার হার --- আইনগত বাধা এইসব বিলিয়ন ডলার ব্যবসায় কোন ব্যাপার নাকি! রেফারেন্স দেখুন।

যৌনকর্মের সাথে জড়িত একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হচ্ছে শিশু, ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকা উগ্র ধর্মান্ধতার এই দেশে শিশুদের বেলায় পুরুষদের যৌন চাহিদা সবচাইতে বেশি (সমগ্র পৃথিবী জুড়েই তাই), একইসাথে বেশি পাচারের হারও। এক্ষেত্রে ১৫-১৮ বছর বয়সী কিশোরীরাই মূলত এর শিকার। একটি গবেষণা হিসেব মতে (সূত্র নিচে দেয়া হল), ৩০৭০০ শিশু পথে ভাসমান থাকাবস্থায় এবং ৪০০০০ শিশু হোটেল এবং আবাসিক বাসায় যৌন ব্যবসায় জড়িত। পুরুষের মাথা থেকে এই ব্যবসার উৎপত্তি আর পুরুষের হাত দিয়ে এর কাঠামোগত প্রসার, প্রচার --- যৌনকর্মের সাথে জড়িত নারী’দের যে সমাজ ঘৃণা করে সে সমাজ কিন্তু প্রতিপালক পুরুষের বেলায় নির্লজ্জভাবে নীরব- সমাজ আর পৃথিবী খুব আজব!

এইসব মানুষদের নিয়ে কাজ করেছি, কাউকে দেখিনি হেসে-খেলে এই পেশায় জড়িত হতে, প্রতিটি মানুষের যে নিজ নিজ ইতিহাস তা কতটা তিক্ত, কতটা ভয়াবহ তা বলার মত ভাষা আমার নেই। এই নিয়ে লিখতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। আপনি যে আঙ্গিক থেকে লিখতে শুরু করেছেন সেটা ভাল লাগলো, চলুক।

সূত্র: Brian Willis; Draft Report; The Health and Social Well-being of Children of Female Sex Workers in Bangladesh: Results of focus group discussions in Dhaka, Chittagong and Sylhet; Centre for Global Health, Trinity College, Dublin; not dated

আরও কিছু রেফারেন্স দিচ্ছি, জানি না কাজে লাগবে কিনা:

http://www.unicef.org/evaldatabase/files/BAN_2002_801.pdf

http://www.unicef.org/bangladesh/Child_Abuse_Exploitation_and_Trafficking.pdf

http://www.humantrafficking.org/uploads/publications/Bangladesh_Part1.pdf

http://www.unicef.org/rosa/commercial.pdf

http://www.unicef-irc.org/publications/pdf/iwp_2010_02.pdf

http://www.scribd.com/doc/22696806/Situation-of-the-Sex-Workers-in-Bangladesh#scribd

http://bsafchild.net/pdf/CP.pdf

http://www.swnob.com/?page_id=2

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এখন বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারছি না। তাই আপাতত একটা আবৃত্তির লিঙ্ক দিয়ে গেলাম। কবিতাটার টেক্সট এখানে পাওয়া যাবে। কবিদের খামাখা ঈর্ষা করি না! এরা ছোট একটা কবিতায় আস্ত উপন্যাস বা একটা রিসার্চ পেপার ঢুকিয়ে দিতে পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

কবিতাটা শুনলাম। পড়লাম। কিছু বলার ভাষা নেই আসলে। অনেক ধন্যবাদ পাণ্ডবদা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ঈয়াসীন এর ছবি

এই কবিতাটি ফিনল্যান্ডে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একবার আবৃত্তি করেছিলাম। শেষের দিকে নিজেই কেঁদে ফেলেছিলাম। দেখি আবৃত্তিটি খুঁজে পেলে এখানে পোস্ট করবো।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আশির দশকের প্রথম দিকে ঢাকার তিনটি পরিততালয় (গঙ্গাজলি, পাটুয়াটুলি ও কুমারটুলি) উচ্ছেদ করা হয়েছিলো। ১৯৯৭ সালের ১২ মে উচ্ছেদ করা হয় পুরানো ঢাকার কান্দুপট্টি পতিতালয়টি।
ইউএনডিপির টাকায় বাংলাদেশ সরকার একটা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেই প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী ৯৮ সালে বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২০টি বড় পতিতালয় ছিলো।
বাংলাদেশের জাতীয় এইডস কার্যক্রমের পরিকল্পনায় (১৯৯৭) বলা হয়েছে বাংলাদেশে পতিতালয়ের ভেতরে এবং বাইরে মিলিয়ে একলক্ষের মত মেয়ে এই পেশায় আছেন। আর এনজিও কেয়ার এর হিসাবে এই সংখ্যা ষাট হাজার।
৯৭ সালে পরিচালিত কেয়ার এর জরিপ অনুযায়ী তখন ঢাকা শহরে সাড়ে চার হাজারের কাছাকাছি ভাসমান যৌনকর্মী ছিলো।
সরকারের দুটো মন্ত্রণালয় এদের নিয়ে কাজ করে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু তারা এদেরকে যৌনকর্মী বলে না। 'সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত নারী' 'সামাজিক প্রতিবন্ধী নারী' ইত্যাদি বলে।
'সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত নারী এবং তাদের সন্তানদের দক্ষতাসৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং টেকসই জীবিকা নির্বাহের উপায়' নামে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রকল্প আছে। ১৯৮ সালের জুলাই মাসে শুরু ২২ লক্ষ মার্কিন ডলোরের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল দায়িত্বে আছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সমাজসেবা অধিদপ্তর।
উল্কা, দুর্জয় নারী সংঘ, অক্ষয় এবং নারীমুক্তি নামে যৌনকর্মীদের চারটি সংগঠন ইতোমধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে।

[তথ্যসূত্র: কুররাতুল আইন তাহমিনা ও শিশির মোড়ল রচিত "বাংলাদেশে যৌনতা বিক্রি, জীবনের দামে কেনা জীবিকা"]

* দ্বিতীয় পর্ব দেন হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ঈয়াসীন এর ছবি

সমাজের অবহেলিত এই দিকটি তুলে ধরবার জন্যে ধন্যবাদ।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

পড়ছি, তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। পরের অংশের জন্য অপেক্ষায় থাকছি। এই লেখাটা দরকার ছিল। এই টপিকটা নিয়ে লেখা আসেনি। চলুক

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

রানা মেহের এর ছবি

দিশা - তুমিও লেখ। অভিজ্ঞতা আসুক।

তানিম - রেফারেন্সগুলো খুবই কাজে লাগবে। একদম প্রথমে যেটা দিয়েছেন সেটা খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হলো। আমি আসলে পতিতাপল্লী আর এডাল্ট ওয়ার্কারের ওপরেই লিখতে চাইলছিলাম লেজিটিমেট বলে। আপনার মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে শিশু ওয়ার্কারদের ওপর একটা অংশ থাকা উচিত। দেখি ভাল তথ্য পেলে দেয়ার চেষ্টা করবো।

ষষ্ঠ পান্ডব দা - আপনার দেয়া কবিতাটা পড়ে বুক ভেঙ্গে গেল। আরো কষ্টের ব্যাপার হলো এই মেয়েগুলোর অনেক কষ্ট আমার নিজের চোখে দেখা। কিছুই করতে পারিনি।
প্রথমে ইচ্ছে ছিল তাদের এই কষ্টগুলো নিয়েই লিখবো। পরে মনে হল এই ব্যাবসার সাথে জড়িত দিকগুলো নিয়ে লিখি।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

রানা মেহের এর ছবি

ঈয়াসীন, অবশ্যই আপনার কবিতা পোস্ট করবেন। অপেক্ষায় থাকলাম।

নজু ভাই, আপনার তথ্যগুলো খুবই কাজের ধন্যবাদ। কান্দুপট্টির কথা জানা ছিলনা, যোগ করে দিতে হবে।
বাকি তথ্যগুলোর কাছাকাছি তথ্য আমার নজরে এসেছিল। সমস্যা হচ্ছে এই তথ্যগুলো প্রায় ১৮ বছরের পুরনো তাই ব্যবহার করিনি আর এই লেখায় সচেতন ভাবেই স্ট্রিট বেইজড ওয়ার্কার দের কথা বাদ দিয়েছি।
অন্য পর্ব করবোনা। একেই ডেভলপ করছি।

সাদিয়া - এই বিষয়ে লেখা আসলে সব জায়গাতেই কম। তাই লিখতে চাইছিলাম। অন্য পর্ব করবোনা। এই লেখাটাতেই আরো তথ্য যোগ করে দিব।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আয়নামতি এর ছবি

যৌন ব্যবসা ও যৌনকর্মীদের নিয়ে লিখবার জন্য ধন্যবাদ জানবেন আপু। বিষয়টা নিয়ে সামান্য খোঁচাখুঁচি করে হাত গুটিয়ে নিয়েছি। আপনার লেখা দেখে ভালো লাগলো। আচ্ছা এরকম পেশায় জড়িত মানুষের সন্তানদের শিক্ষা দীক্ষার বিষয়ে কি রকম ব্যবস্হা আছে, সে বিষয়ে জানা আছে কিছু? সবাই নিশ্চয়ই একই পেশায় জড়াতে চায়না, পড়াশোনা করে অন্য রকম একটা জীবন পেতে চাইলে সেরকম কোনো সুযোগ সুবিধা কি তারা পায় বা দেয়া হয় তাদের? দেয়া হলে সেটার সর্বোচ্চ পর্যায় কতদূর?

নারী যৌনকর্মী অনুর্ধ ১৮ বছরের হন এবং প্রমান করতে পারেন যৌন ব্যবসাই তার আয়ের একমাত্র উৎস।

উল্লেখ্য বাংলাদেশের আইনের পুরুষ যৌনব্যবসা নিষিদ্ধ।

এই নিষিদ্ধ বিষয়টাকে সিদ্ধ করার ব্যাপারে আইনানুগ কোনো ব্যবস্হা নিশ্চয়ই নেয়া হয় না? কিংবা গরু মোটা তাজাকরণ ওষুধ মানুষকে যে খাওয়ানো হচ্ছে সেটার ব্যবহার বন্ধেরব্যাপারেও সেরকম পদক্ষেপ বা সচেতনতার ব্যবস্হা নেয়া হয় না! আসলে এই পেশার সাথে একটা বিশাল চক্র জড়িয়ে আছে। স্তরভিত্তিকভাবে তারা তাদের স্বার্থটা ধরে রাখবার কৌশলও নিশ্চয়ই প্রয়োগ করে থাকে। কাজেই তারা সেভাবে চাইবে না এরা সচেতন হোক, এদের শিশুরা শিক্ষিত হোক। এনজিও কর্মীদের হাত করে নেয়াও বিচিত্র কিছু না হয়ত।

আপনি"বর্ন ইনটুন ব্রথেল" দেখেছেন? যৌনকর্মীদের নিয়ে সচল মুজিব মেহেদীর চমৎকার একটা সিরিজ "যৌনকর্মীর কর্ম অথবা কে তোরে পতিতা বলে মা" কিংবা শামীমা পারভীনের " 'পতিতা' হওয়া ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের বিষয় না" আগ্রহ থাকলে পড়ে দেখতে পারেন। আমার কাছে "বেশ্যাপাড়ার পাঁচটি দুর্লভ সংগ্রহ" নামের ইবুক কপি আছে(এখনো পড়িনি অবশ্য, আপনার লেখার কারণে নামটা মনে পড়ে গেলো) পড়তে চাইলে আওয়াজ দিতে পারেন। এ লেখায় আরো অনেক তথ্য যোগ হবার পর আবার পড়বো। ধন্যবাদ নিন রে ভাই আবারো।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

পেশাগত কারণে যৌনপল্লীতে অনেক অনেকবার যেতে হয়েছে, এবং হোটেল ভিত্তিক ও ভাসমান যৌনকর্মীদের সাথে মেলামেশা করতে হয়েছে। কিন্তু এরকম গোছানো একটা লেখার কথা কখোনোই ভাবিনি। সময় নেই হাতে তাই বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারছিনা এখন। গত কয়েকবছর ধরে কিন্তু গৃহভিত্তিক যৌনকর্মীর সংখ্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে বিশেষকরে ঢাকায়। এর সাথে যারা যুক্ত তাদের অধিকাংশই চাকরীজীবি, ছাত্র বা গৃহবধু এবং এরা সপ্তাহে ৩-৪ দিনের বেশি এবং দিনে ১-২ বারের বেশি সেবা দেয় না।

আমি ব্যাক্তিগতভাবে পতিতা শব্দটি ব্যবহার করিনা। আমি যেহেতু এটিকে পেশা হিসেবে দেখি, তাই আমি একে যৌনপল্লী এবং যৌনকর্মী হিসেবেই আখ্যায়িত করে থাকি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রানা মেহের এর ছবি

আয়নামতি, যৌনকর্মীদের শিশুদের জন্য এই লেখাতেই একটা চ্যাপ্টার লিখছি।

সোজা কথায় বললে, তাদের অবস্থা ভয়াবহ। তারা কোন সাধারণ স্কুলে যেতে পারেনা। প্রথমত ভর্তিই হতে পারেনা বাবার নাম দিতে পারেনা বলে। সেই বাঁধা টপকে ভর্তি যদিও হয় তাদের মায়ের পরিচয় জানা মাত্র সহপাঠি, অভিভাবক ও স্কুল কতৃপক্ষ এতই অসহযোগীতার পরিবেশ তৈরী করেন যে সেই ছাত্রের জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়ে বাচ্চা মায়ের পেশা গ্রহন করতে বাধ্য হয় আর ছেলে বাচ্চা এই পেশা কিংবা পেশারই কোন একটা শাখায় (দালালি ও অন্যান্য) গ্রহণ করে।

বর্ন ইন্টু ব্রোথেল দেখেছি অল্পবিস্তর। আবার দেখবো।

আপনার কাছের বইগুলো পাঠালে খুব খুবই উপকার হয়। আমার ঠিকানা

এখানে একটু জানিয়ে দেবেন প্লিজ বইগুলো পাঠালে। অগ্রীম ধন্যবাদ রইলো।

রাতঃস্মরণীয়, আপনার অভিজ্ঞতা লিখুন। যত লেখা আসে এই বিষয়ে তত ভালো।

আবাসিক এলাকায় এই ব্যবসা ছড়িয়ে যাবার কথা জানি। কিন্তু এই বিষয়ে আমার জানার পরিধি আর বিশেষজ্ঞদের গবেষনা অনেক কম, তাই একে আনচায়না। একইভাবে বাদ রাখছি স্ট্রিটবেইজড কর্মীদেরও। তাদের জন্য আসলে আলাদা একটা ব্লগই দরকার।

যৌনপল্লী শব্দটার কথা আমিও ভেবেছি। কিন্তু এই শব্দের ব্যবহার কম থাকায় দিব কি না বুঝতে পারছিনা। পতিতাপল্লী নামটা আমার নিজেরো পছন্দ নয়। দেখি লেখায় এই দুটোর কোনটাই ব্যবহার না করে হয়তো ব্রোথেল শব্দটাই ব্যবহার করবো।

এই লেখা এখনো কাজ করা অবস্থায় আছে। পুরোটা শেষ হলে আবার পড়ে মতামত জানিয়ে যাবেন প্লিজ।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আয়নামতি এর ছবি

আশ্চর্য একটা দুনিয়ায় থাকি আমরা। যে জীবনের জন্য ওরা দায়ী না তার জন্য কেন ভুগতে হবে
বাচ্চাগুলোকে বুঝি না! 'বর্ন ইনটু ব্রথেলস' দেখে মনে হয়েছে আহা অভিজিৎ, মানিক কিংবা কঁচিদের মত যদি একটা বাচ্চাকেও অন্যরকম একটা জীবন দেয়া যেতো! অভিজিৎ ছেলেটা এখন নিউইর্য়কে ফটোগ্রাফিতে ভালোই করেছে। ফিল্মও বানিয়েছে নাকি। মানিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। অসাধারণ একটা অনুভূতি হয় আসলে ডকুটা দেখে। এরকম কিছু করা সম্ভব হতো যদি আমাদের রেডলাইট এরিয়ার বাচ্চাদের জন্য। এতো এতো সাধ আছে, সাধ্য নাই তেমন। মন খারাপ

আপনার ঠিকানায় ইকপি দুটো পাঠিয়েছি আপু। এই লেখায় আরো কিছু যোগ হবে নাকি? একেবারে সবটা পড়তে চাই, সেজন্য জানতে চাওয়া। ভালো থাকবেন।

------------
পেয়ে গেলাম খুঁজতে না খুঁজতেই দেঁতো হাসি
মুজিব মেহেদীর, 'যৌনকর্মীর কর্ম অথবা কে তোরে পতিতা বলে মা'
১পর্ব- http://nirmanblog.com/muzib-mehdy/3576
২য় পর্ব - http://nirmanblog.com/muzib-mehdy/3595
৩য় পর্ব- http://nirmanblog.com/muzib-mehdy/3598

এক লহমা এর ছবি

মুজিব মেহেদীর, 'যৌনকর্মীর কর্ম অথবা কে তোরে পতিতা বলে মা'-র লিঙ্কগুলোর জন্য ধন্যবাদ। দামী লেখাটা পড়ে এলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

এক লহমা এর ছবি

লেখাটা পড়েছিলাম। মন্তব্য করার মত অবস্থা ছিলনা তখন। তারপর অন্যান্য লেখার ঢেউয়ে এটির কথা মনে ছিল না।
গোছানো, ভালো লেখা, দরকারী লেখা।

"আমি ব্যাক্তিগতভাবে পতিতা শব্দটি ব্যবহার করিনা। আমি যেহেতু এটিকে পেশা হিসেবে দেখি, তাই আমি একে যৌনপল্লী এবং যৌনকর্মী হিসেবেই আখ্যায়িত করে থাকি।" - রাতঃস্মরণীয়-র এই চিন্তার সাথে সহমত।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

রানা মেহের এর ছবি

আয়নামতি, এই পোস্টেই যোগ করবো। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার সাহায্যের জন্য। লিঙ্কগুলো খুবই কাজে লাগবে।

এক লহমা, এখনো খুবই বেসিক পর্যায়ে আছে। পুরোটা শেষ হলে আবার এসে পড়ে যাবেন প্লিজ।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

চরম উদাস এর ছবি

কি অসাধারণ রকমের তথ্যপূর্ণ এবং দরকারি একটা লেখা। লেখাটা শেষ করলে আবার এসে পড়ে যাবো। কিছু ব্যাপার জেনেও মানুষ চোখ বুজে রাখে, জানতে চায়না, বুঝতে চায়না, এটা এমনই একটা ইস্যু।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক দরকারি আর গোছানো লেখা। আপডেট করলে আবারও পড়ব। শুভকামনা ঐ মানুষগুলোর প্রতি যদিও জানি শুকনো শুভকামনায় তাদের কিছুই আসে যায় না।

দেবদ্যুতি

selim এর ছবি

মোবাইল থেকে লেখা পড়ে কম্পিঊটারে বসলাম মন্তব্যের জন্য।
এরকম বিস্তারিত একটা লেখা লিখতে আপনাকে যেই পরিমান পরিশ্রম করতে হয়েছে, নিজের অল্পবিস্তর লেখালেখির অভ্যাস থেকে বুঝতে পারি। এরকম একটা লেখা পড়লে অনেক সময় লাগিয়ে পড়া সময় মনে হয় কাজে লাগলো। ভাল থাকুন। শিশু যৌনকর্মীদের নিয়ে লিখবেন বলেছেন, এরকম ভালো আরেকটা লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।

মাকশুম এর ছবি

বছরখানেক আগে একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম - "Whores' Glory"। তিন অধ্যায়ের এ ডকুর এক অধ্যায় বাংলাদেশের ফরিদপুরের যৌণপল্লি নিয়ে। বেশ ডিটেল এ কাজ করেছেন পরিচালক। এ লিখাটি আরও অনেক বেশী তথ্যপূর্ণ নিঃসন্দেহে। অনেক ধন্যবাদ রানা মেহের, পরিশ্রমী কাজটি করার জন্য।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

অসাধারণ তথ‌্যসমৃদ্ধ, অত্যন্ত পরিশ্রমী লেখা।

আর চোখ ভিজে এল কবিতাটা পড়ে।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ লেখা। অনেক কিছু জানতে পারলাম। এককালে এইডস নিয়ে একটা এনজিওর পক্ষ থেকে বেশ কিছুদিন কাজ করেছিলাম। তখন যৌনপল্লীর পরিবেশ এবং বাসিন্দাদের নিয়ে অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়েছিল। কষ্টসাধ্য এই লেখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

মিষ্টার জিরো এর ছবি

লিখাটির জন্য ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য আপু। অসাধারণ হয়েছে। অনেক কিছু জানার এবং শিখার মতো আছে এই লিখায়।

সত্যিই আমরা ভুলে যাই এরাও মানুষ। এদেরও স্বাভাবিক ভাবে বাঁচার অধিকার আছে। শুধুমাত্র একটি শব্দ এদের নামের পাশে বসিয়ে দিয়েই এদের অচ্ছুৎ বানিয়ে রাখা হয় সমাজে। ধিক আমাদের।
সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে যখন কোন যৌনকর্মী ধর্ষণের শিকার হলে তিনি তার ন্যায্য বিচারটুকুও পান।
বলার মত কোন ভাষা নাই আপু। সত্যি আমি নির্বাক।

নিটোল এর ছবি

লেখাটা একেবারে বাঁধিয়ে রাখার মতো। রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

_________________
[খোমাখাতা]

রানা মেহের এর ছবি

সেলিম, মাকশুম, প্রফেসর হিজিবিজবিজ, অনেক ধন্যবাদ আপনারদের পড়ার আর দয়ালু প্রশংসার জন্য।
Whores glory দেখা হয়নি, সত্যি কথা বলতে কী নামই শুনিনি। ধন্যবাদ এর কথা জানানোর জন্য। অবশ্যই দেখে ফেলবো তাড়াতাড়ি।

রুপক, আপনার অভিজ্ঞতাও লিখুন। যত বেশি লেখা আসে এই বিষয়ে তত ভালো।

জিরো, ধর্ষনের বিচার? তাদের প্রতি করা কোন অন্যায়েরই বিচার হয়না আর ধর্ষন। তোমার মনে আছে পুলিশ একবার ইয়াসমিন নামের একটা মেয়েকে ধর্ষন করে মেরে ফেলার পর প্রমান করার চেষ্টা করেছিল তিনি যৌনকর্মী ছিলেন? যেন যৌনকর্মী হলেই কাউকে ধর্ষন করা বৈধ।

নিটোল - থ্যাংকিউ ভাইয়া। সময় থাকলে এই লেখার রেফারেন্সগুলো পড়ে দেখবেন। কী রিচ সব! ওগুলো পড়লে এই লেখাকে আর কিছুই মনে হবেনা।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মিষ্টার জিরো এর ছবি

হ্যাঁ আপু মনে আছে। এমনকি আমি কিছুদিন নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ নিয়ে কিছু আইনের বইও পড়েছিলাম। এই বিষয়ের উপরে কিছু করার আগ্রহ আমার অনেক দিনের। এমনকি আমি ল'কলেজে ভর্তি হয়েছি শুধু এই বিষয়ের উপরে আইনি কাজ করবো বলে।
আসল কথা হচ্ছে, সেই বইগুলোতে কিছু মামলার উদাহরণ তুলে দেয়া হয়েছিল। কিভাবে মামলা পরিচালনা করা হয়েছে, কিভাবে এর সমাধান হয়েছে ইত্যাদি। দুঃখের বিষয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানে ৯৮% ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ধর্ষিতা নারীকে অপদস্থ করে আসামীকে রক্ষার জন্য আসামী পক্ষের উকিলের একমাত্র হাতিয়ার ছিল মেয়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা। কোন ভাবে যদি মেয়ের চরিত্রকে খারাপ প্রমাণ করা যায় বা যৌন কাজে লিপ্ত থাকার কথা প্রমাণ করা যায় তাহলে মামলাকে অনেকটাই হালকা করে দেয়া যায় বলে আসামী পক্ষের আইনজীবিরা মনে করেন।
এমন তথ্য দেখে আমার আক্কেল গুড়ুম অবস্থা হয়েছে। আর মনে মনে ভেবেছি, আইন আছে বলেই এর ফাঁক খোঁজার চেষ্টা বা এর অপব্যবহার আমরা কতো বাজে ভাবে করি।
এমনকি আমাদের দেশের স্বাক্ষ্য আইন অনুযায়ী- "কোনো লোক যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হয়,তখন দেখানো যেতে পারে যে,অভিযোগকারিনী সাধারণভাবে ‘দুশ্চরিত্রা রমনী’।" (ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া সম্পাদিত স্বাক্ষ্য আইন,১৮৭২ বইয়ের ৬৭৪ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা)

যদিও এই কথাগুলো আপনার লেখার সাথে সম্পুর্ণ ভাবে সংগতিপূর্ণ না। তবুও কথাটা না বলে পারলাম না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দারুণ একটা কাজ হয়েছে। স্যালুট।

নারী সপ্তাহের লেখাগুলো নিয়ে একটা ইবুক প্রকাশ হওয়া উচিত

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

কি পরিশ্রমী, দরকারি লেখা।

অনেক ধন্যবাদ

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

শুভ  এর ছবি

দরকারি লেখা এবং আই ওপেনিং একটা লেখা। রাজনৈতিক/ধর্মীয় বৈষম্যঃ কান্দাপাড়া এর ঘটনায় হত্যা এবং ধর্ষণের উল্লেখ আছে এখানে, যদিও রেফারেন্স বলে ধর্ষণ এবং অত্যাচার এর কথা। তথ্যবহুল লেখায় যেন সব তথ্যই সঠিক থাকে এই প্রত্যাশায় কমেন্টটি করা। হত্যা হয়ে থাকলে, রেফারেন্স দিলে ভালো হয়।

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

লেখাটা জরুরি ছিল। দায়িত্ববোধ আর মমতা না থাকলে হতো না, অল্প পরিসরে অনেক রেফারেন্স জড়ো করাটাও খুব কঠিন। রানাকে ধন্যবাদ।

একটু যদি দেখতেন- "ব্যবসার স্থান" অংশটিতে বাংলাদেশের বৃহত্তম রেডলাইট এরিয়া হিসেবে রাজশাহীর দৌলতদিয়া-র উল্লেখ করেছেন। দৌলতদিয়া আসলে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলাতে (বৃহত্তর ফরিদপুর এলাকায়)। খুব সম্ভবত ওদের ফেইসবুক পেইজও আছে বা ছিল।

তাহসিন রেজা এর ছবি

আপু হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি কি ঠিক দেখছি! এটা সত্যি নুশেরা'র মন্তব্য তো!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তাহসিন রেজা এর ছবি

অসাধারণ একটি লেখা।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

রানা মেহের এর ছবি

নজু ভাই, রিশাদ, তাহসিন রেজা,

অসংখ্য ধন্যবাদ। ইবুক তো হওয়াই উচিত। কতসব চমৎকার লেখা পড়ার সৌভাগ্য যে হয়েছে এই উপলক্ষ্যে।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

রানা মেহের এর ছবি

জিরো, সাক্ষ্য আইনের এই অংশটুকুর কথা শুনেছি কিন্তু সেভাবে জানা ছিলনা। এ তো ভয়াবহ কথা। এরকম ক্লসের ব্যাখ্যা কী? বইয়ে দেয়া আছে?

শুভ, অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার মনোযোগী পাঠের জন্য। ভুল শুধরে নিয়েছি। আসলে প্রথম যখন কান্দাপাড়ার কথা পড়ি তখন দেখেছিলাম উচ্ছেদের সময় ওখানে চার জন যৌনকর্মী মারা গিয়েছিলেন, পরে আর ঐ রেফারেন্স খুঁজে পাইনি। তাই লেখার সময় কোনভাবে মাথায় ঐটাই রয়ে গিয়েছিল।

নুশেরা, অনেক ধন্যবাদ এই দরকারী তথ্যটা ঠিক করে দেয়ার জন্য। এরকম জরুরী জিনিসে ভুল থেকে গেলে বাজে ব্যাপার হতো। পড়া আর সদয় প্রশংসার জন্য আবারো ধন্যবাদ।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মিষ্টার জিরো এর ছবি

ব্যাখ্যা বলতে যা বুঝায় তেমন কিছুই নেই সেখানে। মন খারাপ

তবে আশার কথা হচ্ছে, রাজধানীর কুড়িলে চলন্ত মাইক্রোবাসে আদিবাসী তরুণী ধর্ষণের ঘটনার পর প্রধান বিচারপতিসহ আইনজীবীরাও এ ধারাটি বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সাক্ষ্য আইনের ওই ধারাটিকে কালো আইন হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এটা সংশোধনের দাবি তোলা দরকার। আমাদের সাক্ষ্য আইন এতো ভালো। তবে এর কিছু ধারা আছে যা ঔপনিবেশিক চিন্তা-চেতনা প্রসূত। তখন জনগণের কথা চিন্তা করে এ আইন করা হয়নি। এই কালো বিধানগুলো আইন থেকে তুলে দেওয়া উচিত।
সাক্ষ্য আইনের এ ধারাটি উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, আমাদের আইনের এক জায়গায় বলা আছে, কারো চরিত্র নিয়ে কথা বলা যাবে না, প্রশ্নও করা যাবে না। কিন্তু নারী নির্যাতন মামলার সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪)-এ বলা আছে, ‘যদি কোনো নারী কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, তাহেলে সে নারীর চরিত্র নিয়ে কথা বলা যাবে’। তিনি আরো বলেছেন, 'একজন নারীর সম্ভ্রম নষ্ট হলো, তিনি বিচারপ্রার্থী। তার চরিত্র নিয়ে আসামি প্রশ্ন করবেন সবার সামনে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে?'

সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, 'বর্তমান সাক্ষ্য আইনে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আইনটি যুগোপযোগী করার কাজ অব্যাহত আছে। নতুন সাক্ষ্য আইনের সুপারিশে এ ধারাটি থাকবে না। ইতোমধ্যে ধারাটি আমরা বাদ দিয়ে দিয়েছি।

জেবা এর ছবি

রানা, কয়েকদিন মিলিয়ে তোমার পুরো লেখাটা পড়লাম। এরকম তথ্যপূর্ন লেখা বাংলা ব্লগে আর পড়েছি কিনা মনে করতে পারছিনা। অনেক আদর নিও।

একটা জিনিস বুঝতে পারলামনা তুমি একঅই রেফারেন্স কয়েকবার ব্যবহার করেছো কেন? একটা রেফারেন্স পড়লেইতো বাকি তথ্য পাওয়ার কথা। এতে তোমারও পরিশ্রম কম হতো আর কয়েক জায়গায় ফরম্যাট ভেঙ্গে গেছে দেখলাম , ওগুলো ঠিক করে নিও। কয়েক জায়গায় বাক্যের গঠন সুন্দর হয়নাই, ওগুলোও দেখ। যৌনপল্লীর শিশুদের নিয়ে লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

রানা মেহের এর ছবি

জিরো - এই বিষয়ে কোন আপডেইট পেলে জানিও অবশ্যই।

অনেক ধন্যবাদ জেবা আপা সময় বের করে পড়ার জন্য।
আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর এক এক করে দেই।

১) একই রেফারেন্স ব্যবহার করেছি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে। এক জায়গায় রেফারেন্স থাকলেই সেটা সবাই পড়বেন এরকম না। যার যেই টপিকে জানার আগ্রহ তারা সেই টপিকের রেফারেন্স পড়বেন। আর তথ্য দিলেতো তথ্যসুত্র দিতেই হবে তাই একই লেখা কয়েকবার ব্যবহার করেছি।

২) ফরম্যাট ভেঙ্গে যাওয়া সম্ভবত কোন একটা বাগ। অনেক চেষ্টা করেও ভেঙ্গে যাওয়া ফরম্যাটগুলো ঠিক করতে পারিনি। অথচ বাকিগুলো ঠিকই আছে।

৩) আমি পুরো লেখাটা রিভাইজ করিনি আর লেখা শেষ হবার পর, ক্লান্ত লাগছিল এত বড় লেখা পড়ে। হাতে একটু সময় পেলেই পুরো লেখাটা নিয়ে বসবো।

৪) যৌনপল্লীর শিশুদের নিয়ে লেখা আসবে কিনা এখন আর নিশ্চিত নই, তবে চেষ্টা করবো।

আবারো ধন্যবাদ আপা এত মন দিয়ে পড়া আর সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।