আমাকে শুদ্ধ করতে চাও কে গো তোমরা?

রেজওয়ান এর ছবি
লিখেছেন রেজওয়ান (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/১২/২০১০ - ৪:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পৃথিবীর যাবতীয় অনাচারের অধিকাংশ হয়েছে আত্মগরিমা ও নিজের মতবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। অনেকে মনে করেছে তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন জাতি নেই তাই তাদেরই দেশ দখল করে বিশ্ব শাসন করা উচিত। আবার অনেকে মনে করেছে তাদের মত মানবতাবাদী (?) বিশ্বে বিরল তাই তারা তাদের মানবতাবাদ বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বে। কেউ কেউ মনে করে তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্মের ধারণকারী, কাজেই অন্যদের নীচু করে দেখে তাদের দাবিয়ে রাখাটাই জায়েজ। এদের রোষানলে পরে সব সময়ই নির্যাতিত হচ্ছে সংখ্যালঘুরা, নির্মম ভাবে।

এই ২০১০ সালে আমি বিশ্বের বুকে এমনই এক অনাচারের বিস্তার দেখে স্তম্ভিত। কারেক্টিভ রেপ বা শোধক ধর্ষণ নামে একটি প্রথা চালু হয়েছে একবিংশ শতকে যা দক্ষিণ আফ্রিকায় অনাচারের পাহাড় তৈরি করছে। সমকামী নারীদের ধর্ষণ করলেই তারা শুদ্ধ সম্ভোগের স্বাদ পাবে এবং পরিশুদ্ধ হয়ে সাধারণ যৌন জীবন যাপন করবে এমন ধারণা একদল লোকের। তাদের মতে এইসব সমকামীদের সত্যিকারের আফ্রিকার নারী বানানোর এই সুযোগ।

এক রিপোর্ট জানাচ্ছে যে ওয়েস্টার্ন কেপের ৮৬ ভাগ সমকামী নারী ধর্ষণের ভয়ে ভীত। এই ধরণের আক্রমণের শিকার দক্ষিণ আফ্রিকার মহিলা ফুটবল দলের তারকা ইউডি যাকে ২০০৯ সালে গণধর্ষণের পর মেরে ফেলা হয়।

প্রতি বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫০০র ও বেশী সমকামী মহিলা শোধক ধর্ষণের শিকার হচ্ছে এবং ৩০ জনকে মেরে পর্যন্ত ফেলা হচ্ছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিচার ব্যবস্থা এই শোধক ধর্ষণকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে স্বীকার করে না। ফলে এইসব ধর্ষণকারী স্বল্প জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ধর্ষণের জন্যে পুরুষদের এমন অজুহাতের কমতি নেই। নেলসন ম্যান্ডেলার দেশের কতিপয় লোকেরা জিম্বাবুয়ে থেকে পলায়নরত উদ্বাস্তুদের ধর্ষণ করতেও পিছপা হয় না। হায়, কে কাকে শোধরাতে আসে!

বুসিসিওয়ে সিগাসা নামে দক্ষিণ আফ্রিকার একজন কবি আর ব্লগার ধর্ষিত হওয়ার ছয় মাস পরে ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে জানতে পারেন যে তার দেহে এইচআইভি ভাইরাস ঢুকেছে।

এখানে রয়েছে তার দু:খের কাহিনীর কিয়দংশ, যা তিনি তার ব্লগ মাই রিয়ালিটিজ এ লিখেছেন:

বেশী দিন হয়নি জানতে পারলাম যে আমি এইচআইভি তে আক্রান্ত। আমি অনেক বেশীবার আক্রান্ত আর ধর্ষিত হয়েছি যার ফলে এই ভাইরাসে আমি আক্রান্ত হয়েছি। কারণ হল যে আমি একজন নারী যে নিজেকে সমকামী বলি একজন মহিলার সাথে আমার সম্পর্কের কারনে। আমাকে আক্রমণকারী আর বিভিন্ন ধর্ষক পুরুষরা এমন করেছে আমাকে বোঝানোর জন্য যে নারী হওয়ার আসল মানে কি।

বুসি এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচতে পারেন নি যেহেতু তিনি ২০০৭ সালের মার্চ মাসে রোগে ভুগে মারা যান। কিন্তু তার ব্লগ আর কবিতা তার জীবনের প্রতি এই অবিচারের শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে রয়ে গেছে।

জুলুমের শিকার এইসব নারীদের কথা লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাদের ছবি নিয়ে প্রদর্শনী হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্যে। আপনারা চাইলে চেন্জ.অর্গের এই পিটিশনটি সাইন করতে পারেন।

বুসির ছবি জানেলে মুহলি আর এলেন আইজেনমানের সৌজন্যে


মন্তব্য

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

.....................

সাইন করলাম।

দ্রোহী এর ছবি

একাত্মতা প্রকাশ করলাম।

পিটিশন সাইন করলাম।


কাকস্য পরিবেদনা

অতিথি লেখক এর ছবি

সাইন করলাম। -রু

অতিথি [অতিথি] এর ছবি

একাত্মতা জানালাম

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যে কোন অজুহাতে করা যে কোন ধর্ষণ সমর্থনের অযোগ্য। একজন মানুষ সমকামী হন আর বিষমকামীই হন, তাকে ধর্ষণ করার পেছনে কোন যুক্তি বা কোন মহৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারেনা। ধর্ষণকারীর কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এই অপরাধপ্রবনতাকে হ্রাস করতে পারে।

চেঞ্জ.অর্গ-এর উদ্যোগের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে একটা প্রশ্ন করতে চাই। সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের কঠিন অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য পিটিশন সাইন করার মতো সুশীল পদ্ধতি কি কোন কাজের পদ্ধতি? সরকার সুশীল হলেতো এসবের কোন দরকারই হত না। আজ পর্যন্ত এধরনের কোন পিটিশন আদৌ কোন ফল বয়ে আনতে পেরেছে?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রেজওয়ান এর ছবি

আপনি ঠিক ধরেছেন। পিটিশন কাজ হয়েছে এমন জানা নেই। তবে এটি বিশ্বব্যাপী জনগণকে একাত্মতা প্রকাশ করার একটি সুযোগ দেয়। এর চেয়ে বেশী কার্যকরী এ নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ বা স্থানীয় দক্ষিণ আফ্রিকার দুতাবাসে প্রতিবাদ লিপি প্রেরণ। সেসব না করে পিটিশন করেই ক্ষান্ত থাকা একটি সুশীল প্রয়াস বটে।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

একাত্নতা।

---আশফাক আহমেদ

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সাথে আছি!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

...... ...... ......

'জলিল সাহেবের পিটিশনে' সাক্ষর করলাম।

_________________________________________

সেরিওজা

অদ্রোহ এর ছবি

সাথে আছি।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু বন্ধু আছে, তাদের থেকে আর নেট পড়ে এই ঘৃণ্য চর্চাটির সম্বন্ধে অনেক কথা শুনেছি। সাইন করে এলাম।

নৈষাদ এর ছবি

কী অবস্থা!!

রেজওয়ান এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাদের মন্তব্যের জন্যে।

একদা ফেনী থেকে ফেরার পথে বাসের সহযাত্রী হলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকুরীরত এক সৈনিক। তিনি বর্ণনা দিচ্ছিলেন সেই শান্তিবাহিনীর সময় আদিবাসীদের প্রতি কিরকম অত্যাচার হয়েছে। তাদের কমান্ডিং অফিসার সেনাবাহিনীর মেজর সৈনিকদের নির্দেশ দিল একটি গ্রাম রেইড দেবার সময় - আমি চাই এই গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে বাঙ্গালীর বাচ্চা পয়দা হবে।

এই রকম শুদ্ধিকরণ আমাদের সমাজেও কি কম? ভবিষ্যৎে এমন অনাচার যাতে না ঘটে তাই সবারই সোচ্চার হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্যাতিতদের জন্যেও তাদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ ও অনলাইনে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া জরুরী।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

সংহতি।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অস্পৃশ্যা এর ছবি

বাকরুদ্ধ! মন খারাপ
পশুদের ধরণ সব জায়গায়ই একইরকম......মন খারাপ
http://bdnews24.com/bangla/details.php?id=145075&cid=2&aoth=1

নাশতারান এর ছবি

নিজেদের সীমাহীন ক্ষুধা মেটানোর আরেক সৃজনশীল কৌশল!

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

সংহতি।

সাইন করলাম।

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা শব্দই আমি শুধু উচ্চারণ করছিলাম বারবার। -- 'মাইগড'
এও কি সম্ভব?

সাত্যকি

শেহাব [অতিথি] এর ছবি

মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল...

sadeeq এর ছবি

I hope and pray that, these animals behind the human faces and bodies get there due punishment.

Making a pitition is not enough, each and everyone of them should be hunt down and exempolary punishmnet should be given to each of them.

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এক কানা কয় আরেক কানারে
চল এবার ভব পারে
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে টানে বারে বার...
এসব দেখি কানার হাট বাজার!
[সাঁইজীর গান]
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দিগন্ত বাহার [অতিথি] এর ছবি

সাথে আছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।