অলখ আমেরিকা - লোকটা আসলে কে ছিল?

সাইফ শহীদ এর ছবি
লিখেছেন সাইফ শহীদ (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/১১/২০১০ - ৭:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি তখন ক্যালিফোর্নিয়ার ছোট এক শহরে এক রেস্টুরেন্টে চাকরী করি। আমার কয়েকজন প্রকৌশলী বন্ধু, যারা বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর পর চলে এসেছে আমেরিকাতে, তারা মিলে এই রেস্টুরেন্ট এবং আরও কয়েকটি রেস্টুরেন্টের মালিক। এদের মধ্যে এক জন পিএইচডি ডিগ্রীধারী এবং অন্য একজন এক বড় মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানীতে ডিরেক্টর পদে আসিন ছিল। আমি আমেরিকাতে এসেছি শুনে তারাই আমাকে ডেকে নিউ ইয়র্ক থেকে ক্যালিফোর্নিয়া নিয়ে এলো। তারা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যখন এই কাজ করতে নেমেছে - আমিও রাজী হলাম তাদের সাথে যোগ দিতে। ভাবলাম, দেখি না নতুন এক অভিজ্ঞতা হোক।

আমি তখন সান বার্নাডিনো শহরে থাকি। সেখান থেকে ৪০ মাইল দূরের শহরে আর একটা রেস্টুরেন্ট ছিল এদের। সেখানকার ইটালিয়ান-আমেরিকান জেনারেল ম্যানেজার ছুটিতে গেলে আমার উপর দায়িত্ব পড়লো সেই রেস্টুরেন্টটা ম্যানেজ করার। তখন আমি একা থাকি আমেরিকাতে। আমার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে সবাই ভিসার অপেক্ষাতে ঢাকাতে তখন। ফলে বন্ধের দিনে বা অতিরিক্ত সময় কাজ করতে আপত্তি করতাম না। ঐ রেস্টুরেন্টটা ছিল একটা বেশ বড় 'শপিংমল'-এর ভিতরে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকতো 'শপিংমল'টি। রেস্টুরেন্টটা খোলা থাকতো সকাল ১১টায় থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। সকালে আরও ২ ঘন্টা আগে এসে, অর্থাৎ ৯ টার সময় এসে আমাকে খুলতে হতো রেস্টুরেন্টটা। দূরত্বের কারনে আরও এক ঘন্টা আগে আমাকে সান বার্নাডিনো থেকে রওয়ানা দিতে হতো। রাতে ১০টার পর আর অর্ডার নেওয়া হতো না, কিন্তু যারা ইতিমধ্যে অর্ডার দিয়েছে তারা তাদের ইচ্ছা মত অপেক্ষা করতে পারতো খাওয়া শেষ করার জন্যে। গ্রাহকরা চলে যাবার পর আরও ঘন্টা খানেক লাগতো সব কিছু গুছিয়ে পরিস্কার পরিছন্ন করে রাখতে। এ সব কাজের তদারকি শেষে সব কর্মচারী চলে যাবার পরও আমাকে আরও কিছুক্ষণ থাকতে হতো। সারা দিনের আয়-ব্যায়ের হিসাব নিকাশ করে, টাকা-পয়সা গুনে ডিপোজিট ব্যাগে ভরে সেইফের মধ্যে ঢুকিয়ে, সেইফ বন্ধ করে বের হতে হতে বেশ রাত হয়ে যেত। অধিকাংশ দিন কাজ শেষে বের হয়ে দেখতাম মধ্য রাত পার হয়ে গেছে। দিনের বেলার ব্যস্ত শপিংমল তখন একেবারে ফাকা। কাউকে কোথাও দেখা যেতো না। এমনিতে যে কোন ছোট শহরে সাধারনত রাতে খুব কম লোক জন দেখা যায় বাইরে। রাতে ফেরার পথে একাকী পাহাড়ী রাস্তায় গাড়ী চালাতে ভালই লাগতো। এখন ভাবি - কত বোকা ছিলাম আমি। কত আপদ বিপদ হতে পারতো ঐ সব নির্জন পাহাড়ী রাস্তায় অত রাতে গাড়ী চালাতে যেয়ে।


বাড়ীর সামনে আমার ৩২ বছরের পুরানো পন্টিয়াক গাড়ী ঝরাপাতার মতই যার অবস্থা

আমেরিকাতে এসে আমার প্রথম কেনা গাড়ীটি হচ্ছে তখনকার ২০+ বছরের পুরানো একটা গাড়ী - 'পন্টিয়াক গ্রান্ড প্রিক্স' - ১৯৭৭ সালের মডেল। তখন দাম পড়েছিল মাত্র ৭০০ ডলার (বাংলাদেশের ৪০ হাজার টাকার মত)। এটি ছিল আকারে বড় এবং যতেষ্ঠ আরাম দায়ক গাড়ী। তবে এক গ্যালন (আমেরিকান) গ্যাসে (পেট্রলে) ৮-১০ মাইলের বেশী যেত না। আমার যাওয়া-আসার গ্যাসের খরচ কোম্পানী থেকে পেতাম, তাই এই অত্যাধীক খরচটা নিয়ে তখন মাত্থা ঘামাতে হয়নি। তখনকার দিনের ৮-ট্রাকের সীমাহীন লুপের ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল গাড়ীতে লাগানো। অটোমেটিক ড্রাইভ এবং ক্রুজ কন্ট্রোল ছিল। আমি অটো-ক্রুজে গাড়ী সেট করে প্যাডেল থেকে পা সড়িয়ে দিয়ে আরাম করে গান শুনতে শুনতে এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে গাড়ী চালাতাম। ফেরার রাস্তায় প্রায় সবটা পথ ঢালুতে নেমে গেছে। রাস্তায় তেমন আলো ছিল না। বেশ মজা লাগতো যখন এক হাত দিয়ে স্টিয়ারিং ধরে 'সার্প-টার্ন' গুলি অতিক্রম করতাম।

এক দিন সকালে কাজে আসার সময় মেঘ ও বৃষ্টির মধ্যে বাধ্য হলাম গাড়ীর হেড লাইট জ্বেলে প্রায় সারাটা পথ অতিক্রম করতে। যখন আমার গন্তব্যে পৌঁছিয়েছি তখন দেখি সেখানে খটখটে রোদ। ফলে নজরে পড়ল না যে হেড-লাইট তখনো জ্বলছে। এমনিতে কয়েক মিনিট বেশী লেগেছে আজ বৃষ্টির জন্যে। ফলে পার্কিং লটে গাড়ী রেখে প্রায় দৌড়ে এলাম রেস্টুরেন্টে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ কর্মচারীরা এসে বাইরে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। লজ্জ্বা পেলাম দেরী হওয়াতে। ভিতরে ঢুকে সবাই তাড়াহুড়া করে যার যা কাজে লেগে গেলাম। নানা কাজের মধ্যে খুব দ্রুত পার হয়ে গেল দিনটি। কাজের শেষে যখন সবাইকে বিদায় দেবার পর সিকিউরিটি এলার্ম সেট করে রেস্টুরেন্ট থেকে বাইরে বের হলাম তখন রাত সাড়ে-বারোটা বেজে গেছে। হেমন্তের ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাছে। আকাশে ক্ষয়া চাঁদ। সম্পূর্ণ এলাকাতে আমি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন প্রানীর সাড়া শব্দ নেই। বিরাট পার্কিং লটে শুধু আমার পন্টিয়াক ছাড়া আর কিছু নেই। অন্য দিন সাধারনত এদিক ওদিক একটা দুইটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাড়ী দেখি। কিন্তু আজ সম্পূর্ণ গাড়ী শুন্য এই এলাকা। একটু গা-কাঁপানো বাতাস বয়ে গেল। মনে হলো কেউ যেন আমার ঘাড়ে আস্তে করে ঠান্ডা নিশ্বাস দিচ্ছে। কোটের বোতাম গুলি লাগিয়ে নিলাম। গাড়ীর কাছে এসে পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। ইশ, কি ঠান্ডা হয়ে আছে গাড়ীর ভিতরটা। চাবি ঘুরিয়ে স্টার্ট দিতে যেয়ে দেখি, গাড়ী সম্পূর্ণ মৃত। তখন মনে পড়লো সকালের কথা। চট করে হাত দিয়ে দেখলাম - ঠিকই, হেড লাইটের সুইচ এখনও অন হয়ে আছে।

গাড়ী থেকে নেমে এসে হুড উচু করে দিলাম। ভিতরে তাকালাম। কি আশা করছিলাম? এক্সট্রা ব্যাটারি আছে কিনা? বুঝলাম - সারা দিনের কাজের ধকলের পর মাথা ঠিক মত কাজ করছে না। কি করতে পারি এখন? গাড়ীর ভিতরে শুয়ে কাটিয়ে দেব রাতটা, তারপর সকাল হলে দেখা যাবে কি করা যায়? কিন্তু যা ঠান্ডা পড়া শুরু হয়েছে, গাড়ীর ভিতরে শুয়ে থাকলে জমে যেতে হবে।

পকেট হাতড়ে দেখলাম মাত্র ১২ টি টাকা অর্থাৎ ডলার সাথে আছে। তখনো আমি নতুন আমেরিকাতে। কোন ক্রেডিট কার্ড নেই। এমন কি সেল ফোনও নেই। এক যুগ আগে তখনো অতটা চালু হয়নি সেল ফোন, ফলে তাদের দামও বেশী। আর তাছাড়া ফোন থাকলেও বা কি হতো? কাকে বলতাম সাহায্য করার জন্যে? আমার স চাইঅতে কাছের বন্ধুরাও প্রায় ১০০ মাইল দূরে থাকে। এই গভীর রাতে কাউকে এমন অনুরোধ করার চিন্তাও বাতুলতা।

কাছাকাছি কোন হোটেল বা মোটেল দেখেছি বলে মনে পরল না। ৩/৪ মাইল দূরে মনে হয় একটা মোটেল দেখেছিলাম। এই শীতের রাতে ঠান্ডার মধ্যে যদি হেটে যেয়ে পৌছাতে পারি সেখানে - অগ্রিম টাকা চাইবে থাকতে চাইলে। ১২ ডলারে চলবে না। কি করি তা হলে?

রেস্টুরেন্টে ফিরে যেতে পারলে মন্দ হত না। বসার বেঞ্চে কোন মতে বাঁকা হয়ে শুয়ে হয়তো রাতটা কাটিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু সিকিউরিটি এলার্ম সেট করে দিয়ে এসেছি। এই রাতে ফিরে যেয়ে দরজা খোলা মাত্র সিকিউরিটি এলার্ম বেজে উঠবো। ফোন করে তাদেরকে বোঝাবার আগেই হয়তো পুলিস চলে আসবে। এখানকার পুলিসদের খুব কাছে না আসাই ভাল। অনেক সময় শুনেছি, তারা আগে গুলি ছোড়ে, তারপর প্রশ্ন করে।

- কোন সাহায্য লাগবে? - হতচকিত হয়ে গেলাম হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে।

তাকিয়ে দেখলাম আমার গাড়ীর পাশে একটা ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে আর তার ড্রাইভিং সিটে বসা এক ভদ্রলোক আমাকে এই প্রশ্নটা করেছেন। খুবই অবাক হলাম। কখন এল ভ্যানটা? আমিতো কোন গাড়ী আসতে দেখেছি বলে মনে পড়ল না। সম্পূর্ণ ফাঁকা জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছি আমি। কোন গাড়ি এলে তো আমার দেখতে না পাবার কথা নয়। তবে কি আমি নিজের চিন্তার মধ্যে এতই নিমগ্ন ছিলাম যে বাইরে কি হচ্ছে তা একেবারে খেয়াল করিনি?

- আমার গাড়ীর ব্যাটারী সম্পূর্ণ মৃত। - প্রশ্নের উত্তরে বললাম আমি।

- কোন অসুবিধা নেই। আমার কাছে জাম্পার কেবল আছে।

গাড়ী থেকে নেমে এসে ভ্যানের পেছনের দরজা খুলে জাম্পার কেবল বের করে আনলো লোকটি। আমার গাড়ীর হুড খোলাই ছিল, এবার লোকটি তার ভ্যানের হুড খুলে কেবলের এক প্রান্ত তার গাড়ীর ব্যাটারীতে লাগালো এবং অন্য প্রান্তের তার দু'টি আমার গাড়ীর ব্যাটারীতে লাগাল। তার গাড়ীর ইঞ্জিন চালু রেখেই আমার গাড়ীর ব্যাটারী চার্জ করা শুরু করে দিল। এর ফলে তাকে গাড়ীর ভিতরে ঊঠে পা দিয়ে এক্সেলেটর পেডেল চেপে ধরে থাকতে হলো। আমি তখনও আমার গাড়ীর পাশে আগের মতই দাড়িঁয়ে আছি। যদি অযাচিত ভাবে এই লোকটার সাহায্য না পেতাম, তাহলে যে আমি কি করতাম তা এখনো ভাবতে পারছি না।

মিনিট পাঁচেক চার্জ করার পর লোকটা আমাকে গাড়ীতে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট হয় কিনা দেখতে বললো। পন্টিয়াকের বড় ভি-৮ ইঞ্জিন। একবার একটু গো গো আওয়াজ করে চুপ করে গেল।

- চিন্তা কোর না, আধা ঘন্টা চার্জ করতে পারলে ঠিকই জেগে উঠবে তোমার গাড়ীর ইঞ্জিন।

অবাক হলাম এই লোকের বদান্যতা আর সম্পূর্ণ অচেনা লোকের প্রতি এতটা সহানুভুতি দেখে। আমেরিকানরা কি সবাই এমন ভাল? অপরকে সাহায্য করতে মধ্য রাতে এই ভাবে এগিয়ে আসে?

আমার পরিচিয় দিলাম তাকে। বললাম, যে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার আমি, তার নাম। নাম শুনে চিনলো।

- তোমাদের রেস্টুরেন্টের অনেক সুনাম এই শহরে। বিশেষ করে তোমাদের 'বেবী ব্যাক রিব'-তো পৃথিবী খ্যাত।

- হ্যাঁ, ঠিকই বলেছো। পৃথিবীর অন্য কয়েকটি দেশেও আমাদের রেস্টুরেন্ট আছে - অবশ্য ভিন্ন মালিকানার অধীনে।

- তাই? কোন কোন দেশে আছে?

- আমার জানা মতে ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে আছে, এমনকি এশিয়ার থাইল্যান্ডেও আছে।

- আমি অবশ্য কখনো তোমাদের রেস্টুরেন্টে খাইনি। এবার তাহলে তো একবার যেতে হয়।

- নিশ্চয়। তুমি আবশ্যি করে আসবে এবং আমার অথিতি হিসাবে। এটুকু মিনিমাম করতে দাও আমাকে। চিন্তা করে দেখো, এই রাতে তুমি আমাকে সাহায্য করতে না এলে কি অবস্থা হত আমার।

- হ্যাঁ, আসবো। কোন এক দিন নিশ্চয় এসে খেয়ে যাব তোমার রেস্টুরেন্টে। এখন আবার চেষ্টা করে দেখো, স্টার্ট হয় কিনা।

আবার গাড়ীতে উঠে এবার আমার স্ত্রীর শেখানো পন্থা অনুসারে প্রথমে তিনবার 'কুল-হু-আল্লাহ' পড়ে নিজের বুকে ফু দিলাম। তারপর গাড়ীর চাবি ঘোরাতেই প্রথমে একটু কাশি দিয়ে ইঞ্জিন চালু হয়ে গেলো। সামান্য একটু চাপ দিয়ে ধরে রাখলাম এক্সিলেটর - যাতে একেবার আইডল স্পীডে থাকলে ইঞ্জিন বন্ধ না হয়ে যায়, আবার একটু বেশী গ্যাস যেয়ে ইঞ্জিন যেন আবার থমকে বন্ধ না হয়ে যায়। খুব আস্তে করে হাতের সীফট স্টিক ড্রাইভে দিয়ে আস্তে করে গাড়ী চালানো আরম্ভ করলাম। ওই লোকটাকে বিদায় জানাবার জন্যে হাত উচু করে তার ভ্যানের দিকে তাকিয়ে দেখি লোকটা বা ভানের কোন চিহ্ন নেই। কখন যে সে তার গাড়ী নিয়ে এখান থেকে চলে গেছে জানতেও পারিনি আমি। এদিক-ওদিক তাকালাম কোন গাড়ীর আলো বা চিহ্ন দেখা যায় কিনা দেখার জন্যে। আশ্চর্য, কোন সাড়া-শব্দ ছাড়া কি ভাবে চলে গেল সে এখান থেকে। হতে পারে আমি নিজের ব্যাপারে এতটা নিবিষ্ট মনে ব্যস্ত ছিলাম যে খেয়াল করতে পারিনি কখন সে তার গাড়ী স্টার্ট দিয়েছে।

শপিংমলের এলাকা থেকে বের হয়ে ফ্রি-ওয়ে ধরলাম। এক দম ফাঁকা রাস্তা। আর কোন গাড়ী দেখছি না। আল্লাহ আল্লাহ করে চালাতে লাগলাম গাড়ী। এই রাস্তায় যদি কোন কারনে আবার গাড়ী থামে তবে এবার আর সাহায্য করার লোক পাবো না। আমি গাড়ীর হেড লাইট না জ্বালিয়ে, শুধু সাইড লাইটগুলি অন করে চালাতে লাগলাম। একটু পরে পাহাড় ধরে নামার রাস্তা আকাবাকা পথে রূপান্তরিত হল, ফলে বাধ্য হলাম ভয়ে ভয়ে হেড লাইট জ্বালাতে।

হাতের ঘড়িতে দেখলাম ইতিমধ্যে রাত ১টা বেজে গেছে। আরও ৪০-৫০ মিনিট লাগবে আমার গন্তব্যে পৌঁছাতে। মনে মনে নিজের ভাগ্য দেবতাকে ধন্যবাদ দিলাম। ওই লোকটার কথা চিন্তা করতে গিয়ে হঠাৎ মনে প্রশ্ন আসলো - আচ্ছা কে ছিল ঐ লোকটা? আগে কখনো দেখিনি তাকে। এত গভীর রাতে কি করতে বেড়িয়েছিল সে? কোথা থেকে আসলো এবং কোথায় গেল লোকটা? সব কিছু যেন কেমন একটা রহস্যে ঘেরা। আসলেই কি কোন মানুষ ছিল লোকটি, নাকি মানুষবেশী অন্য কিছু? 'গার্ডিয়ান এঞ্জেল'-দের অনেক গল্প শুনেছি - তেমন কিছু কি হতে পারে না? এই সব চিন্তা করতে করতে শেষ পর্যন্ত রাত ২টার কিছু পরে যেয়ে পৌছালাম আমার এপার্টমেন্টে। ভীষন ক্লান্ত লাগছিল শরীর। জামা-কাপড় বদল না করেই ওই ভাবে শুয়ে পড়লাম বিছানায়।

পর দিন সকালে আবার কাজে যাবার পথে রাতের কথা চিন্তা করে মনে মনে হাসলাম। দূর - এই সব এঞ্জেল-ম্যাঞ্জেল বলে কিছু আছে নাকি? আমি নিশ্চিত ছিলাম যে এক দুই দিনের মধ্যে লোকটাকে আমার রেস্টুরেন্টে দেখবো - ফ্রি খেতে এসেছে।

না, জীবনে আর কখনো দেখা হয়নি লোকটার সাথে। এখন ভাবি - আসলে কে ছিল সেদিনের সেই লোকটি??


মন্তব্য

পড়াচোর এর ছবি

আপনার গাড়িটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে....এরকম অভিজ্ঞতার গল্প আমি আগেও পড়েছি...মজার ব্যাপার হলো, কেউই পরে আর উপকারীকে দেখেনি আপনার মত।

সাইফ শহীদ এর ছবি

পড়াচোর,

আপনার গাড়িটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে....
কিনতে চাও? এখন কিন্তু বেশী দাম দিতে হবে...

যেখানে আমার অন্য গাড়ীগুলিকে একবার 'এমিশন টেষ্ট' করালে দুই বছরের মধ্যে আর করাতে হয়না, সেখানে এই পন্টিয়াককে প্রতি বছর এমিশন টেষ্ট করাতে নিতে হয়। গত বছর 'কানের পাশ থেকে কেটে যেয়ে' টেষ্টে পাশ করেছে। এ বছর কি হয় কে জানে।

সারা বছর একবারও চালানো হয়নি। গতকাল স্টার্ট দিতে যেয়ে দেখি ষ্টার্ট নিচ্ছে না। আমার অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কোন বিদ্যায় এখন আর কাজে আসছে না দেখতে পাচ্ছি।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

এমিশন টেস্টে ফেইল করলে কি সোজা জাঙ্ক ইয়ার্ড? আপনাকে কোন খরচ কি দেবে কোন ইয়ার্ড মালিক কিনে নেবার জন্যে? নাকি এটা সরকারিভাবেই বাআতিল মালে চলে যাবে?

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

এ ধরণের অভিজ্ঞতা আমার দুবার হয়েছে, তাই অযাচিত ভাবেই উত্তরটা দেই, আমার প্রথম গাড়ির ট্রান্সমিশন (গিয়ার বক্স) মারা গেলে গাড়ি টো করে বেন্চমার্ক ট্রান্সমিশনে নিয়ে যাই, তারা ২৫০০ ডলার চাইলে আমি বলতে বাধ্য হই যে, দাদা, গাড়িও এত দামে কিনিনি। জান্ক ইয়ার্ডে নিলে তারা ৫০-১০০টাকা দিবে, তারপর সব ভালো পার্টস বিক্রি করবে মনের সুখে। যদি ডোনেট করি, তাহলেও আমাকে টো করার খরচ দিতে হবে, ৩য় পথ ছিল ঐ দোকানের বেটাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া, তাতে আমার টো করানোর ১২০-১৫০টাকা বেচে যায়। নগদ নারায়ণ খসানোর ঝামেলায় আর যাইনি মন খারাপ

কপাল খারাপ থাকলে যা হয়, গত বছর আবার একই ঘটনা ঘটে, বাসা থেকে ৮০ মাইল দূরে আমার গাড়ির কুলিং সিস্টেম বার্স্ট করে, সেই গাড়িও আমাকে সেই গ্যারাজে ফেলে আসতে হয়েছে, ৩০০ ডলার খরচ করে ঐ গাড়ি ফেরৎ আনা অর্থহীন ছিল। জাংক ইয়ার্ড ও খুব বেশি অফার করত না যা দিয়ে আমি টো করানোর খরচ উঠাতে পারব।

আর এমিশন টেস্ট ফেল মারলে কিছু জিনিস পাল্টে সেটাকে আবার দাড় করানো সম্ভব। কিন্তু পুরা ব্যাপারটা নির্ভর করবে আপনে কতটা পথ হেটে পথিক হতে চান চোখ টিপি
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সাইফ শহীদ এর ছবি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার,

এমিশন টেস্টে ফেইল করলে কি সোজা জাঙ্ক ইয়ার্ড?
এখানে নিয়মটা হচ্ছে "এক বার না পারিলে দেখ শতবার" [শতবার কিনা জানি না, তবে একাধীক বার সুযোগ পাওয়া যায় টেষ্ট পাশ করার জন্যে]। টেষ্টের জন্যে ১৫ থেকে ২০ ডলারের মত লাগে প্রথম বার। তারপরে একটু ডিস্কাউন্ট পাওয়া যায়। এক বা দুই বার পাশ না করলে এদের সরকারী অফিসে নিয়ে যেয়ে ফ্রি টেষ্ট করানো যায়। সেখানে ফেল করলে চাইলে তারা এক বছরের এক্সটেনশন দেয়। সাধারনত একবারের বেশী এক্সটেনশন দেওয়া হয় না। আমি ইতিমধ্যে দুই বার আলাদা আলাদা ভাবে এক্সটেনশন নিয়েছিলাম।

টেষ্ট করে মেশিনের কম্পুউটার, ফলে বাংলাদেশী স্টাইলে 'ধানাই-পানাই' করার সুযোগ নেই। দেখি এই শনিবার কারবুরেটর ফ্লাস করতে পারি কিনা। আজকালকার গাড়ীতে কারবুরেটর থাকে না। ফলে এখনো খুঁজে বের করতে পারিনি কোথায় কারবুরেটরটা। আজ এক সহকর্মী জানালো এয়ার ফিল্টার খুললে তার নীচে দেখা যাবে এটি।

এখানে (এবং প্রায় সব স্থানে) 'এন্টিক গাড়ী' সংগ্রহকারীদের ক্লাব আছে। তারা বেশ টাকা খরচ করে গাড়ী 'রিস্টোর' করে। আমার বহু দিনের ইচ্ছা - কিছুটা সময় হাতে পেলে আমি নিজে থেকে এই গাড়ী 'রিস্টোর' করতে লেগে যাবো।

এ ছাড়া আমেরিকাতে এসে এটা আমার প্রথম গাড়ী। প্রথম প্রেমের মত সহজে ভোলা যায় কি?

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

কত সালের পন্টিয়াক গ্র্যান্ড প্রি, এক্সাক্ট ট্রিম এবং এঞ্জিনের সাইজ দিলে ফ্যাক্টরি সার্ভিস ম্যানুয়াল খুঁজে দেখতে পারি। তাছাড়া DIY ফোরাম থাকেই কমবেশি, সেখানে খুজে দেখতে পারেন, ১৯৭৩ এর ক্যাডিলাক এল্ডোরাডো চালিয়েছিলাম একবার, বারো সিলিন্ডারের গাড়ি, সেই সুখ স্মৃতি এখনো মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দেয়। তবে জাপানি আর জার্মান গারির ফ্যাক্টরি ম্যানুয়াল সহজেই পাওয়া যায়। আপনে কি হেইন্স বা চিলটনের ম্যানুয়াল জোগাড় করেছেন? এগুলা পেপ-বয়েস বা অটোজোনে পাওয়া যায়।

আমি আর আমার বন্ধু শ্রীনি প্রতি শনি-রবি বার নিয়ম করে গাড়ি খুলে ঘাটাঘাটি করি, নাহলে ভালো লাগে না হাসি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সাইফ শহীদ এর ছবি

সাইফ,

চিলটনের ম্যানুয়ালটা আগেই সংগ্রহে আছে। আসল কথা সময় কোথায়? শেষ পর্যন্ত হয়তো তোমাকেই ইন্টারনেটে টিকিট কেটে পাঠাতে হবে। আর তা ছাড়া মাছ ভাজার লোভটাতো দেখিয়েছো।

ভাল থাকো।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

পড়াচোর এর ছবি

ও...আমি ভেবেছিলাম ফ্রি দিবেন...সামনের মাসে টেক্সাস যাওয়ার একটা প্ল্যান ছিল...তখন ভেবেছিলাম আসার পথে নিয়ে আসব...গুস্তাখি মাফ হুজুর...এখন দেখি উলটা দৌড় দিতে হবে...

অফ টপিক.....আমি সচলায়তনে না লিখলেও আপনার লেখার একজন ভক্ত...

তাসনীম এর ছবি

লেখা যথারীতি দারুণ। এক পর্যায়ে ভৌতিক গল্প ভাবছিলাম হাসি

মার্কিনীদের অযাচিত উপকারের সাথে পরিচিত, আমি স্থানে-অস্থানে অনেকবারই একদম অপরিচিত লোকের কাছ থেকে উপকার পেয়েছি। প্রথমে বিস্ময়কর মনে হলেও এখন স্বাভাবিকই লাগে বরং অন্যের বিপদে মুখ ঘুরিয়ে রাখাটাই আপত্তিকর মনে হয়।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সাইফ শহীদ এর ছবি

এমিল,

আমি যদিও সাধারনত অলৌকিক কিছুতে বিশ্বাস করতে চাই না - তবে এখনো চিন্তা করে বুঝতে পারিনা - কি করে ভ্যানটার আসা এবং যাওয়া আমার চোখ এড়িয়ে হয়ে গেল।

আমি ওখানকার সবাইকে জিজ্ঞাসা করেছি লোখটার বিবরন দিয়ে - অথচ কেউ কখনো ওই রকম বিবরনের মানুষকে দেখেনি।

লেখা পচ্ছন্দ করার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

শামীম এর ছবি

সত্যিই অদ্ভুদ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সাইফ শহীদ এর ছবি

শামীম ,

সত্যিই অদ্ভুদ।
ঠিক বলেছো।

"Facts can be stranger than fiction"

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আজ আর অপেক্ষা করার মত অবস্থায় নেই, তাই গরম থাকতেই পড়তে শুরু করে দিলাম। আসলেও আমেরিকান এমন লোকের সাথে আমার দেখা হয়েছে, যারা না চাইতেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

একবার ২০০৭ এ ঢাকা থেকে মাত্র ফিরেছি, আমার গাড়ি ২ মাস বসে থেকে ব্যাটারী একদম ঝরঝরে অবস্থা, তার মাঝে মার্চ মাসে হুট করে একদিন বরফ পড়ায় গাড়ি আর চালু হয় না। পরে মাইল খানেক হেটে গিয়ে একটা জাম্পার কেবল কিনে আনি, কিন্তু এই বরফের মাঝে কাউকের আর পাইনা যে আমাকে একটু বিদ্যুত সাপ্লাই করবে। এরকম ১৫-২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখি এক ভদ্রলোক পিকাপ ট্রাক নিয়ে যাচ্ছে কোথায় যেন, আমাকে কেবল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেই এসে সামনে দাঁড়ায়, জাম্প স্টার্ট করে দিয়ে গুড লাক দিয়ে বিদায় হয়। আমিও তাই আর কোন রিস্ক না নিয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা ওয়াল্মার্ট গিয়ে নতুন ব্যাটারী কিনে সেটা লাগিয়ে তবে বাসায় ফিরেছিলাম।

আরেকবার আমার ঐ একই গাড়ি ট্রান্সমিশন মারা যায় রাস্তার মোড়ে, আমি ইমার্জেন্সি লাইট জ্বালিয়ে হাত দিয়ে সিগনাল দিতে শুরু করি যেন তারা আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এমন পাশ কাটিয়ে যাওয়া এক মাঝবয়সি ভদ্রলোক সামনে গিয়ে গাড়ি দাড় করিয়ে এসে আমাকে গাড়ি ঠেলে রাস্তা থেকে শোল্ডারে ঠেলে নিতে সাহায্য করেন। তারপর সাথে ফোন আছে শুনে ৯১১ ফোন করতে বলে চলে যান।

আরেকবার আমি পুরা পরিবার নিয়ে সচলের অনিকেতদা সহ নিউ ইয়র্ক গিয়েছি কি যেন একটা কাজে। জ্যাকসন হাইটস থেকে বের হয়ে নর্দান বুলেভার্ড নিয়ে তারপর ব্রুকলিন -কুইন্স এক্সপ্রেস ওয়ে নিব, র‍্যাম্পের উপরে গাড়ি বন্ধ। গাড়ি ছিল অনিকেতদা, সম্ভবত উনার অল্টারনেটর দূর্বল হয়ে গেছিল, তাই ব্যাটারী চার্জ হত না ঠিকমত। রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছি, যে যার মত সাই সাই করে চলে যাচ্ছে, এর মাঝে একজন হঠাৎ করেই দাঁড়িয়ে পরে আমাদের শোল্ডারে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। র‍্যাম্পের মুখে উলটা দিক দিয়ে গাড়ি এনে আমাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায় ভদ্রলোক, তারপর জাম্পস্টার্ট করে দিয়ে আবার নিজের পথ ধরে।

তাই এদের দেখে দেখে এখন আমিও এরকম আটকে পরা লোক দেখলে কৃতজ্ঞতার সাথেই এগিয়ে যাই, যদি কোন সাহায্য লাগে। তবে আবার এই কাজ করতে গিয়ে হালকা আঘাতও পেয়েছি ২ বার। একবার এক মহিলাকে সাহায্য করতে গেলাম, সে আমাকে বলে, কোন টাকা দিতে পারবে না, তাই সে আমার সাহায্যও নিবে না। আমি তো পুরাই বেকুব, টাকা চাইলাম কখন তার কাছে। তবে তাতে দমে যাইনি এখনো।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মাহফুজ খান [অতিথি] এর ছবি

ভাই আমার প্রথম আমেরিকাতে আসার সময় আমিও মুগ্ধ হয়ে ছিলাম একজন মার্কিন ভদ্রলোকের অযাচিত সাহায্য পেয়ে। আমি এবং আমার স্ত্রী জেএফকে তে এসে নামি। তারপর আমার এক পরিচিত প্রফেসর (মার্কিন) আমাদের এয়ারপোর্ট থেকে জ্যামাইকাইয় এক বন্ধুর বাসায় নামিয়ে দিয়ে যায়। সেখানে আমরা রাতটা কাটিয়ে পরেরদিন ডেলওয়্যার (আমার গন্তব্য) এ আসার জন্য পেন স্টেশন এ গিয়ে বাস ধরার প্লান করি। আমরা যে বন্ধুটির কাছে ছিলাম তার গাড়ি ছিলনা আর ঐ প্রফেসর সাহেবকেও আর একবার যন্ত্রনা দিতে মন সায় দিচ্ছিলো না তাই একটা টেক্সি নিলাম পেন স্টেশন পর্যন্ত। কে যানতো ওখানে দুইটা পেন স্টেশন আছে একটা থেকে ট্রেন ছাড়ে আর একটা থেকে বাস। টেক্সিওয়ালা আমাদের ট্রেন স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। এইবার দুইজনে চারটে বড় বড় ব্যগ আর দুইটা করে হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে পরলাম মহা যন্ত্রনায়। কোনরকমে টেনে হেচড়ে ব্যাগ নিয়ে টিকেট কাঊন্টারের কাছে গিয়ে দেখি বিশাল লাইন। আমার স্ত্রীকে ব্যাগ সহ এক কোনায় দাড় করিয়ে রেখে আমি লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। প্রায় ৪০ মিনিট অপেক্ষা করার পর দুইটা টিকেট নিলাম চড়া দামে। দশ মিনিট পর ট্রেন ছাড়বে। এইবার পড়লাম যন্ত্রনায়। প্রথম সমস্যা ট্রেন ছাড়বে কোথা থেকে সেইটা জানিনা আর দ্বিতীয় সমস্যা সেইটা খুজে পাওয়ার পর সেখানে ব্যাগগুলো নিয়ে এত অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে পৌছাব। খুজে পেতে দেখি পাশের বোর্ডে আমার ট্রেনের যে প্লাটফর্ম নাম্বার দেওয়া আছে সেইটা এক ফ্লোর নিচে। আমি আমার স্ত্রীকে শিড়ির কাছে অন্য ব্যাগ সহ দাড় করিয়ে রেখে দুই কাধে দুইটা হ্যান্ড ব্যাগ আর দুই হাতে দুইটা বড় ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে গেলাম। দুই ট্রিপে পুরো লাগেজ ট্রেনে তোলার প্লান আরকি। আমি নিচে ট্রেন এর দরজার কাছে ব্যাগ গুলো রেখে আবার উপরে উঠার জন্য পেছন ঘুরতেই দেখি আমার স্ত্রী অন্য ব্যাগ গুলো সহ আমার পেছনে দাড়িয়ে আছে। আমিতো অবাক। তুমি এগুলা কেম্নে নামাইলা জিজ্ঞেস করতেই ও জানালো যে এক ভদ্র লোক নিজে থেকে এসে বড় ব্যাগ গূলো নামিয়ে দিয়ে গেছে। এরপর আবার অবাক হলাম যখন আমি ব্যাগ গুলো ট্রেনের ভেতরে তুলতে শুরু করলাম। ট্রেনের গার্ড দেখি নিজে থেকে এসে আমাকে সাহায্য করতে লাগলো। সেদিন বেশ মুগ্ধ হয়ে ছিলাম।

সাইফ শহীদ এর ছবি

মাহফুজ,

খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা। ধন্যবাদ আমাদের সবার সাথে শেয়ার করার জন্যে। আমার মনে হয় আমরা যারা আমেরিকাতে বাস করি তাদের সবার এরকম সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতা আছে। শুধু যদি এরা দুনিয়া সম্পর্কে আরও একটু জানার সুযোগ পেতো, যদি এখানকার টিভিতে খবরের সময় 'খবর' প্রচার হত, যদি বিভিন্ন ধর্মের এতটা (ভুল) প্রভাব মানুষের উপর না থাকতো, যদি 'সোশালিজম' মানেই একটা অচ্ছুৎ শব্দ না হত - যদি সত্যিকার ভাবে এদেশে এদের নিজেদের শাষনতন্ত্রের 'বিল-অব-রাইটস' গুলি এরা অন্য দেশেও সমান ভাবে মানতে পারতো, যদি আমেরিকান 'জাওনিষ্ট' আর সৌদী রাজ পরিবার এক সাথে হাত মিলিয়ে তাদের নিজেদের স্বার্থে আমেরিকার পলিটিক্সে তাদের প্রভাব বিস্তার না করতে পারতো - তাহলে এটা এক অদ্ভুত সুন্দর দেশে রূপান্তরিত হতে পারে। এখানকার অধিকাংশ মানুষ সৎ, কর্মঠ এবং অন্যকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে সব সময়।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ এর ছবি

সাইফ,

অনেক ধন্যবাদ তোমার এই সুন্দর অভিজ্ঞতাগুলি আমাদের সবার সাথে ভাগ করার জন্যে।

একবার এক মহিলাকে সাহায্য করতে গেলাম, সে আমাকে বলে, কোন টাকা দিতে পারবে না, তাই সে আমার সাহায্যও নিবে না। আমি তো পুরাই বেকুব, টাকা চাইলাম কখন তার কাছে।
এইটা হচ্ছে টিপিক্যাল আমেরিকান সাইকি। তুমি দেখবে - দুই বন্ধু এক সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে গেছে - খাবার পর যার যা নিজের খাবারের বিল নিজে দিচ্ছে। এটাই যেন স্বাভাবিক। প্রথম প্রথম আমার একটু অস্বস্থি লাগতো, এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

আমার এক বন্ধুর গল্প। বারে এক সুন্দরী মেয়েকে দেখে আলাপ করার আগ্রহে তাকে ড্রিঙ্ক অফার করেছে। উত্তরে মেয়েটি তার দিকে প্রশ্ন ছুড়েছে -"আমাকে কেন? বিছানায় নিতে চাও নাকি?"

বন্ধুটির তখন ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি - অবস্থা।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ইয়ে, মানে..., আপনার বন্ধুর অভিজ্ঞতা শুনে আসলেই ভয় পাইছি। তবে আপনার সাথে একমত, সাহায্য করতে পছন্দ করলেও একজন আরেকজনকে বিনা উদ্দেশ্যে খাওয়াবে এই ধারণাটা এদের মধ্যে একেবারেই নেই দেঁতো হাসি, যে যার বিল দিতে এরা ভালু পায়

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সাইফ শহীদ এর ছবি

সাইফ,

তোমার ভয়ের কি আছে? আমিতো জানি তুমি তোমার নিজের স্ত্রী ছাড়া পর-নারীর প্রতি কখনো চোখ তুলে তাকাবে না। কি, ঠিক বলেছি কিনা?

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

হো হো হো , তাকাবো না? কি বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র, আমিও তাকাই, আমার স্ত্রীকেও তাকাতে দেই, কিন্তু ঐ পর্যন্তই গড়াগড়ি দিয়া হাসি

আসলে ভয় পেয়েছিলাম যে, কাউকে কিছু সেধে চড় খেতে হয় কিনা সেটা ভেবে। মাথা গরম কেউ ভুলে বুঝে যদি জনসম্মুখে চড় থাপ্পর দেয়, তাহলে মান ইজ্জতের ব্যাপার হাসি
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

খাবার পর যার যা নিজের খাবারের বিল নিজে দিচ্ছে। এটাই যেন স্বাভাবিক। প্রথম প্রথম আমার একটু অস্বস্থি লাগতো, এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
এইটা এখানেও আমরা এখন হামেশাই করি, মানে যখনই সবাই চাকরি করি এমন বন্ধুরা মিলে খেতে যাই বাইরে, তখনই হিজ হিজ হুজ হুজ করা হয় সাধারণত, আর এটায় আসলে অস্বস্তির কিছু নাই, ঠিকই আছে, ভালো নিয়ম।
তবে এটা ঠিক অনেকেই অন্যকে খাইয়েও আনন্দ পান (আমি এই গ্রুপে পড়ি, দেখা যায় আমার সাথে আমার পছন্দের বন্ধুরা বিশেষ করে ছোট কেউ থাকলে, আমি হাতে টাকা থাকলেই মহানন্দে তাদেরকে খাওয়াতে নিয়ে গেছি হুদাই), আবার অনেকে নিজেও তেমন একটা বাইরে খেতে পছন্দ করেন না অন্যদের সাথে যেতেও। হাসি

জন্মদিন বা অন্য কোন উপলক্ষ হলেই সবাই মিলে এমনিতেই তেড়ে ধরা হয় খাওয়াতে সেটা একটা ব্যাপার অবশ্য, তাতে মজা আছে। কিন্তু আমি দেখেছি আমার প্রবাসী বন্ধুদের জন্মদিনে উলটা তাদেরকেই সবাই মিলে খাওয়াতে নিয়ে যায়, এইটা কিন্তু ভালো লেগেছে। কোন অ্যাচিভমেন্টে বা ভালো খবরে খাওয়ানো যায়, মিষ্টিমুখ করানোটা আমাদের সাংস্কৃতিক রেওয়াজও। কিন্তু জন্মদিনে মনে হয় আমাকেই সবার খাওয়ানো উচিত না? চিন্তিত

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

হরফ এর ছবি

দারুণ গপ্প শোনালেন সাইফ, আজ আবার আমাদের এখানে জম্পেশ ঠান্ডা, ঝিরঝিরে বৃষ্টিও হচ্ছে। সব মিলিয়ে ফাসসক্লাস লাগলো :-)। আমার ছাত্রীজীবনের প্রথম বছর/প্রথম শীতে গাড়ীর জাম্পস্টার্ট করতে এক মহানুভব খুব সাহায্য করেছিলেন। প্রায় মধ্যরাতে তাঁকে দেখে আমার প্রায় দাঁতকপাটি লাগার জোগাড় হয়েছিল, গাড়ী নিয়ে বিপদে না পড়লে হয়ত আরো ভয় পেতাম, তবে পরে সেই মানুষটির সাথে আলাপ হয়, নাম জো, আর্মি ভেটেরান, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চালাতেন এবং কাজের শেষে লাইব্রেরিতে বসে বই-টই পড়তেন। কোনদিন ভুলবো না জো-র কথা হাসি

ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে

সাইফ শহীদ এর ছবি

মেঘ,

এই রকম মেঘলা দিনে, ঝিরঝিরে বৃষ্টি - ইশ, একটু ইলিশ মাছ ভাজি আর সাথে খিচুড়ি - কত দিন খাওয়া হয়নি।

আমি ভাল খিচুড়ি রাঁধতে পারি - মাছ ভাজার কেউ আছে নাকি?

সাইফ শহীদ

পূনঃ জো কিন্তু ভুলে গেছে - কত লোককেই তো সে রাস্তা-ঘাটে সাহায্য করে।

সাইফ শহীদ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আমি আছি, মাছ ভাজির মত সহজ রান্না দুনিয়াতে ২টা নাই, কড়কড়ে ভাজি চান নাকি একটু কোমল কোমল চোখ টিপি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

আনাম এর ছবি

অধীর আগ্রহে আপনার অভিজ্ঞতা শোনার জন্য অপেক্ষা করি।
লিখতে থাকুন।

সাইফ শহীদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, আনাম।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

দারুণ লাগলো।

সাইফ শহীদ এর ছবি

সৈয়দ আখতারুজ্জামান,

দারুণ লাগলো।
সবাই আমার চাইতে কত চালাক। কেউ কিন্তু সন্দেহ করছে না যে এটা একটা অলৌকিক ব্যাপার হতে পারে।

ধন্যবাদ ভাল লাগার জন্যে।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

মূলত পাঠক এর ছবি

দারুণ লাগলো আপনার অভিজ্ঞতা!

সাইফ শহীদ এর ছবি

মূলত পাঠক,


দারুণ লাগলো আপনার অভিজ্ঞতা!
অনেক ধন্যবাদ এই প্রসংশার জন্যে।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

আশরাফ [অতিথি] এর ছবি

অভিজ্ঞতাটা দারুন, তবে আরো বেশী মুগ্ধ করেছে আপনার লেখার সাবলীলতা।

সাইফ শহীদ এর ছবি

আশরাফ,

অভিজ্ঞতাটা দারুন, তবে আরো বেশী মুগ্ধ করেছে আপনার লেখার সাবলীলতা।
অনেক ধন্যবাদ।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

দিফিও [অতিথি] এর ছবি

আপনি ঠিকই বলেছেন, কম বেশী সবারই একই অভিজ্ঞতা আছে। আমরা দেশে থাকতে হয়ত মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অভ্যস্ত, তাই আমাদের চোখে প্রথম প্রথম বেশী লাগত হাসি

ব্যাটারী চার্জে সাহায্য তো পেয়েছিই, এমনকি বাস মিস করায় একদমই অচেনা লোকের রাইডও পেয়েছি বেশ কয়েকবার (এখন বুঝি, তখন আমার চেহারা দেখেই বোঝা যেত নতুন এসেছি হাসি )।

এক সিনিয়র বড় ভাই বলেছিলেন, রাস্তার পাশে মানুষকে সাহায্য করা এদের মজ্জাগত এই কারণে যে, আমেরিকায় তাদের পুর্ব পুরুষরা বেশ বৈরী পরিবেশেই আমেরিকায় বসতি বিস্তার করেছে, তখন একে অপরকে সাহায্য করাটা তাদের জন্য মোটামুটি ফরজ ছিল। সেই ইতিহাস খুব বেশীদিন আগের নয়, তাই তাদের মধ্যে এখনো ওটা রয়ে গেছে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনার সিরিজটায় মতামত দেবার কিছুই পাই না
খালি পড়ি

সাইফ শহীদ এর ছবি

মাহবুব লীলেন,

খালি পড়ি
ওটাই যতেষ্ঠ। অনেক ধন্যবাদ এভাবে বলার জন্যে।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

দিফিও ভাই বলছিলেন-

এক সিনিয়র বড় ভাই বলেছিলেন, রাস্তার পাশে মানুষকে সাহায্য করা এদের মজ্জাগত এই কারণে যে, আমেরিকায় তাদের পুর্ব পুরুষরা বেশ বৈরী পরিবেশেই আমেরিকায় বসতি বিস্তার করেছে, তখন একে অপরকে সাহায্য করাটা তাদের জন্য মোটামুটি ফরজ ছিল। সেই ইতিহাস খুব বেশীদিন আগের নয়, তাই তাদের মধ্যে এখনো ওটা রয়ে গেছে।
ঠিক, এই কথাটাই আমিও বলতে গিয়েছিলাম। আসলে এত বিস্তীর্ণ এই দেশটা, আর যারা বিশেষ করে এমন চাকরি করেন যে পথে পথেই অনেক সময় কাটে, তারা বোঝেন মনে হয় এমনিতেই নিজেদের অভিজ্ঞতা সহায় করেই যে পথেঘাটে এইরকম সময়গুলোতে অন্যের সাহায্য কতটা প্রয়োজনীয় হয়।

আমার কিন্তু তবুও ছুটির দুপুরে পড়তে গিয়ে অলৌকিক ভাবতে ভালোই লাগল আপনার অভিজ্ঞতাটা। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ইন্টারেস্টিং।
আমার ধারনা আপনার পারিপার্শ্বিকতা তখন আপনার মনকে অলৌকিক কিছুকে গ্রহন করতে অনেক বেশী প্রভাবিত করে ফেলেছিলো। আমি নিজেও একবার ব্যাখ্যার অযোগ্য একটা ঘটনার মুখে পড়েছিলাম। তবে এখনও আমার মনে হয়, আমার মন কয়েকটা জিনিসকে ওভারলুক করে একটা অধিভৌতিক ইন্টারপ্রিটেশনকে প্রিফারেন্স দিয়েছিলো।
হয়তো আপনি ঠিকই গাড়িটিকে আসতে যেতে দেখেছেন, কিন্তু আপনার স্মৃতি সেগুলোকে মুছে ফেলেছে।

শপিং মলের পার্কিংয়ে সারভেইল্যান্স ক্যামেরা থাকলে অবশ্য পরদিন আপনি কিছু ক্লু পেতে পারতেন।

একটা কথা, আপনার এই সিরিজটা অসাধারন হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো লাগে, পড়তে পড়তে মনে হয় লেখক তার দেশে বসে বিদেশের কথা লিখছেন।
ভালো একটা বই হবার দাবী রাখে।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি জ্বিনের বাদশা ভাইয়ের সাথে সম্পূর্ণ একমত। অসাধারণ একটা সিরিজ। আমেরিকা সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় আপনার লেখায় চলে এসেছে।
বই এর জন্য ইটা রাইখ্যা গেলাম... রেখে গেলাম।

পাগল মন

সাইফ শহীদ এর ছবি

পাগল মন,

তবু ভাল এই ইট বই কেনার লাইনের জন্যে। আমিতো আবার ভয় পাবো কিনা ভাবছিলাম।

ধন্যবাদ এই প্রসংশার জন্যে।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ এর ছবি

জ্বিনের বাদশা,

একটা কথা, আপনার এই সিরিজটা অসাধারন হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো লাগে, পড়তে পড়তে মনে হয় লেখক তার দেশে বসে বিদেশের কথা লিখছেন।

ভালো একটা বই হবার দাবী রাখে।

তোমার পরিচিত কোন প্রকাশক থাকলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলতে পার।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

ফরিদ এর ছবি

কিছু না হলে www.boi-mela.com এ ই-বুক হিসেবে প্রকাশ করলে আনন্দিত হব।

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

অসহনীয় জনসংখ্যার চাপ আর তার নানান রকম অবধারিত কুপ্রভাবের কারনে আমাদের দেশে এরকম মানবিক অনুভূতি বা মুল্যবোধগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে বটে, কিন্তু আমদের মধ্যেও এধরনের পরোপকারীতা একসময় মনে হয় একটু-আধটু ছিল। অন্ততঃ আমার নিজেরও কাছাকাছি একটা অভিজ্ঞতা আছে যেটা আমি এখনো ভুলিনি - আপনারটার সাথে কতটুকু মিলবে জানি না।

বহু আগে ১৫-১৬ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর কোন এক সময় হুট করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে গিয়েছিলাম একা বেড়াতে। কাঊকে না বলেই। প্ল্যান ছিল এক দুর-সম্পর্কের খালার বাসায় উঠবো। রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্টেশন থেকে রিকশা নিয়ে তার বাসায় গিয়ে দেখি ঐ খালা সপরিবারে ঢাকা গেছেন বেড়াতে - বাড়ি তালা মারা। আমি তো ওদের জানিয়ে যাইনি। এত রাতে কি করবো ভাবতে ভাবতে অনেক ভেবেচিন্তে আরেক আত্নীয়ের কথা মনে পড়লো যার বাড়ির ঠিকানা জানি না, কিন্তু সাধারনভাবে লোকেশনটা মনে আছে। গেলাম ঐ দিকে এবং অনেক খুঁজেপেতে বাড়িটাও বের করলাম। কিন্তু দেখা গেল ওনারা এখন আর এখানে থাকেন না এবং নতুন ঠিকানাও কেউ জানে না। ইতিমধ্যে আমি বেশ খানিকটা ভয় পেয়ে গেছি। এ শহরে আমার আর কোন চেনা লোক নেই। তখন অনেক রাত, মনে হয় ১টা পেরিয়ে গেছে। কনকনে শীতের মাস। চারিদিক সুনসান। আমি একা এবং এর আগে একদম একা ঢাকার বাইরে যাওয়া বা থাকার অভিজ্ঞতা নেই। সাথে বিশাল একটা ব্যাগ। এর মধ্যে পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার মানিব্যাগ গায়েব। সাথে সাথে আমারো মাথায় হাত। অনেক ঘাটাঘাটি করে অন্য পকেটে সামান্য ক'টা টাকা খুঁজে পেলাম, কিন্তু তাতে কি হবে জানি না। রাতটা রাস্তায় কাটাতে হবে ভেবে আতঙ্কিত, এমনকি রিকশার ভাড়াও দিতে পারব কিনা সন্দেহ। আমার অবস্থা রিকশাওয়ালাকে বলতে, সে বললো - চিন্তা করবেন না, আন্দরকিল্লার ওদিকে বেশ কিছু হোটেল আছে। তো সে আমাকে আন্দরকিল্লা নিয়ে গেল রিকশা চালিয়ে এবং খুঁজেপেতে একটা সস্তা এবং তখনো দরজা খোলা এমন একটা হোটেল বের করে থিতু করে দিল।

এবার রিকশা ভাড়া দেয়ার পালা। হিসাব করে দেখি ঐ দিনের হোটেলের রুম ভাড়া, সবচেয়ে সস্তায় পরদিন রাতে বিআরটিসি নাইটকোচে ঢাকা ফেরার বাস ভাড়া আর মাঝখানে সারাদিনে ২ পিস পরটা খাওয়ার পয়সা ছাড়া আর কিছু নাই। অনেক আমতা আমতা করে যখন রিকশাওয়ালাকে বললাম অবস্থা তখন সে একটা হাসি দিয়ে বলল - ভাইজান, একদম চিন্তা কইরেন না। যা পারেন দেন। আপনাকে নিরাপদে একটা জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছি এটাই বড় কথা। আমি তখন খুবই অপরাধী বোধ করে হোটেল ম্যানেজারকে বলে রুম ভাড়া আরেকটু কমিয়ে রিকশাভাড়ার জন্য পয়সা বের করা যায় কিনা দেখতে ভেতরে গেলাম। ফিরে এসে দেখি রাস্তা সুনসান। কোন লোক নেই। চলে গেছে সে। তখন মনে হয় রাত ২টা।

ভাবতে গিয়ে গায়ে কাঁটা দেয়। কনকনে শীতের রাতে ১১টার পরে যখন আমার মত শহরসুদ্ধ মানুষ লেপমুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে বা রিমোট হাতে 'ডালাস' দেখছে উষ্ণ আরামদায়ক কার্পেট-সোফা-গদি মোড়া ঘরে বসে হাতে ধুমায়িত কফির কাপ নিয়ে, তখন যে মানবসন্তান পাতলা একটা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে ঠান্ডায় কাঁপতে-কাঁপতে চট্টগ্রামের সুনসান পাহাড়ী রাস্তায় রিকশা চালানোর মত অমানুষিক শ্রমে বের হয়, সে লোকের দুর্দশা আর অনুমানের অপেক্ষা রাখে না ! নির্ঘাৎ পেটে কিছু ছিল না। মুখে দু লোকমা গোঁজার জন্যই তো এই নিরুপায় পাশবিক শ্রম। হয়তো বস্তিতে ছিল ক্রন্দনরত উপাসী শিশু। অথচ সেই লোক এত রাতে ২-আড়াই ঘন্টা (?) রিকশা চালিয়ে গাধার খাটুনি দেয়ার পরও, আমাকে নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার আনন্দে বা আমি কিভাবে বাড়ি ফিরব বা পরের একটা মাত্র দিন কি খাব না খাব সে চিন্তায় না কোন চিন্তায় কে জানে - একটি পয়সা না নিয়ে চলে গেল - তাঁকে আমি কি বলবো ? ফেরেস্তা ?

আমার তো ২ পিস পরটা হলেও পরদিন পেটে কিছু পড়েছিল, কিন্তু ঐ লোকের ঐ রাতে কি পেটে কিছু গিয়েছিল আদৌ এরপর ?

সাইফ শহীদ এর ছবি

মনমাঝি,

অনেক ধন্যবাদ এই সুন্দর অভিজ্ঞতাটুকু সবার সাথে সহভাগ করে নেবার জন্যে।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলছি - বাংলাদেশের খেটে খাওয়া অভাবি মানুষের মধ্যে মানবতার পরিমান অনেক বেশী।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভাল্লয়াগ্লো! দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

সাইফ শহীদ এর ছবি

দুষ্ট বালিকা,


ভাল্লয়াগ্লো!

যদি সারা রাত বাইরে বসে কাটাতে হত, তবে কেমন লাগতো এই গল্প?

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

অবশ্যই ভীতিকর! তবে আমি এরকম কিছু ঘটবে এই আশা হয়তো করতাম! আমার আবার মানুষের প্রতি প্রবল বিশ্বাস! বার বার ধরা খেয়েও এটা যায় না! হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

সাইফ শহীদ এর ছবি

দুষ্ট বালিকা,


আমার আবার মানুষের প্রতি প্রবল বিশ্বাস! বার বার ধরা খেয়েও এটা যায় না!

আমেরিকাতে যে জিনিসটা আমাকে সবচাইতে মোহিত করে্ছে সেটা হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ একে অপরকে বিশ্বাস করে।

এক-দুইবার ঠকলেও এটা একটা বড় গুন।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

ইসানুর এর ছবি

চমৎকার সিরিজ। আপনার লাইফটা আসলেই চমৎকার সব অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ!!

সাইফ শহীদ এর ছবি

ইসানুর,

অনেক গুলি বছর পার করে দিয়ে এসেছি তো তাই।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

ভালো লাগলো সাইফ ভাই হাসি

আজকে আমিও কিছুটা অনুভব করলাম এক সিয়েঞ্জি ড্রাইভারের 'মহানুভবতা'। রাত ১১টার উপরে বাজে। প্রায় পৌনে ঘন্টা ধরে রাস্তায় হাঁটছি। কেউ যেতে চায় না, যে চায় সে ভাড়া চায় ৪০০ টাকা বা এর কাছাকাছি। মহানুভব বান্দা আমাকে মাত্র ১৮০ টাকায় বাড়ি পৌছে দিলো। স্থান: বাংলামোটর থেকে মহাখালি।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

সাইফ শহীদ এর ছবি

সিমন,

বাংলামোটর থেকে মহাখালি ৪০০ টাকা? নাহ, এ ঢাকাকে আমি আর একদম চিনি না।

আমার এক ক্যানাডিয়ান হ্যাম বন্ধু আমার কাছে জানতে চেয়েছে তার ভাই বাংলাদেশ ভ্রমনে যাচ্ছে সামনের বছর - কোন পরামর্শ দিতে চাই কিনা। ভেবে পাচ্ছিনা কি বলবো। আমিই তো হারিয়ে যাবো এই বাংলাদেশে - অন্যকে কি উপদেশ দেব?

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

ভ্রান্ত পথিক [অতিথি] এর ছবি

বেটার চক্ষু লজ্জা আছে বলতে হবে। আপনার যাবতীয় ধনসম্পদ যে চায় নাই, এটাই বেশি। ৪০০ টাকা ভাড়া চিন্তাও করতে পারিনা।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনার সিরিজে হাজিরা দিয়ে গেলাম। দেঁতো হাসি

সাইফ শহীদ এর ছবি

কৌস্তুভ,

প্রক্সি দিলেই চলবে - নিজে যেভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অনেকগুলি বিষয় পাশ করেছি।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

দুর্দান্ত এর ছবি

সুন্দর করে লেখা, সুন্দর অভিজ্ঞতা।
হঠাত ঠান্ডায় আমার কানের কার্যকারিতা কিছুটা কমে যায়। একবার স্কী-ছুটিতে পেছন থেকে আসা একটা স্নোমোবিলের মোটরের শব্দ শুনতে না পেয়ে তার যাত্রাপথে গিয়ে উঠলাম। অল্প মচকানো ব্যথার ওপর দিয়ে বেঁচে গেছি।
আসল পরোপকারি কি ধন্যবাদের অপেক্ষা করে?

সাইফ শহীদ এর ছবি

দুর্দান্ত,

আসল পরোপকারি কি ধন্যবাদের অপেক্ষা করে?
খুবই খাটি কথা।

তোমার ভাগ্য ভাল যে বড় কিছু একটা আঘাত পাওনি।

এক সময় শুনেছিলাম যে ব্রিটিশ ভারতে নাকি আইন ছিল যে কেউ যদি গরুর গাড়ীর নিচে চাপা পড়তো তবে নাকি তাকে শহর থেকে বের করে দিত। বেশ মজার আইন, তাই না?

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমার মনে হয় ভূত ছিলো... চোখ টিপি
সিরিজটা পড়তে আরাম লাগে... চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাইফ শহীদ এর ছবি

নজরুল,

আমার মনে হয় ভূত ছিলো...

হা হা হা ।

ভুতে বিশ্বাস করতে পারলে এঞ্জেল আর বাদ যায় কেন?

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

রাজীব নূর  এর ছবি

প্রথমত গল্পটা দারুণ লেগেছে। একটুখানি অতিবাস্তবতার স্পর্শ দিয়েই লেখক এটাকে দাঁড় করাতে পেরেছেন। নইলে তার পুরো প্রজেকশনটাই মাঠে মারা যেত বলে আমার ধারণা। তবে আমার গল্পের শেষটা 'পর দিন সকালে আবার কাজে যাবার পথে রাতের কথা চিন্তা করে মনে মনে হাসলাম। দূর - এই সব এঞ্জেল-ম্যাঞ্জেল বলে কিছু আছে নাকি? আমি নিশ্চিত ছিলাম যে এক দুই দিনের মধ্যে লোকটাকে আমার রেস্টুরেন্টে দেখবো - ফ্রি খেতে এসেছে।' পড়ার পর অন্য একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল এবং মনে হলো সব্বাইকে শেয়ার করি ওই মানুষটার গল্প।
তখন আমি প্রথম আলোতে কাজ করি। সম্ভবত শিল্পকলা একাডেমীতে একটা এসাইনমেন্ট কভার করে কাওরানবাজারে ফিরলাম রিক্সা করে, তখনো ঢাকার দু-একটি রাস্তা বাদে সর্বত্র রিক্সা চলাচল করত। তাড়াহুড়োর কারণে আমি রিক্সাতে আমার মোবাইল ফোন ফেলে অফিসে উঠে যাই। কেবলই মোবাইল কেনা হয়েছে, খুব একটা ফোন আসে না বলে মোবাইলটা যে অনেকক্ষণ ধরে সঙ্গে নেই সেটা বুঝতে পারিনি। অফিসের রিসিপশন থেকে ডাক এলো কে একজন আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে। হাতের কাজটা শেষ হয়নি বলে বিরক্তি নিয়ে গেলাম নারায়ণকে বিদায় করতে। আমরা বন্ধুরা তখন গেস্ট এলেই তাঁকে নারায়ণ বলে ডাকতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি ওই রিক্সাওয়ালা এবং সঙ্গে আবার অফিসের নিচের চায়ের দোকানদার মামা। কী ব্যাপার। রিক্সাওয়ালা আমাকে মোবাইলটি এগিয়ে দিলেন। কাজের চাপে ছিলাম বলে মোবাইলটা হাতে নিয়ে মাত্র ভদ্রলোককে ১০০ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিলাম। বেচারি আমাকে বিস্মিত করে বললেন, ‌'না লাগবে না।'
বললাম, 'আরে রাখেন, আমি খুশি হইয়া আপনারে এই দিলাম।'
'এগুলা কইরা আপনেরা গরিব নষ্ট করেন। আপনি খুশি হইছেন কেন? আমি তো আপনারে কিছু দিই নাই। আপনার জিনিস আপনারে ফিরাইয়া দিলাম, এতে খুশি হওয়ার কি আছে?'
আমি প্রবল ধাক্কা খেলাম। সত্যি তো, এইটাতো আমাদের এথিকস হওয়া উচিত ছিলো, ভদ্রলোক তো স্রেফ তার দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপরেও বিনয় করে বললাম, 'বাহরে আপনি সময় নষ্ট কইরা এইটা ফেরত দিতে আসলেন, এই সময়ের মধ্যে একটা খেপ মারলে তো কিছু টাকা পাইতেন?'
'সেতো ১০০ টাকা হইত না।'
‌'তাইলে যা হইত তাই রাখেন।'
ভদ্রলোক কোনো টাকাই নিলেন না। আমি তাকে ভিজিটিং কার্ড দিলাম। কার্ডে মোবাইল নম্বরটা ছিলো না বলে নিজের হাতে সেটা লিখে দিলাম এবং যে কোনো প্রয়োজনে তিনি যেন আমার কাছে আসেন সে অনুরোধ করলাম।
এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিলো। ভুলটা আমি করলাম এরপর। মনে মনে ভাবলাম নির্ঘাৎ লোকটা আবার আসবে এবং সে যেহেতু আর পাঁচটা রিক্সাওয়ালার চেয়ে বুদ্ধিমান, সেহেতু সে বুঝতে পেরেছে, প্রথম আলোর একজন রিপোর্টারের কাছ থেকে ১০০ টাকা বকশিস নেওয়ার চেয়ে একটা চাকরির তদবির করিয়ে নেওয়া অনেক ভালো। আমি মনে মনে তার অপেক্ষায় ছিলাম এবং ভদ্রলোক এলে আমার স্বভাব অনুযায়ী আমি আনন্দের সঙ্গে তার জন্য কিছু করার চেষ্টা করতাম। এক সময় ভুলে গেলাম তার কথা। মনে পড়ল ব্র্যাক ব্যাংকের ক্যাশ থেকে যখন আমাদেরকে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দেওয়া হল এবং সেটা ফেরত দেওয়ার কারণে ম্যানেজার আমাদের জন্য ফুল পাঠালেন। ততদিনে কেটে গেছে কয়েক বছর এবং আমি মনে মনে খুঁজতে শুরু করলাম ওই রিক্সাওয়ালাটিকে। এখন আমি জানি ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হলেও আমি তাকে চিনতে পারব না আর ওই ভদ্রলোক নিজে থেকে পরিচয় দেবেন না।
সত্যি আবার অনেক দিন পর ওই লোকটির কথা মনে পড়ায় প্রবল গ্লানি বোধ

সাইফ শহীদ এর ছবি

রাজীব নূর,

প্রথমে জানাই অনেক ধন্যবাদ আপনার নিজের এই দারুন অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগ করার জন্যে।

'এগুলা কইরা আপনেরা গরিব নষ্ট করেন।'
কি নিদারুন সত্য কথা।

কবে যে আমাদের মিথ্যা জাত্যাভিমান দূর হবে?

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

guest_writer জিয়াউর এর ছবি

ভাল লাগল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।