কিশোর বিজ্ঞানমনস্কতা কর্মশালা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: রবি, ০৪/১১/২০১২ - ৪:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের বিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞান পাঠ শুরু হয় তৃতীয় শ্রেণী থেকে ‘পরিবেশ পরিচিতি’ বিষয়টির মাধ্যমে। ‘পরিবেশ পরিচিতি’র পাঠ চলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। নবম-দশম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের পাঠ নেয়, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা সাধারণ বিজ্ঞানের পাঠ নেয়। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে গিয়ে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ভৌতবিজ্ঞান ও প্রাকৃতিকবিজ্ঞানের পাঠের যেমন কোন ব্যবস্থা নেই তেমন বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সামাজিক বিজ্ঞান পাঠের কোন ব্যবস্থা নেই। বিজ্ঞান পাঠের এই ব্যবস্থাটি যথাযথ কিনা, পাঠ্যপুস্তকগুলো সঠিক কিনা, পাঠ্যক্রম সময়োপযোগী কিনা সেসব নিয়ে আলোচনা করা জন্য এই লেখার অবতারণা নয়। সেগুলো নিয়ে স্বতন্ত্র ও বিস্তারিত আলোচনা দরকারী। এই লেখার উদ্দেশ্য নূন্যতম তৃতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী অবধি বিজ্ঞান শেখা অথবা আরো উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত বিজ্ঞান শেখা মানুষের বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে।

এমবিবিএস পাশ করলে রেজিস্টার্ড ডাক্তার হিসাবে কাজ করার যোগ্যতা অর্জিত হয় সে’কথা সত্য, তবে এমবিবিএস পাশ করলেই কেউ চিকিৎসাবিজ্ঞানী হয়ে যাবেন এমনটা জোর দিয়ে বলা যাবে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানী হবার জন্য আগে তিনি বিজ্ঞানী হবার মানসিকতাসম্পন্ন কিনা সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিজ্ঞানের মূলসূত্রগুলো নিজের মধ্যে ধারণ না করলে বিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি কার্যের কার্যকারণ অনুসন্ধান করা, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, পূর্বানুমানের ভুল সংশোধনের মাধ্যমে সিদ্ধান্তগ্রহন, গৃহীত সিদ্ধান্তকে যাচাইকরণের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহনের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া এগিয়ে চলে। এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নতুন আবিষ্কারের ফলে আংশিক বা পূর্ণভাবে বাতিল হয়ে যেতে পারে। একজন বিজ্ঞানী তখন পুরনো ধারণাটিকে আর আঁকড়ে ধরে থাকেন না। বরং তিনি নতুন সিদ্ধান্তকে পরীক্ষণের মাধ্যমে যাচাই করে গ্রহন করেন।

বিজ্ঞান কোন বিশ্বাসের বস্তু নয়। বিজ্ঞান কোন কিছুকেই বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয় না। একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ তাই ক্রমাগত প্রশ্ন করেন উৎস সম্পর্কে, পদ্ধতি সম্পর্কে, কার্যকারণ সম্পর্কে, ফলাফল সম্পর্কে। প্রশ্নের উত্তর পেয়েই তিনি সন্তুষ্ট হয়ে যান না, বরং যে উত্তর পেলেন সেটি পরীক্ষণের মাধ্যমে যাচাই করে নেন। তাই আইনস্টাইন বা নিউটন কিছু বললেই তিনি সেটা চোখ বুঁজে মেনে নেন না। আইনস্টাইন বা নিউটনও যখন কিছু বলেন তখন তিনি পরীক্ষণ ও প্রাপ্ত ফলাফল নিয়েই কিছু দাবি করেন। বিজ্ঞান যখন কিছু বলে বা দাবি করে তখন তা স্পষ্ট করেই বলার চেষ্টা করে, কোন প্রহেলিকা বা গ্রে এরিয়া ছেড়ে যাবার চেষ্টা করে না। প্রাপ্ত দাবিতে যেটুকু অপ্রমাণিত থেকে গেল সেটা নিয়ে নতুন গবেষণা চলতে থাকে। অপ্রমাণিত অংশটি যদি এমন হয় যে তা দাবিটিকে নাকচ করে দিতে পারে, তাহলে দাবিটিকে আর বৈজ্ঞানিক সূত্র হিসাবে গ্রহন করা হয় না।

খুব বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করা যায় যে, আমাদের চারপাশে এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যারা চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ করেন সত্য কিন্তু মানসিকতায় বিজ্ঞানকে ধারণ করেন না। তারা এমন অনেক কিছুই বিশ্বাস করেন যেগুলো পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষণে প্রমাণিত নয়। আবার তারা একইসাথে একই বিষয়ে প্রমাণিত ও অপ্রমাণিত উভয়প্রকার সিদ্ধান্তেই বিশ্বাস করেন। এই মানুষগুলো বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হতে পারেন, তবে বিজ্ঞানমনস্ক নন। বস্তুত বিজ্ঞানমনস্কতা শুধুমাত্র বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ও চর্চাকারীদের বিষয় নয়। যে কোন স্বাভাবিক, শিক্ষিত, সভ্য, মানবিক মানুষের জন্য বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া আবশ্যক।

কারো পক্ষে বিজ্ঞানমনস্ক হবার সুবিধাটা হচ্ছে এই যে - এতে তাকে অহেতুক বা অপ্রমাণিত কোন বিষয় বিশ্বাস করতে হয় না, কারো কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে হয় না। বর্ণ-গঠন-জাতি-গোত্র-শ্রেণী-বিশ্বাস বিচারে মানুষকে পার্থক্য করে একজনের ওপর আরেকজনের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি যে ভিত্তিহীন একটা বিষয় সেটা সে বুঝতে পারে। তাই সে মানুষে মানুষে ভেদ যেমন করে না, তেমন শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে কোন অন্যায় সুবিধা নেবার চেষ্টাও করে না। সে জানে জীবকুলের সবার বিপক্ষে সর্ববিষয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি অসার। তাই অন্য প্রাণী বা উদ্ভিদের প্রতি তার আচরণও মানবিক। তার নৈতিকতা উচ্চ - কেননা সেটা কোন পুরস্কারের লোভ বা শাস্তির ভয় দিয়ে সীমায়িত নয়। সে নতুনকে নিঃশঙ্ক চিত্তে গ্রহন করতে পারে, তাই সে গোঁড়ামী মুক্ত। আবশ্যকীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধণ, পরিমার্জন ও সংশোধণে তার আপত্তি নেই, তাই সে সমাজ প্রগতির ধারক-বাহক।

বস্তুত, মানুষের সভ্যতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে উন্নতি ও বিকাশের সাথে বিজ্ঞানমনস্কতা ও তার পৃষ্ঠপোষকতার সরাসরি সম্পর্কটা বোঝা যায়। তাই নিজেদের উন্নতি, সমৃদ্ধি ও সুস্থিতির জন্য বিজ্ঞানমনস্ক হবার বিকল্প নেই। দুঃখজনক সত্যটা হচ্ছে এই যে, আমাদের পাঠ্যক্রমগুলো বিজ্ঞানের পাঠ দিলেও শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গড়ে ওঠার পাঠটি দেয় না। বরং উলটো পাঠের অবারিত সুযোগ করে দেয়া হয়। তাই দেখা যায়, পরিণতিতে যিনি আসলে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গড়ে উঠেছেন তার সেই অর্জনের পেছনে তার শিক্ষাক্রম, শিক্ষায়তন ইত্যাদির কোন ভূমিকা থাকে না। বরং ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটি নিয়ে প্রচুর পরিশ্রম করে তাকে বর্তমান অবস্থানটি অর্জন করতে হয়।

মানুষের মনে বিজ্ঞানমনস্কতাকে জাগিয়ে তোলার সেরা সময়টি হচ্ছে কিশোর বেলা। এই পর্যায়ে মানুষের ভাষাজ্ঞান অর্জিত হয়ে যায়। অর্থাৎ কোন কথা শুনে বা পড়ে সে তার মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারে, নিজের অনুভূতিকে যথাসম্ভব বলে বা লিখে বোঝাতে পারে। পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকায় সে অন্তসম্পর্কগুলো বুঝতে পারে এবং কার্যকারণ সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে। ফলে এইসময়ে তাদেরকে মুখ্য ভ্রান্ত ধারণাসমূহ সম্পর্কে অবগত করলে, সেগুলো কেন ভ্রান্ত তা যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভাবতে শেখালে, প্রশ্ন উত্থাপন করতে শেখালে, নিজে নিজে কীভাবে প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করা যায় তা শেখালে সে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গড়ে উঠবে। বলাইবাহুল্য, শিল্পকর্ম করতে নরম কাদামাটি প্রয়োজন, পোড়ামাটি নয়।

যারা মনে করেন মানুষের বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গড়ে ওঠাটা দরকার, এবং আরো দরকার এই ব্যাপারে সক্রিয় উদ্যোগ নেবার তাদের জন্য এখানে খুব ছোট একটা উদ্যোগের পরিকল্পনা পেশ করতে চাইছি। উদ্যোগটির নাম দিলাম ‘কিশোর বিজ্ঞানমনস্কতা কর্মশালা’। নামের মধ্যেই এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বর্ণিত আছে। এটির জন্য ব্যাপক কোন প্রচার-প্রচারণার দরকার নেই, বড়সড় টীমের দরকার নেই, প্রচুর যন্ত্রপাতি বা বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষকের দরকার নেই, এমনকি বড়সড় কোন ফান্ডেরও দরকার নেই। কর্মশালাটি ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য হবে। যারা প্রশিক্ষণ দেবেন তাদেরকে মনের দিক থেকে তরুণ এবং অবশ্যই বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। প্রথমে চার/পাঁচটি বিষয় ঠিক করতে হবে। সেগুলোর ওপর এমন কিছু প্রেজেন্টেশন দিতে হবে যা দিয়ে কিশোরদের মনে প্রশ্ন জাগিয়ে তোলা যাবে। এভাবে তারা বিদ্যমান কিছু অচলায়তনকে যৌক্তিকতার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেবে। প্রশিক্ষক তখন তাদেরকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন, সহায়ক ছবি বা ভিডিও দেখাবেন, তাদেরকে আরো প্রশ্ন করার ও সেগুলোর উত্তর খোঁজার পদ্ধতি শেখাবেন। এভাবে সপ্তাহে একদিন দেড়-দুই ঘন্টা করে দশ-বারোটি সেশন চালাতে হবে। প্রতিটি সেশনের শেষে মজার ক্যুইজের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং তাতে পাঁচ জন বা দশ জনকে উৎসাহমূলক পুরষ্কার দিতে হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে কর্মশালাটি আনন্দদায়ক ও আগ্রহোদ্দীপক হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে চার-পাঁচ জন উদ্যোক্তা মিলে বিষয়বস্তু নির্ধারণ, লেকচার ও প্রেজেন্টেশন তৈরি করা, সম্ভাব্য প্রশ্ন ও উত্তর সাজানো, ক্যুইজের প্রস্তুতি নেয়া এ’সব করতে হবে। পুরো এক প্রান্তিকের জন্য (তিন মাস) মেটেরিয়াল ও লোক জোগাড় হয়ে গেলে ধারেকাছের কোন স্কুলে (নিজের প্রাক্তন স্কুল হলে ভালো হয়) ছুটির দিনে কর্মশালা চালানোর অনুমতি চাইতে হবে। অনুমতি পাওয়া গেলে ঐ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচারণা চালাতে হবে যাতে তারা কর্মশালায় অংশগ্রহন করতে আগ্রহী হয়। কর্মশালার জন্য স্কুল ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া না গেলে এমন কর্মশালা চালানো একটু কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। সর্বোচ্চ পঁচিশ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে বসা যাবে এমন জায়গা (কক্ষ) হলেই চলে। একটা অসুবিধা হচ্ছে এই কর্মশালাটি একেবারেই গ্ল্যামারবিহীন। এমন কার্যক্রমে শিক্ষার্থী টানা একটু কঠিন বটে। সে’জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে করতে হয় এমন কিছু পরীক্ষণের ব্যবস্থা থাকা দরকার, লেকচারগুলোও চিত্তাকর্ষক হতে হবে।

শুধু বাংলাদেশে নয়, বাংলাভাষী সচলদের দেশ পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতেও এমন কর্মশালা হওয়া দরকার। কারিকুলাম প্রণয়ন, লেকচারের পয়েন্টগুলো ঠিক করা, প্রেজেন্টেশন বানানো এমন সব কাজে প্রবাসীরাও পুরোমাত্রায় সহযোগিতা করতে পারেন। একবার একটি গ্রুপের জন্য এ’সব তৈরি হয়ে গেলে তখন অন্য গ্রুপগুলো সেসব শেয়ার করতে পারবে। ফলে পরের দিকে খাটুনি ও ব্যয় দুটোই কমে যাবে। চেষ্টা থাকতে হবে যেন কোন পর্যায়ে কোন স্পন্সরের খপ্পরে পড়তে না হয়। বিজ্ঞানমনস্ক নন্‌ এমন ব্যক্তি যত জ্ঞানী বা দক্ষ হোন, তাকে কর্মশালার যেকোন কাজ থেকে সযত্নে দূরে রাখতে হবে।

এখানে যে পরিকল্পনাটির কথা বলা হলো সেটা খুবই সংক্ষেপে। আগ্রহীরা চাইলে এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে একে সম্পূর্ণ করতে পারেন।


মন্তব্য

স্যাম এর ছবি

উদ্যোগটি নিয়ে হয়তো নানা কথা বলা যাবে, বলবে - কিন্তু তার আগে পর্যন্ত যা লিখেছেন - বাঁধাই করে রাখার মত।
অসাধারন!!!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উদ্যোগটা যদি আপনি সমর্থন করে থাকেন তাহলে এই ব্যাপারে আপনার ভাবনাগুলো বলুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার ভাবনা! আমি আছি সঙ্গে। খান তানজীদ ওসমান।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। এই ব্যাপারে আপনার ভাবনাগুলো বলুন। কীভাবে থাকতে চান - মানে কোন্‌ কোন্‌ কাজটা করতে চান সেটাও বলুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

দূরে থেকে যতটুকু করা যায় করতে পারব। সিলেবাস, পেজেন্টেশান তৈরি, পড়ানোর জন্য তথ্য সংগ্রহ, ভিডিও লেকচার তৈরি করা এইসবে সাহায্য করতে পারি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যদি সিলেবাস তৈরিতে সাহায্য করতে পারেন তাহলে এই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করুন। তারপর একটু গুছিয়ে একটা লিখিত সিলেবাস সাজেস্ট করুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়!

আপনি বাস্তবায়নের একটা রূপরেখা দিয়েছেন। এ ধরনের প্রসারে বিজ্ঞানমনস্কতার আদলটা কেমন হওয়া উচিত - সে সংক্রান্ত আমার কিছু ভাবনা "আগামীদিনের বাংলাভাষী বিজ্ঞানানুরাগীদের কথা" লেখায় বলেছিলাম।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লেখার লিঙ্কটার জন্য ধন্যবাদ। সেখানকার আলোচনাটাও চমৎকার। আপনি যেহেতু ভাবনা অনেকটা এগিয়ে রেখেছেন সেক্ষেত্রে আপনি সম্ভাব্য কারিকুলামটা নিয়ে কাজ করুন। ভাবনাগুলোকে আরেকটু গুছিয়ে কারিকুলামের ফ্রেমওয়ার্কটা দাঁড় করান।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বিজ্ঞান-শিক্ষাকে কীভাবে শিক্ষার্থীর দর্শনে পরিণত করা যায় এটা আমার অনেক পুরানো প্রশ্ন। আমার ধারণা বিজ্ঞানের তত্ত্বের সঙ্গে সঙ্গে দৈনন্দিন জীবন এবং পারিপার্শ্ব বিশ্লেষণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের নিয়মিত অনুশীলন ক্লাস থ্রী-ফোর থেকেই ধাপে ধাপে চালু করা প্রয়োজন। আর মধ্যবিত্ত বাবামা'কে "বস্তুবাদী যুক্তিতে সমাজ বিশ্লেষন করতে শিখলে ছেলে হয় কিছু কইরা খাইতে পারবেনা বা বিপ্লব করতে চইলা যাবে শেষে আমাগো কিডা দেখবেনে" এইসব অমূলক ভয় থেকে মুক্তি পেতে হবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দর্শন (philosophy) ছাড়া বিজ্ঞান পড়ানোর ক্ষতিটা হচ্ছে এইখানে। হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন মিলে পানি তৈরি হয় এই ব্যাপারটা শেখে কিন্তু এখানে যে কোন ঐশ্বরিক ব্যাপার নেই সেটা ভাবতে শেখে না। তাই উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত বিজ্ঞান শেখা মেধাবীরা পর্যন্ত অযৌক্তিক বিশ্বাসগুলো থেকে বের হতে পারে না, আর আপনার মতো মানুষের মনে সেই পুরনো প্রশ্নটা বার বার "চ্যাগায়া" ওঠে।

আমার ধারণা বিজ্ঞানের তত্ত্বের সঙ্গে সঙ্গে দৈনন্দিন জীবন এবং পারিপার্শ্ব বিশ্লেষণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের নিয়মিত অনুশীলন ক্লাস থ্রী-ফোর থেকেই ধাপে ধাপে চালু করা প্রয়োজন।

সহমত। আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞান পড়ানো যখন শুরু হবে তখন থেকেই প্রায়োগিক জীবনে এর অনুশীলন থাকতে হবে।

বস্তুবাদী যুক্তিতে সমাজ বিশ্লেষন করতে শিখলে ছেলে হয় কিছু কইরা খাইতে পারবেনা বা বিপ্লব করতে চইলা যাবে শেষে আমাগো কিডা দেখবেনে

শেষমেশ বাবা-মা'কে কতোজন দেখতে পারে (ইচ্ছে করে বা সমর্থ হয় বা বাধ্য হয়)? এই ব্যাপারে পরহেজগার-মুত্তাক্বীদের উপর সার্ভে চালালে তাদের কতোজন ফুল মার্কস পাবেন? সত্যগুলো আমাদের চারপাশে ছড়ানো আছে কিন্তু নিজের ভয়েই সেগুলো যাচাই করি না।

অঞ্জন দত্তের একটা গানের লাইন মনে পড়লো

সংসারটার হাল ধরেছে বখাটে তার ছোট ছেলে
এক কাপ চা দিয়ে গেছে কখন যেন সাত-সকালে


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ওডিন এর ছবি

দর্শন (philosophy) ছাড়া বিজ্ঞান পড়ানোর ক্ষতিটা হচ্ছে এইখানে। হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন মিলে পানি তৈরি হয় এই ব্যাপারটা শেখে কিন্তু এখানে যে কোন ঐশ্বরিক ব্যাপার নেই সেটা ভাবতে শেখে না।

চলুক

দুর্দান্ত এর ছবি

সহমত।

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার প্রস্তাবনা, কিন্তু বাস্তবায়ন অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিন। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত কিছু পাগল কিসিমের মানুষকে উদ্যোগ নিয়ে প্রথমে চাকাটা সচল করতে হবে। প্রথম দলটি সফল হলে ক্রমে ক্রমে দেশব্যাপী সহযোগী দল গড়ে উঠতে পারে। আপাততঃ প্রস্তাবনাটিকে সাধুবাদ জানালাম। চলুক

আব্দুল্লাহ এ.এম.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঠিক, প্রথম চাকাটা চালানোই কঠিন ব্যাপার। উদ্যোগটাতে আপনার সমর্থন থাকলে এই ব্যাপারে আপনার ভাবনাগুলো আরো বিস্তারিত বলুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট। চলুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

তুমুল প্রতিযোগিতা ওই বয়সটাতে; যতটা নিজের জন্য , তারচেয়ে অনেক বেশি বাপ-মা এর ক্রেডিট নেবার একটা মওকা করে দেবার জন্য। তাই, প্রথমে -- ওই বয়সের বাচ্চা আছে এমন বাপ-মা এর কর্মশালা করাটা বেশি দরকার বলে মনে হয় না? (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

না। বাবা-মা'দের মনের গঠনটা অলরেডি তৈরি হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে বিজ্ঞানমনস্ক না হয়ে থাকলে তাদেরকে হেদায়েত করার জন্য এই কর্মশালা যথেষ্ট নয়। এই কর্মশালাটা ভাষা প্রতিযোগ, গণিত অলিম্পিয়াড, প্রোগ্রামিং কনটেস্ট বা ক্লোজ আপ ওয়ান-এর মতো নয়। তাই এখানে বাবা-মা'র ক্রেডিট নেবার কোন স্কোপ নেই। নিতান্তই গ্ল্যামারবিহীন, মিডিয়া ফোকাসবিহীন মানস গঠনের কর্মশালা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীলম এর ছবি

নিজেদের মতো করে অনেকেই অনেক কাজ করছে। খুব একটা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর দরকার পড়ে না। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকেই এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছে, কাজ করছে।

তবে যে ব্যাপারটা বেশি জরুরী সেটা হলো কেউ একজন এগিয়ে আসবে এটা না ভেবে নির্দিষ্ট কাউকে বা কয়েকজনকে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে দায়িত্ব দিয়ে দেয়া। তিন-চারজনই যথেষ্ট। তারা আবার তাদের পরিচিতদের নিয়ে কাজটা এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের এখানে সমস্যাটাই হচ্ছে আমরা মনে করি কেউ একজন করবে, এটা আমার দায়িত্ব না।

আর তাছাড়া বাকি ব্যাপারগুলোতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। স্কুলে কর্মশালার ব্যাপারে দু'একটা ব্যতিক্রমী স্কুল ছাড়া বেশির ভাগ স্কুলই আগ্রহ দেখায়, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকেই এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছে, কাজ করছে।

যদি কেউ বা কোন গ্রুপ অলরেডি কাজ শুরু করে দিয়ে থাকে, তাহলে তাদের সাথে যোগাযোগের উপায়টা জানান। বাকিরা সেখানে নিজের অংশটুকু যোগ করলেই চলবে।

যদি অলরেডি কাজ শুরু হয়ে থাকে তাহলে আপনার বলা 'পিলো পাসিং'-এর সমস্যাটা থাকার কথা না।

আর তাছাড়া বাকি ব্যাপারগুলোতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। স্কুলে কর্মশালার ব্যাপারে দু'একটা ব্যতিক্রমী স্কুল ছাড়া বেশির ভাগ স্কুলই আগ্রহ দেখায়, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা।

এ'খানে আপনার সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করি। এই কর্মশালার বিস্তারিত শুনলে বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্কুল অনুমতি দেবে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

খুবই গুরুত্বপূর্ণ লেখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান এমনকি জীববিদ্যার অনেক প্রফেসরকে দেখেছি শৈশবের অন্ধবিশ্বাস আঁকড়ে ধরে রেখেই শিক্ষা প্রদান করতে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এমবিবিএস পাশ করে জাকির নায়েক, ফিজিক্সে পিএইচডি করে শমশের আলী হবার কোটি কোটি উদাহরণ আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

চলুক চলুক চলুক খুব চমৎকার এবং গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। সাথে আছি। আর সত্যি সত্যি এমন কিছু শুরু করা গেলে আরও অনেককে সাথে পাওয়া যাবে।
তবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে একটি কথা বলতে পারি, কিশোর বয়সের ছেলে মেয়েরা প্রাকটিকাল কিছু হাতে কলমে জানতে পারলে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠে। ছোটবেলায় একবার নকল আগ্নেয় গিরি দেখেছিলাম সায়েন্স ফেয়ারে, তারপর থেকে রসায়ন আমাকে খুব মুগ্ধ করতো।

আমরা সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করি কিন্তু বিজ্ঞান ধারন করিনা ভিতরে। আমার পরিচিত এক ভাইয়া ফার্মেসি তে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম ছিলেন, কিন্তু উনি পাথরে বিশ্বাস করতেন, সারা শরীরে পাথর ধারন করতেন, খুবই হাস্যকর একটা ব্যাপার। অনেক তর্ক করেছি, অনেকভাবে ব্যাখ্যা করেছি, বুঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস অন্ধই হয়ে থাকে, তাই নিষ্ফল প্রচেষ্টা মন খারাপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনি যদি সত্যি এমন কাজে থাকতে চান তাহলে আপনি কী কী করতে পারবেন সেটা নির্দিষ্ট করে বলুন।

বিজ্ঞান মেলা/প্রদর্শনী জাতীয় জিনিস বিজ্ঞান শিক্ষাকে জনপ্রিয় করে হয়তো তবে তা বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি করে না। আমার একটানা দশ বছর জাতীয় বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে প্রকল্প উপস্থাপন ও বক্তৃতা প্রদনের অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু সেখানে এমন কিছু দেখিনি যা আমাকে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। সেখানে ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়, বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতাতে ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বোঝানো হয় কীভাবে মহাগ্রন্থে বিজ্ঞানের সব কিছুরই ব্যাখ্যা আছে ইত্যাদি।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের অনেকগুলো বিষয়ে বিএসসি থেকে শুরু করে পিএইচডি ডিগ্রী পর্যন্ত দেয়া হয়। নিচে বিশ্ববিদ্যালয়টির লোগো দেখুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মটো হিসাবে লেখা আছে, "ঐশী জ্যোতি আমাদের পথ প্রদর্শক"।

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আরো একটা..
মন খারাপ

--সাদাচোখ

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

পাণ্ডবদা, রুয়েট কুয়েট এর মটো দেখে বাকহারা হয়ে গেলাম।
ঐশী জ্যোতি যদি ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীদের পথ দেখায়, তাহলে আর কিছু বলার নাই! মন খারাপ

আপনি যদি সত্যি এমন কাজে থাকতে চান তাহলে আপনি কী কী করতে পারবেন সেটা নির্দিষ্ট করে বলুন।

এই বিষয়ে আমি অবশ্যই থাকতে চাই।
কি কি করতে পারব তা বলার আগে অন্য কিছু কথা বলি।
প্রথমত আসলে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত পরিবার থেকে ছোট থেকেই বাচ্চারা এমন ভাবে ধর্ম শিক্ষা পেয়ে থাকে, যে তারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়েও বিজ্ঞান মনস্ক হয়ে উঠতে পারেনা।
দ্বিতীয়ত, আমাদের পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাস এমন হয় যে তাতে আমাদের জোর করে একগাদা বিদ্যা গিলতে হয়, যার স্বাদ ও আমরা পাইনা, তাই হজম ও হয়না।
ছোট থেকে আমরা বিবিধ বিষয় নিয়ে একগাদা পড়ে মানুষ হতে চেষ্টা করি, ফলশ্রুতিতে কোন কিছুই মাথায় নিতে পারিনা। নবম দশম শ্রেণীর সমাজ বইতে আমরা ভূগোল, ইতিহাস সব পড়েছি, কিন্তু খুব কম মানুষই একটা ম্যাপ ঠিকমত আঁকতে পারে, অথবা ম্যাপ দেখে ঠিকমতো বুঝতে পারে!
আর নিজের দেশের ইতিহাস, কয়জন জানে, আমি সন্দিহান। অন্য বিষয়গুলোর উদাহারন আর টানলাম না।

আসলে আমার কথার মূল বক্তব্য হল, সবাই যে বিজ্ঞান ভালবাসবে তা নয়, আবার সবাই দর্শন ও ভালবাসবেনা, আবার হয়ত অনেকে থাকবে দুটোই পছন্দ করছে। প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দের কিছু বিষয় থাকে,সে জায়গা বা সে বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করলে পড়াশুনাটা অনেক আনন্দময় হয়ে যায়।
তখন আর না বুঝে মুখস্ত করতে হয় না সূরা ফীলের ফযিলত।

আমি যখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি, রসায়ন দ্বিতীয় বিভাগ এবং বলবিদ্যা তেমন ভালো বুঝতে পারতাম না।
বলবিদ্যার তাও পরবর্তীতে গতি হয়েছিল, কিন্তু রসায়নের অবস্থা ছিল ভয়ানক।
যখন ভার্সিটি তে ভর্তি হই আমি, প্রথম বর্ষে উঠে রসায়ন শিখেছিলাম সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে, একা একা। এবার যখন ইংলিশে রসায়ন পড়ি, তখন সব কিছু পরিস্কার হয়েছিল।
আসলে আমাদের পাঠ্যপুস্তক গুলো সব আক্ষরিক অনুবাদ, তাই অনেক সময় অনেক কথার অর্থ পরিস্কার হয়না। আমরা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাংলাতে পড়ছি, কিন্তু সেই বাংলাও বুঝতে পারছিনা। কোন মানে হয়না!
সুতরাং আমার মতে, যদি নিজের ভাষায় সহজ ভাবে বিজ্ঞানের খুব চমৎকার বিষয়গুলো বুঝান যায়, এবং সেইমত পাঠ্য পুস্তক অথবা লেকচার থাকে তবে সবাই সহজভাবে নিজের ভিতরে নিতে পারবে বিষয়গুলো।
আর একটি বিষয় হল, আমরা কিছু শিখার চাইতে ফলাফল বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি, যার ফলশ্রুতিতে না বুঝে মুখস্ত।

আরেকটি দরকারি বিষয় হল আপনি কোথা থেকে শুরু করবেন। আমার মতে শুরুতেই ঢাকা থেকে শুরু করতে চাইলে হয়ত ইতিবাচক ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে, ঢাকায় সবার ভিতরে প্রতিদ্বন্দ্বীভাব এত বেশি তাই মনে হল, অবশ্য আমি ভুল ও হতে পারি।

যাই হোক, এবার আসি আমি কি করতে পারব। দেশের বাইরে থেকে আমি নিজে যে বিষয়গুলো কিছুটা বুঝি (রসায়ন, জীববিজ্ঞান) সেটি সহজ ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করতে পারি, বা সেই ধরনের কিছু করতে পারি। চাইলে ফিনল্যান্ডে ঠিক কি ধরনের সিলেবাস ফলো করা হয়, খোঁজ নিয়ে বের করতে পারি। যদি এই বিষয় নিয়ে আপনারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে থাকেন, আমার পরিচিত যারা ঠিক এইভাবে চিন্তা করে তাদের সাহায্য নিতে পারি উদ্যোগটি সম্প্রসারণের জন্য। আর আমার ডিগ্রী শেষ হলে দেশে ফিরে সরাসরি সময় দিতে পারব যে কোন কাজেই।

এখন ভেবে দেখার বিষয় ঠিক কোথা থেকে শুরু করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চাইলে ফিনল্যান্ডে ঠিক কি ধরনের সিলেবাস ফলো করা হয়, খোঁজ নিয়ে বের করতে পারি।

এই কাজটা করুন প্লিজ। আরো ভালো হয় ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে ও ডেনমার্ক এই চারটা দেশের স্কুল পর্যায়ের কারিকুলামের বিস্তারিত যদি জানতে পারেন। তাহলে অনেক ক্ষেত্রে আর নতুন করে চাকা আবিষ্কার করতে হবে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ঠিক আছে পাণ্ডবদা, আমি চেষ্টা করব ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে ও ডেনমার্ক এই চারটা দেশের স্কুল পর্যায়ের কারিকুলামের বিস্তারিত জানতে। আজ থেকেই কাজে লেগে যাচ্ছি। হাসি

পুতুল এর ছবি

ক্লাস টুতে অংকে দুটো গোল্লা পেয়েছিলাম। ২ যোগ ২ এ চার কেন হবে বা ৪ কে দুই দিয়ে ভাগ করলে কেন ২ হবে? এই সব জটিল সমস্যার সমাধান বোঝিয়ে দেয়ার মতো শিক্ষা আমার পরিবারে কারো ছিল না। পরে শুরু করলাম মুখস্ত করা। কিন্তু ফলাফর শূন্যই রয়ে গেল।
আমাদের গণিত শিক্ষক ছিলে শাহজাহান মাওলানা। আমাদের অংক করতে দিয়ে তিনি প্রতিবেশী শিক্ষকের সাথে শরিয়ত মারেফত নিয়ে তুমুল তর্কে মুখে ফেনা তুলে ফেলতেন। সেই অবশরে নিজে চিন্তা করে একটা অংকের ফল ঠিকই মিলিয়ে ফেললাম। স্যার অংকের নিচে লিখেদিলেন "অংকের ফল মিলিয়া গিয়াছে, কিন্তু নিয়ম ঠিক হয় নাই" সেইজন্য আবার শূন্য পেলাম।
কোন অদ্ভত কারণে পাস করে সিক্সে উঠে গেলাম। ক্লাস সেফেন থেকে বীজ গণিত। কিছুই বুঝতাম না। মুখস্ত বিদ্যার জোড়ে পাসও করে ফেলতাম। জ্যামিতি মুখস্ত করলেই ৩০ নম্বর। সেভাবেই ক্লাশ নাইনে উঠে গেলাম। নাইনে উঠে পেলাম রসায়ন। কী বিপদ! রসায়ন পড়াতেন আমাদের বিখ্যাত দেলোয়ার স্যার। না বুঝলে তার একমাত্র ঔষধ ছিল মাইর। মাইরের ভয়ে রোজার বন্ধে রসায়ন বইটা মুখস্ত করে ফেললাম। ফলাফল চমকপ্রদ। না বুঝেই রসায়নে বিরাট সাফল্য এসে গেল।

গেলাম বিজ্ঞান মেলায়। তখন সরকারী ভাবে প্রতিটি থানায় অনুষ্ঠিত হত বিজ্ঞান মেলা। একটা বড় বালতি দড়ি দিয়ে ছাদের সাথে ঝুলিয়ে পানি ভর্তি করলাম। সেলাইনের পাইপ ুপরের বালতিতে ঢুকিয়ে নীচে আর একটা বালতিতে সংগ্রহ করার ব্যবস্থা হল। নতুন একটা বিষয় শিখলাম; কী ভাবে বাংলা সাবান তৈরী করা যায়। আটা বা ময়দার সাথে কী কী মিশিয়ে যেন বাংলা সাবান বানানো যায়। এখন আর মনে নেই। কিন্তু তখন মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই হল বিজ্ঞান শিক্ষা।

সেই মেলার সব চেয়ে বড় স্মৃতি হচ্ছে বকৃতা। আমাদের ক্লাসের সব চেয়ে ভাল তিনজস ছাত্রের মধ্যে একজন বোরহান। তার বাবা ডাক্তার। বকৃতায় ডাক্তারের ছেলে বোরহান বিজ্ঞানী কেন হতে চায় তা বুঝিয়ে বলল; আমি এটম এবং হাইড্রোজেন বোমার চেয়েও শক্তিশালি একটা বোমা বানাব। যাতে আমেরিকা এবং রাশিয়া ইসলামের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়।

দুর্ভাগ্য আমাদের সে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করতে পারেনি। আমরা বোমাটা আর পেলাম না। শিক্ষিত পরিবারের একটা ছেলের এই হল চিন্তা। আমি লজ্জা পেতাম, কারণ আমার পরিবারে আমিই কেবল লিখতে পড়তে শিখেছি তখন। কিন্তু এখন ভাবি আমার কী সৌভাগ্য! আমার মাথায় আগে থেকে কোন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সূত্র কেউ ঢুকিয়ে দেয়নি। স্বাধীন ভাবে নিজে চিন্তা করে প্রতিটি মত ও পথের গ্রহন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি পারছি।

স্কুলে ধর্মশিক্ষা স্বাধীন চিন্তার জন্য বড় একটা বাঁধা। লেখাপড়ার পদ্ধতি বা আরো অনেক অনেক কিছুতো আছেই। বিজ্ঞানও পড়ানো হয় বাইবেল-কোরান-বিজ্ঞানের সমন্য়টা বোঝার জন্য। তো এই পরিস্থিতিতে স্বাধীন ভাবে চিন্তা করা বেশ কঠিন। স্কুলগুলো কখনো স্বাধীন চিন্তা কাউকে করতে দেয় না।

সে জন্যই এই ধরণের কর্যকলাপ ভীষণ ভীষণ জরুরী। আমি নিতান্তই মূর্খ মানুষ। এই ব্যাপারে কোন রকমের সহযোগী করার যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু কাজটা সাংঘাতিক রকমের জরুরী। দয়া করে শুরু করুণ।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রকৃতি থেকে যে শিক্ষা নিতে পারে, ট্রায়াল এন্ড এরর ভিত্তিতে যাচাই করে করে নিজের জ্ঞানের ভিত গড়ে তাকে শাহজাহান মাওলানা বা দেলোয়ার স্যার কী শেখাবেন? জীবনে যে অল্প কয়েকজন পূর্ণাঙ্গ সেলফমেড ম্যানের দেখা পেয়েছি আপনি তাদের অন্যতম। আপনার জীবনাভিজ্ঞতা সবসময়ই আমাকে আকর্ষণ করে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পুতুল এর ছবি

আমার বড় সৌভাগ্য হচ্ছে; আমি বেশীর ভাগ সময় সঠিক মানুষের সঙ্গ পেয়েছিলাম। এই যেমন এখানে।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ওডিন এর ছবি

স্কুলে ধর্মশিক্ষা স্বাধীন চিন্তার জন্য বড় একটা বাঁধা। লেখাপড়ার পদ্ধতি বা আরো অনেক অনেক কিছুতো আছেই। বিজ্ঞানও পড়ানো হয় বাইবেল-কোরান-বিজ্ঞানের সমন্য়টা বোঝার জন্য। তো এই পরিস্থিতিতে স্বাধীন ভাবে চিন্তা করা বেশ কঠিন। স্কুলগুলো কখনো স্বাধীন চিন্তা কাউকে করতে দেয় না।

এইটা ভাল বলেছেন ভাইয়া। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ধর্মশিক্ষার থেকেও স্কুলে এই সিউডো-বিজ্ঞান ক্লাশগুলোকে আগে ঠিক করা দরকার। আমি স্কুলজীবনে ধর্মশিক্ষা ক্লাশে ধর্মের বিভিন্ন্র কেরামতি নিয়ে যত না গল্প শুনেছি, তার থেকে বেশি ঐশী কাজকারবারের কথা শুনেছিলাম আমাদের সেভেন এইটও এর সায়েন্স সারের কাছ থেকে। মরিস বুকাইলি ছিলেন ওনার আইডল মন খারাপ

দিগন্ত এর ছবি

"দুর্ভাগ্য আমাদের সে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করতে পারেনি।"

- সৌভাগ্য বলেন, আরেকটা নাফিস পেয়ে যেতাম আরেকটু হলেই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

পুতুল এর ছবি

সৌভাগ্য তো বটেই। দুর্ভাগ্য বলেছিলাম শ্লেষ হিসাবে। মানুষকে ভুল স্বপ্ন দেখানোর চেয়ে বড় বিপদ আর কিছু হতে পারে না।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

পাঠ্যবইয়ের সব প্রয়োজনিয় বিষয় বোধগম্য করে ব্যাখ্যা করে একটা ওয়েবসাইট বানানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। বেশ কয়েকজন সমমনাও এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সেটা জন্মানোর আগেই থেমে গেছে। একজন শক্ত সমন্বয়ক যদি ব্যস্ত মানুষদের থেকে সময় বের করে না নেন তাহলে কিছুদিন পরে এই উদ্যোগ থেমে যাওয়ার সম্ভাবণা রয়েছে বলে আমার মনে হয়। চমৎকার উদ্যোগ। কিন্তু বলতে চাইছি যে, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের উদ্যোগী রাখাটাও একটা বড় দায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেটা মনে রাখলে ভালো।

এই উদ্যোগটার কথা আগেও বলেছিলেন আপনি। আমি সবসময়ই সঙ্গে আছি।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

তোমাকে যে পরিকল্পনাটার কথা জানাবো বলেছিলাম - এটা হচ্ছে সেটা। এটা নিয়ে আগে বলিনি। আগের পরিকল্পনা একটু ভিন্ন বিষয়ে ছিল। এখানে আমি বিজ্ঞান শিক্ষা জনপ্রিয়করণ, দরকারী বৈজ্ঞানিক বিষয়াবলী জানানোর চেয়ে দর্শনটার ওপর জোর দিচ্ছি। নয়তো দক্ষ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-গবেষক হলো ঠিকই কিন্তু পথ নির্দেশনার জন্য ঐশী জ্যোতির ওপর নির্ভর করা শুরু করলো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

ওয়েবসাইট ভাল উদ্যোগ, কিন্তু বাংলার কত শতাংশ মানুষ ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারে সেটাও মাথায় রাখতে পারে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অনার্যের প্রস্তাবিত বিষয়ে ওয়েবসাইটটা ছাপানো বই/গাইডের একটা অনলাইন সংস্করণ হতে পারে। তবে দ্বিমুখী যোগাযোগের জন্য ওয়েবসাইটের বিকল্প নেই। আবার দেশের বেশিরভাগ মানুষের ইন্টারনেট অ্যাক্সেস নেই বলে ছাপানো বই/গাইডটাকেও উপেক্ষা করার উপায় নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার উদ্যোগ। যদিও দেশের বাইরে থাকি তবুও আমিও কোনভাবে সাথে থাকতে আগ্রহী।

ছাইপাঁশ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার সময় থাকলে কয়েকটা লেকচার, প্রেজেন্টেশন দাঁড় করান। তাহলে সবাই সেগুলো ব্যবহার করতে পারবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মনিরুল ইসলাম  এর ছবি

কয়েকটা পদ্ধতিতে কাজ শুরু করতে পারি

১।এইসব কাজে সবচে বেশি আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসে বিশ্ববিস্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ।তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি করে ছোট সেল গঠন করা যেতে পারে যারা সেইসব শহরের স্কুলগুলোতে নিয়মিত কার্যক্রম চালাতে পারবে ।

২।কন্টেন্ট দুভাবে তৈরি করা যেতে পারে,এক সহজ ভাষায় বই খুব উন্নত গ্রাফিক্যাল প্রেজেন্টেশন সম্বলিত পুস্তিকা, যেগুলো খুব অল্পমুল্যে বা বিনামুল্যে স্কুলগুলোতে বিতরন করা যেতে পারে এবং আরেকটি পদ্ধতি হল ভিডিও ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে সেগুলো প্রদর্শন ।এই কাজ গুলো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সেলগুলো পরিচালনা করবে।

৩।কন্টেন্ট গুলো কেন্দ্রীয়ভাবে তৈরি করতে হবে ।এর জন্য ফান্ডিং করতে হবে ।

৪।স্কুলগুলোতে সহজ অনুমোদন পাওয়ার জন্য সরাসরি ধর্মকে আক্রমন করা যাবে না ,বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা গড়ে ওঠা কেই প্রাধান্য দিতে হবে ,আর বিজ্ঞানের অগ্রগতির ইতিহাস পড়াতে হবে যাতে এর সাথে ধর্মের সম্পর্ক তারা নিজেরাই বুঝতে পারে ।যন্ত্রপাতি কিভাবে কাজ করে সেটা নিয়ে আলোচনা করে লাভ হয় না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

১. এই কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার দরকার আছে ঠিকই তবে যেহেতু তাদের মানস গঠন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি তাই মাথার উপরে আরেকটু অভিজ্ঞদের লাগবেই।

২. পুস্তিকা ও ভিডিও-স্লাইড দুটোই লাগবে। ক্লাসে ভিডিও বা স্লাইড দেখিয়ে লেকচার দেবেন আর বাসায় যাবার সময় বুকলেটটা ধরিয়ে দেবেন। তাতে পরে কোন কথা মনে না থাকলে শিক্ষার্থীরা সেটা ঝালাই করে নিতে পারবে।

৩. পুস্তিকাতে কী লেখা হবে, ভিডিও-স্লাইডে কী দেখানো হবে সেটা কেন্দ্রীয়ভাবে করা গেলে আসলে তেমন কোন খরচই পড়বে না। সেক্ষেত্রে স্বাধীন উদ্যোক্তাদের গ্রুপ ঐ কনটেন্ট জোগাড় করে নিজেরাই কর্মশালা চালাতে পারবে।

৪. কিশোরদের মনে ভাবনা জাগিয়ে তোলা, সঠিক পদ্ধতিতে চিন্তা করতে শেখানো, গুছিয়ে প্রশ্ন করা, নিজে নিজে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার পদ্ধতি, বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ কী করে করতে হয় এ’সব নিয়েই শুরুটা করতে হবে।

আপনার বলা বাকি বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য নিচে দিগন্তের মন্তব্য আর আমার উত্তর দেখুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

এই নিয়ে পরিকল্পনা করা দুরূহ ব্যাপার। যদি আপনার বিজ্ঞানচিন্তার আদর্শ থেকে ধর্মকে কোনোভাবে বাদ না রাখতে পারেন তাহলে আপনার প্রচেষ্টা অংকুরে বিনষ্ট হবার সমূহ সম্ভাবনা। আবার যদি ধর্মকে বাদ রাখতে পারেন তাহলে সফল হবার সম্ভাবনা অনেকগুণে বেড়ে যায়, কারণ বাঙালী এতদিনে চাকরির সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। আবার একেবারে ধর্মকে বাদ রাখলে বিজ্ঞানচিন্তার প্রসার হয় না - কারণ বিজ্ঞানচিন্তা সরাসরি বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক।

এই তিনটে পর্যবেক্ষণ থেকে আমি সিদ্ধান্তে এসেছি যদি ছোটদের পড়াতেই হয়, তাহলে তাদের বিজ্ঞনের ইতিহাস পড়ানো উচিত। বিজ্ঞানের ইতিহাস মানে রেনেসাঁর সময়ে কি ভাবে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কারগুলো করেছিলেন প্রচলিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে। এর সাথে এদের বিজ্ঞানচিন্তার সম্পর্ক স্থাপন করে কর্মশালার আয়োজন করতে পারলে ছেলেপুলেও আসবে আর তাদের মধ্যে বিজ্ঞানচিন্তা স্লো-পয়সনিং করাও যাবে।

আরো একটা পথ হল দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ধরে সেগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কি কি ভেবেছে সেই বিবরণ দেওয়া। কি কি পরীক্ষার মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্তে এসেছেন বিজ্ঞানীরা সেও বোঝাতে হবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই ব্যাপারটি নিয়ে পরিকল্পনা করার দুরূহতার ব্যাপারে আমি সচেতন। তাই ব্যাপারটা আপনাদের পাতে দিয়েছি, যাতে দশজনের মাথা খাটিয়ে প্রকল্পটা দাঁড় করানো যায়। বিজ্ঞানচিন্তার সাথে ধর্মের অবশ্যম্ভাবী সংঘর্ষের ব্যাপারটাই সবচে’ vulnerable অংশ। একটা পর্যায়ে গিয়ে এটাকে আর এড়িয়ে যাবার উপায় থাকবে না। কারিকুলাম, লেকচার, প্রেজেন্টেশন, মূল্যায়নপত্র - এসবে ব্যাপারটিকে রাখঢাক করা গেলেও কিশোরদের প্রশ্নের মুখে আর রাখঢাক করা যাবে না। তীক্ষ্ণ মেধার কিশোরের অভাব নেই। তারা ঠিক ঠিক দ্বন্দ্বটা সামনে নিয়ে আসবে এবং এর উত্তর জানার জন্য প্রশিক্ষককে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবে।

বিজ্ঞানের ইতিহাস পড়ানোর দরকার তো আছেই। গল্পগুলো না বললে কিশোররা মজা পাবে কী করে, আর বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার গতিপ্রকৃতিটাই বা বুঝবে কী করে। তবে এতেও ধর্মের সাথে বিজ্ঞানচিন্তার দ্বন্দ্বের ওপর প্রশ্নগুলো এড়াতে পারবেন না।

দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ ও সেগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ওপর বরং আমি বেশি জোর দেবো। এখানে একটা ঘটনা থেকে কী করে সমতুল অন্য ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করা যায় সেটা শেখাতে হবে। এভাবে ক্রমান্বয়ে লিঙ্কিং আপ, ফোরকাস্টিং এগুলো শেখাতে হবে। ঘটিত বা ঘটমান বিষয়ের যৌক্তিক ব্যাখ্যা কী করে করা যায় সেটা শেখাতে হবে। এমনসব পরিস্থিতিতে অতীতে বিজ্ঞানীরা কী ভাবে সিদ্ধান্তে এসেছেন সেই গল্প করতে হবে।

তবে যা-ই করুন না কেন একটা পর্যায়ে বিরুদ্ধস্রোতের মুখোমুখি হওয়া কোনভাবেই আর ঠেকাতে পারবেন না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

"তবে যা-ই করুন না কেন একটা পর্যায়ে বিরুদ্ধস্রোতের মুখোমুখি হওয়া কোনভাবেই আর ঠেকাতে পারবেন না।"

- এবং এইখানেই কাজটা চ্যালেঞ্জিং।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শিশিরকণা এর ছবি

পুরা কাজটাই আসলে লিডিং আপ টু দিস মুখোখমুখি হওয়া। এইখানে এসে বিজ্ঞানের সহজ উত্তর আছে, ধর্মের নাই। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ যেখানে গিয়ে পল্টি খায় সেটা হচ্ছে, "মইরা গেলে হাড্ডি" এই সহজ জিনিসটা হজম করতে পারে না। এত কিছু করে মরে যাওয়া মাত্র সব শেষ হয়ে যাবে এই হাহাকার থেকে মানুষ রূপকথার রঙ্গিন নানান আশায় ভুলে।এবং তারপর সেই পরকালের আশায় আরও কত ছাগলামি করে সে তো জানাই আছে। এইখানে যদি ভাল করে বুঝানো যায় যে, আমি মরে গেলেও আমার প্রতিটা কাজ থেকে ভবিষ্যতের মানুষের জীবন কিভাবে প্রভাবিত হবে, বা আমার আজকের একটা কাজ আমার ভবিষ্যতকে কিভাবে পরিবর্তন করতে পারে সেটা বুঝানো যায়, তাহলে অযথা ধর্মের রঙ্গিন ফুলানো বেলুনের তলে আশ্রয় খুঁজার দরকার মনে করবে না।

২/ বাচ্চারা বাসায় বাপ মা দাদী নানী থেকে নানারকম ধর্মীয় মিথ শুনে আসবেই, সেগুলা ডিবাংকিং এর জন্যও প্রস্ততি থাকা প্রয়োজন। সবচে' ভালো হয় শিশুদের নিজেদেরকেই তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বললে। শিক্ষক কেবল তাদেরকে সঠিক প্রশ্ন করে চিন্তার সুতাটা হাতে ধরিয়ে দেবে। তবে এইরকম এক্সপ্লোরেটরি চিন্তার একটা সন্তোষজনক পরিসমাপ্তি টেনে দিতে হবে, যাতে তারা আবার ঘুরে গিয়ে ধর্মের মধ্যে উত্তর খুঁজতে না যায়। ধর্মের সুবিধা আছে দল ভারি করার জন্য ইচ্ছেমত আজগুবি কথা দিয়ে উত্তর গছিয়ে দেয়ার।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নৈতিকতার ভিত্তি খোঁজার জন্য ধর্মের শরণাপন্ন হওয়া যে দরকার নেই সেটা বেশিরভাগ মানুষ বোঝে না। 'নৈতিকতা শিক্ষা' বলে কোন শিক্ষা দেয়া হয় না বলে নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ বানাতে তাকে ধর্মের দিকে ঠেলে দেয়া হয়।

প্রশিক্ষক যে শিক্ষার্থীকে চিন্তা করতে, প্রশ্ন উত্থাপন করতে, নিজেই উত্তর খুঁজতে সাহায্য করবেন সে'কথা আমি বলেছি। শিশু-কিশোরদের উপর আমার আস্থা আছে। তাদেরকে একবার সুতোটা ধরিয়ে দিলে তারা জাল ঠিকই গুটিয়ে আনতে পারবে। বড় হলে কেউ কেউ লাইনচ্যুত হবে হয়তো, তবে বড় অংশ বিজ্ঞানমনস্ক থাকবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত। "সদা সত্য কথা বলবে", "অন্যের উপকার করবে, কারো ক্ষতি করবে না", "গুরুজনদের শ্রদ্ধা করবে", "সৎ পথে চলবে" এই শিক্ষাগুলো আমরা বাসা থেকেই পেতে পারি। এরজন্য ধর্মশিক্ষার দরকার নেই। বিদ্যালয়গুলো জ্ঞানদান না করে (নৈতিক) শিক্ষাদান করা শুরু করলে এই বাচ্চাগুলো কোথায় যাবে?

তবে খুব বেশী কিছু আশা করাটা মনে হয় প্রথমেই একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, কেননা তাদের চিন্তাটা বাধাগ্রস্ত করার জন্য মুখিয়ে আছে তাদেরই পরিবারের শিক্ষিত (?) সদস্যরা, বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ - যারা যেকোন মুক্তচিন্তাকে ধর্মের অসাড় ও ভ্রান্ত ধারণার বুল্ডোজার দিয়ে পিষে ফেলতে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু কিছু সংখ্যক শিশুকিশোরেরও যদি মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে সেটাও অনেক বড় পাওয়া। এটাকে সম্বল করেই একসময় অনেক বড় পরিবর্তন হবে এতটুকু আশা তো করাই যায়।

আপনার এবং আপনাদের প্রচেষ্টাকে স্যালুট এবং শুভকামনা।

ফারাসাত

শিশিরকণা এর ছবি

নৈতিকতা শিক্ষা প্রসঙ্গে মনে পড়ল, আমাদের স্কুলে একবার এরকম একটা প্রজেক্টের আন্ডারে আমাদের, "ভ্যালুস/ নৈতিকতা" নামে একটা ক্লাস নেয়া হত। সেখানে কন কাজটা ভালো কোনটা খারাপ, কেন খারাপ নিজেরা বিশ্লেষণ করতাম। কেন রাগ লাগছে, মন খারাপ হচ্ছে অনুভূতি ইত্যাদি ধরে ধরে উচিত অনুচিত বুঝানোর চেষ্টা করা হতো। মিশনারী সিস্টারদের তৈরি প্রোগ্রাম ছিলো সেটা মাদকাসক্তদের লাইনে আনার উদ্দেশ্যে তৈরি করা। এখনো কিছু কিছু স্কুলে এই চলে, তবে ফান্ডিং এর অভাবে শিঘ্রী বন্ধ হয়ে যাবে শুনেছি।

ছেলেবেলায় এইসব ভাবুক কথা বার্তায় খুব বিরক্ত হতাম ক্লাস্টায়, তবে এখন উপকার তা বুঝতে পারছি।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

পুতুল এর ছবি

আপনার এই মন্তব্যের প্রায় পুরোটাই কোড করা যায়। সেদিকে না গিয়ে আমি আমার অভিজ্ঞতাটুকু বলে যাই;

ছাত্র ইউনিয়নে গেলাম এই ধর্ম সংক্রান্ত ঝামেলা নাই বলে। খেয়াল করুণ; তারা নাস্তিক সেটা জেনেই এবং সে জন্যই সেখানে গিয়েছিলাম, একটা ওয়র্কসপের মতো ছিল ব্যাপারটা। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র শেখাবে তারা।

"লেনিন বলেছেন ধর্ম মানুষের জন্য আফিম স্বরূপ" আমাদের পক্ষ থেকে একজন এই উক্তিটি বলে প্রশিক্ষকের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন; এই ধরণের কথা আমাদের জানা নেই। ধর্মের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। তবে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা রাখার পক্ষে আমরা।

হতাস হয়েছিলাম। এইটা হচ্ছে নিজের পরিচয় সংকটের মতো। এতে সাময়ীক ভাবে বাস্তবতা এড়িয়ে গেলেও এক সময় সত্যটা বেড়িয়ে আসতে বাধ্য। এবং এতে করে শিক্ষার্থীরা নিজে যদি সত্যটা কখনো বের করে তখন তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্কদের হিপোক্রেট এবং কাপুরুষ ভাববে।

উদযোগী হয়ে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধটা সামনে আনার দরকার নাই। কিন্তু অনুসন্ধিসু কিশোরদের পক্ষ থেকে প্রশ্নটা উত্থাপিত হলে, এড়িয়ে যাবার দরকার নেই। তাকে সত্যটাই বলতে হবে। কারণ;

তবে যা-ই করুন না কেন একটা পর্যায়ে বিরুদ্ধস্রোতের মুখোমুখি হওয়া কোনভাবেই আর ঠেকাতে পারবেন না।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার একটি পোস্ট। হাসি

আসমা খান

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসান এর ছবি

কি সাহায্য প্রয়োজন পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছি না। যদি দরকার হয় তাহলে বিজ্ঞান বিষয়ক ইউটিউবক্লিপ গুলা সহজ করে অনুবাদ করে দিতে পারবো যাতে বিদেশী ক্লিপ বাংলায় ডাব করা যায়।
আমার বন্ধু ঢাকাতে আমাদের পাঠশালা নামে একটা বিদ্যালয়ে কাজ করেন। সহায়সম্বলহীন বাচ্চাদের পড়ানো হয়। লুফে নেবে এমন একটা প্রস্তাব পেলে।
ই-মেইল করতে পারেন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই কাজটা আসলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার মতো নয়। সেখানে কম-বেশি সবার সমর্থন (আর্থিক বা শ্রম বা নৈতিক) পাওয়া যায়। এটা অনেক জটিল ও কঠিন কাজ। এখানে কোন প্রকার সমর্থন পাওয়াটাই কঠিন। কারিকুলামটা ঠিক হলে বোঝা যাবে কী কী মেটেরিয়াল লাগবে। তখন জানাতে পারবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

বক্তব্য় ও অডিয়েন্স বিষয়ে দুটো কথা বলি। বেশ কিছুদিন ধরেই একটি "গাড়-নেতিবাচক" পরিবেশে আছি। তাই নেতিবাচক কথাগুলোই মনে উঠে আসছে সবার আগে। আপনি বুঝতে পারবেন আশা করি।

আমি ধরে নিয়েছি যে এই কর্মজজ্ঞের বীজমন্ত্রটি আপনি বলেছেন এখানেঃ

" এতে তাকে অহেতুক বা অপ্রমাণিত কোন বিষয় বিশ্বাস করতে হয় না, কারো কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে হয় না। বর্ণ-গঠন-জাতি-গোত্র-শ্রেণী-বিশ্বাস বিচারে মানুষকে পার্থক্য করে একজনের ওপর আরেকজনের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি যে ভিত্তিহীন একটা বিষয় সেটা সে বুঝতে পারে। তাই সে মানুষে মানুষে ভেদ যেমন করে না, তেমন শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে কোন অন্যায় সুবিধা নেবার চেষ্টাও করে না। সে জানে জীবকুলের সবার বিপক্ষে সর্ববিষয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি অসার। তাই অন্য প্রাণী বা উদ্ভিদের প্রতি তার আচরণও মানবিক। তার নৈতিকতা উচ্চ - কেননা সেটা কোন পুরস্কারের লোভ বা শাস্তির ভয় দিয়ে সীমায়িত নয়। সে নতুনকে নিঃশঙ্ক চিত্তে গ্রহন করতে পারে, তাই সে গোঁড়ামী মুক্ত। আবশ্যকীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধণ, পরিমার্জন ও সংশোধণে তার আপত্তি নেই, তাই সে সমাজ প্রগতির ধারক-বাহক।"

এর বিপদ হচ্ছে একে খুব দ্রুত "বিজ্ঞানমনস্কতা" র প্রচারের নামে "নাস্তিকতা"র প্রচার হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলা সম্ভব। যেহেতু এই চিহ্নায়নের সুযোগটা রেখে দেয়া হয়েছে, যারা এই কর্মজজ্ঞের সফলতা চাইবেনা তারা সেই সুযোগটাকেই নেবে।

অন্তত আমার কাছে মনে হয়েছে যে আপনি চাচ্ছেন শিশু-কিশোরমনে ইহজাগতিকতাকে একটি সবল অবস্থানে নিয়ে যেতে, যাতে সে যখন বয়োঃপ্রাপ্ত হয়ে নিজের অবস্থান ও মতামতকে সমাজে ও নিজের পরিবারে প্রচার/প্রতিষ্ঠা করবে, সেখানে যেন সেই বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় দেয়। সে কারনে তার "বিজ্ঞানী" হয়ে ওঠা জরূরী নয়, সে নিতান্তই মানবিক ধারায় থেকেও সেই গন্তব্য়ে যেতে পারবে।

এই যদিহয়, তাহলে আমার মনে সরাসরি "ইহজাগতিকতা"র নাম করেই এই কর্মজজ্ঞে নামা উচিত। ইহজাগতিকমনস্কতার হাত ধরেই কিন্তু বিজ্ঞানমনস্কতা আসবে, বিজ্ঞানমনস্কতার পিছু পিছু ইহজাগতিকতায় আসার পথ কিন্তু বেশ গোলমেলে। আমাদের শিক্ষাব্য়াবস্থা সে চেষ্টা/ভান করেই চলেছে, এবং যার পর নাই ব্য়ার্থ হয়েছে।

এবার আসি অডিয়েন্সে।

" উদ্দেশ্য নূন্যতম তৃতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী অবধি বিজ্ঞান শেখা অথবা আরো উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত বিজ্ঞান শেখা মানুষের বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে।"

যদি বিজ্ঞানমনস্কতাই উদ্দেশ্য় হয়, তাহলে আমার মনে হয় মন্তব্য়ে সুমনের সাথে আপনার কথোপকথন আরেকটি উপযুক্ত অডিয়েন্সের খোঁজ দিয়েছে। কিশোরকিশোরীর মনে বিজ্ঞানমনস্কতার ঘাটতি শুরু হচ্ছে স্কুলে যাবার অনেক আগে থেকে। শিশুমনে বিজ্ঞানমনস্কতা বা আপনি যেটাকে খুব কম কথায় সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন সেই "উৎস>পদ্ধতি>কার্যকারণ>ফলাফল" ক্রমে চিন্তার একটি বড় অন্তরায় কিন্তু আমি-আপনি মানে শিশুর পিতামাতার। আমরা নিজেরা স্কুলে গিয়ে "বিজ্ঞানমনস্কতা"র সংজ্ঞা সহ উদাহরন শিখেছি, কিন্তু তারপরেও বাস্তবতার ফাঁদে পড়ে অবাধ্য় শিশুকে ভুতের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়াই, প্রচলনের স্রোতে দরুদ পড়তে পড়তে ঈদের নামাজে নিয়ে যাই, দাদীর সাথে জায়নামাজে বসে দোয়া পড়তে দেখে সুখশৃাস ফেলি। আবার সেই একই শিশু যখন তার সহজাত "উৎস>পদ্ধতি>কার্যকারণ>ফলাফল" প্রয়োগ করতে গিয়ে বাবার শখের মিউজিক সেন্টারের বারোটা বাজায়, তখন কিছু উত্তমমধ্য়্মযোগকে অমানানসই মনে করিনা।

আমার কিন্তু আসলেই মনে হয় যে নার্সারি-কিন্ডারগার্টেনের সামনে বসে থাকা 'আম্মু/আব্বু' রাই এই কর্মজজ্ঞের সবচাইতে উর্বর অডিয়েন্স।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

এর বিপদ হচ্ছে একে খুব দ্রুত "বিজ্ঞানমনস্কতা" র প্রচারের নামে "নাস্তিকতা"র প্রচার হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলা সম্ভব।

উত্তম জাঝা!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বস্ ঠিক্কৈরা কন তো আপনে কোন পক্ষের লোক?

দুর্দান্ত এর ছবি

কেন? 'শালি শুইবো কই' জাতীয় কথা উঠার সুযোগ না রাখাতে কইতাছি দেইখা?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

উহুঁ শালী আদৌ আছে কী না বা থাকলেও শুবে কী না ইত‌্যাদি উপপাদ্যে ......

দুর্দান্ত এর ছবি

এইসব উপপাদ্ই যেন প্রমাণিত হয়, সেইটাই কামনা করি। হয়তো আমি দরকারের চাইতে বেশী সাবধান হইতে কইতেছি। আমার আশন্কার মূলে কিছু সাম্প্রতিক অভিগ্গতা আছে। এই বিদেশের 'চাইর-ভিটার গেরাম' খালি আরবী বর্ণমালার আগে পুলাপানরে বাংলা বর্ণমালা শিখানোর চেষ্টা করার কারনে দেখলাম ফিজিক্স আর ফারমেসির মত ভায়াবহ পি এইচডি ধারিরাও নিজচক্ষে একাধিক শালির শয়নমুদ্রা দেখলো, দেখাইলো।

দেশে তোলা ছবিগুলাতেতো খালি হিজাব আর হিজাব দেখি। আমার নারসারি পড়ুয়া ভাতিজার বাবা-মা্যের ফেসবুকের স্ট্য়াটাসে দেখি মে আল্লাহ হেল্প সাইদি আন্কেল। যামু কই?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

খালি আরবী বর্ণমালার আগে পুলাপানরে বাংলা বর্ণমালা শিখানোর চেষ্টা করার কারনে

এই বাক্যাংশটি কি ঠিক আছে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

হুম। হল্য়ান্ডের পূবে একটা বড়সর বাংলা কমুনিটি আছে। তেনারা যে সান্ডে স্কুল চালায়, সেখানে আরবী ও ইসলামি আচরণ শেখানো হয়। আমরা সেই কমুনিটির নেতাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে সেখানে বাংলা বর্ণমালাটা আগে শেখানো হোক।

আমাদেরকে তো পত্রপাঠ তাড়িয়ে দেয়া হয়েছেই, উপরন্তু ওদের দ্বিতীয় প্রজন্মের যে অংশের সাথে আমাদের সখ্য়তা আছে, শুনতে পাই তাদের সাথেও কমুনিটির 'ধোপা-নাপিত বন্ধ' করে দিয়েছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আশির দশকে যখন জাতীয় বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে অংশ নিতাম তখন সেখানে দেখতাম প্রতি বৎসরই আনুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয়াবলীর মধ্যে খুব জনপ্রিয় একটা টপিক ছিল - “বিজ্ঞান আমাদেরকে নাস্তিকতার দিকে ঠেলে দেয়” অথবা “বিজ্ঞান আমাদেরকে নাস্তিক বানাচ্ছে”। এই টপিকগুলো নির্ধারণ করতো প্রদর্শনীর জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ের কমিটি। যার সদস্যরা হচ্ছেন সরকারী কলেজের বিজ্ঞানের অধ্যাপকগণ ও সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ। সেই আলোচনায় বক্তারা প্রমাণ করতেন - বিজ্ঞানের সাথে আস্তিকতার আসলে কোন বিরোধ নেই; বিজ্ঞান বরং স্রষ্টার মহিমা ও ক্ষমতা প্রমাণের একটা ভালো উপায়। আয়োজক বা আলোচকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। স্কুল-কলেজে তারা পাঠ্যপুস্তকে অমন লেজ-মাথাবিহীন বিজ্ঞান পড়েছেন, তাদের শিক্ষকরা ক্লাসেও তাদেরকে অমনই বুঝান। অমন ‘শান্ত-নিরুদ্রপ বৈজ্ঞানিক’ জীবনেও দেখা যাচ্ছে কী করে যেন নাস্তিকতার বেয়াড়া প্রশ্নটা চলে আসছে। সেক্ষেত্রে বাছবিচার না করে প্রশ্ন উত্থাপন করা, কার্যকারণ খোঁজা বৈজ্ঞানিক দর্শনের কর্মশালার গায়ে নাস্তিকতার ছাপ পড়াটা খুবই সম্ভব। এই কাজটার মূল চ্যালেঞ্জগুলো এখানে।

হ্যাঁ, আমি এটা বোঝাতে চেয়েছি যে - সবার ‘বিজ্ঞানী’ হবার দরকার নেই, কিন্তু সবার ‘বিজ্ঞানমনস্ক’ হওয়াটা জরুরী।

বিজ্ঞানমনস্কতা আগে না ইহজাগতিকতা আগে - এই প্রশ্নে আমি আগে বিজ্ঞানমনস্কতার কথাই বলবো। চিন্তার ক্ষেত্রে, দর্শনের বিকাশের ক্ষেত্রে আমার কাছে আরোহী পদ্ধতি শ্রেয়তর। ইহজাগতিকতা থেকে বিজ্ঞানমনস্কতায় যাওয়াটাকে আমার কাছে অবরোহী বলে মনে হয়। সুতরাং আমার ভোট ‘আগে বিজ্ঞানমনস্কতা’তেই থাকবে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভান বা প্রচেষ্টা কোনটাতেই বিজ্ঞানমনস্কতাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেনি। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি’র ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ অধ্যায়ে বলা হচ্ছেঃ


শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়ন ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, নিজের ও অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলা।


- এর ব্যাখ্যা করার কোন দরকার আছে বলে মনে করি না।

অডিয়েন্স প্রসঙ্গে আমি কিশোরদেরকেই অধিক উপযুক্ত বা উর্বর মনে করি। তাদের পিতা-মাতাদের প্রায় সবাই এর মধ্যে বদ্ধমূল ধারণাতে পৌঁছে গেছে। সেখান থেকে তাদেরকে সরানো খুবই দুষ্কর।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শিশিরকণা এর ছবি

এটা যে কত বেশি দরকার বলে বলে বুঝানো সম্ভব না। তবে কিনা মানুষকে বিজ্ঞান বুঝানোর চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেছি তারা হয় আগ্রহ পায় না, যুক্তির চেয়ে কুদরতি তাদের মনে দোলা দেয় বেশি। এটা কি বুদ্ধির অভাব না বুদ্ধি ব্যবহার করার আলস্য এটাই ধরতে পারি না। সবাই চটকদারিতে আকৃষ্ট হয়। এই উদ্যোগে সবচে' বাধা ঐখানেই, চটক সৃষ্টি করাতে। সিলেবাস প্ল্যানিং টা খুব গুরুত্বপূর্ণ তাই। আপাতত মাথায় আসছে না কিছু। তবে ঘাড়ে কাজ গছিয়ে দিলে গায়ে গতরে খেটে দিতে পারি। হাত তুললাম!

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

সিলেবাস প্ল্যানিং টা খুব গুরুত্বপূর্ণ তাই

সহমত!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটা তো ঠিকই ধরতে পেরেছেন। সিলেবাস নিয়ে একটু চিন্তাভাবনা করুন। ধরুন এই কাজটা আপনার ঘাড়ে গছিয়ে দেয়া হলো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শিশিরকণা এর ছবি

দিলেন সব্বোনাশ করে। এখন তো মাথায় ঘুরতে থাকবে। কিছু মাথায় এলে কোথায় জানাবো?

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার প্রফাইলে আমার ই-মেইল অ্যাড্ড্রেস পাবেন। তাছাড়া সচল বার্তা তো আছেই। সেসব না হলে আমার বা আপনার পোস্ট যেখানেই আমাকে পান ক্যাঁক করে ধরবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

একক সিলেবাস হিসাবে ডকিন্সের 'ম্য়াজিক অফ রিয়ালিটি' [/url]বইটাকে উপস্থাপন করতে চাই।
এই প্রকল্পে আমরা যা করতে চাচ্ছি, ডকিন্স ঠিক সেই অবস্থান থেকেই এই বইটি লিখেছে। নিচে বইটি সম্বন্ধে ডকিন্সের মুখবন্ধ। সচলে কৌস্তভের একটি পোস্টও আছে এই বই নিয়ে।

প্রচারমাধ্য়ম হিসাবে ক্লাসের পাশাপাশি এফ এম রেডিওর কথা ভাবা যেতে পারে। জানিনা চাঁদা তুলে বিগ্গাপনের স্লট কিনে সেখানে ছোট ছোট বুস্টার সেশান করা সম্ভব কিনা। বাবা ব্রিন্ক্মানের আদলে দেশী সংগীত কিশোর-কিশোরীদের মধ্য়ে জনপ্রিয় হতে পারে। তারো লিন্ক নিচে দিলাম।

http://www.youtube.com/embed/DlUPlpUci4c
http://www.youtube.com/embed/G6r6POHC8zg

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দিলা ইউটিউবের লিঙ্ক ধরায়া! এখন বাংলাদেশের মানুষ সেইটা শুনবো ক্যামনে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।