লোকেন বোসের জার্নাল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: রবি, ১৬/০৬/২০১৩ - ৪:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাসা থেকে যারা নানা কাজে বের হন তাদের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাবার একটা তাড়া থাকে। সেটা তাদের মুখ আর চলন দেখলে বোঝা যায়। বাসায় ফেরার সময়ও কারো কারো মধ্যে তাড়া দেখা যায় — তবে সংখ্যায় তারা খুব বেশি জন নন্‌। পরিণতি যেখানে নির্ধারিত সেই গন্তব্যে যাবার জন্য মানুষের মধ্যে কোন তাড়া থাকে না। তাই বাসায় ফেরার মধ্যে কোন তাড়া অনুভব করি না। তাড়া থাকুক আর না-ই থাকুক কর্মস্থল থেকে সরাসরি বাসায়ই ফেরা হয়, আর কোথাও যাওয়া হয় না। আসলে আর কোথাও যাবার জায়গা নেই।

বাসায় যে মানুষগুলো থাকে তাদের মধ্যে একটা জিনিস শুধু সাধারণ — তারা একই ছাদের নিচে থাকে। এছাড়া তাদের কাজ, খাবার, পোশাক, অভ্যাস, শখ, নেশা, বিশ্বাস, পছন্দ-অপছন্দ কোন কিছুতে মিল নেই। তাদের পরিসরগুলো খুব অল্প সময়েই পরস্পরের সাথে ‘ইন্টারসেক্টিং’ হয়, বেশিরভাগ সময়ে সেগুলো ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’, এমনকি কখনো কখনো ‘মিউচ্যুয়ালি এক্সক্লুসিভ’।

সন্ধ্যায় হোক আর রাতেই হোক বাড়ি ফিরে সেই একই রুটিন — ঘরের বাকি কাজ সারা, খাবার তৈরি করা, খাওয়া, ধোয়াধুয়ি, সকালের খাবার বানানো এবং ঘুমুতে যাওয়া। শরীর সায় দিক আর নাই দিক, এর ব্যতয় হবার উপায় নেই। মাঝেমাঝে মনে হয় দিনটা কি আজ নাকি গতকালের দিনটা নাকি আগামী সপ্তাহের কোন দিন! রাতে ঘুমুতে যাবার সময়টা পূর্বনির্ধারিত একটা রেঞ্জে থাকলে সন্ধ্যার পরের দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো পালনে একটু তাড়া থাকে, কিন্তু কোন কাজেই প্রাণের ছোঁয়া থাকে না।

“প্রত্যেক জানালার পর্দা সরিয়ে,
আমি বাড়িয়ে দিই মুখ -
আমি দেখি
একটা দিন, আরেকটা দিনের মতো
আরেকটা দিন, আরেকটা দিনের মতো
একইরকম, অস্থিসার, ফাঁকা”

টেলিভিশন দেখা, গান শোনা, ইন্টারনেটে গুঁতোগুতি করা এক কালে বিনোদনের মাধ্যম ছিল, কিন্তু এখন ওগুলো জীবনের আবশ্যিক অংশ। তাই ঘুমে তলিয়ে যেতে পারা ছাড়া প্রশান্তির কিছু নেই। বিছানায় পিঠ ঠেকানো গেলেই যে ঘুমোনো যাবে অমনটা দুরাশা। ট্রাঙ্কুলাইজার বা সপোরিফিক ড্রাগের ব্যবসা এমনি এমনি তো আর রমরমা হয় না! অন্ধকারে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে ভাবতে হয় — বাসায় ফিরলেই কি মানুষ ঘরে ফিরতে পারে?

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

যেদিন পেটভর্তি স্কটল্যান্ডের পুকুরের পানি বা মস্কভা নদীর পানি থাকে সেদিন শরীরের সাথে সাথে মনটাও ফুরফুরে থাকে। তখন নিত্যদিনকার একঘেঁয়ে কাজগুলো গায়ে লাগেনা, পেট ভরানোর জন্য নেয়া বিস্বাদ খাবারগুলো অনায়াসে গলাধকরণ করা যায়, প্রতিদিনকার অন্তহীন লুপটাকেও খোলা দিগন্তের মতো লাগে। অমন একদিনে শতকরা চল্লিশ ভাগ ইথানলের বার্তা যখন মাথার কোষে কোষে পৌঁছে গেছে, তখন ফুরফুরে মেজাজে শুতে গেলে বিছানাসঙ্গী হুকুম করে,

- কিছু পড়ে শোনাও।
- কী পড়বো?
- তোমার যা খুশি।

বিছানা থেকে নেমে টেবিলের কাছের মেঝেতে স্তুপ করে রাখা বই থেকে হাতড়াতে হয় — কোন বইটা নিলে সহজে পার পাওয়া যাবে। অবধারিত নিয়তির মতো হাতে একটা বই উঠে আসে যার প্রত্যেকটা পাতা আলগা হয়ে গেছে। মাথার এমন অবস্থায় অমন ছেঁড়া বই হাতে নেয়া মানে বিপদ ডেকে আনা। কিন্তু দ্বিতীয় কোন বই নেবার ইচ্ছে আর হয় না। বইটার শেষের দিকের একটা পাতায় স্থির হয়ে অচেনা এক লোকের জার্নাল পড়তে থাকি,

“সুজাতাকে ভালোবাসতাম আমি —
এখনো কি ভালোবাসি?”

প্রথম দু’টা লাইন মাথায় ঘাই মারে। সব হিসেব উল্টেপাল্টে যায়। যন্ত্রের মতো ৫৩ লাইনের জার্নাল শেষ করে বইটা ঘরের কোনে ছুঁড়ে মারি। মুখ খিস্তি করে বলে উঠি,

- ব্যাটাকে এখন হাতের নাগালে পেলে হকিস্টিক দিয়ে পিটাতাম। সুজাতাকে তুই ভালোবাসতিস কি না বাসতিস তাতে আমার কী রে! আমার কী!

বিছানাসঙ্গী হাসে। আমি মেঝেতে গড়িয়ে পড়ি, তবু কেউ হাত বাড়িয়ে বিছানায় তুলে নেয় না।

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

সত্যটা হচ্ছে এই যে, কোন অবসরেই সুজাতাকে আর ভালোবাসি কিনা সেই প্রশ্ন এখন আর মনে পড়বে না। সুজাতা তার সময়ে স্থির হয়ে আছে। ভুবনেশ্বর জায়গাটা যেই সমুদ্রটার পাড়ে সেই সমুদ্রের অন্য একটা পার থেকে সুজাতা এখন অচেনা এক মহাসমুদ্রের পাড়ে ঠাঁই নিয়েছে। পনের বা কুড়ি বছর আগেকার চিঠির ফাইল এই সময়ে হয়তো বার দুই খোলা হয়েছে। মিহি কেরানীর কাজে আমার কোন কষ্ট নেই — আমি তো কেরানীই। কষ্টটা অন্যখানে। সেটা যে কোথায় সুজাতা কি তা জানে? সুজাতাও কি অমন কিছু ভাবে? অথবা সুজাতার কি অমন কিছু ভাববার অবসর আছে? কার আছে ভাববার অমন “ঢের অবসর”?

“সময় ভিখারী হয়ে ঘোরে অথচ সময়ই জানে,
কথা আছে, ঢের কথা আছে।“

অমিতা সেন সুজাতার মতো চিঠি লিখতো কিনা অথবা সুবলের সাথে তার ভাব ছিলো কিনা সেটা নিউরনে ইথানলের দংশন থাকুক অথবা না থাকুক কিছুতেই আর মনে পড়বে না। আহা, এমন করে অনেক কিছু যদি বিস্মৃতির অতলে চলে যেতো!

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান এয়ারফোর্সের এক বাঙালী জেসিও সপরিবারে আটকা পড়েছিলেন রিসালপুর না করাচী কোথায় যেন। যুদ্ধ শেষ হবার আরো দুই বা আড়াই বছর পরে তারা দেশে ফেরার সুযোগ পান। দেশে ফিরে ভদ্রলোক চাকুরী ফিরে পেলেও কোন উন্নতি করতে পারেননি। তারও তিন-সাড়ে তিন বছরের মাথায় বিমানবাহিনীতে এক বিদ্রোহ হলে তিনি ফায়ারিং স্কোয়াড বা ফাঁসির দড়ি থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারলেও চাকুরীটা আর রক্ষা করতে পারেননি। বাধ্যতামূলক অবসর পেলে ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে কখনো থাকেননি এমন এক জায়গায় বাড়ি বানিয়ে বসবাস শুরু করেন।

সেই পরিবারের মেজো মেয়ে বয়সে আমাদের চেয়ে বছর দুয়েকের বড় হলেও স্কুলে ভর্তি হয় আমাদের ক্লাসে। দস্যিপনার হেন কিছু নেই যা তার অনায়াস ছিলো না। সে ছিলো আমাদের শৈশবের দলনেত্রী, আমাদের নায়িকা। তার কাছ থেকে ইউ ইয়াকভলেভের গল্পে পড়া ‘রূপের ডালি খেলা’র মতো একটা খেলা শিখেছিলাম। সেই খেলায় সবাই হাতে হাত ধরে বৃত্তের মতো করে দাঁড়াতো আর একজন মাঝখানে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে একটা ছড়া বলতো,

“হারা সামান্দার
গোপী চন্দর
বোল্‌ মেরে মাছ্‌লী
কিত্‌না পানি”

আর সাথে সাথে সবাই হাত দিয়ে পানির পরিমাণ দেখিয়ে চেঁচিয়ে উত্তর দিত,

“ইত্‌না পানি”

পানির পরিমাণ পায়ের গাঁট থেকে উপরে উঠতে উঠতে মাথা ডুবে যাওয়া পর্যন্ত গেলে এক রাউন্ড খেলা শেষ হতো।

ছড়াটা উর্দু না হিন্দী ঠিক্‌ কোন ভাষার সেটা বলতে পারবো না। কারণ, ঐ দুই ভাষার কোনটাই আমার জানা নেই। নায়িকাকে জিজ্ঞেস করেও ছড়াটার প্রথম দুই লাইনের মর্মোদ্ধার করতে পারিনি। সে খেলাটা তার অবরুদ্ধ জীবনে অন্যভাষী কারো কাছ থেকে শিখেছিল। আমরা কেউ অন্যভাষার এই ছড়া সঠিক উচ্চারণে বলতে পারতাম না বলে নায়িকাই প্রতিবার আসরের মধ্যমণি হতো।

জীবনের স্বাভাবিক নিয়মে এক সময় নায়িকা আর তার খেলা আমার জীবন থেকে বিস্মৃত হয়েছ।

গভীর রাতে যখন আশেপাশের প্রায় সবাই ঘুমে বিভোর তখন নির্ঘুম চোখে ফাঁকা সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে এক সময় মাথার কাছে রাখা মোবাইল ফোনটা টেনে নেই। ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট ঘেঁটে নাম খুঁজতে থাকি, দেখি কাকে এই সময়েও ফোন করা যায়। কন্টাক্ট লিস্টে কয়েকশ’ নাম থাকলেও ঐ সময়ে ফোন করা যাবে এমন কারো নাম পাওয়া যায় না। এমন একটা মানুষও পাওয়া যায় না যে আমাকে ঐ সময়ে ফোন করার ইচ্ছে রাখে বা আমার ফোন পাবার আশা রাখে। অথচ তখনও আকুল ভাবে চাই ফোনে ফিস্‌ফিস্‌ করে কেউ বলুক,

বোল্‌ মেরে মাছ্‌লী,
কিত্‌না পানি?

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

ঠ্যাঙনোটঃ যেখানে খোদ পোস্টটার নামই একটা বিখ্যাত কবিতার নাম থেকে ধার করা, সেখানে একইভাবে খ্যাত ব্যবহৃত কবিতাংশগুলোর কবির নাম বা কবিতার নাম দেয়াটা বাহুল্য বোধ হলো। সেই বিবেচনায় তাদের নাম বা শিরোনাম উল্লেখ করা হলো না। কবির কবিতায় পাঠকের অধিকার নিঃশ্বাসের বাতাস বা তৃষ্ণার জলের ওপর অধিকারের মতো।


মন্তব্য

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

পড়ছিলাম তো পড়ছিলামই।
ভয় লাগছে সামনের দিনগুলি নিয়ে।
চাকরী নেবার ৪ বছরের মাথায় চাকরী ছেড়ে দেবার প্রচন্ড ইচ্ছেটাকে প্রতিদিন গলাটিপে মারি।
যখন একটা ভালো কবিতা পড়ি, বুকের ভেতর একটা অনুভূতি হয়! বেচেঁ আছি! একাধারে আনন্দের এবং বেদনার। (যদিও ভালো কবিতার সংজ্ঞা একান্তই নিজস্ব)

"বোল মেরে মাছলী/ কিতনা পানি"-- জানিনা কিতনা। তবে প্রশ্নটা গেথেঁ গেল মনে।
ভালো থাকবেন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চাকুরী জীবিকা অর্জনের উপায় হলে সেটা যদি ছাড়ার ইচ্ছে হয় তাহলে ছেড়ে দেবেন। একটা গেলে দশটা আসবে। কিন্তু চাকুরী বেঁচে থাকার অবলম্বন হলেই বিপদ। তখন না তাকে ছাড়া যায়, না তাআকে বহন করা যায়। যে সব কাজ করলে মনে হয় এখনো বেঁচে আছেন, প্রতিদিন অমন কাজ এক ঘন্টা করে হলেও করুন। জীবনটা আপনার, সেটা আপনার ভালো লাগার মতো করেই কাটাতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

... কবিতায় পাঠকের অধিকার ... সে সব না হয় হল। কিন্তু কবিদের নামগুলো যদি জানা যেত, অন্তত ঠ্যঙনোটে - এই সকল-ই বিস্মৃতপ্রায় পাঠকের যে তাহলে খুব ভাল লাগত তাতে সন্দেহ নাই।
আর, শেষ ছবিটা বাদ দিলে, বাকি ছবিগুলো চমৎকার আঁকা হয়েছে।
শেষের গানটার সুর-তাল-লয়-ও ভাল কিন্তু বাকিগুলোর পাশে কমজোর লেগেছে আর ঠিকমত যেন জুড়ে যাওয়াটা বাকি রয়ে গেছে।
অথবা সব-ই আমার নিজের ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছেৎরে থাকা মনটার হতচ্ছারামি। গুছিয়ে বুঝে উঠতে পারিনি!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

(ক) শিরোনাম- জীবনানন্দ দাশ। প্রথম কবিতাংশ- ভাস্কর চক্রবর্তী। দ্বিতীয় কবিতাংশ- জীবনানন্দ দাশ। তৃতীয় কবিতাংশ- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। চতুর্থ কবিতাংশ- প্রচলিত ছড়া।

(খ) শেষাংশ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক। কিন্তু হয় কি জানেন! হঠাৎ করে একটা কবিতা বা গানের লাইন সাতসকালে কী করে যেন মাথায় ঢুকে যায়। একেবারে রাতে ঘুমিয়ে না পড়া পর্যন্ত সেটা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। আর গভীর রাতে যদি অমন কিছু মাথায় ঢুকে পড়ে তখন সারাটা রাত নির্ঘুম যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

(১) নিয়ে: অনেক ভাল লাগল।
(২) নিয়ে: ঠিক, পুরাই ঠিক মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব‌্যটা লিখে নাম লিখতে ভুলে গেছিলাম।
(মডারেটর দিদি / দাদা যদি নামটা জুড়িয়া দিতে পারেন! না পারলেও ক্ষতি নাই। এইখানে দেখিলেই বেবাক বোধগম্য হইবে মনে হয়।)
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি

বাসায় ফিরলেই কি মানুষ ঘরে ফিরতে পারে?

উটের গ্রীবার মতো নিস্তব্ধতা এসে ঘিরে ধরল লেখাটি পড়ার পরে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই প্রশ্নটার উত্তর আপনি ভালোভাবে দিতে পারার কথা। কোথা থেকে কোথায় ফিরলে আপনার সত্যি সত্যি মনে হয় - হ্যাঁ , এবার সত্যি সত্যি আমি ঘরে ফিরেছি!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্যাম এর ছবি

হুমমমমমমম অণুদা জবাব দেন, পছন্দ হইছে পান্ডবদা দেঁতো হাসি

পথিক পরাণ এর ছবি

দেখেন তো বিজয়া মুখোপাধ্যায় কি বলেন---

“বাড়ি ফিরে দেখি বাড়িতে বাড়ি নেই
একটা বড় দরজা
কয়েকটা বখাটে জানালা।
নড়ে চড়ে জিজ্ঞেস করলো
কাকে চাই?
ভেবে দেখতে হবে কাকে চাই।
বাড়ি ফাঁকা, বাড়িতে বাড়ি নেই।
কাঠের চেয়ারে ভাড়াটের মত
অনাহত অতিথির মত
বুঝে ফেলি।
চোখে দ্বিধা, পায়ে ভর কম।
একা।
আমার বাড়িতে বাড়ি নেই।“

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিজয়া মুখোপাধ্যায় তো শেষমেশ একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন। এখন তিনি নিজের বাড়ি খুঁজতে যেতে পারবেন। কিন্তু সেই বাড়িটা খুঁজে পেলেও কি নিজের ঘরে ফেরা যাবে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্যাম এর ছবি

সন্ধ্যায় হোক আর রাতেই হোক বাড়ি ফিরে সেই একই রুটিন — ঘরের বাকি কাজ সারা, খাবার তৈরি করা, খাওয়া, ধোয়াধুয়ি, সকালের খাবার বানানো এবং ঘুমুতে যাওয়া। শরীর সায় দিক আর নাই দিক, এর ব্যতয় হবার উপায় নেই। মাঝেমাঝে মনে হয় দিনটা কি আজ নাকি গতকালের দিনটা নাকি আগামী সপ্তাহের কোন দিন!

জীবন যেন প্রায় একই রকম প্রায়... বৈচিত্র্য যা পাই তা শ্রেনীগত হয়ত শুধু... গত অনেক বছরের প্রায় দিনগুলো এরকমি, ফেব্রুয়ারীর ৫ এ শুরু হওয়া পরের কয়েক সপ্তাহ ছাড়া...

স্কটল্যান্ডের পুকুরের পানি বা মস্কভা নদীর পানি

হাহাহাহা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বৈচিত্র্যের নামে যা কিছু কপালে জোটে সেগুলোও এতো একঘেঁয়ে, নিষ্প্রাণ, এতো অগভীর বিষয়-কথাবার্তায় ভরা যে সেগুলোর বৈচিত্র্যের রস আর নিতে পারিনা। ফেব্রুয়ারীর ৫ তারিখের পরের কয়েক সপ্তাহের মতো দিন কোন সৌভাগ্যবান মানুষের জীবনে একবার/দুইবার আসে। বেশিরভাগ মানুষ তার দেখাই পায় না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

প্রথম অংশ নিয়ে একটা বিতর্কিত মন্তব্য করি। ইদানিং মনে হয় এই যে অতি প্রাচীন ‘মেইন্টেন্যান্স অভ স্ট্রাকচার’ – এই যে মেধার করুণ অপচয় - এটার বিবর্তনের কোন সম্ভাবনা দেখিনা...। লেখা সবসময়ের মতই।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিতর্কিত মন্তব্য হবে কেন? মেইনটেন্যান্স অভ স্ট্রাকচারের জন্য ব্যয়িত সময়-শ্রম-মেধার অপচয় ও অপরচুনিটি কস্ট নিয়ে সিরিয়াসলি আলোচনা করা খুবই জরুরী। আপনি বস্‌ একটু গুছিয়ে একটা লেখা নামান, সেখানে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ষষ্ঠ পান্ডবের সাথে পুরাই একমত, ফাটাফাটি আলোচনা হওয়া দরকার।
বলি, হচ্ছেটা কি? আমাদের বেশীর ভাগ মানুষের একঘেয়েমির, আশাহীনতার তো আর কোন সীমা-পরিসীমা দেখা যাচ্ছে না! ভয়, শুধু নানা রকমের, নানান কিসেমের ভয়। যদি নড়ে যায় - স্থিতাবস্থা! কোন এক আশ্চর্য অতীতে ন্যাংটা ছিলাম, বাটপাড়ের কোন ভয় ছিল না। এখন গায়ে ছালের পরে ছাল, মুখোশের পর মুখোশ - কখন কোনটা পরছি-খুলছি খেয়াল থাকে না। হঠাৎ কেউ আয়না ধরলে তাজ্জব লেগে যায় - আমি-ই তো?! মাঝে মাঝে স্কটল্যান্ডের পুকুরের পানি বা মস্কভা নদীর পানি খেলে একটা ফুরফুরে ভাব আসে, ঝোঁক কাটলে ভয় লাগে এরপর এটও যদি পুরানো হয়ে যায়। সরিয়ে রাখি ওটাকেও তাই, বেশীর ভাগ সময়। এমনি করে, এতটাই কি ফুরিয়ে যেতে হয়!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

'স্থিতাবস্থা' একটা ভ্রান্ত ধারমা। যে কোন একটা অবস্থার প্রেক্ষিতে অন্য একটা অবস্থাকে আপেক্ষিক বিচারে অধিক স্থিতিশীল 'মনে হতে' পারে। পরম বিবেচনায় কোনটাই স্থিতাবস্থা নয়।

নতুনের আকাঙ্খা চিরন্তন। যা কিছু পুরনো হয়ে গেছে বলে মনে হয় এক সময় সেটা নতুন রূপেও আসতে পারে। তার জন্য দেখার চোখ আর মন থাকতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তুলিরেখা এর ছবি

লেখাটা ভালো, অদ্ভুত বিষাদ জড়িয়ে আছে পরতে পরতে।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

'বিষাদ' - হ্যাঁ, এই একটা বস্তু স্টকে আছে। যত টন চান ততোটাই দিতে পারবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

এমন একটা মানুষও পাওয়া যায় না যে আমাকে ঐ সময়ে ফোন করার ইচ্ছে রাখে বা আমার ফোন পাবার আশা রাখে। অথচ তখনও আকুল ভাবে চাই ফোনে ফিস্‌ফিস্‌ করে কেউ বলুক,

বোল্‌ মেরে মাছ্‌লী,
কিত্‌না পানি?

শেষতক “আধুনিক” আমাদের জীবন এমনই! প্রযুক্তি যত ঘুচায় দূরত্ব, তার চেয়ে সহস্রগুন বাড়ায়...? দূরত্ব।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

খামাখা প্রযুক্তির ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন কেন। দূরত্ব সৃষ্টির বা সেটাকে অলঙ্ঘনীয় করে তোলার দায় শুধুই আমাদের।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নজমুল আলবাব এর ছবি

মাঝে মাঝে আমি অবাক হই। যা বলছি, যা করছি তা যেনো আগেই আমি জানতাম, গণক ঠাকুরের মতো মনে হয় নিজেকে। তারপর একটু চিন্তা করে দেখি গণকের কোন গুন নেই আমার, ঠিক এই কাজটাই নিয়মিত করি, করা হয়, করবো, যন্ত্রের মতো।

মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মাঝে মাঝে একটু অন্যমনস্ক হতে পারেন তো তাই অন্যমনস্ককালে রুটিন কাজের ব্যাপারে পূর্বধারণাকে গণকঠাকুরের গুণ বলে মনে হয়। অন্যমনস্ক হতে পারা ভালো গুণ। এতে অনেক অদরকারী বিষয়ের ওপর পর্দা টেনে দেয়া যায়। তাতে অন্য কারো কিছু না হোক, নিজে আরেকটু ভালো থাকা যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের জীবনে বৈচিত্র বলতে কিছু কী আছে ! প্রতিটি দিন স্মৃতির তাকে নৈরাশ্য জমা করছি। আর বাইরে বেরোলেই এক ধরনের অজানা আতঙ্ক সাথী হয়ে যায়। বাস-ট্রাকে চাপা পড়ার আতঙ্ক, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার আতঙ্ক, পিকেটারের পাল্লায় পড়ার আতঙ্ক অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর কবলে পড়ার আতঙ্ক, ইত্যাকার বিবিধ আতঙ্ক। গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে নির্দ্বিধায় রাস্তায় হেটে চলতে বড্ড সাধ হয়, কিন্তু.....। যাহোক এভাবে হয়তো দিনাতিপাত করা যায়, বেঁচে থাকা যায় কী !
বয়সের কারনে অনিদ্রারোগে ভুগি। প্রায় ভোর রাত পর্যন্ত জেগে থেকে টিভি নয়তো ল্যাপি অথবা বই এর পাতায় আর একটা দিন কাটাবার রসদ খুঁজি। আজ পেয়ে গেলাম আপনার লেখায়। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঐটেয় কাঁটাছেড়া করবো।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটু আগে লিখেছিলাম - ভয়, শুধু নানা রকমের, নানান কিসেমের ভয়। যদি নড়ে যায় - স্থিতাবস্থা! কোন এক আশ্চর্য অতীতে ন্যাংটা ছিলাম, বাটপাড়ের কোন ভয় ছিল না!
- একলহমা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শুধু মধ্যবিত্ত বলে কথা নয় বস্‌। সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই এমন কিছু অন্ধচক্র থাকে, সাথে সবার জন্যই কিছু না কিছু অনিশ্চয়তা জমা আছে।

অনিদ্রা রোগ দূর করার কোন প্রকারের কোন উপায় জানলে আমাকে জানাবেন। আর এক নিদ্রাহীন রাতে আমার এই ব্লগর ব্লগর আপনার সময় কাটানোর উপায় হয়ে থাকলে আমি ধন্য।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হা হা, অনিদ্রা রোগ দূর রকবার উপায় ? ঐযে আপনি বলেছেন, কিতনা পানি - সেটা হতে পারে স্কটল্যান্ডের পুকুরের অথবা মস্কোভা নদীর, তবে পরিমানটা আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে, হা হা হা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনি বুজুর্গ মানুষ। অভিজ্ঞতার আলোকে পরিমানের ব্যাপারে আপনিই উপদেশ দেবেন, আমি মাথা পেতে নেবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

অফিস-বাসা-টেলিভিশন চক্র থেকে আধুনিক মানুষের মুক্তি নেই। মিথষ্ক্রিয়ার সময় আর প্রিয়মুখের বড্ড অভাব।

আপনার লেখা এবং মন্তব্য খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। কখনও চেনাজানার সুযোগ হলে একপেশে আড্ডা দেব বলে ঠিক করে রেখেছি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পছন্দের অনেক মানুষ আছে বটে, তবে তাদের সবার সাথে নিয়মিত বা দীর্ঘ সময় কাটানো সম্ভব নয়। যাপিত জীবনের অনেক চক্র তৃতীয় কোন গোষ্ঠী বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করে থাকতে পারে।

আড্ডা আমার কাছে জীবনের অচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে হয়। আমার সাথে আড্ডা দিতে চাইলে তার নানা উপায় আছে। উপায়গুলো কী, সেটা আপনার জানা আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সবজান্তা এর ছবি

"লোকেন বোসের জর্নাল" আমার প্রিয় কবিতা। কবিতাটা প্রথমবার পড়ে এক জায়গায় চোখে আটকে গিয়েছিলো-

সুজাতাকে ভালোবাসতাম আমি —
এখনো কি ভালোবাসি?
সেটা অবসরে ভাববার কথা,
অবসর তবু নেই;

'অবসর তবু নেই' - এই লাইনটা আমাকে ভীষণ অবাক করেছিলো। সেটা অবসরে ভাববার কথা, 'কিন্তু' অবসর নেই- এরকমটা হতে পারতো; অথচ কবি বলছেন, অবসর 'তবু' নেই। কবিতাটার রহস্য বোধহয় তখনই কিছুটা ভেদ করতে পারলাম- সুজাতাকে ভালোবাসি কিনা সেই কথাটুক ভাববার কথা আমার অবসরে, এ সত্যটুকু জেনেও আমি অবসর বের করতে পারছি না, কিংবা অবচেতনে চাচ্ছি না- এক ধরনের ডিনায়াল দেখতে পাই। এরপর যতোবারই কবিতাটা পড়েছি, এই লাইনটায় মুগ্ধ হয়েছি। আর জীবনানন্দের কবিতায় বিরামচিহ্নের ব্যবহার, এবং স্পেস, এইসবের আলোচনা তো যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে- মুগ্ধ না হয়ে উপায় কী!

লোকেন বোসের 'জর্নালে' কী লেখা আছে, তা হয়তো আপনার লেখার বিষয়বস্তু না- তবে, যেই লাইনটার কথা উল্লেখ করলাম, তার মধ্যেই হয়তো আপনার লেখাটা লুকানো আছে। কিংবা হয়তো আমি বুঝতে পারিনি।

তবে নিজের মতো করে বুঝে নিয়েছি। লেখাটা ভালো লাগলো। মাঝেমধ্যে এরকম লেখা লিখলেও পারেন ...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

জীবনানন্দের 'জর্নাল' থেকে সচেতন বা অবচেতনভাবে সম্ভাব্য যে ডিনায়ালের কথা তুমি বললে সেটা আমার এই 'জার্নাল'-এর মূল সুর কিনা সেই প্রশ্নটার উত্তর এড়িয়ে গেলাম। এই লোকটাকে নিয়ে যে কোন প্রকার আলোচনায় কেবল হতাশাই বাড়ে।

তুমি যখন পাঠক, তখন তুমি কী বুঝলে সেটাই ঠিক।

লিখতে তো চাই-ই, কিন্তু লিখে উঠতে পারি না। আর তুমি যে কোনকালে লেখালেখি করতে সেই কথাটাই ভুলতে বসেছ মনে হয়। ডেইলি মেইল যদি মান্থলিও বের হতে না পারে তাহলে কী করে চলে!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

"বিছানাসঙ্গী " দারুণ, দারুণ একটা শব্দ শিখলাম।

--------------------------------------------------------------------------------

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শব্দটা অনেক কষ্টের আবিষ্কার ভাবী। সেটা বোঝার চেষ্টা করুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

একঘেয়ে জীবন। প্রতিটি মঙ্গলবার সোমবারের মত আর সোমবার রোববারের মত।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এভাবে বললে কেমন হয়, প্রতিটি ওয়ার্কিং ডে এক রকম আর প্রতিটি উইক এন্ড এক রকম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখনিতেই ছড়াটা দারুন লাগলো, নায়িকার উচ্চারণে না জানি তা আরও কত মোহময়ী ছিল! খোঁজ নিয়ে দেখলাম ভারতের হিন্দীভাষী অঞ্চলে ছড়াটা দারুন জনপ্রিয়। জনৈক অশ্ব ঘোষের এ শিরোনামে একটি কবিতার বইও রয়েছে। অশ্ব ঘোষের কন্ঠে ছড়া/কবিতাটার আবৃতিও শুনলাম।

ছড়াটার প্রথম প্রথম দু লাইনের আক্ষরিক অর্থ- সবুজ সমুদ্র গোপী চন্দ্র, সম্ভবতঃ একটি বিবেক টাইপের চরিত্র। আপনার উদ্ধৃত চারটি চরনের পরের কয়েকটি লাই এরকম-

মাছলি বোলে ওরে ভায়ীইই
আন্দার খোদ হি হুয়ি হে খায়ী
খায়ী মেরে মাছলি ওয়ালে
কারিব হে উনকে মনকে কালে
ইনছে মুশকিল জান বাঁচানি
ক্যায়ছে কাঁহু মে কিতনা পানি।

আব্দুল্লাহ এ.এম.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ আবদুল্লাহ এ এম। সম্ভব হলে এর বঙ্গানুবাদটা জুড়ে দিন।

ছড়াটার শেষ লাইনটা আবার মাথায় ঘাই মারলো। খোদ মাছই যদি না জানে কতোটা পানি তাহলে সে বেঁচে আছে কী করে!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

উপরে যে কবিতাটার কথা বলেছি, সেটা অশ্ব ঘোষের কবিতা, কবিতার শিরোনাম "হারা সমুন্দার গোপী চন্দর বোল মেরে মছলি কিতনা পানি"। এটার বঙ্গানুবাদ করে লাভ নাই, কারন এটা একটা সামাজিক-রাজনৈতিক ভাবধারার কবিতা। আপনার নায়িকা নিশ্চিতভাবেই এটা আবৃতি করেন নি, তিনি আবৃতি করেছেন নিচের ছড়াটা।

হারা সমুন্দার
গোপী চন্দর
বোল মেরে মছলি
কিতনা পানি
ইতনা পানি
বেয়েঠ যাও
আটা বুন্দো
রটিয়া পাকাও
চাটনি পিসো
লাপ লাপ খাও
ভাইয়া কো খিলাও
খাড়ে হো যাও
বারিশ আয়ে
কাপড়ে ভিজে
কাপড়ে শুকাও
পাও মেরা পিছলা
দিল মেরা ধরকা
ধক ধক ধক ধক

ভারতীয় এবং পাকিস্তানী শিশুমহলে এই ছড়াটি তুমুল জনপ্রিয়। তবে "হারা সমুন্দার গোপী চন্দর বোল মেরে মছলি
কিতনা পানি" সম্ভবতঃ একটি হিন্দী-উর্দু ইডিয়ম। এই শব্দগুচ্ছের সেখানে নানা ব্যবহার আছে বলে মনে হয়। পাকিস্তানে এই শিরোনামে জিও টিভিতে সামাজিক কাহিনী নির্ভর একটি জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল প্রচারিত হয়েছে।
আবার পুরনো দিনের হিন্দী সিনেমা "যাদু নাগরী" তে ইডিয়মটি একটি গানে একটু অন্যভাবে ব্যাবহৃত হয়েছে, সেখানে নায়িকার সখীরা গান গেয়ে নায়িকাকে বলছে-
হারা সমুন্দার
জিসকে আন্দার
বোল মেরে মছলি
কিতনা পানি.......

যাই হোক, ইত্যবসরে "হারা সমুন্দার গোপী চন্দর বোল মেরে মছলি কিতনা পানি" এর গুঢ়ার্থ জানবার জন্য মনটা আকুলি বিকুলি করছে। জানতে পারলে জানাবো, আপনি জানলেও জানাবেন।

আব্দুল্লাহ এ এম

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নায়িকা কোনটা আবৃত্তি করেছিলেন সেটা আজ আর মনে নেই আবদুল্লাহ্‌ ভাই। তবে আপনার অনুমান ঠিক হতে পারে। আপনি তো ছড়াটা নিয়ে ছোটখাট গবেষণা নামিয়ে দিলেন। একলহমাও এর উৎপত্তি নিয়ে ভাবনাজাগানিয়া কথা বললেন। যথাসম্ভব খোঁজ চালাবো। ভালো কিছু পেলে সবার খোঁজা জিনিস মিলিয়ে নতুন পোস্টই দিয়ে দেয়া যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দময়ন্তী এর ছবি

হারা সমুন্দর -- সবুজ সমুদ্র (গভীর জল)
গোপী চন্দর - গোপীচাঁদ (নাম)
হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এটাতো শব্দার্থ বললেন। কিন্তু এই গোপীচাঁদটা কে, আর সমুদ্র যদি গভীরই হবে তবে মাছকে পানি কত গভীর সেটা জিজ্ঞেস করাই বা কেন? কেন যেন মনে হয় এই ছড়াটার পেছনে অন্য গল্প আছে। এই ব্যাপারে আপনার কিছু কি জানা আছে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্প তো আছেই। এই কবিতা সম্ভবত: বাঙলাদেশের-ই নাথগীতিকার অন্তর্গত। মাছ হচ্ছেন গোপীচান্দজীর গুরু মীননাথ যিনি নারীসান্নিধ্যে তপস্যা ভুলেছিলেন। তখন গোপীচান্দ তাঁকে উদ্ধার করেন। এই কবিতা সেই উদ্ধারের কাহিনী। (এই পরবাসে কেবলমাত্র ইন্টারনেটের সাহায্যে এই মুহুর্তে এর থেকে বেশী আর পারা গেল না!)
- একলহমা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গুড জব একলহমা! এই ব্যাপারে তাহলে একটু খোঁজখবর করতে হচ্ছে দেখছি। যতদূর জানি মীননাথ/মৎস্যেন্দ্রনাথ হচ্ছেন চন্দ্রদ্বীপ বা বরিশাল এলাকার। তাহলে তাকে উদ্ধারের গাঁথা হিন্দীতে হলো কী করে!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

খোঁজখবর করার মতই বিষয়। নাথগীতকা সম্ভবত: প্রথম লিপিবদ্ধ করেন শেখ ফয়জুল্লা অন্য কারো কাছ থেকে শুনে শুনে। যে ভাষায় তিনি এটি বেঁধেছিলেন সেটি আমার অনুমান, বাংলা বা হিন্দী নয়, মাঝামাঝি একটি প্রাকৃত রূপ। কবিতাটি একটু খেয়াল করে পড়লে সেটা ধরা যায়, তাই না? মুশকিল হচ্ছে, অনুমানকে বাজিয়ে নেওয়ার মত রসদ আমার কাছে নেই, আশু পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তাই আমার নটে গাছ এখানেই মুড়োল!
- একলহমা

একলহমা এর ছবি

একটা ভুল সংশোধন সংযোজন করেছি, তুলিরেখার মন্তব্য-শৃঙ্খলে পাবেন
- একলহমা

তাসনীম এর ছবি

অসাধারণ লাগলো।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ বস্‌!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শামীমা রিমা এর ছবি

লেখাতো উত্তম জাঝা! ,তবে নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মিইয়ে গেলাম। চিন্তিত

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ভবিষ্যত কী হবে না হবে - সেসব ভেবে এখনকার সময় নষ্ট না করে বর্তমানকে পুরোপুরি উপভোগ করুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্পর্শ এর ছবি

ভালো লাগলো।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তুলিরেখা এর ছবি

ষষ্ঠ পান্ডবদা,
আপনার লেখায় "বল মেরে মছলি কিতনা পানি" শুনে মহাবন্যার সার্বিয়ান উপাখ্যান ভাবানুবাদ করার ইচ্ছা দেখা দিল। করে ফেললাম। হাসি
অবশ্য মহাবন্যা আর মাছের গল্প আছে উপমহাদেশের মৎসপুরানে, সেখানে মনুর নৌকা মাথায় বেঁধে টেনে সমুদ্রে নিয়ে গিয়েছিল মৎস অবতার(বিষ্ণুর দশাবতারের প্রথম অবতার), যাকে কিনা মনু একদিন বাঁচিয়েছিলেন। পরে কখনো গল্পটা বলা যাবে।
"হারা সমুন্দর/ গোপী চন্দর/ বল মেরে মছলি/কিতনা পানি" শুনেই খালি মনে হচ্ছে কুলকিনারাহারা সমুদ্রে নৌকা নিয়ে ভাসতে ভাসতে মনু এইভাবেই বুঝি মাছকে ডেকে ডেকে মনে মনে কথা কইছেন। কবে থই পাবেন, কবে নৌবন্ধন শৃঙ্গে গিয়ে লাগবে নাও তার, সেতো কিছুই জানেন না তখনো।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

"হারা সমুন্দর/ গোপী চন্দর/ বল মেরে মছলি/কিতনা পানি" ... ...
আমার একটা একটু জটীল-মতন থিয়োরী আছে এ ব্যাপারে। ঠিকমতন সাজাতে খানিকটা পড়াশোনা করার লাগবে। তবে তুলনায় সহজটা ষষ্ঠ পান্ডব-এর একটা জবাবী মন্তব্যের জবাবে কয়েক ঘন্টা আগে উপরে লিখেছি। সেটাই এখানে আবার তুলে দিচ্ছি।
এই কবিতা সম্ভবত: বাঙলাদেশের-ই নাথগীতিকার অন্তর্গত। মাছ হচ্ছেন গোপীচান্দজীর গুরু মীননাথ যিনি নারীসান্নিধ্যে তপস্যা ভুলেছিলেন। তখন গোপীচান্দ তাঁকে উদ্ধার করেন। এই কবিতা সেই উদ্ধারের কাহিনী।
- একলহমা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

তুলিরেখা, সার্বিয়ান উপাখ্যানটার প্রথম পর্ব গতকালই পড়েছি। আজ দ্বিতীয় পর্বও পড়লাম।

মনুকে নিয়ে আপনার চিত্রকল্পটি বেশ মনে ধরল। উপরে একলহমা ছড়াটি নিয়ে অন্য কাহিনী শোনালেও আপনার বলা চিত্রকল্পটি ধরে মৎস্যপুরাণের গল্পটি বেশ দাঁড় করাতে পারেন। চেষ্টা করবেন নাকি?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটি মজার বিষয় হচ্ছে, এই গোপীচান্দের উপাখ্যানে মাছ বাবাজী-ই বিপদে পড়েছেন আর তাঁকে উদ্ধার করেছেন তাঁর শিষ্য রাজপুত্র-থেকে-সন্ন‌্যাসী-হওয়া গোপীচন্দ্র বা গোপীচান্দ! উলটপুরাণ বলা যায়। তবে এ সমস্তই ইন্টারনেট থেকে নানা সুতো কুড়িয়ে আমার অনুমান-কাহিনী। মূল নাথগীতিকা পড়তে পারলে পুরা রহস্য উদ্ঘাটন হত।
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

ভুল সংশোধন - মীননাথকে উদ্ধার করেছিলেন তাঁর শিষ্য গোরক্ষনাথ। তিনি সম্ভবত: বিহার এলাকার লোক। তাঁরা নাথ সম্প্রদায় সৃষ্টি করেন। একসময় রাজপুত্র গোপীচন্দ্র এই নাথ সম্প্রদায়-এর প্রভাবে সন্ন্যাস নেন। হয়ত তিনি যখন গুরু মহিমা কীর্তন করেন তখন এই কবিতা রচনা করেন। যেন গুরু-শিষ্য সংবাদ-এর মধ্য দিয়ে মাছ অর্থাৎ মীননাথ-এর উদ্ধার-এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
- একলহমা

রানা মেহের এর ছবি

এই লেখাটা সপ্তাহের মাঝখানে পড়লে বিষাদাক্রান্ত হতাম।
উইকেন্ডে পড়ছি বলে হয়তো বিষাদ নয় ভালোলাগাটুকু থাকলো।
অনেক ভাল লাগলো ষষ্ঠ দা

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মুনতাসির মুহাম্মদ আসিফ এর ছবি

বছর খানেক আগে মাস খানেকের জন্য বেকার ছিলাম, সারাদিন একা একা বসে ভেবে অসহায় আর হতাশ হয়ে যাই। পারিবারিক আর পেশাগত দায়িত্য পালন করতে গিয়ে নিজেকে ত কিছুই দেইনি, ঠকিয়েই গেছি শুধু, অনেক কিছুই করার ছিল, যখন তখন মনে যা চাইত কিনতু দায়িত্য পালন বা ভয় বা সাম্রথ্যহীনতা নানাবিধ কারনে এইসব চাওয়াটাকে ভুলে থাকতে চেসটা করেছি, কারন এযে প্রায় অসম্ভব। কিনতু নিজের কাছ থেকে কি পালানো যায় তাই মাঝেমাঝে মনেহয় অণুদার (তারেক অণু) মত ইবনে বতুতা হয়ে যাই, হায় সেই তিনিই যখন সংশয় প্রকাশ তখন কোথায় যাই?

সোহান হাসনাত এর ছবি

লেখাটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো।

আর, ছড়াটাও মনে ধরেছে।

সোহান হাসনাত

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পড়া আর মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কল্যাণ এর ছবি

পাণ্ডবদা আপনি বস্লুক।

গুরু গুরু

(অবসরে যাওয়ার পর অফিসার কি একটা মফস্বল শহরে বাড়ি কেনেন এবং পরে সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন?)

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

(গল্পটা মোটামুটি অমনই। অবসরে যাবার পর মফস্বলে একটা বাড়ি কেনেন। পরে সন্তানরা নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লে এক সময় সেই বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে এক সন্তানের আশ্রয়ে চলে যান।)


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কল্যাণ এর ছবি

এর আগেই মরে যেতে হবে।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।