একটি মন্ত্রীর প‌্যান্টের আত্মজীবনী

শেহাব এর ছবি
লিখেছেন শেহাব (তারিখ: রবি, ২৪/০৬/২০১২ - ৬:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার বয়স তোমাদের চাইতে অনেক কম! কিন্তু আমার এই ছয় মাসের জীবনে আমি যা দেখেছি তোমাদের অনেকে এখনও তা কল্পনাই করতে পারবে না। গত দুইদিন ধরে এমনিই বসে আছি। কোন কাজ নাই। এই একঘেঁয়ে বৃষ্টির দিনে ভাবলাম ডায়েরীর কিছু পাতা তোমাদের সাথে শেয়ার করি।

১৭ . ১২ . ২০১১
আজকেই প্রথম পৃথিবীর আলো দেখলাম। এতদিন টুকটাক শুনেছি। কিন্তু ফ্যাক্টরীর টিউবলাইট আর দাপুটে সূর্যের আলোতে আকাশ পাতাল তফাৎ। কপাল খারাপ। মাত্র তিন মিনিটের মধ্যেই গাড়ি থেকে বের করে আবার আমাকে খুব দামী একটা কাপড়ের দোকানে নিয়ে গেল। আবার সেই টিউবলাইট। ধুৎ!

১৯ . ১২ . ২০১১
প্রথমে ভেবেছিলাম জন্মের পরে যে টিকা দিতে হয় সেটি। পরে দেখি শালারা আমার পাছায় প্রাইস ট্যাগ লাগিয়েছে। লেখা আছে ২০০০ ইউরো। এখনও জ্বলছে!

২৯ . ১২ . ২০১১
এ কয়দিন দোকান পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ক্রিসমাসে লোকজন অনেকে অনেক কিছু কিনল। কিন্তু আমার কপালে কোন কাস্টমার নাই! একটু টেনশনে আছি। বন্ধের পর শুনলাম যে মাঝে মাঝে আমাকে ঝেড়ে পরিষ্কার করত তার চাকরী চলে গেছে। মন খারাপ

২০ . ১ . ২০১২
অনেকদিন ডায়েরী লিখতে পারি নাই। এর মধ্যে আমার গোটা পৃথিবী ওলট পালট হয়ে গেছে। আমি এখন রীতিমত অন্য মহাদেশে! দেশটার নাম নাকি বাংলাদেশ। এক দাড়ি অলা লোক আমাকে কিনা অল্পবয়সী এক ছোকরার মাধ্যমে এখানে পাঠিয়েছে। খুব শিগগির আমাকে নাকি আরো অনেক কিছুর সাথে এক 'মন্ত্রী'র হাতে তুলে দেয়া হবে। কথাবার্তায় যেটা বুঝলাম মন্ত্রী একধরনের প্রাণী। এটি খুব সম্ভবত মাংশাসী এবং সর্বভূক (ওই দাড়িঅলা লোকের ভাষায় 'যা পায় তাই খায়') । আর এদের সরাসরি দেখা যায় না, মনে হয় গভীর জংগলে বাস করে। কিছু দক্ষ লোক আছে যারা এদের খুব কাছে যেতে পারে। কিন্তু সে কাপড় দিয়ে কী করবে?

২৭ . ১ . ২০১২
আমার ধারণা ভুল ছিল। মন্ত্রী আসলে একধরণের মানুষ। কোন এক রহস্যময় কারণে এদের বাসায় অনেক মানুষ, কেউ দুপুরের আগে ঘুম থেকে উঠে না, উঠে বিছানাতেই খাওয়া শুরু করে আর প্রচুর চিৎকার করে।

৫ . ২ . ২০১২
আলমারীতে ঢুকানোর পর ভেবেছিলাম কিছুদিন শান্তিমত লেখালেখি করব। কিন্তু পরের দিন একটা দজ্জাল টাইপের মেয়ে অত্যন্ত অশ্লীলভাবে আমার পেছনটা ধরে আমাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে 'বাবা বাবা' করে চিৎকার করে একটা ঘরে গিয়ে আছড়ে ফেলল। ওই লোকটাকেই এর আগে অন্যরা মন্ত্রী বলেছিল। কি কি কথা হল। এরপর আমাকে একটা প‌্যাকেটে ভরে মুখ বন্ধ করে দিল।

৬ . ২ . ২০১২
নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি বোধহয় আর বাঁচব না!

১৬ . ২ . ২০১২
আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এখনও বেঁচে আছি। জ্ঞান ফেরার পর দেখি একটা হ্যাঙ্গারে ঝুলে আছি। এটা আমার বাসা না। আমার মত আরো অনেকে কেটেকুটে ঝুলানো হয়েছে। একজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম এটা দর্জির দোকান। চারপাশে প্রচুর ধুলা। প্রচুর হাঁচি পাচ্ছে।

২৯ . ২ . ২০১২
পুরা হাবিয়া দোজখে আছি। আমাকে আরো কাটা হয়েছে। তারপর একটা টর্চার মেশিনে সুই দিয়ে সারা শরীর ছিদ্র করে ফেলেছ। তারপর শরীরটাকে প্রায় দুই টুকরা করে আবার এদিক ওদিক জোড়া দিয়েছে। আমি জানি প‌্যান্ট সমাজে ঢুকতে হলে এই কষ্ট স্বীকার করতেই হবে। আমাকে পারতেই হবে।

৪ . ৩ . ২০১২
মনটা খুব ছোট হয়ে আছে। অফিসিয়ালি আমি এখন প‌্যান্ট কিন্তু দোকানে একঘরে হয়ে আছি। সবার কোমর ৩০", ৩২" কিংবা ৩৪" কিন্তু আমার ৪২"। আমার কাপড় এত দামি কিন্তু এই ৪২" সব শেষ করে দিল। সবচেয়ে সস্তা প‌্যান্টটাও আমাকে ৪২ বলে ডাকে। এখানে আর থাকব না। শালার আড্ডায় বসে পঁচার চাইতে আমার বাসায় এসিতে একা চুপচাপ বসে থাকা অনেক ভাল।

১০ . ৩ . ২০১২
বাসায় চলে এসেছি। আমার হ্যাঙ্গারটা ভাল। দোকানের মত পাছায় চিমটি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে না।

১২ . ৩ . ২০১২
কালকে প্রথম অফিসিয়াল ডিউটি। কেমন যেন লাগছে।

১৩ . ৩ . ২০১২
নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। মন্ত্রী ব্যাটার উচিৎ ছিল কোমরের মাপ ৪৪" দেয়া।

১৬ . ৩ . ২০১২
এর মধ্যে আরেকদিন ডিউটি ছিল। তেমন কিছু ঘটেনি। আজকে একটা এমিউজমেন্ট পার্কে গেলাম। আরো কিছু প‌্যান্টের সাথে আমাদের একটা রাইডে ভরে দিল। তারপর কিছু সাবান দিল। তারপর রাইড চালু হল আর আমাদের গায়ে পানি পড়া শুরু করল। আমরা অনেক গড়াগড়ি আর লাফালাফি করলাম। অনেক বাবল বানালাম। ভীষণ মজা। অবশ্য ভেজার কারণে একটু সর্দি লেগে গেছে।

২১ . ৩ . ২০১২
আজকে ডিউটিতে এক সাদা চামড়া এসেছিল। অনেকদিন পর নিজের দেশের মানুষ দেখে ভাল লাগছে। কথা হয়নি।

২৪ . ৩ . ২০১২
আজকে ওই সাদা চামড়া আরো দুইজন এই দেশী লোক নিয়ে আসল। একটা কাল ব্রিফকেস দিল। প্রচুর হাসল ওরা। কেমন যেন ভাল লাগল না তাদের ভাবভঙ্গী।

৭ . ৪ . ২০১২
গত পরশু বিদেশে এসেছি। হোটেলটা সুন্দর। মন্ত্রী রুমে ঢুকে বিশাল ঘুম। বিকালে একটা মিটিং করল। সন্ধ্যা থেকে আমি রুমের আলমারি তে। এত চমৎকারের হোটেলের আলমারির ভিতরে কী একটা পোকা! গা ঘিন ঘিন করছে!

৮ . ৪ . ২০১২
আজকে আমার জীবনের সেরা দিন। আমি আমার প্রথম বন্ধু পেয়েছি। খুলেই বলি। আলমারিতেই ছিলাম সারাদিন। সন্ধ্যায় মন্ত্রী রুমে আসল। এরপর সে কোথায় যেন কল করল। পরে কথা শুনে বুঝলাম যাকে কল করেছে সেই লোকটির নাম রুম সার্ভিস। একটু পরে কে যেন রুমে ঢুকল। কিন্নর কণ্ঠ শুনে বুকটা কেমন করে উঠল। উঁকি দিয়ে লম্বা চুলঅলা একজনে দেখলাম। মনে হয় মেয়ে! এরা তারপর বেশ কিছুক্ষণ কথাই বলে গেল। বোর হয়ে প্রায় ঘুমিয়ে যাচ্ছি এমন সময় কোমরে ধাক্কা দিয়ে কে যেন আমাকে একবারে আলমারির একপাশে ঠেলে দিল। ঘুরে চড় দিতে যাব হঠাৎ দেখি যে ধাক্কা দিল সে আমারই মত একটা প‌্যান্ট। আমি জীবনে এত সুন্দর মেয়ে প‌্যান্ট দেখি নাই। স্লিম, লম্বা, কয়েক জায়গায় ফুলের কাজ। এগুলোকেই মনে হয় জিন্স বলে। প্রথম কয়েক সেকেন্ড আমি চোখের পলক ফেলতে পারি নাই। মেয়েটা মনে হয় আমার হার্টবিট শুনে ফেলেছে। স্মার্ট মেয়ে। নিজেই পরিচিত হল। সে নাকি এই দেশের। আমি সাহস পেয়ে কথা বলা শুরু করলাম। অনেক কথা হল। টেরই পেলাম না কোন দিক দিয়ে সকাল হয়ে গেছে। একবার আলমারির দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতে গেলাম, মেয়ে প‌্যান্টটা আমাকে মানা করল। বলল ওর আর আমার কারও মালিকের পরনে নাকি প‌্যান্ট নেই! আমি আর তাকাই নাই। এর আগে একবার মন্ত্রীকে প‌্যান্ট ছাড়া দেখেছিলাম। কী বিশ্রী!

আমি মনে হয় একজন বন্ধু পেয়ে গেছি। সে বলল, আজকে বিকালের আগ পর্যন্ত নাকি সে আমার সাথেই থাকবে। খুব ভাল লাগছে। ভাবছি একবার বলে ফেলব নাকি কথা টা। না থাক! কি না কি মনে করে! একদিনের পরিচয়ে বেশি আগানো ঠিক হবে না। তবে মেয়েটা তার নাম বলেছে। ওর নাম 'চাইনিজ গুচ্চি'। (আমরা এখন একজন আরেকজনকে তুমি করে বলছি)।

৯ . ৪ . ২০১২
গুচ্চি চলে যাওয়ার পর থেকে বুকটা খুব খালি খালি লাগছে। জিজ্ঞেস করায় বলেছে সে এই হোটেলেই থাকে। তবে আমার রুমে আবার আসবে কিনা জানে না। ইশ আরেকবার যদি আসত। এবার আসলে ওর হাত ধরব।

১০ . ৪ . ২০১২
গুচ্চি আজকেও আসে নাই। তবে দুপুরে একটা ফোন কল আসল। দেখলাম মন্ত্রী চিৎকার করে উঠেছে। কিছু একটা হয়েছে দেশে। আমার খুব ভয় লাগছে।

১১ . ৪. ২০১২
আজকে আমরা দেশে ফেরত যাচ্ছি। মনে হচ্ছে সেই ফোনকলটাই এর কারণ। না হলে আরও কিছু দিন থাকতাম। গুচ্চির সাথে আর দেখা হল না। কিছু ভাল লাগছে না।

১২ . ৪. ২০১২
প্লেন থেকে নামার সাথে সাথে একদল লোক আমাদের ঘিরে ফেলল। আজকে আমি ডিউটিতে আছি তাই সব দেখতে পাচ্ছি। এদের অস্ত্র আছে কিন্তু মনে হয় পুলিশ না। গায়ের কাপড় জলপাই রংয়ের। কথা শুনে মনে হচ্ছে মন্ত্রীকে নাকি আর মন্ত্রী ডাকা হবে না। বুঝলাম না এই বুড়া বয়সে ওরা মানুষের নাম পাল্টাচ্ছে কেন। আর তার জন্য তুই-তোকারির কী দরকার!

১৭ . ৪. ২০১২
আমরা এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় যাই নাই। মনে হচ্ছে এটা একটা অফিস। জলপাই রংয়ের জামা পরা অনেক লোক। মন্ত্রীকে ওরা একটা রুমে গত তিনদিন ধরে বসিয়ে রেখেছে। একটা লোক এসে খাবার দিয়ে যায়। এ কয়দিন টানা পরে থাকায় আমার গায়ে গন্ধ লাগছে। গোসল করা দরকার!

২১ . ৪. ২০১২
জীবনে দ্বিতীয় বারের মত মনে হল হাবিয়া দোজখে আছি। এ কয়দিন ডায়েরী লেখার মত অবস্থা ছিল না। প্রথমে দুইজন এসে আমাদের চেয়ারের সাথে বাঁধল। তারপর ছোট দুইটা লাঠি নিয়ে ইচ্ছামত পেটানো শুরু করল। আমার গায়ে বৃষ্টির মত বাড়ি এসে পড়তে লাগল। আমি জানিনা আমার কি দোষ! তোমাদের যদি মন্ত্রীর উপর রাগ থাকে তাকে পেটাও। আমি তো তোমাদের কিছু করিনি। তাহলে আমাকে কেন? যাকে পেটানোর তাকে প‌্যান্ট খুলে পেটাও। যতই নগন্য হই, পুরোনো হই আমারও তো ব্যথ্যা আছে। আমারও কষ্ট হয়।

পরদিন বেঁহুশের মত ছিলাম। মারলেও টের পাই নি। মন্ত্রী চিৎকার করে যাচ্ছে। ব্যাটা দাবি করছে তার হাত-পা ভেঙ্গে গেছে। পুরো বাজে কথা। যেই মোটা শরীর সেটা তো শক অ্যাবজর্বারের কাজ করার কথা!

ব্যথা কমে আসলে শরীরের ময়লা দুর্গন্ধ নাকে এসে লাগে। আর ব্যাথা লাগলে মরে যেতে ইচ্ছা করে। জানিনা এর শেষ কোথায়।

২৩ . ৪. ২০১২

আল্লাহ আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে। এখন আমাকে খুলে রুমের এক কোনায় ফেলে রাখা হয়েছে। মন্ত্রীকে এখন প‌্যান্ট ছাড়া পেটানো হচ্ছে। তাও অনেক ভাল। ওই লাঠির বাড়ির চাইতে রুমের কোনায় আরশোলার খাদ্য হওয়া উত্তম।

৩০ . ৪. ২০১২
গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর তেমন পেটায় না। টেবিলে দেখি কয়েক হালি ডিম রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধায় ৪/৫ জন আসে। তার কিছুক্ষণ পরেই মন্ত্রীর চিৎকার শুরু হয়। ওরা কিছু একটা নিশ্চয়ই করে যেটা এই কোনা থেকে দেখা যায় না। প্রতিদিন ডিমের সংখ্যা কমছে।

২ . ৫. ২০১২
টেবিলের ডিম শেষ হয়ে গেছে। মারধরও বন্ধ। আমি এখনও কোনায় পড়ে আছি। এখন প্রতিদিন কয়েকজন লোক এসে টেবিলে বসে মন্ত্রীর সাথে আলাপ করে। মনে হচ্ছে কিছু একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাচ্ছে।
কতদিন সূর্যের আলো দেখিনি!

৫ . ৫. ২০১২
মন্ত্রীকে আগের চেয়ে কিছুটা শান্ত মনে হচ্ছে। আজকে দেখলাম নিজে থেকে খেল। কোথা থেকে দেখি সে আরেকটা প‌্যান্ট জোগাড় করেছে। কী বিশ্রী প‌্যান্ট। আচ্ছা আমি কি খুব পুরানো হয়ে গেছি? নোংরা হয়ে গেছি? ছিড়ে গেছি? কেন যেন মনে হচ্ছে আমাকে আর কোনদিন মন্ত্রী পরবে না।

১০ . ৫. ২০১২
আজকে মন্ত্রী বের হল কয়েকঘন্টার জন্য। আমাকে সাথে নেয় নাই। সাথে গেছে ওই বিশ্রী নতুন প‌্যান্টটা। মনের ভেতর কু-ডাক দিচ্ছে।

১৩ . ৫. ২০১২
আজকে সকালে যে মন্ত্রী বের হয়ে গেল এখনও আসেনি। টেনশন হচ্ছে। মেরে ফেলেছে নাকি? কিন্তু বের হওয়ার সময় যে অনেক হাসিখুশি দেখলাম?

১৭ . ৫. ২০১২
মন্ত্রী আজও এল না। কেন যেন মনে হচ্ছে আমাদের আর কোনদিন দেখা হবে না। অনেকদিন পর গুচ্চিকে মনে হচ্ছে। মেয়েটার কথাতে খুব মায়া ছিল। গুচ্চি তুমি কি এখন আমার কথা ভাবছ?

২৪ . ৫. ২০১২
আরও এক সপ্তাহ গেল। কেউ এই রুমে আসল না। আচ্ছা আমি কি বন্দী? আমারও কি তবে শত্রু আছে? কে সে?

২৭ . ৫. ২০১২
আজকে এক লোক একবার রুমে ঢুকেছিল। মন্ত্রী না। অন্য কেউ। জলপাই পোশাক পরা। আমার দিকে একবার কেমন করে তাকিয়ে চলে গেল। কি হবে আমার? আমার দিকে ওভাবে তাকাল কেন? আমি তো কারও কোন ক্ষতি করিনি!

১ . ৬. ২০১২
আজকে এক লোক ঝাড়ু আর ঝুড়ি নিয়ে রুমে ঢুকল। প্রথমেই সে আমাকে ঝুড়িতে ভরল। তারপর ঝাড়ু দিয়ে বাতাস ধুলায় ভরিয়ে দিল। নিশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে এই সময় সে আমাকে সহ ঝুড়ি নিয়ে রুম থেকে বের হল। বের হয়েই একটা প্রায় অন্ধকার লম্বা করিডোর দেখে মনটা মিইয়ে গেল। তারপর যতই করিডোরের অন্যপ্রান্তে দরজার দিকে এগুতে লাগল আমার ধুকপুকানি বাড়তে লাগল। কী আছে দরজার ওপাশে? আমি কি ছাড়া পেতে যাচ্ছি? নাকি নতুন কোন দু:স্বপ্ন শুরু হতে যাচ্ছে? উত্তেজনায় ফেটে যাচ্ছি। দরজা আর একটু পড়েই খুলবে!

হঠাৎ করে আলোর বন্যায় চারপাশ ধাঁধিয়ে গেল। প্রথমে কিছুই দেখলাম না। একটু একটু করে আলো সহ্য হয়ে আসল। বুক ভরে বাতাস নিলাম। আহ! আমি মুক্ত, আমি স্বাধীন। মনে হচ্ছে এতদিন মরে ছিলাম। আমি নতুন করে বেঁচে উঠেছি!

লোকটা ঝুড়ি উপুড় করে আমাকে একটা ঠেলাগাড়িতে ফেলল। তারপর গড়িয়ে গড়িয়ে সেটি চলা শুরু করল। ঘন্টাখানেক পরে খুব বাজে গন্ধ অলা এক জায়গায় আসলাম। তারপর আমাকে একটা লাঠির মত কি একটা দিয়ে ঠেলে বিশাল এক ময়লার পাহাড়ে ফেলা হল। এরকম দৃশ্য জীবনে দেখি নাই। পৃথিবীর সব মাছি যেন এখানেই জড়ো হয়েছে।

আমি আপাতত ডাস্টবিনের এক কোনায় পড়ে আছি। ভালই আছি। আমার হয়তো মন্ত্রীর বাড়ির এ.সি. নাই। কিন্তু আমার সূর্যের আলো আছে, মেঘ থেকে নেমে আসা বৃষ্টি আছে, আছে চঞ্চল বাতাস। আমি ওদের সাথে কথা বলি। ভালই আছি। এভাবেই হয়তো বাকি জীবন কেটে যাবে। মাঝে মাঝে ভোরের আলো ফোঁটার মুহুর্তে চাইনিজ গুচ্চিকে মনে পড়ে। গুচ্চি আমি ভাল আছি, ভীষণ ভাল! তুমিও ভাল থেকো!

শেহাব
চট্টগ্রাম
২৪/৬/২০১২

(বি. দ্র. কারও সাথে কিছু মিলে গেলে সেটি একটি কাকতাল!)


মন্তব্য

ক্রেসিডা এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি হাততালি হাততালি

পুরো ৫তারা দাগাইলাম। জোস হইছে!!!

বিছানায় শুয়ে খাওয়া শুরু করে আর চিৎকার করে দেঁতো হাসি আমি ভাবছিলাম শিৎকার লিখতে চাইছিলেন; যদিও পরে এই পার্টটা কভার করছেন।

দারুরুরুরুননননননননন !!

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

শেহাব এর ছবি

ধন্যবাদ!

আইলসা এর ছবি

হাত তালি! হাততালি
চমৎকার লেখা, তবে লেখার জন্য হাততালি না। হাততালি মন্ত্রীর প‌্যান্ট ধইরা টান দেওয়ার সাহসিকতার জন্য।

শেহাব এর ছবি

ধন্যবাদ!

সত্যপীর এর ছবি

একবার আলমারির দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতে গেলাম, মেয়ে প‌্যান্টটা আমাকে মানা করল। বলল ওর আর আমার কারও মালিকের পরনে নাকি প‌্যান্ট নেই! আমি আর তাকাই নাই। এর আগে একবার মন্ত্রীকে প‌্যান্ট ছাড়া দেখেছিলাম। কী বিশ্রী!

টেবিলে দেখি কয়েক হালি ডিম রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধায় ৪/৫ জন আসে। তার কিছুক্ষণ পরেই মন্ত্রীর চিৎকার শুরু হয়। ওরা কিছু একটা নিশ্চয়ই করে যেটা এই কোনা থেকে দেখা যায় না। প্রতিদিন ডিমের সংখ্যা কমছে।

হো হো হো হাততালি

খুব মজা পাইলাম ভাই। আরো ছাড়েন।

..................................................................
#Banshibir.

শেহাব এর ছবি

ধন্যবাদ!

তাপস শর্মা এর ছবি

জবরদস্ত। দুর্দান্ত। চলুক চলুক চলুক

শেহাব এর ছবি

ধন্যবাদ!

আশফাক আহমেদ এর ছবি

হুমম, অন্যরকম।

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

শেহাব এর ছবি

ধন্যবাদ!

তানিম এহসান এর ছবি

অন্যরকম লাগলো। আরো লিখবেন আশা করি।

শেহাব এর ছবি

ধন্যবাদ!

দ্যা রিডার এর ছবি

হাততালি

শেহাব এর ছবি

ধন্যবাদ!

মরুদ্যান এর ছবি

পাঁচ তারা।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

শেহাব এর ছবি

ধন্যবাদ!

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গুল্লি

শেহাব এর ছবি

ধন্যবাদ!

অরফিয়াস এর ছবি

হো হো হো

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই কি একটা কাম করলেন!!
অহন তো প্যান্টও দেহি ভাইবা চিন্তা পিন্দন লাগব।

হো হো হো

পথিক পরাণ

হিমু এর ছবি

সচলায়তনে নিবন্ধন করে ফেলেন।

এই গল্পের একটা সিকোয়েলের আবদার জানিয়ে গেলাম। একটি হাঁসের ডিমের আত্মকাহিনী।

শেহাব এর ছবি

আচ্ছা

শেহাব এর ছবি

করে ফেললাম!

এ হাসনাত এর ছবি

গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি

তারেক অণু এর ছবি

হাততালি গুল্লি

দুর্দান্ত হয়েছে, মারাত্মক উইট !

শেহাব এর ছবি

ধন্যবাদ

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

গুল্লি

এখন আর তেমন পেটায় না। টেবিলে দেখি কয়েক হালি ডিম রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধায় ৪/৫ জন আসে। তার কিছুক্ষণ পরেই মন্ত্রীর চিৎকার শুরু হয়। ওরা কিছু একটা নিশ্চয়ই করে যেটা এই কোনা থেকে দেখা যায় না। প্রতিদিন ডিমের সংখ্যা কমছে।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
লিখতে থাকুন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

শেহাব এর ছবি

ধন্যবাদ

অমি_বন্যা এর ছবি

বেশ দাপটে লেখা। মন্ত্রীর প্যান্ট এভাবে খুলে দিলেন? উত্তম ঝাঝা। হাততালি

সুমাদ্রী এর ছবি

এতদিন কোথায় ছিলেন, বস? গুরু গুরু

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

খুব সুন্দর লেখেন আপনি। আরো চাই।
একটি কথা বলতে চাই, জলপাই রঙের সঙ্গে সুবিচারের কোন সম্পর্ক নেই। বিচার করার দায়ও জলপাইয়ের নয়। ওই প্রসঙ্গটি কেবল খুব ভালো লাগেনি।

সচলায়তনে স্বাগতম।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

বাপ্পীহা‌য়াত এর ছবি

দারুন - উত্তম জাঝা!

নীড় সন্ধানী এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি
সকাল থেকে একটু মনমরা ছিলাম। এই এক পোষ্ট পড়ে সারাদিন ফকফকা!! আরো লেখা আশা করছি আপনার কাছ থেকে। (গুড়)

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ

রু এর ছবি

বাহ! দারুণ লাগলো।

mnurmkt@gmail.com এর ছবি

হো হো হো চলুক চলুক চলুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

২০/০১/২০১২-তে বাংলাদেশ নামটা যদি না আনতেন তাহলে এটা আরো বহু দেশের নামে চালিয়ে দেয়া যেতো।

লেখা চালিয়ে যান, নিয়মিত।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

বেশ লিখেছেন। কিছু কিছু প্যারালাল চমৎকার হয়েছে। (গুড়)

শান্ত এর ছবি

চালিয়ে যান। বেশ ভালো লেগেছে।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

এবিএম এর ছবি

চমৎকার লিখেছেন তো গুরু গুরু

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার জন্য একতোড়া সুগন্ধি ফুল।

মনের রাজা টারজান (মাহিন)

রংধনুর কথা এর ছবি

হো হো হো হো হো হো

অতিথি লেখক এর ছবি

একেবারে জটিল হইসে। খুবই ভাল লেগেছে, বলার মত না!

TPSabuj

কালো কাক এর ছবি

দারুণ হাততালি

নজমুল আলবাব এর ছবি

অতি ভালো। শুধু জলপাই অংশটা ছাড়া।
আপনার আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

লিখেন মিয়া, আরও লিখেন! দেঁতো হাসি

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

অতিথি লেখক এর ছবি

গুল্লি--> গুল্লি
কড়িকাঠুরে

মন মাঝি এর ছবি

চলুক

****************************************

আবির আনোয়ার এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি চলুক

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

এটা ফেসবুকে শেয়ারে দেখে পড়বো পড়বো করছিলাম। আজ একটু সময় পেয়ে পড়েই ফেল্লেম। বাহ, বেশ চমৎকার লিখেন তো আপনি!!

চালিয়ে যান। লেখায় উত্তম জাঝা!

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

ফাহিম এর ছবি

নতুন ধরণের লেখা, খুব ভালো লাগসে! আরো লেখা দিতে থাকেন।

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

সাফি এর ছবি

দারুন লিখেছেন, স্বাগতম সচলায়তনে।

সজল এর ছবি

দারুণ। লিখতে থাকুন।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং! হাসি

নিঃসঙ্গ গ্রহচারী এর ছবি

মজার!

সাত্যকি এর ছবি

বাহ। দারুণস্য !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।