সামাজিক ব্যবসার রকম সকম এবং রবির ফ্রি বিলবোর্ড

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি
লিখেছেন ত্রিমাত্রিক কবি (তারিখ: বুধ, ৩০/০৭/২০১৪ - ১:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিছুদিন আগে ফেসবুক স্ট্যাটাস হিসাবে দেয়া সচল ষষ্ঠ পাণ্ডবদার একটা উক্তি দিয়ে শুরু করি,

দুই প্রকার ব্যবসায়ী আছে। প্রথম প্রকার ব্যবসায়ী চুপচাপ ব্যবসা করে যায়, কখনো সম্ভব হলে জনসেবা করে বা করে না। দ্বিতীয় প্রকার ব্যবসায়ী মহা ঢাকঢোল পিটিয়ে ব্যবসা করে, কিন্তু স্বীকার করে না যে সে ব্যবসা করছে। জিজ্ঞেস করলে বলে সে সমাজসেবা করছে বা জনগণের কল্যান করছে। এটাকে মনে হয় সামাজিক ব্যবসা বলে।

বাংলাদেশে মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিষ্ঠার শুরুর দিক থেকেই তাদের ব্যবসায়িক দিকটি চেপে রেখে নিজেদের এক ধরণের সমাজসেবামূলক চরিত্র তৈরির চেষ্টা করেছে, শুধু চেষ্টাই করেনি, বলতেই হবে এই চেষ্টায় তারা অনেক ক্ষেত্রেই ভয়াবহভাবে সফলও হয়েছে। কখনও কখনও সেই চেষ্টা সহনীয় পর্যায়ে থেকেছে, কখনও সেই চেষ্টা অশালীন আবার কখনও সেটা হয়েছে রীতিমত অশ্লীল পর্যায়ের। মনে পড়ে কয়েক বছর আগেই, জাতীয় সংসদের সামনে গ্রামীণফোন নামক মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের কথা, যতদূর মনে পড়ে, সেই অনুষ্ঠানে বলা হয়, ‘আমরা আজকে গাইব, আমরা আজকে গাইব ভেতরের থেকে, এ অন্যদিনের মত গাওয়া নয়’, কথাটি এমনভাবে বলা হয় যেন আগে জাতীয় সঙ্গীত আমরা ভেতরের থেকে গাইতাম না, এতদিন পরে এসে গ্রামীণফোনের মত একটি মুনাফালোভী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে আমাদের দেশপ্রেম আর জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শিখতে হবে। বলতে লজ্জা হলেও বলতে হচ্ছে, সেই অনুষ্ঠানে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতই কেবল বিকৃত হয়নি, আমাদের অনেক শিল্পী, বুদ্ধিজীবীও বিক্রীত হয়েছেন। এভাবে শুধু মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু নয়, অনেক প্রতিষ্ঠানই এভাবে মানুষের আবেগকে পুঁজি করে ব্যবসা করে যাচ্ছে। ব্যবসা করা কোন দোষের কাজ নয়, কিন্তু সেটা করার সময় সুমিষ্ট প্রলেপ লাগিয়ে, সমাজসেবার আলাপ জমিয়ে প্রতারণা করা নিশ্চয়ই দোষের। পাণ্ডবদার কথা অনুযায়ী এধরণের কাজকে সম্ভবত সামাজিক ব্যবসা বলা যেতে পারে।

যাক ধান ভানতে শিবের গীত গাইতে শুরু করে দিয়েছি। সামাজিক ব্যবসার সংজ্ঞা দিতে এই লেখা লিখতে বসি নি। সামাজিক ব্যবসা নিয়ে এই সচলায়তনেই বিস্তর আলাপ আলোচনা তর্ক বিতর্ক হয়েছে বিভিন্ন সময়। তাছাড়া এই বিষয় নিয়ে লেখার জন্য আমি সম্ভবত যোগ্য ব্যক্তিও নই, তাই সেই আলাপে না গিয়ে বরং যে জন্য এই লেখার সূত্রপাত সেই আলাপে ফিরে যাই। কয়েকদিন আগে হিমু ভাই চ্যাটবক্সে একটা চোখে পড়ার মত খবর শেয়ার করেন। মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবি নাকি নিজেদের লোগো আঁকা কাপড় পথশিশুদের দিচ্ছে ঈদের উপহার হিসাবে। এই নিয়ে কিছু লিখব নাকি সেরকম আলোচনা হচ্ছিল, পরে আর সে আলোচনা বিশেষ আগায় নি। আমি নিজেও ভুলে গিয়েছিলাম। আজকে বেশ কয়েকজনের স্ট্যাটাস আর দৈনিক পত্রিকা পড়ে দেখলাম রবি সম্ভবত পঁচিশ হাজার পথশিশুকে ঈদে নতুন জামা কিনে দিয়েছে বলে দাবী করছে। কিছু পত্রিকাতেও এই নিয়ে বিজ্ঞাপন দেখলাম, পথশিশুরা হাসিমুখে লাল টকটকে জামা পরে ছবির জন্য পোজ দিয়ে আছে। মন ভাল করে দেয়ার মত খবরই হবার কথা ছিল, কিন্তু সেই লাল কাপড়ের ওপর খুব দৃষ্টিকটুভাবে রবির লোগোটা ফুঁটে আছে, খয়রাতের চিহ্ন হিসাবে।

এই ব্যপারে আরেকটু খোঁজ খবর নিলাম, খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম, ঈদের আগে রবি এই নিয়ে একটা বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে। বিজ্ঞাপনের মূলকথা অনেকটা এরকম, একশজন গ্রাহক প্রত্যেকে ৫৮টাকার রিচার্জ করলে একজন পথশিশু পাবে ঈদের একটি নতুন জামা। অর্থাৎ মোট পাঁচ হাজার আটশ টাকার রিচার্জ করা হলে একজন পথশিশু একটি জামা পাবে। পাঁচ হাজার আটশ টাকায় রবির কতটা মুনাফা হয় আমার জানা নেই, তবে সেটি একশ টাকার বেশ কয়েক গুণ হবে বলেই আমার ধারণা। আর পথশিশুদের জন্য রবি যে রকম জামা দিয়েছে এরকম একটি জামার খরচ কোনভাবেই একশ টাকার বেশি হবার কথা নয়। আর এই উপলক্ষে অমিতাভ রেজার বানানো অতিআবেগী বিজ্ঞাপন দেখে নিশ্চয়ই ঝাঁকে ঝাঁকে লোকজন আটান্ন টাকা রিচার্জ করেছেন। হ্যাশট্যাগ বিপ্লবের এই যুগে মাত্র আটান্ন টাকা রিচার্জ করে যদি সমাজসেবা করা যায় (তার ওপর রমজানের সত্তর গুণের হিসাব তো আছেই) তাহলে খারাপ কী! তারা হয়ত খেয়ালও করেননি, এরকম ‘একশ’ জন রিচার্জ করলে তবেই একটা শিশু একটা জামা পাবে। আর রবি তার লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের করা রিচার্জের টাকা থেকে সামান্য খরচ করে নিজের গায়ে সমাজ সেবকের ট্যাগ লাগিয়ে ফেলবে।

আমাদের দেশে ঈদ বা অনেক উৎসবেই মানুষ নিজ উদ্যোগে গরীব ও বঞ্চিত লোকজনকে নানা ভাবে সাহায্য করে, কিন্তু হালের ‘জাগো’ আর আজকের ‘রবি’ ছাড়া কাউকে খয়রাতের ওপর নিজের সিল ছাপ্পর মেরে দিতে দেখিনি (সেটা আমার দৃষ্টিসীমার সংকীর্ণতা হতে পারে অবশ্যই)। কারও দান বা অনুগ্রহ গ্রহণ করা এমনিতেই যে কোন মানুষের জন্যই লজ্জার, কিন্তু দান গ্রহণ করে সেই দানের চিহ্ন ধারণ করে চলাফেরা করা সম্ভবত আরও লজ্জার। দুঃখজনক ভাবে রবি যাদেরকে নিয়ে এই দানের ব্যবসা শুরু করেছে, তাদের হয়ত সেটুকু বোঝার মত বয়স হয়নি, বা বয়স হলেও সেইটুকু বিলাসিতার সুযোগ নেই, সেই সুযোগে রবি তাদের দানের চিহ্ন এই সব বঞ্চিত শিশুদের পিঠে সীলমোহর করে নিজেরা মহান সেজে গেল।

এই ঘটনার আরেকটা দিক আছে। রবি বা এরকম বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিজ্ঞাপনের জন্য উচ্চমূল্যে বিলবোর্ড ভাড়া নিতে হয়, বা সোনার চেয়েও অধিক দামে টিভি বা রেডিওর এয়ার টাইম কিনতে হয়। অথচ রবির উচ্চবুদ্ধিসম্পন্ন এবং ধূর্ত কোন ম্যানেজার এই সামাজিক বিজ্ঞাপনের আইডিয়া দিয়ে কোম্পানির কোটি টাকা বাঁচিয়ে দিয়ে হয়ত প্রোমোশান আর বোনাসের টাকায় মালয়শিয়া বা থাইল্যান্ডে প্রমোদভ্রমণ করছে। গ্রাহকের রিচার্জের টাকায়, আর কোন ম্যানেজারের ধূর্ত বুদ্ধিতে রবি এখন দেশে বিনামূল্যে পঁচিশ হাজার বিলবোর্ড স্থাপন করেছে। আর আমাদের দীনহীন মলিন পথশিশুরা রবির দেয়া ততধিক মলিনতার চিহ্ন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করছে। তারা হয়ত কখনও জানতেও পারবে না, গ্রাহকের রিচার্জের টাকায় একশ টাকার কাপড় পরিধান করে কত কোটি টাকার জীবন্ত বিলবোর্ড হিসাবে তারা এখন পথে ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

(ছবিটা মুছে দেব নাকি ডকুমেন্ট হিসেবে থেকে যাবে?)


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

একই কাজ ইউনূসও করে। সরকারের দেওয়া নানা সুবিধা, কর-অবকাশ, অনিয়মের চিপা ব্যবহার করে গরিবেরই টাকা গরিবকে ধার দেয়, বিদেশ থেকে নিজের হাই-প্রোফাইল ইয়ারদোস্তো বেড়াতে এলে কুমীরছানার মতো ঐ গরিবদের জড়ো করে দেখায়। সারা দুনিয়ায় রটিয়ে দেয় সে-ই বাংলাদেশে গরিবের মুখে হাসি ফুটিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু টকটকে লাল রঙে চিহ্নিত করে না দেখালে আমরা অনেক কিছুই বুঝতে পারি না, তাই ইউনূসের পা ধোয়া পানি খাওয়ার জন্য অনেকেই বেয়াকুল।

আমার মনে হয় রবিকে এখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

রবিরে শান্তিতে নোবেল দেয়ার জন্য আমরা একটা কেম্পেইন চালাইতে পারি। ইউনুসের নোবেলের ভাগ যেমন লাখ লাখ গরীব নারীর বলে চালানো হয়, রবির নোবেলের ভাগও কাগজে কলমে রবির সব গ্রাহকদের বলে চালানো যাবে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

টিউলিপ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

আরিফিনসন্ধি এর ছবি

হিমু ভাই, এই কথা ব্যায়ফুক সত্য,

ইউনূসের পা ধোয়া পানি খাওয়ার জন্য অনেকেই বেয়াকুল।

বিদেশে বিশাল একটা বাংলাদেশী অংশ ইউনূসের পাগল, সেই সাথে ভাইজানের সেন্টার তো আছেই, আজকাল দেখছি বিদেশ থেকে বৈদেশি ছাত্রছাত্রীরা সেই সেন্টারে আসে সামাজিক ব্যবসার লাইনঘাট শিখতে অ্যাঁ

........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ধুর্মিয়া, কয় তাকবির দিয়া ঈদ করছেন? আরেকজনের ঈদ উদযাপন নিয়া প্রশ্ন তুলেন? চাল্লু

এই আপনাদের জন্যই বিশ্বের যেকোনো রাষ্ট্রনায়কের কাছে ফোন করার প্রোটোকলওয়ালা ভদ্রলোক গাজায় হামলার সময় কিংবা ট্যাক্সের ট্যাকাটুকা হাপিস করে দেয়ার সময় ফোন বন্ধ রাখে। খাইছে

ইয়ে, সামাজিক ব্যাবসা শব্দবন্ধটি শুনলেই আমার খালি সামাজিক ছবি'র [ শয়তানী হাসি ] কথা মনে পড়ে,
আচ্ছা, আমি কি যুদ্ধাপরাধীদের দলবলের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপনের মত স্ববিরোধী? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনি কি আস্তিক? ঈদের ওপর লেখা একটা আর্টিকেলে কমেন্ট করেছেন? আপনার কোন অধিকার নেই ঈদের ওপর লেখা আর্টিকেলে কমেন্ট করার, আগে ণূঢ়ার কাছ থেকে মুসলমানি নরিয়ে আসুন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

টিউলিপ এর ছবি

ণূঢ়া কী স্টেথোস্কোপের মত ভোঁতা জিনিস দিয়ে মুসলমানি করে?

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইয়ে, ণূড়া'র 'হার্ট' মনে হয় রানের চিপায় দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

টিউলিপ এর ছবি

ফেসবুকে হৈ-চৈ দেখে ঘটনা বুঝতে পারছিলাম না। এই তাইলে ঘটনা? ইনুচ আঙ্কেল কী রবির পরামর্শদাতা না কি এখন?

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আঙ্কেল বেস্ত আছেন, সম্ভবত এইসব কাজেই, কে জানে!

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আরেকবার খৎনা করতে গেলে তো বংশরক্ষা দুস্কর হয়ে যাবে হে কবি রেগে টং

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ঠিকমত খাৎনাই যদি না হয়, তবে বংশ রক্ষে করে হবেটা কী শুনি? সে বংশ কি নারায় তাকবীর দিয়ে ঈদুল ফিতুর পালন করবে?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনি নিজের বংশকে রেসপেক্ট করেন, আমাকেও শুভেচ্ছা দেন! খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সমাজসেবার ‌ সাথে রবির বিজ্ঞাপন সাঁটিয়ে দেয়াটা দৃষ্টিকটু।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও কিন্তু কর্পোরেটরা স্পন্সর করে, লোগো আঁকা জামা, ক্যাপ দেয়। আমরা সেসেব বিজ্ঞাপন গায়ে মাথায় লাগিয়ে ঘুরি। তবে, এখানে এটা আপত্তিকর একারণে যে এটাকে 'স্পন্সরশিপের' বদলে 'সমাজসেবা' ধরণের ট্যাগে চালানো হয়েছে।

বরং, রবি যদি বলত যে তারা ২৫০০০ শিশুকে পোশাক স্পন্সর করেছে -সেটা মানানসই হত। যেকোন স্পন্সরই তাদের লোগো লটকে দিতে পারে। আজ গুলিস্তানের মোড়ে যদি গ্রামীণ বা বাংলালিংক তাদের বিশাল লোগো ওয়ালা ২০০০ টিশার্ট বিলি করে -তবে এত ২০০০ বিজ্ঞাপন নিয়েও আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু, এরা যদি প্রচার করে ২০০০ মানুষকে টিশার্ট 'দান' করে সমাজের সেবা করল তারা -এটাতে আমার আপত্তি আছে।

তবে, ঈদের আগে মানুষ এমনি এমনিই অনেক টাকা রিচার্জ করে কথা বলার জন্য প্রতিটা অপারেটরে। সেখান থেকে প্রতিটি অপারেটরই অনেক মুনাফা করে থাকে। সেখান থেকে কিছু টাকা খরচ এমনিই করা যায় (এরকম সাইনবুড না লাগিয়ে)।

ডিসক্লেইমার: আমি রবিতে চাকরি করি না/করতাম না।

শুভেচ্ছা হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হুম সেটাই মূল পয়েন্ট। এরকম সিল ওয়ালা গেঞ্জি বড়লোকদের প্রোগ্রামে রবি গ্রামীণ ফ্রি বিলি করে বেড়ায়। আর গরীব লোকদের বিলি করার সময় গ্রাহকদের রিচার্জ করা পয়সায় তো করেই, তার উপ্রে সেইটার গায়ে সমাজসেবার সিল লাগায়।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিটা ডকুমেন্ট হিসেবে থেকে যাওয়াই ভালো চলুক

ফাহিমা দিলশাদ

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

থাউক তাইলে ছবিটা। আপনাকে ধন্যবাদ।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মরুদ্যান এর ছবি

গ্রামীনের সবচেয়ে বড় ফাইজলামি ছিল সম্ভবত দুনিয়া কাঁপানো তিরিশ মিনিট।

রবি যে কাপড় বিলাইসে তার খরচ ১০০ টাকাও না।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হ।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

মরুদ্যান বলেছেনঃ

গ্রামীনের সবচেয়ে বড় ফাইজলামি ছিল সম্ভবত দুনিয়া কাঁপানো তিরিশ মিনিট।

হিমু ভাই বলেছেনঃ

আমার মনে হয় রবিকে এখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত।

আর কিছু বলার নাই। এটাই বাকি আছে এখন
চলুক
-----------------
আশফাক(অধম)

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক দরকারী পোস্ট । এই সামাজিক ব্যবসার ট্রেনটা লাইনটা ইউনুস আংকেলই শুরু করেছেন । বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজ এখন শুধু সেই একই লাইনের উপর দিয়ে পেসেঞ্জার টেনে নিয়ে যাচ্ছে । তবে বিপদের কথা হচ্ছে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ তাও বলবে, "অন্তত সমাজ সেবা তো হচ্ছে" ।

জেনে বুঝেও কেন আমরা এই জিনিসে সায় দিচ্ছি ? এই ব্যপারটা নিয়ে আরেকটু গভীরে ভাবার দরকার আছে । বাঙালী ফাও জনসেবা করে না । চ্যারিটি শব্দটার মানে বাঙালী আসলেই কতটা বোঝে এই ব্যপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে । আজীবনের শোষিত জাত আমরা । তাই নিঃস্বার্থে দানখয়রাত করার অভ্যাসটা আমাদের কম । আমরা ধর্মীয় কারনে ইদে চাঁদে সদকা জাকাত দেই, শেষ বয়সে গ্রামের বাড়িতে মসজিদ করে দেই, মাদ্রাসায় ডোনেশান দেই । ফকির মিসকিন খাওয়াই ঐ একই কারনে । এমন মানসিকতা ধারন করা মানুষের জন্য তো কর্পোরেট হাউজের এই "রিচার্জের মাধ্যমে জনসেবা" এক অসাধারন স্কিম । রিচার্জ ও হলো আবার পথ শিশুরা জামাও পেলো ।

===========
দস্যু ঘচাং ফু

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এই রকম এক একটা জনসেবামূলক বিজ্ঞাপনের কারনে একটা কোম্পানি কী পরিমান লাভবান হয় তার একটা এস্টিমেট করা গেলে ভাল হত।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

মাত্র ২৫০০০ কেন??

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

তাও পঁচিশ হাজার, কিছু দুষ্ট লোক দেখলাম বলতেছে আসলে নাকি সেইটাও দেয় নাই, পাঁচ ছয় হাজারের মত দিছে, কিন্তু শক্ত তথ্য না থাকায় সেটা আর লেখায় উল্লেখ করলাম না।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

হিসাবটা এমন হবে
২৫,০০০*৫৮০০=১৪,৫০,০০,০০০ টাকা তোলা লাগবে ২৫ হাজার কাপড় দিতে।
তার মানে ১৪,৫০,০০,০০০/৫৮=২৫,০০,০০০জন গ্রাহককে ৫৮টাকা রিচার্জ করা লাগবে। (কেউ একাধিক করতে পারে,অংকের সুবিধার্থে আপাতত "একাধিক" বাদ দিলাম)

আগে গ্রাহক সংখ্যাটা জানা জরুরী।গ্রাহক সংখ্যা নির্নয় করাটাও কঠিন কারন "এ্যাক্টিভ সিম" বের করাটা এখন কঠিন কাজ। আর রবির এই ব্যপারে চুরি করার অভিযোগ বেশ পুরানো। এখানে দেখতে পারেন। ধরে নিলাম রবির গ্রাহক সংখ্যা ২কোটি প্লাসমাইনাস১০%।আজকাল একাধিক সিমকার্ড ব্যবহারের যে অবস্থা তাতে আমরা ধরে নিতে পারি বড়জোর ৬০ভাগ সিম রেগুলার ব্যবহৃত হচ্ছে। তাহলে সিম হচ্ছে ১কোটি ২০ লাখ। আরো বাদ দেন তাহাদের যারা সিমে প্রতিদিন ১০/২০টাকা করে ভরে প্রেম-মোহাব্বত বা ফোন টিজিং করে।আরো আছে কর্পোরেট সিম, পোস্টপেইড সিম,ইন্টারনেট ব্যবহারের সিম,ভিওআইপি সিম।একুনে আমরা ধরে নিলাম ১কোটি ২০ লাখ এর ৫০ভাগ সিম মানে ৬০ লাখ পাব্লিক আছে এই খয়রাতিতে হেল্পানোর জন্য। এই ৬০ লাখ পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট যদি থাকে এর মাঝে কত শতাংশ সেই ৫৮টাকা রিচার্জ করবে?২০ শতাংশ মানুষও যদি করে তাহলে ১২ লাখ। এত মানুষ করার কথা না।মোবাইলের অফারে মানুষের যত আগ্রহ তত আগ্রহ এই খয়রাতে থাকার কথা না।দিন রাত ঠকবাজের পাল্লায় পরতে পরতে এখন মানুষ অনেক বেশি সিরিয়াস। আজাইরা এইসকল খরচ করার কথা না তেমন।তারপরও কেউ একাধিকবার করবে এই ধরে কুলমিলিয়ে ১৫লাখ লোকও যদি এই রিচার্জ অপারেশনে অংশ নেয় তাহলেও ত রবির ২৫ হাজার কাপড় দেয়া ট্যাকনিকেল্লি সম্ভব না। আর এই সকল মোনাফাখোর কোম্পানি কোটি টাকা রাজস্ব মেরে দেয় আর এই রিচার্জের ব্যাপারে সততা দেখাবে,ক্যামনে কি? তাই সংখ্যাটা ৫/৬ হাজার হওয়াটাই স্বাভাবিক।
-------------------------------
আশফাক(অধম)

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হুম।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বীকারোক্তিঃ
১। আমার বানান-ব্যাকরণে অসংখ্য ভুল থাকার কথা। আমি যথাসম্ভব অভিধান ঘেঁটে বানান দেখে নিতেসি। তারপরও ভুল থাকলে কেউ শুধরায়া দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
২। আমি রবির সংযোগ জীবনেও ব্যবহার করি নাই, বর্তমানে করার পরিকল্পনাও নাই; আমি বা আমার চেনা কেউ রবির সংযোগ ব্যবহার করে কিনা বা করার পরিকল্পনা আছে কিনা, তা আমার জানা নাই; এবং আমি বা আমার চেনা কেউ রবিতে চাকরী করে না, এবং কারো রবিতে চাকরী করার সম্ভাবনা আছে কিনা জানা নাই। এবং আমার ভবিষ্যতে ব্যবসা করার কোন ইচ্ছা নাই।
৩। আমি ব্যবসা জিনিষটা ঠিক কিভাবে সমাজের মধ্যে কাজ করে, এবং কোন কাজটা সমাজের মানুষকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে তা ভালো করে বুঝি না। ভালো করে বুঝার জন্যেই আমার প্রশ্ন। কেউ সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।

আমি ব্যাপারটা বুঝলাম না। রবি যা করতেসে, তা হচ্ছে সে "আমি গরীব মানুষের উপকার করতেসি" বলে লাভ করতেসে। তো রবির ব্যবহারকারীরা তো জানেই, তার টাকা দিয়ে আসলে রবি লাভ করতেসে। সে তো জেনে বুঝেই ৫৮ টাকা ভরতেসে আলাপনীতে। এইখানে রবি কার কি ক্ষতি করতেসে? কেউ হয়তো ৫০ টাকা এমনিতেই ভরতো, তারা ৮ টাকা বেশী ভরলো ( এইটাই সম্ভবত রবির লাভ, কারণ যে ২০ টাকা ভরতো, সে পথশিশুর কথা ভেবে ৩৮ টাকা বেশী ভরবে না। ) অথবা ধরা যাক, আরেক গ্রাহক ২০ টাকা ভরতো, কিন্তু সে আরো ৩৮ টাকা বেশী ভরলো তার সেই টাকার ২-৪ শতাংশ একটা গরীব বাচ্চার জামা কেনাতে খরচ হবে ভেবে।

আমার কাছে এইটা পরিষ্কার যে "তুমি আমার ১০০০ টাকার জিনিষ কিনলে আমি গরীবকে ১ টাকা দিবো" কাজটা অবশ্যই গরীবের উপকারের জন্য করা হইতেসে না। আমি যদি এই কাজটা করি, আমার উদ্দেশ্য আসলে টাকা কামাই করা। গরীব মরলেও কিসু যায় আসে না আমার। তো কেউ আমার সেই বুদ্ধি শুনে ১০০০ টাকার জিনিষ কিনেই ফেললো, আর আমিও গরীবকে ১ টাকা দিলাম। আমার জিনিষ বেচার জন্য আমি ১ লাখ টাকা খরচ করে ঢাক-ঢোল পিটাইলাম, এক কোটি টাকার জিনিষ বেচলাম, এবং শেষে গরীবকে ১০ হাজার টাকা দিলাম। এবং শেষে আরো ১ লাখ টাকা খরচ করে আবার ঢাক-ঢোল পিটাইলাম যে, আমি গরীবরে ১০ হাজার টাকা দিসি ( উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার। ওরা যেন পরের মৌসুমে আবার আমার হাজার টাকার জিনিষ কেনে, বা ভবিষ্যতে অন্যান্য পণ্য কেনে। ) তো এইখানে ক্ষতিটা কার হইতেসে? আমি তো আর মানুষের কাছ থেকে ১০০০ টাকা চুরি/ ডাকাতি করি নাই।

গরীবের নাম বলে আমি নিজে আরো বড়লোক হচ্ছি, এইটা শুনতে খারাপ লাগে। কিন্তু আমার একটা ব্যাপার খারাপ লাগলেই ব্যাপারটা আসলে ক্ষতিকর, এমনটা ভেবে নেয়ার তো কোন কারণ নাই। ( আমি আমার "খারাপ লাগা"/ "ভালো লাগা"-কে বিশ্বাস করি না। ) আসলেই ক্ষতিকর কিনা, সেইটা জানার জন্য আমার দেখা লাগবে, আমার এই কাজের কারণে সেই গরীবরা আরো গরীব হইলো কিনা। ( যে রবিতে ৫৮ টাকা ঢালে, সে রবির পণ্যের উপযোগীতা সম্পর্কে জানে বলেই ধরে নেয়া যায়; সুতরাং পণ্যটা বাজারের বিকল্প পণ্যগুলার তুলনায় ভালো নাকি খারাপ, সেই প্রশ্নটা এইখানে করা যাইতেসে না। )

হ্যাঁ, উপরে যেমন হিমু বলসেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ইউনুস "সরকারের দেওয়া নানা সুবিধা, কর-অবকাশ, অনিয়মের চিপা ব্যবহার করে গরিবেরই টাকা গরিবকে ধার দেয়", রবিও কি তেমন কিসু করে? মানে, কর ফাঁকি দেয়, সরকারকে টাকা-পয়সা খাওয়ায়া অবৈধ স্থাপনা বানায়? হুঁম, সেইক্ষেত্রে অবশ্য রবির কাজটা অপরাধ। কারণ, আমি ১০ জনের টাকা ১০ টাকা চুরি করে ১ জনকে ১ টাকা দিয়ে থাকলে সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর, এবং সেইটা আমার চোখে পরিষ্কার ( এইখানে ৯টাকা আমার পকেটেই থাকতেসে। ব্যাপারটা আরো বড়ো অপরাধ যদি সেই ১ টাকাটা অন্য আরেকজনকে দেই, কারণ সে কিসু না করেই ১ টাকা পাইতেসে। )

তো রবি যদি "সরকারের দেওয়া নানা সুবিধা, কর-অবকাশ, অনিয়মের চিপা ব্যবহার" না করে ( আমার জানা নাই আসলে করে কিনা, এইখানে উপপ্রমেয় হিসেবে চিন্তা করতেসি ) সেইক্ষেত্রে এই "৫৮০০ টাকার ব্যবহারে ১০০ টাকা দান করা হবে" কিভাবে সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে?

হিমু এর ছবি

ধাপে ধাপে বোঝার চেষ্টা করুন।

১. এখানে গরিবকে নগদ টাকা দান করা হচ্ছে না।
২. গরিবকে বস্তু দান করা হচ্ছে।
৩. গরিবকে এ বস্তু দান করা হচ্ছে তাদের ঈদের উপহার হিসেবে।
৪. তারপর ঈদের উপহারের পরিবর্তে রবির বিজ্ঞাপনখচিত একটা কাপড় ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেটা গরিবকে রবির চলন্ত বিলবোর্ডে পরিণত করেছে।

টেরি প্র্যাচেটের একটা বই আছে, কারপে জুগুলাম, সেটা থেকে একটা সংলাপের অংশ প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে তুলে দিচ্ছি, পড়ে দেখুন।

“It’s not as simple as that. It’s not a black and white issue. There are so many shades of gray.”

“Nope.”

“Pardon?”

“There’s no grays, only white that’s got grubby. I’m surprised you don’t know that. And sin, young man, is when you treat people as things. Including yourself. That’s what sin is.

“It’s a lot more complicated than that “”

“No. It ain’t. When people say things are a lot more complicated than that, they means they’re getting worried that they won’t like the truth. People as things, that’s where it starts.”

একটা মানুষ গরিব বলে আপনি তাকে একটা বস্তু হিসেবে ট্রিট করতে পারেন না। রবি সেটা করেছে। এটা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

অতিথি লেখক এর ছবি

( উপরের স্বীকারোক্তি দিয়ে শুরু করা মন্তব্যটা আমার। )

ধন্যবাদ আপনার উত্তরের জন্য।

আমি নিজেও ধূসরে বিশ্বাস করি না। আমি সবকিছুকে সাদা-কালোতে/ ঠিক-ভুলে মাপার চেষ্টা করি।

কিন্তু সেইজন্যই আমি জিগেস করতেসি। ধরা যাক, একজন বস্ত্রহীন গরিবকে "বস্তু" হিসেবে ভেবে ( ভাবতে খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু আমি উত্তর জানার চেষ্টা করতেসি বলে খারাপ লাগাকে উঠায়া রাখতেসি ) আমি তাকে আমার নাম লেখা একটা জামা দিলাম। সবাই আমার নাম জানলো, সেই উদ্দেশ্যেই আমি দিলাম। এবং আমার উদ্দেশ্য স্বার্থক হইলো। ( ধরা যাক, মানুষ আমার নাম জানলো, আমি তাতেই খুশী এবং পরবর্তীতে আমি কারো ক্ষতি করলাম না। )

গরিবকে বস্তু হিসেবে ভাবলে সেটা সমাজের জন্য ক্ষতিকর বললেন। কিন্তু ক্ষতিটা কিভাবে পড়তেসে সমাজে? আর্থিকভাবে কিভাবে ক্ষতি হচ্ছে ( অন্যভাবে বললে, কিভাবে সেই ক্ষতিটা নির্ণয় করা যাবে ) বা কোন সুবিধা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে যেটা সে অন্যথা পাইতো, এইটা বুঝাইলে আমার বুঝতে সুবিধা হয়। তবে আপনি যেভাবে ইচ্ছা বুঝাইতে পারেন। আমি না বুঝলে জিগেস করবো।

আবারো অনেক ধন্যবাদ।

.............

প্রশ্ন

হিমু এর ছবি

গরিবের ক্ষতির কথাটাই বিবেচনা করুন শুরুতে। গরিব আপনার বিজ্ঞাপন করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই বিজ্ঞাপন বাবদ আপনি তাকে কোনো পারিশ্রমিক/পারিতোষিক/ভাড়া দিচ্ছেন না। বরং তাকে বোঝাচ্ছেন যে উল্টো আপনিই তার একটা উপকার করছেন। এটা পরিষ্কার বাংলায় ঠগবাজি।

দ্বিতীয়ত, এই উদাহরণগুলো আনচ্যালেঞ্জড থাকলে গরিবকে বস্তু হিসাবে দেখতে অন্যদেরও উৎসাহিত করে। আমাদের দেশে গরিব বেশি বলে গরিববাণিজ্যও বেশি। এটা ক্রমশ হালাল হয়ে গেছে রবির আগে আরো বড় বড় তালেবরদের আনচ্যালেঞ্জড গরিববাণিজ্যের কারণেই।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যাদ আবার উত্তর দেয়ার জন্য।

আমি কিন্তু এই ব্যাপারগুলাকে প্রশ্নই করতেসি। ধরেন, আরো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলা গরিবদেরকে বস্তু ভেবে জামা দেয়া শুরু করলো। প্রশ্ন আমার একই থাকতেসে।

জামাটাকেই কি পারিশ্রমিক হিসেবে ধরা যায় না?

আচ্ছা, আমি একটু ভাবতেসি জামাটাকে পারিশ্রমিক হিসেবে ধরা যায় কিনা। ( এইটা আমার চিন্তাপ্রবাহ। আমি এখন যাই ভাবতেসি, তাই লিখতেসি। ) আচ্ছা, ঘটনাটা আবার দেখি। রবি আমাকে বললো, তার দশ হাজার টাকার পণ্য কিনলে সে রাস্তার সেই শিশুকে একশো টাকার একটা জামা কিনে দিবে। এখন আমি ভাবলাম, আমার জামা কেনা, বিতরণ করার সময় নাই ( থাকলে আমি নিশ্চই নিজে থেকেই কিনে দিতাম। ) তো আমি ভাবলাম, বেশ, কিনে নেই। নিলাম কিনে। সে বাচ্চাটাকে একটা জামা দিলো, সেই জামাতে তার নাম। সে অন্য মানুষদেরকে বললো, "দেখো, তুমি যদি আমার দশ হাজার টাকার পণ্য কিনো, আমি ওই বাচ্চাটার মতো আরেকটা বাচ্চাকে একটা একশো টাকার জামা দিবো।" আরেকজন দেখলো, "বাহ, ভালো তো!" এবং সেও আমার মতো রবির দশ হাজার টাকার পণ্য কিনলো।

এইবার বাচ্চার দিক থেকে ভাবা যাক। আমি একটা বাচ্চা। আমার জামা নাই। এক ব্যাটা এসে বললো, "আমি তোকে জামা দিবো।" আমি তো সেই ব্যাটার জন্য কিসু করি নাই। সে আমাকে কেন জামা দিবে?

কারণটা সহজ। আসলে সেই ব্যাটার জামা পরলে ব্যাটার জিনিষ বেশী বিক্রি হবে। ফলাফলঃ সেও জিতলো, আমিও জিতলাম।

আমাদের কি তাহলে বরং উচিত না যে সেই বাচ্চাদেরকে এইটা বুঝানো যে রবি আসলে টাকা কামাইতেসে তাদেরকে জামা দিয়ে? তাদেরকে বুঝাইতে হবে যে, সে রবির উপকার করতেসে, এবং রবি তাদের উপকার করতেসে। রবিকে জামা দেয়ার সময় বাচ্চাদেরকে এইটা বলতে বাধ্য করা যাইতে পারে ( যেহেতু প্রায় কোন বাচ্চারই নিজে থেকে এইটা বুঝার বুদ্ধি নাই, অন্ততঃ সেইটাই হওয়ার কথা ) যে, "তোমরা আমাদের জামা পরলে আমাদের উপকার হবে।"

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আসলে জানার অভিশাপ বলে একটা কথা আছে। আমরা যখন একটা ব্যাপার জানি, তখন আমরা ভাবতে শুরু করি, এইটা আমরা আগেই ( যখন আসলে জানতাম না ) জানতাম। "রবি আমাকে জামা দিতেসে, কারণ আমি রবির উপকার করতেসি" এইটা যে একটা বাচ্চা বুঝতে পারে না ( আমি যখন বাচ্চা ছিলাম, তখন বুঝতে পারতাম না ) আমি এইটা আগে বুঝতে পারি নাই। আবারো অনেক ধন্যবাদ।

.................................

প্রশ্ন

হিমু এর ছবি

আমি একটা বাচ্চা। আমার জামা নাই। এক ব্যাটা এসে বললো, "আমি তোকে জামা দিবো।" আমি তো সেই ব্যাটার জন্য কিসু করি নাই। সে আমাকে কেন জামা দিবে?

এখানেও মনে হয় সামান্য বাড়তি চিন্তার অবকাশ আছে। আমি কিন্তু ব্যাটার জন্য অনেক কিছুই করেছি। ব্যাটা আমাকে জামা দেবে বলে উছিলা বানিয়ে মাসখানেক বিজ্ঞাপন করেছে। আমি সেই বিজ্ঞাপনের মডেল, সেই বাবদও আমাকে কোনো পারিশ্রমিক ব্যাটা দেয় নাই। কিন্তু ব্যাটা চায় আমি ভাবি, আমি তার জন্য কিছুই করি নাই, সে এসে গায়ে পড়ে আমাকে জামা দিচ্ছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আবার উত্তর দেয়ার জন্য।

আমি কিন্তু ব্যাটার জন্য অনেক কিছুই করেছি।

না, আমি আসলে বুঝাই নাই যে "আমি তো সেই ব্যাটার জন্য কিসু করি নাই।" আমি বলতেসি, একটা বাচ্চার এই চিন্তা আসার কথা। আমি যে আসলে ব্যাটার জন্য কিসু করতেসি, সেইটা কিন্তু পরের বাক্যেই বলসি ( যেটা প্রাপ্তবয়স্ক/ দুনিয়া আরেকটু দেখা আমির চিন্তা, কিন্তু একটা বাচ্চা যেটা বুঝে না। আমার পরিষ্কার করে লেখা উচিত ছিল কোনটা কার দৃষ্টিকোণ থেকে বলতেসি। )

কিন্তু ব্যাটা চায় আমি ভাবি, আমি তার জন্য কিছুই করি নাই, সে এসে গায়ে পড়ে আমাকে জামা দিচ্ছে।

আমারও সেই কথা। ব্যাটা যেন সেইটা না করতে পারে, সেইজন্য আইন করা যাইতে পারে, কোন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যদি তার নাম/ প্রতীক/ স্মারকসহ কিছু "দান" করে, এবং সেইখানে গ্রহীতা একজন পথশিশু হয়, তাহলে যেন প্রতিষ্ঠানটি থেকে কেউ অবশ্যই শিশুদেরকে বলে, "আপনারা যদি আমাদের এই জামা পরেন, তাহলে আপনারা আমাদেরকে সাহায্য করবেন, কারণ তাহলে মানুষ আমাদের জিনিষের কথা জানতে পারবে। আপনি কি আমাদেরকে সাহায্য করবেন?" তাহলে বাচ্চার আর এই ধারণা নিয়ে বড়ো হইতে হবে না যে, সে মানুষের ভিক্ষায় চলসে, যেখানে আসলে সে চলে নাই। আমি নিশ্চিত, একটা বাচ্চা যদি জানে সে বড়ো কাউকে সাহায্য করতে পারে, এবং সেও বিনিময়ে কিসু পাবে, তাহলে সে নিজেকে ছোট মনে করে না। এই কাজটা ঠিকঠাক মতো হইতেসে কিনা, সেইটা দেখার জন্য সরকার থেকে কাউকে নিয়োগ দেয়া হোক। রবিরা এইটা না করলে শাস্তি দেয়া হোক।

হিমু এর ছবি

দুঃখিত, শুধু এই মিষ্টি কথাই পথশিশুদের জন্য যথেষ্ট নয়। যেহেতু তাদের চলমান বিজ্ঞাপন হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেজন্য ঐ দান করা বস্তুর আয়ুষ্কাল হিসাব করে এককালীন টাকাও বিজ্ঞাপনের পারিশ্রমিক বাবদ পথশিশুদের প্রাপ্য। কারণ আর কোনো বিজ্ঞাপন মাধ্যমের স্বত্বাধিকারীকে "আপনি আমাদের সাহায্য করবেন" বলে মাগনা কাজ আদায় করে নেওয়া যায় না।

অতিথি লেখক এর ছবি

ত্রিমাত্রিক কবিকেও এই উত্তর দিসিঃ

আমার ধারণা, আমি ভুল হইতে পারি। রবি যদি বাচ্চাদেরকে জামায় বিজ্ঞাপন বয়ে বেড়ানোর খরচ বহন করে, তাহলে তাদের বিক্রি আসলে আরো বেড়েও যাইতে পারে। এবং রবি তার এই "৫৮০০ টাকা ব্যবহারে এক জামা" প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে।

সেইক্ষেত্রে আমি সমর্থন করি যে, বাচ্চাদেরকে বিজ্ঞাপনখরচ দেয়া উচিত।

ধন্যবাদ, এই গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাভাবনাগুলা বলার জন্য, এবং আমার ভুল ধরতে সাহায্য করার জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা চিন্তা আমার মাথায় ফেরত আসছে। সুতরাং, আমার উপসংহার এখনো পরিবর্তনীয়।

ক্লাস নাইন-টেনের অর্থনীতিতে একটা বিষয় সম্পর্কে জানসিলাম। কোনটাকে কি বলে, ভুলে গেসি। কিন্তু ব্যাপারটা এইরকম।

ধরেন, আপনার এখন টাকার খুব দরকার, এবং আপনার কাছে একটা আপেল আছে। এইদিকে আরেকজনের টাকার তেমন দরকার নাই, এবং তার কাছেও একটা আপেল আছে। এখন আপেলটার ন্যায্যমূল্য ১০ টাকা হইলেও আপনি আমার কাছে আসলে ৮ টাকায়ই বেঁচে দিবেন। আপনি যদি না বেঁচেন, তাহলে আপনার মতো আরেকজন যার টাকা দরকার, সে আমার কাছে ৮ টাকায় বেঁচে দিবে। সেইক্ষেত্রে আপনি একজন ক্রেতা হারাইলেন।

এই হিসাবটা কি বাচ্চা আর ওই বিজ্ঞাপনতক্তাওয়ালার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? কারণ, এইখানে বাচ্চার জামাটা, সেই তক্তাওয়ালার যতো না টাকা দরকার, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশী দরকার। সে বিজ্ঞাপনের জন্য ন্যায্যমূল্য আশা করতে পারে, কিন্তু অর্থনীতির সূত্র অনুসারে সে কি আসলে ন্যায্যমূল্য পাবে? অর্থনীতির সূত্র অনুসারে কি এই ঘটনা আমাদের বিশ্বে ঘটতে পারে? আমি ব্যাপারটাকে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রের মতো বানায়া ফেলতেসি, জানি। কিন্তু আপনি যদি আপনার নমুনাটা বড় করেন যথেষ্ট, সেইক্ষেত্রে অধিকাংশ সদস্য শেষ পর্যন্ত কি করতে যাইতেসে এবং তাদের সিদ্ধান্ত বাকিদের সিদ্ধান্তকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে, সেইটা কি ভবিষ্যৎবাণী করা সম্ভব?

( আমার অর্থনীতির জ্ঞান শূণ্যের কাছাকাছি, এবং সম্ভবত ঋণাত্নক দিকে। আমার পড়াশোনা করা উচিত এইটা নিয়ে। তারপরও কেউ সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো। )

........................

প্রশ্ন

হিমু এর ছবি

ঢাকায় যতো পথশিশু আছে, ততো বিলবোর্ডওলা নাই। সরবরাহ আর চাহিদার দিক দিয়ে চিন্তা করলেও তাই পথশিশুদের "দাম" সস্তা। কিন্তু তারা যে আদৌ দাম হাঁকতে পারে, এই ব্যাপারটাও তাদের জানানো প্রয়োজন।

আপনি একটা ব্যাপার বারবার গুলিয়ে ফেলছেন। পথশিশুদের জামা দরকার, কিন্তু রবির বিজ্ঞাপনখচিত জামাই তাদের একমাত্র চয়েস না। মানুষের কাছ থেকে তারা জামা চাইতে পারে। আমার ধারণা তারা যদি লোকজনকে গিয়ে বলে যে এই বিজ্ঞাপনী জামা তার আর পরতে চায় না, এটা বদলে তারা আরেকটা জামা চায়, অনেকেই তাদের একটা জামা দেবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু মানুষের কাছে চেয়ে পাইলে সেইটা কি আসলেই "দান"/ ভিক্ষা হয়ে গেল না? রবিকে যদি বলতে বাধ্য করা হয় তারা "দান" করতেসে না, তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা প্রাপ্য হিসেবেই শিশুরা গ্রহণ করতে পারে।

অবশ্যই দাম তারা হাঁকাইতে পারে। আমি চিন্তিত সেই দাম তারা পাবে নাকি। তার রবি যদি জামা বিতরণ বন্ধ করে দেয়, তাহলে কি দামটা আবার পড়ে যাইতে পারে না?

.........

প্রশ্ন

অতিথি লেখক এর ছবি

এখন ভাবতেসি, সেইক্ষেত্রে দাম পড়লেও ভালো। সেইটা অন্ততঃপক্ষে পথশিশুদের কথায় হবে।

আরেকটা চিন্তা মাথায় আসলো। রবিকে যদি বিজ্ঞাপনখরচ বহন করতে বলা হয়, সেইক্ষেত্রে তারা সেই জামাকে যেভাবে খুশী সেইভাবে ব্যবহারের অধিকার পেয়ে যায়। তারা সেই জামায় তখন মূল্যতালিকাও লাগায়া দিতে পারে। সেইক্ষেত্রে গ্রাহকরা এইটাকে ভালো চোখে দেখবে না, নিশ্চিত। তখন তারা রবিতে কম টাকা ঢালবে। সুতরাং, রবির তখন একটাই উপায় থাকবে -- মূল্যতালিকা না রাখা/ বা বিজ্ঞাপনের ধরণটা নূন্যতম রাখা ( ঈদের জামাটায় যেমন ছিল -- রবির নাম বা এক্সিয়াটার প্রতীক ছিল না। ) যেহেতু বেশী খরচ বহন করতে হইতেসে, সুতরাং তারা জামা বিতরণের সংখ্যা কমায়া দিবে। অন্যদিকে গ্রাহকরা যদি জানে রবি বিজ্ঞাপনের খরচও দিতেসে, সেইক্ষেত্রে তারা রবিতে টাকা ঢালা বাড়ায়া দিতে পারে। সেইক্ষেত্রে রবি আবার বিতরণের জামার সংখ্যা বাড়ায়া দিতে পারে।

আমি অর্থনীতি অতো ভালো বুঝি না। আমার কথাগুলার মধ্যে কি কোন গিঁটফুটো আচে?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার ধারণা তারা যদি লোকজনকে গিয়ে বলে যে এই বিজ্ঞাপনী জামা তার আর পরতে চায় না, এটা বদলে তারা আরেকটা জামা চায়, অনেকেই তাদের একটা জামা দেবে।

আমার ধারণা ঠিক উল্টা। তারা যদি বলে ওই আল্পনার জন্য তারা জামা পরবে না ( এমনকি তারা যদি রবির পণ্যের মূল্যতালিকাওয়ালা জামাও পরতে অস্বীকৃতি জানায় ) মানুষকে তাদেরকে "আইসে জমিদারের পুত, যা কামাই কইরা কাপড় কিন" বলে তাড়ায়া দিবে। বিশেষ করে তাদের কেউ রবির সেইরকম একজন গ্রাহক হয়ে থাকে।

অতিথি লেখক এর ছবি

নাহ, আমি আমার উপসংহার আবার বদলাইসি। পুরা একশো আশি অংশ ঘুরে যাইতেসি।

আমি মনে করি রবি অন্যায্য কিসু করতেসে না।

আমি কেন তা মনে করি, বলতেসি।

রবিকে যদি বিজ্ঞাপনের খরচ দিতে হয়, তাহলে সে কাপড়ে যা খুশী তাই লিখে দেয়ার অধিকার পায়। সেইটাকে মানুষ খারাপ চোখে দেখতে পারে, কিন্তু আমি খারাপ চোখে দেখবো না। কেউ যদি খারাপ চোখে দেখে, আমি তাকে খারাপ চোখে দেখবো। কারণ, it makes sense. ( দুঃখিত, আমি এইটার বাংলা করতে পারলাম না। এইটা আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর কথাগুলার একটা, এবং এইটার ভাবানুবাদে বাংলায় সমতুল্য আর কি আছে, আমার জানা নাই। ) কারণ, এটা ন্যায্য। বিজ্ঞাপনতক্তার সাথে তাদের এই জামার বিজ্ঞাপনের তুলনা তখনই করা যাবে, যখন রবিকে এই জামাকে বিজ্ঞাপনতক্তা হিসেবে ব্যবহার করার স্বাধীনতা দেয়া হবে।

যদি বিজ্ঞাপনের খরচ বহন না করতে হয়, সেইক্ষেত্রে জামাটাই মূল্য। কারণ, জামার টাকা জমাইতে একটা বাচ্চার অনেকদিন কাগজ টোকাইতে হয় ( তার টাকা প্রধানতঃ চলে যায় মা-বাপের কাছে, সেই টাকা খরচ হয় খাবার কিনতে। সে কিছু টাকা লুকায়া রেখে জামা কিনলেও লাভ নাই, কারণ মা জামা দেখলে তারে পিটায়া তক্তা বানায়া ফেলবে। ) রবি তার একমাসের পরিশ্রম কমায়া দিতেসে। সুতরাং রবির অধিকার আছে তার নাম জানানোর। সে যদি তার নাম ও এক্সিয়াটার সেই প্রতীকও লাগায়া দিতো, সেইটাও ন্যায্য হইতো। ( আমি মনে করি, সেইটা আরো বেশী ন্যায্য হইতো, কারণ অনেক মানুষ এই আল্পনা দেখে আসলে বুঝবে না এইটা রবির দেয়া। )

রবি এইখানে বড়লোক। আমি এইখানে রবিকে সমর্থন করতেসি বলে আমাকে কেউ মহৎ ভাববে না, আমাকে আরেক নিষ্ঠুরদের প্রতিনিধি ভাববে। কিন্তু আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা make sense করে কিনা। And it does make sense. যে জিনিষ make sense করে সেইটা নিষ্ঠুর মনে হইলেও আমি সেইটাকে মেনে নিবো।

তর্ক হইতে পারে, কি ধরণের জামা দেয়া হবে সেইটা নিয়ে। যদি জামাটা আরামদায়ক না হয়, সেইক্ষেত্রে আরামদায়ক জামার জন্য কথা বলা যাইতে পারে। জিনিষটা যদি সাধ মিটায়া পরার আগেই ছিঁড়ে যায়, সেইটা নিয়ে তর্ক হইতে পারে।

আমি সাথে হিমুর ওই প্রস্তাবটা -- রবির প্রচারণা চালানোর আগে গ্রাহকদেরকে জানানো হোক কি ধরনের/ কি দামের/ কার তৈরী জামা দেয়া হবে --- সমর্থন করি। এইটাও গ্রাহকের অধিকার। আমার ধারণা গ্রাহক বুঝে ১০০ টাকার বেশী দামের জামা দেয়া হবে না। কিন্তু এইটা রবির জন্য কোন আত্মপক্ষ সমর্থনের অজুহাত হইতে পারে না।

হিমু এর ছবি

টিপু কিবরিয়া নামে এক লোক পথশিশুদের ২০০ থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে পর্নে অভিনয় করাতো। সেই পর্ন চলে যেতো বাইরের দুনিয়ায়, মোটা টাকায় বিক্রি হতো। আপনার কথামতো তো টিপু কিবরিয়াও তাহলে makes sense, কারণ সে ঐ পথশিশুর একমাসের কাগজ টোকানোর খরচ বাঁচিয়ে দিচ্ছে। নাকি?

অতিথি লেখক এর ছবি

যৌনছবি আর জামার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে যৌনছবিতে অভিনয়ের কারণে তাদের শারীরিক আর মানসিক ক্ষতি হয়। জামা পরলে হয় না। বরং জামা দরকারি জিনিষ।

হিমু এর ছবি

তার মানে শুধু একমাসের কাগজ টোকানোর খরচ বাঁচানোটাই যথেষ্ট নয়, আরো ফ্যাক্টর বিবেচনা করতে হবে to make sense।

জামা দরকারি জিনিস, কিন্তু রবির বিজ্ঞাপনখচিত জামা শুধু দরকারি জিনিস না, সাথে রবির বিজ্ঞাপনও। আপনার সব সিদ্ধান্তই এটাকে কেবল "জামা" হিসাবে ধরে নিয়ে।

জামাটার উৎপাদন খরচ যদি হয় ১০০ টাকা, আর যদি ৬ বর্গফুট ক্ষেত্রফল হয়, আর যদি ৬ মাস টেকে, তাহলে বর্গফুট-মাস পিছু মাত্র ৩৬ পয়সা খরচ করে রবি বিজ্ঞাপন দিতে পারবে। আপনি এটাকে ন্যায্যমূল্য ধরছেন গরিব পথশিশুর কাগজ টোকানোর আয়ের সাথে তুলনা করে, সেটাও অনুচিত, যেহেতু খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনের মূল্য কেউ ঠোঙার মাপে হিসাব করে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

এইটাতে উত্তর দেয়া হয় নাই দেখতেসি।

তার মানে শুধু একমাসের কাগজ টোকানোর খরচ বাঁচানোটাই যথেষ্ট নয়, আরো ফ্যাক্টর বিবেচনা করতে হবে to make sense। জামা দরকারি জিনিস, কিন্তু রবির বিজ্ঞাপনখচিত জামা শুধু দরকারি জিনিস না, সাথে রবির বিজ্ঞাপনও। আপনার সব সিদ্ধান্তই এটাকে কেবল "জামা" হিসাবে ধরে নিয়ে।

আর আমি মনে করি, আপনি এই জামাটাকে কেবল বিজ্ঞাপনমাধ্যম হিসেবেই ধরে নিতেসেন। আপনি এইটাকে চলন্ত "বিলবোর্ড" বলেই ঘোষণা দিয়ে দিলেন, যেখানে বিলবোর্ড আর এই জামার বিজ্ঞাপনমাধ্যমের মধ্যে অনেক পার্থক্য ( একটা আবারো বলি। বিলবোর্ড কেবলই একটা বিজ্ঞাপনমাধ্যম। এইখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যেমন খুশী যে দিন খুশী বিজ্ঞাপন দেয়ার ও বদলানোর স্বাধীনতা থাকে। জামাটায় থাকে না। )

অতিথি লেখক এর ছবি

খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনের মূল্য কেউ ঠোঙার মাপে হিসাব করে না।

খবরের কাগজের উপযোগীতা শেষ হয়ে গেলে ঠোঙা বানায়, আগে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

আরেকটা ব্যাপার পরিষ্কার করে বলা দরকার।

যদি রবি এই ঈদে তাদের জামা কাপড়ে তাদের পণ্যের মূল্যতালিকা লাগায়া দিতো, ( এবং বাচ্চাদের বিজ্ঞাপন খরচ না দিতো ) সেইক্ষেত্রে আমি অবশ্যই প্রতিবাদ করতাম।

তার জামায় যদি কেবল রবির প্রতীক থাকে, তাহলে বার্তা হচ্ছেঃ "আমি রবি। তোমরা আমার জিনিষ ব্যবহার করলে আমি গরিব বাচ্চাদের জামা দেই।"

জামায় রবির মূল্যতালিকা যদি থাকে, তাহলে বার্তা হচ্ছেঃ "আমি রবি। ওর জামায় যেগুলা লেখা দেখতেসো, সেইগুলা আমার পণ্য। ( ভালো না? ) তুমি কিনবা? তুমি কিনলে এই বার্তাওয়ালা জামা আমি আরো গরিব বাচ্চাদের দিবো।"

আমার এই প্রতীকতত্ত্বের ব্যাখ্যা ভুল/ অসম্পূর্ণ হইতে পারে। কেউ সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।

হিমু এর ছবি

আপনার কপালে যদি রবি এসে একটা স্টিকার মেরে যায়, যে "আমি রবি, তোমরা আমার জিনিস ব্যবহার করলে আমি এনার কপালে স্টিকার মারি", তাহলেই কি সেটা ঠিক হয়ে যাবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

কপালে আঠাকাগজ মৌলিক চাহিদা না। জামা মৌলিক চাহিদা।

হিমু এর ছবি

বেশ, তাহলে মনে করুন আপনার কপাল ফেটে গেছে। ব্যাণ্ডেজ বাঁধা হলো, সেই ব্যাণ্ডেজের ওপরে রবির স্টিকার মারা। চিকিৎসা তো মৌলিক চাহিদা।

অতিথি লেখক এর ছবি

ব্যান্ডেজের উপর স্টিকার থাকা নিষিদ্ধ। কারণ, এতে জীবাণুর সংক্রমণের আশংকা থাকে।

হিমু এর ছবি

তাহলে মনে করেন ব্যান্ডেজের ওপর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অয়েন্টমেন্ট দিয়ে কথাটা লেখা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার এই সাদা পট্টি কেনার টাকা আছে, আমি কিনবো না।

কিন্তু আমার যদি আজকে টাকা না থাকতো, এবং হাসপাতালে আমাকে রবি দিয়ে যাইতো একটা পট্টি বিনামূল্যে, আমার সুবিধার কথা ভেবেই আমি পট্টিটা লাগাইতাম। আমার কাছে তখন সৌন্দর্যবোধের চেয়ে বেঁচে থাকাটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ -- বিশেষ করে যেহেতু কপালের আঘাতে সংক্রমণে Meningitis, brain abscess হওয়ার সম্ভাবনা থাকে -- আমি গ্রহণ করতাম। আগে মৌলিক চাহিদা, পরে সৌন্দর্যবোধ। আমি নিশ্চিত টাকা না থাকলে দুনিয়ার যে কোন মানুষই করতো। এবং যদি এইরকম পট্টি নিয়ে আসা কাউকে বাঁধা দেয়া হয়, বাঁধাপ্রদানকারীর বিপক্ষেই আমি কথা বলবো।

হিমু এর ছবি

অর্থাৎ, যে বিপন্ন, তার বিপদটাকে এখানে রবি ক্যাশ-ইন করছে। এটাই অনৈতিক।

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা অনৈতিক কেন? রবির তো কোন দায়বদ্ধতা নাই যে তাকে পট্টি কিনে দিতে হবে। সে যে পট্টি কিনতেই পারতো না, তাকে সাহায্য করতেসে। সে কাকে সাহায্য করবে, সেইটা নির্বাচন করার অধিকার তার আছে।

হিমু এর ছবি

পট্টিটাকে পট্টির অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন বানিয়ে ফেলাটাই অনৈতিক। বিজ্ঞাপনের কারণে এখানে ব্যাপারটা তখন আর শুধু "সাহায্য" থাকে না, বরং "বিপদ থেকে উত্তরণের মূল্যে এরচেয়ে অনেক বেশি খরুচে বিজ্ঞাপনের সার্ভিস দিতে বাধ্য করা"য় পরিণত হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

এরচেয়ে অনেক বেশী খরুচে বিজ্ঞাপন দিয়ে যদি আরো বেশী গ্রাহককে টানা যায়, তাহলে তারা আরো বেশী পট্টি কিনতে পারে। গ্রাহককে কিন্তু কেউ বাঁইধে ধইরে নিয়ে আসতেসে না।

অনৈতিক হইতো তখন, যদি তারা আরো বেশী গ্রাহক টানার পর তাদের পণ্যের গুণগতমান কমায়া দেয়। সেইক্ষেত্রে গ্রাহকদের সুযোগ থাকতেসে রবিকে বর্জন করার।

গ্রাহক কেন বুঝে না রবি সমাজসেবা করতেসে না, সেইটার দায়ভার রবি নিবে কেন? রবি যা করতেসে নিজের লাভের জন্য, এইটা গ্রাহকের মাথায় রাখলেই হবে।

হিমু এর ছবি

আপনি লেইন চেঞ্জ করে এখন রবির সাথে গ্রাহকের সম্পর্কে অনৈতিকতা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। সেটাও আমি চিহ্নিত করেছিলাম, যে রবি তার গ্রাহকদের কাছে তার ঈদের উপহারের নমুনা উপস্থাপন করেছিলো কি না। উপহারের নমুনা দেখলে গ্রাহকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকতো।

রবির অনৈতিকতা পথশিশুদের চলমান বিলবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করায়, এবং সেই কাজেও পথশিশুদের প্রাপ্য পারিশ্রমিক পরিশোধ না করায়।

রবির কাজের দায়ভার রবিকে নিতে হবে, গ্রাহকের বোঝা না বোঝায় এখানে কিছু এসে যায় না। আপনার কথাটা অনেকটা এমন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কেন বোঝে না যে লম্পট তাকে ধর্ষণ করছে, সেটার দায়ভার লম্পট কেন নেবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু সাধারণ মানুষ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী না। তাদের মাথা আছে, বুঝার ক্ষমতা আছে। তারা যদি ভাবে রবি এসে আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী বানায়া যাবে, সেইটা ভুল। আর আমি তো বললামই, রবিকে "দানের" সময় স্বীকার করতে হবে যে, সে আসলে "দান" করতেসে না।

আমি "লেইন চেঞ্জ" করি নাই। কি কাজ করলে রবি ক্ষতিকর কাজ করতো, সেই উদাহারণ আপনিও দিসেন এর আগে ( "যদি পরনের জামা খুলে নিয়ে যাইতো। )

রবির অনৈতিকতা পথশিশুদের চলমান বিলবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করায়,

এইটা নিয়ে আগেই বলসি। বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন বদলানো হয়। বিলবোর্ডে পণ্যের মূল্যতালিকা দেয়া হয়। এইখানে রবি তার কিসুই করতেসে না। বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন আর জামার বিজ্ঞাপন এক জিনিষ না।

হিমু এর ছবি

বেশ, বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন আর জামার বিজ্ঞাপন এক জিনিস না। কিন্তু তাতে করে জামার বিজ্ঞাপনটা অবিজ্ঞাপন হয়ে যায় না।

অতিথি লেখক এর ছবি

সুতরাং, আপনি বিলবোর্ডের দাম জামার ক্ষেত্রে আশা করতে পারেন না। বিলবোর্ডে রবি বিজ্ঞাপন দিলে সেই বিজ্ঞাপন কেউ তুলতে পারবে না। জামাটা বাচ্চাকে দিয়ে দিলে সে জামাটা যখন খুশী খুলে রাখতে পারবে ( বাকি পার্থক্যগুলা আগেও দিসি। )

হিমু এর ছবি

বিলবোর্ডের দাম তো আমি জামার ক্ষেত্রে আশা করছিও না। শুধু বলছি যে জামায় বিজ্ঞাপন দিলে সে বিজ্ঞাপন বাবদ পারিশ্রমিক/ভাড়া দিতে হবে।

বিলবোর্ডও কুয়াশা বা বৃষ্টির সময় দেখা যায় না। বিলবোর্ডের প্রাইসিঙের সময় এই কথা বিলবোর্ডের মালিককে বলে কোনো লাভ আছে?

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু আপনি যদি বিজ্ঞাপনবহনের খরচবাবদ এক টাকাও দেন, আপনাকে আসলে ওই মূল্যতালিকা ঝুলায়া দেয়ার অধিকার দেয়া হয়ে গেল।

ম্যাঘ-বৃষ্টি হইলে বাইরে এমনিতেও বিজ্ঞাপন দেখার দর্শক থাকে না। এইক্ষেত্রে জীবন্ত ও জড় দুই রকম বিজ্ঞাপনই নিস্ক্রিয় থাকে। আমরা কি যখন চারদিকে জোড়ায় জোড়ায় চোখ থাকে, তখনকার কথা চিন্তা করতেসি না?

হিমু এর ছবি

মূল্যতালিকা ঝোলানোটাকেই আপনি আপনার নৈতিকতার চৌকাঠ ধরছেন কেন? মূল্যতালিকা না ঝোলালেই বিজ্ঞাপন হালাল, আর ঝোলানো মাত্র হারাম নাকি?

তাহলে বাচ্চাটা যখন জামা পরছে, ঐ সময়টাই কি আলোচ্য নয়?

অতিথি লেখক এর ছবি

মূল্যতালিকা ঝোলানোর অধিকার রবিকে দেয়া মানে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমিক বানায়া দেয়া। আমরা নিশ্চই এইখানে শিশুশ্রমকে উৎসাহীত করতেসি না।

যাই হোক,
আপনার আরেকটা মন্তব্যে বুঝা গেল যে, আপনি "ইতিমধ্যে আদায় করে ফেলা" কাজের মূল্য দিতে চান, এবং ধরে নেয়া যায়, পরে যেন আর "ইতিমধ্যে না হয়ে যায় কাজটা" সেইজন্য প্রতিরোধ করতে চান।

সুতরাং, আলোচনটা সেই মন্তব্যেই আগাক।

হিমু এর ছবি

কেউ শ্রম দিলে তার পারিশ্রমিক প্রাপ্য, আনুষ্ঠানিকতা এখানে বাহুল্য মাত্র। কারো বাড়িতে চুরি হলে থানায় গিয়ে মামলা করা মানে কি "আনুষ্ঠানিকভাবে" চুরির শিকার হওয়া? এই কথাটা চোর ছাড়া আর কারো পক্ষে যায় কি?

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশী চিপা হয়ে যাইতেসে, তাই সবার নীচে আলাদা করে উত্তর দিতেসি।

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ০২/০৮/২০১৪ - ৫:১৩অপরাহ্ন)
কেউ শ্রম দিলে তার পারিশ্রমিক প্রাপ্য, আনুষ্ঠানিকতা এখানে বাহুল্য মাত্র। কারো বাড়িতে চুরি হলে থানায় গিয়ে মামলা করা মানে কি "আনুষ্ঠানিকভাবে" চুরির শিকার হওয়া? এই কথাটা চোর ছাড়া আর কারো পক্ষে যায় কি?

আমি আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমকে হালাল করা বলতে বুঝাচ্ছি, এরপর থেকে যে কেউ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে শিশুদেরকে বিজ্ঞাপনের জন্য যেমন খুশী তেমনভাবে ব্যবহার করতে পারবে। অর্থ্যাৎ শ্রমে সংযুক্ত করতে পারবে।

এবং তারপর আমি বলসি,

যাই হোক,
আপনার আরেকটা মন্তব্যে বুঝা গেল যে, আপনি "ইতিমধ্যে আদায় করে ফেলা" কাজের মূল্য দিতে চান, এবং ধরে নেয়া যায়, পরে যেন আর "ইতিমধ্যে না হয়ে যায় কাজটা" সেইজন্য প্রতিরোধ করতে চান।

অর্থ্যাৎ, আমি বুঝতে পারলাম, আপনি চান এইবার রবি টাকা পরিশোধ করে মাফ চাক, এবং পরে আর কেউ এই কাজ না করতে পারুক।

না করতে পারলে কি ফলাফল, তা আপনার ০২/০৮/২০১৪ - ৫:০৯অপরাহ্ন-য়ে করা মন্তব্যের উত্তরে লিখসি।

অতিথি লেখক এর ছবি

কারণ আর কোনো বিজ্ঞাপন মাধ্যমের স্বত্বাধিকারীকে "আপনি আমাদের সাহায্য করবেন" বলে মাগনা কাজ আদায় করে নেওয়া যায় না।

অন্য মাধ্যমগুলার সাথে এই জামাটাকে তুলনা করে দেখি, আসেন।

আমি ব্যবসা বুঝি না ভালো করে। কিন্তু তবুও আমি বলতে পারি, রবির ব্যবসাধিকারে দেশে যতোগুলা বিজ্ঞাপনতক্তা আছে, তার কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশে তাদের পণ্যের প্রচার করা হয়। একটি নির্দিষ্ট বছরে আমার ধারণা প্রতিটা বিজ্ঞাপনতক্তাতেই কমপক্ষে চারমাস পণ্যের বিজ্ঞাপন থাকে। ( আমার এক-তৃতীয়াংশের হিসাবঃ আমার দেখা বিজ্ঞাপনগুলা মূলতঃ তিনরকম। পণ্যের প্রচারণার বিজ্ঞাপন; আমি সমাজের ইতিবাচক কিসু করতেসি, যেমন "জেগে উঠো আপন শক্তিতে" জাতীয় কথাবার্তা; আরেকটা খালি "আমি দুনিয়ায় আছি" টাইপের বিজ্ঞাপন; যেমনঃ এক পোলা বেতারালাপনী দিয়ে কথা বলতেসে, আর হাসতেসে, নীচে প্রতিষ্ঠানের নাম আর "Be heard" জাতীয় কথাবার্তা। এইটা হওয়ার কথা না যে, একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তার পণ্যের বিজ্ঞাপনের চেয়ে বাকি দুইটার বিজ্ঞাপনকে বেশী প্রাধান্য দিবে। ) এই এক-তৃতীয়াংশের সূত্রটা পত্রিকা, বেতার আর দূরদর্শনেও খাটার কথা।

এই জামা কাপড়ের বিজ্ঞাপনটা কেবল শেষোক্ত পদ্ধতি কাজে লাগাইতেসে। জামায় বাকি দুই ধরণের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হইসে শূণ্য শতাংশ। জামাকে বিজ্ঞাপনতক্তার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এইটা ধরে নেয়া কি সঠিক? হলে কেন?

হিমু এর ছবি

জামাকে বিলবোর্ডের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না, স্থাবর বিলবোর্ডের পাশাপাশি চলমান বিলবোর্ড হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

অর্থ্যাৎ, কিন্তু এই অধিকার জামা ছাড়া আর আলোচ্য সব মাধ্যমে থেকেই যায় যে, রবি যে কোন ধরণের বিজ্ঞাপন সেইখানে সেঁটে দিতে পারবে। আপনি কি রবিকে বাচ্চাদেরকে টাকা দেয়ার মাধ্যমে সেই অধিকার, অর্থ্যাৎ পরিপূর্ণ বিজ্ঞাপনতক্তা বানানো সমর্থন করেন?

হিমু এর ছবি

না, আমি পথশিশুদের চলন্ত বিজ্ঞাপন হিসেবে দেখতে অনাগ্রহী। আমি কেবল রবি তার ইতিমধ্যে করে ফেলা কাজে কীভাবে পথশিশুদের বঞ্চিত করেছে, সেটা বলছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিজ্ঞাপনের টাকা যদি এখন ওরা দেয়, তাহলে তো তারা এই জামা বদলায়া নতুন জামা দিতে পারে, যেখানে তাদের পণ্যের মূল্যতালিকা দিতে পারে। এবং সেইটা তাদের অধিকারও। ( কারণ, বিজ্ঞাপনতক্তার ব্যবসাধিকার নেয়ার পর তারা যখন খুশী বিজ্ঞাপন বদলানোর অধিকার রাখে। )

আপনি সমর্থন করেন?

হিমু এর ছবি

আপনার প্রশ্নের উত্তর তো আমি দিলাম। তারপরও যদি বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে আরেকবার কপি পেস্ট করতে পারি।

রবির ঐ কাজকে আমি সমর্থন করবো না, কিন্তু তারা যদি এরকম কিছু করে, তখন এই গোটা ব্যাপারটার ওপর থেকে সমাজসেবার মাসকারা এবং মশকরাটা মুছে যাবে। সেটা আমাদের অনেকের চোখে আঙুল দিয়ে ব্যাপারটা দেখতে সাহায্য করবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

সেইটার সমাধান তো আমিও দিসি। তাদেরকে বলতে বাধ্য করা যে, তারা কোন দান-খয়রাত করতেসে না, বরং এখানে পারস্পরিক সহযোগীতা করা হচ্ছে। তাহলে তো আর "সমাজসেবার" কোন তকমা লেগে থাকে না।

হিমু এর ছবি

"পারস্পরিক সহযোগিতা" তখন হয়, যখন দুই পক্ষের লাভ মোটামুটি একই অর্ডার অব ম্যাগনিচ্যুডে থাকে। যখন সেটা থাকে না, তখন ব্যাপারটাকে আর পারস্পরিক সহযোগিতা বলা যায় না।

আপনার যুক্তিটা বাইবেল বেল্টের দাসত্ব অ্যাপোলজিস্টরা দিয়ে থাকে, যে কালোরা সাদাদের কাছে দাস হিসাবে ভালো অবস্থায় ছিলো এবং গোটা ব্যাপারটা একটা পারস্পরিক সহযোগিতা মাত্র। কালোরা খেতে পরতে পারছে, মালিকের তুলা ক্ষেত আর তামাক ক্ষেতে লাভ হচ্ছে, উইন-উইন সিচুয়েশন।

অতিথি লেখক এর ছবি

পট্টি যখন একটা মৌলিক চাহিদা, আমার কাছে এইটা দামী জিনিষই। জামাও তাই।

তাদের দারিদ্রের কারণ কি রবি? হইতে পারে। যদি রবির মালিকরা তাদেরকে আগে শোষণ করে এসে থাকে, তাহলে রবির সেইজন্য শাস্তি হোক। কিন্তু যতোখন সেই প্রমাণ না পাওয়া যাইতেসে, রবি তাদের দারিদ্রের কারণ না।

আমি কালো-সাদার দাসপ্রথার বিস্তারিত ইতিহাস জানি না। ( আমাকে কোন বই সুপারিশ করলে কৃতজ্ঞ থাকবো। ) আমার জানামতে, কালোরা একসময় আফ্রিকায় সমাজের যেসব মানুষরা যুদ্ধে পরাজিত হইসিলো, বা অপরাধী ছিল, বা ধার পরিশোধ করতে পারে নাই, তাদেরকে বন্দি করে তাদেরকে শেকলে বেঁধে-ধরে, না খাইয়ে, শারীরিক অত্যাচার করে কাজ করাইতো। কালোরা যদি দাস হওয়ার আগে তারচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকে ( উপপ্রমেয় হিসেবে বলতেসি ) তাহলে কিন্তু হিসাবটা হয় আসলে সাদারা কালোদেরকে উপকারই করসে। সাদারা যতো অত্যাচারই করুক, তারা যদি কালোদের আগের অবস্থার চেয়ে কম অত্যাচার করে থাকে, তাহলে কালোদের লাভই। অবশ্যই তাদের অত্যাচারটাকেও থামাইতে হবে। কিন্তু এইখানে রবির অত্যাচারটা কি?

জামায় বিজ্ঞাপন বহনের খরচ না দেয়া? এই প্রসঙ্গে কথাটা আগের জায়গায় ফিরে যাচ্ছে। বিজ্ঞাপনবহনের খরচ দিলে যে কোন বিজ্ঞাপন বহনে শিশুরা দায়বদ্ধ থাকবে ( সেইটা শিশুশ্রমও হবে। ) তার চেয়ে একটা আলপনা আঁকা জামা নিলে হিসাবটা সহজ হয়ে যায়।

হিমু এর ছবি

আপনি এইবার পুরোপুরিই বাইবেল বেল্টের লাইনে চলে এসেছেন। ওরা ঠিক একই কথা বলে, যে স্থানীয় কালোদের অধীনে দাসত্বের চেয়ে সাদাদের অধীনে দাসত্ব মহত্তর ছিলো, কাজেই দাসত্ব একটা ভালো জিনিসই ছিলো, "পারস্পরিক সহযোগিতা" মাত্র।

রবি তাদের দারিদ্র্যের কারণ, এই কথা এখানে কেউ বলছে না। কাজেই ধরে নিচ্ছি এটা আপনার রেড হেরিং। আপনার হেরিং আপনিই পালুন।

আপনার শেষ প্যারা পড়ে মনে হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের খরচটা না দিলে ব্যাপারটা আর শিশুশ্রম থাকবে না। এবং ধর্ষণ যখন করাই হচ্ছে, তখন একটা আলপনা আঁকা কনডম পরে ধর্ষণ করলে হিসাবটা সহজ হয়ে যাবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

দারিদ্রের কারণটার প্রসংগ টানলাম, কারণ তাদের দারিদ্রের কারণ যদি রবি না হয়ে থাকে, তাদেরকে দারিদ্র থেকে টেনে তোলার দায়িত্বও রবির না।

বিজ্ঞাপনের খরচটা না দিলে শিশুশ্রম আসলেই থাকবে না। শ্রমিকের "আজকে কাজ করতে মন না চাইলে" টাকা কাটা যায়। সুতরাং, সে কাজ করতে বাধ্য। তাকে তদারকি করবে একজন। খরচ না নিয়ে জামাটা নিলে এই সমস্যাগুলা নাই।

ওরা ঠিক একই কথা বলে, যে স্থানীয় কালোদের অধীনে দাসত্বের চেয়ে সাদাদের অধীনে দাসত্ব মহত্তর ছিলো,

আমি কিন্তু বলি নাই, রবিও অন্যায় করতেসে, কিন্তু কম করতেসে। আমি বরং উল্টাটা বলসি।

অবশ্যই তাদের অত্যাচারটাকেও থামাইতে হবে। কিন্তু এইখানে রবির অত্যাচারটা কি?

আমি জিগেস করসি, রবির অত্যাচারটা কি। আপনি যদি মনে করেন বিজ্ঞাপনের খরচ না দেয়াটা অত্যাচার, তাহলে নিশ্চই বিজ্ঞাপনের খরচ পেয়ে মূল্যতালিকা লেখা জামার পরতে দেখে, বা তাদেরকে ছয়মাস একই জামা ( রবি হয়তো একই জামা কয়েকটা দিবে ) পরতে দেখে আপত্তি থাকার কথা না।

আমার কাছে বিজ্ঞাপনের খরচ দেয়াটা একটা ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না।

হিমু এর ছবি

এই শিশুদের দারিদ্র্য থেকে টেনে তোলার দায়ও রবিকে এখানে কেউ দিচ্ছে না। এটা আপনার আরেকটা রেড হেরিং।

কিন্তু কেউ দরিদ্র হলে তাকে দিয়ে একটা মাগনা কাজ করিয়ে আপনি বলতে পারেন না যে তাকে দারিদ্র্য থেকে টেনে তোলা আপনার কাজ না।

পথশিশুরা যে কাগজ টোকায়, সেটা কি শিশুশ্রম, নাকি শিশুশ্রম না? তারা তো যেদিন খুশি সেদিনই কাজ না করতে পারে, তাদের কেউ তদারকিও করে না। খরচ না দিয়ে জামাটা ব্যবহার করা মাত্র সেটা রবির বিজ্ঞাপন প্রচার হয়ে যায়, যেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পারিশ্রমিক পাওয়ার যোগ্য ক্রিয়া।

রবির "অত্যাচার" এখানে নাই, ঠগবাজি আছে। পুনরাবৃত্তি করতে ভালো লাগে না, আবারও বলি, রবির ঠগবাজি হচ্ছে পথশিশুদের উপহার দেওয়ার নামে গ্রাহকের টাকায় বিজ্ঞাপনমাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা এবং বিজ্ঞাপন প্রচার করে সেটার জন্য উপযুক্ত/ন্যায্য পারিশ্রমিক না দেওয়া।

তারা পারিশ্রমিক দিয়ে পথশিশুদের বিজ্ঞাপনমাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা চালিয়ে যাবে, এটাও আমার চাওয়া বা দাবি নয়। আমি বলছি, "ইতিমধ্যে আদায় করে ফেলা" সার্ভিসের মূল্য তাদের চোকানো প্রয়োজন।

অতিথি লেখক এর ছবি

দারিদ্রে থেকে টেনে তোলার কথাটা আসতেসে আপনার দাসপ্রথার সাথে তুলনা করার জন্য। দাস হওয়ার পর তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়। রবির জামা দেয়ার পর তাদের অবস্থা আরো খারাপ হয় না। জামা দিলে তাদের দারিদ্রের একটা অংশ লাঘব হয়ে, এবং এই টেনে তোলাটা তারা করতেসে, যদিও নিজের লাভের জন্যই।

মাগনা কাজ করানো প্রসঙ্গে। আমি আগেও বলসি, জামাটাই দাম। মাগনা হয় নাই কাজটা। এইখানে জামায় ওরা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন করতেসে না যে সেইটার জন্য অতিরিক্ত দাম দিতে হবে।

তারা তো যেদিন খুশি সেদিনই কাজ না করতে পারে, তাদের কেউ তদারকিও করে না।

না, তারা যেদিন খুশী সেইদিন কাজ থেকে বিরতি নিতে পারে না। বিরতি নিলে তাদের খাওয়া জুটে না।

রবির ঠগবাজি হচ্ছে পথশিশুদের উপহার দেওয়ার নামে গ্রাহকের টাকায় বিজ্ঞাপনমাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা

কিন্তু এই বিজ্ঞাপনটা গ্রাহকের অনুমতি নিয়ে করা ( যদিও জামা দেখায়া নেয় নাই, যেটা অনুচিত, আর আমি সেইটার সাথে একমত। কিন্তু গ্রাহকরা তো জামা না দেখেই টাকা ঢালসে। )

আর রবি জামাগুলাকে "বিজ্ঞাপনের মাধ্যম" হিসেবে ব্যবহার করতেসে ঠিকই। কিন্তু সেইটা তারা যে জামা বিতরণ করসে, সেইটার বিজ্ঞাপন। তাদের আগে থেকেই ছিল, এমন কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন নাই।

তারা পারিশ্রমিক দিয়ে পথশিশুদের বিজ্ঞাপনমাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা চালিয়ে যাবে, এটাও আমার চাওয়া বা দাবি নয়। আমি বলছি, "ইতিমধ্যে আদায় করে ফেলা" সার্ভিসের মূল্য তাদের চোকানো প্রয়োজন।

তার মানে আপনি চাচ্ছেন, রবি টাকাটা দিক, এবং ভবিষ্যতে আর রবির আলপনা আঁকা জামা বিতরণ না করুক। সমস্যা হচ্ছে, রবির ওই আলপনা/ নামটাই সম্বল। সামনের বছর নাম/ আলপনা ছাড়া যদি জামা বিতরণ করে, তাহলে কারো চোখেই পড়বে না রবি এই কাজ করসে। আর তাহলে কেউ রবির পকেটে টাকা ঢালবে না তার পরের বছর। টাকা না ঢাললে রবি আর এই প্রচারণা অব্যাহত রাখবে না। সেই বছর তখন পঁচিশ হাজার শিশু জামা পাবে না।

হিমু এর ছবি

"জামাটাই দাম" কথাটা বলা দাসদের "খাওয়া-পরাই মজুরি"র মতো শোনাচ্ছে। আপনাদের বাসায় যদি কোনো গৃহকর্মী থাকে, সে কি বেতন পায়, নাকি "ভাতটাই বেতন" বেসিসে খাটে?

গ্রাহকের অনুমতি নিয়ে করা না। তারা গ্রাহককে বলেছে জামা দেবে। গ্রাহককে বলে নাই যে রবির বিজ্ঞাপনখচিত জামা দেবে। দুইটা দুই জিনিস।

বিজ্ঞাপন তো সবসময় পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন না। প্রতিষ্ঠানের নাম ফাটানোই আসল কথা।

পথশিশুদের জামার উৎস একমাত্র রবি, এই বিবেচনাই বা আপনি কোত্থেকে পেলেন? রাস্তায় যে পথশিশুদের আপনি দেখেন, তাদের জামা রবির এই ঠগবাজির আগে যেখান থেকে আসতো, সামনের বছরও সেখান থেকেই আসবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

"জামাটাই দাম" কথাটা বলা দাসদের "খাওয়া-পরাই মজুরি"র মতো শোনাচ্ছে।

আমি আপনাকে ধাপে ধাপে আমার যুক্তিসারিটা বর্ণনা করতেসি।

১। রবি যদি জামা দিতে পারে, সে কি নাম লাগাইতে পারবে? যদি না পারে তাহলে রবি আর জামা দিবে না।

২। যদি পারে, তাহলে কি বাচ্চাদেরকে বিজ্ঞাপনের খরচ না দিয়ে পারবে? যদি না পারে, তাহলে বাচ্চাদেরকে বিজ্ঞাপনের খরচ দেয়া মানে তাদেরকে শ্রমিক বানানো।

৩। যদি শ্রমিক বানানো হয়, তাহলে কি আমরা শিশুশ্রমকে উৎসাহীত করতেসি না?

গ্রাহকের অনুমতি নিয়ে করা না। তারা গ্রাহককে বলেছে জামা দেবে। গ্রাহককে বলে নাই যে রবির বিজ্ঞাপনখচিত জামা দেবে। দুইটা দুই জিনিস।

না, তারা গ্রাহককে দেখায়াই নিসে। এই ভিডিওটা দেখেন। ঈদের দুই সপ্তাহ আগে প্রকাশিত। ( আমি জানি না টিভিতে দেয়া হইসে কিনা। কিন্তু সম্ভবত দেয়া হইসে, কারণ একই রকম ১০ সেকেণ্ডের পাঁচটা বিজ্ঞাপন আছে, যেটা টিভিতে প্রচারের জন্য উপযোগী। )

প্রতিষ্ঠানের নাম ফাটানোই আসল কথা।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ফাটে পণ্য দিয়ে।

পথশিশুদের জামার উৎস একমাত্র রবি, এই বিবেচনাই বা আপনি কোত্থেকে পেলেন?

আমি বলি নাই একমাত্র উৎস। কিন্তু এইটা একটা অন্যতম বড় উৎস। পঁচিশ হাজার সংখ্যাটা কম না।

হিমু এর ছবি

১. রবি জামা না দিলে কিছু এসে যায় না। বড়জোর রবির একটা বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন ধরা খায়।

২. বাচ্চাদের পারিশ্রমিক দিলে শ্রমিক বানানো হয়, আর না দিলে হয় না, কথাটা আবারো সেই দাসদের "খাওয়াপরাই মজুরি"র মতো শোনায়। এটা আপনি বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আপনাকে দিয়ে আমার মশারি কাচিয়ে নিলাম, তারপর বললাম টাকা দিলেই তো আপনি শ্রমিক হয়ে গেলেন। মানবেন?

৩. শিশুদের দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করানো থেকে বিরত থাকেন আগে, তারপর শিশুশ্রম নিরুৎসাহিত করা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। ময়লা টোকানোর কাজ করাচ্ছেন পথশিশুদের দিয়ে, কোনো বিকার নাই, বিজ্ঞাপন প্রচার চালানোর খরচ চাইলেই শিশুশ্রম উৎসাহিত করা নিয়ে কথা তুলছেন।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম যদি শুধু পণ্যে ফাটতো, দুনিয়াতে কোনো ইভেন্টে কোনো স্পনসরশিপ আসতো না। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের জার্সিতে "সাহারা" লেখা থাকে কেন?

যেহেতু এই অন্যতম বড় উৎস এই বছরই মাটি ফেড়ে বের হয়েছে, এবং এর আগে পথশিশুরা জামা যোগাড় করতে পেরেছে, এই অন্যতম ভুঁইফোঁড় উৎস না থাকলেও তারা আগামীতে ম্যানেজ করতে পারবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

( আবার চিপা। সবার নীচে উত্তর। )

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ০২/০৮/২০১৪ - ৫:৩২অপরাহ্ন)

১, রবি জামা না দিলে কিছু এসে যায় না।

যায় আসে। পঁচিশ হাজার জামা যায় আসে।

আপনাকে দিয়ে আমার মশারি কাচিয়ে নিলাম, তারপর বললাম টাকা দিলেই তো আপনি শ্রমিক হয়ে গেলেন। মানবেন?

আমি প্রাপ্তবয়স্ক। শিশুশ্রমকে যদি নিরুৎসাহীত করতে হয়, তাহলে একটা শিশুকে দিয়ে আপনি কাজ করাইলেই অন্যায়। আপনি টাকা দিলেও অন্যায়। না দিলে আরো বড়ো অন্যায়।

শিশুদের দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করানো থেকে বিরত থাকেন আগে, তারপর শিশুশ্রম নিরুৎসাহিত করা নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

আপনার বিজ্ঞাপনের প্রচারের আলোচনার সাথেই একটা প্রাসঙ্গিক। টাকা দেয়ার প্রস্তাবটা আপনি দিসেন, আমি না।

আমি জানি শিশুশ্রম চলবেই। কিন্তু আপনি এমন কোন আইন করতে পারবেন না, যেটা শিশুশ্রমকে অনুমোদন দেয়। তাহলে আর শিশুর অধিকার নিয়ে কথা বলা যাবে না। এইটা আমাদের অনাদর্শ দুনিয়ার সমস্যা।

ময়লা টোকানোর কাজ করাচ্ছেন পথশিশুদের দিয়ে, কোনো বিকার নাই, বিজ্ঞাপন প্রচার চালানোর খরচ চাইলেই শিশুশ্রম উৎসাহিত করা নিয়ে কথা তুলছেন।

ইতিমধ্যে বলে ফেলসি। আমি শিশুশ্রমের বিরোধীতা করার মতো অতো আদর্শবাদী না। কিন্তু আপনি যদি রবিকে টাকা দিয়ে নাম ছড়ানোর অনুমোদন দিতে চান ( যেটা আপনি দিতে চান না বলসেন, কিন্তু তবুও আমি এইখানে বলতেসি, কারণ আমার বক্তব্যের --- "যদি শ্রমিক বানানো হয়, তাহলে কি আমরা শিশুশ্রমকে উৎসাহীত করতেসি না?" --- ভিত্তিটা পরিষ্কার করে বলা দরকার। ), তাহলে টাকা দিয়ে আপনি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলাকেও কোন একটা কাজে শিশুকে সংযুক্ত করার অনুমোদনটা দিয়ে দিতেসেন।

আর ময়লা টোকানোর কাজ করানো কেন, আমি হিটলারের মতো শিশুহত্যাকারী হইলেও আমার এক অনুচিত কাজের জন্য আরেক উচিত কাজের পক্ষে কথার ভর কমে যাবে না।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের জার্সিতে "সাহারা" লেখা থাকে কেন?

কারণ, যারা সাহারাকে চেনে না, তাদেরকে চেনানো এইখানে উদ্দেশ্য, যেন তারা তাদের টিভি চ্যানেলটা খুলে দেখে। সাহারা আসলে কতোটা আয় করবে সেইটা নির্ভর করতেসে দর্শক সাহারা খুলে দেখার পর কতোখন তার অনুষ্ঠান দেখবে।

যেহেতু এই অন্যতম বড় উৎস এই বছরই মাটি ফেড়ে বের হয়েছে, এবং এর আগে পথশিশুরা জামা যোগাড় করতে পেরেছে, এই অন্যতম ভুঁইফোঁড় উৎস না থাকলেও তারা আগামীতে ম্যানেজ করতে পারবে।

আমি তো অনেক শিশুদেরকে দেখি যারা জামা যোগাড় করতে পারে নাই।

হিমু এর ছবি

আপনি এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন যে কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়ে টাকা না দেওয়া অন্যায়। এই অন্যায়টা রবি করেছে।

ইতিমধ্যে আদায় করে নেওয়া কাজের জন্য টাকা পরিশোধ করালে সেটা অন্য প্রতিষ্ঠানকে একই কাজ করার অনুমোদন দেওয়া হয় কীভাবে? ধরলাম টাকা দেওয়া হবে না (সবচেয়ে বাস্তব সিনারিও, যদি কেউ উচ্চ আদালতে রিট না করে), এর পরের বছর যে আরো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান "টাকা পরিশোধের মাধ্যমে দেওয়া তথাকথিত অনুমোদন" ছাড়াই একই কাজ করবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা আছে?

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু, আপনার ০২/০৮/২০১৪ - ৬:২৪অপরাহ্ন-য়ে প্রকাশিত মন্তব্যের উত্তরঃ

আপনি এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন যে কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়ে টাকা না দেওয়া অন্যায়। এই অন্যায়টা রবি করেছে।

আমি এতোখনে না, এইটা অনেক আগেই বুঝছি। কিন্তু আমি যেটা যোগ করসি, সেইটা হচ্ছে, টাকাটা দিলে শিশুদের জামায় যেভাবে খুশী বিজ্ঞাপন দেয়ার অধিকার রবি পেয়ে যায়।

আমার দৃষ্টির সারমর্মটা বলিঃ

১। এইবার রবি বাচ্চাদেরকে দিসে তাদের আলপনাওয়ালা জামা। সাথে কোন বিজ্ঞাপনবহনের খরচ ছাড়া। আমি এইক্ষেত্রে তাকে সমর্থন করি। কারণ, বিজ্ঞাপনটা তার জামা দেয়ারই বিজ্ঞাপন। আর কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন না। তাকে যদি বিজ্ঞাপন বহনের খরচ দেয়া হয়, তাহলে ক্রমিক ২-এ দ্রষ্টব্য।

২। যদি এতোদিনের বিজ্ঞাপনবহনের ন্যায্য খরচ দেয়া হয়, তাহলে রবিকে এই বিজ্ঞাপন করা অব্যাহত রাখার অধিকার দেয়া হোক। সেই বিজ্ঞাপনে যদি তাদের পণ্যের মূল্যতালিকাও থাকে, সেইক্ষেত্রেও। আমি বিজ্ঞাপন অব্যাহত রাখার পক্ষে, কারণ এতে করে বাচ্চাগুলা জামাও পাইতেসে, টাকাও পাইতেসে। এবং আমি সেইটা দেয়ার মধ্যে অপরাধ কিছু দেখতেসি না। কারণ, বাচ্চাগুলা এমনিতেই পথেঘাটে কাজ করে। শিশুশ্রম যদি বন্ধ করাই রাষ্ট্রের মাথাব্যথা হইতো, এতোদিনে আর কোন শিশু কাজ করতো না। আমি জানি মানবাধিকার সংগঠনগুলার মাথাব্যথা শুরু হয়ে যাবে, কিন্তু তাতে আমার রবির প্রতি সমর্থন কমে যাবে না। কারণ, বাচ্চাদের শারীরিক পরিশ্রম কমতেসে।

৩। ১ ও ২ উভয়ক্ষেত্রেই বাচ্চাদেরকে বলতে হবে যে, তারা রবিকে সাহায্য করতেসে। বাচ্চার সাথে বড়রা যদি সম্পর্ক গড়তে যায়, বড়দের উপর সেই সম্পর্কের সব দায়ভার পড়ে। যদি না করে, রবিকে শাস্তি দেয়া হোক। ( সুতরাং, রবিকে "আপনারা আমাদেরকে সহায়তা করতেসেন" ইতিমধ্যেই না বলার অপরাধে শাস্তি দেয়া হোক, এটা আমি সমর্থন করি। )

আপনার আর আমার পার্থক্য হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের জন্য আপনি ন্যায্যমূল্য দিতে চান, কিন্তু তাদের জামায় মূল্যতালিকা থাকুক, এইটা আপনি চান না। আপনার এইটা না চাওয়াতে সামনের বছর আর এই বাচ্চাগুলা জামা পাইতেসে না।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এখানে একটা বিষয় সম্ভবত পরিষ্কার হওয়া দরকার, অন্তত আমি যেভাবে বুঝি সেগুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করছিঃ

১) রবি বা এরকম অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যে এই কাজগুলো করছে, মানুষের দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করছে, গরীব শিশুদের জীবন্ত বিলবোর্ড বানাচ্ছে, কাজটা অপরাধ কিনা। আমার মতে প্রচলিত আইনে কাজগুলো অবশ্যই অপরাধ নয়। সুতরাং এই কাজের কারনে তাদের শাস্তি দাবী করা চলে না, সেটা সম্ভবত কেউ করছেও না। সেটা এই লেখার উদ্দেশ্যও নয়।

২) কারও দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে দান খয়রাতের নাম করে তাকে নিজ পন্যের বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড হিসাবে ব্যবহার করা কি অনৈতিক? আমার মতে বেশ ভাল রকমের অনৈতিক।

৩) এখন প্রশ্ন হল, আমরা বলতেই পারি, 'তাও তো গরীব মানুষ কিছু জামা কাপড় পাচ্ছে। করুক না কেউ এই সুযোগে ব্যবসা, গরীব ছেলেমেয়েগুলো ঈদে আনন্দ করার অন্তত কিছু উপলক্ষ তো পেল! হোক না অনৈতিক কিছুটা, তাতে সমাজের কতটা ক্ষতি?' - এই জায়গাতেই সম্ভবত সাদা কালোর ব্যপারটা চলে আসবে। এখানেই আলোচনার শুরু, গরীবকে বস্তু ভাবলে সমাজের ক্ষতি বেশি নাকি, গরীব পুরানো জামায় ঈদ করলে ক্ষতি বেশি, এইসব বিষয়ে আলোচনাগুলোই এই সাদা কালর মধ্যবর্তী ধূসর জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে। আমাদের আচরণের সীমা নির্ধারণ করবে, কারও অসহায় অবস্থার কতটুকু সুযোগ নেয়া অনৈতিক আর কতটুকু সুযোগ নেয়ার নামে তাদের উপকার করলে আদতে সমাজের ধণাত্মক পরিবর্তন হবে, সেই আলোচনাগুলো হোক। সেটাই আমার পক্ষ থেকে এই লেখার উদ্দেশ্য।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার উত্তরের জন্য।

আমি আপনার ক্রমিক ১-এর উত্তর দিতেসি না, কারণ এইটা আপনার বক্তব্য না।

ক্রমিক ২-এর উত্তরঃ সেইটাই আমার প্রশ্ন। আপনার অনৈতিক মনে হইলে কেন অনৈতিক? আমার মতে, যে জিনিষটা নিজের বা/এবং অন্যের ক্ষতি করে না, সেইটা অনৈতিক না। আপনি যদি মনে করেন, কারো ক্ষতি না হলেও একটা কাজ অনৈতিক হইতে পারে, কেন মনে করেন ( উদাহারণ দিলে সুবিধা হয়। )

এখন, রবির কাজ কি আসলে ক্ষতি করতেসে? করলে সেইটা মাপবো বা নির্ণয় করবো কিভাবে? যদি মাপা বা নির্ণয় না করা যায়, তাহলে কি সেইটাকে অনৈতিক বলা যাবে?

( ভালো কথা, আমি এইখানে "নৈতিক" বলতে বুঝাচ্ছি একটা কাজ করা উচিত নাকি না। )

ক্রমিক ৩-এর উত্তরঃ এইখানেও যেহেতু নৈতিকতা আসতেসে, সুতরাং ক্রমিক ২-এর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আমি কিসু বলতে পারতেসি না।

........................

প্রশ্ন

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

'অনৈতিক কেন?', এই উত্তর হিমু ভাই উপরে কিছুটা দিয়েছেন, আপনি আপনার বাড়ির ছাদে বিলবোর্ড লাগান, বা হাইওয়ে দিয়ে যাবার সময় বাউন্ডারি ওয়ালের গায়ে যে বিজ্ঞাপন দেখেন সেখানে রবি বা গ্রানীণের বিজ্ঞাপণের জন্য আপনাকে বা সেটার মালিককে টাকা দিতে হয়। আপনার দেয়াল সুন্দর লাল রঙ করে দেব সাথে আমাদের একটা লোগো থাকবে, এই যুক্তিতে বিলবোর্ড বা ফাঁকা দেয়ালে বিনা পয়সায় অ্যাড করা যায় না। গরীব বাচ্চাকাচ্চাদের সেই ভয়েসটা নাই বা সেটা বোঝার মত বয়স হয়নি, বা বুঝলেও জামা না নেয়ার বিলাসিতা করার সুযোগ নেই, এই ফাঁকগুলোর সুযোগ নিয়ে বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন করে নেয়া অবশ্যই বাচ্চাগুলোকে ঠকানো। সেটা অনৈতিক তো বটেই। আপনি ভাবছেন অনৈতিক না, কারন বাচ্চাগুলো হয়ত জানেই না তাদের প্রাপ্য কী? সেক্ষেত্রে তারা যে জামা পাচ্ছে তাতেই তাদের খুশি থাকা উচিত। কিন্তু এই জামা নেবার সুবাদে তাদের বঞ্চিত করে মুনাফা করে নিচ্ছে কেউ কেউ এটা কি অনৈতিক নয়?

গরীব বাচ্চাদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদেরকে একটা কোম্পানি কোটি টাকার বিলবোর্ডের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে ঠকিয়ে যাবে, সেটা অনৈতিক হবে না? এখানেও ঐ খালি দেয়ালের কথা চিন্তা করুন। ধরুন কোন কোম্পানি তো বলতেই পারে আপনার সাদা দেয়াল বা বিলবোর্ড বা আপনার গাড়ির দরজায় তাঁদের লোগো সেটে দিতে চাইল, তাতে তো আপনার কোন ক্ষতি হবে না বরং তাদের কিছু লাভ হবে। আপনি কি রাজি হবেন আপনার দেয়াল বা গাড়ির দরজা বিনামূল্যে কারও বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড হিসাবে ব্যবহার হতে দিতে? যদি উত্তর 'না' হয় তাহলে গাড়ির দরজা বা দেয়ালের জায়গায় কয়েকজন শিশুকে বসিয়ে চিন্তা করুন, আর যদি উত্তর 'হ্যাঁ' হয় তাহলে সম্ভবত আমার আর কিছু বলার নেই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ উত্তরের জন্য।

'অনৈতিক কেন?', এই উত্তর হিমু ভাই উপরে কিছুটা দিয়েছেন।

হিমুর উত্তরে আমিও কিছুটা উত্তর দিয়েছি। সেইটার উত্তরে হিমুও আমাকে উত্তর দিয়েছেন। এবং সেই উত্তরের উত্তরে আমি আরেকটা উত্তর দিয়েছি।

গরীব বাচ্চাকাচ্চাদের সেই ভয়েসটা নাই বা সেটা বোঝার মত বয়স হয়নি, বা বুঝলেও জামা না নেয়ার বিলাসিতা করার সুযোগ নেই, এই ফাঁকগুলোর সুযোগ নিয়ে বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন করে নেয়া অবশ্যই বাচ্চাগুলোকে ঠকানো।

আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, আমি মনে করি, এইটার একটা সম্ভাব্য সমাধান আছে, এবং সেইটা আমি হিমুর সাথে কথোপকথনে লিখসি। আবারো লিখি। এইখানে মূল্যটাই জামা। আর যেহেতু বাচ্চারা এই ব্যাপারটা বুঝতে নাও পারে, সুতরাং আমি মনে করি, একটা সম্ভাব্য সমাধান হইতে পারেঃ

ব্যাটা যেন সেইটা ( হিমুঃ ব্যাটা চায় আমি ভাবি, আমি তার জন্য কিছুই করি নাই, সে এসে গায়ে পড়ে আমাকে জামা দিচ্ছে। ) না করতে পারে, সেইজন্য আইন করা যাইতে পারে, কোন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যদি তার নাম/ প্রতীক/ স্মারকসহ কিছু "দান" করে, এবং সেইখানে গ্রহীতা একজন পথশিশু হয়, তাহলে যেন প্রতিষ্ঠানটি থেকে কেউ অবশ্যই শিশুদেরকে বলে, "আপনারা যদি আমাদের এই জামা পরেন, তাহলে আপনারা আমাদেরকে সাহায্য করবেন, কারণ তাহলে মানুষ আমাদের জিনিষের কথা জানতে পারবে। আপনি কি আমাদেরকে সাহায্য করবেন?" তাহলে বাচ্চার আর এই ধারণা নিয়ে বড়ো হইতে হবে না যে, সে মানুষের ভিক্ষায় চলসে, যেখানে আসলে সে চলে নাই। আমি নিশ্চিত, একটা বাচ্চা যদি জানে সে বড়ো কাউকে সাহায্য করতে পারে, এবং সেও বিনিময়ে কিসু পাবে, তাহলে সে নিজেকে ছোট মনে করে না। এই কাজটা ঠিকঠাক মতো হইতেসে কিনা, সেইটা দেখার জন্য সরকার থেকে কাউকে নিয়োগ দেয়া হোক। রবিরা এইটা না করলে শাস্তি দেয়া হোক।

আপনি ভাবছেন অনৈতিক না, কারন বাচ্চাগুলো হয়ত জানেই না তাদের প্রাপ্য কী? সেক্ষেত্রে তারা যে জামা পাচ্ছে তাতেই তাদের খুশি থাকা উচিত।

আপনার এমন ধারণা কেন হইলো যে আমি ভাবতেসি এইটা অনৈতিক না? আপনি একটা কারণও উল্লেখ করসেন। আমি এই কথা কোথায় লিখসি? আমি তো বরং ঠিক উল্টা কথা লিখসি। যেহেতু বাচ্চারা বুঝতেসে না যে তারা প্রতিষ্ঠানদের উপকার করতেসে, সুতরাং, প্রতিষ্ঠানের উচিত বাচ্চাদেরকে তা জানায়া নেওয়া ও অনুমতি চাওয়া।

কিন্তু এই জামা নেবার সুবাদে তাদের বঞ্চিত করে মুনাফা করে নিচ্ছে কেউ কেউ এটা কি অনৈতিক নয়?

তাদেরকে যদি বঞ্চিত করা হয়ে থাকে, তাদের দান করাটা নৈতিক না অনৈতিক, সেই আলোচনার কোন মানেই নাই। কারো যদি কোন কিছু প্রাপ্য থাকে, কোন কিছুতে অধিকার থাকে, সেইটা থেকে শুধু বঞ্চিত করার অপরাধেই শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু আমি এক লাখ ধনীর সাথে ব্যবসা করে শতকোটি টাকা কামায়া, আমার প্রতিষ্ঠানের সবার বেতন ও সব অধিকার নিশ্চিত করে, কর দিয়ে, এবং অন্যের অধিকারের জিনিষ কেড়ে না নিয়ে যদি এক টাকাও গরিবদেরকে না দেই, আমি সেইটাকে অনৈতিক বলবো না। আমি বলবো না, কারণ আমি গরিবদের কোন ক্ষতি করি নাই।

আপনি কি বলবেন? বললে কেন বলবেন?

( ক্ষতি বলতে কি বুঝাচ্ছি, তা বলি। ধরেন, আপনার কাছে ১০০ টাকা আছে। আমি দেশবিদেশে বাণিজ্য করে আসলাম, কিন্তু আমার বাণিজ্যের কারণে আপনি আপনার প্রাপ্য এক টাকাও হারান নাই। সুতরাং, আমি আপনার ক্ষতি করি নাই। )

ধরুন কোন কোম্পানি তো বলতেই পারে আপনার সাদা দেয়াল বা বিলবোর্ড বা আপনার গাড়ির দরজায় তাঁদের লোগো সেটে দিতে চাইল, তাতে তো আপনার কোন ক্ষতি হবে না বরং তাদের কিছু লাভ হবে।

আমার চিন্তা করতে হবে। নীচের লেখাগুলা আমার চিন্তাপ্রবাহ।

আচ্ছা, ধরা যাক, আমার একটা সাদা গাড়ি আছে। গ্রামীণফোনের একজন আপু এসে বললেন, "ভাইয়া, আপনার কি নীল রঙ পছন্দ?" আমি বললাম, "হ্যাঁ। আপনার কি রঙ পছন্দ?" সে বললো, "লাল, ধন্যবাদ। আপনি কি আপনার গাড়ির রঙ নীল করতে চান?" আমি বললাম, "বর্তমানে আমার সেইরকম কোন পরিকল্পনা নাই।" ( আমার আসলেই নাই। ) সে বললো, "আমরা বিনামূল্যে করে দিতে পারি।" আমি বললাম, "তা আপনারা কি চান?"

তার উত্তর হইতে পারে, "আপনার দুইপাশের দরজায় বিশাল করে গ্রামীণের প্রতীকটা লাগায়া দিবো।" আমার গ্রামীণের প্রতীকটা পছন্দ না, সুতরাং, এতো বিশাল অপ্রিয় জিনিষকে চোখের সামনে দিনের পর দিন আমি দেখে যাইতে পারবো না। উত্তর, "না।" ( পক্ষান্তরে, ধরলাম, আমি Need for Speed-এর বিশাল ভক্ত, এবং তারা তাদের পরবর্তী সংস্করণের প্রচারণার জন্য আমার গাড়িকে ওইসব লাল-নীল-সবুজ রঙ করে দিতে চায়, এবং সাথে বড়ো করে Need for Speed লিখে দিতে চায়। আমার উত্তর হবে, "হ্যাঁ, নিশ্চই। You guys are really cool." )

আপুর উত্তর যদি হয়, "আপনার গাড়ির পেছনে ছোট্ট করে একটা গ্রামীণের প্রতীক মেরে দিবো।" আমি তখন দেখবো, আমার কাছে নীল রঙ বেশী প্রিয় নাকি ছোট্ট গ্রামীণের প্রতীক বেশী অপ্রিয়। সিদ্ধান্ত সেইটার উপর।

ধরা যাক, আমার সেই প্রতিকটাই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে অপ্রিয় জিনিষ।

আপু বললেন, "তা স্যার, আপনাকে আমরা মাসে মাসে কিছু সম্মানী দিতে পারি।"
আমি বলবো, "কতো?"
আপু বলবেন, "ধরেন, হাজার বিশেক।"

আমি এখন দেখবো, আমার কাছে হাজার বিশেক বেশী দরকার নাকি এখনো সেই এক টুকরো গ্রামীণের প্রতীক বেশী অপ্রিয়।

যদি এখনো বেশী অপ্রিয় হয়, বলবো, "না।"
"স্যার, ত্রিশ হাজার?"
ধরা যাক, এখন আমার কাছে ত্রিশ হাজার বেশী লোভনীয়। কি হয় একটা ফুলের পাপড়ি থাকলে? আর কয়জন দেখবে এইটা? আর দেখতেও তো অতো খারাপ না।
বলে দিলাম, "আচ্ছা, কালকে আইসেন। আপনার নাম্বার দিয়ে যাবেন, নাকি আপনার উপরস্থ কর্মকর্তার?"

...............

এবার আমি একটা পথশিশু, আমার জামা নাই।
রবির আফা আইসা কইলো, "নিবি জামা?"
আমি, "না।"
আফায় গেলগা ওই বাড়ির ফইট্টারে জিগাইতে। একটু পরে দেখি ফইট্টারে আফায় একটা লাল গেঞ্জি দিসে।

গল্প শেষ।

.....................

রঙ করে দিলে, কিন্তু সাথে প্রতিষ্ঠানের নাম/ প্রতীক বেশী বড়ো হয়ে গেলে গাড়িয়াল/ বাড়িয়াল ভাইদের রুচি আঘাতপ্রাপ্ত হইতে পারে। তারা রঙ না করলেও গাড়ি-বাড়িয়ালদের কিছু নাও আসতে যাইতে পারে। তারা নিজেরাই সেইটা করে নিতে পারে।

কিন্তু জামা না থাকলে শীত লাগে। জামা না থাকলে পাশের বাসার সাইকেল চালায় যে বাচ্চারা, ওরা কথা বলে না। ওরা যখন ব্যাট-বল নিয়ে ক্রিকেটে খেলে, তখন খেলতে নেয় না। খালি বল দূরে গেলে ছুঁড়তে বলে। জামা না থাকলে স্কুলে যাওয়া যায় না। জামা না থাকলে সবাই তুই-তুই করে কথা বলে। জামা না থাকলে সবাই বলে, "ওই, এইদিকে আয়, দুইটা বেনসন নিয়া আয় ।" জামা না থাকলে রাইতে মশা কামড়ায়।

এইখানে আমাদের বসে বসে নৈতিকতা নিয়ে কথা বলাটা যতোটা সহজ, তাদের "জামা নিবি"র উত্তরে না বলাটা ততোটাই কঠিন, যদি অসম্ভব না হয়ে থাকে।

হিমু এর ছবি

অর্থাৎ, কেউ যদি গরিব হয়, তাকে একটা বস্তু হিসাবে ট্রিট করা যেতে পারে, যেহেতু তার "না" বলার সক্ষমতা কম। এটাই অনৈতিক।

পাশাপাশি আপনাকে এটাও ভাবতে হবে, রবি যখন বিজ্ঞাপন প্রচার করে পথশিশুদের ঈদ উপহার দিতে গ্রাহকদের ৫৮ টাকা রিচার্জ করার আহ্বান জানায়, তখন তারা এই পথশিশুদের ঈদের পোশাকের নমুনা গ্রাহকদের কাছে উপস্থাপন করেছিলো কি না? গ্রাহকরা কি ৫৮ টাকা রিচার্জ করার আগে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন, যে তাদের টাকার একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ রবিরই চলমান বিজ্ঞাপনে ব্যয় করা হবে?

আমি জানি না বাংলাদেশে কোনো বিজ্ঞাপনে কোনো কিছু কাউকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে সেটার কমপ্লায়েন্স নজরদারি করার কোনো কর্তৃপক্ষ আছে কি না। থাকলে এই প্রশ্নগুলো সেই কর্তৃপক্ষের সামনে তোলা প্রয়োজন।

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু সে যদি "না" বলে জামাটা না পায়, সেইটা কি তার জন্য আরো বেশী ক্ষতিকর না?

আপনার সংযোজিত অংশের উত্তরঃ আপনার প্রস্তাবনাটা যুক্তিসংগত, এবং আমি আশা করবো ভবিষ্যতে সরকার এইটা দেখবে।

হিমু এর ছবি

না। ক্ষতিকর হতো যদি তার পরনের জামা খুলে রবি নিয়ে যেতো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি তুলনা করতেসি জামা পাওয়ার সুযোগ আর জামাকে "না" বলার সুযোগের মধ্যে।

হিমু এর ছবি

জামা পাওয়ার সুযোগের মধ্যে শুধু রবির বিজ্ঞাপনখচিত জামাই বা কেন থাকবে? পথশিশুরা কি রবি জামা না দিলে সারা জীবন খালি গায়েই থাকতো? ঈদ সামনে রেখে ওরা এর ওর কাছে জামা চায়, অনেকে যাকাতের টাকায় কেনা বিজ্ঞাপনমুক্ত সস্তা জামা দেয়, অনেকে ব্যবহৃত কিন্তু আরো ব্যবহারোপযোগী জামা দিয়ে দেয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

তারা সারাজীবন হয়তো খালি গায়ে থাকতো না, কিন্তু এক সপ্তাহ/ এক মাস থাকতে পারতো।

যাই হোক, বিজ্ঞাপন খরচ বহন করার পর যদি রবির পণ্যবিক্রি বেড়ে যায়, এবং রবি জামাবিতরণ আর বিজ্ঞাপন খরচ বহন করা অব্যাহত রাখে, আমি সেইক্ষেত্রে প্রস্তাবটাকে সমর্থন করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

পুনঃশ্চঃ আপনি খুব সম্ভবত প্রস্তাব করতেসেন, তাদেরকে জামা দেয়ার সাথে সাথে বিজ্ঞাপনের খরচবাবদও অতিরিক্ত কিছু টাকা দেয়া হোক। আদর্শ দুনিয়ায় এইটাই আদর্শ সমাধান। কিন্তু আমাদের দুনিয়ার কথা ভাবা যাক।

এখন, একজন মানুষকে বিজ্ঞাপনের দায়িত্ব নেয়ার খরচ বাবদ ধরা যাক মাসে ১০০ টাকা অন্ততঃ দিতে হবে। সে নিশ্চই এক মাস সেই জামা পড়বে না, সুতরাং অন্ততঃ ছয়মাসের খরচ, বা ৬০০টাকা রবিকে বহন করতে হবে।

রবি কি তাহলে আর বাচ্চাদেরকে জামা দিতে যাবে কোনদিন? একটা জামায় তাদের নাম-প্রতীকের বেশী কিছু, যেমন তাদের মূল্যতালিকা প্রকাশ করলে তাদের রেখে-ঢেকে আর বিজ্ঞাপন করা হইলো না। সুতরাং, মানুষ আর রবির পণ্য কিনবে না। তারা কি তখন বিজ্ঞাপনতক্তাতেই সরে আসবে না?

হিমু এর ছবি

রবি বাচ্চাদের বিজ্ঞাপনখচিত জামা না দিলে কারোই কোনো ক্ষতি নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু রবি যদি এইটা আবার করতে চায়, এবং আমরা করতে না দেই, ক্ষতিটা বাচ্চাদের।

যাই হোক, বিজ্ঞাপন খরচ বহন করার পর যদি রবির পণ্যবিক্রি বেড়ে যায়, এবং রবি জামাবিতরণ আর বিজ্ঞাপন খরচ বহন করা অব্যাহত রাখে, আমি সেইক্ষেত্রে প্রস্তাবটাকে সমর্থন করি। আর যদি রবি দেখে তার বিজ্ঞাপনে বেশী খরচ হয়ে যাইতেসে, এবং পরের বছর জামা বিতরণটাই বন্ধ করে দেয়, সেইক্ষেত্রে আমি প্রস্তাবটার বিরোধী।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার ধারণা, আমি ভুল হইতে পারি। রবি যদি বাচ্চাদেরকে জামায় বিজ্ঞাপন বয়ে বেড়ানোর খরচ বহন করে, তাহলে তাদের বিক্রি আসলে আরো বেড়েও যাইতে পারে। এবং রবি তার এই "৫৮০০ টাকা ব্যবহারে এক জামা" প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে।

সেইক্ষেত্রে আমি সমর্থন করি যে, বাচ্চাদেরকে বিজ্ঞাপনখরচ দেয়া উচিত।

ধন্যবাদ, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আর চিন্তাভাবনাগুলা বলার জন্য, এবং আমার ভুল ধরতে সাহায্য করার জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

আলোচনাটা অনেকটা নোলানের ছবিগুলার মতো হয়ে গেসে। উপর থেকে নীচে পড়ে গেলে কালানুক্রমে পড়া হবে না। এইখানে আগের কিছু মন্তব্য নীচে, আর পরের কিছু মন্তব্য উপরে চলে আসছে। আমি উপরোক্ত বক্তব্য করার পরদিন সকালে ( শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০১৪, ১০টা ৪৩ মিনিট ) আমার উপসংহারটি পরিবর্তন করি, যা স্পষ্ট করে মন্তব্যটিতে উল্লেখ করা হইসে।

.........

প্রশ্ন

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লাভ ক্ষতির রেফারেন্সটা বড্ড বেশি আপেক্ষিক । আপনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রবির সামাজিক ব্যবসা কে ভালো হিসেবে মুল্যায়ন করছেন ।

আসুন ইতিহাসে বইয়ের একটু আগের কয়েকটা অধ্যায় দিকে তাকাই । আমাদের দেশ থেকে বেশ খানিকটা দুরে । আমেরিকার দাসপ্রথার দিকে । সারাদিন হাড়ভাংগা খাটুনির পর কালো দাসরা ২ বেলা খেতে পারতো । কলুর বলদের মতই খেটে যেত । তার উপর পান থেকে চুন খসলেই মালিকের ( অভারসিয়ারের ) চাবুকের বাড়ি এবং অন্যান্য অত্যাচার । এর মাঝে যে ২/১ প্ল্যান্টেশন মালিক অত্যাচার করতো না তারা তাদের দাসদের কাছে দেবতাতুল্য ছিল । পরাধীন কিছু কালো মানুষ । নিজের শ্রমের নায্য মজুরী তো পাচ্ছেই না বরং অত্যাচারের শাস্তি না পাওয়াকেই বিশাল মানবতা হিসেবে দেখছে এবং মালিকের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকছে । আপনার বিচারেও কি সে মানবতাবাদী, সমাজসেবী ?

এবার আসুন আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাকাই । রবির এক-একটা বিলবোর্ডের পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয় । তার পরিবর্তে পাবলিকের পয়সায় এক একটা চলন্ত বিলবোর্ড । এরা যখন কারো হয়ে ইট ভাংগে, ময়লা কুড়ায় কিংবা ড্রেন পরিষ্কার করে তখন তার কাছ থেকে প্রাপ্য টাকাটা বুঝে নেয় এবং নিজের কাজের নায্য মজুরি হিসেবেই বুঝে নেয় । কেবল রবির মত কর্পোরেট ঠগদের কাছেই এরা বারে বারে বঞ্চিত হয় ।
ছেলেমেয়ে গুলো তাদের পারিশ্রমিক পাওয়া তো দুরে থাক, রবির প্রতি একবুক কৃতজ্ঞতা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঢাকার রাজপথে রবির বিলবোর্ড গায়ে চাপিয়ে । এক্ষেত্রে রবির সাথে ঐ দাসমালিকের মানবতার কিছুটা মিল খুজে পান কি ?

আমাদের সমাজের একটা প্রধান সমস্যা, আমরা মানবতার মাপকাঠিটা আপেক্ষিক ধরে নেই । আমাদের সমাজে এই নিগৃহীত পথশিশুদের জন্য কেউ কিছু করছে না । তার মাঝে আপনি রবির এই পাবলিকের পয়সায় জামা বিতরনকে সমাজসেবা হিসেবে দেখছেন । আপনি উপেক্ষা করে যাচ্ছেন পাবলিকের পয়সা, আপনি উপেক্ষা করে যাচ্ছেন পথশিশুদের বিনা মজুরিতে রবির বিজ্ঞাপন । সব কিছু ছাপিয়ে সবার মনে একটায় সারমর্ম দাড়াচ্ছে । " রবি = মানবতা " । এখানেই সমস্যাটা ।

আমাদের সমাজে এই পথশিশুরা সুবিধা বঞ্চিত, নিগৃহীত । এদের পড়াশোনা নিশ্চিত করা, নিরাপদ থাকার যায়গার ব্যবস্থা করা কিংবা দুবেলা স্বাস্থকর খাবারের ব্যবস্থা হয়াটা সবচেয়ে বেশি জরূরী । রবি বা এয়ারটেলের মত কর্পোরেট হাউজগুলাকে এই পর্যন্ত কখনো দেখিনা এইটাইপ সামাজিক কর্মকান্ড হাতে নিতে ।

=========
দস্যু ঘচাং ফু

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার উত্তরের জন্য।

আপনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রবির সামাজিক ব্যবসা কে ভালো হিসেবে মুল্যায়ন করছেন

আমি রবিকে ভালো হিসেবে মূল্যায়ন করসি, সেইটা কি পড়ে মনে হইলো জানাইলে কৃতজ্ঞ থাকবো। আমি শুরু থেকেই বলে আসতেসি, রবি নিজের লাভের জন্যই করতেসে, এবং তারা তাদের লাভের জন্যই সব করবে। আমাদের দেখা লাগবে, রবির কাজের জন্য বাচ্চাদের কতোটুকু লাভ বা ক্ষতি হইতেসে।

আমি আপনার মন্তব্যের আগ পর্যন্ত জানতে চাইসি রবি কিভাবে ক্ষতিটা করতেসে। হিমু বলসেন, বিজ্ঞাপনের খরচ দেয়া হচ্ছে না। আমি প্রথমে বললাম, জামাটাই কি মূল্য হইতে পারে না? আপনার কাছে মনে হইতে পারে, এইটা আপেক্ষিক হয়ে গেল; কারণ অন্যান্য মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে গেলে আরো বেশী খরচ লাগে, কিন্তু আমি একই খরচ পথশিশুদের জন্য বহন করা যাইতে পারে, সেইটা চিন্তা করি নাই। আপনি সঠিক, ব্যাপারটা আপেক্ষিক হয়ে গেসে, এবং এটা আমার খেয়াল করা উচিত ছিল। আমার যে চিন্তাটা এই চিন্তা থেকে আমাকে সরায়া রাখসিলো, তা হচ্ছে, রবিকে যদি পথশিশুদের কয়েকমাসের বিজ্ঞাপন বহনের খরচ নিতে বলা হয় ( যে বিজ্ঞাপনে শুধু তাদের নাম/ প্রতীক ব্যবহার করা যায়, এবং তাদের পণ্যের মূল্যতালিকা দেয়া যায় না ) তাহলে সম্ভবত রবি আর এই পথে পা বাড়াবে না। ফলে বাচ্চাদের যাও একটা জামা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেইটাও যাইতো।

আমেরিকার দাসপ্রথা সম্পর্কে। যে সব অনাত্যাচারী ন্যায্যমূল্য দিতো না, তারা অবশ্যই খারাপ কাজই করসে। কথা হচ্ছে, ন্যায্যমূল্য দিতে না চেয়ে যদি রবি বাচ্চাদেরকে জামাই না দেয়, সেইক্ষেত্রে ন্যায্যমূল্যের পুরা ব্যাপারটাই অর্থহীন হয়ে যাবে।

ত্রিমাত্রিক কবি এবং হিমুর মন্তব্য পড়ে, এবং নিজে আরেকটু ভেবে মনে হইলো, রবি বিজ্ঞাপনের খরচ যদি বহন করে, হয়তো তার গ্রাহকরা আরো বেশী করে রবির পণ্য কিনবে। সেক্ষেত্রে রবি তার এই জামা বিতরণ চালায়া যাবে। এবং সেইক্ষেত্রে আমি প্রস্তাবটাকে সমর্থন করি।

ধন্যবাদ আবারো আপনার উত্তরের জন্য।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বাইরে ছিলাম বলে মন্তব্য প্রতিমন্তব্য মিস করে গেছি, হিমু ভাই এবং আপনাকে ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্য প্রতিমন্তব্যের জন্য। ভেতরে আর নাক গলাচ্ছি না, তবে এই আলোচনা থেকে আমি যদ্দুর বুঝলাম সেটা একটু সামারি করার চেষ্টা করি।

দাসপ্রথা যেহেতু একটা সময় একটা সমাজের জন্য দাস এবং মনিবের দুই পক্ষের জন্যেই আপাত-লাভজনক ছিল এবং দাসদের জন্য তার চেয়ে ভাল ব্যবস্থা কেউ করে দিতে পারছিল না, তাই সে ব্যবস্থা যেন ঠিকভাবে চলতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত। ভুল বুঝলাম কি?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

জ্বী, ভুল বুঝলেন।

কারণ, দাসপ্রথা ( আমেরিকানদের অষ্টাদশ শতাব্দীর দাসপ্রথা ) অব্যাহত থাকলে আপনার আজকের চেয়ে কালকের শারীরিক অবস্থা খারাপ হইতেই থাকবে আস্তে আস্তে। সে শারীরিক পরিশ্রম করতেসে, এবং সে করতে বাধ্য, কিন্তু বেতন পাচ্ছে না। রবির জামা পরলে বাচ্চার শারীরিক অবস্থা খারাপ হইতে থাকবে না। ( বরং ভালো হইতে পারে, যেহেতু তাকে শীতের মধ্যে কষ্ট করতে হবে না, মনঃসামাজিক জীবন আরেকটু ভালো হবে। ) সে জামাটা যখন খুশী পরতে বাধ্য না। এখন, কথা হচ্ছে, রবির কেবল মাত্র নাম প্রচারের জন্য কি আরো দাম দেয়া উচিত?

আমি মানা করতেসি না যে রবি বাচ্চাদেরকে টাকা দিক। কিন্তু দিলে রবি জামায় তার পণ্যের বিজ্ঞাপনগুলাও দেয়ার অধিকার পেয়ে যায়। যাক এবং তারা ন্যায্যমূল্যই দিক। ( বাচ্চাকে বিজ্ঞাপন বয়ে বেড়ানোর জন্য এক টাকা দিলেও রবি যেমন খুশী বিজ্ঞাপন দেয়ার অধিকার পায়। সুতরাং, ন্যায্যমূল্য দিয়ে সেই অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করা হোক। )

কিন্তু আপনি বাচ্চাদেরকে জামাই নিতে দিবেন না, সেইটা আমি মানতে পারি না।

দেখেন, যদি রবির যেমন খুশী বিজ্ঞাপন সেই জামায় লাগানোকে আপনি সমর্থন না করেন, তাহলে এই ন্যূনতম বিজ্ঞাপনটা ( আলপনা বা রবির নামসহ একটা জামা ) নিতে দেন। আপনার দুইদিকেই সুযোগ আছে। আপনি শিশুশ্রম সমর্থন করলেও একটা বাছাই আছে আপনার, না করলেও বাছাই আছে -- যদি আপনি চান রবি বাচ্চাদেরকে জামা দিক। আমি বলবো দুইটাতেই সমান লাভ। টাকা দিলে সে জামা পরতে বাধ্য, তার উপর তদারকি করা হবে। টাকা না দিলে সেই ঝামেলা নাই।

আপনি যদি নাই চান রবি বাচ্চাদেরকে জামা দিক, তাইলে বাচ্চাগুলা জামাটা হারাইতেসে। আপনি জামাটা যেমনে খুশী আদায় করেন, কিন্তু হারায়েন না। রবি কোন রবীন্দ্র না, কিন্তু আমরা রবির অন্ধকারের ভিতর থেকে যতোটুকু আলো আছে, তা তো বের করে নিতে পারি।

..................

প্রশ্ন

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অব্যাহত থাকলে আপনার আজকের চেয়ে কালকের শারীরিক অবস্থা খারাপ হইতেই থাকবে আস্তে আস্তে। সে শারীরিক পরিশ্রম করতেসে, এবং সে করতে বাধ্য, কিন্তু বেতন পাচ্ছে না

এইটা আপনার ধারণা। দাস প্রথার সময় সবাই যে দাসদের অত্যাচার করত তা তো না, অনেকে দাসদের ভাল খাওয়া দাওয়া দিত, হয়ত ভালোও বাসত অল্প স্বল্প। আমাদের দেশে যে এখন গৃহ পরিচারিকা (যাদেরকে প্রচলিত কথা আমারা কাজের মেয়ে বলি) রাখা হয় তাদেরও কিন্তু খাওয়া পরা বেতন দেয়া হয়, এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারাও তাদের নিজ বাড়িতে খেতে পায় না। এখানে দুই পক্ষই আপাত লাভবান হচ্ছে, মেয়েটা খেতে পাচ্ছে পরতে পারছে, কিছুটা নিরাপত্তা পাচ্ছে, বেতনও পাচ্ছে অল্প কিছু। তাকে বাসায় কাজ করতে না নিলে কিন্তু এগুলা সে পেত না। এর মানে কি এই যে যেহেতু কিছুটা লাভ হচ্ছে সেজন্য এই সিস্টেম নিয়ে আমরা কথা বলব না? আপনার মতামত আমার কাছে অনেকটা সেরকমই মনে হচ্ছে। এক্ষেত্রে কিন্তু সেইসব কাজের মেয়েদের স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে ভালই হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিয়ে শাদীর ব্যবস্থাও করা হয়। এর মানে সে উপকৃত হচ্ছে তার মানে কি আমরা সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা বলব না? যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে থাকবে?

আমাকে দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আপনি সম্ভবত আমার লেখার উদ্দেশ্য বা স্পিরিটটা ধরতে পারেননি।

নতুন যুক্তি আসছে না, একই কথার চর্বিত চর্বন হচ্ছে। নতুন কিছু না এলে তাই আমি আর কথা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। ভাল থাকুন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি মনে হয় খেয়াল করেন নাই, আপনার উপরোক্ত মন্তব্য প্রকাশিত হওয়ার আগেই আমি নিজের ভুল ধরতে পারসি, এবং স্বীকার করসি সেইটা।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ঠিক আছে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

এর মানে সে উপকৃত হচ্ছে তার মানে কি আমরা সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা বলব না? যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে থাকবে?

না, অবশ্যই চলতে থাকবে না। একটা কাজের মেয়ের কাজের মেয়ে হিসেবে থাকার কথা না। তার লেখাপড়া করার কথা, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা। অবশ্যই আমরা সেইটা নিয়ে কথা বলবো।

কিন্তু একটা মেয়েকে যখন বাপ-মা পালতে পারে না, খাইতে পারে না, এবং যখন তার ভবিষ্যতের দায়ভার কেউ নিতে চায় না তখন একটা পরিবার তাকে কিছু খাবার আর কাপড়ের বিনিময়ে কাজ করতে বললে সে যদি যেতে চায়, তাহলে আমি বাঁধা দিবো না। কারণ, তার খাওয়া-পরা আগে। যতোখন পর্যন্ত তার লেখাপড়া এবং খাওয়া-পরার দায়িত্ব না নিতেসে, ততোখন পর্যন্ত আমি তাকে সেই বাসায় থাকতে বাঁধা দিবো না। আমি তাকে সেই বাসায় থাকতে দিবো, তারপর যখন লেখাপড়া+খাওয়া+পরার দায়িত্ব নিতে কেউ আসবে, তখন আমি তাকে কাজের বাসা থেকে মুক্ত করার পক্ষে কথা বলবো, এবং বাসার মালিক যদি না দিতে চায়, আমি তার বিপক্ষে কথা বলবো।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দায়িত্ব নিতে কেউ আসবে না, আমাদেরকেই কথা বলে লেখালেখি করে রাস্তায় নেমে সেগুলা করাতে হবে। দাসপ্রথা একদিনে বিলুপ্ত হয়নি। এইজন্যে কোথাও কোন ঝামেলা হচ্ছে দেখলেই সেটার প্রতি আঙ্গুল নির্দেশ করা জরুরী, না হলে হয়ত অনেকের বোধোদয়ই হবে না যে অনায্য কিছু একটা ঘটে চলেছে। আজকে কিছুটা তো লাভ হচ্ছে সেই ধুয়ো তুলে চুপ থাকার কোন সুযোগ নেই। এটা যদি মেনে নেন তাহলে আমার লেখার মোটিভ এবং স্পিরিট বুঝতে পারবেন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

আপনার এই মন্তব্য পড়ার আগেই আমি আরেকটা মন্তব্য লিখে ফেলসি, যেটার বক্তব্য আপনার নিন্মোক্ত বক্তব্যের সাথে মেলেঃ

দায়িত্ব নিতে কেউ আসবে না, আমাদেরকেই কথা বলে লেখালেখি করে রাস্তায় নেমে সেগুলা করাতে হবে।

কিন্তু আপনার এই বক্তব্যের ব্যাপারে আমার কিছু প্রশ্ন আছেঃ

না হলে হয়ত অনেকের বোধোদয়ই হবে না যে অনায্য কিছু একটা ঘটে চলেছে।

আপনি কি ধরে নিচ্ছেন সে যখন কাজের বাসায় কাজ করতো, এবং তার শিক্ষার আর খাওয়া-পরার দায়ভার কেউ নেয় নাই, মালিকরা তাকে বাসায় নিয়ে খেতে দিয়ে অন্যায্য কিছু করসে? মালিকরা যদি ধনী হয়, যাদের একজন প্রাপ্তবয়স্ক কর্মচারী বাসায় পালার টাকা আছে, সেইক্ষেত্রে অবশ্যই অন্যায্য। কিন্তু যে পরিবারের সেই টাকা নাই, সে যদি মেয়ের অন্ততঃ খাওয়া-পরার দায়িত্ব নেয় তাদের কিছু কাজ করে দেয়ার বিনিময়ে, সেইটাকে আপনি অন্যায্য বলবেন কেন? এমন না যে শিক্ষা সে এমনিতে পাইতে যাইতেসিল, কাজের বাসার মালিক তারে ধরে-বাঁইধে শিক্ষার সুযোগ আটকায়া দিসে।

আমি জানি, আপনার লেখার উদ্দেশ্য মহৎ, এবং আমি আপনার লেখার শক্তিটা বোধ করতেসি। কারণ, আপনি যা চান, সেইটা মনে-প্রাণে আমিও চাই। কিন্তু আমার চোখে বাস্তবতাটাও পড়তেসে। কি হওয়া উচিত, সেইটা বুঝার সাথে সাথে "ক্যামনে হওয়া উচিত" বুঝাও গুরুত্বপূর্ণ। আর ক্যামনে হওয়া উচিত, এইটা বুঝার জন্য আগে বুঝা লাগে বাস্তবতাটা -- দুনিয়ায় যা আছে, যা হচ্ছে -- এইরকম কেন? আমাদের পূর্বপুরুষরা অনেক কিছু ( ভালো ও খারাপ ) করে গেসে। আমাদের দুইলাখ বছরের পূর্বপুরুষের কাজের ফল তো আমরা দুইদিনে মুছে ফেলতে পারবো না। বাস্তবতা দেখে আগে আমাদেরকে নির্বাচন করতে হয়, এই বাস্তব দুনিয়ায় আমাদের পক্ষে আদর্শ সমাধানের পর পরবর্তী সবচেয়ে ভালো সমাধানটা কি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার আগের মন্তব্যের এই অংশ প্রসঙ্গেঃ

মালিকরা যদি ধনী হয়, যাদের একজন প্রাপ্তবয়স্ক কর্মচারী বাসায় পালার টাকা আছে, সেইক্ষেত্রে অবশ্যই অন্যায্য।

না, আমি ভুল ছিলাম। আমি অন্যায্য বলসিলাম শিশুশ্রমের কথা চিন্তা করে, আবার সেই আদর্শ দুনিয়ায় কি হওয়া উচিত সেইটা ভেবে। না, এইটা অন্যায্য না। সেই ধনীরও কোন দায়বদ্ধতা নাই এই মেয়ের শিক্ষার দায়িত্ব নিতে।

সে যদি মেয়েটার লেখাপড়ার দায়িত্ব না নেয়, সেইটা বোকামী হবে অবশ্যই, কিন্তু অন্যায্য না।

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ, তবে তার যে মুক্তির দরকার, সেইটা তার শিক্ষার আর খাওয়া-পরার ব্যবস্থা কেউ করার আগেই আমরা বলবো, যেন কেউ ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হয়। কিন্তু অবশ্যই শিক্ষার+খাওয়া-পরার ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত হওয়ার আগে তাকে সেই কাজের বাসা থেকে মুক্ত করে নিয়ে তার খাওয়া-পরার সুযোগটা বন্ধ করে দিবো না।

অতিথি লেখক এর ছবি

না, আমার ভুল হইসে। আপনি ভুল বুঝেন নাই। দাসদের অবস্থা খারাপ হইতো, কারণ তারা ন্যায্য বেতন পাইতেসিল না। আপনিই ঠিক ছিলেন। হ্যাঁ, সুতরাং, বাচ্চাদেরকে ন্যায্য পারিশ্রমিকই দেয়া উচিত। কিন্তু দিলে রবি যে কিছু অধিকার পায়, সেইটাও মাথায় রাখতে হবে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দাসরা নায্য বেতন পাইলেও, মনিবের থেকে ভাল ব্যবহার আর কলাটা মূলাটা পাইলেও, যে দাসপ্রথার মধ্যে ঝামেলা আছে, সেটা যদি বুঝতে না চান তাহলে আসলে আলোচনা আগাবে না।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ নতুন একটা ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করতে সুযোগ করে দেয়ার জন্য।

দাসরা ন্যায্য বেতন পাইলে আর মনিবের ভালো ব্যবহার পাইলে, ( আমি "কলাটা-মুলাটার" অর্থ বুঝি নাই ) দাসপ্রথার মধ্যে কি ঝামেলা আছে বলবেন কি? আমি জানি না আসলেই এই ব্যাপারটা নিয়ে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দাসপ্রথার ঝামেলা হইল, বেতন দেয়াটা আর কলাটা মূলাটা দেয়াটা মনিবের একপাক্ষিক ইচ্ছা আর দয়ামায়ার ওপর নির্ভর করে। দাস যে কাজটা করে সেটা যদি শ্রমিক হিসাবে (চাকরি করা বা জব করা হিসাবে) করে সেখানে সেই বেতনে পাওয়াটা তাদের অধিকার। এই দুই ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক লেনদেনের পরিমান সমান হইলেও, আপাতদৃষ্টিতে দুই পক্ষই একই পরিমান লাভ পাচ্ছে মনে হইলেও, প্রথম ক্ষেত্রে ব্যপারটা অনৈতিক, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে নয়।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ উত্তরের জন্য।

মনিবের একপাক্ষিক ইচ্ছা আর দয়ামায়ার ওপর নির্ভর করে।

তাহলে সেইটাকে "ভালো ব্যবহার" বলতেসেন কেন?

......

প্রশ্ন

মন মাঝি এর ছবি

আমি বা আমার চেনা কেউ রবিতে চাকরী করে না

আপনি কি গ্রামীণফোনে চাকরি করেন বা করতেন?

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

না।

আচ্ছা, আমার স্বীকারোক্তি বর্ধিত করা লাগবে দেখতেসিঃ

২ক। আমি বা আমার চেনা কেউ রবিতে চাকরী করে না, এবং কারো রবিতে চাকরী করার সম্ভাবনা আছে কিনা জানা নাই।

২খ। ২ক-এর "রবি"-কে গ্রামীণফোন বা অন্যকোন আলাপনী প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যাংক বা NGO বা জাগো বা অন্যকোন প্রতিষ্ঠান, যারা পথশিশুদেরকে "দান" করে যাইতেসে, দিয়ে প্রতিস্থাপিত করলেও উক্তিটা সত্য থাকবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

পুনঃশ্চঃ আপনি সম্ভবত ভাবতেসেন, আমি ইউনুসের ভক্ত।

না, আমি ইউনুসের গ্রামীণব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির বিলুপ্তিকে সমর্থন করি। এবং তার শান্তিতে ( এমনকি যদি সে অর্থনীতিতেও পাইতো ) নোবেল পাওয়াকে একটা কৌতুক হিসেবে বিবেচনা করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

পুনঃশ্চঃ (২) এবং আমি প্রথমে ইউনুসের ভক্তই ছিলাম, যখন সে নোবেল জিতলো। আমার দৃষ্টিকোণ বদলাইতে প্রধানতঃ সাহায্য করসে সচলায়তনের লেখাগুলো, বিশেষ করে হিমু; এবং আমার পরিচিত একজন ব্যক্তি যার মা-বাবা গ্রামীণব্যাংকের ঋণগ্রহীতা ছিলেন।

মন মাঝি এর ছবি

আপনার এইসব ক, খ, গ, ঘ -- পুনঃশ্চঃ ১-২-৩-৪-- ইত্যাদির মধ্যে কেমন জানি একটা "আমি কলা খাই না" টাইপের গন্ধ পাইতাসি!

যাউজ্ঞা, কুনুব্যাপার্না। আমি সম্ভবত কি ভাবতেসি সম্পর্কে আপনি সম্ভবত যা ভাবতেসেন তা সম্ভবত ঠিক না। আমি এসব কোন কিছু ভাইবাই প্রশ্নটা করি নাই। আপনার প্রিয়েম্পটিভ / এন্টিসিপেটরি সিরিয়াল ব্যাখ্যাগুলি তাই পানিতে গেল। আমার শুধু আপনার লেখার স্টাইলটা কেমুন যেন পরিচিত ঠেকতেসিল। আর কিসুই না! হাসি

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার নাকের ঘ্রাণের সংবেদকগুলা খুবই শক্তিশালী।

দুনিয়ার এতো প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, যার মধ্যে অন্য আলাপনী প্রতিষ্ঠানগুলাও পড়ে, কেন আপনার মাথায় গ্রামীণফোনের চিন্তাই আসলো, সেইটার কারণ হিসেবে আপনি ভাবেন গ্রামীণ ব্যাংককে আমি সমর্থন করি, এইটা ছাড়া আমার মাথার ক্ষুদ্র সমস্যাবিশ্লেষণ ক্ষমতার কিছু নিউরনগুলা আর কিছু বের করতে পারে নাই। পাশাপাশি এই লেখার মধ্যেই যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংকের সমালোচনা করা হইসে, আমার মাথায় গ্রামীণ ব্যাংকই আসলো।

পরিচিতই যেহেতু ঠেকসে, আশা করি কোনদিন আমার ধরণে লেখা সেই ব্যক্তির খোঁজ পেলে জানাবেন। আমি প্রতি মাসে একবার শুধুমাত্র তার খোঁজ পাওয়া গেল কিনা, তা জানার জন্যেই এই পৃষ্ঠায় ফিরে আসবো। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি সবার নীচে "নতুন মন্তব্য করুন"-য়ের বাক্সে মন্তব্য করলেও চিপায় চলে যাচ্ছে কেন?

...............

প্রশ্ন

অতিথি লেখক এর ছবি

এইটাই খালি জায়গামত পড়সে। বাক্সের পরিহাস।

অতিথি লেখক এর ছবি

নাহ, আমি এখনো দাসপ্রথার সাথে রবির জামা বিতরণের তুলনাটা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত, সেইটা নিয়ে আমার এখনো প্রশ্ন আছে।

আমি বলসিলাম, "জামাটাই দাম"। হিমু তার উত্তরে বলেছেন, ( আমি আর হিমুর সেই মন্তব্যের নীচে লিখতেসি না, কারণ তাহলে আমার মন্তব্যকে সেই চিপায় পাঠায়া দেয়া হচ্ছে। ওই চিপা একটা ঘরে মন্তব্য লিখলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। ) ""জামাটাই দাম" কথাটা বলা দাসদের "খাওয়া-পরাই মজুরি"র মতো শোনাচ্ছে।"

কিভাবে দুইটা সমতুল্য হয়?

দাস যে খাবার পায়, সেইটা তার সারাদিনের কাজের পরিবর্তে পায়। পথশিশু যে জামা পায়, সেটা পরে রবির নাম প্রচারের জন্য পায়।

দাসের কাজ করতে শারীরিক পরিশ্রম লাগে। কিন্তু জামা পরতে শারীরিক পরিশ্রম লাগে না।
দাস মালিকের ইচ্ছামতো সময়ে কাজ করতে বাধ্য। রবির দেয়া জামা পরতে বাচ্চারা বাধ্য না।
দাসের সারাদিন কাজ করলে "আরাম" লাগে না। জামা পরলে আরাম লাগে।

আমি একটা ব্যাপার অনুরোধ করবো, তবে কাউকে মানতে হবে, এমন কথা নাই।

আমার যদি কোন বক্তব্যে ভুল থাকে, অযৌক্তিক কিছু থাকে, সেইটা আমার সেই বক্তব্যের ভুল/ অযৌক্তিকতা চিহ্নিত করেই দেখানো যাবে কি? আমার বক্তব্যের ঘটনা যদি বাস্তবে ঘটে, সেইটার ফলাফল কি হইতে পারে, আমাকে তা বলা যায় কি? যদি ফলাফল নেতিবাচক হয়, সেইটা আমি বললে বুঝবো। সেইটা আরেক উদাহারণ থেকে ঘুরে এসে তারপর আপনি যদি আমাকে আমার বক্তব্যে কি ভুল ছিল বলেন, সেইটা বুঝতে আমার যতো সুবিধা হয়, তারচেয়ে আমার অনেক বেশী বুঝতে সুবিধা হয় সরাসরি বললে। ( কারণ আগে আমার দেখতে হয়, আপনার উদাহারণের আর আমার বক্তব্যের প্রসঙ্গ দুইটা কতটুকু তুলনীয়। )

যাই হোক, শেষ পর্যন্ত আপনার বক্তব্য, আপনি বলবেন। যেভাবে আপনার ভালো লাগে, বলবেন। আমি বুঝার চেষ্টা করবো।

অতিথি লেখক এর ছবি

উত্তম জাঝা!

--আরাফ করিম

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

এক লহমা এর ছবি

মন্তব্য পড়তে পড়তে মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা! তবে, ধৈর্য্য ধরে পড়লে এটাকে জমাটি পোস্ট বলে মানতেই হবে হাসি
আমার বক্তব্য উপরে মেঘলা মানুষ বলে দিয়েছেন, এইটা জানিয়ে গেলাম। চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক কমেন্ট পড়লাম, চমৎকার আলোচনা। কয়েকটা বিষয় মোটামুটি বুঝতে পারলাম আর তার সাথে আমার দুই পয়সা:

১। রবির দেয়া জামা পরে বাচ্চাদের ক্ষতি হচ্ছে (অন্ততঃ বৈষয়িক) এরকম কোন স্পষ্ট বক্তব্য নেই এখন পর্যন্ত। ধরে নিলাম এই উদ্যোগ থেকে বাচ্চাদের লাভ ক > ০।

২। এই উদ্যোগ থেকে রবির লাভ হচ্ছে এই ব্যাপারে বলতে গেলে কোন দ্বিমতই নেই। ধরি রবির লাভ = খ >০।

৩। তার মানে দাঁড়াল এই উদ্যোগ থেকে মোট লাভ গ = ক + খ । মার্কেট মেকানিজমে এই মোট লাভ বাজারমূল্যের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। সেই ভাগাভাগি অনেক সময়ই এক পক্ষের বেশী অনুকুলে থাকে। অন্যভাবে, বাজার বন্টনের সমতা নিশ্চিত করে না।

৪। বিতর্কটা আসলে যা নিয়ে হচ্ছে সেটা হচ্ছে এই ক্ষেত্রে ভাগাভাগিতে রবির অংশ (বিজ্ঞাপন) বাচ্চাদের অংশের (জামা) চেয়ে এত বেশী যে এটাকে অনৈতিক বলা যায় কিনা। অর্থাৎ সুষ্ঠু বন্টন হয়নি এই উদ্যোগ থেকে তৈরী হওয়া উদ্বৃতাংশের।

সুষ্টুতর বন্টনের জন্য একটা উপায় হতে পারত বাচ্চাদের টাকা দেয়া জামা পরার জন্য। সেটা “খ” এর কিছু অংশ কমিয়ে “ক” কে বাড়াত। সেটা হয়নি কেন, তাও আলোচনায় ইতিমধ্যে এসেছে। বাচ্চাদের দর-কষাকষি করার ক্ষমতা নেই। অর্থাৎ এক বাচ্চা যদি জামা নিতে রাজি না হয় টাকা না দিলে, আরো অনেক বাচ্চা পাওয়া যাবে যারা টাকা না দিলেও নেবে। এক্ষেত্রে রবির সম্ভাব্য লাভ সম্পর্কে বাচ্চাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করলেও খুব ব্যবধান তৈরি হবে বলে মনে হয়না। কিন্তু পরিস্থিতি পুরোই অন্যরকম হবে যদি, রবির এই লাভজনক পদক্ষেপ অন্যরাও অনুসরণ করে। গ্রামীণ তার লোগো ওয়ালা শার্ট বিতরণ শুরু করল, অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণ করল, আমি সুহাস এন্টারপ্রাইজের নামে শার্ট বিতরণ করলাম। তখন এমন পরিস্থিতি হবে যখন আমি শার্ট দিতে গেলে বাচ্চা বলবে, আমি কবি এন্টারপ্রাইজের শার্ট পরে মাসে ১০০০ টাকা পাই, আপনি কত দেবেন? খেলোয়াড়দের কথা ভাবুন, মেসিকে আপনার কোম্পানীর শার্ট পরাতে কত টাকা দিতে হবে? কারণ মেসির যোগান কম!

কিন্তু এভাবে চাহিদা বেড়ে গিয়ে বাচ্চাদের দরকষাকষি করার ক্ষমতা তৈরী হওয়ার খুব একটা সম্ভাবনা আপাতত আছে বলে মনে হচ্ছে না। আরেকটা বিকল্প হচ্ছে আইন করে, অথবা সমাজ সচেতনতা তৈরী করে রবি কে বাধ্য করা বাচ্চাদের টাকা দিতে অথবা এধরনের উদ্যোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া। দ্বিতীয়টার ক্ষেত্রে আমার প্রবল আপত্তি আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এধরনের উদ্যোগ কারো উপরে জোর করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না (এখানে দাসপ্রথার সাথে পার্থক্য) এবং যতক্ষন পর্যন্ত এটা সমাজকে অন্য কোনভাবে ক+খ এর চেয়ে বেশী ক্ষতি না করছে (এখানে অস্ত্র বা ড্রাগস কেনাবেচার সাথে পার্থক্য), আমি চাইব এধরনের উদ্যোগকে নিরুতসাহিত না করতে। তার সাথে সাথে উদ্বৃতাংশের বন্টন যদি আরো সমতাভিত্তিক (equitable) করা যায়, সেটা বাড়তি পাওনা।

সুহাস শিমন

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার উত্তরটার জন্য। আমার মনটাই ভালো হয়ে গেসে আপনার এই চমৎকার চমৎকার উত্তরের জন্য।

তখন এমন পরিস্থিতি হবে যখন আমি শার্ট দিতে গেলে বাচ্চা বলবে, আমি কবি এন্টারপ্রাইজের শার্ট পরে মাসে ১০০০ টাকা পাই, আপনি কত দেবেন?

হ্যাঁ, রবির মতো আরো প্রতিষ্ঠানগুলাও যদি জামা দেয়, তখন দাম হাঁকানোটা একটা বাস্তব বাছাই হবে।

কিন্তু এভাবে চাহিদা বেড়ে গিয়ে বাচ্চাদের দরকষাকষি করার ক্ষমতা তৈরী হওয়ার খুব একটা সম্ভাবনা আপাতত আছে বলে মনে হচ্ছে না।

না থাকুক আপাততঃ। সামনের বছর এইটা দেখে গ্রামীণ আসুক, সার্ফ এক্সেল আসুক, ডানো আসুক। যখন জামা দেয়া প্রতিষ্ঠান বেশী হয়ে যাবে, তখন তো বাচ্চাদেরকে ওরা সেধে এসে টাকা দিবে।

আরেকটা বিকল্প হচ্ছে আইন করে, অথবা সমাজ সচেতনতা তৈরী করে রবি কে বাধ্য করা বাচ্চাদের টাকা দিতে

রবিকে বাধ্য করলে রবি অবশ্য ওই বিজ্ঞাপনে মূল্যতালিকা ঝুলায়া দেয়ার অধিকার পাবে। আমার তাতে আপত্তি নাই। একজন বাচ্চা রাস্তায় মূল্যতালিকাওয়ালা একটা জামা পরসে বলেই সেইটাকে "সব নিয়ে গেল চোররা" দৃষ্টিতে দেখতে হবে কেন? তার জামা থেকে আমরা তো তথ্য পাচ্ছি। সে আগেই কাজ করে খাইতো, এখন আরেকটু কম কষ্টের কাজ করে খাইতেসে। দেখতে জিনিষটা একটু ব্যতিক্রম হয়ে গেলেই কি বাঁকাচোখে তাকাইতে হবে? একটু শ্রদ্ধার চোখেও তো তাকানো চায়। এমন তো না আমরা তাদের জন্য শিক্ষা-বাসস্থানের ব্যবস্থা করে বসে আছি।

তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনই আইন করে রবিকে সেই অধিকার দেয়াটাকে সমর্থন করতেসি না। কারণ, আমি জানি না, রবি তখন তাদের হিসাব-নিকাশটা কিভাবে করবে, কতোটুকু আগ্রহী থাকবে। আপাততঃ আমি নিরাপদ পথটাই বেছে নিবো, যেটা কাজ করসে এই কয়দিন। আর যেহেতু আপনার ধারণাটা শুনে অনুমান করা যাচ্ছে, এই কাজ আরো কয়েক প্রতিষ্ঠান করলে পরে ওরাই সেধে এসে টাকা দিবে, সুতরাং আমাদের টাকা পাওয়ার সুযোগটাও তো থাকতেসে।

আপনাকে একটা নোবেল দিতে ইচ্ছা করতেসে।

আবারো অনেক অনেক ধন্যবাদ।

..................

প্রশ্ন

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বাকী কথা বাদ দিলাম। শুধু বলি, এই জনসেবার সাথে রবির ইনকাম ট্যাক্স ফাইলের একটা গভীর সম্পর্ক আছে। যদ্দুর জানি সিএসআর জাতীয় সেবার জন্য কর্পোরেট বেনিফিট পাওয়া যায় সরকারের কাছ থেকে। রবি এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে তাতে অবাক হবার কিছু নাই। আমরা তর্ক করছি ঠিক, কিন্তু বাচ্চাগুলো জানেই না ওদের বিক্রি করেই জামাগুলো ওদের দেয়া হয়েছে। তবু কোন উসিলায় বাচ্চাগুলো মাগনা জামাকাপড় পেয়েছে সেটাও খারাপ না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

জ্বী, সেইজন্যেই আমি বলসি রবিকে এইটা স্বীকার করতে বাধ্য করা যে এইটা জনসেবা/ "জাতীয় সেবা" জাতীয় কাজ না। এবং সেইটা বাচ্চাদেরকেও জানানো।

জনসেবা [ প্রচলিত অর্থে। জীবজগতে, আরো নির্দিষ্টভাবে বললে তাৎপর্যপূর্ণ প্রজন্মসংখ্যায় টিকে থাকা প্রতিলিপিক্ষমতাসম্পন্ন বংশাণুর ( genes ) জগতে নিস্বার্থভাবে কোন কিছু দেয়া একটা কাল্পনিক জিনিষ। ] হইতো তখন, যদি রবি কোন শর্ত না দিয়েই -- ৫৮ টাকা ১০০ জন ১ জামা -- পরে বাচ্চাদের মাঝে জামাগুলা বিতরণ করতো ( সেইক্ষেত্রেও রবির নাম/ প্রতীক ব্যবহার করাটা তার অধিকার যদিও। )

..................

প্রশ্ন

সুবোধ অবোধ এর ছবি

কবি 'র এমন সহজ সরল উপস্থাপনার পরও নিচে কমেন্টের এমন কনভার্সেশন দেখে আমার হাত পা ছড়ায়ে কান্তে মন চাইতেছে হাউমাউ কইরা!! :'(
হিম্ভাই রে স্যালুট। ভাই আপনের ধইয্য তুলনাহীন!
অতিথি লেখক ভাইয়ের কাছে একটাই প্রশ্ন -
ভাই আপনার আসল নাম কি 'আসিফ নজরুল'???

অতিথি লেখক এর ছবি

না। আপনার আসল নাম কি শার্লক হোমস?

সুবোধ অবোধ এর ছবি

জ্বি না। তাইলে তো সমাধান টাইনা দিতাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

শার্লক হোমস আর আপনার মধ্যে আরেকটা পার্থক্য আছে, বুঝতে পারসেন এইবার? ( ইঙ্গিতঃ শার্লক হোমসের অল্প তথ্য থেকে কোন ব্যক্তির পরিচয় নির্ণয় করার ক্ষমতা ছিল। )

......

প্রশ্ন

সুবোধ অবোধ এর ছবি

সেইটা তো আগেই মাইনা নিলাম। নাকি এইটা নিয়াও প্যাঁচাইবেন??

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ভাই আপনার আসল নাম কি 'আসিফ নজরুল'???

কস্কি মমিন! হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ধ্রুব আলম এর ছবি

খাইছে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বাহ, বহুদিন পর সচলের চিপা কমেন্ট আবার ফিরে আসল। হাততালি

যাদের মাথায় ব্লগের "আলোচনা" মানেই হুদা টাইম লছ আর গালাগালি/কাদা ছোঁড়াছুড়ি মনে হয় তারা এই পোস্ট আর পান্ডবদা'র শেষ পোস্টের কমেন্ট গুলোকে "শিশুশিক্ষা" হিসাবে নিতে পারেন। চোখ টিপি

হিমু ভাই এত্ত এত্ত ধৈর্য কইত্তে পায়? ( গুরু গুরু ) [আমি একবার শেহাব ভাই'র চমৎকার একটা পোস্টে লছাগু কমেন্ট দেইখা টেম্পার লুজ কইরা পুরা পোস্টের ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট কইরা ফেলছিলাম ওঁয়া ওঁয়া ]

এইরকম ভাবগম্ভীর একটা পোস্টের শুরুর দিকে ফিচলা কমেন্ট কইরা এখন নিজেরই অস্বস্তি লাগতেছে, এরপর কোনও কমেন্টে ইমো ছাড়া কিছু দিমু না। ইয়ে, মানে... ..

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হ অনেকদিন পর চিপা কমেন্ট দেখলাম সচলে। হিমু ভাই লোকটা অদ্ভুত দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখাটা পড়ে কিছু লিখব ভেবেছিলাম মাগার মন্তব্য পড়তে পড়তে পুরাই আউলা হইয়্যা গেছি।
তাই ত্রিমাত্রিক কবি’কে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আমারে ধন্যবাদ না দিয়ে মন্তব্যকারক আর আর তার জবাবদাতাদের দ্যান দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

হিমু এর ছবি

চিপামোচন:

প্রশ্ন বলেছেন:

আপনার আর আমার পার্থক্য হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের জন্য আপনি ন্যায্যমূল্য দিতে চান, কিন্তু তাদের জামায় মূল্যতালিকা থাকুক, এইটা আপনি চান না। আপনার এইটা না চাওয়াতে সামনের বছর আর এই বাচ্চাগুলা জামা পাইতেসে না।

জামায় মূল্যতালিকা নিয়ে আপনিই বেয়াকুল। আমার চোখে জামায় মূল্যতালিকা থাকলেও বিজ্ঞাপন, অন্য কোনো বিজ্ঞাপনী প্রতীক যেটা দিয়ে রবির সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন সম্ভব সেটা থাকলেও বিজ্ঞাপন। মূল্যতালিকা আপনার আরেকটা রেড হেরিং।

সামনের বছর যে বাচ্চাগুলো জামা পাবেই, সেটার নিশ্চয়তাই বা আপনাকে কে দিলো? আর, এই বছরও তো মূল্যতালিকা ছিলো না। মূল্যতালিকার সঙ্গে এই ক্যাম্পেনের কোনো দূরবর্তী যোগসূত্রও খুঁজে পাচ্ছি না।

অতিথি লেখক এর ছবি

আচ্ছা। আমার ভুল স্বীকার করলাম।

কিন্তু বিজ্ঞাপন ছাড়া রবি কোনদিন জামা দিবে না। রবি তাদের ছাপানো নাম ছাড়া জামা দিলে বেশী মানুষ জানবে না এই খবর। ( নাম ছাড়া জামা দেয়ার খবর পত্রিকা, দূরদর্শনে প্রচার করা যায়, কিন্তু সেইটা যতো না মানুষ দেখবে, তারচেয়ে বেশী দেখবে বাচ্চারা যদি রবির নাম ছাপানো জামা গায়ে নিয়ে ঘুরে। ) বেশী মানুষ না জানলে রবির পণ্য বেশী বেচা হবে না। সেইপথে তাই রবি পা বাড়াবে না।

( আর আমার মতে বিজ্ঞাপন ছাড়া জামা দেয়া অনুচিত। তারা জামা দিতেসে, এইটা বেশী মানুষ জানুক। জেনে তাদের পণ্য বেশী ব্যবহার করুক। তাদের পণ্য এই কারণে বেশী বিক্রি হচ্ছে দেখে আরো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আসবে এই জামা দেয়ার বাজারে। লাভ তখন বাচ্চাদের। তারা তখন দামও হাঁকাইতে পারবে। )

আপনি যেহেতু বিজ্ঞাপন ছাড়া জামা দিতে চান, কিন্তু যেহেতু রবি জামা দিলে বিজ্ঞাপনসহই দিবে; তার মানে আপনি বিজ্ঞাপনসহ জামা নেয়ার চেয়ে রবির জামা না দেয়াকেই শ্রেয়তর মনে করেন। আমার সাথে আপনার পার্থক্যটা তাহলে এইখানে।

অতিথি লেখক এর ছবি

মূল্যতালিকার সঙ্গে এই ক্যাম্পেনের কোনো দূরবর্তী যোগসূত্রও খুঁজে পাচ্ছি না।

না, এই প্রচারাভিযানের সাথে মূল্যতালিকার কোন সম্পর্ক নাই। মূল্যতালিকা ঝুলানোর অধিকার রবি পাবে, যদি সে বিজ্ঞাপনখরচ দিয়ে বিজ্ঞাপনের জামা দেয়া চালু রাখতে পারে।

...............

প্রশ্ন

ধ্রুব আলম এর ছবি

অতিথি লেখক কয়জন? একজনই কি ২ বার করে জবাব দিচ্ছেন নাকি ২ জন আলাদা ব্যক্তি? নামটা তলায় লিখুন অনুগ্রহ করে। ইয়ে, মানে...

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখিত, আমি বারবার নিজের সদস্যনামটা নীচে লিখতে ভুলে যাইতেসিলাম।

০১ অগাস্ট ২০১৪ - ৮:৫৪ পূর্বাহ্ন থেকে এই মন্তব্য অবধি "অতিথি লেখক"-এর নাম দিয়ে লেখা সকল মন্তব্য, শুধুমাত্র সেইগুলা ছাড়া যেগুলার নীচে একটি অনন্য সদস্যনাম ( যেমন সুহাস শিমন, দস্যু ঘচাং ফু ) উল্লেখ করা আছে, আমার করা।

............

প্রশ্ন

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ভ্রমণে ছিলাম তাই মন্তব্য করতে পারিনি। মোটাদাগে কয়েকটা কথা বলতে চাই-

এই বস্ত্রবিতরণ কর্মসূচী কোনও বিবেচনায়ই সমাজসেবা বা কর্পোরেট স্যোসাল রেস্পন্সিবিলিটি নয়। সমাজসেবার পরিধি অনেক বিশাল ও ব্যাপক। কিন্তু সিএসআর একটা মৌলিক পদ্ধতিমাত্র- মুনাফার অংশবিশেষ দাতব্যকাজে ব্যায় করা। এখানেই সামাজিক ব্যবসা ও সিএসআর-এর মধ্য পার্থক্য। সামাজিক ব্যবসার নীতি হচ্ছে আয়লব্ধ যাবতীয় মুনাফা ফের সামাজিক ব্যবসাতে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে বর্তমান উপকারভোগি গোষ্ঠিকে অধিক উপকৃত করা এবং বর্ধিত উপকারভোগি গোষ্ঠী সৃষ্টি করে তাদের মাঝে উপকার সম্প্রসারণ করা। তবে নীতিতে যা'ই থাকুক না কেনো, এর বাস্তবতা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং এই বিতর্ক চলমান। প্রদীপের গোড়ায় অন্ধকারের মতো সামাজিক ব্যবসার মোটিফ ও বিজনেস মডেল নিয়ে ব্যাপক যুক্তিযুক্ত বিতর্ক চলমান এবং মোটিফ সৎ থাকলে এই বিতর্কগুলো থেকে উদ্যোক্তারা পজিটিভ নোটসগুলো বিবেচনায় এনে তাদের ব্যবসাকে রিমডেলিং করতে পারে।

একটি মোবাইল কোম্পানী হিসেবে রবি বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ অফার করতেই পারে। এবং বিভিন্ন প্যাকেজ থেকে আয়লব্ধ মুনাফার একটি অংশ দিয়ে তারা সিএসআর পালনও করতে পারে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা তখনই যখন তারা বলে কয়ে একটি প্রোডাক্টের সাথে একটি চ্যারিটির সরাসরি লিঙ্ক ঘটাচ্ছে যে চ্যারিটির সরাসরি উপকারভোগি হচ্ছে 'ব্যাক্তি' এবং যে ব্যাক্তি তার আর্থসামাজিক অবস্থানে ভালনারেবল। একজন সচ্ছল ব্যাক্তি রবির লোগো লাগানো ব্লেজার ফ্রি পেলেও পরবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। হিউম্যানিটারিয়ান এ্যাকাউন্টেবিলিটি পার্টনারশীপ নীতিমালার প্রথম নীতিই হচ্ছে উপকারভোগির সর্বোচ্চ সন্মান সুনিশ্চিত করা। যারা এই নীতি সম্পর্কে জানে ও নীতিটি মানে তারা উপকারভোগির সন্মান নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকে। যেমন, রিলিফ বিতরণের সময় চলমান ঘটনার ছবি নেওয়া যাবে কিন্তু হাতে রিলিফের সামগ্রী ধরিয়ে দাঁত কেলিয়ে পোজ দিয়ে উপকারভোগীর ছবি নেওয়া বারণ। এইক্ষেত্রে রবির এই ভিজিবিলিটি পদ্ধতি আমার কাছে অত্যন্ত অবমাননাকর বলে মনে হয়েছে।

এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে যে রবি তো প্যাকেজের মাধ্যমে অর্জিত মুনাফা দিয়েই পোষাকগুলো দিয়েছে। তবে কি তা সিএসআর নয়? আমার উত্তর হচ্ছে না। কিছু জামা কাপড়, বৃত্তি বা কম্বল বিলিয়ে সিএসআর করা যায়না। স্যোসাল রেস্পন্সিবিলিটি পালন করতে হলে আগে স্যোসাইটিকে জানতে হবে। সমাজে বিরাজমান সমস্যাগুলোর প্রায়োরিটাইজেশন করতে হবে। যে যে ক্ষেত্রে সরকার ও সাহায্য সংস্থাগুলো কাজ করছে সেগুলোকে বাদ দিতে হবে। তারপর আসবে সিএসআর পালন করার জায়গাগুলো। যেখানে সেখানে যথেচ্ছ ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে সিএসআর পালন করা মানে লিটারেলি সরকারের কাজকে বিঘ্নিত করা।

সার্বিক বিবেচনায় রবির বস্ত্রদান আমার কাছে নীচুমানের একটা ভণ্ডামী বলে মনে হয়েছে। রবি কিছু দুঃস্থ পরিবারকে ঈদ করার টাকা দিয়ে বিষয়টি হয়তো লিবারেলি অন্যভাবে দেখার সুযোগ ছিলো। পরিবারটি তাদের প্রয়োজন মতো টাকাগুলো খরচ করতে পারতো। কিন্তু যে সাহায্য বাস্তব চাহিদা ও সিদ্ধান্তকে সীমিত করে সেটাকে আর যাই হোক চ্যারিটি বা সিএসআর বলতে আমি রাজি নই। এই শিশুগুলোর অবস্থার সুযোগ নিয়ে রবি তাদেরকে জীবন্ত সাইনবোর্ড বানাচ্ছে, এটা সুস্থ মস্তিষ্কে সমর্থনযোগ্য নয়।

রবির বাংলাদেশের সিইও সুপুন বীরসিংহ আমার অফিসের ফাইন্যান্স ম্যানেজারের বাল্যবন্ধু এবং তারা একসাথে সিমা কমপ্লিট করেছে। তার কাছে শোনা যে সুপুন সিমাতে গোটা দুনিয়ার মধ্যে সবথেকে ভালো রেজাল্ট করে পাশ করেছে। এছাড়া সে এক্সিয়াটার হেড অফিসে তাদের স্ট্র্যাটেজিক ডিভিশনের হেডও ছিলো বাংলাদেশে আসার আগে। তো, তার মেধাবী মস্তক থেকে যদি এই ধরনের ধারনা ক্রমশ বেরিয়ে আসতে থাকে, তবে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সিএসআর-এর নতুন সংজ্ঞায়ন করা জরুরী হয়ে পড়বে। আমার ভয় অচিরেই অন্য কোম্পানীগুলো তার এই উর্বর ধারনার অনুসরন শুরু করতে পারে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য।

আমার একটা প্রশ্ন ছিল।

যে যে ক্ষেত্রে সরকার ও সাহায্য সংস্থাগুলো কাজ করছে সেগুলোকে বাদ দিতে হবে।

সরকার আর অন্যান্য সাহায্যসংস্থাগুলা কি পথশিশুদেরকে জামা দিতেসে? যদি দিয়ে থাকে, তাদের কার্যক্রম কি যথেষ্ট?

......

প্রশ্ন

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

সরকার পথশিশুদের জামা দিতেছে কিনা আমার জানা নেই তবে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দিতেছে। বলাই বাহুল্য যে তাদের সমষ্টিক কার্যক্রমও মোটেও যথেষ্ট নয়। তবে কথা হচ্ছে নীতি ও মূল্যবোধের।

আগেই বলেছি উপকারভোগীর সন্মানের কথা সে যতোই দরিদ্র হোক না কেনো। একটা শিশু রবির মোহরাঙ্কিত জামা পরে ঘোরা মানেই হচ্ছে তার ভালনারেবিলিটিকে দৃশ্যমান করে তার প্রতি মানুষের করুনার দৃষ্টিপাত নিশ্চিত করা। মানুষ আহা করবে এই বলে যে রবি ছিলো বলে বাচ্চাটা ঈদে একটা জামা পেয়েছে। কেনো, রবির যদি এতোই দরদ, তাদের মোহরাঙ্কন ছাড়া জামা দিতে পারতো না? সোজা কথায় বলি, দুরাবস্থার কারনে হয়তো শিশুটি রবির জামা নেবে, পরবে এবং দাঁত কেলিয়ে নির্মাতার নির্দেশমতো পোজ দেবে। কিন্তু রবি কেনো, কারোরই দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের ডিগনিটি নিয়ে খেলা করার অধিকার থাকা উচিত নয়।

নীতির প্রশ্নের যদি আসি, ঈদে একটা গরীব পরিবারের প্রথম চাহিদা থাকে কিছু সেমাই, চিনি, কিছু গোস্তের। কখনোই নতুন পোষাকের চাহিদা খাবারের চাহিদাকে অতিক্রম করে যেতে পারে না। গরীব হওয়া সত্ত্বেও পরিবারভেদে এই চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। পোষাকের চাহিদা যদি কোনও পরিবারে মূখ্য হয় সেক্ষেত্রে মুল্যবোধের কথায় আসতে হবে যা আগেই বলার চেষ্টা করেছি।

আসলে মোবাইল কোম্পানীগুলো 'শর্ত সাপেক্ষ' কথাটির দেয়ালে বন্দি হয়ে পড়েছে, শর্ত সাপক্ষ ছাড়া কোনও কিছুই তারা করতে পারে না। এবং সেই শর্ত যদি কারো জন্য হিউমিলিয়েটিং হয়, তা'ও শর্ত শর্তই।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার উত্তরের জন্য।

একটা শিশু রবির মোহরাঙ্কিত জামা পরে ঘোরা মানেই হচ্ছে তার ভালনারেবিলিটিকে দৃশ্যমান করে তার প্রতি মানুষের করুনার দৃষ্টিপাত নিশ্চিত করা।

আমি একটা ব্যাপার বুঝতে পারি নাই। শিশুদের দিকে করুণার দৃষ্টিপাতটা করতে হবে কেন? করুণাটা কিসের? এরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে, এদের নিজের টাকায় কেনা জামা নাই, মানুষের দেয়া জামা পরে -- এই করুণা? আমাদের মনের মধ্যে তাহলে এই চিন্তাটা কেন আসে না যে, এদের জামা থাকার দায়িত্বটা আমরা এতোদিন নিতে পারতাম, কিন্তু নেই নাই? "ভালনারেবিলিটি দৃশ্যমান" হইলে কার প্রতিক্রিয়া কি হবে, সেইটার দায়ভার কেন দর্শক নিবে না?

সোজা কথায় বলি, দুরাবস্থার কারনে হয়তো শিশুটি রবির জামা নেবে, পরবে এবং দাঁত কেলিয়ে নির্মাতার নির্দেশমতো পোজ দেবে। কিন্তু রবি কেনো, কারোরই দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের ডিগনিটি নিয়ে খেলা করার অধিকার থাকা উচিত নয়।

তাদের জামা ছিল না, জামা পাইসে, খুশী হইসে। এই সহজ সত্যিটা স্বীকার করলে "ডিগনিটি" যাবে কেন? ( প্রশ্নটা যে কোন সত্যি ঘটনা --- সহজ বা কঠিন --- স্বীকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। )

ঈদে একটা গরীব পরিবারের প্রথম চাহিদা থাকে কিছু সেমাই, চিনি, কিছু গোস্তের। কখনোই নতুন পোষাকের চাহিদা খাবারের চাহিদাকে অতিক্রম করে যেতে পারে না।

ঈদের সময় উপহার দেয়া মানে শুধুমাত্র ঈদের দিনের জন্য উপহার দেয়া না। সেমাই, চিনি দিলে সেইটা অবশ্য ঈদের দিনের জন্যই হইতো শুধু। কিন্তু জামা জিনিষটার ক্ষেত্রে ওই সূত্র আর খাটে না।

.....................

প্রশ্ন

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আপনার সাথে আলাপ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত বোধ করছি না কারন এই আলাপের থ্রেড অবধারিতভাবে চিপায় ধাবিত হবে। আপনার চিন্তা ভাবনা আর আমার চিন্তা ভাবনা এক লাইনে যায় না সুতরাং আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারবো এটা মনে হয় সম্ভব হবে না। 'ভালনারেবিলিটি', 'ডিগনিটি', 'হিউমিলিয়েশন' এই শব্দগুলোর উপলব্ধি আপনার ও আমার কাছে এক নয়।

সিএসআর-এর চাদরে মুড়ে রবির একটা বাণিজ্যিক কূটকৌশল আপনি যে উদ্যম নিয়ে জাস্টিফাই করতে নেমেছেম, এই উদ্যম, এফোর্টস, এনার্জি, এগুলো একটা গবেষণার কাজে লাগান, দেখবেন সাফল্য আসবে। ধন্যবাদ।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

মন মাঝি এর ছবি

দেঁতো হাসি চলুক

---------------------

অঃটঃ আপনারে দেখি না কেন? দেশে-বিদেশে অনেক ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতাই তো অর্জন করে চলেছেন অনবরত। কৃপনের মত সেগুলি শুধু নিজের জন্যই রেখে দিলে চলবে? আশা করি আমাদের মত অভিজ্ঞতাহীণ মানুষদের প্রতি আপনার কৃপাদৃষ্টি আবার পড়বে এবং গল্পের ঝুলি থেকে মণিমুক্তা বের করা শুরু করবেন আবারও। পিলিজ্‌! হাসি

****************************************

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হো হো হো নিদারূন কাজের চাপে আছি। একটু অবসর পেলেই লিখবো মাঝি ভাই।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

'ভালনারেবিলিটি', 'ডিগনিটি', 'হিউমিলিয়েশন' এই শব্দগুলোর উপলব্ধি আপনার কাছে কেমন তা জানতে আমি উৎসাহিত বোধ করতেসিলাম। তাই আমার সাথে আলাপ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত বোধ করছেন না জেনে আমি অত্যন্ত দুঃখিত।

সিএসআর-এর চাদরে মুড়ে রবির একটা বাণিজ্যিক কূটকৌশল আপনি যে উদ্যম নিয়ে জাস্টিফাই করতে নেমেছেম

আপনি সম্ভবত খেয়াল করেন নি, আমি এর আগে বেশ কয়েক জায়গায় লিখসি যে, আমি এই কার্যক্রমকে রবির একটা ব্যবসা হিসেবেই দেখি।

এই উদ্যম, এফোর্টস, এনার্জি, এগুলো একটা গবেষণার কাজে লাগান, দেখবেন সাফল্য আসবে।

ধন্যবাদ আপনার পরামর্শের জন্য।

.....................

প্রশ্ন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।