রাব্বানী স্যারের টেড-টক ও কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনা

স্পর্শ এর ছবি
লিখেছেন স্পর্শ (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/০২/২০১২ - ১১:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

টিউবওয়েল এর ব্যবহার নিয়ে প্রচার প্রচারণা হয়েছে, কারণ কেউ না কেউ এ থেকে টাকা বানাতে পেরেছে। সেখানে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ২০ মিনিট রাখলেই পানি ডাইরিয়াটাইপ জীবানু মুক্ত হয়ে যায়, এই কথাটি প্রচারিত হচ্ছে না। কারণ, এ থেকে টাকা বানানোর উপায় নেই[১]। ওদিকে টিউওয়েলের পানি ব্যবহার করতে গিয়ে আর্সেনিক সমস্যায় ভুগছে বিশাল জনপদ। একটা প্রযুক্তি আবিষ্কারের সাথে সাথে 'বাজারজাত' করাও কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝা যায় এখান থেকে ।

যদি স্রেফ 'জনস্বার্থে' সরকার বা কোনো চ্যারিটি অরগানাইজেশন কোনো টেকনলজিকে জনগনের কাছে নিয়ে যাবে - এমন ভাবা হয় তাহলে কিন্তু সরকার বা এমন সব প্রতিষ্ঠানের জনকল্যাণ করার'সদিচ্ছা' সেখানে মূল নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। আর 'তৃতীয় বিশ্বে' সরকারগুলো জনকল্যানে কতটা সদিচ্ছ সেটা তো আমরা জানি-ই। এখানে কিছু ভাবনার বিষয় আছে।

স্যার তার এত চমৎকার সব টেকনলজি 'প্যাটেন্ট' করেননি। এমন সিদ্ধান্ত নিতে কত বড় হৃদয় থাকা দরকার সেটা আমরা সবাই জানি। যেসব প্রযুক্তি মানব জাতির বৃহত্তর কল্যাণে লাগে, সেগুলো পেটেন্ট করা এক ধরণের নীচ ধৃষ্ঠতা ছাড়া কিছুই না।

এ প্রসঙ্গে একটা চিন্তাও মাথায় আসে। যেমন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার জন্য 'ফান্ডিং' দরকার। তৃতীয় বিশ্বের সরকারগুলো এ ধরনের ফান্ডিংএ যতটা না অপারগ তার চেয়ে অনেক বেশি অনিচ্ছুক। তাই সরকারের উপর ভরসা করা সম্ভব হয় না। এই চিত্র খুব শিঘ্র বদলানোরও কোনো সম্ভাবনা নেই। বাকি থাকে দেশী প্রতিষ্ঠান থেকে ফান্ডিং,বা বৈদেশিক ফান্ডিং। দুটোই হতে পারে নানান রকম। কেউ হয়তো স্রেফ, চ্যারিটির উদ্দেশ্যে ফান্ডিং করবে। আবার কেউ করবে তাদের নিজস্ব্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রসেসের কোনো সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে, বা স্রেফ বিজ্ঞাপনের জন্য। কিন্তু বাইরের এইসব প্রতিষ্ঠান থেকে যে 'টাকা' আসে, সেটাও কেউ না কেউ 'আয়' করেছে। এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ অথবা দানের। এই দ্বিতীয় বা তৃতীয় পক্ষের আয় ও ইচ্ছার উপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে, কীভাবে একটা গবেষণা প্রতিষ্টানকে স্বনির্ভর ও সয়ংসম্পূর্ণ করা যেতে পারে? যে কোনো বৈজ্ঞানিক, বা প্রযুক্তিগত ইনোভেশন যেটা শত যুগের শত মানুষের শ্রম ও মেধার সম্মিলিত ফলাফলের উপর দাঁড়িয়ে থাকে, সেটাকে পশ্চিমা স্টাইলে 'শেষ ব্যক্তির প্যাটেন্ট' না করেও কীভাবে তা থেকে একটা 'সাসটেইনেবল' রেভিনিউ আয় করা যেতে পারে, যা পরবর্তি ইনোভেশনকে জ্বালানী (টাকা অর্থে) যোগাবে আবার একই সঙ্গে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিকে নিয়ে যাবে তৃণমূল মানুষের কাছে? এই চিন্তাটা ঘুরছে মাথায় বেশ কিছুদিন থেকে।

'লো টেকনলজি বাট মডার্ন কনসেপ্টস' এই গুরুত্বপূর্ণ কথাটা স্যার উল্লেখ করতে ভোলেননি তার টেড টকে। অনেক সময়, বিশেষ করে হাতের কাছে পাওয়া সুলভ যন্ত্রাংশ বা উপকরণ দিয়ে বানানো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক ধরনের বিভ্রান্তি কাজ করে অনেকের মাঝে। এক ধরনের ভাবনা কাজ করে, যে এগুলো দেখতে বা অ্যাসেম্বেল করতে যেমন সহজ, আবিষ্কার করতেও বুঝি গভীর কোনো ধারণার দরকার নেই। এসব ভাবনা কাটিয়ে, আধুনিক 'কনসেপ্টগুলো'কে শিখে ফেলার ব্যাপারে কীভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। এবং এই আধুনিক ধারনাগুলো কিভাবে হাতের কাছের সুলভ উপকরণ দিয়েই,একটা কার্যকর প্রযুক্তিতে পরিণত করা সম্ভব, সেসব ব্যাপারেও হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্যারের এই উদ্ভাবনগুলোই হতে পারে তার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যেমন সিগিন্যাল প্রোসেসিং এর কোনো ক্লাসে, কোনো শিক্ষক, হয়তো স্যারের এই ইসিজি, প্রোজেক্টটা হাতে কলমে একটা ডেমনস্ট্রেশন করে দিলো। কেউ হয়তো, আন্ত অভন্তরীন প্রতিফলন নিয়ে পড়ানোর সময় ব্যাখ্যা করলো, স্যারের পেডোগ্রাফ যন্ত্রের মূল নীতি। সঙ্গে একটা ডেমো। আবার কেউ হয়তো, ইমেজ প্রোসেসিং বা ডাটা ভিজুয়ালাইজেশন এর কোনো ক্লাসে দেখিয়ে দিলো, কিভাবে পেডোগ্রাফ অথবা ফোকাস ইম্পিডেন্স মেথড থেকে সংগ্রহ করা তথ্য চমৎকারভাবে মানুষের বোধগম্য করে উপস্থাপন করা যায় কম্পিউটারে।

এমন করা গেলে, শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে 'দূরের' (যা শুধু বিদেশে গিয়ে প্রয়োগ করা যায়) কোনো বিষয় ভাবার বদলে একেবারে হাতের কাছে, ধরে-ছুঁয়ে-ব্যবহার-করে-ফেলা-যায় টাইপ কিছু হিসাবে ভাবতে শিখবে। এমনকি নিজেরাও এধরনের উদ্ভাবনে উৎসাহী হবে। মজার ব্যাপার হলো, অনেকজন নয়, স্রেফ আরও একজন-দুজন শিক্ষকই যদি এমনটা করতে শুরু করেন, তাহলেই হয়তো কয়েকশ প্রযুক্তিবিদ পেতে পারি আমরা প্রতিবছর, যারা নিজেদের জনগোষ্ঠির সমস্যাগুলোর দারুণ সব সমাধান বের করতে শুরু করবে কয়েক বছরের মধ্যেই।

দেশের বড় ও পুরাতন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক ধরনের জড়তা এসে গেছে। ওখানে নতুন কিছু, গতিময় কিছু করতে গেলেই নানান রকম বাধা অনুভূত হয়। হবারই কথা, এত দিনের জমাট আলস্য, অনভ্যাস, আর দলা-দলির মত নীচতাকে ঠেলে দূর করতে বাধা না পাওয়াটাই বরং হবে আশ্চর্যজনক। এত সবের মধ্যেও রাব্বানী স্যারের মত মানুষরা আছেন বলেই আমরা এগিয়ে যাবো ঠিকই।

স্যার বলেছেন, আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা পিএইচডি গবেষণা করতে বিদেশে চলে যাচ্ছে, গিয়ে ২০% এর সমস্যা সমাধান করছে। যেখানে মানবজাতির ৮০% চাপা পড়ে আছে দুর্বিসহ সব বৈষম্যের নীচে। এই ব্যাপারটা কী যে দুর্ভাগ্যজনক!

কিন্তু আমি নিশ্চিত, রাব্বানী স্যারের মত বড়-হৃদয় আর সুযোগ্য গবেষক যারা দেশে আছেন। যারা সকল বাধাবিপত্তি পেরিয়ে কাজ করে চলেছেন, এগিয়ে চলেছেন। খুঁজলে দেখা যাবে, তাদের তত্ত্বাবধায়নে ঠিকই, তেমনই বড় হৃদয়ের তেমনই সুযোগ্য ছাত্র-ছাত্রীও আছে। তারা আছে বাইরের অনেক প্রলোভন আর হাতছানি, ঘরের অনেক গঞ্জনা আর টিটকারি উপেক্ষা করেই। আর যারা বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, বা চলে গেছে, তারাও সঠিক সময়ে স্যারের বা স্যারের মত কারো সাক্ষাৎ পেলে ঠিকই দেশে থেকে যেতো। এ দেশের তরুণদের উপর এ বিশ্বাসটুকু আমার আছে।

শিক্ষা মন্ত্রনালয় চাইলে দেশে পিএইচডি প্রোগ্রাম বাড়িয়ে দিতে পারে জানি। দেশে প্রকৃত পিএইচডি গবেষণা হলে, নানান ক্ষেত্রে বৈষম্য কাটিয়ে উঠতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না সেটাও জানি। ওদিকে দেশে নানান ক্ষেত্রে স্যারের মত সুযোগ্য গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক খুব বেশি নেই। এমনকি বিদেশের বড় বড় ভার্সিটিতেও অনেক সময় পিএইচডি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে দেখি, স্রেফ বাজে তত্ত্বাবধায়কের ক্ষপ্পরে পড়ার কারণে। এমতাবস্থায়, কোনো শিক্ষার্থী দেশে থেকে পিএইচডি গবেষণার ইচ্ছা পোষণ করলেও, তাকে সময়মত খুঁজে পেতে হবে রাব্বানী স্যার বা তার মত আর কোনো শিক্ষককে। কারণ ভুল লোকের হাতে পড়ে, সর্বনাশের আশঙ্কা এখানে অনেক। দেশে আমার কয়েক নিকট বন্ধুকেই অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে দেখেছি এসব কারণে। অন্য যে শিক্ষক-গবেষকরা আছেন সরকারের পথে চেয়ে না থেকে তাদেরকেও পারতে হবে,স্যারের মত করে বাইরের উৎস থেকে ফান্ডিং এর ব্যবস্থা করতে। আমি জানি না, এমন কতজন আছেন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কিন্তু দেশে পিএইচডি করার ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহীত করতে, সবার আগে 'সুযোগ্য' শিক্ষকদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

সব শেষে বলি, আমি প্রচণ্ড ভাগ্যবান বলেই হয়তো স্যারের ল্যাবে কিছুদিন আসা-যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সুযোগ হয়েছে স্যারের মত আরও কয়েকজন শিক্ষকের সংস্পর্শে আসার। যারা এই দেশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন, যাদেরকে বারে বারে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে গেছে 'ওরা'। এই শিক্ষকদের কাছ থেকে পড়াশুনা কতটুকু শিখতে পেরেছি জানি না। কিন্তু বাঁচতে শিখেছি জানি। এঁরা একেকজন একেক বিষয়ের গবেষক হওয়া সত্ত্বেও, মুগ্ধ হয়েছি তাদের অন্তমিল দেখে। তাঁদের মানবীয় উৎকর্ষ দেখে। এঁরা সবাই, ব্যবহারে অমায়িক, এমনকি সবচেয়ে নবীনতম, সবচেয়ে অপটু ছাত্রটির প্রতিও। এঁরা কখনওই, কোন ছাত্র তাকে দেখে উঠে দাড়ালো না, কোন ছাত্র সালাম দিলো না, কে সিগারেট ছুঁড়ে ফেললো না, এসব বাহ্যিক সামাজিকতা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন। অন্য শিক্ষকরা দলা-দলি করে, বা শত্রুতা করে কোনো কিছুতে বাধা দিলেও, সেটা নিয়ে অভিযোগ করেন না। স্রেফ বিকল্প পন্থা ভেবে বের করে ফেলেন। বয়সে প্রবীণ হওয়া সত্ত্বেও, ঠিকই গ্রুপের যেকোনো ছাত্রের চেয়েও বেশি তরুণ বেশি প্রাণচঞ্চল! কোনো ছাত্র ফাকিবাজি করলে, রেগে ওঠেন না, বা রাগ দেখান না। তবে কষ্ট পান। এঁরা নিজের গবেষণাকে, কাজকে উপভোগ করেন পুরোদমে, সে যতই পরিশ্রমসাধ্য হোক। আর খুব সহজেই নিজের ছাত্রদের উপর আস্থা রাখেন। 'আমি জানি তুমি পারবে', এই মেসেজটা যেকোনো ছাত্রের মধ্যে দিয়ে দিতে পারেন, এমনকি কোনো সচেতন প্রচেষ্টা ছাড়াই। আর অবশ্যই মানুষের শুভত্বে বিশ্বাস করেন। ভালোবাসেন।

আমাদের সবার জীবন এমন দীপান্বিত হোক।

[১]


মন্তব্য

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ডায়রিয়ার জীবাণুমুক্ত হয় ভিরু, আর্সেনিকের বিষক্রিয়া না!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

স্পর্শ এর ছবি

একটা বাড়তি শব্দ যোগ করে বিভ্রান্তি দুর করলাম হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রায়হান আবীর এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা।

রব্বানী স্যারের সংস্পর্শ পাওয়া এবং তার সাথে পিএইচডি করার বিষয়টাকে আমি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি হিসেবে দেখি। পড়ালেখা পাশে রেখেও যদি বলি স্যারের সাথে থেকে জীবন দর্শন, মানুষের সাথে আচার ব্যবহার থেকে কতোকিছু শিখেছি তার কোনো ইয়েত্তা নেই।

ল্যাবে যখন প্রথম গেলাম, তখন স্যার হাতে চাবি ধরিয়ে দিলেন। যেই চাবির দিয়ে পুরো ল্যাবের প্রত্যেকটা রুমে যেকোনো সময় এক্সেস পাওয়া সম্ভব। ল্যাবে অসংখ্য কম্পিউটার, ল্যাপটপ, যন্ত্রপাতি কতোকিছু। তারপরও উনি সবাইকে চাবি দেন বিশ্বাস করে। আর উনি আস্থা রাখেন বলে, আজ পর্যন্ত ল্যাব থেকে কোনোদিন কিছু চুরি হয়নি।

ল্যাবে একজন চতুর্থ শ্রেনী কর্মচারী আছেন। তার নিয়োগের আগে সবাইকে স্যার ব্রিফ করেছেন এই বলে, কেউ যেনো ভেবে না বসে এখন তার চায়ের কাপ আরেকজন পরিষ্কার করবে। স্যার এখনও আমাদের সাথে ল্যাব পরিষ্কার করেন, প্রয়োজনে ঝাড়ু পর্যন্ত দেন।

ল্যাবে নানান সময় হয়তো কিছু অকারেন্স ঘটে। এরমধ্যে কিছু সিরিয়াস। কিন্তু কখনই উনাকে দেখিনি, রাগ করে শাস্তি দিতে। উনি প্রত্যেককে কমপক্ষে তিনবার সুযোগ দেন শুধরাবার। এইক্ষেত্রে উনার একটা কথা আমার খুব ভালো লাগে। বলিঃ

স্যার কখনই এটা করোনা, ওটা করোনা এমনভাবে বলেন না। কোনো কাজ কেনো করা উচিত না, এটা বুঝিয়ে বলেন, যাতে করে এই শিক্ষা দিয়ে জগতের আরও লক্ষকোটি কাজ ভালো না মন্দ সে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছি এটা আসলে আমার বাবা-মা থেকে শুরু করে কেউই শুরুতে এপ্রিশিয়েট করেনি। কিন্তু দুইবছর পর আমি বুঝি, পৃথিবীর অন্যকোথাও এমন সুপারভাইজারের সাথে আমি পিএইচডি করতে পারতাম তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, এমন মানুষ কোটিতেও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর এছাড়া বাংলাদেশে গবেষণা করার কারণে, আমি নিজে এখন বুঝি আগামী ত্রিশবছর রিসার্চ করে আমি এখানে থাকতে পারবো, এতো এতো কাজ করার আছে।

অনেক কথা বলে ফেললাম। লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।

মৃত্যুময় ঈষৎ(অফলাইন) এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

স্পর্শ এর ছবি

প্রথম এমন কিছু আমি দেখি কায়কোবাদ স্যারের মধ্যে।

স্যারের সঙ্গে যখন থিসিস করছি, একবার তার অফিস রুমে গিয়ে দেখি, কয়েকজন বিদেশী গবেষকরা বসে আছেন। আমি গিয়ে দরজায় দাড়াতেই, স্যার তাদের সাথে আলাপ বন্ধ করে বললেন, 'আমার ছাত্র এসেছে, আমি আপনাদের সাথে একটু পরে কথা বলছি!'

প্রথমদিন স্যারের গ্রুপে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, নিজের অফিসের চাবি দিয়ে দিয়েছিলেন। ওটাই তখন আমাদেরও অফিস হয়েগেছিলো। রাত দশটা এগারোটার দিকে হলে ফিরতাম। মাত্র পাঁচমিনিটের হাটা পথ। কিন্তু স্যার ঠিকই সঙ্গে করে হলের গেটে এগিয়ে দিয়ে আসতেন।

একবার কাজে ফাকি দিলাম কিছুদিন। ভেবেছিলাম স্যার বুঝি খুব রেগে যাবেন। কিন্তু তিনি কোনো রাগ করলেন না। স্রেফ দুখী দুখী চেহারা করে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। স্যারকে কষ্টপেতে দেখে মনে হচ্ছিলো, এর চেয়ে যদি ধমক দিতেন, শ্বাস্তি দিতেন, বেত্রাঘাত করতেন তাহলেও অনেক ভালো হতো।

স্যারের রুমে কম্পিউটারটা ছিলো একটাই। তার ডেস্কে। সেটা ব্যবহার করার জন্য স্যার নিজের চেয়ার ছেড়ে দিতেন! একবার স্যারের চেয়ারে বসে বসে কম্পিউটারে একটা কাজ করছি, সে সময় ডিপার্টমেন্টের হেড স্যার এসে আমাকে ঐ অবস্থায় দেখে চোখ কটমট করে চলে গেলেন! আমার নিজেরই অস্বস্তি লাগতো, কিন্তু স্যারকে এসব ব্যাপারে বিন্দু মাত্র কেয়ার করতে দেখিনি।

যতদিন সংস্পর্শে ছিলাম, প্রাণশক্তির এক অফুরান উৎস ছিলেন এই পাগলাটে মানুষটি। এখনও তেমনই আছেন।

দেশে কিছু করতে গেলেই, নানান পদস্থব্যক্তিরা নানান রকম ভ্যাজাল শুরু করে। এসব নিয়ে বিচলিত হতে দেখিনি তাকে কখনও।

ঠিক এমনই মনে হয়েছে, জাফর ইকবাল স্যার, মুনির হাসান... এঁদের সবাইকেই... এই ব্যাপারগুলো এই অন্যমাপের মানুষগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

স্যার নিজেই এখন হেড..........আমাদের শেষ ক্লাশে কয়েকজন স্যার একটা ফেয়ারোয়েল এর মতো করলেন, স্যার জেনে নিজেই চলে আসলেন, আর তারপর অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে আমাদের আরেকবার উজ্জীবীত করলেন........


_____________________
Give Her Freedom!

রাগিব এর ছবি

কায়কোবাদ স্যারের ছাত্র হবার সৌভাগ্য আমারও হয়েছে। আমি যখন বুয়েটে পড়তাম, তখন স্যার সব সময় উৎসাহ দিতেন রিসার্চ করার জন্য। রশীদ হলে আমার রুমে একদিন সকালে ঘুম থেকে কে যেন গুঁতিয়ে তুলে দিলো। চোখ রগড়াতে রগড়াতে দেখি, স্যার খোঁজ খবর করতে নিজেই চলে এসেছেন। পুরা বুয়েট জীবনে আর কোনো স্যারকে একবারও দেখিনি, কেমন আছো পর্যন্ত জিজ্ঞেস করতে।

আর স্যারের বাসায় চা-নাস্তা যে কতোটুকু ধ্বংস করেছি, বলার বাইরে। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে (৫০ হাজার থেকে ১ লাখ) উনি এক দল ছাত্রকে প্রোগ্রামিং কনটেস্টে ভারতে কেবল নিয়েই যাননি, বরং ছাত্রদের নিয়ে তাজমহল দেখাতেও ছুটে গিয়েছিলেন বাস ভাড়া করে। অথচ স্যারের বাসায় সোফাটা এক সাইডে ভেঙে গেছে, সেদিকে তাঁর মাথাব্যথা নাই। এখনো বুয়েটের ছাত্রদের রিসার্চ বা প্রোগ্রামিং এ উৎসাহ দিতে স্যার লেগে থাকেন সারাক্ষণ।

অফ যা টপিক - স্যার বুয়েটের প্রডাক্ট না বলেই হয়তো এমন ছাত্রবান্ধব। বুয়েটের লোকজন সাধারণত বাঁশ দেয়ার ১০১টি উপায় বইয়ের পরিবর্ধন বা পরিমার্জনেই ব্য্স্ত থাকে, ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খবর নেয়ার ব্যাপারে কারো আগ্রহ থাকেনা)

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

স্বাধীন এর ছবি

চলুক

মেহদী হাসান খান এর ছবি

বাজারজাত করার একই চিত্র অন্যভাবে দেখেছি হাসপাতালে কাজ করার সময়। এইচআইভি এর একজন রোগীও পাইনি যতদিন ছিলাম, হেপাটাইটিস-বি এর রোগী ছিল অজস্র। রোগ দু'টোর ভাইরাস একইভাবে ছড়ায় (বরং এইচআইভির তুলনায় হেপাটাইটিসে ছড়ানোর হার শতগুন বেশি), কোনটাতেই রোগীর হ্যাপা কম না, অথচ স্রেফ প্রচারের জন্য অনুদান পাওয়া যায় না দেখে হেপাটাইটিসের সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা এইচআইভির ধারে কাছেও নাই। গ্ল্যামারাস রিসার্চের মত অসুখও হয়তো গ্ল্যামারাস হয়!

"যে কোনো বৈজ্ঞানিক, বা প্রযুক্তিগত ইনোভেশন যেটা শত যুগের শত মানুষের শ্রম ও মেধার সম্মিলিত ফলাফলের উপর দাঁড়িয়ে থাকে, সেটাকে পশ্চিমা স্টাইলে 'শেষ ব্যক্তির প্যাটেন্ট' না করেও কীভাবে তা থেকে একটা 'সাসটেইনেবল' রেভিনিউ আয় করা যেতে পারে, যা পরবর্তি ইনোভেশনকে জ্বালানী (টাকা অর্থে) যোগাবে আবার একই সঙ্গে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিকে নিয়ে যাবে তৃণমূল মানুষের কাছে?"

এ বিষয়ে সত্যি সত্যি জানতে আগ্রহী। ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের বেলায় বিজনেস মডেল নিয়ে অনেক লেখা আছে, অন্য প্রযুক্তির বেলায় সেসব প্রয়োগ করা সম্ভব না। কেউ কি লিখবেন?

স্পর্শ এর ছবি

পশ্চিমা ধাঁচে পেটেন্ট না করেও, গবেষণাখাতে সাসটেইনেবল রেভিনিউ আয়, আর ফলাফলকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌছানো কিভাবে সম্ভব, সেটা নিয়ে সত্যিই ভাবনা-চিন্তা আর এক্সপেরিমেন্ট এর অবকাশ আছে। কোনো কার্যকর মডেল দাড় করানোটা সত্যিই বেশ কঠিন হবে। তবে অসম্ভব নয় নিশ্চয়ই।

যদি, দান/অণুদান ইত্যাদি এড়ানোর চেষ্টা করা হয় সেক্ষেত্রে, সার্ভাইভাল স্ট্রাটেজি হিসাবে, এমন কিছু ভাবা যেতে পারে-

গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দুই ধরনের 'উইং' থাকবে। যার একটা উইং, উন্নতবিশ্বের (মানে ২০% সম্পদশালীদের জন্য) প্রোডাক্ট/সার্ভিস এসবের ব্যাপারে গবেষণা করবে। এবং নতুন ফ্যান্সি কোনো ইনোভেশন (যেমন আইপ্যাড, বা এমন কিছু) করতে পারলে, সেটা প্যাটেন্ট করবে সে থেকে রেভিনিউ অর্জনের লক্ষ্যে।

আর অন্য উইং, তৃণমূল জনগোষ্ঠির সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে চিন্তা করবে। এবং আগের উইংথেকে পাওয়া উদ্ধৃত অর্থ, এই খাতে ব্যয় হবে।
------

তবে সবচেয়ে ভালো হত সরকার এসব খাতে গুরুত্ব দিলে। কিন্তু সে আশা দুরাশা। আর সরকারী গবেষণাকেন্দ্রগুলো কী আউটপুট দিচ্ছে, সে তো আমরা দেখছি ই মন খারাপ

এ ছাড়াও অন্য অনেক রকম 'বিজনেস মডেল' নিয়ে ভাবা যেতে পারে। ভালো হতো, এ এই আইডিয়া নিয়ে কোনো কন্টেস্ট আয়োজন করতে পারলে। নিশ্চয়ই অনেক নতুন প্রস্তাব পাওয়া যেত সেভাবে... প্রবলেমটা বেশ চ্যালেঞ্জিং... চিন্তিত
----

আর নিচে রায়হান আবীরের একটা মন্তব্যের উত্তরে, 'আরডুইনো'-এর বিজনেস মডেল নিয়ে কিছু লিঙ্ক দিয়েছি। সেগুলো থেকেও আইডিয়া নেওয়া যেতে পারে। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা।
শ্রদ্ধা জানালাম স্যারকে।

নুসায়ের এর ছবি

ছোট একটা প্রশ্ন (স্যারের গ্রুপের ছাত্ররা আছেন বলে করছি) -

টিউবওয়েলের বদলে সারফেস ওয়াটারকে (নদী, খাল-বিল বা রাব্বানী স্যারের কথা মতো এমনকি বন্যার পানিকেও) আবার পানীয় জল হিসেবে ব্যবহারের কথা বেশ কিছুদিন ধরে শুনছি। এক্ষেত্রে কেবল সূর্যের তাপ ব্যবহার করে জীবানুনাশ (মাইক্রো লেভেলে) করা গেলেও গৃহস্থালী পর্যায়ে পানির টার্বিডিটি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হচ্ছে কি?

লেখার জন্য ধন্যবাদ।

শামীম এর ছবি

পানির টার্বিডিটি (ঘোলাটে ভাব) নিয়ন্ত্রণের জন্য বালুর ফিল্টারই যথেষ্ট বলে মনে করি। কিন্তু এসব বিষয় বাসায় বলা যাবে না। বাসায় বিশেষত মহিলারা সব বিষয়ই বিশেষজ্ঞদের চেয়ে বেশি জানে বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে (অরণ্যে রোদন)। মন খারাপ

স্যারের কাজ এবং প্রেজেন্টেশন খুবই প্রেরণাদায়ক।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নীল রোদ্দুর এর ছবি

স্যারের এই প্রজেক্টের সাথে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম না, কিন্তু যে ভাইয়া এই প্রজেক্টে কাজ করতেন, উনার কাছ থেকে একদিন পুরোটা শুনেছিলাম, কি কি করছেন উনারা। এই প্রজেক্টে মূলত জীবানু নিয়েই কাজ করা হয়েছে, কারণ পানযোগ্য খাবার পানিতে জীবাণুর উপস্থিতিই আসলে মূল সমস্যা, টার্বিডিটি, সংরক্ষণের সময় বা প্রক্রিয়া এগুলো জীবাণুর উপস্থিতির মত এতোটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নয়।

এইখানে মূলত যা করা হয়েছে, সারফেস ওয়াটার (পুকুর, নদী, খাল) থেকে সংগ্রহ করা পানি স্যারের বর্ণিত প্রক্রিয়াস ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম করে সম্ভাব্য সবরকমের বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয়েছে কতটা জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কার্জন হলের পুকুরের পানি এই কাজের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য ছিল, আর পরিষ্কার পানির রেফারেন্স হিসেবে আধুনিক ওয়াটার পিউরিফায়ারের পানিকে ব্যবহার করা হত। স্যারের এই পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করা পানি বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা মাধ্যমে পাওয়া ফলাফল থেকে প্রমাণিত ভাবেই জীবাণুমুক্ত হয়েছে বলে দেখা গিয়েছে।

যখন টার্বিডিটি নিয়ন্ত্রণের কথা আসে, তখন কতটা স্বচ্ছ পানির কথা বলা হচ্ছে তা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। সাধারণত ঘোলা পানি কিছুক্ষণ রেখে দিলে নীচের দিকে তলানী আকারে অদ্রবনীয় পদার্থগুলোগুলো জমা হয় এবং উপরে স্বচ্ছ পানি থাকে। এই স্বচ্ছ পানি পানযোগ্য। কাজ শুধু স্বচ্চ পানিটা সাবধানে আলাদা পাত্রে ঢেলে নেয়া। গ্রামে যারা সারফেস ওয়াটার খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করে তারা বহুকাল আগে থেকেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করে ঘোলাটে ভাব দূর করে। আর শামীম ভাই ও বললেন, ঘোলাটে ভাব দূর করার জন্য বালির ফিল্টারই যথেষ্ট। স্যারের এইকাজে আসলে তাই টার্বিডিটি নিয়ন্ত্রণ প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল না, ছিল কম তাপমাত্রায় কম খরচে পানি জীবাণু মুক্ত করা, বিশুদ্ধপানি যাতে সারা বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছেও সহজলভ্য হয়।

কখনও খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা, পিউরিফাইড ড্রিকিং ওয়াটার হিসেবে মাম/ফ্রেশ ইত্যাদি নামে যে পানি কিনে খান, তার বোতলের গায়ে দেখেন, অদ্রবণীয় কণার পরিমাণ দেয়া আছে। ওটাও সম্পূর্ণরূপে অদ্রবণীয় কণামুক্ত নয়, তবে পানযোগ্য। টিউবওয়েলের যে পানি, তাও ঘোলা থাকে খানিকটা, কিছুক্ষণ রেখে দেয়ার পর তাতেও তলানী জমে।

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

নুসায়ের এর ছবি

বিষয়টি পরিষ্কার করে বলবার জন্য ধন্যবাদ।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আগে এনাদের দেখে ভাবতাম কোনো কোনো গবেষক এমনও অসাধারণ হয়। এখন মনে করি, এনারাই কেবল গবেষক। বাকিরা রক্তচোষা মানব, গবেষকের বেশ ধরেছে।

যাযাবর এর ছবি

লেখা ভালো লাগলো। স্যারের কথাগুলো মনে দাগ কেটে গেল। দেশে ফিরে যাবই।

চরম উদাস এর ছবি

ধান্দাবাজ প্রফেসরদের ভিড়ে এরকম মানুষ আসলেই ব্যতিক্রম। শ্রদ্ধা জানালাম।

স্বাধীন এর ছবি

শ্রদ্ধা রইল। দেশে আসলে দেখা করার ইচ্ছে রইল।

রায়হান আবীর এর ছবি

স্যারের রিপ্লাই

আবীর,

সচলায়তনে তরুণদের লিখা পড়ে আমার আনন্দে কান্না পেয়ে যাচ্ছে। এরা এত সুন্দর করে চিন্তা করে ও লিখে। প্রথমত: স্পর্শের লিখায় যে চিন্তার ম্যাচুরিটি প্রকাশ পেয়েছে আমি কল্পনা করতে পারি নি একজন তরুণের এতটা গভীর জীবনবোধ থাকতে পারে। আমাদের তরুণদের উপর আমার বিশ্বাস ছিল যে মোটামুটি এ ধরণেরই রেসপন্স পাব, কিন্তু পেয়েছি তার থেকেও বেশী। এ বয়সে আমরা যতটুকু চিন্তা করেছি বর্তমান প্রজন্মের তরুণেরা তার থেকে অনেক বেশী চিন্তা করে মনে হয়। এর কারণ হয়ত বর্তমানের প্রবীণদের তুলনামূলক ব্যর্থতা। ঘুরে ফিরে ভুল রাজনৈতিক মডেলকেই দায়ী করতে ইচ্ছে করে এ জন্য। আমি আশাবাদী আমার জীবদ্দশাতেই এই উদ্দীপ্ত তরুণদেরকে সফল হতে দেখে যাব। এখনও অনেক প্রবীণ ও মাঝামাঝি প্রবীণ-তরুণ আছেন (শ্রদ্ধেয় আবদুল্লাহ আবু সায়ূীদ, অনুজ কায়কোবাদ, জাফর ইকবাল ও মুনীর হাসানের মত) যারা তোমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি তো মনে করি একজন প্রবীণ হিসেবে আমি যদি কোথাও ব্যর্থ হই সেখানেও তরুণদেরকে জানানো প্রয়োজন আছে যে আমি এ পথে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি, এবং সম্ভবত: এ এ কারণে ব্যর্থ হয়েছি। প্রবীণদের কাছ থেকে দিক নির্দেশনা পেলে তরুণেরা তাড়াতাড়ি সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে, তাদেরকে ঐ একই এক্সপেরিমেন্ট বার বার করতে হবে না। প্রবীন ও তরুণদের এই মেল বন্ধনের বেশ অভাব রয়েছে আমাদের সমাজে।

ইদানীং পাওয়া প্রচারে আমার ভয় হচ্ছে আমি সবার আশা ধরে রাখতে পারব কিনা। তবে আমার মূল ভরসা হচ্ছ তোমরা, যাদেরকে আমি কাছে থেকে কিছুটা হলেও উৎসাহ ও প্রেরণা দিতে পারছি। তোমাদেরও দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল।তাছাড়া টেড টকটির মাধ্যমে আমি আরও ব্যাপক তরুণগোষ্ঠীর কাছে চলে আসতে পেরে্ছি, তাই খুবই ভাল লাগছে। এ জন্য টেড এর আয়োজক সুমন (কাল জাহান) ও তার তিন সহযোগিকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

রব্বানী স্যার
-----------

(আবীর, আমার উপরের লিখাটি যদি সচলায়তনে দিয়ে দিতে পার তবে ভাল হয়)

দ্রোহী এর ছবি

চলুক

অন্যকেউ এর ছবি

চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

স্পর্শ এর ছবি

আমার এই এলোমেলো লেখাটা স্যার পড়েছেন, জেনে ভালো লাগছে খুব। স্নেহের বশে স্যার যে প্রশংসা করেছেন আজ, কোনো একদিন হয়তো সেগুলোর যোগ্য হয়ে উঠতে পারবো। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

দ্রোহী এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা।

সুপ্রিয় দেব শান্ত এর ছবি

রব্বানী স্যার, কায়কোবাদ স্যার, জাফর ইকবার স্যার, আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার সবাইকে আমার শ্রদ্ধা। উনারা বেচে থাকুন হাজার বছর ধরে।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

আরো অনেকেই আছেন নিরবে নিভৃতে কাজ করে চলেছেন। বারডেমের প্রফেসর লিয়াকত একজন।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

রাব্বানী স্যারের ইমেইল আইডি জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন। কেউ কি জানাতে পারবেন? আমি বেশ কিছু দিন ধরে একটা ননপ্রফিট হেলথকেয়ার প্রজেক্টের পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে ঘুরছি। উনার কিছু ইনোভেশন দারুণভাবে কাজে লাগতে পারে। দেশের বাইরে আছি বলে উনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারছিনা। কেউ কি ইমেইল আইডি দিতে পারবেন? আমার ইমেইল এ্যাড্রেসে সরাসরি পাঠালে কৃতজ্ঞ থাকব:

। ধন্যবাদ।

রায়হান আবীর এর ছবি

ডান!

neuro11 এর ছবি

ইন্টারনেট এ সার এর কিছু গবেষণা সম্পর্কে জেনে তার সাথে কথা বলতে আগ্রহী হয়ে উঠি মাস ছয়েক আগে. সার যেভাবে আগ্রহ নিয়ে তার বেস্ত সময়ে আমাকে সময় দিয়েছেন তাতে আমি মুগ্ধ হই. মুখোমুখি আলাপচারিতায় তার সাথে কথা বলে আরো আশ্চর্য হই. গবেষণা ও দেশ নিয়ে তার সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা দেখে আমি যারপরনাই অনুপ্রানিত হয়েছি সেদিন এবং আমাকে অনেকগুলো বিষয়ে নতুন করে ভাবিয়েছে. বিশেষ করে গবেষনার প্রতি তার যে দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিকার অর্থেই বিরল, আমাদের দেশে তো বটেই বহির্বিশ্হেও যেখানে পেপার, জার্নাল আর পেটেন্ট মুখী গবেষণা এখন একরকম নিত্য নৈমত্তিক বেপার হয়ে দাড়িয়েছে. এখনো আমি বিভিন্ন উদাহরণে সার এর কথা বলি আমার আশ পাশের লোকজন কে যারা বিজ্ঞান এর চর্চা করেন. সার এর অধীনে ভবিশ্হতে কাজ করার ইচ্ছে মনে পোষণ করছি.

হিমু এর ছবি

ড: রব্বানির উদ্ভাবন অন্য কোনো নরাধম পেটেন্ট করে ফেললে কী হবে?

রায়হান আবীর এর ছবি

এটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন।

প্রাথমিক প্রমান হিসেবে অবশ্য পাবলিকেশন থাকে।

সম্পূরক প্রশ্নঃ পেটেন্ট করে সেটার সোর্স কোড থেকে শুরু করে, ব্যবহার সবকিছু উন্মুক্ত করে দেওয়াটা কী ভালো সমাধান হতে পারে?

আরও একটা ব্যাপার উঠে দাঁড়ায়। ধরা যাক, আমরা একটা যন্ত্র আবিষ্কার করলাম। সেট পেটেন্ট করা হলোনা এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো। এখন আমাদের কাছ থেকে সোর্সকোড নিয়ে আরেকজন জিনিসটা প্রস্তুত করলো। সেটা ঠিকঠাক নাও থাকতে পারে। এখন ঐ তৈরি করার যন্ত্রের ক্ষতির দায়ভার আইন অনুযায়ী আমাদের ঘাড়ে না আসলেও নৈতিকভাবে তো আসে। এটার সমাধান কী হতে পারে?

স্পর্শ এর ছবি

আরডুইনোর [১] মডেলটা দেখতে পারো। ওদের হার্ডওয়ারের ডিজাইন ও সফটওয়ার ওপেনসোর্স। কেউ চাইলে বানিয়ে বিক্রি করতে পারে। ওপেন সোর্স হার্ডওয়ার নিয়ে উইকিপিডিয়ার পেজটাও[২] ইন্টারেস্টিং।

আর প্রোডাক্টের মানের ব্যাপারটা ক্রেতা - প্রস্তুতকারক মিলে নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ, যে কেউ আমাকে বানিয়ে দিলেই হয়তো তার কাছ থেকে আমি কিনতে চাইবো না, যদিও সে দাবি করছে যে মূল স্পেসিফিকেশন অনুযায়ীই বানিয়েছে। আর মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট বাজারজাত করার আগে কিছু মাননিয়ন্ত্রণ ধাপ পেরিয়ে আসার কথা...

Arduino, for example, makes money largely through design consulting. By creating a design community around their products, they stay in touch with the latest developments. They have also registered their name as a trademark. Others may manufacture their designs, but they can't put the Arduino name on them. Thus they can distinguish their products from others by quality. [২]

এরকম ট্রেডমার্ক করে রাখা যেতে পারে, যার ফলে কিছুটা হলেও ট্রেডমার্কড প্রোডাক্ট আর নন্ট্রেডমার্কড প্রোডাক্টের ব্যাপারটাতে ক্রেতা/ব্যবহারকারী সচেতন হতে পারে। নৈতিক দায়ও কমে তাতে কিছুটা।

[১] http://en.wikipedia.org/wiki/Arduino
[২] http://en.wikipedia.org/wiki/Open-source_hardware


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রায়হান আবীর এর ছবি

অরডুইনোর ব্যাপারটা ভুলে গেছিলাম। ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য হাসি

নিটোল এর ছবি

অসম্ভব অনুপ্রাণিত হয়েছি স্যারের টক শুনে। সেদিন সরাসরি তাঁর বক্তব্য শুনতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।

_________________
[খোমাখাতা]

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এতোসবের মধ্যেও রব্বানী স্যারের মতো মানুষরা আছেন বলেই আমরা এগিয়ে যাবো ঠিকই। চলুক
স্যারকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা।

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পরিবর্তনশীল এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো লেখাটা।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

লেখাটা খুবই ভালো লাগলো। চলুক

সেদিন স্যারের টেড-টক শুনে দুর্দান্ত লেগেছিল!

কুমার এর ছবি

শ্রদ্ধা জানাই স্যারকে।

তানভীর এর ছবি

চলুক আমাদের আরো বেশি বেশি রব্বানী স্যারের প্রয়োজন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।