অনুবাদ কারখানা ||| ২ |||

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: রবি, ০৬/১২/২০০৯ - ৯:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পায়রা - আইজ্যাক বাসেভিস সিঙ্গার

(সম্পূর্ণ)

বউ মারা যাবার পর প্রফেসর ভ্লাদিস্লাভ ইবেজচুটসের কাছে থাকে দুটো জিনিস। বই আর পাখি। ওরজেল পোলস্কির ভাই-ভাই সংঘের ছাত্রদের মাস্তানি সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়ে ভারসাভা ভার্সিটি থেকে ইতিহাসের অধ্যাপনা থেকে ইস্তফা নেন। ছেলেগুলো ভ্রাতৃসংঘের সোনালী এম্ব্রয়ডারির টুপি পরে ক্লাসে আসে। হাতে ছড়ি ঘোরায়। আর থাকে বাহাসের জন্য মুখিয়ে। প্রফেসর বেশির ভাগ সময় তাদের আলাদা করে চিনতে পারতেন না। লালচে মুখ। ফুস্কুরিওয়ালা ঘাড়। চ্যাপ্টা নাক। চৌকোনা থুতনি। প্রায় সবার। ইহুদিদের প্রতি ঘৃণার ঐক্য দেখে মনে হয়, সব এক পরিবারের।ইহুদি ছাত্রদের জন্যে কিছু গেটৌ বেঞ্চি আছে। সেখানে বসতে বাধ্য করানোর সময় সবাই একসাথে চিল্লাতো। যেন একই সুর বাঁধানো গলা।

ভ্লাদিস্লাভ অবসর নেয়ার পর পেনশন পেলেন সামান্য। অবশ্য বাড়ি ভাড়া আর খাওয়ার জন্যে এরচে বেশি কী লাগে। এই বুড়ো বয়সে অন্য কোন খরচ নেই। সাথে থাকে এক কাজের মহিলা। টেলকা। প্রায় অন্ধ। জাতে পোলিশ। আগে কৃষিকাজ করতো। বেশ কমাস ধরে তার বেতন দিতে পারছেন না প্রফেসর। টেলকা দুজনের জন্য কিছু স্যুপ আর স্টু রান্না করে। বুড়ো বুড়ির ফোকলা দাঁতে খেতে কোন সমস্যা হয় না। তাঁদের নতুন কোন জামা-কাপড় কি জুতা কিছুই কেনা লাগে না। স্যুট, কোট, ফারের জামা আর মিসেস ইবেজচুটসের অনেক কাপড় পড়ে আছে অনেক দিন ধরে। সব খুব সযত্নে ন্যাপথেলিন দিয়ে প্যাক করে রেখে দেয়া আছে।

বছরের পর বছর প্রফেসরের লাইব্রেরি আকারে বেড়ে যায়। চারদিকের দেয়াল মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত বইয়ের সেলফে ঠেসে গেছে। কাপড়ের আলমারিতে, ট্রাঙ্কে, সেলারে, চিলেকোঠায় কেবল বই আর পুঁথি। মিসেস ইবেজচুটস বেঁচে থাকতে কিছুটা গুছিয়ে রাখতেন। ঝেড়ে মুখে রাখতেন বইয়ের উপর ধুলোর চরা । কোন পুরানো নথি কাজে না লাগলে, জ্বালানি হিসেবে স্টোভে দেয়া হতো। তাঁর মৃত্যুর পর সব এলোমেলো হয়ে গেল। এর মধ্যে প্রফেসর কোত্থেকে এক ডজন পাখির খাঁচা কিনে আনেন। তোতা, টিয়া, ক্যানারি। সবসময় পাখিদের খুব ভালবাসেন তিনি। খাঁচার দরজা সবসময় খোলা থাকে, পাখিরা যেন স্বাধীন হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে। টেলকা অভিযোগ করে। পাখির এসব ইয়ে সে পরিষ্কার করতে পারবে না। প্রফেসর বলেন, ‘দূর বোকা, খোদার হাতে সৃষ্টির কিছুই নোংরা না।’

প্রফেসর এসব করেই থেমে থাকেননি। রাস্তায় কিছু পায়রাকে নিয়ম করে খাওয়াতে যান। প্রতিবেশীরা প্রতিদিন সকাল এবং দুপুরে তাঁকে দেখে পাখিদের খাবারের থলি নিয়ে যেতে। ছোটখাট গড়নের লোক প্রফেসর। বাঁকানো পিঠ। মুখে হালকা দাঁড়ি, সাদা থেকে সেগুলো হলদেটে মেরে গেছে। এবড়ো থেবড়ো নাক। একজোড়া পুরু চশমার পেছনে জঙ্গুলে ভুরুর নিচে বাদামী চোখ বেশ বড় দেখায়। সবুজ ওভারকোট আর সামনে গোলাকার দেখতে ইলাস্টিকের জুতা বছরের পর বছর পরে আসছেন। হাল ফ্যাশানের ধার দিয়ে এসব যায় না। মাথায় দেয়া ছোট টুপি থেকে অগোছালো সাদাচুল এদিক সেদিক উঁকি মারে। সামনের দরজা দিয়ে প্রফেসরের ঢোকার মুহূর্ত, এমনকি প্রফেসরের ‘দুস-দুস-দুস’ করে ডাকার আগেই পায়রার ঝাঁক চারদিক থেকে নেমে আসে। চর্মরোগ হাসপাতালের আশেপাশের গাছে আর পুরানো টালির ছাদে এরা অপেক্ষা করে। প্রফেসর যে বাড়িতে থাকেন সেটার রাস্তা শুরু হয়েছে নোয়ু সোয়েট বুলেভার্ড থেকে। রাস্তা কিছুটা হেলে সরে গেছে ভিস্তুলার দিকে। এখানে গরমকালে খোয়ার মধ্যে ঘাস গজায়। খুব একটা ভিড় দেখা যায় না রাস্তায়। মাঝে মাঝে সিফিলিসে মারা যাওয়া কোন লাশকে নিয়ে শবযান আসলে কিংবা নানা যৌনরোগে আক্রান্ত দেহপসারিনীদের নিয়ে যাবার জন্য পুলিশের গাড়ি ঢুকলে রাস্তায় খানিক জ্যাম লাগে।বেশির ভাগ বাসিন্দাই বুড়াবুড়ি। এরা খুব একটা বাইরে বেরোয় না। পায়রারা নগরীর কোলাহল থেকে কিছুটা বাঁচে। এখানে এসে।

পায়রাদের খাওয়ানো অনেকটা চার্চে কিংবা সিনাগগে যাওয়ার মতো। টেলকাকে বলেন প্রফেসর। ঈশ্বর প্রশংসা শোনার জন্যে উম্মুখ নন। কিন্তু পায়রা সেই ভোর থেকে খাবার পাবার আশায় বসে থাকে। ঈশ্বরকে সেবা করতে চাও, তাঁর সৃষ্টিকে সেবা করো।

ক্ষুধার্ত পায়রাদের খাইয়ে আনন্দ পান প্রফেসর। আর তাদের কাছ থেকে শেখারও অনেক আছে। তালম্যুডের এক জায়গায় তিনি পড়েছিলেন- ইহুদীরা অনেক দিক থেকে পায়রাদের মতো। এই তুলনার মর্ম অনেক পরে তিনি বুঝেন। টিকে থাকার জন্য পায়রাদের হাতে কোন অস্ত্র নেই। মানুষের ছুঁড়ে দেয়া খাবারের উপর নির্ভর করে থাকে। শব্দে ভয় পায়। ছোট্ট কোন কুকুরছানা তাড়া করলে উড়ে পালায়। চড়ুই যখন ভাগের খাওয়া খেয়ে যায়, তাড়ায় পর্যন্ত না। পায়রার মতো ইহুদিরাও শান্তি, সহাবস্থান কি অন্যের ভালো মানুষির উপর ভর করে বাঁচে। তবে সব সমীকরণের ব্যতিক্রম আছে। পায়রাদের মধ্যে। ইহুদিদের মধ্যে। এদের নিজেদের গোত্রের বাইরে যুদ্ধংদেহী রূপের কেউ কেউ আছে। অন্যদের জোর করে তাড়িয়ে তাদের ভাগের খাওয়া কেড়ে খেয়ে ফেলে। প্রফেসর ইবেজচুটসের ভার্সিটি ছাড়ার পেছনে এন্টি-সেমিটিক ছাত্ররা একমাত্র কারণ নয়। কিছু ইহুদী কম্যুনিস্ট ছাত্র ইহুদীদের প্রতি ঘৃণাকে কাজে লাগাতো তাদের কিছু প্রপাগান্ডা হাসিলের জন্য।

দীর্ঘদিন ধরে প্রফেসর ইবেজচুটস পড়েছেন, পড়িয়েছেন, আর্কাইভ ঢুঁড়েছেন এমনকী সাইন্স জার্নালে লিখেছেন। খুঁজতে চেয়েছেন ইতিহাসের কোন দর্শন, কোন না কোন অর্থ কিংবা সূত্র।যা থেকে বুঝে নেয়া যাবে মানুষ কোন দিকে দৌঁড়াচ্ছে বা কেনই বা একের পর এক যুদ্ধের দিকে মানুষ এগোয়। একটা সময় ঘটনার বস্তুগত দিকে তাঁর দৃষ্টি আটকে ছিল। লুক্রিশাস, দিদেরো, ভোগ, ফ্রয়েরবাখকে পছন্দ করতেন। এমনকী কার্ল মার্কসের কথাও বিশ্বাস করতেন। যৌবনের সে দিন তাড়াতাড়ি কেটে গেছে। এখন তাঁর বিশ্বাস গিয়ে ঠেকেছে এসবের প্রবল বিরুদ্ধ শিবিরে। প্রকৃতির খেয়াল বোঝার জন্য কিছুতে বিশ্বাসী হবার দরকার নেই। তথাকথিত উদ্দেশ্যবাদের নামে সত্য খোঁজা কিংবা বিজ্ঞানের নামে ট্যাবু- কিছুই দরকারি না। হ্যাঁ প্রকৃতির কিছু একটা কারণ থাকতে পারে, কিন্তু আমরা যা দেখি সেটা পুরাই বিশৃংখলা। ইহুদিদের প্রয়োজন সবারইঃ যীশুর, খ্রিস্টানদের, মুসলমানদের, একজন আলেকজেন্ডার দা গ্রেটের, একজন শার্লিমিনের, একজন নেপোলিয়ানের এমনকি হিটলারের। কিন্তু কেন? কার কী লাভ- ইঁদুরকে বিড়াল দিয়ে খাইয়ে, খরগোশকে বাজপাখির হাতে খুন করিয়ে কিংবা পোলিশ ভ্রাতৃসংঘের ছেলেদের হাতে ইহুদিদের মার খাইয়ে।

শেষের দিকে প্রফেসর ইতিহাস পড়া একদম ছেড়ে দেন। জীবনের শেষভাগে তিনি বুঝতে পারেন তাঁর আগ্রহ জীববিজ্ঞানে-প্রাণিবিজ্ঞানে। কিছু বই যোগাড় করেন প্রাণী আর পাখি বিষয়ে। চোখে গ্লুকোমা , ডান চোখে প্রায় কিছুই দেখেন না, তারপরেও পুরানো একটা মাইক্রোস্কোপ কিনে আনেন। এই পড়াশোনা কোন পেশার টানে না। ধর্মপ্রাণ ছেলেরা যেমন তালম্যুড পড়ে, মাথা নেড়ে, সুর করে করে - প্রফেসর অনেকটা সেভাবেই নিজের নৈতিক উন্নতি করেন। মাঝে মাঝে নিজের দাড়ি থেকে একটা টেনে ছিঁড়ে দেখেন মাইক্রোস্কোপে কেমন লাগে দেখতে। প্রত্যেকটা চুলের স্বতন্ত্র জটিল মেকানিজম। একটা পাতা, পেঁয়াজের কোন খোসা, টেলকার ফুলের টব থেকে নেয়া একটু মাটির মধ্যে এমন সৌন্দর্য আর সুর লুকিয়ে থাকে। প্রফেসর দেখে মুগ্ধ হন। তিনি বসে থাকেন তাঁর মাইক্রোস্কোপ নিয়ে। এদিকে ক্যানারিরা গান গায়। টিয়াগুলো কিচিরমিচির করে, কথা বলে, চুমু খায়। তোতারা বকবক করে। টেলকার গ্রাম্য ভাষায় একটা আরেকটাকে বকে। বান্দর। ধাঁড়ি। পেটুক। ঈশ্বরের কল্যাণচিন্তায় তো পুরা আস্থা রাখা যায় না। কিন্তু ঘাস ,মাছি ,কীট এসবের মধ্যে ঈশ্বরের জ্ঞানের দেখা মিলে।

টেলকা রুমে ঢোকে। ছোট গড়নের মহিলা। ধূসর খড়কুটোর মতো পাতলা চুল মাথায়। ছেঁড়া একজোড়া চপ্পল পায়ে। রং উঠে গেছে এমন একটা জামা পড়ে থাকে সারাক্ষণ। গাল বেশ লম্বাটে। চোখজোড়া বিড়ালের মতোন সবুজ রংয়ের। এক পা টেনেটেনে সে হাঁটে। তার শরীরের গাঁটে গাঁটে ব্যথা। বিভিন্ন হাতুড়ে ডাক্তারের মলম লাগিয়ে এসব ব্যথা কমানোর চেষ্টা করে। সময় পেলে চার্চে যায়। সন্তদের জন্যে মো্মবাতি জ্বালাতে।

‘আপনার জন্য দুধ জ্বাল দিয়েছি।’
‘কিছু লাগবে না।’
‘তাহলে কফি গুলিয়ে দেই।’
‘টেলকা লাগবে না কিছু। বললাম তো।’
‘এভাবে থাকলে গলা শুকিয়ে যাবে।’
‘কোথায় লেখা আছে বলতো, গলা ভিজিয়ে রাখা দরকার।’

টেলকা আর উত্তর করে না। কিন্তু যায় না। মিসেস ইবেজচুটসের মৃত্যুশয্যায় সে কথা দিয়েছে, প্রফেসরের কোন অযত্ন হতে দিবে না। খানিক বাদে প্রফেসর চেয়ার ছেড়ে উঠেন। একটা বিশেষ বালিশ নিয়ে বসেন যাতে তাঁর শূলের ব্যাথা বেড়ে না যায়।

‘টেলকা, এখনো দাঁড়িয়ে? তুমি দেখি আমার স্বর্গত স্ত্রীর মতো নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ছো। মে সী রেস্ট ইন পীস।’
‘ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।’
‘ধুরো, ওষুধ। বোকা মেয়ে, কোন হার্ট সারাজীবন পাম্প করে না।’

প্রফেসর তাঁর ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা ‘পোল্যান্ডের পাখি’ বইটার উপর রাখেন। তারপর পাখিদের দেখতে যান।রাস্তার পায়রাদের খাওয়ানোতে অনেক আনন্দ। কিন্তু খাঁচা খোলা রেখে বাসার মধ্যে এভাবে পাখি রেখে দেয়া অনেক দায়িত্বের । টেলকার জন্য এতোসব পরিষ্কার করা প্রায় দুঃসাধ্য। তার উপর প্রতিদিন কোন না কোন খারাপ কিছু ঘটছে। পুরুষ পাখিগুলো ঝগড়া করে। মেয়েগুলো সদ্য পাড়া ডিম ভেঙ্গে ফেলে। প্রফেসর এক কাজ করেছিলেন- এক এক রুমে এক এক জাতের পাখি রেখেছিলেন কিছুদিন। কিন্তু টেলকা তো ভুলোমনা, হয়তো দেখা গেল একটা দরজা সামান্য খোলা রেখে চলে গেছে। এখন বসন্তকাল। জানালা খোলা যায় না। ঘরের ভেতরের বাতাস একই সাথে মিষ্টি পঁচা দ্বৈত গন্ধ ছড়ায়। পাখি সাধারণতঃ রাতে ঘুমায়। হয়তো কোন তোতা রাতে কোন পৈখিক দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠে অন্ধকারে অন্ধের মতো উড়ে বেড়ালো। রাতে তাই বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয় , কেউ যেন চোট না পায়। সামান্য কিছু দানাপানির বদলে কী শান্তি এরা প্রফেসরকে দেয়। একটা টিয়া কিছু শব্দ শিখেছে, এমনকি এক দুটো পুরো বাক্য। মাঝে মাঝে সে প্রফেসরের মাথার টাকে গিয়ে বসে, তাঁর কানের লতি কামড়ে ধরে, চশমার ডাঁটিতে লাফালাফি করে। কখনো কখনো লেখালেখি করার সময় প্রফেসরের তর্জনীর ওপর এক্রোব্যাটের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। পাখিদের সাথে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, এরা কতো জটিল চরিত্রের আর স্বতন্ত্র। অনেক বছর পাখিদের পর্যবেক্ষণ করা শেষেও এখনো এদের দুষ্টামি দেখে মুগ্ধ হন।

প্রফেসর খুশি। কারণ পাখিদের ওপর ইতিহাসের প্রভাব নেই। পিছনের কিছু এরা ভাবে না। নতুন নতুন সব এডভেঞ্চার ভুলে যায়।সহজেই। প্রতিটা দিন মানেই নতুন শুরুয়াত।ব্যতিক্রম ও আছে। এক টিয়া। সঙ্গীর মৃত্যুর পর একদম মনমরা হয়ে গেল। পাখির মধ্যেও আছে অন্ধপ্রেম, হিংসা, সংযম, খুনের বাসনা কি আত্মহত্যার চিন্তা। এদের ঘন্টার পর ঘন্টা দেখা যায়। পাখিদের মধ্যে ঈশ্বর প্রদত্ত এসব অনুভূতির নিশ্চয় কারণ আছে। পাখার গড়ন, ডিম পাড়া আর নানান বৈচিত্র্যময় বর্ণোচ্ছলতার পিছনে কিছু না কিছু আছে। কিভাবে এসব আসে? উত্তরাধিকার? ক্রোমোসোম? জিন?

স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রফেসরের এক অভ্যাস হয়ে গেছে স্বগোতক্তি করার। মাঝে মাঝে আবার কথা বলেন বহুকাল আগে মৃত কারো সাথে। সেদিন ডারউইনের সাথে কথা বলছিলেন, ‘না, চার্লস। আপনার থিয়োরি এই সমস্যার সুরাহা দিচ্ছে না। মঁসিয়ে লামার্ক, আপনারটাও চলে না।’

-------

দুপুরে ওষুধ খাওয়ার পর প্রফেসর তিসির বীজ, জওয়ার, শুকনা মটর দানা থলিতে ভরে বেরোন।পায়রাদের খাওয়ানোর জন্য। মে মাস অথচ বৃষ্টি হলো। ভিস্তুলার দিক থেকে বেশ ঠান্ডা বাতাস আসে। বৃষ্টি এখন নেই। সূর্যের আলো তার আসমানী কুঠার দিয়ে মেঘ ফালি করে উঁকি দেয়। প্রফেসর ইবেজচুটস ঢোকা মাত্রই পায়রাগুলো চারদিক থেকে ঝাঁপিয়ে নেমে আসে। হুড়াহুড়িতে উড়ে নামতে গিয়ে প্রফেসরের টুপি প্রায় ফেলে দেয় আর কি। এতো পায়রার খাবার তাঁর থলিতে নেই।খাবার তিনি ছড়িয়ে দেন যেন এরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না বাঁধায়। কিন্তু খানিক বাদেই হুটোপুটি লেগে যায়। জায়গা করে নিতে গিয়ে একটা আরেকটার ঘাড়ের উপর এসে নামা ধরে। অতো পাখির জায়গা করার মতো রাস্তাও চওড়া না।‘খুব খিদা বেচারাদের’- প্রফেসর বিড়বিড় করেন। খাবার বাড়িয়ে দিলেই এরা দলে ভারী হয়ে যায়। কোথায় যেন পড়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়াতে পায়রাদের সংখ্যা এতো বেড়ে গেছে, ভারে বাড়ির ছাদ ভেঙ্গে পড়েছে। প্রকৃতির নিয়মের সাথে চালাকি করে পার পাওয়া যায় না। আর এসব জীবকে ভুখা রাখতেও মন চায় না।

প্রফেসর ইবেজচুটস তাঁর সামনের ঘরে পাখির জন্য কিছু দানা রাখেন। সেখানে গিয়ে থলিটা আবার ভরলেন। ‘ওরা অপেক্ষা করলে হয়’- নিজেকে বলেন প্রফেসর। গিয়ে দেখেন পায়রারা সেখানেই আছে।‘থ্যাংক গড’।ঈশ্বরকে স্মরণ করলেন ভেবে খানিক বিব্রত হন। খাবার ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেন। হাত খুব কাঁপা শুরু করায় দানা পড়তে থাকে পায়ের আশেপাশে। সব পায়রা ডানা ঝাঁপটে হুড়াহুড়ি করা শুরু করে দেয় তাঁর কাঁধ, বাহুর পাশ দিয়ে । ঠোকর ও লাগে প্রফেসরের গায়ে। থলির এক কোনা ধরে টানাটানি আরম্ভ করে দেয় এক ডাকাবুকো পায়রা।

হঠাৎ কোত্থেকে এক পাথর এসে লাগে প্রফেসরের কপালে। প্রথমে ঠাহর করতে পারেন না কি হলো। পরে গায়ে এসে লাগে আরো দুটা পাথর। একটা কনুইতে, অন্যটা ঘাড়ে। সব পায়রা একসাথে উড়ে পালায়। তিনি কোনমতে ঘরে এসে পৌঁছেন। স্যাক্সোনি গার্ডেন এবং এর আশেপাশের এলাকায় ইহুদীদের উপর কিছু গুণ্ডার আক্রমণের কথা শুনেছিলেন। কিন্তু এরকম ঘটনা তাঁর সাথে আগে কখনো ঘটেনি। কপালের ক্ষত নাকি অপমান- কোনটাতে তাঁর বেশি জ্বলছে বুঝতে পারেন না। ‘এতো নীচে নেমে গেছি আমরা’- আপন মনে বলেন প্রফেসর। জানালা দিয়ে টেলকা দেখেছিল কী ঘটনা। রেগে আগুন হয়ে সে প্রফেসরের দিকে ছুটে গেল। সাহায্যের জন্যে। গাল দিতে দিতে ফোঁস ফোঁস করে সে রান্নাঘরে ঢুকে। একটা টাওয়েল ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে আনার জন্য। প্রফেসর টুপি খুলে মাথার ফোলাটা ধরে দেখেন। টেলকা তাঁকে শোবার ঘরে নিয়ে যায়। কোট খুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। ‘এদের শায়েস্তা কর, ঈশ্বর, এদের শায়েস্তা কর। নচ্ছারগুলো নরকে পুড়ে মরুক। কুষ্ঠ হোক বদমায়েশগুলোর।’
‘টেলকা। চুপ কর।’
‘এই আমার পোল্যান্ড! আগুনে পুড়ে খাক হোক সব।’
‘পোল্যান্ডে অনেক ভালো লোক ও আছে।’
‘হ্যাঁ।হ্যাঁ। যতোসব ফেরেববাজ, মাগী আর কুষ্ঠরোগীর আখড়া।’
টেলকা চলে যায়। বোধহয় পুলিশকে ফোন করতে। প্রফেসর শুনতে পান টেলকা প্রতিবেশীদের চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে অভিযোগ শোনাচ্ছে। কিছু সময় বাদে সব শান্ত হয়ে আসে। পুলিশ বোধহয় আনতে পারেনি, একাই ফিরে আসে। রান্নাঘরে ঘুরে ঘুরে বিড়বিড় করে গালাগাল করতে থাকে। প্রফেসর চোখ বন্ধ করেন। ‘আজ হোক কাল হোক, সবু বুঝতে হবে চামড়ার মূল্যে। অন্যান্য ভিক্টিমদের চেয়ে আমার অবস্থা কোন দিক দিয়ে ভালো? এটাই ইতিহাস। যা নিয়ে আমি সারা জীবন কাটালাম।’

একটা হিব্রু শব্দ অনেকদিন ধরে মাথায় আসছিলো না। আজ প্রফেসরের মাথায় এসে গেলো দুম করে। রেশাইয়িম। মানে শয়তান। ইতিহাস বানানো একটা ইবলিশের কাজ।

প্রফেসর অবাক হয়ে গেলেন। যে প্রশ্নের উত্তর তিনি বছরের পর বছর ধরে খুঁজছিলেন আজ উত্তরটা মাথায় খেলে গেল এক লহমায়। নিউটন যেমন আপেল পড়া থেকে বুঝে গেছিলেন, তেমনি গুণ্ডাদের ছোঁড়া পাথর থেকে ইবেজচুটস সর্বকালের জন্য এক সত্যের আবিষ্কার করে ফেলেন। কথাটা হুবহু পুরানা টেস্টামেন্টে আছে। প্রতি জেনারেশনে কিছু লোক ভুল পথে যাবে, দাঙ্গার দিকে এগোবে। এদের থামানো যাবে না। যুদ্ধ হোক, বিপ্লব হোক, এক সামিয়ানার নিচে হোক আর না হোক, শ্লোগান যাই হোক না কেন এদের লক্ষ্য একটাই- ইবলিশকে চাঙ্গা করা, কষ্ট বাড়ানো আর রক্তের হোলিখেলা। লক্ষ্য একই থাকায় মেসোডেনিয়ার আলেস্কেন্ডার ও হামিলকার, চেঙ্গিস খান আর শার্লামিন, শেমিলনিস্কি ও নেপোলিয়ান, রোবেস্পিয়ার ও লেনিনকে এক করে ফেলা যায়। একদম সহজ? মহাকর্ষের সূত্র ও অনেক সহজ ছিল, বের করতে তাই এতো বছর লেগে গেছিল।

সন্ধ্যা নেমে আসে। ভ্লাদিস্লাভ ইবেজচুটসের তন্দ্রা এসে যায়। ঘুমিয়ে পড়ার আগে নিজেকে বলেন, ‘তাও, হিসাব বোধহয় এতো সহজ না।’

রাতের দিকে টেলকা বরফ দিয়ে প্রফেসরের ব্যথার জায়গাগুলো মুছে দেয়। ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছিল। প্রফেসর যেতে দিন না। বেশী জানাজানি হলে কারো সামনে তাঁর ইজ্জত থাকবে না। টেলকা তাঁর জন্য কিছু ওটমিল করে। প্রতি রাতে শোয়ার আগে প্রফেসর সব খাঁচা চেক করেন। পরিষ্কার পানি দেন। দানা কিংবা সবজি দিয়ে রাখেন। বালি পাল্টে দেন। আজ টেলকার উপর ভরসা করলেন। সে বাতিগুলো নিভিয়ে দেয়। কিছু টিয়া তাঁর শোবার ঘরের খাঁচাগুলোর মধ্যে আছে। বাকিগুলো পর্দার রডে ঘুমাচ্ছে। প্রফেসর খুব ক্লান্ত। কিন্তু ঘুম আসে না। তাঁর ভালো চোখটার আশেপাশে ফুলে গেছে। চোখের পাতা নাড়ানো যাচ্ছেনা। পৃথিবী যে শক্তিতে ভর করে আছে তার কাছে প্রার্থনা করলেন যেন পুরো অন্ধ না হন। অন্ধ হবার চেয়ে মরা ভালো।

ঘুমিয়ে যাবার পর তিনি দেখতে লাগলেন অদ্ভুত অপরিচিত সব জায়গা। পাহাড়, উপত্যকা, বড় বড় গাছওয়ালা বাগান, ভিনদেশী ফুলের সারি। ঘুমের মধ্যে নিজেকে প্রশ্ন করেন -‘কোথায় আমি? ইতালিতে? পারস্যে? আফগানিস্থানে?’ নিচের এলাকা সরে সরে যাচ্ছিল, যেন বিমানে আছেন। অথচ তা কিন্তু না। শূন্যে ভেসে থাকার মতো অনুভূতি। ‘পৃথিবীর মহাকর্ষ কাজ করছে না কেন? কি হচ্ছে? বাতাস নেই কেন? টেঁসে যাবো নাকি?’

জেগে উঠলেন তিনি। প্রথম কয়েক মূহুর্ত বুঝলেন না কোথায় আছেন। একটা চাপ অনুভব করেন।‘মাথায় ব্যান্ডেজ কেন?’ তখন সব মনে পড়ে যায়।‘ হ্যাঁ, শয়তানেরা ইতিহাস বানিয়েছে। আমি ইতিহাসের মধ্যে নিউটনের সূত্র আবিষ্কার করেছি। আমার এই কাজ আবার লিখতে হবে।’ শরীরের বাম দিকে তিনি ব্যথা বোধ করলেন। বুকের ভেতরের ব্যথার অনুভূতিকে শুনতে চাইলেন। এনজাইনা পেকটোরিস। এই এটাক হলে কিছু স্পেশাল বড়ি আছে। সেগুলো রাখা আছে স্টাডির ড্রয়ারে। তাঁর স্ত্রী স্টেফানি তাঁকে একটা বেল দিয়েছিলেন, রাতে অসুস্থ বোধ করলে টেলকাকে ডাকার জন্য। কিন্তু প্রফেসর সেটা ব্যবহার করলেন না। বাতি জ্বালাতে গিয়ে জ্বালালেন না। পাখিগুলো জেগে উঠতে পারে, আওয়াজ শুরু করে দিবে। পুরা দিনে কাজ আর এই ঘটনায় টেলকা নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত। এই আক্রমণ তাঁকে যতোটা না আহত করেছে, টেলকাকে করেছে তার চেয়ে বেশী। রাতের কয়েক ঘন্টার ঘুম ছাড়া তার আর কী আছে। স্বামী, সন্তান, আত্মীয়, বন্ধু কিছুই নেই। প্রফেসর তাঁর সম্পত্তির উইল করে দিয়েছেন টেলকার নামে। কিন্তু এগুলোর কি কোন মূল্য আছে? তাঁর অপ্রকাশিত পান্ডুলিপির কিই বা দাম? অথবা তাঁর সূত্রের …

প্রফেসর ইবেজচুটসের মনে হলো ব্যথাটা একটু কমে এসেছে। তারপর হঠাৎ মনে হলো তাঁর হার্টে, কাঁধে, বাহুতে, পাঁজরে তীব্র তীব্রতম ব্যথা নেমে এসেছে। তিনি প্রবলভাবে চাইলেন বেল চিপতে কিন্তু সেখানে আঙ্গুল পৌঁছার আগেই নিস্তেজ হয়ে যায়। শ্বাস নিতে চাইলেন আপ্রাণ, পারলেন না। একটা শেষ চিন্তা তাঁর মাথায় আসলো। পায়রাগুলোর কী হবে।

পরদিন খুব ভোরে টেলকা প্রফেসরের ঘরে ঢোকে। প্রফেসরকে চেনা যাচ্ছিল না। যেন তিনি না, তাঁর জায়গায় কিম্ভুত একটা পুতুল পড়ে আছে। মাটির মতো হলদেটে, হাড়ের মতো শক্ত, মুখ হাঁ করা, বিকৃত নাক, দাড়ি খাড়া খাড়া, এক চোখের পাতা পুরো বোঁজা, অন্য চোখে অপার্থিব হাসি। মোমের আঙ্গুলের একটা হাত পড়ে আছে বালিশের উপর।

টেলকা চিৎকার করে উঠে। প্রতিবেশীরা দৌড়ে এলো। ডাকা হলো এম্বুলেন্স। সাইরেন শোনা যায় গাড়ি আসার। কচি ডাক্তার রুমে ঢুকে বিছানার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নাড়লেন, ‘আমাদের আর কিছু করার নেই।’
‘ওরা প্রফেসরকে মেরে ফেললো। ওরা তাঁকে পাথর ছুঁড়ে মেরেছে। শয়তানগুলো মরবে। সব খুনী। কুষ্ঠ হবে ওদের। কলেরায় মরবে সব।শয়তান।ইবলিশ।’ টেলকা বলে যেতে থাকে।
‘কারা?’ ডাক্তার জিজ্ঞেস করেন।
টেলকা উত্তর করে, ‘সব আমাদের পোলিশ খুনি। ডাকাত। পশু।’
‘উনি ইহুদি?’
‘হ্যাঁ।’
‘ও …’

বেঁচে থাকার সময় প্রফেসরের খোঁজ কেউ করতো না। মৃত্যুর পর তাঁর খ্যাতি বেড়ে যায়। ভারসাভা বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস সমিতি সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ভ্রাতৃসংঘ,সমিতি তাদের প্রতিনিধি পাঠায়। ক্রেকো, লেম্বার্গ, ভিলনা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বার্তা আসে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন তাঁরা প্রতিনিধি পাঠাবে। প্রফেসরের ঘর ফুলে ফুলে সয়লাব হয়ে যায়। শিক্ষক, লেখক, ছাত্ররা তাঁর লাশ তদারকি করে। প্রফেসর ইহুদি। তাই ইহুদি দাফন সমিতি মৃতের সদগতির শ্লোক পড়াতে দুজন লোককে পাঠায়। পাখিগুলো ভয় পেয়ে উড়তে লাগে। এক দেয়াল থেকে অন্য দেয়ালে। এক বইয়ের সেলফ থেকে অন্যটাতে। ল্যাম্পের উপর, কার্নিশ কি ড্রেপারির উপর গিয়ে বসে পড়ে। টেলকা চেষ্টা করে তাদের খাঁচার মধ্যে ঢোকাতে কিন্তু এরা দূরে সরে সরে যায়। দরজা খোলা থাকার সুযোগে এক দুটা পাখি উড়ে বাইরে চলে যায়। একটা তোতা ভয় আর তিরষ্কারের সুরে একই শব্দ বারবার বলে।অবিরাম টেলিফোন বেজে চলে। কবরস্থানের জন্য ইহুদি কম্যুনিটির এক অফিসার টাকা জমা দিতে বলে। প্রফেসরের প্রাক্তন ছাত্র এক পোলিশ মেজর ফোনে তাদের কড়া ধমকি দেন এমন আচরণ করার জন্য।

পরদিন সকালে একটা ইহুদি শবযান রাস্তায় বের হয়। ঘোড়াগুলোর পুরো শরীর কাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া। কেবল চোখের অংশটুকু বাদে। কফিনটা বের করা হয় এবং শোভাযাত্রাটি যখন তামকি এভুন্যু এবং ওল্ড সিটির দিকে এগোতে থাকে, দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রা ছাদের উপর ওড়াওড়ি করছে। সংখ্যায় বেড়ে গিয়ে প্রায় আকাশ ঢেকে ফেলে।বিল্ডিংয়ের মাঝের সরু রাস্তা দিনের বেলাতে পুরো অন্ধকার হয়ে যায়।যেন সূর্যগ্রহণ। তারা কিছুক্ষণ চুপচাপ ভেসে থাকে তারপর আবার একসাথে লোকের মিছিলকে ঘিরে ঘুরতে থাকে।

ফুলে ঢাকা শবযানের পেছনে যারা আসছিল, অবাক হয়ে উপরে তাকায়। রাস্তার লোক, অসুস্থ বা বুড়ো যে কয়জন বেরিয়েছিল প্রফেসরকে তাদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে- চোখের সামনে ঘটা অলৌকিক ঘটনা দেখতে লাগে। কালো শালের মধ্য থেকে হাত বের করে টেলকা চিৎকার করে ওঠে-‘হা, যীশু।’

ব্রভারনা সড়কে আসার আগ পর্যন্ত পায়রার দল শবযাত্রাকে এসকোট করে রাখে ।চক্রাকারে ওড়ার সময় সূর্য আর ছায়ার অদল বদল ঘটে। কখনোবা রক্তের মতো লালচে। না হয় সীসার মতো কালো। মিছিলের সাথে সাথে তারা উড়ে উড়ে গেল। এতটুকু আগেও না আবার পরেও না। ফুরমান্সকা আর মেরিনস্তাদের মোড়ে পায়রার দল শেষ চক্কর দিয়ে একসাথে উড়ে ফিরে যায়। তাদের অকৃত্রিম বন্ধু্র অন্তিম যাত্রায় উড়ন্ত বন্ধু হয়ে তারা শোভাযাত্রায় ছিল।

পরদিন সকালে হেমন্তের ছোঁয়া লাগে চারপাশে। আকাশ কেমন জানি জংধরা। চিমনির কালো ধোঁয়া উড়ে এসে জমে ছাদের টালিতে। এক পশলা মিহি বৃষ্টি হয়। রাতে কারা যেন প্রফেসরের দরজায় স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকে দিয়েছিল। টেলকা থলিতে দানা ভরে পায়রাদের খাওয়ানোর জন্য বের হয়। তবে মাত্র কয়েকটা পায়রা খেতে নামে। খাবার খুঁটতে থাকে ইতস্ততঃ ভাবে। যেন নগরীতে পাখিদের উপর নিষেধাজ্ঞা নেমে এসেছে বা ধরপাকড় শুরু হবে সব পায়রার- এমন এক আজগুবি ভয়ে ভীত। পীচের নর্দমা থেকে পঁচা গন্ধ আসে। আর বাতাসে ভেসে বেড়ায় আসন্ন সর্বনাশের তীব্র পুঁতিগন্ধ।

( দ্বিতীয় ড্রাফট্)

আইজ্যাক বাসেভিস সিঙ্গার

জন্ম নভেম্বর ২১, ১৯০২; ভারসাভা, পোল্যাণ্ডে।জাতে ইহুদি। তিনি ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার। তবে ছোটগল্পকার হিসেবে তাঁর খ্যাতি বেশি। লেখালেখি করেছেন ইদিশ ভাষায়। তার লেখা বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে ইহুদি বিশ্বাস প্রবেশ করিয়ে নিরীক্ষা করতেন সিঙ্গার। সাহিত্যে নোবেল পান ১৯৭৮ সালে। সিঙ্গার পাখিপ্রেমিক। আর নিরামিষাশী। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ আমার মনে হয় প্রাণীদের সৃষ্টি হয়েছে তাদেরকে মেরে খাওয়ার জন্য নয়। আমার দুটো পাখি আছে, দেখতে কতো সুন্দর- অথচ কেউ তাদের মেরে খেয়ে এই চিন্তা মাথায় আসলে আমি অসহ্য লাগে। খাবার হবার বদলে তারা আমাদের শিক্ষক ও হতে পারে।’ পায়রা গল্পটি লেখা হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। এর বছর চারেক আগে সিঙ্গার পুরা নিরামিষাশী হয়ে যান। মৃত্যু জুলাই ২১, ১৯৯১; আমেরিকার ফ্লোরিডায়।

অনুবাদ কারখানা ||| ১ |||


মন্তব্য

নিবিড় এর ছবি

মূল গল্পটার জন্য আইজ্যাক বাসেভিস কে স্যালুট দিতে ইচ্ছে করছে। উনার আর কোন লেখাই কখনো পড়া হয় নি এটাই প্রথম এবং এই গল্পটা দারুণ লাগল। আশা করি আগামীতে উনার আর অনুবাদ পাওয়া যাবে আপনার হাত দিয়ে।

আর এইবার আপনার অনুবাদের প্রসংগে আসি, যদিও গত পর্বে আপনার অনুবাদের স্টাইল নিয়ে কথা হয়েছে দেখলাম কিন্তু আমার মতে এই গল্পের জন্য এই স্টাইলটাই একদম মানানসই। একজন বৃদ্ধ প্রফেসর কে বর্ণনা করার জন্য কিছুটা আড়ষ্ঠ ভাষা ভঙগীই মনে হয় ভাল। পাঠক হিসেবে আরেকটা কথা না বললেই না সেটা হল এরকম গল্পের জন্য দুই দিন অপেক্ষা করতে ভাল লাগে না তাই আশা করি পরে এই লেখা গুলো এক পর্বেই নিয়ে এসে পাঠকের অপেক্ষা কে দীর্ঘায়িত করবেন না হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

গল্পটা কিছুটা বড়। তাই দুই কিস্তিতে দিতে চেয়েছিলাম। সিঙ্গার গুরু লোক। কিছু কিছু গল্প এতো ভালো। কিন্তু অনুবাদ করতে ঠেলা আছে। আর অনুবাদ বেশ পীড়াদায়ক কাজ।

বেশি বড় না হলে, এরপর যদি কোন অনুবাদ করি এক কিস্তিতে নামাতে চেষ্টা করবো।

এনকিদু এর ছবি

খুব দ্রূত অনুবাদ করে ফেললেন দেখি ! খুব ভাল লাগল সবটা পড়ে । অনুবাদ, অনুবাদক, মূল লেখা, মূল লেখক সম্পর্কে আমি নিবিড়ের সাথে সহমত ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

গল্পটা মাস্টারপিস।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পড়লাম এবং মন্তব্যের জন্যে লগিন করলাম। ...
অনুবাদ ভালো লেগেছে- আমার মনে হয় এ জাতীয় অনুবাদের সময় ভাষাটা এরকমই হওয়া উচিৎ। সরল বাংলা ভাষায় এই জাতীয় গল্প সচরাচর বাংলাভাষী লেখকেরা লেখেন না বলেই হয়তো।

সিঙ্গার আমার অন্যতম প্রিয় ছোট গল্পকার। মূল ভাষায় তো পড়ি নাই- যখন যেখানে যার অনুবাদ পেয়েছি- পড়ে নিয়েছি।
... আপনার কাছ থেকে আরো অনুবাদের আশায় রইলাম।

_________________________________________

সেরিওজা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সিঙ্গারের গল্প কি কেবল দিলওয়ার অনুবাদ করেছেন? বাজারে উনার অনুবাদ ছাড়া আর কোন বই কী পাওয়া যায়। দিলওয়ারের বইটা হাতে থাকলে ভালো হতো।

ভাষাটা এখানে এরকম হলো। অন্য গল্পে ভাষা পাল্টাতেও পারে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আমার সংগ্রহে দিলওয়ার হাসানের বইটিই আছে। তবে বিচ্ছিন্ন নানা সংকলনে ওনার কিছু লেখা পেয়েছি-সঙ্গত কারণেই তাই অনুবাদকের নাম মনে রাখা হয়নি।

_________________________________________

সেরিওজা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

থ্যাংকু, সুহান। তুমি বাসেভিস ভক্ত জেনে খুব ভালো লাগলো।

মোরশেদ এর ছবি

গল্পটা অসম্ভব রকমের ভালো একটা গল্প। সিঙ্গারের নাম আগে কখনো শোনা হয় নি।

উনার আরো গল্পের অনুবাদ আপনার কাছে আশা করছি।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হ। গল্পটা ব্যাপক ভালো।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আরো অনুবাদ... দেঁতো হাসি

.
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দেঁতো হাসি

দ্রোহী এর ছবি

দারুণ লাগলো।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

স্নিগ্ধা এর ছবি

গল্প এবং গল্পের অনুবাদ - দুইই চমৎকার লাগলো! আরও অনুবাদ করুন, এরকম অচেনা (আমার কাছে সিঙ্গার তাই ছিলেন) কিন্তু দারুণ লিখিয়েদের সাথে পরিচিত হবার আরও সু্যোগ যেন পাই, এই অনুরোধ রইলো হাসি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দিদিভাই, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সময় পেলে আরো অনুবাদ করবো।

হিমু এর ছবি

মূল গল্পে Vladislav Eibeschutz এর বাংলা প্রতিবর্ণীকরণ সঠিক হবে ভ্লাদিস্লাভ আইবেশুৎস।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

নামের সঠিক উচ্চারণ বাংলায় আনতে খানিক গিয়ানজাম আছে। যে কয়টা পেরেছি উচ্চারণ নেটে দেখে তারপর বাংলায় লিখেছি।যে কয়টা পাইনি বানানের দিকে তাকিয়ে করা ছাড়া উপায় ছিল না। এদিকে এসব করতে গিয়ে গুগলবহিতে একটা মারাত্মক বই পেয়ে গেলাম।

ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

এই ক্ষেত্রে কোনো গিয়ানজাম নাই। ইডিশ জার্মানের বেশ নিকটবর্তী, আর আইবেশুৎস নামটিও ইডিশ। আমার কথায় প্রত্যয় না হলে আপনি নিঃসন্দেহ হবার জন্যে কোনো জার্মান বা পোলকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আইবেশুৎস ঠিক করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ দিছিলাম। ধন্যবাদটা একটু অস্পষ্ট ভাবে দেয়া হয়েছিল বোধহয়। চোখ টিপি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্পের ভাষার ব্যাপারে গত পর্বে আমি যে মত প্রকাশ করেছিলাম আমি সেই মতেই স্থির। গল্পের শেষাংশের ভাষা অপেক্ষাকৃত সাবলীল বলে পাঠক শুরুর আড়ষ্টতা ভুলে যেতে পারেন। তবে এমন ভাষার ক্ষেত্রে দুর্বল পাঠক কয়েক অনুচ্ছেদ পড়েই কেটে পড়তে পারেন। দেখাই যাচ্ছে সিঙ্গার এমনকি সচলের পাঠকদেরও অনেকের কাছে পরিচিত নন্‌। তাই এমন ক্ষেত্রে আগাগোড়া সাবলীল ভাষারই পক্ষপাতী আমি। এতে বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে সিঙ্গারকে পরিচিত করা সহজ হয়।

সিঙ্গার অনুবাদ করা দুরূহ একটি কাজ। আর অনু-অনুবাদতো আরো কঠিন কাজ। ইংরেজী থেকে অহমীয়া গল্প অনুবাদ করতে গিয়ে আমি দেখেছি অনুবাদের ঠ্যালায় গল্প মারা পড়ছে। এই অনুবাদের ক্ষেত্রে গল্প মারা না পড়ার কারণ অনুবাদকের দক্ষতা। পাঠক একই সাথে সিঙ্গারের গদ্যের শক্তিটাও টের পান।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনার মন্তব্য দেখলে শান্তি লাগে। লেখক তো এখানে ম্যালা, পাঠক মানে ঠিকঠাক পাঠকের কমতি ( মূলত পাঠক দাদাকে মীন করে কিন্তু কিছু বলছি না চোখ টিপি )। আপনার মন্তব্য অনেক লেখককে ঠিক পথে নিয়ে যায়। এটা কিন্তু বিশাল ব্যাপার।

দময়ন্তী এর ছবি

বা: সিঙ্গারের সাথে পরিচয় করানোর জন্য ধন্যবাদ৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি আপনি চিনতেন না। কন কি !

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

আইজ্যাক বাসেভিস সিঙ্গার - এই প্রথম পড়া হল। ভালো লাগলো মূল গল্পের কাহিনী এবং অনুবাদ দুটোই।
এরকম অনুবাদ-গল্প আরও আসুক, প্রত্যাশা রইলো।

-----------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

আলতাফ হোসেন এর ছবি

‘আজ হোক কাল হোক, সবু বুঝতে হবে চামড়ার মূল্যে। অন্য ভিক্টিমদের চেয়ে আমার অবস্থা কোন দিক দিয়ে ভালো? এটাই ইতিহাস। যা নিয়ে আমি সারা জীবন কাটালাম।’

এরকম কিছু চিরন্তন সত্যি বেরিয়ে আসে মহৎ সাহিত্যিকদের লেখা থেকে।

প্রচুর কষ্ট স্বীকার করে অনুবাদ করে এখানে উপস্থাপনের জন্য শুভাশীষকে অনেক ধন্যবাদ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনি লেখা থেকে ভালো ভালো কথা খুঁজে বের করেন। আপনি অনেক ভালো একজন পাঠক।

অনেক ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার অনুবাদে দূর্দান্ত একটা গল্প পড়া হলো। অনেক ধন্যবাদ।

আপনার কারখানা উৎপাদনের জোয়াড়ে ভরে যাক... আমেন...

সচলে যারাই অনুবাদ করতে মাঠে নামছেন, তাদের প্রত্যেকের কাছেই আমি আব্দার জানাইছি কুন্ডেরা অনুবাদ করার। আমি বিদেশী ভাষায় কিছু পড়ে আরাম পাই না। তাই অনুবাদ খুঁজি। কুন্ডেরা অল্প একটা দুটো পড়ছি। তারপর থেকে মাথা আউলা। সবাইকেই বলি, কিন্তু কেউ কুন্ডেরা অনুবাদ করে দেয় না।

আব্দারটা আপনার কাছেও রাখলাম।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

নজরুল ভাই,

মিলান কুণ্ডেরাকে নিয়ে একটু গ্যাঁজাই। ইংরাজি বই আমি সব সময় কমে দামে নীলক্ষেত থেকে কিনি। এই কুণ্ডেরা সাহেবের সব কয়টা ফিকশন আমি কিনেছিলাম আজিজ থেকে ( 'দা আনবেয়ারেবল লাইটনেস অভ বিয়ীং' বাদে, এটা পাওয়া যেত না )। পাউণ্ড/ডলারের দামে। বোঝেন কী মাল এই কুণ্ডেরা। উনার 'দা জোক'য়ের অনুবাদ পাওয়া যায়। ঠাট্টা। অনুবাদ খারাপ না। 'স্লোনেস' আর 'আইডেনটিটি' বাদে বাকি সব বই ঢাউস। উনার একটা মাত্র গল্প সংকলন। 'লাফেবল লাভস'। কেউ চাইলে সেটা থেকে এক-দুটা অনুবাদ করতে পারেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

স্যরি, দেরিতে রিপ্লাই দিতেছি। চোখে পড়বে কি না জানি না।

আমি মুর্খ মানব, ইংরেজিতে পড়ে আরাম পাই না, বা বুঝি না। অনুবাদ ভরসা। আমি তাই কুন্ডেরা পড়ছি শুধু ঐ ঠাট্টা মানে জোক... আর একটা গল্প ভাবানুবাদ করছিলো আনিসুল হক, দ্য হিচ হাইকিং গেইম।
আমার কুন্ডেরা জ্ঞান এই পর্যন্তই। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারনে আমার এই লেখকরে ভয়ঙ্কর পছন্দ হইছে। তার সবই আমি পড়তে চাই। কিন্তু অনুবাদ নাই বলে পড়তে পারি না।
এজন্যই আমি এখন পর্যন্ত অনেকেরে অনুরোধ করেছি তার বই অনুবাদ করতে... আপনারেও বললাম।

আপনি নিজে অনেক ভালো লেখেন। তাই আপনি অনুবাদ করলে সেটা অনেক ভালো হবে... এজন্যই আশা একটু বেশি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি


আপনেরে ভালু পাই। আপনে পড়তে চাইছিলেন দেখে পায়রা নামালাম। 'লাফেবল লাভস' থেকে 'দা গোল্ডেন এপল অভ ইটারনাল ডিজায়ার' কিছুটা অনুবাদ করা ধরছি। অন্য কেউ করে থাকলে আওয়াজ দিয়েন। তাহলে আর করবো না। বেশ বড় গল্প। আপ করতে সময় লাগবে।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

অনেক ভালো লাগল বস। অনেক ধন্যবাদ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

সাফি এর ছবি

অসাধারন লেগেছে। তবে গল্পের শুরুর দিকটা একটু ধীরলয়ে হলেও শেষটা পুরোই রেলগাড়ি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

থ্যাংকস

ফরিদুর এর ছবি

গল্পটা বড়। ব্লগে ছোট ছোট লেখা পড়তে পড়তে বড় লেখা পড়ার ধৈর্য্য থাকে না। সিঙ্গারের গল্পটা পড়ার পর একটা আলাদা অনুভূতি হলো। এটা গল্পকারের কৃতিত্ব, অনুবাদকের সাফল্য। আপনার শুক্রিয়া আদায় করছি। আরো অনুবাদ করুন।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।