পুরানো

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: রবি, ৩১/০১/২০১০ - ১০:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পুরানো একজন মানুষ মারা গেছেন। আমাদের শহরে পুরানো মানুষদের কোন কবরস্থান নেই। তাদের মৃতদেহ রেখে দেয়া হয় নগরের একটা আটতলা উঁচু বিল্ডিং-এর ছাদে। শকুনেরা কাকেরা খুবলে খায়। জোয়ান কেউ মারা গেলে কেবল তাদের কবর হয়। পুরানোরা মরার পর মাংস বিলোয়।

লোকটার অনেক বয়েস। নব্বই হবে প্রায়। তার ছেলে বৌমা ছটফটে নাতি অতুল এক দিন সকালে এসে দেখে বুড়ো টেঁসে পড়ে আছে। পরে শব সমিতি দেহটাকে রেখে আসে সেই ছাদে। মাংস গলে যায় তেতো রোদে। আস্তে আস্তে এসে ভিড়তে থাকে এক দুটো শকুন। সংখ্যায় তারা আরো বাড়তে থাকে। দেহ অদৃশ্য হয়ে যায় ডানায়। ডানার শব্দে।

অতুল তার দুটো হাত বাবা মায়ের দুটো হাতে রেখে হাঁটে। ও তোমাদের কে হয়? অতুলের প্রশ্নে বুড়োর ছেলে বলে – কেউ হয় না, বাবা। একজন পুরানো মানুষ। একটু দূরে আইসক্রিমের গাড়ি দেখে অতুল বাবা মা’র হাত ছেড়ে দৌঁড় দেয় সেদিকে। বুড়োর ছেলে একটা চকোবার কিনে দেয় ছেলেকে। আইসক্রিমে কামড় দিয়ে বাবার দিকে আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে। আচ্ছা, ছাদের পাখিগুলোর ঠোঁট এত লাল কেন?


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দাখমাহ্‌ কনসেপ্ট নাকি? এই ধর্মের মানুষের কখনো দেখা পাইনি। দেখা পেলে দাখমাহের ব্যাপারটা নিয়ে ওদের মনোভাবটা জানতাম।

একটা খট্‌কা। যদি ভুল না জানি তাহলে, ওল্ড ওয়ার্ল্ড ভালচার বা নিউ ওয়ার্ল্ড ভালচার কারো ঠোঁটই লাল হবার কথা না। নব্বই বৎসরের বৃদ্ধের মৃতদেহ ঠুকরে খাওয়া শকুনের ঠোঁটও রক্ত লেগে লাল হবার সম্ভাবনা কম। তাহলে?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পাণ্ডবদা,

পার্সিদের এই রিচ্যুয়াল নিয়ে আমার ও অনেক আগ্রহ আছে। হরর লেখিকা সারাহ রাইন একটা বই ও লিখে ফেলেছেন 'টাওয়ার অব সাইলেন্স' নাম দিয়ে। এই টপিকে টাইম ম্যাগাজিনে একটা ফিচার ছাপা হইছিল। গুগল করলে আরো অল্প কিছু জানা যায়।

আর রক্ত লাগা নিয়ে অতুলের প্রশ্ন একটা মেটাফোর। মৃতদেহ শকুনের ডানার কারণে আর দেখা যাচ্ছিল না। আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম না। বাচ্চারা এমন কিছু দেখে যা বড়রা দেখে না। এই আর কি।

রবি এর ছবি

ভাল লাগল পড়ে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ধন্যবাদ

তিথীডোর এর ছবি

আকারে টুকুন.. অর্থে নয়....
পড়ে ভাল্লাগলো।
-------------------------------------------------
"আমি তো থাকবোই, শুধু মাঝে মাঝে পাতা থাকবে সাদা/
এই ইচ্ছেমৃত্যু আমি জেনেছি তিথির মতো..."
*সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

গদারকে জিজ্ঞেস করল 'এটা কি? রক্ত ?' গদারের উত্তর 'এটা লাল'। (আনসোর্সড)


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ভাল কমেন্ট করছেন। একটা লিঙ্ক পেলাম।

দুর্দান্ত এর ছবি

তুমুল লিঙ্ক। চলুক

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডব বলেছেন: নব্বই বৎসরের বৃদ্ধের মৃতদেহ ঠুকরে খাওয়া শকুনের ঠোঁটও রক্ত লেগে লাল হবার সম্ভাবনা কম। তাহলে?
.

তাহলে? চিন্তিত
__________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

PAA034000012

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

টুকুন গল্পে পড়ে আমারো প্রথমেই পার্সীদের টাওয়ার অফ সাইলেন্স এর কথা মনে আসলো। পরে মন্তব্যে দেক্লাম পান্ডব'দা সেটা বলেই দিলেন।

... যা হোক। আপনার মাঝের কয়েকটা গল্পের চেয়ে বেশ ভালো লাগলো এটা।

_________________________________________

সেরিওজা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

দময়ন্তী এর ছবি

শকুনের ঠোঁট লাল হওয়ার তাত্পর্য বুঝতে পারলাম না৷ মন খারাপ
ষষ্ঠ পান্ডবের প্রশ্নটা আমারও৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

Arrow5

নাশতারান এর ছবি

দেঁতো হাসি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

স্নিগ্ধা এর ছবি

শুভাশীষ - চমৎকার লাগলো! সত্যিই। আচ্ছা শকুনের ঠোঁট লাল হওয়ার ব্যাপারটা একটু রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে কি? আমি মন্তব্যগুলো পড়েছি পরে, গল্পটা পড়তে পড়তে লাল ঠোঁটের প্রসঙ্গে আমার ওটাই মনে হয়েছিলো। আমরা অবধারিতকে অস্বীকার করি, চোখ বুঁজে ভবিতব্যকে এড়িয়ে ভাবি - "আমি বোধহয় কোনভাবে পার পেয়ে যাবো", আর অতীতের প্রতি আমাদের অমানুষিক অকৃতজ্ঞতা তো আছেই - এতো অদূরদর্শী কেন আমরা?!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দিদিভাই,

মন্তব্যের জন্য থ্যাংকস।

দুর্দান্ত এর ছবি

খুব সুন্দর গল্প। শিশুদের পর্যবেক্ষনক্ষমতা নিয়ে যা বল্লেন, খুব ভালো লেগেছে।
---
কল্পনায় সব সম্ভব। তবু বলি। চকোবার আর দখমা মনে হয় একই দৃশ্যে দেখা সম্ভব নয়। যেখানে রাস্তায় চকোবার কিনতে পাওয়া যায়, মানে শিল্পবিকাশের যে মাত্রায় এটা সম্ভব, সেখানে দখমা চালানোর মত এতগুলো শকুন বেঁচে থাকার কথা না।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কিছুটা টুইস্ট আছে। আমাদের নগরে এই প্রথা না থাকলেও পুরানোদের আমরা বাতিল করে দিচ্ছি। অনেক জায়গায়।

রাহিন হায়দার এর ছবি

ভালো লেগেছে।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দূর্দান্ত লিখছেন... স্রেফ দূর্দান্ত
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ধন্যবাদ, নজু ভাই।

হিমু এর ছবি

আপনি কি রোহিন্তন মিস্ত্রির উপন্যাস কোনোটা পড়ে দেখেছেন? ভদ্রলোক পার্সি, পার্সিদের ঘিরেই লেখেন। সাধারণ ছিমছাম লেখা, তবে খুব সাবলীল।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

উনার 'ফ্যামিলি ম্যাটারস্‌' পড়েছি। নীলক্ষেতে ঘোরার সময় পেয়ে গেছিলাম। খুব ভাল লেখেন।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

অন্যরকম লাগলো।
ছোট মরিচে বেশি ঝাল। হাসি

...........................

কেউ আমাকে সরল পেয়ে বানিয়ে গেছে জটিল মানুষ

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কন কি!

নাশতারান এর ছবি

নির্লজ্জভাবে নির্বিকার, সার্থকভাবে স্বার্থপর।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ভাল কইছেন। খোমাখাতায় স্ট্যাটাস মারা লাগব।

ওডিন এর ছবি

দারুণ টুকুনগল্প শুভাশীষদা!

একটু অফটপিকঃ ন্যাটজিও তে একবার একটা প্রোগ্রামে দেখেছিলাম দাখমাহ আর শকুনদের ব্যপারটা নিয়ে। উপমহাদেশের গবাদীপশুদের হরদম 'ডাইক্লোফেনাক' খাওয়ানো হয় নানা কারনে। আর সেইসময় পশুর মাংস খেয়ে সাবকন্টিনেন্টের শকুনরা একের পর এক মারা যাচ্ছিলো। পরে অনেক খুজে বের করা হয় যে ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধপত্র শকুনের মেটাবলিজমের জন্য বেশ ক্ষতিকর- অনেকটা বিষের মত কাজ করে। ফলে শকুনেরা মোটামুটি নাকি এখন বিলুপ্তির পথে। কয়েকজন পার্সী আর কিছু অ্যানিমেল কঞ্জার্ভেশনিস্ট মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছেন এদের বাঁচানোর জন্য।

তিব্বতের লোকজনদের মধ্যেও 'স্কাই বারিয়াল' বলে একটা ব্যপার আছে।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

বাঘ যাইতেছে। শকুন যাইতেছে। এক এক কইরা প্রাণিজগতের আরো কত প্রাণী যে হারায় যাবে সেটার ঠিকঠিকানা নাই।

আপনার লিঙ্কের গুগল করতে গিয়ে আরেকটা লিঙ্ক পেলাম।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

চমৎকার লাগলো, শুভাশীষ। সচলে আপনার কল্যাণে নতুন আঙ্গিকের বেশ কিছু বৈচিত্রপূর্ণ লেখা পাচ্ছি আমরা। আরও লিখতে থাকুন।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

আরিফ [অতিথি] এর ছবি

মার্ভেলাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।