কোমলমতি!!-২

স্বপ্নহারা এর ছবি
লিখেছেন স্বপ্নহারা (তারিখ: সোম, ১৩/০৭/২০০৯ - ৮:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

।।এক
প্রথম পর্বটি পাবেন এখানেঃ

জীবনে প্রথম প্রেমের স্মৃতি ভোলা খুব কষ্টকর, আর সে যদি হয় একদম ন্যাংটাকালের প্রেম তাহলেতো কথাই নেই। আমার জীবনের প্রথম ক্রাশ-প্রথম ভাললাগা ছিল মেরিলিন মনরো...তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি! চিত্রালি অথবা তারকালোক ঈদ সংখ্যায় তার পুরো পাতা অর্ধনগ্ন একটি ছবি ছাপা হয়েছিল, এখনো মনে আছে লাল ব্যাকগ্রাউন্ডের সামনে গায়ে লাল কাপড়ের অংশ জাতীয় কিছু একটা পরা...সব দেখা যায় আবার কিছুই দেখা যায়না ভাব। তখনো নরনারীর শারীরিক ব্যাপারে জ্ঞান হয়নি, কিন্তু কি যেন হয়ে গেল আমার মধ্যে...সেই অপার্থিব সৌন্দর্য দেখে মনে হল একে আমার বিয়ে করতেই হবে! সেই পাতা ছিঁড়ে রেখে দিলাম...প্রতিদিনই দেখতাম আর ভাবতাম বড় হয়ে বিয়ে করব তোমাকে (!); হঠাৎ আমার মধ্যে বড় হওয়ার ভীষণ তাড়া দেখা গেল। পড়াশুনায় বেশ মনোযোগী হয়ে গেলাম! সেই প্রেম টিকেছিল ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত...নিজের বউ ছাড়া আমার জীবনের দীর্ঘতম প্রেম! আমার হৃদয় ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় যখন জানতে পারি তিনি আমার ঠাকুমার বয়েসি এবং তিনি বেঁচে নেই!!

।। দুই

আমার ভাই যখন জন্ম নেয় তখন আমার বয়স সাড়ে ছয়। আমি সবসময় প্রার্থণা করতাম একটা খেলার সাথী-ভাই এর জন্য। কিভাবে বাচ্চা জন্ম নেয় সে ব্যাপারে সব শিশুরই একটা আলাদা ধারণা থাকে-যা নানাভাবে পরিবর্তিত হতে হতে (ট্রায়াল এন্ড এরর?!) একসময় সবাই আসল ব্যাপারটা ধরে ফেলে। আমারও ধারণা ছিল যতদূর মনে পড়ে এরকম, "একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হাত ধরে টানাটানি করলে তাদের মধ্যে লাইন (গ্রামের ভাষায়) হয়ে যায়; এরপর তারা বিয়ে করে একসাথে ঘুমানোর সময় হাতে-হাত ধরে ঘষাঘষি করতে হয়। আর তখন চুমা দিলে বাচ্চা হয়! বিয়ে না করে শুধু লাইন হওয়ার পর ঘুমালেও বাচ্চা হয়ে যায়!" এই ধারণার কারণ বোধহয় ছিল বিটিভি তে প্রচারিত বাংলা সিনেমাগুলা!

গ্রামে আমাদের প্রিয় খেলার জিনিসের মধ্যে একটা ছিল 'রাজা' দিয়ে বেলুন ফোলানো; নানা আকৃতির জিনিস বানানো (আঙ্গুর-কমলা-লাউ ইত্যাদি)। কিন্তু তখন 'রাজা'র বিজ্ঞাপন দেখানো হত টিভিতে দিনে বেশ কয়েকবার। নিজের ভয় হতে লাগল-আমার কি কোনদিন বাচ্চা হবেনা? বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম। বাবা হাসতে হাসতে বললেন- না বড় হলে আমারও বাচ্চা হবে...বিয়ে করার পর শুধু বেলুন দিয়ে না খেললেই হবে (বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ কথা!)।

যে ভাইয়ের জন্য এত প্রতীক্ষা,প্রার্থনা,কর্মকান্ড...সেই ভাই জন্ম নেয়ার এক বছরের মধ্যে আমার মনে হতে থাকে "ভাই জিনিসটা এত ভয়াবহ!"

।।তিন

আমার ভাই জন্ম নেয়ার সাথে সাথে আমি পুরোপুরি বদলে যাই...হঠাৎ করে যেন আমি বড় হয়ে গেলাম। মনে হতে থাকে বিশাল একটা জিনিস পেয়ে গেছি... একে দেখেশুনে রাখতে হবে! সেই দেবশিশুর মত অসম্ভব সুন্দর একটা জিনিস -দেখলেই মন ভাল হয়ে যেত। একটূও বাড়িয়ে বলছিনা-এত সুন্দর নিষ্পাপ বাচ্চা আমি জীবনে খুব একটা দেখিনি। এবং এত দুষ্ট (কঠিনমতি!) শিশু জীবনে আর একটাও দেখিনি!!!

জন্মের পরপরই তার খুব পানি প্রীতি (যোগ এবং বিয়োগ-দুই অর্থেই!) দেখা গেল। মায়ের দুধ বা মিছরি মিশ্রিত পানির চেয়ে শুধু পানি পানের প্রতি তার উৎসাহ অনেক বেশি ছিল। এবং প্রাকৃতিক নিয়মে তা ত্যাগের প্রতিও! জন্মের ষষ্ঠ দিনের দিন (ষষ্ঠী) সাধারণত নামকরণ করা হয়; একটা প্রদীপে সাতটা সলতে দিয়ে সাতটা নামের জন্য জ্বালানো হত। যে সলতে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলবে শিশুর নাম সেটাই দেয়া হয়। সেই পূণ্যদিনে সে আগামী কয়েক বছর আমাদের কি উপহার দিবে তার ছোট্ট একটা উদাহরণ আমাদেরকে প্রদর্শন করে। আমার সেই মাসতূত বোনটি যখন তার পেটে মুখ দিয়ে "ফু ফু" করে আদর করছিল তৎক্ষনাৎ সে তার জলকামান দিয়ে নিখুঁত নিশানায় আমার বোনটির মুখের ভেতরে গুলিবর্ষন করে। সে কতটুকু বুঝত জানিনা...কিন্তু কাজটি করে তাকে খুব আনন্দিত হতে দেখা গেল!!

সে যত বড় হতে লাগল ততটাই নানাবিধ দুরন্তকর্মে তার মৌলিকত্ব এবং প্রতিভা প্রকাশ হতে থাকল। তাকে চামচ দিয়ে দুধ খাওয়ানোর সময় তার খুব প্রিয় একটা কাজ ছিল সেটা 'ফুৎ' করে যে খাওয়াচ্ছে তার মুখে ছিটিয়ে দেয়া। হাঁটতে শেখার পর সে বিভিন্ন জায়গায় তার জলকামান ব্যবহার করতে লাগল; দিনে কয়েক জগ/বোতল করে পানি খেত...অনেক সময়ই দেখা যেত বোতল থেকে পানি ঢুকছে এবং একই সময়ে নিচ দিয়ে পড়ছে!! একদিন তার মনে হল ঘুমন্ত মায়ের কান বোধহয় তার জলাধার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে!!! আমাদের বাসা ছিল তিনতলায়...রাস্তার উপর খোলা বারান্দা ছিল। আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সেই গলির সব বাসিন্দা জানতেন এই বাড়ির তিনতলা থেকে যেকোন সময় উষ্ণ প্রস্রবনের ধারা আঘাত করতে পারে!

আড়াই-তিন বছর বয়সে সে তার বানানো একটা কৌতুক বলত। সেটা এরকমঃ " একটা তিনতলা বাসার নীচতলায় এক লোক বসে স্যুপ খাচ্ছে। আর দোতলায় একটা ছেলে খেলছে। তিন তলায় এক লোক বসে শেভ করছে। হঠাৎ ছেলেটা পিসু করতে গেল বারান্দা দিয়ে বাইরে..."। বাকীটা বুঝে নিন...হাসি এত ছোট একটা শিশু এমন গল্প বানাতে পারে!!

অসম্ভব সুন্দর, হাসিখুশি, এবং উদ্যমী হওয়ার কারনে তার উপর লোকজনের অনেক স্নেহ এবং ক্ষমা মিশ্রিত প্রশ্রয় ছিল। এমনও হয়েছে তার নামে নালিশ দিতে এসে তাকে কোলে করে বাসায় নিয়ে গেছে! কিন্তু আমার বাসার লোকদের সবসময় সতর্ক থাকতে হত তার নানা সুকর্ম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। আমার মেজ এবং ছোট মামা তখন আমাদের বাসায় থাকতেন; আমাদের সব আবদার ছিল মেজমামার কাছে। সেই মেজমামা একবার অসুস্থ হওয়ায় তাকে ডাক্তার 'কোট্রিম' খেতে দেয় (জানিনা এখন আছে কিনা...তখন জ্বর জাতীয় কিছু হলেই কোট্রিম ধরিয়ে দিত!)। সেদিন রাতে মামা ঘুমাতে যাওয়ার সময় পানি খেতে গিয়ে হাসপাতাল দর্শন করে আসতে হয়েছিল। কেন? কারণ ১৫/২০ টা ট্যাবলেট মামার জগের পানিতে গুলে রাখা ছিল...সাথে ফাউ হিসেবে বুঝতেই পারছেন আর কি ছিল!

ছোট মামাকেও তার শিকার হতে হয়েছিল একইভাবে। ছোটমামার একটু শুচিবাই ছিল...নিজের সবকিছু আলাদা রাখতেন। সাবধানীও ছিলেন খুব। তাই আমার ভাই তার পানির জগে সুকর্মটি (!) করার সময় সন্দেহমুক্ত থাকার জন্য পানি কমিয়ে নিয়েছিল একই পরিমাণে! এবং তখন তার বয়স ছিল দেড়/দুই!!!

আমার ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তাকে মেরে ফেললেও সে কাঁদত না। তাকে কাঁদতে দেখার ঘটনা ছিল খুবই বিরল। কোনকিছু পছন্দ না হলে বা কারও কাছ থেকে কিছু আদায় করার জন্য সে নিজস্ব উপায় বের করেছিল...দেয়ালে মাথা ঠুকা! সে কিছু চাইলে না দিলে কোন কথা নেই...শুরু হত দেয়ালের সাথে তার মাথার যুদ্ধ। এইভাবে তার প্রায় সব আবদারই পূরণ হত! তার আরেক শখ ছিল কলম জমানো...সেটা দুই বছর থেকে শুরু হয়ে ৭/৮ বছর বয়স পর্যন্ত চালু ছিল। কলম সংগ্রহ করার তার নিজস্ব পন্থা ছিল...কারো কাছে কলম দেখলে (তখন প্রচুর মানুষ পকেটে কলম রাখতেন...এখন দেখিনা!) সে একটি কাগজ নিয়ে লেখাপড়া (!) করতে চাইত। মানুষ তার মাসুম চেহারা আর লেখাপড়ার আগ্রহ দেখে কলম দিতে দ্বিধা করত না। সেই লেখাপড়ার এক পর্যায়ে সে কলমটি দিয়ে দেয়াল লিখন শুরু করত...দেঁতো হাসি এইভাবে তার সংগ্রহে হাজারের উপর কলম ছিল! আর আমাদের বাসার সাদা দেয়াল ছাইরঙ হয়ে গিয়েছিল...সাথে অবশ্য নীল-লাল-সবুজেরও ছোঁয়া ছিল...হাসি সেই কলমের আরেক ব্যবহার ছিল...সেগুলো (ফ্লোরে দাগ কেটে) তার ফুটবল খেলার প্লেয়ার হত...অথবা যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার সৈনিক। অন্য শিশুরা যেমন প্লাস্টিকের পুতুল নিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলে...তার পুতুল ছিল সেসব কলম এবং প্রতিটা কলমের আলাদা নামও ছিল (কিছুদিন আগে সুদীর্ঘ ১৫-২০ বছর পর তার সেই কলমের সংগ্রহ পুনরাবিষ্কৃত হয়েছে...)।

তার আরেকটা বিষয় ছিল বিয়েপ্রীতি! কথা ভালভাবে বলতে শেখার কিছুদিন পর থেকে তার একটা ফ্যান্টাসি ছিল..." আমি মা-কে খুন করে, বাসায় আগুন জ্বালিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাব। আর ওখানে এক বিদেশি মেয়ে বিয়ে করব!" বলাই বাহুল্য প্রতিদিনই তার নানাবিধ কর্মকান্ডের জন্য মায়ের হাতে ভাল-মাঝামাঝি জুটত বলে এই ফ্যান্টাসি প্রায়ই সে ব্যক্ত করত। আমার সেই বিদেশিনী-প্রিয় ভাই তার তিন-চার বছর বয়সে আমার মামাত বোনের মুখেভাতের (অন্নপ্রাশনঃ ৫/৬ মাস বয়সে প্রথম ভাত খাওয়ার দিন) সময় সেই ৬ মাসের বোনকে বিয়ে করার জন্য জিদ শুরু করে!

আমাদের দুই ভাইয়ের অনেক খেলার মধ্যে ছিল বালিশ মারামারি...আর অলিম্পিক কুস্তি (আমরা বলতাম পিঠ ছোয়াঁনি!)। আমি সাড়ে ছয় বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও সে-ই জিতত সবসময়। কারণ, আমি ব্যথা পেলে তাকে কেউ কিছু বলবে না কিন্তু সে ব্যথা পেলে (তা নিজের কারণেই হোক অথবা আমার কারণে) সেটা আমাকেই জবাব দিতে হবে-এই ব্যাপারটা সে ভালই বুঝত! আর আরও একটা জিনিস বুঝত...বালিশ মারামারির এক পর্যায়ে ঘুরন্ত ফ্যান-এ বাড়ি লাগাতে পারলে অনেক মজা হয়!...ফাউ হিসেবে আমাকে মায়ের হাতে কিঞ্চিৎ ধোলাই খাওয়ানো যায়...মন খারাপ

।।চার

আমার ভাই তার চার বছর পার না হতেই হারিয়ে গিয়েছিল তিনবার...কপাল জোরে পাওয়া গেছে। চার বছর বয়সে সে একবার পাশের বাড়ির তিনতলার সানসেটে নেমে যায়। এরপর থেকে তাকে আরো সাবধানে রাখার দায়িত্ব আমার উপর পড়ে!

আর দুই-একটা ঘটনা বলে আজ শেষ করব। পৌষ সঙ্ক্রান্তি তে আমাদের পিঠা খাওয়ার নিয়ম। আমাদের বাড়ির সবার পাটিসাপ্টা খুব পছন্দ। তাই একবার বাবা গ্রাম থেকে খাঁটি ক্ষীর (ময়দা মেশান ক্ষীরসা নয়, তখন খাঁটি জিনিসই পাওয়া যেত) নিয়ে আসেন। সকালে উঠে দেখা গেল দেড় কেজি ক্ষীরের অর্ধেক গায়েব...আমি ঘুমাচ্ছিলাম; ভাইকে জিজ্ঞাসা করায় সে জানাল সে আমায় রাতে খেতে দেখেছে! ঘুম থেকে উঠে উত্তম-মধ্যম খেতে কার ভাল লাগে...মন খারাপ

সাড়ে চার বছরে তাকে রয়াল একাডেমী স্কুলে নার্সারিতে ভর্তি করা হয়। সব বিষয়ে সে A বা B পেলেও ব্যবহার, ধৈর্য ইত্যাদিতে নিয়মিত C/D/F নিয়ে আসত। একবার তার সাথে এক মেয়ে সহপাঠীর ঝামেলা হয়...সেই মেয়ে ক্লাসের মিস'এর কাছে বিচার দেয়। এর শাস্তি তাকে পেতে হয়েছিল বাথরুমে ১/২ ঘন্টা বন্দী থেকে!! আমার ভাই তার সাঙ্গ-পাঙ্গ সহ সেই মেয়েকে বাথরুমে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে...সেই দড়ি গিয়েছিল আমাদের বাসা থেকে। তখন তার বয়স ছিল পাঁচ!!

আমাদের দুই ভাইয়েরই ছিল গোগ্রাসে বই গেলার অভ্যাস। হাতের কাছে যা পেতাম পড়তাম। সে-ও পড়ত! তার ক্লাস ফোরে থাকতে তাকে আমি 'ধর্ম ও দর্শন' অথবা 'জীবন ও দর্শন' টাইপের বই পড়তে দেখতাম। তার সবচেয়ে প্রিয় বই কি ছিল জানেন? গল্পগুচ্ছ!!! প্রতিদিন সে গল্পগুচ্ছ একবার করে হলেও পড়ত। সাথে থাকত তার প্রিয় খাবারঃ বরফ ভেঙ্গে ছোট ছোট টুকরা করে তার মধ্যে প্রচুর লেবু-লবণ-চিনি সহযোগে মিশিয়ে চামচ দিয়ে খাওয়া! এই পর্যায়ে বলে রাখা ভাল...আমার বাসায় তার দেড়/দুই বছর বয়স হওয়ার পর থেকে লেবু খুব দুষ্প্রাপ্য ছিল...তা সে এক ডজনই আনা হোক আর দুই ডজন। পরের দিন সেগুলোর চোকলা খাটের তলায় অথবা বালিশের তলায় পাওয়া যেত। সেগুলো ছোলার জন্য তার দাঁতই যথেষ্ট ছিল!!

সে তখন ক্লাস থ্রী বা ফোরে পড়ে। আমি এইট বা নাইনে...যথেষ্ট বড় হয়েছি নারী-পুরুষের ব্যাপার বুঝার (এবং...) জন্য। যেহেতু আমার ভাইটি হাতের কাছে পাওয়া সবকিছুই পড়ত...পাশের বাড়ি থেকে সে একটা বই নিয়ে আসে। বইয়ের নাম মনে নেই...কিন্তু প্রথম লাইনটা মনে আছে। সেটা অনেকটা এরকম, "পৃথিবীতে কাউকে যদি মনে মনে ধর্ষনের রেকর্ড থাকত তাহলে আমি সেটার মালিক হতাম"...এরকমেরই কিছু। আমি বইটা তার হাত থেকে নিয়ে প্রথম প্যারাটা পড়েছি কি পড়িনাই (ইন্টারেস্টিং লাগছিল...খাইছে) সে আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল। তারপর গম্ভীরমুখে বলল "এই বই তুই পড়িস না, খারাপ হয়ে যাবি পড়লে"!!!

এরপর যদি কেউ বলে শিশুরা কোমলমতি...কেমন মেজাজ খারাপ হয় বলেন?

।।পাঁচ

ক্লাস এইটে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় খারাপ করায় বাবা বেশ বকাঝকা করেছিলেন...মন খুব খারাপ ছিল। তখন সে তার জীবনের বড় এক দর্শনের কথা বলে আমায় সান্ত্বনা দেয়ঃ "শোন জীবনটা হইল পাঁকাল মাছের মত। বাঁচতে হলে কোনকিছু গায়ে লাগাবি না বা মনে নিবি না। এই দ্যাখ আমায় সবাই এত বকে-মারে তাতে আমি মন খারাপ করিনা...মাইর খাইলে বলি মনে তো আর লাগতেছে না, আর বকলে ভাবি গায়ে তো আর লাগতেছে না!"

আমার ভাইটি আজ বড় হয়েছে...২ মাস পর সে ঢাকা ভার্সিটি থেকে পাশ করে বেরুবে। তার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি...কিভাবে মায়াময়-ভাল মানুষ হওয়া যায় সেটার বড় একটা শিক্ষা তার কাছ থেকে পাওয়া। মানুষকে কিভাবে সেবা করতে হয়...তাও তার কাছ থেকে কিছু কিছু শিখেছি। আমি যখন প্রবাসে স্বার্থপরের মত নিজের ভাগ্য গড়ায় ব্যস্ত, সে তখন সংসারে মহীরুহ হয়ে বাবা-মা কে আগলে রেখেছে। যখন বাবা হার্টের সমস্যায় হাসপাতালে ছিলেন..আমার সেই খেয়ালি-বাউন্ডুলে-ছেলেমানুষ ভাইটা হঠাৎ করে বড় হয়ে গেছে...একাই সবকিছু সামলে নিয়েছিল। এই ভাইটাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী নিয়ে নানা কাজ করে বেড়ায়। এই প্রবাসে প্রতিটা মুহূর্ত আমি তাকে মিস করি...


মন্তব্য

নিলগ এর ছবি

"এই বই তুই পড়িস না, খারাপ হয়ে যাবি পড়লে"!!!
ইশ, আপনার কি ভালো ভাই! হাসি

আপনারা মশাই দুইজনে মিলে আপনাদের মাবাবাকে তো অতিষ্ঠ করে দিয়েছেন!

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

দারূণ লাগলো লেখাটা ... আপনার ভাইকে জাঝা দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

মাহবুবুল হক এর ছবি

এক নিঃশ্বাসে পড়লাম । আপনার ভাই এর প্রতিভায় মুগ্ধ। আপনার লেখনিও চমৎকার।
.................................................................................................................

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

দুই পর্বই চমৎকার হয়েছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

দারুণ লাগল আপনার লেখা। আমার নিজের শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। আমারও একটি বড় ভাই আছেন। সে অনেক সাদাসিধা মানুষ। আমি ছিলাম একটু বেপরোয়া গোছের। বোনদের বিয়ে, বাবার দিনের পর দিন হার্টের অসুখে হাসপাতালে থাকা, এসব আমিই সামলেছি। ভাইকে কোনো চাপের মধ্যে পড়তে দেই নি।
আপনার লেখাটা দেখে মনে হচ্ছিল, আমার বড় ভাই যদি কখনো লিখত, সে হয়ত এভাবেই লিখত! হাসি
তবে তাই বলে আপনাকে আমার বড় ভাই মনে হচ্ছে না! চোখ টিপি
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

রেনেট এর ছবি

দুর্দান্ত!!!! দারুন লাগলো। চলুক হাসি

এক কাজ করুন...আপনার ভাইকেও সচল ধরিয়ে দিন।
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ব্যস্ততার জন্য দুই ভাগে শেষ করলাম। স্বাগতম, ভাইয়া। এতদিনে লেখা শুরু করলেন... দেঁতো হাসি

গৌরীশ রায় এর ছবি

হেভী মজা পাইছি কইলাম ....

'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর

'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর

তুলিরেখা এর ছবি

লেখা খুব চমৎকার। রম্য স্মৃতিচারণ! চালিয়ে যান, প্রত্যাশায় রইলাম।
বিশেষ করে মেরিলিন মনরো ঠাকুমার বয়সী আর অনেক আগে পরলোকগতা শুনে দিল টুকরা হবার কাহিনিতে একেবারে হা হা পড়ে গেলাম ! হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ভুতুম এর ছবি

ভালো লাগলো। আরো লিখুন।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

বিপ্লব রহমান এর ছবি

গ্রামে আমাদের প্রিয় খেলার জিনিসের মধ্যে একটা ছিল 'রাজা' দিয়ে বেলুন ফোলানো; নানা আকৃতির জিনিস বানানো (আঙ্গুর-কমলা-লাউ ইত্যাদি)।

হো হো হো

একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

স্বপ্নাহত এর ছবি

সত্যিকার অর্থেই ব্যাপক একটা ব্লগ পড়লাম। চলুক

আপনার লেখার ঢংটা কিন্তু চমৎকার লাগলো। নিয়মিত লিখবেন আশা করি।

---------------------------------

তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস্‌ পাটুস্‌ চাও?!

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রানা মেহের এর ছবি

চমতকার লিখেছেন
তবে একটা কথা বলবো?
লেখা পড়ে কিন্তু আপনাকেও ঠিক কোমলমতি মনে হচ্ছেনা
একটু ঝেড়ে কাশুনতো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তানবীরা এর ছবি

সেইরকম স্ক্রু - বল্টু ছিলেন আপনারা দেখছি
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

মণিকা রশিদ এর ছবি

"শোন জীবনটা হইল পাঁকাল মাছের মত। বাঁচতে হলে কোনকিছু গায়ে লাগাবি না বা মনে নিবি না। এই দ্যাখ আমায় সবাই এত বকে-মারে তাতে আমি মন খারাপ করিনা...মাইর খাইলে বলি মনে তো আর লাগতেছে না, আর বকলে ভাবি গায়ে তো আর লাগতেছে না!"

অবশ্যই অতি গম্ভীর দর্শনের কথা! আপনাদের বাবা মার নিশ্চয় সেইরকম কিছু দিন গেছে! দেঁতো হাসি

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।