এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!

সাইফুল আকবর খান এর ছবি
লিখেছেন সাইফুল আকবর খান (তারিখ: বুধ, ০৬/০৫/২০০৯ - ২:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্বপ্নের মতোই হুট ক’রে ঘটলো ব্যাপারটা, একটা ঘোট-পাকানো অন্ধকারের গভীরে। না কি দুঃস্বপ্ন! কিংবা, দুঃস্বপ্নই হয়তো ঠিকঠাক স্বপ্ন, আর সুস্বপ্ন বা সুখস্বপ্ন হিসেবে যা দেখি বা ভাবি, সেগুলোর সবই বুঝি কেবল স্বপ্নদোষ!

যেই দেশে আমাদের মতো কিছু বোকা মানুষ নূন-আনতে-পানতা-ফুরায় না হয়েও অপব্যয়ীও নই, হিসেব ক’ষে চলি, উপরন্তু কষ্টে টাকা রোজগার ক’রেও দেশ-রোজগারী বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য যার যার সামর্থ্যমতো যুদ্ধে লড়ি, ল’ড়ে মরি, সেই দেশেরই সত্যিকারের সোনার ছেলেরা তাদের চিকন মাথা এমন জায়গায়ই খাটায়, যেখানে মওকামতো খ্যাপ্ পেলে ৫ মিনিটের শ্রমেই ২৯,০০০ টাকা রোজগার করা যায়! আর, বেশির কোনো সীমা তো নাই-ই।

এর আগে ২০০৪ সালের শেষের দিকে শান্তিনগর পুলিশফাঁড়ির সামনে (!) প্রথমবারের মতো ছিনতাই হয়েছিল আমার। সেই বিস্ময় ভুলে গেলে পরে আবারও ২০০৬-এর জানুয়ারি-তে আরো একবার ব্যবস্থা হ’লো আমার থ খেয়ে ব’সে থাকবার। সেবার মাদারটেকে সেই সেকেন্ড-টেক ছিনতাইয়ে অর্থ আর ফোন হারিয়ে অর্থহীন জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরে দেশ-পৃথিবী-যুবসমাজ-আমি-জীবন-জন্ম-শুভ-অশুভ-ন্যায়-অন্যায়-ঈশ্বর(!) নিয়ে একলা ঘরে সারারাতই প্রলাপ বকেছিলাম মনে আছে। মানসিক ভারসাম্য প্রায় পুরোটাই হারাতে বসেছিলাম বলা চলে। পরদিন হঠাৎ চেতনে ফিরে নিজেকে জীবিত এমনকি সুস্থ আবিষ্কার ক’রেই বরং অবাক হয়েছিলাম খুব। বোনাস প্রকৃতিস্থ এই জীবনে পণও ক’রে ফেলেছিলাম- এই পোড়াদেশে আমি আর মোবাইল-বিলাসিতা করবোই না। তখনকার বাসা-সদস্য বাবা আর ভাইয়ের উদ্বেগ-উপচিকির্ষায় অবশ্য পণ ভাঙতে হ’লো তাড়াতাড়িই, রোজগেরে আমিও জরুরি ভিত্তিতে আবার পেলাম বাবার কেনা বাধ্যতামূলক ফোনসেট। ২০০৭-এর শেষভাগে ঘ’টে বসলো আরেক উচ্চাভিলাষী দুর্ঘটনা! সরকারী আর ইলেকট্রনিক দুই গ্যাজেটেই সমান অনাগ্রহী আমিই কিনা খুব ভালো আর এমপ্যাথেটিক একজন এমএমএস-দয়ালু বন্ধুর যথার্থ প্ররোচণায়-প্রেরণায় নিজের অর্থে কিনে বসলাম নেট-এমএমএস উপযোগী একটা ‘ভালো’ সেট! সেই ফোনে স্থির ছবি যেমন থাকে, চলচ্ছবিও থাকে, থাকে গান, থাকতে থাকে অমোচনীয় কিছু এসএমএস-এমএমএস-ও, দিনের পর দিন। ’০৮-এর মাঝামাঝি আবার কয়েকটা আউটগোয়িংয়ের বিশেষ সুবিধার আশায় সাশ্রয়ী একটা সিম-কার্তুজ লোড ক’রে রাখার মতো আরেকটা লো-কস্ট বেসিক সেটও কিনি, সেই ‘ভালো’ সেটের কাছে যেটা ২ নম্বরই হয়ে ছিল এই সবটা সময়। দিনের পর দিন যেহেতু গ্যালো, সেখানেও জ’মে গ্যালো কথাভূক আমার আরো কিছু সময়-স্মৃতি আর আবেগেরও দিনলিপি। দুই পকেটে দুই ফোন রেখে চলাচল করি, প্রথম কিছুকাল লজ্জা লজ্জা হ’লেও অভ্যাসও হয়ে যায় দ্রুতই। তার পরে বরং একটা সেট হঠাৎ কখনও কোনো কারণে সাথে না থাকলেই পকেট খালি লাগতো, রীতিমতো গরিব মনে হ’তো নিজেকে। বহুকাল পরে আজ রাতে ঘরে ফিরলাম নির্ঝঞ্ঝাট- চলতে পথে কোনো পকেটেই বারবার হাত ঠেঁকিয়ে দেখতে হয়নি- ফোন ঠিক আছে কিনা বা কোনো কলের ভাইব্রেশনই হচ্ছে কিনা আবার! কারণ, সেই দু’টোই মুঠোফোনের গুরুদায়িত্ব আজ সন্ধ্যায় নিজেদের কাঁধে নিয়ে নিয়েছে তিন-তিনজন মেধাবী দয়াবী ছিনতাইকারী!

সচল ব্লগার জিফরান খালেদের বাবা - বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাই প্রকৃত অর্থে আমাদেরও বাবা - এস এম খালেদ কর্কটাক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু তাঁকে সেই রোগের কাছে তাঁকে আত্নসমর্পণ করতে দেবে না ব’লে দাঁতকপাটি গোঁ ধরেছে এদেশের দ্বিতীয় আর তৃতীয় প্রজন্মের বেশক'জন দুরন্ত খ্যাপাটে ছেলেমেয়ে। তারা সবাই সবাইকে সঙ্গ-সাহস-ধাক্কা-চাক্কা দিচ্ছে, সবাই মিলে এগিয়ে যাচ্ছে জীবনের মহত্তম রণে। পূর্ণ সচল না হয়েও অতিথি মর্যাদার ব্লগাররাও মেহমানের ভদ্রতায় চুপচাপ ব’সে থাকেনি এখানে। মধ্যবিত্ত কুমার এই আমিও সেখানে ছোট্ট হ’লেও একটা ঢিল ছুঁড়বো ব’লে ঠিক করলাম। সেই ঢিল-বাবদ ৫ হাজার টাকা ব্যাকপকেটে নিয়ে ঘুরছিলাম আর ছোট ছোট বুকপকেটের বড় বড় আশাগুলো ভাগাভাগি করছিলাম সবার সাথে। কল্পনায় কয়েক মাস পরই সুস্থ হাসিমুখ শ্রদ্ধেয় খালেদ চাচা, আর পরিকল্পনায়- কয়েকদিনের মধ্যেই কোনো এক সুবিধা-সন্ধ্যায় তারেক কিংবা নজরুল ভাইয়ের হাতে পাচার ক’রে দেবো সেই ছোট্ট ঢিলটি। উত্তরার দিকে যাওয়াও হচ্ছিল না দিনের বেলা, তাই ব্যাংকে জমা দেয়ার চেয়ে মনে হচ্ছিলো- তাদের কারো হাতে দিয়ে দিলে পরে একসাথে নিশ্চয়ই কোনো কাজে লাগবে সেই নগদ। আজ সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় তারেককে ফোন দিলামও একবার, যেন তারেক ভার্সিটি অঞ্চলের কাছাকাছি থেকে থাকলে তার সাথে দেখা ক’রে টাকাটা দিয়ে দিতে পারি। তারেক ধরেনি সেই অচেনা নম্বর, ব্যস্তও ছিল হয়তোবা। সেই টাকাটার দায়িত্বও তখন থেকে আর দেড়ঘণ্টার মধ্যেই নিয়ে নিয়েছে একই সেই মহান তিন বীরপুরুষ।

টাকাপয়সা বানের মতো বইছিল না এমনিতেই। বওয়ার কথাও ছিলো না কখনও। জীবনের যুদ্ধের জন্য পকেটে একটা ঢিল নিয়ে ঘুরতে ঘুরতেই গতকাল হঠাৎই শোনা হ’লো কলজের-টুকরো ছোট বোনের একটা অসুস্থতার কথা, যেটা ঢাকায় এনে পরীক্ষা করানো দরকার, আর যে পরীক্ষার ফল হঠাৎ গুরুতর খারাপও হ’তে পারে। না-ও-তো-হ’তে-পারে নামক আশায় যথারীতি বুক বেঁধেই একদিকে বাবা-মায়ের সাথে জরুরি আলোচনায় সামনের সপ্তাহেই মা-বোনের ঢাকায় আসা এবং প্যাথোলজিক্যাল যুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব সাব্যস্ত করি, আর অন্যদিকে পকেটের ওজন মাপতে শুরু করি ব্যাংকের অংকের সাথে হাতেরও আন্দাজে। তার ওপর, সেই বোনেরই ঢাকায় বেসরকারী-অনার্স লেখাপড়ার ব্যাপার শুরু হচ্ছে আশা করি সামনের মাসেই- সেখানেও আব্বাকে বহু আগেই সাহস দিয়ে রেখেছি- “ওর পড়ার খরচ মূলত আমিই সামলে ফেলতে পারবো দে’খেন”। অংকটাকে আরো বেশি জটিল করেছে সাধারণ নির্বচনের যে অংশটি, সেটি হ’লো- পড়ালেখার জন্যই বোনের থাকার সুবিধার্থে এবার আমিও যাচ্ছি একলা-একঘরে-বসবাস থেকে আবার হাফ-ফ্যামিলির মধ্যে- বাবা আর বোনকে নিয়ে থাকবো, বাসা ঠিক হয়ে রয়েছে উত্তরায়। আজ সন্ধ্যায় সেই বাসায়ও দু’মাসের অ্যাডভান্স করতে হবে, নইলে বাসার বায়না হচ্ছে না, যেকোনো মুহূর্তে এসে সেটা ছিনিয়ে নিতে পারে আর যেকোনো কেউ! সেক্ষেত্রেও সম্প্রতি-সাহসী-হওয়া আমারই আগে থেকে ব’লে-রাখা অভয়বাণীর আলোকে আপাতত হ’লেও সেই অগ্রিমের দায়িত্বটিও আমার। সেই টাকাও এটিএম-এ ভাঙিয়ে আব্বাকে দিলাম যখন বিকেলে, তখন আমার মাসের সামনের দিনগুলো চলার জন্য বাড়তি আরো তুলে ফেললাম ছয় হাজার টাকা। সেটাও রইলো একই সেই ওয়ালেটে। বাসায় এসে সেটা নিরাপদে রেখে দিতাম বাংলা উচ্চারণ অভিধানের ভিতরে। তবে, এখন আর ভাবনা নেই। এই ছয় হাজার টাকাও সেই তিনটে সোনার ছেলের সামনের কিছুদিন ভালো-চলায় ভূমিকা রাখতে পারলো- ভাবতে ভালোই লাগছে।

০৫ মে ২০০৯ দিবাগত রাত
অন্যপুর

দ্বিতীয় ছিনতাইয়ের পর আমি যেই অবস্থানে ছিলাম সবকিছুর ব্যাপারে, সেটা এক সময়ে ধারণাগতভাবে এমন পরিণতিই পেলো, যে- এই দেশে বেঁচে থেকেই টেনশন, সাফা কিরকিরা হয়ে গেলে বরং তার চেয়ে ভালো, তাই এরপর আবার কখনও এরকম ছিনতাইয়ের মুখোমুখি হ’লে সহজে ছেড়ে দেবো না, প্রতিরোধ করবো সাধ্যমতো। ওই দু’টো অভিজ্ঞতা থেকে নির্দিষ্ট যে শিক্ষা নেয়া গ্যাছে, তার আলোকে যতোটা পারা যায় সতর্ক সচেতনও আমি ছিলামই সব সময়। এর মধ্যে আবার ভুলে হোক যা-ই হোক, জীবন সম্পর্কে একটু সেকেন্ড-ট্রাই নিচ্ছিলাম মাস কয় আগে থেকে, পোড়াদেশের পোড়াজনমেও ভুল ক’রেই আবার ‘মাল’এর সাথে সাথে ‘জান’ও মূল্যবান হয়ে উঠলো আমার! হায়রে ‘মাল’, আর হায়রে ‘জান’! দু’জনকে একসাথে নিয়ে ঘর করার শান্তি- না, কপালে নাই। ‘মাল’এর ওপর দিয়ে গেলেই শুনেছি খুশি হয়ে স্রষ্টার শোকর করতে হয় এই কারণে যে ‘জান’টা তো ঠিকঠাক রেখে গ্যাছে! আমার বাবার সাথে সকালে যখন কথা হ’লো, তখন তার শেষ বাক্যও ছিল- “যাক, আরো কিছু যে হয় নাই, সব আল্লাহর ইচ্ছা”! তো, হ্যাঁ, আল্লাহ্ জাতীয় কারো এই জাতীয় ইচ্ছাগুলোর জন্যও আজকাল প্রস্তুতই থাকি একভাবে সব সময়। সিএনজি স্কুটার বা মিশুক নামক অমানুষিক খাঁচাগুলোয় বসলেও একা আমিও মাঝখানে না ব’সে বাঁপাশ ঘেঁষে বসি, যেন খুব সহজে পাশ থেকে চাপিয়ে দু’দিক থেকে আমাকে অবরুদ্ধ ক’রে না ফেলতে পারে কোনো দুষ্কৃতি। কিন্তু ঘটনা এমন উপায়েই ঘটে, যে সেই প্রস্তুতি কখনও যথেষ্ট হয় না, হয়ওনি। হ্যাঁ, কাল বিকেলেও একবার আমার মনে হয়েছিল অন্য বিভিন্ন সময়ের মতো, যে আমি যদি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ি আরেকবার, তাহ’লে কী হবে! এমনকি রিকশার পাশে এসে ছিনতাইকারীরা দাঁড়ালে আমি কীভাবে কী রোধ করবো চেষ্টা করবো ব’লে ভেবেছিলাম সেগুলোও আবার চোখে ভেসে উঠেছিল তখন। না, পরিহাসবোধে তখনও হাসি পায়নি আমার। হাসি পেয়েছে পরে, রাতে যখন আবার পুরো ব্যাপারটার একটা রিক্যাপ হচ্ছিল মাথায়। সন্ধ্যায়ও অফিস থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ আগে কাকের তালে এমনকি এটাও ভেবেছি- এই যে এমন ক’রে আজকাল প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় অফিসপাড়া শেষে নাটকপাড়ায় যাচ্ছি সিএনজি ক’রে, এটা ঠিক হচ্ছে না, নিরাপদ হচ্ছে না- একটু আগেভাগে বেরিয়ে, একটু ঝামেলা ক’রে হ’লেও বাসে যেতে পারা ভালো। না, শেষে অতো সময় রেখে বের হওয়াও হয়নি যথারীতি, বাসে যাওয়াও হয়নি।

অফিস থেকে নামলাম ৮টা ২০-এ। ৯টার মধ্যে শিল্পকলায় পৌঁছাতে চাই। বসের সাথে অফিসের নিচের বর্ধিত মিটিং (স্ট্যান্ডিং) থেকেও ছুটি নিয়ে নিলাম কয়েক মিনিটের মধ্যেই, কারণ আমাকে ‘দূর ইশারায়’ হাতছানি দিয়ে ডাকছিল সোনার ছেলেরা। এটা খুব কম ঘটলেও আগে কখনও যে ঘটেনি তা নয়, সিএনজি-ওয়ালা ১০০-৮০’র দাবি না ক’রে যথেষ্ট ভদ্রলোকের মতো বললো- “দশ টাকা বাড়ায়া দিয়েন”। সময়মতো যেতে পারবো’র সাথে সাথে আমি যথারীতি খুশি হয়ে উঠলাম এই কারণেও যে- এখনও কিছু ভদ্র সিএনজি-চালক আছে, যারা এক ভাড়ায় দুই ভাড়ার টাকা উশুল করতে না চেয়ে বরং ন্যূনতম ন্যায্য থাকার চেষ্টা করে। তেজগাঁ’র দিকে গিয়ে ওই অন্ধকার প্রধান সড়কেই স্কুটারের স্টার্ট থেমে যায়। একটু পরেই বুঝতে পেরেছি, আসোলে ইচ্ছে ক’রেই স্টার্ট থামিয়ে দেয় আমার সেই ভদ্র সিএনজি-চালক, হঠাৎ এক সন্ধ্যায় আমার অবস্থা-অবস্থানেরও যে চালক হয়ে গিয়েছিল সে! স্টার্ট নেয়ার একটা মিথ্যা চেষ্টাও ঠিকঠাক শেষ হয়নি, তার মধ্যেই দু’পাশ থেকে তিনজন এসে ঢুকে গ্যালো আর কিচ্ছুটিও বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়ে। বিশ্রী গালিগালাজ করতে করতে মুখ-গলা-হাত-হাঁটু সবই চেপে ধরতে পারলো তারা, চাপিয়ে দিলো আমায় জীবনের এই বিশ্রী নর্দমার উপরে আরো একবার। মাঝখানের-জন বসলো আমার কোলের উপরে, আর আমার হাতদু'টোও নিয়ে বন্দি করলো তার হাতের বন্ধনিতে- যেন ছেলেখেলার কাঠের টাট্টুঘোড়া আমি, বড় অধিকার নিয়ে তাতে চ’ড়ে বসেছে সে তার আনন্দের উপলক্ষে। না, ট্রমা তেমন একটা বেশি হয়নি এবার। মাথাও যথেষ্ট ঠাণ্ডা ছিল কয়েক সেকেন্ড যাওয়ার পর থেকেই। এতটাই ঠাণ্ডা এবং সচেতন, যে জীবন-সম্পর্কিত আমার ঈষৎ-পরিবর্তিত ভাবনা এবং নির্দিষ্ট ক’রে এই ঘটনাটা এবার যেভাবে ঘটছিল সেই মুহূর্তে, তাতে খুব বোঝাই যাচ্ছিল আবার, যে ঝামেলা ক’রে আসোলে দূর-অদূর ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যাওয়া বৈ লাভ কিছু নেই। আগের দু’বারের চেয়ে এবার এত বেশি সফিস্টিকেটেড আর কার্যকরভাবেই হয়েছে ব্যাপারটা, যে চারটে মানুষ আর চার-চাকা-চলা একটা বড় যন্ত্রের বিরুদ্ধে এই আমার মতো নিম্নস্তরের স্বল্পবুদ্ধির প্রাণীর ঝামেলা করার সামর্থ্যের কথা বাদই দিই, আসোলেই সুযোগও ছিল না কোনো। ওরা ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই স্কুটার ঠিকই স্টার্ট নিলো আবার, একটু পরেই একটা গলির ভেতরও ঢুকে গ্যালো। আশপাশ থেকে অন্য কারো বোঝা তেমন সম্ভব ছিল না ভিতরে কী হচ্ছে, এবং সেটা বুঝলেও নিশ্চয়ই কেউ কিছু করতোও না আসোলে। আগের বার মাদারটেকের রোমাঞ্চকর ঘটনাটাও রাস্তাভর্তি মানুষের সামনেই ঘটেছিল পূর্ণ-প্রকাশ্য নিয়ন-টাংস্টেন আলোয়। পেশীবহুল না হ’লেও পশুর শক্তিতে দুরূহ তিনটে ছেলের সাথে ভিতরেও কিছু করতে পারলাম না বা চেষ্টাও করলাম না আমিও।

অ্যান্ড দ্য মিশন ওয়াজ কমপ্লিটলি সাকসেসফুল! মুখ চেপে ধ’রেই প্রশ্ন ক’রে উত্তর শোনার জন্য একটু মুখটা ছেড়ে আবার ধরে। আমি যখন অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া কিংবা গুলি-চাকু-মলম মারা (যেগুলোর আলাপ-সালাপ করছিলই তারা) জাতীয় আরো বড় কোনো ঝামেলা না করতে বলতে যাই, তখনই আবার মুখ-চেপে-ধরাটা ওরা নিশ্চিত করছিল তৎক্ষণাৎ। আর তিনমুখের গালিগালাজ হুমকি-ধামকি যেমন চলতে থাকে নিরন্তর, তেমনি দু’দিক থেকে দু’জনের তিনটি হাত আমার জিন্সের চারটি পকেটই পরিষ্কার করতে থাকে স্থির লক্ষ্যে। ওয়ালেটের ভিতরের অর্থকড়ি সাফা ক’রে আমার অনুরোধমতে কাগজপত্র আর তিনশ’ টাকা (ওর কথামতে। পরে আমি উদ্ধার পেয়ে ওয়ালেট খুলে দেখেছি দেড়শ’ টাকা) রেখে দিলো। কবজি পর্যন্ত বন্দি আমার হাতেই ফিরিয়ে দিলো সেই ওয়ালেট। দুই পকেট থেকে দুই ফোন বের ক’রে নিয়ে বাসার চাবির গোছাটাও আমার পকেটে ঠিকঠাকই রেখে দিলো সেই ভালোমানুষের দল। এটুকু কাজ সেরে গলি থেকে স্কুটার ঘুরিয়ে আবার মূল রাস্তার দিকে নিয়ে আসতে আসতে, মাঝেমধ্যেই শুধু শুধু অভিনয়ে স্কুটারওয়ালাকেও গালি দিতে দিতে, চশমা খুলতে গ্যালো আমার চোখে মলম দেয়ার জন্য। আমি সেটা করতে হবে না বলার অপরাধে বাঁয়ের ছেলেটা পাশ থেকে একটা বিকট চড়ও মারলো, যাতে চশমাটা বেকে গ্যালো, চোখ থেকে বেরিয়ে নাকে ঝুলে থাকলো কোনোমতে। মায়োপিক চোখ আর ঝুলে-পড়া চশমা নিয়ে প্রায় অন্ধ অবস্থায়ই ছিলাম আমি ওদের সাথে বাকি কয়েকটা মিনিট। বড় রাস্তায় উঠেও সামনের দিকে আরো কিছুক্ষণ এগিয়ে সাতরাস্তার কিছু আগে এমনই আরেকটা অন্ধকারে স্কুটার থেকে নামিয়ে দিলো আমাকেই, যেখানে রাস্তা সবচেয়ে নির্জন আর জনসুবিধাবঞ্চিত। নামিয়ে পিছন দিয়ে ঠেলে আরো কিছুটা এগিয়ে দিতে দিতে বললো- “পিছনদিকে হাঁইট্যা যা, সামনে তাকাইলেই গুলি কইরা দিমু”। মলম কিংবা গুলি খাওয়ার সব সম্ভাবনা শেষে রাস্তায় মারা গ্যালো আমার। জানরক্ষার সেই ভ্যাবাচ্যাকা সান্ত্বনা নিয়ে আমি আরো মিনিট আধেক পর উল্টো ঘুরলাম, কিচ্ছু আর নাই ততোক্ষণে সেদিকে। এগুলাম সামনের দিকে, প্রথম লক্ষ্য কোনো একটা ফোনের দোকান। সেই একই সান্ত্বনা নিয়ে তারপর আবার চলতেই থাকলাম, বোকার মতো আরো হয়তো বেঁচেও যাবো বিশ-পঁচিশ বছর! হায়!

শিল্পকলায় পৌঁছে আমার সর্বশেষ অবস্থার সবিস্তার দেয়ার জন্য বন্ধুর ফোন থেকে যখন বড়ভাইকে ধরলাম দ্বিতীয়বারের মতো, তখন তার কণ্ঠে বিস্ময়টাই বেশি- “হোয়াই ইউ অ্যাগেইন অ্যান্ড অ্যাগেইন?!” আমি জানি না এটার উত্তর। বরং এটাই জানি যে আরো মানুষেরও হয়। যখন হয় তখনই হয়, তার আগে পর্যন্তই সে বহাল নিরাপদ বা সৌভাগ্যবান।

যাক। যা যাওয়ার, গ্যাছে আবারও। “সব আল্লাহর ইচ্ছা!” এখন আমি আবার চারদফা শপথ নিয়েছি ভালো হয়ে যাওয়ার। যতোটা সম্ভব এই দেশের যোগ্য নাগরিক হয়ে যাবো আবার। আপনারাও সাথে একটু আধটু হাত তুলতে আর গলা মিলাতে পারেন, লাভ ছাড়া ক্ষতি কিছু হবে না বোধ করি। আমি শপথ করিতেছি যে-

× শুধু কথা বলা আর এসএমএস করা যায়- এমন লো-কস্ট বেসিক ফোনসেট ছাড়া আর কিছু এই দেশে কখনও আর ব্যবহার করবো না।
×× সাথে নগদ টাকা কখনই খুব বেশি রাখবো না।
××× একান্ত প্রিয়জনের কোনো মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি ছাড়া, যতো তাড়াই থাক, রাতের বেলায় এই শহরে অন্তত একা কখনও সিএনজি-স্কুটার বা রিকশায় আর উঠবো না। পাবলিক ট্রান্সপোর্টই পাবলিকের বন্ধু, হ্যাঁ সত্যিই।
×××דএই দেশ” নিয়ে বা “এই দেশে আমি” নিয়ে আর স্বপ্ন(দোষ) না দেখার জন্য সদা সচেষ্ট থাকবো।

আমিন।

৬ মে ২০০৯, দুপুর
মহাখালী, ঢাকা


মন্তব্য

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনার মতোন আমিও একবার প্রায় উন্মাদ হয়ে গেছিলাম! সেকথা আর না বলি। এগুলা ঘটনা সহ্য করার মতোন মানসিক জোর আমার নেই।

আপনার সাথে আমিও বলি আমিন! শোক কাটিয়ে উঠুন। ভালো থাকুন।
টিভিতে সিটিসেলের একটা ফোনের অফার দেখায়, রিক্সা ওয়ালারাও কিনতে পারে, ঐরকম একটা সেট ঢাকায় গেলে কিনে নেবো, আপনিও নেন।

ঢাকায় গেলে আমি ঘুণাক্ষরেও আমার সাধের পিডিএ নিয়ে বাইর হই না।
ইলেকট্রনিক্স জিনিসের প্রতি আমার আকর্ষণ অমোঘ, আমি গরীব মানুষ, কিন্তু ঐ জিনিস আমারে বড়লোকদের মতোই টানে!
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

থ্যাংকস, আরেফীন ভাই।
হ্যাঁ, কিনে আনলাম একটা ওইরকমই সেট।
হুম।
ভালো থাকেন।
নিরাপদ থাকেন।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

এমন ঘটনায় গা চিড়বিড় কর্লেও ঐ সময় চুপচাপ থাকাটাই আপ্নার-আমার মত মায়োপিকদের জন্য শ্রেয়।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

হ্যাঁ।
মন খারাপ
ধন্যবাদ সিমন।
ভালো থাকেন।

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

সিরাত এর ছবি

অসাধারন লিখেছেন। পড়ে খারাপ লাগছে যদিও।

দেখতে বাচ্চাদের মত (৫'৪") আর স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে যাই বলে, আর হয়তো আদৌ সিএনজি ব্যবহার করি না বলে বেঁচে গেছি - কখনোই ছিনতাইকারীর সামনে পড়তে হয় নি। মা আর বোন স্ট্যাবড হয়েছে, বাপকে জুম্মার সময় মসজিদে এ্যানাউন্স করিয়ে আনিয়েছি। ক্রাইম! মন খারাপ

৫ দিতে পারি না, কিন্তু এটা ৬! এরকম ইমারসিভ লেখা কম পড়েছি।

সাবধানে থাকুন।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

হুম।
মন খারাপ
অনেক ধন্যবাদ সিরাত।
হ্যাঁ, আপনিও নিরাপদ থাকেন।
এখন পর্যন্ত শিকার হন নাই বলে আবার নিরাপদ মনে ক'রেন না যেন নিজেকে!
সবসময় সাবধানেই থাকেন।

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

হিমু এর ছবি
সাইফুল আকবর খান এর ছবি

চোখে কিছু লাগায়নাই।
চশমা সরায়া দিছিল শুধু থাপ্পড় মেরে।
চোখে ডিরেক্ট কোনো ক্ষতি হয় নাই।
এমনিতে গলায়, গালে আর কনুইয়ে টুকটাক ইনজুরি হৈছে, বেসিকেলি হাতের চাপ আর নখের আঁচড়ে।
গলায় একটু বাঁধা বাঁধা লাগতেছে এখনও।
অভারঅল, আছি মোটামুটি ঠিকঠাক।
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকেন।
হাসি
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

এনকিদু এর ছবি

× শুধু কথা বলা আর এসএমএস করা যায়- এমন লো-কস্ট বেসিক ফোনসেট ছাড়া আর কিছু এই দেশে কখনও আর ব্যবহার করবো না।
×× সাথে নগদ টাকা কখনই খুব বেশি রাখবো না।
××× একান্ত প্রিয়জনের কোনো মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি ছাড়া, যতো তাড়াই থাক, রাতের বেলায় এই শহরে অন্তত একা কখনও সিএনজি-স্কুটার বা রিকশায় আর উঠবো না। পাবলিক ট্রান্সপোর্টই পাবলিকের বন্ধু, হ্যাঁ সত্যিই।
×××דএই দেশ” নিয়ে বা “এই দেশে আমি” নিয়ে আর স্বপ্ন(দোষ) না দেখার জন্য সদা সচেষ্ট থাকবো।

১। অবশ্যই ব্যবহার করবেন, একশ বার ব্যবহার করবেন । তবে ঘরের বাইরে গভরী রাতে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করবেন না ।

২। এটা কিন্তু ঠিক বলেছেন । ঢাকা শহরে শান্তিতে চলা ফেরা করার অন্যতম পূর্বশর্ত ।

৩ । এটাও ঠিক ।

৪ । এটা মহা বেঠিক । এই ব্যপারটা আসলে মারাত্মক একটা রোগ । স্বপ্ন দোষের থেকেও ভয়ংকর । কোন জিন্দা পীরের স্বপ্নে পাওয়া অষুধেও সারবে না । রোগটা একটু স্তিমিত হয়েছে মাত্র । সময়মত আবার চাগা দিয়ে উঠবে, নিজেই টের পাবেন ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

১। নারে ভাই, আমি তো হাঁটাহাঁটিও করতেছিলাম না, আর ওইটা গভীর রাতও ছিল না!
৪। হুম। সেটাই সমস্যা।

ধন্যবাদ।
ভালো থাকেন। নিরাপদ থাকেন।

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

মামুন হক এর ছবি

খুব খারাপ লাগলো পড়ে।
সব বিপদ আপদ ভালো মানুষদের উপরেই যে কি কারনে আসে তা বুঝিনা।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

মন খারাপ
ধন্যবাদ মামুন হক।
ভালো থাকেন।

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

কীর্তিনাশা এর ছবি

সাইফুল ভাই আমার সমস্ত শুভকামনা আপনার জন্য।

আর এনকিদুর সাথে সহমত

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

হ্যাঁ ভাই, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
হাসি
আপনিও ভালো থাকেন।
নিরাপদ থাকেন।

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

কী কমু, আপনার গলায়-ঘাড়ে ক্ষতচিহ্নগুলোতো চোখের সামনেই দেখতেছি।
আমি খুব ভয়ে ভয়ে আছি, ঢাকা শহরে আমার যতো মানুষের সাথে তারা সবাই-ই ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে। আমি এই ৮/৯ বছরের ঢাকা বাসে এখনো এই বিপদে পড়িনি। একবার শুধু বাসের জানালায় হাত রেখে ঘড়ি হারানো ছাড়া।
আল্লাহ জানে কী আছে কবে, কপালে!

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

হ্যাঁ, আবার "সব আল্লাহর ইচ্ছা"! মন খারাপ

কখনও যেন না পড়ো এমন অভিজ্ঞতার সামনে।
খুব সাবধানে, নিরাপদ থাকো ভাই।

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

নজমুল আলবাব এর ছবি

হিমু কিন্তু আগেই সাবধান করেছিলো...

কি আর করা। এইটাই আমার দেশ। বি ইজি।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

হুম।
মন খারাপ

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

শুধু কথা বলা আর এসএমএস করা যায়- এমন লো-কস্ট বেসিক ফোনসেট ছাড়া আর কিছু এই দেশে কখনও আর ব্যবহার করবো না।

আমি এখন তাই করি।

এইসব সোনার ছেলেদের নিয়েই আমাদের দিনরাত্রি। আমরা কাজ করি, খাই, ঘুমাই সব নিজের যোগ্যতায়। কিন্তু বেঁচে থাকি সেই তেনাদের দয়ায়। বার্ডফ্লু, সোয়াইন ফ্লু এসবে আমাদের কিচ্ছু হয় না। তেনাদের ভয়ে আমরা নির্জন রাস্তার প্রাকৃতিক শোভাদর্শন থেকেও বিরত থাকি। আর কত? সোনার ছেলেরা তো এদেশরই সন্তান!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

সেই!
কিচ্ছু বলারই থাকে না আসোলে।
তবু তো একটা কিছু আউটবার্স্ট এক্সপ্রেস করলাম কোনোমতে।
নাইলে কষ্ট আরো বেশি গুমোট হয়ে ঠেঁসে ধ'রে রাখে ভিতরে।
অনেক ধন্যবাদ নীড়সন্ধানী।
ভালো থাকেন।

__________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এত সুন্দর করে লিখেছেন, চমৎকার। শুধু "ক'রে" ধ'রে বা এধরনের শব্দের উপরে কমা (,) না দিলে ভালো হতো। এগুলো এখন মনে হয় চলেনা।

আমার ফটোগ্রাফির শখ। অথচ দেশে থাকতে ভালো ক্যামেরা ছিলনা। তাই হিমু বা রাগিব যখন দেশের ফুল পাখির ছবি চায় তখন খারাপ লাগে। এখন একটা ভালো ক্যামেরা কিনেছি। মনে মনে ভাবি যখন দেশে যাবো তখন ইচ্ছে মতো ছবি তুলব, আর সেগুলো দিয়ে দেব সচল কিংবা উইকিপিডিয়াকে। পরক্ষণেই ভাবি এই ক্যামেরা নিয়ে তো বের হতেই পারবোনা, ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ওরা আমাকে পরপারে চালান করে দেবে।

এত সম্ভাবনাময় একটা দেশ অথচ রাজনৈতিক নেতাদের কীর্তিকলাপের কারণে এগুতে পারছেনা।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

ঠিকাছে বস।
আর দিমু না ওইগুলান।
আর, পরের ব্যাপারে আর কী কমু!
দুঃখ ছাড়া আর কী-ই করার আছে! হয় না, মেলে না।
মন খারাপ
ধন্যবাদ।
দূরে আছেন, ভালো থাকেন।

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

রানা মেহের এর ছবি

আপনি ভালো আছেন তো?
কষ্ট হচ্ছে বেশী?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

হ্যাঁ, বেটার আছি।
গলায় একটু ব্যথা হচ্ছে আজকে দু'পাশে, প্যারাসিটামল খেয়েছি।
দেখা যাক।
ধন্যবাদ।
আর, শারীরিক ছাড়া অন্যান্য কষ্টের কথা আর কী বলবো বলেন! মন খারাপ

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনার জন্য খুউবই খারাপ লাগল। আশা করি, আপনার জীবনে এরকম দুর্ঘটনা আর ঘটবে না। আপনি যে অসাবধানী মানুষ না, জানি। তবুও বলি আরো সতর্ক, সাবধানী হতে।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার কী জানেন, আমার দেশে, আমার শহরে আমি একটু শান্তিমতো নির্ভাবনায় ঘুরতেও পারব না! বের হলেই মাথায় ঘুরবে খালি এই বুঝি ছিনতাই হলো, এই বুঝি জীবন গেল। এইটা খুব দুঃখজনক।

তবে লেখাটা যে খুবই অসাধারণ হইসে, এতে কোনোই সন্দেহ নাই। আপনার সেন্স অভ হিউমার সত্যিই দারুণ।
ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন। সুস্থ থাকুন। শুভকামনা থাকল।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

আর দারুণ লেখা! আর সেন্স অব হিউমার!
কী খাবো এইগুলা ধুয়ে!
যাক, তবুও থ্যাংকস।
আমার গলায় (ওই বীরপুরুষগুলা যেখানে চাপাচাপি করছিলো) দুপুর থেকে বেশ ব্যথা হৈতেছে।
তাই মাথাটাও আবার নতুন করে খারাপ লাগতেছে।
কিছু মনে করবেন না।
হ্যাঁ, আমার সব শুভবোধ, বেচারামি আর আমারই আর্ন করা জিনিসপত্র অন্য একজনকে দিয়ে দিতে হবে কারণ .. কিন্তু, আসোলেই তো, কারণটা কী-ই-বা! ... এটা মেনে নিলে আর জীবন-মন-বিবেকের কিছু বাকি থাকে না।
এটাই চূড়ান্ত ডিমোরালাইজিং একটা জায়গা।
থ্যাংকস, অপ্র।
ভালো থাকেন।
নিরাপদ থাকেন।

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

না না, কিছু মনে করিনি। বরং এই পরিস্থিতিতে খারাপ লাগবে আপনার, এটাই তো স্বাভাবিক। আমিই দুঃখিত, অবস্থা না বুঝে একটু ছেলেমানুষি কথা বলে ফেলায়।

আসলেই খুব খারাপ লাগল আপনাকে এমন একটা ঘটনার সম্মুখীন হতে হলো জন্য। খুব তাড়াতাড়ি যেন এই দুঃসহ স্মৃতি ভুলে স্বাভাবিক হতে পারেন, সেই প্রত্যাশা করি। ভালো থাকবেন। আপনার নিরাপদ জীবন কামনা করি।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

না রে ভাই।
এত শক্ত ক'রে দেইখেন না।
কোনো ছেলেমানুষি কথা বলেন নাই আপ্নে।
আসোলে, একটা জায়গায় নিদারুণ পরিহাসে নিজেই ভাবতেছিলাম কালকে থেকেই, যে এমন একটা বিষয় নিয়েও কী সুন্দর সাহিত্যমান বজায় রেখে ব্লগ লিখলাম, তা-ও আবার যেটাতে কিনা সমবেদনার পাশাপাশি প্রশংসাও পাওয়া যাচ্ছে।
মানে, আমিই তো দায়ী এটার জন্য।
সো, আপনি স্যরি হয়েন না প্লিজ।
আমি নিজেকে নিয়েই ওইটা ভাবছিলাম একটু দুঃখ নিয়ে, তাই ওই কথাটা ওইভাবে বেরোইছিল।
হ্যাঁ ভাই, আমি এটাও জানি, এখনও মানি, যে এই যে এসে এসে একটু কথা ব'লে যাচ্ছেন সমমর্মী সহমর্মী হয়ে, সেটারও দাম আছে অনেক।
এই নষ্ট পৃথিবীতে এখনও এটা যে টিকে আছে আমাদের মতো কারো কারো মধ্যে, সেটাও কম কথা না একদমই।
সো, সিন্সিয়ার থ্যাংকস, ফর এভরিথিং।
ইউ টু টেক কেয়ার এন্ড কিপ সেফ।
কথা হবে।
হাসি

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বুঝতে পারছি রে ভাই। চিন্তা কইরেন না আমারে নিয়া। আমি কিন্তু কিছুই মনে করিনি। তবে আপনার মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে খারাপ লাগছিল। এখন আশা করি আগের চাইতে ভালো আছেন।

নতুন সেট কিনলেন দেখলাম (মন্তব্যে)।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

হাসি
ওক্কে।
হ।
হাসি
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

একবার মুহাম্মদপুরে সারারাত মদ খেয়ে ভোরে বাড়ি ফিরছিলাম আমি আর দিনার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে আসতেই কয়েকটা ছেলে ছুরি দাও নিয়ে সামনে দাঁড়ালো। টাকা মোবাইল নিলো। চলে গেলো। আমাদের দুজনের জীবনেই সেটা প্রথম ছিনতাই। তার উপরে মাতাল থাকায় কিছুই বুঝি নাই। ওরা চলে গেলে বুঝলাম যে ছিনতাই হলো।

তার পরেরবার খুব অভিনব কায়দায়। আমি উত্তরায় রিক্সা করে যাচ্ছি। এক লোক অভিযোগ করলো রিক্সা নাকি তার পায়ের উপর দিয়ে চলেছে। তাই সে রিক্সাওয়ালাকে বকা দিলো। আমাকে কিছুই বললো না, চলে গেলো। অন্য লোক এসে রিক্সাওয়ালাকে উপদেশ দিতে লাগলো। আর আমার কাছে বিচার দিলো রিক্সাওয়ালার নামে। আমার তার কথা শুরু হলো। কথা চলতে চলতে সে আমি কী করি না করি এইসব খবরও নিলো। এই করতে করতে রিক্সা আগাতে আগাতে এক গলির সামনে গেলো। আর দেখলাম এই গোটা রাস্তায় যারা আছে বিভিন্ন প্রাণ্তে ছড়িয়ে তারা সবাই সেই লোকের পরিচিত। আমি তখনো কিছু বুঝি নাই। সে আমার সাথে খুবই ভদ্র আচরণ করলো। ইংরেজিতে কথা কইলো। স্মার্ট।
কিন্তু গলির মুখে গিয়েই বুঝলাম আমি ট্র্যাপে পড়ছি। তখন কিছুই করার নাই। আমার দুইটা দামী মোবাইল সেট, ১০,০০০ টাকা সব গেলো।

আমি সবসময়ই ভাবি কথা বলা যায় এরকম একটা সেট হলেই কাফি। আমি মোবাইলের আর কোনো সুবিধা ইউজ করি না। এখন যেই সেট আমি ইউজ করি। সেটা গিফট পাওয়া। অনেক দামী। অত্যাধুনিক সব সুবিধাই আছে। আমার বউ কয়, ভালো একটা সেটের অপচয়। কারন আমি এই সেটের কিছুই ইউজ করি না।

যা হোক... কিছুই বলার নাই। সমবেদনা ছাড়া। সুস্থ থাইকেন।

কিন্তু এই টাকাটা নিয়ে কেন ঘুরাঘুরি করতেছিলেন? ব্র্যাক ব্যাঙ্কের যে কোনো শাখায়ই তো জমা দিতে পারতেন। বা আমারে বললে আমি কালেক্ট করার ব্যবস্থা করতে পারতাম।

যা হোক... ভালো থাইকেন। সুস্থ থাইকেন। ফোন্দিমুনে কালকে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

হ বস।
আমারও দ্বিতীয়বারেরটা আপ্নের দ্বিতীয়বারেরটার মতো রিকশাওয়ালার ওপর তাদের অভিযোগ দিয়াই শুরু হৈছিল, অনেকটা ওইভাবেই।
হ, কিনছি একটা নকিয়া ১২০৯, দাম ২৪০০ টাকা।
২৪০০ টাকায় আবার কালার স্ক্রিন! এমনকি পছন্দমতো কালার স্কিম আর থিম সিলেক্ট করা যায়! আবার, ফোন আসলে রিংও বাজে! চোখ টিপি
আমি এইটা নিয়েই সুখে থাকবো।
লাইফে সেল্ফ-সিকিউরিটির ব্যাপারে radical কোনো চেঞ্জ না আসলে এমন জিন্দেগিতে আর দামী সেটের চিন্তাও করতে চাই না! মন খারাপ
দিনের বেলা কামলামি থেইক্যা বাইর হওনটাই ভেজাল আমগো লেইগ্যা।
তাই, ভাবতেছিলাম কয়েকদিনের মইধ্যে কোনো এক সন্ধ্যায় তারেকরে বা আপনেরে দিয়া দিমু।
এইটাও তো লিখছি, ওইদিনই সন্ধ্যার আগে আগে তারেকরে ফোনও দিছিলাম, পাই নাই।
যাক, যা ঘটার ঘটছে।
আব্বা কইছে- "সব আল্লাহর ইচ্ছা"! মন খারাপ খাইছে
থ্যাংক্যু বস।
সুস্থ থাইকেন আপনেও।
আগের সিম-টা আবার তুলে নেই, তারপরে আমিই নম্বর নিমু আবার আপ্নের।

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পড়তে দেরী হয়ে গেলো। কমেন্টেও...
অসহায় অনুভব প্রকাশে শব্দ খুঁজে পাইনা মাঝে মাঝে।

আগামীতে ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন; এই শুভকামনাই রইলো...

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

ইট'স ওকে।
থ্যাংকস আ লট।
ভালো লাগলো। আপনিও ভালো থাকবেন শিমুল। হাসি
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।