নৈতিকতা নিয়ে আমার ভাবনা গুলো

তানবীরা এর ছবি
লিখেছেন তানবীরা (তারিখ: সোম, ০৮/০৯/২০০৮ - ২:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নৈতিকতা নিয়ে আমার ভাবনা গুলো

মুক্তমনায় এখন লেখালেখি চলছে, সামনের বইমেলাতে প্রকাশিতব্য আমাদের বই “ধর্ম ও বিজ্ঞান, সংঘাত নাকি সমন্বয়”কে কেন্দ্র করে। একটি বিশেষ বিষয়কে ঘিরে সবাই তার পক্ষের - বিপক্ষের যুক্তি তুলে ধরছেন, নানা বড় বড় মনীষী, গবেষকদের উদ্ধৃতি দিচ্ছেন যার যার নিজের লেখাতে। এর মধ্যে অবধারিত ভাবেই হয়তো একটা কথা বার বার চলে আসছে, ধর্ম মানুষের কি কাজে লাগে , ধর্মের প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারিতা। এই লেখা গুলো পড়ার পর যখন নিজে নিজে সেগুলোকে নিয়ে ভাবি আর নিজের প্রতিদিনের জীবনের চারপাশটা মিলিয়ে দেখতে যাই, প্রায়শই একটা জিজ্ঞাসা মনে খেলে যায় । কোনটা তাহলে সত্যি? একটা জিনিস একই সাথে কালো এবং সাদা দুটো হতে পারে না, জিনিসটি হয় কালো নয় সাদা। নাকি আমরা চরম স্বাভাবিক সত্যকে মেনে নেয়ার মতো সাহস নিজেদের মধ্যে সঞ্চয় করতে পারি না, নিজেদের মানসিক দুর্বলতাকেই ধর্মের আবরনে মুড়ে নেই? আর বার বার কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার মতো কালো মেয়েকে উজ্জল শ্যাম বর্ন বলে চালাতে চাই, ব্যাপার তাই কি ? আমার চিন্তা ভাবনাই কি ধোয়াশা নাকি আমিই ঠিক বিষয়টি বুঝতে পারছি না। আমার এই লেখা অনেকটা আমার আত্ম জিজ্ঞাসা। এতে শুধুই আমার মনের ভাবনা গুলো যেগুলো অনেক সময়ই জট পাকিয়ে যায় তাই লিখছি। এতে কোন মনীষীর কিংবা গবেষকের উদ্বৃতি নেই, আছে সাধারন একজন মানুষের তার চারপাশ অবলোকন করা আর তার দ্বিধাগ্রস্ত মনের এলোমেলো ভাবনা।

অনেকেই তাদের লেখায় ধর্মের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, মানুষের মধ্যে নৈতিকতা সৃষ্টির জন্য ধর্মের প্রয়োজন আছে। সত্যিই কি তাই? কি সেই ধর্ম বিশ্বাস যার থেকে নৈতিকতা উৎপন্ন হয়ে এমন চরমে চলে যায় যে একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের গলায় ছুরি চালিয়ে দিতে দ্বিধা বোধ করেন না? কোন সেই নৈতিকতার কারনে প্রত্যেক ধর্মের ধর্মপ্রাণ লোকেরা অন্য আর ধর্মের ধর্মপ্রাণ মানুষের বাসায় জলগ্রহন করতে দ্বিধা বোধ করেন? একজন ধর্মপ্রাণ ব্রাক্ষণ কিছুতেই কোন হাজী মওলানার বাড়ীতে খাদ্য দ্রব্য স্পর্শ করবেন না, যেমন করবেন না একজন মওলানাও একজন ব্রাক্ষণের বাড়ীতে। অথচ দুজনেই যার যার ধর্মের মহারথী, দুজনেই নৈতিকতার ধারক এবং বাহক। এতে নৈতিকতাই বা কোথায় আর ধর্মই বা কোথায়? এটা কি তাদের প্রতি সৃষ্টি কর্তার কিংবা সৃষ্টি কর্তার প্রতি তাদের অনাস্থাই প্রমাণ করে না? মানুষকে ঘৃণা করা, একজন মানুষের প্রতি আর একজন মানুষের অবিশ্বাস ও সন্দেহই কি ধর্ম আর নৈতিকতা?

ধর্ম থেকে আসা নৈতিকতার কিছু উদাহরণঃ আমি এখানে আমার চোখে দেখা ধর্মের নৈতিকতা নিয়ে আমার ভাবনা গুলো লিখবো। বাংলাদেশ অত্যন্ত গরীব দেশ হওয়াতে আমাদের দেশের লোকের সর্বপ্রথম যে চিন্তাটা থাকে তাহলো যেনতেন প্রকারে নিজের এবং ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য যতো দ্রুত এবং যেকোন উপায়ে সম্ভব আখের গুছিয়ে ফেলা। অন্ততঃ জলপাই সরকার এসে অনেক রথী মহিরথীর বাড়ি থেকে যে হারে রিলিফের টিন উদ্ধার করেছেন তাতে এ ব্যাপারে অন্তত কারো দ্বিমত থাকার কথা না। যার যতোই থাকুক না কেন সোনার চামচে যেনো নিজের সন্তান খেতে পায় তার সুবন্দোবস্ত নিশ্চিত করে যেতেই হবে। যার যার সার্মথ্যনুযায়ী সে সে হাত বাড়ায়। মসজিদের শহর ঢাকা, সুমধুর আজানের ধ্বণিতে চারপাশ অনুরণিত সারাবেলা। মুসলমানদের দ্বিতীয় মহামিলন এজতেমা হয় এই দেশে। যে দেশের প্রায় নব্বই ভাগ লোক চূড়ান্ত ধর্মপ্রান সে দেশ দুর্নীতিতে ডাবল হ্যাট্রিক !!! এটাকে কি চোখে দেখবো? এই রঙের নাম কি কালো না সাদা? নাকি ছাই বর্ন এটাকেই বলব?

চরম দারিদ্রতার কারণে বাংলাদেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী, সে যে উপায়েই হোক বিদেশ পাড়ি জমান। দুর্ভাগা বাংলাদেশের চরম হতভাগা লোকগুলো সোনার হরিণের পিছনে বাবা - মায়ের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে ছুটে আসে নিজের তথা পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। বারো থেকে ষোল লক্ষ টাকা ব্যয় করে এসে যখন দেখে হরিণ গলিয়ে সোনা বের করে নেয়া হয়েছে বহু আগেই তখন তারা স্তব্ধ হয়ে যান। পিছনের সব ইতিহাস ভুলে যেয়ে, বাংলাদেশে কি করতেন, কি পড়তেন সেই দিন খাচায় তুলে রেখে, সেই টাকা উদ্ধারের জন্য যে কোন কাজ পান তাতেই ঝাপিয়ে পড়েন। এরমধ্যে সবচেয়ে সহজ লভ্য কাজ হচ্ছে কোন ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টে ঢুকে পড়া। ধার্মিক দাড়িওয়ালা, ক্ষেত্রবিশেষে টুপিওয়ালা মালিকরা তাদেরকে কখনো কখনো থাকা খাওয়ার জন্য কিছু দেন, অনেক সময় শুধু কাজের সুযোগটাই দেন, টিপসের টাকাই এলাহী ভরসা। আজকাল যেহেতু অবৈধ অভিবাসীদের উপরে বিদেশীরা খুবই ক্ষ্যাপা, অবৈধ কাউকে কাজে রাখা যে কারো জন্যই দশ নম্বর মহা বিপদ সঙ্কেত। তাই অবৈধ অভিবাসীদের কাজের ক্ষেত্র সীমিত হওয়ায় মাঝে মাঝে অনেক মালিক কৈফিয়ত দেন যে, এতো রিস্ক নিয়ে যেহেতু রেখেছি, পয়সা বেশি দিতে পারব না। অসহায় ছেলে গুলো কাগজ হলে একটা হিল্লা হবে এই আশায় বুক বেধে সেটাই নীরবে মেনে নেয়।

একশ্রেণীর ধর্ম পেশা লোকজন যে থালায় খাচ্ছে, সেই থালাকেই ফুটো করে যাচ্ছেন অবিরত। প্রথমতঃ অবৈধ একজনকে আশ্রয় দিচ্ছে, সরকারের বিরুদ্ধে যেয়ে। অবৈধভাবে তার শ্রমকে অপব্যবহার করছে এবং সরকারকে প্রতিনিয়ত শুল্ক ফাকি দিচ্ছে। যে শুল্ক দ্বারা সবার সন্তানদের স্কুল - কলেজের খরচা আসবে, অসুস্থদের ভাতা আসবে, গৃহহীন কারো গৃহের ব্যবস্থা হবে, কর্মহীন কারো মাসিক ভাতা আসবে, সব কিছুর উৎস এই শুল্ক। একসাথে কতোজনকে ফাকি দিচ্ছে তারা? সৃষ্টিকর্তা, সরকার, বিবেক ???
কিন্তু এই তারাই আবার সরকারের কাছে আবেদন - নিবেদন করে রবিবারে বাচ্চাদের ধর্ম শিক্ষার জন্য সরকারের কাছ থেকে বিনা মূল্যে মিলনায়তন সহ ইমামের বেতন আদায় করছেন। এর মধ্যে ধর্ম কোথায় আর নৈতিকতা কোথায় ? কিসের মূল্যবোধ তারা তাদের সন্তানদেরকে তথা সমাজকে উপহার দিচ্ছেন? ঠিক আছে কাফের সরকারকে ঠকাচ্ছে, কাফেরদের প্রতি কোন মূল্যবোধের বা বিবেকের দরকার নেই, কিন্তু দেশী ভাইদেরকে ঠকানোর পেছনে কি যুক্তি? এদের অনেকেই প্রায় প্রতি বছর পরিবার নিয়ে হজ্বব্রত পালন করে আসেন, তারপর আবার অনেক সময়ই শোনা যায় এই রেস্টুরেন্ট মারামারি হয়েছে কারণ পাচ বছরের দিন রাত খাটা পয়সা না দিয়ে বরং সেই শ্রমিককে পাওনা টাকা দেয়ার ভয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে, শ্রমিককে পুলিশে দিয়ে, মালিক হজ্বে !!!! জামিনে বেরিয়ে এসে তখন দেখা যায় সেই শ্রমিক মালিককে মারতে গিয়েছে, এদের সবাই কিন্তু ধার্মিক। এই রেষ্টুরেন্ট মালিকরা প্রায় প্রত্যেকেই প্রাথমিক অবস্থায় একদা শ্রমিক ছিলেন যারা পরবর্তী জীবনে মালিক হয়েছেন। শ্রমিক অবস্থায় তারা যে যন্ত্রণা ভোগ করেছেন, মালিক হয়ে তারা অন্যদেরকে সেই একই জিনিস ফিরিয়ে দিচ্ছেন, জীবন থেকে কি শিখেছেন তবে তারা কিংবা ধর্ম থেকে?

আজকাল আবার আর একটা ব্যাপার থাকে। মদ বিক্রি না করলে রেষ্টুরেন্ট চালানো যাবে না, আবার হাজী সাহবে মানুষরা মদ বিক্রি করতে পারবেন না। সামাজিক একটা ইয়ে ইয়ে ব্যাপার এসে যায়। তাই মালিকরা প্রত্যেকেই বয়ান করে থাকেন মদ বিক্রির পয়সা তারা খাবার বিক্রির পয়সা থেকে আলাদা রাখেন। কারন এটা হালাল না। এটা দিয়ে তারা কর্মচারীদের বেতন দেন। এখন, প্রথমতঃ যখন কেঊ বিল দেন, তখন তারা নিশ্চয়ই মদের টাকা আর হালাল খাবারের টাকা আলাদা করে দেন না। তারা তাদের কষ্ট করে উপার্জন করা হালাল টাকাতেই পাওনা পরিশোধ করেন। আর দ্বিতীয়তঃ যে ছেলে গুলো হাত পুড়িয়ে রেধে খাওয়াচ্ছে তারা হালাল পরিশ্রম করে তাহলে হারামের টাকায় বেতন নিচ্ছে!!!! যিনি কর্মচারীদেরকে হারাম বেতন দিচ্ছেন, তার বিবেক কিসের উপর ভর করেছে? এট কি ধর্ম না তার থেকে উৎপন্ন হওয়া নৈতিকতা?

পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে মানবিক অধিকার যাতে খর্ব না হয় এবং মানুষের জীবন যাত্রার মানের সমতা রাখতে বিভিন্ন ধরনের ভাতার প্রচলন আছে। এই ভাতার মূল উদ্দেশ্য থাকে দুর্বলদেরকে রক্ষা করা, তাদের নূন্যতম মানবিক প্রয়োজনগুলো মেটানো। প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের প্রত্যুৎপন্নমতি বুদ্ধির দ্বারা সরকারের সাথে টম এন্ড জেরীর হাইড এন্ড সিক গেম খেলে সারা বেলা। এমন কোন ভাতা নেই যা সরকারের কাছ থেকে তারা আদায় করেন না। এমনকি তালাকপ্রাপ্তা ভাতাও। আইনতঃ তারা বিবাহ বিচ্ছেদ করেন এবং ধার্মিক মতে বিবাহিত থাকেন। এই ভাতা কিন্তু খুব একটা সামান্য নয়। অনেকে এই টাকায় ঢাকায় গুলশানে, বারিধারায় তিন হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট পর্যন্ত কিনে নেন দু’বছরে। যদিও কাফের সরকারের এই পয়সাযে তাদের জন্য হালাল সেটা তারা কোরানের আয়াত, সুন্নাহ, ফিকাহকে ডলে পিষে বুঝিয়ে দিয়ে ছাড়বেন। ধর্মের মাধ্যমে নৈতিকতা শিক্ষার কি চরম উদাহরণ!!! তদুপরি বলব, যখন একজন অধার্মিক লোক চুরি করেন, তাকে নিয়ে উচ্চ বাচ্য করার হয়তো তেমন কিছুই নেই, তার জন্য হয়তো অন্যদের দৃষ্টিকোন থেকে সেটাই স্বাভাবিক। সে কোন কিছুর আড়ালে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে না। কিন্তু একজন ধর্মপ্রান সমাজ স্বীকৃত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ব্যাক্তি যখন চুরি করে তখনতো ধর্মের দিকে অঙ্গুলী উঠবেই, ধর্ম আধারিত নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হবেই স্বাভাবিক নিয়মে। প্রার্থনার ব্যাপারটি নিয়ে ধার্মিকরা সারাক্ষন মাতামাতি করেন। তারমানে কি এই ধরে নেয়া যায় না, অন্যায় করেন বলেই বারবার কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন আসে? যদিই অন্যায়ই না করেন, দুর্বলতাই না থাকে, তবে কিসের ক্ষমা চাওয়া? নিজেরা দুর্বল বলেই সারাক্ষন কারো আজ্ঞাবহ হওয়া কিংবা কারো উপড় নির্ভর করার ব্যাপারটা আসে।

আমার বিশ্লেষণে দুই ধরনের ধার্মিক আছে। এক ধরন হলো সাদা মাটা ধার্মিক। তারা কিছু না জেনে না বুঝেই ধার্মিক কিংবা বাবারেও করতে দেখছি তাই আমিও করি টাইপ। এই শ্রেণীর এমন অবস্থা বাবারও দশ খানা ছেলে পুলে ছিল তাই নিজেরাও সেই খাতায় নাম দিতে থাকে। যতক্ষণ না ডাক্তার এসে থামান স্বাস্থ্যগত কোন কারণ দেখিয়ে। এদেরকে আমি ঠিক ধার্মিক বলি না, বলি প্রথা পালনকারী, জিজ্ঞাসাহীন এক ধরনের আজ্ঞাপালনকারী বাহন। দ্বিতীয় দল হলেন আসল দল, মুখে দুনিয়া কয় দিনের কিন্তু কাজে সেই দুনিয়ার জন্য এমন কোন কর্ম নাই যা তারা করবেন না। সব জিনিসের একটা ধর্মভিত্তিক ব্যাখা তাদের কাছে পাওয়া যাবে। যেকোন জিনিসকে ধর্মের আলোকে তারা আলোকিত করে ফেলেন। নিজেদের মতো নৈতিকতার একটা ব্যাখা নিশ্চয়ই তাদের মন তৈরী করে রাখেন, যার খোজ খবর আমরা রাখি না। কবির কথানুযায়ী হয়তো দারিদ্রতা মানুষকে মহান করে কিন্তু টি। আই। বি’র রিপোর্টনুযায়ী মানুষকে চোর করে, অনন্ত বাংলাদেশের চৌদ্দকোটি মানুষ তাই প্রমান করেছে।

শুধু কি দারিদ্রতাই নৈতিকতাকে ক্ষয় করেঃ উপরের আলোচনা থেকে মনে হতে পারে শুধু দরিদ্র লোকেরাই ধর্মকে ব্যবহার করে কিংবা ধর্মের আড়াল বা আশ্রয় নিয়ে অন্যায় করে থাকেন। আসলে কি তাই? আমার সীমিত দৃষ্টিতে দেখা, অনুভব করা ও জ্ঞানের আলোক বলব না। তাহলে ধনী আরব রাষ্ট্রগুলো কিংবা কম্যুনিষ্টরা মানুষের উপর এতো অন্যায় করছেন, কেনো? বরং ধর্মের আবরনই অনৈতিক স্খলনের জন্য দায়ী। ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষ নিজেকে আড়াল করে এবং সকল ধরনের অনৈতিক অপরাধ করে থাকে। দুবাই বা অন্য যেকোন মুসলমান রাষ্ট্রে গেলেই এটা দেখা যায়। আরবরা দরিদ্র না কিন্তু তারা দরিদ্র দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাথে টাকা - পয়সা, ওয়ার্ক পারমিট ইত্যাদি বহু ব্যাপার নিয়ে দিন রাত মিথ্যে কথা বলছে, প্রতারণা করছে। সেই মিথ্যে কথা শুরুর আগে একবার ইয়াল্লাহ বলছে, শেষে একবার বলছে। দরিদ্র দেশের মানব সন্তানদের ব্যবহার করে উটের দৌড় করাচ্ছে, কিংবা যৌন হয়রানী করছে। কিন্তু আবার আজান দেয়ার সাথে নামাজ পড়ে চিত্ত শুদ্ধও করছে। বেশীর ভাগ আরবদের বেশ কয়েকটি করে বাড়ি থাকে, যার অনেক গুলোই ফাকা ও তালাবন্ধ থাকে বছরের পর বছর, সেই জায়গায়ই হয়তো পাচশ গজ দূরে একটি কুড়ের মধ্যে বারোজন মানুষ গাদাগাদি করে থাকেন। ধর্ম কি সেই শিক্ষায় দেন মানুষকে ? ধর্মের দ্বারা নৈতিকতা কতো জায়গায় ধর্ষিত এবং পদদলিত। তবে শক্ত আইনের বাধনে যেসব জায়গায় পড়তে হয় সেসব জায়গায় অনৈতিক কাজ অনেক কম হয়। উদাহরনস্বরূপ বলা যায়, যেলোক দেদারসে ট্যাক্স ফাকি দিচ্ছে কিংবা ভীড়ের বাসে টিকেট ফাকি দিচ্ছে অথবা কর্মচারীর বেতন মেরে দিচ্ছেন, সেই তিনিই কিন্তু কখনও ভুল জায়গায় পার্কিং করার চিন্তা মাথায় আনবেন না, কিংবা মেয়েকে কাফের বিদেশী ছেলেদের সাথে কোএডুকেশনে পড়তে দিবো না কিংবা আঠারোর আগে আইনতঃ বিয়ে দিবেন, এই ধরনের চিন্তা মাথায় আনবেন না। যে আরবরা নিজের দেশে অ - আরবীয় সমাজের মানুষের সাথে গরু ছাগলের মতো ব্যবহার করেন, তারাই যখন ইউরোপে গরমের ছুটি কাটাতে আসেন, পরিবার পরিজন নিয়ে, অ - আরবীয় সমাজের সাথে তখন শিষ্ট ও চরম ভদ্র আচরন করে থাকেন। তাহলে কি শক্ত, কঠোর, অলংঘনীয় সব আইনগুলো অনেক সময় ধর্মের সমান্তরাল হিসেবে কাজ করে স্থান - কাল - পাত্র ভেদে নৈতিকতা শিক্ষা দেয় মানুষকে?

ধার্মিকরা হয়তো গুনাহ হবে সেইজন্য অনেক সময় অনেক অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন কিন্তু ভয় দেখিয়ে কি সব সময় নিজেকে বিরত রাখা যায় যদি অন্তর থেকে কেউ তাগিদ অনুভব না করেন? বিবেক থেকে অন্যায়কে অন্যায় ভাবেন না বলেই হয়তো সাধারনতঃ দেখা যায় যেকোন অন্যায় করার পর ক্ষমা চেয়ে নিজেকে শুদ্ধ করে নেয়ার একটা ভরসা ওদের মধ্যে কাজ করে। যখন কেউ ভাবেন আমি অন্যায় করে উপাসনার দ্বারা তার থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিতে পারবো, সেই ভাবনার প্রেষনাই তাকে অন্যায়ের প্রতি জোর ধাবিত করে। ধার্মিকরা প্রায়ই তাদের ধর্মের প্রতি অত্যন্ত ভালোবাসা থেকেই হয়তো বলে বসেন, ধর্মের কোন দোষ নেই এর অপব্যাখা দেয়া হচ্ছে। তাই যদি সত্যি হয়, ধর্ম যদি এতোই নাজুক ব্যাপার হয়ে থাকে যে, যে খুশী সেই তার অপব্যাখা কিংবা ভুল ব্যবহার করতে পারে, তাহলে সেই দুর্বল জিনিসটা “নৈতিকতার” মতো একটা শক্ত জিনিসের ভার কিভাবে নিতে পারে? অজ্ঞতা থেকেই ভয়ের আর ভয়ের থেকে নানারকম কল্পনার সৃষ্টি হয়। রাক্ষস, খোক্কস, পরী, পংক্ষীরাজ ঘোড়া কিংবা এমন কোন অবয়বের যাকে সর্ব শক্তিমান মনে করার আপ্রান চেষ্টা চলে। যার উৎস হলো অজ্ঞতা কিংবা ভয় তা কি করে নৈতিকতা ধারন করতে পারে?

এই লেখাটা পড়ে আপাত মনে হতে পারে যে, ধর্ম সব অনৈতিকতার কারন বা ধার্মিক লোকেরাই অনৈতিক কাজ করে। কিন্তু আমার মতে ধর্মহীনতা মানেই যেমন নীতিহীনতা নয় তেমনি ধার্মিক মানেই নীতিবান, সচ্চরিত্রের লোক সবাই নন। শুধু ধর্ম মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়, এই ধারনাটা সাধারনের মাঝে বদ্ধমূল হওয়াটা বিপদজনক। এতে করে ধর্মের ঢাল ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ গুলো হরদম করে যাওয়ার একটা একটা সুযোগ সে পাচ্ছে এবং আমাদের চারপাশের বাস্তব বলে দেয়, সেই সুযোগের সদ্বব্যহার সে করছে। ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য অনুধাবন করতে পারা আর সেই অনুভূতিকে বিবেকের কষ্টি পাথরে ঘষে নিজের জীবনে প্রতিফলন ঘটানোই আমার মতে নৈতিকতা, যা ধার্মিক অধার্মিক সকলের মধ্যেই থাকতে পারে কিংবা থাকেও। পরিশেষে নিজের একটা উপলব্ধি যেটা থেকে মুক্ত হওয়া এ জীবনে আর সম্ভব হবে না জানি, সেটা লিখছি। ধর্মের ব্যাখা বলি আর গল্পই বলি, যেখানে ধর্ম নিজেই বলেছে, প্রথমে মানুষে এসেছে এবং পরে তার কল্যানের জন্য ধর্ম এসেছে। প্রত্যেক ধর্মের এই একই গল্প, শুধু গল্পের চরিত্রের নাম আর প্লট আলাদা। সেজন্য যা মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষের পরে এসেছে তা যেনো কখনই মানুষের থেকে বড় না হয়ে উঠে। প্রয়োজনের বস্তু যখন যাদের প্রয়োজন হবে তারা ব্যবহার করবেন নিশ্চয়ই , কিন্তু তাকে সবার জন্য অনিবার্য করে তোলার কোন কারন নেই। আজকের এই সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের যুগে এটুকু উপলব্ধি করতে পারি, এই পৃথিবীর এখন ধার্মিক মানুষের চেয়ে নীতিবান মানুষের প্রয়োজন অনেক অনেক অনেক বেশী।

তানবীরা তালুকদার
২৫.০৬.০৮


মন্তব্য

জুলিয়ান সিদ্দিকী (লগইনে সময় নষ্ট) এর ছবি

যে কোনো ধর্মই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নৈতিকশিক্ষাই প্রদান করে। কিন্তু আমরা যদি সেই শিক্ষায় শিক্ষিত না হই তাহলে ধর্মের কী আসে যায়। যে কোনো ধর্মর সৃষ্টি মানুষের জন্যেই। যদিও তা মানুষের সৃষ্টি। কিন্তু একজন মানুষের বিশ্বাসবোধ তাকে অনেক দূর নিয়ে যায়।

চিন্তা থেকে বিশ্বাস এবং বিশ্বাস থেকে কর্ম।

কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে মানুষ কখনো কখনো ধর্মকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে। লুটছে বিভিন্ন সুবিধা। একটু আগে আপনি যেমনটি বললেন। সব ধর্মই নিজকে সুরক্ষার জন্য শ্রেণী বিভাজন করেছে। একটি দলিত অপরটি দলক(?)।

তেমনি আমাদের ইসলাম ধর্মে এমন বিভাজনটি রয়েছে। ধার্মিক আর অধার্মিক। এবং তা খুব পরিষ্কার ভাবেই মোটা দাগে আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরা হয়। এই যে বিশ্বএজতেমা বলেন আর কাবাঘরের জমায়েতই বলেন- এগুলো আমাদের প্রচলিত বিশ্বাস থেকেই আজ একটি আদর্শ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। কিন্তু ইসলাম যে শিক্ষা দিয়েছে কোনো মুসলিম দেশই তা মানে বলে মনে হয় না। মুসলিম পরস্পর ভাইভাই। তা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে শ্রমিকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা কিন্তু নিজেদের জন্য আলিশান ব্যবস্থা। ইসলামের মহানুভবতা খলিফা ওমরের দৃষ্টান্ত থেকে আরবরা অনেক আগেই বিচু্যত হয়েছে। যে দেশে ইসলামের জন্ম সে দেশেই আজ ইসলামি আচার-আচরণ সরকারি বিধিমালার আওতাধীন। যেমন একজন মুসলিম আজান হওয়ার পরও মসজিদে না গিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। সেই মুসলিমটির বলার কোনো অধিকার নেই যে, আমার নমাজ পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না বা ভালো লাগে না। তাকে বাধ্য হয়েই নমাজ পড়তে হবে। হবেই। এ হচ্ছে বর্তমান আরবের ইসলাম। শাসনের বেড়াজালে বন্দি যাবতীয় মুসলিমের ইচ্ছা-অনিচ্ছা। শরিয়ত মোতাবেক স্বামীটিকে ভালো না লাগলেও স্ত্রীটিকে স্বামীর ইচ্ছাধীন থাকতে হবে। এ নাকি কোরানের আদেশ। কিন্তু অন্য আদেশটি (স্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতি জোর করা যাবে না) কোনো দেশে আজ পর্যন্ত পালিত হয়েছে বলে মনে হয় না। সব ধর্মই এমন কিছু সুবিধা দেয় যা দিয়ে আপৎকালীন সময়ে নিজকে সুরক্ষা করা যায়।

ইসলামে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত আর সুবিধা-জনক বাক্যটি হচ্ছে ওজরের কোনো মাসলা নাই। ওজর হচ্ছে কারণ।

ধর্মশিক্ষা (যতগুলো কল্যাণকর) যদি আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারতাম তাহলে সত্যিই আমাদের জীবন প্রশান্তিদায়ক হতো। যেমন ইসলাম বলে, যাকাতের কথা। একজন ধনী মুসলিম লোক যদি তার ধন-সম্পদের হিসেবে বার্ষিক যাকাত আদায় করেন এবং তা একজন দরিদ্র মানুষকে যাকাত হিসেবে নির্ধারিত অর্থ প্রদান করেন তাহলে সেই দরিদ্র মানুষটি আর দরিদ্র থাকার কথা নয়। এভাবেই যদি প্রতিটি ধনী ব্যক্তি তার এলাকার একজন করে দরিদ্রকে বছরে টার্গেট করেন তাহলে তার এলাকায় দরিদ্র বলে কেউ থাকার কথা নয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোনো মুসলমানই হয়তো এই যাকাত প্রদানের ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দেন না। অথচ যাকাত বিষয়টি ইসলাম ধর্মে সংযোজিত হয়েছিলো দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যেই। হায় কোথায় সেই ইসলাম আর কোথায় সেই মুসলমান!

পুনশ্চ:
আমি সব ধর্ম মানি। বিশ্বাস করি। মসজিদ-মন্দির-গির্জায় যাই। বাকি আছে প্যাগোডা-গুরুদুয়ারা। কিন্তু স্রষ্টার কথা ভাবলে আমার জন্মদাতাকেই দেখতে পাই। দেঁতো হাসি

তানবীরা এর ছবি

একজন ধনী মুসলিম লোক যদি তার ধন-সম্পদের হিসেবে বার্ষিক যাকাত আদায় করেন এবং তা একজন দরিদ্র মানুষকে যাকাত হিসেবে নির্ধারিত অর্থ প্রদান করেন তাহলে সেই দরিদ্র মানুষটি আর দরিদ্র থাকার কথা নয়। এভাবেই যদি প্রতিটি ধনী ব্যক্তি তার এলাকার একজন করে দরিদ্রকে বছরে টার্গেট করেন তাহলে তার এলাকায় দরিদ্র বলে কেউ থাকার কথা নয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোনো মুসলমানই হয়তো এই যাকাত প্রদানের ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দেন না। অথচ যাকাত বিষয়টি ইসলাম ধর্মে সংযোজিত হয়েছিলো দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যেই। হায় কোথায় সেই ইসলাম আর কোথায় সেই মুসলমান!

জুলিয়ান প্রথমে আপনাকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, আপনার এই আন্তরিক মন্তব্য লেখার জন্য।

শুধু ভেবে দেখবেন যাকাত দেয়া কিংবা অর্থনোতিক সাহায্যের জন্য ধর্মের প্রয়োজন আছে কিনা ??? এই পশ্চিমা বিশ্ব থেকে কিন্তু অনেক সাহায্য বাংলাদেশে যায়, তারা মুসলমানও না এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ধার্মিকও না। শুধু নৈতিকতা আর মানবিকতাই কিন্তু কাজ করে এর পেছনে।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দারিদ্র্য যে সম্পদের বন্টনজাত সমস্যা না, তা ইসলামী অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাদঅলারা বুঝতে চান না। আজকে জাকাতের থেকে বেশি অর্থ কর ও অণ্যান্য পথে আমরা রাষ্ট্রকে দিয়ে থাকি। পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোতে এই হার ইসলাম নির্ধারিত হারের থেকে বেশি। তারপরও কি বৈষম্য দূর হয়েছে? যেখানে সম্পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াটাই তৈরি হয়েছে অপরকে: ক্রেতাকে, শ্রমিককে ,উতপাদককে, কর্মচারিকে বিভিন্ন মাত্রায় বঞ্চিত করার মাধ্যমে, সেখানে দারিদ্র্য ও বৈষম্য তো থাকবেই। গাছের আগায় পানি ঢালার থেকে গাছের গোড়ায় পানি দেওয়াই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

তানবীরা এর ছবি

গাছের আগায় পানি ঢালার থেকে গাছের গোড়ায় পানি দেওয়াই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?

সেটা কয়জনে বুঝে বলো?

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

কীর্তিনাশা এর ছবি

আজকের এই সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের যুগে এটুকু উপলব্ধি করতে পারি, এই পৃথিবীর এখন ধার্মিক মানুষের চেয়ে নীতিবান মানুষের প্রয়োজন অনেক অনেক অনেক বেশী।

খুব ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে। মনের ভেতর অনেক ভাবনার উদয় হলো। এ ধরনের আরো লেখা চাই কিন্তু।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

তানবীরা এর ছবি

ভবিষ্যতেও আপনার কাছ থেকে এধরনের অনুপ্রেরনাই আশা করছি।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

nodi এর ছবি

নৈতিকতার হাইজ্যাকার হলো ধর্ম- Arthur C. Clark.সমস্যাটা মনে হয় এখানে। চমৎকার লেখা।

তানবীরা এর ছবি

সমাধানটা কোথায় লেখা ???

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অপ্রিয় এর ছবি

প্রার্থনার ব্যাপারটি নিয়ে ধার্মিকরা সারাক্ষন মাতামাতি করেন। তারমানে কি এই ধরে নেয়া যায় না, অন্যায় করেন বলেই বারবার কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন আসে? যদিই অন্যায়ই না করেন, দুর্বলতাই না থাকে, তবে কিসের ক্ষমা চাওয়া?

খুবই এ্যরোগ্যান্ট কমেন্ট তানবীরা, এতই এ্যরোগ্যান্ট যে তা হৃদয়ে আঘাত করে। প্রার্থনা মানুষের উচ্চ-আবেগ (Higher Emotions) ডিভোশনের একটি রিয়ালাইজেশন। কবির "ক্ষম হে মম সুন্দর" অথবা প্রার্থনার 'ক্ষমা' মূলতঃ সমর্পনের, অপরাধের নয়।

আর দুর্বলতা আপনার না থাকতে পারে, আমার অনেক, আমি তিন বেলা পেটপুরে খাই, খাবারের ডেট ওভার হয়ে গেলে ফেলে দেই কিন্তু প্রতি বেলায় লক্ষ লক্ষ শিশু, অল্প বয়সীরা না খেয়ে থাকে সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করি না। যারা ধনী, শক্তিশালী এবং জগতের অনেক দুর্দশার কারণ তারা বন্ধু মানলে আমি পুলকীত হই। তাদের ফরমায়েশগিরী করেই আমার দিন কাটে। উচিত্ মনে করেও তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আমি কিছুই করছি না। আমার দুর্বলতা আর অপরাধের ফিরিস্ত তো বিরাট। বেশীরভাগ বিশ্বাসীর সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কিন্তু এইসব ‘অপরাধের’ সেল্ফ রিয়ালাইজেশনের জন্য। সত্যিকারেই কোন ঈশ্বর আছেন কি না বা তিনি তা শুনছেন কি না তা মূখ্য নয়।

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

তানবীরা এর ছবি

আমার মন্তব্য আপনার কাছে এ্যারোগেন্ট লাগাতে আমি দুঃখিত। হয়তো আমি তাই কিন্তু আমি যা ভাবি তাইই প্রকাশ করলাম, ছল কপটের আশ্রয় না নিয়ে।
ডেট ওভার হয়ে গেলে যেহেতু খাবার ফেলে দিতে হবে সে জন্য ডেট দেখে খাবার কেনাই ভালো যাতে অপচয়ের গ্লানিতে না ভুগতে হয়। অন্যায় করা আর বলা "ক্ষমো হে মম দীনতা"। এই প্রসিডিঊরটাতেই আমার আপত্তি। একটু না হয় কষ্টই করলাম, অন্যায় না করে ???
আমি মনে করি আমার এই লাইনটা যতো না ক্ষতিকারক, এই আচরনগুলো তার চেয়ে বেশী বিপদজনক।
আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রাফি এর ছবি

জুলিয়ান ভাইয়ের সাথে একমত। সব ধর্মই নৈতিকতা শিক্ষা দেয়।

কিন্তু আমার মতে ধর্মহীনতা মানেই যেমন নীতিহীনতা নয় তেমনি ধার্মিক মানেই নীতিবান, সচ্চরিত্রের লোক সবাই নন।

আপনি এখানে ধার্মিক মানে কী বুঝিয়েছেন জানি না।
তবে মনে রাখতে হবে ধার্মিক মানে হচ্ছে ধর্মের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী; ধর্মের কিছু মান্‌ব আর কিছু মান্‌ব না এরকম মনোভাবের থেকে সৃষ্ট অনৈতিকতাগুলোকে ধর্মের দূর্বল পয়েন্ট ভাবলে চলবে না। এখানে উল্লেখিত ধার্মিক যদি আমার সংজ্ঞানুসারে ধার্মিক হয় তাহলে এ কথাটায় আমার আপত্তি আছে।

আমাদের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কোন টুপিওয়ালা লোক সামান্য পাপ করলে প্রায়ই শোনা যায় সব হুজুরই পাজি; অথবা টুপির নিচে শয়তান। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত যে শত শত অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করি না। টুপি পড়ে আছে; বা আপাতদৃষ্টিতে অন্য কোন ধর্মের ধারক হিসেবে আছেন এমন লোক মানে উনি ধর্মের পথে আছেন; কিন্তু ইনি সবসময়েই নৈতিক দিক থেকে সৎ থাকবেন এমন আশা করাটা আমার মনে হয় ঠিক না। এ পথের একেবারে শেষে বা ধর্মকে পরিপূর্ণভাবে নিজের ভেতর ধারণ করলেই সেই চূড়ান্ত নীতিবোধটুকু অর্জিত হবে; আমার কাছে এমনটাই মনে হয়।

তবে এ নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। কারণ আমার মতে ধর্ম নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করলে শেষ পর্যন্ত কিছুই মীমাংসা হয় না। শুধু তিক্ততার জন্ম হয়। এটা বিশ্বাসের ব্যাপার; আর আমি নিজেকে বিশ্বাসীদের দলে দেখতে চাই।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

তানবীরা এর ছবি

আমাদের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কোন টুপিওয়ালা লোক সামান্য পাপ করলে প্রায়ই শোনা যায় সব হুজুরই পাজি; অথবা টুপির নিচে শয়তান। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত যে শত শত অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করি না। টুপি পড়ে আছে; বা আপাতদৃষ্টিতে অন্য কোন ধর্মের ধারক হিসেবে আছেন এমন লোক মানে উনি ধর্মের পথে আছেন; কিন্তু ইনি সবসময়েই নৈতিক দিক থেকে সৎ থাকবেন এমন আশা করাটা আমার মনে হয় ঠিক না।

একটা শেয়াল যখন মুরগী চুরি করে তখন কেউ তাকে চোর বলে না কিন্তু একজন মানুষ যখন সেটা করে তখন কিন্তু তাকে চোর বলে। আমার কথাটা কিন্তু শুধু সেটাই।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে। ধন্যবাদ। আসলে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার মতো লোক পাওয়াই দুষ্কর...তাই সবার মাঝেই কমবেশী প্রশ্ন থাকলেও সেগুলো মনেই থেকে যায়। কারণ এটাও ধর্মের শিক্ষা যে, সব বিষয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। আমরা এমনই শিক্ষা পেয়েছি যা আমাদের জিজ্ঞাসা করতেও নিষেধ করে। তাই এই সুন্দর ও অকপট লেখাটার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।

তানবীরা এর ছবি

সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রেজওয়ান এর ছবি

বেশ কিছু ভাবনা উদ্রেককারী মতামতগুলো আপনার।

আমার ক্ষুদ্র বিচারবুদ্ধিতে কিছু প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি।

"এই পৃথিবীর এখন ধার্মিক মানুষের চেয়ে নীতিবান মানুষের প্রয়োজন অনেক অনেক অনেক বেশী। "

এখানে ধার্মিক মানুষ বলতে আমরা কি বোঝাচ্ছি বা পুরোপুরি নীতিবান বলতে কি বোঝাচ্ছি। দুটোই আপেক্ষিক এবং মানুষের শিক্ষা, সামাজিক কাঠামো, আইন, রাষ্ট কর্তৃক দেয়া স্বাধীনতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ইত্যাদি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

তাই এদের কোন একটিকেই কিন্তু ইউনিভার্সাল ও চুড়ান্ত পরিত্রারক ধরা যাবে না। এখন কথা হচ্ছে ধর্ম কি করে আমাদের জীবনে বিরাজমান। ধর্ম কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিরই অংশ।

Culture is defined as the system of shared beliefs, values, customs, behaviors and artifacts that the members of society use to cope with their world and with one another, and that are transmitted from generation to generation through learning

ওদিকে:

Religion is defined as a system of beliefs based on humanity's attempt to explain the universe and natural phenomena, often involving one or more deities or other supernatural forces and also requiring or binding adherents to follow prescribed religious obligations.

আমরা যে কোন ধর্মধারীই হই না কেন তা নিয়ম নীতিপূর্ন একটি সংস্কৃতির অন্তর্ভূক্ত করে আমাদের। এখন কথা হচ্ছে তা পালনের ব্যাপারটি। ধর্মীয় সংস্কৃতির ক্রমাগত বিবর্তন হচ্ছে। শেষ বড় ধর্ম ইসলাম এসেছে ১৫০০ বছর আগে। তখনকার বাস্তবতা এবং পরিপ্রেক্ষিত তখনকার নৈতিকতা এবং নিয়ম নীতিগুলোকে প্রভাবিত করেছে। সেই নিয়ম নীতিগুলোর বর্তমান ইন্টারপ্রিটেশন বা ব্যখ্যা নিয়েই যত গোলমাল। অনেক সমাজে ধর্ম আপেক্ষিক জিনিষ এখন, রাষ্ট্র বা আইনের সাথে কম সম্পর্কযুক্ত। ধর্মের মূল কাঠামোকে রেখে সবাই নৈতিকতার আধুনিক ভার্সন করে নিয়েছে তাদের সমাজের উপযোগী। পৃথিবীর অনেক দেশে এখনও ধর্ম রাষ্ট্র, আইন থেকে পৃথক নয় (যেমন সৌদি আরব, ইরান, ইজরায়েল) হয়ত ক্ষমতা বা রাষ্ট্রকে সংহত রাখার উপায় হিসেবেই। তারা পড়েছে মহা সমস্যায় কারন এত পুরোন নিয়ম নীতিকে কিভাবে বর্তমান যুগে হুবহুভাবে প্রয়োগ করবে? আবার ধর্ম পালন নিয়েও একেকজনের একেকটি ব্যখ্যা রয়েছে। আমাদের সবার একটি করে ধর্মের তকমা ঝুললেও আমরা কতটুকু তা পালন করি? এবিষয়েও কিন্তু অনেকেই সুবিধাবাদী অবস্থান গ্রহণ করি - সুযোগ পেলে ধার্মিক বনে যাই আবার ধর্মকে ছুঁড়ে ফেলি।

কাজেই এখন ধর্ম এবং নীতি এইসব শব্দগুলো আপেক্ষিক হয়ে গেছে। একেক দেশের জন্যে, একেক পরিস্থিতিতে এর প্রয়োগ একেকরকম। ইসলাম ধর্ম মেনে গণতন্ত্রিক ভাবে চলা সম্ভব নয় কোন দেশ মানে আবার গণতান্ত্রিক ইসলাম ধর্ম প্রধান রাষ্ট্রও রয়েছে। আলাদা আলাদা সমাজ কিন্তু তাদের মত করে ব্যাপারগুলোর গড়ন দিয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে বাচ্চাদের পিতামাতা প্রহার করলে তা গর্হিত অপরাধ বলে মানা হয়। অথচ আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে এটা সন্তান মানুষ করার একটি অংশ এবং এটি অপরাধ ধরা হয় না। ধর্মে ইশ্বরের জন্যে সন্তান কোরবানী করতে যাওয়ারও উদাহরণ রয়েছে।

নৈতিকতা নিয়ে একটা মজার ব্যাপার আছে। আমরা সবাই আমাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে নৈতিকতার একটি ব্যাখ্যা দাড় করাই। আমার দেখা রোজার সময় ঘুষ নেয়ার একটি নৈতিকতার চিত্র: "আমার অজু আছে তাই ধরবনা, টাকাটি দয়া করে এই ড্রয়ারে রেখে যান" - এই একটি বাক্যের মাধ্যমে বোঝা যায় যে আমাদের দেশে ধর্ম ও নৈতিকতার কিরকম ব্যাখ্যা করা হয়। কাজেই আপনি কোনটি বাদ দিয়ে কোনটি প্রতিষ্ঠিত করবেন?

এসব প্রশ্নগুলোর মানে আমিও খুঁজছি।

এই ওয়েবসাইটে বেশ কিছু ভাল মতামত আছে।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

তানবীরা এর ছবি

আপনার মন্তব্য কিন্তু সত্যিই বাস্তব সমস্যার প্রতিফলন। কিন্তু ন্যায় আর অন্যায়ের পার্থক্য করা কি খুবই কঠিন? এই আমরা যারা বাংলাদেশের দুর্নীতির ডবল হ্যাট্রিক করা পাবলিক তারাও কিন্তু বাইরে এসে ঘুষের চিন্তা করতে পারি না কর্ম ক্ষেত্রে এমনকি কমিশনের ভাবনাও মাথায় ঠাই দেই না, ঐযে আপনার উল্লেখ করা রাষ্ট্র ব্যবস্থা রয়েছে মাঝে।

নৈতিকতা নিয়ে একটা মজার ব্যাপার আছে। আমরা সবাই আমাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে নৈতিকতার একটি ব্যাখ্যা দাড় করাই। আমার দেখা রোজার সময় ঘুষ নেয়ার একটি নৈতিকতার চিত্র: "আমার অজু আছে তাই ধরবনা, টাকাটি দয়া করে এই ড্রয়ারে রেখে যান" - এই একটি বাক্যের মাধ্যমে বোঝা যায় যে আমাদের দেশে ধর্ম ও নৈতিকতার কিরকম ব্যাখ্যা করা হয়

এটা কিন্তু নৈতিকতা না ধর্ম, আমার দৃষ্টিতে। লিঙ্কগুলো সময় নিয়ে পড়বো, ধন্যবাদ। .

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রেজওয়ান এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে। আমি কিন্তু আপনার অধিকাংশ বক্তব্যের সাথেই একমত। শুধু তর্কের খাতিরেই এটি নিয়ে আগাচ্ছি, আমার নিজের কাছেই পরিস্কার হবার জন্যে। আশা করি অন্যভাবে নেবেন না।

বলেছেন:- "এটা কিন্তু নৈতিকতা না ধর্ম, আমার দৃষ্টিতে।" - ধর্মে প্রথমেই বলা আছে ঘুষ খাওয়া হারাম। কিন্তু উদাহরণের এই লোকটি নামাজ রোজা করে। সে নিজের মত একটি নৈতিকতার ব্যখ্যা দাড় করিয়ে নিয়েছে। এখন এটির জন্যে কি ধর্ম না ধার্মিকতা দায়ী? না ওই লোকটির নিজের সমস্যা?

"আমরা টুপী দাড়িওয়ালাদের মনে করি তারা সৎ"- গ্রামের মোল্লারা আমাদের এমন ভাবতে শিখিয়েছে। সেখানকার প্রেক্ষাপটে মসজিদ সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কিন্তু যেসব সমাজে মসজিদের ভূমিকা নগন্য সেখানে কিন্তু এরকম কম দেখা যায়।

আপনি প্রশ্ন করেছেন "কিন্তু ন্যায় আর অন্যায়ের পার্থক্য করা কি খুবই কঠিন?"। এখানে বিবেচ্য কে এটি কোন অবস্থায় করছে।

নোয়াম চমস্কি বলেছেন:

“In fact, one of the, maybe the most, elementary of moral principles is that of universality, that is, If something's right for me, it's right for you; if it's wrong for you, it's wrong for me. Any moral code that is even worth looking at has that at its core somehow. But that principle is overwhelmingly disregarded all the time. If you want to run through examples we can easily do it. Take, say, George W. Bush, since he happens to be president. If you apply the standards that we applied to Nazi war criminals at Nuremberg, he'd be hanged. Is it an even conceivable possibility? It's not even discussable. Because we don't apply to ourselves the principles we apply to others. There's a lot of talk about 'terror' and how awful it is. Whose terror? Our terror against them? I mean, is that considered reprehensible? No, it's considered highly moral; it's considered self-defense."

কাজেই নীতিগুলো কে তৈরি করবে, কে প্রয়োগ করবে সে নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

তবে মূল ব্যপারগুলো অর্থাৎ "অপরকে সম্মান করা, কারও ক্ষতি না করা, সত্য বলা" এগুলো মানলে এর উপর কোন নীতি, ধর্ম যাই বলুন তা হয়না।

আমি ব্যক্তিগতভাবে বুদ্ধধর্মের আটটি মূল নীতির অধিকাংশকে আদর্শ নীতি মানি। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মধ্যেও অনেক অনৈতিক মানুষ আছে। এটা কি ধর্মের দোষ? না মানুষের? তারা ঐ মূল মন্ত্র বাদ দিয়ে কোন নীতি গ্রহন করবে?

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

যৌক্তিক ও ক্রিটিকাল অবস্থান।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

তানবীরা এর ছবি

১. আমিও কিন্তু আপনার বক্তব্যের সাথে একমত সেটাও প্রথমেই বলেছি। ব্যাক্তি আমার তর্কে প্রচন্ড অনাগ্রহ, তবুও লিখছি, আমি তর্কে জড়াতে চাই না কারন এতে পাওয়ার তেমন কিছু নেই, প্রমোট করারও তেমন কিছু নেই। এই লেখার শুরুতেই আমি বলেছি এতে শুধুই আমি আমার উপলব্ধিটুকু লিখছি, গবেষকদের তত্ব বা কোন জানার্ল থেকে নেয়া তথ্য নয়।
২. আপনার সেই লোক রোজার দিনে চুরির মালে হাত না দেয়ার জন্য রোজাকেই সে ব্যবহার করেছে আমার মতে। নৈতিক ব্যাক্তি রোজার দিনেও চুরি করবে না, এমনি দিনেও করবে না। কোরান হাতে নিয়েও মিথ্যে বলবে না এমনিতেও মিথ্যে বলবে না। সে ধর্মের আড়াল নিচ্ছে, বিবেক নাই, আসলেই সে চোর।
৩. নীতি তৈরী আর প্রয়োগ তারাই করবেন যারা সেই দ্বায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। কোন কিছুকে ব্যবহার করে নয়, সত্যকে মানুষের সামনে উপস্থাপন আর প্রয়োগ করার মাধ্যমে। সিডরের ব্যার্থতা, কারন অনুসন্ধান করবেন, দ্বায়িত্বহীন গর্দভের মতো বলবেন না, “আল্লাহ আমাদের ঈমান পরীক্ষা করছে”।
৪. মানুষ সবাই মানুষ। সাদা – কালো – বাদামী, এশিয়ান, আফ্রিকান, ইউরোপীয়ান, হিন্দু – মুসলমান – বৌদ্ধ। আমরাই তাতে লেবেল দিয়ে আলাদা করি। একজন বেনেটনতো আর একজন এস্পিরি কিংবা ম্যাক্স। অনন্ত আমার অভিজ্ঞতা আমাকে তাইই বলে।

তবে মূল ব্যপারগুলো অর্থাৎ "অপরকে সম্মান করা, কারও ক্ষতি না করা, সত্য বলা" এগুলো মানলে এর উপর কোন নীতি, ধর্ম যাই বলুন তা হয়না।
তাহলে আর এতোক্ষন কি নিয়ে প্যাচাল করছি দাদা,আসেন হাত মিলাই।
ধন্যবাদ আবারো।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

আমাদের সবার একটি করে ধর্মের তকমা ঝুললেও আমরা কতটুকু তা পালন করি? এবিষয়েও কিন্তু অনেকেই সুবিধাবাদী অবস্থান গ্রহণ করি - সুযোগ পেলে ধার্মিক বনে যাই আবার ধর্মকে ছুঁড়ে ফেলি।

এইটা মারাত্মক সত্য কথা,
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

"এই পৃথিবীর এখন ধার্মিক মানুষের চেয়ে নীতিবান মানুষের প্রয়োজন অনেক অনেক অনেক বেশী।"
সত্যি কথা।
আমার কেন যেন, কোনভাবেই অন্যের কোনো ক্ষতির কারণ না হওয়াটাকেই সবচেয়ে বড় ধর্ম মনে হয়।
লাইন থেকে সরে গেলাম নাকি? খাইছে
আপনার বোধ এবং তার প্রকাশ ভালো লেগেছে।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তানবীরা এর ছবি

আপনি একদম লাইনেই আছেন শিমূল। অনেকদিন পর দেখলাম আপনাকে, ভালো লাগল দেখে।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

আরিফ জেবতিক এর ছবি

তানবীরা এর ছবি

হক কথা আরিফ ভাই। তবে লেখাটা রোজার মাসের না, বেরোজদার মাসের। আর যাদের ইফতারী খাওয়ার চান্স নাই তাদের রোজাই কি আর ভোজাই কি ??? ঐসব সুখী মানুষদের ব্যাপাররে ভাই।

মামনি কেমন আছে ?
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রেজওয়ান এর ছবি

সুলতানা পারভীন শিমুল লিখেছেন:
"কোনভাবেই অন্যের কোনো ক্ষতির কারণ না হওয়াটাকেই সবচেয়ে বড় ধর্ম মনে হয়।"

আপনার এই কথাটি খুব ভাল লেগেছে।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

লেখা, কমেণ্ট সব পড়ে ফেললাম, দৌড়ের উপর আছি, পরে বিস্তারিত কমেণ্ট দেবো,
তয় আমরা হইছি জ্ঞানপাপী, বুইঝা না বুঝার ভান করি।

------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

তানবীরা এর ছবি

আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকলাম।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

দুর্দান্ত এর ছবি

পাঁচ তারা।
বেশ ভাল হয়েছে।

তানবীরা এর ছবি

ধন্যবাদ।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যি বলতে কি আপনার এই খোলামেলা আত্মজিজ্ঞাসা আমাকে আনেক নতুন প্রশ্নের সামনে দাড় করিয়েছে । তবে ধর্ম কে খারাপ ভাবে ব্যবহার করলে সেটা ধর্মের দোষ হওয়া উচিত না বরং সে দোষ ঐ ব্যক্তির। আর আরেকটি ব্যপার আমদের দেশে আশা বেশীর সাহায্য কিন্তু যতটা না মানবিক কারনে আসে তার থেকে বেশী আসে নিয়ন্তনের রাজনৈ্তিক চাল থেকে।
নিবিড়

তানবীরা এর ছবি

আমার কি মনে হয় জানেন, যে জিনিসকে অতি দ্রুত খারাপ ভাবে ব্যবহার করা যায় তার থেকে দূরে থাকাই ভালো। যেমন ডিনামাইট, ধর্ম ইত্যাদি।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রণদীপম বসু এর ছবি

ধর্মের সাথে নৈতিকতার কি কোন সম্পর্ক আছে ?
নেই।
নৈতিকতা শব্দটি নীতি শব্দ থেকে এসেছে। নীতি কার ? মানুষের। কিন্তু ধর্মগ্রন্থে যে নীতির কথা বলা আছে, তা মুসলমানের নীতি, হিন্দুর নীতি, খৃষ্টানের নীতি ইত্যাদি। কোন অখন্ড মানুষের নীতি নেই ওখানে। আমি যদি আগে মানুষ, তারপরে হিন্দু বা মুনলমান বা অন্যকোন ধর্মাবলম্বী হই তাহলে মানুষ হিসেবে আমার নীতিগুলো কী হওয়ার কথা ? এখানে ধর্ম অপ্রাসঙ্গিক। মানুষ পর্যন্ত হয়ে পরের বিভাজনে আমি গেলাম না। ধরুন পরের পরিচয়গুলো গৌন। যদি তাই না হয, তাহলে ধর্মগুলো সৃষ্টির আগে পৃথিবীতে কি মানুষ ছিলো না ? ধর্ম এসে মানুষকে খন্ডিত করেছে।

নৈতিকতা শিক্ষার জন্য দরকার দর্শন, ধর্ম নয়। ধর্ম হচ্ছে একজাতীয় দার্শনিক ধারণা মাত্র। কিন্তু দর্শনকে ইউনিভার্সাল ট্রুথ হিসেবে ধর্ম বানিয়ে ফেললেই সমস্যা। যা এখন আমরা ভোগ করছি এবং আগামীতেও করবো।

প্রতিটা ধর্মেই যাচাইযোগ্য নয় এমন বহু অলৌকিক কাহিনীর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে একধরনের ভয় ভীতি লোভ ইত্যাদি প্রয়োগ করে কিছু উপদেশ বয়ান করা হয়েছে।এভাবে চলো নইলে এমন শাস্তি প্রাপ্য হবে। একেক ধর্মে শাস্তির নমুনা একেকরকম। আবার এভাবে চলো তাহলে এই পুরস্কার তোমার। প্রত্যেকেই নিজের ধর্মটাকেই সত্য মানেন। অর্থাৎ অন্যটা অসত্য। একই সাথে সবগুলো সত্য হওয়া যুক্তি ও নীতিগতভাবেই অসম্ভব। কিছু তরল যুক্তি দিয়ে অনেকেই সর্বধর্মের সমন্বয় করে যে ভালোমানুষিটুকু প্রচার করেন তা যে হাঁসজারু বা বকচ্ছপ মূর্তির মতো কৌতুককর বিষয় হয়ে উঠে তা কেউ খেয়াল করেন কি ? এটা একধরনের আত্মপ্রতারণা বা অন্যকে প্রতারণা করার সামিল।

একেকটা ধর্মকে একেকটা দর্শন হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে মুক্তচিন্তা দিয়ে তা পাঠ করা গেলে গ্রহণীয় বর্জনীয় বিষয়গুলো বেরিয়ে আসতো। কিন্তু তা যেভাবে রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, তাতে করে ধর্মগুলো থেকে মানুষের কোন উপকার হচ্ছে না। উপকার যাদের হচ্ছে তারা কেউ মুসলমান কেউ হিন্দু কেউ অন্যকিছু।অর্থাৎ খন্ডিত মানব। সত্যিকারের মানুষ কি হতে পারছি আমরা ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তানবীরা এর ছবি

আপনার পুরো বক্তব্যের সাথে সহমত প্রকাশ করছি।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অনিন্দিতা এর ছবি

আপনার লেখাটা খুব ভাল লাগল।
সব কমেন্ট পড়ার সুযোগ পাই নি।
আমার একটা ভিন্ন প্রসঙ্গ জানতে ইচ্ছে করছে-
নৈতিকতার সাথে ন্যায়- অন্যায়ের ব্যাপার জড়িত।
এটা কিভাবে মানুষের মধ্যে কবে থেকে develop করেছে এনিয়ে কি কিছু আলোকপাত করতে পারেন?
আমার প্রায়ই একটা বিষয় মনে হয়- আমি যদি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন না করলেও ধর্মের ভাল দিক গুলো যা নৈতিকতার সাথে, মানবিকতার সাথে সম্পর্কিত তা পালন করি তাহলে আমাকে অধার্মিক বলা হবে কেন?

তানবীরা এর ছবি

আনিন্দিতা আপনার প্রশ্নটা খুব মিষ্টি ভাই। আপনার কাছে ভাই কোনটা জরুরী?? ভালোমানুষ হওয়া নাকি ধার্মিক হওয়া ???

মানুষ সৃষ্টির সময় থেকেই ন্যায় অন্যায় বোধ ডেভেলাপ করছে, এটা মর্ডান কোন ব্যাপার কিন্তু নয়।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অনিন্দিতা এর ছবি

আমার কাছে তো ভাল মানুষ হওয়াই প্রধান।
এটাই ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।

নিরিবিলি এর ছবি

পড়তে অনেক ভাল লাগছিল। অনেক কিছু মাথায় এক সাথে খেলে যাচ্ছিল।

আসলে নীতি হওয়া উচিত জাগ্রত বিবেক যা কোন কিছুর ভয়ে নয় নিজের তাগিদ থেকে ভাল কাজ করবে। প্রচারের জন্য নয়।
সত্যি ই নীতিবান মানুষের বড় অভাব।

আরোও লিখুন। হাসি

তানবীরা এর ছবি

হুমম , তাই নিরিবিলি।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

পুতুল এর ছবি

তানবীরা, বাস্তবতাটা খুব পরিস্কার ভাবে তুলে ধরেছেন। কিতাবে যাই লেখা থাকুক, বাস্তবে কিন্তু আপনার পর্যবেক্ষণটাই দেখতে পাই।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তানবীরা এর ছবি

হাহাহাহা পুতুল, ধন্যবাদ।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নন্দিনী এর ছবি

তানবীরা,
লেখাটা ভালো লেগেছে । ধর্মের ধ্বজাধারীরা 'নীতি- নৈতিকতা বোধ'মনে করেন তাদের একচেটিয়া ব্যাপার, কিন্তু বিষয়টা যে আদতেই তা নয় তা তারা বোঝেও না বোঝার ভান করেন ! বরং আমরা সব সময় উল্টো ব্যাপার দেখি, সব অনৈতিক কাজ কর্ম করে আল্লাহ, ভগবানের দরবারে হত্যে দিয়ে পরলেই মাফ পাওয়া যায় -এই ধারণা নিয়ে তারা দিব্যি করে যান যা তাদের মন চায় !

অতএব...!

নন্দিনী

রায়হান আবীর এর ছবি

nije valo thakbo. hudai amar somoy nosto kore monstar GOD er parthona korbo ken??

lekhata darun lagche. (avro nai মন খারাপ )
=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!

শেখ জলিল এর ছবি

এই সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের যুগে এটুকু উপলব্ধি করতে পারি, এই পৃথিবীর এখন ধার্মিক মানুষের চেয়ে নীতিবান মানুষের প্রয়োজন অনেক অনেক অনেক বেশী।
..এই হোক মানবতার শেষ কথা।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

শিক্ষানবিস এর ছবি

লেখাটা খুব ভাল লেগেছে। মন্তব্যগুলোও চমৎকার। এখানে এমন একটি পরিবেশ দেখলাম যেখানে ধর্মে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বেশেষে সবাই স্বচ্ছন্দে আলোচনা করতে পেরেছেন। অনেক লেখাতেই ধর্মে বিশ্বাসীরা আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
যাহোক, এবার আমার ভাবনাগুলো বলি:
আমিও মনে করি ধর্ম নৈতিকতার উৎস নয়। এক্ষেত্রে আমি পুরনো কথাই বলব: "পৃথিবীতে ভাল মানুষেরা ভাল কাজ করে আর খারাপ মানুষেরা খারাপ কাজ করে; কিন্তু ধর্ম এমন জিনিস যা ভাল মানুষকে দিয়েও খারাপ কাজ করাতে পারে"।

আমার মতে, ধর্ম যে খণ্ডিত ও পক্ষপাতিত্বমূলক নৈতিকতা শিক্ষা দেয় সামগ্রিকভাবে, পৃথিবীর জন্য তা ক্ষতিকর। এজন্য শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধর্মের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা উঠিয়ে দিয়ে তার বদলে "নীতিবিদ্যা" চালু করা উচিত। এই নীতিবিদ্যা দার্শনিকরা গড়ে তুলেছেন। স্পিনোজার এথিক্স এক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে। তবে, নৈতিকতার সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও তৈরী করা যায়নি। এ নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।

সাদিয়া এর ছবি

১. "ধর্মের ব্যাখা বলি আর গল্পই বলি, যেখানে ধর্ম নিজেই বলেছে, প্রথমে মানুষে এসেছে এবং পরে তার কল্যানের জন্য ধর্ম এসেছে। প্রত্যেক ধর্মের এই একই গল্প, শুধু গল্পের চরিত্রের নাম আর প্লট আলাদা।"

দু:খিত এটা ঠিক না। আমি অন্য ধর্মের কথা জানি না, কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, সব সময়ই স্রষ্টা/আল্লাহ ছিলেন, মানুষের সৃষ্টিই হয়েছে তাঁর ইবাদত করার জন্য।

রেফারেন্স: "আমি মানুষ ও জীন সৃষ্টি করেছি শুধু মাত্র আমার ইবাদত করার জন্য"। [আয যারিয়াত: ৫৬]

ধর্ম এসেছে মানুষের প্রয়োজনে, এই কনসেপশন মাথায় থাকলেই মানুষ ধর্ম নিয়ে হিপোক্রেসী করে, কারণ তখন নিজেদের প্রয়োজনে ধর্মের নিয়ম কানুন বদলে নেয়।

২. আমার মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষ মূলত: ভালো। সৃষ্টির উদ্দেশ্যই যেখানে স্রষ্টা যেভাবে ভালোবাসেন সেভাবে চলা, এটা কেউ বুঝলে সে 'ভয়' থেকে খারাপ কাজ এড়িয়ে চলে না, বরং নিজের প্রকৃতি বুঝে, বিবেকের সাথে বোঝা পড়া হয়, কৃতজ্ঞতা বোধ জন্মে, সেই কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে ভালো হয়ে চলে, অপরাধবোধ থেকে না। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে ফাইন হয়, তাই বলে সবাই যে ফাইন এড়ানোর জন্যই ট্রাফিক আইন মান্য করে, তাও তো না। কেউই কি বিবেকবান নেই, যে অন্য মানুষের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি ফেয়ার হওয়ার জন্য আইন মেনে চলে?

পৃথিবীর ১০০% মানুষ কখনও বিবেকবান হবে না। কিছু মানুষকে শাস্তির ভয় দিয়ে ডিটার করতেই হয়। সারভাইলেন্স ক্যামেরায় ধরা পড়লে তো ধরা পড়লো, সারভাইলেন্স ক্যামেরাকে ফাঁকি দেয়া যায়, কিন্তু স্রষ্টা সব দেখছেন, এটা সত্যিই কেউ বিশ্বাস করলে অন্তত: শাস্তির ভয়ে তো ঠিক থাকতে চাইবে! তাই, আই বেগ টু ডিফার হাসি

৩. "তাই যদি সত্যি হয়, ধর্ম যদি এতোই নাজুক ব্যাপার হয়ে থাকে যে, যে খুশী সেই তার অপব্যাখা কিংবা ভুল ব্যবহার করতে পারে, তাহলে সেই দুর্বল জিনিসটা “নৈতিকতার” মতো একটা শক্ত জিনিসের ভার কিভাবে নিতে পারে? অজ্ঞতা থেকেই ভয়ের আর ভয়ের থেকে নানারকম কল্পনার সৃষ্টি হয়। রাক্ষস, খোক্কস, পরী, পংক্ষীরাজ ঘোড়া কিংবা এমন কোন অবয়বের যাকে সর্ব শক্তিমান মনে করার আপ্রান চেষ্টা চলে। যার উৎস হলো অজ্ঞতা কিংবা ভয় তা কি করে নৈতিকতা ধারন করতে পারে?"

মানুষ অপব্যাখ্যা করে দুইটা কারণে: ক) নিজের অজ্ঞতা থেকে।
খ) নিজের ম্যানিপুলেটিভ নেচারের জন্য, অন্য মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে।

এভাবে অপব্যাখ্যা যে কোন থিওরী নিয়েই করা সম্ভব। বিবর্তনবাদ নিয়ে অনেক অবৈজ্ঞানিক ধার্মিক (মুসলিম এবং খ্রীষ্টান ধার্মিক) অপব্যাখ্যা করে। ভেবে দেখুন, সমস্যাটা কি বিবর্তনবাদের, নাকি অজ্ঞতা--হয় ব্যাখ্যাকারীর অজ্ঞতা, না হয় শ্রোতাদের অজ্ঞতা আর না হয় উভয় শ্রেনীর অজ্ঞতা?

৪. সত্যিকারের বিবেকবান বলতে আমি আরও কিছু বুঝি--যারা চিন্তাভাবনায় এতটা ম্যাচুয়ার যে স্বার্থপরতার উর্ধ্বে উঠে যায়, ইমিডিয়েট গ্র্যাটিফিকেশনের চেয়ে লং টার্ম সুখ অনেক বেশি ভ্যালু করে (ইমপালসিভ না), যা সত্যি সত্যি বিবেক দিয়ে সত্যি মনে হয়, তা সব কিছুর বিপরীতে গিয়েও মেনে চলে, এই ব্যাপারে কোন ফাঁক খুঁজতে চায় না। আমার মনে হয় সত্যিকারের বিশ্বাসী হতে হলে এই গুণগুলো লাগে।

দুর্দান্ত এর ছবি

এই মন্তব্যে ইসলামের হেমায়েতে কোরআনের ইক্তেবাস আর 'অবৈজ্ঞানিক ধার্মিক (মুসলিম এবং খ্রীষ্টান ধার্মিক) অপব্যাখ্যা'র এজাজ বাখশ আমার নিকট একটু ধুন্দলাসা ঠাহর হয়েছে।

" মানুষের সৃষ্টিই হয়েছে তাঁর ইবাদত করার জন্য। "

মনাজিরের খাতিরে ইখতিয়ার করে নেই যে সব জ্বীন ও ইন্সান নিয়ম মোতাবেক, ইবাদত করল, কিন্তু খালিক-এ পাক এই ইবাদত নিয়ে কি করেন, এটা আলমে আফক এর কি ইস্তেমাল এ আসে, ওয়াগেরা ওয়াগেরা সম্বন্ধে আপনার মুনাজের আরেকটু পরিস্কার, আরেকটু বে-দাগ করলে বড় এহসান হত।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।