স্মরণীয় চলচ্চিত্র - চে

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: মঙ্গল, ১০/০৪/২০১২ - ১২:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

Che-movie-poster2

( সতর্কীকরণ—এখানে প্রিয় কিছু চলচ্চিত্রের গল্প বলার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছি মাত্র, এটা কোন মুভি রিভিউ নয়, কারণ এমন চলচ্চিত্র নিয়ে রিভিউ লেখার জ্ঞান বা প্রজ্ঞা কোনটাই আমার নেই, এটি স্রেফ ধারা বিবরণী। কাজেই যাদের চলচ্চিত্রটি এখনো দেখা হয় নি, তারা আগে দেখে ফেললেই ভাল হয়, নতুবা সব ঘটনা জানলে হয়ত আগ্রহ কিছুটা কমে যাবে। এমন লেখার ব্যাপারে সকল ধরনের পরামর্শ স্বাগতম। )

সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিপ্লবের প্রতীক চে আর্নেস্তো গ্যেভারাকে নিয়ে আজ পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে অসংখ্য তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র, এমনকি তার নির্মম হত্যাকান্ডের পরপরই তার কিংবদন্তীর জীবন ও কর্ম নিয়ে হলিউডেও মুক্তি পায় চলচ্চিত্র, চে-র ভূমিকায় ছিলেন মরুর বুনো বেদুঈন খ্যাত ওমর শরীফ। কিন্তু এখন পর্যন্ত চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মতে চে-র অতিঘটনাময় মহাজাগতিক জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধ্যায় সত্যিকার অর্থে রূপোলী ফিতেয় ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া অস্কার বিজয়ী পরিচালক ষ্টিভেন সোডেরবার্গের চে।

che movie poster

১ম এবং ২য় খন্ডে মুক্তি পাওয়া স্প্যানিশ ভাষার চলচ্চিত্রটির ১ম পর্বে চে-র ফিদেল কাষ্ট্রোর সাথে পরিচিত হওয়া, কিউবার মুক্তি সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে তার চে হয়ে ওঠা এবং সফল বিপ্লবের কথা আঁকা হয়েছে, ২য় পর্বে বলা হয় তার জীবনের শেষ যাত্রা, বলিভিয়ায় তার আমৃত্যু লড়াইয়ের কথা। নাম ভূমিকায় মর্যাদাপূর্ণ কান চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেওয়া অভিনয় করেছেন বেনিচ্চিও দেল তোরো। নিছক গৎ বাধা চলচ্চিত্রের মত কাহিনী প্রবাহ একদিকে না এগিয়ে এই বিশেষ চলচ্চিত্রে একাধিক ঘটনা, বিশেষ করে অতীত ও বর্তমানের সমন্বয় ঘটিয়ে বারংবার আগু-পিছু করা হয়েছে।

১ম পর্বের শুরু, ১৯৬৪-এর মে মাসের হাভানা, চে স্মরণ করছেন পুরনো দিনের নানান রঙের স্মৃতিময় দিনগুলি। ১৯৫২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় কিউবার মিলিটারী জেনারেল বাতিস্তা ক্যু করে ক্ষমতা দখল করল, তারপরই শুরু হল দেশবাসীর অধিকার পদদলিত করে যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক ঔপনিবেশিক প্রভুদের নির্লজ্জ পদলেহন। ১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে মেক্সিকো সিটিতে এক নৈশ ভোজে কিউবার নির্বাসিত তরুণ আইনজীবি ফিদেল কাষ্ট্রোর সাথে তার পরিচয় তারপর অবিরাম ১২ ঘন্টা চলে তাদের কথোপকথন, অন্য বন্ধুরা ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে কাদা, কিন্তু দুই ভবিষ্যত বিপ্লবীর কথা শেষ হয় না আগামী দিনের সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত শক্তিশালী ল্যাটিন আমেরিকার মায়াময় স্বপ্নে, শুরু হয় তাদের কিংবদন্তীর বন্ধুত্বের শুরু- যা দুজনের জীবনেই কাজ করেছে মাইলফলক হিসেবে।

সবার কাছে আর্নেস্তো নয়, বরং চে নামে পরিচিত হতে থাকেন তিনি ( আর্জেন্টাইন ব্যক্তি সম্বোধন) পরমূহুর্তেই চে নিজেকে আবিষ্কার করেন ক্রোধোমত্ত্ব সমুদ্রের মাঝখানে এক পলকা জলযানে, ফিদেলের আহবানে স্বশস্ত্র বিপ্লবে অংশ নিতে চুপিসারে কিউবা চলেছে তারা। শুরু হল সিয়েরা মায়েস্ত্রো পার্বত্য অন্চলে গেরিলা যুদ্ধ, আস্তে আস্তে বাড়তে থাকল তাদের দলের যোদ্ধাদের সংখ্যা, সাধারণ মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন মিলল সব জায়গাতেই সেনা অপশাসনের বিরুদ্ধে।

দলের অন্য সবাই যখন সারা দিনের অভিযান, কসরৎ বা যুদ্ধ শেষে হৈ-হুল্লোড়ে মত্ত চে তখন নিবিষ্ট রোজনামচা লেখাতে ( তার রোজনামচা লেখার অভ্যেস ছিল আজীবন- এর মধ্যে যৌবনের প্রারম্ভে সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকায় ভ্রমণ নিয়ে লেখা মোটর সাইকেল ডায়েরীতো ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পেয়েছে, সেই সাথে আছে কিউবার ডায়েরী, আফ্রিকার দিনলিপি, বলিভিয়ার ডায়েরী) অথবা বই পড়াতে।

চলচ্চিত্রের পর্দায় সেই সংগ্রামময় গেরিলা জীবনের অতীত থেকে বর্তমানে নিয়ে যায় চে-র সাথে সাথে আমাদের সবাইকে, এখানে তিনি কিউবার শিল্প মন্ত্রী আবার কখনো কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গর্ভনর, যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছেন জাতিসংঘে বক্তব্য দেবার জন্য। সাংবাদিকদের সমস্ত কূটনীতির পর্দা ভেঙ্গে দ্ব্যর্থ ভাবে জানালেন- কিউবা স্বাধীন ভাবে, মাথা উচু করে, নিজ পায়ে দাড়িয়ে বাঁচতে চায়, তারা কখনোই সোভিয়েত ইউনিয়নেরর কোন ব্লক বা ল্যাটিন ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে না।

আবার যুদ্ধের অরণ্যে- সহযোদ্ধাদের সাথে নীতি-নির্ধারণী সভা করে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা আরোপ করেন চে। এর মধ্যেও দেখা যায়, গেরিলাদের নীতিভঙ্গ করে পথভ্রষ্ট দু-একজন স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে খাদ্য-শস্য আদায় করে, অস্ত্রের মুখে নির্লিপ্ত ধর্ষণ চালায় কিষানী বালিকার উপরে। এদের একজন ছিল আবার সেনাবাহিনীর চর, গেরিলাদের মহিমাকে কালিমালিপ্ত করায় ছিল তার মুখ্য উদ্দেশ্য। নেতা হিসেবে অত্যন্ত কঠোর চে তাৎক্ষণিক ভাবে মৃত্যুদন্ডের আদেশ কার্যকর করতে বলেন।

কি সংগ্রামময় সে জীবন, আহার-নিদ্রার কোনই নিশ্চয়তা নেই, খরস্রোতা নদী পাড়ি দিচ্ছে গেরিলারা বুক সমান জলে হেটে হেটে, মাথার উপরে আশ্রয় নিয়ে আছে বেজায় ভারী বোঝা। অসাধারণ ক্যামেরার কাজ মূহুর্তে মাঝে আমাদের নিয়ে যায় ক্রান্তীয় সেই দ্বীপে, চিট্চিটে্ গরমের মাঝে ইক্ষু খেতে, কখনো নদীর শীতলতায়।

আবার জাতিসংঘের তার ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের সারা বিশ্বের মাথার উপর ছড়ি ঘোরানোর স্বভাবের তীক্ষ কঠোর সমালোচনা করে উদাহরণ হিসেবে গুয়াতেমালা, মেক্সিকো, পানামাসহ নানা দেশে তাদের হঠকারী আগ্রাসন এবং সি আই এ-র মাধ্যমে সংঘটিত গুপ্তহত্যার কথা তুলে ধরেন, এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বাদানুবাদে লিপ্ত হয় ও সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করে।

আবার সিয়েরা মায়েস্ত্রোর গহনে ফিদেল ও চে, তাবুর ভেতরে আগুনের অশরীরি আলোয় তারা বিভোর ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত বিশ্ব গঠনের সূদুর পরিকল্পনায়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে কিউবান তরুণী গেরিলা অ্যালাইদার সাথে পরিচয় হয় চে, বিপ্লব বাস্তবায়িত হবার পরে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয় তারা। একের পর শহরে বিজয় কেতন ওড়াতে তাকে গেরিলারা, যেখানে তারা যান সেনাদখলদারিত্ব অবসানের পর সেখানে উৎফুল্ল জনতা রাস্তায় নেমে এসে বরণ করে নেয় তাদের পরম আত্মিয়তায়, চে হয়ে ওঠেন তাদের স্বপ্ন নায়ক, ভিনদেশী এক তরুণ তাদের দেশের মানুষের মুক্তির জন্য প্রাণবাজী রেখে অকুতোভয়ে লড়ে যাচ্ছেন, এই বিষয়টা তাদের বিশেষ ভাবে উদ্বেলিত করে তোলে, অনেকেই শুরু করে তার সাক্ষর সংগ্রহ।

যদিও চে সবসময়ই উল্লসিত জনতাকে বলে এসেছেন এই কৃতিত্ব তার দলের সকল গেরিলার, দলগত প্রচেষ্টার। এর ফাকেই ফাকেই চলতে থাকে চে-র অন্য ভূমিকা, একজন ডাক্তার হিসেবে কেবলমাত্র আহত সহযোদ্ধাদেরই নয় সুযোগ পেলেই রোগাক্রান্ত স্থানীয়দের সেবায় হাত বাড়িয়ে দিতেন এই বিশ্ব-রেকর্ডধারী ডাক্তার।

কিউবার অন্যতম বৃহত্তম শহর সান্তা ক্লারার পতনের পর খবর ভেসে আসে বেতারে- স্বৈরাচারী বাতিস্তা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে আমেরিকায়, উল্লাসে ফেটে পরে আপামর জনসাধারণ। এক সহযোদ্ধা আবেগে আল্পুত হয়ে জিজ্ঞেস করে বিপ্লবতো সফল এখন তারা বাড়ী ফিরতে পারবে কি না, গভীর প্রজ্ঞা নিয়ে চে জানান এটা কেবল একটা খন্ড যুদ্ধ জয়, এখন সবার মূল দায়িত্ব হবে দেশ গড়া কাজে নিজের সর্বোচ্চ উৎসর্গ করা। রাজধানী হাভানার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তারা পরের দিন, পথে গুটিকয় গেরিলাকে লুট করা গাড়ী ব্যবহার করতে দেখে তাদের গতিপথ রোধ করে বজ্র কন্ঠে চে জানান এমন অরাজকতার জন্য বিপ্লব হয় নি, অন্যের জিনিস অন্যায় ভাবে ব্যবহার করার চেয়ে বরং পায়ে হেটে দূরের হাভানায় রওনা দেয়া অনেক শ্রেয়তর, তার আদেশে লজ্জিত সহযোদ্ধা গাড়ী ফেরৎ দিতে যায়, শুরু হয় হাভানার পথ যাত্রা, বাতাসে ভেসে আসে অপার্থিব সূরমূর্ছনা, যবনিকাপাত ঘটে প্রথম খন্ডের।

২য় খন্ডের প্রথমেই বলা হয় ১৯৬৫ সালে মে মাসে চে গ্যেভারা কাউকে না জানিয়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন, রেখে গেছেন প্রাণপ্রিয় বন্ধু ফিদেলের কাছে একটি চিঠি। জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে ১৯৬৫ এর ৩ অক্টোবর চিঠিটি পাঠ করেন আবেগাপ্লুত কিউবান প্রেসিডেন্ট, সেখানে লেখা চে কিউবার দায়িত্ব পালনের পর চলেছেন অন্যান্য দেশে, সব দেশই যে তার মাতৃভূমি, বিপ্লবের আগুনের শুদ্ধি মন্ত্র ছড়িয়ে দিতে চান তিনি সবখানে, গাইতে চান প্রতিটি ভূ-খন্ডে সাম্যবাদের গান।

এর ঠিক এক বছর পরে এক গোপন গ্রীষ্মকালীন আবাসে হাজির হন ফিদেল, দেখা হয় একজন পৌঢ় উরুগুয়ান ব্যবসায়ী ছদ্মবেশে থাকা চে-র সাথে, তার বলিভিয়া সফরের খুটি-নাটি নিয়ে কথা হয় দুই বন্ধুর মাঝে। পরিবারের সাথে আবেগঘন অল্প সময় কাটানোর পরপরই বলিভিয়া রওনা দেন তিনি, দূগর্ম পাহাড়ী এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করেন স্থানীয় সাম্যবাদীদের সাথে পূর্ব পরিকল্পনা মত, দলে দলে তরুণেরা যোগ দেয় তারা দলে, গেরিলা যুদ্ধের কৌশল চে তাদের শেখাতে থাকেন হাতে কলমে। আর্থিকভাবে প্রচন্ড দরিদ্র স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ানরা, শিক্ষা-চিকিৎসার কোন বালাই নেয়, নেই কোন কর্মসংস্থান, আছে ক্ষুধাক্রান্ত কচি শিশুমুখের সারি প্রতিটি ঘরে। অপ্রতুল অবস্থার মাঝেও চে চেষ্টা করে যান যথাসম্ভব সুচিকিৎসা দানের।

বলিভিয়ায় আগমনের পর ১০০ দিন পার হয়ে গেরিলাদের সংগঠিত করার কাজে, এর মাঝে তাদের গোপন আস্তানার সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে পায় কিউবার চিহ্নযুক্ত একটি শার্ট। প্রেসিডেন্টের প্যালেসে বসে জরুরী গোপন সভা, উচ্চ পদস্থ আমেরিকানরা চায় বিল্পব দমানোর জন্য তাদের নিয়ন্ত্রিত পুতুল বলিভিয়ান রাষ্ট্রপতিকে সর্বত সাহায্য করতে। পরবর্তীতে সি এই এ যোগ দেয় এই দমন পীড়নে।

২৮০ দিনের মাথায় প্রবল অসুস্থ চে শিকার হন গুপ্ত আক্রমণের। দূর্বল অবস্থায় আত্নগোপন করেন তারা। ৩২৪ দিনের মাথার ছোট্ট পাহাড়ী গ্রাম লা হিগুয়েরায় ক্যাম্প স্থাপন করেন গেরিলারা, সেখানকার শিশুদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেন রকমারি খাবার, বড়দের উদ্দেশ্যে আগুনঝরা বক্তব্য রাখেন চে। স্বপ্ন বুনে দেন শ্রেণী বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের। পরবর্তীতে তাদের উপস্থিতির খবর ফাস হয়ে যাওয়ায় বেশ কবার চোরা গোপ্তা আক্রমনের শিকার হন তারা, বলিভিয়ায় প্রবেশের ৩৪০ দিনের মাথায় জীবনের শেষ যুদ্ধে শত্রুর গুলিতে রাইফেল ভেঙ্গে যাওয়ার পর শারীরিক ভাবে অতিদূর্বল ক্লান্ত চে গুয়েভারা সেনাবাহিনীর হাতে বন্ধী হন।

benicio_del_toro_as_ernesto_che_guevara_in_che_and_the_argentine_collider.com

কিন্তু বিপ্লবের মন্ত্রে তখনো তার সত্ত্বা সমান ভাবে উদ্দীপ্ত, প্রজ্জ্বলিত তার ক্ষুরধার বক্তব্য। তাকে হেয় করার জন্য বন্ধীশালায় তার সামনেই প্রিয় দুই সহযোদ্ধার মৃতদেহ ফেলে রাখে সৈন্যরা। পাহারাদার সৈন্যের কৌতুহলী প্রশ্নে ঠোটের কোণে আলতো রহস্যময় হাসি নিয়ে তিনি স্মরণ করেন পুত্র-কন্যাদের, দার্শনিকের মত জানান রূপকথার ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই তার, অবাক পাহারাদার প্রশ্ন করে ঈশ্বরে বিশ্বাস না থাকলে একজন মানুষ, একটি জাতি এগোতে পারে কিভাবে ! চে-র উত্তর ছিল- নিজের উপর বিশ্বাস রেখে, মানুষের উপর বিশ্বাস রেখে।

৯ অক্টোবর, ১৯৬৭। বলিভিয়ায় অবস্থানের ৩৪১তম দিনে সি আই এ কর্মকর্তার নির্দেশে চে গ্যেভারাকে নির্মম ভাবে গুলী করে হত্যা করা হয়, তার শেষ বাক্য ছিল- গুলী কর, তোমরা তো হত্যা করছ কেবল একজন মানুষকে (অর্থাৎ তার স্বপ্নকে নয়, দর্শনকে নয়, সেটা হত্যার সাধ্য কারো হবে না)।

প্রায় ২৭০ মিনিট দীর্ঘ এই চলচ্চিত্র পর্যালোচনার শেষ দিকে এসে চে-র উদ্দেশ্যে রচিত সেই কবিতাটিই মনে পড়ে-

চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়
আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে আসে, বুকের ভেতরটা ফাঁকা
আত্মায় অবিশ্রান্ত বৃষ্টিপতনের শব্দ
শৈশব থেকে বিষণ্ণ দীর্ঘশ্বাস
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়-
বলিভিয়ার জঙ্গলে নীল প্যান্টালুন পরা
তোমার ছিন্নভিন্ন শরীর
তোমার খোলা বুকের মধ্যখান দিয়ে
নেমে গেছে
শুকনো রক্তের রেখা
চোখ দুটি চেয়ে আছে
সেই দৃষ্টি এক গোলার্ধ থেকে ছুটে আসে অন্য গোলার্ধে
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়।
শৈশব থেকে মধ্য যৌবন পর্যন্ত দীর্ঘ দৃষ্টিপাত-
আমারও কথা ছিল হাতিয়ার নিয়ে তোমার পাশে দাঁড়াবার
আমারও কথা ছিল জঙ্গলে কাদায় পাথরের গুহায়
লুকিয়ে থেকে
সংগ্রামের চরম মুহূর্তটির জন্য প্রস্তুত হওয়ার
আমারও কথা ছিল রাইফেলের কুঁদো বুকে চেপে প্রবল হুঙ্কারে
ছুটে যাওয়ার
আমারও কথা ছিল ছিন্নভিন্ন লাশ ও গরম রক্তের ফোয়ারার মধ্যে
বিজয়-সঙ্গীত শোনাবার-
কিন্তু আমার অনবরত দেরি হয়ে যাচ্ছে!

এতকাল আমি একা, আমি অপমান সয়ে মুখ নিচু করেছি
কিন্তু আমি হেরে যাই নি, আমি মেনে নিই নি
আমি ট্রেনের জানলার পাশে, নদীর নির্জন রাস্তায়, ফাঁকা
মাঠের আলপথে, শ্মশানতলায়
আকাশের কাছে, বৃষ্টির কাছে বৃক্ষের কাছে,
হঠাৎ-ওঠা
ঘূর্ণি ধুলোর ঝড়ের কাছে
আমার শপথ শুনিয়েছি, আমি প্রস্তুত হচ্ছি, আমি
সব কিছুর নিজস্ব প্রতিশোধ নেবো
আমি আবার ফিরে আসবো
আমার হাতিয়ারহীন হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়েছে, শক্ত হয়েছে চোয়াল,
মনে মনে বারবার বলেছি, ফিরে আসবো !
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়-
আমি এখনও প্রস্তুত হতে পারি নি, আমার অনবরত
দেরি হয়ে যাচ্ছে
আমি এখনও সুড়ঙ্গের মধ্যে আধো-আলো ছায়ার দিকে রয়ে গেছি,
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয় !

(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, "চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়")

( ব্যবহৃত ৩ টি ছবির একটি উইকি অন্য ২টি চলচ্চিত্রবিষয়ক ওয়েবপেজ থেকে নেওয়া হয়েছে)


মন্তব্য

আনোয়ার এর ছবি

উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ।

Guest_writer নীলকমলিনী এর ছবি

খুব সুন্দর বর্ণনা । কয়েকদিন ধরেই ভাবছি মুভিটি দেখব,কিন্তু চে র মৃত্যুর কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে যায়, আর দেখা হয়ে উঠে না।
তোমার সব লেখাই পড়ি। তোমাকে দিয়েই আমি বহুদেশ দেখে ফেলেছি। ধন্যবাদ।

তারেক অণু এর ছবি

চে-কে নিয়ে লেখা সবচেয়ে তথ্যবহুল বইটার রিভিউতে হাত দিয়েছি, আশা রাখি সামনে সপ্তাহে দিতে পারব।

ওডিন এর ছবি

আমার দেখা সেরা সিনেমাগুলোর মধ্যে একটা! চলুক

মোটোরসাইকেল ডায়েরিটা অবশ্য এর থেকেও বেশি ভাল লেগেছিলো আমার কাছে। অণু ভাইয়ের নিশ্চই প্ল্যান আছে চে'র রুট ট্রেস করে সেই পথে যাওয়ার? চিন্তিত

তারেক অণু এর ছবি

সে আর বলতে!
সেটারই তো মকশো করে আসলাম, এইবার, আসেন একসাথে যাওয়া যাবে, বোনাস হিসেবে অ্যাঞ্জেলস ফলস !

ওডিন এর ছবি

আহ! অ্যাঞ্জেল ফলস! বেনেজুয়েলার সেই কুয়াশাছন্ন টেবল টপ মাউন্টেইনগুলো একটু আগেই টিভিতে দেখছিলাম!!!! অণু ভাই, আপনে আসলেই একটা অমানুষ! আমার মনের কথা পড়তে পারলেন কেমনে গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি

দেঁতো হাসি নিজের মনের কথা যে !
অনেকেই কিন্তু চে,র পুরো পথটা ফলো করে, অনেকটা তীর্থের মত, এইনিয়ে একটা বই কিনলাম কদিন আগেই। ঝুলে পড়ব যখনই হোক।

অতিথি লেখক এর ছবি

আহা- হিংসা আর হিংসা---

কড়িকাঠুরে

তাসনীম এর ছবি

এই ছবিটা দেখি নি কিন্তু মোটর সাইকেল ডায়েরিস আমার দেখা সেরা ছবিগুলোর একটা।

চমৎকার লাগলো রিভিউ। ছবিটা দেখার ইচ্ছে আগেই ছিল, রিভিউটা বোনাস।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তারেক অণু এর ছবি

আপনার সাথে এই ব্যাপারে কথা হবে না তাসনীম ভাই !
আপনি কিউবার সেই দম্পতির ছবিতে এমন কমেন্ট দিছেন, ছবির চেয়ে কমেন্টে ৫ গুণ বেশী লাইক পড়ছে ইয়ে, মানে...

তাসনীম এর ছবি

কিউবানরা বাংলা বুঝে না এই ভরসাতে ওই বালখিল্য মন্তব্য দেওয়া। পরে লাইকের পরিমাণ দেখে বিব্রত বোধ করেছি মন খারাপ

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তারেক অণু এর ছবি

আরে মিয়া ভাই, গুগল ট্রান্সলেটর আছে না ! হে হে, মস্করা করলাম, আমি তো ভাবছিলাম আপনার সময় থাকলে নিয়মিত কমেন্টের অনুরোধ করব। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবি'টা কোথায়? ফেসবুকে?

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ছবিটা যোগাড় করেছি তিন মাসের বেশী। এখনো দেখার সময় করতে পারিনি। আসলে কেউ যখন বলে, আমি অমুক ছবিটা দেখলাম, তখন তাগিদটা জোরালো হয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তারেক অণু এর ছবি

দেখে ফেলেন সময় করে, ভাল লাগবে আশা করি

পরী  এর ছবি

চমৎকার একটি পোস্ট।

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ, বইটার উপর লিখা শুরু করব শীঘ্রই।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

রিভিউটা পড়েই খায়েশ মিটাই আপাতত।

তারেক অণু এর ছবি

দেখে ফেলেন সময় করে, ভালই লাগার কথা।

মূর্খ পাঠক  এর ছবি

ছবিটা দেখেছি অনেক আগে। এর মধ্যে কোন একটা পর্বের যেন সাবটাইটেল ছিল না। তাই এক পর্ব দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। সাবটাইটেলসহ দু’পর্বই পাওয়া যায় নাকি ভাই?

তারেক অণু এর ছবি

অবশ্যই!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

চে তোমাকে লাল সালাম!
লেখা ভালো লেগেছে। একটা ঐতিহাসিক ছবি শেয়ার করতে চাইঃ

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তারেক অণু এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ রোমেল ভাই। শেষের কবিতাটি কিন্তু আপনারই এক মন্তব্য থেকে কপি করা।

শোয়েব মাহমুদ সোহাগ এর ছবি

উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি
প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

ইটা রাইখ্যা গেলাম...

রাইখা গেলাম।

দেখা হয় নাই কোনটাই। ইয়ে, মানে...
আগে দেখি পড়ে পড়মু।

তারেক অণু এর ছবি
সুজিপ্পে এর ছবি

অসাধারন একটা ছিব ।

তারেক অণু এর ছবি
আসমা খান, অটোয়া এর ছবি

খুব ভালো লাগলো।

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ, কেমন আছেন এখন?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই ছবিটা অনেক আগে একবার দেখতে বসেছিলাম, কিছুদূর দেখার পরেই বিদ্যুৎ গেলো
তারপর থেকে আর কখনোই ছবিটা দেখা হয়ে উঠলো না
দেখেই ফেলতে হবে এবার

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক অণু এর ছবি

দেখে ফেলেন! নাকি দেশে এসে একসাথে দেখব? যখনই দেখেন, ২ পর্ব সাথে নিয়ে বসেন কিন্তু

রণদীপম বসু এর ছবি

লেখার বিষয়ে কোন মন্তব্য নেই। কারণ কী মন্তব্য করবো তাই তো জানি না !
তবে সুনীলের কবিতাটা সেই ছাত্রকাল থেকে যখনই পড়ি, কিরকম উদাস হয়ে যাই সবসময় !! কবিতার ম্যাজিক, না কি চে'র প্রতি সেই ছাত্রকাল থেকে এক অন্যরকম ভালোবাসার মোহ কে জানে !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তারেক অণু এর ছবি

চে-র আসল জীবন নিয়ে বিস্তারিত লেখা আসিতেছে দাদা, সেখানে আপনের ফিডব্যাক অবশ্যকাম্য।

সত্যপীর এর ছবি

চলুক

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি
সজল এর ছবি

কালকেই একটানা দুই পর্ব দেখে ফেললাম। পরের পর্ব দেখতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না, কেন জানি চে কে পরাজিত হিসাবে দেখতে খুব খারাপ লাগে।
দুই পর্ব দেখে কিছু অবজার্ভেশন করলাম। কিউবার বিপ্লব সফল হয়েছিল কারণ, স্বাধীনতার জন্য জন সাধারণ প্রস্তুত ছিল, আর ফিদেলের মত একজন ক্যারিশম্যাটিক রাজনৈতিক এবং সামরিক নিজস্ব নেতা ছিল। বলিভিয়ার জনগণকে প্রস্তুত করার আগেই সশস্ত্র বিপ্লবের চেষ্টা করাটা চে'র মত চিন্তাশীল মানুষের কাছ থেকে আশা করিনি। তার উপর স্থানীয়দের মাঝে ফিদেলের মত কোন নেতা ছিল না, চেও সাধারণ বলিভিয়ানদের মাঝে নিজের ধারণা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেননি/সুযোগ পাননি। বলিভিয়ার ইতিহাস জানার ইচ্ছা হচ্ছে, চে'র মৃত্যু/ব্যর্থতা বলিভিয়ানদের সত্যিই জাগিয়ে তুলতে পেরেছিল কিনা।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

তারেক অণু এর ছবি

চে- তো কখনোই পরাজিত নয় ! পরাজিত মানুষ কি মৃত্যুর সাথে স্পর্ধা দেখাতে পারে

জেনে অবাক হবেন, সমগ্র ল্যাতিন আমেরিকায় গত দশকে সবচেয়ে বেশী পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে কিন্তু বলিভিয়াতেই, একমাত্র দেশে হিসেবে তারা নির্বাচিত করেছে একজন আদিবাসী ইন্ডিয়ানকে, ইভো মোরালেস দেশের দায়িত্ব হাতে নিয়ে দুর্দান্ত সব কাজ করে চলেছেন, পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য মানুষের সমান মর্যাদা দিয়ে পরিবেশ রক্ষার আইন করেছেন।

গেল জানুয়ারিতে লাপাজের বেশ কয় জায়গাতেই চোখে পড়েছে চে-র প্রতিকৃতি। ভাগ্যের পরিহাস, হত্যাকারীদের নামগন্ধ নেই কোথাও, কিন্তু মরে যাওয়া মানুষটি আজ অমর।

guest_writer এর ছবি

চে চিরকাল অমর হয়েই থাকবে, যেমন নেলসন ম্যান্ডেলাও থাকবে। এই ২ জন ২ রকম, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য এক।

তারেক অণু এর ছবি

পরের জনকে নিয়ে লেখা আসিতেছে।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি
প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

গুল্লি উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি
সুপ্রিয় দেব শান্ত এর ছবি

সেদিন পড়া শুরু করলাম "বলিভিয়ার ডায়রী"। আর সচলে ঢুকেই দেখি চে'কে নিয়ে নির্মিত ছবির রিভিউ। আহহহহহহহহ।

তারেক অণু এর ছবি

তার রোজনামচাগুলো তুলনাহীন।

কর্ণজয় এর ছবি

আসলে এই লেখাটি নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।
সেদিন রাস্তায় হাটতে হাটতে মনে হচ্ছিল অন্য একটা কথা।
আপনার মত কেউ যদি এ স্মৃতি থেকে নয়, ঘুরে ঘুরে শহরের গলি, মহল্লা আর মানুষের গল্পগুলো লিখতো - তবে সেটাও একটা অনবদ্য কিছূ হয়ে উঠতে পারতো... আমরা এই শহরে বড় হয়েছি কিন্তু সত্যি বলতে কি কত অচেনা...

তারেক অণু এর ছবি

হয়তো ! আপনার গল্পগুলোও কিন্তু দারুণ ! যদি জীবনস্মৃতি ঘেঁটে লিখেন আরো দারুণ হবার কথা।

guest_writer এর ছবি

লেখকের এই লেখাটা ভাল লাগলো। তবে ২ টা জিনিস একটু ভাল করে থাকলে লেখাটা আরও পরিপূর্ণ হতো।
চে ১ম পর্বে ২ টা জিনিস ছিল শিক্ষনীয়। দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর শিক্ষা । দূর্নীতি নির্মুল করার জন্যই চে এর যুদ্ধে অংশগ্রহন। আর চে সব সময় যুক্ত ছিল শিক্ষা বিস্তারে। যে সব গ্রামবাসী যুদ্ধে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে আসতো, চে তাদেরকে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করতো তারা লেখা পড়া জানে কিনা। চে সব সময় তাদের কে বলতো, যারা লেখা পড়া জানে না, তাদেরকে প্রতারিত করা খুব সহজ। চে আরও তাদের জিজ্ঞাসা করতো "আমরাই যে সঠিক, সেটাই বা তোমরা কিভাবে জানো? আগে তোমাদের লেখা পড়া শিখতে হবে"। যুদ্ধের অবসরে চে তাদের লেখাপড়া শিখাতো। এই হলো চে। চে কখনোই রাশিয়া বা চীনের সমাজতন্ত্রের সাথে থাকতে চাই নায়। ফিদেলের সাথে তার কি নিয়ে মতবিরোধ সেটা কখনই কেউ জানতে পারবেনা। তবে কিউবা আর দক্ষিন আমেরিকার অনেক দেশে চে কে দেবতার মতো দেখা হতো। কিউবাতে ফিদেলের কোন মূরাল নাই, কিন্তু চে এর বিরাট মূরাল আছে।এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের একটা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তার মুরাল আছে। চে এখনো ইউরোপ আর দক্ষিন আমেরিকার অনেক দেশে তরুনদের কাছে আদর্শ।

তারেক অণু এর ছবি

ভালো বলেছেন, ধন্যবাদ। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- চে-র জীবন নিয়ে পরে বেশ বড় একটা পোস্ট করেছি অবশ্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

'তোমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করত, তোমার দেশ কোথায়?
আর তুমি হেসে জবাব দিতে
সেখানেই- যেখানে আমি বিপ্লবের লড়াইতে

------------------------------চু হই কান

কড়িকাঠুরে

তারেক অণু এর ছবি
মেঘা এর ছবি

সেই কবে পড়েছিলাম। আবার পড়লাম আবার ভাল লাগলো। আর সুনীলের কবিতাটা যতবার পড়ি আমার চোখ ভিজে যায়।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

তারেক অণু এর ছবি
মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

Cruel leaders are replaced only to have new leaders turn cruel.
- Che Guevara
চলচ্চিত্রের ধারা বিবরণী দারুণ ! আমার আবার আগে থেকে একটু জানা থাকলে ছবিটা দেখতে বেশী ভালো লাগে । কাল এক বসায় দুই পর্ব দেখে ফেলব । হাসি
তবে আমার কেন যেন মনে হয় হুমায়ুন আজাদের কথা শতভাগ ঠিক, 'বিপ্লবীদের বেশীদিন বাঁচা ঠিক নয় । বেশীদিন বাঁচলেই তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে ।'

তারেক অণু এর ছবি

কিন্তু দেশতো কাউকে চালাতে হবে, সবাই মারা গেলে হবে?

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

হাহাহা... ... এই মারা যাওয়া মনে হয় মরে যাওয়া না, সরে যাওয়া । আরেকজন আসবে, আরও একজন আসবে ... ... আসতেই থাকবে ! শুধু একজনই থাকবে না ।

তারেক অণু এর ছবি

এনি ওয়ে, আমি জানি এই কথাটা খুব জনপ্রিয়, কিন্তু এত্ত সহজ না , কারণ দেশ স্বাধীন করলেই হয় না, দেশকে চালাতে হয়, বিপ্লব করলেই হবে না, সেটার ফল গণমানুষের পক্ষে আনার জন্য কাজ করতেই হবে। সব বিপ্লবী মারা গেলে সেগুলো করবে কারা? একজন লেখকের পক্ষে এই কথা বলা সহজ, কিন্তু সমাজ বদলানো এত্ত সহজ না।

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

ফিদেল আর চে একই সময়ের বিপ্লবী । এখন কি চে'র ইমেজ আর ফিডেল'র ইমেজ একই রকম ?
যা হোক, বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক !

তারেক অণু এর ছবি

চে বেঁচে থাকলে কী হত তা বলা যাচ্ছে না, কিন্তু প্রাকটিক্যাল হিসেবে ফিদেলের কাজের গুরুত্ব অনেক বেশী। ইমেজও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।