বিশ্বের দুর্লভতম বেড়ালের মুখোমুখি

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: সোম, ১৭/০৯/২০১২ - ২:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

IMG_3275

গতকাল ঠিক এই সময় বিশ্বের দুর্লভতম বেড়াল আমুর চিতাবাঘের (Panthera pardus orientalis) সামনাসামনি হয়েছিলাম! কল্পনায় না বাস্তবে, কিন্তু কল্পনা আর বাস্তবের মাঝে যেমন বিস্তর ফারাক, তেমনি আমার আর চিতাবাঘটির মাঝে ছিল শক্তিশালী বেড়া। কি অসাধারণ তেজোদীপ্ত একটা প্রাণী, মখমল হলুদ চামড়ায় বড় বড় কালো ফোঁটা নিয়ে, সবুজ চোখ মেলে চেয়েছিল আমাদের দিকে- এই প্রাণীটিকে এইভাবে দেখার সাধ ছিল না, বন্দী প্রাণীর ছবি তোলার চেষ্টা করা হয় নি কোনদিনই, আজই প্রথম। তাই হয়ত নীরব ভৎসনার দৃষ্টিবাণ হেলেই সে চলে গেল হেলেদুলে।

IMG_3281

দেড়শ বছর আগেও আমুর নদী অববাহিকা, চীনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এবং দুই কোরিয়া জুড়ে দেখা মিলত আমুর চিতাবাঘের, আর আজকে মুক্ত অবস্থায় থাকা এই অপূর্ব প্রাণীটির সংখ্যা ৩০-টিরও কম! ভাবা যায়! যে কারণে আমুর চিতাবাঘ বিশ্বের দুর্লভতম বেড়াল জাতীয় প্রাণী। আর সারা বিশ্ব জুড়ে খাঁচায় রেখে তাদের বংশবৃদ্ধির যে প্রচেষ্টা চলছে সেখানে আছে শ দুয়েক। সোজা কথা, তাদের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ ভাবে খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে।

সারাবিশ্বের নানা বাঘ গবেষণাকেন্দ্র এবং চিড়িয়াখানার মাঝে আবদ্ধ অবস্থায় আমুর চিতাবাঘের বংশবৃদ্ধি ঘটছে খুবই অল্প হারে, তারই অংশ হিসেবে হেলসিংকির করকিয়াসারি চিড়িয়াখানায় ( যা আসলে সাগরের মাঝে অবস্থিত একটি দ্বীপ) এক জোড়া আমুর চিতাবাঘ আনা হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে। আছে একটি সাইবেরিয়ান বাঘও, বিশ্বের বৃহত্তম এই বেড়ালটির আরেক নাম আমুর বাঘ। আমুর বাঘ এবং আমুর চিতাবাঘ একটি অঞ্চলে বিচরণ করলেও তাদের খাদ্যাভাস আলাদা, কাজেই এই নিয়ে তাদের মাঝে কোন বিরোধ হয় না।

IMG_3279

কেন আমুর চিতাবাঘের এই অবস্থা?

আর কেন, মানুষের জন্য! বন কেটে নগরী গড়া হয়েছে, অপরিকল্পিত ভাবে ঝেটিয়ে বিদায় করা হয়েছে শেষ সবুজ চিহ্ন, যেখানে চরে বেড়াত তার শিকার। শিকার না থাকলে শিকারি বাঁচবে কি ভাবে?

আর সেই সাথে কুসংস্কারের ডিপো মানুষের মস্তিষ্ক মনে করেছে বাঘের হাড় খেলে নানাবিধ অসুখ ভাল হয়ে যায়, বাঘের অন্ডকোষের স্যূপ খেলে রমণক্রীড়ায় সিদ্ধহস্ত হওয়া যায়, তাদের দাঁত খুলে মালা বানালে বাঘের শক্তি শরীরে আসে- যতসব ছাইপাশ। সেই সাথে আছের সুন্দর চামড়ার জন্য হত্যা, শিকারের আনন্দের জন্য কাপুরুষের মত হত্যা।

ফলাফল- নিজ বাসভূমে আমুর চিতাবাঘ আছে বিশ থেকে তিরিশটি!

প্রাণীটি সম্পর্কে জানা গেছে এখন পর্যন্ত খুবই কম, গবেষণা চলছে প্রতিনিয়ত। এখানে ডেভিড অ্যাটেনবোরোর ধারা বর্ণনায় আড়াই মিনিটের ভিডিও দেখতে পারবেন মানুষের কুশিক্ষা এবং লোভের বলি প্রাণীটির।

লেখা যায় অনেক কিছু- তাদের শারীরিক আকৃতি, পারিবারিক জীবন, খাদ্যাভাস, কিন্তু সবুজ জ্বলজ্বলে চোখের নীরব চাহনি মনে পড়ছে সবসময়ই, থমকে যাচ্ছে লেখার গতি। শেষ পর্যন্ত কি আমরা রক্ষা করতে পারব প্রাণীটিকে?

IMG_3276


মন্তব্য

Hasan Rahman এর ছবি

লেখা -গুড়- হয়েছে ,

তারেক অণু এর ছবি
ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সবচে' দুর্লভ বেড়ালের কথা বলায় আমি ভেবেছিলাম এই বেড়ালটার কথা বলেছেন বুঝি! পরে দেখি না আমুর-এর বেড়াল।

আমুর (হেইলঙ জিয়াঙ) নদীর কথা বলায় তার তীরের একটা গ্রামের নাম মনে পড়লো - মোহে, গণচীনের সবচে' উত্তরের গ্রাম। সেই গ্রামে আমুরের পাড়ে বসে অরোরা বোরিয়ালিস দেখা যায়, কপাল ভালো থাকলে বিলুপ্তপ্রায় কালুগা মাছের দেখাও পাওয়া যেতে পারে। কে জানে শিডিউল একটু এদিক-ওদিক করলে আমার পেটের দায়ে করা ভ্রমণ আর আপনার মনের দায়ে করা ভ্রমণ মিলে গিয়ে একটা মোহে ভ্রমণ হলে হতেও পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

শ্রডিঞ্জারের বেড়াল, হা হা, খুব মজা পেলাম।

চলেন হয়ে যাবে, জানুয়ারিতে আসি, তখন সামনাসামনি প্ল্যান হবে, তবে আমার অনেক অনেক দিনে ইচ্ছে চীনের প্রাচীরের ৫০০০ কিলোমিটার হাঁটা।

তানিম এহসান এর ছবি

যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে সাথে যেতে চাই, তবে ৫০০০ কিলোমিটার হাঁটতে পারবো কিনা জানিনা মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি

৬ মাসের মামলা!

Hasan Rahman এর ছবি

লেখা -গুড়- হয়েছে

তারেক অণু এর ছবি
তানিম এহসান এর ছবি

নিজেকে মুক্ত করে ফেলেছি। আশৈশব স্বপ্ন ছিলো গ্লোব-ট্রটার হওয়ার, দেশ ঘুরেছি আগে, আরও কিছু পছন্দের সংস্কৃতি দেখেছি দূরে, তারপর হুট করে থেমে যাওয়া; এই স্বপ্নটা ফিরে আসার পেছনে একটা ঘুড়ি’র উড়ে বেড়ানোর কিছুটা যে ছায়াচিত্র পড়েনি সেটা বলি কিভাবে! ফেব্রুয়ারি চেষ্টা করবো পুরোটাই ফ্রি রাখতে।

তারেক অণু এর ছবি

দেঁতো হাসি হৈ হৈ রৈ রৈ

চিলতে রোদ এর ছবি

আচ্ছা হেলসিংকিতে প্রবল শীতকালে চিড়িয়াখানা/প্রানী গবেষনাগারগুলোতে কি উষ্ণমন্ডলীয় প্রানীগুলোর জন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা থাকে অনু ভাই?

তারেক অণু এর ছবি

অবশ্যই! সারা বছরই থাকে।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আমুর চিতাবাঘরা বেঁচে থাকুক।

তারেক অণু এর ছবি

বেঁচে থাকুক তার বনে, চরে বেড়াক আদিম নির্জনতায়

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

মানুষের লোভের শিকার আর একটা প্রাণী!! মন খারাপ

........
রংতুলি

তারেক অণু এর ছবি

আর কত !

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অনেকে হয়তো চিতা (Cheetah) আর চিতাবাঘের (Leopard) পার্থক্য ধরতে পারবে না। একটু আলোকপাত করলে তাদের জন্য ভালো হবে।

তারেক অণু এর ছবি

অনেকটা দিন আপনার পোষ্ট পড়ি না পিপিদা, এই দায়িত্ব আপনার উপরেই ছেড়ে দিলাম চোখ টিপি

কল্যাণ এর ছবি

সব ফাঁকিবাজ ইয়ে, মানে...

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

তারেক অণু এর ছবি

আপ্নে সহ ! শয়তানী হাসি

অরফিয়াস এর ছবি

একদিন এই পৃথিবীতে মনে হয় খালি এক প্রজাতির প্রাণীই বেঁচে থাকবে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

ততদিন পৃথিবী টিকবে কি !

অরফিয়াস এর ছবি

না টেকার জন্যও ঐ এক প্রজাতিই দায়ী।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

তাহলে আর কি , বগল বাজাতে বল তাদের!

স্যাম এর ছবি

ক্রমাগত মুগ্ধতা!!

তারেক অণু এর ছবি
কড়িকাঠুরে এর ছবি

স্কুলে পড়েছিলাম মানুষ সর্বোৎকৃষ্ট খাদক-... সেটা না হলেই ভাল হত ।

তারেক অণু এর ছবি

সর্বভুক বা সর্বোনিকৃষ্ট খাদকও বলতে পারেন।

খেকশিয়াল এর ছবি

বড় বেড়ালগুলো সবই আমার প্রিয় রে, আর চিতাবাঘ দেখলে তো মনে হয় এরকম একটা দোস্ত থাকলে দারুণ মজা হত দেঁতো হাসি

এইটা দেখিস, মনে করেছিলাম এম্বেড করে দেবো, পারলাম কই? হাসি

http://www.youtube.com/watch?v=y5jOmoAr7n4

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তারেক অণু এর ছবি

সবচেয়ে বড় বেড়ালটারও ছবি পেয়েছি কিন্তু, সেই সাথে তুষার চিতার, পরে দিব ।

খেকশিয়াল এর ছবি

তুষার চিতার কথায় মনে পড়লো, স্নো লেপার্ড দেখেছিলাম সিমলা গিয়ে, আমরা যখন তাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান তখন বাবাজি ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমাদের দেখেই ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা চোখে তাকালেন।

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তারেক অণু এর ছবি

চিড়িয়াখানা!

মন মাঝি এর ছবি

চলুক

আচ্ছা, সুন্দরবনের বাঘকে আমরা যতই 'রয়াল' বলি না কেন, আসলে নাকি সেটা মোটেই তত রয়াল নয়? কিছুদিন আগে কোথায় যেন পড়লাম 'রয়াল বেঙ্গল টাইগার' নাকি অন্যান্য দেশের বাঘের তুলনায় অনেক দুর্বল, কমজোরি, ছোটখাটো আর হাল্কা? সাইবেরিয়ান ইত্যাদি বাঘ যে আরও বড় ও শক্তিশালী সেটা আগেই জানতাম, কিন্তু এই খবরে পড়লাম (সোর্স ভুলে গেছি) এমনকি এই উপমহাদেশেও - যেমন ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে - যেসব বাঘ এমনকি 'বেঙ্গল টাইগার' নামে পরিচিত, সেগুলিও নাকি সুন্দরবনের 'রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের' চেয়ে ওজন/সাইজ ও শক্তিতে বেশি? ঐ খবরেই কিম্বা অন্য কোথাও একটা থিওরি পড়লাম - বেশি আরামে থাকতে থাকতেই নাকি 'রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের' এই অবস্থা!‍ সুন্দরবনে নাকি অন্য এলাকার তুলনায় শিকার/খাবার অনেক সুলভ ছিল, ফলে এখানকার বাঘগুলিকেও নাকি সেজন্যে বিবর্তনিক প্রয়োজনে অত শক্তিশালী বা ফিট হতে হয়নি।

খবরটা পড়ে তখন দিলে বড় চোট পেয়েছিলাম - বাঙালির এক বিরল গর্বের ধনের এহেন বাঙালিসুলভ অবস্থা দেখে। যাজ্ঞে, আসল ঘটনা কি জানেন কিছু?

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

আসল ঘটনার কাছাকাছিই সব। আসলে আমাদের ছোট থেকে শুনে আসা- সবচেয়ে শক্তিশালী বাঘ, সবচেয়ে সুন্দর বাঘ যার চামড়া সবচেয়ে উজ্জল- সবই ভুয়া কথা।
সুন্দরবনের বাঘের খ্যাতির মুল কারণ মানুষখেকো হিসেবে তাদের সুনাম বা দুর্নাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

কোপাও মামা...

তারেক অণু এর ছবি

কোপাবে কি করে! প্রায় শেষ তো তারা=

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।