যেভাবে দেওয়া হল বাংলাদেশের সমস্ত পাখির বাংলা নাম

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শুক্র, ১২/০৭/২০১৩ - ৭:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

IMG_6602

ইনাম আল হকের সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল একটা বই সম্পাদনার যাতে স্থান পাবে বাংলাদেশের সমস্ত পাখির নাম, ছবি, তথ্য। বিশেষ করে নামগুলো অবশ্যই বাংলা হতে হবে। ১৯৯৫ সালে খবরের কাগজের জন্য পাখি নিয়ে নিয়মিত ফিচার লিখতে যেয়ে তিনি দুইটি জিনিস খেয়াল করলেন, কিছু পাখির অনেকগুলো করে নাম (যেমন কানাকুয়োকে বলা হয় কুবো, আইড়া কুইড়া, কানাকুয়ো) আর অধিকাংশ পাখির কোন নামই নেই! দেখা গেল বাংলাতে কিছু কিছু পাখির নাম দিয়েছিলেন সালিম আলী, লেখক বনফুল, অজয় হোম এবং ডঃ রেজা খান। কিন্তু সেগুলো সব একসাথে করেও ২৫০টির বেশী হল না, আবার সেখানে দেখা দিল নানাবিধ সমস্যা, বিশেষ করে নাম দিয়ে পাখিটির পরিবার চেনা যায় না! যেমন তিলা বাজ, যা কিনা এক ধরনের ঈগল, কাজেই নামের মাঝে আছে ভুল জাত নির্ণয়।

এরপরে তিনি নিজেই চেষ্টা করতে থাক্লেন এই দুরূহ কাজ সম্পাদনের, সংগ্রহ করলেন ইংরেজি এবং ফরাসী ভাষায় সারা বিশ্বের সমস্ত পাখির নাম। অবশ্য নানা পাখির ও গাছের নাম সংগ্রহের শখ তার অনেক আগে থেকেই, মনে করলেন ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রামে এক অচেনা গাছ দেখে স্থানীয় লোকের কাছে সেই বৃক্ষের নাম শুনেছিলেন নচিন! ব্যস, খাতায় লিখে ফেললেন - নচিন গাছ! এই নিয়েই পরে সহকর্মীদের মাঝে ব্যপক হাসাহাসি, নচিন তো কোন নাম নয়, এর মানে ন চিনি অর্থাৎ চিনি না! এমনভাবেই একবার খঞ্জন দেখাতেই এক গ্রামবাসী বলেছিল পাখিটির নাম বাউই, মানে কিনা বাবুই! পরবর্তীতে সংগ্রহে আসল ডাচ, ফিনিশ ইত্যাদি ভাষায় সমস্ত পাখির নাম।

সেগুলোর রীতিনীতি লক্ষ্য করে তিনি ঠিক করলেন নাম হতে হবে বর্ণনামূলক এবং যতদূর সম্ভব স্থানীয় প্রচলিত নাম। যেমন বাংলাদেশে দুই ধরনের কাক দেখা যায়, পাতিকাক এবং দাড়কাক, পাতি মানে ছোট! মানে বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে নামের মাঝেই।

সেই সাথে যে ১১টি পাখির নামের শেষে Benghalensis আছে সেগুলোর নামের প্রথমে বসালেন বাংলা! সেই পাখিদের নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই পোস্টে-

আর কারো নামের পাখিদের নামকরণ করা হলে সেই নাম অবিকৃত রেখেই পাখির নাম করণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, আর যে সমস্ত পাখি নামের প্রথমে Indian মানে ভারতবর্ষ আছে তাদের নামের প্রথমে থাকবে দেশী, কিছু কিছু শব্দ নিজে থেকেই কয়েন করতে হল প্রয়োজনের তাগিদে, যেমন Oriental শব্দের যথার্থ মানে পাওয়া যাচ্ছিল না, ডিকশনারি ঘেঁটে দেখা গেল ওরিয়েন্ট মানে যেখানে সূর্য উদিত হয়, জাপান থেকে শুরু করে ইরান পর্যন্ত বিশাল ভূখণ্ড এর আওতায় আসে, তাই নামের প্রথমে ওরিয়েন্টাল থাকলে সেটাকে উদয়ী করে দেওয়া হল বাংলাতে।

চেষ্টা করা হতে থাকল পাখির নাম দুই শব্দের দিতে, এবং শেষের শব্দটি দিয়ে পাখিটির প্রজাতি বোঝাতে।

সেই সাথে ইনাম আল হক চেষ্টা করতে থাকলেন যথার্থ বর্ণনামূলক নাম দিতে, যেভাবে অনেক ভাষাতে দেওয়া হয়েছে, এবং যে নামগুলো টিকে থাকবে, দেহের গড়ন, মাথার রঙ, পাখনার আকার ইত্যাদির বর্ণনা এবং পাখির পরিবারের নাম জুড়ে দেওয়া হল। এর আগে কেউ কেউ চমৎকার সব কাব্যিক নামও দিয়েছেন যেমন কোন সুন্দর নীল পাখির নাম নীলপরি, কিন্তু তাতে যেমন তার পরিবার বোঝা যাচ্ছে না তেমন পাখিটি নীল বাদে আর কোন তথ্যও নেই, ফলে সেই নাম হারিয়ে গেছে । বাংলাদেশের ঈগলদের নাম দিতে যেয়ে দেখা গেল দেশে স্নেকঈগল এবং সার্পেন্টঈগল দুইই আছে, তাই স্নেকঈগলের বাংলা দেওয়া হল সাপঈগল ও সার্পেন্টঈগলের নাগঈগল, ফলে তিলাবাজ পেল তার যথার্থ নাম তিলা নাগঈগল!

খুব বেশী সমস্যা হয়ে ছিল বকের নাম দিতে যেয়ে, বাংলাদেশে ইগ্রেট, হেরণ এবং বিটার্ণ এই তিন পরিবারের বেশ কয়েক প্রজাতির বক পাওয়া যায়। ইগ্রেট বা সাদা বকদের পরিবারের নাম দেওয়া হল বগা, রঙিন বক বা হেরণদের বক, কিন্তু সমস্যা বাঁধল বিটার্ণদের নিয়ে! তাদের জন্য অনেক খুঁজেও এমন কোন নাম পাওয়া যাচ্ছিল না যা দিয়ে বকজাতীয় পাখিও বোঝা যাবে আবার অন্য বকদের চেয়ে আলাদা সেইটাও বোঝা যাবে! শেষে এক পাখিপর্যবেক্ষণ ট্রিপের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডঃ আব্দুল মান্নান বললেন তাদের সময়ে বগলা নামের এক সিগারেট খুবই জনপ্রিয় ছিল, সেইখান থেকে আসল বগলা নামটি!

খবরের কাগজে এসব নাম দেখে অনেক সময়ই গঠনমূলক ফিডব্যাক যেমন আসত তেমন মিলত বিরূপ সমালোচনাও। এক বৃদ্ধ দেখা করে করা করে বললেন আপনি পাখিদের নাম কালা, ধলা এসব কি দিচ্ছেন! ইনাম আল হক বলেছিলেন বাংলাদেশের রঙ দিয়ে কোন নাম হয় না, সব গ্রামেই কালা মিয়া, ধলা মিয়া নামে কেউ না কেউ আছে, কিন্তু সারা বাংলাদেশে সাদা মিয়া বা কালো মিয়া নাই! তেমন ভাবেই ধূসর হয়ে গেল মেটে!

আবার সাদা-কালো বা Pied হলে সেটাকে পাকরা বলা এবং দাগ থাকলে দাগী শব্দ ব্যবহার করা হত, আসলে ইতিহাসের এক পর্যায়ে ভয়াবহ আসামীদের গায়ে ছাপ মেরে বা দাগ দিয়ে দেয়া হত, সেখান থেকে দাগী আসামি কথাটা এসেছে, তাই পাখিদের ক্ষেত্রেও দাগের ব্যাপারটা থেকে গেল সঙ্গত কারণেই।

আবার প্যাঁচাদের নাম দিতে যেয়ে EagleOwlদের নাম দেওয়া হল হুতোম প্যাঁচা, Scops Owlদের নিমপ্যাঁচা, ক্ষুদে আকারের Owletদের কুটি প্যাঁচা, Wood Owlদের গাছ প্যাঁচা, Hawk Owlদের শিকরে প্যাঁচা।

কাঠঠোকরাদের যেহেতু এলাকাভেদে কাঠকুড়ালিও বলা হয় তাই Yellownapeদের নামকরণ করা হল হলদেকুড়ালি, আর Piculetদের কুটিকুড়ালি।

কোকিলদের ক্ষেত্রে Koel হল কোকিল, Cuckooরা সব পাপিয়া এবং Hawk.cuckooরা সবাই চোখগ্যালো। মুশকিল বাঁধল DrongoCuckoo দের নিয়ে, শেষে তাদের নাম দেওয়া হল ফিঙ্গে পাপিয়া।

শিকারি পাখিদের নিয়ে বাঁধল বিস্তর গোলমাল, তাদের এক জনপ্রিয় নাম ছিল রাখানভুলানি, কিন্তু যাচাই করে দেখা গেল যে যারা বাতাসে ডানা মেলে ভেসে বেড়ায় তাদের সবাইকেই রাখালভুলানি বলা হয়, চিল, বাজ, শিকরে তো বটেই এমনকি রাতচরাদেরও! তাই পরিবার অনুযায়ী আলাদা আলাদা নাম করল করা হল, সমস্ত Falconদের উপমহাদেশের প্রচলিত নাম শাহিন দেওয়া হল, তার সব দ্রুতগতির শিকারি পাখি, এদের মাঝে Hobbyদের টিকাশাহিন আর Kestrelদের নাম কেস্ট্রেল রাখা হল। Bajaদের নাম বাজ, Buzzardদের নাম তিসাবাজ, HoneyBuzzardদের মধুবাজ, Harrierদের নাম কাপাসি রাখ হল।

এর মাঝে কিছু পাখি নামের সাথে পান বা পানি জুড়ে দেওয়া হল যেমন পানকৌড়ি, পানচিল, পানকাপাসি ইত্যাদি।

অবশেষে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ২৬ নম্বর খণ্ডে বাংলাদেশের সমস্ত পাখির তথ্য ও ছবি নিয়ে বইটি প্রকাশিত হয় প্রথমে ইংরেজিতে এবং ২০০৯ সালের আগস্টে বাংলায়।

বর্তমানে ইনাম আল হক চেষ্টা করে যাচ্ছেন পৃথিবীর সমস্ত পাখির বাংলা নামকরণ করতে। মহাদুরূহ এই কাজেই কেউ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আগ্রহী হলে কমেন্টে জানাতে পারেন এবং বিভিন্ন নামের ব্যাপারে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন।

উপরের তথ্যগুলো তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে এই বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের নানা এলাকায় পাখিপর্যবেক্ষণের সময় নেওয়া।

IMG_4214

বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিঃসন্দেহে বাদ পড়েছে যা পরবর্তীতে যোগ করে দেবার আশা রাখি। নিচের সেই পাখির বইটির প্রায় সবকিছুই অনুমতি সাপেক্ষে দেওয়া হল ( এই বিষয়ে হাচল জুন ভাই অনেক সাহায্য করেছেন, তাকে আর ছোট না করি! তারপরও কোন ইংরেজি ফন্ট না এসে থাকলে আবার চেষ্টা করা হবে) , এরপর থেকে একটু কষ্ট করে আপনি নিজেই জেনে নিতে পারবেন পাখিদের বাংলা নাম।

µg evsjv bvg Bs‡iwR bvg ‰eÁvwbK bvg cwihvqx

তিতির, বটেরা, মুরগি ও ময়ূর (ফাসিয়ানিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৭৬, বাংলাদেশে ১৩ প্রজাতি)

001 কালা তিতির Black Francolin Francolinus francolinus
002 বাদা তিতির Swamp Francolin Francolinus gularis
003 মেটে তিতির Grey Francolin Francolinus pondicerianus
004 রাজ বটেরা King Quail Coturnix chinensis
005 বৃষ্টি বটেরা Rain Quail Coturnix coromandelica
006 পাতি বটেরা Common Quail Coturnix coturnix cwihvqx
007 ধলাগাল বাতাই White-cheeked Partridge Arborophila atrogularis
008 লালগলা বাতাই Rufous-throated Partridge Arborophila rufogularis
009 লাল বনমুরগি Red Junglefowl Gallus gallus
010 কালা মথুরা Kalij Pheasant Lophura leucomelanos
011 মেটে কাঠমৌর Grey Peacock-Pheasant Polyplectron bicalcaratum
012 দেশি ময়ূর Indian Peafowl Pavo cristatus
013 সবুজ ময়ূর Green Peafowl Pavo muticus

শরালি (ডেন্ড্রোসিগ্নিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)

014 রাজ শরালি Fulvous Whistling Duck Dendrocygna bicolour cwihvqx
015 পাতি শরালি Lesser Whistling Duck Dendrocygna javanica

হাঁস (অ্যানাটিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৪৮, বাংলাদেশে ২৯ প্রজাতি)

016 বড় ধলাকপাল রাজহাঁস Greater White-fronted Goose Anser albifrons cwihvqx
017 মেটে রাজহাঁস Greylag Goose Anser anser cwihvqx
018 দাগি রাজহাঁস Bar-headed Goose Anser indicus cwihvqx
019 খয়রা চকাচকি Ruddy Shelduck Tadorna ferruginea cwihvqx
020 পাতি চকাচকি Common Shelduck Tadorna tadorna cwihvqx
021 বাদি হাঁস White-winged Duck Cairina scutulata
022 নাকতা হাঁস Knob-billed Duck Sarkidiornis melanotos
023 ধলা বালিহাঁস Cotton Pygmy-goose Nettapus coromandelianus
024 মান্দারিন হাঁস Mandarin Duck Aix galericulata cwihvqx
025 উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস Northern Pintail Anas acuta cwihvqx
026 উত্তুরে খুন্তেহাঁস Northern Shoveler Anas clypeata cwihvqx
027 পাতি তিলিহাঁস Eurasian Teal Anas crecca cwihvqx
028 ফুলুরি হাঁস Falcated Duck Anas falcata cwihvqx
029 বৈকাল তিলিহাঁস Baikal Teal Anas formosa cwihvqx
030 ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস Eurasian Wigeon Anas penelope cwihvqx
031 নীলমাথা হাঁস Mallard Anas platyrhynchos cwihvqx
032 দেশি মেটেহাঁস Indian Spot-billed Duck Anas poecilorhyncha
033 গিরিয়া হাঁস Garganey Anas querquedula cwihvqx
034 পিয়াং হাঁস Gadwall Anas strepera cwihvqx
035 গোলাপি হাঁস Pink-headed Duck Rhodonessa caryophyllacea
036 লালঝুটি ভুতিহাঁস Red-crested Pochard Netta rufina cwihvqx
037 বেয়ারের ভুতিহাঁস Baer’s Pochard Aythya baeri cwihvqx
038 পাতি ভুতিহাঁস Common Pochard Aythya ferina cwihvqx
039 টিকি হাঁস Tufted Duck Aythya fuligula cwihvqx
040 বড় স্কপ Greater Scaup Aythya marila cwihvqx
041 মরচেরঙ ভুতিহাঁস Ferruginous Duck Aythya nyroca cwihvqx
042 পাতি সোনাচোখ Common Goldeneye Bucephala clangula cwihvqx
043 স্মিউ হাঁস Smew Mergellus albellus cwihvqx
044 পাতি মার্গেঞ্জার Common Merganser Mergus merganser cwihvqx

নাটাবটের (টার্নিসিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২১, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি)

045 দাগি নাটাবটের Barred Buttonquail Turnix suscitator
046 ছোট নাটাবটের Kurrichane Buttonquail Turnix sylvatica
047 হলদেপা নাটাবটের Yellow-legged Buttonquail Turnix tanki

কাঠঠোকরা (পিসিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২১৬, বাংলাদেশে ২০ প্রজাতি)

048 ইউরেশীয় ঘাড়ব্যথা Eurasian Wryneck Jynx torquilla cwihvqx
049 তিলা কুটিকুড়ালি Speckled Piculet Picumnus innominatus
050 ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি White-browed Piculet Sasia ochracea
051 মেটেটুপি বাটকুড়ালি Grey-capped Pygmy Woodpecker Dendrocopos canicapillus
052 বাতাবি কাঠকুড়ালি Fulvous-breasted Woodpecker Dendrocopos macei
053 হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি Yellow-crowned Woodpecker Dendrocopos mahrattensis
054 খয়রা কাঠকুড়ালি Rufous Woodpecker Celeus brachyurus
055 মেটেমাথা কাঠকুড়ালি Grey-headed Woodpecker Picus canus
056 ছোট হলদেকুড়ালি Lesser Yellownape Picus chlorolophus
057 বড় হলদেকুড়ালি Greater Yellownape Picus flavinucha
058 দাগিবুক কাঠকুড়ালি Streak-breasted Woodpecker Picus viridanus
059 দাগিগলা কাঠকুড়ালি Streak-throated Woodpecker Picus xanthopygaeus
060 বাংলা কাঠঠোকরা Lesser Goldenback Dinopium benghalense
061 পাতি কাঠঠোকরা Common Goldenback Dinopium javanense
062 হিমালয়ী কাঠঠোকরা Himalayan Goldenback Dinopium shorii
063 বড় কাঠঠোকরা Greater Goldenback Chrysocolaptes lucidus
064 ধলামাথা কাঠকুড়ালি Pale-headed Woodpecker Gecinulus grantia
065 তামাটে কাঠকুড়ালি Bay Woodpecker Blythipicus pyrrhotis
066 কলজেবুটি কাঠকুড়ালি Heart-spotted Woodpecker Hemicircus canente ?
067 বড় মেটেকুড়ালি Great Slaty Woodpecker Mulleripicus pulverulentus

বসন্ত (কাপিটোনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৮৪, বাংলাদেশে ৫ প্রজাতি)

068 নীলগলা বসন্ত Blue-throated Barbet Megalaima asiatica
069 নীলকান বসন্ত— Blue-eared Barbet Megalaima australis
070 সেকরা বসন্ত Coppersmith Barbet Megalaima haemacephala
071 দাগি বসন্ত— Lineated Barbet Megalaima lineata
072 বড় বসন্ত Great Barbet Megalaima virens

ধনেশ (বাসেরোটিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৫৪, বাংলাদেশে ৪ প্রজাতি)

073 দেশি মেটেধনেশ Indian Grey Hornbill Ocyceros birostris
074 উদয়ী পাকরাধনেশ Oriental Pied Hornbill Anthracoceros albirostris
075 রাজ ধনেশ Great Hornbill Buceros bicornis
076 পাতাঠুঁটি ধনেশ Wreathed Hornbill Rhyticeros undulatus ?
হুদহুদ (ইউপুপিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)
077 পাতি হুদহুদ Eurasian Hoopoe Upupa epops

কুচকুচি (ট্রোগোনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১১, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)

078 লালমাথা কুচকুচি Red-headed Trogon Harpactes erythrocephalus

নীলকান্ত (কোরাসিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১২, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)

079 বাংলা নীলকান্ত Indian Roller Coracias benghalensis
080 পাহাড়ি নীলকান্ত Dollarbird Eurystomus orientalis cwihvqx

মাছরাঙা (অলকেডিনিডি+ডালকেলোনিডি+কেরিলিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৫+৬১+৯, বাংলাদেশে ৩+৬+৩ প্রজাতি)

081 পাতি মাছরাঙা Common Kingfisher Alcedo atthis
082 ব্লাইদের মাছরাঙা Blyth’s Kingfisher Alcedo hercules ?
083 নীলকান মাছরাঙা Blue-eared Kingfisher Alcedo meninting
084 উদয়ী বামনরাঙা Oriental Dwarf Kingfisher Ceyx erithaca cwihvqx?
085 খয়রাপাখ মাছরাঙা Brown-winged Kingfisher Pelargopsis amauroptera
086 মেঘহও মাছরাঙা Stork-billed Kingfisher Pelargopsis capensis
087 লাল মাছরাঙা Ruddy Kingfisher Halcyon coromanda
088 কালাটুপি মাছরাঙা Black-capped Kingfisher Halcyon pileata cwihvqx
089 ধলাগলা মাছরাঙা White-throated Kingfisher Halcyon smyrnensis
090 ধলাঘাড় মাছরাঙা Collared Kingfisher Todiramphus chloris
091 ঝুটিয়াল মাছরাঙা Crested Kingfisher Megaceryle lugubris
092 পাকরা মাছরাঙা Pied Kingfisher Ceryle rudis

সুইচোরা (মেরোপিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৬, বাংলাদেশে ৪ প্রজাতি)

093 নীলদাড়ি সুইচোরা Blue-bearded Bee-eater Nyctyornis athertoni
094 খয়রামাথা সুইচোরা Chestnut-headed Bee-eater Merops leschenaulti
095 সবুজ সুইচোরা Green Bee-eater Merops orientalis
096 নীললেজ সুইচোরা Blue-tailed Bee-eater Merops philippinus cwihvqx

কোকিল (কুকুলিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৮৮, বাংলাদেশে ১৮ প্রজাতি)

097 খয়রাপাখ পাপিয়া Chestnut-winged Cuckoo Clamator coromandus cwihvqx
098 পাকরা পাপিয়া Jacobin Cuckoo Clamator jacobinus cwihvqx
099 হজসনি চোখগ্যালো Hodgson's Hawk-Cuckoo Hierococcyx nisicolor cwihvqx
100 বড় চোখগ্যালো Large Hawk-Cuckoo Hierococcyx sparverioides cwihvqx
101 পাতি চোখগ্যালো Common Hawk-Cuckoo Hierococcyx varius
102 পাতি পাপিয়া Common Cuckoo Cuculus canorus cwihvqx
103 বউকথাকও পাপিয়া Indian Cuckoo Cuculus micropterus
104 ছোট পাপিয়া Lesser Cuckoo Cuculus poliocephalus cwihvqx
105 উদয়ী পাপিয়া Oriental Cuckoo Cuculus saturatus cwihvqx
106 করুণ পাপিয়া Plaintive Cuckoo Cacomantis merulinus
107 মেটেপেট পাপিয়া Grey-bellied Cuckoo Cacomantis passerinus
108 দাগি তামাপাপিয়া Banded Bay Cuckoo Cacomantis sonneratii
109 এশীয় শ্যামাপাপিয়া Asian Emerald Cuckoo Chrysococcyx maculatus cwihvqx
110 বেগুনি পাপিয়া Violet Cuckoo Chrysococcyx xanthorhynchus
111 এশীয় ফিঙেপাপিয়া Asian Drongo-Cuckoo Surniculus lugubris
112 এশীয় কোকিল Asian koel Eudynamys scolopacea
113 মেটে মালকোআ Sirkeer Malkoha Phaenicophaeus leschenaultii ?
114 সবুজঠোঁট মালকোআ Green-billed Malkoha Phaenicophaeus tristis

কুবো (সেন্ট্রোপডিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩০, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)

115 বাংলা কুবো Lesser Coucal Centropus bengalensis
116 বড় কুবো Greater Coucal Centropus sinensis

টিয়া (সিটাসিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩৬০, বাংলাদেশে ৭ প্রজাতি)

117 বাসন্তী লটকনটিয়া Vernal Hanging Parrot Loriculus vernalis
118 মদনা টিয়া Red-breasted Parakeet Psittacula alexandri
119 লালমাথা টিয়া Plum-headed Parakeet Psittacula cyanocephala
120 চন্দনা টিয়া Alexandrine Parakeet Psittacula eupatria
121 মেটেমাথা টিয়া Grey-headed Parakeet Psittacula finschii
122 সবুজ টিয়া Rose-ringed Parakeet Psittacula krameri
123 ফুলমাথা টিয়া Blossom-headed Parakeet Psittacula roseata

evZvwm (A¨v‡cvwWwW+†nwg‡cÖvKwbwW cwievi: c„w_ex‡Z 99+4, evsjv‡`‡k 7+1 cÖRvwZ)

১২৪ হিমালয়ী কুটিবাতাসি Himalayan Swiftlet Aerodramus brevirostris পরিযায়ী

১২৫ ধলাকোমর সুইবাতাসি White-rumped Needletail Zoonavena sylvatica পরিযায়ী?

১২৬ চাঁদিপিঠ সুইবাতাসি Silver-backed Needletail Hirundapus cochinchinensis পরিযায়ী?

১২৭ খয়রাপিঠ সুইবাতাসি Brown-backed Needletail Hirundapus giganteus cwihvqx?

১২৮ এশীয় তালবাতাসি Asian Palm Swift Cypsiurus balasiensis

১২৯ ঘর বাতাসি Little Swift Apus affinis

১৩০ চেরালেজ বাতাসি Fork-tailed Swift Apus pacificus পরিযায়ী

১৩১ ঝুটিয়াল গাছবাতাসি Crested Treeswift Hemiprocne coronata?

প্যাঁচা (টাইটোনিডি+স্ট্রিগিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৭+১৫৬, বাংলাদেশে ১+১৪ প্রজাতি)

১৩২ লক্ষ্মী প্যাঁচা Barn Owl Tyto alba

১৩৩ কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা Collared Scops Owl Otus bakkamoena

১৩৪ পাহাড়ি নিমপ্যাঁচা Mountain Scops Owl Otus spilocephalus

১৩৫ উদয়ী নিমপ্যাঁচা Oriental Scops Owl Otus sunia

১৩৬ মেটে হুতোমপ্যাঁচা Dusky Eagle Owl Bubo coromandus

১৩৭ চিতিপেট হুতোমপ্যাঁচা Spot-bellied Eagle Owl Bubo nipalensis

১৩৮ তামাটে মেছোপ্যাঁচা Tawny Fish Owl Ketupa flavipes

১৩৯ মেটে মেছোপ্যাঁচা Buffy Fish Owl Ketupa ketupu

১৪০ খয়রা মেছোপ্যাঁচা Brown Fish Owl Ketupa zeylonensis

১৪১ খয়রা গাছপ্যাঁচা Brown Wood Owl Strix leptogrammica

১৪২ দাগিঘাড় কুটিপ্যাঁচা Collared Owlet Glaucidium brodiei

১৪৩ এশীয় দাগিপ্যাঁচা Asian Barred Owlet Glaucidium cuculoides

১৪৪ খুড়–লে প্যাঁচা Spotted Owlet Athene brama

১৪৫ খয়রা শিকরেপ্যাঁচা Brown Hawk Owl Ninox scutulata

১৪৬ ছোটকান প্যাঁচা Short Eared Owl Asio flammeus পরিযায়ী


ব্যাংমুখো (বাট্রাকোস্ট্রোমিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১১, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)

১৪৭ হজসনি ব্যাঙমুখো Hodgson’s Frogmouth Batrachostomus hodgsoni

রাতচরা (ইউরোস্টোপডিডি+কাপ্রিমালগিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৭+৭৯, বাংলাদেশে ১+৪ প্রজাতি)

১৪৮ বড় কানচরা Great Eared Nightjar Eurostopodus macrotis

১৪৯ মেঠো রাতচরা Savanna Nightjar Caprimulgus affinis

১৫০ দেশি রাতচরা Indian Nightjar Caprimulgus asiaticus

১৫১ মেটে রাতচরা Grey Nightjar Caprimulgus indicus

১৫২ ল্যাঞ্জা রাতচরা Large-tailed Nightjar Caprimulgus macrurus

পায়রা, ঘুঘু, হরিয়াল ও ধুমকল (কলম্বিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩১৩, বাংলাদেশে ১৭ প্রজাতি)?

১৫৩ গোলা পায়রা Common Pigeon Columba livia

১৫৪ ধলাটুপি পায়রা Pale-capped Pigeon Columba punicea?

১৫৫ তিলা ঘুঘু Spotted Dove Streptopelia chinensis

১৫৬ ইউরেশীয় কণ্ঠীঘুঘু Eurasian Collared Dove Streptopelia decaocto

১৫৭ উদয়ী রাজঘুঘু Oriental Turtle Dove Streptopelia orientalis

১৫৮ হাসির ঘুঘু Laughing Dove Streptopelia senegalensis?

১৫৯ লাল রাজঘুঘু Turtle Dove Streptopelia tranquebarica

১৬০ দাগি কোকিলঘুঘু Barred Cuckoo-Dove Macropygia unchall?

১৬১ পাতি শ্যামাঘুঘু Common Emerald Dove Chalcophaps indica
১৬২ ল্যাঞ্জা হরিয়াল Pin-tailed Green Pigeon Treron apicauda?

১৬৩ কমলাবুক হরিয়াল Orange-breasted Green Pigeon Treron bicincta

১৬৪ ঠোঁটমোটা হরিয়াল Thick-billed Green Pigeon Treron curvirostra

১৬৫ হলদেপা হরিয়াল Yellow Footed Green Pigeon Treron phoenicopterus

১৬৬ পম্পাদুর হরিয়াল Pompadour Green Pigeon Treron pompadora

১৬৭ গেঁজলেজ হরিয়াল Wedge-tailed Green Pigeon Treron sphenurus

১৬৮ সবুজ ধুমকল Green Imperial Pigeon Ducula aenea

১৬৯ পাহাড়ি ধুমকল Mountain Imperial Pigeon Ducula badia


ডাহর (ওটিডিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৬, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)

১৭০ বাংলা ডাহর Bengal Florican Houbaropsis bengalensis

১৭১ পাতি ডাহর Lesser Florican Sypheotides indica

সারস (গ্রুইডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৫, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি)

১৭২ দেশি সারস Sarus Crane Grus antigone পরিযায়ী

১৭৩ পাতি সারস Common Crane Grus grus পরিযায়ী

১৭৪ ডেমোজিল সারস Demoiselle Crane Anthropoides virgo পরিযায়ী

প্যারাপাখি (হেলিঅর্নিটিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)

১৭৫ কালামুখ প্যারাপাখি Masked Finfoot Heliopais personata

ঝিল্লি, গুরগুরি, কালেম ও কুট (রালিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৪৩, বাংলাদেশে ১১ প্রজাতি)

১৭৬ মেটেপা ঝিল্লি Slaty-legged Crake Rallina eurizonoides

১৭৭ মেটেবুক ঝিল্লি Slaty-breasted Rail Gallirallus striatus

১৭৮ পান্তা ঝিল্লি Water Rail Rallus aquaticus পরিযায়ী

১৭৯ খয়রা ঝিল্লি Brown Bush-hen Amaurornis akool

১৮০ ধলাবুক ডাহুক White-breasted Waterhen Amaurornis phoenicurus

১৮১ লালবুক গুরগুরি Ruddy-breasted Crake Porzana fusca

১৮২ বেইলন গুরগুরি Baillon’s Crake Porzana pusilla পরিযায়ী

১৮৩ কোড়া Watercock Gallicrex cinerea

১৮৪ বেগুনি কালেম Purple Swamphen Porphyrio porphyrio

১৮৫ পাতি পানমুরগি Common Moorhen Gallinula chloropus

১৮৬ পাতি কুট Eurasian Coot Fulica atra পরিযায়ী

P¨vMv, †RŠivwj, ¸wj›`v, evUvb I PvcvwL (†¯‹v‡jvcvwmwW cwievi: c„w_ex‡Z 88, evsjv‡`‡k 35 cÖRvwZ)

১৮৭ ইউরেশীয় মুরগিচ্যাগা Eurasian Woodcock Scolopax rusticola পরিযায়ী
১৮৮ পাতি চ্যাগা Common Snipe Gallinago gallinago পরিযায়ী
১৮৯ সুইনহোর চ্যাগা Swinhoe’s Snipe Gallinago megala পরিযায়ী
১৯০ বন চ্যাগা Wood Snipe Gallinago nemoricola পরিযায়ী
১৯১ ল্যাঞ্জা চ্যাগা Pin-tailed Snipe Gallinago stenura পরিযায়ী
১৯২ জ্যাক চ্যাগা Jack Snipe Lymnocryptes minimus পরিযায়ী
১৯৩ দাগিলেজ জৌরালি Bar-tailed Godwit Limosa lapponica পরিযায়ী
১৯৪ কালালেজ জৌরালি Black-tailed Godwit Limosa limosa পরিযায়ী
১৯৫ ইউরেশীয় গুলিন্দা Eurasian Curlew Numenius arquata পরিযায়ী
১৯৬ পুবের গুলিন্দা Eastern Curlew Numenius madagascariensis পরিযায়ী
১৯৭ নাটা গুলিন্দা Whimbrel Numenius phaeopus পরিযায়ী
১৯৮ মেটেলেজ ট্যাটলার Grey-tailed Tattler Heteroscelus brevipes পরিযায়ী
১৯৯ তিলা লালপা Spotted Redshank Tringa erythropus পরিযায়ী
২০০ বন বাটান Wood Sandpiper Tringa glareola পরিযায়ী
২০১ নর্ডম্যান সবুজপা Nordmann’s Greenshank Tringa guttifer পরিযায়ী
২০২ পাতি সবুজপা Common Greenshank Tringa nebularia পরিযায়ী
২০৩ সবুজ বাটান Green Sandpiper Tringa ochropus পরিযায়ী
২০৪ বিল বাটান Marsh Sandpiper Tringa stagnatilis পরিযায়ী
২০৫ পাতি লালপা Common Redshank Tringa totanus পরিযায়ী
২০৬ টেরেক বাটান Terek Sandpiper Xenus cinereus পরিযায়ী
২০৭ পাতি বাটান Common Sandpiper Actitis hypoleucos পরিযায়ী
২০৮ লাল নুড়িবাটান Ruddy Turnstone Arenaria interpres পরিযায়ী
২০৯ এশীয় ডউইচার Asian Dowitcher Limnodromus semipalmatus পরিযায়ী
২১০ স্যান্ডার্লিং ঝধহফবৎষরহম Calidris alba পরিযায়ী
২১১ ডানলিন উঁহষরহ Calidris alpina পরিযায়ী
২১২ লাল নট Red Knot Calidris canutus পরিযায়ী
২১৩ গুলিন্দা বাটান Curlew Sandpiper Calidris ferruginea পরিযায়ী
২১৪ ছোট চাপাখি Little Stint Calidris minuta পরিযায়ী
২১৫ লালঘাড় চাপাখি Red-necked Stint Calidris ruficollis পরিযায়ী
২১৬ লম্বাঙ্গুল চাপাখি Long-toed Stint Calidris subminuta পরিযায়ী
২১৭ টেমিঙ্কের চাপাখি Temminck’s Stint Calidris temminckii পরিযায়ী
২১৮ বড় নট Great Knot Calidris tenuirostris পরিযায়ী
২১৯ চামচঠুঁটো বাটান Spoon-billed Sandpiper Eurynorhynchus pygmeus পরিযায়ী
২২০ মোটাঠুঁটো বাটান Broad-billed Sandpiper Limicola falcinellus পরিযায়ী
২২১ গেওয়ালা বাটান Ruff Philomachus pugnax পরিযায়ী
রাঙাচ্যাগা (রোস্ট্রাটুলিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)
২২২ বাংলা রাঙাচ্যাগা Greater Painted Snipe Rostratula benghalensis
পিপি (জাকানিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৮, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
২২৩ নেউ পিপি Pheasant-tailed Jacana Hydrophasianus chirurgus
২২৪ দল পিপি Bronze-winged Jacana Metopidius indicus
মোটাহাঁটু (বারিনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
২২৫ ইউরেশীয় মোটাহাঁটু Eurasian Stone-curlew Burhinus oedicnemus পরিযায়ী?
২২৬ বড় মোটাহাঁটু Great Stone-curlew Esacus recurvirostris
জিরিয়া, টিটি (কারাড্রিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৮৮, বাংলাদেশে ১৬ প্রজাতি)
২২৭ ইউরেশীয় ঝিনুকমার Eurasian Oystercatcher Haematopus ostralegus পরিযায়ী
২২৮ কালাপাখ ঠেঙ্গি Black-winged Stilt Himantopus himantopus পরিযায়ী
২২৯ পাকরা উল্টোঠুঁটি Pied Avocet Recurvirostra avosetta পরিযায়ী
২৩০ প্রশান্ত সোনাজিরিয়া Pacific Golden Plover Pluvialis fulva পরিযায়ী
২৩১ মেটে জিরিয়া Grey Plover Pluvialis squatarola পরিযায়ী
২৩২ কেন্টিশ জিরিয়া Kentish Plover Charadrius alexandrinus পরিযায়ী
২৩৩ ছোট নথজিরিয়া Little Ringed Plover Charadrius dubius
২৩৪ পাতি নথজিরিয়া Common Ringed Plover Charadrius hiaticula পরিযায়ী
২৩৫ বড় ধুলজিরিয়া Greater Sand Plover Charadrius leschenaultii পরিযায়ী
২৩৬ ছোট ধুলজিরিয়া Lesser Sand Plover Charadrius mongolus পরিযায়ী
২৩৭ লম্বাঠুঁটো জিরিয়া Long-billed Plover Charadrius placidus পরিযায়ী
২৩৮ মেটেমাথা টিটি Grey-headed Lapwing Vanellus cinereus পরিযায়ী
২৩৯ নদী টিটি River Lapwing Vanellus duvaucelii
২৪০ হট টিটি Red-wattled Lapwing Vanellus indicus
২৪১ হলদেগাল টিটি Yellow-wattled Lapwing Vanellus malarbaricus
২৪২ উত্তুরে টিটি Northern Lapwing Vanellus vanellus পরিযায়ী
কাঁকড়াজিরিয়া ও বাবুবাটান (গ্লারিওলিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৮, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি)
২৪৩ কাঁকড়াজিরিয়া ঈৎধন-ঢ়ষড়াবৎ Dromas ardeola পরিযায়ী
২৪৪ ছোট বাবুবাটান Small Pratincole Glareola lactea
২৪৫ উদয়ী বাবুবাটান Oriental Pratincole Glareola maldivarum
জেগার, গাঙচিল, পানচিল ও গাঙচষা (লারিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১২৮, বাংলাদেশে ২০ প্রজাতি)
২৪৬ পরজীবী জেগার Parasitic Jaeger Stercorarius parasiticus পরিযায়ী
২৪৭ পোমারাইন জেগার Pomarine Skua Stercorarius pomarinus পরিযায়ী
২৪৮ দেশি গাঙচষা Indian Skimmer Rynchops albicollis
২৪৯ খয়রামাথা গাঙচিল Brown-headed Gull Larus brunnicephalus পরিযায়ী
২৫০ হলদেপা গাঙচিল Yellow-legged Gull Larus cachinnans পরিযায়ী
২৫১ হিউগ্ধসঢ়;লিনের গাঙচিল Heuglin’s gull Larus heuglini পরিযায়ী
২৫২ পালাসি গাঙচিল Great Black-headed Gull Larus ichthyaetus পরিযায়ী
২৫৩ কালামাথা গাঙচিল Common Black-headed Gull Larus ridibundus পরিযায়ী
২৫৪ কালাঠোঁট পানচিল Gull-billed Tern Gelochelidon nilotica
২৫৫ কালাপেট পানচিল Black-bellied Tern Sterna acuticauda
২৫৬ ছোট পানচিল Little Tern Sterna albifrons
২৫৭ নদীয়া পানচিল River Tern Sterna aurantia
২৫৮ বাংলা টিকিপানচিল Lesser Crested Tern Sterna bengalensis
২৫৯ বড় টিকিপানচিল Swift Tern Sterna bergii পরিযায়ী
২৬০ কা¯িপয়ান পানচিল Caspian Tern Sterna caspia পরিযায়ী
২৬১ পাতি পানচিল Common Tern Sterna hirundo পরিযায়ী
২৬২ স্যান্ডউইচ পানচিল Sandwich Tern Sterna sandvicensis পরিযায়ী
২৬৩ কালাঘাড় পানচিল Black-naped Tern Sterna sumatrana পরিযায়ী
২৬৪ জুল্ধসঢ়;ফি পানচিল Whiskered Tern Chlidonias hybridus
২৬৫ ধলাপাখ পানচিল White-winged Tern Chlidonias leucopterus পরিযায়ী
চিল, বাজ, ঈগল, শকুন, শিকরে ও কাপাসি (অ্যাক্সিপিট্রিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৩৮, বাংলাদেশে ৪৩ প্রজাতি)
২৬৬ মাছমুরাল ঙংঢ়ৎবু Pandion haliaetus পরিযায়ী
২৬৭ জার্ডনের বাজ Jerdon’s Baza Aviceda jerdoni
২৬৮ কালা বাজ Black Baza Aviceda leuphotes পরিযায়ী
২৬৯ উদয়ী মধুবাজ Crested Honey Buzzard Pernis ptilorhyncus
২৭০ কাটুয়া চিল Black-winged Kite Elanus caeruleus
২৭১ ভুবন চিল Black Kite Milvus migrans
২৭২ শঙ্খ চিল Brahminy Kite Haliastur indus
২৭৩ ধলালেজ ঈগল White-tailed Eagle Haliaeetus albicilla পরিযায়ী
২৭৪ ধলাপেট সিন্ধুঈগল White-bellied Sea Eagle Haliaeetus leucogaster
২৭৫ পালাসি কুরাঈগল Pallas’s Fish Eagle Haliaeetus leucoryphus
২৭৬ মেটেমাথা কুরাঈগল Grey-headed Fish Eagle Ichthyophaga ichthyaetus
২৭৭ ধলা শকুন Egyptian Vulture Neophron percnopterus পরিযায়ী
২৭৮ বাংলা শকুন White-rumped Vulture Gyps bengalensis
২৭৯ ইউরেশীয় গৃধিনী Griffon Vulture Gyps fulvus পরিযায়ী
২৮০ হিমালয়ী গৃধিনী Himalayan Vulture Gyps himalayensis পরিযায়ী
২৮১ সরুঠুঁটি শকুন Slender-billed Vulture Gyps tenuirostris
২৮২ কালা শকুন Cinereous Vulture Aegypius monachus পরিযায়ী
২৮৩ রাজ শকুন Red-headed Vulture Sarcogyps calvus
২৮৪ খাটোআঙুল সাপঈগল Short-toed Snake Eagle Circaetus gallicus পরিযায়ী
২৮৫ তিলা নাগঈগল Crested Serpent Eagle Spilornis cheela
২৮৬ পশ্চিমা পানকাপাসি Western Marsh Harrier Circus aeruginosus পরিযায়ী
২৮৭ মুরগি কাপাসি Northern Harrier Circus cyaneus পরিযায়ী
২৮৮ ধলা কাপাসি Pallid Harrier Circus macrourus পরিযায়ী
২৮৯ পাকরা কাপাসি Pied Harrier Circus melanoleucos পরিযায়ী
২৯০ মন্টেগুর কাপাসি Montagu’s Harrier Circus pygargus পরিযায়ী
২৯১ পুবের পানকাপাসি Eastern Marsh Harrier Circus spilonotus পরিযায়ী
২৯২ পাতি শিকরে Shikra Accipiter badius
২৯৩ উত্তুরে গোদাশিকরে Northern Goshawk Accipiter gentilis পরিযায়ী
২৯৪ ইউরেশীয় চড়ুইশিকরে Eurasian Sparrowhawk Accipiter nisus পরিযায়ী
২৯৫ ঝুটিয়াল গোদাশিকরে Crested Goshawk Accipiter trivirgatus
২৯৬ বস্ধসঢ়;রা শিকরে Besra Accipiter virgatus
২৯৭ ধলাচোখ তিসাবাজ White-eyed Buzzard Butastur teesa
২৯৮ পাতি তিসাবাজ Common Buzzard Buteo buteo পরিযায়ী
২৯৯ লম্বাপা তিসাবাজ Long-legged Buzzard Buteo rufinus পরিযায়ী
৩০০ বড় গুটিঈগল Greater Spotted Eagle Aquila clanga পরিযায়ী
৩০১ দেশি গুটিঈগল Indian Spotted Eagle Aquila hastata
৩০২ এশীয় শাহিঈগল Asian Imperial Eagle Aquila heliaca পরিযায়ী
৩০৩ নেপালি ঈগল Steppe Eagle Aquila nipalensis পরিযায়ী
৩০৪ তামাটে ঈগল Tawny Eagle Aquila rapax পরিযায়ী
৩০৫ বনেলি ঈগল Bonelli’s Eagle Hieraaetus fasciatus পরিযায়ী
৩০৬ লালপেট ঈগল Rufous-bellied Eagle Hieraaetus kienerii পরিযায়ী
৩০৭ বুট্ধসঢ়;পা ঈগল Booted Eagle Hieraaetus pennatus পরিযায়ী
৩০৮ ঝুটিয়াল শিকরেঈগল Crested Hawk-Eagle Spizaetus cirrhatus
শাহিন ও কেস্ট্রেল (ফালকনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩৮, বাংলাদেশে ৯ প্রজাতি)
৩০৯ আমুর শাহিন Amur Falcon Falco amurensis পরিযায়ী
৩১০ সাকের শাহিন Saker Falcon Falco cherrug পরিযায়ী
৩১১ লালঘাড় শাহিন Red-necked Falcon Falco chicquera
৩১২ ল¹র শাহিন Laggar Falcon Falco jugger
৩১৩ ছোট কেস্ট্রেল Lesser Kestrel Falco naumanni পরিযায়ী
৩১৪ পেরেগ্রিন শাহিন Peregrine Falcon Falco peregrinus পরিযায়ী
৩১৫ উদয়ী টিকাশাহিন Oriental Hobby Falco severus পরিযায়ী
৩১৬ ইউরেশীয় টিকাশাহিন Eurasian Hobby Falco subbuteo পরিযায়ী
৩১৭ পাতি কেস্ট্রেল Common Kestrel Falco tinnunculus পরিযায়ী
ডুবুরি (পডিসিপিডিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২২, বাংলাদেশে ৪ প্রজাতি)
৩১৮ ছোট ডুবুরি Little Grebe Tachybaptus ruficollis
৩১৯ বড় খোঁপাডুবুরি Great Crested Grebe Podiceps cristatus পরিযায়ী
৩২০ লালগলা ডুবুরি Red-necked Grebe Podiceps grisegena পরিযায়ী
৩২১ কালাঘাড় ডুবুরি Black-necked Grebe Podiceps nigricollis পরিযায়ী
গয়ার (অ্যানিঙ্গিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)
৩২২ গয়ার উধৎঃবৎ Anhinga melanogaster
পানকৌড়ি (ফালাক্রোকোরাসিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩৭, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি)
৩২৩ বড় পানকৌড়ি Great Cormorant Phalacrocorax carbo পরিযায়ী
৩২৪ দেশি পানকৌড়ি Indian Cormorant Phalacrocorax fuscicollis পরিযায়ী
৩২৫ ছোট পানকৌড়ি Little Cormorant Phalacrocorax niger
বক (আর্ডিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৬৫, বাংলাদেশে ১৮ প্রজাতি)
৩২৬ ছোট বগা Little Egret Egretta garzetta
৩২৭ মাঝলা বগা Yellow-billed Egret Egretta intermedia
৩২৮ প্রশান্ত শৈলবগা Pacific Reef Heron Egretta sacra পরিযায়ী
৩২৯ ধুপনি বক Grey Heron Ardea cinerea
৩৩০ দৈত্য বক Goliath Heron Ardea goliath পরিযায়ী
৩৩১ ধলাপেট বক White-bellied Heron Ardea insignis ?
৩৩২ লালচে বক Purple Heron Ardea purpurea
৩৩৩ বড় বগা Great Egret Casmerodius albus
৩৩৪ গো বগা Cattle Egret Bubulcus ibis
৩৩৫ চিনা কানিবক Chinese Pond Heron Ardeola bacchus ?
৩৩৬ দেশি কানিবক Indian Pond Heron Ardeola grayii
৩৩৭ খুদে বক Striated Heron Butorides striata
৩৩৮ কালামাথা নিশিবক Black-crowned Night Heron Nycticorax nycticorax
৩৩৯ মালয়ী নিশিবক Malayan Night Heron Gorsachius melanolophus
৩৪০ খয়রা বগলা Cinnamon Bittern Ixobrychus cinnamomeus
৩৪১ হলদে বগলা Yellow Bittern Ixobrychus sinensis
৩৪২ কালা বগলা Black Bittern Dupetor flavicollis
৩৪৩ বাঘা বগলা Eurasian Bittern Botaurus stellaris পরিযায়ী
কাস্তেচরা ও চামচঠুঁটি (ট্রেস্কিওর্নিটিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩৩, বাংলাদেশে ৪ প্রজাতি)
৩৪৪ খয়রা কাস্তেচরা Glossy Ibis Plegadis falcinellus পরিযায়ী
৩৪৫ কালামাথা কাস্তেচরা Black-headed Ibis Threskiornis melanocephalus পরিযায়ী
৩৪৬ কালা কাস্তেচরা Red-naped Ibis Pseudibis papillosa পরিযায়ী
৩৪৭ ইউরেশীয় চামচঠুঁটি Eurasian Spoonbill Platalea leucorodia পরিযায়ী
গগনবেড় (পেলিক্যানিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
৩৪৮ বড় ধলা MMb‡eo Great White Pelican Pelecanus onocrotalus পরিযায়ী
৩৪৯ চিতিঠুঁটি গগনবেড় Spot-billed Pelican Pelecanus philippensis পরিযায়ী
মানিকজোড় ও মদনটাক (সিকোনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৬, বাংলাদেশে ৮ প্রজাতি)
৩৫০ রাঙা মানিকজোড় Painted Stork Mycteria leucocephala পরিযায়ী
৩৫১ এশীয় শামখোল Asian Openbill Anastomus oscitans
৩৫২ ধলা মানিকজোড় White Stork Ciconia ciconia পরিযায়ী
৩৫৩ ধলাগলা মানিকজোড় Wooly-necked Stork Ciconia episcopus পরিযায়ী
৩৫৪ কালা মানিকজোড় Black Stork Ciconia nigra পরিযায়ী
৩৫৫ কালাগলা মানিকজোড় Black-necked Stork Ephippiorhychus asiaticus পরিযায়ী
৩৫৬ ছোট মদনটাক Lesser Adjutant Leptoptilos javanicus
৩৫৭ বড় মদনটাক Greater Adjutant Leptoptilos dubius পরিযায়ী
শুমচা (পিটিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩১, বাংলাদেশে ৫ প্রজাতি)
৩৫৮ দেশি শুমচা Indian Pitta Pitta brachyura পরিযায়ী
৩৫৯ নীল শুমচা Blue Pitta Pitta cyanea পরিযায়ী
৩৬০ প্যারা শুমচা Mangrove Pitta Pitta megarhyncha
৩৬১ নীলঘাড় শুমচা Blue-naped Pitta Pitta nipalensis
৩৬২ খয়রামাথা শুমচা Hooded Pitta Pitta sordida পরিযায়ী
মোটাঠুঁটি (ইউরিলাইমিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৪, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
৩৬৩ চাঁদিবুক মোটাঠুঁটি Silver-breasted Broadbill Serilophus lunatus
৩৬৪ ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটি Long-tailed Broadbill Psarisomus dalhousiae
নীলপরি ও হরবোলা (ইরেনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১০, বাংলাদেশে ৪ প্রজাতি)
৩৬৫ এশীয় নীলপরি Asian Fairy Bluebird Irena puella
৩৬৬ সোনাকপালি হরবোলা Golden-fronted Leafbird Chloropsis aurifrons
৩৬৭ নীলডানা হরবোলা Blue-winged Leafbird Chloropsis cochinchinensis
৩৬৮ কমলাপেট হরবোলা Orange-bellied Leafbird Chloropsis hardwickii
লাটোরা (লানিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৭, বাংলাদেশে ৬ প্রজাতি)
৩৬৯ বর্মি লাটোরা Burmese Shrike Lanius collurioides পরিযায়ী
৩৭০ খয়রা লাটোরা Brown Shrike Lanius cristatus পরিযায়ী
৩৭১ দক্ষিণে মেটেলাটোরা Southern Grey Shrike Lanius meridionalis পরিযায়ী
৩৭২ ল্যাঞ্জা লাটোরা Long-tailed Shrike Lanius schach
৩৭৩ মেটেপিঠ লাটোরা Grey-backed Shrike Lanius tephronotus পরিযায়ী
৩৭৪ তামাপিঠ লাটোরা Bay-backed Shrike Lanius vittatus পরিযায়ী
হাঁড়িচাচা, কাক, বেনেবৌ, সাহেলি, কাবাসি ও ফিঙে (কর্ভিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৬৫০, বাংলাদেশে ৩৬ প্রজাতি)
৩৭৫ নোনাবন শিস্ধসঢ়;মার Mangrove Whistler Pachycephala grisola
৩৭৬ লালঠোঁট নীলতাউরা Red-billed Blue Magpie Urocissa erythrorhyncha পরিযায়ী
৩৭৭ পাতি সবুজতাউরা Common Green Magpie Cissa chinensis
৩৭৮ মেটে হাঁড়িচাচা Grey Treepie Dendrocitta formosae
৩৭৯ খয়রা হাঁড়িচাচা Rufous Treepie Dendrocitta vagabunda
৩৮০ দাঁড় কাক Large-billed Crow Corvus macrorhynchos
৩৮১ পাতি কাক House Crow Corvus splendens
৩৮২ মেটে বনাবাবিল Ashy Woodswallow Artamus fuscus
৩৮৩ কালাঘাড় বেনেবউ Black-naped Oriole Oriolus chinensis পরিযায়ী
৩৮৪ ইউরেশীয় সোনাবউ Eurasian Golden Oriole Oriolus oriolus
৩৮৫ সরুঠোঁট বেনেবউ Slender-billed Oriole Oriolus tenuirostris পরিযায়ী
৩৮৬ তামারঙ বেনেবউ Maroon Oriole Oriolus traillii পরিযায়ী
৩৮৭ কালামাথা বেনেবউ Black-hooded Oriole Oriolus xanthornus
৩৮৮ বড় কাবাসি Large Cuckooshrike Coracina macei
৩৮৯ কালামাথা কাবাসি Black-headed Cuckooshrike Coracina melanoptera
৩৯০ কালাপাখ কাবাসি Black-winged Cuckooshrike Coracina melaschistos পরিযায়ী
৩৯১ সুইনহোর সাহেলি Swinhoe’s Minivet Pericrocotus cantonensis পরিযায়ী
৩৯২ ছোট সাহেলি Small Minivet Pericrocotus cinnamomeus
৩৯৩ মেটে সাহেলি Ashy Minivet Pericrocotus divaricatus পরিযায়ী?
৩৯৪ ল্যাঞ্জা সাহেলি Long-tailed Minivet Pericrocotus ethologus পরিযায়ী
৩৯৫ সিঁদুরে সাহেলি Scarlet Minivet Pericrocotus flammeus
৩৯৬ গোলাপি সাহেলি Rosy Minivet Pericrocotus roseus পরিযায়ী
৩৯৭ দাগিপাখ চুটকিলাটোরা Bar-winged Flycatcher-shrike Hemipus picatus
৩৯৮ ধলাগলা ছাতিঘুরুনি White-throated Fantail Rhipidura albicollis
৩৯৯ ব্রঞ্জ ফিঙে Bronzed Drongo Dicrurus aeneus
৪০০ কাকঠুঁটো ফিঙে Crow-billed Drongo Dicrurus annectans ?
৪০১ কেশরী ফিঙে Hair-crested Drongo Dicrurus hottentottus
৪০২ মেটে ফিঙে Ashy Drongo Dicrurus leucophaeus পরিযায়ী
৪০৩ কালা ফিঙে Black Drongo Dicrurus macrocercus
৪০৪ বড় র‌্যাকেটফিঙে GreaterRacket-tailed Drongo Dicrurus paradiseus
৪০৫ ছোট র‌্যাকেটফিঙে Lesser Racket-tailed Drongo Dicrurus remifer পরিযায়ী
৪০৬ কালাঘাড় রাজন Black-naped Monarch Hypothymis azurea
৪০৭ এশীয় শাবুলবুলি Asian Paradise-flycatcher Terpsiphone paradisi
৪০৮ পাতি ফটিকজল Common Iora Aegithina tiphia
৪০৯ বড় বনলাটোরা Large Woodshrike Tephrodornis gularis
৪১০ পাতি বনলাটোরা Common Woodshrike Tephrodornis pondicerianus
দামা, চুটকি, ফিদ্দা, গির্দি ও চেরালেজ (মাস্কিকাপিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৪৫২, বাংলাদেশে ৬২ প্রজাতি)
৪১১ নীল শিলাদামা Blue Rock Thrush Monticola solitarius পরিযায়ী
৪১২ নীল শিস্ধসঢ়;দামা Blue Whistling Thrush Myophonus caeruleus পরিযায়ী
৪১৩ কমলা দামা Orange-headed Thrush Zoothera citrina
৪১৪ আঁশটে দামা Scaly Thrush Zoothera dauma পরিযায়ী
৪১৫ কালাপাশ দামা Dark-sided Thrush Zoothera marginata পরিযায়ী
৪১৬ খয়রাপিঠ দামা Plain-backed Thrush Zoothera mollissima পরিযায়ী
৪১৭ লম্বাঠোঁট দামা Long-billed Thrush Zoothera monticola পরিযায়ী
৪১৮ ধলাঘাড় কালিদামা White-collared Blackbird Turdus albocinctus পরিযায়ী
৪১৯ ধলাপাখ কালিদামা Grey-winged Blackbird Turdus boulboul পরিযায়ী
৪২০ কালাবুক দামা Black-breasted Thrush Turdus dissimilis পরিযায়ী
৪২১ পাতি কালিদামা Common Blackbird Turdus merula পরিযায়ী
৪২২ কালচে দামা Naumann’s Thrush Turdus naumanni পরিযায়ী
৪২৩ ভ্রুলেখা দামা Eyebrowed Thrush Turdus obscurus পরিযায়ী
৪২৪ লালগলা দামা Red-throated Thrush Turdus ruficollis পরিযায়ী
৪২৫ টিকেলের দামা Tickell’s Thrush Turdus unicolor পরিযায়ী
৪২৬ খুদে খাটোডানা Lesser Shortwing Brachypteryx leucophrys পরিযায়ী
৪২৭ এশীয় খয়রাচুটকি Asian Brown Flycatcher Muscicapa dauurica পরিযায়ী
৪২৮ মেটেবুক চুটকি Brown-breasted Flycatcher Muscicapa muttui পরিযায়ী
৪২৯ কালাপাশ চুটকি Dark-sided Flycatcher Muscicapa sibirica পরিযায়ী
৪৩০ তাইগা চুটকি Taiga Flycatcher Ficedula albicilla পরিযায়ী
৪৩১ ধলাভ্রু চুটকি Snowy-browed Flycatcher Ficedula hyperythra পরিযায়ী
৪৩২ নীলকান্ত চুটকি Sapphire Flycatcher Ficedula sapphira পরিযায়ী
৪৩৩ লালমালা চুটকি Rufous-gorgeted Flycatcher Ficedula strophiata পরিযায়ী
৪৩৪ ঘননীল চুটকি Ultramarine Flycatcher Ficedula superciliaris পরিযায়ী
৪৩৫ কালচেনীল চুটকি Slaty-blue Flycatcher Ficedula tricolor পরিযায়ী
৪৩৬ ছোট পাকরাচুটকি Little Pied Flycatcher Ficedula westermanni পরিযায়ী
৪৩৭ অম্বর চুটকি Verditer Flycatcher Eumyias thalassina পরিযায়ী
৪৩৮ বড় নীলমণি Large Niltava Niltava grandis পরিযায়ী
৪৩৯ ছোট নীলমণি Small Niltava Niltava macgrigoriae পরিযায়ী
৪৪০ লালপেট নীলমণি Rufous-bellied Niltava Niltava sundara পরিযায়ী
৪৪১ ধলাগলা চুটকি Pale-chinned Blue Flycatcher Cyornis poliogenys
৪৪২ নীলগলা নীলচুটকি Blue-throated Blue Flycatcher Cyornis rubeculoides পরিযায়ী
৪৪৩ টিকেলের নীলচুটকি Tickell’s Blue Flycatcher Cyornis tickelliae পরিযায়ী?
৪৪৪ নীলচে চুটকি Pale Blue Flycatcher Cyornis unicolor পরিযায়ী?
৪৪৫ মেটেমাথা ক্যানারিচুটকি Grey-headed Canary-Flycatcher Culicicapa ceylonensis পরিযায়ী
৪৪৬ দেশি নীলরবিন Indian Blue Robin Luscinia brunnea পরিযায়ী?
৪৪৭ সাইবেরীয় চুনিকণ্ঠী Siberian Rubythroat Luscinia calliope পরিযায়ী
৪৪৮ লালগলা ফিদ্দা Firethroat Luscinia pectardens পরিযায়ী?
৪৪৯ ধলালেজ চুনিকণ্ঠী White-tailed Rubythroat Luscinia pectoralis পরিযায়ী
৪৫০ নীলগলা ফিদ্দা Bluethroat Luscinia svecica পরিযায়ী
৪৫১ কমলাপাশ বনরবিন Red-flanked Bluetail Tarsiger cyanurus পরিযায়ী?
৪৫২ লালবুক বনরবিন Rufous-breasted Bush Robin Tarsiger hyperythrus পরিযায়ী?
৪৫৩ ধলাভ্রু বনরবিন White-browed Bush Robin Tarsiger indicus পরিযায়ী?
৪৫৪ ধলাকোমর শামা White-rumped Shama Copsychus malabaricus
৪৫৫ উদয়ী দোয়েল Oriental Magpie Robin Copsychus saularis
৪৫৬ ডাউরিয়ান গির্দি Daurian Redstart Phoenicurus auroreus পরিযায়ী
৪৫৭ নীলকপালি গির্দি Blue-fronted Redstart Phoenicurus frontalis পরিযায়ী
৪৫৮ কালা গির্দি Black Redstart Phoenicurus ochruros পরিযায়ী
৪৫৯ ধলাটুপি পানগির্দি White-capped Redstart Chaimarrornis leucocephalus পরিযায়ী
৪৬০ নীল পানগির্দি Plumbeous Water Redstart Rhyacornis fuliginosa পরিযায়ী
৪৬১ ধলালেজ রবিন White-tailed Robin Myiomela leucura পরিযায়ী
৪৬২ কালাপিঠ চেরালেজ Black-backed Forktail Enicurus immaculatus
৪৬৩ ধলাচাঁদি চেরালেজ White-crowned Forktail Enicurus leschenaulti ?
৪৬৪ স্লেটপিঠ চেরালেজ Slaty-backed Forktail Enicurus schistaceus ?
৪৬৫ বেগুনি কোচোয়া Purple Cochoa Cochoa purpurea ?
৪৬৬ পাকরা ঝাড়ফিদ্দা Pied Bush Chat Saxicola caprata
৪৬৭ মেটে ঝাড়ফিদ্দা Grey Bush Chat Saxicola ferreus পরিযায়ী
৪৬৮ ধলাগলা ঝাড়ফিদ্দা White-throated Bush Chat Saxicola insignis পরিযায়ী?
৪৬৯ জার্ডনের ঝাড়ফিদ্দা Jerdon’s Bush Chat Saxicola jerdoni পরিযায়ী
৪৭০ ধলালেজ শিলাফিদ্দা White-tailed Stone Chat Saxicola leucurus পরিযায়ী
৪৭১ পাতি শিলাফিদ্দা Eurasian Stone Chat Saxicola torquatus পরিযায়ী
৪৭২ ঊষর কানকালি Desert Wheatear Oenanthe deserti পরিযায়ী
শালিক ও ময়না (স্টার্নিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৪৮, বাংলাদেশে ১২ প্রজাতি)
৪৭৩ এশীয় তেলশালিক Asian Glossy Starling Aplonis panayensis
৪৭৪ চিতিপাখ গোশালিক Spot-winged Starling Saroglossa spiloptera ?
৪৭৫ পাকরা শালিক Pied Myna Sturnus contra
৪৭৬ খয়রালেজ কাঠশালিক Chestnut-tailed Starling Sturnus malabaricus
৪৭৭ বামুনি কাঠশালিক Brahminy Starling Sturnus pagodarum
৪৭৮ গোলাপি কাঠশালিক Rosy Starling Sturnus roseus পরিযায়ী?
৪৭৯ পাতি কাঠশালিক Common Starling Sturnus vulgaris পরিযায়ী?
৪৮০ ধলাতলা শালিক Pale-bellied Myna Acridotheres cinereus
৪৮১ ঝুটি শালিক Jungle Myna Acridotheres fuscus
৪৮২ গাঙ শালিক Bank Myna Acridotheres ginginianus
৪৮৩ ভাত শালিক Common Myna Acridotheres tristis
৪৮৪ পাতি ময়না Common Hill Myna Gracula religiosa
বনমালী (সিট্টিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৫, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
৪৮৫ খয়রাপেট বনমালী Chestnut-bellied Nuthatch Sitta castanea
৪৮৬ কালাকপাল বনমালী Velvet-fronted Nuthatch Sitta frontalis
গাছআঁচড়া (সার্টিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯৭, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)
৪৮৭ দাগিলেজ গাছআঁচড়া Bar-tailed Treecreeper Certhia himalayana ?
তিত (পারিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৬৫, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
৪৮৮ বড় তিত Great Tit Parus major
৪৮৯ সবুজপিঠ তিত Green-backed Tit Parus monticolus ?
নাকুটি ও আবাবিল (হিরন্ডিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৮৯, বাংলাদেশে ১০ প্রজাতি)
৪৯০ ম্লান নাকুটি Pale Martin Riparia diluta ?
৪৯১ খয়রাগলা নাকুটি Brown-throated Martin Riparia paludicola
৪৯২ বালি নাকুটি Sand Martin Riparia riparia পরিযায়ী
৪৯৩ লালকোমর আবাবিল Red-rumped Swallow Hirundo daurica পরিযায়ী
৪৯৪ দাগিগলা আবাবিল Streak-throated Swallow Hirundo fluvicola পরিযায়ী
৪৯৫ পাতি আবাবিল Barn Swallow Hirundo rustica পরিযায়ী
৪৯৬ তারলেজা আবাবিল Wire-tailed Swallow Hirundo smithii পরিযায়ী
৪৯৭ দাগি আবাবিল Striated Swallow Hirundo striolata পরিযায়ী
৪৯৮ এশীয় ঘরনাকুটি Asian House Martin Delichon dasypus পরিযায়ী?
৪৯৯ নেপালি ঘরনাকুটি Nepal House Martin Delichon nipalensis পরিযায়ী
বুলবুল (পিকনোনিটিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৩৮, বাংলাদেশে ১০ প্রজাতি)
৫০০ কালামাথা বুলবুল Black-headed Bulbul Pycnonotus atriceps
৫০১ বাংলা বুলবুল Red-vented Bulbul Pycnonotus cafer
৫০২ মেটে বুলবুল Flavescent Bulbul Pycnonotus flavescens ?
৫০৩ সিপাহি বুলবুল Red-whiskered Bulbul Pycnonotus jocosus
৫০৪ কালাঝুটি বুলবুল Black-crested Bulbul Pycnonotus melanicterus
৫০৫ ধলাগলা বুলবুল White-throated Bulbul Alophoixus flaveolus
৫০৬ জলপাই বুলবুল Olive Bulbul Iole virescens
৫০৭ কালচে বুলবুল Ashy Bulbul Hemixos flavala
৫০৮ কালা বুলবুল Black Bulbul Hypsipetes leucocephalus ?
প্রিনা ও সিস্টিকোলা (সিস্টিকোলিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১২০, বাংলাদেশে ৯ প্রজাতি)
৫০৯ ধলামাথা ছোটন Golden-headed Cisticola Cisticola exilis
৫১০ ভোমরা ছোটন Zitting Cisticola Cisticola juncidis
৫১১ লালতলা প্রিনা Rufous-vented Prinia Prinia burnesii
৫১২ হলদেপেট প্রিনা Yellow-bellied Prinia Prinia flaviventris
৫১৩ সুন্দরী প্রিনা Graceful Prinia Prinia gracilis
৫১৪ মেটেবুক প্রিনা Grey-breasted Prinia Prinia hodgsonii
৫১৫ নিরল প্রিনা Plain Prinia Prinia inornata
৫১৬ লালচে প্রিনা Rufescent Prinia Prinia rufescens
৫১৭ কালচে প্রিনা Ashy Prinia Prinia socialis
ধলাচোখ (জোস্টেরোপিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯৫, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)
৫১৮ উদয়ী ধলাচোখ Oriental White-eye Zosterops palpebrosus
টেসিয়া, ভোঁতালেজ ও ফুটকি (সিলভিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৫৬০, বাংলাদেশে ৭৬ প্রজাতি)
৫১৯ খয়রামাথা টেসিয়া Chestnut-headed Tesia Tesia castaneocoronata পরিযায়ী
৫২০ মেটেপেট টেসিয়া Grey-bellied Tesia Tesia cyaniventer পরিযায়ী
৫২১ স্লেটপেট টেসিয়া Slaty-bellied Tesia Tesia oliva পরিযায়ী
৫২২ এশীয় ভোঁতালেজ Asian Stubtail Urosphena squameiceps পরিযায়ী
৫২৩ খয়রাডানা বনফুটকি Brownish-flanked Bush Warbler Cettia fortipes পরিযায়ী
৫২৪ খয়রা ঝাড়ফুটকি Brown Bush Warbler Bradypterus luteoventris পরিযায়ী
৫২৫ তিলা ঝাড়ফুটকি Spotted Bush Warbler Bradypterus thoracicus পরিযায়ী
৫২৬ পালাসি ফড়িংফুটকি Pallas’s Grasshopper Warbler Locustella certhiola পরিযায়ী
৫২৭ পাতারি ফুটকি Lanceolated Warbler Locustella lanceolata পরিযায়ী
৫২৮ পাতি ফড়িংফুটকি Common Grasshopper Warbler Locustella naevia পরিযায়ী
৫২৯ মোটাঠোঁট ফুটকি Thick-billed Warbler Acrocephalus aedon পরিযায়ী
৫৩০ ধানি ফুটকি Paddyfield Warbler Acrocephalus agricola পরিযায়ী
৫৩১ কালাভ্রু নলফুটকি Black-browed Reed Warbler Acrocephalus bistrigiceps পরিযায়ী
৫৩২ ভোঁতাডানা ফুটকি Blunt-winged Warbler Acrocephalus concinens পরিযায়ী
৫৩৩ ব্লাইদের নলফুটকি Blyth’s Reed Warbler Acrocephalus dumetorum পরিযায়ী
৫৩৪ বাচাল নলফুটকি Clamorous Reed Warbler Acrocephalus stentoreus পরিযায়ী
৫৩৫ বুটপা ফুটকি Booted Warbler Hippolais caligata পরিযায়ী
৫৩৬ কালাগলা টুনটুনি Dark-necked Tailorbird Orthotomus atrogularis
৫৩৭ পাহাড়ি টুনটুনি Mountain Tailorbird Orthotomus cuculatus
৫৩৮ পাতি টুনটুনি Common Tailorbird Orthotomus sutorius
৫৩৯ টিকেলের পাতাফুটকি Tickell’s Leaf Warbler Phylloscopus affinis
৫৪০ হলদেতলা ফুটকি Yellow-vented Warbler Phylloscopus cantator পরিযায়ী
৫৪১ লেবুকোমর ফুটকি Lemon-rumped Warbler Phylloscopus chloronotus পরিযায়ী
৫৪২ পাতি চিফচ্যাফ Common Chiffchaff Phylloscopus collybita পরিযায়ী
৫৪৩ মেটে ফুটকি Smoky Warbler Phylloscopus fuligiventer পরিযায়ী
৫৪৪ কালচে ফুটকি Dusky Warbler Phylloscopus fuscatus পরিযায়ী
৫৪৫ হলদেভ্রু ফুটকি Yellow-browed Warbler Phylloscopus inornatus পরিযায়ী
৫৪৬ বড়ঠোঁট ফুটকি Large-billed Leaf Warbler Phylloscopus magnirostris পরিযায়ী
৫৪৭ পশ্চিমা মাথাফুটকি Western Crowned Warbler Phylloscopus occipitalis পরিযায়ী
৫৪৮ ব্লাইদের পাতাফুটকি Blyth’s Leaf Warbler Phylloscopus reguloides পরিযায়ী
৫৪৯ রাডির ফুটকি Radde’s Warbler Phylloscopus schwarzi পরিযায়ী
৫৫০ সবজে ফুটকি Greenish Warbler Phylloscopus trochiloides পরিযায়ী
৫৫১ ধলাচোখ ফুটকি White-spectacled Warbler Seicercus affinis পরিযায়ী
৫৫২ সবুজচাঁদি ফুটকি Green-crowned Warbler Seicercus burkii পরিযায়ী
৫৫৩ লালচাঁদি ফুটকি Chestnut-crowned Warbler Seicercus castaniceps পরিযায়ী
৫৫৪ মেটেচাঁদি ফুটকি Grey-crowned Warbler Seicercus tephrocephalus পরিযায়ী
৫৫৫ হুইস্ধসঢ়;লারের ফুটকি Whistler’s Warbler Seicercus whistleri পরিযায়ী
৫৫৬ মেটেমুখোশ ফুটকি Grey-hooded Warbler Seicercus xanthoschistos পরিযায়ী
৫৫৭ হলদেপেট ফুটকি Yellow-bellied Warbler Abroscopus superciliaris
৫৫৮ দাগি ঘাসপাখি Striated Grassbird Megalurus palustris
৫৫৯ শতদাগি ঘাসপাখি Bristled Grassbird Chaetornis striatus
৫৬০ বাংলা ঘাসপাখি Rufous-rumped Grassbird Graminicola bengalensis
৫৬১ হলদেগলা পেঙ্গা Yellow-throated Laughingthrush Garrulax galbanus
৫৬২ ধলাঝুটি পেঙ্গা White-crested Laughingthrush Garrulax leucolophus
৫৬৩ ছোট মালাপেঙ্গা Lesser Necklaced Laughingthrush Garrulax monileger
৫৬৪ বড় মালাপেঙ্গা Greater Necklaced Laughingthrush Garrulax pectoralis
৫৬৫ লালঘাড় পেঙ্গা Rufous-necked Laughingthrush Garrulax ruficollis
৫৬৬ অ্যাবটের ছাতারে Abbott’s Babbler Malacocincla abbotti
৫৬৭ দাগিগলা ছাতারে Spot-throated Babbler Pellorneum albiventre
৫৬৮ বাদা ছাতারে Marsh Babbler Pellorneum palustre
৫৬৯ গলাফোলা ছাতারে Puff-throated Babbler Pellorneum ruficeps
৫৭০ খয়রাবুক ছাতারে Buff-breasted Babbler Pellorneum tickelli
৫৭১ তিলাবুক কাস্তেছাতারে Spot-breasted Scimitar Babbler Pomatorhinus erythrocnemis
৫৭২ বড় কাস্তেছাতারে Large Scimitar Babbler Pomatorhinus hypoleucos
৫৭৩ লালঠোঁট কাস্তেছাতারে Red-billed Scimitar Babbler Pomatorhinus ochraciceps
৫৭৪ ধলাভ্রু কাস্তেছাতারে White-browed Scimitar Babbler Pomatorhinus schisticeps
৫৭৫ মেটেগলা ছাতারে Grey-throated Babbler Stachyris nigriceps
৫৭৬ লালকপাল ছাতারে Rufous-fronted Babbler Stachyris rufifrons
৫৭৭ দাগি তিতছাতারে Striped Tit-Babbler Macronous gularis
৫৭৮ লালটুপি ছাতারে Chestnut-capped Babbler Timalia pileata
৫৭৯ হলদেচোখ ছাতারে Yellow-eyed Babbler Chrysomma sinense
৫৮০ দাগি ছাতারে Striated Babbler Turdoides earlei
৫৮১ বন ছাতারে Jungle Babbler Turdoides striatus
৫৮২ ধলামুখোশ ছাতারে White-hooded Babbler Gampsorhynchus rufulus
৫৮৩ লালমুখ দাগিডানা Rusty-fronted Barwing Actinodura egertoni
৫৮৪ নেপালি ফালভেটা Nepal Fulvetta Alcippe nipalensis
৫৮৫ খয়রাগাল ফালভেটা Brown-cheeked Fulvetta Alcippe poioicephala
৫৮৬ ল্যাঞ্জা সিবিয়া Long-tailed Sibia Heterophasia picaoides ?
৫৮৭ দাগি উহিনা Striated Yuhina Yuhina castaniceps
৫৮৮ কালাগাল উহিনা Black-chinned Yuhina Yuhina nigrimenta
৫৮৯ ধলাপেট উহিনা White-bellied Yuhina Erpornis zantholeuca
৫৯০ কালাবুক টিয়াঠুঁটি Black-breasted Parrotbill Paradoxornis flavirostris
৫৯১ তিলাবুক টিয়াঠুঁটি Spot-breasted Parrotbill Paradoxornis guttaticollis
৫৯২ বড় লালমাথা wUqvVuzwU Greater Rufous-headed Parrotbill Paradoxornis ruficeps ?
৫৯৩ ছোট ধলাগলা Lesser Whitethroat Sylvia curruca পরিযায়ী
৫৯৪ ওর্ফিয়ান ফুটকি Orphean Warbler Sylvia hortensis পরিযায়ী
ভরত (আলাউডিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯১, বাংলাদেশে ৭ প্রজাতি)
৫৯৫ বাংলা ঝাড়ভরত Bengal Bush Lark Mirafra assamica
৫৯৬ সুরেলা ঝাড়ভরত Singing Bush Lark Mirafra cantillans
৫৯৭ মেটেচাঁদি চড়–ইভরত Ashy-crowned Sparrow-Lark Eremopterix grisea
৫৯৮ হিউমের ভোঁতাভরত Hume's Short-toed Lark Calandrella acutirostris পরিযায়ী
৫৯৯ বড় ভোঁতাভরত Greater Short-toed Lark Calandrella brachydactyla পরিযায়ী
৬০০ বালি ভরত Sand Lark Calandrella raytal
৬০১ উদয়ী অভ্রভরত Oriental Skylark Alauda gulgula
ফুলঝুরি, মৌটুসি ও মাকড়মার ( নেকটারিনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৭৮, বাংলাদেশে ১৯ প্রজাতি)
৬০২ ঠোঁটমোটা ফুলঝুরি Thick-billed Flowerpecker Dicaeum agile
৬০৩ হলদেতলা ফুলঝুরি Yellow-vented Flowerpecker Dicaeum chrysorrheum
৬০৪ নিরল ফুলঝুরি Plain Flowerpecker Dicaeum concolor
৬০৫ লালপিঠ ফুলঝুরি Scarlet-backed Flowerpecker Dicaeum cruentatum
৬০৬ মেটেঠোঁট ফুলঝুরি Pale-billed Flowerpecker Dicaeum erythrorynchos
৬০৭ লালবুক ফুলঝুরি Fire-breasted Flowerpecker Dicaeum ignipectus ?
৬০৮ হলদেপেট ফুলঝুরি Yellow-bellied Flowerpecker Dicaeum melanoxanthum ?
৬০৯ কমলাপেট ফুলঝুরি Orange-bellied Flowerpecker Dicaeum trigonostigma
৬১০ চুনিমুখি মৌটুসি Ruby-cheeked Sunbird Anthreptes singalensis
৬১১ বেগুনিগলা মৌটুসি Purple-throated Sunbird Leptocoma sperata
৬১২ বেগুনিকোমর মৌটুসি Purple-rumped Sunbird Leptocoma zeylonica
৬১৩ বেগুনি মৌটুসি Purple Sunbird Cinnyris asiaticus
৬১৪ জলপাইপিঠ মৌটুসি Olive-backed Sunbird Cinnyris jugularis ?
৬১৫ বেগম-গোল্ডের মৌটুসি Mrs Gould’s Sunbird Aethopyga gouldiae ?
৬১৬ লাললেজ মৌটুসি Fire-tailed Sunbird Aethopyga ignicauda
৬১৭ সবুজলেজ মৌটুসি Green-tailed Sunbird Aethopyga nipalensis ?
৬১৮ সিঁদুরে মৌটুসি Crimson Sunbird Aethopyga siparaja
৬১৯ ছোট মাকড়মার Little Spiderhunter Arachnothera longirostra
৬২০ দাগি মাকড়মার Streaked Spiderhunter Arachnothera magna
চড়–ই, খঞ্জন ও তুলিকা (প্যাসারিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩৮৮, বাংলাদেশে ২৫ প্রজাতি)
৬২১ পাতি চড়–ই House Sparrow Passer domesticus
৬২২ ইউরেশীয় গাছচড়–ই Eurasian Tree Sparrow Passer motanus
৬২৩ বন খঞ্জন Forest Wagtail Dendronanthus indicus পরিযায়ী
৬২৪ ধলা খঞ্জন White Wagtail Motacilla alba পরিযায়ী
৬২৫ মেটে খঞ্জন Grey Wagtail Motacilla cinerea পরিযায়ী
৬২৬ সিট্রিন খঞ্জন Citrine Wagtail Motacilla citreola পরিযায়ী
৬২৭ পশ্চিমা হলদেখঞ্জন Western Yellow Wagtail Motacilla flava পরিযায়ী
৬২৮ ধলাভ্রু খঞ্জন White-browed Wagtail Motacilla madaraspatensis
৬২৯ তামাটে তুলিকা Tawny Pipit Anthus campestres পরিযায়ী?
৬৩০ লালগলা তুলিকা Red-throated Pipit Anthus cervinus পরিযায়ী
৬৩১ ব্লাইদের তুলিকা Blyth’s Pipit Anthus godlewskii পরিযায়ী
৬৩২ জলপাইপিঠ তুলিকা Olive-backed Pipit Anthus hodgsoni পরিযায়ী
৬৩৩ রিচার্ডের তুলিকা Richard’s Pipit Anthus richardi পরিযায়ী
৬৩৪ গোলাপি তুলিকা Rosy Pipit Anthus roseatus পরিযায়ী
৬৩৫ ধানি তুলিকা Paddyfield Pipit Anthus rufulus
৬৩৬ লম্বাঠোঁট তুলিকা Long-billed Pipit Anthus similis পরিযায়ী
৬৩৭ গেছো তুলিকা Tree Pipit Anthus trivialis পরিযায়ী
৬৩৮ বাংলা বাবুই Black-breasted Weaver Ploceus benghalensis
৬৩৯ দাগি বাবুই Streaked Weaver Ploceus manyar
৬৪০ দেশি বাবুই Baya Weaver Ploceus philippinus
৬৪১ লাল মামুনিয়া Red Avadavat Amandava amandava
৬৪২ দেশি চাঁদিঠোঁট Indian Silverbill Lonchura malabarica
৬৪৩ কালামাথা মুনিয়া Black-headed Munia Lonchura malacca
৬৪৪ তিলা মুনিয়া Scaly-breasted Munia Lonchura punctulata
৬৪৫ ধলাকোমর মুনিয়া White-rumped Munia Lonchura striata
তুতি ও চটক ( ফ্রিংগিলিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯৯৫, বাংলাদেশে ৫ প্রজাতি)
৬৪৬ পাতি তুতি Common Rosefinch Carpodacus erythrinus পরিযায়ী
৬৪৭ হলদেবুক চটক Yellow-breasted Bunting Emberiza aureola পরিযায়ী
৬৪৮ লালকান চটক Chestnut-eared Bunting Emberiza fucata পরিযায়ী
৬৪৯ খুদে চটক Little Bunting Emberiza pusilla পরিযায়ী
৬৫০ কালামুখ চটক Black-faced Bunting Emberiza spodocephala পরিযায়ী

বিশেষ শব্দকোষ

অ, আ, ও

অনিয়মিত : সারা দেশে ১০ বছরে যে পাখি মাত্র ১/২ বার দেখা গেছে
অপ্রতুল তথ্য : বিলুপ্তির ঝুঁকি নির্ধারণ করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য নেই
আঙুলের পর্দা : চামড়ার পর্দা দিয়ে পায়ের আঙুলগুলো সংযুক্ত (হাঁস)
আঙুলের পাতা-পর্দা : আঙুলে পাতার মতো চামড়ার পর্দা, আঙুলগুলো সংযুক্ত নয় (কুট)
আবাসিক : যে পাখি এক দেশে থাকে, নিয়মিতভাবে দেশান্তরে যায় না
ওড়ার পালক : ডানার প্রান্ত-পালক ও মধ্য-পালক এবং লেজের পালক

ক, খ, গ

কাঁধ-ঢাকনি : ঘাড়ের পেছনে পিঠের ত্রিকোণ অংশের বড় পালক
কাদাচরা: যে পাখি অধিকাংশ আহার কাদা থেকে নেয়
কণ্ঠী : ঘাড়ে ও গলায় হারের মত দাগ
কান-ঝুটি : মাথায় দু পাশে পালকের ঝুটি (প্যাঁচা)
কান-ঢাকনি : মুখের দু পাশে কানের ছিদ্রের উপর বিশেষ পালক
খেচর : দিনের অধিকাংশ সময় যে পাখি উড়ে বেড়ায় (বাতাসি)
গুম্ফ-রেখা : মুখের কোনা থেকে লম্বা কালচে বা অন্য রঙের দাগ

চ, ছ, জ, ঝ

চক্ষু-রেখা : চোখ বরাবর লম্বা কালচে বা অন্য রঙের দাগ
চক্র : সারি দেওয়া পালকের প্রান্তে উজ্জ্বল রঙের গোল ছোপ (ময়ূর/কাঠমৌর)
জলচর : যে পাখি অধিকাংশ আহার পানি থেকে নেয়
ঝুটি : কপালে, মাথায় অথবা ঘাড়ের বড় ও বিশেষ পালক

ট, ঠ, ড

টুপি : মাথার চাঁদিতে স্পষ্ট দেখা যায় এমন রঙের পালক
ঠোঁটের কাঁটা : হাঁসের ওপরের ঠোঁটের শেষভাগে কাঁটার মতো অংশ
ডানা-ঢাকনি : ডানার গোড়ায় শরীরের উপর দিকের বিশেষ পালক
ডানার প্রান্ত-পালক : ডানার শেষ প্রান্তের এক সারি ওড়ার পালক
ডানার মধ্য-পালক : প্রান্ত-পালকের পর ডানার মাঝের সারির ওড়ার পালক
ডানার গোড়ার-পালক : মধ্য-পালকের পর ডানার গোড়ার এক সারি পালক
ডানার বড়-ঢাকনি : যে পালক ডানার মধ্য-পালকের গোড়া ঢেকে রাখে
ডানার মধ্য-ঢাকনি : যে পালক ডানার বড়-ঢাকনির গোড়া ঢেকে রাখে
ডানার ছোট-ঢাকনি : যে পালক ডানার মধ্য-ঢাকনির গোড়া ঢেকে রাখে

ত, থ, দ

তৃণচারী: দিনের অধিকাংশ সময় যে পাখি ঘাসে থাকে
‘দাঁত’ : শক্ত খাবার কাটার জন্য ঠোঁটের দুধারে চোখা অংশ
দুর্লভ : সঠিক স্থান ও মৌসুমে গেলে যে পাখি হঠাৎ দু-একবার দেখা যায়

পতাকা : ডানার মধ্য-পালকে বিশেষ রঙের অংশ
পরিযায়ী : যে পাখি নিয়মিত এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করে
পান্থ-পরিযায়ী : পরিযায়নের পথে যে পাখি স্বল্প সময়ের জন্য কোন দেশে থাকে
পাড় : সারিবদ্ধ পালকের প্রান্তে রঙিন লাইন
প্রান্তপালক-ঢাকনি : যে পালক ডানার প্রান্ত-পালকের গোড়া ঢেকে রাখে
প্রায়-বিপদগ্রস্ত : টিকে থাকার পথে গুরুতর কিছু অন্তরায় রয়েছে

ব, ভ, ম

বৃক্ষচারী : দিনরাত্রির অধিকাংশ সময় যে পাখি গাছে থাকে
বগল: ডানার নিচে পাখির শরীরের অংশ
বগলের পালক : ডানার গোড়ায় শরীরের নিচ দিকের বিশেষ পালক
বিপন্ন : অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হওয়ার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে
বিপদগ্রস্ত : সংকটাপন্ন, বিপন্ন অথবা মহাবিপন্ন অবস্থায় থাকা প্রাণী
বিপদমুক্ত : টিকে থাকার পথে বড় কোন অন্তরায় গোচরে আসে নি
বর্ণ-পর্ব : ঋতু ও বয়সের প্রভাব ছাড়া নিয়মিত রঙ বদলানো (মেয়েপাখি)
বিরল : সঠিক স্থান ও মৌসুমে বারবার গেলে দেখা যেতেও পারে
ভূচর : দিনের অধিকাংশ সময় যে পাখি মাটিতে থাকে
ভ্রু-রেখা : চোখের উপরে স্পষ্ট রঙিন দাগ
মালা : গলার ও বুকের পালকে বিশেষ রঙের বিন্যাস
মহাবিপন্ন : অচিরে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে
মুখ-চাকতি : পালকের বিন্যাসে মুখ থালার মত দেখায় (প্যাঁচা/কাপাসি)

লতিকা : মুখে পালকহীন রঙিন চামড়া, সচরাচর ঝুলে থাকে
লেজউপরি-ঢাকনি: যে পালক ওপর থেকে লেজের গোড়া ঢেকে রাখে
লেজতল-ঢাকনি: যে পালক নিচ থেকে লেজের গোড়া ঢেকে রাখে

সংকটাপন্ন : ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে
সুলভ : সঠিক স্থান ও মৌসুমে যে পাখি প্রতিদিন দেখা যায়

পরিবার : PHASIANIDAE
তিতির-মুরগি
ছোট থেকে বড় আকারের ভূচর পাখি; গোলগাল শরীর; বলিষ্ঠ ও ছোট ঠোঁট; খাটো ও গোলাকার ডানা; ছোট অথবা অনেক লম্বা লেজ; সাদামাটা অথবা দর্শনীয় পালক; মাটিতে চরে ও ডিম পাড়ে; কোন কোন প্রজাতি রাতে গাছে থাকে।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ৪৪ গণে ১৭৬ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৭ গণে ১৩ প্রজাতি

গণ: Francolinus Stephens, 1819
ডানা ছোট ও গোলাকার, লম্বায় লেজের এক-চতুর্থাংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশ, ডানার তৃতীয় অথবা চতুর্থ প্রান্তÍ-পালক সর্বাধিক লম্বা, পঞ্চম ও ষষ্ঠটি সামান্য ছোট; লেজে ১৪ পালক; কয়েকটি প্রজাতির পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন, অন্য প্রজাতিতে ভিন্নতা আছে।
পৃথিবীতে ৫ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি

০০১. Francolinus francolinus (Linnaeus, 1766)
সমনাম: Tetrao francolinus Linnaeus, 1766
বাংলা নাম: কালা তিতির
ইংরেজি নাম: Black Francolin

বর্ণনা: কালা তিতির কালচে বাদামি ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৪ সেমি, ওজন ৪৩০ গ্রাম, ডানা ১৫ সেমি, ঠোঁট ২.৪ সেমি, পা ৪.৮ সেমি, লেজ ১০ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষপাখির পিঠ ঘন-কালো, মধ্যে মধ্যে সাদা ও মেটে তিলা; মুখ কালো ও গাল সাদা; গলাবন্ধ লালচে; দেহতল ঘোর কালো; এবং বগলে মোটা সাদা তিলা থাকে। স্ত্রীপাখির পিঠ ফিকে ও বাদামি; ঘাড়ের নিচের অংশ লালচে; কান-ঢাকনি ও ভ্রু-রেখা হালকা পীত রঙের; কালচে চক্ষু-রেখা; কাঁধ-ঢাকনিতে ও পিঠে হালকা পীত বর্ণের লম্বা ছিটা-দাগ; থুতনি ও গলা সাদাটে; দেহতলের বাকি অংশে ও বগলে প্রশস্ত সাদাকালো ডোরা; এবং লেজতল-ঢাকনি তামাটে হয়। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের চোখ বাদামি কিংবা বাদামি-পিঙ্গল; ঠোঁট কালো; এবং প্রজনন মৌÍসুমে পা ও পায়ের পাতা গাঢ় লাল হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে স্ত্রীপাখির মত; তবে তার কালো ভ্রু-রেখা ও কালো বুকে সাদা তিলা থাকে। পৃথিবীর ৬টি উপ-প্রজাতির মধ্যে F. f. melanonotus বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: কালা তিতির উঁচু ঘাস, কৃষি খামার, চা বাগান ও পানির ধারের ছোট ঝোপে বিচরণ করে; সচরাচর একাকী কিংবা জোড়ায় দেখা যায়। এরা খোলা মাঠ, ছোট ঝোপ ও ঘাসের মধ্যে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাসবীজ, আগাছা, শস্যদানা, ফল ও পোকামাকড়। ঊষা ও গোধূলিতে এরা বেশি কর্মচঞ্চল হয়; এবং স্বভাবসিদ্ধ তীক্ষè স্বরে ডাকে: চিক ....চিক.... চিক-ক্রেকেক। মার্চ-অক্টোবর মাসে প্রজনন মৌÍসুমে পুরুষপাখি গলা টান করে ও লেজ ওঠানামা করে ডাকতে থাকে; এবং লম্বা ঘাসের গোড়ায় অথবা ঘন ঝোপের নিচে মাটির খোদলে ঘাস দিয়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো হলদে-জলপাই থেকে উষ্ণ জলপাই-বাদামি, সংখ্যায় ৬-৯টি, মাপ ৩.৮ ী ৩.১ সেমি। স্ত্রীপাখি একা ডিমে তা দেয়; ডিম ফোটে ১৮-১৯ দিনে ।

বিস্তৃতি: কালা তিতির বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের পাতাঝরা বন এবং রাজশাহী বিভাগের উত্তর প্রান্তেÍ গ্রামাঞ্চলে পাখিটি পাওয়া যায়; এক সময় সিলেট বিভাগেও দেখা যেত। তুরস্কের পূর্ব থেকে আফগানিস্তানের পূর্বদিকে এবং শ্রীলংকা ও ভুটান ছাড়া ভারত উপমহাদেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: কালা তিতির বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: কালা তিতিরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ছোট মুরগি (ইতালিয়ান:francolino = খুদে মুরগি)।
[ইনাম আল হক ও এম শাহরিয়ার মাহমুদ]

০০২. ঋৎধহপড়ষরহঁং মঁষধৎরং (ঞবসসরহপশ, ১৮১৫)
সমনাম: চবৎফরী মঁষধৎরং ঞবসসরহপশ, ১৮১৫
বাংলা নাম: বাদা তিতির, জলার তিতির (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম: ঝধিসঢ় ঋৎধহপড়ষরহ

বর্ণনা: বাদা তিতির হৃষ্টপুষ্ট বাদামি জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৭ সেমি, ওজন ৫০০ গ্রাম, ডানা ১৭.৫ সেমি, ঠোঁট ২.২ সেমি, পা ৬.৫ সেমি, লেজ ১১.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড় বাদামি; হালকা পীত বর্ণের পিঠে বাদামি ডোরা ও লালচে-বাদামি পট্টি থাকে; হালকা পীত রঙের ভ্রু-রেখা ও গালের ডোরার মধ্যে থাকে মলিন বাদামি চক্ষু-রেখা; লেজটা তামাটে, লেজের প্রান্তÍ ফিকে; গলা ও ঘাড়ের উপরের অংশ কমলা এবং দেহতলের শেষাংশ প্রশস্ত সাদা ডোরাসহ বাদামি; চোখ গাঢ় লাল অথবা বাদামি ও চোখের পাতা হালকা খয়েরি-সবুজ; সাদা আগাসহ পাটকিলে ঠোঁট; পা ও পায়ের পাতা কমলা-হলুদ কিংবা অনুজ্জ্বল লাল। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন, তবে শুধু পুরুষপাখির পায়ে গজালের মত খাড়া নখর আছে।

স্বভাব: বাদা তিতির সাধারণত লম্বা ঘাস, নল অথবা জলাশয় ও নদীর কিনারার ঝোপ এবং পার্শ্ববর্তী শস্যখেতে বিচরণ করে; জোড়ায় কিংবা ৫-১৫টির অগোছালো দলে দেখা যায়। এরা প্রধানত ঊষা ও গোধূলিতে জলজ তৃণভূমি ও প্লাবনভূমিতে আস্তে আস্তে ঘুরে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, শস্যদানা ও অন্যান্য শস্য; তা ছাড়া পোকামাকড়ও খেয়ে থাকে। এর মাজে মধ্যে কর্কশ গলার ডাকে: চুক্রিরু, চুকিরু, চুকিরু; ভয় পেলে ডাকে: কিউ-কেয়ার..; এবং তীক্ষ্ম কণ্ঠে ‘গান’ গায়: চুলি-চুলি-চুলি ...। ফেব্রুয়ারি-মে মাসের প্রজনন মৌÍসুমে এরা সচরাচর নলতলে কিংবা বনে বা জলাশয়ের ধারে গাছের নিচে ঘন ঝোপঝাড়ের মধ্যে নরম লতাপাতার স্তুপ করে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো উজ্জ্বল ফিকে ও হালকা পীত বর্ণের; মাঝে মাঝে লালচে ফুসকুড়ির মত দাগ থাকে; সংখ্যায় ৪-৬টি; মাপ ৩.৯ ী ৩.০ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়।

বিস্তৃতি: বাদা তিতির বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; এক সময় ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমি ও নলবনে পাওয়া যেত, এখন নেই। ভারত ও নেপালসহ কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: বাদা তিতির বিশ্বে সংকটাপন্ন ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বাদা তিতিরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ গলা-অলা খুদে-মুরগি (ইটালিয়ান: ভৎধহপড়ষরহড় = খুদে মুরগি; ল্যাটিন: মঁষধৎরং = গলার ) ।
[সাজেদা বেগম]

০০৩. ঋৎধহপড়ষরহঁং ঢ়ড়হফরপবৎরধহঁং (এসবষরহ, ১৭৮৯)
সমনাম: ঞবঃৎধড় ঢ়ড়হফরপবৎরধহঁং এসবষরহ, ১৭৮৯
বাংলা নাম: মেটে তিতির
ইংরেজি নাম: এৎবু ঋৎধহপড়ষরহ

বর্ণনা: মেটে তিতির ভোঁতা লেজের ধূসর ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি, ওজন ২৭৫ গ্রাম, ডানা ১৪.৬ সেমি, ঠোঁট ২.৫ সেমি, পা ৪ সেমি, লেজ ৮.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠে রয়েছে হালকা পীত, তামাটে, ধূসর-বাদামি ও বাদামি ডোরা; অনুজ্জ্বল কমলা মুখে স্পষ্ট কালো চক্ষু-রেখা; পিঙ্গল-বাদামি চোখ; সরু কালো মালাসহ হালকা পীতাভ গলা; এবং দেহতলে কালচে-বাদামি সরু ডোরা। এর রূপালি ঠোঁটের নিচের পাটি অপেক্ষাকৃত কালচে এবং পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল লাল; ওড়ার সময় হালকা পীত অবসারণী ও লেজের প্রান্তÍপালকের তামাটে কিনারা চোখে পড়ে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঋ. ঢ়. রহঃবৎঢ়ড়ংরঃঁং বাংলাদেশে পাওয়া যেত।
স্বভাব: মেটে তিতির সাধারণত শুকনো তৃণভূমি, ক্ষুদ্র ঝোপ, কৃষিখামার ও বালিয়াড়িতে বিচরণ করে; সচরাচর জোড়ায় কিংবা ৪-৮টি পাখির পারিবারিক দলে থাকে। এরা ঠোঁট ও পা দিয়ে মাটি আঁচড়ে ভূমিতে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, আগাছার বীজ, শস্যদানা, ঘাসের ডগা ও রসালো ফল। ডানার প্লত ঝাপটে কিছুক্ষণ জোরে ওড়ার পর এরা কিছু সময় বাতাসে ভেসে থাকে, তারপর আবার ডানা চালায়। রাতে ছোট কাঁটাগাছ অথবা ঘন ঝোপের নিচে থাকে; ভয় পেলে কাঁটা গাছের ওপর দিয়ে ওড়ে চলে যায়। এরা মাঝে মাঝে ডাকে: খাতিজা-খাতিজা-খাতিজা...; এবং ভয় পেলে ঘর্ষণের শব্দ করে ডাকে: র্ক্ষির-র্ক্ষির। মার্চ-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন মৌÍসুমে এরা কাঁটাঘেরা ঝোপ অথবা পাথরের ফাঁকে ঘাস ও পাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফিকে-হালকা পীত বর্ণের; সংখ্যায় ৪-৯টি; মাপ ৩.২ ী ২.৬ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়।

বিস্তৃতি: মেটে তিতির বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; এক কালে ঢাকা বিভাগের তৃণভূমিতে দেখা যেত, এখন নেই। বাংলাদেশের একমাত্র ‘নমুনা’ ১৯শতকে
পশ্চিমাঞ্চলের শুকনো এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও ইরানসহ দক্ষিণ এবং নিকট পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: মেটে তিতির বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

বিবিধ: মেটে তিতিরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ পন্ডিচেরির খুদে-মুরগি (ইতালিয়ান: ভৎধহপড়ষরহড় = খুদে মুরগি; ঢ়ড়হফরপবৎরধহঁং = পন্ডিচেরি, দক্ষিণ-পশ্চিম চেন্নাই, ভারত)।
[ইনাম আল হক ও এম শাহরিয়ার মাহমুদ]

গণ: ঈড়ঃঁৎহরী ইড়হহধঃবৎৎব, ১৭৯১
তিতিরের মত ছোট পাখি; পরিযায়ী প্রজাতির লম্বা ও সুচালো ডানা এবং অপরিযায়ী প্রজাতির ছোট ও গোলাকার ডানা থাকে; খাটো লেজে ৮-১২টি কোমল পালক; ঠোঁট ছোট ও সরু; বলিষ্ঠ ও খাড়া-নখরহীন পা; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির রঙে সামান্য তারতম্য থাকে।
পৃথিবীতে ৯ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি

০০৪. ঈড়ঃঁৎহরী পযরহবহংরং (খরহহধবঁং, ১৭৬৬)
সমনাম: ঞবঃৎধড় পযরহবহংরং খরহহধবঁং, ১৭৬৬
বাংলা নাম: রাজ বটেরা
ইংরেজি নাম: করহম ছঁধরষ (ইষঁব-নৎবধংঃবফ ছঁধরষ)

বর্ণনা: রাজ বটেরা স্লেট-নীল রঙের ছোট ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১৪ সেমি, ওজন ৫০ গ্রাম, ডানা ৭ সেমি, ঠোঁট ১ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ২.৫ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষপাখির স্লেট-নীল কপাল; মাথায় সাদা কালো নক্সা; পিঠে বাদামি ছিটা-দাগ অথবা পীত, লালচে-বাদামি ও কালো ডোরা; ভ্রু-রেখা ও মাথার দু পাশ স্লেট-নীল; গলায় সাদা ও কালো মোটা দাগ; বুক ও বগল স্লেট-নীল; পেট ও লেজতল-ঢাকনি লালচে-তামাটে। স্ত্রীপাখির কপাল লালচে; ঘাড়ের নিচের অংশ, কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা-ঢাকনিতে ছিটা-দাগ; বুক ও বগলে কালো ডোরা থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষপাখি অনুজ্জ্বল রঙের; মাথা ও ঘাড়ের পাশে কালো ডোরা থাকে; এবং তলপেটে তামাটে রঙ নেই। ১০টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. প. পযরহবহংরং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: রাজ বটেরা সাধারণত আর্দ্র তৃণভূমি, শস্যখেত, রাস্তার পাশে ও ঝোপ-ঝাড়ে বিচরণ করে; সচরাচর জোড়ায় কিংবা ছোট পারিবারিক দলে থাকে। আবাদি জমি, জলমগ্ন তৃণভূমি ও চা বাগানে ধীরে ধীরে ঘুরে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাস-বীজ, শস্যদানা ও পোকা। এরা মাঝে মাঝে বাঁশির সুরে ডাকে : টি-ইউ অথবা কুঈ-কী-কিউ...; ভয় পেলে কোমল কণ্ঠে ডাকে: টির-টির-টির...। জুন-আগস্ট মাসের প্রজনন মৌÍসুমে এরা ঘন লতাপাতায় ঘেরা ঘাসঝোপের মধ্যে মাটির গর্তে ঘাস ও পাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফিকে-ধূসর কিংবা ফিকে জলপাই-হলদে, সংখ্যায় ৫-৭টি, ছোট প্রান্তÍ সুচালো; মাপ ২.৪ ী ১.৯ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়।

বিস্তৃতি: রাজ বটেরা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। ঢাকা ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমিতে দেখা পাওয়ার কেবল দুটি তথ্য রয়েছে। পৃথিবীতে এর বিস্তৃতি অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া মহাদেশে। এশিয়ার মধ্যে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, চিন, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে পাওয়া যায়।

অবস্থা: রাজ বটেরা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: রাজ বটেরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চিনা বটেরা (ল্যাটিন: পড়ঃঁৎহরী= বটেরা; পযরহবহংরং = চিনের )।
[সাজেদা বেগম]

০০৫. ঈড়ঃঁৎহরী পড়ৎড়সধহফবষরপধ (এসবষরহ, ১৭৮৯)
সমনাম: ঞবঃৎধড় পড়ৎড়সধহফবষরপঁং এসবষরহ, ১৭৮৯
বাংলা নাম: বৃষ্টি বটেরা
ইংরেজি নাম: জধরহ ছঁধরষ (ইষধপশ-নৎবধংঃবফ ছঁধরষ)

বর্ণনা: বৃষ্টি বটেরা ছোট্ট বাদামি ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১৮ সেমি, ওজন ৭৫ গ্রাম, ডানা ৯.৫ সেমি, ঠোঁট ১.৩ সেমি, লেজ ৩ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষপাখির মুখ কালচে; সাদা কালো নকশা করা মাথা; গলায় কালো নোঙর-চিহ্ন আঁকা; চক্ষু-রেখা কালো; সাদা গালের নিচে কালো দাগ; গলা ঘোর কালো; ঘাড়ের পাশ ও বুক দারুচিনি-পাটকিলে; বুক ও পেটের উপরের অংশে কালো ছোপ; এবং বগলে কালো ছিটা-দাগ। স্ত্রীপাখির বুক হালকা পীত রঙের; গলায় কালো নোঙর-চিহ্ন নেই; এবং ডানার প্রান্তÍপালকে ডোরা থাকেনা। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের চোখ গাঢ় বাদামি; ঠোঁটের গোড়া ফিকে, বাকি ঠোঁট কালো কিংবা শিঙ-কালো; এবং পা ও পায়ের পাতা মেটে কিংবা মেটে-ধূসর।

স্বভাব: বৃষ্টি বটেরা সাধারণত তৃণভূমি, কৃষি খামার ও ঝোপে বিচরণ করে; এবং সচরাচর একা কিংবা জোড়ায় থাকে। এরা ঘাসে, শস্যে ও ঝোপে হেঁটে খাবার খুঁজে বেড়ায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, শস্যদানা ও পোকামাকড়। মাঝে মাঝে এরা উচ্চ স্বরে ডাকে: হুইট-হুইট...; ভয় পেলে তীক্ষèস্বরে শিস দেয়; এবং মনোহর সুরে ‘গান’ গায়: হুইচ-হুইচ, হুইচ-হুইচ...। মার্চ-অক্টোবর মাসের প্রজনন মৌÍসুমে পুরুষপাখি ঝোপের মধ্যে ঊষা ও গোধূলিতে গান গায়। এরা ভূমির প্রাকৃতিক গর্ত কিংবা খোদলে লতাপাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো গাঢ় হলদে-বাদামি থেকে লালচে-বাদামি, মাঝে মাঝে তামাটে-বাদামি ফুসকুড়ি থাকে; সংখ্যায় ৬-১১টি, মাপ ২.৭ ী ২.১ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ১৮-১৯ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: বৃষ্টি বটেরা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের তৃণভূমিতে পাওয়া যায়। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও থাইল্যা-সহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে এ পাখির বিস্তৃতি।

অবস্থা: বৃষ্টি বটেরা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

বিবিধ: বৃষ্টি বটেরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কোরোম্যান্ডেল-এর বটেরা (ল্যাটিন: পড়ঃঁৎহরী = বটেরা; পড়ৎড়সধহফবষরপধ = চেন্নাই-এর ক্যারোম্যান্ডেল উপকূল, ভারত) ।
[সাজেদা বেগম]
০০৬. ঈড়ঃঁৎহরী পড়ঃঁৎহরী (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: ঞবঃৎধড় পড়ঃঁৎহরী খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: পাতি বটেরা, বাত্রি (আলী)
ইংরেজি নাম: ঈড়সসড়হ ছঁধরষ

বর্ণনা: পাতি বটেরা বাদামি রঙের গোলগাল ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ২০ সেমি, ওজন ১০০ গ্রাম, ডানা ১০ সেমি, ঠোঁট ১.৫ সেমি, পা ২.৭ সেমি, লেজ ৩.৭ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কিছু ভিন্নতা আছে। পুরুষপাখির পিঠে লালচে-বাদামি ও কালো ডোরা এবং বল্লমের মত দাগ আছে; পীতাভ ভ্রু-রেখা ও মাথার চাঁদিতে পীতাভ ডোরা; গলায় অস্পষ্ট কালচে নোঙর চিহ্ন; লালচে পীতাভ বুকে উজ্জ্বল ছিটা-দাগ; বাদামি বগলে কালো ছিটা-দাগ; এবং দেহতলের বাকি অংশ হালকা পীতাভ। স্ত্রীপাখির থুতনি ও গলায় হালকা পীতাভ ও বুকে কালো তিল থাকে। অপ্রাপ্তবয়ষ্ক পাখি স্ত্রীপাখির মত, তবে রং অনুজ্জ্বল। ৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. প. পড়ঃঁৎহরী বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব : পাতি বটেরা সাধারণত উঁচু তৃণভূমি, খামার ও ঘন ঘাসের চারণভূমিতে বিচরণ করে; জোড়ায় অথবা পারিবারিক দলে বিচরণ করে। তৃণভূমি ও শস্যক্ষেতে আস্তে আস্তে হেঁটে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাসবীজ, শস্যদানা ও পোকামাকড়। আত্মরক্ষার জন্য ওড়ার চেয়ে দৌÍড়ে পালানো ও ঝোপের আড়াল থেকে এরা পছন্দ করে। তাড়া দিলে পালাবার সময় ডাক দেয়: চাক-চাক-চাক-চাক..; অন্য সময় উচ্চ স্বরে শিস্ দেয়; এবং গান গায়: হুইট-হুইট-টিট...। মার্চ-জুলাই মাসের প্রজনন মৌÍসুমে পুরুষপাখি সকাল ও সন্ধ্যায় ‘গান’ গেয়ে প্রজনন এলাকা প্রতিষ্ঠা করে। এরা তৃণভূমি বা খামারে মাটির গর্তে লতাপাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো তামাটে বাদামি অথবা হলদে-পীতাভ বা লালচে-বাদামি, সংখ্যায় ৫-১৩টি, মাপ ৩.০ ী ২.৩ সেমি। ১৬-১৮ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: পাতি বটেরা বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; শীতে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের তৃণভূমিতে দেখা গেছে; অতীতে ঢাকা এবং সিলেট বিভাগে পাওয়া যেত। পাতি বটেরা ইউরোপ থেকে পশ্চিম এশিয়ার অর্ধেক পর্যন্তÍ বিস্তৃত। শ্রীলংকা ও ভুটান ছাড়া শীতকালে সমগ্র ভারত উপমহাদেশ ও আফ্রিকাতে দেখা যায়।

অবস্থা: পাতি বটেরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই পাখিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।

বিবিধ : পাতি বটেরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বটেরা (ল্যাটিন: পড়ঃঁৎহরী = বটেরা )।

[সাজেদা বেগম]

গণ: অৎনড়ৎড়ঢ়যরষধ ঐড়ফমংড়হ, ১৮৩৭
প্রায় তিতিরের মত, স্বভাবে আলাদা; পা তিতিরের পায়ের চেয়ে লম্বা; পায়ের পিছনে গজালের মত খাড়া নখর নেই; পা লম্বায় নখর-সহ মধ্যমার দৈর্ঘ্যরে প্রায় সমান; সামনের আঙুলগুলির নখর লম্বা ও সোজা; ডানা ছোট ও গোলাকার; ৪র্থ ও ৫ম প্রান্তÍপালক সব চেয়ে লম্বা; ১৪ পালকের কোমল লেজ, ডানার প্রায় অর্ধেক।
পৃথিবীতে ২০ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

০০৭. অৎনড়ৎড়ঢ়যরষধ ধঃৎড়মঁষধৎরং (ইষুঃয, ১৮৪৯)
সমনাম : অৎনড়ৎরপড়ষধ ধঃৎড়মঁষধৎরং ইষুঃয,১৮৪৯
বাংলা নাম : ধলাগাল বাতাই
ইংরেজি নাম : ডযরঃব-পযববশবফ চধৎঃৎরফমব

বর্ণনা: ধলাগাল বাতাই সাদা গালওয়ালা ছোট্ট ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ২৮ সেমি, ওজন ২৫৫ গ্রাম, ডানা ১৩.৭ সেমি, ঠোঁট ২ সেমি, পা ৪.৩ সেমি, লেজ ৬.২ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির ধূসর কপাল, জলপাই-বাদামি চাঁদি, ও ঘাড়ের নিচ দিক কমলা হলুদে মেশানো; পুরো পিঠ কালো দাগসহ হালকা বাদামি; ভ্রু-রেখা ধূসর; চোখের কাছে কালো ডোরা, চোখের পাতা লালচে পীতবর্ণের; গাল সাদা; কাঁধে কালো ও লালচে ডোরা; বগল ও বুকে ধূসর রঙের ওপর কালো সাদা দাগ; তলপেট কালো; লেজতল-ঢাকনির সাদা প্রান্তÍসহ লাল পালকে কালো চিতি; চোখ বাদামি বা লালচে বাদামি; এবং চক্ষুগোলক ও থুতনির নিচের চামড়া উজ্জ্বল পাটল বর্ণের হয়। পুরুষপাখির ঠোঁট কালো, পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল গোলাপি থেকে মোমের মত অনুজ্জ্বল হলুদ।

স্বভাব: ধলাগাল বাতাই চিরসবুজ বনতলের ঝোপ ও বাঁশবনে বিচরণ করে; সাধারণত ছোট দলে দেখা যায়। এরা খোলা মাঠে লতাপাতা থেকে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় আছে বীজ, রসালো ফল, কচিকুঁড়ি, পোকামাকড় ও ক্ষুদ্র শামুকজাতীয় প্রাণী। ভয় পেলে প্লত দৌÍড়ে পাতার নিচে বা ঝোপে লুকিয়ে যায়। প্রায়ই তারা শিস দিয়ে গোধূলিতে ডাকে: হুুইও-হুুইও.. ও উচ্চ স্বরে শিস দিয়ে গান গায়। মার্চ-এপ্রিল মাসের প্রজনন মৌÍসুমে এরা বনের ভিতরের ক্ষুদ্র ঝোপ, ঘাস ও বাঁশবনে মাটির গর্তে পাতা ও ঘাস দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪-৫টি, মাপ ৩.৭ দ্ধ ২.৮ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়।

বিস্তৃতি: ধলাগাল বাতাই বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে চোখে পড়ে; অতীতে চট্টগ্রাম বিভাগেও ছিল। এ দেশ ছাড়া কেবলমাত্র ভারত, চিন ও মিয়ানমারে পাখিটির বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: ধলাগাল বাতাই বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: ধলাগাল বাতাই পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কালো-গলার বৃক্ষপ্রেমী তিতির (ল্যাটিন : ধৎনড়ৎ = বৃক্ষ, গ্রিক : ঢ়যরষড়ং = প্রিয় , ল্যাটিন : ধঃবৎ = কালো, মঁষধ = গলা) ।
[সাজেদা বেগম]

০০৮. অৎনড়ৎড়ঢ়যরষধ ৎঁভড়মঁষধৎরং (ইষুঃয, ১৮৪৯)
সমনাম: অৎনড়ৎড়ঢ়যরষধ রহঃবৎসবফরধ ইষুঃয, ১৮৪৯
বাংলা নাম: লালগলা বাতাই, পাহাড়ি তিতির (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম : জঁভড়ঁং-ঃযৎড়ধঃবফ চধৎঃৎরফমব

বর্ণনা: লালগলা বাতাই লালচে গোলাপি গলার ছোট ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ২৭ সেমি, ওজন ৩৫৫ গ্রাম, ১৪ সেমি, ঠোঁট ১.৮ সেমি, পা ৪ সেমি, লেজ ৫.৫ সেমি)। পুরুষপাখির চেহারা স্ত্রীপাখি থেকে কিছুটা পৃথক। পুরুষপাখির পিঠ সোনালী জলপাই-বাদামি; কপাল ধূসর, জলপাই-বাদামি চাঁদিতে কালো দাগ; ধূসর-সাদা ভ্রু-রেখা ও সাদা গুম্ফ-রেখা আছে; থুতনী ও গলায় লালের ওপর কালো তিলা, ঘাড়ের উপরিভাগ লালচে-কমলা রঙের; বুক স্লেটরঙা-ধূসর; ঘাড়ের উপরিভাগে ও বুকের মাঝখানে একটি সরু কালো ডোরা নেমে গেছে; এবং কোমর ও লেজের নিচে কালো তিলা আছে। স্ত্রীপাখির থুতনি ও গলায় কয়েকটি কালো তিলা; এবং দেহতলের বাকি অংশে অনেক ফুটকি রয়েছে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের বাদামি চোখ; অক্ষিকোটর ও গলার চামড়া লাল; কালচে ঠোঁট; এবং লাল পায়ে পাটকিলে নখর থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতলে সাদা তিলা ও ডোরাহীন কাঁধ-ঢাকনি থাকে। ৬টি উপ-প্রজাতির মধ্যে অ. ৎ. রহঃবৎসবফরধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: লালগলা বাতাই চিরসবুজ বনতলে জলাশয়ের পাড়ের ঘন ঝোপে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় বা ৫-৬ টির বিচ্ছিন্ন দলে দেখা যায়। এরা ধীরে ধীরে হেঁটে বেড়ায় ও মাঠের ঘাসে বা লতাপাতার মধ্যে খাবার খোঁজে: খাদ্যতালিকায় আছে বীজ, রসালো ফল, নবপল্লব ও অমেরুদ-ী প্রাণী, বিশেষ করে পোকামাকড় ও শামুক। নিচু স্বরে এরা মাঝে মাঝে শিস দেয়; এপ্রিল-আগস্ট মাসের প্রজনন ঋতুতে ভোরে ও গোধূলিতে ‘গান’ গায়: হুইয়া-হু...; এবং ঘন লতাপাতা ঘেরা মাটির প্রাকৃতিক গর্তে ঘাস ও পাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ৩-৬টি, মাপ ৩.৯দ্ধ২.৯ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: লালগলা বাতাই বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে দেখা পাওয়ার তথ্য রয়েছে। ভারত, নেপাল, ভুটান, চিন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: লালগলা বাতাই বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: লালগলা বাতাই পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ লাল-গলার বৃক্ষপ্রেমী তিতির (ল্যাটিন: ধৎনড়ৎ = বৃক্ষ, গ্রিক : ঢ়যরষড়ং = প্রিয়, ল্যাটিন : ৎঁভঁং = লাল, মঁষধ = গলা) ।

[সাজেদা বেগম]

গণ: এধষষঁং ইৎরংংড়হ, ১৭৬০
মাঝারি আকারের ভূচর পাখি; মাথায় ঝুটি; গলার পাশে দুটি ঝুলন্তÍ লতিকা; গোলাকার ডানার ৫ম প্রান্তÍপালকটি দীর্ঘতম, ১মটি ১০মটির চেয়ে ছোট; লেজ দুপাশ থেকে চাপা; লেজে ১৪টি পালক, মাঝের দুটি পালক লম্বা ও কাস্তের মত বাঁকা; ঘাড় ও কোমর সরু ও লম্বা কাঠির মত পালকে ঘেরা; পা শক্তিশালী ও লম্বা, নখরসহ মধ্যমার চেয়ে বড়; পুরুষপাখির পায়ে গজালের মত লম্বা তীক্ষè নখর আছে।
পৃথিবীতে ৪ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০০৯. এধষষঁং মধষষঁং (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: চযধংরধহঁং মধষষঁং খরহহধবঁং ১৭৫৮
বাংলা নাম: লাল বনমুরগি, বন মোরগ (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম: জবফ ঔঁহমষবভড়ষি

বর্ণনা : লাল বনমুরগি সবার পরিচিত বর্ণাঢ্য ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৫৭ সেমি, ওজন ১ কেজি, ডানা ২০.৫ সেমি, ঠোঁট ২ সেমি, পা ৭.৫ সেমি, লেজ ২৪.৭ সেমি); পুরুষপাখি সব ঋতুতে সুরেলা কন্ঠে ডাকে। এর চেহারা ও আকার স্ত্রীপাখি থেকে অনেকটা আলাদা। পুরুষপাখির পিঠে গাঢ় কমলা-লাল রঙের ওপর সোনালী হলুদ মেশানো ঝুলন্তÍ পালক ঘাড় থেকে নেমে গেছে; কাস্তের মত লম্বা কেন্দ্রীয় পালকসহ লেজ সবুজাভ কালো; দেহতল কালচে বাদামি; উপরের ঠোঁট থেকে মাংসল ঝুঁটি ও নিচের ঠোঁটে ঝুলন্তÍ লতিকা থাকে; চোখ কমলা-লাল; এবং ঠোঁট লাল ও ঠোঁটের গোড়া বাদামি। স্ত্রীপাখির কপাল তামাটে ও মাথার চূড়া অনুজ্জ্বল লাল; দেহতলে হালকা লাল-বাদামির ওপর পীতাভ ডোরা; চোখ বাদামি ও ঝুঁটি গাঢ় লাল; এবং ঠোঁটের হলুদাভ গোড়া ছাড়া বাকি অংশ পুরুষপাখির ঠোঁটের মত। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের পা, পায়ের পাতা ও নখর স্লেট-বাদামি। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে এ. ম. সঁৎমযর বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: লাল বনমুরগি সব ধরনের বন ও বাঁশের ঝোপে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় বা পারিবারিক দলে ঘুরে বেড়ায়। এরা মাটিতে হেঁটে পায়ের আঁচরে ঝরাপাতা সরিয়ে খাবার খোঁজে: খাদ্যতালিকায় আছে শস্যদানা, ঘাসের কচিকা-, ফসলাদি, ফল, কেঁচো ও পোকামাকড়। এরা ভোরে ও গোধূলিতে বেশি সক্রিয় থাকে; পুরুষপাখি উচ্চ স্বরে ডাকে: কোক-আ-ডুড্ল-ডু ..। জানুয়ারি-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি ডানা মেলে স্ত্রীপাখির চারদিকে ঘুরে বেড়ায়। স্ত্রীপাখি ঘন ঝোপের নিচে নখর দিয়ে মাটি আঁচড়ে গর্ত করে ঘাস, লতাপাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফ্যাকাসে পীতাভ থেকে লালচে বাদামি, সংখ্যায় ৫-৬টি, মাপ ৪.৫দ্ধ৩.৪ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে। ডিম ফোঁটার পর ছানারা বাসা ছেড়ে যায় ও মায়ের পাশে হেঁটে নিজেরা খাবার খুঁটে খায়।
বিস্তৃতি: লাল বনমুরগি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্রগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের সব বনে দেখা যায়। ভারতবর্ষ ছাড়া মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে এ পাখির বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: লাল বনমুরগি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: লাল বনমুরগির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ গোলাবাড়ির মুরগি (ল্যাটিন : মধষষঁং = গোলাবাড়ি সংলগ্ন জমির মুরগি)। লাল বনমুরগি থেকেই পৃথিবীর সব পোষা মুরগির আবির্ভাব হয়েছে।

[সাজেদা বেগম]

গণ: খড়ঢ়যঁৎধ ঋষবসরহম ১৮২২
গোলাকার ডানার ভূচর পাখি; ৫ম ও ৬ষ্ঠ প্রান্তÍপালক দীর্ঘতম, ১মটি ছোট, ২য়টি ৯ম বা ১০ম টির সমান; লেজ চাপা, পুরুষপাখির লেজের পালক প্রশস্ত ও কাস্তের মত বাঁকা; ঠোঁট মাঝারি আকারের, শক্তিশালী; পালকহীন উন্মুুক্ত মুখের ত্বকে উজ্জ্বল রঙ; পুরুষপাখির পায়ের পিছনে গজালের মত খাড়া নখর, কোন কোন প্রজাতির স্ত্রীপাখির পায়েও তা আছে; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় অনেক পার্থক্য।
পৃথিবীতে ৯ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০১০. খড়ঢ়যঁৎধ ষবঁপড়সবষধহড়ং (খধঃযধস, ১৭৯০)
সমনাম: চযধংরধহঁং ষবঁপড়সবষধহড়ং খধঃযধস, ১৭৯০

বাংলা নাম : কালা মথুরা, ময়ূর (আই), কালো ময়ূর (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম: কধষরল চযবধংধহঃ

বর্ণনা: কালা মথুরা কালচে ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৬২ সেমি, ওজন ১.৩ কেজি, ডানা ২২ সেমি, ঠোঁট ৩.৫ সেমি, পা ৭.৫ সেমি, লেজ ২৩ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ও আকারে অনেক পার্থক্য। পুরুষপাখির পিঠ উজ্জ্বল নীল ও কালোয় মেশানো, কোমর ও পাছার পালকের প্রান্তÍ সাদা; মাথার চূড়ার পালক খাড়া; মুখের চামড়া ও গলায় ঝুলন্তÍ লতিকা উজ্জ্বল লাল; দেহতলে পুরো কালো রঙের ওপর ইস্পাত-নীল ও বেগুনি চাকচিক্য। স্ত্রীপাখির দেহে অন্জ্জ্বুল বাদামি পালকের ধূসর প্রান্তÍ আঁইশের মত দেখায়; মাথার চূড়া ও লেজের পালক প্রায় বাদামি; পীতাভ বাদামি গলা এবং কোমর ও পায়ের পালকের প্রান্তÍদেশ ফ্যাকাসে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের চোখ পিঙ্গল থেকে কমলা-বাদামি; চোখের পাশে পালকহীন চামড়া উজ্জ্বল লাল; ঠোঁট সবুজাভ ও শিঙ-বর্ণের, ঠোঁটের গোড়া কালো ও আগা ফ্যাকাসে; পা ও পায়ের পাতা বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের কালচে-বাদামি ও পীতাভ ডোরা ছাড়া দেখতে স্ত্রীপাখির মত। ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে খ. ষ. ষধঃযধস বাংলাদেশে রয়েছে।

স্বভাব: কালা মথুরা বনের প্রান্তেÍ ও জঙ্গলসংলগ্ন মাঠে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় বা পারিবারিক ছোট দলে থাকে। মাটিতে হেঁটে ও মাটি থেকে কুড়িয়ে এরা খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় আছে বাঁশবীজ, ডুমুর, পিঁপড়া, উইপোকা, ছোট সাপ ও টিকটিকি। ভোরে ও গোধূলিতে এরা বেশি সক্রিয় থাকে; দিনে গাছের নিচু ডালে বিশ্রাম নেয়। সকাল ও সন্ধ্যায় নিচু স্বরে মুরগির মত ডাকে: কুড়্ড়-কুড়ড়-কুড়চি-কুড়ড়..। মার্চ-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি গাছের ডালে বসে ডাকে; স্ত্রীপাখি ঘন ঝোপের নিচে নখর দিয়ে মাটি আঁচড়ে পাথর, লতাপাতা বা ঘাসের গোছা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফ্যাকাসে-পীতাভ বা পীতাভ-সাদা থেকে লালচে পীত বর্ণের, সংখ্যায় ৬-৯টি, মাপ ৪.৯দ্ধ৩.৭ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: কালা মথুরা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, তিব্বত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: কালা মথুরা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে বিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: কালা মথুরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চূড়াধারী পাকরা ময়ূর (গ্রিক: ষড়ঢ়ড়ং = চূড়া, ড়ঁৎধ = লেজ, ষবহশড়ং = সাদা, সবষধহড়ং = কালো)।
[সাজেদা বেগম]

গণ: চড়ষুঢ়ষবপঃৎড়হ ঞবসসরহপশ, ১৮১৩
মথুরার মত ভূচর পাখি; কিছুটা ধূসর বা ধূসর-বাদামি বা পীতাভ পালকসজ্জা; ডানার ৬ষ্ঠ প্রান্তÍপালক দীর্ঘতম, ১মটি অতি ছোট, ২য়টি ১০মটির চেয়ে ছোট; ডানা ও লেজের প্রান্তেÍ পীত বর্ণের চক্র; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় ২০-২৪ টি পালকের লেজ, গোলাকার, প্রসারিত করলে পাখার মত দেখায়; মুখের পাশ পালকহীন; নখরসহ মধ্যম আঙুলের চেয়ে পা লম্বা; পুরুষপাখির পায়ের পিছনে গজালের মত খাড়া নখর; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ও আকার ভিন্ন।
পৃথিবীতে ৭ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০১১. চড়ষুঢ়ষবপঃৎড়হ নরপধষপধৎধঃঁস (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম : চধাড় নরপধষপধৎধঃঁস খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম : মেটে কাঠমৌÍর, কাট-মোর (অ্যাক্ট), কাঠমৌÍর (আলী)
ইংরেজি নাম : এৎবু চবধপড়পশ-চযবধংধহঃ

বর্ণনা : মেটে কাঠমৌÍর বাহারি লেজের ধূসর ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৫৬ সেমি, ওজন ৭৩০ গ্রাম, ডানা ২১ সেমি, ঠোঁট ২.১ সেমি, পা ৭.২ সেমি, লেজ ৩১ সেমি)। পুরুষপাখির চেহারা ও আকার স্ত্রীপাখি থেকে কিছুটা আলাদা। পুরুষপাখির মাথা ও ঘাড় বাদামি পীতাভ; মাথার চূড়ার পালক ছোট ও খাড়া; পিঠে ধূসর বাদামি ফোঁটা; কোমর ও লেজের উপরের পালকে সাদা ডোরা; ডানার পালকে ও লেজের প্রান্তেÍ বেগুনি ও সবুজ রঙের চক্র আছে; থুতনি ও গলা সাদাটে; এবং দেহতলের বাকি অংশে সাদা ডোরা থাকে। স্ত্রীপাখি পুরুষপাখির থেকে ছোট ও অনুজ্জ্বল; মাথায় খাটো চূড়া; ডানা ও লেজে অস্পষ্ট চক্র। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের সাদা চোখ; হলুদাভ মুখের চামড়া; হালকা পীত বর্ণের ঠোঁট, ঠোঁটের আগা ও মধ্যভাগ কালো; পা ও পায়ের পাতা মলিন স্লেট-রঙ বা কালচে। অপ্রাপ্ত—বয়স্ক পাখি দেখতে স্ত্রীপাখির মত। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ২টি বাংলাদেশে রয়েছে। অতি হালকা পীতাভ চ. ন. নরপধষপধৎধঃঁস সিলেট বিভাগে ও অতি ধূসর এবং পাতার মত পীতাভ চ. ন. নধশবৎর চট্টগ্রাম বিভাগে আছে।

স্বভাব : মেটে কাঠমৌÍর চিরসবুজ বনতলের ঘন ঝোপঝাড়ে ও বনের প্রান্তেÍ বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় দেখা যায়। এরা ঝোপের নিচে ও খোলা মাঠে চুপিসারে লতাপাতা থেকে কুড়িয়ে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় আছে বীজ, শস্যদানা, ফল, পোকামাকড়, শামুক বা ক্ষুদ্র প্রাণী। এরা মাঝে মাঝে ডেকে ওঠে:অক-কক-কক-কক..; মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি ঘন ঘন ডাকে। ঝোপের নিচে মাটির প্রাকৃতিক গর্তে শুকনো পাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে এরা পাখি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ থেকে চকলেট-পীতাভ, সাদা তিলা আছে, সংখ্যায় ২-৫ টি, মাপ ৪.৬দ্ধ৩.৬ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২১ দিনে ডিম ফোটে। ডিম ফোঁটার পর ছানারা বাসা ছেড়ে যায় ও মায়ের পাশে হেঁটে নিজেরা খাবার খুঁটে খায়।

বিস্তৃতি: মেটে কাঠমৌÍর বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনাম পর্যন্তÍ বিস্তৃত রয়েছে।

অবস্থা: মেটে কাঠমৌÍর বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: মেটে কাঠমৌÍর পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ নখরধারী কাঠমৌÍর (গ্রিক: ঢ়ড়ষঁ = বহু, ঢ়ষবশঃৎড়হ = গজালের মত খাড়া নখর, ল্যাটিন : নরপধষপধৎধঃঁস = গজালের মত খাড়া দুই নখর) ।
[সাজেদা বেগম]

গণ: চধাড় খরহহধবঁং, ১৭৫৮
গোলাকার ডানার বড় ভূচর পাখি; ডানার ১ম প্রান্তÍপালক ১০মটির চেয়ে ছোট; মাথায় খাড়া চূড়ার পালক; লেজের ওপর লম্বা পেখম; পুরুষ স্ত্রী উভয়ের লেজে ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় ২০টি পালক, লেজের ওপর বাড়তি পালকের পেখম, পেখমের পালকের প্রান্তেÍ ‘চক্র’, লেজের নিচে কোমল পালকের ¯ু‘প; পা লম্বা ও শক্তিশালী, পুরুষপাখির পায়ের পিছনে গজালের মত খাড়া নখর আছে।
পৃথিবীতে ২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

০১২. চধাড় পৎরংঃধঃঁং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম : দেশি ময়ূর, ময়ূর (আলী)
ইংরেজি নাম : ওহফরধহ চবধভড়ষি

বর্ণনা : দেশি ময়ূর বড় আকারের ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১০০-২৩০ সেমি, ওজন ৪.১ কেজি, ডানা ৪৪ সেমি, ঠোঁট ৪ সেমি, পা ১৩.৬ সেমি, লেজ ৪৩ সেমি, পেখম ১৫০ সেমি)। পুরুষপাখির চেহারা ও আকার স্ত্রীপাখি থেকে অনেকটা আলাদা। পুরুষপাখির মাথার খাড়া চূড়া; মাথা ও ঘাড় উজ্জ্বল নীল; পিঠ ও কোমর ধাতব সবুজ; প্রজনন ঋতুতে লেজের ওপর দীর্ঘ বেগুনি পেখম হয়, পেখমের দীর্ঘ পালকের প্রান্তেÍ কালো চক্রের মধ্যে নীল ‘চোখ’ থাকে; উজ্জ্বল নীল ডানা-ঢাকনির উপরে ও ডানায় কালো ডোরা আছে; ডানার প্রান্তÍপালক বাদামি রঙের। স্ত্রীপাখির ঘাড় সবুজ; মুখ, গলা ও পেট সাদা; ঘাড়ের নিচের দিকটা ধাতব সবুজ ও বুকে পীভাভ বাদামির মিশ্রণ থাকে; এবং লেজের ওপর পেখম হয়না। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের চোখ পিঙ্গল-বাদামি; মুখের উন্মুক্ত চামড়া সাদা; ঠোঁট গাঢ় শিঙ-রঙের; পা ও পায়ের পাতা ধূসর বাদামি এবং নখর কালচে।

স্বভাব: দেশি ময়ূর পাতা-ঝরা বনে, বনতলে, বনসংলগ্ন গ্রামে ও মাঠে বিচরণ করে; সাধারণত এক ঝাঁকে একটি পুরুষ ৩-৫টি স্ত্রীপাখি থাকে। মাটি আঁচড়ে, ঝরা-পাতা উল্টে এরা খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে শস্যদানা, বীজ, ফল, কেঁচো, পোকামাকড়, টিকটিকি ও সাপ। এরা আত্মরক্ষার জন্য মাটি ছেড়ে অতি প্লত সোজা উপরে ওড়ে উঠতে পারে; ভোরে ও গোধূলিতে এরা বেশি সক্রিয় হয়; উচ্চ-কণ্ঠে ধাতব ঝংকার দিয়ে ডাকে: ম্যা-অ্যাও..। জানুয়ারি-মার্চ মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি পেখম উঠিয়ে নাড়াতে থাকে, এবং স্ত্রীপাখি তার চারদিকে ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে; ঘন ঝোপের নিচে মাটিতে বাসা করে স্ত্রীপাখি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ; সংখ্যায় ৪-৬টি; মাপ ৬.৯দ্ধ৫.২ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২৮ দিনে ডিম ফোটে। ডিম ফোঁটার পর ছানারা বাসা ছেড়ে যায় ও মায়ের পাশে হেঁটে নিজেরা খাবার খুঁটে খায়।

বিস্তৃতি: দেশি ময়ূর বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; ১৯৮০ সাল পর্যন্তÍ ঢাকা বিভগের পাতাঝরা বনে দেখা গেছে, এখন নেই। এখন মালদ্বীপ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্র এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: দেশি ময়ূর বিশ্বে বিপদমুক্ত হলেও বাংলাদেশ থেকে বিদায় হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: দেশি ময়ূরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চূড়াধারী ময়ূর (ল্যাটিন : ঢ়ধাড় = ময়ূর, পৎরংঃধঃঁং = চূড়াওয়ালা)
(মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও মো: শাহরিয়ার মাহমুদ)
০১৩. চধাড় সঁঃরপং খরহহধবঁং, ১৭৬০
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: সবুজ ময়ূর, বর্মী ময়ূর (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম: এৎববহ চবধভড়ষি (ইঁৎসবংব চবধভড়ষি)

বর্ণনা: সবুজ ময়ূর ঘন সবুজ রঙের ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১০০-৩০০ সেমি, ওজন ৪.৫ কেজি, ডানা ৪৫ সেমি, ঠোঁট ৪.৩ সেমি, পা ১৫.২ সেমি, লেজ ৪.৩ সেমি, পেখম ১৫০ সেমি)। পুরুষপাখির চেহারা ও আকার স্ত্রীপাখি থেকে অনেকটা আলাদা। পুরুষপাখির পিঠ ও ঘাড় সবুজ; পালকহীন মুুখের চামড়া নীল-হলুদ মেশানো; ডানা-ঢাকনি সবুজ, ডানার মধ্যভাগ ও গোড়ার পালক বাদামি; লেজের পেখমের প্রান্তেÍ কালো চক্রের মধ্যে বেগুনি ফোঁটা; দেহতলে সরু কালো ঢেউসহ পিতল, সবুজ ও বেগুনি দাগ। স্ত্রীপাখির পিঠ গাঢ় বাদামি; লেজ পেখমহীন; ডানা-ঢাকনি, পিঠের শেষভাগ ও কোমর কালচে বাদামি; লেজে পীতাভ, বাদামি ও কালো রঙের ডোরা আছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির সবুজাভ ও তামাটে কোমর ছাড়া দেখতে ময়ূরীর মত। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে চ.ম. ংঢ়রভরপবৎ বাংলাদেশে ছিল।

স্বভাব : সবুজ ময়ূর বনতলে ও বনের প্রান্তেÍ বিচরণ করে; সাধারণত একটি ঝাঁকে একটি পুরুষ ৩-৫টি স্ত্রী থাকে। এরা মাটি আঁচড়ে, ঝরা-পাতা উল্টে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, শস্যদানা, ফুলের কলি, রসালো ফল, পোকামাকড়, কেঁচো, সাপ ও টিকটিকি। জোরে পাখা ঝাপটে এরা প্লত উড়তে পারে; ভোরে ও গোধূলিতে বেশি সরব ও সক্রিয় হয়; পুরুষপাখির উঁচু স্বরের ডাক: ইয়েই-অও..; আর স্ত্রীপাখির ডাক: অ্যাও-অ্যা.. ; ভয় পেলে এরা ডাকে: কের-র-র-রু..। জানুয়ারি-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি পেখম মেলে ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে। ঘন ঝোপের নিচে মাটিতে বাসা বানিয়ে স্ত্রীপাখি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ, সংখ্যায় ৩-৬ টি, মাপ ৭.২দ্ধ৫.৩ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২৬-২৮ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: সবুজ ময়ূর বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ বনে দেখা মিলত, এখন নেই। এখন ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: সবুজ ময়ূর বিশ্বে সংকটাপন্ন ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ : সবুজ ময়ূরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ছোট-ময়ূর (ল্যাটিন : ঢ়ধাড় = ময়ূর, সঁঃরপঁং = খুদে/সংক্ষিপ্ত) ।
[ ইনাম আল হক ও মো: শাহরিয়ার মাহমুদ ]

পরিবার: উঊঘউজঙঈণএঘওউঅঊ
শরালি হাঁস
ডানায় বিশেষ পালকে শব্দ করে ওড়ে এমন মাঝারি আকারের হাঁস; লম্বা ঘাড় ও পা; প্রশস্ত ডানা; ওড়ার সময় বাধা পেলে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য নেই; অপ্রাপ্ত—বয়স্ক পাখির পালক অনুজ্জ্বল।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ২ গণে ৯ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ গণে ২ প্রজাতি

গণ: উবহফৎড়পুমহধ ঝধিরহংড়হ, ১৮৩৭
মাঝারি আকারের শরালি; মাঝারি আকারের ঠোঁট, আগাগোড়া সমান প্রশস্ত; ঠোঁটের মাথায় ‘কাঁটা’ থাকে, কাঁটাটি নিচের দিকে হঠাৎ বাঁকানো; নাসারন্ধ্র ঠোঁটের গোড়া থেকে এক-তৃতীয়াংশ দৈর্ঘ্যরে মধ্যে অবস্থিত; ডানা প্রশস্ত; পা লম্বা ও শক্ত, পায়ের সামনের দিক খাঁজকাটা।
পৃথিবীতে ৮ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

০১৪. উবহফৎড়পুমহধ নরপড়ষড়ৎ (ঠরবষষড়ঃ, ১৮১৬)
সমনাম: অহংবৎ নরপড়ষড়ৎ ঠরবষষড়ঃ, ১৮১৬
বাংলা নাম : রাজ শরালি, বড় সরালী (আলী)
ইংরেজি নাম: ঋঁষাড়ঁং ডযরংঃষরহম উঁপশ

বর্ণনা: রাজ শরালি বাদামি শরীর আর সাদা কোমরের হাঁস (দৈর্ঘ্য ৫১ সেমি, ওজন ৭০০ গ্রাম, ডানা ২২ সেমি, ঠোঁট ৪.৭ সেমি, পা ৫.৮ সে .মি, লেজ ৫.৫ সেমি.)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ বাদামি ও কালোয় মেশানো; দেহতল তামাটে থেকে দারুচিনি রঙের; লালচে-কমলায় মেশানো মাথায় লালচে বাদামি চাঁদি; ঘাড়ের পিছনে অস্পষ্ট কালো লাইন; ডানার উপরে অস্পষ্ট তামাটে ডানা-ঢাকনি; বগলে সাদাটে ডোরা ও কোমরের সাদা ফেটা ওড়ার সময় স্পষ্ট চোখে পড়ে। এর চোখ বাদামি; ঠোঁট স্লে¬ট-নীল; পা, পায়ের পাতা ও নখর কালো। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার পাশ, ঘাড়ের উপরিভাগ ও পিঠ হালকা খয়েরি; বগলের ডোরা অস্পষ্ট।

স্বভাব : রাজ শরালি নলবন ও উদ্ভিদভরা মিঠাপানির অগভীর হ্রদ, বড় নদী ও মোহনায় বিচরণ করে; সাধারণত বড় বড় দলে থাকতে দেখা যায়। রাতে অথবা মেঘলা দিনে এরা জলাশয়ে ঘন ঘন ডুব দিয়ে বা পানির উপরে সাঁতার দিয়ে আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদের বীজ ও নতুন কুঁড়ি, মৃত মাছ ও জলজ অমেরুদ-ী প্রাণী। দিনে এরা পানিতে, মাটিতে অথবা গাছে বিশ্রাম নেয়; ঠোঁট পিঠের পালকে গুঁজে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এরা সাধারণত সমস্বরে শিস দিয়ে ডাকে: কে-উইও...। জুন-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে এরা গাছের প্রাকৃতিক গর্তে, বড় শাখার ভাঁজে, বা জলবেষ্টিত ভূমিতে লতাপাতার বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৬-৮টি, মাপ ৫.৬দ্ধ৪.৩ সেমি। ৩০-৩২ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: রাজ শরালি বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে সব জলাশয়েই পাওয়া যায়, তবে বেশি দেখা যায় সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলে; চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগেও পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকার দেশসমূহে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: রাজ শরালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: রাজ শরালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ দোরঙা বৃক্ষবাসী-হাঁস (গ্রিক : ফবহফৎড়হ = বৃক্ষ, পুমহঁং = হাঁস, ল্যাটিন : নর = দুই, পড়ষড়ৎ = রঙ) ।
[মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও মোঃ শাহরিয়ার মাহমুদ]
০১৫. উবহফৎড়পুমহধ লধাধহরপধ (ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮২১)
সমনাম : অহংবৎ লধাধহরপধ ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮২১
বাংলা নাম : পাতি শরালি, শরালি (আলী)
ইংরেজি নাম: খবংংবৎ ডযরংঃষরহম উঁপশ

বর্ণনা : পাতি শরালি কালচে-বাদামি রঙের লম্বা ঘাড়ওয়ালা হাঁস (দৈর্ঘ্য ৪২ সেমি, ওজন ৫০০ গ্রাম, ডানা ১৮.৭ সেমি, ঠোঁট ৪ সেমি, পা ৪.৫ সেমি, লেজ ৫.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির ধূসরাভ ও পীত রঙের মাথায় গাঢ় বাদামি টুপি; ঘাড়ের উপরিভাগ ধূসর পীতাভ; ওড়ার পালক কালচে; ডানার আগা, কোমর, ও লেজ-ঢাকনি উজ্জ্বল তামাটে; বগল হালকা হলুদ; পিঠে আঁইশের মত দাগ; হালকা হলুদ তলপেটসহ দেহতল তামাটে। এর চোখ মলিন বাদামি, ঠোঁট স্লে¬ট-ধূসর ও চোখের পাতা উজ্জ্বল হলুদ; পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে-নীল; আঙুলের পর্দা ও নখর কালচে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। অনুজ্জ্বল অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতল ধূসরাভ-পীতাভ।

স্বভাব: পাতি শরালি মিঠাপানির পুকুর, বিল, ঝিল, নদীতীর ইত্যাদি অগভীর জলাশয়ে বিচরণ করে; সাধারণত ঝাঁকে থাকতে দেখা যায়। রাতে জলমগ্ন জমিতে অল্প ডুব দিয়ে, সাঁতরে বা হেঁটে এরা আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে জলজ আগাছা, কচিকা-, শস্যদানা, মরা মাছ, পোকামাকড় ও জলজ অমেরুদ-ী প্রাণী। দিনে এরা পানিতে, মাটিতে অথবা গাছে বিশ্রাম নেয় অথবা ঘুমায়। ওড়ার সময় এদের ডানার বিশেষ পালক থেকে নূপুরের মত ঝন্-ঝন্ শব্দ হয়; তা ছাড়া সাধারণত শিস দিয়ে ডাকে: হুই-হুয়ি..। জুন-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের গর্তে, তাল ও নারকেল গাছের মাথায়, নলবনে ও জলবেষ্টিত ঝোপে লতাপাতা ও ঘাস ¯ূ‘প করে বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৭-১২ টি, মাপ ৪.৭দ্ধ২.৬ সেমি। স্ত্রীপাখি একা ডিমে তা দেয়; ২২-২৪ দিনে ডিম ফোটে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ে মিলে ছানা পাহারা দেয়।

বিস্তৃতি: পাতি শরালি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; শীতে অনেক পরিযায়ী পাতি শরালি এ দেশে আসে; দেশের সব বিভাগের সব জলাশয়ে এদের দেখা যায়। পৃথিবীতে এর বিস্তৃতি দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, চিন, তাইওয়ান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোচিন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।

অবস্থা: পাতি শরালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: পাতি শরালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ জাভা দ্বীপের বৃক্ষবাসী-হাঁস (গ্রিক : ফবহফৎড়হ = বৃক্ষ, পুমহঁং = হাঁস, লধাধহরপধ = জাভা দ্বীপের, ইন্দোনেশিয়া) ।
[মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও মোঃ শাহরিয়ার মাহমুদ]

পরিবার: অঘঅঞওউঅঊ
হাঁস-রাজহাঁস-মরাল
মাঝারি থেকে বড় আকারের গোলগাল জলার পাখি; পা খাটো ও চ্যাপ্টা; ঠোঁট ছোট, শক্তিশালী; প্রজনন ঋতুর শেষে ওড়ার পালক খসে পড়ে ও কয়েক সপ্তাহ উড়তে পারে না।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ৪৩ গণে ১৪৮ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১৩ গণে ২৯ প্রজাতি

গণ: অহংবৎ ইৎরংংড়হ, ১৭৬০
বড় আকারের গোলাকার হাঁস; ঠোঁট খাটো, মোটা ও উঁচু গোড়া; ঠোঁটের গোড়া থেকে মাঝামাঝি দূরত্বে নাসারন্ধ্র, তার পরের অংশ খাঁজকাটা; পা শক্তিশালী ও সামান্য লম্বা; ডানা লম্বা ও সুচালো; ১৬-১৮ পালকের লেজটি খাটো ও গোলাকার।
পৃথিবীতে ১০ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি

০১৬. অহংবৎ ধষনরভৎড়হং (ঝপড়ঢ়ড়ষর ১৭৬৯)
সমনাম : ইৎধহঃধ ধষনরভৎড়হং ঝপড়ঢ়ড়ষর, ১৭৬৯
বাংলা নাম : বড় ধলাকপাল রাজহাঁস
ইংরেজি নাম: এৎবধঃবৎ ডযরঃব-ভৎড়হঃবফ এড়ড়ংব

বর্ণনা : বড় ধলাকপাল রাজহাঁস বড় আকারের জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৭৬ সেমি, ওজন ২.৫ কেজি, ডানা ৪০ সেমি, ঠোঁট ৪.৬ সেমি, পা ৬.৫ সেমি, লেজ ১২ সেমি)। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা কালচে; মুখের সামনে ও ঠোঁটের চারদিক সাদা; গাঢ় ধূসরাভ-বাদামি পিঠে আঁইশের মত দাগ; ডানার পালকে সরু সাদা পাড়; পেটে কালো ডোরা; দেহতল বাদামি; লেজতল-ঢাকনি সাদা; চোখ বাদামি, ঠোঁট গোলাপি বা ফ্যাকাসে-কমলা ও হলুদে মেশানো; নখ হালকা খয়েরি; পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদ থেকে মেটে লাল এবং নখর সাদাটে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মুখে সাদা রঙ ও পেটে ডোরা নেই। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে অ. ধ. ধষনরভৎড়হং বাংলাদেশে পাওয়া গেছে।

স্বভাব : বড় ধলাকপাল রাজহাঁস মিঠাপানির জলাশয়, নলবন, বাদাবন, আর্দ্র তৃণভূমি ও শস্যখেতে বিচরণ করে; সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে থাকতে দেখা যায়। ধীরে ধীরে হেঁটে অথবা সাঁতরে এরা আহার খুঁজে নেয়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাস, কচি নল, জলজ উদ্ভিদ. শস্যদানা, পোকামাকড় ও শামুক। এক পায়ে দাঁড়িয়ে অথবা মাটিতে পেট ঠেকিয়ে বসে এরা বিশ্রাম নেয়। প্রয়োজনে এরা মাটি থেকে সোজা উপরের দিকে ওড়ে পালাতে পারে; এবং পরিযায়ন কালে দীর্ঘ পথ একবারে অতিক্রম করতে পারে। ওড়ার সময় এরা নাকি সুরে ডাকে: ইহ-ঈয়ি..; এদের গানের সুর: লিও-লিয়ক..। গ্রীষ্মকালে সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে এদের প্রজনন হয়; নরম উদ্ভিদ ও পালক দিয়ে বাসা তৈরী করে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফ্যাকাসে; সংখ্যায় ৩-৬টি। স্ত্রী রাজহাঁস একাই ডিমে তা দেয়,; ২২-২৮ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: বড় ধলাকপাল রাজহাঁস বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; শীতকালে ঢাকা বিভাগের নদীতে এর দেখা পাবার তথ্য রয়েছে। এশিয়া, ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকা পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: বড় ধলাকপাল রাজহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: বড় ধলাকপাল রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সাদাকপাল রাজহাঁস (ল্যাটিন : ধহংবৎ = রাজহাঁস, ধষনঁং = সাদা, ভৎড়হং = কপাল) ।

[ মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও মোঃ শাহরিয়ার মাহমুদ]
০১৭. অহংবৎ ধহংবৎ (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)

সমনাম : অহধং ধহংবৎ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম : মেটে রাজহাঁস, ধূসর রাজহাঁস (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম : এৎবুষধম এড়ড়ংব

বর্ণনা : মেটে রাজহাঁস পাটলবর্ণের ঠোঁট ও পা এবং লম্বা গলার বড় জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৮২ সেমি, ওজন ৩ কেজি, ডানা ৪৫ সেমি, ঠোঁট ৬.২ সেমি, পা ৭ সেমি, লেজ ১৩.৫ সেমি)। প্রাপ্ত—বয়স্ক পাখির মাথা ও গলা হালকা ছাই রঙের; কালচে কোমর ও উপরের লেজ-ঢাকনি সাদা; দেহতল ধূসর বাদামি; তলপেট সাদা; ওড়ার সময় ডানার ফ্যাকাসে সম্মুখভাগ স্পষ্ট চোখে পড়ে। এর চোখ বাদামি; ঠোঁট লালচে সাদা থেকে পাটল বর্ণের, ঠোঁটের আগা হালকা খয়েরি ও সাদায় মেশানো; পা ও পায়ের পাতা প্রায় পাটল বর্ণের। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্ত—বয়স্ক পাখির হালকা খয়েরি পিঠ ও পেটের পালকের বেড় অস্পষ্ট। এই প্রজাতির ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে অ. ধ. ৎঁনৎরৎড়ংঃৎরং বাংলাদেশে দেখা গেছে।

স্বভাব : মেটে রাজহাঁস নদ-নদী, হ্রদ, নিচু জলাবদ্ধ জমি, আর্দ্র তৃণভূমি ও সদ্যকাটা শস্যখেতে বিচরণ করে; সাধারণত দলবদ্ধভাবে থাকতে দেখা যায়। অগভীর জলে হেঁটে, সাঁতার কেটে বা পানির নিচে ঠোঁট ডুবিয়ে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে ঘাস, জলজ আগাছা, শস্যের কচি ডগা, শামুক, গুগলি ইত্যাদি। এরা প্রধানত দিনের বেলা বিচরণ করে, আবার পূর্ণিমা রাতেও সক্রিয় থাকে; অন্য সময় এক পায়ে দাঁড়িয়ে বা মাটিতে বুক লাগিয়ে বিশ্রাম নেয়। এদের গভীর নাকি সুরের পরিচিত ডাক: অ্যাবঙ-অ্যাবঙ....। এপ্রিল মাসে এশিয়া ও সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের জলাশয়ে এরা প্রজনন শুরু করে এবং নলবনে ও ঝোপের মধ্যে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ ও সাদায় মেশানো; সংখ্যায় ৮-৬টি; মাপ ৮.৫দ্ধ ৫.৮ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২৭-২৮ দিনে ডিম ফোটে; ছানাগুলো বাসা ছেড়ে স্ত্রীপাখির পিছু পিছু মাটিতে ও পানিতে চরে বেড়ায়; শীতের পরিযায়নেও তারা একে অনুসরণ করে।

বিস্তৃতি: মেটে রাজহাঁস বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; প্রধানত শীতে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের সমুদ্র-উপকূলে বিচরণ করে; তা ছাড়া ঢাকা ও সিলেট বিভাগের বড় জলাশয়গুলোতেও পাওয়া যায়। এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: মেটে রাজহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ : মেটে রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ রাজহাঁস (ল্যাটিন : ধহংবৎ = রাজহাঁস) ।

[মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও মোঃ শাহরিয়ার মাহমুদ]
০১৮. অহংবৎ রহফরপঁং (খধঃযধস, ১৭৯০)
সমনাম : অহধং রহফরপধ খধঃযধস, ১৭৯০
বাংলা নাম : দাগি রাজহাঁস, বাদিহাঁস (আলী), রাজহাঁস (আই)
ইংরেজি নাম : ইধৎ-যবধফবফ এড়ড়ংব

বর্ণনা: দাগি রাজহাঁস বড় আকারের জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৭৩ সেমি, ওজন ১.৬ কেজি, ডানা ৪৫ সেমি, ঠোঁট ৫.৫ সেমি, পা ৭.১ সেমি, লেজ ১৪.৮ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে ধূসর মনে হয়; সাদা মাথা থেকে সাদা একটি লাইন ধূসর গলার নিচ পর্যন্তÍ নেমে গেছে; মাথায় দুটি স্পষ্ট কালো ডোরা থাকে; ওড়ার সময় এদের সাদা মাথা, ফ্যাকাসে দেহ ও ডানার কালো আগা স্পষ্ট চোখে পড়ে। এদের চোখ বাদামি; হলুদ ঠোঁটের আগা ও নাক কালো; পা ও পায়ের পাতা গাঢ় হলুদ। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথায় ডোরা নেই; এর সাদা কপাল, গাল ও গলা মলিন, ধূসর-বাদামি মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের নিচের অংশ থেকে পৃথক করেছে; পিঠ ও পেটের রঙ এক।
স্বভাব : দাগি রাজহাঁস এদেশে লতাপাতা ঘেরা জলাশয়ের পাড়, জনবসতিহীন উপকূলীয় দ্বীপ এবং বড় নদীর চরে বিচরণ করে; সাধারণত ৫-১০০টি পাখির ঝাঁক চোখে পড়ে। রাতে খাবার খেলেও দ্বীপাঞ্চলে এদের দিনেও খাবার খেতে দেখা যায়; খাদ্যতালিকায় আছে সবুজ ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি; মাঝে মাঝে উপকূলের ধানখেতেও হানা দেয়। সোজা লাইনে অথবা ঠ আকৃতির সারিতে এরা ওড়ে চলে। খাওয়ার সময় এরা নাকি সুরে ডাকে: গ্যাগ-গ্যাগ.. এবং কোলাহলময় ডাক: আহন্ঙ-আঙ-আঙ.... অনেক দূর থেকে শোনা যায়। মে-জুন মাসে তিব্বতে হিমালয়ের উঁচু জলাভূমিতে এদের প্রজনন হয়। হ্রদের ধারের মাটিতে লতাপাতার মাঝে পালকের বাসা তৈরি করে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো গজদন্তেÍর মত সাদা; সংখ্যায় ৩-৪টি; মাপ ৮.৪দ্ধ৫.৫ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ৩০ দিনে ডিম ফোটে। বাবা ও মাপাখি উভয়ে মিলে ছানা পালন করে।
বিস্তৃতি : দাগি রাজহাঁস বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি; শীতকালে উপকূলে থাকে; বরিশাল,চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বড় জলাভূমিতে কালেভদ্রে দেখা যায়। দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তান ও চিনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা : দাগি রাজহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ : পরিযায়নের পথে দাগি রাজহাঁসের দল এভারেস্ট শিখরের ওপর দিয়ে উড়ে আসে বলে তথ্য আছে। এর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ভারতীয় রাজহাঁস (ল্যাটিন : ধহংবৎ = রাজহাঁস, রহফরপঁং = ভারতের) ।
(মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান)

গণ: ঞধফড়ৎহধ ঙশবহ, ১৮১৭
আকার ও স্বভাব রাজহাঁসের মত; ঠোঁট ছোট, গোড়া উঁচু, উপরে উত্তল, আগা চ্যাপ্টা, ঠোঁটের আগার কাঁটা হঠাৎ নিচে বাকানো; ঠোঁটের গোড়া থেকে নাসিকার দৈর্ঘ্য ঠোঁটের এক-তৃতীয়াংশেরও কম; ডানা দীর্ঘ ও সুচালো; ১৪ পালকের লেজটি গোলাকার।
পৃথিবীতে ৭ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

০১৯. ঞধফড়ৎহধ ভবৎৎহমরহবধ (চধষষধং, ১৭৬৪)
সমনাম : অহধং ভবৎৎঁমরহবধ চধষষধং, ১৭৬৪
বাংলা নাম : খয়রা চকাচকি, চকাচকি (আলী)
ইংরেজি নাম : জঁফফু ঝযবষফঁপশ

বর্ণনা: খয়রা চকাচকি দারুচিনি ও বাদামি রঙের বড় আকারের হাঁস (দৈর্ঘ্য ৬৪ সেমি, ওজন ১.৫ কেজি, ডানা ৩৬ সেমি, ঠোঁট ৪.৩ সেমি, পা ৬ সেমি, লেজ ১৪ সেমি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কিছুটা পার্থক্য আছে। পুরুষপাখি কমলা-বাদামি থেকে দারুচিনি বর্ণের; হালকা বাদামি মাথা ও ঘাড়; ডানায় ধাতব সবুজ পতাকা ও সাদা ঢাকনি; প্রান্তÍপালক ও লেজ কালো। প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখির গলায় সরু কালো বলয় হয়। পুরুষপাখির চেয়ে আকারে স্ত্রী সামান্য ছোট; স্ত্রীপাখির মাথা ফ্যাকাসে রঙের এবং গলায় বলয় হয় না। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের চোখ বাদামি এবং ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে স্ত্রীপাখির মত, তবে ডানার গোড়ার-পালক ও ডানা-ঢাকনি ধুসর বর্ণের।

স্বভাব : খয়রা চকাচকি পলিময় উপকূল ও বড় নদীর চরে বিচরণ করে: সাধারণত জোড়ায় বা ছোট ঝাঁকে দেখা যায়। এরা কখনও হাঁসের মত নরম কাদামাটিতে কখনও রাজহাঁসের মত আর্দ্র তৃণভূমিতে আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে শস্যদানা, অঙ্কুুরিত উদ্ভিদ, নরম পাতা, চিড়িং ও কাঁকড়া-জাতীয় প্রাণী, শামুক, জলজ পোকামাকড়, সরীসৃপ ইত্যাদি। ভয় পেলে এরা উচ্চস্বরে ডাকে: আঙক-আঙক... ওড়ার সময় হনের্র মত শব্দ করে ডাকে: আআখ... অথবা ট্রাম্পেট বাজানোর মত শব্দ: পক-পক-পক -পক...। মে-জুন মাসে মধ্য এশিয়া ও তিব্বতে এদের প্রজনন হয়। উঁচু মালভূমির মধ্যে যে সব বাদা আর জলাশয় আছে তার পাশে মাটির গর্তে পালকের বাসা বানিয়ে তারা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো গজদন্তেÍর মত সাদা, সংখ্যায় ৬-১০টি, মাপ ৬.৫ দ্ধ ৪.৫ সেমি.। ২৮-৩০ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: খয়রা চকাচকি বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে বরিশাল, চট্ট্রগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের হাওর ও নদনদীতে দেখা যায়। এশিয়া ও আফ্রিকার দক্ষিণাংশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়ার মধ্যে তুর্কি, চিন, কোরিয়া, জাপান এবং শুধু মালদ্বীপ ছাড়া ভারত মহাদেশের অন্যান্য দেশে রয়েছে।

অবস্থা: খয়রা চকাচকি বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ : খয়রা চকাচকির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ মরচে-রঙ চকাচকি (ফ্রেঞ্চ : ঃধফড়ৎ চকাচকি ; ল্যাটিন : ভবৎৎঁমরহবঁং = মরিচা রঙ ) ।
[মোঃ আনোয়রুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান ]

০২০. ঞধফড়ৎহধ ঃধফড়ৎহধ (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: অহধং ঃধফড়ৎহধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: পাতি চকাচকি, শাহ চখা (আলী)
ইংরেজি নাম: ঈড়সসড়হ ঝযবষফঁপশ

বর্ণনা: পাতি চকাচকি টকটকে লাল ঠোঁট আর সাদা বুকে লাল ফিতা পরা হাঁস (দৈর্ঘ্য ৬২ সেমি, ওজন ১কেজি, ডানা ১১.৫ সেমি, ঠোঁট ৩.২ সেমি, পা ৫.২ সেমি, লেজ ১১.৫ সেমি)। এর মাথা ও ঘাড় চকচকে সবুজ কালোয় মেশানো; সাদা দেহ জুড়ে তিনটি প্রশস্ত কালো লাইন; বুকে তামাটে রঙের ফোটা; চোখ বাদামি; ঠোঁট মেটে লাল থেকে প্রবাল-লাল; ঠোঁটের আগা প্রায় বাদামি; পা ও পায়ের পাতা মেটে পাটল বর্ণ থেকে মেটে লাল, ও নখর কালো। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ও আকারে পার্থক্য আছে; পুরুষপাখির ঠোঁটের গোড়ায় লাল স্ফীত গোল পুটলি আছে; পুরুষপাখির চেয়ে স্ত্রী আকারে ছোট, এবং এর বুকে তামাটে বর্ণের দাগের প্রান্তÍ কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি, গলার পিছন ও পিঠ কালচে-বাদামি; দেহতল, কপাল, গাল, গলার উপরিভাগ সাদা; এবং বুকে ফেটা নেই।

স্বভাব : পাতি চকাচকি উপকূলের কাদামাঠ, নতুন জেগে ওঠা চর, হ্রদ ও মোহনায় বিচরণ করে; সাধারণত বড় বড় দলে দেখা যায়। কাদা পানিতে ঠোঁট ডুবিয়ে অথবা অগভীর জলে মাথা ডুবিয়ে এরা আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে শামুক, চিংড়ি ও কাঁকড়া-জাতীয় প্রাণী, পোকামাকড়, কেঁচো, শৈবাল, বীজ, পাতা, ইত্যাদি। পুরুষপাখি পরিষ্কার গলায় শিস দেয় ও স্ত্রীপাখি অতিপ্লত ডাকে: গ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ। মে-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে মধ্য-এশিয়ায় এদের প্রজনন হয়; মাটির প্রাকৃতিক ফাটল বা খাড়া উঁচু পাহাড়ের গর্তে বা মাটির গর্তে পালকের বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো গজদন্তেÍর মত সাদা, সংখ্যায় ৬-১০টি; মাপ ৬.৫ ী ৪.৫ সেমি। ৩০ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: পাতি চকাচকি বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের সমুদ্রপোকূল ও নদ-নদীতে বিচরণ করে। উত্তর আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বহু দেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, ইরান, মালয়েশিয়া, চীন, তিব্বত, ইরাক ও জাপানে বিস্তৃত।

অবস্থা: পাতি চকাচকি বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: পাতি চকাচকির বৈজ্ঞানিক নাম ঞধফড়ৎহধ -এর অর্থ চকাচকি (ফ্রেঞ্চ: ঃধফড়ৎ = চকাচকি)।

[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: ঈধরৎরহধ ঋষবসরহম, ১৮২২
বড় আকারের হাঁস; পুরুষপাখি স্পষ্টতঃই স্ত্রীপাখির চেয়ে বড়; উপরের ঠোঁটে কোন মাংসপি- থাকেনা; প্রজনন ঋতুতে উপরের ঠোঁটের গোড়া স্ফীত হয়; ডানার মধ্য-পালক ও উপরের ঢাকনিতে সাদা পতাকা থাকে; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় ১২টি পালকের লেজ।
পৃথিবীতে ১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০২১. ঈধরৎরহধ ংপঁঃঁষধঃধ (গহৃষষবৎ, ১৮৪২)
সমনাম: অহধং ংপঁঃঁষধঃধ গহৃষষবৎ, ১৮৪২
বাংলা নাম: বাদি হাঁস
ইংরেজি নাম: ডযরঃব-রিহমবফ উঁপশ (ডযরঃব-রিহমবফ ডড়ড়ফ উঁপশ)

বর্ণনা: বাদি হাঁস বিশালদেহী হলদে-চোখ হাঁস (দৈর্ঘ্য ৭৩.৫ সেমি, ওজন ৩ কেজি, ডানা ২০.৫ সেমি, ঠোঁট ৬ সেমি, পা ৫.৭ সেমি, লেজ ১৫ সেমি)। পুরুষপাখির চেহারা ও আকার স্ত্রী থেকে কিছুটা আলাদা। পুরুষপাখির ডানায় কাঁধ বরাবর কোভার্টে সাদা পট্টি; সাদা মাথা ও ঘাড়ে কালো ছোট দাগ; পিঠের বাকি অংশ কালচে ও তামাটে বাদামি মেশানো পালকে ঢাকা; ও চোখ কমলা-হলুদ। স্ত্রীহাঁসআকারে ছোট ও অনুজ্জ্বল পালকের জন্য পুরুষপাখি থেকে দেখতে আলাদা; মাথায় বেশ ঘন কালো দাগ রয়েছে। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁস উভয়ের চোখ বাদামি; ঠোঁেট কমলা রঙের, উপরে কালো চিতি; এবং পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদে মেশানো ।
স্বভাব: বাদি হাঁস গ্রীষ্মম-লীয় পাহাড়ি বনের বদ্ধ জলে এবং ধীরগতির স্রোতধারায় বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় বা ৫-৬টির দলে দেখা যায়। এরা গাছে ঢাকা জঙ্গলের জলাশয়ে রাতে সাঁতার দিয়ে অথবা হেঁটে আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে শামুক, পোকামাকড় ও লতাগুল্ম, তবে প্রানীজ খাদ্য বেশি পছন্দ করে। দিনে এরা গাছের ডালে বসে ঘুমায় এবং আহারের খোঁজে গোধূলিতে পানির সামান্য ওপর দিয়ে ওড়ে চলে; ভোরে আবার দিনের আশ্রয়ে ফিরে আসে। পুরুষহাঁস শিঙ্গার মত আওয়াজ করে ডাকে: ক্রংক-ক্রংক.. । জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন ঋতুতে পানির কাছাকাছি কোন গাছের কোটরে ঘাস ও আবর্জনা দিয়ে বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সবুজাভ-হলুদ; সংখ্যায় ৭-১০টি; মাপ ৬.৫ ী ৪.৫ সেমি। ৩০ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: বাদি হাঁস বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ পাহাড়ি বনে দেখা মিলত, এখন নেই (সম্প্রতি পাখিটি এদেশে কারও নজরে পড়েনি)। এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি কেবল এশিয়ার মধ্যে সীমিত, প্রধানত উত্তরপূর্ব ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বভাগ পর্যন্ত রয়েছে।
অবস্থা: বাদি হাঁস বিশ্বে বিপন্ন ও বাংলাদেশে অতিবিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বাদি হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কায়রোর হীরক-হাঁস (ইতালিয়ান: পধরৎরহড় = কায়রোর অধিবাসী ; ল্যাটিন: ংপঁঃঁষধঃঁং = হীরা-আকৃতি)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম কামরুজ্জামান]

গণ: ঝধৎশরফরড়ৎহরং ঊুঃড়হ, ১৮৩৮
বড় আকারের হাঁস; ঠোঁট মাঝারি আকারের, পুরুষের ঠোঁটের গোড়ায় স্ফীত মাংসপি- আছে যা প্রজনন ঋতুতে আরও স্ফীত হয়; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় ১৪ পালকের লেজ; পায়ের পিছনের আঙুলকিছুটা ছড়ানো; ডানায় কনুইতে গজালের মত খাড়া নখর আছে।
পৃথিবীতে ১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০২২. ঝধৎশরফরড়ৎহরং সবষধহড়ঃড়ং (চবহহধহঃ, ১৭৬৯)
সমনাম: অহংবৎ সবষধহড়ঃড়ং চবহহধহঃ, ১৭৬৯
বাংলা নাম: নাকতা হাঁস, নকতা (আলী)
ইংরেজি নাম: কহড়ন-নরষষবফ উঁপশ (ঈড়সন উঁপশ)

বর্ণনা: নাকতা হাঁস বিরাট আকারের কালচে ডানার হাঁস (দৈর্ঘ্য ৬৬ সেমি, ওজন ২.২ কেজি, ডানা ৩৪ সেমি, ঠোঁট ৬.৪ সেমি, পা ৭ সেমি., লেজ ১৪.৫ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের আকার ও চেহারায় কিছুটা পার্থক্য আছে। পুরুষপাখির পিঠ দেখতে কালো, সবুজ ও বেগুনি আভা আছে; সাদা মাথা ও গলা; সাদা গলায় কালো তিলা; এবং ঠোঁটে স্ফীত মাংসপি- থাকে। স্ত্রীহাঁস অনেক ছোট ও এর অনুজ্জ্বল পিঠে বাদামি ফোঁটা ছিটানো; ঠোঁটে স্ফীত মাংসপি- নেই। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের উভয়েরই চোখ ঘন বাদামি, ঠোঁট কালো এবং পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের হালকা ভ্রু-রেখা, অনুজ্জল দেহ, পিঠে পীতাভ আঁইশের দাগ ও দেহতল লালচে-বাদামি । ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঝ. স. সবষধহড়ঃড়ং বাংলাদেশে দেখা যায়।
স্বভাব: নাকতা হাঁস নলবনে ও বাদাভূমিতে বিচরণ করে; সাধারণত ৪-১০টির পারিবারিক দলে দেখা যায়, ২৫-১০০টির ঝাঁকও চোখে পড়ে। অগভীর জলাশয়ে সাঁতার কেটে ও মাথা পানিতে অল্প ডুবিয়ে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় আছে শস্যদানা, কচিকা-, জলজ উদ্ভিদের বীজ, ব্যাঙ ও জলজ পোকামাকড়। বেশ উড়তে সক্ষম। বিপদে পড়লে এরা পানিতে ডুব দিয়ে পালায়; তবে খাদ্যের খোঁজে তা করে না; প্রায়শঃ গাছের ডালে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম করে। পুরুষপাখিরা নিচু স্বরে ব্যাঙের মত ডাকে এবং প্রজনন ঋতুতে গাড়ির হর্নের শব্দে ডাক দেয়। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন ঋতুতে পানির কাছাকাছি কোন প্রাচীন গাছের প্রাকৃতিক গর্তে ডালপালা, ঘাস, শুকনো পাতা ও পালক দিয়ে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফ্যাকাসে ও পীতাভ, সংখ্যায় ৭-১৫টি, মাপ ৬.২ ী ৪.৩ সেমি। স্ত্রীহাঁসএকাই ডিমে তা দেয়; ৩০ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: নাকতা হাঁস বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক এবং বর্তমানে বিরল পরিযায়ী পাখি; এখন শীতে ঢাকা ও সিলেট বিভাগের আর্দ্রভূমি ও হাওরে চোখে পড়ে যেখানে তারা আগে স্থায়িভাবে বাস করত। বাসা তৈরির উপযুক্ত জায়গার অভাবে এখন এ দেশে এর প্রজনন সম্ভব নয়। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়ার মধ্যে দক্ষিণ চিন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কাম্পুচিয়া, লাওস, এবং ভুটান ও মালদ্বীপ ব্যতীত ভারত উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে আছে।
অবস্থা: নাকতা হাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: নাকতা হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ নাকওয়ালা কালোপিঠ (গ্রিক: ংধৎী = মাংসল উপাঙ্গ, ড়ৎহরং = পাখি, সবষধং = কালো, হড়ঃড়ং = পিঠের)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: ঘবঃঃধঢ়ঁং ইৎধহফঃ, ১৮৩৬
ছোট আকারের হাঁস; রাজহাঁসের মত খাটো ঠোঁট, গোড়া থেকে ক্রমান্ত^য়ে সামনে সরু; নাসিকা ছোট ও ডিম্বাকার; পা খাটো; ডানা সুচালো; লেজ গোলাকার; পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় পার্থক্য আছে।
পৃথিবীতে ১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০২৩. ঘবঃঃধঢ়ঁং পড়ৎড়সধহফবষরধহঁং (এসবষরহ, ১৭৮৯)
সমনাম: অহধং পড়ৎড়সধহফবষরধহঁং এসবষরহ, ১৭৮৯
বাংলা নাম: ধলা বালিহাঁস, ভূলিয়া হাঁস (আলী)
ইংরেজি নাম: ঈড়ঃঃড়হ চুমসু এড়ড়ংব

বর্ণনা: ধলা বালিহাঁস খাটো ঠোঁটওয়ালা খুদে হাঁস (দৈর্ঘ্য ৩৩.৫ সেমি, ওজন ২৫০ গ্রাম, ডানা ১৫.৫ সেমি, ঠোঁট ২.৮ সেমি., পা ২.৪ সেমি, লেজ ৭.৩ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় পার্থক্য আছে। পুরুষহাঁসের মাথার চাঁদি ও পিঠ কালচে-বাদামি; মুখ, ঘাড় ও দেহতল সাদা; গলায় স্পষ্ট কালো বলয় ও ডানায় সাদা ডোরা; চোখ লালচে-বাদামি; ও ঠোঁট কালো। স্ত্রীহাঁসের দেহতল অনুজ্জ্বল ফিকে সাদা; ডানার প্রান্তÍ সাদা; চোখ বরাবর কালো কাজলের মত চক্ষু-রেখা; চোখ বাদামি; ঠোঁট কালচে জলপাই বা বাদামি, ঠোঁটের নিচের ভাগ ও ঠোঁটের সঙ্গমস্থল হলুদাভ। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের উভয়েরই পা ও পায়ের পাতা কালচে-বাদামির বা কালো রঙের। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস স্ত্রীহাঁসের অনুরূপ; তবে চক্ষু-রেখা প্রশস্ততর এবং দেহতলের রঙয়ে পার্থক্য আছে। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঘ. প. পড়ৎড়সধহফবষরধহঁং বাংলাদেশে দেখা যায়।
স্বভাব : ধলা বালিহাঁস জলজ উদ্ভিদ-ভরা হ্রদ, বড় পুকুর, অগভীর লেগুন, হাওর ও জলাবদ্ধ ধানখেতে বিচরণ করে; সাধারণত ৫-১৫ টি হাঁসের ছোট দলে দেখা যায়। পানিতে ভাসমান জলজ উদ্ভিদ থেকে এরা খাবার গ্রহণ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদের কচিকা- ও বীজ, চিংড়ি ও কাঁকড়া-জাতীয় প্রাণী, পোকামাকড় ও এদের লার্ভা। এরা পত-পত শব্দে ডানা ঝাপটে প্লত ওড়ে চলে এবং তীক্ষè স্বরে গোঙানো ডাক দেয়: গ্যাহ গ্যাগি-গ্যাহ অথবা কুওয়াক, কুওয়াক-কুওয়াকিডাক । জুন-সেপ্টেম্বর মাসে প্রজনন ঋতুতে পানির ধারে কাছে কোন গাছের কা-ে প্রাকৃতিক গর্তে অথবা দালানকোঠার ফাঁকে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো মুক্তার মত সাদা, সংখ্যায় ৬-১৪ টি, মাপ ৪.২দ্ধ৩.২ সেমি। ১৫-১৬ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: ধলা বালিহাঁস বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; প্রধানত চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের পুকুর ও হ্রদে দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে উত্তর-পশ্চিম এশিয়া পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়া মহাদেশে চিন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, এবং ভুটান ব্যতীত পুরো ভারত উপমহাদেশে আছে।
অবস্থা: ধলা বালিহাঁস বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: ধলা বালিহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ করোম্যান্ডল-এর শোরগোল করা হাঁস (গ্রিক : হবঃঃধ = হাঁস, ড়ঢ়ং = ডাকাডাকি, পড়ৎড়সধহফবষরধহঁং = কোলাম্যানডেলাম, পূর্ব ভারতের প্রাচীন দ্রাবিড় রাজ্য)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: অরী ইড়রব, ১৮২৮
মাঝারি আকারের হাঁস; পুরুষহাঁসের ঘাড়ের উপরের পালক বেশ লম্বা, গলবস্ত্রের মত দেখায়; ডানার একটি মধ্য-পালক অতি-লম্বা ও প্রশস্ত; মাথায় ঝুটি আছে; পাজোড়া দেহের সামনের দিকে থাকে; পায়ে সুচালো নখর যা দিয়ে খাড়া গাছ বেয়ে ওঠা যায়।
পৃথিবীতে ২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০২৪. অরী মধষবৎরপঁষধঃধ (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: অহধং মধষবৎরপঁষধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম : মান্দারিন হাঁস
ইংরেজি নাম: গধহফধৎরহ উঁপশ

বর্ণনা: মান্দারিন হাঁস বাহারি রঙের ছোট জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৪৪ সেমি, ডানা ২২.৫ সেমি., ঠোঁট ২.৮ সেমি, পা ৩.৮ সেমি, লেজ ১১ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় অনেক পার্থক্য আছে। প্রজনন ঋতুতে পুরুষহাঁসের ডানায় কমলা রঙ; ডানায় নৌÍকার পালের মত দ’ুটি খাড়া পালক; গোল মাথায় বাদামি চাঁদি; চোখের উপরে চওড়া সাদা ফেটা; ঘাড় ও চিবুক কমলা রঙের ঘন পালকে আবৃত; বগল কমলা; বুক সাদা; ঠোঁট লাল, চোখ ঘন বাদামি; এবং কমলা-পীতাভ পা। স্ত্রীহাঁসের পিঠ জলপাই-বাদামি; দেহতল সাদা; সাদা ফুটফুটে বগল ও বুকে সাদা ডোরা। প্রজনন ঋতু ছাড়া পুরুষহাঁসের চকচকে পিঠ, লালচে ঠোঁট ছাড়া দেখতে স্ত্রীহাঁসের মত। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের চেহারা প্রায় স্ত্রীহাঁসের মত, তবে মাথা বাদামি, বুক ও বগলে বিচ্ছিন্ন ফোঁটা থাকে।

স্বভাব: মান্দারিন হাঁস মিঠাপানির আর্দ্রভূমি, ¬দ্রুত প্লাবিত ধানখেত, বনের জলধারা ও তৃণময় জলাশয়ে বিচরণ করে; সাধারণত হাঁসের মিশ্র ঝাঁকে দেখা যায়। অগভীর জলে মাথা ডুবিয়ে ঘাস ও লতাপাতা থেকে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ পোকামাকড়, চিংড়ি ও কাঁকড়া-জাতীয় প্রাণী এবং উদ্ভিদ। এরা ভাল সাঁতারু ও প্লত উড়তে পারে, কিন্ত‘ পানিতে ডুব দিতে পটু নয়। মে-আগস্ট মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষহাঁস হোয়েক.. হোয়েক.. ডাক দিয়ে আকাশে স্ত্রীহাঁসকে তাড়া করে; স্ত্রীহাঁস উড়ে উড়ে ডাকতে থাকে: গ্যাগ- অ্যাগ- অ্যাগ- অ্যাগ...। বনের মধ্যে জলের কাছাকাছি কোন গুহায় বা কোটরে ঘাস ও পালক বিছিয়ে বাসা করে এরা ডিম দেয়। ডিমগুলো পীতাভ, সংখ্যায় ৯-১২ টি, মাপ ৪.৯দ্ধ৩.৬ সেমি। ২৮-৩০ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি : মান্দারিন হাঁস বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; সম্প্রতিকালে সিলেট বিভাগের হাওরে শীতে মাত্র একবার দেখা গেছে। প্রাকৃতিকভাবে কেবলমাত্র কোরিয়া, চীন ও জাপানে এ হাঁস আছে; ভারত ও নেপালে কয়েক বছর পর পর চোখে পড়ে; ইদানীং ইংল্যান্ডেও দেখা গেছে।
অবস্থা: মান্দারিন হাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে একে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: মান্দারিন হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ টুপিপড়া ডুবুরি (গ্রিক : ধরী = ডুবুরি পাখি; ল্যাটিন : মধষবৎরপঁষধঃধ = টোপর) ।
[এম. মনিরুল এইচ. খান]
গণ: অহধং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
মাঝারি আকারের হাঁস; চকাচকির চেয়ে খাটো পা ও লেজ; পা দেহের অনেক পিছনে অবস্থিত; মাটিতে হাঁটার সময় অনেক বেশি হেলেদুলে চলতে হয়; পায়ের সামনের অংশে বর্ম থাকে; ডুবুরি হাঁসের চেয়ে পায়ের পিছনের আঙুলে পর্দা কম।
পৃথিবীতে ৪২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১০ প্রজাতি

০২৫. অহধং ধপঁঃধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস, লেঞ্জাহাঁস (আই)
ইংরেজি নাম: ঘড়ৎঃযবৎহ চরহঃধরষ
বর্ণনা: উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস লম্বা লেজ ও লম্বা গলার বিরাট এক হাঁস (দৈর্ঘ্য ৫৫ সেমি, ওজন ৭০০ গ্রাম, ডানা ২৬ সেমি, ঠোঁট ৫.২ সেমি, পা ৪ সেমি, লেজ ১৯ সেমি)। পুরুষহাঁসের চেহারা ও আকার স্ত্রী থেকে অনেকটা আলাদা। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের মাথা ও ঘাড় চকলেট রঙের; ঘাড়ের দু’পাশ থেকে দুটি সাদা দাগ নেমে বুকের সাদাা অংশে মিশে গেছে; বগল ও পিঠ তামাটে এবং পাছা কালো; ডানার পতাকা ব্রঞ্জ ও সবুজের মিশ্রণ; ডানা-ঢাকনি কালো। স্ত্রীপাখির মাথা, ঘাড়, ও লেজ পুরুষহাঁসের চেয়ে ছোট; মাথা ও ঘাড় বাদামি; পিঠের বাদামি পালকের প্রান্ত ফ্যাকাসে। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসের দেহ স্ত্রীহাঁসের মত হয়। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের ঘন বাদামি চোখে লাল আভা; হালকা থেকে গাঢ় ফ্যাকাসে ঠোঁটের গোড়া কালচে; পা ও পায়ের নিচ কালচে, পায়ের পর্দা, নখর ও অস্থি-সন্ধি কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের দেহ স্ত্রীহাঁসের মত, কিন্ত‘ ডানার পালক পুরুষহাঁসের মত।
স্বভাব: উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস বড় নদী, হ্রদ, মোহনা, উপকূলীয় লেগুন ও ঝিলে বিচরণ করে; সাধারণত ঝাঁকে চরে, মাঝে মাঝে অনেক বড় ঝাঁকেও দেখা যায়। এরা তীরে হেঁটে, অগভীর জলে সাঁতার কেটে অথবা পানিতে মাথা ডুবিয়ে আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদ, লতাপাতা, জলজ অমেরুদ-ী প্রাণী। প্লত ডানা ঝাপটিয়ে হিস্ হিস্ শব্দে এরা ওড়ে চলে; ভোরে ও গোধূলিতে বেশি সক্রিয়; রাতেও চরে। পুরুষহাঁস ডাকে: প্রিউ.., আর স্ত্রীহাঁস ডাকে: কিউয়্যাহ..। এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন ঋতুতে সাইবেরিয়া ও মঙ্গোলিয়ার উত্তরাঞ্চলের আর্দ্রভূমির লতাপাতার মধ্যে ঘাস, গাছ-গাছড়া ও পালক বিছিয়ে বাসা বানিয়ে এরা ৭-৯টি ডিম পাড়ে। ২১-২২ দিনে ডিম ফোটে; ৪০-৪৫ দিনে ছানার গায়ে ওড়ার পালক গজায় ।
বিস্তৃতি: উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে সব বিভাগের সব জলাশয়েই দেখা যায়। এরা উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপ, আফ্রিকা ও ভারত উপমহাদেশসহ এশিয়া পর্যন্তÍ বিস্তৃত।
অবস্থা: উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চোখালেজ হাঁস ( ল্যাটিন: ধহধং = হাঁস ; ধপঁঃধং = সুচালো )।
[এম. মনিরুল এইচ. খান]
০২৬. অহধং পষুঢ়বধঃধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: উত্তুরে খুন্তেÍহাঁস, খুন্তেÍ হাঁস (আলী), পান্তÍামুখি (আই)
ইংরেজি নাম: ঘড়ৎঃযবৎহ ঝযড়াবষবৎ
বর্ণনা: উত্তুরে খুন্তেÍহাঁস লম্বা ও প্রশস্ত ঠোঁটের পাখি (দৈর্ঘ্য ৪৮ সেমি, ওজন ৬৪০ গ্রাম, ডানা ২৩.৯ সেমি, ঠোঁট ৬.৩ সেমি, পা ৩.৫ সেমি, লেজ ৭.৯ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় পার্থক্য আছে। পুরুষহাঁসের মাথা গাঢ় সবুজ; বুক সাদা; বগল তামাটে; কাঁধ নীল; ধাতব সবুজ পতাকা; চোখ গোলাপি ও ঠোঁট কালো। স্ত্রীহাঁসের ঘন বাদামি দেহ; ডানায় তামাটে নীল পট্টি; হালকা সবুজ পতাকা; বাদামি চোখ; হালকা বাদামি ঠোঁটে কমলার আমেজ। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের পা কমলা; চ্যাপ্টা পাতলা ঠোঁটের প্রান্তÍ বেশ প্রশস্ত; ঠোঁটের চার ধার চিরুনির মত। প্রজনন ঋতু ছাড়া পুরুষহাঁস দেখতে অনেকটা স্ত্রীহাঁসের মত। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের ডোরাহীন কোমর ও দাগি পেট ছাড়া স্ত্রীহাঁসের মত দেখায়।

স্বভাব: উত্তুরে খুন্তেÍহাঁস অগভীর মিঠাপানির হ্রদ, জলাধার, নদ-নদী এবং উপকূলের লেগুন ও দ্বীপে বিচরণ করে; সাধারণত দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে। অগভীর পানিতে অথবা নরম কাদায় ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে এরা খাবার ছেকে নেয়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ অমেরুদ-ী প্রাণী, লার্ভা, মাছের রেণু ও জলজ আগাছা। ডানায় শন-শন শব্দ করে এরা প্লত ওড়ে চলে এবং প্রজনন ঋতু ছাড়া কদাচিৎ ডাকে; পুরুষহাঁসের নিচু স্বরে ডাক: ভেক-ভেক... এবং স্ত্রীহাঁসের ভাঙা গলায় ডাক: কয়েহ... কয়েহ..। মে-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন ঋতুতে সাইবেরিয়ায় খোলা ঘাসের মাঠে বা ঝোপের নিচে ঘাস ও পালক বিছিয়ে বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সবুজাভ ও পীতাভের মিশ্রণ; সংখ্যায় ৭-১৬টি; মাপ ৫.২ ী ৩.৭ সেমি। ২৩-২৫ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: উত্তুরে খুন্তেÍহাঁস বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে সব বিভাগের সব ধরনের জলাভূমিতে দেখা যায়। উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার ভারত উপমহাদেশের সব দেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: উত্তুরে খুন্তেÍহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে একে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: উত্তুরে খুন্তেÍহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বর্মধারী হাঁস (ল্যাটিন: ধহধং = হাঁস ; পষুঢ়বধঃঁং = বর্মধারী ) ।
[এম. মনিরুল এইচ. খান]

০২৭. অহধং পৎবপপধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: পাতি তিলিহাঁস, পাতারি হাঁস (আলী)
ইংরেজি নাম: ঊঁৎধংরধহ ঞবধষ (ঈড়সসড়হ ঞবধষ)

বর্ণনা: পাতি তিলিহাঁস, খাটো ঠোঁটওয়ালা ছোট হাঁস (দৈর্ঘ্য ৩৬ সেমি, ওজন ২৮০ গ্রাম, ডানা ১৮ সেমি., ঠোঁট ৩.৪ সেমি, পা ২.৮ সেমি, লেজ ৬.৫ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় পার্থক্য আছে। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের মাথা তামাটে, শরীর সূক্ষ্ম দাগে ভরা; চোখের পাশে চওড়া সবুজ পট্টির চার দিক হলুদে ঘেরা; হলদে লেজের চার দিকে কালো বর্ডার; ঠোঁট কালো, নিচের চঞ্চু ফ্যাকাসে। স্ত্রীহাঁসের গায়ের রঙ হালকা বাদামি; দেহতল ফ্যাকাসে; সবুজ আভাসহ হলদে-বাদামি ঠোঁট। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের উভয়ের চোখ বাদামি; পা ও পায়ের পাতা হালকা নীল বা জলপাই-ধূসর থেকে স্লে¬ট-নীল বা কালচে জলপাই ফ্যাকাসে। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসের মাথার কালচে চাঁদি ও ঘাড় ছাড়া দেখতে স্ত্রীহাঁসের মত। অপ্রাপ্ত—বয়স্ক হাঁসের পেটে ফুটকি ব্যতীত স্ত্রীহাঁসের সঙ্গে চেহারার মিল রয়েছে।
স্বভাব: পাতি তিলিহাঁস নদী, হ্রদ, লেগুন, হাওর, কাদাচর, লতাপাতাওয়ালা অগভীর কর্দমাক্ত খোলা জলাভূমিতে বিচরণ: সাধারণত হাঁসের মিশ্র ঝাঁকে দেখা যায়। অগভীর জলে মাথা ডুবিয়ে এরা খাদ্য খুঁজে ফেরে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ লতাপাতার কচিকা-, টিউবার, বীজ, ইত্যাদি। এরা বাতাসে বেশ জোড়ে উড়তে এবং প্লত দিক পরিবর্তন করতে পারে; বসে খাড়া হয়ে; বাঁশির মত শিস দেয় আর ডাকে: ক্রিট, ক্রিট.. । এপ্রিল-আগস্ট মাসের প্রজনন ঋতুতে সাইবেরিয়ার জলাশয় ও বাদাভূমির পাশে লতাপাতা-ঢাকা ভূমিতে শুকনো পাতা ও কোমল পালকের বাসা বানিয়ে এরা ৮-১১টি ডিম পাড়ে। ২১-২৩ দিনে ডিম ফোটে; ছানার গায়ে ২৫-৩০ দিনে ওড়ার পালক গজায় ।
বিস্তৃতি: পাতি তিলিহাঁস বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে সব বিভাগের সব জলাভূমিতে দেখা যায়। ইউরোপ, আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল ও এশিয়ার ভারত উপমহাদেশের সব দেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: পাতি তিলিহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পাতি তিলিহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সবুজ-ডানা হাঁস (ল্যাটিন: ধহধং = হাঁস; সুইডিশ: শৎরশধ = সবুজ ডানার হাঁস)। এখন এটিকে উত্তর আমেরিকার সবুজ ডানার হাঁস অহধং পধৎড়ষরহবহংরং থেকে সম্পূর্ণ আলাদা প্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হয়।
[এম. মনিরুল এইচ. খান]

০২৮. অহধং ভধষপধঃধ এবড়ৎমর, ১৭৭৫
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: ফুলুরি হাঁস
ইংরেজি নাম: ঋধষপধঃবফ উঁপশ

বর্ণনা: ফুলুরি হাঁস বর্গাকার মাথা ও কালচে ঠোঁটওয়ালা মাঝারি আকারের হাঁস (দৈর্ঘ্য ৫১ সেমি, ওজন ৬৫০ গ্রাম, ডানা ২৩.৫ সেমি, ঠোঁট ৪ সেমি, পা ৩.৮ সেমি, লেজ ৮.৫ সেমি)। পুরুষ ও মেয়েপাখির চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের মাথা গাঢ় সবুজ; কাস্তের মত বাঁকানো সুদর্শন পালক লেজের ওপর পড়ে; দেহ ধূসর; কালো বেড় ওয়ালা সাদা গলা, গলাতে সবুজ বলয়; বুকে সাদা-কালো নকশা; ডানার পতাকা উজ্জ্বল সবুজ; লেজের তলা হলুদ আর কালো; চোখের রঙ ঘন বাদামি; এবং ঠোঁট ও পা কালো। স্ত্রীহাঁসের মাথা ধূসর; শরীরে বাদামি ডোরা; ওড়ার সময় ধূসরাভ ডানা ও সাদা ডানা-তল স্পষ্ট দেখা যায়। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষ তার কাল চাঁদি, ঘাড় ও পিঠ বাদে দেখতে স্ত্রীহাঁসের মত। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও স্ত্রীহাঁস দেখতে একই রকম।

স্বভাব: ফুলুরি হাঁস অগভীর বাদাবন ও জলমগ্ন উদ্ভিদময় জলাভূমিতে বিচরণ করে; সাধারণত একা, জোড়ায় বা অন্য হাঁসের দলে দেখা যায়। অগভীর জলে মাথা ডুবিয়ে এরা আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ লতাপাতা ও কীটপতঙ্গ। বনবন শব্দ করে এরা জোরে উড়ে যায়; প্রজনন ঋতু ছাড়া নীরব থাকে; প্রজনন ঋতুতে সাঁতার কাটার সময় মুরিগর মত ডাকে ও ওড়ার সময় শিস্ দেয়। মে-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে উত্তর-পূর্ব চিন ও সাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চলে পানির কাছাকাছি মাটিতে নল ও পালক বিছিয়ে বাসা তৈরি করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ-সাদা, সংখ্যায় ৬-১০টি; মাপ ৫.৬ ী ৪.০ সেমি। ২৪-২৫ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: ফুলুরি হাঁস বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; শীতে বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের মিঠাপানির জলাভূমিতে দেখা যায়। পৃথিবীতে এর বিস্তৃতি পাকিস্তান থেকে শুরু করে ভারত, নেপাল, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, জাপান, ইরান, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামে।
অবস্থা: ফুলুরি হাঁস বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে একে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: ফুলুরি হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কাস্তে-পালকের হাঁস (ল্যাটিন: ধহধং = হাঁস, ভধষপধঃঁং = কাস্তের মত) ।
[এম. মনিরুল এইচ. খান]
০২৯. অহধং ভড়ৎসড়ংধ এবড়ৎমর, ১৭৭৫
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: বৈকাল তিলিহাঁস
ইংরেজি নাম: ইধরশধষ ঞবধষ

বর্ণনা: বৈকাল তিলিহাঁস রঙিন এক খুদে হাঁস (দৈর্ঘ্য ৪১ সেমি, ওজন ২০০ গ্রাম, ডানা ২১.৫ সেমি, ঠোঁট ৩.৫ সেমি, পা ৩.৩ সেমি, লেজ ৯ সেমি)। পুরুষ ও মেয়েপাখির চেহারায় পার্থক্য আছে। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের মাথায় ও মুখে নানা রঙের নকশা হয়; মাথার চাঁদি, ঘাড়, ঘাড়ের পিছনভাগ ও গলা কালো; পীতাভ মুখে দুটি স্পষ্ট পট্টি থাকে: কালো খাড়া এক পট্টি চোখ থেকে নেমে গলায় ও সবুজ এক পট্টি চোখের পিছন থেকে মাথার পাশ দিয়ে চলে যায়; বুকে কালো ফুটকি; বগল ধূসর; পেট সাদা; ব্রঞ্জ-সবুজে মেশানো ডানার পতাকা; এবং লেজের তলায় স্লে¬¬ট-রঙ। স্ত্রীহাঁসের দেহ বাদামি; মাথার কালচে চাঁদি ও ঠোঁটের গোড়ায় সাদা পট্টি আছে। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসেরউভয়ের চোখ বাদামি; ঠোঁট কালচে-নীল বা কালো; এবং পা ও পায়ের পাতা স্লেট-নীল। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসের লালচে বুক ও বগল ছাড়া দেখতে স্ত্রীহাঁসের মত। ঠোঁটের গোড়ায় সাদা পট্টি ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁসও দেখতে স্ত্রীহাঁসের মত।
স্বভাব: বৈকাল তিলিহাঁস লতাপাতা-সমৃদ্ধ মিঠাপানির বড় জলাভূমিতে বিচরণ করে; সাধারণত একা, জোড়ায় বা অন্য হাঁসের দলে মিশে থাকতে দেখা যায়। পানিতে মাথা ডুবিয়ে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদের পাতা, মূল, কচিকা- ও বীজ, পোকামাকড়, কেঁচো, শামুক-জাতীয় প্রাণী, ইত্যাদি। প্রয়োজনে পানি থেকে এরা খাড়া উঠে যেতে পারে; ঘন ঘন ডানা সঞ্চালন করে প্লত উড়ে যায়। প্রজনন ঋতুতে পুরুষহাঁসেরা মুরগির মত ডাকে: ওট-ওট-ওট... এবং স্ত্রীহাঁসেরা নিচু কম্পিত কণ্ঠে সাড়া দেয়। গ্রীষ্মে এরা সাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চলে পানির ধারে উঁচু ঘাসের জমিতে বাসা করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সবুজাভ-ধূসর; সংখ্যায় ৮-১০টি।
বিস্তৃতি: বৈকাল তিলিহাঁস বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; শীতে ঢাকা ও সিলেট বিভাগের জলাশয়ে দেখতে পাওয়ার দ’ুটি তথ্য রয়েছে। পৃথিবীতে এর বিস্তৃতি কেবল এশিয়ার সাইবেরিয়া, চিন, কোরিয়া ও জাপানে সীমাবদ্ধ; পাকিস্তান, ভারত নেপাল ও মিয়ানমারে কালেভদ্রে আসে।
অবস্থা: বৈকাল তিলিহাঁস বিশ্বে সংকটাপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে একে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: বৈকাল তিলিহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সুন্দর হাঁস (ল্যাটিন : ধহধং = হাঁস, ভড়ৎসড়ংঁং = সুন্দর) ।
[এম. মনিরুল এইচ. খান]

০৩০. অহধং ঢ়বহবষড়ঢ়ব খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস, লালশির (আই)
ইংরেজি নাম: ঊঁৎধংরধহ ডরমবড়হ

বর্ণনা: ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস নীলচে ঠোঁটওয়ালা মাঝারি আকারের হাঁস (দৈর্ঘ্য ৪৯ সেমি, ওজন ৬৭০ গ্রাম, ডানা ২৫.৫ সেমি, ঠোঁট ৩.৩ সেমি, পা ৩.৭ সেমি, লেজ ১০ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের স্পষ্ট হলুদ কপাল; মাথা তামাটে; বগল ধূসর; লেজের তলা কালো; বুক প্রায় পাটল বর্ণের; ওড়ার সময় ডানার সাদা অগ্রভাগ স্পষ্ট চোখে পড়ে। লালচে বাদামি স্ত্রীহাঁসের বগল পীতাভ; পেট সাদা; খয়েরি ডানা-ঢাকনি। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের উভয়ের চোখ বাদামি বা লালচে বাদামি; ঠোঁট ধূসর ও নীলে মিশ্রিত; পায়ের পর্দা ও অস্থিসন্ধি কালো, এবং নখর কালচে। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসের পিঠে কালো সূক্ষ্ম লাইন ও সাদাটে দেহতল ছাড়া স্ত্রীহাঁসের মত দেখতে।
স্বভাব: ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস অগভীর হ্রদ, নদী, ডোবা, জোয়ার-ভাটার খাঁড়ি, লবনের ঘের ও লতাপাতা আবৃত জলাশয়ে বিচরণ করে; সাধারণত বড় বড় ঝাঁকে দেখা যায়। জলাশয়ের পাড়ে হেঁটে অথবা অগভীর জলে মাথা ডুবিয়ে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ভেজা ঘাস, জলজ উদ্ভিদ, পোকামাকড়, লার্ভা ইত্যাদি। ওড়ার সময় এরা মুখে শন শন শব্দ করে; অন্য সময় পুরুষহাঁস শিস দেয়: হুউহিও..; এবং স্ত্রীহাঁস ডাকে: এরর্র-এর্রর-এর্রর..। জুন-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন ঋতুতে সাইবেরিয়ায় পানির কাছাকাছি ঝোপের মধ্যে মাটিতে নল, ঘাস ইত্যাদির ওপর পালকের বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো হালকা পীতাভ; সংখ্যায় ৭-১২টি; মাপ ৫.৪ ী ৩.৫ সেমি। ২৪-২৫ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী হাঁস; শীতে বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের উপকূলসহ নদী ও হাওরে পাওয়া যায়। ইউরোপ হয়ে আফ্রিকার উত্তরাংশ ও এশিয়া পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়া মহাদেশে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান, চীন ও ফিলিপাইনে পাওয়া যায়।
অবস্থা: ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: ইউরেশীয় সিঁথিহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামে অর্থ পেনিলোপ হাঁস (ল্যাটিন: ধহধং = হাঁস ; গ্রীক: ঢ়বহবষড়ঢ়ব = পেনিলোপ, ইউলিসিসের পতœী )।
[এম. মনিরুল এইচ. খান]

০৩১. অহধং ঢ়ষধঃুৎযুহপযড়ং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: নীলমাথা হাঁস, নীলশির (আই)
ইংরেজি নাম: গধষষধৎফ

বর্ণনা: নীলমাথা হাঁস বড় আকারের হালকা বাদামি হাঁস (দৈর্ঘ্য ৫৭ সেমি, ওজন ১.২ কেজি, ডানা ২৭ সেমি, ঠোঁট ৫ সেমি, পা ৪.২ সেমি, লেজ ৯ সেমি)। পুরুষহাঁসের চেহারা ও আকার স্ত্রীহাঁসের থেকে কিছুটা আলাদা। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের গায়ের রঙ গাঢ় ধূসর; মাথা ও ঘাড় গাঢ় সবুজ; বুক বেগুনি-বাদামি; গলায় সাদা বলয়, কালো পালকের লেজ ওপর দিকে বাঁকানো, ডানায় নীল পতাকা; ও কমলা পা। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষ অনেকটা স্ত্রীহাঁসের মত। স্ত্রীহাঁসের দেহে বাদামি বর্ণের ওপর কালো ডোরা; বাদামি চোখ; ঠোঁট কালচে-সবুজ বা হলুদ, ঠোঁটের গোড়া হলুদ ও আগা কালো; পা ও পায়ের পাতা কমলা-হলুদ থেকে প্রবাল-লাল এবং নখর কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস স্ত্রীহাঁসের মত হলেও তার দেহ অনুজ্জ্বল এবং অল্প সংখ্যক দাগ আছে। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে অ. ঢ়. ঢ়ষধঃুৎযুহপযড়ং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: নীলমাথা হাঁস অগভীর হ্রদ, নদী, পুকুর ও পার্কে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ায়; সাধারণত ঝাঁক বেঁধে চলে। এরা মাথা পানিতে ডুবিয়ে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ লতাপাতা, বীজ, কচিকা-, শামুক-জাতীয় অমেরুদ-ী প্রাণী, ব্যাঙাচি, মাছের রেণু পোনা, কেঁচো, ইত্যাদি। খাবার প্রাপ্তির ওপর ভিত্তি করে এরা দিনে অথবা রাতে চরে; ভয় পেলে পানিতে ডুব দিয়ে লুকিয়ে যায় কিন্ত‘ খাবার খুজঁতে ডুব দেয় না। এপ্রিল-জুলাই মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষ হাঁস লোহা ঘসার শব্দের মত নিচু স্বরে ডাকে: কিউয়্যাক-কিউয়্যাক...; স্ত্রীহাঁসডাকে: টিউকাটা-টিউকাটা...। সাইবেরিয়ায় পানির ধারে ঘাস, লতাপাতা ও কোমল পালকের বাসা করে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সবুজাভ-ধূসর, সংখ্যায় ৬-১০টি, মাপ ৫.৬ ী ৪.০ সেমি। ২৬ দিনে ডিম ফোটে; সংসারের সব কাজ স্ত্রীহাঁস একাই করে।
বিস্তৃতি: নীলমাথা হাঁস বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; শীতে বরিশাল, ঢাকা এবং সিলেট বিভাগের হাওর ও বিলে দেখা যায়। উত্তর আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা ও এশিয়ায় এরা বিস্তৃত; এশিয়া মহাদেশে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, আরব, চীন ও জাপানে আছে; সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজল্যান্ডে বিস্তৃতির সূচনা হয়েছে।
অবস্থা: নীলমাথা হাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: নীলমাথা হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চওড়াঠোঁট হাঁস (ল্যাটিন: ধহঁং = হাঁস; গ্রীক: ঢ়ষধঃঁৎযঁহশযড়ং = প্রশস্ত ঠোঁট )। এই প্রজাতিটি আমাদের গৃহপালিত হাঁসের পূর্বপুরুষ।
[এম. মনিরুল এইচ. খান]

০৩২. অহধং ঢ়ড়বপরষড়ৎযুহপযধ ঋড়ৎংঃবৎ, ১৭৮১
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: দেশি মেটেহাঁস, পাতি হাঁস (আই)
ইংরেজি নাম: ওহফরধহ ঝঢ়ড়ঃ-নরষষবফ উঁপশ (ঝঢ়ড়ঃ-নরষষবফ উঁপশ)

বর্ণনা: দেশি মেটেহাঁস দুইরঙ্গা ঠোঁটের বড় আকারের হাঁস (দৈর্ঘ্য ৬১ সেমি, ওজন ১.৪ কেজি, ডানা ২৬.৫ সেমি, ঠোঁট ৫.৭ সেমি, পা ৪.৭ সেমি, লেজ ১৩ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় বিশেষ পার্থক্য নেই। বাদামি পালকের প্রান্তÍ হালকা রঙের বলে দেখতে এদের দেহে আঁইশের মত দাগ আছে; বুকে কালো ফুটকি; মাথার চাঁদি বাদামি; চোখ ঘন বাদামি; প্রশস্ত কালো ভ্রু-রেখা ঠোঁট থেকে শুরু হয়ে চোখের ওপর দিয়ে চলে গেছে; চোখের সামনে ঠোঁটের দু’দিকে দ’ুটি লালচে দাগ রয়েছে; ঠোঁটের দুই-তৃতীয়াংশ কালো ও বাকি এক-তৃতীয়াংশ হলুদ; পা ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল ও নখর কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস হালকা বাদামি ও এর কপালে লাল দাগ নেই। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে অ. ঢ়. ঢ়ড়বপরষড়ৎযুহপযধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: দেশি মেটেহাঁস হ্রদ, সেচের জলাধার, নদীর পাড় এবং নলবন ও আগাছাভরা মিঠাপানির জলাভূমিতে বিচরণ করে; সাধারণত পারিবারিক দলে বা ছোট ঝাঁকে দেখা যায়। অগভীর পানিতে সাঁতার কেটে বা পানিতে মাথা ডুবিয়ে আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে লতাপাতা ও অমেরুদ-ী প্রাণী। বিপদে পানিতে ডুব দিয়ে এরা লুকিয়ে যায়, এবং কেবল মাত্র চোখ পানির ওপর রেখে ডুবে থাকতে পারে। জুলাই-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষহাঁসেরা ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে নিচু স্বরে ডাকে, স্ত্রীহাঁসেরা জোরে গ্যাক গ্যাক করে ডাকে; এবং পানির কাছে মাটিতে লতাপাতায় ঘাস, আগাছা ও পালকের বাসা করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সবুজে ও সাদায় মেশানো, সংখ্যা ৭-৯টি; মাপ ৫.৬ ী ৪.২ সেমি। স্ত্রী একাই ডিমে তা দেয়; ২৪ দিনে ডিম ফোটে; পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের উভয় মিলে ছানা পাহারা দেয়।
বিস্তৃতি: দেশি মেটেহাঁস বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; দেশের সব বিভাগের সব ধরনের জলাভূমিতে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে এই প্রজাতির বিস্তৃতি কেবল এশিয়ায় সীমাবদ্ধ; বিশেষ করে সাইবেরিয়া, চীন, জাপান ও মিয়ানমার; এবং মালদ্বীপ ছাড়া ভারত উপমহাদেশের সব দেশে আছে।
অবস্থা: দেশি মেটেহাঁস বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: দেশি মেটেহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ দাগিঠোঁট হাঁস (ল্যাটিন: ধহঁং = হাঁস; গ্রীক: ঢ়ড়রশরষড়ং = দাগ, ৎযঁহশযড়ং = ঠোঁট)।
[ এম. মনিরুল এইচ. খান ] ১

০৩৩. অহধং য়ঁবৎয়ঁবফঁষধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: গিরিয়া হাঁস
ইংরেজি নাম: এধৎমধহবু

বর্ণনা: গিরিয়া হাঁস দর্শনীয় ভ্রু-রেখা আঁকা ছোট হাঁস (দৈর্ঘ্য ৩৯ সেমি, ওজন ৩৫০ গ্রাম, ডানা ১৮.৫ সেমি, ঠোঁট ৩.৭ সেমি, পা ২.৮ সেমি, লেজ ৬.৫ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের বাদামি মাথায় বড় সাদা ভ্রু-রেখা; ধূসর বগল; কালো কালো বুটি ওয়ালা খলেরি বুক ও পেট; পেটের মাঝ থেকে হঠাৎ করে সাদা; ওড়ার সময় ডানার সামনের রূপালি প্রান্ত নজরে পড়ে। স্ত্রীহাঁসের হালকা বাদামি দেহ; এবং অস্পষ্ট ভ্রু-রেখা। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসেরউভয়ের কালচে বাদামি ঠোঁট, ও ঘন বাদামি চোখ। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসেরা অনেকটা স্ত্রীহাঁসের মত দেখতে, যদিও ডানার রঙয়ে কিছু পার্থক্য থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষহাঁসের ডানার পতাকা ও বাদামি দেহতল ছাড়া দেখতে স্ত্রীহাঁসের মত ।
স্বভাব: গিরিয়া হাঁস হ্রদ, লেগুন, জলা, উদ্ভিদ ও আর্দ্র ঘাস সম্বলিত প্লাবনভূমি ইত্যাদিতে বিচরণ করে; সাধারণত অন্যান্য হাঁসের মিশ্রদলে দেখা যায়। এরা হেঁটে অথবা পানিতে মাথা ডুবিয়ে আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, পাতা, অঙ্কুরিত পাতা, ঘাসের পত্রফলক, পোকামাকড়, লার্ভা, কীট ও শামুক। খাদ্যের জন্য পানিতে ডুব না দিলেও এরা বিপদে খুব ভালভাবেই ডুব দেয়। এরা উড়লে হিস্ হিস্ করে ডানার শব্দ হয়। পুরুষহাঁস ঝিঁঝিঁ পোকার মত ডাকে ও স্ত্রীহাঁস ডাকে: ওয়ায়েহ...। এপ্রিল-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে ইউরোপ ও সাইবেরিয়ায় তুন্দ্রা অঞ্চলে মাটিতে তৃণলতা বা ঘাসবনে ঘাস ও পালকের বাসা করে এরা ডিম পাড়ে। ডিম হালকা পীত বর্ণের, সংখ্যায় ১১-১২টি, মাপ ৪.৫ ী ৩.২ সেমি। ২১-২৩ দিনে ডিম ফোটে। ৩৫-৪০ দিনে গিরিয়া হাঁসের ছানার গায়ে ওড়ার পালক গজায়।
বিস্তৃতি: গিরিয়া হাঁস বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে সব বিভাগের সকল জলাভূমিতে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে এর বিস্তৃতি ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া; ভারত উপমহাদেশের সব দেশে পাওয়া যায়।
অবস্থা: গিরিয়া হাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: গিরিয়া হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হাঁস (ল্যাটিন: ধহধং = হাঁস, য়ঁবৎয়ঁবফঁষধ = এক প্রকারের হাঁস)।
[এম. মনিরুল এইচ. খান]

০৩৪. অহধং ংঃৎবঢ়বৎধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: পিয়াং হাঁস (আলী)
ইংরেজি নাম: এধফধিষষ

বর্ণনা: পিয়াং হাঁস খাড়া কপাল ওয়ালা এক মাঝারি আকারের হাঁস (র্দৈঘ্য ৪১ সেমি, ওজন ৭৪০ গ্রাম, ডানা ৫.১ সেমি, পা ৩.৮ সেমি, লেজ ৯ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় কিছু পার্থক্য আছে। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের পিঠ ধূসর-বাদামি; বুকে গোল গোল রেখার নকশা; ধূসর ঠোঁট; পেট সাদা; লেজ ও লেজ-তল কালো; ডানার অগ্্রভাগে তামাটে পট্টি ওড়ার সময় চোখে পড়ে। স্ত্রী ও পুরুষহাঁসের চেয়ে বেশি বাদামি; ঠোঁটের দু’পাশ কমলা। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসেরউভয় পাখির চোখ কালচে; পা ও পায়ের পাতা বাদামি-হলুদ। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসের পিঠ কালচে। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস কমলা রঙের বুক ছাড়া দেখতে স্ত্রীহাঁসের মত। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে অ. ং. ংঃৎবঢ়বৎধ বাংলাদেশে দেখা যায়।
স্বভাব: পিয়াং হাঁস নলবন, অগভীর হ্রদ, নদী ও মোহনায় বিচরণ করে; সাধারণত হাঁসের মিশ্র ঝাঁকে দেখা যায়। অগভীর জলে অল্প অল্প ডুব দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদ, কচিকা-, বীজ, টিউবার, পোকামাকড়, কীট ও মলাস্ক। এরা প্লত উড়তে পারে; ডানা ঝাপটানোর ফলে শিস্ দেবার মত শব্দ হয়। প্রজনন ঋতুতে পুরুষহাঁসেরা হালকা শিস্ দিয়ে ডাকে; স্ত্রীহাঁসেরা পালা-হাঁসের মত উচ্চ স্বরে গ্যাক গ্যাক করে ডাকে। মে-আগস্ট মাসের প্রজনন ঋতুতে ইউরোপ, মধ্য এশিয়া ও সাইবেরিয়ার দক্ষিণাংশে পানির ধারে মাটিতে ঘাস বা ঝোপের মধ্যে শুকনো ঘাস-পাতা আর পালকের বাসা করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো হালকা ও পীতাভ, সংখ্যায় ৮-১২টি, মাপ ৫.৪ ী ৩.৬ সেমি। ২৫দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: পিয়াং হাঁস বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে সব বিভাগের সব হাওর ও নদীতে শীতকালে দেখা যায়। এর বিস্তৃতি উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায়; এশিয়ার মালদ্বীপ ছাড়া ভারত উপমহাদেশের সকল দেশে রয়েছে।
অবস্থা: পিয়াং হাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পিয়াং হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কোলাহল-প্রিয় হাঁস (ল্যাটিন: ধহধং = হাঁস, ংঃৎবঢ়বৎধ = কোলাহল প্রিয়)।
[এম. মনিরুল এইচ. খান]

গণ: জযড়ফড়হবংংধ জবরপযবহনধপয, ১৮৫৩
(একটি বিলুপ্ত গণ) মাঝারি আকারের হাঁস; লম্বা শরীর; লম্বা গলা; কৌÍণিক মাথা; চওড়া গাল; খুব লম্বা ঠোঁট; ঠোঁটের গোড়া মোটা, সামনে ক্রমশ সরু; পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় পার্থক্য অনেক।
পৃথিবীতে ১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৩৫. জযড়ফড়হবংংধ পধৎুড়ঢ়যুষষধপবধ (খধঃযধস, ১৭৯০)
সমনাম: অহধং পধৎুড়ঢ়যুষষধপবধ খধঃযধস, ১৭৯০
বাংলা নাম: গোলাপি হাঁস
ইংরেজি নাম: চরহশ-যবধফবফ উঁপশ

বর্ণনা: গোলাপি হাঁস লম্বা গোলাপি গলার মাঝারি আকারের হাঁস (দৈর্ঘ্য ৬০ সেমি, ওজন ৮৪০ গ্রাম, ডানা ২৬ সেমি, ঠোঁট ৫.৩ সেমি, পা ৪ সেমি, লেজ ১১.৫ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় বেশ পার্থক্য আছে। পুরুষহাঁসের মাথা, মুখ ও ঘাড় গোলাপি; কপাল কালচে বাদামি; ডানার অনেকটা অংশ গোলাপি: ডানার মধ্য-পালক ও ডানাতল-ঢাকনি; বাকি শরীর কালচে বাদামি। স্ত্রীহাঁসের ধূসর মাথায় হালকা গোলাপি আভা, চাঁদি ও ঘাড়ের পিছনে বাদামি; ডানার মধ্য-পালক ফ্যাকাসে বাদামি; দেহের বাকি অংশে হালকা বাদামি পালকের কিনারা সাদা ছিল। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসেরউভয়ের চোখ লাল; ঘন লাল ঠোঁট; লালচে পা ও পায়ের পাতা ছিল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পালকের সাদা প্রান্তÍ ছাড়া স্ত্রীহাঁসের চেহারার সঙ্গে মিল ছিল।
স্বভাব: গোলাপি হাঁস বাদাবন, নলবন, ও উঁচু ঘাসভরা বিলে বিচরণ করত; সাধারণত ৬-৮টির ছোট দলে দেখা যেত। অগভীর পানিতে সাঁতার কেটে, মাথা ডুবিয়ে এবং ডুব দিয়ে পানির নিচে গিয়েআহার খোঁজ করত; খাদ্যতালিকায় ছিল জলজ আগাছা, ক্ষুদ্র শামুক, ও ছোট অমেরুদ-ী প্রাণী। গাছপালা ও লতাপাতার আড়াল ছেড়ে এরা সহজে বাইরে আসত না; মাঝে মাঝে ঘরঘরে গলায় শিস দিত ও গ্যাক গ্যাক করে ডাকত। জুন-জুলাই মাসের প্রজনন ঋতুতে তারা পানির পাশে মাটিতে লম্বা ঘাসের মধ্যে শুকনো ঘাসের স্তুূপ বানিয়ে তার ওপর পালকের বাসা করে ডিম পাড়ত। ডিমগুলো ছিল গোল ও গজদন্তেÍর মত সাদা, সংখ্যায় ৫-১০টি, মাপ ৪.৩ ী ৪.২ সেমি।
বিস্তৃতি: গোলাপি হাঁস বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের মিঠা পানির জলাভূমিতে দেখা যেত। ১৯৩৫ সালে সর্বশেষ পাখিটি দেখা গিয়েছিল; এখন বিলুপ্ত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হয়। এদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি ছিল।
অবস্থা: গোলাপি হাঁস বিশ্বে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত এবং জানামতে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: গোলাপি হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ গোলাপি হাঁস (গ্রিক: ৎযড়ফড় = গোলাপি, হবংংধ = হাঁস; ল্যাটিন: পধৎুড়ঢ়যুষষধপবঁং = গোলাপি)।
[ইনাম আল হক ও মো: শাহরিয়ার মাহমুদ]

গণ: ঘবঃঃধ কধঁঢ়, ১৮২৯
মাঝারি আকারের হাঁস; লম্বা ঠোঁট, ঠোঁটের গোড়া বেশি উঁচু নয়; ঠোঁটের গোড়া থেকে এক-তৃতীয়াংশেরও কম দূরত্বে¡র মধ্যে নাসিকা; পা লম্বা কিন্তÍু আদর্শ ভূতিহাঁসের চেয়ে ছোট; পায়ের পিছনের আঙুলের পর্দা চওড়া; ডানা তুলনামূলকভাবে খাটো, সুচালো ও দেহের অনেক পিছনে থাকে; ১৬ পালকের খাটো লেজ; পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় পার্থক্য আছে।
পৃথিবীতে ৩ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৩৬. ঘবঃঃধ ৎঁভরহধ (চধষষধং, ১৭৭৩)
সমনাম: অহধং ৎঁভরহধ চধষষধং, ১৭৭৩
বাংলা নাম: লালঝুটি ভুতিহাঁস
ইংরেজি নাম: জবফ-পৎবংঃবফ চড়পযধৎফ

বর্ণনা: লালঝুটি ভুতিহাঁস মাঝারি গড়নের হাঁস (দৈর্ঘ্য ৫৪ সেমি, ওজন ৯৮০ গ্রাম, ডানা ২৬ সেমি, ঠোঁট ৫ সেমি, পা ৪.২ সেমি, লেজ ৬.৭ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় পার্থক্য আছে। প্রজনন ঋতুতে পুরুষহাঁসের গোল মাথা মরচে-কমলা, ঘাড় কালো, কাঁধে সাদা পট্টি ও বগল সাদা থাকে; বুক ও পেট কালো হয়; ডানায় স্পষ্ট সাদা ডোরা আছে ও ওড়ার পালক সাদা। ফ্যাকাসে ঠোঁটের আগাসহ ঠোঁটটি উজ্জ^ল লাল; চোখ উজ্জ্বল লাল এবং পা ও পায়ের পাতা কালো বেড়সমেত কমলা-হলুদ। স্ত্রী ও প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসের টুপি ও ঘাড় বাদামি, গাল সাদা, পিঠ বাদামি ও দেহতল পীতাভ; চোখ ও ঠোঁট লালচে। স্ত্রীহাঁসের বাদামি ঠোঁটের আগা পাটল বর্ণের ও অপ্রাপ্তবয়স্কের ঠোঁট কালচে।
স্বভাব: লালঝুটি ভুতিহাঁস মিঠাপানির হাওর, বিল, বড় জলাশয় ও নদীতে বিচরণ করে; সাধারণত বড় বড় ঝাঁকে দেখা যায়। পানিতে সাঁতার দিয়ে অথবা অল্প পানিতে গলা ডুবিয়ে আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে লতাপাতা, মুকুল, কচিকা-, জলজ ঘাস, আগাছার বীজ, জলজ পোকামাকড়, ক্ষুদ্র শামুক-জাতীয় প্রাণী ও ব্যাঙাচি। এরা জোরে উড়তে পারে এবং ভয় পেলে পানি থেকে খাড়া ওড়ে উঠে যায়। পুরুষপাখি র্ককশ গলায় ডাকে: আওয়েহ গিক,পারর-পারর-পারর। গ্রীষ্মকালের প্রজনন ঋতুতে মধ্য এশিয়ায় জলাশয়ের পাশে লতাপাতার মধ্যে নল ও ঘাসের স্তুূপ বানিয়ে তার ওপর পালকের বাসা করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো জলপাই-ধূসর, সংখ্যায় ৭-১৪টি, মাপ ৫.৭ ী ৪.২ সেমি।
বিস্তৃতি: লালঝুটি ভুতিহাঁস বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি; ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের হাওরে শীতে থাকে। ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশে; এশিয়ায় ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ও ইন্দোচীনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: লালঝুটি ভুতিহাঁস বিশ্বব্যাপী বিপদমুক্ত পাখি। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: লালঝুটি ভুতিহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ লাল হাঁস (গ্রীক: হবঃঃধ = হাঁস; ল্যাটিন: ৎঁভঁং = লাল)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: অুঃযুধ ইড়রব, ১৮২২
মাঝারি আকারের হাঁস; ঠোঁটের গোড়া উঁচু, ঠোঁট আগাগোড়া সমান চওড়া অথবা প্রান্তÍ সামান্য বেশি চওড়া; পা বড় ও দেহের অনেক পিছনে থাকে।
পৃথিবীতে ১২ প্রজাতি, বাংলাদেেেশ ৫ প্রজাতি

০৩৭. অুঃযুধ নধবৎর (জধফফব, ১৮৬৩)
সমনাম: অহধং নধবৎর জধফফব, ১৮৬৩
বাংলা নাম: বেয়ারের ভুতিহাঁস
ইংরেজি নাম: ইধবৎ’ং চড়পযধৎফ

বর্ণনা: বেয়ারের ভুতিহাঁস মাঝারি আকারের তামাটে-বাদামি হাঁস (দৈর্ঘ্য ৪৬ সেমি, ডানা ২২ সেমি, ঠোঁট ৫ সেমি, পা ৩ সেমি, লেজ ৭ সেমি)। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের মাথা চকচকে কালো ও ঘাড়ে সবুজাভ দীপ্তি রয়েছে; বুক মেহগনির মত বাদামি, বগল অনুজ্জ^ল তামাটে এবং পেট ও লেজের নিচের পালক সাদা। কালচে আগা ও নখসহ ঠোঁট স্লেট-নীল; চোখ সাদা বা সোনালী-হলুদ, পা ও পায়ের পাতা ধূসর কিন্তÍু অস্থি সন্দ্বি এবং আঙুলের-পর্দা মলিন। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসের মাথা অনুজ্জ্বল ও চোখ সাদা। উষ্ণ বাদামি বুক ও ঠোঁটের গোড়ায় বিচ্ছিন্নœ তামাটে-বাদামি চিতি ছাড়া তরুণ পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারা অপ্রজননশীল পুরুষহাঁসের মত; তবে, স্ত্রীহাঁসের চোখ বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির অনুজ্জ্বল দেহ, অতি তামাটে-বাদামি মাথা ও ঘাড়ের চিতিবিহীন অংশ ছাড়া দেখতে স্ত্রীহাঁসের মত।
স্বভাব: বেয়ারের ভুতিহাঁস হাওর, জলাশয় ও হ্রদে বিচরণ করে; দলে থাকে এবং শীতকালীন আবাসে অন্যান্য ডুবুরি হাঁসের দলে দেখা যায়। অগভীর পানিতে ডুব দিয়ে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ বস্তু; কিন্ত‘ এদের পছন্দের আহার্য ও খাবার গ্রহণের কৌÍশল এখনও ভালোভাবে জানা যায় নি। শীতকালীন আবাসে এরা সাধারনত নীরব ও ভয়ার্ত থাকে এবং সর্তকতার সঙ্গে চলাফেরা করে। গ্রীষ্মে প্রজননকালে উত্তর-পূর্ব চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব সাইবেরিয়ায় এরা র্ককশ গলার ডাকে: গ্র্যাক..; এবং জোড়ায় জোড়ায় অথবা বিচ্ছিন্ন ছোট দলে মাটিতে বাসা করে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৬-১০টি; ২৭দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: বেয়ারের ভুতিহাঁস বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; প্রধানত সিলেট বিভাগের হাওরে শীতকালে বিচরণ করে; ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে পাওয়ার তথ্য আছে। দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন ও জাপানে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বেয়ারের ভুতিহাঁস বিশ্বে সংকটাপন্ন পাখি হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বেয়ারের ভুতিহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বেয়ারের সিন্ধুবিহঙ্গ ( গ্রীক : ধরঃযঁরধ = সামুদ্রিক পাখি - এরিস্টটলের উল্লেখানুসারে ; নধবৎর = কার্ল র্আনস্ট ফন বেয়ার, ১৭৯২-১৮৭৬, পারস্যের ভ্রুণতত্ত্ব¡বিদ,ভূগোলবিদ ও অনুসন্ধানকারী)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান ]

০৩৮. অুঃযুধ ভধৎরহধ (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: অহধং ভবৎরহধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: পাতি ভুতিহাঁস
ইংরেজি নাম: ঈড়সসড়হ চড়পযধৎফ

বর্ণনা: পাতি ভুতিহাঁস গম্বুজ-মাথা রূপালি হাঁস ( দৈর্ঘ্য ৪৮ সে.মি, ওজন ৮২০ গ্রাম, ডানা ২১ সেমি, ঠোঁট ৪.৬ সেমি, পা ৩.৭ সেমি, লেজ ৬.৫ সেমি)। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের দেহের উপরিভাগ রূপালি-ধূসর ও দেহতলের বেশীর ভাগই ধূসরাভ-সাদা; মাথা তামাটে, পিঠ রূপালি-ধূসর ও কোমর কালো; ডানায় অনুজ্জ^ল ধূসর ছোট দাগ, লেজের উপরের ও নিচের ঢাকনি কালো; বগল ও ওড়ার পালক রূপালি-ধূসর; এবং বুক ও অবসারণী কালো; চোখ হলুদ, পা স্লেট-নীল, ও ঠোঁট কালো। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসের পিঠ বাদামি-ধূসর এবং দেহতল কালচে বাদামি; বুক বাদামি-কালো ও বগল বাদামি-ধূসর। স্ত্রীহাঁসের দেহের উপরিভাগ পীতাভ বাদামি-ধূসর এবং অনুজ্জ^ল দারুচিনি রঙের মাথা, ঘাড় ও দেহতল; পিঠ ও বগল পীতাভ বাদামি।
স্বভাব: পাতি ভুতিহাঁস হাওর, বিল, হ্রদ,ও লেগুনের খোলা অংশে বিচরণ করে; সাধারণত বড় বড় ঝাঁকে দেখা যায়। সাঁতার দিয়ে ও অগভীর পানিতে ডুব দিয়ে পানির নিচে গিয়ে নিমজ্জিত উদ্ভিদ থেকে খাবার সংগ্রহ করে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে লতাপাতা, কুঁড়ি, কচিকা-, বীজ, কেঁচো, চিংড়ি, শামুক-জাতীয় প্রাণী, জলজ পোকামাকড় এবং তাদের লার্ভা। বসন্তÍকালের প্রজনন ঋতুতে ইউরোপ, মধ্য এশিয়া ও সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে পুরুষহাঁসেরা মৃদু স্বরে হিস হিস শব্দে শিস্ দেয় ও স্ত্রীহাঁস জোর গলায় ডাকে: র্কর... র্কর... র্কর...; এবং নল ও লম্বা ঘাসের মধ্যে মাটিতে নল ও নরম পালকের বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো জলপাই রঙের, সংখ্যায় ৬-১৪টি, মাগ ৬.০দ্ধ ৪.২ সেমি।
বিস্তৃতি: পাতি ভুতিহাঁস বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের নদী, হাওর ও বিলে বিচরণ করে। আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। এশিয়া মহাদেশে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন ও ফিলিপাইনে রয়েছে।
অবস্থা: পাতি ভুতিহাঁস বিশ্বব্যাপী বিপদমুক্ত পাখি। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে একে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: পাতি ভুতিহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বানিয়ো সিন্ধুবিহঙ্গ (গ্রীক: ধরঃযঁরধ = সামুদ্রিক পাখি - এরিস্টটলের উল্লেখানুসারে ; ল্যাটিন: ভবৎরহঁং = বন্য)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

০৩৯. অুঃযুধ ভঁষরমঁষধ (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: অহধং ভঁষরমঁষধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: টিকি হাঁস, বামুনিয়া হাঁস (আই)
ইংরেজি নাম: ঞঁভঃবফ উঁপশ (ঞঁভঃবফ চড়পযধৎফ)

বর্ণনা: টিকি হাঁস মাঝারি আকারের ঝুটিয়াল হাঁস (দৈর্ঘ্য ৪৩ সেমি, ওজন ৭৫০ গ্রাম, ডানা ২০ সেমি, ঠোঁট ৪ সেমি, পা ৩.৫ সেমি, লেজ ৫.৫ সেমি)। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের পিঠ চকচকে কালো ও দেহতল সাদা দেখায়; মাথার চূড়ায় স্পষ্ট সাদা ফোঁটা, মাথা ও ঘাড় ঘন কালো এবং বগল সাদা; মাথার পেছনে বড় ঝুলন্তÍ ঝুটি থাকে; লেজ, বুক ও অবসারণী কালো; ওড়ার সময় ডানার প্রশ¯ সাদা ছোপ ও অনিয়মিত প্রান্তÍদেশ চোখে পড়ে। কালো নখ ও আগাসহ ঠোঁট কালচে ফ্যাকাসে; চোখ উজ্জ্বল হলুদ; কালো আঙুলের পর্দাসহ পা ও পায়ের পাতায় নীলচে-শ্লেট রঙ। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষপাখির বগল ধূসরাভ, মাথা ও বুক বাদামি-কালো, চূড়া খাটো এবং থুতুনি ও গলায় সাদা রঙ থাকে। স্ত্রীহাঁসের পিঠ ঘন বাদামি এবং কপালে ও ঠোঁটের গোড়ায় কম-বেশি সাদা; ঝুটিসহ কালচে বাদামি মাথা ও ঘাড়; ডানার সাদা ডোরা কম বিস্তৃত।
স্বভাব: টিকি হাঁস হাওর, বিল, নদী, জলাধার ও অন্যান্য উন্ম ুক্ত জলাভূমিতে বিচরণ করে; শীতের আবাসে বড় বড় ঝাঁকে দেখা যায়, সাধরণত পানকৌÍড়ি ও নানা জাতের হাঁসের দলে মিশে থাকে। ডুব দিয়ে পানির নিচে গিয়ে জলজ লতাপাতা থেকে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদের পাতা, কচিকা- ও বীজ এবং পোকামাকড়, লার্ভা, কেঁচো, চিংড়ি, শামুক, ব্যাঙ এবং ছোট মাছ। মাঝে মাঝে এরা কর্কশ গলায় ডাকে: হু-ওওও... এবং ওড়ার সময় মৃদু বা শুষ্ক কন্ঠে ডাকে : র্গের ...। মে মাসে উত্তর ইউরোপ থেকে সাইবেরিয়া পর্যন্তÍ এদের প্রজনন চলে; এবং নদীতীরে বা নির্জন দ্বীপে লতাপাতার বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৮-১১টি; ২৩-২৮ দিনে ডিম ফোটে; ৪৫-৫০ দিনে ছানার গায়ে ওড়ার পালক গজায়।
বিস্তৃতি: টিকি হাঁস বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে সব বিভাগের মিঠাপানির আর্দ্রভূমিতে দেখা যায়। ইউরোপ, আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল ও ভারত উপমহাদেশের সব দেশসহ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: টিকি হাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: টিকি হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ গলায় কালিগলা সিন্ধুবিহঙ্গ (গ্রীক: ধরঃযঁরধ = সামুদ্রিক পাখি - এরিস্টটলের উল্লেখানুসারে ; ল্যাটিন: ভঁষরমড় = কালি, মঁষধ = গলা)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

০৪০. অুঃযুধ সধৎরষধ (খরহহধবঁং, ১৭৬১)
সমনাম: অহধং সধৎরষধ খরহহধবঁং, ১৭৬১
বাংলা নাম: বড় স্কপ
ইংরেজি নাম: এৎবধঃবৎ ঝপধঁঢ় (ঝপধঁঢ় উঁপশ)

বর্ণনা: বড় স্কপ বাদামি রঙের বড় মাথাওয়ালা হাঁস (দৈর্ঘ্য ৪৬ সেমি, ওজন ১ কেজি, ডানা ২২ সেমি, ঠোঁট ৪.৩ সেমি, পা ৩.৫ সেমি, লেজ ৫.৫ সেমি)। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের মাথা ও লেজ ছাড়া পিঠ ধূসর এবং দেহতল বিশেষ করে বুকের নিচের অংশ ও বগল সাদা; কালচে মাথায় সবুজ ও বেগুনি আভা; ঠোঁট কালো, ঠোঁটের ‘কাঁটা’ ধূসর নীল; চোখ সোনালী ও হলুদে মেশানো; কালচে পায়ের পর্দাসহ পা ও পায়ের পাতা ধূসরাভ-নীল। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসের মাথা, ঘাড় ও বুক বাদামি-কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষহাঁসের দেহে ফুটকি থাকে; হালকা নানা রঙের ছাপসহ মাথা ও ঘাড় কালচে বাদামি; বুক পীতাভ-বাদামি, বগল বাদামি ও পেট সাদাটে বর্ণের। স্ত্রীহাঁসের পিঠ ও বগল ধূসর-সাদা; কপালে ও ঠোঁটের গোড়ার চারদিকে স্পষ্ট সাদা পট্টি রয়েছে। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে অ. স. সধৎরষধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: বড় স্কপ হাওর, বিল, হ্রদ, নদী ও উপকুলের লেগুনে বিচরণ করে; শীতের আবাসে নানা জাতের হাঁসের ঝাঁকে মিশে থাকে। সাঁতার কেটে, মাথা ডুবিয়ে অথবা ডুব দিয়ে পানির নিচে গিয়ে জলজ উদ্ভিদ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে শামুক, ঝিনুক, জলজ পোকামাকড়, বীজ ও জলজ উদ্ভিদ। বসন্তেÍ প্রজননকালে তুন্দ্রাঞ্চলে পুরুষ হাঁস কোমল গলায় শিস দেয় এবং স্ত্রীহাঁস যান্তি¿ক শব্দে ডাকে: র্আর-র্আর-র্আর...; এবং মাটিতে বাটির মত খাদওয়ালা গর্ত করে তাতে ঘাস দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম বাদামি-জলপাই ও পীত রঙের, সংখ্যায় ৫-১৩টি; মাপ ৬.২দ্ধ৪.৩ সে,মি। ২৩-২৭ দিনে ডিম ফোটে; এবং ৪০-৪৫ দিনে ছানার ডানায় ওড়ার পালক গজায়।
বিস্তৃতি: বড় স্কপ বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; শীতকালে সিলেট বিভাগের টাঙ্গুয়া ও এর কাছাকাছি হাওরে মাঝে মাঝে দেখা যায়। আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায় বিস্তৃত। এশিয়াতে ভারত ও পাকিস্তানে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বড় স্কপ বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে একে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: বড় স্কপের বৈজ্ঞানিক নাম অুঃযুধ সধৎরষধ- এর অর্থ ধূসর সিন্ধুবিহঙ্গ (গ্রীক: ধরঃযঁরধ = সামুদ্রিক পাখি, এরিস্টটলের উল্লেখানুসারে ; সধৎরষব = ধূসর) ।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

০৪১. অুঃযুধ হুৎড়পধ (এহৃষফবহংঃব্ধফঃ, ১৭৭০)
সমনাম: অহধং হুৎড়পধ এহৃষফবহংঃব্ধফঃ, ১৭৭০
বাংলা নাম: মরচেরঙ ভুতিহাঁস
ইংরেজি নাম: ঋবৎৎঁমরহড়ঁং উঁপশ (ঋবৎৎঁমরহড়ঁং চড়পযধৎফ, ডযরঃব-বুবফ চড়পযধৎফ)

বর্ণনা: মরচেরঙ ভুতিহাঁস তামাটে মাথা,বুক ও বগলওয়ালা কালচে বাদামি হাঁস (দৈর্ঘ্য ৪১ সেমি, ওজন ৬০০ গ্রাম, ডানা ১৮.৫ সেমি, ঠোঁট ৩.৯ সেমি, পা ৩.১ সেমি, লেজ ৫.৫ সেমি)। প্রজননশীল পুরুষহাঁসের পিঠ ঘন বাদামি। মাথা, ঘাড় ও বুক অতি তামাটে এবং লেজতলের কোভার্ট সাদা। ঠোঁট অনুজ্জ্বল স্লেট-রঙের বা নীলচে-কালো। চোখ সাদা বা হলুদ। পা ও পায়ের পাতা ধূসর বা সবুজ,তবে মধ্যে মধ্যে সন্ধিস্থলে চিতি দেখা যায়। অপ্রজননশীল পুরুষহাঁসের মাথা, ঘাড়,বুক ও বগল অনুজ্জ^ল তামাটে এবং চোখ কালচে। স্ত্রীহাঁসের অনুজ্জ্বল তামাটে-বাদামি মাথা,ঘাড় ও বুক ছাড়া অপ্রজননশীল পুরুষহাঁসের সঙ্গে চেহারার কোন পার্থক্য নেই। উভয় হাঁসেরই
ডানায় সাদা ডোরা ও পার্থক্যসূচক অঙ্গ পেট সাদা। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের চেহারা স্ত্রীহাঁসের মত হলেও তুলনামূলকভাবে বেশ বাদামি।
স্বভাব: মরচেরঙ ভুতিহাঁস হাওর, বিল, নদী, মিঠাপানির ডোবা, জলাধার ও লেগুনে বিচরণ করে; শীতের আবাসে বড় বড় দলে থাকে এবং প্রায়ই নানা জাতের হাঁসের বড় দলে দেখা যায়। সাঁতার কেটে, মাথা ডুবিয়ে ও ডুব দিয়ে পানির নিচে গিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদের কচিকা-, কন্দ, পাতা, বীজ, কেঁচো, জলজ পোকামাকড়, লার্ভা, চিংড়ি, ইত্যাদি। শীতের আবাসে এরা কদাচিৎ কর্কশ গলায় ডাকে: কেররর..। মে-জুলাই মাসের প্রজনন ঋতুতে মধ্য ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় নলবনে পানির ধারে নল ও উদ্ভিদের স্তুূপ বানিয়ে তার ওপর সরু ঘাস ও কোমল পালকের বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ; সংখ্যায় ৬-১২টি; মাপ ৫.১ ৩.৭ সেমি। ২৫-২৭ দিনে ডিম ফোটে এবং ৫৫-৬০ দিনে ছানারা উড়তে পারে।
বিস্তৃতি: মরচেরঙ ভুতিহাঁস বাংলাদেশে সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতকালে বরিশাল, চট্টগ্রাম,ঢাকা ও সিলেট বিভাগের হাওর ও বিলে বিচরণ করে। আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়া মহাদেশে তুর্কি, রাশিয়া, ইরান, আরব, আফগানিস্তান, চিন, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল,ভুটান ও মালদ্বীপে রয়েছে।
অবস্থা: মরচেরঙ ভুতিহাঁস বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত পাখি। এ প্রজাতিটিকে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: মরচেরঙ ভুতিহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হাঁস (গ্রীক: ধরঃযঁরধ = সামুদ্রিক পাখি - এরিস্টটলের উল্লেখানুসারে ; রাশিয়ান: হুৎড়পধ = হাঁস) ।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান ]

গণ: ইঁপবঢ়যধষধ ইধরৎফ, ১৮৫৮
মাঝারি আকারের হাঁস; ঠোঁটের গোড়া যত চওড়া তার বেশি উঁচু, আগা কম চ্যাপ্টা, শেষটা গোলাকার; নাক ঠোঁটের গোড়ার চেয়ে আগার কাছে; পা খাটো; পায়ের পিছনের আঙুল সুগঠিত ও প্রশস্ত পর্দাযুক্ত; পা শরীরের বেশ পেছনে, ফলে হাঁটতে অসুবিধে হয়; ডানা সুচালো; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় পালকের লম্বাটে লেজ; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য আছে।
পৃথিবীতে ৩ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৪২. ইঁপবঢ়যধষধ পষধহমঁষধ (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: অহধং পষধহমঁষধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: পাতি সোনাচোখ
ইংরেজি নাম: ঈড়সসড়হ এড়ষফবহবুব (এড়ষফবহবুব উঁপশ, এড়ষফবহবুব)

বর্ণনা: পাতি সোনাচোখ মাঝারি আকারের ডুবুরি হাঁস (দৈর্ঘ্য ৪৬ সেমি, ওজন ৮০০ গ্রাম, ডানা ২১ সেমি, ঠোঁট ৩ সেমি, পা ৩.৬ সেমি, লেজ ৮.৫ সেমি)। প্রজনন ঋতুতে পুরুষহাঁসের পিঠ পাকরা ও কালো লেজ ছাড়া দেহতল সাদা; মাথা কালচে-সবুজ; পিঠ, ডানা ও লেজ কালো এবং মুখে সাদা পট্টি রয়েছে; ডানার মধ্য-পালক, বুক, দেহপার্শ্ব ও পেট উজ্জ্বল সাদা। এর ঠোঁট কালো; চোখ সোনালী; পা ও পায়ের পাতা হলুদ বা কমলা। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসের দেহ কালচে; ডানায় সাদা পট্টি; মাথা চকলেট বাদামি ও লেজ স্লেট-ধূসর। স্ত্রীপাখির দেহ ধূসর; মাথা বাদামি; ও কালো ঠোঁটের নখের পরের অংশে হলুদ পট্টি রয়েছে; চোখ ফ্যাকাসে হলুদ এবং পা ও পায়ের পাতা বাদামি হলুদে মেশানো। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ই. প. পষধহমঁষধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: পাতি সোনাচোখ হ্রদ, নদী, লেগুন, উপসাগর ও পোতাশ্রয়ে বিচরণ করে; সচরাচর ছোট ঝাঁকে দেখা যায়। অগভীর পানিতে সাঁতার কেটে এরা ধীর গতির শিকার ধরে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে শামুক, চিংড়ি জাতীয় প্রাণী ও জলজ পোকামাকড়। খাটো ও সুচালো ডানা ঝাপটে এরা প্লত ওড়ে চলে ও ওড়ার সময় শিস দেয়; এবং প্রজনন ঋতুতে উঁচু ও কর্কশ কণ্ঠে ‘গান’ গায়: স্পির,স্পির... অথবা (কে)-কুয়েহ...। গ্রীষ্মকালে প্রজনন ঋতুতে সাইবেরিয়ায় গাছের প্রাকৃতিক গর্তে স্ত্রীহাঁসের কোমল পালক বিছিয়ে বাসা বানায় ও ডিম পাড়ে। ডিমগুলো চকচকে সবুজ; সংখ্যায় ৬-১৫টি; মাপ ৫.৫ ৪.২ সেমি।
বিস্তৃতি: পাতি সোনাচোখ বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি: বিশ শতকের গোড়ার দিকে শীতকালে সিলেট বিভাগের হাওরে দেখতে পাওয়ার একটি তথ্য রয়েছে। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে পাওয়া যায়।
অবস্থা: পাতি সোনাচোখ বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। এই প্রজাতিটিকে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: পাতি সোনাচোখের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সরব ষাঁড়মাথা হাঁস (গ্রীক: নড়ঁশবঢ়যধষড়ং = ষাঁড়ের মাথা-আকৃতি ; ল্যাটিন: পষধহমবৎব = পুনঃশব্দ উৎপাদন) ।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: গবৎমবষষঁং ঝবষনু, ১৮৪০
মাঝারি আকারের হাঁস; ঘাড়ে ঝুলানো ঝুঁটি; ঠোঁট মাথার চেয়ে ছোট, ক্রমশ সরু, ঠোঁটের প্রান্তেÍর কাঁটাটি বড়শির মত; ঠোঁটের ভিতর দিক খাঁজ কাটা; নাক বড় ও আয়তাকার; পা বেশ ছোট ও দেহের অনেক পিছনে থাকে; পায়ের পাতা ও পর্দা বড়; লেজ লম্বা, প্রান্ত গোলাকার মাঝারি দৈর্ঘ্যরে ও গোলাকার; পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় পার্থক্য আছে।
পৃথিবীতে ১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৪৩. গবৎমবষষঁং ধষনবষষঁং (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: গবৎমঁং সবৎমধহংবৎ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: স্মিউ হাঁস
ইংরেজি নাম: ঝসবি

বর্ণনা: স্মিউ হাঁস বর্গাকার মাথাওয়ালা খুদে হাঁস (দৈর্ঘ্য ৪৬ সেমি, ওজন ৬৮০ গ্রাম, ডানা ১৯ সেমি, ঠোঁট ৩ সেমি, পা ৩ সেমি, লেজ ৭.৫ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের মধ্যে চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের ঠোঁটের গোড়া ও চোখের মাঝামাঝি অংশ কালো, ঘাড়ে কালো ফেটা এবং সাদা ন্যুচাল ঝুঁটি পুরো দেহ সাদা; ডানা কালচে ও বুকের পাশে কালো ডোরা; দেহের পাশ ও লেজ ধূসর; চোখ লালচে এবং ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে বর্ণের। স্ত্রীহাঁসের তামাটে-লাল টুপি; ঘাড় ও ঝুঁটি ছাড়া ধূসর-বাদামি দেখায়; গলা সাদা ও পেট সাদাটে; সাদাটে নখর সমেত ঠোঁট সীসা ও ধূসর রঙে মেশানো; কালো পায়ের পর্দাসহ পা ও পায়ের পাতা সবুজ। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষহাঁসের কালো পাছা ও ডানার মধ্য-পালকের ওপর বড় সাদা পট্টি ছাড়া দেখতে স্ত্রীহাঁসের মত। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস পা-ুর বর্ণের।
স্বভাব: স্মিউ হাঁস হাওর, বিল, নদী, হ্রদও জলাধারে বিচরণ করে; ছোট ছোট দলে দেখা যায়। পানির তলে ডুব দিয়ে এরা খাবার খোঁজে; আহার্য তালিকায় রয়েছে চিংড়ি ও শামুক-জাতীয় প্রাণী, জলজ পোকামাকড়, লার্ভা, কেঁচো এবং লতাপাতা। মুহুর্মুহু সুচালো ডানা চালিয়ে এরা প্লত শব্দহীনভাবে ওড়ে চলে; প্রজনন ঋতু ছাড়া সাধারণত নীরব থাকে; কদাচ ব্যাঙের মত নিচু গলায় ডাকে অথবা শিস দেয়। এপ্রিল-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে সাইবেরিয়ায় পানির কাছাকাছি গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বা কৃত্রিম বাক্সে বাসা তৈরি করে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ বা হালকা পীতাভ; সংখ্যায় ৭-৯টি, মাপ ৫.২৩.৭ সেমি। ২৬-২৮ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: স্মিউ হাঁস বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; শীতকালে সিলেট বিভাগের হাওরে দেখা পাওয়ার একটি তথ্য রয়েছে। ইওরেশিয়ায় বিশেষ করে ইউরোপ থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চিন ও জাপানে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: স্মিউ হাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: স্মিউ হাঁসের বৈজ্ঞানিক নাম গবৎমবষষঁং ধষনবষষঁং -এর অর্থ সাদা জলার পাখি (ল্যাটিন: সবৎমঁং = জলার পাখি, প্লিনির উল্লেখানুসারে, ধষনঁং = সাদা ) ।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান ]

গণ: গবৎমঁং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
মাঝারি আকারের হাঁস, অনেকটা স্মিউ হাঁেসর মত; লম্বাটে শরীর; লম্বা মাথা; আরো লম্বা ও দীর্ঘ ঠোঁট, সামনের অংশ বড়শির মত বাঁকানো; ঘাড়ের পিছনে ঝুটি; ডুবুরি হিসেবে দেহের অন্যান্য বিশেষত্ব আছে।
পৃথিবীতে ৫ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৪৪. গবৎমঁং সবৎমধহংবৎ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: পাতি মার্গেঞ্জার
ইংরেজি নাম: ঈড়সসড়হ গবৎমধহংবৎ

বর্ণনা: পাতি মার্গেঞ্জার লম্বা দেহ ও লম্বা লেজওয়ালা ছিপছিপে হাঁস (দৈর্ঘ্য ৬৬ সেমি, ওজন ১.২ কেজি, ডানা ২৭ সেমি, ঠোঁট ৫.৩ সেমি, পা ৪.৮ সেমি, লেজ ১১ সেমি)। প্রজননকালে পুরুষহাঁসের পিঠ পাকরা ও দেহতল সাদা; মাথা ঝলমলে সবুজাভ-কালো; ঘাড় সাদা; পিঠের নিচে সাদা অংশ, কোমর, লেজউপরি-ঢাকনি ধূসর; রূপালি-বাদামি লেজ; পাটল বর্ণের আভাসহ সাদা বগল; ডানার প্রান্তÍ-পালক কালচে ও ডানার ভেতরের অংশ সাদা। স্ত্রীহাঁসের বগলে সাদা ডোরা এবং সাদাটে পেট ও ডানার মধ্য-পালক নীলচে, মধ্যে ধূসর-বাদামি ছিটা-দাগ থাকে; মাথা, ঝুঁটি ও ঘাড় ঘন তামাটে; থুতনি সাদা ও লেজ ধূসর-বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের উভয়ের চোখ এবং পা ও পায়ের পাতা লাল; উজ্জ্বল লাল-কমলা রঙের সরু ঠোঁট; মাছ ধরার জন্য ঠোঁটের ধারে খাঁজ ও প্রান্তÍ বড়শির মত বাঁকানো থাকে। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে গ. স. সবৎমধহংবৎ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: পাতি মার্গেঞ্জার প্লত প্রবহমান নদী ও নালায় বিচরণ করে; ছোট দলে বা বড় ঝাঁকে দেখা যায়। স্রোতের বিপরীতে পানির নিচে ডুব দিয়ে এরা শিকার ধরে খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, জলজ পোকামাকড়, চিংড়ি; শামুক-জাতীয় প্রাণী, কেঁচো, ব্যাঙ, পাখি, খুদে স্তন্যপায়ী ও লতাপাতা। শীতের আবাসে এরা কদাচিৎ ডাকে। জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে সাইবেরিয়া ও তিব্বতে পুরুষহাঁস ভাঙা, কর্কশ কণ্ঠে ব্যাঙের মত ডাকে: ক্রেহ-ক্রেহ ...; এবং স্ত্রীহাঁস একটি মাত্র শব্দে ডাকে: গ্র“ক..। গাছের প্রাকৃতিক গর্তে এরা আবর্জনা ও কোমল পালকের বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ; সংখ্যায় ৬-১৭টি; মাপ ৬.৪৪.৪ সেমি। ২৮-৩২ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: পাতি মার্গেঞ্জার বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; শীতকালে ঢাকা বিভাগের যমুনা নদীতে দেখা গেছে; সিলেট বিভাগেও থাকার একটি পুরোনো তথ্য রয়েছে। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল ও ভূটানে পাওয়া যায়।
অবস্থা: পাতি মার্গেঞ্জার বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। এই প্রজাতিটিকে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: পাতি মার্গেঞ্জারের বৈজ্ঞানিক নাম গবৎমঁং সবৎমধহংবৎ -এর অর্থ রাজহংসী (ল্যাটিন: সবৎমঁং = জলার পাখি, প্লিনির উল্লেখানুসারে, সবৎমধহংবৎ = রাজহংসী) ।

[ মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান ]

পরিবার: ঞটজঘওঈওউঅঊ
নাটাবটের
ছোট ও গোল দেহের ভূচর পাখি; খাটো পা, পায়ের পিছনে আঙুল নেই; লেজ খুব ছোট; লুকিয়ে চলে; প্রাত্যহিক ধূলিস্নানে অভ্য¯; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির রঙয়ে পার্থক্য থাকে; স্ত্রীপাখিরা বহুগামী।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ১৭ গণে ২১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ গণে ৩ প্রজাতি

গণ: ঞঁৎহরী ইড়হহধঃবৎৎব, ১৭৯১
খুদে ভূচর পাখি; খাদ্যথলি (পৎড়ঢ়) নেই; পায়ের পিছনে আঙুল নেই; ছোট পা; লেজ আরো ছোট; পুরুষপাখির চেয়ে স্ত্রী লম্বা ও উজ্জ^লতর; স্ত্রী বহুগামী।
পৃথিবীতে ১৫ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি

০৪৫. ঞঁৎহরী ংঁংপরঃধঃড়ৎ (এসবষরহ, ১৭৮৯)
সমনাম: ঞবঃৎধড় ংঁংপরঃধঃড়ৎ এসবষরহ, ১৭৮৯
বাংলা নাম: দাগি নাটাবটের, বটের (আলী)
ইংরেজি নাম: ইধৎৎবফ ইঁঃঃড়হয়ঁধরষ (ঈড়সসড়হ ইঁংঃধৎফ-ছঁধরষ, ইধৎৎবফ ইঁংঃধৎফ-ছঁধরষ)

বর্ণনা: দাগি নাটাবটের ছোট ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১৫ সেমি, ওজন ৫৫ গ্রাম, ডানা ৪ সেমি, ঠোঁট ১.৫ সেমি, পা ২.৩ সেমি, লেজ ৩.৫ সেমি)। স্ত্রীপাখি পুরুষপাখির চেয়ে বেশি রঙ্গীন। পুরুষপাখির পিঠ লালচে-বাদামি ও কালো; ডানার পালক-ঢাকনিতে খাড়া, কালো ও ঈষৎ পীত বর্ণের ডোরা রয়েছে; থুতনি ও গলা সাদাটে; বুক ও ঘাড়ের পাশে পীতাভ ও কালো ডোরা; বগলে কালো ডোরাসহ দেহতল উষ্ণ কমলা-লাল। স্ত্রীপাখির থুতনি, গলা ও বুকের ঠিক মাঝখানটা কালচে; বুকের পাশ ও তলদেশে কালো ও পীতাভ ডোরা থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের চোখ সাদা বা হলদে; ঠাঁট নীলচে-স্লেট রঙ, গোড়া ঘন বাদামি; পা ও পায়ের পাতা সীসার মত ধূসর। ১৮টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঞ. ং. ঢ়ষঁসনরঢ়বং ও ঞ. ং. নবহমধষবহংরং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: দাগি নাটাবটের ক্ষুদ্র ঝোপ ও জঙ্গলসহ তৃণভূমি, বনপ্রান্তÍ ও খামারে বিচরণ করে; একা অথবা জোড়ায় থাকতে দেখা যায়। এরা মাটিতে হেঁটে ঝরাপাতা উল্টে খাবার খুঁজে বেড়ায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, শস্যদানা, কচিকা-, উই পোকা ও পিঁপড়া। এরা সাধারণত একই জায়গায় দিনের পর দিন খাবার খেতে আসে; উড়লে পাখায় বোঁ বোঁ শব্দ হয়; হঠাৎ উঁচু স্বরে ডেকে ওঠে: ঢুরর-র-র-র-র ...। জুন-অক্টোবর মাসে প্রজনন ঋতুতে ঘাসবন, ঝোপ-জঙ্গল বা শস্যক্ষেতের মাটিতে ঘাস দিয়ে বাসা বানিয়ে এরা পাড়ে। ডিমগুলো ধূসর-সাদা ছোট দাগ ও ফুসকুড়িসহ লালচে-বাদামি বা কালচে-বেগুনি; সংখ্যায় ৪টি। ১৫দিনে ডিম ফোটে। পুরুষপাখি ডিমে তা দেওয়া থেকে শুরু করে গৃহস্থালির যাবতীয় কাজ একা করে।
বিস্তৃতি: দাগি নাটাবটের বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের বনের ধারে এবং গ্রামে পাওয়া যায়। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ কেবল এশিয়া মহাদেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: দাগি নাটাবটের বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: দাগি নাটাবটের পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সতর্ক তিতির (ল্যাটিন: পড়ঃঁৎহরী = তিতির, ংঁংপরঃধঃড়ৎ = সতর্ক ) ।
[ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা]

০৪৬. ঞঁৎহরী ংুষাধঃরপধ (উবংভড়হঃধরহবং, ১৭৮৭)
সমনাম: ঞবঃৎধড় ংুষাধঃরপঁং উবংভড়হঃধরহবং, ১৭৮৭
বাংলা নাম: ছোট নাটাবটের, ছোট বটের (আলী)
ইংরেজি নাম: কঁৎৎরপযধহব ইঁঃঃড়হয়ঁধরষ (ঝসধষষ ইঁঃঃড়হয়ঁধরষ)

বর্ণনা: ছোট নাটাবটের খাটো, সুচালো লেজওয়ালা খুদে ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১৩ সেমি, ওজন ৪০ গ্রাম, ডানা ৭ সেমি, ঠোঁট ১ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৩.৫ সেমি)। স্ত্রীপাখি পুরুষপাখির চেয়ে বড় কিন্ত‘ দেখতে অভিন্ন। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ লালচে কালো; দেহতল পীতাভ সাদা; পিঠে বিশেষ করে কাঁধ-ঢাকনিতে প্রশস্ত পীতাভ ডোরা আছে; মাথার চাঁদি বাদামি ও মরচে রঙের ঘাড়; গলা, পেট, অবসারণী ও লেজতল-ঢাকনি সাদা; বুক কমলা-পীতাভ এবং বগলে কালো ও তামাটে চিতি; চোখ হালকা হলুদ ও ঠোঁট ফ্যাকাসে; পা ও পায়ের পাতা পা-ুর ও ধূসর নীল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ লালচে-বাদামি, দেহতল ফ্যাকাসে-পীতাভ এবং ঘাড়ের পাশে ও বুকে কালো চিতি রয়েছে। ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঞ. ং. ফঁংংঁসরবৎ বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: ছোট নাটাবটের তৃণভূমি ও ঘাসে ভরা আবাদি জমির কিনারার ক্ষুদ্র ঝোঁপে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় থাকে। মাটিতে হেঁটে ঝরাপাতা উল্টে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, শস্যদানা, কচিকা-, উইপোকা, কালো পিঁপড়া ও অন্যান্য পোকামাকড়। নিজস্ব বিচরণভূমিতে এরা অন্য পাখির অনুপ্রবেশে বাধা দেয়। সারা বছরই এদের প্রজনন ঋতু, তবে বর্ষা মৌÍসুমে বেশি; পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখিরা গর্জনের মত ডাকে: (গ্র“ গ্র“) ডরর-র-র-র-র...হু-ওও-ওন...হু-ওও-ওন...। মাটি সামান্য খুঁড়ে নিয়ে ঘাস ও ঝোঁপে সেটা আবৃত করে এরা বাসা বানায় এবং বাসার প্রবেশ পথের ঘাস বাকা করে এক সারি তোরণ বানায়। স্ত্রীপাখি ধূসরাভ ৪টি ডিম পাড়ে, মাপ ২.১১.৭ সেমি। পুরুষপাখি একাই ডিমে তা দেয় ও ছানা লালন করে; ১২ দিনে ডিম ফোটে; ১৪-১৬ দিনে ছানার গায়ে ওড়ার পালক গজায়।
বিস্তৃতি: ছোট নাটাবটের বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; ঢাকা বিভাগের তৃণভূমি ও গ্রামে পাওয়া যেত, এখন নেই । এখন আফ্রিকা ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়া মহাদেশে পাকিস্তান, ভারত, চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনে পাওয়া যায়।
অবস্থা: ছোট নাটাবটের বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: ছোট নাটাবটের পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কাঠ-তিতির (ল্যাটিন: পড়ঃঁৎহরী = তিতির, ংরষাধঃরপঁং = কাঠ )।

[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]

০৪৭. ঞঁৎহরী ঃধহশর ইষুঃয, ১৮৪৩
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: হলদেপা নাটাবটের, বটের (আলী)
ইংরেজি নাম: ণবষষড়-িষবমমবফ ইঁঃঃড়হয়ঁধরষ (ইঁঃঃড়হ ছঁধরষ)

বর্ণনা: হলদেপা নাটাবটের খুদে গোলগাল দেহের হলুদ পা ও হলুদ ঠোঁটওয়ালা ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১৫ সেমি, ওজন ৪০ গ্রাম, ডানা ৮ সেমি, ঠোঁট ১.৪ সেমি, পা ২.৪ সেমি, লেজ ৩ সেমি)। প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখির পিঠ বাদামি-ধূসর ও দেহতল পীতাভ। মাথার চাঁদি পীতাভ ডোরাসহ কালচে। থুতুনি ও গলা সাদাটে। পীতাভ ডানার কোর্ভাট, পাছা, স্ক্যাপুলার, পিঠ, বুকের পাশ ও বগলে স্পষ্ট কালো চিতি রয়েছে। প্রজননক্ষম স্ত্রীপাখির ঘাড় লাল এক রঙা। গলা, ঘাড়ের পাশ ও বুক লাল-কমলা। অপ্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীপাখির মাথার চাঁদিতে পীতাভ ডোরা, লাল-ধূসর ঘাড়, ধূসরাভ পাছা এবং কালো ও লাল স্ক্যাপুলার। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের চোখ সাদা এবং ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখর হলুদ। ২টি উপ-প্রজাতি ঞ. ঃ. ঃধহশর ও ঞ. ঃ. নষধহভড়ৎফরর উভয়ই বাংলাদেশে পাওয়া যেতে পারে।
স্বভাব: হলদেপা নাটাবটের ক্ষুদ্র ঝোপ ও জঙ্গলসহ তৃণভূমি, বনপ্রান্তÍ, বাগান ও খামারে বিচরণ করে; সাধারনত জোড়ায় থাকতে দেখা যায়। ধীরে সুস্থে ও সাবধানে হেঁটে ও মাটিতে ঠোকর দিয়ে এবং ঝোপের নিচে ঝরাপাতা উল্টে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, শস্যদানা, কচিকা-, পোকামাকড়, পিঁপড়া ও উইপোকা। মাঝে মাঝে এরা জোর গলায় ডাকে: হু-ওন.. ; প্রজননকালে দিনরাত ডাকে। মার্চ-নভেম্বর মাসে প্রজনন ঋতু। ঘাসবনে অথবা ক্ষুদ্র ঝোপের নিচে মাটিতে এরা ঘাস দিয়ে গম্বুজ আকৃতির বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ধূসরাভ সাদার মধ্যে ছোট ছোট হলদে-বাদামি ছিটা-দাগ; সংখ্যায় ৪টি; মাপ ২.২২.০ সে.মি। পুরুষপাখি একাই ডিমে তা দেয় ও ছানা লালন করে । ১২ দিনে ডিম ফোটে; ১৪-১৬ দিনে ছানার গায়ে ওড়ার পালক গজায়।
বিস্তৃতি: হলদেপা নাটাবটের বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; সম্প্রতি ঢাকা ও সিলেট বিভাগে দেখা গেছে; ১৯ শতকে চট্টগ্রাম বিভাগে ছিল। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, মিয়ানমার , থাইল্যান্ড এবং কোরিয়াসহ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: হলদেপা নাটাবটের বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে একে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: হলদেপা নাটাবটের পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ টংকি-তিতির (ল্যাটিন: পড়ঃঁৎহরী = তিতির, ঃধহশর = টংকি, লেপ্চা ভাষায় কাপাশি পাখি।

[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]

পরিবার: চওঈওউঅঊ
কাঠঠোকরা
ছোট থেকে মাঝারি আকারের বৃক্ষবাসী পাখি; সোজা বাটালির মত ঠোঁট; খাটো পা; লম্বা আঙুল, চার অথবা তিন আঙুল; লম্বা ও শক্ত লেজ, মাঝের পালক দীর্ঘতম; লম্বা জিহ্বা, জিহ্বার আগায় হুল থাকে।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ২৮ গণে ২১৬ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১২ গণে ১৯ প্রজাতি

গণ: ঔুহী খরহহধবঁং, ১৭৫৮
মাটিতে চরতে অভ্য¯; মাঝারি আকারের ঠোঁট ক্রমশ সরু, চাপা ও সুচালো; নাসিকা বড়; ডানার প্রান্ত চোখা; ডানা সুচালো, পালক কোমল; লেজ বর্গাকার, ডানার দৈর্ঘ্যের তিন-চতুর্থাংশ বা বেশী, লেজের পালক নমনীয়।
পৃথিবীতে ২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৪৮. ঔুহী ঃড়ৎয়ঁরষষধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: ইউরেশীয় ঘাড়ব্যথা
ইংরেজি নাম: ঊঁৎধংরধহ ডৎুহবপশ (ডৎুহবপশ)

বর্ণনা: ইউরেশীয় ঘাড়ব্যথা লম্বা লেজ ওয়ালা খুদে বাদামি-ধূসর পাখি (দৈর্ঘ্য ১৯ সেমি, ডানা ৮.৫ সেমি, ঠোঁট ১.৬ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৬.৮ সেমি)। এর পিঠ ধূসর ও দেহতলে পীতাভ ডোরা; দেহতলে লাল-পীতাভের আভা; কালচে চক্ষু-রেখা ঘাড়ের মাঝ বরাবর চলে গেছে, বাদামি ডানা সূক্ষ্ম দাগে ভরা এবং কালো, পীতাভ ও ধূসর চিতি ও ডোরা আছে; পীতাভ গলায় ও বুকে কালো ডোরা; বগলে ও পেটে কালো লাইন; ডানায় সাদাটে তীর-ফলক চিহ্ন এবং ৩-৪টি স্পষ্ট কালচে ফেটা আছে। ওড়ার সময় লম্বা ও প্রশস্ত লেজ এক চেনা যায়; এর চোখ পিঙ্গল-বাদামি এবং ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। ৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে কেবল ঔ. ঃ. ঃড়ৎয়ঁরষষধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: ইউরেশীয় ঘাড়ব্যথা ঝোপঝাড়, মরুভূমি-প্রায় প্রান্তÍর, বনপ্রান্তÍ, বাগান, খামার ও জমির আইলে বিচরণ করে; শীতের আবাসে একে সাধারণত একা থাকতে দেখা যায়। মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে যায় এবং পিঁপড়ার লাইন, উই-ঢিবি, ইত্যাদিতে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, পিঁপড়ার ডিম, পিউপা, উইপোকা, গোবরে পোকা, ইত্যাদি। ভয় পেলে এরা বুক মাটিতে পেট ঠেকিয়ে বসে পড়ে অথবা অনিচ্ছুক ভাবে ঝোপেবা গাছে উড়ে যায় কিন্ত‘ তাড়াতাড়ি মাটিতে ফিরে আসে; পালকের ছদ্মবেশ-সহায়ক রঙের কারণে একে খোলা মাঠে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সহজে এরা উড়তে চায় না, কিন্ত‘ পরিযায়নে এরা একনাগাড়ে ওড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়। শীতের আবাসে এরা মাঝে মাঝে নাকি সুরে ডাকে: চিওন, চিওন, চিওন ...; এবং প্রজনন ঋতুতে বিলাপের সুরে ডাকে: টির-টির-টির...। মে-জুলাই মাসে প্রজননকালে সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল থেকে চীন পর্যন্তÍ এরা ছোট গাছের গর্তে বাসা বাঁধে।
বিস্তৃতি: ইউরেশীয় ঘাড়ব্যথা বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি; শীতে চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়। আফ্রিকা ও ইউরেশীয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়ায় পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান ও জাপানে পাওয়া যায়।
অবস্থা: ইউরেশীয় ঘাড়ব্যথা বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: ইউরেশীয় ঘাড়ব্যথা পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ দৃঢ়-ঘাড় পাখি (গ্রীক: রঁহী = ঘাড়ব্যাথা, ল্যাটিন: ঃড়ৎয়ঁবৎব = ঘোরানো)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: চরপঁসহঁং ঞবসসরহপশ, ১৮২৫
খুব ছোট আকারের কাঠঠোকরা; ঠোঁট চাপা ও সুচালো; শক্ত লোমের মত ঘন পালকে নাসিকা ও থুতুনি ঢাকা থাকে; চোখের চারপাশে পালক থাকে; দেহপালক কোমল ও লম্বাটে; ডানা ও লেজ গোলাকার; আঙুলের সংখ্যা চার।
পৃথিবীতে ২৭ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৪৯. চরপঁসহঁং রহহড়সরহধঃঁং ইঁৎঃড়হ, ১৮৩৬
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: তিলা কুটিকুড়ালি
ইংরেজি নাম: ঝঢ়বপশষবফ চরপঁষবঃ

বর্ণনা: তিলা কুটিকুড়ালি কুঁজো দেহের খুদে কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ১০ সেমি, ডানা ৬ সেমি, ঠোঁট ১.১ সেমি, পা ১.৩ সেমি, লেজ ৩.৩ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ হলদে-সবুজ ও দেহতল সাদাটে; বগলে ছোট দাগ ও বগলের পিছনের দিকের খাড়া চিতি গুলো ডোরায় রূপ নিয়েছে; চোখের উগরে ও নিচে দুটি মোটা সাদা দাগ, তার মধ্যে জলপাই রঙের একটি মোটা দাগ আছে; চোখের নিচের সাদা দাগের তলে কালচে ডোরা আছে। এর চোখ লালচে-বাদামি থেকে বাদামি; ঠোঁট ঘন স্লে¬ট-কালো; পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল ফ্যাকাসে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির মাথার চাঁদির রঙে পার্থক্য আছে: স্ত্রীপাখির চাঁদির পুরোটাই হলুদ-জলপাই; পুরুষপাখির দুরঙা: কপাল ও চাঁদির সামনের অংশ অনুজ্জ্বল কমলা এবং চাঁদির অবশেষ হলুদ-জলপাই। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে চ. র. সধষধুড়ৎঁস বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: তিলা কুটিকুড়ালি প্যারাবন, আর্দ্র পাতাঝরা ও অর্ধ-চিরসবুজ বন ও বাঁশতলের ঝোপেবিচরণ করে; সাধারণত একা ও জোড়ায় দেখা যায়। গাছের চিকন শাখা আঁকড়ে ধরে এবং চারদিকে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, লার্ভা, পিউপা ইত্যাদি। ভোরে ও গোধূলিতে এরা বেশি কর্মচঞ্চল থাকে; মাঝে মাঝে তীক্ষè স্বরে ডাকে: স্পিট, স্পিট... । জানুয়ারি-এপ্রিল মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখিরা শরীর ঝাঁকিয়ে স্ত্রীপাখিকে অনুসরণ করে এবং মরা শাখে বা বাঁশে আঘাত করে: বরর-র-র,বরর-র-র ..; এবং বনের বাঁশে বা ছোট গাছের মরা ডালে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৪টি; মাপ ১.৪´১.২ সেমি। ১১দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: তিলা কুটিকুড়ালি বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; খুলনা বিভাগের প্যারাবনে ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও চীন থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: তিলা কুটিকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: তিলা কুটিকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ নামহীন কাঠঠোকরা (ফ্রেঞ্চ : ঢ়রপঁসহব = কাঠঠোকরা, ল্যাটিন: রহহড়সরহধঃঁং = নামহীন)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: ঝধংরধ ঐড়ফমংড়হ, ১৮৩৭
খুব ছোট কাঠঠোকরা; চোখের চারপাশ পালকহীন; আঙুলের সংখ্যা তিন; লেজ খুব ছোট; নাসিকা ও থুতুনি পালকে ঢাকা থাকে; দেহপালক কোমল ও লম্বাটে; ডানা গোলাকার।
পৃথিবীতে ৩ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৫০. ঝধংরধ ড়পযৎধপবধ ঐড়ফমংড়হ, ১৮৩৬
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি
ইংরেজি নাম: ডযরঃব-নৎড়বিফ চরপঁষবঃ

বর্ণনা: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি কালো লেজ ও সাদা ভ্রু-রেখা আঁকা খুদে কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ৯ সেমি, ওজন ১০ গ্রাম, ডানা ৫.৩ সেমি, ঠোঁট ১.৩ সেমি, পা ১.৫ সেমি, লেজ ২.৩ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতলের পুরোটাই লাল; পিঠ সবুজাভ-জলপাই রঙ; মোটা সাদা ভ্রু-রেখা চোখের পিছন থেকে শুরু হয়েছে; খাটো ও মোটা লেজটি কালো। এর দুইরঙা ঠোঁট: উপরের ঠোঁট কালো ও নিচের ঠোঁট ফ্যাকাশে-ধূসর; চোখ লাল এবং পা ও পায়ের পাতা হলদে-বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখিতে দুটি অতি ক্ষুদ্র অংশে পার্থক্য রয়েছে: পুরুষপাখির কপাল সোনালী-হলূদ কিন্ত‘ স্ত্রীতে লাল এবং পুরুষপাখির চোখের পাশের ত্বক গাঢ় লাল তবে স্ত্রীতে তা ফ্যাকাশে-ম্যাজেন্টা। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতলে পরিবর্তনশীল ধূসর বা সবুজ আভা রয়েছে। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঝ. ড়. ড়পযৎধপবধ বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি প্রশস্ত পাতার অর্ধ-চিরসবুজ বন, পাহাড়ি বন ও বাঁশবনে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় থাকতে দেখা যায়; কদাচিৎ ছোট পতঙ্গভুক পাখির দলে যোগ দিয়ে পোকা শিকার করে। গাছের ডালে, বাঁশে অথবা কঞ্চিতে ঠোকর দিয়ে এরা খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, পিঁপড়ার ডিম, পিউপা ও অন্যান্য পোকামাকড়। মাঝে মাঝে এরা তীক্ষè সুরে ডাকে: চিপ... এবং চি.রররররররররা..। মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে পূর্বরাগের অংশ হিসেবে স্ত্রীপাখি ঝুঁকে বসে ঘাড় মোচড়ায় এবং পুরুষপাখি ডানা ঝাপ্টায়, দৌÍড়ায় ও কিচমিচ শব্দ করে। মিশ্র ঝোপেবা বাঁশ বনে ক্ষয়প্রাপ্ত বাঁশ বা ছোট গাছে গর্ত কেটে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ৩-৪টি; মাপ ১.৫´১.২ সেমি।
বিস্তৃতি: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ এবং বাঁশ বনে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্দোচিনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ খয়রা কাঠঠোকরা (নেপালি : ংধংুধ = কাঠঠোকরা, ল্যাটিন: ড়পযৎধপবধ = মেটে খয়েরি রঙ)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: উবহফৎড়পড়ঢ়ড়ং কড়পয, ১৮১৬
ছোট কাঠঠোকরা; ঠোঁট চিকন, চাপা ও সুচালো; শক্ত, ক্ষুদ্র লোমে নাক ঢাকা; চতুর্থ আঙুল তৃতীয়র চেয়ে লম্বা; লেজের প্রান্তেÍ পালকজোড়া লেজে-ঢাকনির পালকের চেয়ে খাটো।
পৃথিবীতে ২২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি

০৫১. উবহফৎড়পড়ঢ়ড়ং পধহরপধঢ়রষষঁং (ইষুঃয, ১৮৪৫)
সমনাম: চরপঁং পধহরপধঢ়রষষঁং ইষুঃয, ১৮৪৫
বাংলা নাম: মেটেটুপি বাটকুড়ালি
ইংরেজি নাম: এৎবু-পধঢ়ঢ়বফ চুমসু ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ

বর্ণনা: মেটেটুপি বাটকুড়ালি বড় সাদা ভ্রু-রেখা আঁকা খুদে কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ১৪ সেমি, ডানা ৮.৭ সেমি, ঠোঁট ১.৭ সেমি, পা ১.৪ সেমি, লেজ ৪ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ সাদা ডোরাসহ কালচে; দেহতল বাদামি ডোরাসমেত হালকা খয়েরি; চাঁদি ও কপাল মলিন ধূসর; প্রশস্ত সাদাটে ভ্রু-রেখা ফেটার মত ঘাড়ের পাশে নেমে গেছে; ডানায় প্রশস্ত কালো ও সাদা ডোরা; লেজ-ওপর-ঢাকনি ও কোমর কালো; কালো ডোরাসহ থুতনি ও গলা সাদাটে। এর ঠোঁটের কিছুটা শিঙরঙা-বাদামি ও কিছুটা ফ্যাকাসে; চোখ লালচে-বাদামি, পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে ও নখর বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে: পুরুষপাখির মাথার দু পাশে লাল দাগ ও স্ত্রীপাখির দাগা কালো। ১১টি উপ-প্রজাতির মধ্যে উ. প. পধহরপধঢ়রষষঁং কেবল বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: মেটেটুপি বাটকুড়ালি প্যরাবন, গ্রীষ্মম-লীয় অর্ধ-চিরসবুজ বন, পহাড়ি বন ও বাগানে বিচরণ করে; একা অথবা জোড়ায় চড়ে বেড়াতে দেখা যায়। গাছের বাকল জড়িয়ে ধরে ও চিকন ডালে ঠোঁকর দিয়ে এরা আহার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, পোকামাকড়, ফলের ত্বক ও ফুলের মধু। কয়েকটি ওপরমুখি ডালার মিলনস্থলে এরা রাতে থাকে ও খোলা গাছের ডালে জড়িয়ে ধরে সকালে রোদ পোহায়। একটি মাত্র ম্রিয়মাণ সুরে ডাকে: কিক..; এবং তা ছাড়া গাছের ফাঁপা মগডালে আঘাত করে হালকা আওয়াজে ড্রাম বাজায়: টিট-টিট-এরররররর...। এপ্রিল-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে খাড়া চিকন ডালে গর্ত খুঁড়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ৪-৫টি; মাপ ১.৮´১.৪ সেমি। ১২-১৩ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: মেটেটুপি বাটকুড়ালি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা এবং সিলেট বিভাগের পাতাঝরা ও চিরসবুজ বনে এবং প্যারাবনে বিচরণ করে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, চিন ও কোরিয়াসহ দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: মেটেটুপি বাটকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: মেটেটুপি বাটকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ মেটেটুপি কাঠুরে (গ্রিক : ফবহফৎড়হ = গাছ, শড়ঢ়ড়ং = চূর্ণ; ল্যাটিন: পধহঁং = মেটে, পধঢ়রষষঁং = টুপি)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান ]

০৫২. উবহফৎড়পড়ঢ়ড়ং সধপবর (ঠরবরষষড়ঃ, ১৮১৮)
সমনাম: চরপঁং সধপবর ঠরবরষষড়ঃ, ১৮১৮
বাংলা নাম: বাতাবি কাঠকুড়ালি
ইংরেজি নাম: ঋঁষাড়ঁং-নৎবধংঃবফ ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ (ঋঁষাড়ঁং-নৎবধংঃবফ চরবফ ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ)

বর্ণনা: বাতাবি কাঠকুড়ালি কালো কাঁধ-ঢাকনি পড়া পাকরা কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ১৯ সেমি, ওজন ৪৫ গ্রাম, ডানা ১০.৫ সেমি, ঠোঁট ২.৩ সেমি, পা ১.৮ সেমি, লেজ ৬.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতল কালচে সরু ডোরা সমেত পীতাভ লাল-বাদামি; কাঁধ-ঢাকনি কালো; ডানা-ঢাকনিতে সাদা কালো ডোরা আছে; বুকে ও লালচে অবসারণীতে আবছা কালো ডোরাসহ ঘাড়ের উপরিভাগ ও গলা একই রকম ফ্যাকাসে লাল-বাদামি দেখায়। এর চোখের ও ঘাড়ের মাঝের ডোরা কালো; ঠোঁটের রঙ দু’রকমের: ঠোঁটের উপরের অংশ শিঙ-বাদামি ও নিচের ভাগ ফ্যাকাসে-শে¬ট, আগা কালচে; চোখ লালচে-বাদামি, পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ-স্লে¬ট এবং পায়ের তলা সাদা। পুরুষ ও স্ত্রীপাখিতে বড় পার্থক্য মাথার চাঁদিতে: পুরুষপাখির চাঁদি লাল ও স্ত্রীপাখির চাঁদি কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ ফ্যাকাসে ও অবসারণী পাটল বর্ণের। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে উ. স. সধপবর বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: বাতাবি কাঠকুড়ালি খোলা বন, বনপ্রান্তÍ, পত্রবহুল খোলা বন, লোকালয় ও রাস্তার ধারের গাছে বিচরণ করে; সাধারণত একটিমাত্র ছোট গাছেই সপরিবারে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়। গাছের বাকলের ফাঁক থেকে এরা আহার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় আছে পোকা, পিউপা, বিছা, পিঁপড়ার ডিম, ফুলের মধু, বাকলের রস, ইত্যাদি। খাওয়ার সময় এরা কোমল সুরে ডাকে: পিক...পিক..; প্রতিবাদ করার জন্য জোরে ডাকে: পিক-পিপিপিপিপিপিপিপিপি..। এপ্রিল-মে মাসে প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি স্ত্রীপাখির পাশে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে ও ঘাড় দু পাশে নাড়ায়; এবং ছোট গাছে বা শাখায় গর্ত খুঁড়ে বাসা বানালে স্ত্রীপাখি ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৫টি, মাপ ২.২´১.৬ সেমি।
বিস্তৃতি: বাতাবি কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের খোলা বন, গ্রাম ও শহরে পাওয়া যায়। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কাম্পুচিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বাতাবি কাঠকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বাতাবি কাঠকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ম্যাসি’র কাঠুরে (গ্রীক : ফবহফৎড়হ = গাছ, শড়ঢ়ড়ং = চূর্ণ; সধপবর = এম. ম্যাসি, ১৭৫০ সালে ভারতে ভ্রমণকারী ফরাসি নাগরিক)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান ]

০৫৩. উবহফৎড়পড়ঢ়ড়ং সধযৎধঃঃবহংরং (খধঃযধস, ১৮০১)
সমনাম: চরপঁং সধযৎধঃঃবহংরং খধঃযধস, ১৮০১
বাংলা নাম: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি
ইংরেজি নাম: ণবষষড়-িপৎড়হিবফ ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ

বর্ণনা: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি সাদাকালো ছোপে ভরা ছোট কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ১৮ সেমি, ওজন ৩৫ গ্রাম, ডানা ১০ সেমি, ঠোঁট ২.৪ সেমি, পা ১.৮ সেমি, লেজ ৬ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা-ঢাকনিতে সাদা ছোপ ও লেজের মধ্য পালকে সাদা ডোরা রয়েছে; থুতনি ও গলা সাদা এবং কালচে ডোরাসহ দেহতল পীতাভ; পেটের তলদেশে ক্ষুদ্র উজ্জ^ল লাল পট্টি; লেজতল-ঢাকনি সাদাটে; কপাল ও মাথার সামনের ভাগ হলদে, চোখ ও ঘাড়ের মাঝামাঝি হরিদ্রাভ-বাদামির ডোরা এবং ঘাড়ের উভয় পাশে হরিদ্রাভ-বাদামির পট্টি রয়েছে। এর ঠোঁট ফ্যাকাসে ও চোখ বাদামি থেকে লালচে-বাদামি; পা,পায়ের পাতা ও নখর শিঙ-ধূসর। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে: পুরুষপাখির চাঁদির পিছন ও ঘাড় উজ্জ^ল লাল এবং স্ত্রীতে তা সোনালী-বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির অনুজ্জ^ল দেহ ও পেটের মোটা ডোরা ছাড়া দেখতে স্ত্রীপাখির মত। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে উ. স. সধযৎবঃঃবহংরং বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি খোলা বন, বাগান, আমবাগান ও চারদিকে ছড়ানো গাছপালায় বিচরণ করে; জোড়ায় অথবা ছোট পারিবারিক দলে থাকে। গাছের বাকলে আঘাত করে ও ফাটলে ঠোঁট দিয়ে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, লার্ভা, পিঁপড়া, উইপোকা, মথ, গোবরে পোকা, শুয়ো পোকা, শক্ত খোলকওয়ালা গোবরে পোকা, ফড়িং, নরম ফল ও ফুলের মধু। পরিবারের পাখিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য এরা কিছুক্ষণ পর পর ডাকে: চাক .. চাক ..; ভয় পেলে ডাকে: ক্লিক, ক্লিক বা ক্লিকার-র-র-র..। ফেব্রুয়ারি-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের ডালে ঘা দিয়ে এরা মৃদু শব্দে ড্রাম বাজায়: ডর-র-র-র-র...; এবং গাছের ছোট ডালে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে অথবা কোন পুরোনো বাসায় ঢুকে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩টি; মাপ ২.২´১.৬ সেমি।
বিস্তৃতি: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম বিভাগের গ্রামাঞ্চলে দেখা গেছে বলে দুটি তথ্য রয়েছে। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বিস্তৃত। মিয়ানমার, লাওস ও ভিয়েতনামের সীমানায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে । বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ মারাঠি কাঠুরে (গ্রিক : ফবহফৎড়হ = গাছ, শড়ঢ়ড়ং = চূর্ণ; সধযৎধঃঃবহংরং = মারাঠার , ভারত)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান ]

গণ: ঈবষবঁং ইড়রব, ১৮৩১
মাঝারি আকারের কাঠঠোকরা; ঠোঁটে নাকের-খাঁজ নেই; নাকের ছিদ্র গোল ও অনাবৃত; ডানা গোলাকার; লেজের পালক সুচালো, লেজের প্রান্তেÍর পালকজোড়া লেজে-ঢাকনির পালকের চেয়ে কিছটিা বড়; প্রথম আঙুল খুব ছোট, নখর ক্ষুদ্র ; তৃতীয় ও চতুর্থ আঙুল প্রায় সমান।
পৃথিবীতে ১২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৫৪. ঈবষবঁং নৎধপযুঁৎঁং (ঠরবরষষড়ঃ, ১৮১৮)
সমনাম: চরপঁং নৎধপযুঁৎঁং ঠরবরষষড়ঃ, ১৮১৮
বাংলা নাম: খয়রা কাঠকুড়ালি
ইংরেজি নাম: জঁভড়ঁং ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ
বর্ণনা: খয়রা কাঠকুড়ালি লালচে বাদামি শরীরে কালো ডোরা পড়া কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ২৫ সেমি, ওজন ১০৫ গ্রাম, ডানা ১২.৫ সেমি, ঠোঁট ২.৮ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের স্পষ্ট কালো পাথালি ডোরা ছাড়া দেহের পূরোটাই লাল-বাদামি মেশানো; মাথার চূড়া লোমশ এবং কাঁধ-ঢাকনি, ডানা, লেজ ও বগলে কালো পাথালি ডোরা রয়েছে; গলার পালকে ফ্যাকাসে প্রান্তÍদেশ থাকায় আঁইশের মত দেখায়। এর চোখের তলে অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির উজ্জ্বল লাল পট্টি আছে; চোখ বাদামি-লাল; মুখ ধূসর-পাটল; ঠোঁট কালো; পা ও পায়ের পাতা নীলচে-সবুজ এবং নখর কালো। স্ত্রীপাখির কান-ঢাকনি ফ্যাকাসে-পীতাভ; এবং পুরুষপাখির তুলনায় স্ত্রী কিছুটা ছোট। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির বুকে ও তলপেটে স্পষ্ট পাথালি ডোরা ও অর্ধ-চন্দ্রাকৃতি দাগ থাকে। ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. ন. ঢ়যধরড়পবঢ়ং বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: খয়রা কাঠকুড়ালি আর্দ্র পাতাঝরা বন, শালবন, বাঁশবন, বাগান ও লোকালয়ে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় দেখা যায়। গাছের বাকল, পিঁপড়ার বাসা অথবা উইপোকার ঢিবি থেকে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, উইপোকা, পিউপা, বন্য ডুমুর এবং ফুলের মিষ্টি রস। জোড়ার পাখির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য এরা নাকি সুরে ডাকে: কুয়িন-কুয়িন-কুয়িন..। এপ্রিল-মে মাসে প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখিরা গাছে আঘাত করে ড্রাম বাজায় এবং প্লত ওড়ে ডানায় ভন ভন আওয়াজ তোলে। এরা সাধারণত গাছে পিঁপড়ার বাসার একাংশ খুঁড়ে নিজেদের বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ২-৩টি; মাপ ২.৮´২.০ সেমি।
বিস্তৃতি: খয়রা কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের চিরসবুজ, পাতাঝরা বন এবং গ্রামীণ কুঞ্জবনে দেখা যায়। চিন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: খয়রা কাঠকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। এই প্রজাতিটিকে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: খয়রা কাঠকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ খাটো-লেজ সবুজ কাঠঠোকরা (গ্রীক : শবষবড়ং = সবুজ কাঠঠোকরা , নৎধশযঁং = ছোট , ড়ঁৎড়ং = লেজ ওয়ালা )।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: চরপঁং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
মাঝারি আকারের কাঠঠোকরা; নাকের ছিদ্র রুক্ষ পালকে ঢাকা; নাকের ছিদ্র ঠোঁটের একেবারে উপরে; আঙুলের সংখ্যা ৪, সামনের আঙুল পিছনের চেয়ে দীর্ঘ। ডানার দুই-তৃতীয়াংশের চেয়ে ছোট লেজ, সুচালো গড়ন; লেজের প্রান্তেÍর পালকদুটি লেজ-ঢাকনির চেয়ে খাটো; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য আছে।
পৃথিবীতে ১৫ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৪ প্রজাতি

০৫৫. চরপঁং পধহঁং এসবষরহ, ১৭৮৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: মেটেমাথা কাঠকুড়ালি
ইংরেজি নাম: এৎবু-যবধফবফ ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ

বর্ণনা: মেটেমাথা কাঠকুড়ালি ছোট আকারের সবুজ কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ৩২ সেমি, ওজন ১৪০ গ্রাম, ডানা ১৪.৩ সেমি, ঠোঁট ৯ সেমি, পা ২.৯ সেমি, লেজ ১০.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ সবুজাভ; দেহতল একই রকম ধূসরাভ-সবুজ; কালচে-বাদামি ডানার পালকের শলাকায় সাদা ডোরা; লেজ কালো; মাথার পাশ ধূসর; গলা থেকে ঠোঁটের নিচের ভাগে কালো ডোরা; ধূসরাভ-ছাই বর্ণের থুতনি ও গলা; ধূসর অবসারণীসহ দেহতল ধূসর-সবুজ; ঠোঁটের ফ্যাকাসে সঙ্গমস্থলসহ ঠোঁট শিং-কালো বা নীলচে-শে¬ট রঙা; চোখ গাঢ় লাল-বাদামি ও নখর শিং-বাদামি। পুরুষপাখির কপাল ও চাঁদির সামনের ভাগ উজ্জ^ল লাল এবং চাঁদির পিছনের অংশ ও ঘাড় কালো। স্ত্রীপাখির কপাল, চাঁদি ও ঘাড় কালো, মধ্যে ধূসর ছিট-দাগ আছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ বেশ ধূসর ও দেহতল ডোরাসহ সাদা। ১২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে চ. প. যবংংবর বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: মেটেমাথা কাঠকুড়ালি অর্ধ-চিরসবুজ ও নাতিশীতোষ্ণ বনভূমি, পাতাঝরা বা মিশ্র কনিফার বন, প্যারাবন ও গাছগাছালি সমৃদ্ধ বাগানে বিচরণ করে; একাকী অথবা জোড়ায় দেখা যায়। মাটির ঢিবিতে অথবা গাছের বাকলে ঠোঁট ঢুকিয়ে এরা খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, উইপোকা, লার্ভা, কাঠ ছিদ্রকারী পোকার পিউপা, ফল ও ফুলের মধু। ভোরে ও গোধূলিতে এরা বেশি কর্মচঞ্চল থাকে; মাঝে মাঝে উচ্চকণ্ঠে ডাকে: পীক, পীক, পীক, পীক..। মে-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের ফাঁপা ডালে আঘাত করে এরা ড্রাম বাজায়; এবং বনপ্রান্তেÍ গাছের কা-ে গর্ত খুঁড়ে বাসা তৈরি করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪-৫টি, মাপ ২.৯´২.২ সেমি। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ই বাসার সব কাজ করে।
বিস্তৃতি: মেটেমাথা কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বনে দেখা যায়। চিন ও হিমালয়সহ ইউরোপ থেকে শুরু করে সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল হয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: মেটেমাথা কাঠকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: মেটেমাথা কাঠকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ধূসর কাঠঠোকরা (গ্রিক : ঢ়রশড়ং = কাঠঠোকরা, ল্যাটিন: পধহঁং = ধূসর )।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

০৫৬. চরপঁং পযষড়ৎড়ষড়ঢ়যঁং ঠরবরষষড়ঃ, ১৮১৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: ছোট হলদেকুড়ালি
ইংরেজি নাম: খবংংবৎ ণবষষড়হিধঢ়ব
বর্ণনা: ছোট হলদেকুড়ালি চোখে ও ঘাড়ে লাল রঙের সাজসজ্জা করা হলদেঝুটি কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ২৭ সেমি, ডানা ১৩.৫ সেমি, ঠোঁট ২.৪ সেমি, পা ২.২ সেমি, লেজ ৮.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ সবুজাভ-হলুদ; দেহতলে ডোরা আছে; ডানার মধ্য-পালক তামাটে লাল; ডানার কালো প্রান্তÍ-পালকে সাদা ডোরা; বাদামি-কালো লেজ; পেটে সাদা ও সবুজ ডোরা রয়েছে; ঘাড়ে এক গুচ্ছ হলুদ পালক; থুতনি সাদা এবং বুক ও পিঠ সবুজাভ। এর ঠোঁট শিঙ-বাদামি, চোখ গাঢ় লাল ও চোখের চারিপাশে লোমহীন স্লেট-রঙা ত্বক; পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ ও নখর বাদামি। পুরুষপাখির চোখ ও ঘাড়ের মাঝখানটায় উজ্জ্বল লোহিত রঙের ডোরা, গাঢ় লাল রঙের টান চোখের ওপর দিয়ে চলে গেছে। স্ত্রীপাখিতে চোখ ও ঘাড়ের মাঝখানটায় উজ্জ্বল লোহিত রঙের ডোরা নেই কিন্ত‘ প্রশস্ত গাঢ় লাল রঙের টান চোখের পিছন থেকে ঘাড় পর্যন্তÍ বিস্তৃত। ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে চ. প. পযষড়ৎড়ষড়ঢ়যঁং কেবল বাংলাদেশে পাওয়া গেছে।
স্বভাব: ছোট হলদেকুড়ালি প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বন, পাতাঝরা বন, পাহাড়ি বন ও প্যারাবনে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়; মাঝে মাঝে ফিঙে, ছাতারে ও অন্যান্য পতঙ্গভুক পাখির সহযোগী হয়ে শিকার করতে দেখা যায়। ঠোকর দিয়ে গাছের বাকল থেকে এরা খাদ্য সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে: পিঁপড়া ও উইপোকা, কাঠ ছিদ্রকারী পোকা, পিউপা ও রসালো ফল। খাবার খাওয়ার সময় এরা নাকি সুরে ডাকে: পী-অ্যা..। এপ্রিল-মে মাসে প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি ঘাড়ের হলুদ ঝুটি খাড়া করে মাথা এপাশ ওপাশ ঘুরায় ও ফাঁপা কাঠে আঘাত করে ড্রাম বাজায়; এবং বনের মধ্যে ক্ষয়ে যাওয়া গাছের কা-ে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে স্ত্রীপাখি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৫টি; মাপ ২.৪´১.৯ সেমি। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ই বাসার সব কাজ করে।
বিস্তৃতি: ছোট হলদেকুড়ালি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে ও প্যারাবনে বিচরণ করে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীন ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: ছোট হলদেকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: ছোট হলদেকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হলদেঝুটি কাঠঠোকরা (গ্রীক : ঢ়রশড়ং = কাঠঠোকরা, শযষড়ৎড়ং = হলুদ, ষড়ঢ়যড়ং = ঝুটি)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

০৫৭. চরপঁং ভষধারহঁপযধ এড়ঁষফ, ১৮৩৪
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: বড় হলদেকুড়ালি
ইংরেজি নাম: এৎবধঃবৎ ণবষষড়হিধঢ়ব

বর্ণনা: বড় হলদেকুড়ালি সুদর্শন ঘাড়-ঝুটি পড়া কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি, ওজন ১৮৫ গ্রাম,ডানা ১৭ সেমি, ঠোঁট ৪.২ সেমি, পা ৩ সেমি, লেজ ১২ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ হলদে সবুজ ও দেহতল জলপাই-ধূসর; মাথা ও ঘাড়ের পিছনে সোনালী-হলুদ ঝুটি, ডানার মধ্য-পালকে প্রশস্ত লাল ও কালো ডোরা; লেজ কালো; এবং ঘাড়ের পিছনে বাদামি। ঠোঁট হলদে-ধূসর, গোড়া কালচে ও আগা গজদন্তেÍর মত; চোখ বাদামি-গাঢ় লাল; পা ও পায়ের পাতা ধূসর-সবুজ বা ফ্যাকাসে এবং নখর ফ্যাকাসে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য থুতনি ও গলার রঙয়ে, পুরুষপাখির ক্ষেত্রে যা হলুদ আর স্ত্রীপাখির ক্ষেত্রে লাল-বাদামি। পুরুষপাখি স্ত্রীপাখির চেয়ে ওজনে কিছুটা বেশি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঘাড় ফ্যাকাসে, পীতাভ বা সাদা গলায় কালো চিতি এবং বেশ ধূসর পেট। ৭টি উপ-প্রজাতির মধ্যে চ. ভ. ভষধারহঁপযধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: বড় হলদেকুড়ালি প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ ও পাতাঝরা বন, পর্বতের পাদদেশের বন, প্যারাবন ও চা বাগানে বিচরণ করে; জোড়ায় বা ছোট পারিবারিক দলে থাকে; মাঝে মাঝে পেঙ্গা ও ফিঙের সহযোগী হয়ে শিকার করে। গাছের বাকল থেকেই এরা খাদ্য সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, গাছ ছিদ্রকারী পোকা, উইপোকা, ফুল ও ফলের রস। জোড়ার পাখির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য এরা করুণ চীৎকারের মত ডাকে: পী-উ.. , বা কিউ.., বা চ্যাঙ্ক...। মার্চ-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে সার বনে পুরুষপাখি স্ত্রীপাখির পশ্চাদ্বাবন করে, ঠোঁট ওপরমুখি করে ও শরীর কাঁপায়। বনের বড় গাছের কা-ে অথবা ওপরমুখি শাখায় গর্ত বানিয়ে বাসা করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৪টি, মাপ ২.৮´২.২ সেমি।
বিস্তৃতি: বড় হলদেকুড়ালি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ ও প্যারাবনে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বড় হলদেকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বড় হলদেকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সোনাঘাড় কাঠঠোকরা (গ্রীক : ঢ়রশড়ং = কাঠঠোকরা, ল্যাটিন: ভষধাঁং = সোনালী, হঁপযধ = ঘাড়)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]
০৫৮. চরপঁং ারৎরফধহঁং ইষুঃয, ১৮৪৩
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: দাগিবুক কাঠকুড়ালি
ইংরেজি নাম: ঝঃৎবধশ-নৎবধংঃবফ ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ

বর্ণনা: দাগিবুক কাঠকুড়ালি সরু সাদা ভ্রু-রেখা আঁকা মাঝারি আকারের কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ২৪ সেমি, ওজন ১০০ গ্রাম, লেজ ১০.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ ব্রঞ্জ-সবুজ ও দেহতল অনুজ্জ্বল ফিকে সবুজে; ধূসর গালে দাগ থাকেনা; ফিকে জলপাই-বাদামি গলায় সাদা ছিটা-দাগ থাকে; কপাল কালো; ঘাড়ের পিছনের অংশ ব্রঞ্জ-সবুজ, কান-ঢাকনি মলিন সাদা থেকে ধূসরাভ; ঠোঁটের কোনায় কালো দাগ; বুক, পেট ও বগল কালো লম্বা দাগসহ নিরল অনুজ্জ্বল সবুজ, কোমর অনুজ্জ্বল হলুদ-সবুজ, লেজের উপরি-ঢাকনি সামান্য বাদামি ডোরাসহ কালচে; লেজতল-ঢাকনি সাদাটে, মধ্যে কালচে জলপাই রঙের ছিটা-দাগ; এবং কালচে ডানায় সাদা দাগ। এর চোখ কালচে লাল; পা ধূসর-সবুজ এবং দুরঙা ঠোঁটের উপরের ঠোঁট ধোঁয়াটে ও নিচের ঠোঁট হলুদ, আগা কালচে। পুরুষপাখির চাঁদি লাল এবং স্ত্রীপাখির চাঁদি কালো ও বুক অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পালক অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল এবং বগল ও পেটে বেশি আঁইশের দাগ থাকে।
স্বভাব : দাগিবুক কাঠকুড়ালি প্যারাবন, চিরসবুজ বন ও উপকূলীয় ক্ষুদ্র ঝোপে বিচরণ করে; বাংলাদেশে সুন্দরবনেই এর বিচরণ সীমিত। এরা সচরাচর একা কিংবা জোড়ায় থাকে। পতিত কাঠের গুঁড়িতে লাফিয়ে কিংবা গাছের কা-ে জড়িয়ে ধরে এরা খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, উইপোকা ও পোকার লার্ভা। জোড়ার পাখির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য এরা তীক্ষè স্বরে ডাকে : কিউপ.. কিংবা খইর’র’র..; এবং ভয় পেলে গাছের কা- জড়িয়ে ধরে নিশ্চল হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাসের প্রজনন মৌÍসুমে গাছের কা-ে কিংবা বড় ডালে গর্ত খুঁড়ে এরা বাসা তৈরি করে; এবং স্ত্রীপাখি ৪টি ডিম পাড়ে। বাংলাদেশে আজও এর প্রজনন পর্যবেক্ষণ করে তথ্য জানা যায় নি।
বিস্তৃতি: দাগিবুক কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; প্রধানত খুলনা বিভাগের প্যারাবনে পাওয়া যায়। মিয়ানমার থেকে মালয় পেনিনসুলায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ।
অবস্থা: দাগিবুক কাঠকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: দাগিবুক কাঠকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সবুজ কাঠঠোকরা (গ্রীক: ঢ়রশড়ং = কাঠঠোকরা, ল্যাটিন: ারৎরফধহং = সবুজ)
[ইনাম আল হক ও এম কামরুজ্জামান]

০৫৯. চরপঁং ীধহঃযড়ঢ়ুমধবঁং (এৎধু ধহফ এৎধু, ১৮৪৬)
সমনাম: ইৎধপযুষড়ঢ়যঁং ীধহঃযড়ঢ়ুমধবঁং এৎধু ধহফ এৎধু, ১৮৪৬
বাংলা নাম: দাগিগলা কাঠকুড়ালি
ইংরেজি নাম: ঝঃৎবধশ-ঃযৎড়ধঃবফ ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ

বর্ণনা: দাগিগলা কাঠকুড়ালি সবুজ রঙের মাঝারি আকারের কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ২৯ সেমি, ওজন ১১০ গ্রাম, ডানা ১৩ সেমি, ঠোঁট ৩.৩ সেমি, পা ২.৪ সেমি, লেজ ৮.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ সবুজাভ ও এতে কালোয় ঢেউ খেলানো; দেহতল ফ্যাকাসে সবুজাভ ও হালকা হলুদে মেশানো; কোমর জলপাই-হলুদ; সাদা ডোরাসহ সবুজাভ লেজ; সাদা থুতনি ও গলায় হালকা হলদে-ধূসর ডোরা; বুক, বগল ও পেটে জলপাই রঙের আঁইশের দাগ; ভ্রু-রেখা সাদা; কান-ঢাকনি ফ্যাকাসে ধূসর-বাদামি; ধূসরাভ-সাদা গালে কালো ছিটা-দাগ; চোখ ও ঘাড়ের মাঝখানটায় উপরিভাগে সাদা ডোরা রয়েছে; ঠোঁট শিঙরঙা; চোখ সাদা বা ফ্যাকাসে পাটল বর্ণের; পা ও পায়ের পাতা সবুজ এবং নখর ধূসর। কপাল ও চাঁদির রঙ পুরুষপাখির ক্ষেত্রে উজ্জ^ল লাল আর স্ত্রীপাখির ক্ষেত্রে কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা-ঢাকনির পালকের গোড়া ধূসর।
স্বভাব: দাগিগলা কাঠকুড়ালি পাতাঝরা বন, প্রশস্ত পাতার বন, বাগান ও লোকালয়ে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় থাকে। গাছের কা-ে জড়িয়ে ধরে অথবা মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে খাদ্য সন্ধান করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, উইপোকা, গোবরে পোকা, ফুল ও ফলের রস। জোড়ার পাখির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তীক্ষè সুরে ডাকে: কুয়িম্প..। জানুয়ারি-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে এরা বাঁশ অথবা গাছের ফাঁপা ডালে আঘাত করে ড্রাম বাজানোর মত আওয়াজ করে; এবং ওপরমুখি ডালে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৫টি, মাপ ২.৬´২.০ সেমি।

বিস্তৃতি: দাগিগলা কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের পাতাঝরা বনে বিচরণ করে। ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: দাগিগলা কাঠকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে দাগিগলা কাঠকুড়ালিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: দাগিগলা কাঠকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হলদেতলা কাঠঠোকরা (গ্রীক : ঢ়রশড়ং = কাঠঠোকরা, ীধহঃযড়ং = হলুদ ;ল্যাটিন: ঢ়রমরঁং = পাছা )।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: উরহড়ঢ়রঁস জধভরহবংয়ঁব, ১৮১৪
মাঝারি আকারের ঝুটি-ওয়ালা কাঠঠোকরা; সামান্য বাঁকানো ঠোঁট, দৈর্ঘ্যে মাথার সমান,; নাসিকা উন্মুক্ত; পিছনের একটি আঙুল খুব ছোট অথবা নেই; তৃতীয় ও চতুর্থ আঙুল দৈর্ঘ্যে প্রায় সমান।
পৃথিবীতে ৪ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি

০৬০. উরহড়ঢ়রঁস নবহমযধষবহংব (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: চরপঁং নবহমযধষবহংরং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: বাংলা কাঠঠোকরা
ইংরেজি নাম: খবংংবৎ এড়ষফবহনধপশ (ইষধপশ-ৎঁসঢ়বফ ঋষধসবনধপশ)

বর্ণনা: বাংলা কাঠঠোকরা বাংলাদেশের অতিচেনা কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ২৯ সেমি, ওজন ১০০ গ্রাম, ডানা ১৪.২ সেমি, ঠোঁট ৩.৭ সেমি, পা ২.৫ সেমি, লেজ ৯ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ সোনালী-হলুদ; দেহতলে কালো আঁইশের দাগ; ওড়ার পালক ও লেজ কালো; থুতনিতে কালো ডোরা; সাদা ঘাড়ের পাশে কালো দাগ; বুকে মোটা কালো আঁইশের দাগ; চোখে কালো ডোরা; ডানার গোড়ার ও মধ্য-পালক ঢাকনিতে সাদা বা ফ্যাকাসে ফুটকি এবং পিঠ ও ডানার অবশেষ সোনালী। সবুজ গোলকসহ এর চোখ লালচে-বাদামি; পা ও পায়ের পাতা ধূসর সবুজ এবং ঠোঁট শিঙ-রঙ ও কালোর মিশ্রণ। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য তাদের চাঁদিও ঝুটির রঙে: পুরুষপাখির চাঁদি ও ঝুটি উজ্জ্বল লাল এবং স্ত্রীপাখির সাদা বিন্দুসহ চাঁদির সামনের অংশ কালো ও পিছনের ঝুটি লাল। তরুণ পাখির অনুজ্জ^ল দেহ ও চাঁদির সামনের ভাগের সাদা বিন্দু ছাড়া দেখতে স্ত্রীপাখির মত। ৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে উ. ন. নবহমযধষবহংব বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: বাংলা কাঠঠোকরা বন, বাগান ও লোকালয়ে সর্বত্র বিচরণ করে; একাকী, জোড়ায় বা পারিবারিক দলে দেখা যায়। গাছের কা- ও ডালে হাতুড়ির মত আঘাত করে অখবা মাটিতে ঝরাপাতা উল্টে এরা খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, শুয়ো পোকা, বিছা, মাকড়সা, অন্যান্য পোকামাকড় এবং ফুল ও ফলের রস। শক্ত পা ও অনমনীয় লেজে ভর দিয়ে ছোট ছোট লাফ মেরে এরা গাছের কা- বেয়ে উপরের ওঠে; ওড়ার সময় উচ্চ স্বরে ডাকে: কিয়ি কিয়ি কিয়ি-কিয়ি-কিয়িকিয়িইরররর-র-র-র..। ফেব্রুয়ারি-জুলাই মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের কা-ে গর্ত খুড়ে বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩টি, মাপ ২.৮´২.০ সেমি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির উভয়ই বাসার সব কাজ করে। বাসায় হামলা হলে ছানারা সাপের মত হিস হিস শব্দ করে।
বিস্তৃতি: বাংলা কাঠঠোকরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের সব বনে ও লোকালয়ে রয়েছে। পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বাংলা কাঠঠোকরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বাংলা কাঠঠোকরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার বলীয়ান (গ্রীক : ফবরহড়ং = শক্তিমান, ড়ঢ়ড়ং = চেহারা; নবহমধষবহংব = বাংলার)। পাখিটি বাংলাদেশে শুধু ‘কাঠঠোকরা’ নামে পরিচিত।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]
০৬১. উরহড়ঢ়রঁস লধাধহবহংব (খলঁহময, ১৭৯৭)
সমনাম: চরপঁং লধাধহবহংরং খলঁহময, ১৭৯৭
বাংলা নাম: পাতি কাঠঠোকরা
ইংরেজি নাম: ঈড়সসড়হ এড়ষফবহনধপশ (ঈড়সসড়হ ঋষধসবনধপশ)

বর্ণনা: পাতি কাঠঠোকরা লম্বা সাদা ভ্রু আঁকা সোনালী ডানার পাখি (দৈর্ঘ্য ৩০ সেমি, ডানা ১৫ সেমি, ঠোঁট ২.৮ সেমি, পা ২.৪ সেমি, লেজ ৯.৫ সেমি)। এর পিঠ প্রাপ্তবয়স্ক পাখির সোনালী-হলুদ ও দেহতল কালো আঁইশের মত; লেজ কালো; ফ্যাকাসে-সাদা গলায় কালো ডোরা; বুকে ও তলপেটে কালোয় স্পষ্ট ঢেউ-খেলানো; চোখ থেকে ঘাড় পর্যন্তÍ সাদা ভ্রু; চোখের কালো ডোরা; মাথা ও ঘাড়ের পাশ সাদা; চোখ থেকে কালো ডোরা ঘাড় হয়ে বুকের তল পর্যন্তÍ অবিভক্তভাবে নেমে গেছে; ঘাড়ের পিছন ও ম্যান্টলের উপরিভাগ ফুটকিহীন। চোখ বাদামি বা পিঙ্গল; ঠোঁটের গোড়ার অর্ধেক বাদামি, বাকি ঠোঁট কালো; পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল বাদামি-সবুজ। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য তাদের ঝুটির রঙে: পুরুষপাখির ঝুটি উজ্জ্বল লাল ও স্ত্রীপাখির কালো ঝুটিতে সাদা বিন্দু। ৬ টি উপ-প্রজাতির মধ্যে উ. ল. রহঃবৎসবফরঁস বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব : পাতি কাঠঠোকরা প্যারাবন, প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বন, আর্দ্র পাতাঝরা বন এবং গ্রামের বাগানে বিচরণ করে; একাকী, জোড়ায় বা র্যা কেট ফিঙে ও অন্য পতঙ্গভুক পাখির মিশ্রদলে ঘুরে বেড়ায়। বনের নিচের স্তরে গাছের ডালে ঠুকরে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া ও অন্য পোকামাকড়; পিঁপড়ার বাসার পাশে থাকতে পছন্দ করে; কদাচ মাটিতে নামে। জানুয়ারি -মে মাসের প্রজনন ঋতুতে এরা নাকি সুরে ছোট্ট ডাক দেয়: উইকা উইক উইকা... ; এবং প্রবেশ-পথ পাতা ঢাকা থাকে এমন আনুভূমিক ডালে গর্ত খুঁড়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ২-৩টি, মাপ ২.৯´২.০ সেমি।
বিস্তৃতি: পাতি কাঠঠোকরা বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; খুলনা বিভাগের প্যারাবনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগে দেখা গেছে বলে তথ্য আছে এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে সিলেট বিভাগে পাওয়া যেত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে চীনের দক্ষিণাঞ্চল ও ইন্দোনেশিয়া এবং ভারতের পশ্চিম ঘাটে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: পাতি কাঠঠোকরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পাতি কাঠঠোকরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ জাভার বলীয়ান (গ্রীক : ফবরহড়ং = শক্তিমান, ড়ঢ়ড়ং = চেহারা; লধাধহবহংব = জাভার, ইন্দোনেশিয়া)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

০৬২. উরহড়ঢ়রঁস ংযড়ৎরর (ঠরমড়ৎং, ১৮৩২)
সমনাম: চরপঁং ংযড়ৎরর ঠরমড়ৎং, ১৮৩২
বালা নাম: হিমালয়ী কাঠঠোকরা
ইংরেজি নাম: ঐরসধষধুধহ এড়ষফবহনধপশ (ঐরসধষধুধহ ঋষধসবনধপশ)

বর্ণনা: হিমালয়ী কাঠঠোকরা তিন আঙুলে গাছ আঁকড়ে চলা কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ৩১ সেমি, ওৎন ১১০ গ্রাম, ডানা ১৫.৮ সেমি, ঠোঁট ৪ সেমি, লেজ ১০ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ সোনালী-হলুদ এবং সাদা দেহতলে কালো খাড়া দাগ; ফুটকিহীন কালো ঘাড়; পিঠ সোনালী-হলুদ; কোমর উজ্জ্বল লাল; লেজ কালো; গলার মাঝখানটা বাদামি-পীতাভ। এর চোখ ও ঘাড়ের মধ্যে ফ্যাকাসে-বাদামি মধ্যভাগসহ বিভক্ত অস্পষ্ট কালো ডোরা রয়েছে; চোখের পিছন থেকে প্রশস্ত সাদা ভ্রু পিছনের দিকে চলে গেছে; কালো চোখের ডোরা চোখ থেকে ঘাড়, সাদা বর্ণ ঠোঁটের গোড়া থেকে ঘাড়ের তল পর্যন্তÍ বিস্তৃত; চোখ লালচে-বাদামি, ঠোঁট কালচে এবং পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারার পার্থক্য শুধু তাদের মাথার চাঁদি ও চূড়ায়; পুরুষপাখির চাঁদি ও চূড়া জ্জ্বল লাল, আর স্ত্রীপাখির কপাল ও চাঁদির সামনের ভাগ বাদামি-কালো এবং চাঁদি ও চূড়া লম্বা সাদা ডোরাসহ কালো। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে উ. ং. ংযড়ৎরর বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: হিমালয়ী কাঠঠোকরা অর্ধ-চিরসবুজ ও প্রশস্ত পাতা ওয়ালা পত্রঝরা বনে বিচরণ করে; সাধারণত একা, জোড়ায় বা পারিবারিক দলে দেখা যায়। মাটিতে লাফিয়ে বা গাছের কা-ের চারদিকে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া ও নানা জাতের পোকা। খাওয়ার সময় এরা বারংবার ডাকে: ক্লাক – ক্লাক – ক্লাক..। মার্চ-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি স্ত্রীপাখির পাশাপাশি ওড়ে চলে এবং বার বার ডাকে: কি-কি-কি-কি ...; তারপর গাছের কা-ে বা বড় ডালে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, সংখ্যায় তটি; মাপ ২.৯´২.০ সেমি। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ই বাসার সব কাজ করে।
বিস্তৃতি: হিমালয়ী কাঠঠোকরা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; ঢাকা ও সিলেট বিভাগের বনে বিচরণ করে। ভারত, নেপাল, ভুটান ও হিমালয় থেকে মিয়ানমার পর্যন্তÍ দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: হিমালয়ী কাঠঠোকরা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে হিমালয়ী কাঠঠোকরাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি
বিবিধ: হিমালয়ী কাঠঠোকরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ শোরের বলীয়ান (গ্রীক : ফবরহড়ং = শক্তিমান, ড়ঢ়ড়ং = চেহারা; ংযড়ৎরর = ফ্রেডেরিক জন শোরের সম্মাানে, ১৭৯৯-১৮৩৭)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: ঈযৎুংড়পড়ষধঢ়ঃবং ইষুঃয, ১৮৪৩
মাঝারি আকারের ঝুটি-ওয়ালা কাঠঠোকরা; ঠোঁট লম্বা ও সোজা; নাকের খাঁজ বেশ উন্নত; পা বিশেষভাবে শক্তিশালী; নখর লম্বা ও শক্ত। লেজের প্রান্তেÍর পালকদুটি লেজ-ঢাকনির চেয়ে বড়; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য আছে।
পৃথিবীতে ২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৬৩. ঈযৎুংড়পড়ষধঢ়ঃবং ষঁপরফঁং (ঝপড়ঢ়ড়ষর, ১৭৮৬)
সমনাম: চরপঁং ষঁপরফঁং ঝপড়ঢ়ড়ষর, ১৭৮৬
বাংলা নাম: বড় কাঠঠোকরা
ইংরেজি নাম: এৎবধঃবৎ এড়ষফবহনধপশ (এৎবধঃবৎ ঋষধসবনধপশ)

বর্ণনা: বড় কাঠঠোকরা তস্করের মত চোখে কালো পট্টি বাঁধা পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি, ডানা ১৭ সেমি, ঠোঁট ৪.৮ সেমি, পা ৩.২ সেমি, লেজ ৯.২ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ ও দেহতলে সাদা ও কালো চিতি রয়েছে; পিঠের উপরিভাগে সাদা চিতিসহ কালো; পিঠের শেষাংশ ও কাঁধ-ঢাকনি সোনালী-হলুদ; লেজের নিচে উজ্জ্বল লাল এবং লেজ ও লেজ-উপরি-ঢাাকনি কালো। এর ঠোঁটের গোড়া সরু কালো রেখায় ঘেরা প্রশস্থ সাদা ডিম্বাকার চিহ্ন থাকে; গলার কেন্দ্রভাগের নিচে ও সাদা ফুটকি সমেত কালো পেটে একটি কালো রেখা চলে গেছে। ফ্যাকাসে ঠোঁটের সঙ্গমস্থল ও ঠোঁটের নিচের ভাগের গোড়া সমেত ঠোঁট শিঙ-বাদামি বর্ণের; চোখ হালকা পীত ও কমলায় মেশানো; পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ-ফ্যাকাসে এবং নখর শিং-বাদামি। পাখির মাথার চাঁদি ও ঝুটি পুরুষপাখির ক্ষেত্রে উজ্জ^ল লাল আর স্ত্রীপাখির ক্ষেত্রে কালোর মধ্যে সাদা তিলা। স্ত্রী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির চেহারা অভিন্ন। ১৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. ষ. মঁঃঃধপৎরংঃধঃঁং বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: বড় কাঠঠোকরা প্যারাবন, চিরসবুজ বন, পাতাঝরা বন, বাগান ও লোকালয়ে বিচরণ করে; জোড়ায় অথবা পারিবারিক দলে থাকে। পোকায় জর্জরিত গাছে, বিশেষ করে মৃত গাছে, হাতুড়ির মত আঘাত করে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, পোকামাকড়, পোকার ছানা ও ফুলের মিষ্টি রস। মার্চ-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখিরা ফাঁপা ডালে আঘাত করে ড্রাম বাজানোর মত আওয়াজ করে এবং উঁচু পর্দায় ধাতব কণ্ঠে ডাকে: কি-কি-কি-কি -কি -কি..। গাছের ডালের নিচের দিকে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, সংখ্যায় ৪-৫টি, মাপ ৩.০´২.২ সেমি। ১৪-১৫ দিনে ডিম ফোটে ও ২৪-২৬ দিনে ছানারা বাসা ছেড়ে যায়।
বিস্তৃতি: বড় কাঠঠোকরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের সব বনে আছে। ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও চিনসহ দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বড় কাঠঠোকরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বড় কাঠঠোকরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সোনালী কাঠঠোকরা (গ্রীক : শযৎঁংড়ং = সোনা, পড়ষধঢ়ঃবং = কাঠঠোকরা; ল্যাটিন: ষঁপরফঁং = উজ্জ্বল)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: এবপরহঁষঁং ইষুঃয, ১৮৪৫
তিন আঙুলের কাঠঠোকরা; ঠোঁট খাটো, চাপা, প্রায় সোজা; নাকের ছিদ্র ঠোঁটের গোড়ার কাছাকাছি; নাকের পালক ছোট; লেজের পালক প্রশস্ত, লেজের প্রান্তেÍর পালকদুটি লেজ-ঢাকনির চেয়ে বড়; লেজের পালক ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড়।
পৃথিবীতে ১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৬৪. এবপরহঁষঁং মৎধহঃরধ (ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮৪০)
সমনাম: চরপঁং মৎধহঃরধ ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮৪০
বাংলা নাম: ধলামাথা কাঠকুড়ালি
ইংরেজি নাম: চধষব-যবধফবফ ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ
বর্ণনা: ধলামাথা কাঠকুড়ালি তিন আঙুলের বাদামি কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ২৫ সেমি, ডানা ১৩ সেমি, ঠোঁট ২.৬ সেমি, লেজ ৮.৩ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ অনুজ্জ^ল লাল-বাদামি ও দেহতল মেরুন থেকে মেরুন-বাদামি; ঘাড় ও ঘাড়ের পাশ সোনালী জলপাই-হলুদ; ডানার বাদামি প্রান্তÍ-পালকে পীতাভ-পাটল বর্ণের ডোরা রয়েছে; ফ্যাকাসে ডোরাসহ বাদামি লেজ; ও অনুজ্জ^ল মেরুন থেকে মেরুন-বাদামি পেট। এর ঠোঁট পা-ুর বর্ণের, গোড়া ফ্যাকাসে; চোখ লালচে-বাদামি; পা ও পায়ের পাতা জলপাই রঙের এবং নখরগুলো শিং-বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীতে পাখিতে পার্থক্য শুধু তাদের মাথার চাঁদির বর্ণে: পুরুষপাখির গাঢ় লাল-পাটল বর্ণ ও স্ত্রীপাখির সোনালী-জলপাই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির অনুজ্জ্বল মাথা, বাদামি দেহতল ও মাথার চাঁদিতে লাল রঙ ছাড়া দেখতে স্ত্রীপাখির মত। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে এ. ম. মৎধহঃরধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: ধলামাথা কাঠকুড়ালি বাঁশ বন ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় দেখা যায়। গাছের কা-, বাঁশ, পতিত কাঠের গুঁড়ি ও ভূমি থেকে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, বিশেষ করে পিঁপড়া ও গুবরে পোকার ছানা। ছোট্ট লাফ দিয়ে এরা গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে যায় এবং এক গাছ থেকে অন্য গাছে তরঙ্গাকারে ওপর-নিচ করে ওড়ে চলে; উঁচু থেকে ক্রমান্ত^য়ে নিচু, ৫-৬টি অনুনাসিক স্বরে ডাকে: চেইক-চেইক-চেইক-চেইক...; বিরক্তি প্রকাশ করতে হ্রস্ব ও তীক্ষè শব্দে ডাকে: কেরেক-কেরেক-কেরেক...। মার্চ-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের কাটা অংশেরপচাগোড়ায় গর্ত খুঁড়ে বাসা বাঁধে এবং নতুন প্রবেশ-পথ তৈরি করে পরপর কয়েক বছর বাসাটি ব্যবহার করে। স্ত্রীপাখি ৩টি ডিম পাড়ে; ডিম সাদা, মাপ ২.৫´১.৯ সেমি।
বিস্তৃতি: ধলামাথা কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। হিমালয়ের পূর্বাঞ্চল ও চীনের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামে রয়েছে।
অবস্থা: ধলামাথা কাঠকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: ইষুঃযরঢ়রপঁং ইড়হধঢ়ধৎঃব, ১৮৫৪
মাঝারি আকারের কাঠঠোকরা; ঠোঁট লম্বা, শক্ত ও প্রায় সোজা; নাকের খাঁজ বেশ উন্নত; নাসিকা ঠোঁটের উপরের দিকে; নাকের ছিদ্র খোলা; ডানা গোলাকার, প্রান্তÍপালক দৈর্ঘ্যে মধ্য-পালকের চেয়ে সামান্য বড়; লেজের প্রান্তেÍর পালকদুটি লেজ-ঢাকনির চেয়ে বড়; চতুর্থ আঙুল তৃতীয়টির চেয়ে লম্বা।
পৃথিবীতে ২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৬৫. ইষুঃযরঢ়রপঁং ঢ়ুৎৎযড়ঃরং (ঐড়ফমংড়হ, ১৮৩৭)
সমনাম: চরপঁং ঢ়ুৎৎযড়ঃরং ঐড়ফমংড়হ, ১৮৩৭
বাংলা নাম: তামাটে কাঠকুড়ালি
ইংরেজি নাম: ইধু ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ

বর্ণনা: তামাটে কাঠকুড়ালি লাল ডানায় বাদামি ডোরা দেওয়া পাহাড়ি কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ২৭ সেমি, ওজন ১৭০ গ্রাম, ডানা ১৪৫ সেমি, ঠোঁট ৫ সেমি, পা ৩ সেমি, লেজ ৯ সেমি)। স্ত্রীপাখি পুরুষপাখির চেয়ে কিছুটা ছোট। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ লাল ও দেহতল কালচে বাদামি; কাঁধ-ঢাকনি ও ডানায় প্রশস্ত কালচে বাদামি ডোরা আছে; ঠোঁট ফ্যাকাসে, চোখ অনুজ্জ^ল গাঢ় লাল ও পা শিঙ-বাদামি। পুরুষপাখির কান-ঢাকনি ও ঘাড়ের পাশে উজ্জ^ল লাল পট্টি রয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথায় ছিটা-দাগ থাকে কাঁধ-ঢাকনিতে বেশি স্পষ্ট দাগ ও ঘাড়ের পাশে লাল ছিটা থাকে। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ই. ঢ়. ঢ়ুৎৎযড়ঃরং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: তামাটে কাঠকুড়ালি ঘন প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বন, বাঁশবন ও পাহাড়ি বনে বিচরণ করে; একা, জোড়ায় বা পারিবারিক দলে দেখা যায়। মৃত গাছের কাটা গোড়া, পতিত কাঠের গুঁড়ি, শেওলাঢাকা গাছের কা- ও মাটির কাছাকাছি বাঁশে ঠুকরে এরা খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে সাদা পিঁপড়া ও গুবরে পোকার লার্ভা। আহারের সময় উচ্চ সুরে এরা বারবার ডাকে: চ্যাক, চ্যাক, চ্যাক ...; প্রতিযোগীকে হুমকি দেবার জন্য ডাকে: কেরেরে-কেরেরে-কেরেরে। মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে ভূমি থেকে ১-৪ মিটারের মধ্যে গাছের কা-ে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৪টি; মাপ ২.৯´২.১ সেমি। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ই বাসার সব কাজ করে।
বিস্তৃতি: তামাটে কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের উঁচু এলাকার চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। হিমালয় ও চিনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত, নেপাল,ভুটান, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় রয়েছে।
অবস্থা: তামাটে কাঠকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: তামাটে কাঠকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ব্লাইদ-এর অগ্নিকর্ণ (ইষুঃযরঢ়রপঁং = এডওয়ার্ড ব্ল¬াইদ, ইংরেজ প্রাণিবিদ, ১৮১০-১৮৭৩; গ্রীক : ঢ়ঁৎৎযড়ং = শিখা বর্ণ, -ড়ঃরং = কান ওয়ালা)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: ঐবসরপরৎপঁং ঝধিরহংড়হ, ১৮৩৭
মাঝারি আকারের কাঠঠোকরা; ঠোঁট সোজা ও শেষ প্রান্তেÍ দু পাশ থেকে চাপা; নাকের খাঁজ স্পষ্ট, নাকের ছিদ্র পালকে ঢাকা; আঙুল খুব বড়, চতুর্থ আঙুল তৃতীয়টির চেয়ে লম্বা; লেজ খুব ছোট, লেজের পালকের প্রান্ত গোল।
পৃথিবীতে ২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৬৬. ঐবসরপরৎপঁং পধহবহঃব (খবংংড়হ, ১৮৩০)
সমনাম: চরপঁং পধহবহঃব খবংংড়হ, ১৮৩০
বাংলা নাম: কলজেবুটি কাঠকুড়ালি
ইংরেজি নাম: ঐবধৎঃ-ংঢ়ড়ঃঃবফ ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ

বর্ণনা: কলজেবুটি কাঠকুড়ালি বড় কালো টুপি পড়া কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ১৬ সেমি, ওজন ৩৬ গ্রাম, ডানা ৯.৭ সেমি, ঠোঁট ২.৩ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৩.২ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ কালো ও পীতাভ এবং দেহতল কালচে জলপাই ও কালোয় মেশানো; ডানার গোড়ার-পালক সাদা; ডানা-ঢাকনি ও পিঠ-ঢাকনিতে ছোট ছোট পাতা আকারের কালো ছোপ রয়েছে; থুতনি, গলা ও ঘাড়ের পাশ পীতাভ-সাদা। এর ঠোঁট ঘন শিং-বাদামি, মুখ তামাটে-পাটল বর্ণের ও চোখ জলপাই-বাদামি; পা, পায়ের পাতা ও নখর কালচে-স্লে¬ট রঙের বা বাদামি-কালো। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারার পার্থক্য তাদের কপালের বর্ণে: পুরুষপাখির কপাল কালো ও স্ত্রীপাখির সাদা। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির কপালের ও চাঁদির কালো ফুটকি এবং পালকের প্রান্তÍদেশের সাদাটে অংশ ছাড়া দেখতে স্ত্রীপাখির মত।
স্বভাব: কলজেবুটি কাঠকুড়ালি চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বন, অপ্রধান বন ও বাঁশজঙ্গলে বিচরণ করে; সাধারণত একা বা জোড়ায় দেখা যায়। সরু ডালের প্রান্তÍদেশ বা উঁচু গাছের পাতা ঢাকা ডালে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, উই ও অন্যান্য পোকামাকড়। ডালের চারদিকে ঘুরে অবিরাম মৃদু আঘাত করে এরা ফাটলে লুকিয়ে থাকা পোকা বের করে খায়; খাওয়া ও ওড়ার সময় দুটি তীক্ষè শব্দে বার বার ডাকে: ক্লিক - ক্লিক...; এবং দীর্ঘ, তীব্র ও মনোহর সুরে ডাকে: টুই-টুই-টিটিটিটিটিটি...। নভেম্বর-এপ্রিল মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের মৃত কা-ে ১৫-২০ সেমি. দীর্ঘ গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ২-৩টি ; মাপ ২.৪´১.৮ সেমি।
বিস্তৃতি: কলজেবুটি কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; কালে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দেখা গেছে বলে দুটি তথ্য আছে। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্দোচীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: কলজেবুটি কাঠকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: কলজেবুটি কাঠকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ মেটে অর্ধ-লেজি (গ্রীক: যবসর = অর্ধ, শবৎশড়ং = লেজ; ল্যাটিন : পধহবহঃর = ধূসর)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: গঁষষবৎরঢ়রপঁং ইড়হধঢ়ধৎঃব, ১৮৫৪
ঝুটিহীন বড় কাঠঠোকরা; মাথার চাঁদির পালক ছোট, রুক্ষ ও আঁইশের মত; ঠোঁট বড়, গোড়ায় বাঁকানো; ঠোঁটের আগা চাপা ও বাটালির মত; নাকের ছিদ্র বড়, গোলাকার ও পালকে ঢাকা; পায়ের পাতা ও নখর বড়; ডানা ও লেজ দীর্ঘ। লেজের পালক খুব শক্ত ও সুচালো।
পৃথিবীতে ৩ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৬৭. গঁষষবৎরঢ়রপঁং ঢ়ঁষাবৎঁষবহঃঁং (ঞবসসরহপশ, ১৮২৬)
সমনাম: চরপঁং ঢ়ঁষাবৎঁষবহঃঁং ঞবসসরহপশ, ১৮২৬
বাংলা নাম: বড় মেটেকুড়ালি
ইংরেজি নাম: এৎবধঃ ঝষধঃু ডড়ড়ফঢ়বপশবৎ

বর্ণনা: বড় মেটেকুড়ালি বিশালদেহী কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ৫১ সেমি, ডানা ২৩.৫ সেমি, ঠোঁট ৬.৫ সেমি, পা ৪ সেমি, লেজ ১৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির ফ্যাকাসে-হলুদ থুতনি ও গলা এবং গলার নিচে পালকের পাটল বর্ণের আগা ছাড়া পূরো দেহ স্লেট-ধূসর; ঠোঁট ফ্যাকাসে; চোখ ঘন পিঙ্গল-বাদামি থেকে লালচে বাদামি ও চোখের গোলকের চামড়া স্লে¬ট-রঙা; কালচে স্লে¬ট -রঙা পা ও পায়ের পাতায় নীল বা সবুজ আভা রয়েছে। পুরুষপাখির চোখ ও ঘাড়ের মাঝামাঝি গাঢ় লাল পট্টি আছে যা স্ত্রীপাখিতে অনুপস্থিত। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির অনুজ্জ^ল পিঠ ও অসংখ্য ফ্যাকাসে ফুটকি ছাড়া দেখতে স্ত্রীপাখির মত। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে গ. ঢ়. যধৎঃবৎঃর বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: বড় মেটেকুড়ালি গ্রীষ্মম-লীয় প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বন , শালবন ও পাহাড়ের পাদদেশের বনে বিচরণ করে; একা, জোড়ায় বা ৩-৬টি পাখির পারিবারিক দলে দেখা যায়। বনের উঁচু গাছের কা-ে বা লম্বা ডালে ঠুকরে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় প্রধানত রয়েছে কাঠ ছিদ্রকারী পোকার পিউপা ও লার্ভা। অন্য কাঠঠোকরার মত তরঙ্গাকারে না গিয়ে অবিরাম ডানা ঝাপটিয়ে সোজা ওড়ে চলে; উচ্চ স্বরে ডাকে: ওয়িকওয়িকওয়িক ওয়িক..। মার্চ-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে বিশালাকার গাছের কা-ে গর্ত খুঁড়ে এরা বাসা বাঁধে।
বিস্তৃতি: বড় মেটেকুড়ালি বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। হিমালয় এবং ভারত, ভুটান ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বড় মেটেকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বড় মেটেকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ম্যুলারের ধুলোমাখা পাখি (সঁষষবৎরঢ়রপঁং = সলোমন ম্যুলার, ১৮৪১; ল্যাটিন : ঢ়ঁষাবৎঁষবহঃঁং = ধূলিময়)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

পরিবার : ঈঅচওঞঙঘওউঅঊ
বসন্তÍ—
ছোট থেকে মাঝারি আকারের বৃক্ষচারী পাখি; শক্ত ও মোটা ঠোঁট; তীক্ষè নখর; পালকের রঙ উজ্জ্বল ও পারিপার্শিক পরিবেশের সঙ্গে মেলানো; এক অথবা দুই পঙ্ক্তির ডাকের দীর্ঘ পুনরাবৃত্তি করে থাকে।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ১৩ গণে ৮৪ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ গণে ৫ প্রজাতি
গণ: গবমধষধরসধ এৎধু, ১৮৪২
সবুজ রঙের বসন্ত; ঠোঁটমোটা; নাকের ছিদ্র পালক/শক্ত-লোমে ঢাকা অথবা খোলা; ঠোঁটের গোড়া শক্ত লোমে ঘেরা, কিছু প্রজাতিতে লোম ঠোঁটের আগা পর্যন্তÍ পৌঁÍছে; চোখের পাশে পালকহীন চামড়া থাকে; লেজ বর্গাকার বা ক্রমশ: সরু ; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা এক রকম।
পৃথিবীতে ২৪ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৫ প্রজাতি
০৬৮. গবমধষধরসধ ধংরধঃরপধ (খধঃযধস, ১৭৯০)
সমনাম: ঞৎড়হমড়হ ধংরধঃরপধ খধঃযধস, ১৭৯০
বাংলা নাম: নীলগলা বসন্তÍ
ইংরেজি নাম: ইষঁব-ঃযৎড়ধঃবফ ইধৎনবঃ

বর্ণনা: নীলগলা বসন্তÍ— পুরোপুরি সবুজ রঙের বৃক্ষচারী পাখি (দৈর্ঘ্য ২৩ সেমি, ওজন ৮০ গ্রাম, ডানা ১০.৫ সেমি, ঠোঁট ২.৮ সেমি, পা ২.৮ সেমি, লেজ ৬.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির সামান্য কিছু পালক ছাড়া দেহের পুরোটাই ঘাসসবুজ বর্ণের; মুখ, গলা ও বুকের উপরিভাগ নীল; বুকের পাশে লাল পট্টি রয়েছে; কপাল লাল, চাঁদি কালো ও গাঢ় লাল। এর কালো কালমেনসহ ঠোঁট ফ্যাকাসে-ধূসর শিঙ-রঙা; কমলা-হলুদ সরু চোখের কিনারাসহ চোখ লালচে-বাদামি; পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ-শে¬¬ট এবং নখর শিঙ-বাদামির মিশ্রণ। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির অনুজ্জ্বল মাথায় সবুজ ও কালো মেশানো রঙসহ লাল চাঁদি রয়েছে। ৪টি উপ প্রজাতির মধ্যে গ. ধ. ধংরধঃরপধ ও গ. ধ. ৎঁনবংপবহং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: নীলগলা বসন্তÍ সকল বন, কুঞ্জবন ও বাগানে বিচরণ করে; সাধারণত একা বা জোড়ায় দেখা যায়; মাঝেমধ্যে অন্যান্য ফলাহারী পাখির মিশ্র দলে যোগ দেয়। এরা ফলদ গাছ থেকে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফল, ম্যানটিস্ ও অন্যান্য পোকা। সাধারণত এরা জোর গলায় দীর্ঘক্ষণ ধরে ডাকে: কুটুররুক...; প্রজনন ঋতুতে প্রায় বিরতিহীনভাবে সারাদিন ডাকতে থাকে এবং পাশের পুরুষপাখিরা ডাকের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। মার্চ-জুলাই মাসে প্রজনন ঋতুতে ভূমি থেকে ২-৮ মিটার উপরে গাছের কা-ে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৪টি; মাপ ২.৭ ´ ২.০ সেমি।
বিস্তৃতি: নীলগলা বসন্তÍ বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের বন ও গ্রামীণ কুঞ্জবনে বিচরণ করে। পাকিস্তানের হিমালয়ের পাদদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে চিনের দক্ষিণাঞ্চল, লাওসের দক্ষিণাঞ্চল ও ভিয়েতনাম, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: নীলগলা বসন্তÍ বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: নীলগলা বসন্তÍ পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ এশিয়ার গলাবাজ (গ্রিক: সবমধষড়ং = বড়, ষধরসড়ং =গলা; ল্যাটিন: ধংরধঃরপঁং =এশিয়ার)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]
০৬৯. গবমধষধরসধ ধঁংঃৎধষরং (ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮২১)
সমনাম: ইঁপপড় ধঁংঃৎধষরং ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮২১
বাংলা নাম: নীলকান বসন্তÍ—
ইংরেজি নাম: ইষঁব-বধৎবফ ইধৎনবঃ

বর্ণনা: নীলকান বসন্তÍ ছোট আকারের সবুজ বৃক্ষচারী পাখি (দৈর্ঘ্য ১৭ সেমি., ওজন ৩৫ গ্রাম, ডানা ৮ সেমি, ঠোঁট ২ সেমি, পা ২.১ সেমি, লেজ ৪.৭ সেমি)। অতি সামান্য কিছু অংশ ছাড়া প্রায় পুরো দেহই এর ঘাস-সবুজ; মাথার দু’পাশে পিছনে ও চোখের নিচে লাল পট্টি আছে; গলা ও কান-ঢাকনি নীল, নিচের ঠোঁট থেকে গলার পাশে কালো ডোরা এবং কালো কণ্ঠ-কবচ বুকের ওপর পর্যন্তÍ বিস্তৃত। এর ঠোঁটের গোড়া হলুদ-সবুজ, ঠোঁট ঘন শিঙ-বাদামি; পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জল সবুজ বা হলদে-সবুজ থেকে স্লে-ট-সবুজ। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার পাশে লাল পট্টি নেই। ৭টি উপ-প্রজাতির মধ্যে গ. ধ. পুধহড়ঃরং বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: নীলকান বসন্তÍ ঘন প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বনে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় দেখা যায়। ঘন বনের ফলদ গাছে খাদ্য সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে প্রধানত ছোট ফল এবং কিছু পোকামাকড়। এরা কখনও ভূমিতে নামেনা; পূর্বরাগের সময় অবিরাম ডাকতে থাকে, বিশেষ করে গোধূলিতে; ধাতব ঝংকারসহ এর ডাক বনে বনে প্রতিধ্বনিত হয়: কু-টুরর. কু-টুরর..। এপ্রিল-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে ঘন বনের মৃত কা- বা শাখায় গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ২-৪টি; মাপ ২.৪ ´ ১.৪ সেমি।
বিস্তৃতি: নীলকান বসন্তÍ বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। ভারতের হিমালয়ের পূর্বভাগ থেকে ভুটান, নেপাল, মিয়ানমারের পূর্বভাগ, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: নীলকান বসন্তÍ বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: নীলকান বসন্তÍ পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ দক্ষিণা গলাবাজ (গ্রীক: সবমধষড়ং =বড়, ষধরসড়ং =গলা; ল্যাটিন: ধঁংঃৎধষরং = দক্ষিণাঞ্চল)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]
০৭০. গবমধষধরসধ যধবসধপবঢ়যধষধ (গহৃষষবৎ, ১৭৭৬)
সমনাম: ইঁপপড় যধবসধপবঢ়যধষঁং গহৃষষবৎ, ১৭৭৬
বাংলা নাম: সেকরা বসন্তÍ—, ছোট বসন্তÍ বাউরি (আলী)
ইংরেজি নাম: ঈড়ঢ়ঢ়বৎংসরঃয ইধৎনবঃ (ঈৎরসংড়হ-নৎবধংঃবফ ইধৎনবঃ)
বর্ণনা: সেকরা বসন্তÍ— সবুজ রঙের খুদে বৃক্ষচারী পাখি (দৈর্ঘ্য ১৭ সেমি, ওজন ৪০ গ্রাম, ডানা ৮ সেমি, ঠোঁট ১.৮ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৩.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির গাঢ় লাল কপালসহ পিঠ ঘাস-সবুজ; গাঢ় লাল ও কালো বুকের পট্টিসহ গলা হলুদ; সবুজ ডোরাসহ দেহতলের অবশেষ ফ্যাকাসে; কালো লাইন চোখের উপরের ও নিচের হলুদ পট্টিকে পৃথক করেছে। এর ঠোঁট ঘন শিঙ-বাদামি বা কালো ও মুখ ফ্যাকাসে পাটল-ধূসর; পা ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল এবং নখর কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির গলা কালো, বুকের পট্টি জলপাই-সবুজ, পেট ও বগলের ডোরা সমূহ সবুজ; এবং কপাল ও বুকে লালের অনুপস্থিতি রয়েছে। ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে গ. য. রহফরপধ বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: সেকরা বসন্তÍ— পাতাঝরা বন, গাছপালাসমৃদ্ধ অঞ্চল, রাস্তার পাশের গাছপালা, গ্রামীণ কুঞ্জবন ও শহুরে বাগানে বিচরণ করে; সাধারণত একা, জোড়ায় বা ফলাহারী পাখিদের মিশ্র-দলে দেখা যায়। ফলদ গাছে, বিশেষ করে বটগাছে, খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে প্রধানত বট, পাকুর ও অন্যান্য রসালো ফল এবং কিছু শুঁয়োপোকা ও উইপোকা। এরা প্লত ও সোজা উড়তে পারে; সেঁকড়ার হাতুড়ির আঘাতের মত শব্দ করে ডাকে: টক... টক... টক...। নভেম্বর-জুন মাসে প্রজননকালে গাছের শাখায় ২৫-৮০ সেমি গভীর গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ২-৪টি; মাপ ২.৫´১.৭ সেমি। বাসার যাবতীয় কাজ পুরুষ ও স্ত্রী মিলে করে।
বিস্তৃতি: সেকরা বসন্তÍ— বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; দেশের সব বিভাগের সর্বত্র পাওয়া যায়। পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান থেকে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: সেকরা বসন্তÍ— বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: সেকরা বসন্তÍ— পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ লালমাথা গলাবাজ (গ্রিক : সবমধষড়ং = বড়, ষধরসড়ং = গলা, যধরসধ = রক্ত-লাল, শবঢ়যধষড়ং = মাথা)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরজ্জামান]

০৭১. গবমধষধরসধ ষরহবধঃধ (ঠরবরষষড়ঃ, ১৮১৬)
সমনাম: ইঁপপড় ষরহবধঃঁং ঠরবরষষড়ঃ, ১৮১৬
বাংলা নাম: দাগি বসন্তÍ—
ইংরেজি নাম: খরহবধঃবফ ইধৎনবঃ
বর্ণনা: দাগি বসন্তÍ সবুজ রঙের মাঝারি আকারের বৃক্ষচারী পাখি (দৈর্ঘ্য ২৮ সেমি, ওজন ১৫৫ গ্রাম, ডানা ১৩ সেমি, ঠোঁট ৩.২ সেমি, পা ৩ সেমি, লেজ ১৮.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের পুরোটাই ঘাস-সবুজ; মাথা ও বুকের পালকে ফ্যাকাসে ডোরা রয়েছে; মাথা ও কাঁধ-ঢাকনিতে পীতাভ সাদাটে ডোরা; থুতনি ও গলা সাদাটে; এবং বুকে পীতাভ সাদা ডোরা আছে। ঠোঁট ফিকে হলুদ; চোখ বাদামি, চোখের পাতা গাঢ় হলুদ; পা ও পায়ের পাতা মেটে হলুদ থেকে কমলা-হলুদ। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে গ. ষ. যড়ফমংড়হর বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: দাগি বসন্তÍ সব ধরনের বন, খোলা বনভূমি, উদ্যান ও গ্রামে বিচরণ করে; সাধারণত একা, জোড়ায় বা বিচ্ছিন্ন দলে দেখা যায়। ফলদ গাছ ও ঝোপে খাদ্য খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফল, ফুলের মধু, উইপোকা, লার্ভা, টিকটিকি ও গেছো ব্যাঙ। গ্রীষ্মকালে এরা অবিরাম ডাকাডাকি করে; জোর গলায় বন কাঁপিয়ে ডাকে: কুরক... এবং পুক্রো... পুক্রো...। মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে ভূমি থেকে ৩-১২ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ২-৪টি ; মাপ ৩.২´২.৩ সেমি। বাসার যাবতীয় কাজ পুরুষ ও স্ত্রী মিলে করে। ১৪-১৫ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: দাগি বসন্তÍ বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সকল বিভাগের সব বনভূমিতে বসবাস করে। ভারতের হিমালয়ের পাদদেশ থেকে নেপাল ও ভুটান থেকে মিয়ানমারের পূর্বভাগ, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: দাগি বসন্তÍ বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: দাগি বসন্তÍ পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ দাগি গলাবাজ (গ্রীক: সবমধষড়ং = বড়, ষধরসড়ং = গলা; ল্যাটিন: ষরহবধঃঁং = রেখা)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]
০৭২. গবমধষধরসধ ারৎবহং (ইড়ফফধবৎঃ, ১৭৮৩)
সমনাম: ইঁপপড় ারৎবহং ইড়ফফধবৎঃ, ১৭৮৩
বাংলা নাম: বড় বসন্তÍ
ইংরেজি নাম: এৎবধঃ ইধৎনবঃ
বর্ণনা: বড় বসন্তÍ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বসন্তÍ পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি, ওজন ২৪০ গ্রাম, ডানা ১৫ সেমি, ঠোঁট ৪.৫ সেমি, পা ২.৩ সেমি, লেজ ১০.৫ সেমি)। এর পুরো মাথা ও গলা কালচে বেগুনি-নীল; পিঠ ও বুকের উপরিভাগ মেরুন-বাদামি এবং ডানা ও লেজ সবুজ; জলপাই ডোরা সমেত পেট ফ্যাকাসে ও লেজতল-ঢাকনি উজ্জ্বল লাল। বড় ফ্যাকাসে হলুদ ঠোঁটের গোড়া সামান্য সবুজাভ ও আগার কাছাকাছি কালচে; চোখ প্রায় বাদামি-গাঢ় লাল; পা ও পায়ের পাতা জলপাই ফ্যাকাসে এবং নখরগুলো শিঙ-কালো। ৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে সম্ভবত: গ. া. সধমহরভরপধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: বড় বসন্তÍ আর্দ্র উপ-গ্রীষ্মম-লীয় চিরসবুজ বন, পাহাড়ি ফলের বাগান ও উপত্যকার বনভূমিতে বিচরণ করে; একা, জোড়ায় বা ছোট দলে দেখা যায়। ফুল ও ফলদ গাছে খাবার সন্ধান করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে রসালো ফল, ফুলের পাঁপড়ি, গুবরে পোকা, উইপোকা ও অন্য পোকামাকড়। ওড়ার ওঠার সময় এর ডানা থেকে শিস্ দেবার মত শব্দ হয়; সাধারণত দূর থেকে শুনতে পাওয়া যায় এমন উচ্চ স্বরে ডাকে: পী-লিও...; এবং মাঝে মাঝে কর্কশ কণ্ঠে কান্নার সুরে ডাকে: কিয়ারর -র ; ক্রায়ি-অ্যাহ..। এপ্রিল-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের কা-ে ভূমি থেকে ৩-৫ মিটার উপরে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সংখ্যায় ২-৩ টি; মাপ ৩.৪ ´ ২.৪ সেমি।
বিস্তৃতি: বড় বসন্তÍ বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। পাকিস্তানের হিমালয়, ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, লাওস এবং ভিয়েতনামে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বড় বসন্তÍ বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এই প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: বড় বসন্তÍ পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সবুজ গলাবাজ (গ্রীক: সবমধষড়ং = বড়, ষধরসড়ং = গলা; ল্যাটিন: ারৎবহং = সবুজ)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

পরিবার: ইটঈঊজঙঞওউঅঊ
ধনেশ
অতিকায় ঠোটের বৃক্ষচারী পাখি; বিশাল বাঁকা ঠোঁটের ওপর বড় ফাঁপা ‘শিঙ’; ডানা প্রশস্ত ও গোলাকার; লম্বা লেজ; ডানা ঝাপটে উড়লে জোরে শব্দ হয়; এক নাগাড়ে ডানা ঝাপ্টায় না, একটু পর পর প্রান্তÍপালক ওপর দিকে বাঁকিয়ে ডানা মেলে ধরে ভেসে চলে।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ১১ গণে ৫৪ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৪ গণের ৪ প্রজাতি

গণ: ঙপুপবৎড়ং ঐঁসব,১৮৭৩
অতিকায় ঠোঁটের পাখি; ঠোঁটের উপরের ‘শিঙ’ ছোট অথবা অদৃশ্য; চোখের পাতায় বড় বড় পাপড়ি থাকে; লেজ লম্বা।
পৃথিবীতে ৩ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৭৩. ঙপুপবৎড়ং নরৎড়ংঃৎরং (ঝপড়ঢ়ড়ষর, ১৭৮৬)
সমনাম: ইবৎপবৎড়ং নরৎড়ংঃৎরং ঝপড়ঢ়ড়ষর, ১৭৮৬
বাংলা নাম: দেশি মেটেধনেশ, পুটিয়াল ধনেশ (আলী)
ইংরেজি নাম: ওহফরধহ এৎবু ঐড়ৎহনরষষ

বর্ণনা: দেশি মেটেধনেশ ধূসর রঙের বৃক্ষচারী পাখি (দৈর্ঘ্য ৬১ সেমি, ডানা ২১.২ সেমি, ঠোঁট ৪.৭ সেমি, পা ৪.৪ সেমি, লেজ ২৬.৫ সেমি)। পুরুষপাখির পিঠ ফ্যাকাসে বালুকাময় বাদামি-ধূসর ও দেহতল কালচে ধূসর; প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পালকের আগা সাদা; লম্বা সাদা-ও-কালো বর্ণবিন্যাসের লেজটি ক্রমান্ত^য়ে সজ্জিত; ভ্রু প্রশস্ত সাদা ও কান-ঢাকনি কালচে ধূসর। এর লম্বা বাঁকা ঠোঁটের ওপর সরু ও সুচালো ‘শিঙ’ রয়েছে; ঠোঁটের গোড়া ও শিরস্ত্রাণ স্লে¬ট-কালো; ঠোঁটের আগা ও নিচের ঠোঁটের অধিকাংশ অংশ হালকা পীত বা মোম-হলুদ; মুখের তালু ফ্যাকাসে; পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে থেকে স্লেট-কালো এবং নখর কালো। স্ত্রীপাখির ‘শিঙ’ ছোট ও ঠোঁটের অস্পষ্ট আগা ছাড়া দেখতে পুরুষপাখির মত। তরুণ পাখির শিঙহীন ঠোঁট হলুদ।
স্বভাব: দেশি মেটেধনেশ শুষ্ক বনভূমি, ফলের বাগান ও কুঞ্জবন এবং বট, পিপুল, আম ও তেঁতুলগাছে বিচরণ করে; জোড়ায় অথবা ৫-৬টির ছোট দলে দেখা যায়; প্রায়ই ময়না, হরিয়াল, বুলবুল ও অন্য ফলাহারী পাখির মিশ্র দলে থাকে। খাদ্য সংগ্রহের সময় এরা লেজ খাড়া করে রাখে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফল, ফুলের পাপড়ি, গুবরে পোকা, ফড়িং, ম্যানটিস, বোলতা, টিকটিকি, ইদুর ও অন্য ছোট প্রাণী। পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য এরা ডাকে: চী-ওওউউ..; এবং নিজ এলাকা প্রতিরক্ষার জন্য উচ্চ কর্কশ স্বরে ডাকে: কে-কে-কা-ই..। মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের কা-ের প্রাকৃতিক ফাটলে বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো অনুজ্জ্বল সাদা, ফোঁটার সময় মলিন দেখা যায়, সংখ্যায় ২-৪টি , মাপ ৪.১´৩.০ সেমি।
বিস্তৃতি: দেশি মেটেধনেশ বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; রাজশাহী বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামীণ কুঞ্জ বনে দেখা যেত, এখন নেই। এখন ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ আছে।
অবস্থা: দেশি মেটেধনেশ বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে বিপন্নœ বলে বিবেচিত । বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে দেশি মেটেধনেশকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: অহঃযৎধপড়পবৎড়ং জবরপযবহনধপয, ১৮৪৯
অতিকায় ঠোঁটের পাখি; ঠোঁটের উপরের ‘শিঙ’ বেশ উঁচু ও লম্বা, চাঁদির পিছন পর্যন্তÍ বিস্তৃত; চোখের পাশে ও গলার ত্বক পালকহীন।
পৃথিবীতে ৫ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৭৪. অহঃযৎধপড়পবৎড়ং ধষনরৎড়ংঃৎরং (ঝযধি ধহফ ঘড়ফফবৎ, ১৭৯০)
সমনাম: ইঁপবৎড়ং ধষনরৎড়ংঃৎরং ঝযধি ধহফ ঘড়ফফবৎ, ১৭৯০
বাংলা নাম: উদয়ী পাকরাধনেশ, কাউ ধনেশ (আই)
ইংরেজি নাম: ঙৎরবহঃধষ চরবফ ঐড়ৎহনরষষ

বর্ণনা: উদয়ী পাকরাধনেশ বড় সাদাকালো দেহ আর হলদে ঠোঁটের পাখি (দৈর্ঘ্য ৯০ সেমি, ডানা ২৯.৫ সেমি, ঠোঁট ১২.৫ সেমি, পা ৬.২ সেমি, লেজ ৩০ সেমি)। পুরুষপাখির চেহারা ও আকার স্ত্রী থেকে অনেকটা আলাদা। পুরুষপাখির পিঠ মসৃণ ও চকচকে কালো, গলার পট্টি ফ্যাকাসে নীল এবং লেজ কালো; ডানার প্রান্তÍ-পালক ও লেজের আগা সাদা; দেহতল সাদা; কালো আগাসহ ঠোঁট ও ‘শিঙ’ হলুদ; চোখ লালচে ও চোখের গোলকের চামড়া নীলচে-সাদা; এবং পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ-শে¬ট রঙা। স্ত্রীপাখি আকারে ছোট; চোখ বাদামি এবং ঠোঁট ও ‘শিঙ’এর বেশীর ভাগ জায়গা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও তরুণ পাখির লেজ বেশ সরু, ঠোঁট ছোট এবং পালকে চাকচিক্য নেই। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে অ. ধ. ধষনরৎড়ংঃৎরং বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: উদয়ী পাকরাধনেশ প্রশস্ত পাতাওয়ালা চিরসবুজ ও পাতাঝরা বনে বিচরণ করে; সাধারণত ছোট ছোট দলে থাকে। এরা ফলদ গাছ ও মাঝে মাঝে ভূমি থেকে খাবার তুলে নেয়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে প্রধানত ফল, তবে উই, টিকটিকি, সাপ, পাখির ছানাসহ অন্য ছোট প্রাণীও খেয়ে থাকে। মাঝে মাঝে এরা খাবার শূন্যে ছুড়ে দিয়ে ঠোঁটে পুরে নেয়; এবং কর্কশ কণ্ঠে চেচিয়ে ডাকে: ক্ল্যাঙ-ক্যাঙ,কিয়েক কেক-কেক; কক-কক,কক-কক..; অথবা কিচমিচ করে ডাকে: কুয়ি-কুয়ি- কুয়িকুয়িকুয়িকুয়ি...। এপ্রিল-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে ভূমি থেকে ৩-৮মিটার উঁচুতে গাছের কোটরে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ২-৩টি; মাপ ৪.৯´৩.৪ সেমি।
বিস্তৃতি: উদয়ী পাকরাধনেশ বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার থেকে চিন, ইন্দোচীন ও মালয়েশিয়ায়সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: উদয়ী পাকরাধনেশ বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে বিপন্ন বলে বিবেচিত । বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: উদয়ী পাকরাধনেশ পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ধলাঠোঁটে কালাশিঙ (গ্রিক: ধহঃযৎধশড়ং = কয়লা, শবৎড়ং= শিঙ; ল্যাটিন : ধষনঁং = সাদা, ৎড়ংঃৎরং= ঠোঁটের)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: ইঁপবৎড়ং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
অতিকায় ঠোঁটের বিশালাকৃতির পাখি; ঠোঁট বেশ লম্বা, শক্ত ও অনেক বাঁকা; ঠোঁটের উপরের শিঙ বড়, প্রশস্ত এবং পিছনের প্রান্তÍ প্রশস্ত ও গোলাকার ; ঘাড় ও মাথার পিছনে অনেক লম্বা, অগোছালো পালক থাকলেও তা প্রকৃত ঝুটি হয় নি; থুতনি পালকময়; চোখের পাশ পালকহীন; লেজ লম্বা ও প্রান্ত গোলাকার।
পৃথিবীতে ৩ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৭৫. ইঁপবৎড়ং নরপড়ৎহরং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: রাজ ধনেশ
ইংরেজি নাম: এৎবধঃ ঐড়ৎহনরষষ

বর্ণনা: রাজ ধনেশ অতিকায় ঠোঁট আর বিশালদেহী বৃক্ষচারী পাখি (দৈর্ঘ্য ১৩০ সেমি, ডানা ৫২.৫ সেমি, ঠোঁট ৩৫.২ সেমি, পা ৭.৪ সেমি, লেজ ৪০.৫ সেমি)। এর পিঠ ও দেহতল পাকরা; নিচের দিকে বাঁকা ঠোঁটের ওপর সোনালী-হলুদ ‘শিঙ’ এবং ঘাড় ও বুকের উপরিভাগ হলদে-সাদা; ডানায় সাদা ডোরা রয়েছে; সাদা লেজের প্রায় প্রান্তেÍ প্রশস্ত কালো পট্টি আছে; ঠোঁট ও শিঙ হলুদ। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কিছুটা পার্থক্য আছে। পুরুষপাখির ঠোঁটের সামনের অংশ ও খাঁজ কালো; চোখ রক্তলাল ও চোখের পাশের চামড়া কালো। স্ত্রীপাখির চোখের পাশের চামড়া লাল, শিঙ-এর পিছনে লাল রঙ থাকে ও সামনে কালো রঙ থাকে না।
স্বভাব: রাজ ধনেশ প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে বিচরণ করে; জোড়ায় বা ৩-৫টি পাখির ছোট দলে ঘুরে বেড়ায়। উঁচু ফলদ গাছে ও গাছের নিচে মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় প্রধানত রয়েছে ফল, তবে বাগে পেলে টিকটিকি, ইদুর, সাপ ও গাছের কোটর থেকে পাখির ছানাও খেয়ে থাকে। গলা প্রসারিত ও ঠোঁট আকাশমুখি করে কিছু সময় পর পর এরা গভীর ও উচ্চ স্বরে ডাকে: ট্রেক.. ট্রেক..। ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাসের প্রজনন ঋতুতে ভূমি থেকে ১৮-২৫ মিটার উঁচুতে বনের বিশাল গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ১-৩টি; মাপ ৬.৫´৪.৫ সেমি। কেবল স্ত্রীপাখি ডিমে তা দেয়; ও ৩১ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: রাজ ধনেশ বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে দেখা যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, চিন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: রাজ ধনেশ বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: রাজ ধনেশ পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ জোড়াশিঙ গেছোষাঁড় (ল্যাটিন: নঁপবৎঁং = ষাঁড়ের মত প্রাণী, নরপড়ৎহরং = দুই শিঙ)।

[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: জযুঃরপবৎড়ং জবরপযবহনধপয, ১৮৪৯
অতিকায় ঠোঁটের পাখি; ঠোঁটের উপরের শিঙ ছোট, গোলাকার ও ঢেউখেলানো; পালকহীন থুতনি ও গলা; গলদেশে বড় থলে; মাথার চাঁদিতে লম্বা লম্বা অগোছালো পালকের চূড়া; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য থাকে।
পৃথিবীতে ৫ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৭৬. জযুঃরপবৎড়ং ঁহফঁষধঃঁং (ঝযধ,ি ১৮১১)
সমনাম: ইঁপবৎড়ং ঁহফঁষধঃঁং ঝযধ,ি ১৮১১
বাংলা নাম: পাতাঠুঁটি ধনেশ
ইংরেজি নাম: ডৎবধঃযবফ ঐড়ৎহনরষষ

বর্ণনা: পাতাঠুঁটি ধনেশ গলায় হলদে থলে লাগানো বৃক্ষচারী পাখি (দৈর্ঘ্য ৮০ সেমি, ডানা ৪৮ সেমি, ঠোঁট ১৯.৫ সেমি, পা ৬.৫ সেমি, লেজ ১৪ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কিছু পার্থক্য আছে। পুরুষপাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড় লালচে; মাথার পাশ সাদাটে; ঘাড়ের উপরিভাগ পীতাভ-সাদা ও পালকহীন উজ্জ্বল হলুদ ঠোঁটের নিচের থলেতে আড়াআড়ি কালো ফেটা রয়েছে; সাদা লেজ ছাড়া দেহের বাকি অংশ চকচকে কালো; চোখ রক্তলাল ও চোখের পাশের চামড়া ইটের মত লাল; মোম-হলুদ ঠোঁটের গোড়ার দিকে অনুজ্জ^ল গোলাপি ও কালচে লাল ঢেউখেলানো। স্ত্রীপাখির কালো মাথা ও ঘাড়; ঠোঁটের নিচের নীল থলে, বাদামি বা ধূসর-বাদামি চোখ ও লালচে হলুদ ঠোঁট। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েরই পা ও পায়ের পাতা সবুজে বা কালচে-স্লে¬ট রঙের। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ফ্যাকাসে নীল চোখ ও ঢেউহীন ঠোঁট ছাড়া চেহারা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষপাখির মত।
স্বভাব: পাতাঠুঁটি ধনেশ চিরসবুজ বনের কিনারায় বিচরণ করে; জোড়ায় বা ছোট দলে দেখা যায়। এরা ফলদ গাছে খাবার খায়। খাবার তালিকায় প্রধানত রয়েছে রসালো ফল; কখনও কখনও টিকটিকি ও অন্য ছোট প্রাণীও খেয়ে থাকে। গাছ থেকে গাছে ওড়ার সময় এরা ডাকে: উক-হর্য়িক..। এপ্রিল-মে মাসে প্রজনন ঋতু; পূর্বরাগে পুরুষপাখিরা লেজ ওঠানামা করে, ঠোঁট নাড়ায় ও কর্কশ কণ্ঠে ‘গান’ গায়; এবং বনের উঁচু গাছের কোটরে বাসা বাঁধে। স্ত্রীপাখি ২টি সাদা ডিম পাড়ে, ডিমের মাপ ৬.৩´৪.২ সেমি। ডিম পাড়া শুরু হলে পুরুষপাখি কাদার প্রলেপ দিয়ে বাসার প্রবেশ-পথ সরু করে; ডিমে তা দেওয়া থেকে ছানা বড় হওয়া পর্যন্তÍ স্ত্রীপাখি বাসার ভেতরে থাকে; বাসার মুখের সরু ছিদ্র দিয়ে পুরুষপাখি পুরো পরিবারের খাবার সরবরাহ করে।
বিস্তৃতি: পাতাঠুঁটি ধনেশ বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; চট্রগাম বিভাগে দেখা গেছে বলে তথ্য আছে; অতীতে আবাসিক পাখি ছিল; প্রধানত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যেত। ভারত, ভুটান, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: পাতাঠুঁটি ধনেশ বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে । বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পাতাঠুঁটি ধনেশ পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ঢেউ-খেলানো শিঙ (গ্রিক: ৎঁঃরং = রেখা, ধশবৎড়ং = শিঙ; ল্যাটিন: ঁহফঁষধঃবং = ঢেউ খেলানো)।
[ইনাম আল হক ও মো: শাহরিয়ার মাহমুদ]

পরিবার: টচটচওউঅঊ
হুদহুদ
মাঝারি আকারের পাখি; মাথার বড় চূড়া; ডানা প্রশস্ত গোলাকার; পা খাটো কিন্ত‘ শক্তিশালী ।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ১ গণে ২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ গণে ১ প্রজাতি

গণ: টঢ়ঁঢ়ধ খরহহধবঁং, ১৭৫৮
মাঝারি আকারের পাখি; মাথায় পাখার মত সুদর্শন চূড়া; ঠোঁট লম্বা, সরু ও নিচের দিকে বাঁকানো; জিহ্বা খুব ছোট; ডানা গোলাকার, ১০টি প্রান্তÍপালক; ১০ পালকের সহ লেজ; পা খাটো, তৃতীয় ও চতুর্থ আঙুল গোড়ায় সংযুক্ত।
পৃথিবীতে ২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৭৭. টঢ়ঁঢ়ধ বঢ়ড়ঢ়ং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: পাতি হুদহুদ
ইংরেজি নাম: ঊঁৎধংরধহ ঐড়ড়ঢ়ড়ব

বর্ণনা: পাতি হুদহুদ মাথায় মুকুট পড়া ডোরাকাটা পাখি (দৈর্ঘ্য ৩১ সেমি, ওজন ৬৫ গ্রাম, ডানা ১৪.৩ সেমি, ঠোঁট ৪.৭ সেমি, পা ২.৩ সেমি, লেজ ১০ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মুখ গলা ও বুক কমলা-পীতাভ বা লালচে-কমলা; ডানায় কালো ও সাদা জেব্রা প্যাটার্ন; মাথায় কাকাতুয়ার মত বিশাল ঝুটি, ঝুটির রঙ কমলা, ডগা কালো, ঝুটি গুটালে মাথার পিছনে ভাঁজ হয়ে পড়ে থাকে; লেজের বর্ণবিন্যাস কালো ও সাদা। এর ঠোঁট শিঙ-বাদামি বা শিঙ-কালো; মুখ মেটে ফ্যাকাসে; চোখ বাদামি এবং পা ও পায়ের পাতা স্লে¬ট-বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ অনুজ্জ্ব^ল ও ফ্যাকাসে এবং দেহতল বাদামি। ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ট. ব. ষড়হমরৎড়ংঃৎরং বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: পাতি হুদহুদ হালকা বনপ্রান্তÍ, খোলা মাঠ, উদ্যান, নদীতীর, আবাদি জমি ও গ্রামাঞ্চলে বিচরণ করে; সাধারণত একা বা জোড়ায় থাকে; পরিযায়নের সময় ১০-২০টি পাখির বিচ্ছিন্ন দল গঠন করে। মাটিতে লম্বা ঠোঁট ঢুকিয়ে এরা খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, পিউপা, ঝিঁঝিঁ পোকা, পঙ্গপাল, ফড়িং ও শুঁয়োপোকা। ধীরে ও আঁকাবাঁকা ঢেউয়ের মত ওঠানামা করে এরা ওড়ে চলে; বসার মুহূর্তে ঝুটি ওঠায়; মাঝে মাঝে ডাকে: হুদ..হুদ..; এবং প্রজননকালে ‘গান’ গায়: উপ্-উপ্-উপ্ ..। এপ্রিল-জুন মাসে প্রজনন ঋতুতে গাছের অথবা দালানের ফাটলে পাতা, ঘাস, পশম, পালক ও আবর্জনা দিয়ে বাসা বেঁেধ ডিম পাড়ে। ডিমগুলো নীল; সংখ্যায় ৫-৭টি; মাপ ২.৫´১.৮ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েই বাসার বাকি কাজ করে। ১৫-১৭দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: পাতি হুদহুদ বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের গ্রামের খোলা জায়গায় বিচরণ করে। ইউরোপ, আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: পাতি হুদহুদ বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পাতি হুদহুদ পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হুদহুদ (ল্যাটিন: ঁঢ়ঁঢ়ধ = হুদহুদ; গ্রীক: বঢ়ড়ঢ়ং = হুদহুদ)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

পরিবার: ঞজঙএঙঘওউঅঊ
কুচকুচি
ঘন বনের বৃক্ষচারী পাখি; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় পালকের লেজ; ছোট ডানা; দৃঢ়, খাটো ঘাড়; ছোট চওড়া ঠোঁট; প্রশস্ত, লম্বা লেজ; উজ্জ্বল বর্ণের পালক।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ৬ গণে ৩৯ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ গণের ১ প্রজাতি

গণ: ঐধৎঢ়ধপঃবং ঝধিরহংড়হ, ১৮৩৩
বৃক্ষবাসী নিভৃতচারী পাখি; ঠোঁট খাটো, শক্ত ও প্রশস্ত; ঠোঁটে ভিতরে করাতের মত ‘দাঁত’ আছে; নাকের ছিদ্র ও ঠোঁটের গোড়া সরু, শক্ত, খাড়া পালকে ঢাকা; গাল আংশিক পালকহীন; পা ছোট ও অর্ধেক পালকময়; লেজ লম্বা; ডানা গোলাকার, প্রান্তÍপালক ১০টি; পালক কোমল ও ঘন; চামড়া খুব পাতলা।
পৃথিবীতে ১১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৭৮. ঐধৎঢ়ধপঃবং বৎুঃযৎড়পবঢ়যধষঁং (এড়ঁষফ, ১৮৩৪)
সমনাম: ঞৎড়মড়হ বৎুঃযৎড়পবঢ়যধষঁং এড়ঁষফ, ১৮৩৪
বাংলা নাম: লালমাথা কুচকুচি, কুচকুচিয়া (আলী)
ইংরেজি নাম: জবফ-যবধফবফ ঞৎড়মড়হ

বর্ণনা: লালমাথা কুচকুচি আগুনরঙ পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৫ সেমি, ওজন ৭৫ গ্রাম, ডানা ১৪.৫ সেমি, ঠোঁট ২.২ সেমি, পা ১.৯ সেমি, লেজ ১৯.২ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। পুরুষপাখির মাথা,ঘাড় ও বুক গাঢ় লাল; পিঠ মরচে বাদামি ও দেহতল পাটল বর্ণের; বুকের বড় সাদা ফেটা; ডানার পালক-ঢাকনি ধূসর ও সূক্ষ্ম কালো দাগে ভরা; লেজ লম্বা, ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া। স্ত্রীপাখির মাথা, ঘাড় ও বুক দারুচিনিরঙের। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের চোখ গাঢ় লাল, চোখের গোলকের ত্বক বেগুনি-নীল এবং ঠোঁটের সঙ্গমস্থল প্রায় বেগুনি; পা ও পায়ের পাতা বেগুনি; দুই রঙের ঠোঁট: উপরের পাটি বেগুনি-নীল ও নিচের পাটি কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির বুক, বগল ও তলপেট পীতাভ সাদা। ১০টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঐ. ব. বৎুঃযৎড়পবঢ়যধষঁং বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: লালমাথা কুচকুচি ঘন প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বন ও মিশ্র বাঁশ বনে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় থাকতে দেখা যায়। বনের ৪-৬ মি উঁচু ডালে নীরবে বসে থাকে এবং ওড়ে এসে শিকার ধরে অথবা মাটিতে নেমে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে উড়ন্তÍ পোকামাকড়, লার্ভা ও রসালো ফল। এরা শান্তÍ ও লাজুক পাখি; আবডালে থেকে নম্র মধুর সুরে বার বার ডাকে: কিউ.. কিউ ..; মাঝে মাঝে ‘গান’ গায়: টিয়াউপ... টিয়াউপ..। এপ্রিল-জুলাই মাসে প্রজনন ঋতুতে ঘন বনে বৃক্ষের প্রাকৃতিক কোটরে বা কাঠঠোকরার শূন্য গর্তে বাসা করে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ, সংর্খায় ৩-৪টি, মাপ ২.৮´২.৪ সেমি।
বিস্তৃতি: লালমাথা কুচকুচি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, ইন্দোচীন ও ইন্দোনেশিয়াসহ হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: লালমাথা কুচকুচি বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে বিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: লালমাথা কুচকুচির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ রাঙ্গামাথা ফলচোর (গ্রীক: যধৎঢ়ধশঃবং = ফলচোর, বৎঁঃযৎড়= লাল, শবঢ়যধষড়ং = মাথা)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]
পরিবার: ঈঙজঅঈওওউঅঊ
নীলকান্তÍ
খোলা প্রান্তরের পাখি; মাঝারি আকার; ঠোঁট খাটো ও ডগা বড়শির মত বাঁকানো; পা খাটো; মাঝারি দৈর্ঘ্যের ডানা; উজ্জ্বল রঙ।
এ পরিবারের পৃথিবীতে ২ গণে ১২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ গণের ২ প্রজাতি

গণ: ঈড়ৎধপরধং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
খোলা প্রান্তরের পাখি; ঠোঁট লম্বা ও পাশে চাপা; নাকের ছিদ্র লম্বাটে ও উন্মুক্ত; মুখের পাশে শক্ত কাঠির মত পালকের সারি; উজ্জ্বল নীলচে রঙ।
পৃথিবীতে ৮ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৭৯. ঈড়ৎধপরধং নবহমযধষবহংরং (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: ঈড়ৎাঁং নবহমযধষবহংরং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: বাংলা নীলকান্তÍ, নীলকণ্ঠ (আই)
ইংরেজি নাম: ওহফরধহ জড়ষষবৎ

বর্ণনা: বাংলা নীলকান্তÍ বাদামি বুক ও নীল ডানার পাখি (দৈর্ঘ্য ৩১ সেমি, ওজন ১৬৫ গ্রাম, ডানা ১৯ সেমি, ঠোঁট ৩.৫ সেমি, পা ২.৭ সেমি, লেজ ১৩ সেমি)। বসে থাকা অবস্থায় এর পিঠ লালচে বাদামি; ওড়ে গেলে ডানার নীল রঙ দেখা যায়; ডানায় পর্যায়ক্রমে ফ্যাকাসে নীল ও কালচে নীল পালক রয়েছে; গলাবন্ধ, ঘাড়ের পিছনের ভাগ, গলা ও বুক লালচে-বাদামি; কাঁধ-ঢাকনি ও ডানার গোড়ার পালক বাদামি জলপাই-সবুজ; তলপেট ও অবসারণী ফ্যাকাসে নীল এবং লেজ গাঢ় নীল। এর চোখ বাদামি; ঠোঁট বাদামি-কালো; পা ও পায়ের সঙ্গে সংযুক্ত অঙ্গ হলদে-বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি অনুজ্জ্বল; কাঁধ-ঢাকনি মেটে বাদামি এবং গলা ও বুকে ডোরা রয়েছে। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. ন. নবহমযধষবহংরং এবং সম্ভবত ঈ. ন. ধভভরহরং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: বাংলা নীলকান্তÍ পাতাঝরা বন, বনের প্রান্তÍদেশ, তৃণভূমি, ক্ষুদ্র ঝোপ, খামার ও গ্রামাঞ্চল বিচরণ করে; পাতাহীন ডাল, বেড়ার বাঁশ অথবা বৈদ্যুতিক তারে একাকী বসে থাকে। নীরবে বসে এরা ধীরে লেজ ওপর-নিচে দোলায় ও নিচের ভূমিতে শিকার খোঁজে; আহার্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, টিকটিকি, ব্যাঙ ও সাপ। ঘাসে বা ঝোপে আগুন দেওয়া হলে পোকা ধরার জন্য এরা পাশে বসে অপেক্ষা করে। এপ্রিল-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে এরা উঁচু গলায় ও তীক্ষè সুরে ডাকে: ক্রাক.. ক্রাক..; পুরুষ ও স্ত্রী সমবেত ওড়ার মহড়া দেয়; এবং গাছের কোটরে অথবা দালানকোঠার ফাঁক-ফোঁকরে ঘাস ও খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৫টি, মাপ ৩.৮২.৮ সেমি। ১৭-১৯ দিনে ডিম ফোটে; ২০-২৫দিনে ছানার গায়ে ওড়ার পালক গজায়।
বিস্তৃতি: বাংলা নীলকান্তÍ বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; সকল বিভাগের গ্রামাঞ্চলে বিচরণ করে। পারস্য উপসাগর থেকে পুরো ভারত উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সুদূর চীন ও মালয়েশিয়া পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বাংলা নীলকান্তÍ বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বাংলা নীলকান্তেÍর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার তাউরা ( গ্রীক: শড়ৎধশরধং = তাউরা, নবহমধষবহংরং = বাংলার)।
[ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা]
গণ: ঊঁৎুংঃড়সঁং ঠরবরষষড়ঃ, ১৮১৬
খোলা প্রান্তরের পাখি; ঠোঁট খাটো, শক্তিশালী ও খুব প্রশস্ত; ঠোঁটের গোড়া দৈর্ঘ্যরে সমান, উপরের পাটি বড়শির মত বাঁকা; নাকের ছিদ্র খোলা; ডানা দীর্ঘ ও সুচালো, প্রান্তÍপালকের ২য়টি দীর্ঘতম।
পৃথিবীতে ৪ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৮০. ঊঁৎুংঃড়সঁং ড়ৎরবহঃধষরং (খরহহধবঁং, ১৭৬৬)
সমনাম: ঈড়ৎধপরধং ড়ৎরবহঃধষরং খরহহধবঁং, ১৭৬৬
বাংলা নাম: পাহাড়ি নীলকান্তÍ
ইংরেজি নাম: ঙৎরবহঃধষ উড়ষষধৎনরৎফ (উড়ষষধৎনরৎফ)

বর্ণনা: পাহাড়ি নীলকান্তÍ লাল ঠোঁট ও পা-ওয়ালা কালচে নীল পাখি (দৈর্ঘ্য ৩০ সেমি, ওজন ১৫০ গ্রাম, ডানা ১৮.৫ সেমি, ঠোঁট ৩ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ১০সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পুরো দেহ কালচে নীল; মাথা, ওড়ার পালক ও লেজওপর-ঢাকনি কালচে থেকে প্রায় বাদামি; গলায় নীল আভা; ওড়ার সময় ডানার প্রান্তÍ-পালকের গোড়ার রূপালী-সাদা গোল ছোপ চোখে পড়ে, যা দেখে এর ইংরেজী নামকরণ হয়েছে। এর চোখ হলদে-বাদামি এবং চোখের বলয়; অনেক চওড়া ঠোঁট; ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখর লাল। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঠোঁট অনুজ্জ^ল। ১১টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঊ. ড়. পধষড়হুী বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: পাহাড়ি নীলকান্তÍ— চিরসবুজ বন, বনের প্রান্তÍ ও খামার বিচরণ করে; সাধারণত একা বা জোড়ায় থাকে। গাছের পাতহীন মগডালে এরা বসে থাকে এবং হঠাৎ ওড়ে এসে শিকার ধরে ডালে ফিরে যায়; আহার্য তালিকায় আছে নানা জাতের উড়ন্তÍ পোকামাকড়। সাধারণত ডালে বসে মাঝে মাঝে এরা কর্কশ শব্দে ডাকে: ক্যাক ..; এবং ওড়ার সময় ডাকে: ক-চক-চক-চক..। মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে ডাল থেকে ওড়ে খাড়া নিচে ঝাঁপ দেয় ও আবর্তিত হয়ে উপরে ওড়ে ওঠে; এবং মাটির প্রাকৃতিক গর্তে ও গাছের কোটরে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ৩-৪টি; মাপ ৩.৬২.৮ সেমি। ১৭-২০দিনে ডিম ফোটে; ৩০দিনে ছানার গায়ে ওড়ার পালক গজায়।
বিস্তৃতি: পাহাড়ি নীলকান্তÍ— বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি; গ্রীষ্মে প্রজননের জন্য চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। নিউগিনি, চীন, মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকাসহ অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: পাহাড়ি নীলকান্তÍ— বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পাহাড়ি নীলকান্তেÍর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ উদয়ী বড়মুখ ( গ্রীক: বঁৎঁংঃড়সড়ং = প্রশস্ত মুখ; ল্যাটিন: ড়ৎরবহঃধষরং = প্রাচ্য )।
[ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা]

পরিবার : অখঈঊউওঘওউঅঊ
ছোট মাছরাঙা

ছোট থেকে মাঝারি ও আঁটসাঁট গড়নের মাছরাঙা; লম্বা, সোজা ছুড়ির মত ঠোঁট; পা ছোট; পালক প্রায়শ উজ্জ্বল বর্ণের।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ৩ গণে ২৫ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ গণে ৪ প্রজাতি

গণ : অষপবফড় খরহহধবঁং, ১৭৫৮
ছোট মাছরাঙা; ঠোঁট লম্বা ও দু পাশ থেকে চাপা; ডানা লম্বা ও সুচালো, প্রান্তÍপালকের ৩য় বা ৪র্থটি দীর্ঘতম; লেজের লম্বা, প্রান্ত গোলাকার, ঠোঁটের চেয়ে খাটো; পা অত্যন্তÍ দুর্বল; পালক প্রধানত সবুজ বা নীল।
পৃথিবীতে ১৫ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি

০৮১. অষপবফড় ধঃঃযরং (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: এৎধপঁষধ ধঃঃযরং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: পাতি মাছরাঙা, ছোট মাছরাঙা (আই)
ইংরেজি নাম: ঈড়সসড়হ করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: পাতি মাছরাঙা কমলা পেট ও নীল পিঠওয়ালা খুদে মাছ শিকারি (দৈর্ঘ্য ১৮ সেমি, ওজন ২৫ গ্রাম, ডানা ৭.২ সেমি, ঠোঁট ৪.৪ সেমি, পা ১ সেমি, লেজ ৩.৩ সেমি)। প্রাপ্তবয়ষ্ক পাখির পিঠ সবুজাভ নীল ও দেহতল কমলা; মাথার চাঁদি, কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা ফ্যাকাসে সবুজাভ-নীল; পিঠের নিচ, পাছা ও লেজ বরাবর নীল টান নেমে গেছে; গলা সাদা এবং চোখের উপরে ও ঘাড়ের পাশে সাদা ফুটকি রয়েছে; কান-ঢাকনির রঙ লালচে ও চোখ পিঙ্গল-বাদামি; পা ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল। পুরুষপাখির ঠোঁট সম্পূর্ণভাবে কালচে-শিঙ রঙের, কিন্ত‘ স্ত্রীপাখির ঠোঁটের নিচের পাটির গোড়া ও ঠোঁটের সঙ্গমস্থল স্যামন-লাল। অপ্রাপ্তবয়ষ্ক পাখির পিঠ বেশ সবুজ ও অনুজ্জ্বল এবং বুকে কালো আঁইশের দাগ থাকে; অনেক সময় তরুণ পুরুষপাখির ঠোঁটের রঙ পূূর্ণবয়স্ক স্ত্রীপাখির মত। ৭টি উপ-প্রজাতির মধ্যে অ. ধ. নবহমধষবহংরং বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: পাতি মাছরাঙা খাল, বিল, পুকুর, ডোবা, নর্দমা, নদী, প্যারাবন, বেলাভূমি এবং সব ধরনের জলাভূমিতে বিচরণ করে; সাধারণত একা বা জোড়ায় থাকে। পানির সামান্য উপরের ডাল অথবা খুঁঁটিতে এরা বসে থাকে এবং হঠাৎ ঝাঁপ দিয়ে পানির ভিতরে গিয়ে শিকার ধরে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ছোট মাছ, ব্যাঙের ছানা ও জলজ পোকামাকড়। প্লত ডানা চালিয়ে পানির অল্প ওপর দিয়ে এরা যাতায়াত করে; স্থান ত্যাগ করার মূহুর্তে ঝাঁঝালো তীব্র শব্দে ডাকে: চিট-ইট-ইট..। মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে জলাশয়ের তীরের খাড়া মাটির ঢিবিতে গর্তে খুুঁড়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৫-৭টি; মাপ ২.০ ´ ১.৭ সেমি.।
বিস্তৃতি: পাতি মাছরাঙা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সকল বিভাগের সব জলাশয়ে বিচরণ করে। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়ায় সমগ্র ভারত উপমহাদেশে পাওয়া যায়।
অবস্থা: পাতি মাছরাঙা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পাতি মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ আত্তিস-এর মাছরাঙা (ল্যাটিন: ধষপবফড় = মাছরাঙা; ধঃঃযরং = আত্তিস, লেস্বস নগরীর সুন্দরী, কবি সাফোর প্রিয়জন)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

০৮২. অষপবফড় যবৎপঁষবং খধঁনসধহহ, ১৯১৭
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: ব্লাইদের মাছরাঙা
ই্ংরেজি নাম: ইষুঃয’ং করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: ব্ল¬াইদের মাছরাঙা বনবাসী এক রক্তচক্ষু মাছশিকারি (দৈর্ঘ্য ২০ সেমি, ডানা ১০ সেমি, ঠোঁট ৫ সেমি, পা ১ সেমি, লেজ ৪.৫ সেমি। প্রাপ্তবয়ষ্ক পাখির পিঠ কালচে নীল ও দেহতল কমলা; মাথার ঘন সবুজ চাঁদিতে পাথালি নীল ফুটকির লাইন; কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা কালচে সবুজাভ-নীল; ডানার পালক-ঢাকনিতে নীল ফুটকি; ডানার অন্যসব পালকের তুলনায় ডানার প্রান্তÍ-পালক কালচে। ওড়ার সময় এর উজ্জ্বল নীল পিঠ, পাছা ও লেজ নজরে পড়ে; গলা সাদা এবং বুক, পেট ও অবসারণী কমলা রঙের; ঘাড়ের পাশে সাদা ফুটকি আছে। পুরুষপাখির ঠোঁটের পুরোটাই কালো কিন্ত‘ স্ত্রীপাখির ঠোঁটের নিচের ভাগ লালচে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েরই মুখ ও চোখ রক্ত-লাল এবং পা ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল।
স্বভাব: ব্ল¬াইদের মাছরাঙা প্রশস্ত পাতাওয়ালা গ্রীষ্মম-লীয় চিরসবুজ ও উপ-গ্রীষ্মম-লীয় বনের প্রবহমান নদীতে বিচরণ করে; সাধারণত একাকী বসে থাকতে দেখা যায়। পানির পাশে পাথরে অথবা ডালে এরা বসে থাকে এবং হঠাৎ ঝাঁপ দিয়ে পানি থেকে শিকার ধরে আনে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ ও জলজ পোকামাকড়। পানির ওপর ক্ষুদ্র ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে বসতে এরা পছন্দ করে; ভয় পেলে ওড়ে না গিয়ে বরঙ ঝোঁপের ভিতর লুকিয়ে যায়; মাঝে মাঝে জোরে ও তীক্ষè সুরে ডাকে: চী-চিচী..। মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে জলাশয়ের খাড়া পাড়ে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪-৬টি; মাপ ২.৬ ´ ২.১ সেমি। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ই বাসার সব কাজ করে
বিস্তৃতি: ব্ল¬াইদের মাছরাঙা বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; শীতকালে হাইল হাওরে দেখা গেছে বলে একটি তথ্য আছে। উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে আরম্ভ করে নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার এবং চীনের দক্ষিণাঞ্চল, লাওস ও ভিয়েতনামে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: ব্ল¬াইদের মাছরাঙা বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত ও বাংলাদেশে বিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: ব্ল¬াইদের মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হারকিউলিস-এর মাছরাঙা (ল্যাটিন: : ধষপবফড় = মাছরাঙা; গ্রীক: যবৎপঁষবং = হারর্কিউলিস, গ্রীক বীর)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]
০৮৩. অষপবফড় সবহরহঃরহম ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮২১
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: নীলকান মাছরাঙা
ইংরেজি নাম: ইষঁব-বধৎবফ করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: নীলকান মাছরাঙা বাদামি চোখ ও নীল কান-ঢাকনি পড়া মাছ শিকারি (দৈর্ঘ্য ১৬ সেমি, ওজন ২৭ গ্রাম, ডানা ৬.৮ সেমি, ঠোঁট ৪.৪ সেমি, পা ১ সেমি, লেজ ৩ সেমি )। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ ঘন নীল ও দেহতল গাঢ় কমলা; গালের চারিপাশ, ঘাড় ও ডানা-ঢাকনি বেগুনে-নীল; পিঠের নিচ থেকে লেজবরাবর নীল টান নেমে গেছে; গলা ও ঘাড়ের পাশে সাদা পট্টি; কান-ঢাকনি উজ্জ্বল নীল; চোখ বাদামি এবং পা, পায়ের পাতা ও নখর কমলা রঙের। ঠোঁট দুই রঙের: উপরের অংশ কালচে বা শিঙ-বাদামি ও ঠোঁটের নিচের অংশে কমলা সংযোগস্থল ও মুখসহ বাদামি-কমলা। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির কান-ঢাকনি লালচে-কমলা। ১১টি উপ-প্রজাতির মধ্যে অ. স. পড়ষঃধৎঃর বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: নীলকান মাছরাঙা পাহাড়ি নদী, প্রশস্ত পাতার গ্রীষ্মম-লীয় চিরসবুজ ও উপ-গ্রীষ্মম-লীয় বন, জোয়ার-ভাঁটায় সিক্ত খাঁড়ি ও প্যারাবনে বিচরণ করে; সাধারণত একা বা জোড়ায় থাকতে দেখা যায়। পানির উপরে ঝুলন্তÍ ডালে এরা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে এবং সুযোগ এলে শিকার ধরার জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ ও জলজ পোকামাকড় রয়েছে। শিকারের অপেক্ষায় থাকার সময় এরা ঘন ঘন মাথা ওঠায় আর নামায় এবং লেজ খাড়া করে; এবং তীব্র কণ্ঠে ডাকে: চিচী...চিচিচী...। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি কর্কশ গলায় ছোট্ট ডাক দেয়: চিট..। মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে বনের প্রবহমান নদীতীরে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম উজ্জ্বল সাদা ও গোল, সংখ্যায় ৫-৮টি ; মাপ ২.০ ´ ১.৭ সেমি।
বিস্তৃতি: নীলকান মাছরাঙা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের চিরসবুজ বন ও প্যারাবনে বিচরণ করে। ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: নীলকান মাছরাঙা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: নীলকান মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ঘননীল মাছরাঙা (ল্যাটিন: ধষপবফড় = মাছরাঙা; মালয়: : সবহরহঃরহম = গাঢ় নীল মাছরাঙা)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]
গণ: ঈবুী খধপল্কঢ়èফব, ১৭৯৯
ছোট মাছরাঙা; মধ্যম আকারের ঠোঁট; পায়ে ৩টি আঙুল থাকে, ভিতর দিক থেকে প্রথম অথবা দ্বিতীয় আঙুল অনুপস্থিত; লম্বা ডানা, ১ম প্রান্তÍপালক দীর্ঘ; পতঙ্গভূক, পানি থেকে দুরে বনতলে বিচরণ করে।
পৃথিবীতে ৭ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৮৪. ঈবুী বৎরঃযধপধ (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: অষপবফড় বৎরঃযরপঁং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: উদয়ী বামনরাঙা, বানিয়ো মাছরাঙা (আই)
ইংরেজি নাম: ঙৎরবহঃধষ উধিৎভ করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: উদয়ী বামনরাঙা আগুন রঙের মাছ শিকারি (দৈর্ঘ্য ১৩ সেমি, ডানা ৫.৭ সেমি, ঠোঁট ৩.৫ সেমি, পা ০.৮ সেমি, লেজ ২.২ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, মাথার চাঁদি ও ঘাড় কমলা রঙের; পিঠ, কাঁধ-ঢাকনি, ডানা-ঢাকনি ও ডানার পালক-ঢাকনি নীলচে কালো; কোমর ও লেজ কমলা রঙের; গলা সাদা ও চোখের উপরে বা ঘাড়ের পাশে সাদা ফুটকি আছে; পেট কমলা-হলুদ যা ক্রমান্ত^য়ে নিচের দিকে ফ্যাকাসে হয়েছে। এর চোখ গাঢ় লাল এবং ঠোঁট ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল বা উজ্জ্বল ভার্মিলিয়ন। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা অতি কমলা রঙের ও চোখ বাদামি; অনুজ্জ্বল দেহ ও বুকে কমলা ফেটা আছে ও দেহতল হালকা নীল। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. ব. বৎরঃযধপধ বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: উদয়ী বামনরাঙা পাতাঝরা গ্রীষ্মম-লীয় ও চিরসবুজ বনের ছায়াময় ছোট নদীতে বিচরণ করে; সাধারণত একা ঘুরে বেড়ায়। পানির কাছে এরা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে এবং সুযোগ এলে পানি থেকে শিকার ধরে খায়; খাবার তালিকায় রয়েছে ছোট মাছ, পোকামাকড়, কাঁকড়া ও শামুক। পানির উপরে ঝুলে থাকা লতাপাতায় ঢাকা পাথর অথবা ডালে লুকিয়ে বসতে এরা পছন্দ করে; প্লত ডানা চালিয়ে তাড়াতাড়ি ও সোজা ওড়ে চলে; ওড়ার সময় তীক্ষ্ম কণ্ঠে ডাকে: চিচিচী...। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন ঋতুতে নদীর খাড়া পাড়ে ১০০ সেমি. লম্বা গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪-৭টি, মাপ ১.৮ ´ ১.৫ সেমি।
বিস্তৃতি: উদয়ী বামনরাঙা বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; গ্রীষ্মকালে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে চোখে পড়ে। ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: উদয়ী বামনরাঙা বিশ্বে বিপদগ্রস্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে । বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: উদয়ী বামনরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ রূপান্তÍরিত মাছরাঙা (গ্রীক ঈবুী = কীস, গ্রীক পৌÍরাণিক গল্পে যে মাছরাঙায় রূপান্তÍরিত হয়েছিল; ল্যাটিন: বৎরঃযধপধ = এরিথকাস, প্লি¬নির মতে শীতের এই পাখিটি গ্রীষ্মে অন্য পাখিতে রূপান্তÍরিত হয়)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

পরিবার : উঅখঈঊখঙঘওউঅঊ
লম্বাঠুঁটো মাছরাঙা
মাঝারি থেকে বড় আকারের মাছরাঙা; উজ্জ্বল বর্ণের লম্বা ঠোঁট; ঠোঁটের নিচের পাটি ওপরমুখি বাঁকা; পালকে তিলা বা ডোরা নেই।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ১২ গণে ৬১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ গণে ৬ প্রজাতি
গণ: চবষধৎমড়ঢ়ংরং এষড়মবৎ, ১৮৪২
মাঝারি আকারের মাছরাঙা; ঠোঁট বেশ বড় ও শক্তিশালী, ঠোঁটের ওপর দিক চ্যাপ্টা ও একদম সোজা; ডানা গোলাকার, প্রথম প্রান্তÍপালকটি দশমটির সমান, ৩য় বা ৪র্থটি দীর্ঘতম; লেজ ঠোঁটের চেয়ে লম্বা ও কিছুটা গোলাকার।
পৃথিবীতে ৩ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি
০৮৫. চবষধৎমড়ঢ়ংরং ধসধঁৎড়ঢ়ঃবৎধ (চবধৎংড়হ, ১৮৪১)
সমনাম: ঐধষপুড়হ ধসধঁৎড়ঢ়ঃবৎঁং চবধৎংড়হ, ১৮৪১
বাংলা নাম: খয়রাপাখ মাছরাঙা
ইংরেজি নাম: ইৎড়হি-রিহমবফ করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: খয়রাপাখ মাছরাঙা প্রকা- লাল ঠোঁট ও বাদামি ডানার মাছ শিকারি (দৈর্ঘ্য ৩৬ সেমি, ডানা ১৫ সেমি, ঠোঁট ৭.৬ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৯.২ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড় বাদামি-কমলা; কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা কালচে বাদামি; পিঠ ও কোমর নীল; প্রান্তÍ-পালক ডানার বাকি অংশের চেয়ে গাঢ় বাদামি; গলা, বুক পেট ও অবসারণী একই রকম বাদামি-কমলা। এর চোখ বাদামি ও চোখের পাতা ইট-লাল; পা ও পায়ের পাতা লাল; ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখ পর্যন্তÍ কালচে বাদামি টান চলে গেছে; ঠোঁট লাল, ঘন কালচে-বাদামি আগা। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ অতি কমলা এবং কাঁধ-ঢাকনির কিনারা ও ডানার পালক-ঢাকনি ফ্যাকাসে; ঘাড়ে কালো ডোরা ও দেহতল কালো।
স্বভাব: খয়রাপাখ মাছরাঙা জোয়ার-ভাঁটায় সিক্ত নালা ও প্যারাবনের প্রবহমান নদীতে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। উঁচু ডাল থেকে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে এরা শিকার ধরে খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে কাকড়া, সরীসৃপ ও মাছ। ওড়ার সময় এরা পানির অল্প ওপর দিয়ে চলে, কিন্ত‘ বসার আগে উপরে উঠে উঁচু ডালের দিকে যায়। ওড়ে ওঠার সময়, বিশেষ করে বাধ্য হয়ে উঠতে হলে, এরা খুব জোরে শব্দ করে ডাকে: কা-কা-কা-কা..। অন্য সময় করুণ সুরে শিস্ দিয়ে ডাকে: চৌÍÍচৌÍ চৌÍ..। মার্চ-এপ্রিল মাসের প্রজনন ঋতুতে খাড়া পাড়ে ৩০-৬০ সেমি. দীর্ঘ ও ১০ সেমি. চওড়া সুুড়ঙ্গ কেটে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা ও গোল; সংখ্যায় ৪টি; মাপ ৩.৪  ২.৮ সেমি।
বিস্তৃতি: খয়রাপাখ মাছরাঙা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। বরিশাল ও খুলনা বিভাগের প্যারাবনে পাওয়া যায়। ভারতের সুন্দরবন অংশসহ বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড এবং উত্তর-পশ্চিম মালয়েশিয়া পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: খয়রাপাখ মাছরাঙা বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত বলে বিবেচিত । বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: খয়রাপাখ মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কালোডানা সিন্ধুসারস (গ্রীক: ঢ়বষধৎমড়ং = সারস, ড়ঢ়ংরং = চেহারা, ধসধঁৎড়ং = কালচে, ঢ়ঃবৎড়ং = ডানাওয়ালা)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]
০৮৬. চবষধৎমড়ঢ়ংরং পধঢ়বহংরং (খরহহধবঁং, ১৭৬৬)
সমনাম: অষপবফড় পধঢ়বহংরং খরহহধবঁং, ১৭৬৬
বাংলা নাম: মেঘহও মাছরাঙা
ইংরেজি নাম: ঝঃড়ৎশ-নরষষবফ করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: মেঘহও মাছরাঙা লাল ঠোঁট ও নীল ডানার মাছ শিকারি (দৈর্ঘ্য ৩৮ সেমি, ডানা ১৫.৭ সেমি, ঠোঁট ৯ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ১০ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার টুপি উজ্জ্বল বাদামি; গলবন্ধ কমলা-পীতাভ; কাঁধ-ঢাকনি বাদামি-নীল; ডানা নীল-সবুজ; পিঠ ও কোমর নীল; গলা ফ্যাকাসে পীতাভ; বুক, পেট ও অবসারণী কমলা পীতাভে মেশানো; ডানার প্রান্তÍ-পালকের গাঢ় নীল রঙ লেজের উজ্জ্বল নীলের মধ্যে পার্থক্য আছে। এর ছোরার মত ঠোঁটটি রক্তলাল, গোড়া কালচে ও আগা কালো; চোখ বেশ বাদামি; পায়ের পাতা প্রবাল-লাল ও নখর কালো। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ বেশি কমলা ও বুকে ডোরা থাকে। ১৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে চ. প. পধঢ়বহংরং বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: মেঘহও মাছরাঙা বনের জলাধারা, ধীরে বহমান নদী, সেচের নালা, নদীর পাশের আবদ্ধ জল, জোয়ার-ভাঁটায় সিক্ত খাঁড়ি ও পুকুরে বিচরণ করে; সাধারণত একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। পানির পাশে গাছের উঁচু ডালে বসে থাকে এবং স্বশব্দে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরে খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, ব্যাঙ, টিকটিকি, পাখির ছানা, ইঁদুর, ইত্যাদি। ডাল ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় সাধারণত চীৎকার করে ডাকে: কে-কে-কে-কে-কে..; প্রজননকালে অবিরাম ‘গান’ করে: পীউ-পিউ.. পীউ-পিউ..পীউ..পিউ..। জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মাসে প্রজনন ঋতুতে জলাশয়ের খাড়া পাড়ে ১০০ সেমি. দীর্ঘ ও ১০ সেমি. চওড়া সুড়ঙ্গ কেটে অথবা গাছের গর্তে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪-৫টি; মাপ ৩.৬  ৩.১ সেমি।
বিস্তৃতি: মেঘহও মাছরাঙা বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের পুকুর ও জলাভূমিতে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা মেঘহও মাছরাঙা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এই প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।
বিবিধ: মেঘহও মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ অন্তÍরীপের সিন্ধুসারস (গ্রীক: ঢ়বষধৎমড়ং = সারস , ড়ঢ়ড়ংরং =চেহারা; পধঢ়বহংরং = অন্তÍরীপ, উত্তমাশা অন্তÍরীপ)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: ঐধষপুড়হ ঝধিরহংড়হ, ১৮২১
মাঝারি আকারের মাছরাঙা; ঠোঁট দীর্ঘ ও গোড়া কিছুটা প্রশস্ত, উপরে গোলাকার; ডানা গোলাকার; সাধারণত ডানার ৩য় প্রান্তÍপালক দীর্ঘতম; লেজ মাঝারি, শেষের দিকে কিছুটা গোলাকার।
পৃথিবীতে ১১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি
০৮৭. ঐধষপুড়হ পড়ৎড়সধহফধ (খধঃযধস, ১৭৯০)
সমনাম: অষপবফড় পড়ৎড়সধহফধ খধঃযধস, ১৭৯০
বাংলা নাম: লাল মাছরাঙা
ইংরেজি নাম: জঁফফু করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: লাল মাছরাঙা বনের লাল রঙের জলার পাখি (দৈর্ঘ্য ২৬ সেমি, ডানা ১১.৩ সেমি, ঠোঁট ৬.২ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৬.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ লাল-কমলা ও দেহতল ফ্যাকাসে লাল। মাথায় দারুচিনি বা উজ্জ্বল লাল-তামাটে রঙ ও ঘাড়ে লাল বেগুনির সৌÍন্দর্য ফুটে উঠেছে। পিঠের নিচে ও পাছায় ফ্যাকাসে নীলের ওপর সাদা আমেজ আছে। কালচে গোড়া এবং ফ্যাকাসে বা পাটল বর্ণের আগাসমেত ঠোঁট লাল। চোখ কালচে বাদামি। পা ও পায়ের পাতা পাটল-লাল বা প্রবাল-লাল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ কালচে ও বেশ বাদামি, পাছা নীল ও লাল দেহতলে কালচে ডোরা রয়েছে। কালচে ঠোঁটের আগা কমলা লাল। তরুণ পাখির কোমর ও লেজউপরি-ঢাকনি গাঢ় নীল। গলা ও তলপেটের চারদিকে কালো বেড় থাকে তবে নীলের সৌÍন্দর্য অনুপস্থিত। ১০টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঐ. প. পড়ৎড়সধহফধ বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: লাল মাছরাঙা গ্রীষ্মম-লীয় ও উপ-গ্রীষ্মম-লীয় চিরসবুজ বনের নদী ও প্যারাবন জলাভূমিতে বিচরণ করে; সাধারণত একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। পানির উপরিতল ও কাদায় শিকা খোঁজে এবং তারপর শিকার ধরার জন্য নিচে নেমে আসে; খাবার তালিকায় মাছ, কাঁকড়া, গুবরে পোকা, ফড়িং ও খুদে প্রাণী রয়েছে। জোরে ও প্লত ডানা চালিয়ে তাড়াতাড়ি ও সোজা উড়ে চলে। সাধারণত তীব্র শব্দে কম্পিত সুরে ডাকে: টিটিটিটিটিটিটিটি.. এবং সুরেলা কণ্ঠে গান করে: কুয়িররর-র-র-র-র। মার্চ-এপ্রিল মাস প্রজনন ঋতুতে মাটির খাড়া পাড় বা গাছের কা-ে বাসা বানায়; বাসার গর্ত সাধারণত ৪৫-১০০ সেমি. দীর্ঘ ও ৫ সেমি. চওড়া। স্ত্রীপাখি ৫-৬টি ডিম পাড়ে; ডিম সাদা ২.৭  ২.৩ সেমি.।
বিস্তৃতি: লাল মাছরাঙা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; খুলনা বিভাগের প্যারাবনে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন, কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কাম্পুুচিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: লাল মাছরাঙা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে সংকটাপন্ন বলে বিবেচিত । বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: লাল মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ করোম্যান্ডেল-এর মাছরাঙা (গ্রীক: যধষশঁড়হ = মাছরাঙার সঙ্গে সম্পর্কিত পৌÍরাণিক পাখি; পড়ৎড়সধহফধ = করোম্যান্ডেল, চেন্নাইয়ের কাছাকাছি উপকূল, ভারত)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

০৮৮. ঐধষপুড়হ ঢ়রষবধঃধ (ইড়ফফবধৎঃ, ১৭৮৩)
সমনাম: অষপবফড় ঢ়রষবধঃধ ইড়ফফধবৎঃ,৩২ ১৭৮৩
বাংলা নাম: কালাটুপি মাছরাঙা
ইংরেজি নাম: ইষধপশ-পধঢ়ঢ়বফ করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: কালাটুপি মাছরাঙা বেগুনি পিঠের কালো টুপি ওয়ালা জলার পাখি (দৈর্ঘ্য ৩০ সেমি, ডানা ১৩ সেমি, ঠোঁট ৬ সেমি, পা ১.৫ সেমি, লেজ ৮.৫ সেমি)। পিঠ বেগুনে-নীল ও দেহতল ফ্যাকাসে মরচে রঙের। টুপি কালো, গলবন্ধ সাদা এবং ম্যান্টল, পাছা ও লেজ বেগুনে-নীল। ডানার কালো পালক-ঢাকনি নীল মাধ্যমিক পালককে আলাদা করেছে। থুতনি, গলা ও বুক সাদা এবং বগল ও পেট ফ্যাকাসে কমলা পীতাভ। ওড়ার সময় প্রাথমিক পালকের গোড়ার সাদা পট্টি স্পষ্ট নজরে আসে। ঠোঁট গাঢ় প্রবাল-লাল, চোখ কালচে বাদামি এবং পা ও পায়ের পাতা কালচে লাল। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির গলবন্ধ ও বুক কৃষ্ণবর্ণের এবং ঢেউ খেলানো। তরুণ পাখির ঠোঁটের নিচের অংশ থেকে ঘাড় পর্যন্তÍ সরু নালার মত অসংখ্য কালো খাত থাকে ও কালো কিনারার পালক বুক অতিক্রম করে।
স্বভাব: কালাটুপি মাছরাঙা নদী, বেলাভূমি, জলাধার, জোয়ার-ভাটা সিক্ত খাঁড়ি ও মোহনায় বিচরণ করে; সাধারণত একা বা আলাদা জোড়ায় বিচরণ করে। পানির ওপর কোন জায়গা থেকে কাদায় শিকার পর্যবেক্ষণ করে এবং শিকার ধরার জন্য মাটিতে নেমে আসে; খাদ্যতালিকায় প্রধানত পোকামাকড়, কাঁকড়া, মাছ, ব্যাঙ, টিকটিকি ও অন্য খুদে প্রাণী রয়েছে। কদাচ শিকার ধরার জন্য পানিতে ঝাঁপ দেয়। অবিরাম ডানা চালিয়ে এরা প্লত উড়তে সক্ষম। অন্য মাছরাঙা থেকে এই প্রজাতির ব্যতিক্রম হল ওড়ার সময় সাধারণত নীরব থাকে; মাঝে মাঝে ডাকে: কিকিকিকিকিকি..। মে-জুলাই চীন ও ভারতের বনাঞ্চলে প্রজনন ঋতু । বণভূমির নদীর পাড়ে সমতল সুুড়ঙ্গ তৈরি করে বাসা বানায় ও স্ত্রীপাখি ৪-৫টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, ২.৯২.৬ সেমি।
বিস্তৃতি: কালাটুপি মাছরাঙা বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি। শীতে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের প্যারাবন ও চিরসবুজ বনে বিচরণ করে; অতীত সিলেট বিভাগে দেখা গেছে এমন তথ্য আছে। সাম্প্রতিককালে ঢাকা বিভাগে পাওয়া গেছে। পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, চীন, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: কালাটুপি মাছরাঙা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: কালাটুপি মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ টুপিপড়া মাছরাঙা (গ্রীক: যধষশঁড়হ = মাছরাঙার সঙ্গে সম্পর্কিত পৌÍরাণিক পাখি; ল্যাটিন: ঢ়রষবধঃঁং = টুপিওয়ালা)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

০৮৯. ঐধষপুড়হ ংসুৎহবহংরং (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: অষপবফড় ংসুৎহবহংরং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: ধলাগলা মাছরাঙা
ইংরেজি নাম: ডযরঃব-ঃযৎড়ধঃবফ করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: ধলাগলা মাছরাঙা সাদা গলার বিশ্বজনীন মাছরাঙা (দৈর্ঘ্য ২৮ সেমি, ডানা ১১.৮ সেমি, ঠোঁট ৬ সেমি, পা ১.৬ সেমি, লেজ ৭.৫ সেমি)। পূর্ণবয়স্ক পাখির পিঠ নীলকান্তÍমণি-নীল ও দেহতল চকলেট-বাদামি। মাথা ও ঘাড় চকলেট-বাদামি এবং পাছা ও লেজসহ পিঠ উজ্জ্বল নীলকান্তÍমণি-নীল। থুতনি, গলা ও বুকের মাঝামাঝি পর্যন্তÍ বিস্তৃত উজ্জ্বল সাদা রঙ সামনে স্পষ্ট জামার গঠন লাভ করেছে। ওড়ার সময় কালো প্রাথমিক পালকের গোড়ার সাদা পট্টি নজরে আসে। ঠোঁট লাল ও মুখ কমলা রঙের। চোখ বাদামি। উজ্জ্বল পিছনের পা ও পদতলসহ পা ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য নেই। বাদামি ঠোঁট ও কালচে ঢেউ খেলানো বুকসহ অনুজ্জ্বল গায়ের রঙ ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক ও পূর্ণবয়স্ক পাখির চেহারার মধ্যে পার্থক্য নেই। ৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঐ. ং. ভঁংপধ বাংলাদেশে রয়েছে (২টি উপ-প্রজাতি অবিচ্ছেদ্য বলে কয়েকজন লেখক মত দিয়েছেন)।
স্বভাব: ধলাগলা মাছরাঙা বনের প্রান্তÍদেশ, আবাদি জমি, বাগান, শুষ্ক পাতাঝরা বন, জলাধার, নদী, খাল, ডোবা, গ্রামের পুষ্করিণী, নর্দমা, উপকূল ও প্যারাবনে বিচরণ করে; সাধারণত একা বা আলাদা জোড়ায় দেখা যায়। বেড়া, বৈদ্যুতিক তার বা গাছের ডালে বসে মাটিতে বা পানিতে শিকার পর্যবেক্ষণ করে। খাবারের বেশীর ভাগই পোকামাকড়: ফড়িং, ঝিঁঝিঁপোকা, ম্যানট্সি, গুবরে পোকা, পিঁপড়া, ডানাওয়ালা উই, পঙ্গপাল ও অন্য ধরনের ফড়িং। ওড়ার সময় উচ্চ সুরে ডাকে: কে-কে-কেক..; এবং শিস্ মেরে গান গায়: কিলিলিলি...। মার্চ-জুন প্রজনন ঋতু। খাড়া পাড়ে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায় ও স্ত্রীপাখি ৪-৭টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা গোল ডিম্বাকার, ২.৯  ২.৬ সেমি।
বিস্তৃতি: ধলাগলা মাছরাঙা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের সকল জলাশয় ও পল্লী এলাকায় বিচরণ করে। তুর্কি ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা থেকে মিয়ানমার, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: ধলাগলা মাছরাঙা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: ধলাগলা মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ স্মাইর্নার মাছরাঙা (গ্রীক: যধষশঁড়হ = মাছরাঙার সঙ্গে সম্পর্কিত পৌÍরাণিক পাখি; ংসুৎহবহংরং =স্মাইর্না শহর, তুর্কি)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]
গণ: ঞড়ফরৎধসঢ়যঁং খবংংড়হ, ১৮২৭
মাঝারি আকারের মাছরাঙা; সাধারণত দেহতল সাদা বা পীতাভ এবং পিঠ, ডানা ও লেজ কালচে নীল থেকে ফ্যাকাসে সবুজ; ঠোঁট কালচে।
পৃথিবীতে ২১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৯০. ঞড়ফরৎধসঢ়যঁং পযষড়ৎরং (ইড়ফফধবৎঃ, ১৭৮৩)
সমনাম: অষপবফড় পযষড়ৎরং ইড়ফফধবৎঃ, ১৭৮৩
বাংলা নাম: ধলাঘাড় মাছরাঙা
ইংরেজি নাম: ঈড়ষষধৎবফ করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: ধলাঘাড় মাছরাঙা সাদা গলাবন্ধওয়ালা সুন্দর নীল জলার পাখি (দৈর্ঘ্য ২৪ সেমি., ডানা ১০ সেমি.,ঠোঁট ৪.৩ সেমি., পা ১.৫ সেমি., লেজ ৬.৫ সেমি.)। পিঠ সবুজাভ-নীল ও দেহতল সাদা। মাথার চাঁদি, কানের কোর্ভাট ও ম্যান্টল নীল-সবুজ এবং সরু ভ্রু সাদা। গলাবন্ধ স্পষ্ট সাদা। ডানা ও লেজ নীল। থুতনি, গলা, বুক, পেট ও অবসারণী সাদা রঙের। চোখ গাঢ় বাদামি এবং পা ও পায়ের পাতা স্লে¬¬ট-কালো। ঠোঁট দু’রঙের: উপরের পুরো পাটি ও নিচের পাটির প্রান্তÍদেশের তৃতীয় ভাগ সবুজাভ-কালো এবং নিচের পাটির অবশেষ হলদে-সাদা। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি পীতাভ ভ্রুসহ অনুজ্জ^ল দেখায়। তরুণ পাখির বুকের পালকের প্রান্তÍদেশ কৃষ্ণ বর্ণের এবং সাদা গলাবন্ধ, বগল ও অবসারণীতে ফ্যাকাসের আমেজ থাকে। ৪৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঞ. প. যঁসরর বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: ধলাঘাড় মাছরাঙা জোয়ার-ভাঁটায় সিক্ত খাঁড়ি, প্যারাবনের জলা, বনের প্রান্তÍদেশ ও বাগানে বিচরণ করে। নিভৃতচারী পাখি এবং একা ও জোড়ায় থাকে। কোন জায়গা থেকে কাদায় শিকার পর্যবেক্ষন করে ও ছোঁ মেরে শিকার ধরে ফেলে। খাবার তালিকায় কাঁকড়া ও পোকামাকড় রয়েছে যেমন-ফড়িং ও ঝিঁঝিঁ পোকা ইত্যাদি। টিকটিকি, বিছা ও উইও খায়। সাধারণত দীর্ঘ কোলাহলপূর্ণ শব্দে ডাকে: ক্রেরক-ক্রেরক-ক্রেরক...। এপ্রিল-মে প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় যুগল একে অপরকে গাছে অনুসরন করে। গাছেরপচাকা-, বৃক্ষচারী উইয়ের বাসা ও মাটির গর্তে বাসা বাঁধে ও স্ত্রীপাখি ৩-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, ২.৯ ´ ২.৪ সেমি.।
বিস্তৃতি: ধলাঘাড় মাছরাঙা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে পাওয়া যায়। আফ্রিকার লোহিত সাগর থেকে শুরু করে গ্রীষ্মম-লীয় এশিয়ার অধিকাংশ উপকূলীয় অঞ্চলসহ ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: ধলাঘাড় মাছরাঙা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: ধলাঘাড় মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ঠোঁটওয়ালা সবুজ-পাখি (গ্রীক: ঃড়ফঁ = টডি, ৎযধসঢ়যড়ং = ঠোঁট, শযষড়ৎরং = সবুজ )।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]
পরিবার: ঈঊজণখওউঅঊ
পাকড়া মাছরাঙা
এ পরিবারে পৃথিবীতে ৩ গণে ৯ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ গণে ২ প্রজাতি

গণ: গবমধপবৎুষব কধঁঢ়, ১৮৪৮
সাদাকালো মাছরাঙা; ঠোঁট লম্বা ও দু পাশ থেকে চাপা; ডানা সুচালো, ২য় অথবা ৩য় প্রান্তÍপালক দীর্ঘতম; লেজ ঠোঁটের চেয়ে লম্বা।
পৃথিবীতে ৪ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৯১. গবমধপবৎুষব ষঁমঁনৎরং (ঞবসসরহপশ, ১৮৩৪)
সমনাম: অষপবফড় ষঁমঁনৎরং ঞবসসরহপশ, ১৮৩৪
বাংলা নাম: ঝুটিয়াল মাছরাঙা
ইংরেজি নাম: ঈৎবংঃবফ করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: ঝুটিয়াল মাছরাঙা ডোরাওয়ালা ঝুটির পাকরা জলার পাখি (দৈর্ঘ্য ৪১ সেমি., ওজন ২৫৫ গ্রাম, ডানা ১৮.৫ সেমি., ঠোঁট ৭.৩ সেমি., পা ১.৬ সেমি., লেজ ১১.২ সেমি.)। পিঠ নীল-ধূসর ও দেহতল সাদা। কালো দীর্ঘ কেশের ঝুটিতে কিছু সাদা অংশ থাকে। গলাবন্ধ সাদা। সূক্ষ্ম সাদা ফুটকি ও ডোরা সমেত পিঠ ও পাছা কালচে দেখায়। ডানা ও লেজে কালোর ওপর সাদা ডোরা থাকে। বগলে সূক্ষ্ম বাদামি ফুটকি ও বুকে কালো ফেটা এবং বগলে কালো ডোরা রয়েছে। কালো ঠোঁটের গোড়ার অর্ধেক ফ্যাকাসে ধূসর। চোখ কালো। পা ও পায়ের পাতা ধূসরাভ-জলপাই ও কালচে নখরের আগা সাদাটে। লিপ্তপাদের নরম চামড়া উজ্জ^ল বাদামি-সাদা। স্ত্রী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিকে পুরুষপাখি থেকে কেবল তাদের ডানার নিচের কোর্ভাটের ফ্যাকাসে লাল রঙের সাহায্যে পৃথক করা যায়। ৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে গ. ষ. মঁঃঃঁষধঃধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: ঝুটিয়াল মাছরাঙা বন সংলগ্ন বড় স্রোতধারা ও প্লত প্রবহমান নদীতে বিচরণ করে; নিভৃতচারী পাখি, তবে জোড়ায় থাকতে দেখা গেছে। কূল উপচে পড়া বা প্লত প্রবহমান নদীতে হঠাৎ ডুব দিয়ে শিকার ধরে মাছ খায়। প্লত উড়তে পারে ও ধীরে ধীরে পাখা চালিয়ে প্রবহমান পানির কিছুটা ওপর দিয়ে উড়ে যায়। সাধারণত একটি মাত্র তীক্ষè শব্দে ডাকে: ক্লিক। তা ছাড়া অবিরাম ডাকে: পিঙ...। মার্চ-এপ্রিল মাস প্রজনন ঋতু। নদীর খাড়া পাড়ে ১.৫ মিটার দীর্ঘ সমতল সুড়ঙ্গ তৈরি করে মাছের কাঁটা বিছিয়ে বাসা বাঁধে ও স্ত্রীপাখি ৪-৫টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, ৩.৮ ´ ৩.২ সেমি.।
বিস্তৃতি: ঝুটিয়াল মাছরাঙা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ বনের নদীতে দেখা গেছে বলে দুটি তথ্য রয়েছে। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যাল্ড, লাওস, ভিয়েতনাম ও জাপানসহ হিমালয় থেকে পূর্ব এশিয়া পর্যন্তÍ এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: ঝুটিয়াল মাছরাঙা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে । বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: ঝুটিয়াল মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ শোকাকূল পাখি (গ্রীক: সবমধং = বড়, পবৎুষব = ক্যারোলস, এ্যারিস্টটল উলে¬খানুসারে একটি পাখি; ল্যাটিন: ষঁমঁনৎরং = শোকাকূল)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

গণ: ঈবৎুষব ইড়রব, ১৮২৮
সাদাকালো মাছরাঙা; মাথায় ঝুটি, প্রশস্ত ভ্রু-রেখার নিচে বড় কালো চক্ষু-রেখা; সাদা দেহতলে বুকে কালো পট্টি থাকে।
পৃথিবীতে ১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৯২. ঈবৎুষব ৎঁফরং (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: অষপবফড় ৎঁফরঁং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: পাকরা মাছরাঙা
ইংরেজি নাম: চরবফ করহমভরংযবৎ

বর্ণনা: পাকরা মাছরাঙা সারা দেহে কালো ফুটকি ও ফেটা ওয়ালা সাদা জলার পাখি (দৈর্ঘ্য ৩১ সেমি., ডানা ১৩.৭ সেমি., ঠোঁট ৬.৮ সেমি., পা ১.২ সেমি., লেজ ৭ সেমি.)। মাথার কালো চাঁদি ও ঝুটিতে সাদা ডোরা রয়েছে। পার্থক্যসূচক সাদা ভ্রু ও চোখের প্রশস্ত কালো ডোরা আছে। ডানায় ও লেজে কালো-ও-সাদা বর্ণ বিন্যাস রয়েছে। বুক ছাড়া দেহতল সাদা। পুরুষপাখির বুকে দুটি কালো ফোটা কিন্ত‘ স্ত্রীতে কেবল একটি ভাঙা ফোটা আছে। পাটল বর্ণের মুখসহ ঠোঁট বাদামি-কালো। চোখ বাদামি এবং পা, পায়ের পাতা ও নখর বাদামি কালোয় মেশানো। ৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. ৎ. ষবঁপড়সবষধহঁৎধ বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: পাকরা মাছরাঙা মিঠাপানি যেমন-নদী, খাল, পুকুর, জলাধার, প্ল¬াবিত নর্দমা, জোয়ার-ভাঁটায় সিক্ত খাঁড়ি ও ডোবায় বিচরণ করে। সাধারণত জোড়ায় থাকে। শিকার ধরার আগে পানির উপরে বাতাসে ভেসে বেড়ায় ও হঠাৎ পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিকার ঠোঁটে পুরে নিয়ে আসে; খাবার তালিকায় মাছ, ব্যাঙাচি ও জলজ পোকামাকড় রয়েছে। কিছুটা বাতাসে ভেসে উড়তে সক্ষম। সাধারণত এক জোড়া তীক্ষè শব্দে ডাকে: চিরিক-চিরিক..। অঞ্চল ভেদে তারতম্য ছাড়া সারা বছরই এর প্রজনন ঋতু। নদী ও কোন প্রবহমান জলধারার পাড়ে ১.৫ মিটার দীর্ঘ ও ৭-৮ সেমি. চওড়া সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সমতল বাসা বানায়, স্ত্রীপাখি ৫-৬টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, ২.৯ ´ ২.১ সেমি.।
বিস্তৃতি: পাকরা মাছরাঙা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের নদী ও অন্যান্য জলাশয়ে পাওয়া যায়। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়া মহাদেশে মালদ্বীপ ছাড়া পুরো ভারত উপমহাদেশে রয়েছে।
অবস্থা: পাকরা মাছরাঙা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পাকরা মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ তরবারি-ঠোঁট পাখি (গ্রীক: পবৎুষব = ক্যারোলস, এ্যারিস্টটল উলে¬¬খানুসারে একটি পাখি; ল্যাটিন: ৎঁফরঁং = তরবারি)।
[ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান]

পরিবার: গঊজঙচওউঅঊ
সুইচোরা
সরু ও লম্বা গড়নের পতঙ্গভুক পাখি; উজ্জ্বল রং; ঠোঁট সরু, লম্বা ও নিচের দিকে বাঁকানো; ডানা মধ্যম থেকে দীর্ঘ; পা ছোট।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ৩ গণে ২৬ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ গণে ৪ প্রজাতি

গণ: ঘুপঃুড়ৎহরং ঔধৎফরহব ধহফ ঝবষনু, ১৮৩০
লম্বা গড়নের পতঙ্গভুকপাখি; গলা ও বুকের মাঝখানের পালক লম্বা ও উজ্জ^ল রঙের; ঠোঁট শক্ত ও নিচের দিকে বাঁকা; নাকের ছিদ্র পালকে ঢাকা; ডানা লম্বা, ৩য় প্রান্তÍপালক দীর্ঘতম; লেজ লম্বা।
পৃথিবীতে ২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০৯৩. ঘুপঃুড়ৎহরং ধঃযবৎঃড়হর (ঔধৎফরহব ধহফ ঝবষনু, ১৮৩০)
সমনাম: গবৎড়ঢ়ং ধঃযবৎঃড়হর ঔধৎফরহব ধহফ ঝবষনু, ১৮৩০
বাংলা নাম: নীলদাড়ি সুইচোরা
ইংরেজি নাম: ইষঁব-নবধৎফবফ ইবব-বধঃবৎ

বর্ণনা: নীলদাড়ি সুইচোরা নীল কপাল ও গলার সবুজ পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৬ সেমি., ওজন ৯০ গ্রাম, ডানা ১৪ সেমি., ঠোঁট ৫.২ সেমি., পা ২ সেমি., লেজ ১৩.৫ সেমি.)। নীল কপাল ছাড়া পিঠ সবুজাভ। লম্বা পালক সমূহ দাঁড়ির মত গঠন লাভ করে এবং গলা ও বুক কালচে নীল। হলুদাভ -পীতাভ ডোরাসহ পেট ও বগল সবুজ। বর্গাকার প্রান্তÍদেশসহ লেজের বাইরের পালক পীতাভ রঙের। ওড়ার সময় লেজ ত্রিকোণাকার ও ডানার নিচের কোর্ভাট হলুদাভ-পীতাভ দেখায়। ঠোঁট বাঁকা ও শিঙ-বাদামি এবং নিচের ঠোঁটের গোড়া ধূসর। চোখ উজ্জ্বল সোনালী-কমলা ও মুখ ধূসরাভ-পাটল বর্ণের । পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে হলুদাভ-সবুজ এবং নখর শিঙ-বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিতে কোন দাঁড়ি থাকেনা। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঘ. ধ. ধঃযবৎঃড়হর বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: নীলদাড়ি সুইচোরা আর্দ্র পাতাঝরা ও অপ্রধান চিরসবুজ বন, বনের স্রোতধারা ও বনের আবাদযোগ্য জমিতে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। উঁচু জায়গা থেকে বাতাসে ওড়ে শিকার ধরে। খাবার তালিকায় বোলতা, মৌÍমাছি, গুবরে পোকা, ফড়িং ও ফুলের মিষ্টি রস রয়েছে। সচরাচর কর্কশ গলায় ডাকে:কর-র-র,কর-র-র...। ফেব্রুয়ারি-আগস্ট মাস প্রজনন ঋতু। বনের জলধারার খাড়া পাড়ে বা পাহাড়ের পলি মাটিতে ৫-৬ সেমি. ব্যাস ও ১.৫-৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায় এবং স্ত্রীপাখি ৪-৬টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, ৩.০ ´ ২.৮ সেমি.।
বিস্তৃতি: নীলদাড়ি সুইচোরা বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ও ইন্দোচীনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: নীলদাড়ি সুইচোরা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে । বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: নীলদাড়ি সুইচোরা বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ এ্যাথার্টন-এর গুপ্ত-পাখি (গ্রীক: হীঁ = গুপ্ত, রহস্যময়, ড়ৎহরং = পাখি; ধঃযবৎঃড়হর = লেফটেন্যান্ট জে. এ্যাথার্টন, ভারতীয় ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা, ১৭৯৭-১৮২৭)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]
গণ: গবৎড়ঢ়ং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সরু ও লম্বা গড়নের পতঙ্গভুক পাখি; ঠোঁট লম্বা ও পুরোটাই বাঁকা; পা ও পায়ের পাতা দুর্বল; ১ম ও ২য় আংশিক যুক্ত, ৩য় ও ৪র্থ আঙুল পুরো জোড়া দেওয়া; ডানা দীর্ঘ ও তীক্ষè, ১ম প্রান্তÍপালক অতিক্ষুদ্র ও ২য়টি দীর্ঘতম; লেজে ১২টি পালক।
পৃথিবীতে ২২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি

০৯৪. গবৎড়ঢ়ং ষবংপযবহধঁষঃর ঠরবরষষড়ঃ, ১৮১৭
সমনাম: জানা নেই
বাংলা নাম: খয়রামাথা সুইচোরা
ইংরেজি নাম: ঈযবংঃহঁঃ-যবধফবফ ইবব-বধঃবৎ

বর্ণনা: খয়রামাথা সুইচোরা মাথায় তামাটে চাঁদিওয়ালা মসৃণ সবুজ পাখি (দৈর্ঘ্য ২১ সেমি., ওজন ৩০ গ্রাম, ডানা ১১ সেমি., ঠোঁট ৩.৮ সেমি., পা ১ সেমি., লেজ ৮ সেমি.)। পিঠ ঘাস-সবুজ ও কিছু অংশ ছাড়া দেহতল সবুজাভ। মাথার চাঁদি, ঘাড়ের পিছন ও ম্যান্টল উজ্জ্বল তামাটে, পাছা নীলকান্তÍমণি রঙের এবং লেজ কিছুটা চেরা ও সবুজ । হলুদ থুতনি ও গলায় লালচে ও কালো বেষ্টনি রয়েছে। ঠোঁট শিঙ-কালো, চোখ গাঢ় লাল ও মুখ ধূসরাভ-পাটল বর্ণের। পা, পায়ের পাতা ও নখর কালচে-বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অনুজ্জ^ল অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি ঘন সবুজ, গাড়ের পিছনে নীলকান্তÍমণি রঙ, গলার নিচে কালচে বেড়সহ লালচে আমেজ থাকে। তরুণ পাখির দেহের লালচে উপরিভাগ সবুজে মিশ্রিত এবং মাথা ও ছোট ঠোঁটটি সবুজ। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে গ. ষ. ষবংপযবহধঁষঃরধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: খয়রামাথা সুইচোরা মিশ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। সচরাচর ৮-৩০টি পাখির দলে দেখা যায়; কোন জায়গা থেকে প্লত উড়ে শিকার ধরে খায়। খাবারের মধ্যে ডানাওয়ালা পোকা যেমন-ফড়িং, মৌÍমাছি, পিঁপড়া, উই ও প্রজাপতি রয়েছে। গাছের উঁচু খোলা ডালে বা ঝুলন্তÍ তারে বসে; ও প্লত ডানা ঝাপটে ধীরে ধীরে উড়ে চলে। অনুরক্তিক কোমল স্বরে ডাকে: পের্রিপ পের্রিপ । ফেব্রুয়ারি-জুন মাস প্রজনন ঋতু। নদী ও জলধারার বালিময় পাড়ে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায় ও স্ত্রীপাখি ৫-৬টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, ২.১´ ১.৯ সেমি.।
বিস্তৃতি: খয়রামাথা সুইচোরা বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বন ও প্যারাবনে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীন ও মিয়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: খয়রামাথা সুইচোরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: খয়রামাথা সুইচোরা বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ লেসেনল্ট-এর সুইচোরা (গ্রীক: সবৎড়ঢ়ং = সুইচোরা; ষবংপযবহধঁষঃর = থিওডোর লেসেনল্ট ডিলাটুর, ফ্রেঞ্চ উদ্ভিদবিদ ও ভারতে সংগ্রাহক, ১৮১৬-১৮২২) ।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

০৯৫. গবৎড়ঢ়ং ড়ৎরবহঃধষরং খধঃযধস, ১৮০২
সমনাম: জানা নেই
বাংলা নাম: সবুজ সুইচোরা, বাঁশপতি (আলী)
ইংরেজি নাম: এৎববহ ইবব-বধঃবৎ

বর্ণনা: সবুজ সুইচোরা ছোট ঘাস-সবুজ পাখি, লেজের কেন্দ্রীয় অভিক্ষেপটি অন্য পালককে ছাড়াইয়া গেছে (দৈর্ঘ্য ২১ সেমি., ওজন ১৫ গ্রাম, ডানা ৯.৫ সেমি., ঠোঁট ৩ সেমি., পা ১ সেমি., লেজ ১২.৫ সেমি.)। সোনালী বা লালচে ঘাড়ের নিচের অংশ ছাড়া পুরো দেহই সবুজ। কালো মাস্ক চোখ বরাবর চলে গেছে। ফ্যাকাসে নীল গলায় কালো বেড় থাকে। লেজের কেন্দ্রীয় পালক জোড়ার অভিক্ষেপ ভোঁতা আলপিনের মত। বাঁকা ঠোঁটটি বাদামি-কালো ও মুখ পাটল বর্ণের। চোখ গাঢ় লাল, পা ও পায়ের পাতা হলুদাভ-বাদামি এবং নখর শিঙ-বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিতে ফ্যাকাসে কিনারার পালকসহ ফ্যাকাসে ও কালো গলার বেড় নেই। ৮টি উপ-প্রজাতির মধ্যে গ. ড়. ড়ৎরবহঃধষরং ও গ. ড়. ভবৎৎঁমবরপবঢ়ং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: সবুজ সুইচোরা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা গাছ-পালা, আবাদি জমি, বেলাভূমি ও চারনভূমিতে বিচরণ করে। সচরাচর ছোট দলে থাকে। কোন জায়গা থেকে প্লত ছোঁ মেরে শিকার ধরে খায়। খাবার তালিকায় ডানাওয়ালা বড় পোকা যেমন-মৌÍমাছি, পিঁপড়া ও বোলতা, প্রজাপতি, মথ, গুবরে পোকা, ফড়িং এবং উই রয়েছে। রাস্তার পাশের তার, খুটি ও মরা ডালে অবস্থান নেয় এবং সচরাচর শিকার করার পর সেই অবস্থানেই ফিরে আসে। প্লত ডানা ঝাপটে ও অনমনীয় মুক্ত ডানায় সুন্দর ভাবে ধীরে ওড়ে চলে। সচরাচর মধুর গলায় কাপিয়ে অনুক্রমিক ভাবে ডাকে: ট্রি-ট্রি-ট্রি...। ফেব্রয়ারি-জুন প্রজনন ঋতু। বালিময় ভূমি বিশেষ করে রাস্তার পাশের কাটা পাড়ে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায় ও স্ত্রীপাখি ৪-৭টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, ১.৯´ ১.৭ সেমি.।
বিস্তৃতি: সবুজ সুইচোরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের গ্রামীণ কুঞ্জবন খামার ও খোলা মাঠে চোখে পড়ে। পৃথিবীতে উপ-সাহারীয় আফ্রিকা, ইসরাইল থেকে শুরু করে আরব থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, চীন, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়।
অবস্থা: সবুজ সুইচোরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: সবুজ সুইচোরা বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ উদয়ী সুইচোরা (গ্রীক: সবৎড়ঢ়ং = সুইচোরা; ল্যাটিন: ড়ৎরবহঃধষরং = প্রাচ্যের) ।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

০৯৬. গবৎড়ঢ়ং ঢ়যরষরঢ়ঢ়রহঁং খরহহধবঁং, ১৭৬৬
সমনাম: জানা নেই
বাংলা নাম: নীললেজ সুইচোরা
ইংরেজি নাম: ইষঁব-ঃধরষবফ ইবব-বধঃবৎ
বর্ণনা: নীললেজ সুইচোরা নীল লেজ ও বাতাসে ভাসমান দীর্ঘ লেজ ওয়ালা উজ্জ্বল সবুজ পাখি (দৈর্ঘ্য ৩১ সেমি., ডানা ১২.৮ সেমি., ঠোঁট ৩.৮ সেমি., পা ১.৩ সেমি., লেজ ৮.৫ সেমি., পিনপালক ১৩.৫ সেমি.)। নীল পাছা, লেজ ও লেজের নিচের কোর্ভাট, বুকের নীল আমেজ, হলুদ থুতনি এবং তামাটে গলা ছাড়া দেহের পুরোটাই সবুজ। কপাল সবুজ ও চোখের কালো ডোরা সরু নীল লাইনে ঘেরা। ঠোঁট শিঙ-কালো, চোখ লালচে-বাদামি থেকে গাঢ় লাল এবং পা ও পায়ের পাতা মেটে-ফ্যাকাসে থেকে কালচে বাদামি রঙের। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। উজ্জ্বল সবুজ অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির স্পষ্ট নীল রঙ পাছা, লেজের উপরের কোর্ভাট ও লেজে বিস্তৃত। গলা লালচে। তরুণ পাখির গলা ও বুক বয়স্ক পাখির চেয়ে ফ্যাকাসে ও অনুজ্জ্বল রঙের হয়।
স্বভাব: নীললেজ সুইচোরা মুক্ত বালিময় এলাকা, পানির ধারে বৃক্ষপূর্ণ জায়গা ও প্যারাবনে বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট ঝাঁকে থাকে। পানির সামান্য ওপর দিয়ে ওড়ে বা উঁচু জায়গা থেকে উড়ন্তÍ শিকারকে ছোঁ মেরে ধরে খায়। খাবার তালিকায় প্রধানত ফড়িং, বোলতা ও মৌÍমাছি রয়েছে। মাঝে মাঝে গুবরে পোকা, মথ, ছারপোকা ও নীল দেহের মাছিও খায়। প্রায়ই পালক পরিস্কার করার জন্য নদীতে হালকা ডুব দিয়ে থাকে। সচরাচর গভীর ও গলা কাপিয়ে অনুরক্তিক স্বরে ডাকে: প্রিরররিও...। মার্চ-জুন কলোনিতে প্রজনন করে। নদীর খাড়া তীর, বালিময় খাড়া উঁচু পাহাড় বা সমতল বালিতীরে ২মিটার লম্বা সুড়ঙ্গ তৈরি করে বাসা বানায় ও স্ত্রীপাখি ৫-৭টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, ২.৩´ ২.০ সেমি.।
বিস্তৃতি: নীললেজ সুইচোরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের গ্রাম, নদীর পাড় ও মুক্ত বনভূমিতে পাওয়া যায়; প্রজননের জন্য পরিযায়ী দলের আগমনে গ্রীষ্মে এই পাখির সংখ্যা এদেশে অনেক বেড়ে যায়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চল ও নিউগিনি এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; শীতে ভারত, বাংলাদেশের দক্ষিণে ও ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায়।
অবস্থা: নীললেজ সুইচোরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: নীললেজ সুইচোরা বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ফিলিপাইনের সুইচোরা (গ্রীক: সবৎড়ঢ়ং = সুইচোরা; ঢ়যরষরঢ়ঢ়রহঁং = ফিলিপাইনের )।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

পরিবার: ঈটঈটখওউঅঊ
কোকিল
ছোট থেকে মাঝারি আকারের বৃক্ষচারী পাখি; অধিকাংশেরই সরুঠোঁট ও দীর্ঘ লেজ; সাধারণত পিঠ গাড় রঙের ও পেট হালকা বর্ণের; সাধারণত পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় বড় পার্থক্য থাকে।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ২২ গণে ৮৮ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৮ গণে ১৮ প্রজাতি

গণ: ঈষধসধঃড়ৎ কধঁঢ়, ১৮২৯
মাঝারি আকারের কোকিল; ঝুটি দীর্ঘ ও সুচালো; ডানা খাটো ও গোলাকার; ঠোঁট পাশে চাপা ও আগার দিকে বেশ বাঁকা; পায়ের গোড়া ছাড়া পালক নেই; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া লেজ; লেজ ডানার চেয়ে বেশ লম্বা; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য নেই।
পৃথিবীতে ৪ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

০৯৭. ঈষধসধঃড়ৎ পড়ৎড়সধহফঁং (খরহহধবঁং, ১৭৬৬)
সমনাম: ঈঁপঁষঁং পড়ৎড়সধহফঁং খরহহধবঁং, ১৭৬৬
বাংলা নাম: খয়রাপাখ পাপিয়া
ইংরেজি নাম: ঈযবংঃহঁঃ-রিহমবফ ঈঁপশড়ড়

বর্ণনা: খয়রাপাখ পাপিয়া লম্বা লেজের ঝুটিওয়ালা পাখি (দৈর্ঘ্য ৪৭ সেমি., ওজন ৭০ গ্রাম, ডানা ১৬ সেমি., ঠোঁট ২.৫ সেমি., পা ২.৭ সেমি., লেজ ২৪ সেমি.)। তামাটে ডানা ও ঘাড়ের পিছনের দিকের সাদা গলাবন্ধ ছাড়া পিঠ চকচকে ধাতব কালো। থুতনি, গলা ও বুকে গোলাপি আমেজ ব্যতীত দেহতল সাদাটে। মসৃণ কালো মাথায় লম্বা ঝুটি পিছনের দিকে কাত হয়ে পড়ে থাকে। কালো লেজের আগা সাদা । চোখ লালচে-বাদামি। কালচে ঠোঁটের নিচের অংশের গোড়া হলদে, মুখ স্যামন ও পাটল বর্ণে মেশানো এবং ঠোঁটের সঙ্গমস্থল ফ্যাকাসে। পা ও পায়ের পাতা স্লে¬¬ট -বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি, ম্যান্টল, স্ক্যাপুলার ও ডানার কোর্ভাটের প্রান্তÍদেশে লাল রঙ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। লেজের আগা পীতাভ, ঝুটি বেশ খাটো ও গোলাকার, ঠোঁট ফ্যাকাসে এবং গলা ও বুক সাদাটে।
স্বভাব: খয়রাপাখ পাপিয়া চিরসবুজ বন, আর্দ্র পাতাঝরা বন, বনভূমি ও ক্ষুদ্র ঝোপে বিচরণ করে। একা, জোড়ায় বা ৩-৪টি পাখির বিচ্ছিন্ন দলে থাকে। ডাল থেকে ডালে লাফ দিয়ে গাছের চাঁদোয়ায় ও ঝোপে ঘন পাতার আড়ালে খাবার খায়। খাবার তালিকায় প্রধানত শুঁেয়া পোকা রয়েছে। প্লত পাখা ঝাপটে গাছ থেকে গাছে ঘুরে বেড়ায়। সাধারণত প্রজনন ঋতুর বাহিরে নীরবথাকলেও প্রজনন ঋতুতে বেশ গান গায়। এপ্রিল-আগস্ট প্রজনন ঋতু। উচ্চ শব্দে চেঁচিয়ে ডাকে: পীপ-পীপ...। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো কিংবা ছানা পালন করে না। স্ত্রীপাখি পেঙ্গা, বিশেষ করে মালাপেঙ্গার বাসায় ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম নীল, ২.৬ ´ ২.২ সেমি.।
বিস্তৃতি: খয়রাপাখ পাপিয়া বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি; গ্রীষ্মকালে ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে ও প্যারাবনে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: খয়রাপাখ পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে একে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: খয়রাপাখ পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ করোম্যান্ডেল-এর তীক্ষèকণ্ঠ পাখি (ল্যাটিন: পষধসধঃড়ৎ = তীক্ষèকণ্ঠে চিৎকার, পড়ৎড়সধহফঁং = করোম্যান্ডেল উপকূল, চেন্নাই, ভারত)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]

০৯৮. ঈষধসধঃড়ৎ লধপড়নরহঁং (ইড়ফফধবৎঃ, ১৭৮৩)
সমনাম: ঈঁপঁষঁং লধপড়নরহঁং ইড়ফফধবৎঃ, ১৭৮৩
বাংলা নাম: পাকরা পাপিয়া, পাপিয়া (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম: ঔধপড়নরহ ঈঁপশড়ড় (চরবফ ঈঁপশড়ড়)

বর্ণনা: পাকরা পাপিয়া দীর্ঘ লেজের ঝুটিয়াল পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি., ওজন ৬৫ গ্রাম, ডানা ১৫ সেমি., ঠোঁট ২.৬ সেমি., পা ২.৭ সেমি., লেজ ১৬ সেমি.)। পিঠ কালো ও দেহতল সাদা। ডানার প্রাথমিক পালকের গোড়ায় সাদা পট্টি রয়েছে। লেজের পালকের আগার সাদা অংশের অধিকাংশ ওড়ার সময় চোখে পড়ে। চোখ বাদামি ও ঠোঁট শিঙ-কালো রঙের। পা ও পায়ের পাতা শে¬¬ট-ধূসর এবং নখর কালো। খাটো, মসৃণ ঝুঁটি কাত হয়ে মাথার পিছনে পড়ে থাকে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ ধূসর-বাদামি। পেটে পীতাভ এবং গলা ও বুকের উপরিভাগে ধূসর আমেজ রয়েছে। ঠোঁট ফ্যাকাসে। মাথায় ক্ষুদ্র ঝুঁটি ও ডানায় সাদা ছোট পট্টি আছে। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. ল. ঢ়রপধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: পাকরা পাপিয়া বন, আবাদি জমি, গাছপালা পরিপূর্ণ এলাকা, বাগান, খামার ও ঝোঁপে বিচরণ করে। সাধারণত একা বা জোড়ায় ও কখনও বা ৫-৬টি পাখির ছোট্ট দলে থাকে। ঘন পাতা ঘেরা গাছের চাঁদোয়া, বনতলের গুল্ম, ঝোপ ও ক্ষুদ্র ঝোঁপে লুকিয়ে খাবার খায়। খাবারের মধ্যে শুঁয়োপোকা, উই, পিঁপড়া, ছারপোকা ইত্যাদি রয়েছে। পরিযায়ন কালে সাধারণত একই জায়গায় একই দিনে বছরের পর বছর ফিরে আসে। জুন-আগস্ট মাস প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি সুমধুর সুরে ডাকে: পীউ পিউ-পিউ(পিউ)-(পিউ): পী-ইউ; পিউ। বাসা তৈরি, ডিমে তা দেওয়া কিংবা ছানা পালন করে না। স্ত্রীপাখি ঞঁৎফড়রফবং ছাতারের বাসায় একটি ডিম পাড়ে। ডিমের বর্ণ পালকমাতার ডিমের সঙ্গে মিলে যায়।
বিস্তৃতি: পাকরা পাপিয়া বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি; গ্রীষ্মকালে সকল বিভাগের গ্রামাঞ্চলে পাওয়া যায়; শীতকালে পূর্ব আফ্রিকায় থাকে। আফ্রিকার অধিকাংশ অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়া মহাদেশে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, ইরান, আফগানিস্তান ও মিয়ানমারে পাওয়া যায়।
অবস্থা: পাকরা পাপিয়া বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পাকরা পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ জ্যাকোবিন-এর তীক্ষèকণ্ঠ পাখি (ল্যাটিন: পষধসধঃড়ৎ = আর্তনাদকারী পাখি, লধপড়নরহঁং = জ্যাকোবিন, উড়সরহরপধহ ভৎরধৎং)।
[ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা]
গণ: ঐরবৎড়পড়পপুী গহৃষষবৎ ১৮৪৫

মাঝারি আকারের কোকিল; পাখির ডানা খুব খাটো ও বেশি গোলাকার, ৩য় বা ৪র্থ প্রান্তÍপালক দীর্ঘতম; লেজ দীর্ঘ ও ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া; লেজ-ঢাকনি বেশ লম্বা।
পৃথিবীতে ৮ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি

০৯৯. ঐরবৎড়পড়পপুী হরংরপড়ষড়ৎ ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮২১
সমনাম: জানা নেই
বাংলা নাম: হজসনি চোখগ্যালো
ইংরেজি নাম: ঐড়ফমংড়হ’ং ঐধশি-ঈঁপশড়ড়

বর্ণনা: হজসনি চোখগ্যালো ফেটাওয়ালা লেজের ধূসর পাখি (দৈর্ঘ্য ২৯ সেমি., ডানা ১৮ সেমি., ঠোঁট ২ সেমি., পা ২.৪ সেমি., লেজ ১৪ সেমি.)। পিঠ স্লেট-ধূসর ও দেহতল লালচে (ৎঁভড়ঁং)। ফ্যাকাসে বুকে ও পেটে লালচে ডোরা রয়েছে। রান, অবসারণী ও লেজের নিচের কোর্ভাটের পালক সাদা। লেজে ধূসর ও কালো পট্টি একটার পর একটা সজ্জিত এবং লেজের আগা লালচে। আবছা ধূসর ডোরাসহ থুতনি শে¬¬ট-ধূসর ও গলা সাদাটে। চোখ গোলাপি ও চোখের পাতা হলুদ। পা উজ্জ^ল লাল এবং পায়ের পাতা ও নখর শিঙ-বাদামি। হলুদ ঠোঁটের আগা কালো বা সবুজাভ-কালো। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ পালকের প্রান্তেÍর সরু পীতাভ বর্ণসহ কালচে বাদামি ও দেহতলে স্পষ্ট কালচে চিতি সমেত সাদা দেখায়।
স্বভাব: হজসনি চোখগ্যালো চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বন বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় বিচরণ করে। পল¬বগুচ্ছ, ঘন ঝোপ ও বনতলের গুল্মলতায় সুক্ষèভাবে খাবার খোঁজে। খাবারের মধ্যে পোকামাকড়, শুঁয়োপোকা ও ফল বিশেষ করে ডুমুর ও রসালো ফল রয়েছে। শিকরের মত ধীরে ডানা নেড়ে নীরবে ওড়ে চলে ও কোথাও অবস্থান নেয়ার আগে উপরের দিকে আরোহণ করে। ফেটা লেজ ও শিকরের মত পায়ের ভঙ্গি প্রায়ই খুদে পাখিদের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গ্রীষ্মকালে প্রজনন এলাকা হিমালয় থেকে বর্ধিত হয়ে চীন ও সাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চল পর্যন্তÍ। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি পুনরুক্তিক কর্কশ কণ্ঠে ডাকে: গী-হোয়িজ্। বাসা বানানো, ডিম ফোঁটানো কিংবা ছানা পালন করে না। স্ত্রীপাখি শাবুলবুলি ও খাটোডানার বাসায় একটি ডিম পাড়ে। ডিম জলপাই-বাদামি, ২.৫ ´ ১.৬ সেমি.।
বিস্তৃতি: হজসনি চোখগ্যালো বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; ঢাকা বিভাগে দেখা গেছে বলে তথ্য রয়েছে। ভারত, নেপাল, ভুটান, সাইবেরিয়া, চীন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও জাপান এবং ফিলিপাইনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: হজসনি চোখগ্যালো বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: হজসনি চোখগ্যালোর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চোখগেলো (গ্রীক: যরবৎধী = শিকরে, শড়শশীঁ = কোকিল)।
[ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা]

১০০. ঐরবৎড়পড়পপুী ংঢ়ধৎাবৎরড়রফবং (ঠরমড়ৎং, ১৮৩২)
সমনাম: ঈঁপঁষঁং ংঢ়ধৎাবৎরড়রফবং ঠরমড়ৎং, ১৮৩২
বাংলা নাম: বড় চোখগ্যালো
ইংরেজি নাম: খধৎমব ঐধশি-ঈঁপশড়ড়

বর্ণনা: বড় চোখগ্যালো দীর্ঘ ডোরা ওয়ালা লেজের ছাই-বাদামি পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৮ সেমি., ওজন ১২৫ গ্রাম, ডানা ২২ সেমি., ঠোঁট ৩ সেমি., পা ২.৬ সেমি., লেজ ২০ সেমি.)। পিঠ ছাই-বাদামি ও দেহতল সাদাটে। ফ্যাকাসে বুকে লালচে-বাদামি ডোরা রয়েছে। বুকের তল, বগল, পেট ও লেজের নিচের কোর্ভাটে লালচে থেকে কালচে বাদামি ডোরা বেশ স্পষ্ট। মাথার চাঁদি, ঘাড়ের পিছন ও ঘাড়ের পাশ ছাই-ধূসর। লেজের কালো ও বাদামি ফেটা বিন্যাস একটির পর আরেকটি সজ্জিত ও লেজের আগা সাদা । চোখ কমলা-হলুদ ও চোখের পাতার প্রান্তÍদেশ লেবুর মত হলুদ। ঠোঁট দুরঙা: উপরের ভাগ কালচে শিঙ-রঙের ও নিচের ভাগ সবুজাভ-স্লেট রঙের। পুরুষ ও মেয়েপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির বাদামি পিঠে লালচে ডোরা এবং ঘাড়ের পিছনটায় ফ্যাকাসে লালচে রঙ ও বুকে স্পষ্ট বাদামি ডোরা আছে। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঐ. ং. ংঢ়ধৎাবৎরড়রফবং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: বড় চোখগ্যালো চিরসবুজ বন, কনিফার বন, অপ্রধান বন ও কুঞ্জবনে পাওয়া যায়। সাধারণত একা থাকে। বনের চাঁদোয়ায় ও ঝোঁপে গাছের ডালা ও পাতা থেকে খুঁটে খুঁটে খাবার খায়। খাবার তালিকায় শুঁয়োপোকা, গুবরে পোকা, ছারপোকা, ফড়িং, পিঁপড়া ও মাকড়সা রয়েছে। পূর্বরাগের সময় ভোরে ও গোধূলিতে, পূর্ণিমা রাত ও মেঘাচ্ছন্ন দিনে ডাকে। মধুর কণ্ঠে শিস্ দিয়ে ডাকে: পিপক পিপকক..। বাসা বানানো, ডিম ফোঁটানো কিংবা ছানা পালন এর কোনটিই করে না। গ্রীষ্মে হিমালয়ের পূর্বভাগ থেকে চীন ও ইন্দোচীনে এর প্রজনন ঋতু। স্ত্রীপাখি পেঙ্গা, খাটোডানা বা মাকড়মার-এর বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের বর্ণ ও আকার পালক প্রজাতির ডিমের বর্ণ ও আকারের সঙ্গে মিল রেখে পাড়ে যেমন-পেঙ্গার বাসার জন্য ডিম নীল, ৩.০ ´ ২.২ সেমি. এবং খাটোডানা ও মাকরমারের জন্য বাদামি, ২.৬ ´ ১.৯ সেমি.।
বিস্তৃতি: বড় চোখগ্যালো বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; শীতে সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। ভারতের পূর্বভাগ থেকে শুরু করে চীন ও ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলসহ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বড় চোখগ্যালো বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: বড় চোখগ্যালোর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চড়–ইশিকরে-চোখগেলো (গ্রীক: যরবৎধী = শিকরে, শড়শশীঁ = কোকিল; ল্যাটিন: ংঢ়ধৎাবৎরঁং = চড়–ইশিকরে)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]

১০১. ঐরবৎড়পড়পপুী াধৎরঁং (ঠধযষ, ১৭৯৭)
সমনাম: ঈঁপঁষঁং াধৎরঁং ঠধযষ, ১৭৯৭
বাংলা নাম: পাতি চোখগ্যালো
ইংরেজি নাম: ঈড়সসড়হ ঐধশি-ঈঁপশড়ড়

বর্ণনা: পাতি চোখগ্যালো লম্বা ডোরা ওয়ালা লেজের মসৃণ ধূসর পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৪ সেমি., ওজন ১০০ গ্রাম, ডানা ২০ সেমি., ঠোঁট ২.৮ সেমি., পা ২.৩ সেমি., লেজ ১৭ সেমি.)। পিঠ ধূসর ও দেহতল লালচে-সাদা। গলা সাদা ও বুক লালচে এবং সাদা পেট ও বগলে আবছা বাদামি ডোরা রয়েছে। ডানার নিচের কোর্ভাটে লালচে আমেজ ও ধূসর লেজে ৪-৫টি কালো ডোরাসহ আগা ৎঁভবংপবহঃ রঙের হয়। চোখ ধূসরাভ-হলুদ থেকে হলদে-পীতাভ ও চোখের পাতা লেবুর মত হলুদ বর্ণের। মুখ, পা, পায়ের পাতা ও নখর উজ্জ্বল হলুদ। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি একই রকম দেখায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহে অনুজ্জ্বল লালচে ডোরা, লেজে লালচে ডোরা ও সাদা দেহতলে কালচে বাদামি ফুটকি থাকে। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. া. াধৎরঁং বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: পাতি চোখগ্যালো সকল বন, কুঞ্জবন, বাগান ও গ্রামে বিচরণ করে। একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। কোন জায়গা থেকে পল¬¬বগুচ্ছ ও ঘাসে শিকার খোঁজে ও নিচে নেমে হঠাৎ শিকারকে ধরে ফেলে। খাদ্যতালিকায় শুঁয়োপোকা, চারাগাছখেকো পোকা, ফড়িং, পঙ্গপাল, উড়ন্তÍ উই ও মাকড়সা রয়েছে। কখনও ছোট টিকটিকি ও ফল খায়। প্লত ও ধীরে পর্যায়ক্রমিক ডানা চালিয়ে শিকরের মত উড়ে। মার্চ-জুন মাস প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি গোপন আস্তানা থেকে অবিরাম ডাকতে থাকে। উচ্চ মনোহর সুরে দু’বার ডাকে: টুট টুটু। ডাকের সুরের জনশ্র“তি এরূপ- চোখ গেলো, পিউ কাহা বা ব্রেইন ফিভার। বাসা তৈরি করে না। স্ত্রীপাখি দামা, ছাতারে, বেনেবৌÍÍএর বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম চকচকে নীলকান্তÍমণি-নীল, ২.৬ ´ ২.০ সেমি.।
বিস্তৃতি: পাতি চোখগ্যালো বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের বনে, বাগানে ও লোকালয়ে বিচরণ করে। মালদ্বীপ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ও মিয়ানমারে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ।
অবস্থা: পাতি চোখগ্যালো বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পাতি চোখগ্যালো বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বৈচিত্র্যময় চোখগেলো (গ্রীক: যরবৎধী = শিকরে, শড়শশীঁ = কোকিল; ল্যাটিন: াধৎরঁং = বৈচিত্র্যময়)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]

গণ: ঈঁপঁষঁং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
মাঝারি আকারের কোকিল; ঝুটি নেই; ঠোঁট মাঝারি আকারের; ঠোঁটের গোড়া অত্যন্তÍ নমনীয়; পায়ে আংশিক পালক থাকে; কোন প্রজাতি পরিযায়ী ও কোন প্রজাতি অপরিযায়ী, পরিযায়ী প্রজাতির ডানা লম্বা ও সুচালো।
পৃথিবীতে ১১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৪ প্রজাতি

১০২. ঈঁপঁষঁং পধহড়ৎঁং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
সমনাম: জানা নেই
বাংলা নাম: পাতি পাপিয়া
ইংরেজি নাম: ঈড়সসড়হ ঈঁপশড়ড় (ঊঁৎধংরধহ ঈঁপশড়ড়)

বর্ণনা: পাতি পাপিয়া ধূসর রঙের পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি., ওজন ৯০ গ্রাম, ডানা ২২ সেমি., ঠোঁট ২.৮ সেমি., পা ২.৩ সেমি., লেজ ১৬ সেমি.)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। পুরুষপাখির পিঠ ধূসর ও দেহতল সাদা। থুতনি, গলা ও বুক ফ্যাকাসে ছাইরঙের। সাদা পেট, বগল, অবসারণী ও লেজের নিচের কোর্ভাটের ওপর কালো সরু ডোরা আছে। কালচে বাদামি লেজের আগা সাদা। স্ত্রীপাখির চেহারা দু’ধরনের হয়। এক ধরনের চেহারায় ধূসর বুকের নিচে প্রান্তÍদেশে লালচে আমেজ ছাড়া পুরুষপাখির সঙ্গে চেহারার কোন পার্থক্য নেই। অন্য রূপটিকে কলিজা রূপ বলে। এতে লেজসহ লালচে-বাদামি পিঠে কালচে বাদামি ডোরা ও সাদা দেহতলে কালচে ডোরা থাকে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়েরই চোখ হলুদ, পা ও পায়ের পাতা হলুদ এবং নখর শিঙ-রঙের। শিঙ-বাদামি ঠোঁটের গোড়া হলদে। শে¬¬ট-ধূসর অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঘাড়ের পিছনটায় সাদা চিতি ও পালকের সাদা পাড় থাকে। ৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. প. নধশবৎর বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: পাতি পাপিয়া চিরসবুজ বন, আর্দ্র পাতাঝরা বন, অপ্রধান বন ও পর্বতের তৃণভূমিতে বিচরণ করে। সাধারণত একা থাকে। বন বা ঝোঁপের উঁচু চাঁদোয়ায় শিকার ধরে। খাবারের মধ্যে রয়েছে পোকামাকড় বিশেষ করে লোমশসহ শুঁয়োপোকা। মার্চ-সেপ্টেম্বর হিমালয় ও সাইবেরিয়ায় প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষ পুনরুক্তিক সুরে ডাকে:কুক-কু... কুক-কু...। পুরুষপাখিকে সাড়া দিয়ে স্ত্রীপাখি অনুক্রমিকভাবে ডাকে: হুয়িহুয়িহুয়ি...। ভোরে ও গোধূলিতে বেশ কর্মচঞ্চল হয়। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো ও ছানা পালন এর কোনটিই করে না। স্ত্রীপাখি আকারের ছোট পাখি যেমন-ঝাড়ফিদ্দা, ঝাড়ফুটকি, খঞ্জন, তুলিকা ও চটকের বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম মাঝে মাঝে ঝাড়ফুটকির দোদুল্যমান বাসার ছোট ছিদ্রপথে বা মাটিতে ঝাড়ফিদ্দার বাসার গর্তের বাহিরে পেড়ে গড়িয়ে বাসার ভিতর প্রবেশ করায়।
বিস্তৃতি: পাতি পাপিয়া বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; গ্রীষ্মে চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বৃক্ষবহুল অঞ্চলে থাকার কয়েকটি তথ্য আছে। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; পুরো ভারত উপমহাদেশে পাওয়া যায়।
অবস্থা: পাতি পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পাতি পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সুরেলা কোকিল (ল্যাটিন: পঁপঁষঁং = কোকিল, পধহড়ৎঁং = সুমধুর সুর)।
[ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা]

১০৩. ঈঁপঁষঁং সরপৎড়ঢ়ঃবৎঁং এড়ঁষফ, ১৮৩৮
সমনাম: জানা নেই
বাংলা নাম: বউকথাকও পাপিয়া, বৌÍÍকথা-কও (আলী)
ইংরেজি নাম: ওহফরধহ ঈঁপশড়ড়

বর্ণনা: বউকথাকও পাপিয়া ডোরা বুকের ধূসর রঙের পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি., ওজন ১৩০ গ্রাম, ডানা ২০ সেমি., ঠোঁট ৩ সেমি., পা ২ সেমি., লেজ ১৫ সেমি.)। ডানায় বাদামি প্রান্তÍভাগসহ পিঠ ছাই-ধূসর রঙের। পুরুষপাখির থুতনি, গলা ও বুকের উপরিভাগ ছাই-বাদামি। সাদা বুকের তল থেকে লেজের নিচের কোর্ভাটের ওপর প্রশস্ত কালো ডোরা রয়েছে। কালচে ধূসর লেজে সাদা প্রান্তÍীয় ফেটা ও কালো উপ-প্রান্তÍীয় ফেটা থাকে। চোখ লালচে-বাদামি ও চোখের পাতা উজ্জ্ব^ল লেবু-হলুদ। ঠোঁট দুরঙা: উপরের ঠোঁট শিঙ-বাদামি ও নিচের ঠোঁট সবুজাভ-বাদামি। পা ও পায়ের পাতা হলুদ এবং নখর শিঙ-বাদামি। স্ত্রীপাখির গলা ফ্যাকাসে ধূসর, ধূসর বুকের গোড়ায় লালচে-পীতাভ আমেজ ও বুকের তলে লালচে পাড় থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ বাদামি ও মাথার পালকের আগায় প্রশস্ত সাদা অংশ এবং সাদা দেহতলে বাদামি ডোরা রয়েছে। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. স. সরপৎড়ঢ়ঃবৎঁং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: বউকথাকও পাপিয়া বন, কুঞ্জবন, বাগান ও রাস্তার পাশের গাছে বিচরণ করে। সাধারণত একা থাকে। গাছের চাঁদোয়ার পল¬¬বে সুক্ষèভাবে খাবার খোঁজে। কখনও মাটিতে পতিত পাতা উল্টে খাবার খায়। খাবার তালিকায় শুঁয়োপোকা ও কোমল পোকামাকড় রয়েছে। : এপ্রিল-জুন প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি সারাদিন ও পূর্ণিমা রাতে ডাকে। পুনরুক্তিক পরিচিত সুরে ডাকে:বকো-টাকো। স্ত্রীপাখি মাঝে মাঝে উচ্চ কণ্ঠে ডেকে থাকতে পারে। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো ও ছানা পালন এর কোনটিই করে না। স্ত্রীপাখি ফিঙে ও বেনেবৌÍÍএর বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম ২.৫´ ১.৯ সেমি. ও পালকমাতার ডিম ফোঁটার কয়েক দিন পরে ফোটে। ডিমের রঙ পালকমাতার ডিমের সঙ্গে মিলে যায়।
বিস্তৃতি: বউকথাকও পাপিয়া বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের গ্রামীণ কুঞ্জবন ও বনভূমিতে পাওয়া যায়। সারা ভারত উপমহাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, রাশিয়া ও ফিলিপাইনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বউকথাকও পাপিয়া বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বউকথাকও পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ছোটডানা কোকিল (ল্যাটিন: পঁপঁষঁং = কোকিল; গ্রীক: সরশৎড়ঢ়ঃবৎধ = ছোট ডানার)।
[ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা]

১০৪. ঈঁপঁষঁং ঢ়ড়ষরড়পবঢ়যধষঁং খধঃযধস, ১৭৯০
সমনাম: জানা নেই
বাংলা নাম: ছোট পাপিয়া
ইংরেজি নাম: খবংংবৎ ঈঁপশড়ড় (ঝসধষষ ঈঁপশড়ড়)

বর্ণনা: ছোট পাপিয়া স্লে¬¬ট-ধূসর রঙের পাখি, তবে কিছু স্ত্রীপাখি লালচে হয় (দৈর্ঘ্য ২৫ সেমি., ওজন ৫০ গ্রাম, ডানা ১৫ সেমি., ঠোঁট ২.৫ সেমি., পা ১.৮ সেমি., লেজ ১৩ সেমি.)। পুরুষপাখির পিঠ স্লে¬¬ট-ধূসর। থুতনি, গলা ও বুক ফ্যাকাসে ছাই রঙের এবং পেটে সাদার ওপর প্রশস্ত কালো ডোরা রয়েছে। অনুক্রমিক পালকে সজ্জিত লেজের আগা সাদা। স্ত্রীপাখির চেহারা দু’ধরনের হয়। সাধারণ চেহারা পুরুষপাখির মত। চেহারার আরেকটি ধরনকে বলে কলজে রূপ। উজ্জ^ল লালচে বাদামি দেহের উপরিভাগের পিঠে, ডানায় ও লেজে কালচে বাদামি ডোরা থাকে। সাদা দেহতলেও প্রশস্ত কালচে বাদামি ডোরা রয়েছে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়েরই চোখ বাদামি, চোখের কিনারা হলুদ, কালচে-শিঙ রঙের ঠোঁট এবং পা হলদে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ধূসর-বাদামি পিঠে লালচে ডোরা, ঘাড়ের পিছনটায় সাদা চিতি ও পেটে প্রশস্ত ডোরা থাকে।
স্বভাব: ছোট পাপিয়া চিরসবুজ বন, আর্দ্র পাতাঝরা বন ও বৃক্ষবহুল বনভূমিতে পাওয়া যায়। সাধারণত একা বা জোড়ায় বিচরণ করে। গাছের চাঁদোয়ায় কখনও মাটিতে পতিত পাতা উল্টে খাবার খায়। খাবারের মধ্যে শুঁয়োপোকা ও কোমল পোকামাকড় রয়েছে। মে-জুলাই হিমালয় ও চীনে প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি খোলা অবস্থান, গোধূলিতে ওড়ার সময়, মেঘাচ্ছন্ন দিনে ও পূর্ণিমা রাতে ডাকে। ক্রন্দনের সুরে ৫-৬টি খড়খড় শব্দে ডাকে: দ্যাট’স ইউর চকি প্যাপ্যার ...। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো ও ছানা পালন এর কোনটিই করে না। স্ত্রীপাখি খুদে পাখি যেমন-ফুটকি, ছাতারে ও খাটোডানার বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম ২.১´ ১.৪ সেমি.। ডিমের বর্ণ পালকমাতার ডিমের রঙের ওপর ভিত্তি করে সাদা থেকে লাল থেকে পারে।
বিস্তৃত: ছোট পাপিয়া বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; বসন্তেÍ চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দেখা গেছে বলে তিনটি তথ্য রয়েছে। গ্রীষ্মে প্রজননের জন্য এরা হিমালয়, চীন, জাপান, কোরিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উত্তরাংশে আসে এবং শীতে পূর্ব আফ্রিকা ও দক্ষিণ ভারতে যায়। ।
অবস্থা: ছোট পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: ছোট পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ মেটেমাথা কোকিল (ল্যাটিন: পঁপঁষঁং = কোকিল; গ্রীক: ঢ়ড়ষরড়ং = ধূসর, শবঢ়যধষড়ং = মাথার)।
[ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা]

১০৫. ঈঁপঁষঁং ংধঃঁৎধঃঁং ইষুঃয, ১৮৪৩
সমনাম: জানা নেই
বাংলা নাম: উদয়ী পাপিয়া
ইংরেজি নাম: ঙৎরবহঃধষ ঈঁপশড়ড় (ঐরসধষধুধহ ঈঁপশড়ড়)

বর্ণনা: উদয়ী পাপিয়া শে¬¬ট-ধূসর পাখি, তবে কয়েকটি স্ত্রীপাখি বাদামি রঙের হয় (দৈর্ঘ্য ৩১ সেমি., ওজন ৯০ গ্রাম, ডানা ১৮ সেমি., ঠোঁট ২.৮ সেমি., পা ২.৩ সেমি., লেজ ১৫ সেমি.)। পুরুষপাখির পিঠ ধূসর। গলা ও বুকের উপরিভাগ ধূসর এবং পীতাভ-সাদা দেহতলে কালো ডোরা থাকে। কালচে ধূসর লেজের আগা সাদা ও লেজের বাইরের পালকে অনুক্রমিক সাদা খাঁজ কাটা রয়েছে। স্ত্রীপাখির রঙের দুটি পর্যায় থাকে যাকে চেহারার রূপ বলে। সাধারণ চেহারায় ধূসর বুকে লালচে আমেজ ছাড়া পুরুষপাখির মত দেখায়। অন্য চেহারায় লালচে-বাদামি পিঠে অনিবিড় কালচে বাদামি ডোরা ও পীতাভ-সাদা দেহতলে কালচে বাদামি ডোরা আছে। লালচে বাদামি লেজে স্পষ্ট কালচে বাদামি ডোরা থাকে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়েরই চোখ কমলা-লাল, চোখের কিনারা হলুদ, ঠোঁট শিঙ-সবুজ ও পা হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রীপাখির মাথার পিছনের সাদা পট্টি ও পিঠের পালকের ফ্যাকাসে বেড় ছাড়া পুরো দেহই তাদের পূর্ণ বয়স্ক পাখির মত। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. ং. ংধঃঁৎধঃঁং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: উদয়ী পাপিয়া বন, খোলা বনভূমি, ঘেরা ফলের বাগান ও বৃক্ষশোভিত বনভূমিতে বিচরণ করে। সাধারণত পল্ল¬বের নিচে একা লুকিয়ে থাকে। গাছ ও ক্ষুদ্র ঝোঁপে খাবার খায়। খাবার তালিকায় পোকামাকড় ও লোমশসহ শুঁয়োপোকা রয়েছে। হিমালয়, চীন ও সাইবেরিয়ায় মে-জুন প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি কপট কণ্ঠে ডাকে: উউ্প। স্ত্রীপাখি জল বুদ্বুদ্ শব্দ তুলে অনুক্রমিক ভাবে ডাকে:কুই কুই-কুইকুইকুইকুইকুই। পূর্বরাগ ঘটে প্রায়ই ভোরে ও গোধূলিতে। বাসা বাঁধেনা ও স্ত্রীপাখি ছোট পাখি যেমন-চুটকি ও হরবোলার বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ ও আকার পালকমাতার ডিমের সঙ্গে মিলে যায়। ডিম সাধারণত ২.০´ ১.৩ সেমি. ও ফ্যাকাসে সাদা। পালকমাতার ডিম ফোঁটার ১-২দিন আগে এর ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: উদয়ী পাপিয়া বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; বসন্তেÍ সিলেট বিভাগে ডাক রেকর্ড করার একটি তথ্য রয়েছে। প্রজননের জন্য এরা পাকিস্তান, ভারত, নেপাল ও ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চীনে আসে এবং শীতে অস্ট্রেলিয়া, নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে যায়।
অবস্থা: উদয়ী পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: উদয়ী পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বর্ণিল কোকিল (ল্যাটিন: পঁপঁষঁং = কোকিল, ংধঃঁৎধঃঁং = বর্ণিল)।
[ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা]

গণ: ঈধপড়সধহঃরং গহৃষষবৎ, ১৮৪৩
ছোট আকারের কোকিল; খাটো ও অতি গোলাকার ডানা; লেজ লম্বা ও ডানার চেয়ে দীর্ঘ; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া লেজ।
পৃথিবীতে ৮ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি

১০৬. ঈধপড়সধহঃরং সবৎঁষরহঁং (ঝপড়ঢ়ড়ষর, ১৭৮৬)
সমনাম: ঈঁপঁষঁং সবৎঁষরহঁং ঝপড়ঢ়ড়ষর, ১৭৮৬
বাংলা নাম: করুণ পাপিয়া, ছোট ভরাউ (আলী)
ইংরেজি নাম: চষধরহঃরাব ঈঁপশড়ড়
বর্ণনা: করুণ পাপিয়া ধূসর পিঠের কমলা বুকের পাখি (দৈর্ঘ্য ২৩ সেমি., ডানা ১১ সেমি., ঠোঁট ১.৬ সেমি., পা ১.৭ সেমি., লেজ ১২ সেমি.)। পুরুষপাখির পিঠ ধূসর ও দেহতল কমলা রঙের। মাথা, ঘাড়ের পাশ, থুতনি ও গলা ছাই-ধূসর দেখায়। বুকের উপরিভাগ কমলা-ধূসর এবং বুকের তল, বগল, পেট ও অবসারণী কমলা। ধূসর-কালো লেজের আগা সাদা ও লেজের বাইরের পালকে সাদা ডোরা তির্যকভাবে বিন্যস্ত। স্ত্রীপাখির চেহারা দু’ধরনের। এক ধরনের চেহারা পুরুষপাখির মত। অন্য চেহারাকে কলজে রূপ বলে: পিঠ লালচে-বাদামি, ডানায় কালচে বাদামি ডোরা এমনকি লেজের উপরের কোর্ভাট ও এর নিচের পুরোটায় কালো ডোরা থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েরই চোখ সাদা, পা বাদামি-হলদে ও ঠোঁট শিঙ-বাদামি। অপ্রাপ্ত বয়¯ক পাখির পিঠ ফ্যাকাসে লালচে-বাদামি, মাথার ডোরা কালচে-বাদামি এবং গলা ও বুক লালচে-কমলা। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. স. য়ঁবৎঁষড়ঁং বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: করুণ পাপিয়া মুক্ত বন, কুঞ্জবন, গাছপালা শোভিত বাগান, আবাদি ভূমি ও খামারে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। ক্ষুদ্র ঝোঁপে ও ঝোপেডাল থেকে ডালে ওড়ে এবং মাটিতে পতিত পাতা উল্টে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় প্রধানত ছারপোকা, লোমশ শুঁয়োপোকা ও অন্য নরম পোকামাকড় রয়েছে। প্রজনন ঋতু আবাসের অন্য ছোট পাখিদের সমসাময়িক। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি জোরে, স্পষ্ট ও সুমধুর শিস্ েডাকে: পী পী পী পীপিপিপিপি। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো এমনকি ছানাও পালন করে না। স্ত্রীপাখি ছোট পাখি যেমন-ফুটকি, প্রিনা ও টুনটুনির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ পালকমাতার ডিমের সঙ্গে মিল রেখে সাদা থেকে ফ্যাকাসে নীল হয়, ১.৯´ ১.৩ সেমি.।
বিস্তৃতি: করুণ পাপিয়া বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের বনে, বাগানে, গ্রামে, ও মাঠে বিচরণ করে। ভারতের উত্তরাঞ্চল থেকে চীনের দক্ষিণাঞ্চল ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: করুণ পাপিয়া বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: করুণ পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ অশণিসঙ্কেতের কালিদামা (গ্রীক: শধশড়ং = অশণিসঙ্কেত, সধহঃরং = মহাপুরুষ; ল্যাটিন: সবৎঁষরহঁং = কালিদামার মত)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]

১০৭. ঈধপপড়সধহঃরং ঢ়ধংংবৎরহঁং (ঠধযষ, ১৭৯৭)
সমনাম: ঈঁপঁষঁং ঢ়ধংংবৎরহঁং ঠধযষ, ১৭৯৭
বাংলা নাম: মেটেপেট পাপিয়া
ইংরেজি নাম: এৎবু-নবষষরবফ ঈঁপশড়ড়

বর্ণনা: মেটেপেট পাপিয়া সাদা অবসারণী ওয়ালা কালচে ধূসর পাখি (দৈর্ঘ্য ২৩ সেমি., ডানা ১২ সেমি., ঠোঁট ২.২ সেমি., পা ১.৮ সেমি., লেজ ১১ সেমি.)। সামান্য কিছু অংশ ছাড়া পুরুষপাখির দেহের পুরোটাই কালচে ধূসর। তলপেট, অবসারণী ও লেজের নিচের কোর্ভাট পীতাভ-সাদা। ডানার কোর্ভাট ও উড্ডয়ন পালক কালচে ধূসর, ধূসর-কালো লেজের আগা সাদা ও লেজের বাইরের পালকে সাদা ডোরা রয়েছে। স্ত্রীপাখির দু’ধরনের চেহারা থাকে। এক ধরনের চেহারা পুরুষপাখির মত। আরেক ধরনের চেহারাকে বলে কলজে চেহারা। পিঠ কালো ডোরাসহ লালচে-বাদামি ও দেহতল লালচে গলা ও বুকসহ আবছা কালোয় ঢেউ খেলানো। পুরুষ ও স্ত্রী উভয় পাখির চোখ বাদামি, মুখ উজ্জ্বল কমলা এবং পা ও পায়ের পাতা বাদামি-হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ কলজে চেহারা ছাড়া ভূসায় ঢাকা কালচে ধূসর রঙের হয়, যা প্রাপ্তবয়স্কের মত। তবে প্রাপ্তবয়স্কের চেয়ে কালচে বাদামি।
স্বভাব: মেটেপেট পাপিয়া খোলা বন, কুঞ্জবন, বনভূমি ও অবাদী জমিতে বিচরণ করে। সাধারণত একা ও জোড়ায় বিচরণ করে। গাছের চাঁদোয়ায় ও উঁচু ঝোঁপে গাছ থেকে গাছে প্লতওড়ে খাবার খায়। খাবার তালিকায় : কোমল পোকামাকড়, ছারপোকা ও লোমশসহ শুঁয়োপোকা রয়েছে। জুন-সেপ্টেম্বর প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি ভোরে ও গোধূলিতে, মেঘাচ্ছন্ন দিনে এবং পূর্ণিমা রাতে ডাকে। শোকাতুর কণ্ঠে অনুক্রমিকভাবে ডাকে: টীর টীর টীর পীপিপি; পিউয়ী পী পিউয়ী...। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো এমনকি ছানার পরিচর্যাও করে না। স্ত্রীপাখি ছোট পাখি প্রধানত ফুটকি ও প্রিনার বাসার ডিম পাড়ে। ডিম সরু, ডিম্বাকার ও ১.৯´ ১.৪ সেমি.। ডিমের বর্ণ পালকমাতার ডিমের সঙ্গে মিলে যায়।
বিস্তৃতি: মেটেপেট পাপিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; খুলনা বিভাগে বিচরণ করে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অনিয়মিত দেখা গেছে, উনিশ শতকে ঢাকা বিভাগে ছিল এমন তথ্য রয়েছে। কেবলমাত্র ভারত উপমহাদেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ।
অবস্থা: মেটেপেট পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: মেটেপেট পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ অশণিসঙ্কেতের চড়ূই (গ্রীক: শধশড়ং = অশণিসঙ্কেত, সধহঃরং = মহাপুরুষ; ল্যাটিন: ঢ়ধংংবৎরহঁং = চড়–ইয়ের মত) ।
[ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা]

১০৮. ঈধপড়সধহঃরং ংড়হহবৎধঃরর (খধঃযধস, ১৭৯০)
সমনাম: ঈঁপঁষঁং ংড়হহবৎধঃরর খধঃযধস, ১৭৯০
বাংলা নাম: দাগি তামাপাপিয়া
ইংরেজি নাম: ইধহফবফ ইধু ঈঁপশড়ড়

বর্ণনা: দাগি তামাপাপিয়া স্পষ্ট বাদামি ডোরা ও সাদা ভ্রু-ওয়ালা পাখি (দৈর্ঘ্য ২৪ সেমি., ডানা ১২ সেমি., ঠোঁট ২.৫ সেমি., পা ১.৭ সেমি., লেজ ১১.৫ সেমি.)। পিঠ কালচে বাদামি ডোরাসহ লালচে বাদামি। মাঝখানের পালকের কালচে শরসহ লেজ লালচে। কানের কোর্ভাট কালচে বাদামি, ভ্রু-সাদা এবং মাথা ও ঘাড়ের পাশ সাদা। এগুলোর সবতেই কালচে সরু ডোরা থাকে। দেহতল থুতনি থেকে শুরু করে অবসারণী পর্যন্তÍ সুক্ষè বাদামি ডোরায় ঢেউ খেলানোসহ সাদাটে রঙের। চোখ বাদামি, পা ও পায়ের পাতা ধূসরাভ-সবুজ এবং নখর শিঙ-বাদামি। শিঙ-বাদামি ঠোঁটের নিচের ঠোঁটের গোড়া জলপাই ও ধূসরে মেশানো। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পিছনে কিছু পীতাভ ডোরা এবং দেহতলে বেশ প্রশস্ত ও বিক্ষিপ্ত ভাবে ঢেউ খেলানো ডোরা থাকে। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. ং. ংড়হহবৎধঃরর বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: দাগি তামাপাপিয়া চিরসবুজ বন, আর্দ্র পাতাঝরা বন, বনের প্রান্তÍদেশ ও খোলা বনভূমিতে দেখা যায়। সাধারণত একা বা জোড়ায় বিচরণ করে। বনের চাঁদোয়ার পাতা ওয়ালা শাখা ও উঁচু গুল্মলতায় খাবার খায়। খাবারের মধ্যে প্রধানত শুঁয়োপোকা ও ছারপোকা রয়েছে। : ফেব্রুয়ারি-আগস্ট প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি ভোরে ও গোধূলিতে গাছের মগডাল থেকে ডাকে। ২টি পুনরুক্তিক উচ্চ স্বরে ডাকে: পে-টার...। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো এমনকি ছানার যতœও নেয় না। স্ত্রীপাখি ফটিকজল, বুলবুল, ছাতারে, সাহেলির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের বর্ণ পালকমাতার ডিমের সঙ্গে মিলে যায়। ডিম বেগুনে-বাদামি ছোট দাগসহ সাদা থেকে পাটল বর্ণের হয়, ১.৯´ ১.৫ সেমি.।
বিস্তৃতি: দাগি তামাপাপিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও চিনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: দাগি তামাপাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: দাগি তামাপাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সনের্যাঁট-এর অশণিসঙ্কেত (গ্রীক: শধশড়ং = অশণিসঙ্কেত, সধহঃরং = মহাপুরুষ; ংড়হহবৎধঃরর = পিয়ার সনের্যারট, ফ্রান্সের প্রকৃতিবিদ ও সংগ্রাহক, ১৭৪৮-১৮১৪) ।
[ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা]
গণ: ঈযৎুংড়পড়পপুী ইড়রব, ১৮২৬
খুব ছোট আকারের কোকিল; উজ্জ্বল ধাতব রঙের পালক; লেজ খাটো ও কিছুটা গোলাকার; ডানা লম্বা ও সুচালো; পা প্রায় পুরোটা পালকে ঢাকা; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য অনেক।
পৃথিবীতে ১৩ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

১০৯. ঈযৎুংড়পড়পপুী সধপঁষধঃঁং (এসবষরহ, ১৭৮৮)
সমনাম: ঞৎড়মড়হ সধপঁষধঃবং এসবষরহ, ১৭৮৮
বাংলা নাম: এশীয় শ্যামাপাপিয়া
ইংরেজি নাম: অংরধহ ঊসবৎধষফ ঈঁপশড়ড়

বর্ণনা: এশীয় শ্যামাপাপিয়া খুদে পাখি ও পুরুষপাখির চেহারা স্ত্রী থেকে ভিন্ন (দৈর্ঘ্য ১৮ সেমি., ডানা ১১ সেমি., ঠোঁট ১.৫ সেমি., পা ১.৫ সেমি., লেজ ৬.৭ সেমি.)। পুরুষপাখির পিঠ, থুতনি, গলা ও বুকের উপরিভাগ উজ্জ^ল পান্না-সবুজ। বুকের নিচের অংশ থেকে অবসারণী পর্যন্তÍ সাদার ওপর ধাতব বাদামি-সবুজ ডোরা রয়েছে। স্ত্রীপাখির পিঠ ব্রঞ্জ-সবুজ, মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পিছনটা লালচে-কমলা। সাদা দেহতলের পুরোটায় ধাতব বাদামি-সবুজ ডোরা ও ব্রঞ্জ-সবুজ লেজের আগা সাদা। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের চোখ ও চোখের পাতা গাঢ় লাল, কমলা-হলুদ ঠোঁটের আগা কালো এবং পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামি-সবুজ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ম্যান্টল ও ডানার লালচে-কমলা ডোরা ও মাথার চাঁদির ডোরা ছাড়া দেখতে স্ত্রীপাখির মত। যুবা পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পিছনের পান্না-সবুজ রঙ বাদ দিলে স্ত্রীপাখির মত দেখায়।
স্বভাব: এশীয় শ্যামাপাপিয়া চিরসবুজ বন, অপ্রধান বন এবং নিচু ভূমি ও ১৫০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্তÍ পাহাড়ি ঘেরা বাগানে বিচরণ করে। সচরাচর একা, জোড়ায় বা ৪-৬টি পাখির ছোট দলে ঘুরে বেড়ায়। গাছের মগডাল থেকে বাতাসে ভেসে শিকার ধরে খায়। খাবার তালিকায় উড়ন্তÍ পোকামাকড়, শুঁয়োপোকা ও অন্য কোমল দেহের ছারপোকা রয়েছে। ওড়ার সময় একে অন্যকে ডাকে। কম্পিত সুরে ডাকে: চী..। এপ্রিল-জুলাই প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি সারাদিন ও পূর্ণিমা রাতে ডাকে। অনুক্রমিকভাবে পর্যায়ক্রমে উচ্চ থেকে নিচু স্বরে ডাকে: কী-কী-কী-কী...। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো কিংবা ছানা পালন করে না। স্ত্রীপাখি মৌÍটুসি ও মাকড়মারের বাসায় ডিম পাড়ে এবং পালক পিতামাতার বাসার ক্ষুদ্র প্রবেশ পথে ডিম পেড়ে দেয়। ডিম সাদাটে, ১.৬´ ১.২ সেমি.।
বিস্তৃতি: এশীয় শ্যামাপাপিয়া বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; গ্রীষ্মকালে সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়; উনিশ শতকে ঢাকা বিভাগে ছিল। ভারত, নেপাল ও ভূটানের হিমালয়ের পাদদেশ থেকে চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: এশীয় শ্যামাপাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: এশীয় শ্যামাপাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ তিলা সোনাপাপিয়া (গ্রীক: শযৎঁংড়ং = সোনা, পঁপঁষঁং = পাপিয়া; ল্যাটিন: সধপঁষধঃঁং = চিতি ওয়ালা)।
[ মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা ]

১১০. ঈযৎুংড়পড়পপুী ীধহঃযড়ৎযুহপযঁং (ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮২১)
সমনাম: ঈঁপঁষঁং ীধহঃযড়ৎযুহপযঁং ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮২১
বাংলা নাম: বেগুনি পাপিয়া
ইংরেজি নাম: ঠরড়ষবঃ ঈঁপশড়ড়

বর্ণনা: বেগুনি পাপিয়া ছোট অরণ্য পাখি, পুরুষপাখি বেগুনি ও স্ত্রীটি ব্রঞ্জ রঙের হয় (দৈর্ঘ্য ১৭ সেমি., ডানা ১০ সেমি., ঠোঁট ১.৬ সেমি., পা ১.৫ সেমি., লেজ ৭ সেমি.)। পুরুষপাখির পিঠ চকচকে বেগুনি। মাথা, ঘাড়, থুতনি, গলা ও বুক বেগুনি রঙের। পেট ও অবসারণীতে একটির পর আরেকটি এমনভাবে সাদা ও বেগুনে-বাদামি ফেটা সজ্জিত থাকে। কালচে লেজের আগা সাদা ও লেজের বাইরের পালকের প্রান্তÍদেশে সাদা ডোরা আছে। ঠোঁট উজ্জ^ল কমলা। স্ত্রীপাখির পিঠে তামার পরিলুপ্তিসহ সবুজাভ- ব্রঞ্জ রঙের ও দেহতলে মুখসহ পর্যায়ক্রমে সাদা ও সবুজাভ-ব্রোঞ্জের ফেটা থাকে। সবুজাভ লেজের আগা সাদা। ঠোঁট অনুজ্জ্বল হলুদ। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েরই চোখ লাল, লাল পাড়সহ চোখের পাতা সবুজ এবং পা ও পায়ের পাতা বাদামি-সবুজ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি স্ত্রীপাখির মত হলেও লালচে মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পিছনে প্রশস্ত কালচে সবুজ ডোরা থাকে। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. ী. ীধহঃযড়ৎযুহপযঁং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: বেগুনি পাপিয়া চিরসবুজ বন, অপ্রধান বন ও ঘেরা বাগানে বিচরণ করে। সাধারণত একা, জোড়ায় বা ৪-৬টি পাখির ছোট দলে থাকে। উঁচু জায়গা থেকে গাছের আগায় শিকার পর্যবেক্ষণ করে ও হঠাৎ শিকারকে ছোঁ মারে। খাবার তালিকায় শুঁয়োপোকা, ছারপোকা ও অন্যান্য কোমল পোকামাকড় রয়েছে। সচরাচর কোন ডালে পশুর মত শুয়ে অবস্থান করে। প্লত উড়তে পাড়ে এবং বারবার সামান্য ওড়ে আবার নিজ অবস্থানে ফিরে আসার কারণে কখনও ক্লান্তÍ হয়না। গ্রীষ্মে প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি সারাদিন ও পূর্ণিমা রাতে ‘‘গান’’ গায়। উচ্চ শব্দে ও প্লত কম্পিত গলায় ‘গান’ গায়: চি-উইক। বাসা তৈরি করে না। স্ত্রীপাখি মৌÍটুসি ও মাকড়মারের বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম উজ্জ^ল বাদামি বা লালচে-বাদামি ফসকুড়িসহ সাদাটে, ১.৭ ´ ১.২ সেমি.।
বিস্তৃতি: বেগুনি পাপিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। পূর্ব ভারত ও ভুটান থেকে চীনের দক্ষিণে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে পাওয়া যায়।
অবস্থা: বেগুনি পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: বেগুনি পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হলুদঠোঁট সোনাপাপিয়া (গ্রীক: শযৎঁংড়ং = সোনা, পঁপঁষঁং = পাপিয়া, ীধহঃযড়ং = হলুদ, ৎযঁহশযড়ং = ঠোঁট)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]
গণ: ঝঁৎহরপঁষঁং খবংংড়হ, ১৮৩০
খুব ছোট ও সরু আকারের কোকিল; ফিঙে পাখির সঙ্গে আকারে ও রঙে খুব মিল; লম্বা ও চেরা লেজ, মাঝের পালক দু প্রান্তেÍর পালকের চেয়ে দৈর্ঘ্যে এক-তৃতীয়াংশ খাটো।
পৃথিবীতে ৪ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

১১১. ঝঁৎহরপঁষঁং ষঁমঁনৎরং (ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮২১)
সমনাম: ঈঁপঁষঁং ষঁমঁনৎরং ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮২১
বাংলা নাম: এশীয় ফিঙেপাপিয়া
ইংরেজি নাম: অংরধহ উৎড়হমড়-ঈঁপশড়ড়

বর্ণনা: এশীয় ফিঙেপাপিয়া ডোরা অবসারণীওয়ালা কালো পাখি (দৈর্ঘ্য ২৫ সেমি., ডানা ১৪ সেমি., ঠোঁট ২.৫ সেমি., পা ২ সেমি., লেজ ১৪ সেমি.)। ব্রঞ্জ ফিঙে উরপৎঁৎঁং ধবহবঁং-র সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে। সামান্য কিছু অংশে পার্থক্য ছাড়া পুরো দেহই চকচকে কালো। দেহের অবসারণী ও দীর্ঘ চেরালেজ দেহের বাকি অংশের চেয়ে কম চকচকে। লেজের নিচের কোর্ভাট ও লেজের একেবারে বাইরের পালকের গোড়ায় সাদা ডোরা রয়েছে। ঘাড়ের পিছনের ক্ষুদ্র সাদা পট্টি কেবল খুব কাছ থেকে চোখে পড়ে। চোখ কালচে বাদামি ও ঠোঁট বাদামি-কালো। পা ও পায়ের পাতা নীলচে-শে¬¬ট রঙের ও নখর শিঙ-বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির মধ্যে চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি পূর্ণ বয়স্কের চেয়ে কম চকচকে ও লেজের নিচের কোর্ভাটে বেশ সাদা ডোরা থাকে। মাথা, স্ক্যাপুলার, ডানার কোর্ভাট ও বুকে ফুটকি আছে। সাদা ফুটকিসহ ছানারা অনুজ্জ্বল কালো। ৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঝ. ষ. ফরপৎঁৎড়রফবং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: এশীয় ফিঙেপাপিয়া চিরসবুজ বন, বনের প্রান্তÍদেশ ও ঘেরা বাগানে পাওয়া যায়। সচরাচর একা বা জোড়ায় বিচরণ করে। সামান্য ওড়ে খাবার খায়। : শুঁয়োপোকা ও কোমল দেহের পোকামাকড় খায়। তা ছাড়া ফল ও ফুলের মিষ্টি রসও খেয়ে থাকে। মে-সেপ্টেম্বর প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি গাছের খোলা মগডাল থেকে ভোরে ও গোধূলিতে, মেঘাচ্ছন্ন সারাদিন ও পূর্ণিমা রাতে ডাকে। ৫-৮ বার উচ্চ মধুর সুরে শিস্ দিয়ে ডাকে:পিপ-পিপ-পিপ-পিপ-পিপ-পিপ...। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো কিংবা ছানার পরিচর্যা এর কোনটিই করে না। স্ত্রীপাখি খুদে পেঙ্গা যেমন-ফুলভেটা, চেরালেজ ও অন্য খুদে পাখির বাসায় ডিম পাড়ে।
বিস্তৃতি: এশীয় ফিঙেপাপিয়া বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি;

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চিনসহ দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: এশীয় ফিঙেপাপিয়া বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: এশীয় ফিঙেপাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ শোকাতুর ফিঙেপাপিয়া (ফ্রেঞ্চ: ংঁৎহরপঁষঁং = ফিঙেপাপিয়া; ল্যাটিন: ষঁমঁনৎরং = শোকাতুর)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]
গণ: ঊঁফুহধসুং ঠরমড়ৎং ধহফ ঐড়ৎংভরবষফ, ১৮২৭
মাঝারি আকারের কোকিল; ঝুঁটি নেই; ঠোঁট শক্ত ও বেশ বাঁকা; ডানা ও লেজ দৈর্ঘ্যপ্রোয় সমান; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া লেজ; পা খাটো, কেবল মাত্র উপরের অংশ পালকে ঢাকা; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য অনেক।
পৃথিবীতে ১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

১১২. ঊঁফুহধসুং ংপড়ষড়ঢ়ধপবঁং (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: ঈঁপঁষঁং ংপড়ষড়ঢ়ধপবঁং খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: এশীয় কোকিল, কোকিল (আই)
ইংরেজি নাম: অংরধহ কড়বষ

বর্ণনা: এশীয় কোকিল পার্থক্যসূচক লাল চোখের লম্বা লেজ ওয়ালা কালচে পাখি (দৈর্ঘ্য ৪৩ সেমি., ওজন ১৭০ গ্রাম, ডানা ২২ সেমি., ঠোঁট ৩.৩ সেমি., পা ৩.৫ সেমি., লেজ ২০ সেমি.)। পুরুষপাখির চেহারায় স্ত্রী থেকে বেশ অমিল রয়েছে। পুরুষপাখির পুরো চকচকে কালো রঙের মধ্যে নীল ও সবুজের আমেজ থাকে। স্ত্রীপাখির পিঠে বাদামির ওপর সাদা ও পীতাভ চিতি। সাদা থুতনি, গলা, বুক, পেট, বগল, লেজের নিচের কোর্ভাট ও অবসারণীতে কালচে বাদামি ডোরা রয়েছে। কালচে বাদামি লেজে তীর্যক সাদা ডোরা থাকে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়েরই চোখ লাল, ঠোঁট আপেল-সবুজ, পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে, নখর শিঙ-রঙা এবং পদতল সাদাটে। পীতাভ ডোরা ও কালচে চোখের রঙ ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিকে পূর্ণবয়স্ক স্ত্রীপাখির মত দেখায়। স্ত্রী ছানা পাখির মাথা, গলা ও বুক বেশ কালো। ১৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঊ. ং. সধষধুধহধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: এশীয় কোকিল বন, বৃক্ষভূমি, আবাদি জমি, গ্রামাঞ্চল, শহর, বাগান ও রাস্তার পাশের গাছে বিচরণ করে। সাধারণত একা থাকে। বেশ চুপিসারে থাকে, যতটা না দেখা যায় তার চেয়ে খুব কম এর আওয়াজ শোনা যায়। ফলদ গাছে ডুমুর ও অন্য রসালো ফল খায়। কখনও শুঁয়োপোকা, ছারপোকা ও ছোট পাখির ডিম খায়। মার্চ-জুলাই মাস প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি একটি মাত্র শব্দে তীক্ষè চিৎকারে বার বার ডাকে: কো-এল...। স্ত্রীপাখি কদাচ সাড়া দিয়ে অনুরক্তিক ভাবে ডাকে: উক-উক-উক...। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো বা ছানার যতœ নেয় না। স্ত্রীপাখি কাকের বাসায় একটি ডিম পাড়ে। ডিম লালচে-বাদামি ফুসকুড়িসহ সবুজাভ-ধূসর। ১৩-২০দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: এশীয় কোকিল বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের বনে, বাগানে ও লোকালয়ে বিচরণ করে। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চিনসহ দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: এশীয় কোকিল বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: এশীয় কোকিলের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বলবান বনচ্যাগা (গ্রীক: বঁফুহধসড়ং = বলবান, ংপড়ষড়ঢ়ধী = বনচ্যাগা, ধপবঁং = সদৃশ )।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]
গণ: চযধবহরপড়ঢ়যধবঁং ঝঃবঢ়যবহং, ১৮১৫
অনেক লম্বা আকারের বৃক্ষচারী পাখি; ঠোঁট শক্ত, গোড়া প্রশস্ত ও আগাগোড়া বাঁকা; মাথার দু পাশ পালকহীন; চোখের পাতায় পাপড়ি থাকেনা; ডানা গোলাকার; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া লম্বা লেজ; মাথার চাঁদি ও গলার পালক শক্ত ও অনমনীয়; চোখের রঙ ছাড়া পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই।
পৃথিবীতে ৬ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

১১৩. চযধবহরপড়ঢ়যধবঁং ষবংপযবহধঁষঃরর (খবংংড়হ, ১৮৩০)
সমনাম: ঞধপপড়হধ ষবংপযবহধঁষঃরর খবংংড়হ, ১৮৩০
বাংলা নাাম: মেটে মালকোআ
ইংরেজি নাম: ঝরৎশববৎ গধষশড়যধ

বর্ণনা: মেটে মালকোআ দীর্ঘ লেজওয়ালা বাদামি পাখি (দৈর্ঘ্য ৪২ সেমি., ডানা ১৬ সেমি., ঠোঁট ৩.৩ সেমি., পা ৪ সেমি., লেজ ২২ সেমি.)। কিছু অংশ ছাড়া দেহের পুরোটাই বালিময় ধূসর-বাদামি। গলা ও বুকের উপরিভাগ পীতাভ এবং পেট লালচে-পীতাভ। পর্যায়ক্রমিক সজ্জিত পালকের বালিময় ধূসর-বাদামি দীর্ঘ লেজের আগা সাদা। মাথার চাঁদি, ম্যান্টল, গলা ও বুকের পালকে কালো শরওয়ালা ডোরা রয়েছে। চোখ বাদামি ও লাল ঠোঁটের আগা হলুদ। পা ও পায়ের পাতা শে¬¬ট-রঙা এবং নখর শিঙ-বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, ম্যান্টল, গলা ও বুকে কালচে বাদামি ডোরা থাকে এবং ডানার কোর্ভাট ও তৃতীয় সারির পালকের প্রান্তÍদেশ পীতাভ। তরুণ পাখির ডানার কোর্ভাট, স্ক্যাপুলার ও তৃতীয় সারির পালকের প্রান্তÍদেশ পীতাভ। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে চ. ষ. রহভঁংপধঃধ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: মেটে মালকোআ শুষ্ক পাতাঝরা বন, অপ্রধান বন, খুদে ঝোপ ও পাহাড়ের পাদদেশ ও প্রস্তরময় এলাকার ঝোঁপে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় থাকে। মাটিতে পতিত পাতা উল্টে বা গুল্মে ডাল থেকে ডালে লাফিয়ে খাবার খায়। খাবারের মধ্যে শুঁয়োপোকা, পঙ্গপাল, ফড়িং, উই, টিকটিকি, ছোট সাপ ও মাটিতে পতিত ফল রয়েছে। ভয় পেলে ওড়ার চেয়ে দৌÍড়াতে পছন্দ করে। সচরাচর কয়েকটি শব্দে ডাকে:কেক-কেক-কেক-কেরেক-কেরেক-কেরেক। মার্চ-জুলাই মাস প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় লেজ পাখার মত মেলে ধরে ও ঠোঁটের অনাবৃত খোলা অংশে কোমল পালক স্পর্শ করে। ভূমি থেকে ২-৩ মিটার উঁচুতে গুল্মশাখে পল্ল¬¬বের ওপর পাতা দিয়ে বাসা বানায় ও স্ত্রীপাখি ২-৩টি ডিম পাড়ে। ডিম চকের মত সাদা, ৩.৫ ´ ২.৭ সেমি.।
বিস্তৃতি: মেটে মালকোআ বাংলাদেশের প্রাক্তন পরিযায়ী পাখি; বিশ শতকের গোড়ার দিকে চট্টগ্রাম বিভাগে ছিল বলে একটি তথ্য রয়েছে; যদিও চট্টগ্রাম বিভাগ এ প্রজাতির স্বাভাবিক আবাস থেকে দূরে। ভুটান ও মালদ্বীপ ছাড়া ভারত উপমহাদেশের শুস্ক অঞ্চলে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ।
অবস্থা: মেটে মালকোআ বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে বিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: মেটে মালকোআর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ল্যেশেনল্ট-এর লাল পাখি (গ্রীক: ঢ়যড়রহরশড়ঢ়যধবং = গাঢ় লাল; ষবংপযবহধঁষঃরর = থিওডোর ল্যেশেনল্ট ডিলাটুর, ভারতে ফ্রেঞ্চ উদ্ভিদবিদ ও সংগ্রাহক, ১৮১৬-১৮২২)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]

১১৪. চযধবহরপড়ঢ়যধবঁং ঃৎরংঃরং (খবংংড়হ, ১৮৩০)
সমনাম: গবংরধ ঃৎরংঃরং খবংংড়হ, ১৮৩০
বাংলা নাম: সবুুজঠোঁট মালকোআ
ইংরেজি নাম: এৎববহ-নরষষবফ গধষশড়যধ

বর্ণনা: সবুুজঠোঁট মালকোআ দীর্ঘ লেজ ওয়ালা সবুজ পাখি (দৈর্ঘ্য ৫১ সেমি., ওজন ১১৫ গ্রাম, ডানা ১৭ সেমি., ঠোঁট ৩.৭ সেমি., পা ৪.২ সেমি., লেজ ৩৮ সেমি.)। পিঠ ধূসরাভ-সবুজ ও দেহতল পীতাভ-ধূসর। মাথার চাঁদি, ঘাড়ের পিছন ও পিঠ ধূসরাভ-সবুজ এবং ডানা কালচে তৈল-সবুজ। পর্যায়ক্রমিক সবুজাভ-কালো লেজের আগায় প্রশস্ত সাদা অংশ রয়েছে। পেট ও অবসারণী কালচে ধূসরাভ-সাদা। ধূসর গলা, ঘাড়ের পাশ ও বুকে সরু কালো ডোরা এবং পেট বেশ কালচে। ঠোঁট ও চোখের মাঝখানে কালো, ধূসর কপালে কালো এবং ভ্রুতে সাদা ডোরা থাকে। লাল অর্বিটাল চামড়াসহ চোখ বাদামি ও কালচে সবুজ ঠোঁটের গোড়া লাল। নাকের ছিদ্র, পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ-স্লে¬ট রঙের। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির অর্বিটাল চামড়া কালচে বাদামি। ঠোঁট দুরঙা: উপরের ভাগ স্লে¬ট-শিঙ রঙের ও নিচের ভাগ সবুজাভ। ৬টি উপ-প্রজাতির মধ্যে চ. ঃ. ঃৎরংঃরং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: সবুুজঠোঁট মালকোআ চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বন, বনভূমি, গ্রামাঞ্চল ও বাগানে বিচরণ করে। সাধারণত একা থাকে। গাছের পত্রবহুল শাখায় ও ঝোপে হেঁটে খাবার খায়। খাবার তালিকায় শুঁয়োপোকা, ফড়িং, ঝিঁঝিঁ পোকা, টিকটিকি ও ছোট পাখির ডিম রয়েছে। পল্ল¬¬বগুচ্ছে ধীরে ঘুরে বেড়ায় এবং এক গাছ থেকে আরেক গাছে ওড়ে যাওয়া ছাড়া তেমন চোখে পড়েনা। প্রায়ই ডানা ও লেজ প্রসারিত করে গাছ থেকে গাছে আস্তে উড়ে যায়। কখনও উচ্চ অনুরক্তিক সুরে ডাকে: কী-কী-কী -কী। এপ্রিল-আগস্ট প্রজনন ঋতু। ঘন বনে ভূমি থেকে ৩-৭ মিটার উঁচুতে লতানো গাছের গাঁট ও বাঁশঝাড়ে শাখা পল¬¬ব, ক্ষুদ্র মূল ও পাতা দিয়ে অগোছালো পেয়ালার মত বাসা বানায় এবং স্ত্রীপাখি ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম চকের মত সাদা, ৩.৩ ´ ২.৫ সেমি.।
বিস্তৃতি: সবুুজঠোঁট মালকোআ বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের সব বন ও অনেক বাগানে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন, মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: সবুুজঠোঁট মালকোআ বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: সবুুজঠোঁট মালকোআ বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ অনুজ্জ^ল লাল পাখি (গ্রীক: ঢ়যড়রহরশড়ঢ়যধবং = গাঢ় লাল; ল্যাটিন: ঃৎরংঃরং =অনুজ্জ্বল রঙ)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]

পরিবার: ঈঊঘঞজঙচঙউওউঅঊ
কুবো
মাঝারি গড়নের ভূচর পাখি; লম্বা, শক্তিশালী পা; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া লম্বা লেজ; উড়তে পটু নয়; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ১১ গণে ৩০ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ গণে ২ প্রজাতি

গণ: ঈবহঃৎড়ঢ়ঁং ওষষরমবৎ, ১৮১১

মাঝারি গড়নের ভূচর পাখি; পিছনের আঙুলের নখর প্রায় সোজা, অন্য নখরগুলো কিছুটা বাঁকা; পা শক্তিশালী ও পালকহীন; ঠোঁট মোটা, বেশ বাঁকা; নাসারন্ধ্র আংশিক চামড়ায় আবৃত; খাটো গোলাকার ডানা; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া লম্বা লেজ; মাথা, ঘাড় ও বুকের পালক রুক্ষ ও খাড়া।
পৃথিবীতে ২৬ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

১১৫. ঈবহঃৎড়ঢ়ঁং নবহমধষবহংরং (এসবষরহ, ১৭৮৮)
সমনাম: ঈঁপঁষঁং নবহমধষবহংরং এসবষরহ, ১৭৮৮
বাংলা নাম: বাংলা কুবো, কুক্কা (আই)
ইংরেজি নাম: খবংংবৎ ঈড়ঁপধষ

বর্ণনা: বাংলা কুবো পর্যায়ক্রমে পালকসজ্জিত লম্বা লেজওয়ালা কাকের মত পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি., ওজন ১২০ গ্রাম, ডানা ১৫ সেমি., ঠোঁট ২.৭ সেমি., পা ৩.৭ সেমি., লেজ ১৮ সেমি.)। প্রজনন ঋতুতে পিঠ তামাটে ও দেহতল কালো হয়। অনুজ্জ্বল তামাটে ম্যান্টল ও ডানা ছাড়া পুরো দেহই চকচকে কালো। প্রাথমিক ও তৃতীয় সারির পালকের আগা বাদামি এবং লেজ কালো। অপ্রজননশীল পাখির কালচে বাদামি মাথা ও ম্যান্টলে পীতাভ শরের ডোরা এবং পাছায় কালচে বাদামি ও লালচে ডোরা রয়েছে। দেহতল পীতাভ এবং গলা ও বুকে ফ্যাকাসে ডোরা আছে। সব ঋতুতেই চোখ গাঢ় লাল, ঠোঁট কালো এবং পা, পায়ের পাতা ও নখর স্লে¬¬ট-কালো। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ডানা, মাথার চাঁদি, ম্যান্টল ও পিঠে কালচে বাদামি ডোরা থাকে। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. ন. নবহমধষবহংরং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: বাংলা কুবো উঁচু ঘাসের জমি, নল বন, ঘন গুল্ম, ঝোপ ও চা বাগানে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় থাকে। মাটিতে চুপিসারে হেঁটে এবং হঠাৎ শিকারকে ঠোঁট ও পা দিয়ে চেপে ধরে শিকার করে। খাবার তালিকায় ফড়িং ও অন্য বড় পোকা রয়েছে। ওড়ার চেয়ে দৌÍড়াতে পছন্দ করে। ভোরে ও গোধূলিতে বেশ কর্ম তৎপর থাকে। দুটি অনুক্রমিক স্বরে ডাকে: কুপ-কুপ-কুপ কুরুক-কুবুক-কুরুক। মার্চ-অক্টোবর মাস প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগে পুরুষপাখি লেজ খাড়া করে ও বাঁকায়। ভূমির কাছাকাছি ঘন ঝোঁপে পল¬ব, পত্র ফলক ও ঘাসের ডগা দিয়ে পার্শ্ব প্রবেশ পথসহ ডিম্বাকার বাসা বানায় এবং স্ত্রীপাখি ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, ২.৮ ´ ২.৩ সেমি.।
বিস্তৃতি: বাংলা কুবো বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের ঝোপঝাড়ে ও চা বাগানে পাওয়া যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীনের দক্ষিণাঞ্চল ও ফিলিপাইনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; পাকিস্তান ও মালদ্বীপ ব্যতিত সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় পাওয়া যায়।
অবস্থা: বাংলা কুবো বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: বাংলা কুবোর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার গজাল-পা (গ্রীক: শবহঃৎড়হ = গজালের মত নখর, ঢ়ড়ঁং= পা ; নবহমধষবহংরং =বাংলার)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]
১১৬. ঈবহঃৎড়ঢ়ঁং ংরহবহংরং (ঝঃবঢ়যবহং, ১৮১৫)
সমনাম: চড়ষড়ঢ়যরষঁং ংরহবহংরং ঝঃবঢ়যবহং, ১৮১৫
বাংলা নাম: বড় কুবো, কানা-কুয়া (আই)
ইংরেজি নাম: এৎবধঃবৎ ঈড়ঁপধষ

বর্ণনা: বড় কুবো বড় কালো পর্যায়ক্রমিক বিন্যস্ত পালকে লেজওয়ালা কাকের মত পাখি (দৈর্ঘ্য ৪২ সেমি., ওজন ২৫০ গ্রাম, ডানা ১৯ সেমি., ঠোঁট ৩.২ সেমি., পা ৫.৮ সেমি., লেজ ২৪ সেমি.)। পিঠ তামাটে ও দেহতল চকচকে কালো। উজ্জ্বল তামাটে ম্যান্টল ও ডানা ছাড়া পুরো দেহই কালো। পর্যায়ক্রমিক সজ্জিত পালকের লেজ কালো হয়। চোখ লাল এবং ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখর কালো। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পিছনটায় ফ্যাকাসে-লালচে ফুটকি এবং ম্যান্টল, পিঠ, ডানা ও পাছায় ডোরাসহ দেহের উপরিভাগ বাদামি-কালো । কালচে বাদামি দেহতলে সরু সাদা ডোরা থাকে। অনুজ্জ্বল তরুণ পাখির উড্ডয়ন পালক ও লেজে ডোরা থাকে। ৬টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ঈ. ং. ংরহবহংরং ও ঈ. ং. রহঃবৎসবফরঁং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: বড় কুবো আলোকময় বন, বাগান ও মানববসতির কাছাকাছি বাস করে। সাধারণত একা বা জোড়ায় বিচরণ করে। মাটিতে ধীরে হেঁটে এবং হঠাৎ শিকারকে ঠোঁট ও পা দিয়ে চেপে ধরে শিকার করে। খাবার তালিকায় পোকামাকড়, শামুক, ব্যাঙ, টিকটিকি, সাপ, ডিম, পাখির ছানা, ইঁদুর ইত্যাদি রয়েছে। একই অবস্থানে বসে দিনের অধিকাংশ সময় কাটায় ও ভূচর পাখি। ওড়ার চেয়ে বেশ দৌÍড়াতে পাড়ে। সচরাচর অনুরক্তিক উচ্চ থেকে নিচু গভীর ও প্রতিধ্বনিত সুরে ডাকে: কুপ-কুপ...। জুন-আগস্ট মাস প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি লেজ নিচু করে, ডানা নামায় ও কর্কশ গলায় চিৎকার করে স্কি-ই-ইয়া-আও ডেকে স্ত্রীপাখিকে অনুসরণ করে। ঘন ঝোপ, বাঁশবন ও ঘাসে পল্ল¬ব ও পাতা দিয়ে পার্শ্বীয় প্রবেশপথসহ খাদ ওয়ালা পেয়ালার মত বাসা বানায় এবং স্ত্রীপাখি ৩-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, ৪.০´ ২.৮ সেমি.।
বিস্তৃতি: বড় কুবো বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের বনপ্রান্তেÍ ও গ্রামাঞ্চলে পাওয়া যায়। চীন, ফিলিপাইন ও ভারত উপমহাদেশসহ (মালদ্বীপ ব্যতিত) পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বড় কুবো বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বড় কুবোর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চীনের গজালের মত নখর ওয়ালা পায়ের পাখি (গ্রীক: শবহঃৎড়হ = গজালের মত নখর, ঢ়ড়ঁং= পা ; ল্যাটিন: ংরহবহংরং =চীনের)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা]

পরিবার: চঝওঞঞঅঈওউঅঊ
টিয়া
ছোট থেকে মাঝারি আকারের বলিষ্ঠ পাখি; মাথা বড়; বাঁকানো, শক্তিশালী ঠোঁট; চোয়ালের ও জিহ্বার পেশি উন্নত; পা খাটো; পালকের রঙে ঔজ্জ্বল্য বেশি।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ৮০ গণে ৩৬০ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ গণে ৭ প্রজাতি

গণ: খড়ৎরপঁষঁং ইষুঃয, ১৮৫০
ছোট আকারের টিয়া; গোলগাল দেহ; ঠোঁট ছোট, পাশ থেকে চাপা; লেজ খাটো ও কিছুটা গোলাকার।
পৃথিবীতে ১২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

১১৭. খড়ৎরপঁষঁং াবৎহধষরং (ঝঢ়ধৎৎসধহ, ১৭৮৭)
সমনাম: চংরঃঃধপঁং াবৎহধষরং ঝঢ়ধৎৎসধহ, ১৭৮৭
বাংলা নাম: বাসন্তÍী লটকনটিয়া, ভোরা (আলী), লটকন (আই)
ইংরেজি নাম: ঠবৎহধষ ঐধহমরহম চধৎৎড়ঃ (ওহফরধহ খড়ৎরশববঃ)

বর্ণনা: বাসন্তÍী লটকনটিয়া লাল ঠোঁট ও সবুজ দেহের ছোট্ট গোলগাল টিয়া (দৈর্ঘ্য ১৪ সেমি, ডানা ৯.৬ সেমি, ঠোঁট ১.৩ সেমি, পা ১.১ সেমি, লেজ ৪.৩ সেমি)। এর লাল কোমর, লেজউপরি-ঢাকনি ও গলার নীলকান্তÍমণি রঙের পট্টি ছাড়া পুরো দেহ সবুজ; লালচে-কমলা অথবা প্রবাল-লাল ঠোঁটের আগা হলুদ; চোখ বাদামি-পীতাভ কিংবা হলুদাভ-সাদা বা ধূসরাভ-খাকি; পা ও পায়ের পাতা ফিকে-কমলা কিংবা ফিকে হলুদাভ-স্লেট এবং নখর শিঙ-বাদামি। স্ত্রীপাখির গলার অপর্যাপ্ত নীলকান্তÍমণি পট্টির সাহায্যে পুরুষ থেকে আলাদা করা যায়। তরুণ পাখির চোখ বাদামি, কোমর লাল ও লেজের উপরি-ঢাকনি লাল-সবুজে মেশানো।

স্বভাব: বাসন্তÍী লটকনটিয়া আর্দ্র পাতাঝরা ও প্রশস্ত পাতাওয়ালা চিরসবুজ বনে বিচরণ করে; সচরাচর পারিবারিক দলে কিংবা সর্বাধিক ৫০টি পাখির ঝাঁকে দেখা যায়। বনের ফলদ গাছে এরা খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বন্য ডুমুরের নরম ফলত্বক, রসালো ফল, বাঁশ বীজ ও ফুলের মিষ্টি রস। ঝুলে থাকতে এরা পছন্দ করে, গাছের ডালে উল্টো ঝুলে বিচরণ করে, খাবার খায় ও বিশ্রাম নেয়; ওড়ার সময় পুনঃপুন ডাকে: চট-চট-চট..। জানুয়ারি-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে মরা গাছের প্রাকৃতিক গর্তে সচরাচর সবুজ পাতার পত্রফলক বিছিয়ে ১ মিটার গভীর বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো চকচকে সাদা, কখনও বাদামি রঙের; সংখ্যায় ৩-৪টি; মাপ ১.৯ ১.৫ সেমি।

বিস্তৃতি: বাসন্তÍী লটকনটিয়া বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বন ও বনভূমিতে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও ইন্দোচীনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: বাসন্তÍী লটকনটিয়া বিশ্বে এবং বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: বাসন্তÍী লটকনটিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সবুজ লোরি (মালয়: ষড়ৎর = লোরি; ল্যাটিন: পঁষঁং = এর, াবৎহধষরং =সবুজ)।
[কাজী জাকের হোসেন]

গণ: চংরঃঃধপঁষধ গহৃষষবৎ, ১৮৪৩
মাঝারি আকারের টিয়া; ক্রমান্ত^য়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া দীর্ঘ লেজ, মাঝের পালক সরু, তীক্ষè ও দৈর্ঘ্যে অন্য পালকের চেয়ে অনেক বড়; ঠোঁট মোটা, উপরের পাটির গোড়া ফোলানো, নিচের পাটি খাটো ও ভোঁতা।
পৃথিবীতে ১৫ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৬ প্রজাতি

১১৮. চংরঃঃধপঁষধ ধষবীধহফৎর (খরহহধবঁং, ১৭৫৮)
সমনাম: চংরঃঃধপঁং ধষবীধহফৎর খরহহধবঁং, ১৭৫৮
বাংলা নাম: মদনা টিয়া
ইংরেজি নাম: জবফ-নৎবধংঃবফ চধৎধশববঃ

বর্ণনা: মদনা টিয়া কিশমিশ-লাল গলা, ঘাস-সবুজ বুকসহ বর্ণাঢ্য দেহের টিয়া (দৈর্ঘ্য ৩৮ সেমি, ডানা ১৭ সেমি, ঠোঁট ২.৫ সেমি, পা ১.৭ সেমি, লেজ ১৭ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য আছে। পুরুষপাখির ঘাস-সবুজ পিঠ ছাড়াও নীলচে-সবুজ লেজের হলুদাভ আগা; মাথার চাাঁদি ও কান-ঢাকনি বেগুনি ও ধূসর; থুতনিতে প্রশস্ত কালো রেখা; বুক থেকে পেটের উপরিভাগ পর্যন্তÍ কিশমিশ-লাল রঙ; তলপেট ঘাস-সবুজ ও অবসারণী হলুদাভ-সবুজ; ঠোঁট দুরঙা: উপরের ঠোঁট প্রবাল-লাল ও নিচের ঠোঁট বাদামি-কালো; চোখ হলুদ, পা ও পায়ের পাতা হলুদাভ-স্লেট। স্ত্রীপাখির ঠোঁট কালো; মাথায় নীল-সবুজের ছোঁয়া রয়েছে; বুকে পীচ ফলের মত পাটল বর্ণ। তরুণ পাখির অনুজ্জ্বল কিশমিশ রঙের মাথা ছাড়া দেহ স্ত্রীপাখির মত। ৭টি উপপ্রজাতির মধ্যে চ. ধ. ভধংপরধঃঁং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: মদনা টিয়া খোলা বন, হালকা পাহাড়ী বন, পাহাড়ের আবাদি জমি ও চা বাগানে বিচরণ করে; সচরাচর ৬-১০টির পাখির দলে দেখা যায়। ফুল ও ফলদ গাছে, ঘেরা বাগান ও শস্যক্ষেতে এরা খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফল, পাতার কুঁড়ি, রসালো ফুলের পাপড়ি, শস্যদানা ও ফুলের মিষ্টি রস। দল বেঁধে আকাশে প্রায়ই তীক্ষè কণ্ঠে চিৎকার করে ঝাঁক বেঁধে চলে; ভয় পেলে তীক্ষèস্বরে চিৎকার করে ডাকে: কৈঙ্ক। জানুয়ারি-এপ্রিল মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি স্ত্রীকে খাওয়ায়; গাছের কা-ের প্রাকৃতিক গর্ত এবং বসন্তÍ পাখি ও কাঠঠোকরার পুরোনো বাসায় এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৪টি, মাপ ৩.০ ২.৫ সেমি।

বিস্তৃতি: মদনা টিয়া বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের চা বাগান, বন ও বনের ধারে পাওয়া যায়। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান, চীনের দক্ষিণাঞ্চল, ইন্দোচীন থেকে আন্দামান দ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: মদনা টিয়া বিশ্বে এবং বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: মদনা টিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ আলেকজা-ার-এর তোতা (ল্যাটিন: ঢ়ংরঃঃধপঁষধ = তোতা পাখি; ধষবীধহফৎর = সেনাধ্যক্ষ বয়ড আলেকজা-ার, ব্রিটিশ পাখিবিদ ও অনুসন্ধানকারী, ১৮৪৩-১৯১০)।
[কাজী জাকের হোসেন]

১১৯. চংরঃঃধপঁষধ পুধহড়পবঢ়যধষধ (খরহহধবঁং, ১৭৬৬)
সমনাম: চংরঃঃধপঁং পুধহড়পবঢ়যধষঁং খরহহধবঁং, ১৭৬৬
বাংলা নাম: লালমাথা টিয়া
ইংরেজি নাম: চষঁস-যবধফবফ চধৎধশববঃ (ইষড়ংংড়স-যবধফবফ চধৎধশববঃ)

বর্ণনা: লালমাথা টিয়া বড়শির মত বাঁকা ঠোঁট ও সরু লেজের হলদে-সবুজ পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৬ সেমি, ওজন ৬৫ গ্রাম, ডানা ১৪.২ সেমি, ঠোঁট ১.৮ সেমি, লেজ ২২ সেমি)। এর দেহের কিছু অংশ ছাড়া পুরোটাই ফিকে সবুজ দেখায়; থুতনি কালচে; এবং সাদা আগাসহ লেজ নীল-সবুজ। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য আছে। পুরুষপাখির মাথা কিমমিশ-লাল থেকে বেগুনে-নীল; গলাবন্ধ কালো; এবং কাঁধের পট্টি মেরুন লাল। স্ত্রীপাখির অনুজ্জ্বল ও ধূসর মাথাকে ঘিরে রয়েছে উজ্জ্বল হলুদ গলাব›ধ; কাঁধে হলুদ পট্টি। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েরই চোখ হলদে-সাদা; পা ও পাদমূল সবুজাভ-ধূসর; ঠোঁট দু’রঙের: উপরের ঠোঁট ফিকে কমলা-হলুদ ও নিচের ঠোঁট কালচে-বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের পুরোভাগ সবুজ, মাথা সবুজ, কাঁধ-ঢাকনি ও বুক কালচে; কপাল, চোখ ও ঠোঁটের মাঝের অংশ ও গাল পীতাভ।

স্বভাব: লালমাথা টিয়া প্রশস্ত-পাতার বন, বৃক্ষবহুল এলাকা, বনঘেষা আবাদি জমি, ফলের বাগান ও খোলা বনে বিচরণ করে; ছোট ছোট ঝাঁকে থাকে; খাদ্যবহুল গাছে একত্রে একশ পাখি দেখা যেতে পারে। ফুল ও ফলের গাছ, পাকা শস্যক্ষেতে এরা খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় শস্যদানা ও ফল, কুঁড়ি, রসাল ফুল এবং ফুলের মিষ্টি রস রয়েছে। বাঁশঝাড় ও বিচ্ছিন্ন জঙ্গলে কলোনি করে রাত কাটায়। সচরাচর তীব্র সুরে বার বার ডাকে: টুই-টুই। ওড়ার সময় এরা অবিরাম ডাকতে থাকে। জানুয়ারি-এপ্রিল মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের ফাঁটলে, সচরাচর কাঠঠোকরা ও বসন্তÍ পাখির পুরোনো বাসার কোটরের প্রয়োজন মাফিক পরির্বতন করে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। মাঝে মাঝে কাঠের কুচি দিমের নিচে বিছিয়ে নেয়। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪-৬টি, মাপ ২.৫ ২.০ সেমি।

বিস্তৃতি: লালমাথা টিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; ঢাকা, খুলনা বিভাগের গ্রামীণ কুঞ্জবনে দেখা মেলে। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে ।

অবস্থা: লালমাথা টিয়া বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: লালমাথা টিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ নীল-মাথা তোতা (ল্যাটিন: ঢ়ংরঃঃধপঁষধ = তোতা; গ্রীক: শঁধহড়ং = কালচে নীল, শবঢ়যধষড়ং = মাথার)।
[কাজী জাকের হোসেন]

১২০. চংরঃঃধপঁষধ বঁঢ়ধঃৎরধ (খরহহধবঁং, ১৭৬৬)
সমনাম: চংরঃঃধপঁং বঁঢ়ধঃৎরধ খরহহধবঁং, ১৭৬৬
বাংলা নাম: চন্দনা টিয়া, চন্দনা (আলী)
ইংরেজি নাম: অষবীধহফৎরহব চধৎধশববঃ

বর্ণনা: চন্দনা টিয়া ঘাস-সবুজ কাঁধে মেরুন পট্টি ও লম্বা লাল লেজ ওয়ালা বলিষ্ট পাখি (দৈর্ঘ্য ৫৩ সেমি, ডানা ২২ সেমি, ঠোঁট ৩.৬ সেমি, পা ২.১ সেমি, লেজ ২৯ সেমি)। পুরুষপাখি স্ত্রী থেকে কিছুটা আকারে বড়। পুরুষপাখির গলার পিছনে ও ঘাড়ের পাশের স্পষ্ট গোলাপি-পাটল বর্ণের বলয়সহ পুরো দেহ ঘাস-সবুজ; থুতনির কালো রেখা পুরোপুরি গলাবন্ধের গোলাপি-পাটল বর্ণের সঙ্গে মিলে গেছে; ডানার মধ্য-পালক ঢাকনির পরিষ্কার লাল পট্টি চোখে পড়ে; ঠোঁট লাল ও এর আগা কমলা-লাল; চোখ লেবু-সবুজ, চোখের বাইরের দিকে রয়েছে সরু নীল বলয়, চোখের পাতা কমলা-হলুদ ও নখর স্লেট-রঙের। স্ত্রী ও তরুণ পাখির গলার পিছনের গোলাপি-পাটল বর্ণের বলয় ও থুতনিতে কালো রেখা নেই। ৫টি উপপ্রজাতির মধ্যে চ. ব. হরঢ়ধষবহংরং বাংলাদেশে রয়েছে।

স্বভাব: চন্দনা টিয়া শুষ্ক ও আর্দ্র পাতাঝরা বন, বৃক্ষবহুল এলাকা, গ্রামের গাছপালা, উদ্যান, বাগান ও আবাদি জমিতে বিচরণ করে; বিভিন্ন আকৃতির পাখির দলে পাওয়া যায়। ফুলদ ও ফলদ গাছের ডালে বুকে হেঁটে এবং ঘেরা ফলের বাগান ও শস্যক্ষেতে হানা দিয়ে এরা খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফল, বনে ও ভুঁয়ে উৎপন্ন বীজ যেমন-ভুট্টা, ধান ও গম, ফুলের মিষ্টি রস এবং ফুলের অংশ। বিভিন্ন গোত্রের পাখি একত্রে গাছে বা বনকুঞ্জে রাত কাটায়; উঁ”ু ও গভীর কণ্ঠে চিৎকার করে ডাকে: ক্রি-এ্যার। ডিসেম্বর-এপ্রিল মাসের প্রজনন মৌÍসুমে নারিকেল ও নানা জাতের নরম গাছের কোটরে অথবা কাঠঠোকরার পরিত্যক্ত বাসায় এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৪টি, মাপ ৩.৪ ২.৮ সেমি। ১৯-২০ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: চন্দনা টিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; ঢাকা বিভাগের ও রাজশাহী বিভাগের লোকালয়ে কালেভদ্রে দেখা যায়। এক সময় খুলনা ও সিলেট বিভাগেও পাওয়া যেত। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কাম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামসহ এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: চন্দনা টিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: চন্দনা টিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সম্ভ্রান্তÍ কন্যার মত তোতা (ল্যাটিন: ঢ়ংরঃঃধপঁষধ = তোতা; গ্রীক


মন্তব্য

ইফতেখার এর ছবি

লেখার অনেক অংশ সম্ভবত ইউনিকোডে লেখা নয়।
এমন উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ।

তারেক অণু এর ছবি

চেষ্টা করা হচ্ছে

মরুদ্যান এর ছবি

খাইসে!!! মাঝে অনেকটুকু জায়গা বাংলা আসেনাই।

ইনাম আল হক কে গুরু গুরু

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

তারেক অণু এর ছবি

জানি , দেখা যাক

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথম পাতাটায় সূচনা অংশের নীচে ৩ নম্বর লিঙ্ক-টা থাকে 'বিস্তারিত'। লিঙ্ক-টা এইবার সার্থকনামা! গুরু গুরু
অসাধারণ দলিল। পুরোটা পড়তে অনেকদিন লাগবে। মুগ্ধতা জানানোর জন্য অতক্ষণ (মানে অতদিন) অপেক্ষা করাটার কোন মানেই হয় না।
পুরোটা পড়ার ক্ষেত্রে আমার একটা ঝামেলাও হচ্ছে।
১২৩-এর পর থেকে ১৫০ পর্যন্ত প্রবলভাবে ঘেঁটে আছে। তার পরের অংশতেও অনেক জায়গাতে ফন্ট সমস্যায় হিজিবিজি হয়ে আছে। ধরে ধরে সম্পাদনা করা গেলে খুব ভাল হত। মুর্শেদ-ভাই-এর ইউনিকোড সম্পাদনা করার পাতাটা এ ব্যাপারে খুব-ই কার্যকরী। কিন্তু লাইনগুলো বাংলা ইংরেজী মিশিয়ে থাকায় অনেকটা সময় লাগবে। আপনি যদি ইতিমধ্যেই কাজটা সেরে ফেলে থাকেন তবে তো কথাই নাই। না করে থাকলে আপনি অনুমতি দিলে আমি একটা চেষ্টা চালাতে পারি। তবে ব্যাপারটা যদি এমন হয়ে থাকে যে সমস্যাটা আসলে আমার কম্প্যু-বাবাজীর তাইলে অবশ্য এইটা নিয়ে আপনার কিছু করার নেই।
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি

প্লিজ হেল্প করেন, ইমেইল দেন

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক আছে। কাজটা শুর করছি তা হলে। আপনার ই-মেইল তো মনে হয় আপনারে ন্যাটজিও-তে ভোট দেওয়ার ডাকওয়ালা লেখটায়.আছে। যেমন, যখন দরকার পড়বে যোগযোগ করে নেব।
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি

আপনি ইমেইল জানালে আমি ২টা ফাইল পাঠাতাম, একটাতে চেকলিস্ট অন্যটায় তথ্য, সেগুলো চেঞ্জ করলেই হত

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার ই-মেইল ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছি। আপনার হটমেইল ইন-বক্স চেক করলে পেয়ে যাবেন মনে হয়।
- একলহমা

ভাটিয়ালী এর ছবি

নামকরনের নিয়মটা সুন্দর, কিন্তু, কিছু চেনা নাম ভজঘট পেকে গেলো। Psitacula Eupatria কে তোতা, আর Psitacula alexandri কে চন্দনা বলে জানি। Psitacula Eupatria পৃথিবীর সবচেয়ে বড় parakeet, কিন্তু গানের মাঝে পাই ‌"ছোট্ট পাখি চন্দনা। লালমাথা টিয়াকে বরাবর লালমোহন বলে এসেছি। বকের তৃতীয় নাম বগলা না হয়ে বলাকা হলে মন্দ হতো না। কিছু নাম পড়তে পারছি না। আশা করি Raquet tailed drongo নিয়মের খাতিরে ফিঙে না হয়ে তার আসল নাম ভীমরাজ-ই আছে।

তারেক অণু এর ছবি

চেনা গানে কথায় অনেক ভুল ধারণ থেকে যায় কিন্তু সব দেশেই।

ভীমরাজ চেক করে জানাচ্ছি, কিন্তু খুব প্রচলিত নামকে সবসময়ই রাখা হয় যদি না সেটা খুব ভুল কিছু হয়

স্পর্শ এর ছবি

দারুণ ব্যাপার! যে নামগুলো পড়তে পারলাম সবগুলোই খুব পছন্দ হলো। ১২৩ টার পর থেকে ফন্ট ঝামেলায় হিজিবিজি হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ঠ সবাইকে অভিনন্দন।

ফিজিক্স-ম্যাথ এর শব্দগুলোও সব বাংলা করা গেলে কী দারুণ ব্যাপার হত!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

তারেক অণু এর ছবি

ভালো মুশকিল! দেখি সেগুলো কী করে লাইনে আনা যায়

আশালতা এর ছবি

ভাগ্যিস কিছু মানুষের বনের মোষ তাড়াতে ভালো লাগে। কি দারুণ একটা কাজ হয়েছে! হাততালি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তারেক অণু এর ছবি

আর কিছু মানুষ ঘরের খেয়ে ঘরের চেয়ার টেবিল তাড়া করে শয়তানী হাসি

মনি শামিম এর ছবি

ব্যাপক কাজ করেছিস। ব্যাপক। হাততালি

তারেক অণু এর ছবি

আমি কিছুই করি নাই, কাজের মানুষেরা আসলে কাজ করে যাচ্ছে

সাদাত আহমেদ এর ছবি

ভাই, বিজয়ে লেখার কারনে বোধহয়, ফন্টগুলো চেঞ্জ হয়ে গেছে... সংশোধন করা দরকার... অসম্ভব ভালো একটা কাজ করেছেন আপনারা...

তারেক অণু এর ছবি

চেঞ্জ করতে হবে, ধন্যবাদ

রণদীপম বসু এর ছবি

অণু, লেখাগুলো কি বিজয়ে করেছিলেন ? নাম তালিকায় ১২৪ থেকে ৬৫০ পর্যন্ত বাংলাগুলো সব হিব্রু হয়ে গেছে। এরপর তো মাঝে মাঝে ভয়ানক খারাপ অবস্থা !
( http://bnwebtools.sourceforge.net/ ) সচল মুর্শেদের এইটাতে একক্লিকে সব ইউনিকোড করে ফেলতে পারেন। অবশ্য জানি না অন্য কোন সমস্যা কিনা।

তবে গুরুত্বপূর্ণ এই পোস্টটাকে অক্ষত বানানো জরুরি। কী বলবো, খুবই দুর্দান্ত একটি কাজ করেছেন !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ দাদা, দেখি করতে পারি নাকি,

রণদীপম বসু এর ছবি

এখন সচলে এডিটে গিয়ে তালিকার বাংলাগুলো অভ্রতে একটু একটু এডিট করেন। আর ৬৫০ নম্বর তালিকার পর বাকি লেখাটাকে একটানে কনভার্ট করেন। ওখানে মনে হয় ইংরেজি কমই আছে। সেগুলো আবার এডিট করে ইংরেজি করতে হবে। কী আর করা, গর্ভে যখন ধরেছেন, সুস্থভাবে বিয়োতে তো হবে ! নইলে দুর্দান্ত কষ্টটুকুই তো মার যাবে ! এটা হয় কী করে !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রণদীপম বসু এর ছবি

না না, এখানে আর কনভার্ট করার কিছু নেই। এই সচলেই অভ্র দিয়ে কেবল কোথাও বাংলা কোথাও ইংরেজি এডিট করেন। খুব বেশি হ্যাপা হবে না। ধীরে ধীরে হয়ে যাবে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় রণদীপম,
অণুর সাথে মন্তব্য চালাচালি হয়েছে (উপরে আছে)। এই দায়িত্ব আমি আনন্দের সাথে নিয়ে নিয়েছি। অণু যা করার করেছে এবার মাসী-পিসী-কাকা-জ্যাঠা-রা কিছু করি, তাই না?
- একলহমা

রণদীপম বসু এর ছবি

অবশ্যই অবশ্যই ! এটা স্বস্তির কথা। যাক্, ছোড়াটার মাসী-পিসী-কাকা-জ্যাঠা-ভাগ্য ভীষণ ঈর্ষণীয় দেখছি ! হা হা হা !
আসলে উপরের সংশ্লিষ্ট মন্তব্য চালাচালিটাতে মনোসংযোগ হয়নি বলে খেয়াল করি নি। অনেক ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি ঈর্ষা করন লাগব না। আপনি এই রকম কিছু উফার দিলে হ্যার-ও মাসী-পিসী-কাকা-জ্যাঠা জুটব।
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি
মইনুল রাজু এর ছবি

চলুক চলুক

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

তারেক অণু এর ছবি
লুব্ধক এর ছবি

কাজটি এক কথায় অসাধারণ হয়েছে!

জীবনের একটি অধ্যায়ে, শ্রদ্ধেয় ইনাম আল হক এবং আনোয়ার স্যার (মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক) এর সাথে কিছু কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। দু'জনই চমৎকার মানুষ। মনে পড়ে, আনোয়ার স্যার এর বইয়ের সবকিছু "একেবারে নিঁখুত হতে হবে" এই নীতিতে বিশ্বাসী হতে গিয়ে একটা বইয়ের রেফারেন্স সম্পাদনা আর নির্ঘণ্ট তৈরি করতে যেয়ে আমার একবারের ঈদের ছুটি মাঠে মারা গিয়েছিল। তবে কাজটা নিঁখুত ও কার্যকরভাবে শেষ করার পর যে আনন্দ আর স্বস্তি পেয়েছিলাম তা অতুলনীয়।

আশা করছি এই পোস্টটির ফন্ট সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। একলহমাকে ধন্যবাদ হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য। আর অণু, আবারো এরকম একটি স্মরণীয় পোস্ট এর জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ!

শুভায়ন এর ছবি

গুরু গুরু বিপুলায়তন কাজের জন্য বিপুল অভিবাদন

অতিথি লেখক এর ছবি

বিশাল কাজ, ধন্যবাদ জানানোর ভাষা জানা নেই! একটা টার্ম ব্যবহার করা হয়েছে, খয়রা- এটা কি খয়েরী রং বোঝাতে?

আব্দুল্লাহ এ এম

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

দারুণ ! দারুণ একটা কাজ হয়েছে অবশ্যই। সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ। আর পোস্টের যা সাইজ তাতে পুরো সপ্তাহ কেটে যাবে। হে হে হে

অতিথি লেখক এর ছবি

অণু, ফাইল পাইনি এখনো। ব্যস্ত নিশ্চয়ই। ব্যাপার না কোনো। কাজ শুরু করে দিয়েছি।
এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, নীচে দিলাম। যেমন, যেমন কাজ এগোবে, এইভাবে তুলতে তুলতে এগোতে থাকব।

১২৪ হিমালয়ী কুটিবাতাসি Himalayan Swiftlet Aerodramus brevirostris পরিযায়ী

১২৫ ধলাকোমর সুইবাতাসি White-rumped Needletail Zoonavena sylvatica পরিযায়ী?

১২৬ চাঁদিপিঠ সুইবাতাসি Silver-backed Needletail Hirundapus cochinchinensis পরিযায়ী?

১২৭ খয়রাপিঠ সুইবাতাসি Brown-backed Needletail Hirundapus giganteus cwihvqx?

১২৮ এশীয় তালবাতাসি Asian Palm Swift Cypsiurus balasiensis

১২৯ ঘর বাতাসি Little Swift Apus affinis

১৩০ চেরালেজ বাতাসি Fork-tailed Swift Apus pacificus পরিযায়ী

১৩১ ঝুটিয়াল গাছবাতাসি Crested Treeswift Hemiprocne coronata?

প্যাঁচা (টাইটোনিডি+স্ট্রিগিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৭+১৫৬, বাংলাদেশে ১+১৪ প্রজাতি)
১৩২ লক্ষ্মী প্যাঁচা Barn Owl Tyto alba

১৩৩ কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা Collared Scops Owl Otus bakkamoena

১৩৪ পাহাড়ি নিমপ্যাঁচা Mountain Scops Owl Otus spilocephalus

১৩৫ উদয়ী নিমপ্যাঁচা Oriental Scops Owl Otus sunia

১৩৬ মেটে হুতোমপ্যাঁচা Dusky Eagle Owl Bubo coromandus

১৩৭ চিতিপেট হুতোমপ্যাঁচা Spot-bellied Eagle Owl Bubo nipalensis

১৩৮ তামাটে মেছোপ্যাঁচা Tawny Fish Owl Ketupa flavipes

১৩৯ মেটে মেছোপ্যাঁচা Buffy Fish Owl Ketupa ketupu

১৪০ খয়রা মেছোপ্যাঁচা Brown Fish Owl Ketupa zeylonensis

১৪১ খয়রা গাছপ্যাঁচা Brown Wood Owl Strix leptogrammica

১৪২ দাগিঘাড় কুটিপ্যাঁচা Collared Owlet Glaucidium brodiei

১৪৩ এশীয় দাগিপ্যাঁচা Asian Barred Owlet Glaucidium cuculoides

১৪৪ খুড়–লে প্যাঁচা Spotted Owlet Athene brama

১৪৫ খয়রা শিকরেপ্যাঁচা Brown Hawk Owl Ninox scutulata

১৪৬ ছোটকান প্যাঁচা Short Eared Owl Asio flammeus পরিযায়ী


ব্যাংমুখো (বাট্রাকোস্ট্রোমিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১১, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)
১৪৭ হজসনি ব্যাঙমুখো Hodgson’s Frogmouth Batrachostomus hodgsoni

রাতচরা (ইউরোস্টোপডিডি+কাপ্রিমালগিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৭+৭৯, বাংলাদেশে ১+৪ প্রজাতি)
১৪৮ বড় কানচরা Great Eared Nightjar Eurostopodus macrotis

১৪৯ মেঠো রাতচরা Savanna Nightjar Caprimulgus affinis

১৫০ দেশি রাতচরা Indian Nightjar Caprimulgus asiaticus

১৫১ মেটে রাতচরা Grey Nightjar Caprimulgus indicus

১৫২ ল্যাঞ্জা রাতচরা Large-tailed Nightjar Caprimulgus macrurus

- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি

ওয়াও !!!!

আয়নামতি এর ছবি

এরকম সব্বোনাশ ধরনের পোস্টের জন্য অণুকে উত্তম জাঝা! একেবারে পড়ে ফেলার পোস্ট এটা না।
আস্তে ধীরে পড়ে নিবো। ভালো হতো যদি হাচলদেরও ক্ষমতা থাকতো পোস্ট প্রিয়তে নেবার।
অণু যে হারে লিখে এই পোস্ট কোথায় তলিয়ে যাবে সেটাই ভাবছি! স্পর্শের মত আমারও একই সমস্যা হলো ভাই। আশা করি আস্তে ধীরে পোস্টটা ত্রুটিমুক্ত হয়ে ওঠবে। বাংলায় পাখিদের নামাকরণের পেছনে থাকা মানুষটি সহ সবার জন্য শ্রদ্ধা আর উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি

আস্তে আস্তে ল্যাতিন হরফগুলো বসিয়ে নিব হাসি

রামগরুড় এর ছবি

উত্তম জাঝা!

কিন্তু ভাই, আমিতো জানতাম Orient মানে হইল "প্রাচ্য" আর Occident মানে হইল গিয়া "পাশ্চাত্য"। সেই হিসাবে Oriental হওয়া উচিৎ আছিল "প্রাচ্যীয়", কি কন?

তারেক অণু এর ছবি

না, কারণ এত্ত কঠিন শব্দ উচ্চারণ করবে কে? নাম সবসময় সহজ হওয়া দরকার

রামগরুড় এর ছবি

চিন্তিত

স্যাম এর ছবি

এইটা একটা 'ম্যামথ' কাজ হইছে!!! গুরু গুরু
ইনাম ভাই আর আপনার সাথে ডিনার এর ছবিটা তোলা হয় নাই বলে আজ মিস করসি সত্যিই মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

পায়রা, ঘুঘু, হরিয়াল ও ধুমকল (কলম্বিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩১৩, বাংলাদেশে ১৭ প্রজাতি)?

১৫৩ গোলা পায়রা Common Pigeon Columba livia

১৫৪ ধলাটুপি পায়রা Pale-capped Pigeon Columba punicea?

১৫৫ তিলা ঘুঘু Spotted Dove Streptopelia chinensis

১৫৬ ইউরেশীয় কণ্ঠীঘুঘু Eurasian Collared Dove Streptopelia decaocto

১৫৭ উদয়ী রাজঘুঘু Oriental Turtle Dove Streptopelia orientalis

১৫৮ হাসির ঘুঘু Laughing Dove Streptopelia senegalensis?

১৫৯ লাল রাজঘুঘু Turtle Dove Streptopelia tranquebarica

১৬০ দাগি কোকিলঘুঘু Barred Cuckoo-Dove Macropygia unchall?

১৬১ পাতি শ্যামাঘুঘু Common Emerald Dove Chalcophaps indica
১৬২ ল্যাঞ্জা হরিয়াল Pin-tailed Green Pigeon Treron apicauda?

১৬৩ কমলাবুক হরিয়াল Orange-breasted Green Pigeon Treron bicincta

১৬৪ ঠোঁটমোটা হরিয়াল Thick-billed Green Pigeon Treron curvirostra

১৬৫ হলদেপা হরিয়াল Yellow Footed Green Pigeon Treron phoenicopterus

১৬৬ পম্পাদুর হরিয়াল Pompadour Green Pigeon Treron pompadora

১৬৭ গেঁজলেজ হরিয়াল Wedge-tailed Green Pigeon Treron sphenurus

১৬৮ সবুজ ধুমকল Green Imperial Pigeon Ducula aenea

১৬৯ পাহাড়ি ধুমকল Mountain Imperial Pigeon Ducula badia


ডাহর (ওটিডিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৬, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
১৭০ বাংলা ডাহর Bengal Florican Houbaropsis bengalensis

১৭১ পাতি ডাহর Lesser Florican Sypheotides indica

সারস (গ্রুইডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৫, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি)
১৭২ দেশি সারস Sarus Crane Grus antigone পরিযায়ী

১৭৩ পাতি সারস Common Crane Grus grus পরিযায়ী

১৭৪ ডেমোজিল সারস Demoiselle Crane Anthropoides virgo পরিযায়ী

প্যারাপাখি (হেলিঅর্নিটিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)
১৭৫ কালামুখ প্যারাপাখি Masked Finfoot Heliopais personata

ঝিল্লি, গুরগুরি, কালেম ও কুট (রালিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৪৩, বাংলাদেশে ১১ প্রজাতি)
১৭৬ মেটেপা ঝিল্লি Slaty-legged Crake Rallina eurizonoides

১৭৭ মেটেবুক ঝিল্লি Slaty-breasted Rail Gallirallus striatus

১৭৮ পান্তা ঝিল্লি Water Rail Rallus aquaticus পরিযায়ী

১৭৯ খয়রা ঝিল্লি Brown Bush-hen Amaurornis akool

১৮০ ধলাবুক ডাহুক White-breasted Waterhen Amaurornis phoenicurus

১৮১ লালবুক গুরগুরি Ruddy-breasted Crake Porzana fusca

১৮২ বেইলন গুরগুরি Baillon’s Crake Porzana pusilla পরিযায়ী

১৮৩ কোড়া Watercock Gallicrex cinerea

১৮৪ বেগুনি কালেম Purple Swamphen Porphyrio porphyrio

১৮৫ পাতি পানমুরগি Common Moorhen Gallinula chloropus

১৮৬ পাতি কুট Eurasian Coot Fulica atra পরিযায়ী

আপাতত এই পর্যন্ত। আশা করি আবার ফিরব ঘন্টা চারেক বাদে।
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি
তুলিরেখা এর ছবি

খুব ভালো একটা পোস্ট, আলাদা করে মার্ক করে রাখলাম। মাঝে মাঝেই দেখতে হবে।
বিশেষরকম ধন্যবাদ আপনাকে।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তারেক অণু এর ছবি

ভুল গুলো ঠিক করতে হবে

রাব্বানী এর ছবি

লিস্টে যে অংশে বিজয়-ইউনিকোড নিয়ে ঝামেলা হয়েছে, সেটা ঠিক করার চেষ্টা করলাম (পাইথন আর মুর্শেদ ভাইয়ের কনভার্টার এর কারণে মান্যুয়াল খাটনি কম হয়েছে)
=======================================================
১৮৭ ইউরেশীয় মুরগিচ্যাগা Eurasian Woodcock Scolopax rusticola পরিযায়ী
১৮৮ পাতি চ্যাগা Common Snipe Gallinago gallinago পরিযায়ী
১৮৯ সুইনহোর চ্যাগা Swinhoe’s Snipe Gallinago megala পরিযায়ী
১৯০ বন চ্যাগা Wood Snipe Gallinago nemoricola পরিযায়ী
১৯১ ল্যাঞ্জা চ্যাগা Pin-tailed Snipe Gallinago stenura পরিযায়ী
১৯২ জ্যাক চ্যাগা Jack Snipe Lymnocryptes minimus পরিযায়ী
১৯৩ দাগিলেজ জৌরালি Bar-tailed Godwit Limosa lapponica পরিযায়ী
১৯৪ কালালেজ জৌরালি Black-tailed Godwit Limosa limosa পরিযায়ী
১৯৫ ইউরেশীয় গুলিন্দা Eurasian Curlew Numenius arquata পরিযায়ী
১৯৬ পুবের গুলিন্দা Eastern Curlew Numenius madagascariensis পরিযায়ী
১৯৭ নাটা গুলিন্দা Whimbrel Numenius phaeopus পরিযায়ী
১৯৮ মেটেলেজ ট্যাটলার Grey-tailed Tattler Heteroscelus brevipes পরিযায়ী
১৯৯ তিলা লালপা Spotted Redshank Tringa erythropus পরিযায়ী
২০০ বন বাটান Wood Sandpiper Tringa glareola পরিযায়ী
২০১ নর্ডম্যান সবুজপা Nordmann’s Greenshank Tringa guttifer পরিযায়ী
২০২ পাতি সবুজপা Common Greenshank Tringa nebularia পরিযায়ী
২০৩ সবুজ বাটান Green Sandpiper Tringa ochropus পরিযায়ী
২০৪ বিল বাটান Marsh Sandpiper Tringa stagnatilis পরিযায়ী
২০৫ পাতি লালপা Common Redshank Tringa totanus পরিযায়ী
২০৬ টেরেক বাটান Terek Sandpiper Xenus cinereus পরিযায়ী
২০৭ পাতি বাটান Common Sandpiper Actitis hypoleucos পরিযায়ী
২০৮ লাল নুড়িবাটান Ruddy Turnstone Arenaria interpres পরিযায়ী
২০৯ এশীয় ডউইচার Asian Dowitcher Limnodromus semipalmatus পরিযায়ী
২১০ স্যান্ডার্লিং ঝধহফবৎষরহম Calidris alba পরিযায়ী
২১১ ডানলিন উঁহষরহ Calidris alpina পরিযায়ী
২১২ লাল নট Red Knot Calidris canutus পরিযায়ী
২১৩ গুলিন্দা বাটান Curlew Sandpiper Calidris ferruginea পরিযায়ী
২১৪ ছোট চাপাখি Little Stint Calidris minuta পরিযায়ী
২১৫ লালঘাড় চাপাখি Red-necked Stint Calidris ruficollis পরিযায়ী
২১৬ লম্বাঙ্গুল চাপাখি Long-toed Stint Calidris subminuta পরিযায়ী
২১৭ টেমিঙ্কের চাপাখি Temminck’s Stint Calidris temminckii পরিযায়ী
২১৮ বড় নট Great Knot Calidris tenuirostris পরিযায়ী
২১৯ চামচঠুঁটো বাটান Spoon-billed Sandpiper Eurynorhynchus pygmeus পরিযায়ী
২২০ মোটাঠুঁটো বাটান Broad-billed Sandpiper Limicola falcinellus পরিযায়ী
২২১ গেওয়ালা বাটান Ruff Philomachus pugnax পরিযায়ী
রাঙাচ্যাগা (রোস্ট্রাটুলিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)
২২২ বাংলা রাঙাচ্যাগা Greater Painted Snipe Rostratula benghalensis
পিপি (জাকানিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৮, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
২২৩ নেউ পিপি Pheasant-tailed Jacana Hydrophasianus chirurgus
২২৪ দল পিপি Bronze-winged Jacana Metopidius indicus
মোটাহাঁটু (বারিনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
২২৫ ইউরেশীয় মোটাহাঁটু Eurasian Stone-curlew Burhinus oedicnemus পরিযায়ী?
২২৬ বড় মোটাহাঁটু Great Stone-curlew Esacus recurvirostris
জিরিয়া, টিটি (কারাড্রিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৮৮, বাংলাদেশে ১৬ প্রজাতি)
২২৭ ইউরেশীয় ঝিনুকমার Eurasian Oystercatcher Haematopus ostralegus পরিযায়ী
২২৮ কালাপাখ ঠেঙ্গি Black-winged Stilt Himantopus himantopus পরিযায়ী
২২৯ পাকরা উল্টোঠুঁটি Pied Avocet Recurvirostra avosetta পরিযায়ী
২৩০ প্রশান্ত সোনাজিরিয়া Pacific Golden Plover Pluvialis fulva পরিযায়ী
২৩১ মেটে জিরিয়া Grey Plover Pluvialis squatarola পরিযায়ী
২৩২ কেন্টিশ জিরিয়া Kentish Plover Charadrius alexandrinus পরিযায়ী
২৩৩ ছোট নথজিরিয়া Little Ringed Plover Charadrius dubius
২৩৪ পাতি নথজিরিয়া Common Ringed Plover Charadrius hiaticula পরিযায়ী
২৩৫ বড় ধুলজিরিয়া Greater Sand Plover Charadrius leschenaultii পরিযায়ী
২৩৬ ছোট ধুলজিরিয়া Lesser Sand Plover Charadrius mongolus পরিযায়ী
২৩৭ লম্বাঠুঁটো জিরিয়া Long-billed Plover Charadrius placidus পরিযায়ী
২৩৮ মেটেমাথা টিটি Grey-headed Lapwing Vanellus cinereus পরিযায়ী
২৩৯ নদী টিটি River Lapwing Vanellus duvaucelii
২৪০ হট টিটি Red-wattled Lapwing Vanellus indicus
২৪১ হলদেগাল টিটি Yellow-wattled Lapwing Vanellus malarbaricus
২৪২ উত্তুরে টিটি Northern Lapwing Vanellus vanellus পরিযায়ী
কাঁকড়াজিরিয়া ও বাবুবাটান (গ্লারিওলিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৮, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি)
২৪৩ কাঁকড়াজিরিয়া ঈৎধন-ঢ়ষড়াবৎ Dromas ardeola পরিযায়ী
২৪৪ ছোট বাবুবাটান Small Pratincole Glareola lactea
২৪৫ উদয়ী বাবুবাটান Oriental Pratincole Glareola maldivarum
জেগার, গাঙচিল, পানচিল ও গাঙচষা (লারিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১২৮, বাংলাদেশে ২০ প্রজাতি)
২৪৬ পরজীবী জেগার Parasitic Jaeger Stercorarius parasiticus পরিযায়ী
২৪৭ পোমারাইন জেগার Pomarine Skua Stercorarius pomarinus পরিযায়ী
২৪৮ দেশি গাঙচষা Indian Skimmer Rynchops albicollis
২৪৯ খয়রামাথা গাঙচিল Brown-headed Gull Larus brunnicephalus পরিযায়ী
২৫০ হলদেপা গাঙচিল Yellow-legged Gull Larus cachinnans পরিযায়ী
২৫১ হিউগ্ধসঢ়;লিনের গাঙচিল Heuglin’s gull Larus heuglini পরিযায়ী
২৫২ পালাসি গাঙচিল Great Black-headed Gull Larus ichthyaetus পরিযায়ী
২৫৩ কালামাথা গাঙচিল Common Black-headed Gull Larus ridibundus পরিযায়ী
২৫৪ কালাঠোঁট পানচিল Gull-billed Tern Gelochelidon nilotica
২৫৫ কালাপেট পানচিল Black-bellied Tern Sterna acuticauda
২৫৬ ছোট পানচিল Little Tern Sterna albifrons
২৫৭ নদীয়া পানচিল River Tern Sterna aurantia
২৫৮ বাংলা টিকিপানচিল Lesser Crested Tern Sterna bengalensis
২৫৯ বড় টিকিপানচিল Swift Tern Sterna bergii পরিযায়ী
২৬০ কা¯িপয়ান পানচিল Caspian Tern Sterna caspia পরিযায়ী
২৬১ পাতি পানচিল Common Tern Sterna hirundo পরিযায়ী
২৬২ স্যান্ডউইচ পানচিল Sandwich Tern Sterna sandvicensis পরিযায়ী
২৬৩ কালাঘাড় পানচিল Black-naped Tern Sterna sumatrana পরিযায়ী
২৬৪ জুল্ধসঢ়;ফি পানচিল Whiskered Tern Chlidonias hybridus
২৬৫ ধলাপাখ পানচিল White-winged Tern Chlidonias leucopterus পরিযায়ী
চিল, বাজ, ঈগল, শকুন, শিকরে ও কাপাসি (অ্যাক্সিপিট্রিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৩৮, বাংলাদেশে ৪৩ প্রজাতি)
২৬৬ মাছমুরাল ঙংঢ়ৎবু Pandion haliaetus পরিযায়ী
২৬৭ জার্ডনের বাজ Jerdon’s Baza Aviceda jerdoni
২৬৮ কালা বাজ Black Baza Aviceda leuphotes পরিযায়ী
২৬৯ উদয়ী মধুবাজ Crested Honey Buzzard Pernis ptilorhyncus
২৭০ কাটুয়া চিল Black-winged Kite Elanus caeruleus
২৭১ ভুবন চিল Black Kite Milvus migrans
২৭২ শঙ্খ চিল Brahminy Kite Haliastur indus
২৭৩ ধলালেজ ঈগল White-tailed Eagle Haliaeetus albicilla পরিযায়ী
২৭৪ ধলাপেট সিন্ধুঈগল White-bellied Sea Eagle Haliaeetus leucogaster
২৭৫ পালাসি কুরাঈগল Pallas’s Fish Eagle Haliaeetus leucoryphus
২৭৬ মেটেমাথা কুরাঈগল Grey-headed Fish Eagle Ichthyophaga ichthyaetus
২৭৭ ধলা শকুন Egyptian Vulture Neophron percnopterus পরিযায়ী
২৭৮ বাংলা শকুন White-rumped Vulture Gyps bengalensis
২৭৯ ইউরেশীয় গৃধিনী Griffon Vulture Gyps fulvus পরিযায়ী
২৮০ হিমালয়ী গৃধিনী Himalayan Vulture Gyps himalayensis পরিযায়ী
২৮১ সরুঠুঁটি শকুন Slender-billed Vulture Gyps tenuirostris
২৮২ কালা শকুন Cinereous Vulture Aegypius monachus পরিযায়ী
২৮৩ রাজ শকুন Red-headed Vulture Sarcogyps calvus
২৮৪ খাটোআঙুল সাপঈগল Short-toed Snake Eagle Circaetus gallicus পরিযায়ী
২৮৫ তিলা নাগঈগল Crested Serpent Eagle Spilornis cheela
২৮৬ পশ্চিমা পানকাপাসি Western Marsh Harrier Circus aeruginosus পরিযায়ী
২৮৭ মুরগি কাপাসি Northern Harrier Circus cyaneus পরিযায়ী
২৮৮ ধলা কাপাসি Pallid Harrier Circus macrourus পরিযায়ী
২৮৯ পাকরা কাপাসি Pied Harrier Circus melanoleucos পরিযায়ী
২৯০ মন্টেগুর কাপাসি Montagu’s Harrier Circus pygargus পরিযায়ী
২৯১ পুবের পানকাপাসি Eastern Marsh Harrier Circus spilonotus পরিযায়ী
২৯২ পাতি শিকরে Shikra Accipiter badius
২৯৩ উত্তুরে গোদাশিকরে Northern Goshawk Accipiter gentilis পরিযায়ী
২৯৪ ইউরেশীয় চড়ুইশিকরে Eurasian Sparrowhawk Accipiter nisus পরিযায়ী
২৯৫ ঝুটিয়াল গোদাশিকরে Crested Goshawk Accipiter trivirgatus
২৯৬ বস্ধসঢ়;রা শিকরে Besra Accipiter virgatus
২৯৭ ধলাচোখ তিসাবাজ White-eyed Buzzard Butastur teesa
২৯৮ পাতি তিসাবাজ Common Buzzard Buteo buteo পরিযায়ী
২৯৯ লম্বাপা তিসাবাজ Long-legged Buzzard Buteo rufinus পরিযায়ী
৩০০ বড় গুটিঈগল Greater Spotted Eagle Aquila clanga পরিযায়ী
৩০১ দেশি গুটিঈগল Indian Spotted Eagle Aquila hastata
৩০২ এশীয় শাহিঈগল Asian Imperial Eagle Aquila heliaca পরিযায়ী
৩০৩ নেপালি ঈগল Steppe Eagle Aquila nipalensis পরিযায়ী
৩০৪ তামাটে ঈগল Tawny Eagle Aquila rapax পরিযায়ী
৩০৫ বনেলি ঈগল Bonelli’s Eagle Hieraaetus fasciatus পরিযায়ী
৩০৬ লালপেট ঈগল Rufous-bellied Eagle Hieraaetus kienerii পরিযায়ী
৩০৭ বুট্ধসঢ়;পা ঈগল Booted Eagle Hieraaetus pennatus পরিযায়ী
৩০৮ ঝুটিয়াল শিকরেঈগল Crested Hawk-Eagle Spizaetus cirrhatus
শাহিন ও কেস্ট্রেল (ফালকনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩৮, বাংলাদেশে ৯ প্রজাতি)
৩০৯ আমুর শাহিন Amur Falcon Falco amurensis পরিযায়ী
৩১০ সাকের শাহিন Saker Falcon Falco cherrug পরিযায়ী
৩১১ লালঘাড় শাহিন Red-necked Falcon Falco chicquera
৩১২ ল¹র শাহিন Laggar Falcon Falco jugger
৩১৩ ছোট কেস্ট্রেল Lesser Kestrel Falco naumanni পরিযায়ী
৩১৪ পেরেগ্রিন শাহিন Peregrine Falcon Falco peregrinus পরিযায়ী
৩১৫ উদয়ী টিকাশাহিন Oriental Hobby Falco severus পরিযায়ী
৩১৬ ইউরেশীয় টিকাশাহিন Eurasian Hobby Falco subbuteo পরিযায়ী
৩১৭ পাতি কেস্ট্রেল Common Kestrel Falco tinnunculus পরিযায়ী
ডুবুরি (পডিসিপিডিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২২, বাংলাদেশে ৪ প্রজাতি)
৩১৮ ছোট ডুবুরি Little Grebe Tachybaptus ruficollis
৩১৯ বড় খোঁপাডুবুরি Great Crested Grebe Podiceps cristatus পরিযায়ী
৩২০ লালগলা ডুবুরি Red-necked Grebe Podiceps grisegena পরিযায়ী
৩২১ কালাঘাড় ডুবুরি Black-necked Grebe Podiceps nigricollis পরিযায়ী
গয়ার (অ্যানিঙ্গিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)
৩২২ গয়ার উধৎঃবৎ Anhinga melanogaster
পানকৌড়ি (ফালাক্রোকোরাসিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩৭, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি)
৩২৩ বড় পানকৌড়ি Great Cormorant Phalacrocorax carbo পরিযায়ী
৩২৪ দেশি পানকৌড়ি Indian Cormorant Phalacrocorax fuscicollis পরিযায়ী
৩২৫ ছোট পানকৌড়ি Little Cormorant Phalacrocorax niger
বক (আর্ডিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৬৫, বাংলাদেশে ১৮ প্রজাতি)
৩২৬ ছোট বগা Little Egret Egretta garzetta
৩২৭ মাঝলা বগা Yellow-billed Egret Egretta intermedia
৩২৮ প্রশান্ত শৈলবগা Pacific Reef Heron Egretta sacra পরিযায়ী
৩২৯ ধুপনি বক Grey Heron Ardea cinerea
৩৩০ দৈত্য বক Goliath Heron Ardea goliath পরিযায়ী
৩৩১ ধলাপেট বক White-bellied Heron Ardea insignis ?
৩৩২ লালচে বক Purple Heron Ardea purpurea
৩৩৩ বড় বগা Great Egret Casmerodius albus
৩৩৪ গো বগা Cattle Egret Bubulcus ibis
৩৩৫ চিনা কানিবক Chinese Pond Heron Ardeola bacchus ?
৩৩৬ দেশি কানিবক Indian Pond Heron Ardeola grayii
৩৩৭ খুদে বক Striated Heron Butorides striata
৩৩৮ কালামাথা নিশিবক Black-crowned Night Heron Nycticorax nycticorax
৩৩৯ মালয়ী নিশিবক Malayan Night Heron Gorsachius melanolophus
৩৪০ খয়রা বগলা Cinnamon Bittern Ixobrychus cinnamomeus
৩৪১ হলদে বগলা Yellow Bittern Ixobrychus sinensis
৩৪২ কালা বগলা Black Bittern Dupetor flavicollis
৩৪৩ বাঘা বগলা Eurasian Bittern Botaurus stellaris পরিযায়ী
কাস্তেচরা ও চামচঠুঁটি (ট্রেস্কিওর্নিটিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩৩, বাংলাদেশে ৪ প্রজাতি)
৩৪৪ খয়রা কাস্তেচরা Glossy Ibis Plegadis falcinellus পরিযায়ী
৩৪৫ কালামাথা কাস্তেচরা Black-headed Ibis Threskiornis melanocephalus পরিযায়ী
৩৪৬ কালা কাস্তেচরা Red-naped Ibis Pseudibis papillosa পরিযায়ী
৩৪৭ ইউরেশীয় চামচঠুঁটি Eurasian Spoonbill Platalea leucorodia পরিযায়ী
গগনবেড় (পেলিক্যানিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
৩৪৮ বড় ধলা MMb‡eo Great White Pelican Pelecanus onocrotalus পরিযায়ী
৩৪৯ চিতিঠুঁটি গগনবেড় Spot-billed Pelican Pelecanus philippensis পরিযায়ী
মানিকজোড় ও মদনটাক (সিকোনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৬, বাংলাদেশে ৮ প্রজাতি)
৩৫০ রাঙা মানিকজোড় Painted Stork Mycteria leucocephala পরিযায়ী
৩৫১ এশীয় শামখোল Asian Openbill Anastomus oscitans
৩৫২ ধলা মানিকজোড় White Stork Ciconia ciconia পরিযায়ী
৩৫৩ ধলাগলা মানিকজোড় Wooly-necked Stork Ciconia episcopus পরিযায়ী
৩৫৪ কালা মানিকজোড় Black Stork Ciconia nigra পরিযায়ী
৩৫৫ কালাগলা মানিকজোড় Black-necked Stork Ephippiorhychus asiaticus পরিযায়ী
৩৫৬ ছোট মদনটাক Lesser Adjutant Leptoptilos javanicus
৩৫৭ বড় মদনটাক Greater Adjutant Leptoptilos dubius পরিযায়ী
শুমচা (পিটিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩১, বাংলাদেশে ৫ প্রজাতি)
৩৫৮ দেশি শুমচা Indian Pitta Pitta brachyura পরিযায়ী
৩৫৯ নীল শুমচা Blue Pitta Pitta cyanea পরিযায়ী
৩৬০ প্যারা শুমচা Mangrove Pitta Pitta megarhyncha
৩৬১ নীলঘাড় শুমচা Blue-naped Pitta Pitta nipalensis
৩৬২ খয়রামাথা শুমচা Hooded Pitta Pitta sordida পরিযায়ী
মোটাঠুঁটি (ইউরিলাইমিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৪, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
৩৬৩ চাঁদিবুক মোটাঠুঁটি Silver-breasted Broadbill Serilophus lunatus
৩৬৪ ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটি Long-tailed Broadbill Psarisomus dalhousiae
নীলপরি ও হরবোলা (ইরেনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১০, বাংলাদেশে ৪ প্রজাতি)
৩৬৫ এশীয় নীলপরি Asian Fairy Bluebird Irena puella
৩৬৬ সোনাকপালি হরবোলা Golden-fronted Leafbird Chloropsis aurifrons
৩৬৭ নীলডানা হরবোলা Blue-winged Leafbird Chloropsis cochinchinensis
৩৬৮ কমলাপেট হরবোলা Orange-bellied Leafbird Chloropsis hardwickii
লাটোরা (লানিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৭, বাংলাদেশে ৬ প্রজাতি)
৩৬৯ বর্মি লাটোরা Burmese Shrike Lanius collurioides পরিযায়ী
৩৭০ খয়রা লাটোরা Brown Shrike Lanius cristatus পরিযায়ী
৩৭১ দক্ষিণে মেটেলাটোরা Southern Grey Shrike Lanius meridionalis পরিযায়ী
৩৭২ ল্যাঞ্জা লাটোরা Long-tailed Shrike Lanius schach
৩৭৩ মেটেপিঠ লাটোরা Grey-backed Shrike Lanius tephronotus পরিযায়ী
৩৭৪ তামাপিঠ লাটোরা Bay-backed Shrike Lanius vittatus পরিযায়ী
হাঁড়িচাচা, কাক, বেনেবৌ, সাহেলি, কাবাসি ও ফিঙে (কর্ভিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৬৫০, বাংলাদেশে ৩৬ প্রজাতি)
৩৭৫ নোনাবন শিস্ধসঢ়;মার Mangrove Whistler Pachycephala grisola
৩৭৬ লালঠোঁট নীলতাউরা Red-billed Blue Magpie Urocissa erythrorhyncha পরিযায়ী
৩৭৭ পাতি সবুজতাউরা Common Green Magpie Cissa chinensis
৩৭৮ মেটে হাঁড়িচাচা Grey Treepie Dendrocitta formosae
৩৭৯ খয়রা হাঁড়িচাচা Rufous Treepie Dendrocitta vagabunda
৩৮০ দাঁড় কাক Large-billed Crow Corvus macrorhynchos
৩৮১ পাতি কাক House Crow Corvus splendens
৩৮২ মেটে বনাবাবিল Ashy Woodswallow Artamus fuscus
৩৮৩ কালাঘাড় বেনেবউ Black-naped Oriole Oriolus chinensis পরিযায়ী
৩৮৪ ইউরেশীয় সোনাবউ Eurasian Golden Oriole Oriolus oriolus
৩৮৫ সরুঠোঁট বেনেবউ Slender-billed Oriole Oriolus tenuirostris পরিযায়ী
৩৮৬ তামারঙ বেনেবউ Maroon Oriole Oriolus traillii পরিযায়ী
৩৮৭ কালামাথা বেনেবউ Black-hooded Oriole Oriolus xanthornus
৩৮৮ বড় কাবাসি Large Cuckooshrike Coracina macei
৩৮৯ কালামাথা কাবাসি Black-headed Cuckooshrike Coracina melanoptera
৩৯০ কালাপাখ কাবাসি Black-winged Cuckooshrike Coracina melaschistos পরিযায়ী
৩৯১ সুইনহোর সাহেলি Swinhoe’s Minivet Pericrocotus cantonensis পরিযায়ী
৩৯২ ছোট সাহেলি Small Minivet Pericrocotus cinnamomeus
৩৯৩ মেটে সাহেলি Ashy Minivet Pericrocotus divaricatus পরিযায়ী?
৩৯৪ ল্যাঞ্জা সাহেলি Long-tailed Minivet Pericrocotus ethologus পরিযায়ী
৩৯৫ সিঁদুরে সাহেলি Scarlet Minivet Pericrocotus flammeus
৩৯৬ গোলাপি সাহেলি Rosy Minivet Pericrocotus roseus পরিযায়ী
৩৯৭ দাগিপাখ চুটকিলাটোরা Bar-winged Flycatcher-shrike Hemipus picatus
৩৯৮ ধলাগলা ছাতিঘুরুনি White-throated Fantail Rhipidura albicollis
৩৯৯ ব্রঞ্জ ফিঙে Bronzed Drongo Dicrurus aeneus
৪০০ কাকঠুঁটো ফিঙে Crow-billed Drongo Dicrurus annectans ?
৪০১ কেশরী ফিঙে Hair-crested Drongo Dicrurus hottentottus
৪০২ মেটে ফিঙে Ashy Drongo Dicrurus leucophaeus পরিযায়ী
৪০৩ কালা ফিঙে Black Drongo Dicrurus macrocercus
৪০৪ বড় র‌্যাকেটফিঙে GreaterRacket-tailed Drongo Dicrurus paradiseus
৪০৫ ছোট র‌্যাকেটফিঙে Lesser Racket-tailed Drongo Dicrurus remifer পরিযায়ী
৪০৬ কালাঘাড় রাজন Black-naped Monarch Hypothymis azurea
৪০৭ এশীয় শাবুলবুলি Asian Paradise-flycatcher Terpsiphone paradisi
৪০৮ পাতি ফটিকজল Common Iora Aegithina tiphia
৪০৯ বড় বনলাটোরা Large Woodshrike Tephrodornis gularis
৪১০ পাতি বনলাটোরা Common Woodshrike Tephrodornis pondicerianus
দামা, চুটকি, ফিদ্দা, গির্দি ও চেরালেজ (মাস্কিকাপিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৪৫২, বাংলাদেশে ৬২ প্রজাতি)
৪১১ নীল শিলাদামা Blue Rock Thrush Monticola solitarius পরিযায়ী
৪১২ নীল শিস্ধসঢ়;দামা Blue Whistling Thrush Myophonus caeruleus পরিযায়ী
৪১৩ কমলা দামা Orange-headed Thrush Zoothera citrina
৪১৪ আঁশটে দামা Scaly Thrush Zoothera dauma পরিযায়ী
৪১৫ কালাপাশ দামা Dark-sided Thrush Zoothera marginata পরিযায়ী
৪১৬ খয়রাপিঠ দামা Plain-backed Thrush Zoothera mollissima পরিযায়ী
৪১৭ লম্বাঠোঁট দামা Long-billed Thrush Zoothera monticola পরিযায়ী
৪১৮ ধলাঘাড় কালিদামা White-collared Blackbird Turdus albocinctus পরিযায়ী
৪১৯ ধলাপাখ কালিদামা Grey-winged Blackbird Turdus boulboul পরিযায়ী
৪২০ কালাবুক দামা Black-breasted Thrush Turdus dissimilis পরিযায়ী
৪২১ পাতি কালিদামা Common Blackbird Turdus merula পরিযায়ী
৪২২ কালচে দামা Naumann’s Thrush Turdus naumanni পরিযায়ী
৪২৩ ভ্রুলেখা দামা Eyebrowed Thrush Turdus obscurus পরিযায়ী
৪২৪ লালগলা দামা Red-throated Thrush Turdus ruficollis পরিযায়ী
৪২৫ টিকেলের দামা Tickell’s Thrush Turdus unicolor পরিযায়ী
৪২৬ খুদে খাটোডানা Lesser Shortwing Brachypteryx leucophrys পরিযায়ী
৪২৭ এশীয় খয়রাচুটকি Asian Brown Flycatcher Muscicapa dauurica পরিযায়ী
৪২৮ মেটেবুক চুটকি Brown-breasted Flycatcher Muscicapa muttui পরিযায়ী
৪২৯ কালাপাশ চুটকি Dark-sided Flycatcher Muscicapa sibirica পরিযায়ী
৪৩০ তাইগা চুটকি Taiga Flycatcher Ficedula albicilla পরিযায়ী
৪৩১ ধলাভ্রু চুটকি Snowy-browed Flycatcher Ficedula hyperythra পরিযায়ী
৪৩২ নীলকান্ত চুটকি Sapphire Flycatcher Ficedula sapphira পরিযায়ী
৪৩৩ লালমালা চুটকি Rufous-gorgeted Flycatcher Ficedula strophiata পরিযায়ী
৪৩৪ ঘননীল চুটকি Ultramarine Flycatcher Ficedula superciliaris পরিযায়ী
৪৩৫ কালচেনীল চুটকি Slaty-blue Flycatcher Ficedula tricolor পরিযায়ী
৪৩৬ ছোট পাকরাচুটকি Little Pied Flycatcher Ficedula westermanni পরিযায়ী
৪৩৭ অম্বর চুটকি Verditer Flycatcher Eumyias thalassina পরিযায়ী
৪৩৮ বড় নীলমণি Large Niltava Niltava grandis পরিযায়ী
৪৩৯ ছোট নীলমণি Small Niltava Niltava macgrigoriae পরিযায়ী
৪৪০ লালপেট নীলমণি Rufous-bellied Niltava Niltava sundara পরিযায়ী
৪৪১ ধলাগলা চুটকি Pale-chinned Blue Flycatcher Cyornis poliogenys
৪৪২ নীলগলা নীলচুটকি Blue-throated Blue Flycatcher Cyornis rubeculoides পরিযায়ী
৪৪৩ টিকেলের নীলচুটকি Tickell’s Blue Flycatcher Cyornis tickelliae পরিযায়ী?
৪৪৪ নীলচে চুটকি Pale Blue Flycatcher Cyornis unicolor পরিযায়ী?
৪৪৫ মেটেমাথা ক্যানারিচুটকি Grey-headed Canary-Flycatcher Culicicapa ceylonensis পরিযায়ী
৪৪৬ দেশি নীলরবিন Indian Blue Robin Luscinia brunnea পরিযায়ী?
৪৪৭ সাইবেরীয় চুনিকণ্ঠী Siberian Rubythroat Luscinia calliope পরিযায়ী
৪৪৮ লালগলা ফিদ্দা Firethroat Luscinia pectardens পরিযায়ী?
৪৪৯ ধলালেজ চুনিকণ্ঠী White-tailed Rubythroat Luscinia pectoralis পরিযায়ী
৪৫০ নীলগলা ফিদ্দা Bluethroat Luscinia svecica পরিযায়ী
৪৫১ কমলাপাশ বনরবিন Red-flanked Bluetail Tarsiger cyanurus পরিযায়ী?
৪৫২ লালবুক বনরবিন Rufous-breasted Bush Robin Tarsiger hyperythrus পরিযায়ী?
৪৫৩ ধলাভ্রু বনরবিন White-browed Bush Robin Tarsiger indicus পরিযায়ী?
৪৫৪ ধলাকোমর শামা White-rumped Shama Copsychus malabaricus
৪৫৫ উদয়ী দোয়েল Oriental Magpie Robin Copsychus saularis
৪৫৬ ডাউরিয়ান গির্দি Daurian Redstart Phoenicurus auroreus পরিযায়ী
৪৫৭ নীলকপালি গির্দি Blue-fronted Redstart Phoenicurus frontalis পরিযায়ী
৪৫৮ কালা গির্দি Black Redstart Phoenicurus ochruros পরিযায়ী
৪৫৯ ধলাটুপি পানগির্দি White-capped Redstart Chaimarrornis leucocephalus পরিযায়ী
৪৬০ নীল পানগির্দি Plumbeous Water Redstart Rhyacornis fuliginosa পরিযায়ী
৪৬১ ধলালেজ রবিন White-tailed Robin Myiomela leucura পরিযায়ী
৪৬২ কালাপিঠ চেরালেজ Black-backed Forktail Enicurus immaculatus
৪৬৩ ধলাচাঁদি চেরালেজ White-crowned Forktail Enicurus leschenaulti ?
৪৬৪ স্লেটপিঠ চেরালেজ Slaty-backed Forktail Enicurus schistaceus ?
৪৬৫ বেগুনি কোচোয়া Purple Cochoa Cochoa purpurea ?
৪৬৬ পাকরা ঝাড়ফিদ্দা Pied Bush Chat Saxicola caprata
৪৬৭ মেটে ঝাড়ফিদ্দা Grey Bush Chat Saxicola ferreus পরিযায়ী
৪৬৮ ধলাগলা ঝাড়ফিদ্দা White-throated Bush Chat Saxicola insignis পরিযায়ী?
৪৬৯ জার্ডনের ঝাড়ফিদ্দা Jerdon’s Bush Chat Saxicola jerdoni পরিযায়ী
৪৭০ ধলালেজ শিলাফিদ্দা White-tailed Stone Chat Saxicola leucurus পরিযায়ী
৪৭১ পাতি শিলাফিদ্দা Eurasian Stone Chat Saxicola torquatus পরিযায়ী
৪৭২ ঊষর কানকালি Desert Wheatear Oenanthe deserti পরিযায়ী
শালিক ও ময়না (স্টার্নিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৪৮, বাংলাদেশে ১২ প্রজাতি)
৪৭৩ এশীয় তেলশালিক Asian Glossy Starling Aplonis panayensis
৪৭৪ চিতিপাখ গোশালিক Spot-winged Starling Saroglossa spiloptera ?
৪৭৫ পাকরা শালিক Pied Myna Sturnus contra
৪৭৬ খয়রালেজ কাঠশালিক Chestnut-tailed Starling Sturnus malabaricus
৪৭৭ বামুনি কাঠশালিক Brahminy Starling Sturnus pagodarum
৪৭৮ গোলাপি কাঠশালিক Rosy Starling Sturnus roseus পরিযায়ী?
৪৭৯ পাতি কাঠশালিক Common Starling Sturnus vulgaris পরিযায়ী?
৪৮০ ধলাতলা শালিক Pale-bellied Myna Acridotheres cinereus
৪৮১ ঝুটি শালিক Jungle Myna Acridotheres fuscus
৪৮২ গাঙ শালিক Bank Myna Acridotheres ginginianus
৪৮৩ ভাত শালিক Common Myna Acridotheres tristis
৪৮৪ পাতি ময়না Common Hill Myna Gracula religiosa
বনমালী (সিট্টিডি পরিবার: পৃথিবীতে ২৫, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
৪৮৫ খয়রাপেট বনমালী Chestnut-bellied Nuthatch Sitta castanea
৪৮৬ কালাকপাল বনমালী Velvet-fronted Nuthatch Sitta frontalis
গাছআঁচড়া (সার্টিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯৭, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)
৪৮৭ দাগিলেজ গাছআঁচড়া Bar-tailed Treecreeper Certhia himalayana ?
তিত (পারিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৬৫, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি)
৪৮৮ বড় তিত Great Tit Parus major
৪৮৯ সবুজপিঠ তিত Green-backed Tit Parus monticolus ?
নাকুটি ও আবাবিল (হিরন্ডিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৮৯, বাংলাদেশে ১০ প্রজাতি)
৪৯০ ম্লান নাকুটি Pale Martin Riparia diluta ?
৪৯১ খয়রাগলা নাকুটি Brown-throated Martin Riparia paludicola
৪৯২ বালি নাকুটি Sand Martin Riparia riparia পরিযায়ী
৪৯৩ লালকোমর আবাবিল Red-rumped Swallow Hirundo daurica পরিযায়ী
৪৯৪ দাগিগলা আবাবিল Streak-throated Swallow Hirundo fluvicola পরিযায়ী
৪৯৫ পাতি আবাবিল Barn Swallow Hirundo rustica পরিযায়ী
৪৯৬ তারলেজা আবাবিল Wire-tailed Swallow Hirundo smithii পরিযায়ী
৪৯৭ দাগি আবাবিল Striated Swallow Hirundo striolata পরিযায়ী
৪৯৮ এশীয় ঘরনাকুটি Asian House Martin Delichon dasypus পরিযায়ী?
৪৯৯ নেপালি ঘরনাকুটি Nepal House Martin Delichon nipalensis পরিযায়ী
বুলবুল (পিকনোনিটিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৩৮, বাংলাদেশে ১০ প্রজাতি)
৫০০ কালামাথা বুলবুল Black-headed Bulbul Pycnonotus atriceps
৫০১ বাংলা বুলবুল Red-vented Bulbul Pycnonotus cafer
৫০২ মেটে বুলবুল Flavescent Bulbul Pycnonotus flavescens ?
৫০৩ সিপাহি বুলবুল Red-whiskered Bulbul Pycnonotus jocosus
৫০৪ কালাঝুটি বুলবুল Black-crested Bulbul Pycnonotus melanicterus
৫০৫ ধলাগলা বুলবুল White-throated Bulbul Alophoixus flaveolus
৫০৬ জলপাই বুলবুল Olive Bulbul Iole virescens
৫০৭ কালচে বুলবুল Ashy Bulbul Hemixos flavala
৫০৮ কালা বুলবুল Black Bulbul Hypsipetes leucocephalus ?
প্রিনা ও সিস্টিকোলা (সিস্টিকোলিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১২০, বাংলাদেশে ৯ প্রজাতি)
৫০৯ ধলামাথা ছোটন Golden-headed Cisticola Cisticola exilis
৫১০ ভোমরা ছোটন Zitting Cisticola Cisticola juncidis
৫১১ লালতলা প্রিনা Rufous-vented Prinia Prinia burnesii
৫১২ হলদেপেট প্রিনা Yellow-bellied Prinia Prinia flaviventris
৫১৩ সুন্দরী প্রিনা Graceful Prinia Prinia gracilis
৫১৪ মেটেবুক প্রিনা Grey-breasted Prinia Prinia hodgsonii
৫১৫ নিরল প্রিনা Plain Prinia Prinia inornata
৫১৬ লালচে প্রিনা Rufescent Prinia Prinia rufescens
৫১৭ কালচে প্রিনা Ashy Prinia Prinia socialis
ধলাচোখ (জোস্টেরোপিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯৫, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি)
৫১৮ উদয়ী ধলাচোখ Oriental White-eye Zosterops palpebrosus
টেসিয়া, ভোঁতালেজ ও ফুটকি (সিলভিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৫৬০, বাংলাদেশে ৭৬ প্রজাতি)
৫১৯ খয়রামাথা টেসিয়া Chestnut-headed Tesia Tesia castaneocoronata পরিযায়ী
৫২০ মেটেপেট টেসিয়া Grey-bellied Tesia Tesia cyaniventer পরিযায়ী
৫২১ স্লেটপেট টেসিয়া Slaty-bellied Tesia Tesia oliva পরিযায়ী
৫২২ এশীয় ভোঁতালেজ Asian Stubtail Urosphena squameiceps পরিযায়ী
৫২৩ খয়রাডানা বনফুটকি Brownish-flanked Bush Warbler Cettia fortipes পরিযায়ী
৫২৪ খয়রা ঝাড়ফুটকি Brown Bush Warbler Bradypterus luteoventris পরিযায়ী
৫২৫ তিলা ঝাড়ফুটকি Spotted Bush Warbler Bradypterus thoracicus পরিযায়ী
৫২৬ পালাসি ফড়িংফুটকি Pallas’s Grasshopper Warbler Locustella certhiola পরিযায়ী
৫২৭ পাতারি ফুটকি Lanceolated Warbler Locustella lanceolata পরিযায়ী
৫২৮ পাতি ফড়িংফুটকি Common Grasshopper Warbler Locustella naevia পরিযায়ী
৫২৯ মোটাঠোঁট ফুটকি Thick-billed Warbler Acrocephalus aedon পরিযায়ী
৫৩০ ধানি ফুটকি Paddyfield Warbler Acrocephalus agricola পরিযায়ী
৫৩১ কালাভ্রু নলফুটকি Black-browed Reed Warbler Acrocephalus bistrigiceps পরিযায়ী
৫৩২ ভোঁতাডানা ফুটকি Blunt-winged Warbler Acrocephalus concinens পরিযায়ী
৫৩৩ ব্লাইদের নলফুটকি Blyth’s Reed Warbler Acrocephalus dumetorum পরিযায়ী
৫৩৪ বাচাল নলফুটকি Clamorous Reed Warbler Acrocephalus stentoreus পরিযায়ী
৫৩৫ বুটপা ফুটকি Booted Warbler Hippolais caligata পরিযায়ী
৫৩৬ কালাগলা টুনটুনি Dark-necked Tailorbird Orthotomus atrogularis
৫৩৭ পাহাড়ি টুনটুনি Mountain Tailorbird Orthotomus cuculatus
৫৩৮ পাতি টুনটুনি Common Tailorbird Orthotomus sutorius
৫৩৯ টিকেলের পাতাফুটকি Tickell’s Leaf Warbler Phylloscopus affinis
৫৪০ হলদেতলা ফুটকি Yellow-vented Warbler Phylloscopus cantator পরিযায়ী
৫৪১ লেবুকোমর ফুটকি Lemon-rumped Warbler Phylloscopus chloronotus পরিযায়ী
৫৪২ পাতি চিফচ্যাফ Common Chiffchaff Phylloscopus collybita পরিযায়ী
৫৪৩ মেটে ফুটকি Smoky Warbler Phylloscopus fuligiventer পরিযায়ী
৫৪৪ কালচে ফুটকি Dusky Warbler Phylloscopus fuscatus পরিযায়ী
৫৪৫ হলদেভ্রু ফুটকি Yellow-browed Warbler Phylloscopus inornatus পরিযায়ী
৫৪৬ বড়ঠোঁট ফুটকি Large-billed Leaf Warbler Phylloscopus magnirostris পরিযায়ী
৫৪৭ পশ্চিমা মাথাফুটকি Western Crowned Warbler Phylloscopus occipitalis পরিযায়ী
৫৪৮ ব্লাইদের পাতাফুটকি Blyth’s Leaf Warbler Phylloscopus reguloides পরিযায়ী
৫৪৯ রাডির ফুটকি Radde’s Warbler Phylloscopus schwarzi পরিযায়ী
৫৫০ সবজে ফুটকি Greenish Warbler Phylloscopus trochiloides পরিযায়ী
৫৫১ ধলাচোখ ফুটকি White-spectacled Warbler Seicercus affinis পরিযায়ী
৫৫২ সবুজচাঁদি ফুটকি Green-crowned Warbler Seicercus burkii পরিযায়ী
৫৫৩ লালচাঁদি ফুটকি Chestnut-crowned Warbler Seicercus castaniceps পরিযায়ী
৫৫৪ মেটেচাঁদি ফুটকি Grey-crowned Warbler Seicercus tephrocephalus পরিযায়ী
৫৫৫ হুইস্ধসঢ়;লারের ফুটকি Whistler’s Warbler Seicercus whistleri পরিযায়ী
৫৫৬ মেটেমুখোশ ফুটকি Grey-hooded Warbler Seicercus xanthoschistos পরিযায়ী
৫৫৭ হলদেপেট ফুটকি Yellow-bellied Warbler Abroscopus superciliaris
৫৫৮ দাগি ঘাসপাখি Striated Grassbird Megalurus palustris
৫৫৯ শতদাগি ঘাসপাখি Bristled Grassbird Chaetornis striatus
৫৬০ বাংলা ঘাসপাখি Rufous-rumped Grassbird Graminicola bengalensis
৫৬১ হলদেগলা পেঙ্গা Yellow-throated Laughingthrush Garrulax galbanus
৫৬২ ধলাঝুটি পেঙ্গা White-crested Laughingthrush Garrulax leucolophus
৫৬৩ ছোট মালাপেঙ্গা Lesser Necklaced Laughingthrush Garrulax monileger
৫৬৪ বড় মালাপেঙ্গা Greater Necklaced Laughingthrush Garrulax pectoralis
৫৬৫ লালঘাড় পেঙ্গা Rufous-necked Laughingthrush Garrulax ruficollis
৫৬৬ অ্যাবটের ছাতারে Abbott’s Babbler Malacocincla abbotti
৫৬৭ দাগিগলা ছাতারে Spot-throated Babbler Pellorneum albiventre
৫৬৮ বাদা ছাতারে Marsh Babbler Pellorneum palustre
৫৬৯ গলাফোলা ছাতারে Puff-throated Babbler Pellorneum ruficeps
৫৭০ খয়রাবুক ছাতারে Buff-breasted Babbler Pellorneum tickelli
৫৭১ তিলাবুক কাস্তেছাতারে Spot-breasted Scimitar Babbler Pomatorhinus erythrocnemis
৫৭২ বড় কাস্তেছাতারে Large Scimitar Babbler Pomatorhinus hypoleucos
৫৭৩ লালঠোঁট কাস্তেছাতারে Red-billed Scimitar Babbler Pomatorhinus ochraciceps
৫৭৪ ধলাভ্রু কাস্তেছাতারে White-browed Scimitar Babbler Pomatorhinus schisticeps
৫৭৫ মেটেগলা ছাতারে Grey-throated Babbler Stachyris nigriceps
৫৭৬ লালকপাল ছাতারে Rufous-fronted Babbler Stachyris rufifrons
৫৭৭ দাগি তিতছাতারে Striped Tit-Babbler Macronous gularis
৫৭৮ লালটুপি ছাতারে Chestnut-capped Babbler Timalia pileata
৫৭৯ হলদেচোখ ছাতারে Yellow-eyed Babbler Chrysomma sinense
৫৮০ দাগি ছাতারে Striated Babbler Turdoides earlei
৫৮১ বন ছাতারে Jungle Babbler Turdoides striatus
৫৮২ ধলামুখোশ ছাতারে White-hooded Babbler Gampsorhynchus rufulus
৫৮৩ লালমুখ দাগিডানা Rusty-fronted Barwing Actinodura egertoni
৫৮৪ নেপালি ফালভেটা Nepal Fulvetta Alcippe nipalensis
৫৮৫ খয়রাগাল ফালভেটা Brown-cheeked Fulvetta Alcippe poioicephala
৫৮৬ ল্যাঞ্জা সিবিয়া Long-tailed Sibia Heterophasia picaoides ?
৫৮৭ দাগি উহিনা Striated Yuhina Yuhina castaniceps
৫৮৮ কালাগাল উহিনা Black-chinned Yuhina Yuhina nigrimenta
৫৮৯ ধলাপেট উহিনা White-bellied Yuhina Erpornis zantholeuca
৫৯০ কালাবুক টিয়াঠুঁটি Black-breasted Parrotbill Paradoxornis flavirostris
৫৯১ তিলাবুক টিয়াঠুঁটি Spot-breasted Parrotbill Paradoxornis guttaticollis
৫৯২ বড় লালমাথা wUqvVuzwU Greater Rufous-headed Parrotbill Paradoxornis ruficeps ?
৫৯৩ ছোট ধলাগলা Lesser Whitethroat Sylvia curruca পরিযায়ী
৫৯৪ ওর্ফিয়ান ফুটকি Orphean Warbler Sylvia hortensis পরিযায়ী
ভরত (আলাউডিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯১, বাংলাদেশে ৭ প্রজাতি)
৫৯৫ বাংলা ঝাড়ভরত Bengal Bush Lark Mirafra assamica
৫৯৬ সুরেলা ঝাড়ভরত Singing Bush Lark Mirafra cantillans
৫৯৭ মেটেচাঁদি চড়–ইভরত Ashy-crowned Sparrow-Lark Eremopterix grisea
৫৯৮ হিউমের ভোঁতাভরত Hume's Short-toed Lark Calandrella acutirostris পরিযায়ী
৫৯৯ বড় ভোঁতাভরত Greater Short-toed Lark Calandrella brachydactyla পরিযায়ী
৬০০ বালি ভরত Sand Lark Calandrella raytal
৬০১ উদয়ী অভ্রভরত Oriental Skylark Alauda gulgula
ফুলঝুরি, মৌটুসি ও মাকড়মার ( নেকটারিনিডি পরিবার: পৃথিবীতে ১৭৮, বাংলাদেশে ১৯ প্রজাতি)
৬০২ ঠোঁটমোটা ফুলঝুরি Thick-billed Flowerpecker Dicaeum agile
৬০৩ হলদেতলা ফুলঝুরি Yellow-vented Flowerpecker Dicaeum chrysorrheum
৬০৪ নিরল ফুলঝুরি Plain Flowerpecker Dicaeum concolor
৬০৫ লালপিঠ ফুলঝুরি Scarlet-backed Flowerpecker Dicaeum cruentatum
৬০৬ মেটেঠোঁট ফুলঝুরি Pale-billed Flowerpecker Dicaeum erythrorynchos
৬০৭ লালবুক ফুলঝুরি Fire-breasted Flowerpecker Dicaeum ignipectus ?
৬০৮ হলদেপেট ফুলঝুরি Yellow-bellied Flowerpecker Dicaeum melanoxanthum ?
৬০৯ কমলাপেট ফুলঝুরি Orange-bellied Flowerpecker Dicaeum trigonostigma
৬১০ চুনিমুখি মৌটুসি Ruby-cheeked Sunbird Anthreptes singalensis
৬১১ বেগুনিগলা মৌটুসি Purple-throated Sunbird Leptocoma sperata
৬১২ বেগুনিকোমর মৌটুসি Purple-rumped Sunbird Leptocoma zeylonica
৬১৩ বেগুনি মৌটুসি Purple Sunbird Cinnyris asiaticus
৬১৪ জলপাইপিঠ মৌটুসি Olive-backed Sunbird Cinnyris jugularis ?
৬১৫ বেগম-গোল্ডের মৌটুসি Mrs Gould’s Sunbird Aethopyga gouldiae ?
৬১৬ লাললেজ মৌটুসি Fire-tailed Sunbird Aethopyga ignicauda
৬১৭ সবুজলেজ মৌটুসি Green-tailed Sunbird Aethopyga nipalensis ?
৬১৮ সিঁদুরে মৌটুসি Crimson Sunbird Aethopyga siparaja
৬১৯ ছোট মাকড়মার Little Spiderhunter Arachnothera longirostra
৬২০ দাগি মাকড়মার Streaked Spiderhunter Arachnothera magna
চড়–ই, খঞ্জন ও তুলিকা (প্যাসারিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৩৮৮, বাংলাদেশে ২৫ প্রজাতি)
৬২১ পাতি চড়–ই House Sparrow Passer domesticus
৬২২ ইউরেশীয় গাছচড়–ই Eurasian Tree Sparrow Passer motanus
৬২৩ বন খঞ্জন Forest Wagtail Dendronanthus indicus পরিযায়ী
৬২৪ ধলা খঞ্জন White Wagtail Motacilla alba পরিযায়ী
৬২৫ মেটে খঞ্জন Grey Wagtail Motacilla cinerea পরিযায়ী
৬২৬ সিট্রিন খঞ্জন Citrine Wagtail Motacilla citreola পরিযায়ী
৬২৭ পশ্চিমা হলদেখঞ্জন Western Yellow Wagtail Motacilla flava পরিযায়ী
৬২৮ ধলাভ্রু খঞ্জন White-browed Wagtail Motacilla madaraspatensis
৬২৯ তামাটে তুলিকা Tawny Pipit Anthus campestres পরিযায়ী?
৬৩০ লালগলা তুলিকা Red-throated Pipit Anthus cervinus পরিযায়ী
৬৩১ ব্লাইদের তুলিকা Blyth’s Pipit Anthus godlewskii পরিযায়ী
৬৩২ জলপাইপিঠ তুলিকা Olive-backed Pipit Anthus hodgsoni পরিযায়ী
৬৩৩ রিচার্ডের তুলিকা Richard’s Pipit Anthus richardi পরিযায়ী
৬৩৪ গোলাপি তুলিকা Rosy Pipit Anthus roseatus পরিযায়ী
৬৩৫ ধানি তুলিকা Paddyfield Pipit Anthus rufulus
৬৩৬ লম্বাঠোঁট তুলিকা Long-billed Pipit Anthus similis পরিযায়ী
৬৩৭ গেছো তুলিকা Tree Pipit Anthus trivialis পরিযায়ী
৬৩৮ বাংলা বাবুই Black-breasted Weaver Ploceus benghalensis
৬৩৯ দাগি বাবুই Streaked Weaver Ploceus manyar
৬৪০ দেশি বাবুই Baya Weaver Ploceus philippinus
৬৪১ লাল মামুনিয়া Red Avadavat Amandava amandava
৬৪২ দেশি চাঁদিঠোঁট Indian Silverbill Lonchura malabarica
৬৪৩ কালামাথা মুনিয়া Black-headed Munia Lonchura malacca
৬৪৪ তিলা মুনিয়া Scaly-breasted Munia Lonchura punctulata
৬৪৫ ধলাকোমর মুনিয়া White-rumped Munia Lonchura striata
তুতি ও চটক ( ফ্রিংগিলিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৯৯৫, বাংলাদেশে ৫ প্রজাতি)
৬৪৬ পাতি তুতি Common Rosefinch Carpodacus erythrinus পরিযায়ী
৬৪৭ হলদেবুক চটক Yellow-breasted Bunting Emberiza aureola পরিযায়ী
৬৪৮ লালকান চটক Chestnut-eared Bunting Emberiza fucata পরিযায়ী
৬৪৯ খুদে চটক Little Bunting Emberiza pusilla পরিযায়ী
৬৫০ কালামুখ চটক Black-faced Bunting Emberiza spodocephala পরিযায়ী

তারেক অণু এর ছবি

হাততালি হাততালি অনেক অনেক ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

আরো কিছু হয়েছে।
*******************
চ্যাগা, জৌরালি, গুলিন্দা, বাটান ও চাপাখি (স্কোলোপাসিডি পরিবার: পৃথিবীতে ৮৮, বাংলাদেশে ৩৫ প্রজাতি)
১৮৭ ইউরেশীয় মুরগিচ্যাগা Eurasian Woodcock Scolopax rusticola পরিযায়ী
১৮৮ পাতি চ্যাগা Common Snipe Gallinago gallinago পরিযায়ী
১৮৯ সুইনহোর চ্যাগা Swinhoe’s Snipe Gallinago megala পরিযায়ী
১৯০ বন চ্যাগা Wood Snipe Gallinago nemoricola পরিযায়ী
১৯১ ল্যাঞ্জা চ্যাগা Pin-tailed Snipe Gallinago stenura পরিযায়ী
১৯২ জ্যাক চ্যাগা Jack Snipe Lymnocryptes minimus পরিযায়ী
১৯৩ দাগিলেজ জৌরালি Bar-tailed Godwit Limosa lapponica পরিযায়ী
১৯৪ কালালেজ জৌরালি Black-tailed Godwit Limosa limosa পরিযায়ী
১৯৫ ইউরেশীয় গুলিন্দা Eurasian Curlew Numenius arquata পরিযায়ী
১৯৬ পুবের গুলিন্দা Eastern Curlew Numenius madagascariensis পরিযায়ী
১৯৭ নাটা গুলিন্দা Whimbrel Numenius phaeopus পরিযায়ী
১৯৮ মেটেলেজ ট্যাটলার Grey-tailed Tattler Heteroscelus brevipes পরিযায়ী
১৯৯ তিলা লালপা Spotted Redshank Tringa erythropus পরিযায়ী
২০০ বন বাটান Wood Sandpiper Tringa glareola পরিযায়ী
২০১ নর্ডম্যান সবুজপা Nordmann’s Greenshank Tringa guttifer পরিযায়ী
২০২ পাতি সবুজপা Common Greenshank Tringa nebularia পরিযায়ী
২০৩ সবুজ বাটান Green Sandpiper Tringa ochropus পরিযায়ী
২০৪ বিল বাটান Marsh Sandpiper Tringa stagnatilis পরিযায়ী
২০৫ পাতি লালপা Common Redshank Tringa totanus পরিযায়ী
২০৬ টেরেক বাটান Terek Sandpiper Xenus cinereus পরিযায়ী
২০৭ পাতি বাটান Common Sandpiper Actitis hypoleucos পরিযায়ী
২০৮ লাল নুড়িবাটান Ruddy Turnstone Arenaria interpres পরিযায়ী
২০৯ এশীয় ডউইচার Asian Dowitcher Limnodromus semipalmatus পরিযায়ী
২১০ স্যান্ডার্লিং Sanderling Calidris alba পরিযায়ী
২১১ ডানলিন Dunlin Calidris alpina পরিযায়ী
২১২ লাল নট Red Knot Calidris canutus পরিযায়ী
২১৩ গুলিন্দা বাটান Curlew Sandpiper Calidris ferruginea পরিযায়ী
২১৪ ছোট চাপাখি Little Stint Calidris minuta পরিযায়ী
২১৫ লালঘাড় চাপাখি Red-necked Stint Calidris ruficollis পরিযায়ী
২১৬ লম্বাঙ্গুল চাপাখি Long-toed Stint Calidris subminuta পরিযায়ী
২১৭ টেমিঙ্কের চাপাখি Temminck’s Stint Calidris temminckii পরিযায়ী
২১৮ বড় নট Great Knot Calidris tenuirostris পরিযায়ী
২১৯ চামচঠুঁটো বাটান Spoon-billed Sandpiper Eurynorhynchus pygmeus পরিযায়ী
২২০ মোটাঠুঁটো বাটান Broad-billed Sandpiper Limicola falcinellus পরিযায়ী
২২১ গেওয়ালা বাটান Ruff Philomachus pugnax পরিযায়ী
*******************
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি

ওকে! আপাতত এই তালিকা সম্পূর্ণ, কিন্তু অন্যগুলো বাদে তথ্য বাকী

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ! রাব্বানী-ভাইকে অনেক ধন্যবাদ। আমি তা হলে এখন পরের অংশ ধরছি।
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি
নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমি অনেকগুলো নাম হিবিজিবি দেখতে পাচ্ছি। ফন্ট ঝামেলায় মনে হয়। এগুলো ঠিক করা গেলে ভালো হতো।

টুনটুনিকে tailorbird বলে নাকি? আমি ক্লাস ওয়ান পড়ুয়া কন্যার কাছ থেকে শিখলাম কালকে। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তারেক অণু এর ছবি

টুনটুনির বাসা দেখলেই বুঝবেন কেন! দেঁতো হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যাই আলসেমি করে আসি একটু... চোখ টিপি
অসাধারণ উদ্যোগ... চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

পরবর্ত্তী সারাই কাজ। এই অংশগুলিতে বেশীর ভাগ যায়গা ঠিক আছে। শুধু মাঝে মাঝে ইংরেজী শব্দগুলি ঘেঁটে আছে। একটু খুঁটিয়ে পড়া দরকার!
******************************************
০০২. Francolinus gularis (Temminck, 1815)
সমনাম: Perdix gularis Temminck, 1815
বাংলা নাম: বাদা তিতির, জলার তিতির (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম: Swamp Francolin

বর্ণনা: বাদা তিতির হৃষ্টপুষ্ট বাদামি জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৭ সেমি, ওজন ৫০০ গ্রাম, ডানা ১৭.৫ সেমি, ঠোঁট ২.২ সেমি, পা ৬.৫ সেমি, লেজ ১১.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড় বাদামি; হালকা পীত বর্ণের পিঠে বাদামি ডোরা ও লালচে-বাদামি পট্টি থাকে; হালকা পীত রঙের ভ্রু-রেখা ও গালের ডোরার মধ্যে থাকে মলিন বাদামি চক্ষু-রেখা; লেজটা তামাটে, লেজের প্রান্তÍ ফিকে; গলা ও ঘাড়ের উপরের অংশ কমলা এবং দেহতলের শেষাংশ প্রশস্ত সাদা ডোরাসহ বাদামি; চোখ গাঢ় লাল অথবা বাদামি ও চোখের পাতা হালকা খয়েরি-সবুজ; সাদা আগাসহ পাটকিলে ঠোঁট; পা ও পায়ের পাতা কমলা-হলুদ কিংবা অনুজ্জ্বল লাল। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন, তবে শুধু পুরুষপাখির পায়ে গজালের মত খাড়া নখর আছে।

স্বভাব: বাদা তিতির সাধারণত লম্বা ঘাস, নল অথবা জলাশয় ও নদীর কিনারার ঝোপ এবং পার্শ্ববর্তী শস্যখেতে বিচরণ করে; জোড়ায় কিংবা ৫-১৫টির অগোছালো দলে দেখা যায়। এরা প্রধানত ঊষা ও গোধূলিতে জলজ তৃণভূমি ও প্লাবনভূমিতে আস্তে আস্তে ঘুরে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, শস্যদানা ও অন্যান্য শস্য; তা ছাড়া পোকামাকড়ও খেয়ে থাকে। এর মাজে মধ্যে কর্কশ গলার ডাকে: চুক্রিরু, চুকিরু, চুকিরু; ভয় পেলে ডাকে: কিউ-কেয়ার..; এবং তীক্ষ্ম কণ্ঠে ‘গান’ গায়: চুলি-চুলি-চুলি ...। ফেব্রুয়ারি-মে মাসের প্রজনন মৌসুমে এরা সচরাচর নলতলে কিংবা বনে বা জলাশয়ের ধারে গাছের নিচে ঘন ঝোপঝাড়ের মধ্যে নরম লতাপাতার স্তুপ করে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো উজ্জ্বল ফিকে ও হালকা পীত বর্ণের; মাঝে মাঝে লালচে ফুসকুড়ির মত দাগ থাকে; সংখ্যায় ৪-৬টি; মাপ ৩.৯ - ৩.০ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়।

বিস্তৃতি: বাদা তিতির বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; এক সময় ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমি ও নলবনে পাওয়া যেত, এখন নেই। ভারত ও নেপালসহ কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: বাদা তিতির বিশ্বে সংকটাপন্ন ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

বিবিধ: বাদা তিতিরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ গলা-অলা খুদে-মুরগি (ইটালিয়ান: francolin = খুদে মুরগি; ল্যাটিন: gularis = গলার ) ।
[সাজেদা বেগম]

০০৩. Francolinus pondicerianus (Gmelin, 1789)
সমনাম: Grey pondicerianus Gmelin, 1789
বাংলা নাম: মেটে তিতির
ইংরেজি নাম: Grey Francolin

বর্ণনা: মেটে তিতির ভোঁতা লেজের ধূসর ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি, ওজন ২৭৫ গ্রাম, ডানা ১৪.৬ সেমি, ঠোঁট ২.৫ সেমি, পা ৪ সেমি, লেজ ৮.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠে রয়েছে হালকা পীত, তামাটে, ধূসর-বাদামি ও বাদামি ডোরা; অনুজ্জ্বল কমলা মুখে স্পষ্ট কালো চক্ষু-রেখা; পিঙ্গল-বাদামি চোখ; সরু কালো মালাসহ হালকা পীতাভ গলা; এবং দেহতলে কালচে-বাদামি সরু ডোরা। এর রূপালি ঠোঁটের নিচের পাটি অপেক্ষাকৃত কালচে এবং পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল লাল; ওড়ার সময় হালকা পীত অবসারণী ও লেজের প্রান্ত-পালকের তামাটে কিনারা চোখে পড়ে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে F. p. interpositus বাংলাদেশে পাওয়া যেত।

স্বভাব: মেটে তিতির সাধারণত শুকনো তৃণভূমি, ক্ষুদ্র ঝোপ, কৃষিখামার ও বালিয়াড়িতে বিচরণ করে; সচরাচর জোড়ায় কিংবা ৪-৮টি পাখির পারিবারিক দলে থাকে। এরা ঠোঁট ও পা দিয়ে মাটি আঁচড়ে ভূমিতে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, আগাছার বীজ, শস্যদানা, ঘাসের ডগা ও রসালো ফল। ডানার প্লত ঝাপটে কিছুক্ষণ জোরে ওড়ার পর এরা কিছু সময় বাতাসে ভেসে থাকে, তারপর আবার ডানা চালায়। রাতে ছোট কাঁটাগাছ অথবা ঘন ঝোপের নিচে থাকে; ভয় পেলে কাঁটা গাছের ওপর দিয়ে ওড়ে চলে যায়। এরা মাঝে মাঝে ডাকে: খাতিজা-খাতিজা-খাতিজা...; এবং ভয় পেলে ঘর্ষণের শব্দ করে ডাকে: র্ক্ষির-র্ক্ষির। মার্চ-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন মৌসুমে এরা কাঁটাঘেরা ঝোপ অথবা পাথরের ফাঁকে ঘাস ও পাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফিকে-হালকা পীত বর্ণের; সংখ্যায় ৪-৯টি; মাপ ৩.২ ী ২.৬ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়।

বিস্তৃতি: মেটে তিতির বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; এক কালে ঢাকা বিভাগের তৃণভূমিতে দেখা যেত, এখন নেই। বাংলাদেশের একমাত্র ‘নমুনা’ ১৯শতকে পশ্চিমাঞ্চলের শুকনো এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও ইরানসহ দক্ষিণ এবং নিকট পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: মেটে তিতির বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

বিবিধ: মেটে তিতিরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ পন্ডিচেরির খুদে-মুরগি (ইতালিয়ান: francolino = খুদে মুরগি; pondicerianus = পন্ডিচেরি, দক্ষিণ-পশ্চিম চেন্নাই, ভারত)।
[ইনাম আল হক ও এম শাহরিয়ার মাহমুদ]

গণ: Coturnix Bonnaterre, 1791

তিতিরের মত ছোট পাখি; পরিযায়ী প্রজাতির লম্বা ও সুচালো ডানা এবং অপরিযায়ী প্রজাতির ছোট ও গোলাকার ডানা থাকে; খাটো লেজে ৮-১২টি কোমল পালক; ঠোঁট ছোট ও সরু; বলিষ্ঠ ও খাড়া-নখরহীন পা; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির রঙে সামান্য তারতম্য থাকে।
পৃথিবীতে ৯ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি
******************************************
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি
রানা মেহের এর ছবি

বাপরে!
ব্যাপক কাজ তো!
ইয়ে মানে বগলা নামটা একটু কেমন কেমন না?

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তারেক অণু এর ছবি

ক্যান! উত্তম কুমারের এক সিনেমায় তার ছোট ভাইয়ের নাম ছিল বগলা! শুনে অবশ্য সিনেমার মাঝেই কে যেন বলেছিল- নাম শুনেই কেমন বগল বগল গন্ধ করছে !‍ খ্যা খ্যা খ্যা

মূল বিষয় হচ্ছে নাম হতে হবে সহজ, সবাই যেন মনে রাখতে পারে এবং উচ্চারণ করতে পারে, সেই সাথে নাম শুনেই যেন পাখিটার জনা বোঝা যায়, বগলা মানেই বক ধরনের, কিন্তু সেটা বলাকা দিলে কি বক মনে হত?

তবে অপশন সবসময়ই খোলা ! বেটার নাম পেলে পাঠিয়ে দেন, নাম কিন্তু সবসময়ই সব ভাষাতেই পরিবর্তন করা হচ্ছে, ইংরেজিতেও।

অতিথি লেখক এর ছবি

আরো দুটি সারাই-কৃত:
*******************************
০০৪. Coturnix chinensis (Linnaeus, 1766)
সমনাম: Exalfactoria chinensis Linnaeus, 1766

বাংলা নাম: রাজ বটেরা

ইংরেজি নাম: King Quail (Blue-breasted Quail)

বর্ণনা: রাজ বটেরা স্লেট-নীল রঙের ছোট ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১৪ সেমি, ওজন ৫০ গ্রাম, ডানা ৭ সেমি, ঠোঁট ১ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ২.৫ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষপাখির স্লেট-নীল কপাল; মাথায় সাদা কালো নক্সা; পিঠে বাদামি ছিটা-দাগ অথবা পীত, লালচে-বাদামি ও কালো ডোরা; ভ্রু-রেখা ও মাথার দু পাশ স্লেট-নীল; গলায় সাদা ও কালো মোটা দাগ; বুক ও বগল স্লেট-নীল; পেট ও লেজতল-ঢাকনি লালচে-তামাটে। স্ত্রীপাখির কপাল লালচে; ঘাড়ের নিচের অংশ, কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা-ঢাকনিতে ছিটা-দাগ; বুক ও বগলে কালো ডোরা থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষপাখি অনুজ্জ্বল রঙের; মাথা ও ঘাড়ের পাশে কালো ডোরা থাকে; এবং তলপেটে তামাটে রঙ নেই। ১০টি উপ-প্রজাতির মধ্যে C. c. chinensis বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: রাজ বটেরা সাধারণত আর্দ্র তৃণভূমি, শস্যখেত, রাস্তার পাশে ও ঝোপ-ঝাড়ে বিচরণ করে; সচরাচর জোড়ায় কিংবা ছোট পারিবারিক দলে থাকে। আবাদি জমি, জলমগ্ন তৃণভূমি ও চা বাগানে ধীরে ধীরে ঘুরে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাস-বীজ, শস্যদানা ও পোকা। এরা মাঝে মাঝে বাঁশির সুরে ডাকে : টি-ইউ অথবা কুঈ-কী-কিউ...; ভয় পেলে কোমল কণ্ঠে ডাকে: টির-টির-টির...। জুন-আগস্ট মাসের প্রজনন মৌসুমে এরা ঘন লতাপাতায় ঘেরা ঘাসঝোপের মধ্যে মাটির গর্তে ঘাস ও পাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফিকে-ধূসর কিংবা ফিকে জলপাই-হলদে, সংখ্যায় ৫-৭টি, ছোট প্রান্ত- সুচালো; মাপ ২.৪ - ১.৯ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়।

বিস্তৃতি: রাজ বটেরা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। ঢাকা ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমিতে দেখা পাওয়ার কেবল দুটি তথ্য রয়েছে। পৃথিবীতে এর বিস্তৃতি অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া মহাদেশে। এশিয়ার মধ্যে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, চিন, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে পাওয়া যায়।

অবস্থা: রাজ বটেরা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: রাজ বটেরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চিনা বটেরা (ল্যাটিন: Coturnix = বটেরা; chinensis = চিনের )।
[সাজেদা বেগম]

০০৫. Coturnix coromandelica (Gmelin, 1789)
সমনাম: Coturnix coromandelicus Gmelin, 1789
বাংলা নাম: বৃষ্টি বটেরা
ইংরেজি নাম: Rain Quail (Black-breasted Quail)

বর্ণনা: বৃষ্টি বটেরা ছোট্ট বাদামি ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১৮ সেমি, ওজন ৭৫ গ্রাম, ডানা ৯.৫ সেমি, ঠোঁট ১.৩ সেমি, লেজ ৩ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষপাখির মুখ কালচে; সাদা কালো নকশা করা মাথা; গলায় কালো নোঙর-চিহ্ন আঁকা; চক্ষু-রেখা কালো; সাদা গালের নিচে কালো দাগ; গলা ঘোর কালো; ঘাড়ের পাশ ও বুক দারুচিনি-পাটকিলে; বুক ও পেটের উপরের অংশে কালো ছোপ; এবং বগলে কালো ছিটা-দাগ। স্ত্রীপাখির বুক হালকা পীত রঙের; গলায় কালো নোঙর-চিহ্ন নেই; এবং ডানার প্রান্ত-পালকে ডোরা থাকেনা। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের চোখ গাঢ় বাদামি; ঠোঁটের গোড়া ফিকে, বাকি ঠোঁট কালো কিংবা শিঙ-কালো; এবং পা ও পায়ের পাতা মেটে কিংবা মেটে-ধূসর।

স্বভাব: বৃষ্টি বটেরা সাধারণত তৃণভূমি, কৃষি খামার ও ঝোপে বিচরণ করে; এবং সচরাচর একা কিংবা জোড়ায় থাকে। এরা ঘাসে, শস্যে ও ঝোপে হেঁটে খাবার খুঁজে বেড়ায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, শস্যদানা ও পোকামাকড়। মাঝে মাঝে এরা উচ্চ স্বরে ডাকে: হুইট-হুইট...; ভয় পেলে তীক্ষ্ণ স্বরে শিস দেয়; এবং মনোহর সুরে ‘গান’ গায়: হুইচ-হুইচ, হুইচ-হুইচ...। মার্চ-অক্টোবর মাসের প্রজনন মৌসুমে পুরুষপাখি ঝোপের মধ্যে ঊষা ও গোধূলিতে গান গায়। এরা ভূমির প্রাকৃতিক গর্ত কিংবা খোদলে লতাপাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো গাঢ় হলদে-বাদামি থেকে লালচে-বাদামি, মাঝে মাঝে তামাটে-বাদামি ফুসকুড়ি থাকে; সংখ্যায় ৬-১১টি, মাপ ২.৭ - ২.১ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ১৮-১৯ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: বৃষ্টি বটেরা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের তৃণভূমিতে পাওয়া যায়। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড-সহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে এ পাখির বিস্তৃতি।
অবস্থা: বৃষ্টি বটেরা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

বিবিধ: বৃষ্টি বটেরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কোরোম্যান্ডেল-এর বটেরা (ল্যাটিন: Coturnix = বটেরা; coromandelica = চেন্নাই-এর করমন্ডল উপকূল, ভারত) ।
[সাজেদা বেগম]
*******************************
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি
রিয়াজ এর ছবি

কি সুন্দর সব নাম!!
অণুদা ও সাথে যাঁরা কাজ করছেন সবাইকে ধন্যবাদ।
শুধু ধন্যবাদ মনে হয় যথেষ্ট নয়,আপনাদের স্যালুট।ভালো কাজে সংঘের শক্তির মতো সুন্দর আর কিছু নেই।

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

অসম্ভব দুরহ আর কষ্টসাধ্য একটা কাজ। আন্তরিক ধন্যবাদ ইনাম আল হক আর বার্ডস ক্লাবের সবাইকে। নামের সাথে আচরন বোঝাতে অনেক নামকে নতুন ভাবে দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেটা কি খুবই প্রয়োজনীয়। লিস্টের একদম ১ নাম্বার পাখিটার কথাই ধরেন। কালা তিতিরকে বাংলাদেশের বিশাল সঙ্খ্যক মানুষ শেখ ফরিদ বলে এক নামে চেনে। Tickell's leaf warbler এর বাংলা নাম খুঁজতে গিয়ে লিস্টে Jungle Babbler এর নাম বন ছাতারে পেলাম। সমস্যা হচ্ছে সাত বাইলা কিংবা সাত ভাই ছাতারে বললে এক নামে অলমোস্ট সবাই চেনে, একে নতুন ভাবে বন ছাতারে নাম করন করলে কনফিউশান তৈরি হয় না? খুব পরিচিত পাখি গুলোর নাম সেভাবেই রেখে দেয়া মনে হয় যুক্তিযুক্ত।

তারেক অণু এর ছবি

শেখ ফরিদ আসলেই পরিচিত নাম , কিন্তু শেখ ফরিদ কী ধরনের পাখি এইটা কি বোঝা যাচ্ছে? অথবা কুরা, সেটা যে ঈগল বোঝার উপায় আছে কি? আবার শেখ ফরিদ তিতির দেয়া হলে বেশী বড় হয়ে যাচ্ছে! তবে খুব পরিচিত পাখি নামগুলো সেইভাবেই রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আর নামের কোন তালিকাই কিন্তু অপরিবর্তনীয় নয়, সাজেশন দিতে থাকুন, অবশ্যই তা বিবেচনায় আনা হবে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

০০৬. Coturnix coturnix (Linnaeus, 1758)
সমনাম: Tetrao coturnix Linnaeus, 1758
বাংলা নাম: পাতি বটেরা, বাত্রি (আলী)
ইংরেজি নাম: Common Quail

বর্ণনা: পাতি বটেরা বাদামি রঙের গোলগাল ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ২০ সেমি, ওজন ১০০ গ্রাম, ডানা ১০ সেমি, ঠোঁট ১.৫ সেমি, পা ২.৭ সেমি, লেজ ৩.৭ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কিছু ভিন্নতা আছে। পুরুষপাখির পিঠে লালচে-বাদামি ও কালো ডোরা এবং বল্লমের মত দাগ আছে; পীতাভ ভ্রু-রেখা ও মাথার চাঁদিতে পীতাভ ডোরা; গলায় অস্পষ্ট কালচে নোঙর চিহ্ন; লালচে পীতাভ বুকে উজ্জ্বল ছিটা-দাগ; বাদামি বগলে কালো ছিটা-দাগ; এবং দেহতলের বাকি অংশ হালকা পীতাভ। স্ত্রীপাখির থুতনি ও গলায় হালকা পীতাভ ও বুকে কালো তিল থাকে। অপ্রাপ্তবয়ষ্ক পাখি স্ত্রীপাখির মত, তবে রং অনুজ্জ্বল। ৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে C. c. coturnix বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব : পাতি বটেরা সাধারণত উঁচু তৃণভূমি, খামার ও ঘন ঘাসের চারণভূমিতে বিচরণ করে; জোড়ায় অথবা পারিবারিক দলে বিচরণ করে। তৃণভূমি ও শস্যক্ষেতে আস্তে আস্তে হেঁটে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাসবীজ, শস্যদানা ও পোকামাকড়। আত্মরক্ষার জন্য ওড়ার চেয়ে দৌÍড়ে পালানো ও ঝোপের আড়াল থেকে এরা পছন্দ করে। তাড়া দিলে পালাবার সময় ডাক দেয়: চাক-চাক-চাক-চাক..; অন্য সময় উচ্চ স্বরে শিস্ দেয়; এবং গান গায়: হুইট-হুইট-টিট...। মার্চ-জুলাই মাসের প্রজনন মৌÍসুমে পুরুষপাখি সকাল ও সন্ধ্যায় ‘গান’ গেয়ে প্রজনন এলাকা প্রতিষ্ঠা করে। এরা তৃণভূমি বা খামারে মাটির গর্তে লতাপাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো তামাটে বাদামি অথবা হলদে-পীতাভ বা লালচে-বাদামি, সংখ্যায় ৫-১৩টি, মাপ ৩.০ - ২.৩ সেমি। ১৬-১৮ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: পাতি বটেরা বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; শীতে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের তৃণভূমিতে দেখা গেছে; অতীতে ঢাকা এবং সিলেট বিভাগে পাওয়া যেত। পাতি বটেরা ইউরোপ থেকে পশ্চিম এশিয়ার অর্ধেক পর্যন্তÍ বিস্তৃত। শ্রীলংকা ও ভুটান ছাড়া শীতকালে সমগ্র ভারত উপমহাদেশ ও আফ্রিকাতে দেখা যায়।

অবস্থা: পাতি বটেরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই পাখিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।

বিবিধ : পাতি বটেরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বটেরা (ল্যাটিন: coturnix = বটেরা )।
[সাজেদা বেগম]

গণ: Arborophila Hodgson, 1837, ১৮৩৭
প্রায় তিতিরের মত, স্বভাবে আলাদা; পা তিতিরের পায়ের চেয়ে লম্বা; পায়ের পিছনে গজালের মত খাড়া নখর নেই; পা লম্বায় নখর-সহ মধ্যমার দৈর্ঘ্যরে প্রায় সমান; সামনের আঙুলগুলির নখর লম্বা ও সোজা; ডানা ছোট ও গোলাকার; ৪র্থ ও ৫ম প্রান্তÍপালক সব চেয়ে লম্বা; ১৪ পালকের কোমল লেজ, ডানার প্রায় অর্ধেক।
পৃথিবীতে ২০ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

০০৭. Arborophila atrogularis (Blyth, 1849)
সমনাম : Arboricola atrogularis Blyth,1849
বাংলা নাম : ধলাগাল বাতাই
ইংরেজি নাম : White-cheeked Partridge

বর্ণনা: ধলাগাল বাতাই সাদা গালওয়ালা ছোট্ট ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ২৮ সেমি, ওজন ২৫৫ গ্রাম, ডানা ১৩.৭ সেমি, ঠোঁট ২ সেমি, পা ৪.৩ সেমি, লেজ ৬.২ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির ধূসর কপাল, জলপাই-বাদামি চাঁদি, ও ঘাড়ের নিচ দিক কমলা হলুদে মেশানো; পুরো পিঠ কালো দাগসহ হালকা বাদামি; ভ্রু-রেখা ধূসর; চোখের কাছে কালো ডোরা, চোখের পাতা লালচে পীতবর্ণের; গাল সাদা; কাঁধে কালো ও লালচে ডোরা; বগল ও বুকে ধূসর রঙের ওপর কালো সাদা দাগ; তলপেট কালো; লেজতল-ঢাকনির সাদা প্রান্তÍসহ লাল পালকে কালো চিতি; চোখ বাদামি বা লালচে বাদামি; এবং চক্ষুগোলক ও থুতনির নিচের চামড়া উজ্জ্বল পাটল বর্ণের হয়। পুরুষপাখির ঠোঁট কালো, পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল গোলাপি থেকে মোমের মত অনুজ্জ্বল হলুদ।

স্বভাব: ধলাগাল বাতাই চিরসবুজ বনতলের ঝোপ ও বাঁশবনে বিচরণ করে; সাধারণত ছোট দলে দেখা যায়। এরা খোলা মাঠে লতাপাতা থেকে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় আছে বীজ, রসালো ফল, কচিকুঁড়ি, পোকামাকড় ও ক্ষুদ্র শামুকজাতীয় প্রাণী। ভয় পেলে প্লত দৌÍড়ে পাতার নিচে বা ঝোপে লুকিয়ে যায়। প্রায়ই তারা শিস দিয়ে গোধূলিতে ডাকে: হুুইও-হুুইও.. ও উচ্চ স্বরে শিস দিয়ে গান গায়। মার্চ-এপ্রিল মাসের প্রজনন মৌÍসুমে এরা বনের ভিতরের ক্ষুদ্র ঝোপ, ঘাস ও বাঁশবনে মাটির গর্তে পাতা ও ঘাস দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪-৫টি, মাপ ৩.৭ দ্ধ ২.৮ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়।

বিস্তৃতি: ধলাগাল বাতাই বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে চোখে পড়ে; অতীতে চট্টগ্রাম বিভাগেও ছিল। এ দেশ ছাড়া কেবলমাত্র ভারত, চিন ও মিয়ানমারে পাখিটির বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: ধলাগাল বাতাই বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: ধলাগাল বাতাই পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কালো-গলার বৃক্ষপ্রেমী তিতির (ল্যাটিন : arbor = বৃক্ষ, গ্রিক : philos = প্রিয় , ল্যাটিন : ater = কালো, gula = গলা) ।
[সাজেদা বেগম]
******************************
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

******************************

০০৮. Arborophila rufogularis (Blyth, 1849)
সমনাম: Arborophila intermedia Blyth, 1849
বাংলা নাম: লালগলা বাতাই, পাহাড়ি তিতির (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম : Rufous-throated Partridge

বর্ণনা: লালগলা বাতাই লালচে গোলাপি গলার ছোট ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ২৭ সেমি, ওজন ৩৫৫ গ্রাম, ১৪ সেমি, ঠোঁট ১.৮ সেমি, পা ৪ সেমি, লেজ ৫.৫ সেমি)। পুরুষপাখির চেহারা স্ত্রীপাখি থেকে কিছুটা পৃথক। পুরুষপাখির পিঠ সোনালী জলপাই-বাদামি; কপাল ধূসর, জলপাই-বাদামি চাঁদিতে কালো দাগ; ধূসর-সাদা ভ্রু-রেখা ও সাদা গুম্ফ-রেখা আছে; থুতনী ও গলায় লালের ওপর কালো তিলা, ঘাড়ের উপরিভাগ লালচে-কমলা রঙের; বুক স্লেটরঙা-ধূসর; ঘাড়ের উপরিভাগে ও বুকের মাঝখানে একটি সরু কালো ডোরা নেমে গেছে; এবং কোমর ও লেজের নিচে কালো তিলা আছে। স্ত্রীপাখির থুতনি ও গলায় কয়েকটি কালো তিলা; এবং দেহতলের বাকি অংশে অনেক ফুটকি রয়েছে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের বাদামি চোখ; অক্ষিকোটর ও গলার চামড়া লাল; কালচে ঠোঁট; এবং লাল পায়ে পাটকিলে নখর থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতলে সাদা তিলা ও ডোরাহীন কাঁধ-ঢাকনি থাকে। ৬টি উপ-প্রজাতির মধ্যে A. r. intermedia বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: লালগলা বাতাই চিরসবুজ বনতলে জলাশয়ের পাড়ের ঘন ঝোপে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় বা ৫-৬ টির বিচ্ছিন্ন দলে দেখা যায়। এরা ধীরে ধীরে হেঁটে বেড়ায় ও মাঠের ঘাসে বা লতাপাতার মধ্যে খাবার খোঁজে: খাদ্যতালিকায় আছে বীজ, রসালো ফল, নবপল্লব ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী, বিশেষ করে পোকামাকড় ও শামুক। নিচু স্বরে এরা মাঝে মাঝে শিস দেয়; এপ্রিল-আগস্ট মাসের প্রজনন ঋতুতে ভোরে ও গোধূলিতে ‘গান’ গায়: হুইয়া-হু...; এবং ঘন লতাপাতা ঘেরা মাটির প্রাকৃতিক গর্তে ঘাস ও পাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ৩-৬টি, মাপ ৩.৯-২.৯ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: লালগলা বাতাই বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে দেখা পাওয়ার তথ্য রয়েছে। ভারত, নেপাল, ভুটান, চিন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: লালগলা বাতাই বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: লালগলা বাতাই পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ লাল-গলার বৃক্ষপ্রেমী তিতির (ল্যাটিন: arbor = বৃক্ষ, গ্রিক : philos = প্রিয়, ল্যাটিন : rufus = লাল, gula = গলা) ।
[সাজেদা বেগম]

গণ: Gallus Brisson, 1760
মাঝারি আকারের ভূচর পাখি; মাথায় ঝুটি; গলার পাশে দুটি ঝুলন্ত লতিকা; গোলাকার ডানার ৫ম প্রান্ত পালকটি দীর্ঘতম, ১মটি ১০মটির চেয়ে ছোট; লেজ দুপাশ থেকে চাপা; লেজে ১৪টি পালক, মাঝের দুটি পালক লম্বা ও কাস্তের মত বাঁকা; ঘাড় ও কোমর সরু ও লম্বা কাঠির মত পালকে ঘেরা; পা শক্তিশালী ও লম্বা, নখরসহ মধ্যমার চেয়ে বড়; পুরুষপাখির পায়ে গজালের মত লম্বা তীক্ষè নখর আছে।
পৃথিবীতে ৪ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০০৯. Gallus gallus (Linnaeus, 1758)
সমনাম: Phasianus gallus Linnaeus 1758
বাংলা নাম: লাল বনমুরগি, বন মোরগ (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম: Red Junglefowl

বর্ণনা : লাল বনমুরগি সবার পরিচিত বর্ণাঢ্য ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৫৭ সেমি, ওজন ১ কেজি, ডানা ২০.৫ সেমি, ঠোঁট ২ সেমি, পা ৭.৫ সেমি, লেজ ২৪.৭ সেমি); পুরুষপাখি সব ঋতুতে সুরেলা কন্ঠে ডাকে। এর চেহারা ও আকার স্ত্রীপাখি থেকে অনেকটা আলাদা। পুরুষপাখির পিঠে গাঢ় কমলা-লাল রঙের ওপর সোনালী হলুদ মেশানো ঝুলন্ত পালক ঘাড় থেকে নেমে গেছে; কাস্তের মত লম্বা কেন্দ্রীয় পালকসহ লেজ সবুজাভ কালো; দেহতল কালচে বাদামি; উপরের ঠোঁট থেকে মাংসল ঝুঁটি ও নিচের ঠোঁটে ঝুলন্ত লতিকা থাকে; চোখ কমলা-লাল; এবং ঠোঁট লাল ও ঠোঁটের গোড়া বাদামি। স্ত্রীপাখির কপাল তামাটে ও মাথার চূড়া অনুজ্জ্বল লাল; দেহতলে হালকা লাল-বাদামির ওপর পীতাভ ডোরা; চোখ বাদামি ও ঝুঁটি গাঢ় লাল; এবং ঠোঁটের হলুদাভ গোড়া ছাড়া বাকি অংশ পুরুষপাখির ঠোঁটের মত। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের পা, পায়ের পাতা ও নখর স্লেট-বাদামি। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে এ. ম. সঁৎমযর বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: লাল বনমুরগি সব ধরনের বন ও বাঁশের ঝোপে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় বা পারিবারিক দলে ঘুরে বেড়ায়। এরা মাটিতে হেঁটে পায়ের আঁচরে ঝরাপাতা সরিয়ে খাবার খোঁজে: খাদ্যতালিকায় আছে শস্যদানা, ঘাসের কচিকা-, ফসলাদি, ফল, কেঁচো ও পোকামাকড়। এরা ভোরে ও গোধূলিতে বেশি সক্রিয় থাকে; পুরুষপাখি উচ্চ স্বরে ডাকে: কোক-আ-ডুড্ল-ডু ..। জানুয়ারি-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে পূর্বরাগের সময় পুরুষপাখি ডানা মেলে স্ত্রীপাখির চারদিকে ঘুরে বেড়ায়। স্ত্রীপাখি ঘন ঝোপের নিচে নখর দিয়ে মাটি আঁচড়ে গর্ত করে ঘাস, লতাপাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফ্যাকাসে পীতাভ থেকে লালচে বাদামি, সংখ্যায় ৫-৬টি, মাপ ৪.৫-৩.৪ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে। ডিম ফোঁটার পর ছানারা বাসা ছেড়ে যায় ও মায়ের পাশে হেঁটে নিজেরা খাবার খুঁটে খায়।

বিস্তৃতি: লাল বনমুরগি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্রগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের সব বনে দেখা যায়। ভারতবর্ষ ছাড়া মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে এ পাখির বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: লাল বনমুরগি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: লাল বনমুরগির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ গোলাবাড়ির মুরগি (ল্যাটিন : gallus = গোলাবাড়ি সংলগ্ন জমির মুরগি)। লাল বনমুরগি থেকেই পৃথিবীর সব পোষা মুরগির আবির্ভাব হয়েছে।
[সাজেদা বেগম]

গণ: Lophura Fleming 1822
গোলাকার ডানার ভূচর পাখি; ৫ম ও ৬ষ্ঠ প্রান্ত পালক দীর্ঘতম, ১মটি ছোট, ২য়টি ৯ম বা ১০ম টির সমান; লেজ চাপা, পুরুষপাখির লেজের পালক প্রশস্ত ও কাস্তের মত বাঁকা; ঠোঁট মাঝারি আকারের, শক্তিশালী; পালকহীন উন্মুুক্ত মুখের ত্বকে উজ্জ্বল রঙ; পুরুষপাখির পায়ের পিছনে গজালের মত খাড়া নখর, কোন কোন প্রজাতির স্ত্রীপাখির পায়েও তা আছে; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় অনেক পার্থক্য।
পৃথিবীতে ৯ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০১০. Lophura leucomelanos (Latham, 1790)
সমনাম: Phasianus leucomelanos Latham, 1790
বাংলা নাম : কালা মথুরা, ময়ূর (আই), কালো ময়ূর (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম: Kalij Pheasant

বর্ণনা: কালা মথুরা কালচে ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৬২ সেমি, ওজন ১.৩ কেজি, ডানা ২২ সেমি, ঠোঁট ৩.৫ সেমি, পা ৭.৫ সেমি, লেজ ২৩ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ও আকারে অনেক পার্থক্য। পুরুষপাখির পিঠ উজ্জ্বল নীল ও কালোয় মেশানো, কোমর ও পাছার পালকের প্রান্ত সাদা; মাথার চূড়ার পালক খাড়া; মুখের চামড়া ও গলায় ঝুলন্ত লতিকা উজ্জ্বল লাল; দেহতলে পুরো কালো রঙের ওপর ইস্পাত-নীল ও বেগুনি চাকচিক্য। স্ত্রীপাখির দেহে অন্জ্জ্বুল বাদামি পালকের ধূসর প্রান্ত আঁইশের মত দেখায়; মাথার চূড়া ও লেজের পালক প্রায় বাদামি; পীতাভ বাদামি গলা এবং কোমর ও পায়ের পালকের প্রান্ত দেশ ফ্যাকাসে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের চোখ পিঙ্গল থেকে কমলা-বাদামি; চোখের পাশে পালকহীন চামড়া উজ্জ্বল লাল; ঠোঁট সবুজাভ ও শিঙ-বর্ণের, ঠোঁটের গোড়া কালো ও আগা ফ্যাকাসে; পা ও পায়ের পাতা বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের কালচে-বাদামি ও পীতাভ ডোরা ছাড়া দেখতে স্ত্রীপাখির মত। ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে L. l. latham বাংলাদেশে রয়েছে।

স্বভাব: কালা মথুরা বনের প্রান্তে ও জঙ্গলসংলগ্ন মাঠে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় বা পারিবারিক ছোট দলে থাকে। মাটিতে হেঁটে ও মাটি থেকে কুড়িয়ে এরা খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় আছে বাঁশবীজ, ডুমুর, পিঁপড়া, উইপোকা, ছোট সাপ ও টিকটিকি। ভোরে ও গোধূলিতে এরা বেশি সক্রিয় থাকে; দিনে গাছের নিচু ডালে বিশ্রাম নেয়। সকাল ও সন্ধ্যায় নিচু স্বরে মুরগির মত ডাকে: কুড়্ড়-কুড়ড়-কুড়চি-কুড়ড়..। মার্চ-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি গাছের ডালে বসে ডাকে; স্ত্রীপাখি ঘন ঝোপের নিচে নখর দিয়ে মাটি আঁচড়ে পাথর, লতাপাতা বা ঘাসের গোছা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফ্যাকাসে-পীতাভ বা পীতাভ-সাদা থেকে লালচে পীত বর্ণের, সংখ্যায় ৬-৯টি, মাপ ৪.৯-৩.৭ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: কালা মথুরা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, তিব্বত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: কালা মথুরা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে বিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: কালা মথুরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চূড়াধারী পাকরা ময়ূর (গ্রিক: lopos = চূড়া, oura = লেজ, lenkos = সাদা, melanos = কালো)।
[সাজেদা বেগম]

গণ: Polyplectron Temminck, 1813
মথুরার মত ভূচর পাখি; কিছুটা ধূসর বা ধূসর-বাদামি বা পীতাভ পালকসজ্জা; ডানার ৬ষ্ঠ প্রান্ত পালক দীর্ঘতম, ১মটি অতি ছোট, ২য়টি ১০মটির চেয়ে ছোট; ডানা ও লেজের প্রান্তে পীত বর্ণের চক্র; ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় ২০-২৪ টি পালকের লেজ, গোলাকার, প্রসারিত করলে পাখার মত দেখায়; মুখের পাশ পালকহীন; নখরসহ মধ্যম আঙুলের চেয়ে পা লম্বা; পুরুষপাখির পায়ের পিছনে গজালের মত খাড়া নখর; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ও আকার ভিন্ন।
পৃথিবীতে ৭ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০১১. Polyplectron bicalcaratum (Linnaeus, 1758)
সমনাম : Pavo bicalcaratum Linnaeus, 1758
বাংলা নাম : মেটে কাঠমৌর, কাট-মোর (অ্যাক্ট), কাঠমৌর (আলী)
ইংরেজি নাম : Grey Peacock-Pheasant

বর্ণনা : মেটে কাঠমৌর বাহারি লেজের ধূসর ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৫৬ সেমি, ওজন ৭৩০ গ্রাম, ডানা ২১ সেমি, ঠোঁট ২.১ সেমি, পা ৭.২ সেমি, লেজ ৩১ সেমি)। পুরুষপাখির চেহারা ও আকার স্ত্রীপাখি থেকে কিছুটা আলাদা। পুরুষপাখির মাথা ও ঘাড় বাদামি পীতাভ; মাথার চূড়ার পালক ছোট ও খাড়া; পিঠে ধূসর বাদামি ফোঁটা; কোমর ও লেজের উপরের পালকে সাদা ডোরা; ডানার পালকে ও লেজের প্রান্তে বেগুনি ও সবুজ রঙের চক্র আছে; থুতনি ও গলা সাদাটে; এবং দেহতলের বাকি অংশে সাদা ডোরা থাকে। স্ত্রীপাখি পুরুষপাখির থেকে ছোট ও অনুজ্জ্বল; মাথায় খাটো চূড়া; ডানা ও লেজে অস্পষ্ট চক্র। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের সাদা চোখ; হলুদাভ মুখের চামড়া; হালকা পীত বর্ণের ঠোঁট, ঠোঁটের আগা ও মধ্যভাগ কালো; পা ও পায়ের পাতা মলিন স্লেট-রঙ বা কালচে। অপ্রাপ্ত—বয়স্ক পাখি দেখতে স্ত্রীপাখির মত। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ২টি বাংলাদেশে রয়েছে। অতি হালকা পীতাভ P. b. bicalcaratum সিলেট বিভাগে ও অতি ধূসর এবং পাতার মত পীতাভ P. b. bakeri চট্টগ্রাম বিভাগে আছে।

স্বভাব : মেটে কাঠমৌর চিরসবুজ বনতলের ঘন ঝোপঝাড়ে ও বনের প্রান্তে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় দেখা যায়। এরা ঝোপের নিচে ও খোলা মাঠে চুপিসারে লতাপাতা থেকে কুড়িয়ে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় আছে বীজ, শস্যদানা, ফল, পোকামাকড়, শামুক বা ক্ষুদ্র প্রাণী। এরা মাঝে মাঝে ডেকে ওঠে:অক-কক-কক-কক..; মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি ঘন ঘন ডাকে। ঝোপের নিচে মাটির প্রাকৃতিক গর্তে শুকনো পাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে এরা পাখি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ থেকে চকলেট-পীতাভ, সাদা তিলা আছে, সংখ্যায় ২-৫ টি, মাপ ৪.৬-৩.৬ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২১ দিনে ডিম ফোটে। ডিম ফোঁটার পর ছানারা বাসা ছেড়ে যায় ও মায়ের পাশে হেঁটে নিজেরা খাবার খুঁটে খায়।

বিস্তৃতি: মেটে কাঠমৌর বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
অবস্থা: মেটে কাঠমৌর বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: মেটে কাঠমৌর পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ নখরধারী কাঠমৌর (গ্রিক: polu = বহু, plektron = গজালের মত খাড়া নখর, ল্যাটিন : bicalcaratum = গজালের মত খাড়া দুই নখর)।
[সাজেদা বেগম]

গণ: Pavo Linnaeus, 1758
গোলাকার ডানার বড় ভূচর পাখি; ডানার ১ম প্রান্ত পালক ১০মটির চেয়ে ছোট; মাথায় খাড়া চূড়ার পালক; লেজের ওপর লম্বা পেখম; পুরুষ স্ত্রী উভয়ের লেজে ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় ২০টি পালক, লেজের ওপর বাড়তি পালকের পেখম, পেখমের পালকের প্রান্তে ‘চক্র’, লেজের নিচে কোমল পালকের স্তূপ; পা লম্বা ও শক্তিশালী, পুরুষপাখির পায়ের পিছনে গজালের মত খাড়া নখর আছে।
পৃথিবীতে ২ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

০১২. Pavo cristatus Linnaeus, 1758
সমনাম: নেই
বাংলা নাম : দেশি ময়ূর, ময়ূর (আলী)
ইংরেজি নাম : Indian Peafowl

বর্ণনা : দেশি ময়ূর বড় আকারের ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১০০-২৩০ সেমি, ওজন ৪.১ কেজি, ডানা ৪৪ সেমি, ঠোঁট ৪ সেমি, পা ১৩.৬ সেমি, লেজ ৪৩ সেমি, পেখম ১৫০ সেমি)। পুরুষপাখির চেহারা ও আকার স্ত্রীপাখি থেকে অনেকটা আলাদা। পুরুষপাখির মাথার খাড়া চূড়া; মাথা ও ঘাড় উজ্জ্বল নীল; পিঠ ও কোমর ধাতব সবুজ; প্রজনন ঋতুতে লেজের ওপর দীর্ঘ বেগুনি পেখম হয়, পেখমের দীর্ঘ পালকের প্রান্তে কালো চক্রের মধ্যে নীল ‘চোখ’ থাকে; উজ্জ্বল নীল ডানা-ঢাকনির উপরে ও ডানায় কালো ডোরা আছে; ডানার প্রান্ত পালক বাদামি রঙের। স্ত্রীপাখির ঘাড় সবুজ; মুখ, গলা ও পেট সাদা; ঘাড়ের নিচের দিকটা ধাতব সবুজ ও বুকে পীভাভ বাদামির মিশ্রণ থাকে; এবং লেজের ওপর পেখম হয়না। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের চোখ পিঙ্গল-বাদামি; মুখের উন্মুক্ত চামড়া সাদা; ঠোঁট গাঢ় শিঙ-রঙের; পা ও পায়ের পাতা ধূসর বাদামি এবং নখর কালচে।

স্বভাব: দেশি ময়ূর পাতা-ঝরা বনে, বনতলে, বনসংলগ্ন গ্রামে ও মাঠে বিচরণ করে; সাধারণত এক ঝাঁকে একটি পুরুষ ৩-৫টি স্ত্রীপাখি থাকে। মাটি আঁচড়ে, ঝরা-পাতা উল্টে এরা খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে শস্যদানা, বীজ, ফল, কেঁচো, পোকামাকড়, টিকটিকি ও সাপ। এরা আত্মরক্ষার জন্য মাটি ছেড়ে অতি প্লত সোজা উপরে ওড়ে উঠতে পারে; ভোরে ও গোধূলিতে এরা বেশি সক্রিয় হয়; উচ্চ-কণ্ঠে ধাতব ঝংকার দিয়ে ডাকে: ম্যা-অ্যাও..। জানুয়ারি-মার্চ মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি পেখম উঠিয়ে নাড়াতে থাকে, এবং স্ত্রীপাখি তার চারদিকে ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে; ঘন ঝোপের নিচে মাটিতে বাসা করে স্ত্রীপাখি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ; সংখ্যায় ৪-৬টি; মাপ ৬.৯-৫.২ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২৮ দিনে ডিম ফোটে। ডিম ফোঁটার পর ছানারা বাসা ছেড়ে যায় ও মায়ের পাশে হেঁটে নিজেরা খাবার খুঁটে খায়।

বিস্তৃতি: দেশি ময়ূর বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিভগের পাতাঝরা বনে দেখা গেছে, এখন নেই। এখন মালদ্বীপ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্র এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: দেশি ময়ূর বিশ্বে বিপদমুক্ত হলেও বাংলাদেশ থেকে বিদায় হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: দেশি ময়ূরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চূড়াধারী ময়ূর (ল্যাটিন : pavo = ময়ূর, cristatus = চূড়াওয়ালা)
(মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও মো: শাহরিয়ার মাহমুদ)

******************************

- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

০১৩. Pavo mutics Linnaeus, 1760
সমনাম: নেই
বাংলা নাম: সবুজ ময়ূর, বর্মী ময়ূর (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম: Green Peafowl (Burmese Peafowl)

বর্ণনা: সবুজ ময়ূর ঘন সবুজ রঙের ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১০০-৩০০ সেমি, ওজন ৪.৫ কেজি, ডানা ৪৫ সেমি, ঠোঁট ৪.৩ সেমি, পা ১৫.২ সেমি, লেজ ৪.৩ সেমি, পেখম ১৫০ সেমি)। পুরুষপাখির চেহারা ও আকার স্ত্রীপাখি থেকে অনেকটা আলাদা। পুরুষপাখির পিঠ ও ঘাড় সবুজ; পালকহীন মুখের চামড়া নীল-হলুদ মেশানো; ডানা-ঢাকনি সবুজ, ডানার মধ্যভাগ ও গোড়ার পালক বাদামি; লেজের পেখমের প্রান্তেÍ কালো চক্রের মধ্যে বেগুনি ফোঁটা; দেহতলে সরু কালো ঢেউসহ পিতল, সবুজ ও বেগুনি দাগ। স্ত্রীপাখির পিঠ গাঢ় বাদামি; লেজ পেখমহীন; ডানা-ঢাকনি, পিঠের শেষভাগ ও কোমর কালচে বাদামি; লেজে পীতাভ, বাদামি ও কালো রঙের ডোরা আছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির সবুজাভ ও তামাটে কোমর ছাড়া দেখতে ময়ূরীর মত। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে P.g. spificer বাংলাদেশে ছিল।

স্বভাব : সবুজ ময়ূর বনতলে ও বনের প্রান্তে বিচরণ করে; সাধারণত একটি ঝাঁকে একটি পুরুষ ৩-৫টি স্ত্রী থাকে। এরা মাটি আঁচড়ে, ঝরা-পাতা উল্টে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, শস্যদানা, ফুলের কলি, রসালো ফল, পোকামাকড়, কেঁচো, সাপ ও টিকটিকি। জোরে পাখা ঝাপটে এরা প্লত উড়তে পারে; ভোরে ও গোধূলিতে বেশি সরব ও সক্রিয় হয়; পুরুষপাখির উঁচু স্বরের ডাক: ইয়েই-অও..; আর স্ত্রীপাখির ডাক: অ্যাও-অ্যা.. ; ভয় পেলে এরা ডাকে: কের-র-র-রু..। জানুয়ারি-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি পেখম মেলে ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে। ঘন ঝোপের নিচে মাটিতে বাসা বানিয়ে স্ত্রীপাখি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ, সংখ্যায় ৩-৬ টি, মাপ ৭.২-৫.৩ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২৬-২৮ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: সবুজ ময়ূর বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ বনে দেখা মিলত, এখন নেই। এখন ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: সবুজ ময়ূর বিশ্বে সংকটাপন্ন ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ : সবুজ ময়ূরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ছোট-ময়ূর (ল্যাটিন : Pavo = ময়ূর, muticus = খুদে/সংক্ষিপ্ত) ।
[ ইনাম আল হক ও মো: শাহরিয়ার মাহমুদ ]

পরিবার: DENDROCYGNIDAE
শরালি হাঁস
ডানায় বিশেষ পালকে শব্দ করে ওড়ে এমন মাঝারি আকারের হাঁস; লম্বা ঘাড় ও পা; প্রশস্ত ডানা; ওড়ার সময় বাধা পেলে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে; পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য নেই; অপ্রাপ্ত—বয়স্ক পাখির পালক অনুজ্জ্বল।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ২ গণে ৯ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ গণে ২ প্রজাতি

গণ: Dendrocygna Swainson, 1837
মাঝারি আকারের শরালি; মাঝারি আকারের ঠোঁট, আগাগোড়া সমান প্রশস্ত; ঠোঁটের মাথায় ‘কাঁটা’ থাকে, কাঁটাটি নিচের দিকে হঠাৎ বাঁকানো; নাসারন্ধ্র ঠোঁটের গোড়া থেকে এক-তৃতীয়াংশ দৈর্ঘ্যের মধ্যে অবস্থিত; ডানা প্রশস্ত; পা লম্বা ও শক্ত, পায়ের সামনের দিক খাঁজকাটা।
পৃথিবীতে ৮ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

০১৪. Dendrocygna bicolor (Viellot, 1816)
সমনাম: Anser bicolor Viellot, 1816
বাংলা নাম : রাজ শরালি, বড় সরালী (আলী)
ইংরেজি নাম: Fulvous Whistling Duck

বর্ণনা: রাজ শরালি বাদামি শরীর আর সাদা কোমরের হাঁস (দৈর্ঘ্য ৫১ সেমি, ওজন ৭০০ গ্রাম, ডানা ২২ সেমি, ঠোঁট ৪.৭ সেমি, পা ৫.৮ সে .মি, লেজ ৫.৫ সেমি.)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ বাদামি ও কালোয় মেশানো; দেহতল তামাটে থেকে দারুচিনি রঙের; লালচে-কমলায় মেশানো মাথায় লালচে বাদামি চাঁদি; ঘাড়ের পিছনে অস্পষ্ট কালো লাইন; ডানার উপরে অস্পষ্ট তামাটে ডানা-ঢাকনি; বগলে সাদাটে ডোরা ও কোমরের সাদা ফেটা ওড়ার সময় স্পষ্ট চোখে পড়ে। এর চোখ বাদামি; ঠোঁট স্লেট-নীল; পা, পায়ের পাতা ও নখর কালো। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার পাশ, ঘাড়ের উপরিভাগ ও পিঠ হালকা খয়েরি; বগলের ডোরা অস্পষ্ট।

স্বভাব : রাজ শরালি নলবন ও উদ্ভিদভরা মিঠাপানির অগভীর হ্রদ, বড় নদী ও মোহনায় বিচরণ করে; সাধারণত বড় বড় দলে থাকতে দেখা যায়। রাতে অথবা মেঘলা দিনে এরা জলাশয়ে ঘন ঘন ডুব দিয়ে বা পানির উপরে সাঁতার দিয়ে আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদের বীজ ও নতুন কুঁড়ি, মৃত মাছ ও জলজ অমেরুদন্ডী প্রাণী। দিনে এরা পানিতে, মাটিতে অথবা গাছে বিশ্রাম নেয়; ঠোঁট পিঠের পালকে গুঁজে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এরা সাধারণত সমস্বরে শিস দিয়ে ডাকে: কে-উইও...। জুন-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে এরা গাছের প্রাকৃতিক গর্তে, বড় শাখার ভাঁজে, বা জলবেষ্টিত ভূমিতে লতাপাতার বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৬-৮টি, মাপ ৫.৬দ্ধ৪.৩ সেমি। ৩০-৩২ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: রাজ শরালি বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে সব জলাশয়েই পাওয়া যায়, তবে বেশি দেখা যায় সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলে; চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগেও পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকার দেশসমূহে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: রাজ শরালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: রাজ শরালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ দোরঙা বৃক্ষবাসী-হাঁস (গ্রিক : dendron = বৃক্ষ, cygnus = হাঁস, ল্যাটিন : bi = দুই, color = রঙ) ।
[মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও মোঃ শাহরিয়ার মাহমুদ]

০১৫. Dendrocygna javanica (Horsfield, 1821)
সমনাম : Anser javanica Horsfield, 1821
বাংলা নাম : পাতি শরালি, শরালি (আলী)
ইংরেজি নাম: Lesser Whistling Duck

বর্ণনা : পাতি শরালি কালচে-বাদামি রঙের লম্বা ঘাড়ওয়ালা হাঁস (দৈর্ঘ্য ৪২ সেমি, ওজন ৫০০ গ্রাম, ডানা ১৮.৭ সেমি, ঠোঁট ৪ সেমি, পা ৪.৫ সেমি, লেজ ৫.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির ধূসরাভ ও পীত রঙের মাথায় গাঢ় বাদামি টুপি; ঘাড়ের উপরিভাগ ধূসর পীতাভ; ওড়ার পালক কালচে; ডানার আগা, কোমর, ও লেজ-ঢাকনি উজ্জ্বল তামাটে; বগল হালকা হলুদ; পিঠে আঁইশের মত দাগ; হালকা হলুদ তলপেটসহ দেহতল তামাটে। এর চোখ মলিন বাদামি, ঠোঁট স্লেট-ধূসর ও চোখের পাতা উজ্জ্বল হলুদ; পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে-নীল; আঙুলের পর্দা ও নখর কালচে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। অনুজ্জ্বল অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতল ধূসরাভ-পীতাভ।

স্বভাব: পাতি শরালি মিঠাপানির পুকুর, বিল, ঝিল, নদীতীর ইত্যাদি অগভীর জলাশয়ে বিচরণ করে; সাধারণত ঝাঁকে থাকতে দেখা যায়। রাতে জলমগ্ন জমিতে অল্প ডুব দিয়ে, সাঁতরে বা হেঁটে এরা আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে জলজ আগাছা, কচিকা-, শস্যদানা, মরা মাছ, পোকামাকড় ও জলজ অমেরুদন্ডী প্রাণী। দিনে এরা পানিতে, মাটিতে অথবা গাছে বিশ্রাম নেয় অথবা ঘুমায়। ওড়ার সময় এদের ডানার বিশেষ পালক থেকে নূপুরের মত ঝন্-ঝন্ শব্দ হয়; তা ছাড়া সাধারণত শিস দিয়ে ডাকে: হুই-হুয়ি..। জুন-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের গর্তে, তাল ও নারকেল গাছের মাথায়, নলবনে ও জলবেষ্টিত ঝোপে লতাপাতা ও ঘাস স্তূপ করে বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৭-১২ টি, মাপ ৪.৭-২.৬ সেমি। স্ত্রীপাখি একা ডিমে তা দেয়; ২২-২৪ দিনে ডিম ফোটে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ে মিলে ছানা পাহারা দেয়।

বিস্তৃতি: পাতি শরালি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; শীতে অনেক পরিযায়ী পাতি শরালি এ দেশে আসে; দেশের সব বিভাগের সব জলাশয়ে এদের দেখা যায়। পৃথিবীতে এর বিস্তৃতি দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, চিন, তাইওয়ান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোচিন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।

অবস্থা: পাতি শরালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ: পাতি শরালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ জাভা দ্বীপের বৃক্ষবাসী-হাঁস (গ্রিক : dendron = বৃক্ষ, cygnus = হাঁস, javanica = জাভা দ্বীপের, ইন্দোনেশিয়া) ।
[মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও মোঃ শাহরিয়ার মাহমুদ]

পরিবার: ANATIDAE
হাঁস-রাজহাঁস-মরাল
মাঝারি থেকে বড় আকারের গোলগাল জলার পাখি; পা খাটো ও চ্যাপ্টা; ঠোঁট ছোট, শক্তিশালী; প্রজনন ঋতুর শেষে ওড়ার পালক খসে পড়ে ও কয়েক সপ্তাহ উড়তে পারে না।
এ পরিবারে পৃথিবীতে ৪৩ গণে ১৪৮ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১৩ গণে ২৯ প্রজাতি

গণ: Anser Brisson, 1760
বড় আকারের গোলাকার হাঁস; ঠোঁট খাটো, মোটা ও উঁচু গোড়া; ঠোঁটের গোড়া থেকে মাঝামাঝি দূরত্বে নাসারন্ধ্র, তার পরের অংশ খাঁজকাটা; পা শক্তিশালী ও সামান্য লম্বা; ডানা লম্বা ও সুচালো; ১৬-১৮ পালকের লেজটি খাটো ও গোলাকার।
পৃথিবীতে ১০ প্রজাতি, বাংলাদেশে ৩ প্রজাতি

০১৬. Anser albifrons (Scopoli 1769)
সমনাম : Branta albifrons Scopoli, 1769
বাংলা নাম : বড় ধলাকপাল রাজহাঁস
ইংরেজি নাম: Greater White-fronted Goose

বর্ণনা : বড় ধলাকপাল রাজহাঁস বড় আকারের জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৭৬ সেমি, ওজন ২.৫ কেজি, ডানা ৪০ সেমি, ঠোঁট ৪.৬ সেমি, পা ৬.৫ সেমি, লেজ ১২ সেমি)। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা কালচে; মুখের সামনে ও ঠোঁটের চারদিক সাদা; গাঢ় ধূসরাভ-বাদামি পিঠে আঁইশের মত দাগ; ডানার পালকে সরু সাদা পাড়; পেটে কালো ডোরা; দেহতল বাদামি; লেজতল-ঢাকনি সাদা; চোখ বাদামি, ঠোঁট গোলাপি বা ফ্যাকাসে-কমলা ও হলুদে মেশানো; নখ হালকা খয়েরি; পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদ থেকে মেটে লাল এবং নখর সাদাটে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মুখে সাদা রঙ ও পেটে ডোরা নেই। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে A. a. albifrons বাংলাদেশে পাওয়া গেছে।

স্বভাব : বড় ধলাকপাল রাজহাঁস মিঠাপানির জলাশয়, নলবন, বাদাবন, আর্দ্র তৃণভূমি ও শস্যখেতে বিচরণ করে; সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে থাকতে দেখা যায়। ধীরে ধীরে হেঁটে অথবা সাঁতরে এরা আহার খুঁজে নেয়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাস, কচি নল, জলজ উদ্ভিদ. শস্যদানা, পোকামাকড় ও শামুক। এক পায়ে দাঁড়িয়ে অথবা মাটিতে পেট ঠেকিয়ে বসে এরা বিশ্রাম নেয়। প্রয়োজনে এরা মাটি থেকে সোজা উপরের দিকে ওড়ে পালাতে পারে; এবং পরিযায়ন কালে দীর্ঘ পথ একবারে অতিক্রম করতে পারে। ওড়ার সময় এরা নাকি সুরে ডাকে: ইহ-ঈয়ি..; এদের গানের সুর: লিও-লিয়ক..। গ্রীষ্মকালে সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে এদের প্রজনন হয়; নরম উদ্ভিদ ও পালক দিয়ে বাসা তৈরী করে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফ্যাকাসে; সংখ্যায় ৩-৬টি। স্ত্রী রাজহাঁস একাই ডিমে তা দেয়,; ২২-২৮ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: বড় ধলাকপাল রাজহাঁস বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; শীতকালে ঢাকা বিভাগের নদীতে এর দেখা পাবার তথ্য রয়েছে। এশিয়া, ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: বড় ধলাকপাল রাজহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বড় ধলাকপাল রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সাদাকপাল রাজহাঁস (ল্যাটিন : anser = রাজহাঁস, albus = সাদা, frons = কপাল) ।
[ মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও মোঃ শাহরিয়ার মাহমুদ]

০১৭. Anser anser (Linnaeus, 1758)
সমনাম : Anas anser Linnaeus, 1758
বাংলা নাম : মেটে রাজহাঁস, ধূসর রাজহাঁস (অ্যাক্ট)
ইংরেজি নাম : Greylag Goose

বর্ণনা : মেটে রাজহাঁস পাটলবর্ণের ঠোঁট ও পা এবং লম্বা গলার বড় জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৮২ সেমি, ওজন ৩ কেজি, ডানা ৪৫ সেমি, ঠোঁট ৬.২ সেমি, পা ৭ সেমি, লেজ ১৩.৫ সেমি)। প্রাপ্ত—বয়স্ক পাখির মাথা ও গলা হালকা ছাই রঙের; কালচে কোমর ও উপরের লেজ-ঢাকনি সাদা; দেহতল ধূসর বাদামি; তলপেট সাদা; ওড়ার সময় ডানার ফ্যাকাসে সম্মুখভাগ স্পষ্ট চোখে পড়ে। এর চোখ বাদামি; ঠোঁট লালচে সাদা থেকে পাটল বর্ণের, ঠোঁটের আগা হালকা খয়েরি ও সাদায় মেশানো; পা ও পায়ের পাতা প্রায় পাটল বর্ণের। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্ত—বয়স্ক পাখির হালকা খয়েরি পিঠ ও পেটের পালকের বেড় অস্পষ্ট। এই প্রজাতির ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে A. a. rubrirostris বাংলাদেশে দেখা গেছে।

স্বভাব : মেটে রাজহাঁস নদ-নদী, হ্রদ, নিচু জলাবদ্ধ জমি, আর্দ্র তৃণভূমি ও সদ্যকাটা শস্যখেতে বিচরণ করে; সাধারণত দলবদ্ধভাবে থাকতে দেখা যায়। অগভীর জলে হেঁটে, সাঁতার কেটে বা পানির নিচে ঠোঁট ডুবিয়ে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে ঘাস, জলজ আগাছা, শস্যের কচি ডগা, শামুক, গুগলি ইত্যাদি। এরা প্রধানত দিনের বেলা বিচরণ করে, আবার পূর্ণিমা রাতেও সক্রিয় থাকে; অন্য সময় এক পায়ে দাঁড়িয়ে বা মাটিতে বুক লাগিয়ে বিশ্রাম নেয়। এদের গভীর নাকি সুরের পরিচিত ডাক: অ্যাবঙ-অ্যাবঙ....। এপ্রিল মাসে এশিয়া ও সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের জলাশয়ে এরা প্রজনন শুরু করে এবং নলবনে ও ঝোপের মধ্যে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ ও সাদায় মেশানো; সংখ্যায় ৮-৬টি; মাপ ৮.৫দ্ধ ৫.৮ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২৭-২৮ দিনে ডিম ফোটে; ছানাগুলো বাসা ছেড়ে স্ত্রীপাখির পিছু পিছু মাটিতে ও পানিতে চরে বেড়ায়; শীতের পরিযায়নেও তারা একে অনুসরণ করে।

বিস্তৃতি: মেটে রাজহাঁস বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; প্রধানত শীতে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের সমুদ্র-উপকূলে বিচরণ করে; তা ছাড়া ঢাকা ও সিলেট বিভাগের বড় জলাশয়গুলোতেও পাওয়া যায়। এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: মেটে রাজহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ : মেটে রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ রাজহাঁস (ল্যাটিন : anser = রাজহাঁস) ।
[মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও মোঃ শাহরিয়ার মাহমুদ]

০১৮. Anser indicus (Latham, 1790)
সমনাম : Anas indica Latham, 1790
বাংলা নাম : দাগি রাজহাঁস, বাদিহাঁস (আলী), রাজহাঁস (আই)
ইংরেজি নাম : Bar-headed Goose

বর্ণনা: দাগি রাজহাঁস বড় আকারের জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৭৩ সেমি, ওজন ১.৬ কেজি, ডানা ৪৫ সেমি, ঠোঁট ৫.৫ সেমি, পা ৭.১ সেমি, লেজ ১৪.৮ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে ধূসর মনে হয়; সাদা মাথা থেকে সাদা একটি লাইন ধূসর গলার নিচ পর্যন্ত নেমে গেছে; মাথায় দুটি স্পষ্ট কালো ডোরা থাকে; ওড়ার সময় এদের সাদা মাথা, ফ্যাকাসে দেহ ও ডানার কালো আগা স্পষ্ট চোখে পড়ে। এদের চোখ বাদামি; হলুদ ঠোঁটের আগা ও নাক কালো; পা ও পায়ের পাতা গাঢ় হলুদ। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথায় ডোরা নেই; এর সাদা কপাল, গাল ও গলা মলিন, ধূসর-বাদামি মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের নিচের অংশ থেকে পৃথক করেছে; পিঠ ও পেটের রঙ এক।

স্বভাব : দাগি রাজহাঁস এদেশে লতাপাতা ঘেরা জলাশয়ের পাড়, জনবসতিহীন উপকূলীয় দ্বীপ এবং বড় নদীর চরে বিচরণ করে; সাধারণত ৫-১০০টি পাখির ঝাঁক চোখে পড়ে। রাতে খাবার খেলেও দ্বীপাঞ্চলে এদের দিনেও খাবার খেতে দেখা যায়; খাদ্যতালিকায় আছে সবুজ ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি; মাঝে মাঝে উপকূলের ধানখেতেও হানা দেয়। সোজা লাইনে অথবা ঠ আকৃতির সারিতে এরা ওড়ে চলে। খাওয়ার সময় এরা নাকি সুরে ডাকে: গ্যাগ-গ্যাগ.. এবং কোলাহলময় ডাক: আহন্ঙ-আঙ-আঙ.... অনেক দূর থেকে শোনা যায়। মে-জুন মাসে তিব্বতে হিমালয়ের উঁচু জলাভূমিতে এদের প্রজনন হয়। হ্রদের ধারের মাটিতে লতাপাতার মাঝে পালকের বাসা তৈরি করে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো গজদন্তের মত সাদা; সংখ্যায় ৩-৪টি; মাপ ৮.৪-৫.৫ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ৩০ দিনে ডিম ফোটে। বাবা ও মাপাখি উভয়ে মিলে ছানা পালন করে।

বিস্তৃতি : দাগি রাজহাঁস বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি; শীতকালে উপকূলে থাকে; বরিশাল,চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বড় জলাভূমিতে কালেভদ্রে দেখা যায়। দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তান ও চিনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা : দাগি রাজহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ : পরিযায়নের পথে দাগি রাজহাঁসের দল এভারেস্ট শিখরের ওপর দিয়ে উড়ে আসে বলে তথ্য আছে। এর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ভারতীয় রাজহাঁস (ল্যাটিন : anser = রাজহাঁস, indicus = ভারতের) ।
(মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান)

গণ: Tadorna Oken, 1817
আকার ও স্বভাব রাজহাঁসের মত; ঠোঁট ছোট, গোড়া উঁচু, উপরে উত্তল, আগা চ্যাপ্টা, ঠোঁটের আগার কাঁটা হঠাৎ নিচে বাকানো; ঠোঁটের গোড়া থেকে নাসিকার দৈর্ঘ্য ঠোঁটের এক-তৃতীয়াংশেরও কম; ডানা দীর্ঘ ও সুচালো; ১৪ পালকের লেজটি গোলাকার।
পৃথিবীতে ৭ প্রজাতি, বাংলাদেশে ২ প্রজাতি

******************************

- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

০১৯. Tadorna ferruginea (Pallas, 1764)
সমনাম : Anas ferruginea Pallas, 1764
বাংলা নাম : খয়রা চকাচকি, চকাচকি (আলী)
ইংরেজি নাম : Ruddy Shelduck
বর্ণনা: খয়রা চকাচকি দারুচিনি ও বাদামি রঙের বড় আকারের হাঁস (দৈর্ঘ্য ৬৪ সেমি, ওজন ১.৫ কেজি, ডানা ৩৬ সেমি, ঠোঁট ৪.৩ সেমি, পা ৬ সেমি, লেজ ১৪ সেমি। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কিছুটা পার্থক্য আছে। পুরুষপাখি কমলা-বাদামি থেকে দারুচিনি বর্ণের; হালকা বাদামি মাথা ও ঘাড়; ডানায় ধাতব সবুজ পতাকা ও সাদা ঢাকনি; প্রান্তপালক ও লেজ কালো। প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখির গলায় সরু কালো বলয় হয়। পুরুষপাখির চেয়ে আকারে স্ত্রী সামান্য ছোট; স্ত্রীপাখির মাথা ফ্যাকাসে রঙের এবং গলায় বলয় হয় না। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের চোখ বাদামি এবং ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে স্ত্রীপাখির মত, তবে ডানার গোড়ার-পালক ও ডানা-ঢাকনি ধুসর বর্ণের।
স্বভাব : খয়রা চকাচকি পলিময় উপকূল ও বড় নদীর চরে বিচরণ করে: সাধারণত জোড়ায় বা ছোট ঝাঁকে দেখা যায়। এরা কখনও হাঁসের মত নরম কাদামাটিতে কখনও রাজহাঁসের মত আর্দ্র তৃণভূমিতে আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে শস্যদানা, অঙ্কুরিত উদ্ভিদ, নরম পাতা, চিড়িং ও কাঁকড়া-জাতীয় প্রাণী, শামুক, জলজ পোকামাকড়, সরীসৃপ ইত্যাদি। ভয় পেলে এরা উচ্চস্বরে ডাকে: আঙক-আঙক... ওড়ার সময় হনের্র মত শব্দ করে ডাকে: আআখ... অথবা ট্রাম্পেট বাজানোর মত শব্দ: পক-পক-পক -পক...। মে-জুন মাসে মধ্য এশিয়া ও তিব্বতে এদের প্রজনন হয়। উঁচু মালভূমির মধ্যে যে সব বাদা আর জলাশয় আছে তার পাশে মাটির গর্তে পালকের বাসা বানিয়ে তারা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো গজদন্তের মত সাদা, সংখ্যায় ৬-১০টি, মাপ ৬.৫-৪.৫ সেমি.। ২৮-৩০ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: খয়রা চকাচকি বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে বরিশাল, চট্ট্রগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের হাওর ও নদনদীতে দেখা যায়। এশিয়া ও আফ্রিকার দক্ষিণাংশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়ার মধ্যে তুর্কি, চিন, কোরিয়া, জাপান এবং শুধু মালদ্বীপ ছাড়া ভারত মহাদেশের অন্যান্য দেশে রয়েছে।
অবস্থা: খয়রা চকাচকি বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ : খয়রা চকাচকির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ মরচে-রঙ চকাচকি (ফ্রেঞ্চ : tador চকাচকি ; ল্যাটিন : ferrugineus = মরিচা রঙ ) ।
[মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]

০২০. Tadorna tadorna (Linnaeus, 1758)
সমনাম: Anas tadorna Linnaeus, 1758
বাংলা নাম: পাতি চকাচকি, শাহ চখা (আলী)
ইংরেজি নাম: Common Shelduck
বর্ণনা: পাতি চকাচকি টকটকে লাল ঠোঁট আর সাদা বুকে লাল ফিতা পরা হাঁস (দৈর্ঘ্য ৬২ সেমি, ওজন ১কেজি, ডানা ১১.৫ সেমি, ঠোঁট ৩.২ সেমি, পা ৫.২ সেমি, লেজ ১১.৫ সেমি)। এর মাথা ও ঘাড় চকচকে সবুজ কালোয় মেশানো; সাদা দেহ জুড়ে তিনটি প্রশস্ত কালো লাইন; বুকে তামাটে রঙের ফোটা; চোখ বাদামি; ঠোঁট মেটে লাল থেকে প্রবাল-লাল; ঠোঁটের আগা প্রায় বাদামি; পা ও পায়ের পাতা মেটে পাটল বর্ণ থেকে মেটে লাল, ও নখর কালো। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ও আকারে পার্থক্য আছে; পুরুষপাখির ঠোঁটের গোড়ায় লাল স্ফীত গোল পুটলি আছে; পুরুষপাখির চেয়ে স্ত্রী আকারে ছোট, এবং এর বুকে তামাটে বর্ণের দাগের প্রান্ত কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি, গলার পিছন ও পিঠ কালচে-বাদামি; দেহতল, কপাল, গাল, গলার উপরিভাগ সাদা; এবং বুকে ফেটা নেই।
স্বভাব : পাতি চকাচকি উপকূলের কাদামাঠ, নতুন জেগে ওঠা চর, হ্রদ ও মোহনায় বিচরণ করে; সাধারণত বড় বড় দলে দেখা যায়। কাদা পানিতে ঠোঁট ডুবিয়ে অথবা অগভীর জলে মাথা ডুবিয়ে এরা আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে শামুক, চিংড়ি ও কাঁকড়া-জাতীয় প্রাণী, পোকামাকড়, কেঁচো, শৈবাল, বীজ, পাতা, ইত্যাদি। পুরুষপাখি পরিষ্কার গলায় শিস দেয় ও স্ত্রীপাখি অতিপ্লত ডাকে: গ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ। মে-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে মধ্য-এশিয়ায় এদের প্রজনন হয়; মাটির প্রাকৃতিক ফাটল বা খাড়া উঁচু পাহাড়ের গর্তে বা মাটির গর্তে পালকের বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো গজদন্তের মত সাদা, সংখ্যায় ৬-১০টি; মাপ ৬.৫-৪.৫ সেমি। ৩০ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: পাতি চকাচকি বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের সমুদ্রপোকূল ও নদ-নদীতে বিচরণ করে। উত্তর আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বহু দেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, ইরান, মালয়েশিয়া, চীন, তিব্বত, ইরাক ও জাপানে বিস্তৃত।
অবস্থা: পাতি চকাচকি বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: পাতি চকাচকির বৈজ্ঞানিক নাম Tadorna -এর অর্থ চকাচকি (ফ্রেঞ্চ: tador = চকাচকি)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]
গণ: Cairina Fleming, 1822
বড় আকারের হাঁস; পুরুষপাখি স্পষ্টতঃই স্ত্রীপাখির চেয়ে বড়; উপরের ঠোঁটে কোন মাংসপিন্ড থাকেনা; প্রজনন ঋতুতে উপরের ঠোঁটের গোড়া স্ফীত হয়; ডানার মধ্য-পালক ও উপরের ঢাকনিতে সাদা পতাকা থাকে; ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় ১২টি পালকের লেজ।
পৃথিবীতে ১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০২১. Cairina scutulata (Müller, 1842)
সমনাম: Anas scutulata Müller, 1842
বাংলা নাম: বাদি হাঁস
ইংরেজি নাম: White-winged Duck (White-winged Wood Duck)
বর্ণনা: বাদি হাঁস বিশালদেহী হলদে-চোখ হাঁস (দৈর্ঘ্য ৭৩.৫ সেমি, ওজন ৩ কেজি, ডানা ২০.৫ সেমি, ঠোঁট ৬ সেমি, পা ৫.৭ সেমি, লেজ ১৫ সেমি)। পুরুষপাখির চেহারা ও আকার স্ত্রী থেকে কিছুটা আলাদা। পুরুষপাখির ডানায় কাঁধ বরাবর কোভার্টে সাদা পট্টি; সাদা মাথা ও ঘাড়ে কালো ছোট দাগ; পিঠের বাকি অংশ কালচে ও তামাটে বাদামি মেশানো পালকে ঢাকা; ও চোখ কমলা-হলুদ। স্ত্রীহাঁস আকারে ছোট ও অনুজ্জ্বল পালকের জন্য পুরুষপাখি থেকে দেখতে আলাদা; মাথায় বেশ ঘন কালো দাগ রয়েছে। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁস উভয়ের চোখ বাদামি; ঠোঁট কমলা রঙের, উপরে কালো চিতি; এবং পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদে মেশানো ।
স্বভাব: বাদি হাঁস গ্রীষ্মমন্ডলীয় পাহাড়ি বনের বদ্ধ জলে এবং ধীরগতির স্রোতধারায় বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় বা ৫-৬টির দলে দেখা যায়। এরা গাছে ঢাকা জঙ্গলের জলাশয়ে রাতে সাঁতার দিয়ে অথবা হেঁটে আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে শামুক, পোকামাকড় ও লতাগুল্ম, তবে প্রানীজ খাদ্য বেশি পছন্দ করে। দিনে এরা গাছের ডালে বসে ঘুমায় এবং আহারের খোঁজে গোধূলিতে পানির সামান্য ওপর দিয়ে ওড়ে চলে; ভোরে আবার দিনের আশ্রয়ে ফিরে আসে। পুরুষহাঁস শিঙ্গার মত আওয়াজ করে ডাকে: ক্রংক-ক্রংক.. । জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন ঋতুতে পানির কাছাকাছি কোন গাছের কোটরে ঘাস ও আবর্জনা দিয়ে বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সবুজাভ-হলুদ; সংখ্যায় ৭-১০টি; মাপ ৬.৫-৪.৫ সেমি। ৩০ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: বাদি হাঁস বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ পাহাড়ি বনে দেখা মিলত, এখন নেই (সম্প্রতি পাখিটি এদেশে কারও নজরে পড়েনি)। এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি কেবল এশিয়ার মধ্যে সীমিত, প্রধানত উত্তরপূর্ব ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বভাগ পর্যন্ত রয়েছে।
অবস্থা: বাদি হাঁস বিশ্বে বিপন্ন ও বাংলাদেশে অতিবিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বাদি হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কায়রোর হীরক-হাঁস (ইতালিয়ান: cairino = কায়রোর অধিবাসী ; ল্যাটিন: scutulatus = হীরা-আকৃতি)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম কামরুজ্জামান]
গণ: Sarkidiornis Eyton, 1838
বড় আকারের হাঁস; ঠোঁট মাঝারি আকারের, পুরুষের ঠোঁটের গোড়ায় স্ফীত মাংসপিন্ড আছে যা প্রজনন ঋতুতে আরও স্ফীত হয়; ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় ১৪ পালকের লেজ; পায়ের পিছনের আঙুল কিছুটা ছড়ানো; ডানায় কনুইতে গজালের মত খাড়া নখর আছে।
পৃথিবীতে ১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

০২২. Sarkidiornis melanotos (Pennant, 1769)
সমনাম: Anser melanotos Pennant, 1769
বাংলা নাম: নাকতা হাঁস, নকতা (আলী)
ইংরেজি নাম: Knob-billed Duck (Comb Duck)
বর্ণনা: নাকতা হাঁস বিরাট আকারের কালচে ডানার হাঁস (দৈর্ঘ্য ৬৬ সেমি, ওজন ২.২ কেজি, ডানা ৩৪ সেমি, ঠোঁট ৬.৪ সেমি, পা ৭ সেমি., লেজ ১৪.৫ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের আকার ও চেহারায় কিছুটা পার্থক্য আছে। পুরুষপাখির পিঠ দেখতে কালো, সবুজ ও বেগুনি আভা আছে; সাদা মাথা ও গলা; সাদা গলায় কালো তিলা এবং ঠোঁটে স্ফীত মাংসপিন্ড থাকে। স্ত্রীহাঁস অনেক ছোট ও এর অনুজ্জ্বল পিঠে বাদামি ফোঁটা ছিটানো; ঠোঁটে স্ফীত মাংসপিন্ড নেই। পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের উভয়েরই চোখ ঘন বাদামি, ঠোঁট কালো এবং পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের হালকা ভ্রু-রেখা, অনুজ্জল দেহ, পিঠে পীতাভ আঁশের দাগ ও দেহতল লালচে-বাদামি । ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে S. m. melanotos বাংলাদেশে দেখা যায়।
স্বভাব: নাকতা হাঁস নলবনে ও বাদাভূমিতে বিচরণ করে; সাধারণত ৪-১০টির পারিবারিক দলে দেখা যায়, ২৫-১০০টির ঝাঁকও চোখে পড়ে। অগভীর জলাশয়ে সাঁতার কেটে ও মাথা পানিতে অল্প ডুবিয়ে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় আছে শস্যদানা, কচিকা-, জলজ উদ্ভিদের বীজ, ব্যাঙ ও জলজ পোকামাকড়। বেশ উড়তে সক্ষম। বিপদে পড়লে এরা পানিতে ডুব দিয়ে পালায়; তবে খাদ্যের খোঁজে তা করে না; প্রায়শঃ গাছের ডালে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম করে। পুরুষপাখিরা নিচু স্বরে ব্যাঙের মত ডাকে এবং প্রজনন ঋতুতে গাড়ির হর্নের শব্দে ডাক দেয়। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন ঋতুতে পানির কাছাকাছি কোন প্রাচীন গাছের প্রাকৃতিক গর্তে ডালপালা, ঘাস, শুকনো পাতা ও পালক দিয়ে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফ্যাকাসে ও পীতাভ, সংখ্যায় ৭-১৫টি, মাপ ৬.২-৪.৩ সেমি। স্ত্রীহাঁসএকাই ডিমে তা দেয়; ৩০ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: নাকতা হাঁস বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক এবং বর্তমানে বিরল পরিযায়ী পাখি; এখন শীতে ঢাকা ও সিলেট বিভাগের আর্দ্রভূমি ও হাওরে চোখে পড়ে যেখানে তারা আগে স্থায়িভাবে বাস করত। বাসা তৈরির উপযুক্ত জায়গার অভাবে এখন এ দেশে এর প্রজনন সম্ভব নয়। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়ার মধ্যে দক্ষিণ চিন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কাম্পুচিয়া, লাওস, এবং ভুটান ও মালদ্বীপ ব্যতীত ভারত উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে আছে।
অবস্থা: নাকতা হাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: নাকতা হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ নাকওয়ালা কালোপিঠ (গ্রিক: sarc = মাংসল উপাঙ্গ, ornis = পাখি, melas = কালো, notos = পিঠের)।
[মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান]
গণ: Nettapus Brandt, 1836
ছোট আকারের হাঁস; রাজহাঁসের মত খাটো ঠোঁট, গোড়া থেকে ক্রমান্ত^য়ে সামনে সরু; নাসিকা ছোট ও ডিম্বাকার; পা খাটো; ডানা সুচালো; লেজ গোলাকার; পুরুষ ও স্ত্রীহাঁসের চেহারায় পার্থক্য আছে।
পৃথিবীতে ১ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১ প্রজাতি

******************************
- একলহমা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।