পাখির পৃথিবী- ১১, নিজের খাবারে তা দেয় যে পাখি!

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শনি, ২২/১১/২০১৪ - ১১:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

599074_10152226874125497_937288622_n

উত্তরের বনের হিসাব পৃথিবীর আর সব বনের চেয়ে আলাদা, এখানের গাছ- ভুপ্রকৃতি যেমন আলাদা, তেমনই পশু-পাখিও অদ্ভুততর সব নিয়মে মানিয়ে নিয়েছে টিকে থাকার লড়াইয়ে। যে বছর এখানে ভোল (Vole ইঁদুর জাতীয় ক্ষুদে প্রাণী) বাচ্চা বেশি দেয় সেই বছর প্যাঁচারাও বাচ্চা বেশি দেয়, যে বছর খাবার কম মেলায় ভোল বাচ্চা কম দেয় সেই বছর প্যাঁচারাও ডিম কম দেয় ( এই ডিম দেবার সংখ্যা ২ থেকে শুরু করে ৭ পর্যন্ত হতে পারে খাবারের জোগানের উপর নির্ভর করে)। সেখানে একটি ভালো দিনে যেমন প্রচুর শিকার মিলতে পারে, তেমনি খারাপ দিন আসতে পারে সপ্তাহের পর সপ্তাহে যখন শিকারের টিকিটিরও দেখা মেলে না !

আমাদের Boreal Owl ( Tengmalm's Owl ),/ Aegolius funereus নিজের সৌভাগ্যের দিনে ৬-৭টা করেও ভোল শিকার করতে পারে। তারপর সেগুলোকে গাছের খোঁড়ল, এমনকি ডালের ভাঁজেও রেখে দেয়। কনকনে শীতকাল শিকারের জন্য খুবই ভাল কারণ শিকার করা খাবার মাসের পর মাস নষ্ট হয় না চরম ঠাণ্ডায়, কোনমতে শিকার করে লুকিয়ে রাখলেই হয় ! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্যাঁচারা সাধারণত শিকারের পরপরই উষ্ণ খাবার খায়, ঠাণ্ডা জমাট খাবার তাদের পক্ষে গলাধকরণ এবং হজম করে ফেলা খুবই কষ্টসাধ্য। এই সমস্যা সমাধানে চমৎকার উপায় বাহির করেছে আমাদের ক্ষুদে বোরিয়াল প্যাঁচা।

owl 1

বোরিয়াল প্যাঁচার কথা মনে আছে তো? সেই যে কিউট প্রাণীটিকে দেখার অভিজ্ঞতা বলেছিলামএই পোস্টে-

owl 2

তার সেই অসাধারণ উপায়টি হচ্ছে, পাখিরা যেমন ডিম উষ্ণ রাখার জন্য ডিমের উপর বসে থাকে, নিজের শরীরের উষ্ণতা দিয়ে ডিমকে গরম রাখে যাকে আমরা বলি তা দেওয়া বা ইনকিউবিশন! আমাদের বোরিয়াল প্যাঁচার যখন খাবার দরকার হয় , তখন আগের শিকার করা জমানো একটি ভোল নিয়ে তার উপর বসে তা দিতে থাকে! যখন ভোলটি তার শরীরের উষ্ণতায় একটি জমাট বাঁধা কঠিন মৃতদেহ থেকে ঈষদুষ্ণ, নরম, সুস্বাদু খাবারে পরিণত হয়, যা সে অতি সহজেই হজম করতে পারে তখনই সে খাবার কাজটি সমাধা করে।

owl 4

বেঁচে থাকো বোরিয়াল প্যাঁচারা!

(এখন পর্যন্ত ভোলে তা দিতে থাকা বোরিয়াল প্যাঁচার ছবি তুলতে পারি নাই, তবে যেদিন পেয়ে যাব, আবার লিখব তাকে নিয়ে)

সিরিজের বাকি পর্বগুলো পাবেন এইখানে

পালকাবৃত বন্ধুদের নিয়ে লেখা এই সিরিজটি সেইসব মানুষদের জন্য, এই গ্রহের প্রতিটি বুনো পাখির পালকে আমি যাদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই--

ডেভিড অ্যাটেনবোরো
জেরাল্ড ডারেল
কনরাড লোরেঞ্জ
ইনাম আল হক
সালিম আলী
জেমস অডুবন
রজার টোরে পিটারসন


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পুরনো ওই লেখাটাও দেখলাম। পেঁচাটা তো বেশ কাছেই ছিলো। মানুষ দেখে একদম ভাবান্তর নেই!

তারেক অণু এর ছবি

আয়েশি ভাবে সতর্ক ছিল, আরেকটু কাছে গেলেই উড়াল দিত!

শাব্দিক এর ছবি

খুবই কিউট প্যাঁচা, ছবিগুলি সেরকম মজার। পিপি'দার মত আমিও অবাক এত কাছের ছবি দেখে।
একটা বোকার মতন প্রশ্ন ছিল, এই Vole ইদুরের সাথে বাচ্চার সংখ্যা ব্যাপারটা ডিপেন্ড করে? এরা বেশি খেয়ে বেশি বাচ্চা দিবে এমন কিছু কি?

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

তারেক অণু এর ছবি

আসলে বাচ্চার জন্য যথেষ্ট খাবার থাকলে তবেই না বেশি ডিম দিবে !

তাহসিন রেজা এর ছবি

অণু'দা ঢাকায় সহজে প্রাপ্য পাখি বিষয়ক কিছু বই আমাকে সাজেস্ট করতে পারেন? বাংলা, ইংরেজি দুইটাই চলবে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

তারেক অণু এর ছবি

ইংরেজি খুব ভালো হয় ইন্সকিপের ফিল্ড গাইডটা জোগাড় করতে পারলে।

আর বাংলায় আছে অল্প কিছু বই, তবে ঠিক বইটা বেছে নিতে হবে-

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

বেঁচে থাকো বোরিয়াল প্যাঁচারা! ভালো থেকো।
ভালো থাকুন অণুদা, আমাদরে স্বার্থেই আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

তারেক অণু এর ছবি

স্বাস্থ্য পান করলেন নাকি?

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

করলুম বটে।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

প্যাঁচার প্রথম ছবিটার প্যাঁচাটাকে খুব নিষ্পাপ লাগছে, মনে হচ্ছে ভেতরে কোন "প্যাঁচ" নাই ! চোখ টিপি

রাসিক রেজা নাহিয়েন

তারেক অণু এর ছবি

আসলেই

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি
হিমু এর ছবি

বোরিয়াল আউলকে উত্তুরে প্যাঁচা বলা যেতে পারে বাংলায়। ভোলকে বলা যেতে পারে মাঠমূষিক।

তারেক অণু এর ছবি

নামের আগে নর্দান নেয়া বেশ কিছু প্যাঁচা আছে যেমন ধরেন নর্দান হক আউল, যেটি হতে পারে উত্তুরে শিকরে প্যাঁচা! আবার এর আরেক নাম যেহেতু ট্যাংমান সেইটাও থাকতে পারে। উপমহাদেশের পাখিগুলোর বাংলা নাম শেষ করেই এদিকে হাত দিতে হবে।

ভোলের বাংলা মাঠমূষিক বেশ শোনাচ্ছে কিন্তু।

হিমু এর ছবি

নর্দান হক আউলের দ্বিপদী নাম দেখলাম সুর্ণিয়া উলুলা (বোধহয় মাদী প্যাঁচাকে পটানোর জন্য মদ্দা প্যাঁচা উলুলুলুলুলু শব্দ করে বলেই)। উত্তুরে শিকরে প্যাঁচার বদলে এটাকে উলুপ্যাঁচা ডাকলে কেমন শোনায়?

তারেক অণু এর ছবি

না হে ভ্রাত, এইভাবে মধু ছন্দ ময় নাম দিলে হবে না ! পরে বিপদ আছে ! বিশ্বের ১০,৫০০ পাখির নাম দিতে চাই, মনে রাইখেন!

সকল হক আউল শিকরে প্যাঁচা হলে একটা ঝামেলা কমে, তবে আপনার দেওয়া নামটি প্রস্তাব করব- চোখ টিপি

হিমু এর ছবি

কী বিপদ? ১০,৫০০ পাখি থাকতে পারলে ১০,৫০০ নামও থাকতে পারবে।

সব হক আউলকে শিকরে প্যাঁচা ডেকে ঝামেলা কমাতে চাইলে তো প্যাঁচার রকমফেরও বাছা নিষ্প্রয়োজন। সব কয়টাকে প্যাঁচা ডাকলে তো ঝামেলা ২১৬টা কমে যায়।

Sohel Lehos এর ছবি

চলুক

আচ্ছা টিয়া পাখির মত প্যাচাকে কি পোষ মানানো যায়? বহু কালের শখ একটা প্যাচা পালার হাসি

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

তারেক অণু এর ছবি

টিয়া, প্যাঁচা, ময়না সবই বনের পাখি। এদের খাঁচায় রাখা অত্যন্ত অন্যায়

Sohel Lehos এর ছবি

খাঁচায় রাখব কে বলল? সাথে রাখব। যদি তার ইচ্ছা হয় চলে যাবার চলে যাবে খাইছে

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবি, লেখা অনন্য...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।