পরিতোষ সেনের ‘জিন্দাবাহার’

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: সোম, ০৯/১১/২০২০ - ৮:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রকর পরিতোষ সেনের ঢাকায় কাটানো শৈশব স্মৃতিকথা ‘জিন্দাবাহার’-এর বহু সুনাম শুনেছি নিজস্ব শৈশব থেকেই, কিন্তু বইটি সুল্ভ ছিল না, বিধায় কোন ভাবেই সংগ্রহ সম্ভব হয়ে উঠে নি। সম্প্রতি বইটি পুনঃমুদ্রিত হয়েছে, ঢাকাতেও এবং কলকাতাতেও। গতকাল রাতে পড়ার পর থেকেই এক অবসন্ন করা মুগ্ধতা তাড়া করে ফিরছে, যেন শুধু নিজে পড়ে আত্মস্থ করলেই এই অসামান্য শব্দমালার প্রয়োজন শেষ হয়ে যায় না, সেই সাথে অন্যদেরও জানাতে হয় এই বইটি নিয়ে, সেই কথামালাগুলো নিয়ে। মানুষটাকে নিয়ে।

পরিতোষ সেন মূলত একজন চিত্রকর, জগৎজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন ছবি এঁকেই, পাবলো পিকাসো স্বয়ং তাঁর হাতের আঁকার বেশ প্রশংসা করেছিলেন সামনাসামনি সাক্ষাতে। এই বইতেও তিনি এঁকেই গেলেন, একের পর এক শব্দতুলির আঁচড়ে আমাদের সামনে মনের ফাঁকা ক্যানভাসে নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুললেন তাঁর শৈশবের দিনগুলি, যা মূলত কয়েকজন মানুষকে ঘিরে আবরতিত,এই ভাবেই চিরচেনা হয়ে যায় আমাদের কাছে, দর্জি হাফিজ মিঞা, থিয়েটারের চিত্রকর জিতেন গোঁসাই, হাতুড়ে ডেন্টিস্ট আখতার মিয়াঁ যিনি টেনিদা-ঘনাদাকে হার মানিয়ে খালি হাতে বেঙ্গল টাইগারের ভবলীলা সাঙ্গ করেন,মায়াময়ী কাজের মানুষ জমিলার মা, তাঁর বাবা বৈদ্যরাজ প্রসন্নকুমার, দুই বিটকেল বড় দাদা, শৈশবের অন্যান্য গল্প ও একটি অর্জুন গাছ। সেই সাথে প্রতি অধ্যায়ে শুরু উনার একটি স্কেচ।

কী নিপুণ ভাবে একটার পর একটা চরিত্র তিনি ফুটিয়ে তোলেন আমাদের সামনে অবলীলায়, যেমন দর্জি হাফিজ মিঞাকে নিয়ে লিখেছেন,

‘আমাদের বাড়ির ঠিক উল্টোদিকে, দশ হাতের মধ্যেই, হাফিজ মিঞার দর্জির দোকান। আসন ক’রে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে মিঞা কাঁচি হাতে যখন কোটের ছাট দিতে বসত তখন দেখে মনে হ’ত ঠিক যেন গান্ধার শৈলীর অবিকল বুদ্ধমূর্তি। বুকের পাঁজরের খাঁচাটা যেন তার তিন জ’ পেরেকের মতো সরু শরীরটা থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। খাঁচার তলার পেটের গর্তটি যেন অবিকল একটি আড়াই-সেরি দই-এর খালি ভাঁড়।‘

এইভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন সকলকেই, আবার স্কেচও করেছেন, সেইগুলোই দিলাম উনার পাতার পর পাতার লেখা অমৃতশব্দমালা আর টাইপ না করে।

আর দিনের শেষে তিনি একজন শিল্পী, রঙ নিয়েই তাঁর কারবার, সেই রঙ তিনি খুঁজে নিয়েছেন সবখানেই, এমনকি শৈশবে জ্বলতে দেখা বাবার চিতার আগুনেও পেলেন লাল রঙের ফুলঝুরি-

“তার হাঁ-করা মুখের গহ্বর থেকে এবার-একটা নয়, সাত-সাতটা-আনাভিলম্বিত লকলকে জিভ যেন রক্তের সাতটা পাহাড়ী প্রস্রবণ। তার ভয়ংকর মুখমণ্ডল-চুল থেকে নিয়ে জিভের ডগা পর্যন্ত সবটাই যেন পৃথিবীর তাবৎ লাল রঙের মিলনক্ষেত্র। রক্তজবার লাল, রক্তকরবীর লাল, পলাশের লাল, শিমুল ফুলের লাল, কৃষ্ণচুড়ার লাল, রঙ্গনের লাল, রডোডেনড্রনের লাল, বকুল-বটফল-লিচুর লাল, শীতের বাদাম পাতার লাল, তরমুজের লাল, আবির-আলতার লাল, স্বর্ণসিন্দুর মকরধ্বজের লাল, মোরগের ঝুঁটির লাল, টিয়েপাখির ঠোঁটের লাল-আরো যে কত রকমের লাল, তার হিসেব কে করে! পৃথিবীর সব ইস্পাত কারখানার ফার্নেসের পুঞ্জিত উত্তাপে যেন লালের নির্যাস তৈরি হচ্ছে। আমার পলক পড়ছে না। আমি স্বপ্নাবিষ্ট, অর্ধ-অচৈতন্য।”

'আবার গ্রামের স্মৃতি ভরে আছে সবজেটে রঙের মহাবিশ্বে,ঢাকা জেলার আমাদের গ্রামের কথা মনে এলেই চোখের সামনে একটা অ্যাবস্ট্রাকট ছবি ফুটে ওঠে। আগাগোড়া সবুজ রঙ দিয়ে আঁকা। নানারকমের সবুজ থাকে-থাকে সাজানো। অনেকটা নামকরা মার্কিনী আর্টিস্ট মার্ক রথকো-র আঁকা ছবির মতো। এক কথায় বলা যায় একটা সবুজের সমুদ্র। ভরা বর্ষা আর বসন্তে মনে হ’ত যেন সারা গ্রামটা এইমাত্র সবুজ আলোর পুকুরে ডুব দিয়ে উঠেছে। সব-কিছু যেন একটা সবুজ কাঁচের ভিতর দিয়ে দেখছি, যেন সব-কিছু সবুজ সেলোফিনে মোড়া। কোনো-কোনো অচেতন মুহূর্তে মনে হয় যেন সূর্যটিও সবুজ। রোদের রঙটাও সবুজ। চারিদিকে এমনই সবুজের ছটা। আকাশের নীলের তলায় গাছপালার সবুজ, তার তলার জলের নীল-সবুজ, পলিমাটির ছাই রঙের ওপর ঘাসের সবুজ, শ্যাওলার সবুজ, কুচুরিপানার সবুজ, কচুপাতার সবুজ- কালো –সবুজ, নীল-সবুজ, গাঢ়-সবুজ, হলদে–সবুজ, এমারেল্ড—সবুজ, ওনিক্সি—সবুজ, টার্কোয়াজি–সবুজ, চীনাজোড়ি–সবুজ, সবুজ–সবুজ, আরো–সবুজ- এক সবুজের সিমফনি। আঃ! সব ইন্দ্রিয়গুলো যেন সবুজের সংগীতে ঘুমিয়ে পড়ে।'

কী যে সব দৃশ্য একের পর এক তৈরি করে রংতুলির জাদুকর তাঁর কলম নামের তুলি দিয়ে।

“আমাদের পাড়ার বারবনিতারা প্রতিদিন সকালে দল বেঁধে বুড়িগঙ্গায় স্নান করতে যায়। তাদের স্নানে যাবার পথটি আমাদের বাড়ির সামনে দিয়েই। ভেজা কাপড়ে ফেরবার পথে কালীমন্দিরের দরজায় প্রণাম ক’রে আমাদের গলির মুখে আবার দেখা দেয়। সকালবেলার এই মনোরম দৃশ্যটি আমাদের পাড়ার পুরুষদের চোখকে তৃপ্তি দেয়। তাদের মন-মেজাজ খোশ রাখে। দিনটি ভালো রাখে।”

এভাবে নিজের দুই বড় দাদার জীবনের মোচ্ছবের বর্ণনা আসে, এবং তিনি যে বালক অবস্থায় সেই গৃহে ফুলবাবু দাদার সাথে যেয়ে দাদার প্রেমিকার সাথে দেখা হয়েছিল সেই কথা জানান দেন আমাদের, সেই সাথে নর্তকীর উদ্দাম নাচের সুচারু বর্ণনা।

কিন্তু তারও আগে আসে বাবা ও তার বৈদ্য চিকিৎসার নানা গল্প,

সেন-পরিবারের সরষে পরিমাণ আফিম খাওয়ার রেওয়াজ নাকি অনেক কালের। আমার ঠাকুমা কে খেতে দেখেছি। কি শক্ত বুড়ি। দীর্ঘ পচানব্বই বছর অব্দি বেঁচে ছিলেন। আমার দিদিমাও খেতেন, তিনিও প্রায় ঐ-রকম বয়সেই দেহত্যাগ করেছিলেন। সম্পূর্ণ মজবুত দু-পাটি দাঁত এবং লাঠির মতাে শক্ত শরীর নিয়ে শেষদিন পর্যন্ত স্বপাক রান্না ভােগ করে গেছেন। এমন সৌভাগ্য কজনের হয়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে টনিক হিসেবে এটুকু আফিম প্রচুর দুধের অনুপানে খেলে নাকি মানুষ সবল ও দীর্ঘায়ু হয়। প্রসঙ্গত বলে রাখি যে আমার কনিষ্ঠভ্রাতার যখন জন্ম হল, বাবার বয়স তখন পঁচাত্তর বছর।

উল্লেখ্য বাবার প্রথমা স্ত্রী প্রয়াত হওয়ায় ২য় স্ত্রী অর্থাৎ লেখকের মাকের বিবাহ করেছিলেন, এবং দুই ঘর মিলিয়ে জনা-বিশেক ভাইবোন ছিলেন তারা! বাবার চিকিৎসার বেশ সুনাম ছিল, এবং তার চিকিৎসার সেরা ওঠা একাধিক রোগী ও তাদের রোগের মনোগ্রাহী বর্ণনা দিয়ে ফের উনি আমাদের নিয়ে যান ঢাকার নবাবদের বাড়িতে, যে নবাব কাঁচের গ্লাসে শরবত দিয়েছে বলে বকাবকি করে রূপোর গ্লাসে তাদের শরবত পরিবেশন করেন-
“অর্ধশায়িত অবস্থায় নবাব মখমলে-মোড়া, বিশাল তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে আছেন। নবাব-বাদশাহদেরই এমন চেহারা হয় বটে। বেদানার মতো গোলাপী গায়ের রঙ। নীল টানা চোখ আর কটা চুল। হাতে আতরে-ভেজা রেশমী রুমাল! সেটি মাঝে-মাঝে নাকের ডগায় তুলে ধরছেন। তার সুবাস ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর শরীরটি একটি দামী কাশ্মীরী শালে ঢাকা। জ্বর হয়ছে কি? ঐ অবস্থায় ডান হাতটি ইষৎ তুলে তিনি বাবাকে সশ্রদ্ধ আদাব জানালেন! চোখ বুজে বাবা নবাবসাহেবের নাড়ী পরীক্ষায় মনোনিবেশ করলেন।”

অপূর্ব বইখানা, সেই কবে ধোঁয়াটে শৈশবে নাম শুনেছিলাম আলী ইমামের এক স্মৃতিচারণায়, আজ এতদিনে পড়া হলো। কিন্তু পড়েও তুরীয় আনন্দ পেলাম, মনে হলো এত দিনে পড়াটাই হয়তো ভালো হয়েছে । কিন্তু সবচেয়ে মনে দাগ কেটে গেলে এক অর্জুন গাছকে নিয়ে তাঁর উৎসর্গ করা আস্ত একটি অধ্যায়, ‘হে অর্জুন’

সমগ্র বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ গাছকে নিয়ে কী এত অসামান্য শব্দনৈবদ্য আর আছে, যেটা চিত্রকর পরিতোষ সেন তাঁর মাষ্টারপিস শৈশব স্মৃতিকথা 'জিন্দাবাহার'এ 'হে অর্জুন' অধ্যায়ে পুরোটা জুড়ে এঁকেছেন শব্দতুলিতে? বিশেষ কিছু অংশ তুলে দিলাম,। বড়ই পরিতাপের বিষয় যে তাঁর প্রিয় ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষই অর্জুন গাছ চেনে না, সর্বোচ্চ তার ছালের নাম জানে। ভাবছি একটা বড় অর্জুন গাছের নিচে এই পুরো অধ্যায় পরিবেশসম্মত উপায়ে বাঁধিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে মানুষ পড়ে, জানে, বিস্মিত হয়।


আমাদের পুকুরের উত্তর-পুব কোণে একটা অর্জুন গাছ। জাতে ছিল সে বনস্পতি। এত বড়ো আর বিশাল যে, সে ছিল একাই একশো, একাই একটা বন।

গ্রামের বাইরে- দক্ষিণে, উত্তরে, পশ্চিমে, পুবে- যতদূরই যাই-না কেন আমাদের বাড়ির দিকে তাকালেই দেখি দিগন্ত-বিস্তৃত সবুজের মধ্যে তার মাথা ঠিক উঁচিয়ে আছে। ঐ গাছটির দিকে তাকিয়ে আমার মনে কেম পাঁচমিশালি আবেগ আসে। একদিকে শান্তি আর আনন্দ, অন্যদিকে বিস্ময় আর ভয়। তার আশ্চর্য গড়ন আর ঋজু কাঠামো দেখে মনে হয় কোনো ওস্তাদ ইঞ্জিনিয়ারের হাতের সৃষ্টি। বাইরের এবং ভেতরকার খাড়া ও সমান্তরাল রেখার কী নিখুঁত সমন্বয়। তেমনই নিখুঁত তার ব্যালেন্স। সমস্ত গাছটাতেই, আপাদমস্তক ওজনের এমনই চমৎকার বিভাজন যে ম্যানহাটানের একশো আশি তলার বাড়ির মতো যত ইচ্ছে আকাশের দিকে বাড়িয়ে যাও। ঝড়-বৃষ্টি, ভূমিকম্প, এ-সবকিছুই তার গায়ে এতটুকু আঁচড়ও কাটতে পারবে না। মা-র কাছে গল্প শুনেছি যে ১৩২৫ সালে প্রলয়ের মতো এক সাংঘাতিক ঝড় উঠেছিল। সে-ঝড়ে ঢাকা জেলার বেশিরভাগ গ্রামই নাকি মরুভূমির মতো উজাড় হয়ে যায়। কিন্তু অর্জুন গাছটা যেমন ছিল তেমনই রইল দাঁড়িয়ে- পাহাড়ের মত সোজা আর নিশ্চল। এমনই তার স্থিতি আর গঠনসৌকর্য। এমনই তার আসুরিক শক্তি।

এই তো গেল গাছটির শক্তির কথা। এবার তার রূপ সম্মন্ধে কয়েকটি কথা। শাস্ত্রে বলে ‘রূপন্ত ষোড়শবিধ্ম’। অর্থাৎ রূপের আকার-প্রকার হ’ল ষোলো রকম। সেভাবে এ-গাছের রূপ বিশ্লেষণ করতে গেলে অনেক পাতা ফুরিয়ে যাবে। সোজা কথায় বলি। যে-কোনো জিনিসের রূপের একটা প্রধান নিয়ম হ’ল তার মাপজোক। অর্থাৎ যাকে আমরা বলি প্রোপোরশান। তা-ও এক-এক দেশের এক-এক নিয়ম। মানুষের বেলায় তো সোজা নিয়ম আছে। তার নিজের হাতের সাড়ে-তিন হাত লম্বা, নিজের মুখমণ্ডল তারই নিজের এক বিঘত। সব মানুষের পক্ষেই মোটামুটিভাবে এই নিয়ম চলে। এই অর্জুন গাছটার বেলায় কি করি? গাছের মাপজোক তো জানা নেই। তবুও দূর থেকে যখন গাছটাকে দেখি মনে হয় যেন শ্রবণবেলগোলার গগনচুম্বী সেই বিরাট দিগম্বর মূর্তির মতোই নিখুঁত সুন্দর। যে-মাপজোকে ঐ-মূর্তি তৈরি হয়েছে, মনে প্রশ্ন জাগে, সে-পরিমাণেই কি বিধাতা একেও সৃষ্টি করেছেন? না কি নানা রঙে, নানা ডৌলের সংমিশ্রণে এই রূপজগৎকে সৃষ্টি করেছেন?

শাস্ত্রে এ-ও বলে যে মূর্তির গুণ তিনরকমের। ঊষার গোলাপী আলো যখন গাছের চূড়ায় এসে লাগে মনে হয় যেন বিরাট এক সাত্ত্বিক পুরুষ সটান হয়ে যোগে বসেছেন। হাতে বরাভয়। বসন্তে সেই আলো বর্শার ফলকের মতো কাঁচা, কচি পাতায় লেগে একটা স্বচ্ছ, সবুজ, দিব্যজ্যোতি মহাযোগীর মুখমণ্ডলের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আস্তে-আস্তে হালকা হয়ে আকাশের নীলের সঙ্গে মিশে যায়। কতকগুলো বুনো পায়রা তাঁর চারদিকে নানারকম ছন্দে উড়ে-উড়ে চক্কর কাটে। যেন প্রভাতের বন্দনা করছে। গাছের গোড়ায় শিশির-ভেজা সাদা আকন্দগুচ্ছ এই আলোর স্পর্শে ঝলমল করে। যোগীর শ্রীচরণে যেন ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলি। বিকালের পড়ন্ত আলোতে তাঁকে মনে হয় রাজসিক- যেন তাঁর রঙ-বেরঙের, নানা কারুকার্য-করা বাহনে দাঁড়িয়ে পশ্চিমের দিকে ছুটেছে। আর মধ্যাহ্নের কড়া চোখ-ধাঁধানো আলো যখন তার মাথার ওপর আসে তখন ফুটে উঠে তাঁর প্রচণ্ড উগ্র তামসিক মূর্তি- শুম্ভ, নিশুম্ভ, হিড়িম্বা, পুলোমা, বকাসুর- আকাশ, পাতাল মর্তের সব রাক্ষস-দৈত্যদের সঙ্গে লড়াই করতে যাচ্ছে।

‘সর্ব্বং মনোরমা’—অর্থাৎ যে-মূর্তির প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ বেশি সরুও নয়, আবার বেশি মোটাও নয়। বেশি লম্বাও নয়, আবার বেশি খাটোও নয়, কেবল এমনই শাস্ত্র মানসম্পন্ন মূর্তিকেই নাকি ‘রম্য’ বলা যায়। দশ লাখে মাত্র একটি এমন চোখে পড়ে। ‘তৎ লগ্নম হৃদ’ হৃদয়কে জয় করে এমন জিনিস মনোরম হতে পারে কিন্তু সত্যিকারের ‘অনুপম’ হতে হ’লে তাকে ‘শাস্ত্রমান’ হতে হবে। ‘বাক্যম রসাত্মকম কাব্যম।’ অর্থাৎ শিল্প তখন সৃষ্ট হয় মূর্তিতে ‘রস’ তার আত্মারূপে প্রবেশ করে। অর্জুন গাছটাকে দেখে এমন কত কথাই যে মনে আসে তা কোনোদিন ব’লে শেষ করতে পারব না।”
দেশীই হোক আর বিদেশীই হক,যে –শিল্পের মানদণ্ডে বিচার করি-না কেন, তাতেও গাছটার সৌন্দর্যের কোনো ঘাটতি দেখি না। রিয়ালিস্টিক অর্থাৎ বাস্তবধর্মী স্কাল্পচার ওপর থেকে পড়া আলোতেই তো সব চাইতে ভালো দেখায়। তার শরীরের বহিরেখা, অর্থাৎ যাকে আমরা কন্টুর বলি- তার কাঠামোর, তার মাংসপেশীর সুক্ষ মোলায়েম উত্থান-পতন, তার ডালপালায় ছন্দের যে-খেলা, তার দাঁড়াবার ভঙ্গি, তার ত্রিমাত্রিকতা- সব-কিছু মিলিয়ে যেন রেনেসাঁস যুগের ভাস্কর্যের চরম উৎকর্ষ মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর ‘ডেভিড’। বিশ্বকর্মা এই মহীরুহলে লাবণ্য দিয়েছেন সকলরকমে, সকলভাবে, নানা উপায়ে- আলোছায়া দিয়ে, রঙ-বেরঙ মিলিয়ে, কঠোর-কোমলে একত্রে বেঁধে। বড়ো-বড়ো শক্ত পাথরের ওপর দিয়ে পাহাড়ি স্রোত কী-রকম গড়িয়ে-গড়িয়ে যায়! নিছক কড়ি আর নিছক কোমল দিয়ে কি আর সেঁতার বাজে? জীবন-মরণ, আলো-অন্ধকার- এ-সবই একসঙ্গে থাকলে তবেই তো বাজবে ঐক্যের সুর সারা সংসারে। একেই তো আমরা বলি ইউনিটি। এর সূত্রেই তো সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বাঁধা।

কে জানে কত যুগ ধ’রে পুকুরের উত্তর-পূর্ব কোণে অর্জুন গাছটা দাঁড়িয়ে আছে? কেউ কি তার বয়স জানে? পঙ্কস্তবের মধ্যে পৃথিবীর ভাবীঅরণ্যের যেদিন প্রথম মর্মরধ্বনি উঠেছিল সেদিন থেকেই কি তার আবির্ভাব পূর্বনির্ধারিত হয়েছিল? নুবিয়ার মরুভূমিতে নীলনদের ধারে যেদিন মিশরের সব ওস্তাদ রূপদক্ষেরা আবুসিম্বলের মন্দিরের গায়ে দ্বিতীয় রামেসিসের পর্বতপ্রমাণ মূর্তি খোদাই করেছিল হয়তো সেদিন এই মহীরুহেরও জন্ম হয়েছিল। দুই-ই যেন সৃষ্টির আদিকাল থেকে স্থির নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কালের পথে অগ্রগামী এই গাছটা যেন আকাশের দিকে জোড়-হাত তুলে বলেছে, আমি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকব। পুরনো বট-অশথ দেখলেও ঠিক একই কথা বলে আসে। কিন্তু অর্জুনের সঙ্গে তাদের মিল এখানেই শেষ। বট-অশথেরা পৃথিবীর যত নিরাশ্রিত, শান্ত জীবদের তাদের ঠাণ্ডা ছায়ায় কোলে টেনে নেয়, যেমন ক’রে নিত গভীর অরণ্যের প্রাচীন সাদা জটাজূটধারী, মুনিঋষিদের অবারিত দ্বারের আশ্রম। বট-অশথের ধর্ম হচ্ছে করুণা। অর্জুন তার নিজের বিশালতায়, নিজের শক্তিতে এমনই তন্ময়, যে জৈব জগতের উপকারে সে এল কিনা, তাই নিয়ে সে এতটুকুও মাথা ঘামায় না। এতই তার দম্ভ, এতই তার নির্লিপ্তি।

--\--\
বিচিত্র রূপে মূর্ত গগনচুম্বী এই মহীরুহকে যখনই আমি দেখেছি আমার কানে শুধুমাত্র সৃষ্টির শাশ্বত সংগীতই ভেসে এসেছে যে-সংগীতকে এক কথায় বলা হয় জীবনসংগীত এবং যে-সংগীত এক অনাবিল, উন্নত অনুভবে আমার জীবনকে করেছে সহস্রভাবে সমৃদ্ধ।

“হে তরুবর! প্রায় অর্ধশতাব্দী হ’ল তোমাকে দেখিনি। আজ তুমি পরদেশী। তুমি এখনো আছ কি নেই, কে জানে? জনবিস্ফোরণের চাপে, মানুষের প্রয়োজনে, তুমি হয়তো হয়েছ বিসর্জিত। তোমার পাদপীঠের ওপর দিয়ে হয়তো তৈরি হয়েছে নতুন রাজপথ। একদিন তৈরি হবে কলকারাখানাও। ভোরে সোনালী আলোয় যেখানে দেখেছি তোমার মণিমুকুট, সেখানে উচিয়ে থাকবে একদিন দৈত্যের মতো তার বিরাট চিমনি। কালো-কালো বিষাক্ত সাপের মতো অনর্গল ধোঁয়া পাকিয়ে-পাকিয়ে উঠে লাপিস-লাজুলির মতো স্বচ্ছ নীল আকাশটাকে ক’রে দেবে অন্ধকার।“

কবে কোন দারুচিনি দ্বীপ থেকে বসন্তের এক দিনের শেষে সুদূর সাইবেরিয়াগামী এক বেগুনীরঙের বেলেহাঁস আমাদের এই পুকুরপাড়ের নরম ঘাসে দু-দণ্ড বিশ্রাম করতে নেমে অকস্মাৎ একটি বীজ ফেলে গিয়েছিল। তোমার জন্মের সেই শুভ মুহূর্তে, স্বাতী, রেবতী, অরুন্ধতী- সব নক্ষত্রেরা শঙ্খধ্বনি ক’রে তোমার আগমন ঘোষণা করেছিল। সেদিন ছিল ফাল্গুনী পূর্ণিমা। সেদিন প্রকৃতি তোমার সৃষ্টির কল্পনায় মশগুল। সে-কল্পনায় ছিল দূর ভবিষ্যতের নতুন বিস্ময়ের আবির্ভাব, নতুন-নতুন সৌন্দর্যের জন্ম, নতুন-নতুন পরাণের বিকাশ বীজরূপে নিহিত। চরক, সুশ্রত, বাগভট্ট, চক্রদত্ত, আর্যাবর্তের সব মুনিঋষিরা কত ধুমধাম করে তোমার নামকরণ উৎসব করেছিলেন। চমৎকার সব নাম রেখে তারা তোমার মহিমা গাইলেন। যেমনই ধ্বনি তেমনই তার মাধুরী- গাণ্ডবী, কিরীটী, কর্ণারী, অর্জুন, শম্বর, পৃথজ, কৌন্তেয়, ধনঞ্জয়, ককুভ- আর কত কী! তুমি ছিলে কোটিতে একটি, সহস্র গুণের আধার। তোমার গুণে কত দুরারোগ্য রোগ থেকে হাজার-হাজার মানুষ মুক্তি পেয়েছে, পেয়েছে নতুন জীবন। তোমার একাধিক নাম হবে তাতে আশ্চর্য হবার কী আছে? তুমিই প্রেম, তুমিই সৌন্দর্য, তুমিই শিল্প। তুমিই ভাবুকতা, তুমিই অনুকম্পা। তুমিই সৌন্দর্যপিপাসু প্রকৃত রসিকদের অনুভূতি ও আনন্দের উৎস। কীটপতঙ্গ, পশুপাখি, মানুষ সবাইকে তুমি প্রাণ দিইয়ে ভালবেসেছ। নিজের সম্পূর্ণরূপে বিলিয়ে দিয়েছ নিঃশেষে। তাই তোমার কপালে আঁকা আছে প্রেমের জয়তিলক, প্রেমের উজ্জল বর্তিকা।

হে তরুরাজ, ঘন কালো কত অমাবস্যার অন্ধকারে তোমাকে দেখেছি যেন এক রহস্যময় স্বপ্নবন্দর, কবে শুক্লপক্ষের ফালিচাঁদ উঠে তোমার চারিদিকের ছায়া ও আসন্ন প্রদোষের গভীর অন্ধকার দূর করবে, দেখেছি তুমি তারই প্রতিক্ষায় কত রাত চু’প করে ছিলে দাঁড়িয়ে। গ্রীষ্মের কত অলস দুপুরে তোমার শীতল ছায়ায় শুনেছি পাখির কূজন। কতদিন স্বপ্নে ভেবেছি তোমার ঐ চূড়ায় দাঁড়িয়ে, হাত বাড়িয়ে নীল আকাশটাকে ছোঁব, ওপর থেকে পৃথিবীটাকে দেখব, যেমন ক’রে দেখে চিলেরা। শীতে তোমার পাতাঝরা রুক্ষ কর্কশমূর্তি দেখেছি। দেখেছি তোমার চকচকে তামাটে রঙের নতুন পাতাগুলো ফাল্গুনের গরম আলোতে ঝিলমিল করছে। কী অপূর্ব সে-দৃশ্য। যেন ওমর খৈয়ামের দেশের কোন ওস্তাদ কারিগরের তৈরি অনুপম একটি আকাশজোড়া কাঁচের সুরাপাত্র খোরাসানী বেদানার সরবতে টইটুম্বুর। তোমার চূড়ায় ধাক্কা লেগে বর্ষার প্রথম মেঘ তোমাকে করেছে সিঞ্চিত। শালিক, মাছরাঙা, বুলবুল, টিয়াপাখিরা ডালে ডালে সারি-সারি ব’সে শুকায় তাদের ভেজা পালক। আহা! ডালপালায় যেন রঙ-বেরঙের নানা নক্সার ঘুড়ির দোকান বসেছে। আবার ভরা বসন্তে দেখেছি তোমাকে মসৃণ মখমলের কুর্তায়। মাথায় ছোটো-ছোটো মাখন রঙের ফুলের স্তবকের মুকুট। তোমার হৃদয়স্পন্দন আজও আমি নিজের রক্তের মধ্যে অনুভব করি। কলকাতার মতো এই জনাকীর্ণ, কোলাহলমুখর, ব্যস্ত, পচা, নোংরা, ভাঙাচোরা শহরে বাস ক’রেও তোমাকে কোনোদিন ভুলি নি। জীবনানন্দের যে-অমৃতবাণী তুমি আমায় শুনিয়েছিল, তার কথা মনে এলে আমি আজও কীরকম ছন্নছাড়া হয়ে যাই- অনেক দূরে, এক জনহীন অজ্ঞাত জগতের, উদাস, অপরূপ এক বুনো সৌন্দর্যের মধ্যে যেখানে জীবন এনে দেয় এক মুক্তির স্বাদ আর আনন্দের অনুভূতি।

‘ হে সময়, হে সূর্য, হে মাঘ-নিশীথের কোকিল, হে স্মৃতি, হে হিম-হাওয়া,
আমাক জাগাতে চাও কেন।‘

১৯১৮ সালে জন্ম পরিতোষ সেনের, মানে এই জীবনগল্পগুলো সবই প্রায় শতবর্ষ আগের, যদিও বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৯/৬০ সালে। ব্যক্তিগত জীবনেরও গল্প হলেও এখানে তৎকালীন ঢাকার জনজীবন ও সমাজের অমূল্য সব তথ্য লুকিয়ে রাখা আছে নানা বেশে প্রতি পাতার পরতে পরতে। সত্যজিৎ রায় এ গ্রন্থে খুবই আলোড়িত হয়ে বলেছিলেন, 'পরিতোষবাবুর চিত্রশিল্পের সঙ্গে আমাদের পরিচয় অনেক দিনের। সম্প্রতি তিনি মাঝে মাঝে তুলির পরিবর্তে লেখনীর সাহায্যে ছবি আঁকতে শুরু করেছেন। এ কাজে তার যে নতুন পরিচয়টা পাওয়া গেল সেটা যুগপৎ বিস্ময় ও পুলকের উদ্রেক করে। তীক্ষষ্ট স্মৃতিশক্তির ওপর নির্ভর করে তিনি তার জীবনের নানান ধরনের যেসব অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন এবং লিখছেন, তাতে শিল্পীসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির নজির তো আছেই, তা ছাড়া আছে বহু বিচিত্র ঘটনা আর চরিত্রের সমাবেশ, যার সুসংবদ্ধ ও সরল বিবরণ তাকে সাহিত্যের আসরে স্থান করে দেবে বলে আমার বিশ্বাস।'

এটাই বলতে পারি যে এটা একটা অবশ্যপাঠ্য বই, এবং বাংলাদেশে নতুন করে ছাপানোর জন্য তক্ষশীলার প্রকাশনা বিভাগ ‘বোধি প্রকাশালয়’ এবং কলকাতার প্যাপিরাসকে অশেষ কৃতজ্ঞতা।


মন্তব্য

ওডিন এর ছবি

গত বছরের পড়া সেরা বই।

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আমি শিল্পী পরিতোষ সেন এর নামও জানতাম না। এক অলস সন্ধেবেলা তক্ষশীলায় বই নেড়েচেড়ে দেখার সময় অনেকদিনের চেনা জায়গা 'জিন্দাবাহার' নাম দেখে চোখ আটকে গেলো। জিন্দাবাহারে মাসে একবার যাওয়া হয়েই যায়। তাই দোকানেই কয়েকপাতা পড়ে ফেললাম। এরপরে খবরের কাগজের ভাষায় বলা যায় - ইতিহাস।

মণীন্দ্র গুপ্তের অক্ষয় মালবেরি আর সুধীর চক্রবর্তীর গভীর নির্জন পথে- বই এবং লেখক দুটোই একইভাবে আবিষ্কার করেছিলাম।

তারেক অণু এর ছবি

উনার বাকী চারটা বইই সংগ্রহ করে ফেলতে হবে, সবচেয়ে বড় কথা উনি আবু সিম্বলের মন্দির ঘুরে এসে বই লিখেছেন, হতে পারে আবূ সিম্বল নিয়ে লেখা প্রথম বাংলা বই। আপনার আর আমার তো পড়া মাস্ট!

মন মাঝি এর ছবি

সবচেয়ে বড় কথা উনি আবু সিম্বলের মন্দির ঘুরে এসে বই লিখেছেন, হতে পারে আবূ সিম্বল নিয়ে লেখা প্রথম বাংলা বই। আপনার আর আমার তো পড়া মাস্ট!

আমার পড়া আরও বেশি মাস্ট! হাসি

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

অবশ্যই, মিশর সিরিজ চালু করে দিব জলদিই

মন মাঝি এর ছবি

গ্রন্থালোচনা নাকি ডাইরেক্ট নিজের ভ্রমণের কাহিনি? গ্রন্থালোচনা পড়তেও আমি আগ্রহী, তবে আপনার নিজের ভ্রমণের গল্প হলে আর কিছু চাই না!!! আমি গিয়েছিলাম বহুকাল হয়ে গেল। এখন আপনার চোখ দিয়ে আরেকবার মিশর যেতে খুব ইচ্ছা করছে। তাছাড়া আমার মরুযাত্রা সিরিজটা লেখার সময় থেকেই আমার খুব আগ্রহ ছিল জানতে যে একই জিনিস / জায়গা আপনার চোখে কেমন লাগে! আপনিও সে সময় বলেছিলেন যাবেন। সেই আগ্রহটা তাই এখনও রয়ে গেছে।
সেটা যদি নাইই হয়, তাহলে গ্রন্থালোচনাই সই। আপাতত দুধের স্বাদ ঘোলেই মিটাবো আরকি। আমার স্ট্রবেরি ইয়োঘার্ট খুব ভাল লাগে!!! হো হো হো হাসি)

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

আমাদের গল্পই করব, সাথে ওডিন ছিলেন, তাই 'ওডিনের সাথে অ্যানুবিসের দেশে' নামেও সিরিজ হতে পারে।

মন মাঝি এর ছবি

নর্স দেবতার সাথে মিশরীয় দেবতার মোলাকাত? উফ্‌, দারুন!
তাড়াতাড়ি ছাড়েন। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকলাম!! গুল্লি

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

দেখা যাক, হয়ে যাবে একেবারে ইজরায়েল সীমান্ত থেকে সুদানের সীমান্তের কাছাকাছি

হিমু এর ছবি

দৃশ্যচিত্রী জিতেন গোঁসাইয়ের অধ্যায়টা পড়ে মনে হয়েছে, গুণী পরিচালক আর চিত্রনাট্যকারের জুটির হাতে এটা পড়লে কী দারুণ একটা সিনেমিকা (short-film) হতো! পরান বন্দ্যোপাধ্যায় বা প্রয়াত খালেদ খানকে মানসচোখে জিতেন গোঁসাইয়ের ভূমিকায় দেখছিলাম। বসন্তের কুবাতাসে, বুকের বসন যায় লো খসে, পোড়ারমুখো কোকিল এসে কুহু কুহু করে লো... গানটায় উল্টেপাল্টে সুর দিয়ে কয়েকটাদিন গোসলের সময় নিজেই জিতেন গোঁসাই সেজে হেঁড়ে গলায় গুনগুন করলাম।

তারেক অণু এর ছবি

আহা, সেই দাবার বোর্ড, তাও বাদশাহদের! জিতেই গোঁসাইয়ের স্কেচটা কেন যেন আপ হলো না।

সত্যপীর এর ছবি

তারেকাণু অন ফায়ার - রাত পোহালেই নয়া পোস্ট।

লিখে চলুন হাত খুলে!

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

আপনার পোষ্ট মিস করি ভাই! মোঘলের এলাকা ঘুরে আসছি গত বছর, বাবুরের ফারগানার বাড়ি নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। তা জাহাঙ্গীর বাদশার চিড়িয়া শখ নিয়ে লেখাতে আপনার মন্তব্য আসা উচিত, তাই না?

সত্যপীর এর ছবি

ফরগনার বাড়ি বিষয়ে বিস্তারিত লেখেন। সমরকন্দ বুখারা ঐগুলিও দিয়েন। বাবুর বাদশার পিয়ারা এলাকা সব।

টাল বাদশা জাহাঙ্গীর ও উস্তাদ মনসুর ঘটিত পুস্ট ভালা পাইসিলাম, কিন্তু পরদিনই সেটা সইরা নতুন লেখা! যাই হোক। উস্তাদ মনসুর নিয়ে লেখা আসুক, অপেক্ষায় নাজির।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

আরেহ লেখা লেখার জায়গায় আছে তো, ব্লগারের ব্লগে ক্লিক করলেই পাইবেন! সমরখন্দে তিমুর বাদশাহর সমাধিতে গেছিলাম, এলাহী কারবার।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বইটা কোথাও দেখছিলাম, নামটাও চেনা লাগে। কিন্তু পড়া হয়নি। পোস্টের সুত্র ধরে খুঁজতে খুঁজতে একটা কপি যোগাড় করে ফেললাম। জরুরী একটা বুক রিভিউ।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তারেক অণু এর ছবি

পড়ে জানিয়েন ভাই কেমন লাগল, মানে ব্লগে অবশ্যই

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।