একটা সাদামাটা দিন

তাসনীম এর ছবি
লিখেছেন তাসনীম (তারিখ: শুক্র, ১৯/০২/২০১০ - ৬:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দিনটা সাদামাটা ভাবেই শুরু হল। সকালে উঠে চা বানানো, টিভিতে খবর দেখা সবই করলাম। এরপর হেলেদুলে গাড়িতে উঠে নিজের জীবনকে গালি দিতে দিতে অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা, প্রতিদিন যা যা করি তাই করলাম। বৃহস্পতিবার অফিসে মিটিং থাকে সকাল ৯ টায়, আমি পৌঁছাই ঠিক ৮ টা বেজে ৫৫ মিনিটে।

আমি তখনো জানি না যে আমার বাসার খুব কাছেই 1827 dapplegrey lane এর এক উন্মাদ প্রায় একই সময়ে খুব ভয়ঙ্কর কিছু করতে যাচ্ছে। আমি যখন অফিসে যাচ্ছি শাহানা বাজপেয়ির গান শুনতে শুনতে, সেও তখন হয়ত পাশের শহর জর্জটাউনের ছোট্ট প্রাইভেট এয়ারপোর্টে যাচ্ছে, জানি না সে গান শুনেছিল কিনা আজ সকালে, ঘাতকরা গান শুনে কিনা সেটাও জানি না। আমার মিটিং শেষ করে বেরিয়ে এককাপ ধূমায়িত কফি নিয়ে ডেস্কে আসতেই মেসেজ এলো ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জারে। নর্থ অস্টিনে অফিস ভবনে ছোট একটা প্লেন ক্র্যাশ করেছে। আমার অফিস থেকে বড়জোর দেড়/দুই মাইল দূরে হবে জায়গাটা। ছুটে গিয়ে বারান্দার দাঁড়িয়ে দেখলাম ফায়ার ব্রিগেড আর এম্বুলেন্সের অবিশ্রান্ত ছোটাছুটি, আর দূরে ধোঁয়ার কুন্ডলী।

ফোন করে খোঁজ করলাম ওই এলাকায় অফিস যেসব বন্ধুদের, না সবাই ভালোই আছে। কয়েকজন তখনো দেখতে পাচ্ছে আগুন জ্বলছে, ওদের সাথে কথা বলে আমি চিনতে পারলাম কোন বিল্ডিংটা আক্রান্ত হয়েছে। আমার শৈশবের একবন্ধু ওই কমপ্লেক্সে অন্য একটা ভবনে কাজ করত। অনলাইনে প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা পড়ে মনে হচ্ছিল এটা টেররিস্ট এট্যাক, কোন গর্দভ মুসলমান নয় তো? কয়েকদিন আগেইতো এক আহাম্মক মুসলমান মেজর ফোর্টহুডে গুলি চালিয়ে মানুষ মেরেছিল, ফোর্টহুডও দূরে নয় এখান থেকে।

একটু পরেই জট খুলল, আক্রমণকারীর নাম, ধাম, ঠিকুজি সব জানা গেল, শোনা গেল আমার বাসার কাছেই থাকেন তিনি, ট্যাক্স আর পয়সার ঝামেলায় এই রেগেমেগে এই কান্ড। এখন পর্যন্ত জানি না কয়জন হতাহত হয়েছেন এই হামলায়, বিকেলে কাজের চাপ ছিল আর পত্রিকা দেখার সময়ও পাইনি। শোনা গেল আক্রমণকারী হাইটেকেরই লোক, ৫৩ বছর বয়েসি জোসেফ স্ট্যাক। হামলার আগে dapplegrey lane এর ছিমছাম বাসাও তিনি জ্বালিয়ে দিয়েছেন আগুন জ্বেলে। এই লোকটাকে পত্রিকাগুলো টেররিস্ট বলছে না আর, সম্ভবত তার নামের পিছে হোসেন বা হাসান বা খান বা মাহমুদ কিছু নেই, সেই জন্যই এই রেয়াত।

কিন্তু যেকোন বিচারে এই স্ট্যাক হারামজাদাও এক বিশাল সন্ত্রাসী, তার এদেশে বন্দুক কিনতে বাধা নেই, জর্জটাউনের সেই আপাতশূন্য প্রাইভেট এয়ারপোর্টে থেকে প্লেন জোগাড় করতে অসুবিধে নেই (কোন সিকিউরিটি চেক হয়না ওখানে, মোটামুটি সব ছোটখাট প্লেন ওখানে, আর ওগুলো মূলত ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, আমি একবার একজনের সাথে ওখান থেকে ফ্লাই করেছিলাম কোন প্রকার খানতল্লাশী ছাড়াই), সেই প্লেন দিয়ে মানুষ মারার তিন ঘন্টার মধ্যে সবকিছু বের করার মত তৎপর পুলিশও আছে এখানে, শুনেছি বেশি কিছু করতে হয়নি তাদের, সব নাকি স্ট্যাক সাহেব ওয়েব না ব্লগ কোথায় যেন লিখে গিয়েছেন।

আমরা যারা মুসলমান নাম নিয়ে চলি, তাদের অসুবিধা এই দেশে সর্বজনবিদিত। আমাদের অপরাধ প্রমাণ না হলে আমরা নির্দোষ, আর এই আপাতমুক্ত দেশের “স্ট্রেসফুল” জীবন যে কত স্ট্যাক সাহেব তৈরি করছে তার খবর কে নেয়। বৃথাই ছুটলে শ্যাম চাচা তুমি মধ্যপ্রাচ্যে, কত সন্ত্রাসী ঘরে পালছো তার খবর রাখে কে?

কে জানে আর কোন শালা কোথায় বসে কি প্ল্যান আটছে আশেপাশে?

[প্রথম পাতায় আমার একটা লেখা এখনো আছে, শেষের দিকে, একসঙ্গে প্রথম পাতায় দুইটা লেখা আমার না-পছন্দ, তাও করলাম। আশা করছি এই লেখা আসলে, আগের লেখাটা বিদায় নিবে।]

লিঙ্ক-১

লিঙ্ক-২


মন্তব্য

সাবিহ ওমর এর ছবি

ভয়াবহ!

তাসনীম এর ছবি

সত্যি ভয়াবহ।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হ্যাটস অফ টু ইউ। এটা নিয়ে একটা লেখা আশা করছিলাম। শেষের দিকে আপনার নিজস্ব মন্তব্যও মনে কেড়েছে।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

হিমু এর ছবি

এই লোকের নামের মাঝে হাসান হোসেন কিছু থাকলে ইয়েমেনে কালকেই হয়তো বোমা পড়তো বা মেরিন নামতো।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

তাসনীম এর ছবি

সমস্যাটা এখানেই, নিজের দেশের "সুনাগরিক" যখন সন্ত্রাসী কর্ম চালায় তখন কাকে মারবে শ্যাম চাচা?

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নাশতারান এর ছবি

একটা জোক শুনুন।

জনৈক কৃষ্ণাঙ্গ ভদ্রলোক তাঁর সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে বিমানভ্রমণ করছিলেন। বিমান তখন মহাসাগরের উপর দিয়ে ভেসে চলেছে। হঠাৎ স্পিকারে ভেসে এলো ক্যাপ্টেনের কন্ঠ।

"ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহোদয়াগণ, একটি দুঃসংবাদ। আমাদের একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়েছে। যদিও আর তিনটি এখনো ঠিকমতোই চলছে, তবুও নিরাপত্তার খাতিরে যাবতীয় মালপত্র সমুদ্রে ফেলে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওগুলো পরে নৌকায় করে সংগ্রহ করে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়া হবে যেখান থেকে আপনারা নিজ নিজ মালামাল বুঝে নিতে পারবেন। এহেন পরিস্থিতির জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।"

১৫ মিনিট পর আবারো ক্যাপ্টেনের কন্ঠ।

"ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহোদয়াগণ, আরো একটি দুঃসংবাদ। আমাদের আরেকটি ইঞ্জিন অকেজো হয়ে পড়েছে। এবার শুধু মালপত্র নয়, কিছু যাত্রীকেও নামিয়ে দিতে হবে বিমান থেকে। আমরা তাঁদের ফ্লোটিং ডিভাইস দেব। নিচে পৌঁছুনোমাত্র তাঁদের নৌকায় তুলে তীরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। নৈতিকতার স্বার্থে বিরোধ এড়াতে যাত্রী নির্বাচন করা হবে বর্ণানুক্রমে। প্রথমে A দিয়ে African American। সব আফ্রো আমেরিকানরা দয়া করে হাত তুলুন।"

সেই কৃষ্ণাঙ্গ ভদ্রলোকের ছেলেটি হাত তুলতেই তাঁর বাবা হাত ধরে নামিয়ে দিলেন। "না, বাবা। এখন না।"

কেউই হাত তুলছে না দেখে ক্যাপ্টেন বললেন, "ঠিক আছে। এবার B। B তে Black। কালোরা হাত তুলুন।"

কালো ছেলেটি এবারো হাত তুলতে চেষ্ট করে। যথারীতি তার বাবা তাকে প্রতিহত করে।

এবার ক্যাপ্টেন বলেন, "B দিয়েও কেউ নেই দেখছি। এবার তাহলে C। C তে Colored। কালারড যাত্রীরা হাত তুলুন।"

ছেলেটি আবারো হাত তুলতে গেলে ভদ্রলোক এবারো নিরস্ত করেন তাকে।

ছেলে তখন বলে, "ড্যাড, আমরা তো আফ্রিকান আমেরিকান, ব্ল্যাক এবং কালারড। তুমি আমাকে হাত তুলতে দিচ্ছো না কেন?"

ভদ্রলোকের উত্তরঃ "না বাবা, আজ আমরা নিগ্রো। জ্যু আর মেক্সিকানরা আমাদের আগে যাক।"

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

তাসনীম এর ছবি

হাসি
ভাবছি নিজেকে zulu হিসাবে ঘোষনা দিব।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নাশতারান এর ছবি

তখন ওরা হিসেব শুরু করবে উলটো দিক থেকে। Z Y X W ...

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

তাসনীম এর ছবি

তাহলে Muslim ই ভালো, ১৩ নম্বরে...

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তাহসিন আহমেদ গালিব এর ছবি

খাইছে!
অনেক কিছু জানতে পারলাম।
সাদা চামরাদের গালি দিতে মঞ্চায়...

অমিত এর ছবি

কেউ আগ্রহী হলে এই লুকের ম্যানিফেস্টো পড়তে পারেন

তাসনীম এর ছবি

কালকে একজন লিঙ্কটা পাঠিয়েছিল, পড়া হয় নাই, তবে আন্দাজ করতে পারি। তবে যে প্লেনটা দিয়ে সে আক্রমণ চালিয়েছে, সেটা বেচলেই মনে হয় ট্যাক্সের ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে পারত।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

দেশে এই খবর ছড়ানোর পর বাড়ি থেকে খোঁজ নিচ্ছিল, আবার ৯/১১-র মত কিছু হল কি না।
আপনার কাছ থেকে হাঁড়ির খবর শোনা গেল। আর মন্তব্যের সঙ্গেও একমত। উপায় নেই তাই এখানেই তারা দিয়ে গেলাম আপনারে।

কৌস্তুভ।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ ভালো থাকুন।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

গা জ্বলে...কিস্যু করার নাই...তাইই!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

তাসনীম এর ছবি

আমারও মন খারাপ

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সচল জাহিদ এর ছবি

ভয়াবহ ব্যাপার।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

দুঃখজনক ব্যাপারস্যাপার।

==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ

রাহিন হায়দার এর ছবি

বাজে ব্যাপারস্যাপার!
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই ভয়াবহ ১টি কাহিনী........

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

বাপ্রে!
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।