সচলচারণ ৪

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শুক্র, ২৪/১০/২০০৮ - ১১:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দিনের পরে দিন গেল।এই করে করে গেল অনেকদিন। তখনও আমি নীরব পাঠক। কিছুতেই লিখে উঠতে পারি না। নানারকম নিয়মকানুন নাকি আছে, ভয়ে সেই নিয়মাবলী কখনো উলটে দেখিনা। নিয়ম শুনলেই কেন জানি আমার মুসা(মোজেস)র গল্প মনে পড়ে, সেই টেন কমান্ডমেন্ট এর গল্প--বড় বড় দুই পাথরের পাটা দুই বগলে নিয়ে পাহাড় থেকে নামছে খুব রাগী চেহারার এক বুড়ো। নিয়ম না মানলেই সব্বনাশ! আরো রাগী কে নাকি আছে আরো উপরে, যে নিয়মগুলো দিয়েছে, তাকে দেখা যায় না, এমনাকি মুসাও দেখতে পান নাই, কিন্তু নিয়ম না মানলে নাকি সে খুব রেগে যায়, কড়া সাজা দেয়। বাপরে। মন খারাপ

তাই নিয়ম টিয়মের দিকে আমি বেশী ঘেঁষি না। নানা রকম সংসদ, ক্লাব, সংঘ এইসবের দিকে আমি বেশী যাই না। কারণ ওই নিয়ম। পুরনো এক ফোরামে নিয়ম টিয়ম কিছু ছিলো না বলে যেতাম, কিন্তু পরবর্তীকালে সেখানের অভিজ্ঞতা ও তেমন ভালো না।

সচলে তাই তখন নিয়মের ধার না ধেরে দিব্যি আসি যাই,পড়ি, হাসি, কাঁদি, ভাবি,মনে রাখি, ভুলে যাই, দিনের শেষে ফিরে যাই নির্ভার। কত মান-অভিমান, ঝগড়াঝাঁটি আর মিলমহব্বতের নীরব সাক্ষী নিজেকে অদৃশ্য মানুষের মতন লাগে, বেশ মজা পাই।

বেশ কিছুদিনের যাওয়া আসায় তখন কিছু পূর্বপরিচিতকে দেখে ফেলেছি সচল এ। কনফুসিয়াস, কারুবাসনা, শ্যাজা। তাদের লেখাগুলো পড়ে কমেন্ট দিতে হাত সুড়সুড় করে, কিন্তু না, শেষ মুহূর্তে থেমে যাই। কী দরকার! ঝাড়া হাতপা আছি, হাত বেঁধে ফেলে লাভ কি! মনে পড়ে অচলায়তন এর অদীনপুন্যকে, গিঁটের পরে গিঁট, যে হাত দিয়ে খুলবে সেই হাত ও বাঁধা! মায়ায় জড়িয়ে পড়ে শেষে যদি একদিন ঝগড়াঝাঁটি হয়ে চলে যেতে হয়, সে বড় বিশ্রী কান্ড। না না সে ভালো কথা নয়। আউটসাইডার এর মতন ঘুরি, এ যে মানুষজীবন নয়, বুঝতে পারিনা।

একদিন এসে দেখি মারাত্মক কান্ড বেঁধে গেছে। মান-অভিমান এর চূড়ান্ত চলছে। এর মধ্যে আবার টের পাওয়া গেলো এই নবীন সচল এর এক রাইভাল গ্রুপ ও আছে!!! তারা খবর নিয়ে মজা দেখছে! মনটা খারাপ হলো! নানা জায়গায় দলাদলি দেখতে দেখতে আগে থেকেই তিতিবিরক্ত কিনা!

দেখলাম সচল এ অসাধারণভাবে এইটা হ্যান্ডল করা হলো। এক মজাদার নাটক লেখা হলো, দমফাটা হাসির নাটক। চোর আর পুলিশের নাটক, শেষে চোরে পুলিশে ভায়রাভাই প্রমাণ হলো মেলায় গান শুনে, সেই গান হলো," ওরে রসিয়া বাইদানি.... " পড়ে আর কমেন্ট পড়ে হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে যাবার অবস্থা। আসল মজার শতাংশের একাংশ ও বোঝাতে পারলাম না এই কয় লাইনে। দেখলাম ঝগড়াঝাঁটি মিটে গিয়ে আবার মিল-মহব্বত হলো। মনটা ভালো হলো। এরকম আর তো দেখিনি।

হিমুর মজার লেখার হাত খুব পাকা, দক্ষ। কিছু কিছু লেখা পড়তে পড়তে শিব্রাম চক্রবর্তীর লেখা মনে পড়ে। ওনার ব্লগে গিয়ে পুরানো লেখাগুলো পড়ি। চৌধুরীর গল্প। বললে বিশ্বাস যাবেন না কিছু কিছু কাজের রেসিপিও পাই, যেমন জিরা দিয়ে মাংস। হাসি

কদিন পরে আবার দেখলাম এক মেলার কথা, সেখানে নাকি কেনিয়ার এক কুচকুচে কালো ছেলে হিমুকে নিজের মতন দেখে নিজের লোক মনে করে ড্রাম এগিয়ে দিয়েছিলো বাজাতে। সেই অরণ্যদেবের গল্পের মতন ড্রাম যা বাজিয়ে দূর দূরান্তে খবর দেওয়া হয় (সত্যিই হতো ওখানে) । হিমু সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে বলেন তার পূর্বপুরুষেরা গ্রেট মাইগ্রেশনের সময়েই আফ্রিকা ছাড়েন, সে হয়ে গেলো লাখখনেক বছর। এতদিনের অনভ্যাসে আর আয়ত্ত নেই ড্রাম বাজানো! হাসি
(চলবে)


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হো হো হো
মজা লাগল।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হিমু এর ছবি

আমার নাম কারো লেখায় দেখলে প্রবল সংকোচ বোধ করি। আমাকে কি মাফ করে দেয়া যায় না হাসি ?

আমার লেখা পড়ে আপনি কিছুটা হলেও মজা পেয়েছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনে যে কি করতে ঐসব বিজ্ঞান আর কবিতা লেখতে যান...
আমি তো আপনের মুগ্ধ ভক্ত হয়া যাইতেছি দিনে দিনে... দেঁতো হাসি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ফট কইরা শ্যাষ কইরা দিলেন ক্যান?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

শ্যাষ তো করি নাই পরিবর্তনশীল, চলবে কইছি তো।:-))
হিমু,
একে একে সকলেই আসবে, আপনার সলজ্জ হবার কারণ নাই।:-))) আসলে হিমু নামটা পুরানোদিনের হুমায়ুন আহমেদের কারণে খুবই ভালোলাগার নাম। কিছু মনে নিয়েন না।
নজরুল,
যেমুন বা কবিতা তেমুন বা বিজ্ঞান, কোনোটাই সুবিধার জিনিস না।চারিদিকে এত যে পাগল, কেন জানেন? হো হো হো)
মাহবুব মুর্শেদ, আমার ধন্যবাদ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হিমুর লেখার কথা আর কী বলব। সবগুলো যে পড়া হয় তা নয় তবু্ও একটা জিনিস আমি ঠিকই অনুধাবন করি--সেটা হলো হিমু যত দ্রুত যে মানের লেখা লিখে ফেলতে পারে তা যে কারোর জন্যেই ঈর্ষামূলক।

আপনার সচলারণ পড়তে ভালো লাগছে। তবে প্রত্যেক পর্বে একটা পরিণতি এনে তবে শেষ করলে মনে হয় ভালো হতো। হুট করে শেষ করাটা কেমন যেন লাগে।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

ইরাকের সমুদ্র ( চোখ টিপি ) জাতীয় আপনার কঠিন কঠিন সব লেখায় দাঁত বসাতে পারি না, তবে এই সিরিজটি পড়ে আরামবোধ হয়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
Life is what happens to you
While you're busy making other plans...
- JOHN LENNON

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনার লেখায় কেমন একটা অতৃপ্তি থেকে যায়। এতো ছোট ছোট পোস্ট... আরো বেশি কেন লেখেন না! হাসি

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

কনফুদা আর শ্যাজাদির লেখা আমারও ভাল লাগে। কারুদার টা তো বটেই।
হিমুদার কোনও লেখা মিস না করার চেষ্টা করি। কত্তো টাইপের যে লেখা লেখতে পারে এই মানুষটা ! তার উপর আবার বিশাল ভাষাবিদ, কয়টা ভাষায় যে ব্লগিং করে তার ঠিক হিসেবও জানা নেই আমার। এগুলা বাদ দিলে আবার গানও করে। এক অঙ্গে কত রূপ চিন্তা করে দেখেন ! মাঝে মাঝে উনাকে দেখে হিংসেও যে হয়না তা বলা যাবেনা।
আর আপু আপনার এই লেখাতেও বেশ রসের সন্ধান পেলাম। মজার হয়েছে।

--------------------------------------------------------

রাফি এর ছবি

ভাল লাগছে এই সিরিজটা...। চলুক....

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

সত্যি।
অঅপনার সচলচারন অনেক অনেক বেশি ভালো লাগছে পড়তে।
একটু ছোট হলেও লেখার এই সাইজগুলোই আমার বেশি পছন্দ।
শেষ হওয়ার পরেও টানটা থেকেই যায়। হাসি
চলতে থাকুক...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

কল্পনা আক্তার এর ছবি

মজার হয়েছে....পরের গুলোর অপেক্ষায় রইলাম

.....................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

আপনাদের অনেক ধন্যযোগ।
আমার নিজেরও ছোটো সাইজের লেখাই পছন্দ। বেশ একটানে পড়ে ফেলা যায়। বোরিং হলেও ক্ষতি হয় না, বেশী বড় তো না! হাসি
আর বোরিং না হলে তো আরো ভালো।:-)(দাঁতওলা হাসির ইমোটা দেন কেমনে? )

কীর্তিনাশা এর ছবি

মজারু !! হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মূলত পাঠক এর ছবি

দুর্দান্ত!

সাজ্জাদ সাজিদ এর ছবি

ভালো লাগলো, চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।