ইচ্ছাফড়িং

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: রবি, ১৩/১১/২০১১ - ৮:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হেমন্তের দিন গুলোকে বিষাদবিধুর বলেন জ্ঞানীগুণীরা অনেকে। দিন ছোটো হয়ে যায়, আলো পাওয়ার সময়টুকু কমতে কমতে কমতে কমতে কেমন একটা মনকেমন রেখে যায়, বিরাট বিরাট গাছেদের সব সবুজ পাতাগুলো দেখতে দেখতে বাদামী লাল কমলা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে যেতে থাকে, ন্যাড়া গাছেরা নাঙ্গা সন্ন্যাসীর মতন স্তব্ধ দাঁড়িয়ে থাকে উদাসীন নীল আকাশের নিচে। এমন সব দিনে মানুষের মন ও নাকি কেমন বিষাদনীল হয়ে যায়।

দরজাবন্ধ হয়ে যাওয়া ঘরের মতন লাগে মনটা। তাই নিয়েই আসি যাই ঘুরে বেড়াই, দৈনন্দিনের দাবী তো না মিটালে চলে না। নতুন কোনো লেখা আসে না কলমে, আসে না মনে, অন্যদের লেখাপত্তর পড়ি- এখনকার মানুষের লেখা, অনেক বছর আগের মানুষের লেখা, আগে যেসব লেখা পড়ে ভালো লেগেছে, আনন্দ হয়েছে সেসব লেখা। কিন্তু কিছুই যেন যায় না ভিতরে, ঝরে যাওয়া পাতাদের মতন ঝরে যায়, উড়ে যাওয়া হাঁসেদের ডানা থেকে ঝরে যাওয়া জলবিন্দুর মতন ঝরে যায়।

সেই অলৌকিক ইচ্ছেরা কই? ওরাই তো টান দিয়ে বার করতো বাইরে, ওরাই তো দেখাতো আলো দেখাতো ছায়া দেখাতো মেঘেরোদে জড়াজড়ি খেলা। সেই মেঘ সেই রোদ তো আছে, সেই আকাশও তো একই, তবে ইচ্ছের সেই পক্ষীরাজ কোথায়? সে কি আসে আর যায়, ধরা দেবে না?

এই তো একটা ইচ্ছে কেমন আলোয় ছায়ায়
খাতার পাতায় দু'এক টুকরো আঁচড় কাটায়-
সময়বেড়া টপকে গেছে সফেদ ঘোড়া
ঐ ওপাশেই ঝিণুকবাগান বর্ণচোরা,
এই তো আবার চোখ ঢেকে যায় বৃষ্টিধারায়
ইচ্ছেগুলো জলফড়িং এর সঙ্গে পালায়।

আবার দেখি রোদ পড়েছে ছিন্নপাতায়
বৃষ্টিধোয়া ছবির মাঠের রঙীন ছাতায়,
ঐ তো আসে দু'পাক খেয়ে ঝিলিকভ্রমর
কানের গোড়ায় স্পষ্ট শুনি গুঞ্জনস্বর
এই তো আবার চোখ ঢেকে যায় ঝড়ের ধূলায়
স্বপ্নদুপুর দুদ্দাড়িয়ে দৌড়ে পালায়।

***


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বারোটা নতুন সমাসবদ্ধ পদ সনাক্ত করতে পারলুম। এই এক্সপেরিমেন্টটা ভালো লেগেছে। কবিতাটি (গদ্যাংশসহ) এমন picturesque যে ঘন্টাখানেক সময় খেয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তুলিরেখা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
বলেন কী! এতগুলো নতুন সমাসবদ্ধ পদ? লেখার সময় খেয়াল থাকে না, কেমন যেন একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। হাসি
পড়েছেন বলে ধন্যবাদ। আসলে শুধু কবিতাটাই প্রথমে মনের মধ্যে এলো, তারপরে এলো সামনের গদ্যলাইন গুলো। ওগুলো ঘরের দরজার মতন। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এই হেমন্তের কুয়াশায় বৃষ্টিধোয়া ছবির মাঠ দেখিয়ে দিলেন? বাহ চলুক

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

কবিতা পড়তে পড়তে ছোট ছোট দৃশ্যরা ভালোই খেলে গ্যালো মাথার ভেতর দিয়ে।

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তারেক অণু এর ছবি

উড়ে যাওয়া হাঁসেদের ডানা থেকে ঝরে যাওয়া জলবিন্দু-- কি দারুণ!

তুলিরেখা এর ছবি

আরে আপনার তোলা ফটোতেও তো এমন দেখলাম কত। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তাপস শর্মা এর ছবি

বিষণ্ণতার প্রচ্ছদ , তুলি দিয়ে আঁকা, কলমের ক্যানভাস। তবুও 'পথ হারাবো বলেই আবার পথে নেমেছি...... '

খুব ভালো লাগলো।

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তাপস।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

কল্যাণF এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু
লেখাপত্তর টা খুব ভাল লেগেছে তুলিদি। কিন্তু ঘটনা হল অন্যদের মনে কি চলছে সেইটা আপনি কিভাবে ধরলেন? বড়ই বিচিত্র অ্যাঁ

তুলিরেখা এর ছবি

এরে কয় এমপ‌্যাথি। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

আশালতা এর ছবি

আগে তোমার পোস্টে ফার্স্ট হবার জন্য হুড়োহুড়ি করতাম এখন বোধ হয় লাস্ট বেঞ্চে বসার টিকেটটা আমিই কেটে নিচ্ছি। সে যাহোক, লেখা তো তোমার লেখাই, আমার ভালো না লেগে যাবে কই ? হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তুলিরেখা এর ছবি

কেন আশালতা? রাগ করলে নাকি আমার উপর? নাকি অন্য কোনো কারণ? চিন্তিত

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

আশালতা এর ছবি

আরে না না, রাগ করবো কেন ? দূরো ! এমন ভালো যে লেখে তার ওপরে রাগ করে কোন পাগলে ? আজকাল সবার পরে এসে পোস্ট পড়তে পাই যে এইজন্যে বললাম। নানান ঝামেলায় আউলে ঝাউলে গিয়ে সময়মত কমেন্টানো হচ্ছেনা এই আর কি। তবে ডুব দিয়ে থাকলেও চোখ বুলিয়ে যাই কিন্তু ঠিকই। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তুলিরেখা এর ছবি

আচ্ছা আশালতা, ছন্দ আর আসে না? সে কেমন আছে?
দ্যাখো দেখি, কয়েকটা দিন যেতে না যেতেই এখানেও হারানোর পালা শুরু হলো। মন খারাপ

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

আশালতা এর ছবি

ছন্দবাবু আর কেমন থাকবে ? সেতো ঠিক করেই রেখেছে যে চাই আর যাই হোক ভালো সে থাকবেই না। আর তাই নখে খুঁচিয়ে ফিচফিচ করে কাঁদে আর কলম কিবোর্ড জলে ফেলে। আমি তো কেবল দিন গুনছি কবে নাগালে পাব আর ঘাকতক দিয়ে ভুত তাড়াব, তো সেই পাজির দেখা মিললে না ! তুমি খানিক কান টেনে দেখতে পার। রেগে টং

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তুলিরেখা এর ছবি

তা আর বলতে! আমি পেলে তার কান টেনে একেবারে এমন লম্বা করে দেবো যে লম্বার্ডি যাবার ইচ্ছে হবে। হাসি
কিন্তু তার জন্য কানের নাগাল তো পাওয়া চাই, তা তো পাই না। মন খারাপ
ভুলিয়ে ভালিয়ে পুলিপিঠের লোভ দেখিয়ে তো আনতে পারো একটু। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

না, আমি লাষ্ট বেঞ্চি!

সময়বেড়া পেরিয়ে ঝিনুকবাগান থেকে কোচর ভর্তি ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে জলফড়িংয়ের পেছনে কিশোর বেলার ছুট ছুটতে ছুটতে ছবির মাঠে এসে থামি। তারপর ঝিলিকভ্রমরের মতো গুনগুনিয়ে তোমাদের বলি স্বপ্নদুপুরে এসো, এসো দৈব পিকনিকে মাতি!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তুলিরেখা এর ছবি

এই তো আবার ইচ্ছেফড়িং ভাসছে হাওয়ায়
জলপরীমন আবার জাগে জোছনাদাওয়ায়
ভিতরঘরের দরজা খুলে
অবাকপাগল আবার বলে
পালিয়ে যাওয়া পালকঘুড়ি আসবে ফিরে
নীলটুবটুব সাঁতারবাটির কিনার ঘিরে।

হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।