ভ্রমনে বিভ্রাট ৪

ঈয়াসীন এর ছবি
লিখেছেন ঈয়াসীন [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২৬/০৭/২০১৩ - ৮:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গমনপথ সংক্রান্ত

অন্তিম বিকেলের আকাশ, আলোর স্বল্পতা আর আঁধারের আধিক্য থাকলেও মেঘদল ছাড়িয়ে ভূমির কাছাকাছি আসতেই অনেক কিছুই প্রায়স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হাইওয়ের বাতিগুলো সমান্তরাল আলোকরেখা এঁকে ছুটে গেছে অনেক দূরে। আকাশ থেকে দেখা অন্য পাঁচটা শহরের চেয়ে পার্থক্য কোথায়? সেইতো ঘরবাড়ি, কখনও সবুজ, কখনও জল, কিংবা পাহাড়, অন্ধকার ম্লান করা নিয়ন আর সোডিয়ামের ঔদ্ধত্য। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি শহরে উড়োজাহাজ অবতরণকালে এমনটাই দেখা যায়। এ যাত্রাও তার অন্যথা ঘটলো না। ‘ভ্রমনে বিভ্রাট’ সিরিজে এই লেখাটি কতটা প্রাসঙ্গিক জানিনা। কেননা এটা কোনো ভ্রমন নয়, এমনকি কোনো এয়ারপোর্টে ট্রানজিটও নয়; জ্বালানী সংগ্রহণার্থে সাময়িক অবতরণ মাত্র। তবু এতে ভ্রমনের লেবেল না হলেও বিভ্রাটের লেবেল আঁটিয়ে উপস্থাপন করবার পেছনে একটি বিশেষ কারণ আছে।

(এই সিরিজের আগের পর্বগুলো পড়তে চান? এই নিন )

পর্ব ৪

সাল - ২০১৩
স্থান – জিন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, করাচী
দেশ – পাকিস্তান

গেল মার্চে দেশ থেকে ফিরছি কাতার এয়ারওয়েজ-এর ফ্লাইটে। গমনপথটি ছিল ঢাকা-দোহা-স্টকহোম-হেলসিঙ্কি, তবে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ আগে জানলাম প্রয়োজনীয় জ্বালানী সংগ্রহণার্থে করাচীতে নামতে হবে আধ ঘণ্টা কি চল্লিশ মিনিটের জন্যে। তবে কোনো যাত্রী প্লেন থেকে নামতে পারবে না আর নতুন কোনো যাত্রীকেও সেখান থেকে তোলা হবে না। সেই থেকে আমার মেজাজ খিটখিটে হয়ে রইল। পাকিস্তানে বিশেষ করে করাচীতেই আমার অনেক কাছের আত্মীয় স্বজন থাকেন। আমার আপন খালা ও খালু ষাটের দশকে জিন্না মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে ওখানেই বসতি গড়েছে। তারা কেউ পাকিস্তানি নন, খালা টাঙ্গাইলের আর খালু খাটি বরিশাইল্যা। চিকিৎসক দম্পতির নিজস্ব ক্লিনিক রয়েছে করাচীর প্রাণকেন্দ্রে। সেই খালার ছেলের সাথেই আমার বোনের বিয়ে হয়েছে। করাচী বলতে গেলে আমাদের আত্মীয়বাড়ী। আমি ছাড়া আমাদের পরিবারের সবাই সেখানে একাধিকবার বেড়িয়ে এসেছে। আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ঐ শহরে, ঐ দেশে আমি কখনো যাবো না। তা এই হতচ্ছাড়া কাতার এয়ারওয়েজ আমার সেই প্রতিজ্ঞায় আজ জল ঢেলে দিল। ‘প্লেন থেকে নামতে হবে না’- সেই রক্ষে।

যতক্ষণ শূন্যে ছিলাম ঠিক ছিলাম; উড়োজাহাজের উদোর ফুড়ে বেরিয়ে আসা বিশালাকৃতি চাকাগুলো রানওয়ে ছুঁতেই কেমন করে যেন সব ওলট পালট হয়ে গেল। বুকের ভেতর সত্যি সত্যি এক ভয়ঙ্কর ভুমিকম্পের মতন কিছু একটা ঘটে গেল যেন। মাথার ভেতর কে যেন গির্জার ঘণ্টা বাজাতে লাগলো অবিরাম। না না চাকা, ও মাটি ছুঁয়ো না, ছুঁয়ো না; ফিরে চল আকাশে। আমার কথা কানে তুললো না চাকা, আমায় নিয়ে ছুঁলো সেই দেশের মাটি, যে দেশটিতে আমি কোনোদিন আসতে চাইনি। আমি নিঃসংকোচে মানি, এই দেশটিতে বহু ভাল মানুষ আছে। ভাল মানুষ পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই আছে। কিন্ত যদি গোটা পাকিস্তানি সত্ত্বাটিকে একটি মানুষের অবয়বে চিন্তা করি; সেই মানুষটিই তার বিকৃত মানসিকতায়, উদ্ধত হাতিয়ারে, স্খলিত বীর্যে ছিন্নভিন্ন করেছিল আমার মাতৃভূমিকে। সেই মানুষটির দাঁতে ঠোঁটে এখনও লেগে আছে ৪২ বছর ধরে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ। জানলার বাইরে তাকাতেই বিমানবন্দরের নামটি চোখে পড়লো। ‘জিন্না’ নামটি চোখে পড়তেই গা ঘিন ঘিন করে উঠলো। এই দেশে কেন এলাম? এই দেশ আমার জন্যে নয়। এদেশের মানুষও হস্ত পদ স্কন্ধ মাথা ওয়ালাই মানুষ, এদেশেও কবি আছে, এই দেশের মানুষও গান গায়, তরুণেরা তরুণীদের বক্ষ উজার করে ভালবাসে। তবু কেন মনে হচ্ছে এ এক ভিন্ন গ্রহ? কেন মনে হচ্ছে সসাগরা ধরণী হতে বিচ্ছিন এক দ্বীপে এসে পৌঁছেছে আমার তরণী। মনে হচ্ছে কেউ যেন আমায় নর্দমায় ফেলে রেখে গুমুত বর্জ্যে লেপটে রেখেছে আমার সমস্ত অঙ্গ। অতিরিক্ত ঘৃণাভাব থেকে বিবমিষার উতপত্তি হয়। শেষে তাই হল। দৌড়ে টয়লেট পর্যন্তও যেতে পারলাম না। উড়োজাহাজ বেশিক্ষণ সময় নেয়নি। আধ ঘণ্টার মধ্যেই নড়েচড়ে উঠলো। যাও রথ উড়ে যাও, পশ্চাৎমুখী টান থেকে তোমার সম্মুখ বেগের মাত্রা আরো বাড়াও, অভিকর্ষকে ছিন্ন করে উড়ে যাও ঐ আকাশে, যেখানে মুক্তির স্বাদ মেলে।

বি দ্র : ভ্রমনের বা যাত্রার পূর্বে গমনপথ যাচাই করা আবশ্যক। কসাইখানা এড়িয়ে চলুন।

(ধীরে হলেও চলবে)

আগাম বার্তা : সপ্তা দুই বাদে এমন এক দেশে যাচ্ছি, যেখানে বিড়ম্বনা ও বিভ্রাট নাকি পদে পদে ওঁত পেতে থাকে। আমিতো ছাড়, কিং খানও নাকি তাতে রেহাই পান না। ফিরে এসে জানাবো সেই বৃত্তান্ত। আরেকটি খবর- আগামী ভ্রমনের বিশাল ব্যয়টি বৌ বহন করছে। ক্যাম্নে কি? হুজুর যে কইল 'বরকত নাই, বরকত নাই, বরকত নাই'


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমার কিন্তু একবার পাকিস্তানে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। এতো বড় একটা দেশ, অথচ কোনো মানুষ নাই!
যাবো একবার

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

হো হো হো যা বল্লেন নজু ভাই গুরু গুরু

ঈয়াসীন এর ছবি

দেঁতো হাসি

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

তানিম এহসান এর ছবি

এতো বড় একটা দেশ, অথচ কোনো মানুষ নাই! দেঁতো হাসি

ক্যাপ্টেন নিমো এর ছবি

এতো বড় একটা দেশ, অথচ কোনো মানুষ নাই!

সত্যি কথা বলছেন

নিরীহ মানুষ  এর ছবি

মজা পাইলাম ভাই, অতিব সত্য কথা

নিরীহ মানুষ  এর ছবি

পাকিস্তানের প্রধান খেলা নাকি ফিক্সিং , দেখেন কাতার ইয়ারওয়েজ এর সাথে কোন ফিক্সিং কেস করছে কিনা !

ঈয়াসীন এর ছবি

চোখ টিপি

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

মালাকাইেটর ঝাপী এর ছবি

নজু ভাই এই কথার উৎস কোথায় জানতে মুঞ্ছায়।
গড়াগড়ি দিয়া হাসি
চাল্লু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সত্য কথার আবার উৎস লাগে নাকি?

অ.ট.
আপনি প্লিজ ঝাপী না লিখে 'ঝাঁপি' লিখুন।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

স্যাম এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

আব্দুল্লাহ এ এম

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

একবার এক আফগান করাচী বিমানবন্দরে নেমে নিজে নিজেই তার জন্যে ভিআইপি ট্রিটমেন্ট দাবী করে বসলো। তার দাবী সে আফগানিস্তানের নৌমন্ত্রী। একথা শুনে ইমিগ্রেশনের অফিসারেরা তাকে পাগল ভেবে বসলো। তারা বললো যে যে দেশে নদী বা সমুদ্র নেই, সেই দেশে নৌমন্ত্রী আসে কোত্থেকে! তারা আফগানকে পাগল আখ্যায়িত করে তাড়িয়ে দিতে উদ্দত হলে আফগান মুচকি হেসে বলে আফগানিস্তানে নদী-সমুদ্র না থাকার কারনে যদি নৌমন্ত্রী না থাকতে পারে তবে রে ভোদাই তোদের পাকিস্তানে আইন ও বিচার মন্ত্রী এলো কোত্থেকে?

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

জটিল বলেছেন দাদা --- গড়াগড়ি দিয়া হাসি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

চরম উদাসের কথা মান্য করেছিলেন কি? থু থু কিংবা বর্জ্য ত্যাগের জন্য এমন উপযুক্ত দেশ আর নেই।

ঈয়াসীন এর ছবি

যা ফালাইতাম সবই ভিতরে পড়তো।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

সুলতান এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার অনুভূতির সাথে পূর্ণ সহমত। কিন্ত যেখানে এসে ধাক্কা খাই - খান সেনারা তো তবু কসাইখানার দেশ থেকে এসেছিল, নিজের দেশের অমানুষগুলি কি করে নিজের দেশের মানুষের উপর অই বিপুল নারকীয় নৃশংসতা চালাতে পেরেছিল আর তার পরে স্বাধীন দেশে তারা এত সমাদর আর ক্ষমতা পেল! মেলে না, তল মেলে না।
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি
তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

ঈয়াসীন এর ছবি

সহমত

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

তারেক অণু এর ছবি

ছবিটা নিচে দিতে পারতেন, পাকিস্তানের পতাকা, বিশেষ করে জিন্নাহর নাম নীড়পাতায় দেখতে না হলেই ভাল লাগবে।

ভ্রমণ শুভ হউক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

পাকিস্তানের খেঁতাপুড়ি। পাকিস্তান ও পাকিস্তানী পন্য বয়কট। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

উপরওয়ালাই হোক অথবা নেচারই হক,তাদের এক নাজাত আবিষ্কার " ফাকিস্তান "।
শাকিল অরিত

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

আয়নামতি এর ছবি

ঘোড়ার ডিমের ছবিটা না দিলেও কিছু আসতো যেত না।
আম্রিকা ভ্রমণের বৃত্তান্ত সেরকম কুটিল জটিল হবে আশা করি খাইছে

ঈয়াসীন এর ছবি

ছবি ডিলিটেড। ভবিষ্যতে এমন অসতর্কতা ঘটবে না।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আমিও ভেবেছিলাম ওই দেশে কোনদিন যাবনা...
চরম উদাসের লেখা পড়ার পর ভাবি, যাবই যাব... বারবার যাব শয়তানী হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

নজরুল ভাই আর রাত:স্মরণীয় দা দু'জনের মন্তব্য পড়ে হাসতেই হাসি!

অতিথি লেখক এর ছবি

পাকিস্তানে যে এখনো আস্ত একটা বিমানবন্দর আছে, সেইটা শুনতেইতো কেমন জানি ফিশি লাগতেছে, আমিতো জানতাম ওইখানে সবই এখন ধ্বংসস্তুপ। আপনি শিউর ওইটা আসলেই পাকিস্তান ছিল?

-- রামগরুড়

ঈয়াসীন এর ছবি

না না, আমি কিন্তু ফাউ পাইয়া বেশী গিলি নাই।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

মনে হচ্ছে আমিই একটু বেশী গিলে ফেল্লাম আজ রাইতে। না, আপনার কথাই ঠিক, উইকিতে দেখলাম সেই জিন্নে-বিমানবন্দরটা এখনো দেখি বহাল তবিয়তে আছে।

-- রামগরুড়

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন।।।।।।।আপ্নার বউ ভাগ্য দেখলে সাফি হুজুরের চক্ষে পানি আসবে
ইসরাত

guest_writer এর ছবি

ভাই, আপনার অনুভুতির সাথে সহমত।
আমি এখন পর্যন্ত পা____কোন খাবার মুখে নেই নাই, ঘরেও আনি নাই। ঢাকার পা______হাই কমিশনের সামনে দিয়ে গেলে আমি এক দলা থু ফেলি ওই গেটের সামনে। ক্রিকেটে ইসরাইল হোক আর ফিনল্যান্ড হোক আমি যে কোন দেশের পক্ষে থাকি, যদি অপরপক্ষে থাকে ওই পা________________।
আমার ঘেন্না হয়, আমার ঘেন্না হয়।

-----------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।