দেবদাস।

জাহিদ হোসেন এর ছবি
লিখেছেন জাহিদ হোসেন (তারিখ: বুধ, ২৭/০২/২০০৮ - ৫:০৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"হ্যালো।"
"স্লামালেকুম ভাবী। আমি পারভীন বলছি।"
"স্লামালেকুম ভাবী। ভালো আছেন তো?"
"এই চলে যাচ্ছে একরকম। আপনি ব্যস্ত না তো?"

মিরি রান্না করতে বসেছিল। সকাল এগারোটার সূর্যের উজ্জ্বল আলোয় ঝলমল করছে ঘরের ভিতরটি। সিয়াটলে রোদ রীতিমত মহার্ঘ বস্তু। রোদেলা দিনে সবুজ পাইন গাছ গুলো ঝকঝক করছে নতুন পয়সার মতোন। ব্যাক ইয়ার্ডে গোলাপের নতুন ফুল ফুটেছে। সিংকের সামনে দাঁড়িয়ে ইলিশ মাছের আঁশ ছাড়াতে ছাড়াতে সেদিকে তাকিয়ে ছিল মিরি।
এখন সামার চলছে। পালোমার স্কুল বন্ধ। সে তার ঘরে বসে বই পড়ছে। সাধারণতঃ দিনের এই সময়টাতে সে আর তার প্রাণের বান্ধবী মার্গারেট বসে চুটিয়ে আড্ডা মারে। কিন্তু মার্গারেটরা সপ্তাহ খানেকের জন্যে ক্যালিফোর্নিয়া বেড়াতে গেছে বলে এখন বই পড়া আর টিভি দেখা ছাড়া তার খুব বেশী কিছু করার নেই।

"ভাবী, আপনি মনে হয় ব্যস্ত। আমি পরে ফোন করবো আবার।" পারভীন ভাবীর কথায় চমক ভাঙ্গে মিরির।
"না না, আমি একদম ব্যস্ত না। ইলিশ মাছ কাটছিলাম তো, তাই একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম। আপনারা কেমন আছেন বলেন।"
"আমরা ভালই। আপনাকে একটা খবর দেবার জন্যে ফোন করেছিলাম।"
"কি খবর?"
"সিয়াটলে হিন্দি ছবি আসছে এবার।"
"তার মানে? হিন্দি ছবি তো সব ইন্ডিয়ান গ্রোসারীর দোকানেই পাওয়া যায়।"
"আরে ভাবী, সেগুলো তো সব ভিডিও। এখন থেকে সিনেমা হলে বসে বিগ স্ক্রীনে হিন্দি ছবি দেখা যাবে।"
"ওমা, তাই নাকি!"
"গরম খবর। আমাকে নমিতা বৌদি আধা ঘন্টা আগে ফোন করে খবরটা দিলেন। কোন এক ইন্ডিয়ান নাকি সিনেমা হল কিনেছে। আগামী পরশু দিন থেকে সেখানে নিয়মিত হিন্দি ছবি দেখাবে। প্রথম প্রথম শুধু উইক এন্ডে। লোকের উত্সাহ বাড়লে হয়তো সাতদিনেই চালাবে। নমিতা বৌদি বললেন যে ভাল বাংলা ছবিও ভবিষ্যতে আসতে পারে।"
"তাহলে তো খুব ভাল হয়। কতকাল সিনেমা হলে বসে বাংলা ছবি দেখিনি।"
"এবার পরের খবরটা দেই। এই শুক্রবার সিনেমা হলটা উদ্বোধন হচ্ছে "দেবদাস" ছবিটা দিয়ে। আপনারা যাবেন নাকি?"
"শরত্চন্দ্রের দেবদাস?"
"দেবদাস তো এই দুনিয়ায় একটাই আছে ভাবী। তবে এটা হিন্দি ভারসান। একদম নতুন ছবি। দুর্দান্ত কাস্ট। শাহরূখ খান, ঐশ্বরিয়া আর মাধুরী দীক্ষিত। বোম্বের ইদানিং কালের মধ্যে নাকি সবচেয়ে এক্সপেনসিভ ছবি। নমিতা বৌদি বললেন যে সব পত্র পত্রিকার মতে এটাই এই বছরের সবচেয়ে সুপার হিট ছবি হবে। আমি তো সব বাঙ্গালীদের ফোন করে খবর দিচ্ছি। সবাই মিলে দেখতে পারলে আরো বেশী মজা হবে। আপনি কিন্তু আপনার মেয়েকেও নিতে পারেন। সেও আমাদের বিখ্যাত বিরহ কাহিনী দেখুক।"
"পালোমা ভাল বাংলাই জানে না। সে আবার হিন্দি কি বুঝবে?"
"দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। ইংরেজী সাব-টাইটেল থাকবে।"
"আচ্ছা দেখি। আনিস বাসায় এলে বলবো।"
"তাড়াতাড়ি ডিসিশন নিতে হবে ভাবী। নমিতা বৌদির ধারণা গোটা সিয়াটলের সব লোক আসবে সিনেমা দেখতে। গেলে আ্যডভানস টিকিট কিনতে হবে।"
"তাই নাকি? আমি তাহলে সন্ধ্যায় জানাবো আপনাকে।"
মিরি ফোন রেখে দিল। আজকে রান্না করতে নির্ঘাত দেরী হবে। আজকে হঠাত্ ইলিশ পোলাও তৈরী করে আনিসকে সারপ্রাইজ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেটা বোধহয় আজকে আর হবেনা। সর্ষে ইলিশই মনে হচ্ছে শেষমেশ করতে হবে।

পালোমা নিচে নেমে এলো। স্কুল নেই বলে দেরী করে ঘুম থেকে উঠছে আজকাল। চোখদুটো তাই ফোলা ফোলা লাগছে। মেয়েটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল। মনে হয় সেদিনই যেন জন্ম হোল, অথচ এখন তার বারো চলছে। আনিস মাঝে মাঝে বলে,"পালোমার দিকে তাকালে নিজেকে বুড়ো মনে হয়।"
মিরি বলে, "তুমি তোমার নিজের ভাবসাবেই বুড়ো হচ্ছো। খামাখা মেয়ের ঘাড়ে দোষ দিওনা।"
পালোমা বলল, "তুমি কি কুক করছো মাম?"
"সর্ষে দিয়ে ইলিশ মাছ।"
পালোমার মুখ অন্ধকার হয়ে আসে। সে মাছ খুব একটা পছন্দ করেনা।
"কে ফোন করেছিল?"
"পারভীন আন্টি। জানিস, এখন থেকে এখানে সিনেমা হলে হিন্দি ছবি দেখাবে। অনেক আন্টিরা মিলে ছবি দেখতে যাচ্ছে এই উইক এন্ডে। তুই যাবি?"

সর্ষেইলিশটা আজ দুর্দান্ত হয়েছে। পালোমা পর্যন্ত তিন টুকরো মাছ খেয়ে ফেললো। মিরি নিজেই অবাক হোল, আজ সে খুব একটা মন দিয়ে রান্না করেনি।
আনিস হাত মুছতে মুছতে বললো, "ইলিশ মাছটা নিশ্চয়ই খুব পূণ্যবান ছিল মিরি। এমন একটা যাদুকরী হাতে রান্না হতে পারাটা রীতিমত কপালের ব্যাপার।"
মিরি হাসে, "তাওতো আজকে মন দিয়ে রান্না করিনি।"

টিভি দেখার সময় মিরি কথাটা তুললো। "সিয়াটলে এখন সিনেমা হলে হিন্দি ছবি আসছে।"
আনিস মাথা নিচু করে খবরের কাগজ পড়ছিল। সে মাথা না তুলেই বললো, "হুঁ, দেবদাস দেখাবে শুনলাম।"
মিরি অবাক হোল। "তুমি কোথথেকে শুনলে?"
আনিস মুখ তুলে হাসে। "আমি সব খবরই পাই মিরি বেগম। আসলে আজকে তৌফিক সবাইকে এক গণ ই-মেল পাঠিয়ে খবরটা দিয়েছে।"
"চলোনা যাই সবাই মিলে। পালোমাকেও সাথে নেব।"
"যেতে ইচ্ছে হলে যাও।"
"তুমিও চলো। এখানে ছবি দেখাতো তো হয়ই না। আমেরিকান ছবিতে যা সেক্স আর ভায়োলেন্স থাকে তাতে তো সবাই মিলে দেখার প্রশ্নই ওঠে না।"
"আমাকে এর মধ্যে টানাটানির দরকারটা কি? আমি তোমাদেরকে সিনেমা হলে নামিয়ে দিয়ে আসবো বরং।"
"তুমি গেলে ক্ষতিটা কি? দেবদাসের গল্পতো ভালই।"
"সমস্যাতো সেখানেই। বোম্বের ফিল্ম ডাইরেক্টরের পাল্লায় পড়ে শরতচন্দ্রের দেবদাসের কি হাল হয় কে জানে?"
"তোমার সব কিছুতেই একটা নেগেটিভ কিছূ বলতেই হবে।"
"অন্য কোন গল্প হলে বলতামনা, মিরি। দেবদাস এ পর্যন্ত বেশ কয়েক বার তৈরী হয়েছে। কোনটাই আসল বইয়ের তুলনায় ভাল হয়নি। আমার ধারণা এটাও হবেনা। খামাখা পয়সা খরচ করে মন খারাপ করার কোন ইচ্ছে আমার নেই।"
"বইতে কি লেখা ছিল সেটা খানিক ক্ষণের জন্যে ভুলে যাওতো। খোলা মন নিয়ে দেখলে নিশ্চয়ই ভাল লাগবে। আমি পারভীন ভাবী কে বলে দিচ্ছি যে আমরা তিন জনই ছবি দেখতে যাচ্ছি।"

নমিতা বৌদির কথাই ঠিক হোল শেষমেশ। গোটা সিয়াটলের সব ভারতীয়রাই যেন ছবি দেখতে এসেছে। ছবি শুরুর আধা ঘন্টা আগে এসেও বিশাল লাইনের শেষ মাথায় দাঁড়াতে হোল। ভাগ্যিস-আগে থেকে টিকিটটা কাটা ছিল, নাহলে ছবিই দেখা হোতনা। পালোমা এতো লোক দেখে অবাক হয়ে বললো, "মাম, এতো লোক এসেছে কেন? আমরা ঢুকতে পারবো তো?"
আনিসের চোখেমুখে প্রবল বিরক্তি। সে মুখ কুঁচকে বললো, "বেশীর ভাগ লোকেরাই বোধহয় বইটা পড়েনি। বই পড়লে বুঝতে পারতো যে দেবদাস গল্পটাকে ছবি বানানোর মত পরিচালক এখনো দুনিয়ায় পয়দা হয়নি। আর যে গাধাগুলো বই পড়ার পরেও এসেছে, তারা নিশ্চয়ই আমার মতো বৌয়ের গুঁতো খেয়ে এসেছে।"
মিরি হাসে। "তোমার পেট ভালো আছেতো? তোমার চেহারা কনস্টিপেশনের রুগীদের মতো মনে হচ্ছে।"
আনিস রাগে গরগর করে। "আমার মেজাজ খারাপ কোরনা। এমনিতেই ছবি দেখতে এসে সময় আর পয়সা নষ্ট হচ্ছে।"

আশপাশে পরিচিত বাঙ্গালীদের অনেকেরই চেহারা দেখা যাচ্ছে। সবার মুখেই আনন্দ আর উতসাহ। মিরি আনিসকে বলল, "দেখেছো কত লোকে এসেছে? এদের মধ্যে নিশ্চয়ই অনেকেরই বইটা পড়া আছে। ছবি যদি ভাল হয়, তাহলে গল্প জানা থাকলেও কিছু যায় আসেনা।"
ভিড় ঠেলে পারভীন ভাবীর আগমন ঘটল। তার মুখে বিরক্তির ছাপ। "সত্যি ভাবী, আদেখলেপনার সীমা ছাড়িয়ে গেছে একেবারে। প্রথম দিনেই ছবি দেখাটা কি খুব দরকার ছিল সবার?"
আনিস নির্বিকার ভাবে ফোঁড়ন কাটলো, "শুনলাম অর্ধেক লোক নাকি আপনার ফোন পেয়েই এসেছে। শুধু আপনাদের নমিতা বৌদিকেই দেখছিনা।"
পারভীন ভাবী ঈষত্ মুখ বিকৃত করলেন। "নমিতা বৌদির কথা আর বলবেন না, শুনলে গা জ্বলে যায়। আমি সকালে ফোন করেছিলাম আসছেন কিনা জানবার জন্যে। উনি বললেন আসবেন না। দেবদাস উপন্যাস নাকি ঠিকমত ছবি করতে আজ পর্যন্ত কেউই পারেনি। একমাত্র প্রমথেশ বড়ুয়া না কে যেন কিছুটা পেরেছিল, বাদবাকী সবগুলো নাকি ট্র্যাশ।"
মিরি চকিতে আনিসের দিকে তাকালো। সে না শোনার ভান করে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনছে। তার মুখের কোণায় এক চিলতে হাসি। ভাবখানা, কি বলেছিলাম।
রাগে মিরির গা জ্বলে গেল। আনিসের এই বিজ্ঞ ভাবটা মিরির অসহ্য লাগে।

বিদেশে থাকলেও দেশী স্বভাব বদলায়না। সিনেমা হলের গেট খুলবার সাথে সাথে সবাই একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো। লাইন-টাইন কোথায় উবে গেল মুহুর্তের মধ্যে। পালোমার মুখ শুকিয়ে যায়। সে মিরির হাত চেপে ধরে।
সিনেমা হলের ভিতরে কেমন একটা গুমোট ভাব। ইতিমধ্যে বেশীর ভাগ সিটই দখল করে ফেলেছে লোকেরা। মিরি আনিসের হাত ধরে টানে। "তাড়াতাড়ি চলো। দেরী হলে হয়ত বসার জন্য কোন জায়গাই পাবোনা।"
প্রায় পর্দার কাছাকাছি বসতে হোল। আনিস আবার মুখ বাঁকায়। "এতক্ষন তো তবু সময় আর পয়সার উপর দিয়ে যাচ্ছিল, এবার মনে হয় চোখেরও বারোটা বাজবে।"
মিরি আনিসের কাছে ঝুঁকে আসে। "তোমাকে একটা কথা বলি। প্লিজ, ছবি দেখার সময় ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করোনা। যা বলার ছবি শেষ হবার পর বলো।"

ছবি শুরু হতে বলাবাহুল্য বিশ মিনিট দেরী হোল। হলভর্তি লোকেরা উসখুস করছে। গরম লাগছে দেখে একজন হলের একপাশের দরজাটা খুলে দিলো। আনিস গজগজ করে, "আমাদের সময় জ্ঞানটা বোধহয় কোনদিনই হবেনা। এই গরমে বেগুনপোড়া হয়ে যাচ্ছি।" মিরি কড়া চোখে তার দিকে তাকায়।
আনিস বেপরোয়া ভংগীতে বলে, "কি, অমন হেডমাস্টারের মতো তাকাচ্ছ কেন? আমি কি মিথ্যে বলছি? আর তাছাড়া ছবিতো এখনো শুরু হয়নি। অতএব কথা বলার উপর কারফিউ জারী করার কোন চেষ্টা করবেনা।"
মিরি হাসে। "তোমার আজকে হয়েছে কি?"
আনিসও হাসে। "তোমাকে রাগানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু মনে হয় কাজ হচ্ছেনা।"

ঠিক এমনি সময়ে হলের আলো নিভে আসে। লোকেদের কথা বলা দপ্‌ করে বন্ধ হয়ে যায়। অধীর আগ্রহে সবাই তাকিয়ে থাকে পর্দার দিকে। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে কে যেন খুব জোরে সিটি বাজালো পিছন দিকে। প্রত্যুত্তরে মোটা গলায় চেঁচিয়ে উঠলো আর একজন। মিরি কথার অর্থ পুরোটা ধরতে পারলো না, তবে মনে হোল নিশ্চয়ই কোন অশ্লীল কথা হবে। ভাগ্যিস- পালোমা বাংলা/হিন্দি জানেনা। জীবনে এই প্রথম পালোমার বাংলা বা হিন্দি না জানার জন্য মিরি খুশী হোল।

অন্ধকারের মধ্যে ধীরে ধীরে ছবির থীম মিউজিক বেজে ওঠে। ছবি শুরু হয়। মিরি হিন্দি অল্প-স্বল্প বোঝে, তবে ইংরেজী সাব-টাইটেল থাকাতে বুঝতে আরো সুবিধা হচ্ছে।

দেবদাস তালসোনাপুরের জমিদারের ছেলে, বিলাস-বহুল খামখেয়ালী জীবন তার। প্রতিবেশী মেয়ে পার্বতী তার ছেলেবেলার সাথী। ক্রমে বন্ধুত্ব পরিনত হয় ভালবাসায়। কিন্তু কাহিনীর স্রোতে তাদের বিয়েতে কৌলিন্য বাধ সাধে। দেবদাস সমাজের নিয়মের তাগিদে পার্বতীকে প্রথমে অস্বীকার করে, কিন্তু পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে পার্বতীর কাছে। ততক্ষণে পার্বতীর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে অন্য একজনের সাথে। আলোজ্বলা বিয়ের উত্সবমুখর গৃহের দরজায় এসে যন্ত্রণাকাতর দেবদাস পার্বতীর মাকে শুধোয়,"কাকিমা, পাঁরো হ্যায়?"
সারা সিনেমা হলের দর্শকেরা সেই প্রশ্নে কাতরে ওঠে। আহা- এত কষ্টও পায় একজন মানুষ। মিরির চোখভরে পানি আসে। এই ছবি দেখতে আসা ঠিক হয়নি।
পাশে বসা আনিস অস্ফুটে বলে,"একেবারে বটতলার কাহিনী করে ছেড়ে দিল উপন্যাসটাকে।"
মিরি সে কথায় কান দেয়না। সে পাশ ফিরে পালোমার দিকে তাকায়। পালোমা যেন দুনিয়ার সবকিছু ভুলে গিয়ে ছবিটা দেখছে। সিনেমা হলের স্বল্প আলোয় মিরি দেখতে পেল, পালোমারও চোখ চিকচিক করছে অশ্রুতে। মিরি তার হাত ধরতে গিয়েও ধরলোনা। আহা- মেয়েটা নিজের মনে কাঁদুক একটু। হাত ধরলে হয়তো লজ্জা পাবে। মিরি স্থির করলো যে সে এটা নিয়ে পালোমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করবেনা।
পর্দায় তখন পার্বতী পাল্কিতে চড়ে স্বামীর ঘরে যাচ্ছে। দেবদাসের পরাজিত মুখটি ক্লোজ আপ শটে দেখানো হচ্ছে। নেপথ্যে গান বাজছে,"সবসময় আমি শুধু তোমাকেই চেয়েছিলাম, এ জীবনে আমি আর কিছুই চাইনি।"
একই সাথে মা মেয়ে একে অন্যকে লুকিয়ে চোখের পানি মুছলো।

পরদিন পালোমাই প্রসংগটি তুললো। সকাল এগারোটার দিকে মিরি এক কাপ চা খায়। সিয়াটলের আকাশ আবার মেঘলা হয়ে আসছে। হালকা ঠান্ডার মধ্যেও ব্যাক ইয়ার্ডে একটা চেয়ারে বসে মিরি আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিল। পালোমা দরজায় এসে দাড়ালো।
"মাম।"
"বল্‌ কি বলবি।"
"কালকের ছবিটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। যদিও এটা একটা স্যাড স্টোরী।"
মিরি হাসে। "তাই নাকি? তুই ছবিটার কি বুঝলি?"
"পুরোটা বুঝিনি, কিন্তু তারপরেও ভাল লেগেছে।"
"তোর বাপতো বলে যে বইটা নাকি ছবির চাইতে হাজারগুন ভাল।"
"শুধু আমার একটা প্রশ্ন আছে। দেবদাস যখন ফিরে এলো, তখন পার্বতী তাকে বিয়ে করলোনা কেন? কেন সে দেবদাসকে অ্যাকসেপ্ট করলোনা?"
মিরি হাসে। "বিয়ে করলে কি আর কাহিনীটা এত সুন্দর হোত?"
"ইট্‌স্‌ কাইন্ড অফ এ ফানি স্টোরী। কাল সারারাত আমার বারবার ছবিটার কথা মনে হয়েছে আর বারবার আমার চোখে পানি এসেছে। ইট নেভার হ্যাপেন্ড্‌ বিফোর।"
মিরি মেয়েকে কাছে টেনে নেয়। "এতে লজ্জা পাচ্ছিস কেন? কাঁদতে না পারলে তুই ভালবাসতে শিখবি কিভাবে?"
পালোমা মিরির আঁচলে চোখ মোছে। তারপর চোখ তুলে একটু হাসে,"আমি খুব উইয়ার্ড এ্যাক্ট করছি আজকে।"
মিরি সেকথার জবাব দেয়না, শুধু পালোমাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে। মনে মনে বলে,"ঈশ্বর, তুমি আমার মেয়েটিকে কোনদিন কষ্ট দিওনা।"

------------XXXXXXXXXXXXXX-------------

বারো বছর পরের কথা। আবার সামার এসেছে সিয়াটলে। আনিসের শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা কয়েকদিন ধরে। আজকে সে অফিসে যায়নি। উপরের ঘরে শুয়ে পালোমার সাথে পুটপুট করে কথা বলছে।
পালোমা বাড়িতে এসেছে তিনদিন আগে। পুরো সামারের মধ্যে সে মাত্র দু সপ্তাহ ছুটি পাবে। এখন সে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছে ইকনমিক্সে। এই সামারে তাকে কম্প্রিহেনসিভ পরীক্ষার জন্য পড়াশুনা করতে হবে, পাশাপাশি থিসিসের কাজও রয়েছে। বাপ-মেয়ের আলাপের ধুম চলছে সারাদিন ধরে। পালোমাকে পেলে আনিসের চেহারা বদলে যায়। সে তখন নানান ছুতোয় কাজ কামাই দিয়ে বাসায় থাকার ধান্দা করে।
সংগীতময় সুরে দরজার কলিং বেল বাজে। মিরি দরজা খুললো।
"হাই আন্টি, ইজ পালো হোম?"
হাসিহাসি মুখে দরজায় ডেভ দাড়িয়ে আছে। পুরো নাম ডেভিড সাদারল্যান্ড। পালোমার পুরনো বন্ধু।
আগে ডেভিডরা মিরিদের পাড়াতেই থাকতো। হাইস্কুলের শেষদিকে পড়বার সময়ে তার বাবা মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়াতে বাড়ি বিক্রী করে শহরের অন্যদিকে চলে গেছে তারা। এখন আর বেশী দেখা সাক্ষাত হয়না। শুধু পালোমা ছুটিতে সিয়াটল এলে ডেভিডের দেখা পাওয়া যায়। কিভাবে যেন সে খবর পেয়ে চলে আসে। পালোমা আর সে বসে লম্বা সময় ধরে গল্প করে।
এবার বেশ অনেকদিন পালোমা আসেনি বলে ডেভিডকেও অনেকদিন দেখেনি মিরি। তার চেহারায় বেশ পরিবর্তন হয়েছে। সে লম্বা হয়েছে খানিকটা, মাথার দীর্ঘ সোনালী চুল এলোমেলো, চোখের চশমার পাওয়ার বোধহয় বেড়েছে আর একটু। গালে দাড়ি রাখাতে মুখে এক ধরনের স্মিত আভা।
"হ্যালো ডেভ। ইট্‌স্‌ গুড টু সী ইউ। কেমন আছো তুমি? তোমার মা ভালো আছেন তো?"
"থ্যাংকস্‌ ফর আস্‌কিং। আমি এবং মা দুজনেই ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?"
ডেভিড স্কুলে পড়বার সময় দুর্দান্ত ভাল ছাত্র ছিল। কিন্তু বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ির পর হঠাত্ করে সে পড়াশুনার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। কোনভাবে হাইস্কুল শেষ করে সে আর পড়াশুনা করেনি। কোথায় যেন একটা পার্টটাইম চাকরি করে, তবে বেশীর ভাগ সময়েই সে বাসায় বসে কম্পিউটরে নানান রকম প্রোগ্রামিং করে। পালোমার মতে ডেভিড একটা ছোটখাট জিনিয়াস এবং একদিন তার খ্যাতি বিল গেট্‌স্‌ এর মতো হবে।
"ইজ পালো হোম, আন্টি?" ডেভিড আবার জিজ্ঞেস করে।
"আই অ্যাম স্যরি।" মিরির চমক ভাঙে। "তুমি উপরে চলে যাও, পালোমা তার বাবার সাথে কথা বলছে।"
কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে ডেভিড লাফিয়ে লাফিয়ে উপরে চলে গেল। একটু পরে আনিস গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে নিচে নেমে এলো।
"এক কাপ চা দাও, মিরি। গলাটা কেমন যেন খুশখুশ করছে।"
মিরি চুলো জ্বালিয়ে চায়ের পানি দেয়। গ্যাসের আগুনের নীল শিখা নর্তকীর মতো দুলে দুলে নাচে।
"পালোমার জন্য এখন একটু খোঁজ খবর নেওয়া উচিত আমাদের। তার বয়েস তো বিশ-একুশ হয়ে গেল।"
মিরি হাসে, "নিজের মেয়ে বলে বয়েস কমাচ্ছ নাকি? পালোমার এখন পঁচিশ চলছে।"
"বলো কি? পঁচিশ হয়ে গেছে নাকি এর মধ্যে? এতো দেখি সাড়ে সর্বনাশ।"
"কেন, এতে সর্বনাশের কি হোল? মেয়ের বয়েস বাড়বে না নাকি?"
"আমাদের আর একটু অ্যাকটিভ হওয়া উচিত্ মিরি। পালোমার জন্যে খোঁজ-খবর নেওয়া দরকার। আজকালকের ছেলেমেয়েদের বিশ্বাস নেই, কি থেকে কি হয়ে যায় কে জানে।"
মিরি চুপচাপ কাপে চা ঢালে, দুধ-চিনি মেশায়। হাতের চুড়ির রিনরিন শব্দে কিচেন মুখরিত হয়। গরম চায়ের ধোঁয়া উপর দিকে লতিয়ে ওঠে।
"চা নাও।"
আনিস চায়ে চুমুক দিয়ে হাসে। "আমার কথা তোমার পছন্দ হচ্ছেনা, তাই না?"
"একথা বলছো কেন?"
"প্রথমতঃ তুমি আমার কথার পিঠে কোন কথা বললেনা। আর দ্বিতীয়তঃ, তুমি চায়ে চিনি কম দিয়েছো। দুটোই তোমার মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার ইন্‌ডিকেশন্‌। মেয়ের বিয়ের কথা বলছি বলে রাগ হচ্ছে নাকি?"
"তুমি সব সময়েই কথা বানানোর ওস্তাদ। চায়ে চিনি কম হয়েছে এটা এতো ঘুরিয়ে বলার দরকারটা কি?"
আনিস খুকখুক করে অল্প কাশে। "গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক থেকে মোশারফ ফোন করেছিল। টুকিটাকি কথার মধ্যে শুনিয়ে দিল যে তার ছেলে জনস হপকিনসে রেসিডেন্সী শুরু করবে জুলাই থেকে।"
"তাই নাকি? সেতো খুব ভাল খবর। কত ছোট দেখেছি তাকে। কি যেন নাম ছেলেটার?"
"মাহমুদ। কথার শেষ দিকে মোশারফ কায়দা করে পালোমার কথা জিজ্ঞেস করলো। কোথায় পড়ছে, ভবিষ্যত প্ল্যান কি? মেয়ের বিয়ের চিন্তা-ভাবনা কিছু করছি কিনা এইসব। শুনে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। কেমন করে কিভাবে মেয়েটা এত বড় হয়ে গেল?"
মিরি চুপ করে থাকে। আনিস আবার কথা বলে,"তুমি কি পালোমার সাথে এসব নিয়ে কথা-টথা কিছু বলেছো? তার কি কোন পছন্দ-টছন্দ আছে নাকি?"
মিরি মাথা নাড়ে। আনিস চায়ের কাপ নিয়ে স্টাডিতে চলে যায়।
উপরতলা থেকে পালোমার গলা শোনা যায়। সে হাসতে হাসতে বলছে,"ইউ আর সাচ অ্যান ইডিয়েট, ডেভ। হাউ কুড ইউ ডু দ্যাট?"

মিরি চায়ের কাপ নিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ায়। এবছর গোলাপগুলো ভাল করে ফোটেনি কেন যেন। মিরির ছোট্ট ফুলের বাগানটির সৌন্দর্য্য এবার ম্লান। আজকাল আগের মতোন আর সময় দেওয়া হয়না। খোলা জানালা দিয়ে বাতাস এসে মিরির চুলকে এলোমেলো করে দেয়। মিরি আনমনে হাসে। আনিসের প্রশ্নের জবাব সে ইচ্ছে করেই দেয়নি।

দু' বছর আগে একদিন সে হাসতে হাসতে পালোমাকে জিজ্ঞেস করেছিল,"এই- তুই আমাকে কোনদিন ছেলেদের কথা বলিস না কেন? কাউকে ভাল লাগে তোর কাছে? ভাল লাগলে বলিস না কেন?"
পালোমা সে প্রশ্নে অনেক হেসেছিল,"মাম্‌-ছেলেদের কথা ভাববার মতো এতো সময় আমার নেই। পড়াশুনার অনেক চাপ।"
"কাম অন, পালোমা। তোর নিশ্চয়ই কাউকে না কাউকে ভাল লাগে।"
"কে বললো তোমাকে যে আমার কাউকে ভাল লাগতেই হবে।"
"ওকে- হাউ এ্যাবাউট ডেভ?"
পালোমা অকস্মাত্ সোজা হয়ে বসেছিল। "আর ইউ ক্রেজী, মাম? ডেভকে আমার পছন্দ হবে কেন?"
"হোয়াই নট? ডেভকে আমার কাছে তো খুব ভাল লাগে।"
"ফর হোয়াট? ডেভ ইজ অ্যান ইডিয়েট। অ্যান্ড হি ইজ আ বিগ লুজার। হি সিংগল-হ্যান্ডেডলি স্ক্রুড আপ হিজ হোল লাইফ। হাউ ক্যান ইউ লাইক হিম?"
মিরি আবার আনমনে হাসে। পালোমার অভিনয় খুব ভাল হলেও সেদিন সে মিরিকে ফাঁকি দিতে পারেনি। মিরি পালোমার চোখে যা দেখার ঠিকই দেখে নিয়ে নিয়েছিল। পালোমার চোখে ছিল মমতা আর প্রশ্রয়, পালোমার চোখে ছিল ভালবাসা।
মিরি সেরাতে লুকিয়ে কেঁদেছিল,"ঈশ্বর, মেয়েটিকে তুমি এতো কষ্ট দিলে কেন ?"

প্রসঙ্গটি আর কোনদিন আলোচিত হয়নি।
মিরির আবার পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে। তের বছরের পালোমা ছলছলে চোখে "দেবদাস" ছবিটি দেখছে। তের বছরের পালোমা কান্নাজড়িত গলায় বলছে,"দেবদাসকে দেখে আমার খুব কষ্ট লেগেছে, মাম্‌। পার্বতী তাকে কেন অ্যাকসেপ্ট করলোনা?"

বাইরে সন্ধ্যা নামছে। কাপের চা ঠান্ডা হয়ে গেছে বহু আগে। মিরি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে।
দেবদাসেরা বোধহয় চিরকালই এরকমেরই হয়। সংসারে তারা যেন সবসময়েই প্রত্যাখান পাবার জন্যেই আসে। তারা কখনো স্বামী হয়না, ছুটির দিনে সোহাগ করে স্ত্রীকে বলেনা,"আজকে তুমি চুপটি করে আমার কাছে সারাদিন বসে থাকবে, আর আমি তোমাকে শুধু দেখবো।" বেতন পেয়ে বৌয়ের জন্য নতুন শাড়ী কেনেনা, অভিমান ভাঙানোর জন্য নিজেও না খেয়ে বসে থাকেনা। প্রেম বোধহয় সাধারণ মানুষের জন্যে, কেননা প্রেমে মানুষ সম্পুর্ণ হয়। দেবদাসেরা আজন্ম বিরহী, কেননা বিরহই প্রেমের সর্বোচ্চ প্রকাশ।
হয়তো পার্বতীরাও এই সত্য নিজের অজান্তেই জেনে ফেলে। তারাও বুঝে ফেলে যে দেবদাসদের প্রেমকে গ্রহন করতে নেই, কেননা তাতে প্রেমের অবমাননা হয়।
হয়তো এটাই জীবনের নিয়ম। প্রত্যাখানের মধ্যেই দেবদাসের ভালবাসা সার্থকতা পায়। কিন্তু বেভুল মানুষের মতো তারা সেই সার্থকতার স্বাদ টের পায়না কখনো। তারা বারবার জীবনের খেই হারিয়ে ফেলে, ছিঁড়ে যাওয়া মালাটিকে জোড়া লাগাবার ব্যর্থ চেষ্টা করে। বারবার ভ্রষ্টলগ্নে তারা পার্বতীর শূণ্য গৃহে ফিরে আসে, যন্ত্রণাবিদ্ধ হাতে দরজায় কড়া নাড়ে, করুন সুরে প্রশ্ন করে, "কাকিমা, পাঁরো হ্যায়?"
মিরি জানে খুব শিগগীরই পালোমার বিয়ের প্রস্তাব আসবে, হয়তো বা মাহমুদ নামের ছেলেটির সাথেই বিয়ে হয়ে যাবে তার। সুখে সে স্বামীর ঘর করবে। কিন্তু সামারের কোন কোন দিনে পালোমা একটু আনমনা হয়ে যাবে। মনে পড়বে সোনালী চুলের একটি যুবকের কথা। ফিস ফিস করে কান্নাজড়িত গলায় নিজের মনেই বলবে, "ইউ আর সাচ অ্যান ইডিয়েট।"

ধুপধাপ শব্দে পালোমা আর ডেভিড নিচে নেমে এলো।
"মাম্‌-ডেভ ইজ লীভিং।"
"সেকি? তুমি কিছু খাবেনা ডেভিড?"
"নেক্সট টাইম আন্টি। আই এ্যাম অলরেডী লেট ফর ওয়ার্ক।"
ডেভিড চলে যাওয়ার পরেও মিরি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। লম্বা লম্বা পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছে ডেভিড। সন্ধ্যার বিষন্ন আলো-আঁধারিতে তার ঋজু অবয়বটিকে অপরিচিত মনে হয়। একসময় সে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।

মিরির হঠাত্ বুক ভেঙ্গে কান্না পায়।
কেননা মিরি জানে একদিন একটি ঝকঝকে রৌদ্রময় দিনে ডেভিড ফিরে আসবে। কিন্তু সেদিন এবাড়ী থাকবে প্রাণহীন। তার হাতের টোকায় বেজে উঠবে সংগীতময় ডোরবেলটি। মিরি দরজা খুলে দেখবে রোদের মধ্যে লগ্নভুল যুবকটি প্রত্যাশা মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নীচু করে সে নরম গলায় জিজ্ঞেস করবে,"আন্টি, ইজ পালো হোম?"
সেই মুখখানির দিকে তাকিয়ে সেদিন মিরির চোখে পানি আসবে। ধরা গলায় তাকে বলতে হবে,"আই এ্যাম স্যরি ডেভ। পালোমা ডাজ নট্‌ লিভ হিয়ার এনি মোর। ইউ আর টুহ লেট।"
পরাজিত যুবকটি যন্ত্রণাবিদ্ধ হয়ে মাথা নামিয়ে ফিরে যাবে সেদিন। সিয়াটলের রোদের মধ্যে সে হেঁটে ফিরে যাবে কোন এক নাম না জানা চন্দ্রমুখীর সন্ধানে।

প্রতিবারের মতই এবারো দেবদাসের সময়ের হিসেবে ভুল হয়ে যাবে। তালসোনাপুরের পার্বতীর সাথে তার আর কোনদিন দেখা হবেনা।

(শেষ)।
(এ গল্পটি অনেক আগে উত্তর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। অনেক ভয়ে ভয়ে এখানে দিলাম।)


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

আপনাকে অনেক আগে থেকেই সচলায়তনের একজন বলে ভাবি, তবুও একাউন্ট দিতে এত দেরি হচ্ছে দেখে মনে মনে অধৈর্য হয়ে উঠছিলাম ... আজকে হঠাৎ আপনার নিজ নামে লেখা দেখে খুব ভাল্লাগলো ...

স্বাগতম ...

লেখাটা পড়িনি এখনো, সবার আগে কমেন্ট দেয়ার লোভ হল, তাই ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

জাহিদ হোসেন এর ছবি

প্রথম কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। আশাকরি আরো কমেন্ট সামনে পাবো। তা সে ভালো হোক আর খারাপ হোক।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অসাধারন! অসাধারন!!!

আপনার লেখা কি আগে পড়েছি?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

হ মামু পড়ছেন, ইনিই নির্বাসিত ... (আপ্নি যদি আগে বলতে আরো আগে বুঝায়া থাকেন তাইলে অবশ্য জানিনা হাসি )
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আমার বেশ কয়েকটা গল্প স্বনামে উত্তর আমেরিকার কয়েকটি বাংলা পত্রিকায় (যেমন পড়শী) ইতিপূর্বে ছাপা হয়েছে। হয়তো সেখানে পড়ে থাকতে পারেন।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

নির্বাসিত মানে ঢাবি সিরিজের রচয়িতা?
...............................
খাল কেটে বসে আছি কুমিরের অপেক্ষায়...

স্বপ্নাহত এর ছবি

জ্বী

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

জাহিদ হোসেন এর ছবি

গেল, গেল, আমার সব সিক্রেট চলে গেল। হায়-হায়!_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

স্বপ্নাহত এর ছবি

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠিয়েই কাঁদালেন...

ঈশ্বর,মানুষকে এতো কষ্ট দাও কেন?

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

জাহিদ হোসেন এর ছবি

কষ্টই যদি না থাকে, তাহলে আনন্দকে বিস্বাদ মনে হবে। তাই নয় কি?
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন!
আপনার লেখা ফলো করতে করতে এখানেও হাজির হয়েছি।

--
কৈলাশ

জাহিদ হোসেন এর ছবি

এই রে! গতকাল রাতে কালো রং এর গাড়ীতে তাহলে কি আপনিই ছিলেন?
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

দুর্দান্ত গল্প।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

জাহিদ হোসেন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

oshadharon
সবাই তো বাংলায় অসাধারণ বলবে।
আমার মন্তব্যটা যাতে আলাদাভাবে চোখে আটকায়
এই জন্য ইংরেজীতে অসাধারণ দিলাম।

---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

অয়ন এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো।

দ্রোহী এর ছবি

অফলাইনে বসে বসে পড়েছিলাম। মন্তব্য না করে থাকতে পারলাম না। গল্পটা অসাধারণ হয়েছে।

"জাহিদ হোসেন" নামটা চেনা চেনা লাগছে। আমাদের কি অন্য কোথাও অন্য কোনভাবে পরিচয় ছিল?


কি মাঝি? ডরাইলা?

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আমার পরিচিতরা সবাই খুব কাপুরুষ টাইপের। দ্রোহী নিক নেবার মত সাহস কার হতে পারে তাই ভাবছি।
গল্পটি ভাল লেগেছে জেনে খুশী হলাম।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

দ্রোহী এর ছবি

ভয় নেই। আমিও নিতান্তই কাপুরুষ বৈকি। "দ্রোহী" শব্দটি কাপুরুষতার আড়াল মাত্র।


কি মাঝি? ডরাইলা?

জাহিদ হোসেন এর ছবি

তাহলে আসল নাম ও কোথায় থাকেন তা জানালে হয়তো বলতে পারবো যে আমাদের কোথাও দেখা হয়ছিল কিনা। অবশ্য আজকাল স্মৃতিরাও বেঈমানী শুরু করেছে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

রায়হান আবীর এর ছবি

দারুন লাগলো বস। অসাধারণ।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আহা! কিভাবে লিখেন এমন করে! আপনার গল্পের আনিস চরিত্রের সাথে নিজের মিল দেখে শংকিত।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বাহ অনেক আগের কিছু লেখা পড়ছি। এইসব সচলরা কোথায় হারিয়ে গেছেন?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তিথীডোর এর ছবি

মন্তব্য করলাম শুধু অসাধারণ লেখাটা নূতন পাঠকদের চোখে পড়ার জন্য।
অতিথিদের জানা উচিত এই ভদ্রলোক একসময় নিয়মিত লিখতেন...

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদটা আগে তিথীডোরকেই জানাই।
দারুণ একটা গল্প বটে! হাসি

এক লহমা এর ছবি

আমার মতন ভুল মনের মানুষও এ গল্প কোনদিন ভুলতে পারবে বলে মনে হয় না।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

গান্ধর্বী এর ছবি

বাহ্‌! হাততালি

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

kakatua এর ছবি

অনেক দিন পর পুরোনো লেখাটি আবার পড়লাম। আবারো চোখে জল এলো। ইনি আর কেন লেখেন না?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।