ফেব্রুয়ারির পাঁচ থেকে উত্তাল স্বদেশ আমার।
খুব অন্যরকম সময় এটা।
এই দেশের কিচ্ছু হবে না---এইটে ভেবে যারা মন খারাপ করে থাকতেন সকল সময়, তাদের সবাইকে নাড়া দিয়ে গেল ফেব্রুয়ারির পাঁচ। বলে গেল -- সময় বদলের ডাক বন্দরে এসে পৌঁছে গেছে। যাদের উপর 'কোন দায়িত্ব দিয়ে ভরসা করা যায় না' লেবেল লাগিয়ে বুড়োরা এতদিন মাথা নাড়ছিলেন হতাশায়, সেই তরুণরা তাদের দেখিয়ে দিল--যদিও একাত্তর তারা চোখে দেখেনি--তবুও নীরবে নিভৃতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছুঁয়েছে এদের প্রাণ। সেই চেতনার পালক স্পর্শ করে এরা প্রত্যেকে সাগ্নিক যোদ্ধা।
শুধু আশার বাণী ছিল বললে ভুল হবে---পরাজিত শক্তিরা আঘাত হানতে দেরী করে নি।
আমাদের সবচাইতে দূর্বল জায়গাই তাদের প্রবল ঘাঁটি। মুখের কথায় কাউকে 'নাস্তিক' বলে কত সহজে মানুষকে বিভাজিত করে দেয়া যায়--সে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। নাস্তিক আর ব্লগার সমার্থক হয়ে দেখা দিল--ভুঁইফোড় দল তৈরী হল, চোখ গরম করে, গলার রগ উঁচিয়ে তারা বলে গেল--দেশটা তারা হাজার বছর পেছনে নিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর।
সেই ভুঁইফোড় দল--হেফাজত-এ-ইসলামী, গতকাল সারা ঢাকা শহর অবরুদ্ধ নগরীতে পরিনত করেছিল। ফেসবুকে, একাত্তর টিভিতে, অনলাইনের নানান লিঙ্কে, আমরা যারা দূরে দূরে পড়ে আছি, তারা উদবিগ্ন নয়নে চেয়ে থাকি। দেশের সময় ভোররাতে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি এর সম্মিলিত অভিযানে শেষে পিছু হটে অন্ধকারের দল। ভোর হয়ে আসতে থাকে ঢাকার আকাশে। আমরা কখনো ত্রাসে, কখনো বিস্ময়ে চেয়ে দেখি দাঁড়ি-টুপিতে ঢাকা অন্ধকারের মানুষ মুখ ঢেকে পালাচ্ছে। পুলিশ তাদের পথ করে দিচ্ছে পালানোর। তারা পালাচ্ছে!!
আমরা কী একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম?
হয়ত একটু জলদিই স্বস্তিবোধ করলাম।
কারণ ঘন্টাখানেক আগেও যে পুলিশ-র্যাবের বিচক্ষনতায় সাহসিকতায় মুগ্ধ হচ্ছিলাম--শুনলাম, তারাই নাকি গিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চটি! গণ-জাগরণ মঞ্চটি আমাদের কাছে একটা প্রতীক হয়ে ছিল। আমাদের নব-জাগরণের স্থান। ঠিক এইখানে ছাই থেকে উঠে এসেছিল ফিনিক্স। হয়ত ফেব্রুয়ারী-মার্চের উত্তাল সমাবেশ এখন আর নেই। কিন্তু তারপরও--এই সেই জায়গা যেখানে লাখো মানুষ এসে মিলেছিল প্রাণের তাগিদে--এক অভিন্ন লক্ষ্য-পূরণের ইচ্ছা সাথে নিয়ে---রাজাকারের বিচার আর জামাত শিবির নিষিদ্ধ করণের দাবী। কোন রাজনৈতিক দলের মদদ ছাড়া, স্রেফ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাথে নিয়ে লক্ষ মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নজির স্থাপন করে দেখিয়েছিল এই গণ-জাগরণ মঞ্চ।
সেই মঞ্চটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
মঞ্চ হয়ত এমন কিছু নয়---আবার একটা এই রকম মঞ্চ তৈরী করে ফেলা কোন ব্যাপার না।
শাহবাগের গণ-জাগরণ মঞ্চ আমাদের মাঝে আসল কাজটি করে দিয়ে গেছে---আমাদের ভেতরের ঝিমিয়ে পড়া মানুষগুলোকে শক্ত করে নাড়া দিয়ে গেছে, অবিশ্বাসীদের নির্বাক করে দিয়ে গেছে---গণ-জাগরণ মঞ্চ আমাদের বলে গেছে এত সহজে মানুষের মন থেকে একাত্তরকে সরিয়ে দেয়া যাবে না--
তারপরও ---
মঞ্চটি ভেঙ্গে যাবার খবরে আমি দুঃখিত হই--আমি নিশ্চিত, এই গত ক'মাসে আপনিও যদি আমার মতই এই প্রাণের জমায়েতে সশরীরে না হোক অশরীরি ভাবে হলেও যোগ দিয়ে থাকেন---সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা ভেবে, আপনিও বেদনার্ত হবেন।
একটি মঞ্চ ভেঙ্গেছে--কিন্তু আমি বিশ্বাস করি লক্ষ-কোটি মঞ্চ তৈরী হয়েছে মানুষের মনে--
পারবেন সেগুলো ভাঙ্গতে মাননীয় সরকার?
আমার গাওয়া এই দুঃখ-গাঁথাটি গণ-জাগরণ মঞ্চের উদ্দেশ্য নিবেদিত।
শহীদ মিনার ভাঙ্গার পরে আলাউদ্দীন-আল-আজাদ লিখেছিলেন
'স্মৃতির মিনার ভেঙ্গেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু
আমরা এখনো চার কোটি পরিবার খাড়া রয়েছি তো
যে ভিত কখনো কোন রাজণ্য পারেনি ভাঙ্গতে--'
জয় বাংলা
কথা ও সুরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
যন্ত্রানুষঙ্গ পরিচালনা, কন্ঠঃ অনিকেত
মন্তব্য
মঞ্চ ভেঙ্গে যাওয়ার খবরে আমি দুঃখিত নই। আমি বিশ্বাস করি আমাদের মনে যে মঞ্চ তৈরী হয়েছে তা কখনো ভাংবে না। আমি এখন বিশ্বাস করি যে কোন প্রয়োজনে আমারা আবার একত্রিত হব -কোন মঞ্চ ছাড়াই। গান ভাল লেগেছে
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ ছন্দা!
একই আশায় আমিও বুক বেঁধেছি--
কাল পাঠাগুলার উন্মত্ততা খানিকটা দেখলাম টিভিতে। বেশিক্ষণ সহ্য করা মুশকিল। মনেই হচ্ছিল না, বাংলাদেশের চ্যানেল দেখছি। এরকম দৃশ্য দেখার দুর্ভাগ্যও বরণ করতে হল ৭১ এ জন্ম নেওয়া সাম্যবাদি একটি রাষ্ট্রকে। দিনে দিনে আমরা রাষ্ট্রের চেহারা বদলেছি। চুল কেটেছি, ভ্রুঁ প্লাক করেছি, জামা পাল্টিয়েছি, রঙ পাল্টিয়েছি। এখন রাষ্ট্রটার চেহারা বিকৃত রাক্ষসের মতন হয়েছে।
আমরা খুশি?
পড়ার জন্যে আর মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ আরেফীন ভাই।
ব্যথায় কথা ডুবে যায় তো এ কারণেই--
'স্মৃতির মিনার ভেঙ্গেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু
আমরা এখনো চার কোটি পরিবার খাড়া রয়েছি তো
যে ভিত কখনো কোন রাজণ্য পারেনি ভাঙ্গতে--'
facebook
জয় বাংলা ।
জয় বাংলা---
যত যাই করুক, ফিনিক্স উড়বেই।
ভালো লেগেছে গান।
পড়া ও মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ সুমিমা'পু!
শুভেচ্ছা নিরন্তর
আহ! আজকের জন্য, আমার জন্য - পারফেক্ট! অনেক ধন্যবাদ অনিকেত দা।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, স্যাম ব্যানার্জী'দা, লেখাটা পড়া আর মন্তব্যের জন্যে--
ভাল থাকুন অহর্নিশ--
গণজাগরণ মঞ্চ তো আসলে কোনো মঞ্চ না। দিনের পর দিন যে লাখ লাখ 'মানুষ' সেখানে সমবেত ছিলো, তখন সেখানে কোনো মঞ্চ ছিলো না। কেউ মঞ্চ খুঁজতেও যায় নাই, প্রয়োজনও পড়ে নাই। কাঠ পেড়েকের মঞ্চ বহুত পরের বিষয়।
যে মঞ্চ বাংলাদেশের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত, সেটা কেউ দখল নিতে পারে না, ভাঙতে পারে না। টেনশন নাই।
গান ভালো লাগছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজরুল ভাই--
সেদিন আমিও খুব বেদনার্ত বোধ করেছি। খবরটা শুনবার পর মনে ক্ষোভ নিয়ে শাহবাগে চলে গিয়েছিলাম। শাহবাগ সহিংস কোন আন্দোলন না। সরকার এমনিতে সরে যেতে বলতে পারতো। ভাবটা এমন দাড়ালো যে হেফাজতের জ্বালাওপোড়াও বা তাদের উৎখাতের পর সরকারকে মঞ্চ ভেঙ্গে দিতে হলো! শাহবাগের অপরাধ কি? ক্ষমতা থাকলে কেউ খাটো করতে ছাড়েনা শাহবাগকে।
কামারুজ্জামানের রায়ের পর আবার গিয়েছিলাম শাহবাগে। সেখানে আবার সেই স্লোগান, গান শুনে বেদনা যেন প্রশমিত হয়েছে।
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
নতুন মন্তব্য করুন