ড: শর্মিলা কি হতে পারবেন গুরুদাসীর মুখোমুখি?

আড্ডাবাজ এর ছবি
লিখেছেন আড্ডাবাজ (তারিখ: শনি, ০৩/১১/২০০৭ - ১১:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ড: শর্মিলা বোস আর গুরুদাসী মন্ডল -এই দু'জন বাঙ্গালী নারী এই পৃথিবীর দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন। এদেরকে কি চেনেন? না চিনলেও চেনার খুব দরকার। শর্মিলা বোসকে চেনা খুব সহজ। হার্ভাড থেকে ডক্টরেট করেছেন। খুবই নামকরা গবেষক, লেখিকা, অধ্যাপিকা। তার জন্ম মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে, বড়ো হয়েছেন কলকাতায়। ড: শর্মিলা বোস নেতাজী সুভাস বোসের আত্মীয়াও। চমতকার বাংলা গান করেন। বর্তমানে অক্সফোর্ডে রয়টার ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডী অব জার্নালিমের পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

ড: শর্মিলার সাথে কপিলামনির গুরুদাসী মন্ডলের সম্পর্ক কি? না, কোন সম্পর্ক নেই। গুরুদাসী চোখের সামনে হারিয়েছেন স্বজনদের। নির্যাতিত হয়েছেন রাজাকারদের ক্যাম্পে। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে। ড: শর্মিলা বোস খুব নির্লজ্জভাবে দাঁড়িয়েছেন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের স্বার্থে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারী নির্যাতনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবী করে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রবন্ধটি (Losing the Victims: Problems of Using Women as Weapons in Recounting the Bangladesh War) যথেস্ট সাড়া জাগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অভাগা গুরুদাসীর মতো হাজারো নারীর সম্ভ্রমহানিকে কলমের খোঁচায় অস্বীকার করে বসলেন ড: শর্মিলা। এতে গুরুদাসীর খুব একটা ক্ষতি কিছু হয়নি, যেমন হয়নি কুখ্যাত রাজাকার মুজাহিদ আর হান্নানের ইতিহাস অস্বীকৃতিতে। কস্টকর হলেও সত্য, ইতিহাস অস্বীকার করলেও যে ইতিহাসের পাতা বদলায় না। এই নির্মম সত্য ড: শর্মিলা বোস অস্বীকার করে সেলিব্রিটি হতে পারলেও অভাগা ভুক্তভোগী গুরুদাসী অনুভব করেন প্রতি মুহুর্ত্বে তার রক্তের স্পন্দনে।

গতবছর আড্ডার পাতায় গুরুদাসীর উপর চিত্রায়িত প্রামাণ্য ছবিটি নিয়ে দু'কলম লিখেছিলাম,

"বছর কয়েক আগে আমার সুযোগ হয়েছিল ইয়াসমিন কবীরের "স্বাধীনতা" শীর্ষক প্রামাণ্য শর্ট ফিল্মটি দেখার। ঢাকার পাবলিক লাইব্রেরীতে আন্তর্জাতিক চলচিএ উৎসবে প্রদর্শিত ৩৭ মিনিটের ছবিটি গুরুদাসী মন্ডলকে নিয়ে চিত্রায়িত। তিনি রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত হন । বন্দী ছিলেন রাজাকারদের ক্যাম্পে প্রায় তিন মাস। মুক্তিযোদ্ধারা উদ্ধার করেন এই গুরুদাসীকে। তারপর থেকেই সব হারানোর বেদনায় তিনি সকল স্বাভাবিকত্ব হারিয়েছেন। যে দেশে অস্বাভাবিকতাই হচ্ছে আদর্শ আর ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে মূলধারা, সেখানে গুরুদাসীর স্বাভাবিকতার মূল্য আর কতটুকু"?

ড: শর্মিলা বোসের লেখার সবচেয়ে প্রামাণ্য প্রতিবাদ করেছে সুপ্রিয় ব্লগার ম্যাশ ‌The Continuing Rape of Bangladesh শীর্ষক লেখায়। ড: শর্মিলা তার প্রবন্ধের জন্য পাক বাহিনীর সদস্যদের সাক্ষাতকার নিতে পারলেও বাংলাদেশের ১৯৭১-এর নির্যাতিতা নারীদের সাথে কথা বলতে পারেননি। ম্যাশ চমতকারভাবেই উপসংহার টেনেছেন:

In her attempt at denial she relies on the Pakistan government’s report on the atrocities and the accounts of Pakistani soldiers. She overlooks news reports from the time, eyewitness accounts, academic works and case studies. In the end, her paper is neither scholarly nor neutral. It is an apologia for the Pakistan army and for the genocide it perpetrated against the Bangladeshi people in 1971.

ড: শর্মিলা বোসের এতে লাভ কি? হানাদার বাহিনীর হাতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নারীরা তেমন একটা নির্যাতিত হয়নি এবং নারী নির্যাতনের বিষয়টি অতিরঞ্জিত- এধরণের একপেশে প্রচারণাপত্রটির মধ্যে ড: শর্মিলার ব্যক্তিগত স্বার্থ লুকিয়ে আছে। ড: শর্মিলা বোসের মতো পাকিস্তানী অপশক্তির পদলেহীরা যে নিছক জ্ঞানপাপী, তাও না। তাদের স্বার্থ অনেক গভীরে অবস্থান করে। অবশ্যই তিনি ব্যতিক্রমী সেলিব্রিটির মর্যাদা পেয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্তাত্ব ইতিহাসকে বিভ্রান্ত করার অপচেস্টায় ড: শর্মিলা পাকিস্তানী পত্র পত্রিকায় উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কুড়িয়েছেন। পাকিস্তানের ডেইলী টাইমস ২০০৫ সালে তার প্রশংসায় লেখে: "A study of the 1971 conflict by an Indian academic, Prof Sarmila Bose, says the Pakistan army personnel did not rape Bengali women as has been widely alleged by Indian and Bangladeshi writers".

ড: শর্মিলা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজমের উপর ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রয়টার ইনস্টিটিউটের প্রথম পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। একসময় তিনি টাটা ইনস্টিটিউটেও পড়াতেন। দুস্টলোকেরা অপবাদ ছড়ায়, টাটার বাংলাদেশে কারখানা খোলার পেছনে লবীং-এ তার ব্যক্তিগত অবদান আছে। পদলেহনে ও অন্ধত্বের কোন ভৌগোলিক সীমানা টানা যায় না, ড: শর্মিলা তা খুব নির্লজ্জভাবে প্রমান করেছেন। ইতিহাস সচেতন সকল বাঙ্গালীর ধিক্কার কুড়াতে থাকবেন ড: শর্মিলা বোস। তার ইতিহাসকে নতুন করে লেখার অপচেস্টার প্রতিবাদে দৃস্টিপাত ব্লগ এখনো একটি পাতা উতসর্গ করে রেখেছে। তাই আমি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সচেতন প্রজন্মকে বলব, ১৯৭১ শেষ হয়নি। যুদ্ধ কিন্তু এখনো চলছে, নীরবে সরবে, এখানে অথবা অন্য কোনখানে। অশ্রু ঝড়ছে ইতিহাস বিকৃতির অপচেস্টায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধে তাই আমাদের হতে হবে সোচ্চার। মুখোশ খুলে দিতে হবে ড: শর্মিলার যিনি একমুহুর্ত্বের জন্যও বীরাঙ্গণা গুরুদাসী মন্ডলের মুখোমুখি হতে পারবেন না। কারণ, বিবেক আর আত্মা বিকিয়ে কয়েক বছর আগেই তিনি গতান্তর হয়েছেন।


মন্তব্য

অমিত আহমেদ এর ছবি

ঠিক!
মুক্তিযুদ্ধ চলছে এখনো।
সে যুদ্ধে নাম লেখালাম।
কলম তো চলছেই।
প্রয়োজনে রক্তও দেব।


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

হাসিব এর ছবি

কে কি বললো তাতে কি আসে যায় ?

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

আড্ডাবাজ ভাই, আপনি অনেক ভদ্র ভাষায় লিখেছেন, যা ওর প্রাপ্য না। যারা খ্যাতি বা টাকার কাছে নিজের বিকিয়ে দেয়, উপাস্য বস্তুর লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে *সবই*, আমি আবার বলছি, *সবই* আদায় করে নেয়া যায়। (আমার মধ্যে একটা অসুস্থ্য লোভ টের পাচ্ছি, ইচ্ছে হচ্ছে ওকে কোন ক্যাম্পে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকমাস রেখে দিতে।)

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

নিঘাত তিথি এর ছবি

কে কি বললো তাতে কি আসে যায় ?

ঠিক। কিছু আসে যায় না।
তবু সেই "কারো বলা কথা"কে ভিত্তি করে কেউ কেউ ইতিহাসের পাতাকে রিপ্রিন্ট করতে চায়। তাই, এই সব শর্মিলা-উর্মিলার মূল্যহীন কথারও যুক্তিযুক্ত প্রতিবাদ প্রয়োজন।

গুরুদাসীর ওপর বানানো চলচ্চিত্রটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমারও। তাঁর কথা, এবং সমস্ত বীরাঙ্গনা এবং শহীদের কথা স্মরণ করে শর্মিলা বোসের উদ্দেশ্যে এক দলা থুথু ফেললাম।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আড্ডাবাজ! লিংকগুলো দেখে ভালো লাগছে, প্রতিবাদ হচ্ছে। কিছুদিন আগে ব্লগার সুশান্তও একটি লেখা দিয়েছিলেন সর্বশেষ আর্টিকেল নিয়ে। সময় পেলে আমার এ লেখাটি পড়ার অনুরোধ করে গেলাম।

সৌরভ এর ছবি

এই অভদ্রমহিলা র সম্পর্কে ম্যাশ এর ব্লগেই প্রথম পড়ি। তারপর সুশান্ত লিখেন এখানে।

ওইসময়, একটা দ্বন্দ্ব আমাদের - মানে অন্য সচলদের মাঝে কাজ করে, যা হলো এই ব্যাপারটা আমাদের কীভাবে প্রতিবাদ করা উচিত কিংবা আদৌ এই নোংরা মহিলাটিকে পাত্তা দেয়া উচিত কি না। তাই সম্ভবত সুশান্তের পোস্টটিকে মডারেটর প্যানেলের বিবেচনায় নেয়া হয়েছিলো। কিংবা সুশান্ত নিজেই পোস্টটা মুছে ফেলেন।

কিন্তু, আপনার পোস্ট পড়ে যা মনে হচ্ছে, এই নব্য মহিলা রাজাকারটি কোন বিশেষ গোষ্ঠীর বড় কোন পরিকল্পনার ক্রীড়নক। কারণ প্রশ্ন একটা জায়গায়, তার কী লাভ?

এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করে দেখা উচিত।
কী হতে পারে তার মোটিভেশন?
১. আমরা বাঙালিরা সজোরে প্রতিবাদ করবো, এরফলে তিনি বিখ্যাত হয়ে যাবেন এবং কোন বেনিফিট লাভ করবেন।
২.তিনি ইতোমধ্যেই কোন বিশেষ গোষ্ঠীর সাথে বড় অংকের লেনদেন সম্পাদন করেছেন এইসব প্রচারণা চালাবার জন্যে।

এ নিয়ে সচলদের মতামত দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

শিমুলের লেখা ওই গল্পটাই আমার কাছে যথার্থ মনে হয়।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

কনফুসিয়াস এর ছবি

কিচ্ছু বলার নেই।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

শর্মিলা নামের ওই মাতারিরে এতো কাভারেজ দেওয়া কি ঠিক হইতাছে?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

মহিলারে পাকিস্তান আর্মির ক্যাম্পে কিছুদিনের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা হোক। হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়া তারপর পাক আর্মিগো নিয়া আরো গবেষণা নিবন্ধ লিখুক।

বরফ।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

এই মাতারী তো আজীবন পাকিসঙ্গম করে চলেছেন, এবং উনার সঙ্গম এখনো চলছে। উনার স্বামী শুনলাম একজন পাকিস্তানী।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রাতের অতিথি এর ছবি

She's already received all the coverage she needs, coverage of a lot more "value" than what we can provide here. What we need to do is oppose her: please write to her employer with your views instead of discussing it here --- be specific, and stick to the point. She works at some Reuters Institute at Oxford University for Journalism (or for spinning the truth, rather!).

হিমু এর ছবি

চুতমারানি বলে গালি দিতে পারলে ভালো লাগতো, কিন্তু দিলাম না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

from dailytimes of PAkistan

General Niazi did not deny that rapes were being carried out and opined, in a Freudian tone, "You cannot expect a man to live, fight, and die in East Pakistan and go to Jhelum for sex, can you?"


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এগুলো স্বাধীনতা বিরোধী এজেন্ট
আগেও এসেছে
এখনও আসবে
তাতে কিছু যায় আসে না আমাদের ইতিহাসের

আড্ডাবাজ এর ছবি

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। বিষয়টা হচ্ছে ড: শর্মিলার এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণায় হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা মজমা পাবে। সত্যকে মিথ্যা বললে সত্য বদলায় না, কিন্তু তাকে নির্বিঘ্নে বাস করতে দিলে সেটাই পাথরের মতো বুকের উপর বসে থাকে। তাই, এধরণের ধান্ধাবাজদের মুখোশ খুলে দেয়ার খুব দরকার। এ ব্যাপারে রাতের অতিথির আইডিয়ার কথা ভেবে দেখতে পারেন। অক্সফোর্ড বা রয়টার এদের কর্পোরেট স্বার্থে আঘাত হানলে এরা ঠিকই ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া, প্রতিবাদ করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্বও। এর ফলে ড: শর্মিলা খ্যাতি পাচ্ছেন কি না জানি না। তবে খ্যাতির চেয়েও বড়ো ব্যাপারে হচ্ছে তার সামনে কি "সু" না "কু" যোগ হচ্ছে।

A. Siddique এর ছবি

Misinterpretation of our independence struggle happens number of times. Dr. Shormila's contribution in this regard is remarkable. In positive sense, her mistake awares us how much we suffered as a nation which is our pride not disgrace. After our independence, Dr. Shormila needed to come to Bangladesh and go round the places where 'Birogonas' were resided. She needed to have a good meeting with them.

একজন পাঠক এর ছবি

ভাল একটা জিনিস নিয়ে লিখছেন। প্রশংসা না করে পারছিনা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।