কিছু সাধারণ প্রশ্ন

অরফিয়াস এর ছবি
লিখেছেন অরফিয়াস (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/১২/২০১১ - ১১:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মনের মধ্যে বেশ কিছু অতি সাধারণ প্রশ্নের উদয় হয়, যা কোনভাবেই রাজনৈতিক চিন্তা-ধারণা প্রসূত নয় বরং একজন বাংলাদেশী হিসেবে কিছু মৌলিক চিন্তা মাত্র| এই প্রশ্নগুলোর উত্তর স্বাধীনতার এতো বছর পরেও পাওয়া যায়না বরং এতো বছর পরেও এই প্রশ্নগুলো করতে হয় দেখে কিছুটা অবাক হই| বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বর্তমানে চলাকালীন প্রতিযোগিতার সময় প্রশ্নগুলো আরও বেশি করে উঁকি দেয়|

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে পাকিস্তান চেষ্টা করেছে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে আমাদের মুছে দিতে, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তান কখনই পূর্ব পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন দেশের অংশ হিসেবে মনে করেনি, বরং সব ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে শোষণ ও নির্যাতন বজায় ছিলো| একটি স্বাধীন ভূখন্ড হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান কখনই পারতপক্ষে স্বাধীন ছিলো না| বরং রাজনৈতিক শোষণ থেকে শুরু করে সামাজিক শোষণ সব দিকেই পূর্ব পাকিস্তান জর্জরিত ছিলো| এমনকি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকেও কোনো রকমের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি| এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন এবং তাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার গুলিবর্ষণ| অন্য ইতিহাস ঘাটার কোনো দরকার দেখি না বরং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দেখেই আমাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে যাওয়া উচিত| তারপর একের পর এক ঘটনার প্রবাহে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা| ১৯৭১ সালের নয় মাস দীর্ঘ যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাধারণ ভাবেই অনেকগুলো অভিযোগ আনা সম্ভব| তার মধ্যে গণহত্যা, জেনেভা কনভেনশন অমান্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ এর অভিযোগ অন্যতম|

শুধুমাত্র ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ এর গণহত্যাই নয়, দীর্ঘ ৯ মাস ধরে যে হত্যাযজ্ঞ বজায় ছিলো তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে কোনো ধরনের অভিযোগ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এর সরকার করেছে বলে আমার মনে পড়ছেনা| একই ভাবে পরাজিত পাকিস্তান সরকার তাদের নিজস্ব সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও কোনো ধরনের বিচারকার্য পরিচালনা করেছে বলে আমার জানা নেই| তাই মানবধিকারের চরম অবমাননা এবং গণহত্যার বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকভাবে তো নয়ই, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সরকার উভয়ই এড়িয়ে গেছে| এতো বছরেও অভিযুক্ত সামরিক সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো রকমের ট্রাইবুনালের ব্যাবস্থা না নেওয়ায় এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বর্তমান পাকিস্তান সরকারও এই বিষয়টিকে পরোক্ষভাবে নয় বরং প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন করে|

বাংলাদেশের ভূখন্ডে যুদ্ধচলাকালীন পাকিস্তান সামরিক বাহিনী কোনধরনের মানবাধিকার এবং জেনেভা প্রটোকল অনুসরণ করেনি, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন এর উদাহরণ| নিরীহ সাধারণ নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন এবং যুদ্ধকালীন বন্দীদের কোনো রকমের মানবিক বিবেচনা করা হয়নি, একই সাথে ছিলো নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ| এই ঘটনাগুলোর সুষ্ট কোনো তদন্ত স্বাধীনতার পরেও হয়নি, এবং এই অভিযোগে অভিযুক্ত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধেও কোনো আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক কার্যক্রম দেখা যায়নি| বিজয়ের ঠিক ২ দিন আগে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের মাধ্যমে সংঘটিত বুদ্ধিজীবি গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে চরম কলংকিত একটি অধ্যায়| একটি দেশকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য যে নীল-নকশা, যে অমানবিক ও নৃশংস বুদ্ধিজীবি নিধন অভিযান চালানো হয়েছিল, তার থেকে এটা স্পস্ট যে বাংলাদেশের নাম পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার জন্য কোনো ধরনের কার্পণ্য ছিলোনা পাকিস্তানের| তাই ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের রাত থেকে শুরু হওয়া দীর্ঘ ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান একই সাথে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণহত্যা, নারী নির্যাতন, জেনেভা প্রটোকল লঙ্ঘন সহ আরও বেশ কিছু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, ৪০ বছর পরেও যার কোনো সুষ্ঠ তদন্ত কিংবা আন্তর্জতিক ভাবে বিচার হয়নি|

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরেও আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তান কূটনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে গেছে আমাদের বিরুদ্ধে, পরিকল্পিতভাবে ধংসস্তুপে পরিণত করা বাংলাদেশ যাতে কোনভাবেই স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাড়াতে না পারে তার জন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে সব কয়টি দাতা দেশে পাকিস্তান চরম তত্পরতা চালায়| স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া দূরে থাক, যুদ্ধে পরাজিত হয়েও আমাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কূটনৈতিক কার্যক্রম আমাদের সত্তার বিরুদ্ধে তাদের হিংস্র মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ| কিন্তু যে দেশ কর্তৃক এহেন নির্যাতন, তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ভাবে কার্যক্রম করা দূরে থাক, বাংলাদেশ সরকার উল্টো সম্প্রীতির হাত বাড়াচ্ছে|

ইতিহাস কখনো পুরনো হয়না, তাই তত্কালীন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে যুদ্ধপরবর্তী দেশ সামলানোর সাথে সাথে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব না হলেও তার পরবর্তী সরকারগুলোর কি সমস্যা ছিলো, এটা একটা প্রশ্ন| শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার ৪০ বছর পড়ে যখন বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সাথে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো, তখনো পাকিস্তানের সেই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে ট্রাইবুনালের ব্যাবস্থা করা দূরে থাক বরং আমরাই তাদের জামাই আদর করছি| যাদের জন্য আমাদের দেশের ৩০ লক্ষ্ মানুষ শহীদ হলো, ২ লক্ষ্ নারী ভয়াবহ নির্যাতনের স্বীকার হলো, দেশ একটি ধংসস্তুপে পরিণত হলো, তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ না এনে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা কতটুকু??

পাকিস্তানের নাম সামনে আসলেই অনেকগুলো শব্দ পাশাপাশি মনে চলে আসে- যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, নির্যাতন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, জঙ্গি, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস... আরো আরো অনেক| এর কোনোটিই পাকিস্তানের প্রতি নরম মনোভাব জাগানিয়া নয়| যেই দেশটি প্রত্যক্ষভাবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত, ধংসপ্রায় অর্থনীতি, চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠী, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার কেন্দ্রবিন্দু তাদের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব তৈরী করার আকাংখা দেখলে আসলেই অবাক হতে হয়| শুধু তাই নয়, স্বাধীন বাংলাদেশেও জঙ্গিদের প্রত্যক্ষ মদদ দেওয়ার অভিযোগে যারা অভিযুক্ত তাদের সাথে সবরকমের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা তো দূরে থাক বরং সম্প্রীতির আহব্বান করা হচ্ছে| যখন দেশের দাতাগোষ্ঠির সাথে সরকারের সম্পর্ক ভালো, আরব দেশগুলোর সাথে সরকার কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিচালনায় যথেষ্ঠ সক্ষম, তখন পাকিস্তানের মতো একটি দেশের সাথে গায়ে পড়ে সম্পর্ক তৈরির কি যুক্তি থাকতে পারে??

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে যে দেশটি বিরোধিতা করে যাচ্ছে এবং সময় সুযোগ মতো ছোবল মেরে যাচ্ছে, তাদের সমর্থন করার কি যুক্তি থাকতে পারে আমি জানিনা| বর্তমানে বিজয়ের মাসে পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে দেশে আমন্ত্রণ করে এহেন মর্মান্তিক নিষ্ঠুর রসিকতার কি মানে থাকতে পারে?? তাহলে কি বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের স্বাধীন ভূখন্ডে কিছু মানুষের
(নাকি অমানুষের) পাকিস্তানি পতাকা দেখার জঘন্য কুরুচিমূলক বাসনা চরিতার্থ করার জন্য এ আয়োজন?? যে দেশ এখনও তাদের অমানুষিক বর্বর কর্মকান্ডের জন্য একটি সাধারণ ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি, তাদের জন্য আমাদের দেশের মাটিতে স্থান হয় কি করে?? আরও জানতে ইচ্ছে করে খেলার সময়ে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে যারা উল্লাস করে, গায়ে এঁকে যারা পাকিস্তানকে ফিরে পাবার জঘন্য নগ্ন-বাসনা সোল্লাসে দেখানোর সুযোগ পায় তারা কি এদেশের নাগরিক?? কোনো রাজনীতি নয়, বরং দেশের অতি সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধাচারণ করা কি অযৌক্তিক??

তাই অনেকগুলো প্রশ্নের এখনও কোনো উত্তর মেলে না, কেন পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না?? কেন বাংলাদেশের সরকার তাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখবে?? হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনের স্বীকার একটি দেশ কেন তাদের চরম শত্রুর প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়াবে?? আর তার থেকেও যে প্রশ্নটা বেশি মনে আসে তা হলো-

স্বাধীন বাংলাদেশের ভূখন্ডে যেসব বাংলাদেশের নাগরিক পাকিস্তানের পতাকা উড়ায় কিংবা সমর্থন প্রদর্শন করে, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ কেন আনা হবেনা???


মন্তব্য

তাপস শর্মা  এর ছবি

চলুক

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ তাপস দা ...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতুল মিত্র এর ছবি

আমাদের দেশের যুবকদের মাঝে পাকিস্তানবাদ সংক্রান্ত এক ধরনের আবেগ জনিত সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। তারা যে ধরনের যুক্তিভিত্তিক আলচনাকে তালগোল পাকিয়ে ফেলে তা হল পাকিস্তানবাদ আর ইসলাম।তারা মনে করে ইসলাম মানার জন্য সবচেয়ে পার্শবরতি দেশ পাকিস্তান কে অনুসরন করা উচিত এবং তারা মনে করে পাকিস্তান এ ইসলাম পৃথিবির যে কোন মুসলিম দেশের তুলনায় বেশি জিন্দা। তাদের এই আবেগজনিত সমস্যা কাটাবার জন্য মানুশের আবিষ্কৃত যুক্তিবিদ্য আর ইসলাম এর যুক্তিবিদ্য কে পরযালোচনা করা উচিত। ওটা তারা ছোট বেলা থেকে বধ্যমূল ভাবে ধারন করে এসেছে যা তাদের খতিয়ে দেখা প্রোয়জন।

অরফিয়াস এর ছবি

ইসলাম এবং পাকিস্তানের কি সম্পর্ক আছে এটা আমার বোধগম্য হয়না, ধর্মভিত্তিক চিন্তা এবং তা দিয়ে কারো অপরাধ যাচাই করা এখানে অনুচিত কারণ যদি ধর্মের দৃষ্টি থেকেও দেখা হয় তাহলেও পাকিস্তান কোনভাবে ছার পায়না, সেখানে তাদের সমর্থন দান করার পেছনে ধর্মভিত্তিক ভাই ভাই চিন্তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছেনা|

যেমন বাংলাদেশের কোনো নাগরিক ইসরায়েল যেতে পারেনা, এর পেছনে কিন্তু ইসরায়েল এর সমস্যা নেই বরং ইসরায়েল ৭২ সালেই স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো, তখন অনেক আরব দেশেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি ছিলোনা, কিন্তু তারপরও কোনো কারণ ছাড়াই বাংলাদেশ ইসরায়েলের সাথে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখেনি, শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের পাসপোর্ট এ স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে, যেকোনো দেশে শুধুমাত্র ইসরায়েল এর জন্য বৈধ নয়| এখানে ধর্মানুভূতিকে যদি এরকম ভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয় তাহলে একই ভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অজস্র মানুষের হত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তানের জন্য এই অনুভূতি কেন প্রযোজ্য হবেনা??

আসলে দেশের একটি অংশ এখনও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাই এখানে ধর্মর লেবাস দিয়ে আসল ঘটনা ঢাকার চেষ্টা চলে ...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দীর্ঘ ৯ মাস ধরে যে হত্যাযজ্ঞ বজায় ছিলো তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে কোনো ধরনের অভিযোগ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এর সরকার করেছে বলে আমার মনে পড়ছেনা| একই ভাবে পরাজিত পাকিস্তান সরকার তাদের নিজস্ব সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও কোনো ধরনের বিচারকার্য পরিচালনা করেছে বলে আমার জানা নেই

অরফিয়াস, এখানে একটা শুভঙ্করের ফাঁকি আছে।
সিমলা চুক্তি অনুযায়ী তারা হামুদুর রহমান কমিশন গঠন করে... তদন্ত হয়... তারা তাদের মতো বিচারটা করছে...
কিন্তু সেই বিচারটা যে 'আন্তর্জাতিক মানের ছিলো না' তা আজ কেউ বলে না
সারা বিশ্ব আজ ঝাঁপায়া পড়ছে আমাদের লোকাল খাপোদের বিচার কেন আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে না তাই নিয়ে...

আন্তর্জাতিক খাপোদের বিচার চাই

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অরফিয়াস এর ছবি

সেটাই আমার কথা, হামিদুর রহমান কমিশনের বিচারকে কোনো ভাবেই সঠিক বলে ধরা যাবেনা, যেমন দেখুন বিশ্ব যুদ্ধের অনেক পর পর্যন্ত কিন্তু আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল চলেছে, নুরেমবার্গ ট্রাইবুনালে যথেষ্ট পরিষ্কার বিচার করা হয়েছে, সেরকম কোনো আন্তর্জাতিক মানের বিচার কাঠামোর ভিত্তিতে কোনো ধরনের ট্রাইবুনাল কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেখা যায়নি| একই সাথে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সামরিক আইন অমান্য করার অভিযোগের প্রেক্ষিতেও কিন্তু তাদের সামরিক সদস্যদের কোনো বিচার হয়নি, শুধুমাত্র জেনেভা প্রটোকল ভাঙ্গার অভিযোগেই তো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সচ্ছ বিচারের আবেদন করা যায়, কিন্তু সেটাও তো করা হচ্ছেনা| আর যতদিন যাচ্ছে এই সংক্রান্ত সব তথ্যই ইচ্ছাকৃত ভাবে নষ্ট করা হচ্ছে, ইতিহাস বিকৃত করে পরবর্তী প্রজন্মকে অন্ধ করে দেওয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত ভাবে করা হচ্ছে| তাই দেখুন দিন দিন দেশে পাকিস্তানের সমর্থন বাড়ছে বই কমছেনা|

আপনি যেমন বললেন, যে দেশের যুদ্ধপরাধীদের বিচার আন্তর্জাতিকভাবে হচ্ছে কিনা তা নিয়ে অনেক হইচই হচ্ছে, কিন্তু এখানে কোনো হইচই হওয়ারই কথা না, কারণ যাদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য চলছে তাদের বিরুদ্ধে অজস্র প্রমান উপস্থিত, তাই এই বিষয়ে অন্য মতামতের প্রশ্নই আশা করা উচিত না, কিন্তু দেশে কিন্তু সেটা নিয়ে দারুন রাজনীতি চলছে, তাহলে গণতন্ত্র রইলো কই?? যদি দেশের অধিকাংশ নাগরিকের ইচ্ছা বিচার হউক, তাহলে আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে কারা?? তাহলে কি ঘটনাটা সর্ষের ভেতরেই ভূত এরকম হয়ে যাচ্ছেনা| দেশে পাকিস্তান সমর্থক একটি গোষ্ঠী এখন তো বেশ জোরে শোরেই মাথা চারা দিচ্ছে|

যুদ্ধপরাদের আন্তর্জাতিক বিচার চাই ..

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

হিমু এর ছবি

হামিদুর নয়, হামুদুর। আর ঐ কমিশন একটা বালের কমিশন। টিক্কা খান তখন ছিলো পাক আর্মি চিফ, হামুদুর কমিশনের রিপোর্টে তার নামে নাকি কিছুই বলা হয় নাই। টিক্কারে বাদ দিয়ে গণহত্যা নিয়ে রিপোর্ট হয়?

অরফিয়াস এর ছবি

বানান ভুলের জন্য দুঃখিত... "হামুদুর রহমান" কমিশন...এবং যুদ্ধপরাধ ...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

বর্ণালী আকাশ এর ছবি

আপনি রাজনীতিকে বাদ দিতে পারেন না এ আলোচনা থেকে, কারণ রাষ্ট্রের উদ্ভব রাজনীতি থেকে। পাকিস্তানের খেলার সমর্থন করে খেলা ভালো লাগে বলে। ইসরাইলকে ধর্মের করণে নয় বরং ফিলিস্তাতিনিদের ওপর তাদের অন্যায় আচরণের কারণে বাংলাদেশ তাদের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তানকে তো সমর্থণ দেয়া যায়ই না এবং ভারত প্রীতিটাও দূর করা উচিত.....................

কালো কাক এর ছবি

কী বুঝাতে চাইলেন?
এখানে ভারতপ্রীতি আনলেন কোত্থেকে?
পাকিস্তানের খেলা ভাল লাগে বলে বাংলাদেশের সাথে খেলায়ও পাকি সাপোর্ট করা যুক্তিসঙ্গত?

অরফিয়াস এর ছবি

মাননীয়/মাননীয়া, বর্ণালী আকাশ-

আপনি রাজনীতিকে বাদ দিতে পারেন না এ আলোচনা থেকে, কারণ রাষ্ট্রের উদ্ভব রাজনীতি থেকে।

এই লেখায় রাজনীতির আলোচনা বাদ দেওয়া হয়েছে কেন তার কারণ লেখাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করলে তাহলে তত্কালীন নির্বাচন ও সে সংক্রান্ত ঘটনা নিয়েও আলোচনা করতাম| কিন্তু এই লেখাটার উদ্দেশ্য ছিলো যে, পাকিস্তানকে ঘৃনা করতে হলে রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝতে হয়না, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই যথেষ্ট এটা তুলে ধরা| আর শুধু তাই নয়, যুদ্ধকালীন দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় আনলেও পাকিস্তান কোনো ধরনের প্রটোকল অনুসরণ করেনি, এই দিক থেকেও পাকিস্তান দোষী| পাকিস্তানের অপচেষ্টা ছিলো বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া, এটাকে আমি রাজনীতি হিসেবে মেনে নিতে পারিনা, এটা শুধুমাত্র হত্যানীতি ছাড়া আর কিছুই নয়| রাজনীতির ময়দানে পাকিস্তান প্রথম থেকেই পরাজিত ছিলো, এখনও আছে, তাই তারা সবসময় হত্যা ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে এখনও নিচ্ছে| পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পরিস্থিতি দেখলে এটা সহজেই অনুমেয়|

পাকিস্তানের খেলার সমর্থন করে খেলা ভালো লাগে বলে।

আইসিসি প্রদত্ত বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে টেস্ট খেলুড়ে ৯টি দলের মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান ৬ষ্ঠ, ওয়ান ডে ম্যাচে অবস্থান ১৩টি দলের মধ্যে ৫ম, ২০-২০ ম্যাচে অবস্থান ১০টি দলের মধ্যে ৬ষ্ঠ| বিগত কিছু বছরের রেকর্ড ঘাটলে পাকিস্তানের অবস্থান কখনই আহামরি কিছু ছিলোনা, এছাড়াও পাকিস্তান দল অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি, কোচের সাথে সবসময় লেগে থাকা সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে জর্জরিত| তাই একটি দলের শুধুমাত্র সামগ্রিক পারফমেন্স বিবেচনা করলেও পাকিস্তান কোনমতেই ভালো অবস্থানে নেই| তাই আপনার এই উক্তি কিংবা আপনার মতো যারা এই উক্তি দিয়ে পার পেতে চান, তা ধোপে টেকে না| আর পাকিস্তানের খেলার মান এখন কোনভাবেই অন্য দলগুলোর থেকে ভলো নয়|

ইসরাইলকে ধর্মের করণে নয় বরং ফিলিস্তিনিদের ওপর তাদের অন্যায় আচরণের কারণে বাংলাদেশ তাদের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

প্রথমত বাংলাদেশকে ইসরায়েল স্বাধীনতার পড়ে স্বীকৃতি প্রদান করেছিলো, যখন পাকিস্তান তো নয়ই অনেক ভাতৃপ্রতিম আরব দেশও স্বীকৃতি দেয়নি| তাই তাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করাটা কোনো খারাপ কিছু ছিলোনা, এছাড়া এখন ইসরায়েল এর সাথে বিভিন্ন আরব দেশ পর্যন্ত তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখছে সেখানে বাংলাদেশের জন্য এটা কোনো মহা দুর্যোগপূর্ণ সিধান্ত নয়| এখন কথা হচ্ছে, আমি বলছিনা কিংবা লেখাতেও বলিনি যে বাংলাদেশের ইসরায়েল এর সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা উচিত কিন্তু প্রশ্ন ছিলো যে, ইসরায়েল এর যে অমানবিক আচরণের জন্য তাদের সাথে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, সেই একই ভাবে পাকিস্তান কর্তৃক সরাসরি নির্যাতিত হয়ে তাদের সাথে কেন কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন???? আর আপনি যেভাবে এক কথায় এখানে ধর্মের প্রভাব উড়িয়ে দিলেন, সেটা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এখানে ধর্মের প্রভাব সুস্পস্ট|

পাকিস্তানকে তো সমর্থণ দেয়া যায়ই না এবং ভারত প্রীতিটাও দূর করা উচিত

আর ঠিক এই লাইনটা লিখেই আপনি প্রমান করে দিলেন যে আপনি আসলে আমার লেখাটার অর্থ কিছুই ধরতে পারেননি| প্রথমত এখানে কথা হচ্ছে বাংলাদেশের সাথে পাকিস্থানের সম্পর্ক আর কিছু মানুষের অতি পাক-প্রেম নিয়ে, সেখানে ভারতের কথা কোথা থেকে আসে?? এছাড়াও আমাদের দেশের কিছু মানুষ "ভারতের দালাল" এই শব্দটি দিয়ে তাদের পাকি-প্রেম জায়েজ করার চেষ্টা করে যা পারতপক্ষে চরম ছাগু সুলভ আচরণ| ভারত দেশ হিসেবে আমাদের দেশকে অর্থনৈতিক শোষণ করছে বেশ অনেক বছর ধরে, বাংলাদেশের সরকার চাইলে এর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে পারে কিন্তু সেটা একটি দেশের সাথে আরেকটি দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা, পাকিস্থানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কই যেখানে উচিত নয় সেখানে এরকম তুলনা করা অপ্রয়োজনীয়| আর এই যে কিছু মানুষের পাকিস্তানের কথা উঠলেই ভারতকে টেনে আনা সেটা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়, অর্থনৈতিক শোষনের কথা উঠলে তাহলে আরও অনেক দেশই তার কাতারে আসতে পারে, শুধু ভারত কেন?? ভারতের সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে শক্তিশালী সরকারী পদক্ষেপ প্রয়োজন| কিন্তু পাকিস্তান এর সাথে যে সমস্যা নিয়ে কথা হচ্ছে সেখানে এটা টেনে আনা আসল ঘটনা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো কাজ|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

আজহার এর ছবি

বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার সময় কোন বাংলাদেশীর পাকিস্তান দলের পক্ষ নেয়া কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
ICC এর ক্রিকেট সুচিতে ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের খেলা রাখাটা মনে হচ্ছে ঠিক হইনি। অবশ্য, বাংলাদেশ পাকিস্তানকে এই মাসে হোয়াইট ওয়াশ করলে "সমুচিত জবাব" বলে অনেকে অভিনন্দন জানাতো।

অন্যের ভালোকে ভালো বলে স্বীকার করতে আমার ভালোই লাগে

অরফিয়াস এর ছবি

ঠিক বুঝলামনা... মন খারাপ

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

উচ্ছলা এর ছবি

চরম ক্ষতি করার পরও যে শত্রু ক্ষমা চায়নি, অনুতপ্ত হয়নি, সেই আজন্ম-শত্রুকে ঘৃনা করা উচিৎ, এটা ব্লগিং করে বা আর্টিকেল লিখে পোলাপাইনকে বুঝাতে হয়। বাঙ্গালী পোলাপাইনের মাথা ভর্তী পুরীষ ! বালতী বালতী পুরীষ !!

অরফিয়াস এর ছবি

আমার এক বন্ধু বেশ ভালো একটা কথা বলেছিলো ... "every war leave some bastards behind"..

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

স্বাধীন বাংলাদেশের ভূখন্ডে যেসব বাংলাদেশের নাগরিক পাকিস্তানের পতাকা উড়ায় কিংবা সমর্থন প্রদর্শন করে, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ কেন আনা হবেনা???

অত্যন্ত খাঁটি কথা। চলুক

অরফিয়াস এর ছবি

খাঁটি কথাটা দেশের অনেকের মাথাতেই ঢোকেনা... মন খারাপ

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।