ক্ষরা ও খুনের অবেলা

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: শুক্র, ১৪/০৫/২০১০ - ১১:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তাকে সনাক্ত করা গেলে, অন্তত একবার প্রমাণসহ দেখা মিললে, খুন করা হবে।
এ সিদ্ধান্তে কোনো দ্বিধা নেই, সংকোচ নেই। সিদ্ধান্ত যখন নেয়া হয়েই গেছে, তখন ফেরার পথও নেই। খুন করার পরে, নিজের কাছে অথবা অন্য কারো কাছে, কোনো কার্যকারণ কিংবা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যেতে হবে না। পৃথিবীতে সব কিছু সবাইকে জানতে হয় না, অনেক কিছু না জেনেই মানুষ বেঁচে থাকে এবং মরে যায়। তাই তাকে মরে যেতে হবে। তার মৃত্যুর কারণ পৃথিবীর মানুষ জানবে না। হয়তো সে নিজেই জানবে না কেনো তাকে মেরে ফেলা হলো – কারণটি অথবা কারণগুলো তাকে জানতে দেয়া হবে না। যদিও সম্ভাবনা থাকে, জীবনে শেষ মুহূর্তে সে নিজেই বুঝে নেবে – এমনটিই হওয়ার কথা ছিলো। তার কৃতকর্মের দায়টুকু তাকে নিতেই হবে। তাকে আঘাত করা হবে, ঐ আঘাতে সে মরে যাবে। মুনাদ নিজেকে বলবে, আমি শুধু আঘাত করেছি, এরপরের দায়ভার আমার নেই। তারপর বাসায় ফিরে মুনাদ খোলা ছাদে শুয়ে থাকবে, আকাশে তারা কিংবা মেঘ দেখে নির্ঘুম রাত জাগবে। আনন্দম গীতায়নের বাসিন্দারা তখনো জানবে না তাদের ওপরের–নিচের–অথবা পাশের বাসায় একটি লোক মরে গেছে।



দুই.
আনন্দম গীতায়ন যখন ছিল না, তখন এক টুকরো আকাশ দেখার সুযোগ ছিল।
সাদা-নীল অথবা কালো মেঘেরা ভীড় করতো সময়ে অসময়ে। মেঘলা দিনে আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টিদল উচ্ছ্বাস আর উল্লাসে লুটিয়ে পড়তো সবুজ ঘাসে, অথচ সেখানে এখন ইট-কংক্রিটের পা গেঁথে দাঁড়িয়ে আছে আনন্দম গীতায়ন। এ মৃত শহরে ক্রমশ ঢেকে যাওয়া আকাশের এ অংশে বিগত কোনো এক রোদময় সকালে কিছু কবুতর ডানা মেলতো, চক্কর দিতো কারণহীন উল্লাসে। অনির্দিষ্ট বিকেলে ভটভট শব্দে উড়ে যেতো সবুজ রঙের হেলিকপ্টার। তারপর সন্ধ্যা শেষে হয়তো কিছু শুকতারা পরষ্পরের কাছে আসার এবং দূরে সরার খেলা করতো। আদমসুরত কি দেখা যেতো কখনো? আদমসুরত কখন দেখা যায় – সূর্য ডোবার কতক্ষণ পরে – নাকি আগে?

জানালার পর্দা সরিয়ে, বিছানায় শুয়ে পিঠে বালিশের ঠেস দিয়ে ঘাড় তুলে, বাইরে তাকিয়ে এসব ভাবে মুনাদ। ভাবে, আর নিজের চোখ নিয়ে খেলা করে। মনোযোগটা চোখের ওপর স্থির করলে এবং সরালে - চমৎকার একটি খেলা জমে ওঠে। এ খেলায় একবার জানালার গ্রীল স্পষ্ট হয়, আরেকবার আনন্দম গীতায়ন। আদমসুরতের কথা ভাবতে ভাবতে মুনাদ চোখের মনোযোগ দূরে ঠেলে দেয়। তখন সামনে এক ফুট দূরে তার জানালার গ্রীল অস্পষ্ট হয়ে যায়। মুনাদের চোখ যায় আনন্দম গীতায়নের পাঁচটি জানালায়। তিনটি জানালায় এখনো অন্ধকার, বাকী দুটোয় বাতি জ্বলে উঠেছে কিন্তু পর্দা সরেনি। তাই মুনাদ বুঝতে পারে না কী হচ্ছে ওখানে। সে অপেক্ষায় থাকে, কিছু একটা হবে, জানালার পর্দা সরবে, জেগে উঠবে ভেতরের মানুষগুলো। মধ্যরাত অবধি হয়তো একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হবে, যেমন হচ্ছে গত ঊনচল্লিশ দিন। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত এগারোটা, প্রতিদিন পাঁচ ঘন্টা করে নিজের ঘরের বাতি নিভিয়ে, গতকাল পর্যন্ত ঊনচল্লিশ দিনে মোট একশ’ পঁচানব্বই ঘন্টা মুনাদ তাকিয়ে আছে আনন্দম গীতায়নের জানালাগুলোয়। এই একশ’ পঁচানব্বই ঘন্টা হিসেব করতে মুনাদ ঊনচল্লিশকে পাঁচ দিয়ে গুন করে না, সে চল্লিশ আর পাঁচ গুন করে দু’শ বের করে - তারপর পাঁচ বিয়োগ দেয়। পাঁচ বিয়োগ দিতে দিতে সে আবার ঐ পাঁচ জানালায় চোখ রাখে। ডানে-বামে ওপর-নিচ করে পাঁচ যোগ করে একশ’ পঁচানব্বইয়ের সাথে। আজ দু’শ ঘন্টা পূর্ণ হবে এ তাকানোর, এ অনুসরণের, এ অসহ্য যন্ত্রণার। মোবাইল ফোনে এফএম শুনছে মুনাদ, সময় সন্ধ্যা সাতটা, এবিসি রেডিওতে সন্ধ্যার সংবাদ শুরু হয়েছে। সংবাদ শিরোনামে মুনাদের মনোযোগ নেই। সে তাকিয়ে থাকে আনন্দম গীতায়নের পাঁচটি জানালায়। তখনো বাতি জ্বলেনি দুটো জানালায়, পর্দা সরেনি বাকী তিনটির। মুনাদ ভাবে, বছর দেড়েক আগে আনন্দম গীতায়ন নামের অ্যাপার্টমেন্ট, অথবা নাতাশা যেমন বলেছিল -আধুনিক বস্তিটি, হওয়ার আগে মুনাদের জানালা দিয়ে এক চিলতে আকাশ দেখা যেতো, সেখানে নানান রঙের মেঘেরা হয়তো ভীড় করতো। এখন আনন্দম গীতায়নের ঔদ্ধত্য উচ্চতায় যে হেলিকপ্টারটি দেখা যায় না – কেবল ভটভট শব্দ শোনা যায় – সে হেলিকপ্টারকে হয়তো পাখাসহ দেখা যেতো। ছাদে উঠে ঘুড়ি ওড়ানো যেতো উন্মুক্ত সে আকাশে, এরকম সন্ধ্যায় বাতি নেভানো ঘরের জানালায় বসে অনায়াসে আকাশে তারাদের ছোটাছুটি দেখে সময় কাটানো যেতো। মুনাদ এসব কখনো করেছে কিংবা দেখেছে বলে মনে করতে পারে না। নিজেদের দোতলা বাড়ির এ ঘরে মুনাদ থাকছে প্রায় পাঁচ বছর হলো কিন্তু জানালা খুলে এরকম লম্বা সময় আকাশে তাকানো হয়নি তার। এখন চায়ও না আর এরকম করে তাকিয়ে থাকতে, বরং এ তাকানোর অবসান চায় সে।

মুনাদের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব আব্বা পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে কাজ করতেন। নব্বই সালের শেষদিকে সরকার বদলের সময়ে তিনি পীরেরবাগের এ নির্জন কোণায় তিনকাঠা জমি কিনেছিলেন সস্তায়। সে জমিতে নিজের পছন্দমতো ডুপ্লেক্স বাড়ি করেছেন বছর পাঁচেক আগে। প্রায় দু’দশক সময় পেরিয়ে এখানে জনবসতি বেড়েছে, উঠেছে পরিকল্পনাহীন বাড়িঘর, কোলাহলময় হয়েছে দিনযাপন আর আকাশ কেড়ে নিয়েছে আনন্দম গীতায়ন, যুথিকা’স পার্ল, পিস প্যালেস নামের আধুনিক বস্তিগুলো। সে তুলনায় মুনাদদের বাসা খুব সুনসান। আব্বা-আম্মা-মুনাদ, বড় ভাইয়া লন্ডনে থাকে, আর দু’জন কাজের লোক ও দারোয়ান – এ ছয়জন মানুষ সর্বসাকুল্যে। ড্রাইভার সকালে আসে রাতে চলে যায়। এমন নির্জনতায় মুনাদ মধ্য দুপুরে নিয়াজ মোহম্মদ চৌধুরী শোনে, সিডি প্লেয়ারের ভলিউম লেভেল তিরিশ থেকে বত্রিশ করে দেয়। অথবা গনগনে রোদের দুপুরে ভাত খেয়ে ফুল স্পীডে ফ্যান ছেড়ে খাটে আড়াআড়ি শুয়ে মাসুদ রানা পড়ে। মুনাদ মাসুদ রানা হতে চেয়েছিল – ‘টানে সবাইকে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না’। অদম্য সাহস না থাকলেও মুনাদ হয়তো সত্যিই টানতো কাউকে কাউকে, তাই তাকে বাঁধনে জড়াতে হয়। তারপর একদিন দুপুরে ক্লাস শেষে সাত মসজিদ রোডের ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস থেকে নাতাশাকে মোহম্মদপুর শিয়া মসজিদের মোড় পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে, আকাঙ্ক্ষিত সঙ্গ দিয়ে, মিরপুর ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আব্বা আম্মার কাছে জবাবদিহিতায় অনায়াসে ইতস্তত কার্যকারণ ব্যাখ্যা করা যায়। তাই এই একদিন ক্রমান্বয়ে প্রতিদিন হয়ে ওঠে। নাতাশা এসএমএস পাঠায়, ‘আই ফিল ইয়্যূর অ্যাবসেন্স’। মুনাদ টের পায় তার পক্ষে আর মাসুদ রানা হওয়া সম্ভব না। মিড টার্মের আগের রাতে মাসলোর হায়ারার্কি অব নীড থিয়রীর ফিজিওলজিক্যাল নীড পড়তে পড়তে মুনাদ নাতাশাকে উত্তর দেয়, ‘মী ঠু’। মুনাদ মুক্তির স্বপ্ন দেখে, একটি প্রশ্ন-উত্তরহীন একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের স্বপ্ন দেখে, স্বপ্নে নাতাশাকে দেখে – ‘আমরা যাবো সেখানে যেখানে যায়নি কোনো নাবিক কোনোদিন’। মুনাদের এ মুক্তির প্রতীক্ষা খুব দীর্ঘ হয়নি। অনেকদিনের পরিকল্পনা শেষে মুনাদের আব্বা-আম্মা লন্ডন প্রবাসী বড় ছেলের কাছে বেড়াতে গেলে জবাবদিহিতার শেকলগুলো অনায়াসে অদৃশ্য হয়ে যায়। জীবনে প্রথমবারের মতো ছয় মাসের মুক্ত জীবনের স্বাদ কেমন হবে সে কল্পনায় বারবার ঘুরপাক খায় মুনাদ।

দু’শ ঘন্টার হিসাব মাথা থেকে ক্ষণিক সরে গেলে মুনাদের মনের ক্যালকুলেটরে এবার আব্বা-আম্মার ছয় মাসের লন্ডন থাকার হিসাব ফিরে আসে। মনে হয়, এই তো সেদিন আব্বা-আম্মাকে এয়ারপোর্টে বিদায় জানালো সে। চোখের পলকে কেটে গেলো পাঁচ মাস। আবার মনে হয় – গত ঊনচল্লিশ দিন যেনো অনন্তকাল হয়ে আছে। বড্ডো দীর্ঘ, বড্ডো ক্লান্তিকর। তখন হঠাৎ আনন্দম গীতায়নের তিন নম্বর জানালার পর্দা সরে যায়। মুনাদ নড়েচড়ে বসে। পর্দার আড়াল থেকে বাইনোক্যুলারে সতর্ক চোখ রাখে সে।



তিন.
ঘটনার আকষ্মিকতায় মুনাদ হতভম্ব ছিলো।
অনেক অনেকবার নিজের শরীরে খামচি কেটেছে, চোখ কচলিয়েছে, দু’হাতে চুল টেনেছে। ভাবতে চেয়েছে – এ বাস্তব নয়, এ স্বপ্ন, অহেতূক অকারণে দীর্ঘ হওয়া দুঃস্বপ্ন। ছোটবেলা থেকে মুনাদের স্বপ্ন দেখার অভ্যেস। প্রতিরাতে সে স্বপ্ন দেখতো – অগোছালো বিচ্ছিন্ন আজগুবি সব স্বপ্ন। অনেক রাত স্বপ্নে ঘুম ভেঙে গেলে পানি খেয়ে আবার ঘুমিয়ে স্বপ্নের বাকী অংশ দেখেছে। তাই মনে হয়, এসব ঘটনা – এসব আকষ্মিকতা – এসব অস্থিরতা নিতান্তই স্বপ্ন। অথচ স্বপ্ন ভাঙা সকাল আসে না। সকালে ঘুম ভাঙতেই মুনাদের মনে পড়ে নাতাশার কথা। টেবিলে পড়ে থাকে নাতাশার চুল বাধার বেগুনী ক্লিপ। তারপর আবার চোখ যায় আনন্দম গীতায়নে।

বিশ ছুঁই ছুঁই বয়সে এতোসব ঘটনার ভার একসঙ্গে নেয়া মুনাদের কাছে কঠিন মনে হয়। একটু সময় পেলে হয়তো নিজেকে গুছিয়ে নিতো, সমস্যাগুলোর গুরুত্বমাফিক তালিকা করতো, তারপর সমাধানের দিকে এগুতো। কিন্তু, এতো দ্রুত এতো কিছু ঘটলো – মুনাদ নিজেকে বাস্তব আর দুঃস্বপ্নের জগত থেকে আলাদা ভাবতেই হিমশিম খেলো খুব। ব্যাপারটি প্রথম যেদিন মুনাদ জানতে পারে সেদিন প্রথম যে সিদ্ধান্ত সে নিয়েছিলো তা হলো – কাউকে কিছু বলা যাবে না। নিজে নিজে নীরবে জানতে হবে কে করেছে এ কাজ। মুনাদের ঘরের ভেতরটা এভাবে দেখা যাবে একমাত্র আনন্দম গীতায়নের দক্ষিণ পাশের কোনো এক জানালা থেকে। ছাদে উঠে সে হিসেব করে দেখেছে - এ পাশে আনন্দম গীতায়নের আটটি ফ্ল্যাটের আটটি জানালা। মুনাদ নিশ্চিত হয় এ আট ফ্ল্যাটের কোনো একটির মানুষ এ সর্বনাশ ঘটিয়েছে। প্রথম দিনের বিশ্লেষণে বাদ যায় নিচ তলা ও দ্বিতীয় তলার সম্ভাব্যতা। নিচতলার জানালা আনন্দম গীতায়নের সিক্যুরিটি গার্ডের ঘর, সেখান থেকে মুনাদের জানালা দেখা যায় না। যেমনটি দেখা যায় না দোতলার ঘর থেকেও, কারণ ঐ জানালার কাছে বেড়ে ওঠা নারিকেল গাছের ডালপালায় ঢেকে গেছে বাইরের দৃশ্য দেখার সুযোগ। মুনাদ তবুও খবর নিয়ে জেনেছে - আনন্দম গীতায়নের দক্ষিণ পাশের দোতলায় এক প্রবাসীর স্ত্রী থাকেন দুই শিশু পুত্র নিয়ে, যারা ধানমন্ডির একটি ইংরেজী স্কুলে পড়ে। তৃতীয় তলায় থাকেন বিপত্নীক সেলিম চাচা, একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি মুনাদের আব্বার পরিচিত, মুনাদদের বাসায় এসেছেন বেশ কয়েকবার। এখন কিছু এনজিও-তে ফান্ড রেইজিং অ্যাডভাইজর হিসেবে কাজ করছেন। অ্যাপার্টমেন্টের দুই রুমে নিজে থেকে বাকী দুই রুম অফিসের কাজে ব্যবহার করেন তিনি, মুনাদ একবার ঘুরতে গিয়ে দেখেছে, কাজের লোক ছাড়া আর কেউ থাকে না। সেলিম চাচার প্রায়-বন্ধ-থাকা জানালাকে তাই অনায়াসে বাদ দেয় মুনাদ। বাকী থাকে অন্য পাঁচটি জানালা, জানালার ভেতরের মানুষ; যাদের সম্পর্কে মুনাদের কোনো ধারণা নেই। তবে মুনাদ জানে, যা কিছু করতে হবে গোপনে করতে হবে – খুব সাবধান থাকতে হবে।

আনন্দম গীতায়নের দক্ষিণ পাশের বাকী পাঁচটি জানালা মুনাদ খুব সতর্কভাবে খেয়াল করছে। গত ঊনচল্লিশ দিনে পাঁচটি জানালা যেনো পাঁচটি টিভি চ্যানেলের পর্দা হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত এগারোটা প্রতিরাতে মুনাদ চ্যানেলগুলোর নিয়মিত আগ্রহী দর্শক। প্রতিটি কুশীলবের আচরণ চলাফেরা, যতোটুকু দেখা যায়, মুনাদ মন দিয়ে লক্ষ্য করছে। দিন পনেরো কি বিশ আগে মুনাদ খেয়াল করেছে চ্যানেলগুলোয় নতুনত্ব নেই, একই মানুষ প্রতি সন্ধ্যায় ঘরে ফিরছে বাতি জ্বালাচ্ছে, পর্দা সরাচ্ছে, পর্দা টানছে, বাতি নেভাচ্ছে। মুনাদ নিজের অন্ধকার করে রাখা ঘরে পর্দার আড়াল থেকে বাইনোক্যুলারে চোখ রেখে রেখে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে, অথচ এখনো সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো কোনো চূড়ান্ত দৃশ্য পাওয়া যাচ্ছে না। পাঁচটি জানালাকে পাঁচটি চ্যানেল নাম দেয় সে, তবে সেখান থেকে আজ পর্যন্ত পাওয়া দৃশ্যগুলো যোগ করলে যেসব গল্প পাওয়া যায় দুয়েকটি বাদে বাকীগুলো নিতান্তই সাদামাটা। মুনাদ অবশ্য প্রতিটি দৃশ্যের মানুষগুলো নিয়ে আলাদা গল্প তৈরীর চেষ্টা করে, যেমন – চ্যানেল ওয়ানে, মানে এক নম্বর জানালায়, কিছু উদ্ভিন্না তরুণীকে দেখা যায়। দিনের বেলা এ জানালা বন্ধ থাকে দেখেছে মুনাদ। সে অনুমান করে – তরুণীগুলো পরস্পরের বন্ধু নয়, তবে তারা একসঙ্গে থাকে। জানালার ঘরটিতে যে দুজন তরুণী থাকে তারা সম্ভবত কর্মজীবি, কারণ তারা রাত এগারোটার আগেই বাতি নিভিয়ে দেয়, কেবল বৃহস্পতিবারে মধ্যরাত পর্যন্ত তাদের জেগে থাকতে দেখা যায়। বৃহস্পতিবার রাতে তারা কিছুক্ষণ সাজগোজ করে, একে অন্যের চুল বেঁধে দেয়। তাদের বাসায় আরো তিনটি তরুণী থাকে যাদের একজনকে কলেজ পড়ুয়া কিশোরী বলে মনে হয়। সে মাঝে মাঝে বই হাতে জানালার এ ঘরে আসে, কিছুক্ষণ কথা বলে - আবার চলে যায়। বাকী দুই তরুণীকে তেমন দেখা যায় না, তবে এই দুইজনের একজন মোটা এবং গায়ের রঙ কালো বলে মুনাদ অনুমান করে। মুনাদ আরো টের পায়, এদের সম্ভবত কোনো টেলিভিশন সেট নেই। তবে তাদের প্রত্যেকের মোবাইল ফোন আছে, তারা প্রতি রাতেই ঘরের এদিক থেকে ওদিকে হাঁটে আর মোবাইল ফোনে কথা বলে। অপেক্ষাকৃত খাটো তরুণীটি প্রায়ই ওড়নাহীন থাকে - সে এক হাতে ফোন ধরে কথা বলে, অন্য হাতে চিরুনী নিয়ে নিজের চুলে হাত চালায়, আর কথা বলতে বলতে শুধু মাথা ঝাঁকায়। পরশুরাতে দেখা গেছে ছিপছিপে আরেক তরুণী জানালার গ্রীল ধরে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো, সম্ভবত সে কাঁদছিলো। মুনাদ অনুমান করে তরুণীটি ঢাকায় একা থাকে, তার বাবা-মা দূরের কোনো গ্রামে সেখান থেকে খবর এসেছে মা অসুস্থ। কিংবা তরুণীটির প্রেমিক তাকে ঠকাচ্ছে। অথবা যে অফিসে সে পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট টু ডিরেক্টর পদে কাজ করে সেখানে বসের মেজো শালা আজ সন্ধ্যায় তাকে একা পেয়ে ঘাঁড়ে হাত রেখেছে। মুনাদ আরো কুৎসিত কিছু অনুমান করতে চায়, ভাবে – মানুষের জীবনের চরম কুৎসিত ঘটনা কোনটি হতে পারে? মুনাদের নিজেরটি কেমন ছিল? এ প্রশ্নের উত্তর ভাবার সময় পায়না মুনাদ। তখন তিন নম্বর জানালার পর্দা সরে গেছে, বাইনোক্যুলারে দৃশ্য স্পষ্ট হচ্ছে।

মুনাদের নিজস্ব কোড – চ্যানেল থ্রি।
এ জানালার দৃশ্যগুলো ভীষণ বিরক্তিকর। ঠিক জানালার কাছে একটি পড়ার টেবিল, সেখানটায় এক কিশোর পড়তে বসে প্রতি সন্ধ্যায়। সে মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে পড়ে, কখনো লিখে, মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে যায় টেবিলে। তার মা এসে মাথায় চাপড় দেয়। সেখানকার সংলাপগুলো শুনতে না পেলেও মুনাদ অনুমান করে – কিশোরকে তার মা বকাঝকা করে। রবি-মঙ্গল-বৃহস্পতি এ তিনদিন সন্ধ্যা সাতটায় টিউটর আসে পড়াতে। ঐ দিনগুলোয় কিশোরকে বেশি মনোযোগী দেখায়। রাত আটটায় দিকে কিশোরের মা ট্রে করে নাশতা আনে, চায়ের কাপ দেখা যায়, সাথে সম্ভবত বিস্কুট থাকে নিয়মিত। এরপর রাত নয়টায় টিউটর চলে যায়, তখন পড়ার টেবিল খালি থাকে। ঘরটিতে আর কাউকে দেখা যায় না। মুনাদ অনুমান করে – বাসার মানুষগুলো তখন অন্য ঘরে টেলিভিশন দেখে। কিশোরটির বাবাকে গত ঊনচল্লিশ দিনে মাত্র তিনবার দেখা গেছে। তবে মুনাদ এমনটিও ভেবেছে যে ঐ লোকটি আসলে বাবা নয়, হয়তো অন্য কেউ। এ একঘেঁয়ে চ্যানেলে কেবল একদিন কয়েক মুহূর্তের জন্য ভিন্নতা এসেছিলো, যেদিন কিশোরটির মা তার সন্তানের অনুপস্থিতিতে এসে টিউটরের মাথায় হাত বুলাচ্ছিল, কিশোর চলে এলে মা দ্রুত দূরে সরে যায়। মুনাদ এখানে আরো কিছু সম্ভাব্যতা টেনেছিলো কল্পনায়। কিন্তু, তার বিস্তৃতি আর হয়নি। কারণ, মা’টি আর কখনো অমন করে টিউটরের মাথায় হাত রাখেনি। আসলেই কি কখনো হাত রেখেছিলো, নাকি পুরোটাই মুনাদের দেখার ভুল? মুনাদ গত এক সপ্তাহ ধরে ভাবছে, তার তালিকা থেকে জানালাটিকে বাদ দিয়ে দেবে।

অবশ্য আরো সহজে বাদ দেয়া যায় চ্যানেল ফোর – চার নম্বর জানালা। এ জানালার ভেতরের দৃশ্যগুলো স্পষ্ট হয়নি কখনো। কালো রঙের, মুনাদের ধারণা ওজনে ভারী, পর্দা ঝুলানো। এ বাসার ভেতরটা পুরোপুরি দেখা যায় না। মুনাদ অনুমান করে এটি তাদের বসার ঘরের মতো। দুই সেট সোফা, নরম কার্পেট, দেয়ালে ঝুলানো সাঁওতাল তরুণীর জলরঙ ছবি, আর তিনকোনায় স্ট্যান্ড ভর্তি দামী শো-পিস। মুনাদের বাইনোক্যুলারে হাতেগোনা কয়েকবার ধরা পড়েছিলো মধ্য বয়সের এক রমণী, যিনি দামী শাড়ী পরে থাকেন ঘরে। জানালার পাশের একটা চেয়ারে বসেন, হয়তো বই পড়েন মাঝেমাঝে। এর বাইরে কালেভদ্রে কাজের লোকজন দেখা যায় জানালার ফাঁকে। কুশীলবের নিত্য অনুপস্থিতি মুনাদকে যতোটা ক্লান্ত করে, তারচেয়ে বেশি মনে শংকা জাগায় – ভারী পর্দার আড়ালে হয়তো ছিলো কেউ তখন। হয়তো এখনো আছে আড়ালে, দেখছে মুনাদের জানালা। মুনাদ তাই আরো সতর্ক হয়, পর্দা নড়লেই চোখের ধার তীক্ষ্ম করে। আর পর্দা সরে গেলে সে স্থুল চোখে তাকায় স্থুলতম দৃশ্যের জানালায় -চ্যানেল ফাইভে।

মুনাদের মনে হয় এখানে কোথাও ভুল হচ্ছে।
পাঁচ নম্বর জানালার মানুষগুলোকে বড্ড চেনা জানা মনে হয় তার। গত ঊনচল্লিশ দিনের গল্পগুলো জোড়া দিলে মুনাদ টের পায় ক্লাস নাইনে টিফিনের অবসরে ক্লাসের সেকেন্ড বয় রোমেল এ গল্প বলেছিলো সবাইকে। নিষিদ্ধ সে গল্প শুনে মুনাদের কান লাল হয়ে গিয়েছিলো। আনন্দম গীতায়নের পাঁচটি জানালায় চোখ রাখার সপ্তম অষ্টম এবং নবম দিনে যখন একই দৃশ্য ঘুরে ফিরে আসে, তখন ঐ ফ্ল্যাটের মানুষ দুটোর যাপিত জীবন মুনাদের কাছে বড্ডো স্থুল লাগে। আজ চল্লিশতম দিনেও ব্যতিক্রম নেই। মুনাদ অনুমান করে স্থুলকায় কুচকুচে কালো স্বামীটি সদরঘাট নওয়াবপুর মার্কেটে ইলেক্ট্রনিকসের পাইকারী ব্যবসা করে। সারা শহরের যানজট ঠেলে তার ঘরে ফিরতে রাত ন’টা বেজে যায়। ঘরে ঢুকে তুলনায় অর্ধ-স্থুল শ্যামবর্ণের বৌয়ের হাতে ঘামে ভেজা শার্ট খুলে তুলে দেয় স্বামী। তারপর স্বামীটি মাথার দিক থেকে একটি লুঙ্গি গলিয়ে দেয় নিজের গায়ে। দাঁতের কামড়ে লুঙ্গি আঁটকে রেখে হাত চালায় প্যান্টের চেইনে। মুনাদ দেখেছে – দুয়েকদিন ঐ অবস্থায় তার মুখ থেকে লুঙ্গি খুলে গেছে, নেমে গেছে ঢোল সাইজের পেটের নিচে। হয়তো তখন সে বৌকে কিছু বলতে চেয়েছিলো অথবা বলছিলো। এরপর স্বামীটিকে কিছুক্ষণের জন্য দেখা যায় না। খাটের ওপর রেখে যাওয়া প্যান্ট এবং আন্ডারওয়্যার তুলে খাটের স্ট্যান্ডে ঝুলিয়ে রাখে বৌ। ফ্যানের বাতাসে বৌয়ের শাড়ীর আঁচল ওড়ে। এরপর তারা খাটে খবরের কাগজ বিছিয়ে ভাত খেতে বসে। স্থুলকায় কুচকুচে কালো স্বামীটি তখনো খালি গায়ে থাকে। ভাত খাওয়ার সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে বৌটি মোমবাতি জ্বালে। এক হাতে পাখা নাড়ে। আর খাওয়া শেষে স্বামীটি জানালায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরায়। মুনাদ কল্পনায় শোনে, খাট থেকে প্লেট বাটি সরাতে সরাতে বৌ খিটমিট করছে – ‘চার্জার লাইট নিয়ে আসতে বলি প্রতিদিন, ভুলে যাও কেনো বুঝি না’। স্বামী তখনো সিগারেট হাতে জানালায় দাঁড়িয়ে। বিদ্যুৎ থাকুক কিংবা না থাকুক, মুনাদ দেখে – এরপরের দৃশ্যগুলো যেনো টিভির বিজ্ঞাপনের মতো পুনঃপ্রচার – শ্যামবর্ণের বৌটি তখন খাটে মশারী টানিয়ে দেয়। তার গা থেকে শাড়ি-ব্লাউজ গেছে খসে, পেটিকোট বুকের ওপর পর্যন্ত তুলে বাঁধা। মুনাদের বাইনোক্যুলারে দেখা যায় মাংসল কাঁধ, বুক-পিঠের এক ঝলক, এলোমেলো চুল। প্রায়শই এ অবস্থায় স্বামীটি বৌকে জড়িয়ে ধরে। খানিক জড়াজড়ির পর বৌ সরে গিয়ে বাতি নেভায় তড়িৎ। তখন কেবলই অন্ধকার। ঘড়িতে রাত এগারোটা। স্থুলতম চ্যানেল ফাইভের মাঝামাঝি পর্যায়ে চল্লিশতম দিনে মুনাদ দেখে দুই নম্বর জানালার পর্দা সরে গেছে। সেখানে সেই যুবক, যাকে মুনাদ সন্দেহ তালিকার প্রথমে রেখেছে অনুসরণের তেরোতম দিন থেকে। যুবকটিকে অস্থির মনে হয়। মুনাদ নিজেও অস্থির হয়ে ওঠে। তবে কি চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে আজ?



চার.
‘এটা কোনো কথা হলো?’
‘কেনো? বিশ্বাস হয় না? সত্যি বলছি...’
‘থাক, আর সত্যি বলতে হবে না। হাত সরাও’ – নাতাশা মাথা নাড়ে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে তার, ততোধিক লাল কান। মুনাদের হাত তখনো নাতাশার কানের লতিতে। কানের বাইরের প্রান্তসীমার ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসে তর্জনী। মুনাদ বলতে থাকে –
‘এই যে এখানে, ঠিক এখানে এসে থেমে গেছে, ঠিক নিচে এখানে মিশে গেছে নিখুঁতভাবে’ আঙুলের স্পর্শে তখন নাতাশার কানের লতি তিরতির করে নড়ে, মুনাদ বলে - ‘এমনটি কি হয় কখনো? আমারটা দেখো...’
নাতাশা কী বলবে ভেবে পায় না। তার বুকের ভেতরটা ধুকধুক করে, মনে হয় – এ ধুকধুক নাড়িয়ে দিচ্ছে মাথার ভেতরে, সে টের পাচ্ছে পিঠে – পায়ের তালুতে একটা অদ্ভুত অনুভূতি। মুনাদ তখন নাতাশার কান থেকে হাত সরিয়ে চুলে এগুতে থাকে। ফ্যানের বাতাসকে ম্লান করে পরস্পরের উষ্ণ নিঃশ্বাস ঘনিষ্ঠতা জাগায়। অডিও প্লেয়ারে – ‘সুন্দরীতমা আমার, ঐ নীলিমায় তাকিয়ে বলতে পারো, এই আকাশ আমার’ – জেমস নাকি শামসুর রাহমান, কে কবে সত্যিকারে আকাশ দিয়েছিলো প্রিয়তমাকে? মুনাদ নিজেই কি দিতে পারবে? এসব প্রশ্ন উত্তরের সময় তখন নয়। মুনাদ নাতাশার কানের কাছে ফিসফিস করে – ভালোবাসি, ভালোবাসি। নাতাশা আলগোছে চুলের ক্লিপ খুলে রাখে বালিশের পাশে। অফুরান স্বাধীনতার পঞ্চম দিনের মধ্য দুপুর। মুনাদের ঘরে ঘোর লাগানো সমর্পিত মুহূর্তগুলো শেষে দুজনই অনুতপ্ত হয়। টেলিফোনে নিশ্চুপ কিছু কথা হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে চারদিন পরে কড়া রোদ মাখা বিকেলের শুরুতে মুনাদ নাতাশাকে আবার বলে – ‘দেখো, তোমার কানের লতিটা যেখানে মিশে গেছে সেখানে একটুও ভাঁজ নেই’। নাতাশা এবার মুনাদের কানে কানে বলে – ভালোবাসি ভালোবাসি – আলগোছে খুলে নেয় চুলের ক্লিপ। এরপরে এসব সংলাপ এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় মুনাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সতেরো, তেইশ, তিরিশ এবং তেত্রিশতম দিনে মুনাদের ঘরে।



পাঁচ.
সেলিম চাচা ঘরেই ছিলেন।
মুনাদ কলিংবেল চাপার পরে নিজে এসে দরজা খুলেছেন। খালি গায়ে ছিলেন বলে মুনাদকে দরজায় দাঁড় করিয়ে ভেতরে গেলেন, একটু সময় নিয়ে ফিরে এসে মুনাদকে ড্রয়িং রুমে বসান। নানান বিষয়ে বিক্ষিপ্ত কথা হয় দুজনের। সেলিম চাচাকে ক্লান্ত-বিশীর্ণ মনে হয়। জানা যায় – ইদানিং সুগার বেড়ে গেছে তার, রাতে ঘুম কম হয়। মুনাদ আলাপে মন দিতে পারে না। দেয়াল ঘড়িতে রাত নয়টা চল্লিশ। গত তিনদিনে পাঁচবার এসে সব দেখে গেছে সে। আনন্দম গীতায়নের দক্ষিণ দিকের জানালার, মুনাদের কোডে চ্যানেল টু’র, ঘরটির দরজা চিনে গেছে মুনাদ। সতর্ক চোখে দেখেছে লিফট, সিঁড়ি, জরুরী ফায়ার এক্সিট। প্রথমে অস্থির লাগলেও এখন আর ভয় লাগছে না। আর মাত্র পনেরো মিনিট। সেলিম চাচা তার অসুস্থতার কথা বলেন, খাবারে রুচিহীনতার কথা বলেন, ট্রাফিক জ্যাম আর বাড়তি বাজারদরের কথা বলেন। মুনাদ কাউন্ট ডাউন করে আট-সাত-ছয়-পাঁচ-চার মিনিট। মাথায় বারবার চক্কর দেয় দুই নম্বর জানালার দৃশ্যগুলো। অনুসরণের তেরোতম দিনে মুনাদের মনে প্রথম সন্দেহ জেগেছিলো। কিন্তু, তিনদিন আগে অনুসরণের দু’শ ঘন্টা পেরুনোর আগে মুনাদ নিশ্চিত হয়েছে – দুই নম্বর জানালার ঘরের বাসিন্দা শীর্ণ শরীরের চোয়াল ভাঙা যুবকই ঘটিয়েছে সব। তাকে সনাক্ত করা গেছে, অতএব এখন তাকে আঘাত করা হবে, আঘাতের তীব্রতায় সে মারা যাবে। তাকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না, কিছু বলার সুযোগও দেয়া হবে না। তার কৃতকর্মের দায়টুকু তাকে নিতে হবে। অনেক ভেবে নেয়া, কাঁটায় কাঁটায় সময় মেলানো হিসেবে, রাত নয়টা আটান্ন মিনিটে সেলিম চাচার বাসা থেকে বিদায় নেয় মুনাদ। অপেক্ষা করে করিডোরে। এর আগের মুহূর্তগুলো প্রয়োজন ছিলো, বিন্দুমাত্র অসতর্কতায় ধরা পড়ে গেলে কারো কাছে, কিংবা পরে প্রশ্নের মুখোমুখি হলে – সেলিম চাচার বাসায় এ সামাজিক সাক্ষাৎ মুনাদকে আড়াল দেবে, নিরাপত্তা দেবে। একটু পরে নিয়মিত লোডশেডিংয়ে পীরেরবাগ এবং আনন্দম গীতায়নে অন্ধকার নেমে আসে। মুনাদ কড়া নাড়ে দুই নম্বর জানালার ঘরটির দরজায়। দরজা খুলে সেই শীর্ণ শরীরের চোয়াল ভাঙা যুবক। চার্জার বাতির আলো-অন্ধকারে মুনাদ পলকে কোপ বসায় সজোরে যুবকের ঘাড়ে। একবার, দুইবার এবং আরো একবার। জবাই করা গরুর মতো যুবকের পতিত শরীর তড়পড় করে। গরগর গোঙানীর শব্দ হয়। সতর্কভাবে মুনাদ পা সরিয়ে নেয়, মেঝেতে তাজা রক্তের ধারা। শেষবার যখন মুনাদ যুবকের দিকে তাকায় তখন দেখে রক্তে মাখা ক্যামেরা পড়ে আছে গলার পাশে। ক্যামেরাটি গলায় ঝুলানো ছিলো, যেমন ছিলো অনুসরণের তেরোতম দিনে। সর্বশেষ চল্লিশ এবং একচল্লিশতম দিনেও তার কাঁধে ক্যামেরা ঝোলানো ছিলো। মুনাদ স্পষ্ট দেখেছে শীর্ণ শরীরের চোয়াল ভাঙা যুবকটি পর্দার আড়াল থেকে ক্যামেরা চালাচ্ছিলো। আজ সোমবার সকালে মুনাদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে – এবার অনুসরণের সমাপ্তি টানতে হবে।

সতর্কভাবে আনন্দম গীতায়নের অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে মুনাদ। গলির মোড়ের পর থেকে অন্ধকারে দৌঁড়াতে থাকে সে। মনে হয় – তার বাসার গেট এখন হাজার মাইল দূরে, হাজার বছর ধরে মুনাদ দৌড়াচ্ছে। ঠিক এরকম অস্থিরতা কাজ করেছিলো যেদিন মুনাদ ব্যাপারটি প্রথম জেনেছিলো। ভার্সিটির বন্ধু ওয়াসি আড়ালে ডেকে একটি সিডি দিয়েছিলো, বলেছিলো – ‘মাথা ঠান্ডা রাখিস’। ওয়াসির কন্ঠে সহানুভূতি ছিলো। মুনাদের ছিলো উৎকন্ঠা। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে মুনাদ হতভম্ব হয়ে দেখেছে সিডিতে তার আর নাতাশার একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলোর দৃশ্য। মুনাদের জানালা গলিয়ে আনন্দম গীতায়নের কোনো এক জানালা থেকে এ কাজ করা হয়েছে। এ আকষ্মিকতায় মুনাদ নিজেকে প্রস্তুত করার সময় পায়নি। নাতাশার প্রতিক্রিয়া এবং পরবর্তী পরিস্থিতি কী হবে এসব যখন আঁকিবুকি করছিলো মনে মনে তখন পরবর্তী সকালে সে খবর পায় নাতাশা আত্মহত্যা করেছে। সেদিন মোহম্মদপুর শিয়া মসজিদের মোড় পেরিয়ে নাতাশাদের বাসার গেট পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসেছে মুনাদ। সাহস নেই, তাই মুনাদ কখনো মাসুদ রানা হতে পারেনি। বিকেলে কম্পিউটার চালু করে জিমেইলে সে পেয়েছিলো নাতাশার শেষ ই-মেইল, ‘ইয়্যূ বিট্রেইড মী!’। মুনাদের চিৎকার করতে ইচ্ছে করেছে – ‘না, এসবের কিছুই আমি জানি না, নাতাশা, আমি তোমাকে ঠকাইনি’। কিন্তু তখন বন্ধ হয়ে গেছে সে দরজা। পরমুহূর্তে এটাও মনে পড়েছে – আত্মহত্যা করার মতো সাহসী মুনাদ হতে পারেনি, তাই তাকে বেঁচে থাকতে হবে। শোকের চাপ এবং শোধের তেষ্টা নিয়ে বাঁচতে হবে। বেঁচে থাকার এ অদম্য ইচ্ছার হেতু মুনাদ জানে না, এর কোনো বিশ্লেষণ তার মাথায় আসেনি। আবেগ এবং যুক্তির বিভাজন রেখা যেখানে ধুসর হয়ে যায়, সে প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে মুনাদ নিজেকে দ্রুত সামলে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে -কাউকে কিছু বলা যাবে না। নিজে নিজে নীরবে জানতে হবে কে করেছে এ কাজ। তারপর আঘাত। তাকে সনাক্ত করা গেলে, অন্তত একবার প্রমাণসহ দেখা মিললে, খুন করা হবে।

যেমনটি ইচ্ছে ছিলো – রাতে ছাদে শুয়ে থাকে মুনাদ।
আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে। বাতাস বইছে শো শো শব্দে। মুনাদ নিথর হয়ে পড়ে থাকে। লোডশেডিংয়ে ডুবে আছে চারপাশ। তখন বিদ্যুৎ চমকায়। এ মৃত শহরে ঝমঝম বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি ও বাতাসের মাত্রা বেড়েছে। রাস্তার পাশের লাইটপোস্ট যেনো ভেঙে পড়লো এইমাত্র, আশেপাশে যেনো অনেক কিছু চুরমার হয়ে যাচ্ছে। মুনাদের হু হু কান্না পায়। বুক পকেট থেকে সে বের করে নাতাশার চুল বাধার বেগুনী ক্লিপ। হাতের মুঠিতে ক্লিপটি নিয়ে মুনাদ হাউমাউ শব্দে কাঁদতে থাকে। কান্নার নাকি অপূর্ব এক ক্ষমতা আছে, মুনাদ অনুভব করে তার মাথা হাল্কা হয়ে আসছে। এবার সে কান্না ভেজা চোখে নাতাশার ক্লিপে চুমু দেয়, বলে – ভালোবাসি, ভালোবাসি।



ছয়.
বুধবার দৈনিক সমকালের প্রথম পৃষ্ঠার ডান পাশে শীর্ণ শরীরের চোয়াল ভাঙা যুবকটির রক্তাক্ত মুখের ছবি ছাপা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে – আরিফুর রহমান (২৮) আনন্দম গীতায়নে ৬/বি ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন। প্রায় বছরখানেক ধরে তিনি এই বাসায় ভাড়া থাকছেন। জানা গেছে – আরিফুর একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার অডিওভিজ্যুয়াল সেকশনে কাজ করতেন। পুলিশ এখনো খুনের সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আনন্দম গীতায়নের সিক্যুরিটি গার্ডকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গতকাল দুপুরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কেউ এ কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মুনাদ ভাবে - আজকের অন্য পত্রিকাগুলোও খুঁটিয়ে পড়তে হবে, কে কী লিখলো জানা দরকার। বাইরে হাঁটতে বের হওয়া যায়; সবগুলো পত্রিকা কিনে আরিফুর রহমান খুনের খবরের সঙ্গতি-অসঙ্গতি বের করা যায়, কিন্তু ইচ্ছে করে না, এমনকি কম্পিউটার চালু করে অনলাইনে পত্রিকা পড়তেও না। মুনাদের ক্লান্তি লাগে, এক ধরনের গুমোট অনুভূতি টের পায় সে ভেতরে। যেনো এক অসম্ভব কাজ করে ফেলেছে, অথচ কাউকে বলতে পারছে না। নিঃশ্বাস ভীষণ ভারী মনে হয়। একটানা ফাইনাল পরীক্ষা শেষে যে রকম মনে হতো – দূরে কোথাও ঘুরে আসলে ভালো লাগতো – সেরকম ইচ্ছে করে। এসব বিক্ষিপ্ত ভাবনা শেষে মুনাদ শংকায় ভোগে, এখানে শেষ নয় সবকিছু। নাতাশা হয়তো মরে বেঁচে গেছে, কিন্তু মুনাদ! তাকে আরো অনেক অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। আরিফুর হত্যা মামলায় হয়তো রিমান্ডে নেয়া হবে সন্দেহজনক কাউকে, সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে, শেষও হবে; হয়তো কারো জেল-ফাঁসিও হবে। কিন্তু, মুনাদের যে সামাজিক বেষ্টনী সেখানকার রিমান্ড শেষ হবে না কখনো। সময়ের ধুলোতে একদিন মলিন হবে অনেক কিছু, অনেকে হয়তো ভুলে যাবে এসব, কিন্তু – গতরাত দশটার ঘটনাটি যদি মুনাদের মনে কোনো অপরাধবোধের জন্ম দেয় তাহলে নিজস্ব আদালতে আজন্ম ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকবে সে। এ বোধ এবং অনুতাপ থেকে নিস্তার পাওয়া খুব সহজ হবে না। এ যেনো ক্রমশ অন্যরকম এক জাল তৈরি হচ্ছে তার চারপাশে। নিজেকে ভীষণ একা মনে হয়। ...তখন আশেপাশে কোনো বাসা থেকে হিন্দি গান ভেসে আসছে। বালিশে মুখ গুঁজে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে মুনাদ। রাস্তায় ফেরিওলারা – সবজি, ঝাড়ু, পেপার – হাঁক দেয়। সঙ্গে একদল ভিখারী বেসুরো চিৎকারে ভিক্ষা চায়। মুনাদের অসহ্য লেগে ওঠে এসব। এবার আরেকটা বালিশ মাথায় ওপরে চেপে ধরে সে। এরকম আরো কিছু সময় পার হলে, চারপাশের কোলাহল কমে আসে। মুনাদের চোখ ভার ভার লাগে, ঘুম পায়...।

সন্ধ্যা সাতটা।
এবিসি রেডিওতে সন্ধ্যার সংবাদে আনন্দম গীতায়ন এবং সেলিম আহমেদ নাম শুনে মুনাদ চমকে ওঠে। এনজিও’র আড়ালে প্রতারণা শিরোনামের খবরে বলা হচ্ছে - ইনসাইটসবিডি নামের একটি এনজিও অফিসে তল্লাশী করে র্যা ব সদস্যরা বেশ কিছু প্রতারণার প্রমাণ পেয়েছেন। অভিযোগ ছিলো, প্রতিষ্ঠানটি চাকরীর নাম করে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে সুন্দরীদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী সেলিম আহমেদের বাসা থেকে শ’খানেক পর্ণোসিডি এবং ৪টি ভিডিও রেকর্ডার জব্ধ করেছে র্যা ব। সূত্র বলছে, বিভিন্ন প্রলোভনে তরুণীদের এ বাসায় এনে গোপনে ক্যামেরাবন্দী করা হতো। সেলিম আহমেদকে তার পীরেরবাগেস্থ আনন্দম গীতায়ন অ্যাপার্টমেন্টের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে...।

মুনাদ দ্রুত তার জানালা খুলে বাইরে চোখ রাখে।
সেলিম চাচার জানালা বরাবরের মতোই বন্ধ। বন্ধ অন্য জানালাগুলোও। কেবল ব্যতিক্রম চ্যানেল ফোর – চার নম্বর জানালার পর্দা আজ সরানো। দেখা যাচ্ছে, মধ্য বয়সের সেই মহিলা ক্যামেরার মতো জিনিস হাতে কী যেনো দেখছে বাইরে। মুনাদ দ্রুত তার ঘরের বাতি নিভিয়ে দেয়। তার বুক ধুকধুক করে। ড্রয়ার থেকে বাইনোক্যুলার বের করে সে চোখ পাতে ঐ জানালায়। এবার স্পষ্ট দেখা যায় – চার নম্বর জানালার মহিলাটি ক্যামেরায় ভিডিও করছে অথবা ছবি তুলছে। চোখ কচলে মুনাদ আরো মনোযোগী হয়, কিন্তু তখন মহিলাটি চোখ থেকে ক্যামেরা সরিয়ে জানালার ভারী পর্দা টেনে দেয়। বাতি নিভে যায় সেখানে। মুনাদ আরো কিছু সময় চোখ রাখে, অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু, আর কিছু দেখা যায় না। এরপর সমস্ত রাগ মাথায় চড়ে গেলে মুনাদ এক ঝটকায় বাইনোক্যুলার ছুঁড়ে মারে মেঝেতে। কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থাকে সে। অপলক তাকিয়ে থাকে মেঝেতে। অসহায়ত্ব এবার আরো প্রবল হয়ে ওঠে। মুনাদ নিজের ভেতরে বাইরে ভাঙতে শুরু করে। যেনো নিস্তেজ হয়ে আসছে পুরো শরীর। ঘরের দেয়াল ধরে আশ্রয় চাইলেও ব্যর্থ হয় সে। হাঁটু মুড়ে আস্তে আস্তে দন্ডিত আসামীর মতো মেঝেতে বসে যায়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাইনোক্যুলারের ভাঙা অংশগুলো দুহাতের মুঠোয় নিয়ে মুনাদ কাঁদতে থাকে। হু হু কান্নার শব্দ দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হলে মুনাদের মনে হয় - ভেঙে পড়ছে দেয়াল, দেয়ালে ঝুলানো ছবি, ভাঙছে আসবাব এবং চারপাশ। আর বাইনোক্যুলারের টুকরো নয়, মুনাদের মুঠো ভর্তি ওগুলো সব বেগুনী রঙের ক্লিপ।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তীব্র গরমের পর আজকে বৃষ্টি হলো। শান্তি হলো। আর এলো আপনার গল্প। সাধুবাদ জানায়ে গেলাম। হাতের ঝামেলাটা মিটিয়ে আয়েশ করে পড়ছি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সাধুবাদের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু, পাঠ-মন্তব্যের জন্য 'নাজির' আছি ঃ)

হাসিব এর ছবি

বহুদ্দিন পর ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ঠিক, ঠিক! হাসি

যুধিষ্ঠির এর ছবি

এক নিশ্বাসে পড়লাম, অফিসের সব কাজ বাদ দিয়ে। এতদিন পর গল্প লিখলেন, আর এত জীবন্ত লেখা! দারুণ লাগলো!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সাহস পেলাম... হাসি
ব্যস্ততার মাঝেও পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য সবিনয় কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ।

রণদীপম বসু এর ছবি

ভয়ঙ্কর গল্প ! রীতিমতো ভয়ঙ্কর !
দুর্দান্ত হয়েছে শিমুল ! গল্পের গতি ও ডিটেইলস অদ্ভুত ! এক গল্প দিয়েই দীর্ঘবিরতির শূন্যতা পুরণ করে দিয়েছেন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

রণদা, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আচ্ছা, ছোটো হয়ে আসছে পৃথিবী - কিন্তু ঢাকা শহর কি বড়ো হয়ে যাচ্ছে? কাছাকাছি থেকেও কত্তোদিন আপনার সঙ্গে দেখা হয় না!!!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

গল্প খুব ভাল লাগল।

এপার্টমেন্ট নিয়ে লেখা অংশটুকুর সাথে আনিসুল হকের 'ফাঁদ' আর সম্ভবত সমরেশের একটা উপন্যাসের ভাবগত কিছু মিল আছে। ফাঁদ-এ দশতলা থেকে নিচে লাফ দিতে গিয়ে বিভিন্ন এপার্টমেন্টের মধ্যের ঘটে যাওয়া দৃশ্য দেখতে থাকে একজন। সেটার বর্ণনা। বেশ জাদুবাস্তব। অভিকর্ষজ ত্বরণকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপন্যাস এগিয়ে গেছে।

সমরেশের উপন্যাসটার নাম মনে নাই। কোনো এক পুজো সংখ্যায় বেরিয়েছিল। একটা ভ্রুণকে ঈশ্বর বিভিন্ন বাসায় ঢুকিয়ে তাদের অবস্থা দেখায়। শেষ পর্যন্ত ভ্রুণ একটা পরিবার বাছাই করে।

গল্পে বা উপন্যাসে অন্যের কনসেপ্টের পুণরাবৃত্তি আসতেই পারে। ফাঁদ বা সমরেশের সেই উপন্যাসের চেয়ে এই গল্প তার শক্তিতে অনেক এগিয়ে।

------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

'ফাঁদ' পড়েছি, সমরেশেরটা পড়িনি।
আপনার মন্তব্যের পরে পড়ার ইচ্ছে জাগলো...

ধন্যবাদ।

কনফুসিয়াস এর ছবি

সমরেশের গল্পটার নাম সম্ভবত "কূলকুন্ডলিনী" বা এরকম কিছু একটা। আমিও শারদীয়া দেশ -এ পড়েছিলাম, বইয়ে না।

-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আমারো মনে হচ্ছে উপন্যাসের নামটা "কূলকুন্ডলিনী"।

-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথমেই বলি,তারিয়ে তারিয়ে পড়লাম গল্পটি ,কলেবরে হয়তো খানিকটা পৃথুল ,(অন্তত ব্লগীয় মানদন্ডে) ,কিন্তু পড়তে গোত্তা খেতে খাইনি কোথাও ,অদ্ভুত সাবলীল লেখা ।

লেখাটি পড়তে পড়তে হঠাত কেমন জানি একটা চেনাশোনা গন্ধ পেতে থাকলাম ,আলটপকা মনে হল ,আরে ,মুনাদের বয়ান যেন অনেকটা রিয়ার উইন্ডোতে পঙ্গু জেমস স্টুয়ার্টের পর্যবেক্ষণের সাথে মিলে যাচ্ছে ।তবে শেষ পর্যন্ত চার নম্বর অধ্যায়ে এসে কাহিনী এবার পুরোপুরিই খোলতাই হতে শুরু করল ।

শেষটাতে কিন্তু খানিকটা থমকে গেলাম ,একজন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত ,বর্তমানে এনজিওর পরামর্শদাতা সেলিম সাহেবকে নাটের গুরু হিসেবে মেনে নিতে খানিকটা কষ্ট হল ।আর মুনাদের বাবার সাথে সেলিম সাহেবের যোগসূত্রটা কেমন জানি ধোঁয়াটে থেকে গেল ।

তবে বলতেই হবে , গল্পের শক্তিমত্তার জন্যই এরকম দুয়েকটা খটকাকে অনায়াসেই উপেক্ষা করা যায় ।বর্ষণস্নাত দিনে এমন একটি জম্পেশ গল্প আসলে খুব খুব দরকার ছিল ।

অদ্রোহ।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমার কাছে শিমুলের গল্প শিমুলের স্ট্যাণ্ডার্ডই মনে হলো ....



অজ্ঞাতবাস

মঞ্জুর এর ছবি

অসাধারণ বর্ণনা। মুগ্ধ হলাম।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গুরু গুরু

_________________________________________

সেরিওজা

সৌরভ এর ছবি

স্যার, পড়লাম। গল্পের জট না খোলা পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

তিথীডোর এর ছবি

এত জীবন্ত লেখা!!

গুরু গুরু

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চমৎকার গল্প, একেবারে শিমুলীয়!

আরবান গীতায়ন নামে সত্যি সত্যি কোন বাড়ি আছে কিনা জানিনা। তবে না থাকলেও এই নামটার সাথে যেহেতু বহুল পরিচিত একটা রিয়াল এস্টেট কোম্পানীর নাম জড়িত তাই বাড়িটার নাম একটু নৈর্ব্যক্তিক করে দেয়া যায় কিনা বিষয়টা ভাবার অনুরোধ করছি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আপনার মন্তব্য পড়ে একটু খোঁজ খবর নিলাম।
মনে হলো - নামটি পালটে দেয়াই ভালো হবে। তাই আনন্দম গীতায়ন করে দিলাম।
আশা করছি এবার আর আপত্তি থাকবে না।

আপনার যুক্তিপূর্ণ পরামর্শের জন্য অনেক ধন্যবাদ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ আমার অনুরোধের (আপত্তি নয়) পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায়। আপনি আমাদের প্রিয় গল্পকার, আপনাকে কেউ অহেতুক বিরক্ত/হয়রানি করুক সেটা আমরা কেউই চাইনা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার লাগল।

(আমি আবার আরবান... এ থাকি)

দময়ন্তী এর ছবি

অসাধারণ৷ রুদ্ধশ্বাসে পড়লাম৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতিথি লেখক এর ছবি

এক টানে পড়ে ফেললাম।
চার. -এ এসে মনে হচ্ছিল যেন প্রেয়শীকে নিয়েই কিছু একটা ঘটনা। কিন্তু, এভাবে যে হুট করে সুশীল বুড়ো মানুষটার ভেতরে থাকা পশুকে সামনে নিয়ে আসবেন কল্পনাও করি নাই।

চমৎকার।

- মুক্ত বয়ান

রানা মেহের এর ছবি

পল্পের বর্ণনা খুব ভালো হয়েচে শিমুল।
আপনি অনেক খুঁটিনাটি জিনিস নিয়ে আসেন গল্পে যেমন

এই একশ’ পঁচানব্বই ঘন্টা হিসেব করতে মুনাদ ঊনচল্লিশকে পাঁচ দিয়ে গুন করে না, সে চল্লিশ আর পাঁচ গুন করে দু’শ বের করে - তারপর পাঁচ বিয়োগ দেয়।

পড়তে ভালো লাগে অনেক।

সমাপ্তি নিয়ে কি অন্য পরিকল্পনা ছিলো? সেলিম চাচার হঠাত ভিলেন হয়ে যাওয়া চোখে লাগলো। ঠিক স্বাভাবিক মনে হলোনা।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ, রানা।
গল্পটির দুয়ের অধিক সমাপ্তি সম্ভাবনা ছিল। তবে বেছে নিতে হয়েছে একটি। বাকীগুলো অন্য কোনো গল্পের জন্য তোলা থাকলো ঃ)

মাহবুব লীলেন এর ছবি

প্রথম অংশ পড়ে ভেবেছিলাম কবিতা
পড়ব না বলে বের হয়ে গিয়েছিলাম
আবার ঢুকে দ্বিতীয় অংশের কিছু পড়ে ধুত্তুরি বলে চলে যেতে যেতে আরেকটু উঁকি দিয়ে আটকে গেলাম

আগাগোড়া পড়লাম আবার

দুর্ধর্ষ একটা গল্প

০২

ক্ষরা শব্দটা কি খরা? (বৃষ্টির অভাব) নাকি অন্য কোনো শব্দ?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ লীলেন ভাই। 'ক্ষরা'ই হোক হাসি

দ্রোহী এর ছবি

নির্বাক হয়ে গেলাম!!

গুরু গুরু

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বস, ভিলা ম্যাগনোলিয়ার পাশের বাসার কার্যক্রম নিয়ে সেদিন যা বলছিলেন, সেসব থেকে কি গল্পের প্লট পেলেন? চোখ টিপি

পুরোটা পড়া হলো না! পরে পড়ে জানামুনে।
..................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

ধ্রুব এষ-এর একটা গল্প পড়েছিলাম। খুনটা বাদে আরটুকু প্রায় কাছাকাছি। নবদম্পতি কক্সবাজারে হানিমুন থেকে ঢাকায় ফিরে তাদের মধুরাতের আশ্লিষ্ট চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিকীকরণের খবর পায়। তবে, গল্পটা ওখানেই শেষ। মোচড়।

আমি ভাবলাম এটাও বুঝি অমন!

চমৎকার লাগলো। একটু দ্রুতই পড়ে ফেললাম।

ক্ষরা হবে কি, না খরা?
-------------------------------------------
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

বইখাতা এর ছবি

ক্ষরার সাথে ক্ষরণ জড়িত। বোধহয় 'ক্ষরণ হওয়া'ই ক্ষরা।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ক্ষ-র মধ্যে একটা ক্ষয় আছে।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

বইখাতা এর ছবি

খুব চমৎকার লাগলো। চরিত্র, চরিত্রগুলোর অনুভূতি, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সবকিছুর বিশদ বর্ণনাসহ একটা পরিপূর্ণ গল্প।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করছিলাম,মনে মনে... ।

যা কিছু একটা এর ছবি

খুব বেশী ঘটনা বহুল। প্রতিশোধ নেয়ার স্পৃহা মানুষের প্রবৃত্তির সাথে মিশে থাকে। কিন্তু হাতে কলমে তা নিয়ে থাকে সাধারণত: সিনেমায়। গল্প বলার ভঙ্গিমা অসাধারণ। তবে মেলোড্রামাটিক প্রতিশোধ , গল্পটাকে দূর্বল করে তুলেছে।

নাশতারান এর ছবি

খুব ভালো লেগেছে।

শুরুর দিকে গল্পের রহস্যের চেয়ে বাস্তবতাই বেশি টানছিলো। নাগরিক বস্তিতে আকাশের সীমানা কীভাবে কমে আসছে ক্রমশ সেটাই ভাবছিলাম। আপনার বর্ণনার ভঙ্গিটা খুব ভালো লাগল।
‘… আনন্দম গীতায়নের ঔদ্ধত্য উচ্চতায় যে হেলিকপ্টারটি দেখা যায় না – কেবল ভটভট শব্দ শোনা যায় – সে হেলিকপ্টারকে হয়ত পাখাসহ দেখা যেত।…’

‘… অনেক রাত স্বপ্নে ঘুম ভেঙে গেলে পানি খেয়ে আবার ঘুমিয়ে স্বপ্নের বাকি অংশ দেখেছে। …’
আমি ভাবতাম এই বিচিত্র ব্যাপারটা শুধু আমার বেলাতেই হয়।

‘একটানা ফাইনাল পরীক্ষা শেষে যে রকম মনে হতো – দূরে কোথাও ঘুরে আসলে ভালো লাগতো …’ ভালো লাগল।

মুনাদের জায়গায় নিজেকে ভেবে যন্ত্রণাটুকু আঁচ করতে চেষ্টা করলাম। আমি অমন মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারতাম কি না সন্দেহ।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

জেনে ভালো লাগল।
আবারো কৃতজ্ঞতা বানান বিষয়ক মেসেজের জন্য!

পথে হারানো মেয়ে এর ছবি

বর্ণনার জন্যই ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম। তবে চমকগুলো ঠিক আমার জন্য কাজ করেনি, বড় বেশি ফর্মূলিক ট্র্যা্জেডি মনে হয়েছে!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এ জীবনে কি আর ফর্মুলার বাইরে যায় কিছু?
অনেকদিন পরে... তো আছেন কেমন? এবার ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা? নাকি অন্য কোনো দল?

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বস্ সকালবেলা এসে আবার গল্পটা পড়লাম। প্রথমবার আধ-খেঁচড়া পড়ায় যতটা ভালো লেগেছিল, এবার অনেক বেশি ভালো লাগলো। তবে পুরো গল্পটার গতি আমার কাছে একটু শ্লথ মনে হয়েছে। আর মুনাদের খুনের মধ্য দিয়েই গল্প শেষ হতো পারতো। কিন্তু খুনের মধ্য দিয়ে শেষ হতে হতে গল্পটি আবার নতুন করে শুরু হয়। তবে সেই গল্পটায় কোথায় যেন কি নেই এমন মনে হয়েছে আমার। আর সেলিম সাহেবের চরিত্র নিয়ে একটা কথা। সেলিম চাচার চরিত্রে আগে সামান্যতম কোনো ক্লু রাখা হয়নি, যেখান থেকে আমরা গল্পের শেষটায় তার বাসা থেকে ভিডিও সিডি উদ্ধারের ঘটনাটি মেলাতে পারি। এইটা আমার কাছে খাপছাড়া মনে হয়েছে। দুই নম্বর জানালার ভারী পর্দা, একটা মোটামতো মহিলার যে রেফারেন্স আপনি গল্পের শেষের জন্য রেখে দেন, তেমন একটা লিংক সেলিম চাচার জন্যও রাখতে পারতেন।

..................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পান্থ , বিশদ মন্তব্য ভালো লাগল খুব।
সমাপ্তি নিয়ে রানাকে বলেছি যেটা, আপনাকেও বলি - সম্ভাব্য কয়েকটির একটি বেছে নিয়েছি। অপ্রাপ্তি থাকলে তা আগামী গল্পের জন্য থাক, কী বলেন?
আচ্ছা, ভিলা ম্যাগনোলিয়া তো আমার গল্প না, আপনার ঃ)

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

পরিশ্রমী গল্প। দাবাড়ু দাবাড়ু একটা বুদ্ধি-চালিয়াতিও আছে পুরোটাতে। নিশ্ছিদ্র নয় যদিও, সেই ফাঁক দূর থেকে দেখতে বাইনোক্যুলার লাগে বটে। মাঝখানে যে হারিয়ে যাবে না, সে পৌঁছাবে তার ধৈর্যে এক বার্ষিক-পরীক্ষা-সমাপনের আনন্দে (উপমা কপিরাইট: বুনোহাস)। হ্যাঁ, পরীক্ষা হ'লেও সমাপনী অভিজ্ঞতাটি সমগ্রেতে যথেষ্ট আনন্দেরই। হাসি

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

নজমুল আলবাব এর ছবি

মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার যে প্রথম থেকেই সেলিম সাহেবকেই সন্দেহ হচ্ছিল, তার কী হবে?! মনে হয় ভাল মানুষ দেখলেই সন্দেহ হওয়াটাই স্বাভাবিক এখনকার সময়ে? কিংবা মানুষের উপর আস্থাহীনতা একটা উত্তরাধুনিক অলিখিত চুক্তিপত্র? খাইছে

পড়তে গিয়ে হিচককের 'রিয়ার উইন্ডো'-র কথা মনে পড়ছিল বারবার...অনেক আগে দেখা সিনেমাটা আবার দেখতে মন চাইল। কিন্তু রিয়ার উইন্ডো শেষ হয়েছিল পরিতৃপ্তি নিয়ে, আর আপনার লেখা মন উদাস করা দিয়ে...

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

'রিয়ার উইন্ডো' দেখিনি। খুব তাড়াতাড়ি দেখে ফেলবো ; এই আশা রাখছি।
ধন্যবাদ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

নাম উল্লেখ না করে সবাইকে ধন্যবাদ, ভালোলাগা মন্দলাগা জানানোর জন্য, সময় করে পড়ার জন্য।

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

সেদিন অর্ধেক পড়ে উঠতে হয়েছিলো ব্যস্ততার কারণে,
হায় ব্যস্ততা মন খারাপ

আজ ঠিক করে রেখেছিলাম, গল্পটা পড়বোই... কারণ মাথায় ঘুরছিলো বেশ কয়েকবার, কী হতে পারে এরপর...

প্রথম থেকেই কেন যেন মনে হয়েছিলো ক্যামেরায় দৃশ্য ধারণের কোন ঘটনা ঘটেছে হয়তো।
গল্পের শেষে এসে ভালো লাগলো ঘটনার মোড় ঘুরে যাওয়ার ব্যাপারটা...

শুভকামনা রইলো... হাসি

-------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো,
গৃহী হয়ে কে কবে কী পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।