বাতি নিভে গেল। এক মুহুর্তের জন্য- কিংবা কে জানে কতকালের জন্য। নিকষ আঁধারে তলিয়ে গেল চারদিক। আলি আহমেদ চোখ বুজেই বুঝতে পারলেন অন্ধকার এর থেকে বেশি কালো হতে পারে না।
সবকিছু আঁধারে তলিয়ে যেতেই দম বন্ধ করে ফেলেছিলেন তিনি। দম বন্ধ করেই থাকলেন তিনি। শ্বাস না নিয়েও কি আশ্চর্য প্রশান্তি বুকের ভেতর। শ্বাস নেবার কোন প্রয়োজনই নেই।
জায়গাটা অদ্ভুত রকম নিস্তব্ধ। কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়া সে স্তব্ধতা। সহ্য করতে না পেরে আলি আহমেদ চিৎকার করে উঠলেন- কেউ কি আছেন?
সকালে ঘুম থেকে উঠে ইশতিয়াক দেখল তার এক জোড়া পাখা গজিয়েছে। কুচকুচে কালো রেশম নরম পালক। নিজের পালকে হাত বুলাতে বুলাতে ইশতিয়াকের মনে হল স্নেহা'র দীর্ঘ কালো চুলগুলো বোধহয় এমনই তুলতুলে হবে।
নিজের পাখায় হাত বুলাতে বুলাতে ইশতিয়াক দাঁত ব্রাশ করল। মুখ ধুলো। নাস্তা করল। চা খেয়ে একটা বেনসন ধরাল। তার সদ্য গজানো পাখা সম্পর্কে মেসের কেউ একটা প্রশ্নও করল না। যেন মানুষের পাখা গজানো তেমন একটা ব্যাপার না। এমনটি অহরহই হচ্ছে।
দুর্গন্ধে মা’র কাছে যাওয়া যায় না। দাঁত মুখ খিঁচে দরজায় দাঁড়িয়ে শফিক জিজ্ঞাস করল, “আমি বাইরে যাইতাছি। তোমার কিছু লাগব?”
সফুরা বেগমের গলার নীচ থেকে পুরো শরীর প্যারালাইজড। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে তার সব কিছু করে দিতে হয়। পেশাপ-পায়খানা তার বিছানাতেই হয়ে যায়। প্রচুর টাকা দিয়ে বয়স্ক মত এক কাজের মহিলা রাখা হয়েছে। সেও একদিন আসেতো দুইদিন আসে না। এ ব্যাপারে তাকে কিছু বলাও যায় না। কিছু বললেই কাজ ছেড়ে দেবার হুমকি দেয়। চেঁচিয়ে বলে,”বুইড়া মাইনষের গু-মুত আমি পরিষ্কার করমু না। আল্লাগো আল্লা কি গন্নের গন্ন…ওয়াক থুঃ!”
সোনালী জলধারার নীচে শুয়ে আনিস চোখ মুদল। সুতীব্র উত্তেজনা নিম্নাঙ্গ থেকে তলপেটের উপর দিয়ে পেশীবহুল এক অজগরের মত ধীরালয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগল। তার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হল। শীর্ষ অনুভূতির চরমে পৌঁছাতেই গোঙাতে লাগল সে। একসময় হাত পা এলিয়ে দিয়ে ফোঁসফোঁস করতে লাগল আনিস।
বিছানায় ছড়িয়ে থাকা গোলাপের পাপড়ির উপর গোলাপি কাতান পরে সদ্য ফোঁটা কোন গোলাপের মতন ঘোমটা টেনে বসে আছে গোলাপি। অতি সাধারণ সাজে কি অসাধারণই না তাকে লাগছে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে জহিরুল। ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেয়ে গোলাপি জিজ্ঞাস করে, "কি দেখ?”
এ যেন রাজ্জাক-শাবানা অভিনীত আশির দশকের কোন সিনেমার দৃশ্য। মুচকি হেসে জহিরুল বলে,”তোমাকে দেখি।”
মোঃ সাইফুল ইসলাম এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্রতম ব্যাক্তি। তার একাউন্টে কোন ক্রেডিট নেই। একটা ক্রেডিটও না। এক ক্রেডিট থাকলেও অবশ্য কোন লাভ হত না। আজকাল এক ক্রেডিটে একটা চুষনি লজেন্সও কেনা যায় না।
ছোটখাট এক সফটওয়্যার কম্পানিতে একদম নিচের দিককার ধরতে গেলে কোন পদই না এই রকম এক পদে কাজ করত সাইফুল। বেতন ভাল ছিল না। তারপরও মাস শেষে কিছু একটা পাওয়া যেত। সেটা দিয়ে কোন কোনমতে জীবন চালিয়ে নেয়া যেত।
পৃথিবীতে আপন বলতে তার কেউ নেই। সে বড় হয়েছিল এতিখানায়। এতিমখানায় লেখা পড়ার সিস্টেম খুবই নিম্ন মানের। টেনেটুনে পরীক্ষায় পাস করেছিল বলে লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর কোথাও চাকরী হয়নি। তারপর কিভাবে যেন অনেক দেন দরবার করে এই কাজটা পেয়ে গিয়েছিল। টেনেটুনে পাস করা প্রায় ফেল্টু ছাত্রের কাজের কোয়ালিটি আর কতইবা ভাল হবে? কাজের চার মাসের মাথায় বড়সর কিছু ভুল করে বসল। সাইফুলের বস তাকে ডেকে বলল,"আসসালামু আলাইকুম। আপনি এবার আসতে পারেন।" ফলস্বরুপ কাজ ছেড়ে তাকে চিরতরে চলে আসতে হল।
চৈত্রের ভয়াবহ গরমে দাঁড়িয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মত কুলকুল করে ঘামছিল মাহতাবুদ্দিন। কোথাও বাতাসের একফোঁটা গন্ধ নেই। তার বদলে মানুষের ঘাম, পচে যাওয়া ডাবের চোকলা, নর্দমার নোংরা, পেটের গভীর থেকে তুলে আনা কোন কুকুরের উগরানো বমি, বুক চিরে দেয়া গাড়ির বিকট হর্ণ, রিক্সার টুনটুন, হাত-পা কাটা ভিখারির চিৎকার, আর রাস্তায় থ্যাতলে পরে থাকা কাঁঠালের উপর অসভ্য মাছির ভন ভন শব্দে গুলিস্তান পরিণত হয়েছে ছোট্ট এক টুকরা হাবিয়া দোযখে। বাসের দেখা নেই।
১
নেপাল থেকে ফিরে এসে একটা চিঠি পেলাম। এয়ার মেইলের খামে হৃষ্টপুষ্ট পেট মোটা চিঠি। প্রেরকের ঠিকানার জায়গায় লেখা রয়েছে- আব্দুল বাতেন মিয়া। বাতেন ভিলা। পুটকি বাড়ি। ঠাকুরগাঁও। পুটকি বাড়ি বলে যে কোন জায়গার নাম থাকতে পারে তা আমার জানা ছিল না। আর আব্দুল বাতেন মিয়া নামেও কাওকে আমি চিনি না।
আমি টিভির জন্য প্যাকেজ নাটক বানাই। মধ্যবিত্ত জীবনের টান পোড়েন নিয়ে কিছু নাটক বানিয়ে বেশ সনাম কুড়িয়েছি। লোকজন আমাকে চিনতে শুরু করেছে। মিথ্যা ঠিকানা সম্বলিত উড়ো চিঠি পাঠিয়ে কেউ রসিকতা করতে চাইলে আমি অবাক হব না। অনেক কিসিমের মানুষ আজকাল আমার দুয়ারে এসে ধর্ণা দেয়। নাটকে সুযোগ দেয়ার জন্য চ্যাংরা ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে খালাম্মা গোছের মহিলারা এসেও ব্যাপক কচলা কচলি শুরু করেন। খ্যাতির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খ্যাতির বিড়ম্বনা। নেপালে স্যুটিং থেকে ফিরে এসে বেশ ক্লান্ত আমি। পরে পড়ব বলে ডেস্কের উপর রেখে দিয়েও কি মনে করে চিঠিটা খুললাম।
এই গল্পের ঘটনা হয়তো অনেকেই জেনে থাকবেন। এক সময় এ নিয়ে অনেক তোলপাড় হয়েছিল। আমি নিজে যে শহরে থাকি সেখানে এমন ঘটেছে জানার পর এ ব্যাপারে আমার লেখার আগ্রহ জন্মায়, কিন্তু কয়েক পাতা লেখার পর থামতে হল। ঘটনা এত অসুস্থ রকমের যে এ নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে যেয়ে আমি নিজেই মানসিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে যাই। যাহোক কি কারণে জানি না, একদিন এক বন্ধের দিনে এই ঘটনার বেশিরভাগ যেখানে ঘটেছে, সেখান থেকে ঘুরে এলাম। কিছু ছবিও তুলে নিয়ে এলাম। এরপর আবার লেখার আগ্রহ জন্মাল। গল্পাকারে লেখা এক বীভৎস সত্য কাহিনী। নিজ দায়িত্বে পড়ুন।
প্রথম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে চিপি দিন
নানা দেশের আকাশ পেরিয়ে প্লেন যখন ল্যান্ড করল তখন আমস্টারডামে বিকেল হয়ে গেছে। যেখান থেকে প্লেন টিকেট কেটেছিলাম তারা বলে দিয়েছিল আমস্টারডামে এক রাত থাকতে হবে। টিকেটের সাথেই হোটেল বুকিং দেয়া আছে।
প্রথমেই বলে নেই সে আমলের ছেলে পেলে হিসাবে আমরা বিশাল ভোদাই ছিলাম। অভদ্রসুলভ বাক্য ব্যবহার করতে হল বলে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন। ঐ আমলে আমাদের চিন্তার বিস্তৃতি কেমন ছিল তার বিবরণ দিতে গিয়ে "ভোদাই" এর থেকে ভাল কোন শব্দ পেলাম না। সেই প্রাগৈতিহাসিক আমলে ইন্টারনেটের তেমন চল ছিল না। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লক্স কিংবা যমুনা ফিউচার পার্ক এর মতন অত্যাধুনিক মল ছিল না। ইস্টার্ন প্লাজায় তখন যে শপিং করত তখন তাকে আমরা ভাবতাম মালদার পার্টি। এখনকার ছেলেপেলেদের তুলনায় ঐ আমলে আমরা যার পর নাই বেয়াকুব ছিলাম।