অর্থনীতিবিদরা কীভাবে ঘটনাটি বিশ্লেষণ করবেন?

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: মঙ্গল, ০১/০১/২০০৮ - ৪:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সুজন ও সুমন দুই বন্ধু। একদিন সুজন ৫টি পিঠা এবং সুমন ৫ গ্লাস খেজুরের রস নিয়ে বাজারের দিকে রওনা হলো। প্রতিটি পিঠার দাম ২ টাকা আবার প্রতি গ্লাস খেজুরের রসের দামও ২ টাকা। সুজনের কাছে আছে ২ টাকা। সুমনের কাছে কোনো টাকা নেই।

পথে সুজনের পিপাসা পেলো। সে ২ টাকা দিয়ে সুমনের কাছ থেকে খেজুরের রস কিনে খেলো। একটু পরে সুমনের ক্ষুধা লাগায় সে ওই ২ টাকা দিয়ে সুজনের কাছ থেকে একটি পিঠা কিনে খেলো। এভাবে পরস্পরের কাছ থেকে কিনে খেতে খেতে যখন তারা বাজারে গেলো, তখন সুজনের কাছে আছে একটি পিঠা এবং সুমনের কাছে আছে ২ টাকা। শেষ পর্যন্ত সুমনের আবার ক্ষুধা লেগে যায় এবং শেষ পিঠাটি কিনে খেয়ে ফেলে।

বাড়ি ফেরার পথে তারা হিসাব করে দেখলো- সুজনের কাছে আছে ২ টাকা, সুমনের কাছে কোনো টাকা নেই।

কার লাভ হলো? কার ক্ষতি হলো? ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে এটাকে কীভাবে বিশ্লেষণ করা হবে? কী ঘটবে যদি কোনো জাতি এভাবে নিজেদের মধ্যে কেনাবেচা করতে থাকে?


মন্তব্য

দিগন্ত এর ছবি

সাদা চোখে আমি তো কোনো অর্থনৈতিক লাভ বা ক্ষতি দেখছি না। তবে দুজনেরি ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা হল,তাই সামষ্টিক ভাবে লাভ ছাড়া ক্ষতি কিছু দেখছি না।
এবার অন্যভাবে দেখলে,বাজারে খেজুরের রস আর পিঠার আসল দাম জানা থাকলে তার সাপেক্ষে আরেকরকম বিশ্লেষণ সম্ভব।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

গৌতম এর ছবি

বিনিয়োগ এবং বেচাকেনার ব্যাপার যেহেতু, তাই অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির ব্যাপার তো আছেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এটাকে কীভাবে বিশ্লেষণ করা হয়? এটা কি উৎপাদক ও ভোগের মধ্যে কোন সমন্বয় সাধন করে কি-না, এবং বিনিয়োগের দৃষ্টিতে এটি কোন ধরনের বিনিয়োগে পড়ে, সেগুলো জানা থাকলে হয়তো এর উত্তর দেয়া সম্ভব। আমি জানি না।
- মনে করুন, বাজারে খেজুরের রস এবং পিঠার আসল দাম ওই দুই টাকাই। আপনার অন্যরকম বিশ্লেষণটি জানতে চাচ্ছি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রেজওয়ান এর ছবি

এ নিয়ে অর্থনীতির তত্তগত অনেক ব্যাখ্যা আছে (যেমন লেবার থিওরি অফ ভ্যালু)। এটি সেই প্রাচীন বার্টার ট্রেড এরই উদাহরন।

তবে একেবারে সরলভাবে অর্থনীতির ব্যাখ্যা হচ্ছে কিছূ কাজ হতে হবে যার ফলে মজুরী পাওয়া যাবে। মুল্যের বিনিময়ে ট্রানজাকশন বা পন্য হস্তান্তর হতে হবে। তাহলেই স্থবির অর্থনীতি চাঙা হবে। এরকম একটি ধারনা হচ্ছে যে মাটি খুড়ে সেই গর্ত আবার ভরে ফেলাও অর্ধনীদিকে চাঙা করতে পারে। কারন সেই মজুরী থেকে একজন ভোগ্যপন্য কিনবে। ফলে এই ভোগ্যপন্যের চাহিদা থেকে ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হবে। কিন্তু এর একটি সমস্যা হচ্ছে মজুরী কোথা থেকে আসবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারনা দেয়া হয়নি।

হিটলার ১৯৩০ এর বিশ্বব্যাপি গ্রেট ডিপ্রেশন কাটাতে সক্ষম হয়েছিল অস্ত্র এবং রাস্তাঘাট বিনিয়ে (নিশ্চয়ই বাজেট ঘাটতি ছিল তারপরেও)। আমেরিকার ব্যাপারে বলা হয় তাদের অর্থনীতিকে চাঙা করার কারন অন্যতম - ইরাক যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহন।

আমাদের দেশেও এরশাদের অবদান রয়েছে প্রচুর ডেভেলপমেন্ট কাজ করে (রাস্তাঘাট ইত্যাদি)। কিন্তু এসবের ফলে সাময়িক সমস্যা কাটাতে পারলেও সামস্টিক অর্থনীতিতে কি সুদুরপ্রসারী প্রভাব ফেলে তা দেখার বিষয়।

হাসিব নিশ্চয়ই অর্থনীতিবিদ হিসেবে এর ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবে।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

হিমু এর ছবি

আপনিই উত্তরটা বলে দিয়েছেন। যদি কোন জাতি শুধু এভাবেই নিজেদের মধ্যে পিঠা আর রস খেতে থাকে, তাহলে একসময় তাদের রিসোর্স ফুরিয়ে যাবে।

কৃষিনির্ভর জাতিগুলির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম হবে, কারণ তাদের রিসোর্স হচ্ছে নবায়নযোগ্য, প্রতি বছর পুনর্স্থাপিত হচ্ছে রিসোর্স। তবে তাদের পিঠা বা রস খাওয়ার মাত্রা বেড়ে গেলে কৃষিতে ফিডব্যাক কমতে পারে, সেক্ষেত্রে তারা এক্সপোনেনশিয়ালি সম্পদ ক্ষয়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

শিল্পনির্ভর জাতির ক্ষেত্রে সম্পদ নবায়নযোগ্য নয়, তাই তাদের ক্ষয়ের হার আরো দ্রুত হবে। তখন টিকে থাকতে গেলে তাদের মূল্য সংযোজন বাড়াতে হবে, নতুন বহির্বাজার পত্তন করতে হবে, বিভিন্ন কাটছাঁট করে লাভ বাড়াতে হবে, আর এসব করতে গিয়ে আকারে বাড়তে হবে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সৌরভ এর ছবি

একই সিনারিও যদি আমরা কোন দেশ বা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না করে, পুরো পৃথিবীকে ভিত্তি করে চিন্তা করি, তাহলে ব্যাপারটার মানে দাড়াচ্ছে - আমাদের কনজিউম করার মতো রিসোর্স শেষ হবার আর খুব বেশি দেরি নেই?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

গৌতম এর ছবি

পুরো ব্যাপারটাই গোলমেলে মনে হচ্ছে। কোনো অর্থনীতিবিদ এ ব্যাপারে বিস্তারিত লিখলে ভালো হতো।
..................................................
ছিদ্র খুঁজে বেড়াই, বন্ধ করার আশায়

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

গৌতম এর ছবি

রেজওয়ান ও হিমুকে ধন্যবাদ। এ ব্যাপারে বিস্তারিত মন্তব্য বা বিশ্লেষণ আশা করছি। বিশেষ করে, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা নিজেরাই উৎপাদক আবার নিজেরাই ক্রেতা। সেক্ষেত্রে এই গল্পটিকে বড় প্লাটফর্মে নিয়ে যাওয়া হলে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এই ধরনের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড কী প্রভাব ফেলে, তা জানতে চাই।

হাসিব ভাইকেও এ ব্যাপারে অনুরোধ করছি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

গৌতম আপনার ১১টি লেখা অতিথি একাউন্ট থেকে আপনার একাউন্টে এনে দেয়া হল।

রেফারেন্স
othithi 365
goutom 619

http://www.sachalayatan.com/guest_writer/11337
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/11313
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/11265

http://www.sachalayatan.com/guest_writer/11147
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/11122
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/11010

http://www.sachalayatan.com/guest_writer/10888
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/10830
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/10475

http://www.sachalayatan.com/guest_writer/10456
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/10411

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

গৌতম এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ ছাড়া আর কিছু বলার নাই,
আপনার জন্য এটুকুই মাহবুব মুর্শেদ ভাই।
..................................................
ছিদ্র খুঁজে বেড়াই, বন্ধ করার আশায়

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অয়ন এর ছবি

কার লাভ হলো? কার ক্ষতি হলো? ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে এটাকে কীভাবে বিশ্লেষণ করা হবে? কী ঘটবে যদি কোনো জাতি এভাবে নিজেদের মধ্যে কেনাবেচা করতে থাকে?

অর্থনীতির দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক কাজগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো utility maximize করা। সুজনের কাছে সুমনের খেজুরের রস আর সুমনের কাছে সুজনের পিঠার utility সমান, এই কারণে তারা ২ টাকার বিনিময়ে একজন আরেকজনের কাছ থেকে পণ্যটি কিনেছে। সাধারণ ভাবে marginal utility নেগেটিভ হয়, কিন্তু সুমন আর সুজনের ক্ষেত্রে তা হয় নি। যদি নেগেটিভ হতো তাহলে শেষ পিঠা কিংবা শেষ গ্লাস খেজুরের রসের জন্য তারা ২ টাকা খরচ করতো না।

অর্থনীতিতে সাধারণত লাভ ক্ষতির কোন ব্যাপার নাই, সেটা হিসাববিজ্ঞানে থাকে, অর্থনীতিতে দেখা হয় utility maximize হচ্ছে কিনা। সুজন আর সুমন সেটা পুরোপুরিভাবেই করেছে।

Macroeconomics এর দৃষ্টিতে আপনি যদি Productivity measure করেন তাহলে এক্ষেত্রে GDP বাড়বে, কারণ সুজন আর সুমন তাদের consumption বাড়াচ্ছে।

কোন জাতি যদি শুধুমাত্র এইভাবে কেনাবেচা করতে থাকে তাহলেও জিডিপি একটা পর্যায়ে গিয়ে আর বাড়বে না, কারণ Investment ছাড়া production বৃদ্ধি করা সম্ভব না।

গৌতম এর ছবি

ব্যাখ্যাটি ভালো লাগলো। অর্থনীতির এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো সাদা চোখে দেখলে উল্টাপাল্টা লাগে। কিন্তু একজন অর্থনীতি জানা কেউ যদি সেটি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন, তাহলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়। আপনাকে ধন্যবাদ।

..................................................
ছিদ্র খুঁজে বেড়াই, বন্ধ করার আশায়

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।