পরিত্যক্ত বাড়ী - ভাত চোর - কৃতজ্ঞতা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ৩১/০৩/২০০৮ - ১:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লিখেছি: নায়েফ । ৩১ মার্চ - সোমবার - ২০০৮
-
"জ্বলছে না মধ্যপ্রাচ্যের ঝাড়বাতি।
অবৈধ সম্পদ আর অনিয়ম-দুর্নীতির মূর্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাসাদোপম ভবনগুলোতে এখন শূন্যতা। সিঙ্গাপুর-তাইওয়ানের ফিটিংসের সঙ্গে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে আছে ইতালির টাইলস।
বছরদুয়েক আগেও লোকসমাগমে নিত্য গমগম বাড়িগুলোর সিংহভাগে এখন সন্ধ্যাবাতি দেয়ারও কেউ নেই। সূর্যডোবা অন্ধকারে প্রেতপুরীর রূপ নেয়া প্রাসাদগুলো। যে সাক্ষ্যে রয়েছে কেবল ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি আর অন্যায় শাসনের কালো ইতিহাস। সবসময় গমগম করা এ বাড়িগুলোতে একেবারেই যে ভিড় নেই তা অবশ্য বলা যাবে না। দূর-দূরা- থেকে লোকজন আসে বাড়িগুলো দেখতে। অসম্ভব সৌন্দর্য আর নির্মাণশৈলী দেখে অবাক হয় তারা। সেই সঙ্গে ভাবতে শুরু করে এগুলোর নির্মাণ ব্যয়ের উৎস নিয়ে।"

**

এরপর বাড়ীগুলো কার কার, কোন মালিক কোথায় আছে- তা নিয়ে একটা রিপোর্ট প্রকাশি্ত হয়েছে আজকের যুগান্তরে

এরশাদের জনতা টাওয়ার কারওয়ান বাজারে বস্তি হয়ে ঝুরে ঝুরে নষ্ট হলো । এই বাড়িগুলোরও কি একই হাল হবে? কোটি কোটি টাকার বাড়ির যথাযথ ব্যবহার নিয়ে আসেন - আমার মত বাদাইম্যা যারা আছেন - তারা ভাবি:

১/ প্রতিটা বাড়ী ঐ এলাকার স্কুল কলেজের শিক্ষকদের থাকার জন্য বরাদ্দ করা যেতে পারে। মফস্বলের 'মাস্টার'দের মতো নিবেদিতপ্রান দেশ সেবক খুব বেশি আছেন বলে আমার ধারনা নাই। অল্প বেতন, তার উপরে শিশু জরিপ, ভোটার লিস্ট, জন্ম নিবন্ধন, স্যানিটেশন, টিকা দান - যাবতীয় কাজ কর্ম মাস্টারদের উপর চাপানো হয়- উনারা মহৎ পেশার লোক বলে সব করেন। টাকা পয়সায় ফুটা। তাই তাদের ভাল থাকার ব্যবস্থা করা দরকার।

২/ একটা বাড়ী বিক্রি করে ঐ টাকা দিয়ে বাদবাকি বাড়িগুলায় পাঠাগার, ইন্টারনেট সেন্টার, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পোস্ট অফিস টাইপ দরকারী সেবা উন্নয়ন কেন্দ্র করা যয় ।

৩/ একটা বাড়ীকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সীল মেরে দেয়া যায়। ৩ বছর ভেতরে কেউ যাবে না। মাকড়সার বাসা সাপ বেজী ও ভূত প্রেতের আসর জমলে এটাকে ট্যুরিস্ট স্পট ঘোষনা করা যাইতে পারে। শহরের লাটসাহেব বা বিদেশি লোক জন টাকা দিয়ে টিকিট কিনে বাড়ির ভেতরের নিরাপদ এলাকা ঘুরে আসতে পারবে।

৪/ বাড়ীগুলো ভালো চলচ্চিত্র নির্মাতাকে ভাড়া দেয়া যায়। সিনেমা শিল্পের উন্নয়নে যদি কিছু হয় - - -- । যেই বাড়ীর আশেপাশে বাগান ঝোড় আছে, সেগুলা পিকনিক স্পট হিসাবে বানানো যাইতে পারে । ভাড়ার টাকা এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু সাঁকো মেরামতে খরচ হবে ।

৫/ সবগুলা বাড়ীর সামনে একটা দেয়ালে আসল মালিক যে বানাইছে তার ছবি থাকবে -নিচে এই বাড়ীর অর্থায়ন কোন দূরনীতির খাত থেকে আসছে সেটার বিবরণ থাকবে, কি সাজা জেল জরিমানা হয়েছে- সেটাও লেখা থাকবে। ছবির উপরে লেখা থাকবে - এই দূর্নীতিবাজকে থুতু মারুন ।

***

৫টা প্রস্তাব হয়তো অযৌক্তিক - কী আর করা যায়। ভাতের খিদায় কোন দিন আবার ৫৪ ধারায় আঁটক হই। মাসুদ-মইনুল-ফকরুদ্দিন বা এস আই শহীদুল কি কারো পেটের জ্বালা বুঝবে? সমকালের এই খবর:

"প্রচন্ড ক্ষুধা সইতে না পেরে জয়নাল আবেদীন (৩৫) ও আয়নাল হক (২৫) নামে দুই ভাই ভাত চুরি করতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ে এখন জেলহাজতে। উলিপুরের নারিকেলবাড়ি এলাকার অধিবাসী আবদুল লতিফের পুত্র ওই দুই সহোদর কুড়িগ্রাম শহরে বাসস্ট্যান্ড এলাকার আবুল হোসেনের বাড়িতে অবস্থিত মেসে শনিবার দুপুরে ভারত চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। ধৃত জয়নাল একজন ভ্যানচালক। তার গাড়িটি ভেঙে যাওয়ায় সে এখন বেকার। আয়নাল পেশায় রাজমিস্ত্রি। কাজ না থাকায় সেও বেকার।
কুড়িগ্রাম সদর থানার এসআই শহীদুল জানান, আটক ২ জনকে ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।"

পরমকরুনাময়ের অসীম দয়া, আমি এখনো দুপুরে ভাত খেতে পাই। মাসুদ-মইনুল-ফকরুদ্দিন বা এস আই শহীদুল আরো ভালো কিছু খায়।

দেশটারে শেষ করল এই জয়নাল-আয়নালের মত হারামজাদা ভাত চোরেরা। ভাগ্যিস ৫৪ ধারার আইনটা ছিল!


মন্তব্য

তারেক এর ছবি

পোস্টের জন্য (বিপ্লব)
৫৪ ধারা দীর্ঘজীবি হউক! আমেন।
বাড়ির যথাযথ ব্যবহারের সম্ভাব্যতা ১,২ সত্যি ভালো । তবে আমার পছন্দ হইছে ৩ নম্বরটা চোখ টিপি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

অতিথি লেখক এর ছবি

তারেক ভাইয়া - আপনাকে ধন্যবাদ - আপনার লেখা আমার ভাল লাগে -

-
নায়েফ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- কষ্ট লাগে, আমি দুবেলা দুমুঠো বেশ ভালোভাবেই খাই অথচ আমারই দেশের মানুষ, আমারই প্রতিবেশী না খেয়ে চুরি করতে যায় অন্ন।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

সুমন চৌধুরী এর ছবি

খাবার চুরির শাস্তি হওয়া উচিত একটা কিছু করে খাবার ব্যবস্থা করে দেওয়া। কিন্তু আইন বরাবরই জয়নাল-আয়নালদের ব্যাপারে খড়গহন্ত।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- একটা গল্প আছে না বদ্দা, ঐ যে একটা ছোট রুটির টুকরা চুরি করার দায়ে যে অনেকগুলো বছর জেল খাটতে হয়েছিলো।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অতিথি লেখক এর ছবি

নায়েফ , লিখা তো এবারে ফাডায়া লাইলেন ! লাল সেলাম

- খেকশিয়াল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

জয়নাল আবেদীন (৩৫) ও আয়নাল হক (২৫) নামে দুই ভাই ভাত চুরি করতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ে এখন জেলহাজতে।

কতশত লা মিজারেবল এর কাহিনী ঘটে আর ঘটাই আমরা প্রতিদিন

বিপ্লব রহমান এর ছবি

২ ও ৫ নম্বর প্রস্তাব একেবারে জাঝা। আর পুরো লেখাটির জন্য (বিপ্লব) ।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আমিও (বিপ্লব) না দিয়া পারলাম না।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতিথি লেখক এর ছবি

উদ্ধৃতি
জয়নাল আবেদীন (৩৫) ও আয়নাল হক (২৫) নামে দুই ভাই ভাত চুরি করতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ে এখন জেলহাজতে।

..আমরাই আবার বড় বড় কথা কই ! দারিদ্র'রে মিউজিয়ামে পাঠামু আমরা.. লেকচারের মায়রে বাপ !

কানন এর ছবি

এইদেশে এইবেশে । এই বেশ ভালো আছি । নিলামে উঠছে দেশ ।

সৌরভ এর ছবি

সেইরকম লেখা।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এখন তো চুরি হচ্ছে। অবস্থা দেখে সন্দেহ হয় কিছুদিন পরে ভাতের জন্যে সশস্ত্র ডাকাতিও হবে। ততোদিনে অবশ্য লুট করার মতো ভাত থাকলে হয়।

লেখাটা চমৎকার।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

সত্যিই
কি বিচিত্র এই দেশ !
দারুণ লেখা।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

রাবাব এর ছবি

হুমম

শেখ জলিল এর ছবি

দেশটারে শেষ করল এই জয়নাল-আয়নালের মত হারামজাদা ভাত চোরেরা। ভাগ্যিস ৫৪ ধারার আইনটা ছিল!
..একেবারে তীরের ফলা!
খুব ভালো লেখা। কেন যে দেরিতে পড়লাম!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

ভাত চুরি করতে গিয়ে জেল? কী ভয়াবহ ব্যাপার!

একটা নির্দয় কথা মাথায় এলো।
৫৪ ধারার পজিটিভ দিক: ভাত চুরি করতে গিয়ে হাজতবাসী এই দু'জন এখন দু'বেলা ভাত তো খেতে পাচ্ছে!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

শুনতে খারাপ লাগলে ও বলছি, এই জয়নাল ও আয়নাল যদি আমার বা আপনার বাড়িতে ভাত চুরি করতে গিয়ে ধরা পরতো, তবে আমরা কি করতাম? আমরা ও কি ওদের ধরে বাধতাম না, বা ২/১ টা চড় থাপ্পর মারতাম না?
আমরা কি ওদের জন্য একই অনুভুতি প্রকাশ করতাম, যেমনটা আমরা এখানে করছি?
এমন হাজার জয়নাল বা আয়নাল আমাদের আশে পাশেই ঘুরে বেড়ায়, আমরা দেখি না। আমরা কেবল পত্রিকায় পরি আর আহা উহু করি বা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিই। আমরা নিজেরা কোন উদ্দ্যেগ নিই না। ভাবি কেবল, অন্য কেউ নিবে।
আমার এ বক্তব্য ব্যক্তি আপনাকে উদ্দেশ্য করে নয়। আমরা সবাই আসলে একই রকম। আমি, আপনি অথবা মাসুদ-মইনুল-ফকরুদ্দিন বা এস আই শহীদুল।
~রেনেট

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আপোনার সাথে সম্পুর্ন একমত।সেইজন্যই আপোনার জ্বালাময়ী কথাগুলও খুব পছন্দো হয়েছা।াধন্যবাদ।

-
নায়েফ

অনিন্দিতা এর ছবি

ভীষন ব্যতিক্রমী আইডিয়ার লেখা।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পড়েও কমেন্ট করলাম না কেনো? চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্ব্য করার জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ-
-
নায়েফ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।