সিলিকনের রাত ও কাগুজে শহরে যত পেন্সিল স্কেচ…

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ৩০/১১/২০০৯ - ৭:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাঁটু গেড়ে পূব দিঘীর ঘাটে নামছে রোদের পোস্টম্যান। তাড়াহুড়ো করে কলোনী ছেড়ে ঘরে ফিরছে হলদে পাখির দল, যার ঘর নাই তারও কী প্রচন্ড তাড়া! কারও হাত থেকে এইমাত্র ঘুরে ঘুরে পড়ল একটি আধ খাওয়া সিগারেট, চকচকে চামড়ার জুতো পিষে ফেলছে সেই জলন্ত সিগারেটের বাট। রাস্তার পাশে কোন এক মহিলা ফুঁ দিয়ে চুলার আগুনকে লেলিয়ে দেয়। দাউ দাউ আগুন। পাশে দুইটা ক্ষুধার্ত শিশু অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছে উৎরানো ভাতের দিকে। লোকাল বাসে ছাত্র ছাত্রীর পড়ুয়া আলাপ জমে, কেউবা এরই মধ্যে নিরিবিলি কোন ভাবনায় ভেবে নিচ্ছে কাউকে! কেউবা মনে মনে সেই প্রিয় গানের বেতালা সুরটা আওড়াচ্ছে পরীক্ষার আগের রাতের মত বার বার। কারও ফোন বাজছে। ক্রিং ক্রিং। কেউ ফোন ধরছেনা।

আমার ডান হাতের আশ্রয়ে সাতটি কদম ফুল ও অন্য হাতে দলামোচড়ানো একটা লাল রুমাল। সন্ধ্যার এ আয়োজনে আমার ভূমিকা কী জানা নাই। আকাশের ব্ল্যাক বোর্ডে আলোর চক একেঁ দিয়েছে গুড়ি গুড়ি নক্ষত্রের টিপ। তারা গুনতে গুনতে সামনে পা বাড়াই। যদিও কেবলই পিছে যেতে থাকি, বেনজামিন বাটনের ঘড়ির মত আমার সমস্ত স্বত্ত্বা চলছে এন্টি ক্লকওয়াইজ। আকাশের অর্ধেকটার দখল নেয় কিছু মায়ালাগানিয়া মেঘ। এমন কোন বর্ষার রাতে শহরসিক্ত সন্ধ্যায় অক্সিজেনের সাথে প্রাণ ভরে মাটির সুঘ্রাণ টেনে ভুলে গিয়েছিলাম কার মনে কী ষড়যন্ত্র। হাত পেতে যে বৃষ্টি ছুঁয়ে বলেছিল “ওমা কী ঠান্ডা”! আজ বৃষ্টি আসলে তার শীতলতার মলিন দাগ মুছে দেবার জন্য আলিঙ্গনের কোন ইরেজার নেই।

আল্পনা। ছোট একটা নামই যেন শব্দের ডিকশনারীর চেয়েও ঢের বেশি অর্থ বয়ে বেড়ায়। অন্তত আমার কাছে। প্রতি রাতে সে আমাকে আকাশ ভরা তারা পাঠাতো। আমি তারা গুনতে গুনতে ঘুমিয়ে পড়তাম। এভাবে এক রাতে তারা গুনতে গুনতে তাকে বলেছিলাম, “সব তারা গোনা শেষ হয়ে গেল, এমন কিছু দাও যেটা অগুনতি”। সে আমাকে লাল রুমালটা দিয়ে বলেছিল, “এই রুমালটা সাথে রাখো”। কোনদিন ভেবে দেখিনি কেন সে ওটা দিয়েছিল। এখনও জানি না।

দেশ দৃষ্টির সীমানা ছেড়ে চলেছে যে স্বপ্ন বোঝাই ফেরী, ওরা ফিরে আসবে না কোনদিন। ফিরে আসবে আগুনতি অপেক্ষার রাত। অপেক্ষার প্রতি রাত এক হাজার বছরের সমান। হিসাব কী রেখেছো কত হাজার বছর অপেক্ষায় আছি? শাহাবুদ্দিনের ছবির মত দুরন্ত গতিতে তেড়ে ছুটে যাই তোমার কাছে, তোমার জানালার কাছে পৌছালে এক বুলেট ভেদ করে আমার স্নায়ু। তবু হাত বাড়িয়ে থাকি আদিরসাত্মক বিচ্ছেদ জীবনের জ্বরাক্রান্ত জুয়ারুদের মত। যদি মোমের সম্রাজ্যবাদী তালা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আসো। যদি আসো, তবে জোছনার রাতে স্কেচবুকে লুকিয়ে রাখব। গাবো আবার বৃষ্টিগান। ডাকাতিয়া কোন সন্ধ্যায়…


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

দয়া করে লেখার শেষে নিজের নাম বা নিবন্ধিত নিকটি উল্লেখ করে দেবেন।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

অতিথি লেখক [অতিথি] এর ছবি

হিমু ভাই, এই লেখার লেখকের নাম কাজী আফসিন শিরাজী। নাম ও লগইন ব্যতিত লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর পিছনে অনেক লম্বা কারণ আছে। সেই বর্ণনায় নাই গেলাম।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

অতিথি লেখকের নামটা জানা হল না। আমারই দুর্বলতা হবে, আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারলাম না, অনেক কিছু লেখলেন এবং ভিন্নধর্মী লেখা, আসলে এক বাক্য থেকে আরেক বাক্যে লাফ দিয়ে চলে গেলেন বলে হ্য়ত পুরা জিনিসটা মিলিয়ে কোন ছবি তৈরি করতে পারলাম না। সচলে স্বাগতম, আরো লিখুন, একটা পারিনি তো কি হয়েছে পরেরটা নিশ্চই পারব।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মজনুভাই [অতিথি] এর ছবি

এক্কাজ করতে পারেন, আপনার আমার মতো আরো অনেকের কাছে এরকম লাল রুমাল আছে।
মানে জানতে হলে পুরনো কারো সাথে যোগাযোগ করুন।

তবে পোষ্টের মতো এতো সুন্দর করে বলেন্না যেন।

আমি একটা উত্তর পেয়েছি।
সেটা হলো,
লাল রুমাল আসলে দেওয়া হয় আমাদের মতো সবাইকে, পরিচয়ের জন্যে।
যাতে করে বুঝাযায় যে ওরা কিছু ভাবে তবে খুঁজেনা আর খুঁজলে-খুঁজে পেলে চায়না আর চাইলে পায়না আর কেউ কেউ পাইলে নেয়না।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
নজমুল আলবাব এর ছবি

শব্দের দারুণ খেলা। কিন্তু নাম দিলেন না যে। নাম ধাম জানি না, এমন কারো ভালো লেখা পড়লে মন খচখচ করে।

আমার মনে হয় গেষ্ট একাউন্টে এখন থেকে নাম দেয়াটা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হোক। নামের একটা বক্স থাকবে, যেটা ফিলাপ না করলে লেখা পোষ্ট করা যাবে না। এরর দেখাবে।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কেবল দুটো বাক্যের জন্যেই এই পোস্টটা আলাদা করা যায়।

হাঁটু গেড়ে পূব দিঘীর ঘাটে নামছে রোদের পোস্টম্যান।

এবং

যদিও কেবলই পিছে যেতে থাকি, বেনজামিন বাটনের ঘড়ির মত আমার সমস্ত স্বত্ত্বা চলছে এন্টি ক্লকওয়াইজ।

দুর্দান্ত ! !

_________________________________________

সেরিওজা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুমন সুপান্থ এর ছবি

নুহিন,
অ-সাধারণ ।

(অন্য একটা নাম নাও না হয় ।)

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

নুহিন  এর ছবি

লেখার আত্মিয়তা লেখার সাথেই থাকুক, লেখকের সাথে তার সম্পর্ক আড়ালে থাকুক, এমনটাই চেয়েছিলাম। যদিও ধারনাটা ভুলপুষ্ট, তবু নামহীন লেখা দিয়েই শান্তি পাই। ইদানিং লেখালিখিও করতে পারিনা। মাথাটা প্রচন্ড ফাঁকা লাগে। গুলিয়ে ফেলি শব্দগুলো। বেশ অনেকদিন পরে লিখলাম।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

উপমা আর শব্দের এতো সুন্দর খেলা খেললেন ভায়া!!! আজকে হঠাৎ মনে হচ্ছিল তারা ৫ টা না, আরো কিছু বেশী থাকলেই বোধহয় সুবিধে হত!!

মনে হল, আপনাকে শব্দ আর উপমার একটা গ্র্যান্ড পিয়ানো যেন হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে.... ...আর নিপুন হাতে আপনি রিডের সাথে আঙ্গুলের যুগলবন্দী রচনা করে চলেছেন!

... ... অসাধারণ!

অতিথি লেখক এর ছবি

যেন কবিতা ...

ক'টা লাইন অদ্ভুত জাদুমাখা...

যার ঘর নাই তারও কী প্রচন্ড তাড়া!

কেউবা এরই মধ্যে নিরিবিলি কোন ভাবনায় ভেবে নিচ্ছে কাউকে!

আমার ডান হাতের আশ্রয়ে সাতটি কদম ফুল

প্রতি রাতে সে আমাকে আকাশ ভরা তারা পাঠাতো।

বুনোহাঁস

অতিথি লেখক এর ছবি

পিছু ফিরে তাকাও...
দেখ- আমিও যেন আছি...
অসংখ্য তারার মাঝে
কোন দুটো তারার মাঝখানটায়,
আলোটা একটু কমিয়ে...
তোমার সাথেই আমি লুকোচুরি খেলি!।

মনজুর এলাহী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।