এক টাকার জীবন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২৮/১১/২০১০ - ১২:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দাবানলের মত হঠাৎ একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ল দেশজুড়ে। পিতলের এক টাকার কয়েন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও একশ টাকায়, কোথাও দেড়শ। আবার কোথাও কোথাও নাকি একটি কয়েনের দাম পাঁচশত টাকা পর্যন্ত উঠেছে।

এর কারণটি এখনো কেউ খোলাসা করে বলতে পারছে না। তবে যে ক’টি কারণ এ পর্যন্ত বাজারে এসেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, স্বর্ণের খাদ দেয়ায় নাকি এই কয়েন ব্যবহার করা হবে।

রেল স্টেশনে রাত কাটানো অনেকের মধ্যে বহু পুরনো একজন বাসিন্দা, বুড়ো ভিক্ষুক ওমর আলী। সে গুনে দেখল তার কাছে প্রায় তিনশ’র মত কয়েন রয়েছে। অর্থাৎ একশ টাকা করে বিক্রি করতে পারলেও, তিনশ টাকার বদলে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। মাগো কত্ত টাকা!

তার সঞ্চিত টাকার সঠিক পরিমাণ কত, সে নিজেও ভালভাবে জানে না। তাছাড়া টাকা-পয়সা ছাড়া তার একটি স্থায়ী সম্পত্তি আছে। সম্প্রতি সে বেশ দাম দিয়ে এক চিলতে জমি কিনেছে; আজিমপুর গোরস্থানে। মানব জনমের প্রথম অধ্যায়তো রাস্তাঘাটে মানুষের লাথি খেয়ে কেটেছে, তাই শেষ অধ্যায়টি ভালভাবে কাটাতে চায় সে।

এক টাকার কয়েন সংগ্রহে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন যখন পাগল প্রায়, তখন এক যুবক লক্ষ্য করল, স্টেশনের এক কোণে মোটা পিলারের নীচে বসে কয়েন গুনছে এক বুড়ো। এগিয়ে যায় সে। বুড়োর কাছে অনেক কয়েন আছে জানতে পেরে সব কিনে নিতে চায় যুবকটি। রাত তখন প্রায় এগারটা। ওই সময়ে যুবকের সাথে অত টাকাও ছিল না। যুবক জানাল, পরদিন এসে টাকা দিয়ে পয়সাগুলো নিয়ে যাবে সে। বুড়ো দরদাম নিয়ে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করেছিল খানিক। অবশেষে তাও ঠিক করে গেল যুবক, প্রতি কয়েনে দেড়শ টাকা। সে হিসেব কষে জানাল, বুড়োর কাছে যে পরিমাণ পয়সা আছে তার বিনিময় মূল্য হবে প্রায় ছেচল্লিশ হাজার টাকা। যুবকটি বুড়োকে অনুরোধ করে পঁয়তাল্লিশে রাজি করিয়ে গেছে।

যুবক চলে যাবার পর বুড়ো পড়ে গেল মহা দুশ্চিন্তায়। রেল স্টেশনের এই খোলামেলা জায়গাটি চোর ছ্যাছড়ে ভরা। তার সাথে একজন মানুষের দীর্ঘক্ষণ ধরে যে কথাবার্তা হয়েছে, তা নিশ্চয় অনেকে লক্ষ্য করেছে ইতিমধ্যে। লোকটি কেন এসেছে তাও হয়তো জানা হয়ে গেছে সকলের কাছে। বিশেষ করে বর্তমানে কয়েন সম্পর্কিত যে হুড়োহুড়ি চলছে, তাতে সচেতন যে কেউ ব্যাপারটা আঁচ করতে পারবে। কে জানে, এমনও তো হতে পারে, আড়ালে কেউ অপেক্ষায় বসে আছে; কখন ওমর আলী ঘুমুবে।

বুড়ো ওমর আলী সিদ্ধান্ত নিল আজকের রাতটা না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবে। মাত্রতো একটি রাত, তেমন কষ্ট হবে না রাতটি ভোর করতে। তবে নির্ঘুম থাকাটা তার জন্য কিছুটা বিপদজনক। বুড়োর আবার হাই প্রেসার।

পরদিন আসল ঘটনা প্রকাশ পেল। পত্র-পত্রিকায় লাল কালিতে শিরোনাম দিয়ে খবর ছাপা হলো; কয়েনের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভূঁয়া। কোন কারণে, কিংবা কারণ ছাড়াই কেউ হয়তো মিথ্যে এ গুজবটি ছড়িয়েছিল। মোবাইল ফোনের এ যুগে যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।

স্টেশনের বুড়োর কাছ থেকে যে যুবকটি কয়েন কিনতে চেয়েছিল, স্বভাবতই তাকে আর আসতে হল না স্টেশনে। তবে এলে হয়তো সে দেখতে পেত, স্টেশনের কোণের দিকের পিলারে হেলান দিয়ে, কোলে একগাদা কয়েন নিয়ে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বুড়ো ওমর আলী। আর তার হা করা মুখে মাছিরা যাতায়াত করছিল পরম নিশ্চিন্তে।

নাসির উদ্দিন খান
email:


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চলুক

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ জনাব।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগল।

সজল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সজল ভাই।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো নাসির ভাই। আরো লেখেন।

======================================
অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখিতো ভাই, ছাপায় না কি করব বলেন?
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দারুণ গল্প হয়েছে। ৫।

অতিথি লেখক এর ছবি

মাগো, পাঁচ দিয়ে দিলেন। অনেক ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভালো গল্প। চলুক

-কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
"কুটুমবাড়ি" নাম‌‌‍টা বেশ আপন আপন।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

সাম্প্রতিক সংবাদ থেকে ভালো স্টোরি বের করে আনা ... ব্যক্তিগত 'ক্ষুদ্র' পরাজয়ের গল্প পত্রিকায় আসে না।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

রহমান ভাই ধন্যবাদ।
গল্পের "ভাবনা" টা আমার না, আমার বন্ধু ইকরামের দেয়া।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দারুণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

নজরুল ভাই ধন্যবাদ।
"পথই আমার পথের আড়াল" লাইনটা চমৎকার!

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ভালো লিখেছেন তো ভাই। চলুক। আরো লেখা চাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখিতো ভাই, ছাপায় না।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। (আরো লেখা চেয়েছেন? শরম লাগছে।)

তারাপ কোয়াস এর ছবি

দারুণ গল্প।


আমার বিলুপ্ত হৃদয়, আমার মৃত চোখ, আমার বিলীন স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা


love the life you live. live the life you love.

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানবেন।
কিন্তু আপনার ভেতর এত হাহাকার কেন? নীল লেখাটায় তো লাল আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন দেখছি।

কৌস্তুভ এর ছবি

ভালো লাগল।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ কৌস্তুভ ভাই। "কৌস্তুভ" অর্থ কি?

কৌস্তুভ এর ছবি

কৌস্তুভ পুরাণকথার একটা মণির নাম ছিল। সেই থেকে নেওয়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে প্রশ্ন করলেও উত্তরের আশা কিন্তু করিনি। কৌতুহল বেশী, নানান জনকে নানান প্রশ্ন করি, কেউ উত্তর দেয় না। আপনি দিলেন। ধন্যবাদ আবারো। ভালো থাইকেন রে ভাই।

দিগন্ত বাহার [অতিথি] এর ছবি

ভালো লেগেছে। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে দেখে ভালো লাগছে, ধন্যবাদ।

শামীম এর ছবি

ভালো গল্প।

কয়েনের ব্যাপারটাও সেই বানরের গল্প।

এক জায়গায় কিছু বানর খোলামেলাভাবে ঘুরে বেড়াতো। এক লোক গিয়ে বললো বানর কিনবে, প্রতিটা ১০০টাকা। লোকজন বানর ধরে ধরে এনে দেয় আর ঐ লোক নিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে ওটা কিনে খাঁচায় ভরে রাখে। এভাবে কিছুদিনের মধ্যেই ঐ এলাকার বানর শেষ।

তখন ঐ লোক বললো বানরপ্রতি ৫০০ টাকা। ফলে লোকজন কামকাজ বাদ দিয়ে পাশের গ্রাম, জঙ্গল থেকে বানর ধরে ধরে আনতে লাগলো। ঐ লোকও ৫০০টাকা দিয়ে নেয় আর খাঁচায় রাখে। কিছুদিন পর আশেপাশের জঙ্গলেও আর বানর পাওয়া গেল না।

তখন ঐ লোক বললো বানরপ্রতি ২০০০ টাকা দিবে। তবে এখন সে কাজে একটু শহরে যাবে এর মধ্যে কেউ বানর ধরে থাকলে উনি ২ সপ্তাহ পরে যখন ফিরবে তখন বেচতে পারবে। ঐ লোক তার সহকারীর কাছে সবকিছু গচ্ছিত রেখে শহরে গেল।

সহকারী একটু অসৎ টাইপের চোখ টিপি । মানুষজনও হন্য হয়ে বানর খুঁজছে। তো এরা ঐ লোকের সাথে গোপন চুক্তি করলো, যে খাঁচা থেকে প্রতি বানর ১০০০ টাকায় গোপনে বিক্রয় করবে (যেন মালিক জানতে না পারে) ... তারপর মালিক আসলেই তো ওগুলো ওরা আবার ২০০০ টাকায় বিক্রি করবে।

এভাবে গোপনে অনেকেই বানর সংগ্রহ করলো ... ...

শেয়ার মার্কেট (মাড়োয়ারী ..).... আর এখন আইলো কয়েন .... লোভাক্রান্ত এ দেশে যে আর কত বান্দরের খেল দেখতে হবে কে জানে!!
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

শামীম ভাই ধন্যবাদ।
বানরের লেখাটা (বানর সম্পর্কিত) পড়ে ভালো লাগল।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আমি তো শেয়ার বিজনেস বুঝি না। তো একজন আমাকে শেয়ার বিজনেসের কেচ্ছা কাহিনি বুঝাতে এই গল্পটা বলছিলো। তবে বান্দরের জায়গায় হরিণ দিয়ে।

আল্লায় দিলে, এর পর থেকে শেয়ার বিজনেস সম্পর্কে আমার ধারণা মোটামুটি ফকফকা। দেঁতো হাসি



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

কুটুম এর ছবি

বিষয় নির্বাচন ভালো, চলতি মজাদার ঘটনা ॥

এ ধরনের ঘটনা বুড়ো ওমর আলীদের ঘটনাবিহীন জীবনে নুনের ছিটার মতো ॥

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ জনাব।
নুনের ছিটার ব্যাপারটা ভালোই বলেছেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে। এটা গল্প হলেও কিছু মানুষকে কিন্তু সত্যিই এভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
মেঘনাদ কাব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ মেঘনাদ কাব্য।
আপনার কথা ঠিক, অনেককেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

চমক আছে বটে! বিমল আনন্দ পেলাম, কিন্তু যিনি বমাল ধরা খেলেন তার কি হবে?
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

রোমেল ভাইকে বিমল আনন্দ দিতে পেরে ভালো লাগছে।
আর যিনি ধরা খেলেন তার কি হবে জানি না, তবে এটা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, তিনি ধরা খাওয়ার জন্য গেলেন কেন?

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ফাটাইন্না হইছে!

অতিথি লেখক এর ছবি

আরে বস্, আপনার মন্তব্যের মধ্যে বেশ একটা জোশ আছে।
অনেক ধন্যবাদ।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

বাহ!
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতিথি লেখক এর ছবি

সিমন ভাই মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
বেশ রহস্যময় লেখা- "ঝাউবনে লুকোনো যায় না"!
বাহ্, বাহ্!

অনন্ত [অতিথি] এর ছবি

ভাল লেগেছে গল্পটা।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্যের জন্য একটা শুষ্ক ধন্যবাদ গ্রহণ করুণ, আমীন।

অতিথি লেখক এর ছবি

উদ্ধৃতি
"লিখিতো ভাই, ছাপায় না কি করব বলেন?"

এইরকম লেখা না ছাপাইয়া যাইব কই! জব্বর লিখছেন ভাই। চলুক।

কামরুল হাসান রাঙা

মাহিন [অতিথি] এর ছবি

দারুন সাবলিল লেখা

মাহিন

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব সুন্দর গল্প।
অফ-টপিকঃ কেউ কেউ দেখলাম লিখেছে, পড়ে তাদের আনন্দ লেগেছে। এটা কি কোন আনন্দের গল্প ছিল ? নাকি আমারই বোঝার ভুল?

সাত্যকি

অতিথি লেখক এর ছবি

'পড়ে তাদের আনন্দ লেগেছে' লিখে নি তো। লিখেছে 'পড়ে তাদের ভাল লেগেছে'।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
উত্তর দিতে দেরী হলো বলে দুঃখিত ভাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

'পড়ে তাদের আনন্দ লেগেছে' লিখে নি তো। লিখেছে 'পড়ে তাদের ভাল লেগেছে'।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
উত্তর দিতে দেরী হলো বলে দুঃখিত ভাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।