ঢাকা-সিলেট বাস ভ্রমণ এবং আমার স্বজাতি ভাবনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১০/১১/২০১১ - ৭:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাশ করেছি। পাশ করেছি।

এনাটমি, বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে ভয় ছিল না। ভয় ছিল ফিজিওলজি নিয়ে। শুধু ভয় না, খুবই ভয়। এক্সটার্নাল ছিলেন প্রফেসর মহিদুর রহমান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ এর এক্স ইন্টার্নাল। স্টুডেন্ট মহলে তিনি তুমুল জনপ্রিয়। কারন, প্রফেশনাল বা পেশাগত পরীক্ষায় উনি প্রায় কিছু জিজ্ঞেস না করেই পাশ করিয়ে দেন।

কেউ আবার ভাববেননা মেডিকেলের প্রফেশনাল পরীক্ষা খুব সহজ জিনিস। প্রফ দিয়ে কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেনা, আমি পাশ করব। একটা মহান বাণী শুনেন প্রফ সম্বন্ধে। সিলেটের নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের এক টিচার বলেছিলেন, ''মানুষ তিন জায়গায় একা যায়। কবরে, বাসর ঘরে আর প্রফের টেবিলে।'' উনার নামটা আমি ভুলে গেছি। কেউ জানলে আওয়াজ দিয়েন। নামটা সোনার হরফে বাঁধিয়ে রাখা দরকার। যাই হোক, প্রফেসর মহিদুরের তুমুল জনপ্রিয়তার কারন একটু উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করি। ফিজিওলজিতে প্রফে দুইটা বোর্ড। পেপার-১ ও পেপার-২। মহিদুর স্যার ২য় বোর্ডে। আমার ক্লাসমেট সাগর পরীক্ষা দিতে গিয়েছে স্যারের বোর্ডে। সাগরের ভাষায় বলি, ''আমি রুমে ঢুকলাম। স্যার বললেন, ''কার্ড তোল''। আমি কার্ড তুলে স্যারের হাতে দিলাম। স্যার প্রশ্ন করলেন, " বলতো, প্লাসেন্টা কাদের থাকে?'' আমিতো পুরাই হতভম্ব। এ কি প্রশ্ন? আমি একটু চিন্তা করে উত্তর দিলাম, ''মেয়েদের থাকে।'' স্যার বললেন,''ভেরি গুড। এটা কি সবসময় থাকে?'' আমি তো পুরাই থ। এগুলা কি প্রশ্ন? উত্তর দিলাম, ''স্যার, pregnant হলে থাকে।'' স্যার বললেন, ''ভেরি গুড। এখন বলো প্লাসেন্টা থেকে কি কি হরমোন secretion হয়?'' আমি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম, "Estrogen, Progesteron, hCG (Human Chorionic Gonadotropin)।'' স্যার বললেন, ''ভেরি গুড। যাও তোমার পরীক্ষা শেষ।'' এখন বলেন এই স্যার কেন জনপ্রিয় হবেননা? এই স্যারের একটামাত্র সমস্যা। তিনি কোন ছেলেকে কোন মেয়ের সাথে একবার দেখলে তাকে আর একবারে প্রফে পাশ করতে হবে না (তিনি কেন শুধু ছেলেদের ফেল করান, মেয়েদের কেন এই কারণে ফেল করাননা এ বিষয়ে একটা Phd করার জন্য FMC-র ছাত্রদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।)। যেহেতু, মহিদুর স্যারের ঈগলের চোখ, আর কম্পিউটারের Read Only Memory-যা কখনোই delete হয় না, তাই আমি প্রচন্ড ভয়ে ছিলাম এই কারনে যে, তিনি আমাকে আমার এক ক্লাসমেটের সাথে একবার না, তিনবার দেখেছেন এবং সেই ক্লাসমেট একজন মেয়ে। একবার দেখলেও রিড অনলি মেমরি corrupted হওয়ার চান্স ছিল, কিন্তু তিনি আমাকে দেখেছেন তিনবার এবং আমার ঐ ক্লাসমেট যথেষ্ট সুন্দরী হওয়ায়........................। সান্তনা ছিলেন একমাত্র আগের ফেল করা বড় ভাইয়েরা। রেজাল্ট বের হওয়ার কয়েকদিন আগে এক বড় ভাইয়ের রুমে গিয়েছি। উনার রুমমেট আমাকে ফিস ফিস করে বললেন, 'হাসনাত, আস্তে কথা বলো।'' তারপর তিনি তার রুমমেটকে দেখিয়ে বললেন, "জানুয়ারিতে ফাইনাল প্রফ।'' আমি রুম থেকে বের হওয়ার সময় তার কাছে গেলাম। বললাম, "আপনার নাকি প্রফ?" উত্তরে তিনি একটা মিচকি মার্কা হাসি দিয়ে বললেন, "আরে কত প্রফ দিলাম। ফার্স্ট প্রফ ২ বার, সেকেন্ড প্রফ ৩ বার, আর এটাতো ফাইনাল প্রফ...।"

শেষ পর্যন্ত আমি পাশ করেছি। মহিদুর স্যার আমাকে কেন জানিনা ফেল করাননি। মহিদুর স্যার আপনি অনেক ভালো। প্রায় আমার সমান। আল্লাহ আপনাকে বাঁচিয়ে রাখুক আরো অনেকদিন।

ফার্স্ট প্রফেশনাল পরীক্ষা পাশের বিশাল আনন্দ নিয়ে ২ তারিখ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ফরিদপুর থেকে বাসে উঠলাম ঈদের ছুটিতে সিলেট যাওয়ার জন্য। ১০টায় গাবতলি পৌঁছে গেলাম। এরপরই শুরু হলো ক্যাঁচাল।

গাবতলীতে প্রথমেই ঢুকলাম শ্যামলীর কাউন্টারে।
-সিলেটের নেক্সট বাস কয়টায়?
-সিলেটে বাস যাবে না?
-কেন?
-রাস্তা বন্ধ। হরতাল।
কয় কি??? আমি এখন সিলেট যাব কীভাবে? ঢুকলাম হানিফের কাউন্টারে।
-সিলেটের বাসের টিকেট হবে?
-বাস বন্ধ।
সব শালা কাপুরুষের দল। হরতালের ভয়ে ঘরে বসে আছে। ঘরে বসে থাকলে কি হরতাল ভাঙবে। হরতাল ভাঙ্গার জন্যতো রাজপথে বাস চালাতে হবে। ঘরে বসে থাকার জন্য কি ৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম? একজন সাহসী পুরুষের খুজে ইউনিকের কাউন্টারে ঢুকলাম। এই বেটা দেখি রুটি দিয়ে ডাল খাচ্ছে। ''সিলেট...'' বলার সাথে সাথেই আমাকে আর কিছু বলার সময় না দিয়ে সে বলল, ''বাস যাইব না। বাস বন্ধ। নরসিংদীতে মেয়ররে গুল্লি করছে। হরতাল।"

মাথা হয়ে গেছে গরম। ঠান্ডা করা দরকার। হোটেল দেখে ঢুকে গেলাম ভিতরে। দুইটা পরোটা আর ডাল ভাজি অর্ডার দিয়ে চিন্তা করলাম কি করা যায়। প্রথমেই মানিব্যাগে হাত দিলাম। পকেটে আছে ৪৯৯ টাকা। না সিলেটে ভালোভাবেই যাওয়া যাবে। আগে সায়দাবাদ যাই, তারপর দেখা যাবে কি করা যায়। ২২ টাকা বিল দিয়ে বের হয়ে বাসে উঠলাম। পকেটে এখন ৪৭৭ টাকা। বাস ভাড়া দিলাম ২৫ টাকা। পকেটে থাকল ৪৫২ টাকা।

২ ঘন্টা পর সায়দাবাদ নামলাম। ঘড়িতে তখন ১২.১৫। আমার তখনো মনে হচ্ছিল কোন না কোন বাসতো যাবেই। গ্রিন লাইন টাইপ বাসে যাওয়ার প্রশ্ন আসে না। পকেটে এত টাকা নাই। বাসের টিকেট না পেলে ট্রেনে যেতে হবে। প্রথমেই ঢুকলাম হানিফের কাউন্টারে।
-সিলেটের বাস...
-বন্ধ। টিকেট নাই।
গেলাম ইউনিকের কাউন্টারে। ওখানে কিছু জিজ্ঞেস করা লাগল না। তারা সামনে একটা বোর্ড লাগিয়ে রেখেছে, "সিলেটের বাস বন্ধ"।

ট্রেনেই যেতে হবে। কমলাপুরের দিকে যাওয়া শুরু করলাম। শ্যামলীর কাউন্টার দেখে ঢুকে পড়লাম। বাস যাবে না জানি, তাও দেখে যাই।
-সিলেটের বাস যাবে?
-যাবে। সাড়ে ১২টায় বাস। একদম শেষের সিট।
এই না হলে বেটা বাঙ্গালী। তোদের মত সাহসী পুরুষইতো দরকার।
-দিন। ভাড়া কত?
-৪৫০ টাকা।
-৪৫০ টাকা কেন? ৩৮০ টাকা না?
-বাস কুমিল্লা ঘুরে যাবে। এইজন্য টাকা বেশি লাগবে।
-আচ্ছা দিন।

পকেটে এখন ২ টাকা। নিজের উপরই রাগ লাগছে। কে বলেছিল গতকাল দুপুর আর রাতে দুই বেলাই বিরিয়ানি খেতে। এখন সিলেট নেমে বাড়ি যাব কিভাবে? মামাকে ফোন দিলাম। ''মামা, কুমিল্লা গুরিয়া সিলেট আইয়ার। ফগেটো আসে ২ টেখা। সাদিফুর আইয়া তুমারে ফন দিমু। তুমি খদমতলীত আইয়া লইয়া যাইও ( মামা, কুমিল্লা ঘুরে সিলেট আসছি। পকেটে আছে ২ টাকা । সাদিপুর এসে তোমাকে ফোন দেব। তুমি কদমতলীতে এসে নিয়ে যেও)।"

বাসে উঠে দেখি জুয়েল ভাই। জানুয়ারিতে ফাইনাল প্রফ পরীক্ষার্থী। আমার ২ সিট সামনে বসেছেন। মনে একটু সাহস পেলাম।

একটু পরেই যাত্রাবাড়ীতে ঢাকার বিখ্যাত জ্যামে পড়ে গেলাম। এসময় বাসের সুপারভাইজার আসল টিকেট চেক করতে। ছোটখাট শুকনো একজন মানুষ। গালে কাঁচাপাকা চাপদাঁড়ি। দেখেই মনে হয় নিরীহ ছাপোষা ভদ্রলোক। সে টিকেট নিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে আবার আসল। বলল, ''আমি একটু আগে খবর পেয়েছি নরসিংদীতে র‍্যাব দাঁড়িয়ে একটা-দুইটা করে গাড়ী ছাড়ছে। আর সব গাড়ী কুমিল্লা দিয়ে যাওয়ায় ঐ রোডে প্রচন্ড ভিড়। কুমিল্লা রোড দিয়ে এখন সিলেট যেতে কমপক্ষে ১২-১৩ ঘন্টা লাগবে। আপনারা এক্সট্রা টাকা দিয়ে বাসে উঠেছেন। আমি আপনাদের টাকা ফেরত দিতে পারবনা। তবে আপনার যদি চান আমি নরসিংদী দিয়ে যেতে পারি। এতে আপনাদের কমপক্ষে ৫ ঘন্টা সময় বেঁচে যাবে। এখন আপনারা বলেন আমি কোন রাস্তা দিয়ে যাব?"

যাত্রীরা অনেকে অনেক কথা বলা শুরু করল। তবে দেখা গেল কারোরই নরসিংদী দিয়ে যেতে দ্বিমত নেই। একজন শুধু প্রশ্ন করল, "এদিকে যাওয়া রিস্ক হবে না?" সুপারভাইজার বলল, "না। র‍্যাব আছে। অসুবিধা হবে না।" এরপরে একজন নেতাগোছের একজন দাঁড়িয়ে বললেন, "আচ্ছা ঠিক আছে। আমাদের টাকা ফেরত দেওয়ার দরকার নেই। আমাদের সময় বাঁচানো দরকার। আপনি নরসিংদী দিয়েই যান।"

বাঙ্গালীদের এতো তাড়াতাড়ি কোন বিষয়ে একমত হতে আমি আগে কখনও দেখিনি। মনে হলো কিছু একটা ঘাপলা হতে যাচ্ছে।

কাঁচপুর ব্রিজ পার হলাম। এসময় সুপারভাইজার এসে আবার বলল, ''আপনাদের কথায়ই কিন্তু আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছি...।" "আরে যান যান। আমাদের আগে আগে পৌঁছানো দরকার।"

নারায়ণগঞ্জ পার হলাম। যে জায়গা নিয়ে এতো সমস্যা সেই নরসিংদীও পার হলাম। রাস্তায় মানুষ মনে হলো একটু কম। মাঝে মাঝে এক-দুইটা পুলিশের গাড়ী। নরসিংদীর পরে কিশোরগঞ্জও পার হয়ে গেলাম। ভৈরব ব্রিজ পার হয়ে যেই এপারে এলাম, তখনই মাথায় চুল কম, গালে কাঁচাপাকা দাঁড়ি একজন দাঁড়িয়ে বললেন, "এই তোমরা বাস নিয়ে কুমিল্লা দিয়ে যাওনি। এদিক দিয়ে এসেছো। আমার টাকা ফেরত দাও।"

আমার চোখতো বড় বড় হয়ে গেল। বলে কি? আমি "বলে কি?" ভাবতে ভাবতেই দেখি আরো ৭-৮ জন কাঁচাপাকা দাঁড়ির পক্ষে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তারাও নিজেদের টাকা ফেরত চাচ্ছে। সুপারভাইজারতো হতভম্ব। বাস একটু পর 'উজান ভাটি' রেস্টুরেন্টে দাঁড়ালো। যাত্রা বিরতী। আমার মনে হলো মূল নাটকের যাত্রা বিরতী।

জুয়েল ভাইয়ের পকেট খালি করে খেতে বসেছি। একটু পরে জুয়েল ভাই বললেন, "ওই দ্যাখ, দল বরো খরাত আর (ঐদিকে দেখ, দল বড় করতে আসছে)''। তাকিয়ে দেখি সুপারভাইজার আমাদের দুইজনের দিকে আসছে।
-আপনারা শ্যামলীর বাসে আসলেন না?
-হ্যাঁ।
-আপনাদের কথায় আমি বাস নিয়ে এদিকে আসলাম। এখন ভাই...
-আরে চিন্তা করবেন না। আপনি বাসে উঠে বলবেন আপনারা যদি টাকা ফেরত চান তাহলে আমি বাস ঘুরাচ্ছি, কুমিল্লা হয়ে যাব। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
-আচ্ছা ভাই, আপনারা আমার সাথে থাকবেন তো?
-অবশ্যই।

বাসে উঠে সিটে বসতে বসতে পাশের সহযাত্রীকে বললাম, "এখন দেখবেন নাটক। শুধু দেখে যান।" ভদ্রলোক আকর্ণ বিস্তৃত হাসি দিয়ে বললেন, "হ্যাঁ, আমিও অপেক্ষা করছি।"

কিন্তু কই কিসের নাটক। পশ্চিম রণাঙ্গন দেখি সম্পূর্ণ চুপ। একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েই ভাবলাম, সুপারভাইজার মনে হয় এদের বুঝাতে পেরেছে।

বাস যখনই মাধবপুর ঢুকল, তখনই টের পেলাম এতোক্ষনের চুপ থাকা ছিল যুদ্ধের প্রস্তুতি। সেই কাঁচাপাকা দাঁড়ি আবার দাঁড়িয়ে ঊচু গলায় তার টাকা ফেরত চাচ্ছে। সাথে সাথে এও টের পেলাম, এখানে এদের বিরোধিতা করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারন আমরা ৪-৫ জন বাদে বাসের সবাই দাঁড়িয়ে গেছে টাকা নেয়ার জন্য। বুঝলাম, সুপারভাইজার যখন আমাদের রিক্রুট করছিল, তখন কাঁচাপাকা দাঁড়ি রিক্রুট করেছেন কয়েকগুন বেশি লোক এবং তার এই রিক্রুট করা সৈন্যদের মধ্যে কেউ কেউ আবার পুরাই যুদ্ধংদেহী মনোভাবের। একজনতো বার বার বলেই যাচ্ছে, "টাকা ফেরত না দিলে বাসের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলব।"
সুপারভাইজার যতই বুঝানোর চেষ্টা করে, আপনারাইতো বলেছিলেন টাকা ফেরত দেয়া লাগবে না..., তার এই কথা কেউ মানতে রাজি না। একটূ পরে আরো টাসকি খেয়ে লক্ষ্য করলাম, যে নেতাগোছের লোক বলেছিলেন টাকা ফেরত দিতে হবে না, তিনিও দাঁড়িয়ে টাকা ফেরত চাচ্ছেন। সুপারভাইজারের মুখের কথা আটকে গেল। সে হতাশ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে এখন।

শেষ পর্যন্ত সুপারভাইজার বলল, "আমার কাছেতো টাকা নেই। আপনারা সিলেটের কাউন্টারে চলেন। ঐখানে একটা ব্যবস্থা হবে।''
-না, না। এখনই টাকা ফেরত দিতে হবে।
-এখন আমি টাকা পাবো কোথায়?
-আমি জানি না। আমি সিলেট যাবো না। রশিদপুর নেমে যাবো। আমার টাকা ফেরত দাও।

এদিকে বাসে অন্যান্য টাকা পাওনাদারেরা চুপ করে নেই। ''টাকা দিতে হবে'', ''টাকা না দিলে গ্লাস ভেঙ্গে ফেলব'' ইত্যাদি কথাবার্তা এখন উচ্চগ্রামে শুনা যাচ্ছে। ''নরসিংদী দিয়ে আসবে তো টাকা বেশি নিলে কেন?''- এই কথাটাও দুই-একজনের মুখে শুনা গেল। তবে এই কথাটা খুব বেশি মানুষ বলছে না। কারণও বুঝলাম। সরাসরি মিথ্যা কথা এখনো সবাই শিখতে পারেনি।

রশিদপুরে সেই কাঁচাপাকা দাঁড়ি নেমে যাবে। তাকে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে সুপারভাইজার ড্রাইভারের কাছ থেকে ধার নিয়ে ৫০ টাকা দিলো। তিনি তখন ৫০ টাকার নোট উঁচু করে ধরে যুদ্ধ জয়ের হাসি দিয়ে বললেন, "৫০ টাকা পেয়েছি।'' উনার হাসি দেখে আমার মনে হলো, স্ট্যালিন জার্মানী দখল করেও মনে হয় এতো খুশি হয় নি।

জুয়েল ভাই আমাকে বললেন, "সুপারভাইজার দরা খাইলচে। অখন সবর টেখা দেয়াউ লাগব (সুপারভাইজার ধরা খেয়েছে। এখন তাকে সবার টাকা ফেরত দিতেই হবে)''।

কাহিনী সত্য। কদমতলী কাউন্টার সবার ৭০ টাকা ফেরত দিল। দিল না বলে বলা উচিত দিতে বাধ্য হলো। আমি মনে মনে চিন্তা করলাম, "হুমায়ুন আজাদ ঠিকই বলেছিলেন- মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙ্গালীকে বিশ্বাস করা বিপদজনক।"

_____________________________________________________
এ হাসনাত


মন্তব্য

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

ভাল্লাগছে ... দেঁতো হাসি

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

কল্যাণF এর ছবি

চলুক চলুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে ভালো লাগলো যে শাহজান খানের জমানায়ও বাস থেকে টাকা ফেরত পাওয়া যায় দেখে!

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তারেক অণু এর ছবি
মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

"বাটপারের দুনিয়ারে ভাই, কেউ কথা রাখে না......... দেঁতো হাসি " পোস্টের প্রথমাংশের সাথে শেষাংশের সঙ্গতি কম মনে হল। ভালো লিখেছেন। চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

দ্যা রিডার এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সাফি এর ছবি

দারুন লাগলো

রায়হান আবীর এর ছবি

লেখা চলুক।

একটা কথা, লেখার শুরুতে যে স্যারের কথা বলেছেন তাঁর নামটা কি পরিবর্তন করে দেওয়া যায়? স্যারদের নিয়ে আমরা নানা ধরণের মুখরোচক আলাপে অভ্যস্থ ফ্রেন্ডদের আড্ডায় (স্যার কেনো শুধু ছেলেদের ফেল করায় টাইপ)। তবে ৯৯% ক্ষেত্রেই এগুলো ভিত্তিহীন। আড্ডাতে মজা পেতে দোষ নেই কিন্তু এভাবে একেবারে নাম উল্লেখপূর্ব লেখায় উঠে আসলে সেটি ব্যক্তির উপর অবিচার হয়ে যায়। সম্মানহানীও হয়।

হিমু এর ছবি

সহমত।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

মনে হচ্ছে মডুদের কাউকে এডিট করতে সহযোগিতা করতে হবে। লেখক তো অতিথি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হিমুর সাম্প্রতিক একটা লেখার একটা স্পিরিটের সাথে এই লেখার ঘটনার দারুন একটা মিল পেলাম। জনতার শক্তি কিন্তু আসলেই কতিপয় শ্রমিকের শক্তির থেকে অনেক বেশি। জনতাকে শুধু এটা উপলব্ধি করতে হবে এবং নিজেদের স্বার্থকে আদায় করতে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে ওইসব দুষ্ট পরিবহন শ্রমিকরা কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি দেখে বেয়াড়াপনা করেনা, সবার সাথে করে। ওদের কাছে মুজিব কোট বা স্যুটের কোনও মূল্য নেই। অবশ্য আছে, কেবল শাজাহান খান পরিহিত মুজিব কোট আর আবুল হোসেনের স্যুটের।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

নিটোল এর ছবি

হা হা হা। দারুণ লাগল। অনেক মজা পেলাম। বাঙ্গালী আসলেই অদ্ভুত চিজ!

_________________
[খোমাখাতা]

guest_writter এর ছবি

বিধাতা নাকি নারীর মন বুঝতে পারতেন না। তবে আমার এক বন্ধু বলে নারীর মন বুঝা অনেক সহজ.........তবে বাঙ্গালীর মন বুঝা বড়ই কঠিন......... গড়াগড়ি দিয়া হাসি

দীপাবলি।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।