দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্যামেরাকে অস্ত্র করে তুলুন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৮/০৪/২০১২ - ৩:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কয়েকদিন আগে প্রথম আলোতে রেলওয়ের কমান্ডান্ট এনামুল হকের কিশোরগঞ্জের বাড়ির ছবি দেখলাম। আলিশান বাড়ি। প্রথম আলোর সাংবাদিক সেই বাড়ি তৈরীতে কত টাকা খরচ হয়েছে, সে প্রশ্ন করেছেন গ্রামের মানুষকে। তারা কেউ বলেছে আশি লক্ষ টাকা, কেউ বলেছে দুই কোটি টাকা।

একজন সরকারী কর্মকর্তা যে বেতন-ভাতা পান, তাতে তার পরিবার পরিজনের মৌলিক চাহিদা পুরন করা অসম্ভব না হলেও অত্যন্ত কঠিন। আমার এই কথা গায়েবী নয়, সরাসরি অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া। বাম হাতে টাকা আয় না করলে সরকারী চাকরিজীবিদের দারা-পুত্র-কন্যা নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব না। চাল ডালের মুল্যের কথা বাদ দিলাম, ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ যোগাতেই নাভিশ্বাস উঠে যায়।

সরকারী চাকরিতে বেতন কাঠামো মনে হয় বাম হাতের আয়ের কথা চিন্তা করেই নির্ধারন করা হয়। কোন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বেতন নিয়ে হায় আপসোস করতে দেখি নাই, কারন তারা বিকল্প ব্যাবস্থা করে ফেলেন। বিরল প্রজাতির কয়েকজন নিজে ভুগেন, পরিবারকেও ভুগান। আর এনামুল হক বা জিএম মৃধার মত লোক গ্রামের বাড়িতে দুই কোটি টাকা দিয়ে বাড়ি করে, ঢাকা শহরে দুই তিনটা ফ্ল্যাট, প্লট কিনে।

ফেসবুকে খুব বেশী দিন ধরে আমি যোগ দেইনি। কিন্তু ভাতিজা ভাগ্নিদের কল্যানে দেখি, আজ সবারই হাতে হাতে ক্যামেরা। যা তা ক্যামেরা নয়, অত্যাধুনিক ডিজিটাল ক্যামেরা। সেইসব ক্যামেরা দিয়ে এই ছেলেমেয়েরা নিজেদের ছবি তুলে বেশী, তুলে ফেসবুকে আপলোড করে, বন্ধু বান্ধবকে টাগ করে। এ ছাড়া অনেকেরই আছে দামী মোবাইল ক্যামেরা, যেটা দিয়ে অনেক ঝকঝকে সুন্দর ছবি তুলা সম্ভব।

আমরা কি মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়া এই ক্যামেরাগুলাকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিনত করতে পারি না? সরকারী আমলাদের, মন্ত্রীদের, উপদেষ্টাদের বাড়িঘরের ছবি তুলে ফেসবুকে, ব্লগে ছড়িয়ে দিতে পারি না? তাদের জবাবদিহীতার মুখোমুখী করতে পারি না? এই লোকগুলির লোভের কাছে আমরা এত কোটি কোটি মানুষ পরাজিত হয়ে যাই প্রতিদিন, আমরা কি ঘুরে দাড়াতে পারি না?

আপনারা বয়সে নবীন, আপনাদের মনের বল অনেক বেশী। আপনারা জিদ করে অনেক কিছু করে ফেলতে পারেন। আপনাদের সাইটে ঢুকলেই দেখি আপনারা সবাই কি সুন্দর এক যোগে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন। আপনারা কি পারেন না এমন কোন কিছুর ডাক দিতে?

এই বয়সে এসে আমি নিজে নিজের পরিচয়ে কিছু করতে আর সাহস পাই না। আর আমাকে জীবনের তাগিদেই আপোষ করতে হয় প্রচুর অসৎ মানুষের সাথে। আমি শুধু আপনাদের মুখে নিজের তরুন বয়সটাকে দেখতে পাই। আপনারা কি পারবেন আমার এই বুদ্ধিটা কাজে লাগাতে?

আমার কাপুরুষতা ক্ষমা করবেন। কিন্তু আমার বুদ্ধিটা নিয়ে কিছু করুন আপনারা। আমি জানি আপনারা পারবেন।

=== নাম প্রকাশে ভীত একজন


মন্তব্য

যাযাবর এর ছবি

চলুক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ফেসবুকে আজাইরা ছবি শেয়ার করেই কুল পাইনা আবার বলেন ছবি তুলতে? এত্ত সময় আছে নাকি?

মূর্তালা রামাত এর ছবি

এইসব কাজে কারো সময় হয়নাগো ভাই। বড়ই আফসোস

মূর্তালা রামাত

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

হুমমম! আমাদের এমন করেও এগিয়ে আসা উচিৎ

সাবরিনা সুলতানা এর ছবি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাইয়া,

ভালো কাজে আমাদের দেশের মানুষ সাহসী হতে পারে না।
আমার কারুর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। কিন্তু প্রবল উৎসাহে কিছু করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি সাথে আছি/পাশে আছি বলে বাহবা দেবার অনেকে আছেন কিন্তু সত্যিকার অর্থে যখন কিছু করতে বলবেন তখন খুব অল্প সংখ্যাক মানুষকেই পাবেন এগিয়ে এসে কিছু করছে। এখন আমার শুধু হাসিই পায় এসব দেখে।
ফেসবুকে শেয়ার দিলাম আপনার লেখা। দেখি ক'জন এগিয়ে আসে!
আমার ক্যামেরা আর পেশী শক্তির জোর থাকলে আমি অবশ্যই আপনার বুদ্ধি ধরতাম। আপনার বুদ্ধিটা আমার খুবই পছন্দ হয়েছে হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মায়ার নেশা কাটাতেই এ তীব্র অস্থিরতা
তবু, মায়ার পাহাড়েই আমার নিত্য বসবাস।

হিমু এর ছবি

আইডিয়াটা খুবই ভালো। পাইলট ফেইজে পরিচিত দুর্নীতিবাজদের বাড়িঘরের ছবি তোলা শুরু করবেন নাকি কেউ?

চরম উদাস এর ছবি

আইডিয়া ভালো। তবে বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের আশে পাশে অনেক ক্যাডার থাকে। লুকিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে ধরা পড়লে খবর আছে। সুতরাং সেরকম কিছু করতে গেলে সাবধানে করা প্রয়োজন।

সৌরভ কবীর  এর ছবি

ভালো লেগেছে।

চিলতে রোদ  এর ছবি

এদেশের কোন সরকার দূর্নীতি বন্ধে আন্তরিকভাবে এগিয়া আসবে এই বিশ্বাস আর নেই। এখন আমাদেরকেই বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
তার মধ্য একটি হতে পারে চিহ্নিত দূর্নীতিবাজদের ব্যাপারে দেশব্যাপী গন বয়কট এবং সচেতনতা তৈরি করা।

আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতিবছর শ্রেষ্ঠ দূর্নীতিবাজদের জন্য ভার্চুয়াল এওয়ার্ডের আয়োজন করতে পারি। যে কোন একটা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রত্যেক বছর প্রতি ক্যাটেগরিতে একজনকে এই এওয়ার্ড দেওয়া যেতে পারে।
এক বছরের পত্রিকা ও তথ্য উপাত্ত ঘাটলে কিন্তু এটা খুব একটা জটিল বিষয় না। ক্যাটেগরি গুলো হতে পারে শ্রেষ্ঠ দূর্নীতিবাজ মন্ত্রী; শ্রেষ্ঠ দূর্নীতিবাজ এম,পি; শ্রেষ্ঠ দূর্নীতিবাজ সচিব; শ্রেষ্ঠ দূর্নীতিবাজ আমলা; শ্রেষ্ঠ দূর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ইত্যাদি...।

প্রতিবছর ১০-১৫জনকে প্রতি ক্যাটেগরীতে মনোনিত করলে অনলাইন ভোটিং এর মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ জনকে নির্বাচিত করা হবে।
যারা প্রাথমিক মনোনয়ন পাবে তাদের এক বছরের দূর্নীতির হিসাব, তথ্য-উপাত্ত, ছবি সব সেই ওয়েবসাইটে তাদের নামের লিঙ্কে দেওয়া থাকবে। যেকোন কেউ ফেসবুকে ব্যবহার করে লগইন করে তাদের দূর্নীতির ফিরিস্তি যাচাই-বাছাই করে ভোট প্রদান করবে অনলাইনে।

বর্তমানে সবাই যেভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছে, সচেতনতা তৈরী করতে এই ব্যতিক্রমী উদ্যেগ কাজে লাগতে পারে সন্দেহ নেই।

তাপস শর্মা এর ছবি

এমন হলে তো সারতোই। অসম্ভব কিন্তু নয় ......

সুহাস শিমন এর ছবি

খুবই চমৎকার আইডিয়া। এরকম একটা চিন্তা একবার আমার মাথায় আসছিল। আসলে ছবি তোলা ছাড়াও সচেতনতা তৈরী করা যায়। দুর্নীতি টিকে থাকার একটা বড় কারন হচ্ছে দুর্নীতির কারনে কারু সামাজিক গ্রহনযোগ্যতায় কোন সমস্যা তৈরী না হওয়া। এখনো আমাদের সমাজে ঘুষ খাওয়াকে খুবই স্বল্পমাত্রার অপরাধ মনে করা হয়। একজন ঘুষখোরকে সম্মান করতে কারুর খুব একটা দ্বিধা হয়না।

আমার একটা প্রস্তাব হচ্ছে, আমরা কি এমন একটা প্লাটফর্ম তৈরী করতে পারি যেখানে সবাই দুর্নীতি সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবে, সেটা হতে পারে ছবি অথবা শুধু ঘটনার বর্ননা। সেক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের নামধাম প্রকাশ তাদের সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা কমাবে। তাদের ছেলে বা মেয়ে যদি ইন্টারনেটে বাবা/মায়ের দুর্নীতের ঘটনা পড়ে, সেটা তাদের সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করতে বাধ্য। আর এটা যে শুধু বড় দুর্নীতিবাজদের ক্ষেত্রে করতে হবে তা না, ফাঁকিবাজ স্কুল শিক্ষক, সরকারী অফিসের কেরানী, ট্রাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে মন্ত্রি-আমলা সবার কাহিনীই প্রকাশ করা যায়।

ফেসবুক খুব একটা ভাল প্লাটফর্ম নয়, কারন ফেসবুকে তথ্য প্রদানকারীকে ট্র্যাক করা সম্ভব। আর নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে খুব বেশি মানুষ এটাতে আগ্রহী হবে না, সেটা করা উচিত ও নয়। একই কথা ব্লগের ক্ষেত্রেও খাটে। এমন কিছু দরকার যেখানে অনেক মানুষ কোন ধরনের রেজিস্ট্রেশন করা ছাড়াই মন্তব্য করতে পারবে এবং তাদেরকে বের করার কোন উপায় থাকবে না। এরকম কিছু করা গেলেই হয়তো মানুষের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যাবে। নর্থ আমেরিকার প্রফেসরদের রেটিং এর ওয়েবসাইট http://www.ratemyprofessors.com/ সম্ভবত এ রকম।

আমি ভাবছি একটা ওয়েবসাইট এর কথা যেখানে নাম প্রকাশ না করেও ব্লগ লেখার মত করে সবাই তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবে। সেই ওয়েবসাইটটা শুধু দুর্নীতিবাজদের তথ্য শেয়ার কাজেই ব্যবহার হবে। এসব ব্যাপারে আমার কোন টেকনিক্যাল এক্সপার্টিজ না থাকায় বেশিদূর চিন্তা করতে পারিনি। আশা করি কম্পিউটার এক্সপার্টরা একটু ভেবে দেখবেন এরকম কিছু করা যায় কিনা। আর এরকম কিছু করা গেলে যথাসাধ্য চেষ্টা করব সাহায্য করার, নামধাম প্রকাশ করতে হলেও।

চিলতে রোদ এর ছবি

হাততালি
আপনার মেইল এড্রেসটি পেতে পারি?

সুহাস শিমন এর ছবি
শারেক শহিদ এর ছবি

ভালো চিন্তা । সমস্যা একটাই, দুর্নীতিবাজরা না আবার এখানেও দুর্নীতি করে ভালমানুষকে ফাঁসিয়ে দেয় । যেমন করে হলুদ সাংবাদিকতার কল্যাণে মানুষ অযথাই খ্যাতিমান (!!!) হয়ে ওঠে ।

"মধু-কন্ঠী পাখিরা ভয়ার্ত,
আর বাক-শক্তিরহিত নিশ্চুপ ।
স্বদেশ তিমিরে ভেজে,
কে জ্বালাবে মঙ্গল-ধূপ"

আশালতা এর ছবি

আইডিয়া অবশ্যই ভালো। কিন্তু কতটা এপ্লিকেবল সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এইসব মহৎ উদ্যোগে বাধা দিতে প্রথমে দুর্নীতিবাজরা আসবে না, আমরা নিজেরাই নিজেদের আটকে দেব। দুর্নীতিতে সবাই এতোটাই সয়ে গেছি যে সেটা সত্যিই নির্মূল করতে চাই কতটুকু সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। আমি নিজে ব্লগে এসে জ্ঞানের কথা কপচাই অথচ গতকালও আমার রিকশাওলা রং সাইডে না গিয়ে নিয়মমাফিক তিন মাইলে উজিয়ে গিয়ে ইউটার্ন নিলো দেখে মহা বিরক্ত হলাম। আপনার কি ধারণা এরকম মানুষেরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত হয়ে দাঁড়াবে ?

তবে সত্যিই যদি কেউ দাঁড়ায় কেউ শুনতে পাক না পাক হাততালি দিয়ে হাতে রক্ত তুলে ফেলব নির্ঘাত।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

চিলতে রোদ এর ছবি

আসলেই, আমরা নিজেরা(সাধারণ মানুষ) দূর্নীতি উৎপাটনে কতটা আন্তরিক সেটা ভাবার বিষয়। আমার এক আত্মীয়(সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা) দূর্নীতির দায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কাল হতে বহুবার বহিস্কৃত হয়েছে। কিন্তু কোন পারিবারিক অনুষ্ঠানে তার সমাদর করতে সবাই উঠে-পরে লেগে থাকে। দূর্নীতি যতই করুন না কেন, আপনার যদি যথেষ্ট বিত্ত থাকে তবে আমাদের দেশের মানুষের কাছে এসব কোন সমস্যা নয়।
তাই মনে হয় হুমায়ুন আজাদ ভবিষ্যতবানী করেছিলেন, "সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে" মন খারাপ

রুদ্রপলাশ  এর ছবি

অনেক ছবি তুলছি ছড়িয়ে দেব শীঘ্র ! লেখায় চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।