আগের পর্ব সমুহ
অন্নপুর্না বেসক্যাম্প ট্রেক-১
অন্নপুর্না বেসক্যাম্প ট্রেক-2
দোবান টু ফিশটেইল বেসক্যাম্প:
তাবুতে ডাউন স্লিপিং ব্যাগে ঠাসাঠাসি করা অবস্থায় ভালো ঘুম হলোনা। খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। দাঁত কপাটি ঠান্ডায় কোনরকমে হাত মুখ ধুয়ে গরম গরম পরিজ দিয়ে নাস্তা সারলাম। আমাদের হঠাৎ আগত দুই দেশী ভাই খুব সকালেই রওনা হয়ে গেছে। তারা আজকেই অন্নপুর্না বেসক্যাম্প স্পর্শ করে ফিশটেইল বেসক্যাম্পে ফেরত আসবে। সব গুছিয়ে ৮টা নাগাদ আমরাও বেরিয়ে পড়লাম। আজ উঠতে হবে অনেকটা পথ, ভার্টিক্যালি ১২০০ মিটার বা প্রায় ৪০০০ ফিট। পরবর্তী গন্তব্য দিউরালী। প্রকৃতি এখানে অনেকটাই রুক্ষ, গাছপালা অনেক কমে গেছে, অল্প যা কিছু আছে তাও এখানকার প্রবল বাতাস আর পুষ্টিহীন পাথুরে গায়ের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য বামন আকৃতির। কিন্তু এই রুক্ষতার ও অন্যরকম সৌন্দর্য। উচ্চতা এখন তিন হাজার মিটারেরও বেশি, তাই বাতাস বেশ পাতলা। একটু চাপ নিলেই অক্সিজেনের জন্য তেলাপিয়া মাছের মত হা করে থাকতে হচ্ছে। আমরা একটি লম্বা গিরিখাতের ভেতর দিয়ে ক্রমশঃ উপরে উঠছি। দুপাশে পাথুরে পাহাড় খাড়া উঠে গেছে। হালকা বরফের ছোয়া লেগেছে পাহাড়ের পাথুরে মাথায়। গিরিখাতের মাঝখানে কোথাও কোথাও মেঘ আটকে গেছে, বাতাসের তোড়ে পাক খাচ্ছে। ছোট্ট সেটেলমেন্ট দিউরালী অতিক্রম করলাম প্রায় দুপুর নাগাদ, শুধু লাঞ্চের জন্য থামা হলো। তারপর আবার উঠা, পাথুরে পথ, ফিশটেইলের সূচালো মাথা খুব কাছে এখন। চারপাশে আরও বেশ কিছু চুড়াও একদম নিকটে। মাঝখানে একটা জায়গা অতিক্রম করলাম যেখানে অ্যাভালাঞ্চের বরফ জমে প্রাকৃতিক গুহা সৃষ্টি হয়েছে। জায়গাটির নাম হিঙ্কু কেভ। বেশ ইন্টারেষ্টিং এবং বিপদজনক ও। গাইড জানালো বেশ ক’জন মারা গেছে শীতকালে এই পথ দিয়ে যাবার সময় উপর থেকে বরফ ধ্বসে। একথা শোনার পর গুহার ভিতর থেকে দ্রুত বের হয়ে আসলাম। অবশেষে নিরবিচ্ছিন্ন ঘন্টাখানেক হাটার পর বিকেল নাগাদ পৌছলাম ফিশটেইল বা নেপালী ভাষায় মাচাপুচরে বেসক্যাম্প।
১। দিউরালীর পথে
২। দিউরালীর পথে-
৩। গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে পথ চলা
৪। গিরিখাত (দিউরালীর পথে)
৫।মেঘ আটকা পড়েছে গিরিখাতে
৬। দিউরালী পাস
৭।ফিশটেইল/মাচাপুচরে
৮। ফিশটেইল/মাচাপুচরে
৯। হিঙ্কু কেভ (তুষারধ্বস থেকে সৃষ্ট গুহা)
১০। হিঙ্কু কেভ (অভ্যন্তর)
১১। মাচাপুচরে বেসক্যাম্প দেখা যায়-
১২।মাচাপুচরে বেসক্যাম্প
১৩। মাচাপুচরে বেসক্যাম্প
ফিশটেইল বেসক্যাম্পের উচ্চতা ৩৭০০ মিটার আর চুড়ার উচ্চতা ৬৯৯৭ মিটার, প্রায় ২৩০০০ ফিট। এই চূড়া নেপালিদের কাছে খুব পবিত্র এবং চুড়ায় আরোহন নিষিদ্ধ। ১৯৫৭ সালে ব্রিটিশ এক্সপিডিশন টিম চুড়ার ৫০ মিটার নিচ থেকে ফিরে আসে নেপালের তৎকালীন রাজাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক। পোখারা থেকে এই চূড়া দেখে কত না মুগ্ধ হয়েছি আর তা এখন একদম আমাদের পায়ের সামনে, কোন আইসক্রিমের মত খাড়া ৩২০০ মিটার আকাশে উঠে গেছে। ফিশটেইল বেসক্যাম্প থেকে শুরু করে অন্নপুর্না বেসক্যাম্প পর্যন্ত পুরো এলাকাটি একটি অ্যাম্ফিথিয়েটারের মতো। দিউরালী থেকে গিরিখাতটি সরু একটি পথ হয়ে দুপাশের সুউচ্চ পর্বতমালার ভেতর দিয়ে ফিশটেইল বেসক্যাম্পে প্রবেশ করেছে। আর সেখান থেকে অন্নপুর্না বেসক্যাম্প পর্যন্ত চারপাশ প্রায় ৩৬০ ডিগ্রী ঘিরে রেখেছে অন্নপুর্না রেঞ্জের জানা অজানা সব তুষারা শৃঙ্গ, প্রায় স্পর্শ করার মতো কাছে। চারপাশে পুরোই বরফের রাজ্য। সন্ধে হয়ে এসেছে, তাপমাত্রা নামছে হু হু করে। বিবি মানে আমাদের গাইড জানালো রাতে মাইনাস ১০ ডিগ্রীর ও নিচে নেমে যাবে।
১৪। মাচাপুচরে বেসক্যাম্প ব্যাকগ্রাউন্ডে অন্নপুর্না-৩
১৫। মাচাপুচরে চূড়া
১৬। মাচাপুচরে বেস ক্যাম্পের পথে
থাকার ব্যাবস্থা এক রুমে তিনজন, আমি, মুবির আর আরেক সহযাত্রী দক্ষিন আফ্রিকার পাইলট রাজনদা। থারমাল ইনার, ডাউন জ্যাকেট আর কানটুপিতে আপাদস্তক মুড়িয়ে ডাইনিংয়ে গিয়ে দেখালাম পুরাই জাতিসংঘ। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সব দেশের মানুষের একটি করে স্যাম্পল আছে এখানে। কেউ বই পড়ছে, কেউ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ গান শুনছে আর আমরা গরম গরম গার্লিক স্যুপ নিয়ে এক কোনায় তোষক বিছানো তক্তপোশের উপর আয়েশ করে বসলাম। মাঝখানে মাটির তৈরী ফায়ার প্লেস বেশ ভালো তাপ দিচ্ছে। একবারে রাতের খাবার সেরে নিয়ে রুমে গিয়ে ডাউন স্লিপিং ব্যাগের আরামদায়ক উষ্ণতায় নিজেদেরকে প্যাকেট করে ফেললাম। পাতলা বাতাসের কারনে ভালো ঘুম হলোনা। রাত প্রায় দু’টার সময় আমি আর মুবির উঠলাম ট্রাইপড নিয়ে লং এক্সপোজারে চাঁদের আলোয় ঝিকিয়ে উঠা চারপাশের চুড়াগুলোর ছবি তোলার জন্য।
ফিশটেইল বেসক্যাম্প টু অন্নপুর্না বেসক্যাম্প
ছবি তুলে বাকি সময় আধো ঘুম, আধো জাগরনে কাটিয়ে খুব ভোরে, প্রায় সাড়ে চারটায় রওনা হলাম অন্নপুর্না বেসক্যাম্পের দিকে। চারিদিক তখনো অন্ধকার। আমাদের উদ্দেশ্য বেসক্যাম্প থেকে সুর্যোদয় দেখা। রাজনদা আমাদের আরো আগেই রওনা হয়ে গেছেন। ঘন্টা দুয়েক লাগবে এবিসি পৌছতে। দুরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার, এই তিন কিলোমিটারে উঠতে হবে প্রায় ৫০০ মিটার। ডানে বায়ে, সামনে পিছনে ঘিরে রেখেছে অন্নপুর্না রেঞ্জের চেনা অচেনা সব চুড়। আমাদের একদম সামনে থেকে অন্নপুর্না সাউথ রাজকীয় ভঙ্গিমায় আকাশে উঠে গেছে। তাঁর বা পাশেই বিশ্বের দশম সর্বোচ্চ কিন্তু সবচেয়ে বিপদসংকুল শৃঙ্গ অন্নপুর্না-১। বিশ্বের সব নামি দামি পর্বত আরোহীদের কাছে এই শৃঙ্গ আলাদা সমীহ আদায় করে নিয়েছে। নির্দিষ্ট কোন রুট না থাকা আর ঘন ঘন অ্যাভালাঞ্চ প্রবনতার কারনে এই শৃংগ জয় করা খুবই বিপদজনক। যাই হোক, প্রচন্ড ঠান্ডার সাথে যুদ্ধ করতে করতে এগিয়ে যেতে থাকলাম। আধাআধি যাওয়ার পর ঠান্ডায় খারাপ লাগতে লাগলো, ক্ষিধেও পেয়েছে খুব। একটা বড় বোল্ডারের আড়ালে বাতাস বাঁচিয়ে বসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম আর একটা ফাইভষ্টার ক্যান্ডি কচকচিয়ে খেয়ে ফেললাম। শরীরে ইনষ্ট্যান্ট স্যুগার ঢুকাতে একটু চাঙ্গা লাগলো। চারিদিক আস্তে আস্তে ফর্সা হচ্ছে, সুর্য উঠতে যদিও বাকি আছে এখনো। চারপাশে অপার্থিব দৃশ্য। যে সব পর্বত শৃঙ্গ এতদিন দূর থেকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি, সেই সবই এখন আমাদের পায়ের সামনে মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে, ফিশ টেইল, অন্নপুর্না সাউথ, অন্নপুর্না-১, অন্নপুর্না ফ্যাংস, হিমচুলি, থারপু চুলি, অন্নপুর্না-৩, গঙ্গাপুর্না, গ্লেসিয়ার ডোম আরও কত কি। বিখ্যাত চূড়াগুলি নিজেরাই চিনলাম আর বাকি সব গাইড চিনিয়ে দিলো।
১৭। এবিসির পথে মুবীর
১৮।এবিসির পথে
অবশেষে সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ আমরা পৌছলাম আমাদের আকাংখিত শেষ গন্তব্য অন্নপুর্না বেসক্যাম্পে। চারপাশে শুধু বরফ আর বরফ। একটু ধাতস্থ হবার পর অতি আবেগে আপ্লুত হয়ে আমি অন্নপুর্না সাউথের গোড়ায় বরফের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলাম, মুবির ও যোগ দিল সাথে। ক্যামেরার ক্লিক চলতে থাকলো অবিরাম। সুর্যের প্রথম কিরন ফিশটেইলের চূড়া ছুয়ে ধীরে ধীরে আলোকিত করতে থাকলো বাকি শৃঙ্গগুলি। চমৎকার দৃশ্য। রাজনদার সাথে দেখা হলো। এক সাথে কিছু ছবি তুললাম। নাস্তা করলাম বেসক্যাম্পের লজে। একটি চাপাতি আর ডিম অমলেট, ৪৫০ টাকা। এক লিটার পানি ২০০ টাকা। নাস্তা সেরে চারপাশ ছুটোছুটি করে দেখছি। চোখ বারবার চলে যাচ্ছে অন্নপুর্না-১ এর দিকে। কি শান্ত, সমাহিত, দেখে মনেই হয়না এখানে ১৫৭টি সফল সামিটের বিপরীতে ৬০ জন মৃত্যু বরন করেছে, চূড়া এত কাছে মনে হয় এক দৌড়ে উঠে যাওয়া যাবে।
১৯। অন্নপুর্না সাউথ পিক
২০। গঙ্গাপুর্না
২১।অন্নপুর্না সাউথ সকালের রোদে
২২। অন্নপুর্না বেসক্যাম্প
২৩।আনন্দের আতিশয্যে গড়াগড়ি (অন্নপুর্না বেসক্যাম্প)
২৪।অন্নপুর্না বেসক্যাম্প
২৫।অন্নপুর্না সাউথ, বামে হিমচুলি, ডানে অন্নপুর্না ফ্যাংস্
২৬।হিমচুলি (যতদুর মনে পড়ে বাংলাদেশের ক’জন পর্বতারোহী এটি জয় করেছেন)
২৭। পর্বতারোহীদের পায়ের ছাপ হিমচুলী শৃঙ্গে
২৮। আমি, মুবীর আর সাউথ আফ্রিকার রাজনদা হিমচুলির পাদদেশে
২৯। আমি, মুবীর এবং রাজন দা (অন্নপুর্না বেসক্যাম্পে)
অন্নপুর্না-১ এ প্রান হারিয়েছে বিশ্বের কয়েকজন অত্যন্ত নামি পর্বতারোহী যার মধ্যে অন্যতম ১৯৯৭ সালে রাশিয়ান তারকা পর্বতারোহী আনাতলি বুকারভ, ২০০৮ এর মে মাসে স্পেনিয়ার্ড ইনাকো ওকোয়া আর ২০১১ সালের অক্টোবরে বিশ্বরেকর্ডধারী ও গিনিজ বুকে নাম লেখানো সাউথ কোরিয়ান সুপার হিরো পার্ক ইয়ং স্যু। এই সাউথ কোরিয়ান বিশ্বের প্রথম আডভেঞ্চার গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী, যিনি সব গুলো অর্থাৎ ১৪টি আট হাজার মিটার শৃঙ্গ জয় করেছেন, জয় করেন সেভেন সামিট এবং ভ্রমন করেন উত্তর মেরু এবং দক্ষিন মেরু। এই দক্ষিন কোরিয়ানের কথা আলাদা করে বলছি এ কারনে যে উনি আডভেঞ্চার জগতে বিরল কিছু রেকর্ডের অধিকারী। এক বছরে ছয়টি ৮ হাজার মিটার শৃঙ্গ জয় করে গিনিস বুকে জায়গা করে নেন। যারা পর্বত আরোহন সম্পর্কে খোজ খবর রাখেন তারা জানেন কি অসম্ভব অর্জন এটি, সম্ভবত আরও বহু বছর অক্ষত থাকবে এই রেকর্ড। এছাড়াও পার্ক একদম একা কোন রকম ফুড রিসাপ্লাই ছাড়াই ৪৪ দিনে শুধু পায়ে হেটে সাউথ পোলে পৌছান যা আরেকটি গিনিস রেকর্ড। বুকারভ মারা যান ১৯৯৭ এর শীতে অন্নপুর্না অভিযানে ৫৭০০ মিটার উচ্চতায় এক অ্যাভালাঞ্চে তাঁর আরেক সঙ্গী সহ, ইনাকি মারা যান ৭৪০০ মিটার উচ্চতায় পালমোনারি ইডিমায় আর পার্ক ইয়ং নিশ্চিহ্ন হন ৬৪০০ মিটার উচ্চতায় এক ভয়ংকর পাথর ধ্বসে তাঁর আরও দুই সঙ্গী সহ।
৩০। অন্নপুর্না-১ (৮০৯১ মিটার/২৬৫৪৫ ফুট) এর সামনে আমি আর মুবীর
৩১। অন্নপুর্না সাউথ পিক ও আমি
৩২। বন্ধু মুবীর
৩৩। বন্ধু ও সহযাত্রী মুবীর
অন্নপুর্না-১ থেকে যে গ্লেসিয়ারটি নেমে এসে মোরেইন সৃষ্টি (গ্লেসিয়ারের উপর ধুলোবালি, নুড়িপাথর জমে ফুলে উঠে, নীচে বরফের নদী বয়ে চলে) করেছে তাঁর পাশে একটি উচু জায়গায় নিহতদের স্মরনে চর্টেন বানানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য কিছুক্ষন সময় কাটালাম। তারপর আরো ঘন্টাখানেক অসংখ্য ছবি তুলে, বরফে গড়াগড়ি করে তারপর আমরা নিচে নামা শুরু করলাম। এমন অসাধারন ল্যান্ডস্কেপ ছেড়ে আসতে মন চাচ্ছিলনা। সুর্যি মামা ততক্ষনে মাথার অনেক উপর। তাপমাত্রা শুন্যের নীচে হলেও চারপাশের বরফে সুর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে ঠান্ডাকে অনেক সহনীয় করে তুলেছে। যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম অর্থাৎ নয়াপোল পৌছতে দু রাত তিনদিন লাগবে। মন খুব ফুরফুরে সফল ভাবে বেসক্যাম্প পৌছতে পেরেছি বলে।
৩৪। অন্নপুর্না-১ এ প্রান হারানো অভিযাত্রীদের স্মরনে নির্মিত চর্টেন
৩৫। অন্নপুর্না-১ প্রান হারানো অভিযাত্রীদের কয়েকজন
৩৬। অন্নপুর্না-১ এর গ্লেসিয়ারে সৃষ্ট মোরেইনের সামনে
৩৭। অন্নপুর্না-১ ও তার গ্লেসিয়ার সমুহ
এবার ফেরার পালা
ফেরার কাহিনী সংক্ষেপে বলছি। নামার সময় প্রথম রাত কাটালাম দোবান। দ্বিতীয় রাত সেই জমজমাট জায়গা চমরং। চমরংয়ে পৌছানোর সময় একটি বিচ্ছিরি দুর্ঘটনা ঘটে। সঙ্গী মুবীর চমরংয়ের আগে সিনুয়ার কাছে একটি খাড়া বাকের মুখে ধাপ বেয়ে নামার সময় আলগা নুড়ি পাথরে পা পিছলে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যায়। এতে তাঁর ডানপায়ের গোড়ালি বিচ্ছিরি ভাবে ইনজ্যুরড্ হয়, হাটা দুরের কথা, দাড়ানো ও মুশকিল। তখনও আরো প্রায় পৌনে দুদিনের নামা বাকি।। হেলিকপ্টার ইভ্যাকুয়েশনের জন্য আড়াই থেকে তিন হাজার ডলার লাগবে যা দেয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। কিন্তু কোন না কোন ভাবে নামতেই হবে অগত্যা এন্টি ইনফ্ল্যামিটরি জেল আর পেইন কিলার ই ভরসা। অতঃপর ঔষধপাতি খেয়ে দুটো ওয়াকিং ষ্টিকের ওপর ভর করে সে ইঞ্চি ইঞ্চি করে নামতে শুরু করলো, প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল যদিও। গাইড বিবিকে ওর সাথে রেখে খাড়কা জিকে নিয়ে আমি দ্রুত নামতে লাগলাম। আমি চমরং পৌছার প্রায় ৪ ঘন্টা পর ওরা এসে পৌছলো। সারা রাত যতটুকু সম্ভব পায়ের শশ্রুষা করা হলো। পরদিন ও সেই আহত পা নিয়ে অ্যানাফ্লেক্স জেল আর পেইনকিলারের উপর ভরসা করে প্রায় ১৩ ঘন্টা হেটে রাত ন’টায় নয়াপোল পৌছলাম। সেখান থেকে জিপ নিয়ে রাত দশটা নাগাদ পোখারা শহরে। পরে এক্সরে করে দেখা গেলো তাঁর গোড়ালির হাড়ে হালকা চিড় ধরেছে। এটি নিয়েই তাকে প্রায় দুইদিন নামতে হয়েছে। হ্যাটস্ অফ।
৩৮। ফিরে চলা-১
৩৯। ফিরে চলা-২
৪০। ফিরে চলা-৩
৪১। ফিরে চলা-৪
৪২। ফিরে চলা-৫
৪৩। ফিরে চলা-৬
৪৪। ফিরে চলা-৭
৪৫। ফিরে চলা-৮ (গ্লেসিয়ার ডোম)
নটে গাছটি মুড়োল-
পোখারা পৌছে সব কিছু হোটেলে ডাম্প করে সেই রাতেই পাঞ্জাবী একটি হোটেলে ফেয়ারওয়েল ডিনার হলো। আমি নিশ্চিত অর্ডারের বহর দেখে ওয়েটাররা অবাক হয়েছিলো। পরদিন সকালের বাসে কাঠমন্ডু আর কাঠুমন্ডু পৌছে দরবার হলে ঘুরোঘুরি করে সময় পার এবং পরদিন বাংলাদেশ বিমানে ঢাকা প্রত্যাবর্তন। মুবীরের ভাঙ্গা পা ঠিক হতে মাস খানেক সময় লেগেছে। এই লেখা শেষ করে যখন সচলায়তনে দিচ্ছি তার মাত্র কিছুদিন আগেই ফিরেছি নেপাল তিব্বত সীমান্তে ল্যাংটাং ভ্যালি ট্রেক করে। অল্পের জন্য প্রানে বেঁচে যাওয়া সেই চমৎকার ট্রেকের গল্প আরেকদিন হবে যদি পাঠকের ভালো লাগে। ধন্যবাদ।(অচিন পাখি)
অন্যান্য লেখা
সান্দাকফু ট্রেক-১
সান্দাকফু ট্রেক-২
জাঙ্গল ট্রেকিং-রেমা-কালেঙ্গা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারী
আজকের ভুমিকম্প বৃত্তান্ত
মন্তব্য
সুবিশাল পোস্ট, তাই শুধু ছবির জন্য আপাতত ধন্যবাদ নিন। পড়ার সময় পেলে বাকীটা জানাবো।
মারাত্মক!
বেসক্যাম্পগুলার মালিক কে? কারা চালায়? এরা পয়সা বানায় কিভাবে?
আরেক্ষান কুশ্চেন গার্লিক স্যুপ নিয়া, কইলেন তো গরম গরম স্যুপ মারছেন জাজিমে বইসা। স্যুপ পৌঁছাইল কেমনে সেইটা বলেন। রেস্টুরেন্টের সাপ্লায়ার কি আপনের মত ট্রেকিং করে মাল দিয়ে আসে না হেলিকপ্টারে?
..................................................................
#Banshibir.
বেসক্যাম্প গুলো অত্র এলাকার অধিবাসীরাই চালায়। বছরে দুই মৌসুমেই ব্যাবসা। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর আর এপ্রিল থেকে জুন। ক্রেতা বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ট্রেকার আর ক্লাইম্বাররা। আর স্যুপ জিনিসটা ওখানে খুব বেসিক একটা খাবার। গরম পানিতে কিছু মশলা আর রসুন গরম করে দিলেই গার্লিক স্যুপ। কিছু শাকপাতা গরম পানিতে মশলা দিয়ে সিদ্ধ করে দিলেই ভেজ স্যুপ। কিন্তু সারাদিনের প্রচন্ড পরিশ্রমের পর ওই জিনিষই অমৃত। সাপ্লাই আসে সমতল থেকে মানুষের কাধে চড়ে। যারা এফোর্ড করতে পারে তারা গাধা বা ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে নিয়ে আসে। তাই সব জিনিষপত্রের আগুন দাম। হেলিকপ্টারে অনেক দাম পড়ে যাবে, স্বর্নের দামে কিনতে হবে সব। ধন্যবাদ।
আপনার বর্ণনা শুনে ত ইচ্ছা করছে পারলে এখনি চলে যাই।কিন্তু আমার ত পাহাড়এ উঠার অভ্যাস নেই।ত আমি কিভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি?আর আপনার পুরো ভ্রমনে কত খরচ হয়এছে?
নতুন মন্তব্য করুন