ভালোলাগার ভিলনুস

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০২/০৭/২০১৪ - ৬:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[justify]

দিগন্ত-জোড়া সর্ষে খেত, উঁচু নিচু সবুজে ঢাকা ভূমি, ক্ষয়ে যাওয়া কাঠের জীর্ণ খামার বাড়ি, বাড়ির পাশে অযত্নে পরে থাকা সেই কবে কোন কালে ব্যবহৃত ট্রাক্টর, চাষী বউয়ের শুকোতে দেয়া কাপড়-এমনি অনেক দৃশ্য ভেসে উঠল চোখের সামনে রাতের প্রশান্তির এক ঘুমের পর পাপড়ি মেলে। তখনো পুরোপুরি ভোর হয়নি, রাত আর ভোরের সন্ধিক্ষণের আবছা আভায় চারদিক ঢাকা, তার সাথে যোগ হয়েছে মায়াময় স্বচ্ছ এক কুয়াশার আবরণ যার মাঝে আমাদের বাস ক্ষণে ক্ষণে ঢুকে আবার তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে। একবার ভাবলাম রাতের ঘুমটাই আরও প্রলম্বিত করি, তারপর মনে হল ঘুম তো হয়তো সঙ্গী হয়ে দেখা দেবে আরও অনেক রাতের পর রাত, কিন্তু এমন স্বাপ্নিক ইন্দ্রজালের চাদরে ঢাকা লিথুয়ানিয়ার গ্রামীণ পরিবেশের দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ এ জীবনে আবার দ্বিতীয়বার মিলবে কি? ঘুমকে তাই সেবারের মত বিদায় জানিয়ে মন্ত্র-মুগ্ধের মত আমি যেন বাইরের সেই দৃশ্য গিলতে লাগলাম।

[justify]
[justify]ছবি। লিথুয়ানিয়ার পথে

ওয়ারশ থেকে আমি চলেছি লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনুসের পথে, ইংরেজি হরফে ‘Vilnius’ হলেও স্থানীয়রা শহরটিকে ডাকে ভিলনুস বলেই। দু’লেনের মসৃণ পিচঢালা পথ। পোল্যান্ড পেরিয়ে কখন যে লিথুয়ানিয়ায় ঢুকে পরেছি টেরও পাইনি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ঢোকার পর বালটিক দেশগুলো নিজেদের মাঝকার ইমিগ্রেশন, সীমান্ত-প্রহরী এসবের ল্যাঠা চুকিয়ে দিয়েছে বেশ কিছুকাল আগেই। আমার ঠিক পেছনের সারিতে বসেছে আমিশা আর এনা। লাটভিয়ার মেয়ে এনা কি এক চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত সম্মেলনে যোগ দিয়ে পোল্যান্ড থেকে ফিরে যাচ্ছে নিজ দেশে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমিশা এসেছে নিউজিল্যান্ড থেকে, বান্ধবী আলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে গ্রীষ্মের ছুটিতে ইউরোপ ঘুরে দেখতে। তাদের পেছনের সারিতে এক ব্রিটিশ বুড়ো আর তার বন্ধু, তাদের গন্তব্য বেলারুশের মিন্সক শহর। মিন্সকে তখন চলছে আন্তর্জাতিক হকি চ্যাম্পিয়নশিপ। সত্য-মিথ্যা জানিনা, বেলারুশ নাকি সে সময়টাতে খেলার টিকেট দেখাতে পারলেই সবাইকে ঢুকতে দিচ্ছে কোন রকম ভিসা ছাড়াই। পূর্ব ইউরোপের মানুষরা হকি-পাগল জানতাম, কিন্তু ব্রিটিশরাও যে হকি-পাগল হতে পারে জানা ছিলনা। বুড়ো যে শুধু হকি-পাগল তাই নয়, কথা-পাগলও বটে। সাতসকালে ঘুম থেকে জেগেই বুড়ো যেচে পরে আলাপ জমাল এনার সাথে, আর এনার গলার পর্দা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি চড়া হওয়ায় কিছুক্ষণের মাঝেই আমার অনুভূত হল যেন বসে আছি কোন পানশালায়। অন্য সময়ে হলে হয়তো আমিও সন্তুষ্টচিত্তে যোগ দিতাম ওদের আড্ডায়, কিন্তু সেদিনের সেই অপূর্ব আলোয় ভরা প্রত্যুষ কোনোভাবেই চোখের বাইরের ক্যানভাসে রাখার ইচ্ছে হলনা। উঠে গিয়ে তাই বসলাম সামনের দিকের এক খালি আসনে, আর মাঝে মাঝে ক্যামেরায় জমা করে রাখলাম পথের কিছু অবিস্মরণীয় স্মৃতি।

এক কাকডাকা ভোরে আমরা পৌছুলাম কউনাস শহরে। কউনাস লিথুয়ানিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, যদিও আকারের দিক দিয়ে শহরটি বাংলাদেশের কোন এক উপজেলা শহরের মতই। শনিবারের ছুটির দিনের ভোর, রাস্তাঘাট মোটামুটি জনশূন্য, মাঝে মাঝে শুধু চোখে পড়লো বাজারের থলে হাতে শহরের কিছু বাসিন্দাদের। শহরটি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ নয় তেমন, কিন্তু তাই বলে অপরিছন্ন নয় মোটেও। প্রধান বাস স্টেশনে যেখানে আমাদের বাস থামল, সেখানকার বিশাল ছাউনির নিচে চোখে পরল জুবুথুবু হয়ে বসে থাকা এক খুড়িমাকে। নিজের জীর্ণ থলেটাকে সম্বল করে যিনি অপেক্ষায় আছেন পরের কোন এক বাস ধরবার আশায়। কউনাস থেকে বেরিয়ে ডান দিকের রাস্তা ধরলেই ভিলনুস, আর যদি কেউ ভুল করে ধরে বসে বা’দিকের রাস্তা তবে আর রক্ষে নেই। সোজা গিয়ে পরতে হবে মুখ-গোমড়া কোন এক রাশান সৈনিকের সম্মুখে। কারণ এ পথের শেষেই যে আছে কালিনিনগ্রাদ শহর, পোল্যান্ড আর লিথুয়ানিয়ার কোলের কাছে রাশিয়ার এক ছিটমহল হয়ে এ শহরটি আজ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী দু’দেশের কাছেই। ঘুম ঘুম ভোর হলেও, ঘুম চোখে ভুল না করে আমাদের চালক ডানদিকের সঠিক পথ ধরেই এগুলো ভিলনুসের দিকে।

[justify]
[justify]ছবি। কউনাস শহরে সোভিয়েত সময়ে নির্মিত আবাসন

ম্যাপ দেখে আগেই জেনেছিলাম ভিলনুস শহরে আমার নামার কথা প্যানরমা নামক এক স্থানে, যা কিন্তু ভিলনুসের আদি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। যেটা জানা ছিলনা তা হল বাসটি এই কেন্দ্রস্থলে যাবার আগেই থামে শহরের উপকণ্ঠের এক বিশাল বিপণি-বিতানের পাশে, পাকেচক্রে সেই বিপণি বিতানের নামও প্যানরমা। সেখানে বাস থামতেই সেই ব্রিটিশ বুড়ো হুলোড় শুরু করল “ওহে ভায়া নামো নামো, তোমার তো এখানেই নামবার কথা”। কিছুটা সন্দেহ থাকলেও বুড়োর কথায় গেলাম পুরো বিভ্রান্ত হয়ে। বাসটা চোখের সামনে দিয়ে চলে যাবার পর মনে হল কিছু একটা ভুল হয়ে গেল। কি ভুল সেটা টের পেলাম অল্প পরেই। পথের একজনকে থামিয়ে হোটেলের ঠিকানা জিজ্ঞাসা করতে সে জানাল, “আরে তুমি তো এসেছ ভুল জায়গায়, তোমাকে তো যেতে হবে নদীর ওপারে, এই ভোরে তো কোন বাসও পাবেনা, ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাও”। অগত্যা কি আর করা? সেই বুড়োকে শাপ-শাপান্ত করতে করতে ট্যাক্সির খোঁজে মন দিলাম।

“তোমার চেক-ইন তো বেলা একটায়, তুমি বাছা একটু বেশি আগেই চলে এসেছ মনে হয়”, ষাটোর্ধ ম্যানেজার ভদ্রমহিলা স্মিত হেসে জানালেন।“তবে এসেছ যখন এত দূর থেকে, দেখি তোমার জন্য কিছু করতে পারি কি না”। কোথায় যেন পড়েছিলাম সোভিয়েত দেশের প্রবীণরা নাকি ততটা সাহায্যপ্রবণ নয়, সে কথাকে ভুল প্রমাণ করার জন্যেই যেন ভদ্রমহিলা ঠিক দশ মিনিটের মাঝেই উপস্থিত হলেন রুমের চাবি হাতে, “তোমার জন্যে একটা রুমের ব্যবস্থা করতে পেরেছি, যাও গিয়ে বিশ্রাম নাও”।

বিশ্রাম? বেড়াতে বেরিয়ে যদি বিশ্রামই নেবো তবে তো আজ এই সকালে থাকতে পারতাম হাজার মাইল দূরের নিজ ঘরে। পথের ক্লান্তিকে তাই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে নিচে নেমে এলাম বাইরে বেরুবো বলে। কিন্তু বেরুবো বললেই তো আর হয়না, হটাৎ মনে হোল এদেশে তো ইউরো-ডলার কিছুই চলেনা, স্থানীয় মুদ্রার নাম লিট, ওটাই এদেশের প্রধান সম্বল। এখন উপায়? হোটেলের ভদ্রমহিলা জানালেন, “আজ তো শনিবার, তেমন কিছুই খোলা পাবেনা, তবে মাইল দু’য়েক দূরের বিপণি-বিতানে হয়তো পেতে পারো কোন মুদ্রা বিনিময়ের দোকান। তাই সই। হাঁটা ধরলাম সেই দু-মাইল পথের পানে। কিন্তু ভদ্রমহিলার দু’মাইল যে আসলে আমার পাঁচ মাইল, সেটা টের পেলাম খানিক পরেই। পথের এক বাঁকে দাঁড়িয়ে আরও সামনে এগুবো না পেছনে যাব ভাবছি, এমন সময় যেন ত্রাতা জগদ্ধাত্রির মতো উদয় হোল এক লিথুয়ানিয়ান তরুণী। “তুমি কি কিছু খুঁজছ?” “না ইয়ে মানে তোমাদের এখানকার বড় বিপণি-বিতানটা খুঁজছিলাম”। “সেতো এখান থেকে বেশ খানিকটা পথ, তুমি কি হেঁটেই যাবে বলে ভাবছ?” নিজের আসল সমস্যাটা আর ওকে না বলে পারলাম না। “আমাকে যে সেখানে যেতে হবেই। তোমাদের এই শহর দেখতে এসেছি সেই বহু দূর থেকে। কিন্তু এখন যদি তোমাদের স্থানীয় মুদ্রা পকেটে না পুরি, তবে আমার সেই দর্শনের আশা তো গুড়ে-বালি”। তরুণীর মুখে হাসি ফুটল আমার কথায়, “ও আচ্ছা এই কথা? তুমি যে পথ ধরে এসেছ সে পথের শেষেই কিন্তু আছে এক ব্যাঙ্ক, শনিবারে আধ-বেলা খোলা থাকার কথা ওটার। আমিও যাচ্ছি ও পথেই সপ্তাহান্তের বাজার-সদাই করতে। চলো তোমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাই”। পথ চিনে ব্যাঙ্কে তো পৌঁছুলামই, পথের টুকিটাকি কথায় সেরে ফেললাম পরিচয়পর্বটাও। জানা হল পথের সেই বন্ধুর নাম লাউরি, ভিলনুস বিশ্ববিদ্যালয়েই সমাজ-বিজ্ঞানে পি-এইচ-ডি শেষবর্ষের ছাত্রী। সেই সুদূর বাংলাদেশের ছেলে হয়ে পূর্ব-ইউরোপে ভ্রমণে বেড়িয়েছি শুনে ওর যেন বিস্ময়ের শেষ নেই। আমাকে ব্যাঙ্ক থেকে বাস ধরবার পথ চিনিয়ে দিয়ে বিদায় নেবার পালায় লাউরি মিষ্টি হেসে করমর্দন করে বলল, “আশা করি লিথুয়ানিয়া তোমার ভাল লাগবে”। আমিও আমার কৃতজ্ঞতার অন্তরঙ্গ হাসি ফিরিয়ে দিয়ে বললাম, “যে দেশে তোমার মতো সুহাসিনী পরোপকারী নারীরা থাকে সে দেশ কি আমার ভালো না লেগে পারে?”।

[justify]

"হে বিদেশী ফুল, যবে আমি পুছিলাম—
‘কী তোমার নাম’,
হাসিয়া দুলালে মাথা, বুঝিলাম তরে
নামেতে কী হবে।
আর কিছু নয়,
হাসিতে তোমার পরিচয়।"--পূরবী, রবীন্দ্রনাথ

পকেটে নগদ-নারায়ণ ঢোকার পর বেরিয়ে পড়লাম বাসের সন্ধানে। খুব বেশি দূর যেতে হলনা, ব্যাঙ্কের ঠিক সামনেই এক বিশাল চত্বর মতো জায়গা, যেখানে এসে থামছে শহরের প্রতিটি আনাচে-কানাচে যাবার বাস। আসলে বাস না বলে ট্রলিবাস বলাই বোধ হয় সঙ্গত। ভিলনুসের কোথাও আমার গ্যাস বা পেট্রোল চালিত কোন জনপরিবহন চোখে পড়েনি ট্যাক্সি বাদে। সর্বত্রই বিদ্যুৎ চালিত ট্রলিবাস কিংবা ট্রাম, শহরকে দূষণমুক্ত রাখার কি নিদারুণ প্রয়াস। ট্রলিবাসগুলো সেই সোভিয়েত সময়ের মনে হলেও ঠিক ততটা লক্কড়-ঝক্কর মার্কা নয়। একই সাদায় লাল ডোরাকাটা বাস চোখে পরেছিল বুদাপেস্ট আর স্লোভাকিয়ায়, সোভিয়েত দেশগুলোতে কি বাসের রঙের ক্ষেত্রেও সাম্যবাদ মেনে চলা হতো? হবে হয়তো। লাউরির বাতলে দেয়া চৌদ্দ নম্বর বাস ধরে সোজা পৌঁছে গেলাম কে-জি-বি জাদুঘরে। সেই জাদুঘর ভবনটি সোভিয়েত সময়ের পুরোটাকাল জুড়েই ব্যাবহৃত হয়েছিল কে-জি-বির লিথুয়ানিয়ান শাখার সদর-দপ্তর হিসেবে। গুপ্তহত্যা, নির্যাতন, আড়িপাতা তথা কে-জি-বির সকল কুকর্মের ঘাটি ছিল এই তিনতলা বিশাল ভবনটি। লিথুয়ানিয়া স্বাধীন হবার অব্যবহিত পরেই সেই ভবনটি রুপান্তরিত করা হয় জাদুঘরে। সেই জাদুঘর আর আনুসাঙ্গিক ইতিহাস নিয়ে ইচ্ছে রইলো পুরো একটি পৃথক লেখা লিখার। জাদুঘরে প্রায় দু’ঘণ্টা সময় কাটানোর পর ঠিক করলাম শহরের অন্য প্রান্তে অবস্থিত টিভি ভবনটি ঘুরে আসবো।

ভিলনুস শহরটির ঠিক মাঝ দিয়ে শান্ত নীল এক সাপের মতো এঁকে-বেকে বয়ে গেছে নেরিস নদী। নদীর দখিন প্রান্তে হল আদি ভিলনুস, আর উত্তর প্রান্তে হল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর গড়ে ওঠা নতুন ভিলনুস। ভিলনুস শহরেরে দু’প্রান্ত উত্তর আর দক্ষিণ, এর মাঝে পার্থক্যটা চোখে পড়বার মতো। নদী পেরিয়ে উত্তরের পথ ধরলে কেবলই চোখে পরে সোভিয়েত সময়ে নির্মিত সারি সারি দৃষ্টিকটু ভবন। সোভিয়েত সরকারের আবাসন নীতি অনুযায়ী ক্রুশ্চেভের সময় থেকে যেগুলো নির্মিত হতে থাকে পুরো সোভিয়েত ইউনিয়ন জুড়ে, বিশেষত শহরাঞ্চলগুলোতে। এই ভবনগুলো হয়তো সে সময়ের জন্যে যুগোপযোগী হলেও আজ যেন সেগুলো বড্ড বেমানান। শুধু তাই নয়, সেই ষাট, সত্তর কিংবা আশির দশকে সেই ভবনগুলো নির্মিত হলেও পরিবার প্রতি বসবাসের আয়তন কিন্তু ছিল খুবই কম। শহরের উত্তরে এসে বাস থেকে নেমে পলেস্তারা-খসা রঙচটা এমনি বেশ কিছু ভবনকে পেছনে ফেলে ছায়ায় ভরা এক বসতির মাঝের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে এসে পৌঁছুলাম টিভি ভবনের দ্বারপ্রান্তে।

টিভি ভবনে ঢুকতেই চোখে পরে এক সাদামাটা স্মৃতিফলক। ৯১’এর ১৩ই জানুয়ারি এই টিভি ভবনের প্রাঙ্গণে প্রাণ দেয়া শহীদদের উদ্দেশে যা নির্মিত। মৃত্যুকে পরোয়া না করে সেদিন এই অকুতোভয় মানুষগুলো সরাসরি এগিয়ে গিয়েছিলো রাশান ট্যাঙ্কের সম্মুখে। ৯০’এর মাঝামাঝি সময়ে যখন রাশিয়ায় গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষের আন্দোলন তুঙ্গে, সে সময়টাতেই লিথুয়ানিয়া দুম করে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসে। ওদিকে তখন নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত থাকলেও লিথুয়ানিয়ার আলাদা হবার ব্যাপারটা রাশিয়ার পক্ষে হজম করাটা ছিল একটু কষ্টকর। বিশেষ করে কে-জি-বির ডানপন্থী অংশ গরবাচেভের উপর চাপ তৈরি করল কোনভাবেই লিথুয়ানিয়ার স্বাধীনতা মেনে না নেবার জন্য। ব্যাপারটার চূড়ান্ত রূপ দাড়ায় ৯১’এর জানুয়ারির প্রথমার্ধে, যখন গরবাচেভের চরমপত্র পৌছায় লিথুয়ানিয়ায়, ‘হয় রাশান ফেডারেশনের সংবিধান মেনে নিয়ে নিজেদের সংবিধান বাতিল করো নতুবা তৈরি হও চূড়ান্ত পরিণতির জন্যে’। এই চরমপত্র লিথুয়ানিয়ায় পৌছুতে না পৌছুতেই লিথুয়ানিয়ার আকাশ ছেয়ে যায় রাশান ছত্রী সেনাদের সাদা প্যারাসুটে। স্বাধীনতাকামী মুক্তি-পাগল জনতা বুঝে গেলো এবারের সংগ্রামটা তাদের স্বাধীনতারই সংগ্রাম। রাশান সেনারা প্রথমেই দখল নেবার চেষ্টা করলো গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ভবনগুলোর। নিরস্ত্র জনতাও বসে রইল না, জানুয়ারি মাসের তীব্র হুল ফোটানো শীত অগ্রাহ্য করে সারা ভিলনুসের মানুষ জড়ো হল রাষ্ট্রীয় সব ভবনগুলোর চারপাশে। যদি দখল করতেই হয়, তবে তাদের খতম করে তবেই দখল করতে হবে। সেদিনের সেই গোলযোগে হতাহতের দায়ভার অবশ্য গরবাচেভ এড়িয়ে গেছে পরবর্তীতে পুরোপুরি। ধারণা করা হয় কে-জি-বির সেই চরম ডানপন্থী অংশের প্ররোচনাতেই সেদিন রাশান সৈন্যদের বুলেট ছুটে যায় স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র সাধারণ মানুষদের দিকে। যদিও জনদাবির কাছে মাথা নত করে পিছু হটতে বাধ্য হয় তারা এক সময়, কিন্তু এর মাঝেই ঝরে যায় তেরটি প্রাণ। লিথুয়ানিয়ার মানুষদের কাছে এই টিভি ভবনটি তাই নিছক ভ্রমণের স্থানই নয়, এটির সাথে তাদের অন্য রকম এক আবেগ জড়িত।

[justify]
[justify]ছবি। টিভি ভবন

টিভি ভবনটি আকারে অনেকটা একটা মিনারের মতো। দর্শনার্থীদের জন্যে নিচতলায় টিকেট কেটে ব্যবস্থা আছে সরাসরি চুড়োয় পৌঁছে যাবার। যেখানে আরও আছে ঘূর্ণায়মান এক রেস্তোরাঁ। সে রেস্তোরাঁয় না খেলেও সেখানকার পর্যবেক্ষণ ডেকগুলোতে বসা যাবেনা তা নয়, তবে এতো দূরে এসে আকাশের কাছাকাছি এই রেস্তোরাঁয় লিথুয়ানিয়ার সুস্বাদু সব খাবার ভক্ষণ করতে করতে দূরের দিগন্তরেখা দেখার লোভ কেই বা সামলাতে পারে? নাহ, সে লোভ আমিও সামলাতে পারলাম না। খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে বসে দেখতে লাগলাম ভিলনুস শহরেরে সীমারেখা। যেন বসে দেখছি বায়স্কোপের কোন ছবি, কখনো ভেসে উঠল উত্তরের কংক্রিট অরণ্য আবার কখনো বা দখিনের লাল পাথুরে দুর্গ। পরিবেশনকারী যখন খাবার নিয়ে এলো, তার মাঝেই আমার একবার গোটা ভিলনুস দর্শন হয়ে গেলো।

[justify]
[justify]ছবি। টিভি ভবনের রেস্তোরাঁ থেকে দেখা ভিলনুসের দিগন্তরেখা

“সবারই ভুল করবার অধিকার থাকবে, ভালোবাসার অধিকার থাকবে, অসুখী হবার অধিকার থাকবে, সুখী হবার অধিকারও থাকবে, থাকবে নদীর পাড় ধরে হেঁটে যাবার অধিকার...” না কোন কবিতার লাইন নয়, বরং এ হল উযুপিস নামক এক অঞ্চলের সংবিধানের ভাষা। এমনতর সংবিধান পড়ে আমার তো আক্কেলগুড়ুম হবার দশা, পুরোটাই খেয়ালি খ্যাপাটে লোকদের জায়গা নাকি? পূর্বপশ্চিমে বয়ে গেছে যে নেলিস নদী, তারই এক সরু ধারা ‘ভিলনি’ নাম ধরে দখিনে বয়ে গেছে ভিলনুস শহরের পূব প্রান্তে। ‘ভিলনি’কে ঠিক নদী না বলে হয়তো হয়তো শীর্ণ ধারার এক খাল বলাই উত্তম। নদীর উপরকার এক ছোটো-খাটো লোহার পুল পেরিয়ে পূর্ব পাড়ে গেলেই উযুপিস। সংবিধান থাকলেও উযুপিস কিন্তু কোন দেশ, রাজ্য বা আলাদা শহর নয়, বরং একে বড়সড় এক মহল্লা বলা যেতে পারে। অনেকটা যেন মজা করেই এই মহল্লার খেয়ালী বাসিন্দারা একদিন রচনা করে বসলো নিজেদের সংবিধান, এমনকি ঠিক করে বসলো নিজেদের রাষ্ট্রপতিও। সেই থেকে দিকে দিকে রটে যায় মজার এই পাড়াটির কথা, দল বেধে মানুষ ঘুরতে এসে বলা শুরু করে নাও এলাম তোমাদের দেশে, এবার আমার পাসপোর্টে লাগাও দেখি তোমাদের সিল-ছাপ্পড়। তাতে আরও মজা পেয়ে পাড়ার একমাত্র ছোটো পোস্ট-অফিসটিও এক সময় নবাগতদের পাসপোর্টে কাল্পনিক ভিসার সিল লাগানো শুরু করে। আমি অবশ্য বেশ খানিকটা খুজেও সেই পোস্ট-অফিসটি খুঁজে বের করতে পারলাম না, তাই এ যাত্রা আর উযুপিসের ভিসা পাওয়া হলনা। এ পাড়ার এক অন্য রকম আকর্ষণ থাকায় এখানকার রেস্তরাঁগুলোর খাবারের দামও কিছুটা বেশি। তবে হাতে যদি কিছুটা সময় থাকেই তবে দামের কথা না ভেবে বসে পরা যায় ভিলনি নদীর পারের সেই রেস্তোরাঁগুলোর কোন এক ব্যাল্কনিতে। ঢিলে-ঢালা কোন এক বিকেলে সোনালি রোদ্দুর গায়ে মেখে আর হাতে এক গ্লাস সোনালি তরল নিয়ে যেখানে কাটিয়ে দেয়া যায় পুরোটা বিকেল, বিকেলটাকে আরও মায়াময় করার জন্যে হয়তো সাথেই থাকবে শীর্ণ-কায়া ভিলনি নদীর ছল-ছল শব্দ আর তার মাঝে প্রতি ঘণ্টায় অদূরের গির্জা থেকে ভেসে আসা ঘণ্টাধ্বনি।

[justify]
[justify]ছবি। উযুপিসে স্বাগতম

[justify]
[justify]ছবি। উযুপিসের এক সাধারণ গলি

উযুপিস থেকে বের হয়ে চললাম লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে। রাষ্ট্রপতি ভবনটি ভিলনুসের পুরনো শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, তবে ভবনটিতে যাবার রাস্তা চওড়া নয় তেমন, কোনভাবে দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে বহুকালের পুরনো ইট বিছানো সেই পথটি ধরে। সেখানে যাবার পথেই দেখতে পেলাম ছোটোখাটো এক চত্বরে বসেছে শনিবারের হাট। হাটের বিক্রেতারা প্রায় সবাই আশেপাশের শহরের মহিলা, বিক্রির জন্যে তারা নিয়ে এসেছে হাতে বানানো উলের মোজা, টেবিল ক্লথ, ফারের কোট, আরও কত কি। দরাদরি করে ৩০ লিটের বিনিময়ে আমিও বগলদাবা করে ফেললাম এক জোড়া বাহারি উলের মোজা। হাট পেরিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে যেতেই কোথা থেকে যেন ভেসে এলো বাদ্য-বাজনার শব্দ। খেয়াল করে দেখলাম এক দল লোক বাদ্য বাজিয়ে বেশ উৎসবের আমেজে চলেছে রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে। এদের কারও কারও হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লিথুয়ানিয়ান ভাষায় কি কি যেন লেখা। আমি ভাবলাম হয়তো হবে কোন জাতীয় দিবস সেদিন, নয়তো এতো বাদ্য বাজিয়ে এতো আনন্দ-সহকারে শোভাযাত্রার মানে কি? কৌতূহল চাপতে না পেরে শোভাযাত্রায় থাকা একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আজ তোমাদের কোনও দিবস বুঝি? তা কি লেখা আছে তোমার হাতের ওই প্ল্যাকার্ডে?”। জবাবে ও যা বলল, বাংলাদেশের এক মানুষ হিসেবে তা গলাধঃকরণ করা আমার জন্যে একটু শক্ত ছিল বৈকি। ও বলল, “আরে না না, কোনও দিবস-টিবস নয়, আমরা হলাম লিথুয়ানিয়ার বিরোধী দল। সরকারের সাম্প্রতিক এক কর বর্ধিতকরণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছি আমরা। আমাদের কথা হল করের অপর নাম জনহন্তাকারি”। বিরোধী দল? আর এই হল তাদের প্রতিবাদের ভাষা? মনে মনে ভাবলাম, বিরোধী দল তো দূরের কথা, সরকারী দলের উপদল হবার যোগ্যতাও তোমাদের আছে কিনা সন্দেহ। যদি দু’চারটে বাসে আগুন না দাও, জ্বালাও পোরাও না করো, গাড়ির কাঁচ না ভাঙো, তবে তোমরা কেমন বিরোধী দল হে? তোমাদের ঘুরে আসা উচিৎ আমার দেশে, সেখানে গেলেই দেখতে পাবে রাজনীতিবিদদের প্রতিবাদ কেমনতর হতে পারে।

[justify]
[justify]ছবি। কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিরোধী দলের মিছিল

[justify]
[justify]ছবি। কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিরোধী দলের মিছিল

তো সেই আমার চোখের ‘অদ্ভুত’ বিরোধী দল রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে মিনিট পাঁচেক নর্তন-কুর্দন করে চলে যাবার পর ভবনের মূল ফটকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দু’জন স্যুটেড-বুটেড প্রহরী মূল ফটক আগলে আছে অলস ভঙ্গীতে, কিছুটা কুণ্ঠার সাথে তাদের জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা তোমরা কি দর্শনার্থীদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি দাও?”।“কেন নয়? নিশ্চয়ই। শুধু ওই মেটাল ডিটেক্টরের মধ্যে তোমাকে প্রবেশ করতে হবে, এই যা”। আমার তো এদিকে ভিড়মি খাবার জোগাড়, এতটাই সহজ রাষ্ট্রপতি ভবনে ঢোকা? জয়তু লিথুয়ানিয়া। যদিও দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার শুধু ভবনের চত্বর আর সংলগ্ন বাগানের মাঝেই, কিন্তু তাই বা কম কি? ভাগ্য ভালো হলে হয়তো বাগানে ঘোরাঘুরির মাঝেই দোতলার ব্যাল্কনিতে কফি-পানরত রাষ্ট্রপতির সাথে চোখাচোখিও হয়ে যেতে পারে।

[justify]
[justify]ছবি। রাষ্ট্রপতি ভবনের ভেতরের চত্বর

“জেদিমিনাস স্ট্রীট”, লিথুয়ানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট জেদিমিনাসের নামে যে সড়কের নামকরণ। ভিলনুসের প্রধান এই রাজপথটি শুরু হয়েছে শহরের পূর্ব প্রান্তে নেরিস নদীর ঠিক পারেই। কোথাও একবারের জন্যেও বাঁক না নিয়ে এই রাজপথ সোজা গিয়ে শেষ হয়েছে শহরের পশ্চিম প্রান্তে, সে প্রান্তেও নদী এসে ছুঁয়ে গেছে এই রাজপথকে। জেদিমিনাস স্ট্রীটের এই পূর্ব প্রান্তের শুরুতেই হল শ্বেতশুভ্র ক্যাথেড্রাল ব্যাসিলিকা, লিথুয়ানিয়ানদের ব্যাপটিসমের পথে হাঁটার সাক্ষী হয়ে যা দাঁড়িয়ে আছে গত প্রায় দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে বর্তমানের এই ক্যাথেড্রালের স্থানটিতে হাজার বছর ধরেই ছিল ধর্মীয় স্থাপনা, ধারণা করা হয় তেরশ শতকে লিথুয়ানিয়ায় খ্রিষ্ট ধর্ম প্রবেশ করার পূর্বে ঠিক এ স্থানেই ছিল পেগানদের এক মন্দির। তেরশ শতকের সেই সময়েই নির্মিত হয় প্রথম ক্যাথেড্রাল ঠিক এ স্থানেই। তারপর বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বর্তমান ক্যাথেড্রালটির রূপ চূড়ান্ত হয় সতেরশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। ক্যাথেড্রালে প্রবেশ করলে দেখা যায় চূড়োর ছাদে সতেরশো থেকে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝে অঙ্কিত বেশ কিছু অপূর্ব চিত্রকর্ম। ক্যাথেড্রালটি সবার জন্যেই উন্মুক্ত, যদিও ভেতরে ভজনকারীদের চেয়ে আমার মতো পর্যটকই বেশি চোখে পড়লো। সাধারণ ভিলনুসবাসিদের বরং বেশি চোখে পড়লো ক্যাথেড্রালের সামনের খোলা চত্বরে। শনিবারের ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই এসেছে এই খোলা চত্বরে বা তার পাশের ঘন ছায়ায় ভরা পার্কে বসে কিছুটা সময় কাটাতে। চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে আমিও বসে পড়লাম সেই পার্কেরই এক বেঞ্চে। বেঞ্চের অপর প্রান্তে বসেছেন এক পৌঢ়, পরনে বহু বছরের পুরনো রঙচটা এক কোট, হাতে ক্যাম্বিসের ব্যাগ। হয়তোবা আমারই মতো ক্লান্ত হয়ে কিছুটা জিরিয়ে নিচ্ছেন বড় বড় রেইনট্রির ছায়ায় ছাওয়া এই পার্কে। কিছুক্ষণ পর এই পথ ধরে চলা এক বৃদ্ধার সাথে হটাৎ দেখা এই পৌঢ়ের, ভাষা জানা নেই আমার, তবু বুঝলাম বহুকাল বাদে যেন দু’জনের দেখা। বহুক্ষণ কথা হল দু’জনের মাঝে, হয়তোবা বিনিময় হল দু’জনের সুখ-দুঃখের কথকতা। বৃদ্ধা বিদায় নিলেন বৃদ্ধের হাতের মুঠোয় নিজের দূরালাপনি নাম্বার লেখা কাগজ পুরে দিয়ে, যাবার বেলায় বারবার করে বলে গেলেন বৃদ্ধ যেন তাকে না ভোলেন। বৃদ্ধা বিদায় নেবার পর সেই পৌঢ় আরও কিছুক্ষণ বসে রইলেন সেই একই বেঞ্চে, মাঝে মাঝে হাতের মুঠো খুলে দেখলেন বৃদ্ধার পুরে দেয়া সেই কাগজটি, হয়তোবা হারিয়ে গেলেন বহুকালের পুরনো কোনও এক দিনে। আশেপাশের এমনি অনেক জীবনীচিত্রের মাঝে হারিয়ে এক সময় হটাৎ খেয়াল হল বেলা যে বেশ পড়ে এলো। এখানে বসেই যদি সারাটি দিন কাটিয়ে দিই তবে বাকি ভিলনুসটুকু দেখা হবে কি ভাবে? ধীরে ধীরে তাই পা বাড়ালাম পার্কের মাঝের নুড়ি বেছানো পথটি ধরে।

[justify]
[justify]ছবি। ক্যাথেড্রাল বাসিলিকা

[justify]
[justify]ছবি। ক্যাথেড্রাল বাসিলিকা

সেন্ট অ্যানি চার্চটি বেশি দূরে নয় ক্যাথেড্রাল ব্যাসিলিকা থেকে। ক্যাথেড্রালের চত্বর থেকে বেরিয়ে বাঁয়ের রাস্তা পেরিয়ে মাইল খানেক গেলেই চোখে পড়ে লালচে রঙের বিশাল এই চার্চ। পনেরশ শতাব্দীর শেষ দিকে গথিক স্থাপত্যে নির্মিত এই চার্চটি অন্য অনেক ইউরোপিয়ান চার্চ থেকে কেন যেন কিছুটা কিছুটা ব্যতিক্রম মনে হল, পরে আবিষ্কার করলাম এই চার্চটি পুরোটাই নির্মিত পোড়া মাটির ইট দিয়ে। শুধু তাই নয়, চার্চের ভেতর যত শিল্পকর্ম তার সবই ওক কাঠের তৈরি। ক্যাথেড্রালসহ ভিলনুসের সবগুলো প্রধান চার্চেরই সংস্কার করা হয় লিথুয়ানিয়া স্বাধীন হবার পর। সোভিয়েত সময়ে সংস্কার করাতো দূরের কথা, কেউ ঘন ঘন চার্চে যাবারও সাহস করতনা, কে জানে কখন আবার গোপন বাহিনীর লিস্টে নাম উঠে যায় চার্চ-কেন্দ্রিক মানুষ হিসেবে। সেসময়ে চার্চ-সংশ্লিষ্ট সবাইকে বুর্জোয়া হিসেবেই ভাবা হতো। ভিলনুসবাসির ধর্ম চেতনায় চপেটাঘাত করার জন্যেই যেন তারা প্রধান ক্যাথেড্রালটিকে রূপান্তর করে মালামাল মজুদের ভবনে, এমনকি সরিয়ে ফেলা হয় ক্যাথেড্রালের সম্মুখভাগের ছাদে স্থাপিত তিন সন্তের মূর্তি।

[justify]
[justify]ছবি। লিথুয়ানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট জেদিমিনাস

[justify]
[justify]ছবি। সেন্ট অ্যানি চার্চ

[justify]
[justify]ছবি। সেন্ট অ্যানি চার্চের ভেতরকার ওক কাঠের শিল্পকর্ম

একটি দেশের রাজধানী দেখেই পুরো দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা নেয়াটা কতটা যৌক্তিক তা জানা নেই আমার, তবে লিথুয়ানিয়ার অর্থনৈতিক চাকা যে সবেগে চলছে তা ভিলনুসে এসে কিছুটা হলেও আঁচ করা যায়। ভিলনুসের রাস্তায় আমার তেমন চোখে পরেইনি বলা চলে পুরনো আমলের কোনও ব্যক্তিগত গাড়ি। ঝকঝকে মার্সিডিজ, বি-এম-ডব্লু দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভিলনুসের পথগুলো। হটাৎ নামানো গাড়ির কাঁচের ভেতর থেকে ছিটকে আসা একন, বিয়নসে আর লেডিগাগাদের গান শুনে বোঝা দায় দেশটি যে প্রায় পঞ্চাশ বছর সোভিয়েত শাসনে ছিল এবং রাশান ছিল প্রধান ভাষা। তথ্যপ্রযুক্তিতেও লিথুয়ানিয়া এগিয়ে গেছে ইর্ষনীয়ভাবে। ভিলনুসের আনাচে-কানাচে টং ঘরের মতো যে দোকানগুলো, স্থানীয়রা যাকে বলে কিওস্ক, সেগুলোর প্রায় সবকটিতেই গ্রহণ করা হয় মোটামুটি সব কোম্পানির ক্রেডিট কার্ড। ভিলনুসের এক সাদামাটা পাড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলাম পরবর্তী বাসের জন্যে, মনে মনে ভাবছিলাম কিভাবে জানবো পরের বাস কখন এসে পৌঁছুবে? পেছনেই তাকিয়ে আবিষ্কার করলাম ছোট্ট এক ডিসপ্লেতে দেখাচ্ছে পরের বাসগুলো কোনটি কখন এসে দাঁড়াবে। আমেরিকায় শহরের ভেতর কোন বাসস্টপেই আমার আজ পর্যন্ত এমন সুবিধাজনক ডিসপ্লে চোখে পরেনি। গোটা ভিলনুসের পথ-ঘাট বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মনে হোল। মূলত লিথুয়ানিয়া বেশ জোরেশোরে বদলে যেতে শুরু করে নব্বই এর দশকের শেষভাগ থেকেই। ২০০৪’এ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগদানের পর দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ আরও সুগম হয়। অর্থনীতির ক্ষেত্রে নেয়া বেশ কিছু উদার নীতি, তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নয়ন, দুর্নীতি দমন- এসবের ফলেই লিথুয়ানিয়ার অর্থনীতি আজ বালটিক দেশগুলোর মাঝে সর্ববৃহৎ। ও হ্যাঁ , আরও একটি কথা কিন্তু না বললেই নয়, ইন্টারনেট আপলোড স্পীডের দিক থেকে কিন্তু লিথুয়ানিয়ার অবস্থান আজ পৃথিবীতে দ্বিতীয়। সব মিলিয়ে বলা যায় সমজাতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসার পর লিথুয়ানিয়া ছিটকে পরেনি, বরং নিজের অবস্থানকে করেছে সুসংহত।

[justify]
[justify]ছবি। ভিলনুসের এক সাধারণ পাড়া

আমার কাছে কোন এক নতুন শহর কেবলি তার দর্শনীয় স্থানগুলোর মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, নতুন কোন শহরকে আমি আবিষ্কার করার চেষ্টা করি সে শহরের সকালের অফিসমুখী মানুষ, গলি-তস্যগলি, সড়কের মাথায় বিবর্ণ নামফলক, সবজি-বাজারের কোলাহল, রুটির দোকানের ব্যাস্ত দোকানি, জানালার কার্নিশে সযত্নে বেড়ে ওঠা ফুলের টবে জল দেয়া সুখী গৃহবাসী, মাঝ-দুপুরে এপাড়া ওপাড়ায় ঘুরে বেড়ানো কিশোর-কিশোরী এমনি অনেক খণ্ডচিত্রের মধ্য দিয়ে। ভিলনুসের পদার্পণের দ্বিতীয় দিনে ঠিক করলাম আজ আমি হারিয়ে যাব অজানা এই শহরটিতে, তাতে যদি দু’একটি দর্শনীয় স্থান বাদও পরে ক্ষতি নেই। পর্যটক ম্যাপটাকে সযত্নে পকেটে ভাঁজ করে রেখে মনকে বললাম আজ বরং তুমিই হও আমার ম্যাপ। মনও ওমনি জবাব দিয়ে বলল, “তবে তাই হোক। আপাতত ওই যে দেখছ দু’রাস্তার মাঝের ছোটো পার্কটিতে এক ছোকরা আয়েসি ভঙ্গিতে চুরুট ফুঁকছে, তার পাশের ওই সরু গলি ধরে হাঁটতে থাক। শুধু হেঁটোই না খেয়াল করে দেখ পাশের ওই ‘ভিসু ভেন্তুয়ু’ স্ট্রীটের ওপর দাঁড়ানো মলিন চেহারার বাড়ির দেয়াল”। আরে তাই তো, দেয়াল মলিন বটে, কিন্তু জানালার ফাঁকে ফাঁকে ওই ছবিগুলো কার আঁকা? এক সময়ে হয়তো ছিল কোন জানালা, তার পর হয়তো কোন কারণে জানালা গেছে খুলে, আর তক্ষুনি কোন শিল্পী হয়তো ভেবেছিলো ফাঁকা ফোকরগুলো বরং বন্ধ হোক আমার আঁকা ছবি দিয়ে।

[justify]
[justify]ছবি। জীর্ণ দেয়ালের ফাঁকে চিত্রকর্ম

এরপর ঘুরতে ঘুরতে চলে এলাম এক চার্চ পাড়ায়। ডানে বাইজেনটাইন স্থাপত্তে নির্মিত হোলি ট্রিনিটি চার্চ, আর বাঁয়ের সৌখিন সামগ্রীর দোকানের কাঁচের পেছনে থাকা অ্যাম্বারের অপূর্ব কারুকাজ খচিত হরেক রকমের সুভ্যেনির। ডানের চেয়ে বাঁয়ের আকর্ষণটাই বেশি বলে অনুভূত হল, কিন্তু বিধি বাম, সেই সাত সকালে তখনো মনে হয় দোকানির ঘুম ভাঙেনি। ওদিকে মিসেরিকরদিয়া চার্চে ততোক্ষণে শুরু হয়ে গেছে সকালের আরতি। এই চার্চটি কিন্তু পথের ডানেও নয়, বাঁয়েও নয়, বরং পথটিই চলে গেছে চার্চ ভেদ করে। চলার সময় তাই চোখে পরে যীশুর চরণে সকালের আরতি, পথের পথিকদের অবশ্য উপরের আরতি নিয়ে তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই, তারা ছুটে চলেছে তাদের মতো।

[justify]
[justify]ছবি। মিসেরিকরদিয়া চার্চে সকালের আরতি

পরের সড়কের ভবনগুলোতে নানা দেশের পতাকা দেখে বুঝে গেলাম এ নিশ্চয়ই দূতাবাসপাড়া। কিন্তু দূতাবাস মানে তো বিশাল পাঁচিল, অস্ত্র হাতে সদা-সতর্ক প্রহরী। এ পাড়ায় তো দেখি দূতাবাসের নিচেই রাজ্যের কফি-শপ, তবে কি ভুল ভাবলাম?। এবার চলে এলাম জেদিমিনাস স্ট্রীটে, এখানে দেখা হল কষ্টি পাথরে গড়া এক মায়ের সাথে। অনন্তকাল ধরে এই মা একই ভাবে একই আশায় বুক বেধে বসে আছেন তার হারিয়ে যাওয়া ছেলের আশায়, তিনি শুধু জানেন ছেলে সাইবেরিয়ার শ্রমশিবিরে, চিঠি পাননা আজ বহুকাল, তবু সংগ্রামী এই মা ছেলের অপেক্ষায় থাকেন প্রতিটি বিকেল, প্রতিটি মাস, প্রতিটি বসন্ত। বসন্তের টিউলিপগুলো ঝরে গিয়ে এক সময় বরফের সাদা চাঁদরে ঢেকে যায় চারদিক, দীর্ঘ সেই শীতও একসময় শেষ হয়, আবারো সবুজ পল্লব উঁকি দেয় বরফের কুঁচি ভেদ করে, ওদিকে মায়ের বানানো আপেলের জ্যাম তেমনি পরে থাকে, তবু ছেলে তো ফেরেনা।

[justify]
[justify]ছবি। অনন্তকাল ছেলের অপেক্ষায় থাকা এক লিথুয়ানিয়ান মা

পুরনো ভিলনুসে দাঁড়িয়ে কেউ যদি দিক হারিয়ে ফেলে তবে বিচলিত হবার কিছু নেই, কারণ পুরো পুরনো ভিলনুস থেকে একটি জায়গা স্পষ্ট চোখে পড়ে যা দেখে ঠিক বোঝা যায় নিজের অবস্থান, সে স্থানটি হল এক সুউচ্চ পাহাড়ের উপর অবস্থিত ভিলনুস দুর্গ। দুর্গটির ইতিহাস সুদীর্ঘ, বহুবার আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের সাক্ষী হয়ে আজও এর সুউচ্চ শিখরে উড়িয়ে চলেছে লিথুয়ানিয়ার পতাকা। আমার দ্বিতীয় দিনের পদব্রজ শেষ হল এই দুর্গ-দর্শণের মধ্য দিয়েই। দুর্গের পাশেই রাজপ্রাসাদের বর্ধিত অংশে লিথুয়ানিয়ার জাতীয় জাদুঘর, কিন্তু সেখানে কি আর এ বেলা যাওয়া হবে? সময়ের যে বড্ড অভাব। বিকেলের বাসেই ফিরে যেতে হবে ভালোলাগা এই শহরটি ছেড়ে।

[justify]
[justify]ছবি। ভিলনুস দুর্গ থেকে দেখা ভিলনুস প্রাসাদের একাংশ

[justify]
[justify]ছবি। লিথুয়ানিয়ান জাতীয় জাদুঘর

জীবনযুদ্ধ

ছবি: 
01/06/2007 - 1:46পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

সত্যপীর এর ছবি

পরোপকারী নারীদের দেখে মন্টাই ভালো হয়ে গেল চলুক

লেইখ্যা ফাডায়ালান। তারেকাণুরে ভাতে মারা চাই। কিল হিম বাই রাইস।

..................................................................
#Banshibir.

মেঘলা মানুষ এর ছবি

কিল হিম বাই রাইস, গম এ্যান্ড ভুট্টা দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা পীরদা, নাহ তেমন সাহস হয়না, সেই লোকরে ভাত কেন ডাল সবজিতে ও মারা বড় কঠিন
জীবনযুদ্ধ

তিথীডোর এর ছবি

লেইখ্যা ফাডায়ালান। তারেকাণুরে ভাতে মারা চাই। কিল হিম বাই রাইস।

হো হো হো

অণুমিয়া এখন থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া-লাওস সফরে আছেন, নয়া পোস্ট এই এলো বলে। খাইছে

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

দীনহিন এর ছবি

চলুক

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

আমিন মুহাম্মাদ

রায়হান আবীর এর ছবি

চলুক

এক লহমা এর ছবি

বা:! যেমন সুন্দর লেখা, তেমন সুন্দর আলোকচিত্র! খুব ভালো লাগল!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ এক লহমা, আপনাদের ভালো লাগাটাই আমার পরেরবার লিখবার প্রেরণা
জীবনযুদ্ধ

মুস্তাফিজ এর ছবি

লেখা ছবি দুটোই চমৎকার। পাঁচ তারা।

...........................
Every Picture Tells a Story

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই
জীবনযুদ্ধ

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভাল লাগল। চলুক

সোহেল লেহস

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমি অনেক পুরোনো ভ্রমণকাহিনী খাদক। সেটা বই হোক বা পত্রিকা হোক অথবা ব্লগ। প্রতিটা নতুন জায়গার ভ্রমণকাহিনী আমার কাছে পাতে পাওয়া নতুন খাবারের মতো। এতজাতের ভ্রমণকাহিনী পড়লেও লিথুয়ানিয়া নিয়ে এই প্রথম কোন লেখা পড়লাম। প্রতি পরতে উপভোগ করলাম। হাসি

সাথে কয়েকটা কৌতুহল। আমজনতার জন্য বাংলাদেশ থেকে লিথুয়ানিয়া বেড়াতে যাবার সহজ উপায় কি? ভিসার ঝামেলা কিরকম? শুধুমাত্র ইংরেজি বিদ্যার উপর ভর করে যাওয়া যাবে?

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশ থেকে লিথুয়ানিয়ায় বেড়াতে গেলে শেঞ্জেন ভিসা নিয়ে যাওয়াটাই সব চেয়ে সহজ পথ। বাংলাদেশে লিথুয়ানিয়ার এম্বেসি নেই, সুতরাং লিথুয়ানিয়ার পার্শ্ববর্তী কোন দেশের বাংলাদেশে অবস্থিত এম্বেসি থেকে শেঞ্জেন ভিসাটা জোগাড় করে নিতে পারেন। আর ইংরেজির উপর ভরসা করে দিব্যি ঘুরে আসতে পারেন, এখন প্রজন্মের লিথুয়ানিয়ানরা সবাই কম বেশি ইংরেজি জানে, তাই তেমন সমস্যা হবার কথা নয়।
ধন্যবাদ আপনাকে।
জীবনযুদ্ধ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার লেখার হাত ভালো। শুধু ট্রাভেলগ নয়, অন্য বিষয়েও লিখুন। লেখা পোস্টের আগে কয়েকবার চেক করে নেবেন তাহলে টাইপোগুলো এড়াতে পারবেন।

ভ্রমণসংক্রান্ত বাজারী বইয়ে দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা, ইতিহাসে ভরা থাকে। সেখানে যা থাকে না তা হচ্ছে ঐস্থানের সাধারণ মানুষ আর তাদের জীবনযাত্রার কথা। আপনার লেখায় তার কিছুটা উঠে এসেছে। এইসব গল্প আরো বিস্তারিত শুনতে চাই। আমার তো মনে হয় ভিলনুসের সাধারণ মানুষদের আরো গল্প আপনার ঝোলায় আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

পাণ্ডবদা, গল্পের ঝুড়িতে তো রয়েছে আরও কিছু বাকি গল্প, কিন্তু সময়ের অভাবে ঠিক লিখে উঠতে পারছিনা। আশা করি শীঘ্রই আবার নিয়ে আসবো নতুন কোন শহরের কথা।
জীবনযুদ্ধ

তানিম এহসান এর ছবি

“সবারই ভুল করবার অধিকার থাকবে, ভালোবাসার অধিকার থাকবে, অসুখী হবার অধিকার থাকবে, সুখী হবার অধিকারও থাকবে, থাকবে নদীর পাড় ধরে হেঁটে যাবার অধিকার...” সেটাই।

দারুণ লাগলো। আরও লেখা চাই। হাসি

শান্ত এর ছবি

লেখা ছবি সবই সুন্দর। ভালো লেগেছে।

"কিল হিম বাই রাইস।" আজকের দিনের সেরা উক্তি।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, শান্তদা
জীবনযুদ্ধ

গান্ধর্বী এর ছবি

ছবি আর বর্ণনা দুটোই চমৎকার হয়েছে। আরো লিখুন।

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, আরও লেখার আশা রাখি
জীবনযুদ্ধ

তাহসিন রেজা এর ছবি

লেখা ছবি দুটোই চমৎকার হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

অতিথি লেখক এর ছবি

সময় করে পড়বার জন্নে ধন্যবাদ
জীবনযুদ্ধ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

দারুণ সব ছবি! লেখাও ভাল। জীবনযুদ্ধ চলুক। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ হাততালি

আপনার সাথে লিথুয়ানিয়া ঘুরা ও হলো বোনাস হিসেবে অনেক মজার এবং ঐতিহাসিক ইতিহাস ও জানলাম। বড় হলে একদিন আমিও লিথুয়ানিয়া যাবো এনশাল্লাহ চোখ টিপি । আপনার পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম, শুভেচ্ছা।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, আপনার জন্নে শুভকামনা রইলো
জীবনযুদ্ধ

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ছোট বেলায় ডাকটিকিট জমানোর বাতিক ছিল, তাই বন্ধু-বান্ধবরা না জানলেও লিথুয়ানিয়া নামের দেশটার সাথে পরিচয় ঘটেছিল একটা ডাকটিকিটের মাধ্যমেই (সম্ভবত একটা জেসাস ও মেরি র ছবি ছিল ডাকটিকিটে)।

আজ আপনার চোখে দেশটার কিছুটা হলেও দেখা হয়ে গেল!

শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার তো এখনও ডাকটিকেট জমানোর বাতিক, আমার কাছে অবশ্য লিথুয়ানিয়ার কোন ডাকটিকেট আগে ছিলোনা। ছুটির দিন বিধায় সেদিন স্থানীয় ডাকঘরগুলও ছিল বন্ধ, কিন্তু পাড়ার মোড়ের কিওস্কে ঠিকি পেয়ে গেলাম ঝলমলে কিছু লিথিয়ানিয়ান ডাকটিকেট, ওমনি পকেটস্থ করলাম সেগুলো।
ধন্যবাদ
জীবনযুদ্ধ

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখার হাত খুব ভালো, অসাধারণ বলা যায়। এই একই জায়গা নিয়ে অন্য কেউ লিখলে অন্য রকম লাগত। আপনার লেখনীর কারনে অনেক কিছুই অনেক কাব্যিক রুপে ফুটে উঠেছে। আরও অনেক ভালো লেখা লিখুন এই কামনা করি। গুরু গুরু হাততালি চলুক উত্তম জাঝা!

ফাহিমা দিলশাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ফাহিমা, অনেক ধন্যবাদ
জীবনযুদ্ধ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।